All posts by Oporajita

 

আধখানা বিষণ্ণ চাঁদ…

লাইটপোস্টের আলো সাদা হলে ভাল্লাগেনা…
সোডিয়ামের হলদে আলোয় যে আচ্ছন্নতা আছে এনার্জি সেভিং বালবগুলোর ঔজ্জল্যে সেটা নেই…

হুট করে মন কেমন হু হু করে ওঠে। মগ্ন হয়ে যেতে চায় অতলান্ত অসমাপ্ত ভাবনাগুলোর আরো গভীরে…

রাত-বিরাতে হঠাৎ চায়ের নেশা উঠল। অথচ ঘরে আজকেই চাপাতা থাকবেনা। এমনই হয় আরকি…

ফুটপাথে লাইটপোস্টের আলোতে দাঁড়িয়ে জিহবা পুড়িয়ে চা পান করছি আর চাঁদ দেখছি, তখন রাত দশটা।
আধখানা বিষন্ন চাঁদ…

মনের কোনো বিরাম নাই, এগারোটায় ফের মনে হল কুয়াশায় ভিজে হাটতে।

ছোটবোনটাকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বাসায় এই একজন মানুষ আছে যে আমাকে কখনো না বলেনা কিন্তু তথাপি আমি তার থেকে একধরণের দূরত্ব বজায় রেখে চলি। পিচ্চিটা আমার ভাল-খারাপ সমস্তটার অনুকরণ করে। খুবই বিব্রতকর ব্যাপার…

কলোনীর জনশূন্য রাস্তায় হাটছি। একহাতে জুতো আর অন্য হাতে একথোকা হাসনাহেনা। পা জমে যাচ্ছে অথচ মনে হচ্ছে সারারাত এভাবে কুয়াশায় ভিজতে ভিজতে হাটি।

যখন নিঝুম রাতে সবকিছু চুপ, নিস্প্রাণ নগরীতে ঝিঁঝিঁরা ঘুম… রাত জেগে শিশিরের শব্দ শুনি তখন…. নিয়মগুলো ভাঙ্গতে থাকি একেরপর এক…
img20171012_185416

সুমাইয়া তাসনিম
সাইকোলজি

 

দাম্পত্য – ৭

দাম্পত্য সিরিজটা আদৌ আর চালাব কি না তা নিয়ে সবসময়েই দোনোমনায় থাকি। কিন্তু পথ চলতে চলতে একেকটা বিষয় চোখে পড়ে, যা নিয়ে প্রায় প্রতি পরিবারেই কিছু না কিছু সমস্যা হয়, তখন মনে হয়, নাহ! লিখি। আর কিছু না হোক, বিষয়টা নিয়ে চিন্তা ত করা হবে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এত বেশি জড়ানো, একে অপরকে নিয়ে, আর তার মাঝে আবেগ ভালবাসার দাবি এত বেশি, যে কোন মূহুর্তে আবেগটুকু, চাওয়াটুকু বদলে যেতে পারে ঈর্ষায়। এরকম দম্পতি প্রচুর আছে, বোঝাপড়া খুব ভাল, একজন অপরজনকে ভালও বাসে অনেক, কিন্তু তাদেরই কোন এক বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বা সহকর্মীর সাথে হৃদ্যতাটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়। সব ঠিকঠাক, কেবল ঐ বন্ধুটির সাথে মিশলেই স্ফুলিঙ্গের মত ভেতরে জ্বলে ওঠে কী যেন। এই ঈর্ষা বুঝিয়ে বলাও যায়না। ব্যাখ্যা করা যায়না, ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিটি হয়ত ‘আমি তোমাকে খুব ভালবাসি’ এই যুক্তিতে সাফাই গাইতে চাইবে, কিন্তু অপরজন এটিকে দেখবে হীনমন্যতা, বিশ্বাসের অভাব – এভাবেই। এখানে অন্যান্যবারের মত উভয়পক্ষ নিজেকে খোলাখুলি ব্যক্ত করলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা। এবং অবধারিতভাবে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাচ্ছে।

আমি সবসময়েই কোন সমস্যা দেখলে তা সমাধান করার আগে উৎসটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয়েছে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে স্বামী আর স্ত্রীর সীমানাটা যদি ভিন্ন হয়, তখন এই সমস্যার সূত্রপাত হয়। ধরুন আপনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি/বুয়েটে পড়েছেন, সহপাঠীর সাথে এক রিকশায় ওঠা আপনার জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার। আপনার স্বামী/স্ত্রী হয়ত এ ব্যাপারটায় অভ্যস্ত না, তার কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে। মানসিক টানাপোড়েনে বন্ধুর সাথে কথা বললেন অবলম্বন চাইতে, বন্ধুর স্বামী/স্ত্রী হয়ত ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিল না। আপনার স্ত্রী সোশ্যালাইজ করতে পছন্দ করে, আপনি ভালবাসেন নিজের মত থাকতে, আপনার পছন্দকে সম্মান জানিয়ে স্ত্রী যদি একাই সোশ্যালাইজ করতে শুরু করে, কিছুদিনের মধ্যে একটু ঈর্ষা, একটু সন্দেহ মনে চলে আসতেই পারে।
এজন্য এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কথা বলা খুবই জরুরি, সমস্যা শুরুর আগেই। সবচেয়ে ভাল হয় বিয়ের আগেই না হলে সম্পর্কের শুরুর দিকেই কথা বলে নিলে। এমনি এমনি কোন প্রসঙ্গ ছাড়া আলোচনা করা ত কঠিন, আপনি চাইলে বানিয়ে বানিয়ে আপনার কোন বন্ধুর উদাহরণ দিতে পারেন, ‘ওদের এমন হচ্ছে, তুমি কি মনে কর?’ তখন এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আসবে, হয়ত অপরজন বলবে, ‘বিয়ের পরে এত মেলামেশা কী?’ অথবা, ‘বিশ্বাস থাকলে এগুলো আবার কোন সমস্যা নাকি?’ – এভাবে আপনি জানতে পারবেন নারী পুরুষের স্বাচ্ছন্দ্যের ঠিক কোথায় আপনার অবস্থান আর কোথায় আপনার সঙ্গীর।

দ্বিতীয় যে কারণটা আমার মনে হয়েছে গুরূত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে ইনসিকিউরিটি। আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীর সর্বাবস্থায় আপনিই একমাত্র অবলম্বন আর থাকছেন না – এই বোধটা খুব ভয়ের। আমি ছাড়া আরও কারো সান্নিধ্য তার ভাল লাগতে পারে – এ ব্যাপারটা মানতে যেন খুব কষ্ট হয়। এ ধরণের ঈর্ষা শুধু বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের মধ্যেই সীমিত থাকে না, টেলিভিশন, বই, পোষা প্রাণী, এমনকি নিজের সন্তানদের প্রতিও ঈর্ষা আসতে পারে। এই ঈর্ষাটা মূলতঃ ওখান থেকে আসে, যেখানে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন আপনার জন্য বরাদ্দকৃত সময়টুকু অন্য কেউ/ কিছু নিয়ে যাচ্ছে।

