banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 425 বার পঠিত

 

চাকরিতে নিবন্ধিত এলাকা বাধ্যতামূলক হলে ‘নারীর পরিসর কমবে’

তাহমিনার (ছদ্মনাম) বাবার বাড়ি বগুড়া। চাকরিতে নিবন্ধনের সময় তিনি অবিবাহিত ছিলেন। এ কারণে ঠিকানা দেওয়া ছিল বাবার বাড়ির। বিবাহসূত্রে তিনি এখন ঢাকায় থাকেন। এ অবস্থায় বিয়ের পর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা নিজের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলেন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

সেলিনা পারভীনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। নিবন্ধনের সময় কিশোরগঞ্জে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া ছিল। বিয়ের পর স্থান পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে গেলে তাকে বলা হয়, স্থায়ী ঠিকানার সঙ্গে চাকরি কোটার সম্পর্ক থাকায় ঠিকানা পরিবর্তন করতে গেলে নানা জটিলতা তৈরি হবে।

এখন থেকে নিবন্ধনের পর প্রার্থীরা আর চাকরির এলাকা বদলের আবেদন করতে পারবেন না। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

বিয়ের পর নারীরাই ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন বেশি করেন বলে জানিয়েছেন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের উপসচিব তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন হওয়ার পর বিষয়টি একটা প্রক্রিয়ার ভেতর পড়ে যায়। তখন ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন নেওয়া সম্ভব নয়, জটিলতা বাড়ে।’

এখন থেকে শিক্ষিকা হিসেবে নিবন্ধনে যে ঠিকানা দেওয়া থাকবে, নিয়োগ সেই এলাকাতেই হবে, তার বাইরে নয়। অবিবাহিত নারীরা বাবার ঠিকানা দিয়ে চাকরির আবেদন করলে বিয়ের পর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা নিজের বলে দাবি করতে পারবেন না। অর্থাৎ তাকে বাবার ঠিকানাতেই নিয়োগ নিতে হবে।

নারী নেত্রীরা বলছেন, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে চাকরি করার ব্যাপারে নারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীদের চাকরি নিয়ে এমনিতেই জটিলতা আছে। এরপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে তাদের জায়গা ছোট হয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘কেবল এ রকম একটা সিদ্ধান্ত দিলেই হবে না। নিজের ঠিকানা বাছাইয়ের স্বাধীনতা নারীর আছে। বাবার বাড়ি কিংবা শ্বশুর বাড়ির ঠিকানার বাইরেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে সে নিজেই নিজের আলাদা ঠিকানা তৈরি করতে সক্ষম। সে ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দিয়ে তা অবরুদ্ধ করার মধ্যে দুরভিসন্ধি লক্ষ্য করা যায়।’

আয়শা খানম আরও বলেন, ‘আমরা জানি এমন ক্ষেত্রে কোটা জাতীয় বিষয় থাকে। ফলে নিবন্ধনের পর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে পরিবর্তনটা কঠিন। কিন্তু বাস্তবতা তো বুঝতে হবে।’

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, ‘নারীর নিজের কোনও অধিকারই নেই যেন। যত রকমের সামাজিক রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তার ওপরই বর্তাবে। প্রয়োজনে সে নিজ এলাকার বাইরে চাকরি করছে না? বাবার এলাকাতেই চাকরি করতে হবে কেন?’

Facebook Comments