banner

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 157 বার পঠিত

 

বাজেটে নারীর হিস্যা ২৭%!

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নারীর জন্য বা নারী উন্নয়নের জন্য কী আছে? তা জানার কৌতূহল থাকতে পারে নারী-পুরুষ সবারই।
টাকার অঙ্কটাই আগে জেনে নেওয়া যাক। অঙ্কের হিসাবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেটে নারীর হিস্যা ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৭১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা থেকে তা আগামী অর্থবছরের জন্য ২০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বেশি। বুঝতে একটু অসুবিধাই হওয়ার কথা। নারী উন্নয়নে এত টাকা! কই, কীভাবে খরচ হয়!
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতিবারই ‘জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করে আসছেন। প্রথমবার ছিল ৪টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন। তবে, কয়েক বছর থেকেই এ প্রতিবেদন করা হচ্ছে ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে। এই প্রতিবেদনেই বছরওয়ারি বাজেটে মোট বরাদ্দে নারী উন্নয়নের অংশ ও পরিমাণ দেওয়া রয়েছে।
প্রতিবেদনে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে তিন ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সাতটি মন্ত্রণালয় নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে জড়িত ৯টি মন্ত্রণালয়। আর বাকি ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর সুযোগ বৃদ্ধিসংক্রান্ত।
জেন্ডার বাজেটের আলাদা প্রতিবেদন করায় কী লাভ হলো তা অবশ্য সরকারই এখনো জানে না। অর্থমন্ত্রী তাই বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, ‘এ উদ্যোগ নারী উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রেখেছে তা মূল্যায়নে একটি সমীক্ষা পরিচালনার কথা ভাবছি।’
আলাদা প্রতিবেদন করা হয়েছে বলেই কিনা বাজেট বক্তব্যে নারী উন্নয়ন নিয়ে বিশদ কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। শুধু বলেছেন, ‘নারীদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা কাজ করছি।’
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে কর্মজীবী হোস্টেল নির্মাণ, বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার জন্য ৭টি পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা এবং আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও বলেছেন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট খোলা হবে। আর সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে করা হবে ‘চ্যালেঞ্জ তহবিল’ নামে একটি তহবিল।
তাহলে নারী উন্নয়নে ৯২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দের হিসাবটি কী? অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে যত নারী আছে, তাঁদের জন্য এই টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। নারী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, বেসরকারি স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, নারী নির্যাতন বন্ধসহ নারীর জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যেসব সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যয়ভারের যোগফলই হচ্ছে বাজেট বরাদ্দের এই টাকা।
বাজেট বরাদ্দে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা ১০০ কোটি টাকা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমাদ। প্রথম আলোকে কয়েক দিন আগে তিনি বলেন, বরাদ্দ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সরকার টাকা ছাড় করে না। যেমন চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা থেকে শেষ পর্যন্ত ছাড় হবে ৩৪ কোটি টাকা।
জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনের মুখবন্ধে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং নারীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জনে আমাদের আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার যে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির মূলধারায় নারীর সম্পৃক্ত হওয়া।

Facebook Comments