এ সমস্যা প্রতিরোধের উপায় কী? প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে ইনসিকিউরিটি বোধটা দূর করতে। ছোটখাট সারপ্রাইজ, উপহার, তার পছন্দের কোন কাজ (যা আপনি আগে কোনদিন করেন নি) – এসব তার কাছে এই মেসেজটা পৌছাবে যে আপনি তার ছোটখাট সব ভাললাগার দিকেই লক্ষ্য রাখেন। ঈর্ষার উৎস যদি হয় কোন অভ্যাস, বা কোন বন্ধু, সচেতনভাবে তার সামনে কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন যে প্রায়োরিটি লিস্টে ওসব কখনোই তার উপরে না। যেমন টিভি দেখার সময় সে কোন কথা বললে টিভিটা বন্ধ করে তার দিকে ঘুরে কথাটা শুনুন। বই পড়ার বেলায় বই বন্ধ করে মুখ তুলে তাকান। কয়েকবার এমন করলে সে মেসেজ পেয়ে যাবে, এর পর থেকে আপনি নরম সুরে বললেই হবে, আমি একটু পরে করি? সহজ! আর যদি ঈর্ষাটা কোন মানুষের বিরূদ্ধে হয়, চেষ্টা করুন এমন কোন ঘটনা এড়িয়ে চলতে যেখানে আপনার স্বামী/স্ত্রী বনাম বন্ধু – এদের মধ্যে কোন একজনের প্রোগ্রাম বেছে নিতে হয়। একই ট্রিকস বাচ্চাদের জন্যেও প্রযোজ্য। বাচ্চারা ঠিকই বুঝে ফেলে বাবা মা তাদের চেয়ে টেলিভিশন কে বা অন্য কিছুকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কিনা। প্রতিশ্রুতি করে সেটা ভাঙলে কিছুতেই আপনার উপর শ্রদ্ধা বাড়বে না, এটা নিশ্চিত।

ঈর্ষার প্রথম কারণটা আমি মনে করি সমাধান করা বেশি কঠিন। যে রক্ষণশীল তার যেমন নিজের পক্ষে অনেক ভাল ভাল যুক্তি আছে, যে উদার, তারও আছে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই ন্যায্য বলে ধরে নেয়, অপরজন তখন একই সাথে অপমানিত ও অসহায় বোধ করে। এই বোধ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থাকা খুবই বিপদজনক।কারণ তখন স্বাভাবিক আবেগ ভালবাসার পথ রূদ্ধ হয়ে যায়।

ত কী করতে হবে? যে রক্ষণশীল, তাকেই সহনশীল হতে হবে। কারণ জোর জবরদস্তি করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা বোকামি। সম্ভব হলে সরাসরি বলতে পারেন, ‘এই কাজগুলো আমি সহজভাবে নিতে পারিনা। আমার মধ্যে প্রচণ্ড ঈর্ষা তৈরি হয়, যা আমি নিয়ন্ত্রণ এ রাখতে পারিনা।’ তখন অপরপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারে, ‘এটা তোমার সমস্যা, আমি কেন তার জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করব?’ আপনি তখন বুঝিয়ে বলতে পারেন যে ‘একটা পরিবার খুব রক্ষণশীল থেকে খুব উদার – যে কোন অবস্থানে থেকেই চলতে পারে। এটা আমার বা তোমার সমস্যা নয়, এটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের সমস্যা। আমি চেষ্টা করব তোমার মত করে চিন্তা করতে, কিন্তু তুমিও চেষ্টা কর এমন কোন সমস্যা যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে।’ এর পাশাপাশি আপনি যাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হন, তাকে নিয়ে আরো বেশি বেশি চিন্তা করে দেখুন, সে মানুষটার সব কিছুই কি খারাপ? নাকি একটু দু’টো কাজ আপনার ভাল লাগেনা। তখন আপনার সঙ্গীকে আরো পরিষ্কার করে বলতে পারবেন, ঠিক এই বিষয়গুলো তে আমার আপত্তি। কেন আপত্তি সেটাও চিন্তা ভাবনা করে নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি যদি এতখানি পরিশ্রম করেন, আপনার সঙ্গী বুঝতে পারবে যে আপনি সত্যিই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। তখন তার তরফ থেকেও আন্তরিকতা বাড়বে।

পরিশেষে, একটা চমৎকার দু’আ করুন দু’জনে মিলে, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে ভুল পথে আছে তাকে তুমি শুধরে দাও, আর যে সঠিক পথে আছে তাকে ধৈর্য ধরার শক্তি দাও।

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

রুদ্রের ছবি ঘর…

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি “প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। 
কয়েকটি লাইনে তাকে দেখার চেষ্টা …..
img20171012_004438
কারো কারো স্বপ্নের সিন্দুকে থাকে আজীবন তালা,
আর কেউ ফলবান বৃক্ষের মতোন
হয়ে ওঠে বিপুল সমৃদ্ধ–
img20171012_004739
তবু শেষমেশ একটি নীলাভ প্রজাপতির জন্যও
যে যার স্মৃতির ফ্রেমে কষ্টকে বাঁধিয়ে রাখে।
img20171010_233630
দুঃখ আর স্মৃতিরা খুব বেশি দীর্ঘজীবী হয়
জীবনের অধিকাংশ অনুর্বর ভূমিতে।
img20171012_004631
যে রাত ‘পাশাপশি বসিবার বনলতা সেন’
সে রাত আমার নয়, সে রাত অন্য কারো।
img20171012_005449
প্রতিদিন কিছু কিছু ইচ্ছা মরে যায়
অনিচ্ছাকৃত মরে যেতে হয়
অযত্নে মরে যায়।
img20171012_004601
প্রতিদিনই কিছু কিছু ইচ্ছারা
নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়
নির্বাসিত হয়।
img20171012_004532
ব্যর্থ প্রেমের মতো কিছু কিছু ইচ্ছা
স্মৃতির অসুখে ভোগে দীর্ঘদিন,
img20171012_005857
কিছু কিছু ইচ্ছা স্বইচ্ছায় হত্যা করি
ইচ্ছার হননে বিবর্ন হই বারবার
তবু হত্যা করতেই হয়।

 

আগন্তুক…

একটা ট্রেন মিস হয়ে গেলেও চান্স থাকে পরের ট্রেনটা পাবো,কিন্তু জীবনে এমনও সুযোগ আসে যা একবার মিস হয়ে গেলে আর কোন দিন দ্বিতীয়বার সুযোগ আসবে কি আসবেনা সেটা কেউ জানেনা।ন্যু ক্যাম্প থেকে আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত লা নুয়েভা মার্কুয়েসা রেস্তোরায় একাকী একটা টেবিলে বসে আছি।স্পেন,ইতালী থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান খাবারও পাওয়া যায় এই হোটেলে।ওসব জিবে জল আনা খাবারের কোনটার প্রতিই আমার মন নেই।এমনকি মন নেই চোখ ধাধানো ডেকোরেশান আর নানা দেশ থেকে আগত পযর্টকদের দিকেও।দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত সুন্দরী এলসার দিকেও তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।সুদুর বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা মনটা পড়ে আছে আধা কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ন্যু ক্যাম্পে।যে মনটা একই সাথে ব্যাথিত না পাওয়ার যন্ত্রনায়।বার বার মনে হয় যদি মনের সাথে সাথে পুরো মানুষটিকেই ন্যু ক্যাম্পের কোন একটা চেয়ারে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেতাম তবে ভাল হত।কিন্তু সে কপাল নিয়ে হয়তো আসিনি আমি।

বিষয়টি খোলাশা করে বলা দরকার।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছি ফুটবলের স্বর্গরাজ্য বার্সেলোনায়।লা নুয়েভা মার্কুয়েসার দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয় সুন্দরী তরুনী এলসাও একই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে। সাত দিনের জন্য এসেছি এখানে।বার্সেলোনায় এসে ন্যু ক্যাম্পে খেলা না দেখে যাওয়া মানে অমূল্য কোহিনুর হাতে পেয়ে অবহেলায় ছুয়ে না দেখার মত।সম্মেলন গত কালই শেষ হয়েছে, হাতে আছে আজ এবং আগামী কাল।বাংলাদেশের আকাশ অতিক্রমের আগেই খোঁজ নিয়ে জেনেছি সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেরদিনই ভাগ্য ক্রমে ন্যু ক্যাম্পেই এল ক্লাসিকো আছে।মনে মনে পণ করেছিলাম সম্মেলন শেষ করে হাতে যে দুদিন সময় থাকবে তার একদিন ন্যু ক্যাম্পে এল ক্লাসিকো দেখে কাটাবো।কিন্তু সবার স্বপ্ন সত্যি হয়না।

ঢাকার ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা হোটেলে আলমারির কাঁচের ফাক দিয়ে নানা রকম মিষ্টি দেখার পরও সেসব যেমন পথ শিশুদের ভাগ্যে জোটেনা বরং স্বপ্নই থেকে যায়, ঠিক একই ভাবে আমার স্বপ্নও নিরবে খুন হয়।ক্রিড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর কাছ থেকে অনেক বার শুনেছি ন্যু ক্যাম্পের টিকেট পাওয়া আর হাতে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়া একই কথা।সে সব কথা মাথায় রেখে বার্সেলোনার মাটিতে পা রেখে সম্মেলনে যোগ দেবার আগেই ন্যু ক্যাম্পের একটা টিকেট হাতে পাওয়ার জন্য বার কয়েক ঢু মেরেছি।অনলাইনেও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

কোন টিকেট নেই জানার পর মনটা বিষিয়ে উঠেছে।আহ কী শান্তি ঢাকাতে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালিন সময়েও দু একটা টিকেট পাওয়া যায়।কিছু না হোক ব্লাকেও টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এখানে? ভেবেছিলাম উন্নত দেশ হলে কি হবে, হয়তো দু একটা টিকেট এখানেও ব্লাকে পাওয়া যাবে।নাহ পাওয়া যায়নি এমনটি বলতে চাইছিনা।পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সেই টিকেটের যে দাম তা দিয়ে হয়তো ঢাকা থেকে বার্সেলোনা দুবার যাওয়া আসার প্লেন ভাড়া হয়ে যাবে।বাড়িয়ে বলছি হয়তো কিন্তু নিদেন পক্ষে সে টাকা দিয়ে অন্তত একটা পালসার মটর সাইকেল কেনাই যাবে বলে মনে হয়েছে।ওই পরিমান অর্থ আমার নেই।ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া আসার ভাড়াই কখনো ছিল কিনা সন্দেহ আছে, সেখানে অতগুলো টাকা আমি কোথায় পাবো।বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে এসেছি সম্মেলনে অংশ নিতে।সাথে খরচ বাবদ যা বাজেট ছিল তা থেকে হয়তো একটু কৃপণতা করতে পারলে ন্যু ক্যাম্পে এল ক্ল্যাসিকোটা দেখাই যেত। কিন্তু টিকেটের দুর্ভিক্ষ আমার ভাগ্যকে সুপ্রন্ন হতে দেয়নি।

বিয়ের আসর থেকে বর পক্ষ উঠে চলে গেলে কনের বাবার যে অবস্থা হয় আমার অবস্থা হয়েছে সেরকম।ন্যু ক্যাম্পের এতো কাছে এসেও খেলা দেখা হচ্ছেনা ভেবে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।আসলে যেখানে এক মাস আগে থেকেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায় সেখানে আমি খেলার মাত্র চার পাঁচদিন আগে টিকেটের আশা করে বরং বোকামীই করেছি বলে মন্তব্য করলেন এক স্প্যানিশ ভদ্রলোক।ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার স্বপ্নটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে বাকি জীবন।এতো কাছে এসে যে স্বপ্নটা ধরা দেয়নি সেটা বাকি জীবনে ধরা দেবে বলে মনে হয়না।মনের অবস্থা তখন এমন হয়েছে যেন মনে হচ্ছে প্রিয়জন ছেড়ে গেছে আমাকে।ফুটবল পাগল এই আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় এসেও ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে না বসতে পারাটা নিশ্চই তার থেকে কোন অংশেই কম বেদনার নয়।তখন আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পই আমার প্রেমিকা।যে কাছে থেকেও অনেক দূরে।যার ছোয়া পাওয়ার আশা বুকে নিয়ে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর দেশ আমার সোনার বাংলার আকাশ পাড়ি দিয়ে সাত সমুদ্র তের নদীর এপারের এই দেশটিতে এসেছিলাম সে আমাকে ছুতে দেয়নি।ন্যু ক্যাম্প আমাকে বঞ্চিত করেছে ভালবাসা থেকে।

লা নুয়েভা মার্কুয়েসায় বসে আমার মনের মধ্যে শুধু ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার ব্যাথা বার বার মনকে উতলা করে তুলছে।টেবিলে রাখা প্রন স্যুপ থেকে সুবাশিত ধোয়া ওঠা থেমে গেছে সেই কখন তা বুঝতেই পারিনি।আমি যখন চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আর প্রেমিকা হারা প্রেমিকের মত হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে বসে আছি লা নুয়েভা মার্কুয়েসার টেবিলে একাকী তখন সামনের চেয়ারটা টানতে টানতে বসার অনুমতি চাইলেন এক বৃদ্ধ লোক।তার কথাতে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকে বসার অনুমতি দিলাম।দেখে মনে হতে পারে যেন আমি মাস্টার মশাই আর আমার সামনে বসতে চাওয়া লোকটা আমার ছাত্র এবং সে বসার অনুমতি চাইছে।এই দেশটা বড়ই সুন্দর।এখানকার মানুষের আতিথেয়তার কথা নাইবা বললাম কিন্তু এদের ভদ্রতা সত্যিই মুগ্ধকর।হোটলের চেয়ারগুলো সবার জন্যই সমান অথচ সেখানে বসার জন্যও এরা কী সুন্দর ভদ্রতা করে অনুমতি চাইছে অপর প্রান্তে বসে থাকা সুদুর বাংলাদেশ থেকে আসা ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার দুঃখে জর্জরিত এক তরুনের কাছে।

তার কথাতেই বুঝলাম তিনি স্প্যানিশ।আমার প্রনস্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তিনি ইংরেজীতেই বললেন স্যুপতো ঠান্ডা হয়ে গেছে খাওনি কেন? তোমাকে বিষন্ন লাগছে কেন?তার কথাতে মনে পড়লো স্যুপের অর্ডার দেওয়ার পর সেই কখন স্যুপ দিয়ে গেছে তা খেয়ালই করিনি।

আমি স্যুপের চামচ নিয়ে খেতে যাবো তখন ভদ্রলোক খেতে নিষেধ করলেন।ওয়েটারকে ডাকলেন।স্প্যানিশে ওয়েটারকে কামারেরো বলা হয়।ওয়েটার এসেই তাকে সালাম দিল।ওদের কায়দায় এবং তিনি তখন ওয়েটারকে বললেন আমার স্যুপটা পাল্টে গরম স্যুপ পরিবেশণ করতে।ওয়েটার তার কথা মত সত্যি সত্যি মুহুর্তেই আমার স্যুপটা বদলে গরম স্যুপ দিয়ে গেল।আমি খেতে খেতে বৃদ্ধকে দেখতে লাগলাম।তিনি সম্ভবত প্রভাবশালী কেউ নয়তো এই রেস্তোরার নিয়মিত কাষ্টমার। তা না হলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অধিকাংশ ওয়েটারই তাকে সম্মান দেখাতো না।এসবের পরও আমার মনটা ঠিকই পড়ে ছিল ন্যু ক্যাম্পে।মাত্র ঘন্টা খানেক পরই খেলা শুরু হবে।ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় থেকেও সেখানে যাওয়া হচ্ছেনা আমার এর থেকে বড় ব্যথার আর কি থাকতে পারে।এসব ভাবছি আর আনমনে স্যুপের চামচে চুমুক দিচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তিনি সম্ভবত বেশ খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। চোখে চোখ পড়তেই সেটা সরিয়ে না নিয়ে জানতে চাইলেন আমি কি কোন বিষয়ে খুব চিন্তিত কিনা।

মনে মনে ভাবলাম ন্যু ক্যাম্পে খেলা দেখার স্বপ্ন মরে গেছে এটা তাকে জানাই আবার মনে হলো তাকে জানিয়ে লাভ কি? তাতে বরং দুঃখটা আরো বাড়বে বই কমবেনা।দুঃখের সময় কেউ যখন শান্তনা দেয় তখন বরং দুঃখ কমে না গিয়ে আরো বেড়ে যায়।আমি কিছু বলছিনা দেখে তিনি আবারও জানতে চাইলেন। পরে ভাবলাম এতো করে যখন বলছে তাকে বলাই যেতে পারে।আমি বিষয়টা জানালাম।তিনি তেমন কিছু বললেন না।আপন মনে ধোয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিলেন।মনে মনে রাগ হলো।এই দেশের মানুষ দেখছি বেশ কৃপন।

বিনা পয়সায় একটু সহানুভুতি দেখাবে,টিকেট পাইনি বলে যে কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য একটু শান্তনা দেবে তার কোন নাম গন্ধ নেই?আমাদের দেশ হলে কেউ কি এরকম করতো?চারদিকে যতজনকে দেখা যেত সবাই শান্তনা দিত।বলতো এবার পাওনি তো কি হয়েছে পরে নিশ্চই পাবা।সুযোগতো বলে কয়ে আসেনা। দেখবা হুটকরে একদিন সুযোগ চলে এসেছে।আর এই স্পেনের এই বুড়ো মানুষটা মুখে টু শব্দটিও করলো না?মনে মনে ভাবলাম লোকটার সাথে আর কোন কথাই বলবো না। আমি আপন মনে স্যুপ খেতে লাগলাম।একটিবার শুধু তার দিকে তাকালাম।সে আগেই কফি শেষ করেছে।কি কারণে যেন কফি শেষ হওয়ার পরও তিনি টেবিল ছেড়ে চলে না গিয়ে বসে থাকলেন।

আমি স্যুপ খাওয়া শেষ করে টেবিল ছেড়ে উঠলাম।আশ্চর্য আমার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটাও উঠলেন।আমি কাউন্টারে গিয়ে বিল পরিশোধের জন্য মানিব্যাগ বের করতেই কাউন্টার থেকে ইংরেজীতে জানানো হলো বিল দিতে হবেনা।কেন দিতে হবেনা জানতে চাইলে তিনি পাশের বৃদ্ধকে দেখিয়ে বললেন আপনি ওনার অতিথি তাই আপনার থেকে কোন বিল নেওয়া হবেনা।আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।একটু আগেই সমবেদনা কিংবা শান্তনা দেয়নি বলে মনে মনে যাকে আমি কৃপণ বলেছি সে আমার স্যুপের বিল দিয়ে দিচ্ছে।তখন তার প্রতি আমার মুগ্ধতার সীমা নেই।তিনি আমাকে নিয়ে লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে এলেন।

ঠিক তখন খেয়াল হলো আমাকে যেমন তিনি বিল দিতে দেন নি তেমন তিনি নিজেওতো কোন বিল দিলেন না।তিনিকি সেটা ভুলে গেছেন?আর ভুলে গেলেওতো রেস্তোরার ম্যানেজার ভুলে যাবার কথা নয়।তখন মনে পড়লো সব ওয়েটার তাকে যে সম্মান দেখাচ্ছিল তার রহস্য হতে পারে তিনিই লা নুয়েভা মার্কুয়েসার মালিক।বার্সেলোনার সব থেকে সুন্দর হোটেলের একটি হলো এটি আর সেটির মালিক নিজের অতিথি হিসেবে আমাকে স্যুপ খাইয়েছেন ভাবতেই আনন্দে প্রায় আত্মহারা হয়ে উঠলাম।

জানার লোভ সামলাতে না পেরে আমি বলেই ফেললাম যে আপনিতো রেস্তোরার বিল দিতে ভুলে গিয়েছেন।তিনি তখন বললেন না ভুলিনি আসলে ওরা খাতায় লিখে রাখবে। মাস শেষে বিল নিয়ে নেবে।আমি একটা আগ বাড়িয়ে বললাম যে আমার মনে হচ্ছিল আপনিই এই জনপ্রিয় রেস্তোরাটির মালিক। বৃদ্ধ তখন আমার অনুমানকে নাকোচ করে দিয়ে জানালেন যে তিনি ওই রেস্তোরার মালিক নন বরং নিয়মিত কাস্টমারদের একজন।তখন মনে হলো তার কথাটাই যুক্তিযুক্ত এবং যেহেতু নিয়মিত কাষ্টমার তাই সব ওয়েটারই তাকে চেনে এবং সম্মান করে।লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে আমি আমার হোটেল ক্যাটালোনিয়া অ্যাটিনাসে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই হোটেলেই আমি উঠেছি। যেহেতু ন্যু ক্যাম্পে যাওয়া হলোনা সেহেতু হোটেলে ফিরে যাওয়াই সমুচিত হবে বলে মনে করলাম।বৃদ্ধকে বিদায় জানিয়ে হোটেলে ফিরবো বলতেই তিনি বললেন তার সাথে যেতে,তাকে একটু সময় দিতে।

কেন তাকে সময় দিতে হবে কিংবা কোথায় সময় দিতে হবে তা জানার দরকার হলোনা।অপরিচিত একটা তরুণকে যিনি নিজের টাকায় স্যুপ খাওয়াতে পারেন এবং যিনি বয়সে বাবার সমান কিংবা তার চেয়ে বড় তাকে একটু সময় দিলে আমারতো কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া হোটেলে ফিরে গিয়েওতো অলস বসে থাকতে হবে। আবার মনে হলো এই বিদেশ বিভূইয়ে অপরিচিত লোকটাকে সময় দেওয়াকি ঠিক হবে?হোক সে যতই বৃদ্ধ কিংবা যতই সে আমাকে স্যুপ খাওয়াক।কি মনে করে তার গাড়িতে উঠে বসলাম।একটা বক্সস্টার এস ৭১৮ মডেলের পোর্শে কার দেখেই মনে হলো লোকটা বেশ টাকাওয়ালা।আমার মত এক শুটকো তরুনকে কিডন্যাপ করেও তার কোন লাভ নেই।সুতরাং বিনা দ্বিধায় গাড়িতে উঠে বসলাম।তিনিই ড্রাইভ করছেন আর আমি পাশে বসে আছি।এই ধরনের গাড়ি আমি শুধু হলিউডের সিনেমাতেই দেখেছি।ঢাকাতে এসব গাড়ি কল্পনাও করা যায়না।

দশমিনিটের ব্যবধানে গাড়িটা থেমে গেল।তিনি আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে নিজেও নামলেন।আমি গাড়ি থেকে নেমেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।গাড়ি থেমেছে ন্যু ক্যাম্পের সামনে।তিনিকি তবে আমার কাটা ঘায়ে আরো একটু নুনের ছিটা লাগানোর জন্য সোজা ন্যু ক্যাম্পেই নিয়ে আসলেন।পরক্ষণেই হোটেলের কথা মনে করে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে নিলাম।দেখিইনা বৃদ্ধ স্প্যানিশ কি করেন। গাড়িটা পার্ক করে আমাকে নিয়ে ন্যু ক্যাম্পের গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন।অন্যরা যখন লাইন ধরে এগোচ্ছিল ভদ্রলোক তখন লাইন ছাড়াই এগিয়ে গেলেন।গার্ড এবং সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ তার সাথে হ্যান্ডশেক করলো।আমি এই বৃদ্ধ কে এবং তার ক্ষমতা আসলে কতটুকু তা বুঝতে চেষ্টা করে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম।একবার মনে হলো তিনি সম্ভবত ন্যু ক্যাম্পের বড় কোন কর্মকর্তা আবার মনে হলো সম্ভবত স্পেনের সব থেকে ধনীদের একজন তিনি তাই সবাই তাকে ওরকম সমীহ করছেন।তিনি হাটতে হাটতে বললেন আমার কাছে দুটো টিকেট আছে আজকের এল ক্ল্যাসিকোর।সাথে আমার ওয়াইফ আসার কথা ছিল কিন্তু সে অন্য একটা কাজে আটকে পড়ায় আমি একাই আসলাম।হোটেলে যখন তোমার খেলা দেখার ইচ্ছের কথা জানতে পারলাম তখন ভাবলাম তোমাকেই সাথে নিই।আমি অবাক হয়ে বললাম আপনিতো চাইলে এই টিকেটটা পাঁচশো ইউরোতেও বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে আমাকে ফ্রি নিচ্ছেন কেন?

আমার কথা শুনে বৃদ্ধ একটু হাসলেন। তার পর বললেন তোমার ফুটবলের প্রতি যে ভালবাসা দেখেছি তাতে তোমাকে দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়েছে। আর তা ছাড়া টিকেটতো আমার কেনা লাগেনি। ফ্রি পেয়েছি।তবে হ্যা সাধারণ ভাবে এই টিকেটের দাম কিন্তু ৫০০ ইউরো না! আমি জানতে চাইলাম তাহলে এটার দাম কত? তিনি আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে দিয়ে জানালেন এই টিকেটের দাম ৪ হাজার ডলার। আর ব্লাকে বিক্রি করলে এটা সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার ডলারে বিক্রি হবে।

সামান্য সময়ের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জন্য এতো ডলারের টিকেট ফ্রিতে দিতে পারে তা কল্পনায়ও সম্ভব না আর আমি বাস্তবে দেখছি। তবে মনে হলো তিনি যেহেতু ফ্রি পেয়েছেন তাই অন্য কাউকে সেটা দিয়ে দিতেও ওনার গায়ে লাগছেনা। তবে চিন্তা একটা থেকেই গেল। কে এই ভদ্রলোক যে তাকে এরকম দুটো ভিআইপি টিকেট ফ্রিতে দিয়েছে। আবারও মনে হলো তিনি নিশ্চই প্রভাবশালী কেউ নয়তো স্পেনের সেরা ধনীদের একজন। এর মাঝেই বেশ কয়েকজন এসে তার সাথে দেখা করে গেল। স্প্যানিশে কি সব বললো তার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি।

খেলা দেখলাম খুব আয়েশ করে। ন্যু ক্যাম্পের কথা উৎপল শুভ্রর মুখে যেরকম শুনেছি ঠিক তাই। অনেক উচুতে বসে যারা খেলা দেখছে আমি নিশ্চিত তারা কার পায়ে বল কিংবা কে কোথায় দৌড়াচ্ছে তা বুঝতে পারছেনা। অত উচু থেকে দেখতে পাওয়ার কথাও নয়। জায়ান্ট স্ক্রিন থাকায় কেউ কেউ সেটা দেখে খেলোয়াড় চিনছে নতুবা কেউ কেউ সাথে করে দুবীর্ন নিয়ে এসেছে। আমরা ভিআইপি টিকেটধারী হওয়ায় জায়ান্ট স্ক্রিন কিংবা দুবীর্ন কোনটারই দরকার পড়েনি। খেলার উত্তেজনায় আমি তখন কম্পমান। যেন মেসি রোনালদো নয় আমি নিজেই খেলছি। বৃদ্ধ লোকটাও মাঝে মাঝে উত্তেজিত হচ্ছেন এবং আশ্চর্য ভাবে তিনিও আমার মতই বার্সেলোনার সমর্থক। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় খেলা ড্র হলো। বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতেই বৃদ্ধ আমাকে থামালেন।তিনি বললেন আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে।বৃদ্ধর ছেলে আসবেন তার সাথে দেখা করে তার পর ন্যু ক্যাম্প ত্যাগ করবেন।আমি বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে নিলাম। যার কল্যাণে আমার আজীবনের অধরা স্বপ্ন সত্যি হলো এই ন্যু ক্যাম্পে বসে এল ক্ল্যাসিকো দেখলাম তার জন্য একটু কেন এক বছরও অপেক্ষা করা যায়।

কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধর ছেলে আসলেন। বৃদ্ধ পরিচয় করিয়ে দিলেন এটা আমার ছেলে। আমার মুখে তখন কোন কথা নেই। আকাশের ওপরে আকাশ তারও ওপরে আরেকটা আকাশ যেন আমার মাথার উপর এক সাথে ভেঙ্গে পড়েছে।বৃদ্ধ তার যে ছেলেকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাকে যে আমি আগে থেকেই চিনি। আমার সামনে দাড়ানো বৃদ্ধর সেই ছেলেটির নাম জর্ডি আলবা। বার্সেলোনা ফুটবল দলের বিখ্যাত খেলোয়াড় তিনি।
img20171011_183238

জাজাফী
ওয়েবসাইটঃ www.zazafee.com
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 

বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

img20171011_101743
বিশ্ব প্রবীণ দিবস চলে গেল। বাংলা ট্রিবিউনে ওল্ডহোমের উপর একটি ফিচার পড়ে মনটা ব্যাথায় ভরে উঠলো।
পাঁচ সন্তানের পাঁচজনই আমেরিকা,
কানাডা,অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন টাকার অভাব নেই কিন্তু ঠাই হয়নি মায়ের। আশ্রয় নিয়েছেন ওল্ড হোমে। বাদ পড়েনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের জ্ঞানী অধ্যাপক। সমাজের উচ্চশ্রেনীর অনেকের বাবা মা আজ আশ্রয় নিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে ওল্ডহোম।

আক্ষেপ করে এক মা বললেন “প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করবে না”। ওরাও নিশ্চই একদিন এখানেই আসবে। এটা শুনে মনে পড়লো নচিকেতার গাওয়া বৃদ্ধাশ্রম গানটির কথা।যেখানে মা অপেক্ষায় আছেন আরো কটাদিন বেঁচে থাকার যেন তার সন্তানও বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিবেন সেই দৃশ্যটি তিনি দেখে যেতে পারেন।ওল্ডহোম বিষয়টি প্রতিটি সন্তানের জন্য কলংঙ্ক।

ছোটবেলায় আমরা যখন অসহায় ছিলাম তখন বাবা মাই ছিলেন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঠিক তেমনি বাবা মায়ের বয়স হলে ছেলে মেয়েরাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হওয়ার কথা কিন্তু আমরা অমানুষ হয়ে গেছি। বাবা মাকে বোঝা মনে করে ফেলে রেখে আসছি ওল্ড হোমে।

আমি তখন খুব ছোট। বাবা পুকুরে সাতার কেটে গোসল করতেন। আমি বলতাম বাবা আমিও পুকুরে নামবো। বাবা পুকুর থেকে উঠে এসে আমাকে তুলে ধরতেন তার পর ছুড়ে মারতেন পুকুরের পানিতে! আমি প্রায় ডুবেই যেতাম। অনেক পানি খেতাম। বাবা তখন আমাকে তুলে নিতেন। এভাবে অনেক বার বাবা আমাকে মাঝ পুকুরে ছুড়ে মেরেছেন। আমি অবিরাম পানি খেয়েছি আর ডুবতে ডুবতে বাবা আমাকে টেনে তুলেছেন। আমার মনে হত বাবা আমাকে ভালবাসলে নিশ্চই ওভাবে ছুড়ে ফেলতেন না।

ভাইয়ার একটা সাইকেল ছিল। আমি চাইতাম সেই সাইকেল চালানো শিখবো। বাবাকে অনেকবার বলার পর বাবা আমাকে সাইকেলে চড়তে দিলেন। নিজে পিছনে ধরে রাখলেন।আমি খুব বিশ্বাস করে সাইকেলে উঠে বসলাম। প্যাডেল করলাম আস্তে আস্তে। বাবা তখন হুট করে সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি কিছুদুর গিয়ে পড়ে গেলাম। হাটু ছুলে গেল। এভাবে বাবা আমাকে অনেক বার সাইকেলে চড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিশ্চই আমাকে ওভাবে সাইকেলে বসিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিতেন না।

আমি জুতার ফিতা বাঁধতে পারতাম না। বাবাকে বলার পরও বাবা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিত না। অথচ আমার অন্য বন্ধুদের বাবা তাদের জুতার ফিতা বেঁধে দিত। বাবা আমার পাশে বসে বার বার বলতেন এভাবে বাঁধো ওভাবে বাঁধো কিন্তু নিজে বেঁধে দিতেন না। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতেন তবে নিশ্চই ছোট বেলা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিতেন।

বাবার চা খাওয়ার খুব নেশা ছিল।নিজে একা একা চা বানিয়ে খেতেন।আমি যখন বলতাম বাবা আমাকেও এক কাপ দাওনা প্লিজ। বাবা কিচেন দেখিয়ে দিতেন। বলে দিতেন কি কি করতে হবে। নিজের বানানো এককাপ চা খাওয়ার পরও বলতেন আমার জন্যও এক কাপ বানাসতো। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিজে যখন চা বানিয়েছিল আমার জন্যও এক কাপ বানাতো।

বাবা খুব গাছে চড়তে পারতো।আমারও খুব লোভ হত। বাবাকে বলতেই বাবা আমাকে কাঁধে করে নারকেল গাছের বেশ উপরে নিয়ে যেত। তার পর বলতো গাছ জড়িয়ে ধরতে। আমি যখনি জড়িয়ে ধরতাম বাবা আমাকে ফেলে রেখে তরতর করে নিচে নেমে যেত। আমার কান্না পেতো। আমি তখন আস্তে আস্তে হেচড়েপেচড়ে নিচে নামতাম আর আমার বুকটা ছুলে যেত। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে ওরকমটি করতে পারতো না।

এক প্যারেন্টস ডেতে বাবাকে নিয়ে বলতে বলা হয়েছিল আমাকে। আমি তখন এসব কথা বলেছিলাম। এ গুলোই ছিল বাবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। পরদিন বাংলা মিস ক্লাসে এসে বললেন আজ আর আমি পড়াবোনা। তোমাদের সাথে গল্প করবো।তোমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করবো তোমরা যারা উত্তর জানো তারা হাত উচু করবা আর না জানলে চুপ থাকবা। তিনি প্রশ্ন করলেন তোমাদের মধ্যে কে কে সাতার কাটতে পারো? আমি সাথে সাথে হাত উচু করলাম। মিস আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আর কেউ হাত উচু করেনি।তার মানে তারা কেউ সাতার কাটতে পারেনা। এর পর মিস একে একে প্রশ্ন করলেন কে কে সাইকেল চালাতে পারো, কে কে গাছে চড়তে পারো, কে কে নিজে নিজে জুতার ফিতা বাঁধতে পারো ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখা গেল আমি ছাড়া আর কেউ হাত উচু করছেনা।

মিস আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললেন তুমি কি বুঝতে পারছো কিছু? আমি বুঝতে পারলাম।আমার অগচরে বাবা আমাকে সব শিখিয়েছেন।আমার চোখেও তখন পানি চলে এসেছিল।সেদিন বাড়িতে গিয়ে দেখি আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কেঁদেছিলাম। বলেছিলাম বাবা তুমিই পৃথিবীর সেরা ।

হয়তো কারো কারো বাবা তাকে মাসে দু মাসে আগ্রার তাজমহল,মিশরের পিরামিড কিংবা নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে যায়।হয়তো কারো কারো বাবা তাকে আইফোন সিক্স থেকে শুরু করে অন্য সব না চাইতেই দেয়।আবার কারো কারো বাবা হয়তো সন্তানকে কিছুই দিতে পারেনা।এমনকি দুবেলা পেটভরে খাবারও দিতে পারেনা।কিন্তু বাবাদের ভালবাসার কোন কমতি নেই।যে বাবা সন্তানকে আলিশান বাড়ি দিচ্ছেন ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন প্যারিসে,ভেনিসে ট্রয় নগরিতে সেই বাবা তার সন্তানকে যেমন ভালবাসেন বাসতে চান ঠিক তেমনি ভাবে যে বাবা মা তার সন্তানের মুখে পেট পুরে খাওয়ার মত খাবারটুকুও তুলে দিতে পারছেন না তারাও তাদের সন্তানকে একই রকম ভালবাসেন।শুধু ভাগ্যের দরুন বাকিদের মত দেখাতে পারেন না।

বাবারা আসলে সন্তানের কাছে তেমন কিছু চায়না।যদিও সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল তারা যেমন আমাদের অসহায় কালে আমাদের আগলে রেখেছিলেন তেমনি তাদের অসহায় কালে আমরাও তাদের যেন আগলে রাখি।এবার একটা গল্প বলি শুনুন, এক বৃদ্ধ লোক একটা মোবাইল মেকানিকের কাছে তার মোবাইলটা দিয়ে বললেন দেখতো বাবা আমার মোবাইলটার কি সমস্যা।কল আসেনা। মোবাইল মেকানিক ভাল করে দেখে বললেন চাচা আপনার মোবাইলেরতো কোন সমস্যা নেই। বৃদ্ধা তখন মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে বললেন মোবাইল যদি ঠিকই থাকবে তবে এই মোবাইলে আমার ছেলে মেয়েদের ফোন আসে না কেন?বৃদ্ধর চোখে তখন অবিরাম অশ্রুধারা।

তার সন্তানেরা তাকে ছেড়ে গেছে ওল্ড হোমে। তাদের কারো কারো আছে আলিশান বাড়ি ঠিক যেমনটি আমরা এবারের প্রবীণ দিবসে বাংলাট্রিবিউনের করা ফিচারে দেখতে পেলাম। মায়ের একধার দুধের দাম শরীরের চামড়া কেটে জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হয়না বলে আমরা শুনেছি। অন্ধকারে ভয় পেয়ে যে মাকে জড়িয়ে ধরতাম সেই মাকে কি করে আমরা ওল্ডহোমে ফেলে যাই জানা নেই। একটিবারও কি কখনো আমরা ভেবে দেখেছি আমাদের সেই সব দিনের কথা।

যে বাবার গলাজড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসতো না।যে মা হাতে তুলে খাইয়ে না দিলে খাওয়া হত না।যে মায়ের আঁচলের তলে ছিল আমাদের সব থেকে নিরাপদ ভূবন সেই মা বাবাকে কি করে সন্তান হয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি তা ভাবতেই মনে হচ্ছে ধরণী দ্বিধা হও।নিজের স্ত্রী সন্তান যদি বাড়িতে থাকার যায়গা পায়,দু বেলা দু মুঠো ভাত পায় তবে জন্মদাতা পিতা মাতা কেন পাবেনা?

ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দিতে চাই।আমাদের দেশে আইন করা উচিত কেউ যদি বাবা মাকে ওল্ডহোমে রেখে আসে তবে তাদের জেল জরিমানা করা হবে। এতো নীতি বাক্য বলে লিখে ভাষণ দিয়ে যখন ওই সব সন্তানদের মনে বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব বুঝানো যায়নি তখন আইন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।লোকে যেমন বলে সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠেনা অনেকটা সেরকম।অন্তত তার পরও বাবা মা নিজের সন্তান পরিবারের সাথে থাকুক আমি এমনটিই চাই।পৃথিবীতে কোন মা বাবাকে যেন উহ শব্দটিও করতে না হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। আজ থেকে পণ করি নিজে খেয়ে না খেয়ে হলেও বাবা মাকে দেখে রাখবো ভালবাসবো। পৃথিবীর সব দুঃখী বাবা মার কাছে সেই সব অপরাধী সন্তানের হয়ে ক্ষমা চাই।
img20171011_101840
———–
বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০
০১ অক্টোবর ২০১৭
দৈনিক ইত্তেফাকে ৩ অক্টোবর ২০১৭ প্রকাশিত

 

দাম্পত্য – ৬

পরিবারে একজন পুরুষের সবচেয়ে প্রিয় দুইটি নারী – মা আর স্ত্রীর মধ্যকার বিবাদের অনেকটাই চলে ভালবাসার দাবি তে। নতুন দম্পতিরা সত্যিই বুঝতে পারেন না, একে অপরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে তারা আর সবার থেকে কতটা আলাদা হয়ে গেছেন। একটা ফ্রেন্ড সার্কেলে দুজন জুটি বেঁধে গেলে অন্যদের কেমন হিংসে হয় এটা একটু কল্পনা করলে বুঝতে পারবেন
‘কাছের মানুষটা পর হয়ে গেছে’ – এই উপলব্ধি পরিবারের অন্যদের কতটা কষ্ট দেয়।
img20171010_233209
মানি, নতুন দম্পতির পরস্পরকে জানা ও চেনা প্রয়োজন। কিন্তু তা কি আর সব কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে তারপর?
img20171010_233519
দুটো গাছ একজন আরেকজনের উপর ভর করে বেড়ে উঠবে। তার জন্য কি শেকড়গুলি সব উপড়ে তবেই এক হতে হবে? লতাগুলো হয়ত পরস্পরের বাহুডোরে থেকে কিছুই টের পাবেনা। কিন্তু মাটির কান্না? মাটি সে শূন্যতা ভরবে কী দিয়ে?

তিল তিল করে বুক চিরে যে আদরের ফসল এত বড় হয়েছে, তার উপস্থিতি ছাড়া মাটির ত আর কিছুই নেই! সে বাঁচবে কী নিয়ে?
img20171010_232901
আমরা সহজে বলি, বাবা মায়েরা আমাদের যথেষ্ট ‘স্পেস’ দেয়না। সত্যি কথা কী, স্পেস দেয়ার জন্য মায়ার বাঁধন একটা একটা করে ছিঁড়ে রিক্ত শূন্য হয়ে, তবেই স্পেস তৈরি করা যায়। স্পেস মানে ত খালি জায়গা, তাই না? যে জায়গাটা বাবা মা মনোযোগ দিয়ে যত্ন দিয়ে ঘিরে রেখেছিল, স্পেস দেয়ার জন্য সেখান থেকে তাদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে, তাই ত?
img20171010_233238
গাছের উপমায় আবারো ফিরে আসি। শেকড় আর লতানো বাহু – দুটোর টানই তীব্র। দুটোর জন্যই তার আকর্ষণ অসীম। মমতাময়ী মা যেভাবে খাবার জন্য পীড়াপীড়ি করত, অসুখ হলে অস্থির হত – ওই আনন্দগুলি ত অন্যরকম! অমনি করে ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছে ত কোনদিন মরে না।
img20171010_233259
আর স্ত্রী? তার জন্য একটা পুরুষ জীবন দিতে পারে। তার যা আছে সবকিছু বিনিয়োগ করতে পারে।

ভুল হয়ে যায় তখনই, যখন ভালবাসায় অবুঝ হয়ে এই মানুষগুলো তাদের আপন আপন গন্ডি ছেড়ে আরও অনেকটা দখল করে নিতে চায়। তাই পুরুষটিকে হতে হবে খুবই সচেতন। মা যেন কখনও না ভাবে ছেলেটা বদলে গেছে। আগের মত করে সময় দিতে না পারলেও আদুরে গলায় ‘মা তোমার ঐ রান্নাটা অনেকদিন খাইনা’, বা ‘মা আমার মাথায় একটু হাত রাখ’ – এ ধরণের কথা বলে ছোট ছেলেটা হয়ে গেলে মায়ের অনেক দুঃখ দূর হয়ে যাবে।
img20171010_233147
মায়ের বয়স হয়েছে, তিনি চান বউ সংসারের দায়িত্ব নিক, কিন্তু এত যত্নে গড়ে তোলা সিস্টেম একটা আনাড়ি মেয়ের হাতে তুলে দেয়ার আগে তিনি চাইবেন মেয়েটাকে তার সিস্টেমে অভ্যস্ত করিয়ে নিতে। কিন্তু সুপারভাইজিং, ট্রেনিং বেশ কঠিন কাজ। অনেক ধৈর্য আর সহনশীলতা দরকার হয়। বিভিন্ন কারণে গুরুজনেরা এই বয়সে অনেক সময় বুঝতেও পারেন না কোন কথাটায় কতটুকু কষ্ট পেতে পারে ছেলেমেয়েরা।
img20171010_233107
এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সেনসিটিভিটি এর মাত্রা বদলায়। যুক্তি দিয়ে সরাসরি ভুল ধরাটা আমাদের প্রজন্মে কমন, উনারা হয়ত খুবই আহত হন। আবার স্বভাব চরিত্র নিয়ে একটু খোঁচা মেরে কথা বলাটা উনাদের কাছে হয়ত নিছক রসিকতা, আমরা ভীষণ অফেন্ডেড হই।

যাই হোক, নতুন বউয়ের এ ধরণের আচরণে কষ্ট লাগবে। স্বভাবতই সে সবার আগে স্বামীকে খুলে বলবে।
img20171010_233011
স্বামীর দায়িত্ব এখানে রিঅ্যাক্ট না করে পুরোটা শোনা, মা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে অকপটে স্বীকার করা, তারপর মায়ের দোষগুলোর পিছনে ওনার ভাল নিয়ত টুকু দেখানোর চেষ্টা করা, বা বুঝিয়ে বলা যে এটা জেনারেশন গ্যাপ ইত্যাদি। এতে দুটো সুবিধা আছে। স্ত্রী বুঝবে এটা একটা সমস্যা, আর তা সমাধান করার জন্য সে একা নয়, আরেকটি সহানুভূতিশীল মন তার পাশে আছে।

মায়ের দোষ ছেলে স্বীকার করলে স্ত্রী তখন ব্যাপারটাকে একটা সমস্যা হিসেবেই দেখবে, অন্যায় হিসেবে না। এতে করে সমস্যার সমাধান না হোক, সমস্যাটা আপনাদের মধ্যকার বন্ধন আরো দৃঢ় করতেই সাহায্য করবে।

আবার এদিকে মা খুবই কষ্ট পাবেন যদি ছেলে এসে তার দোষ ধরিয়ে দেয় বা বউয়ের দোহাই দেয়। আগে থেকে বাবা মা সমালোচনা গ্রহণ করতে অভ্যস্ত না হলে বিয়ের পরে সে চেষ্টা করতে যাবেন না। বরং এভাবে শুরু করতে পারেন, ‘কী মা, তোমার বউ নাকি এটা এটা করেছে!’
img20171010_233715
মায়ের প্রতি আপনার আবেগ যেন প্রকাশ পায়, বউয়ের নাম ধরে না বলে ‘তোমার বউ’ বলার মাধ্যমে তাদের দুজনের সম্পর্কের উপর জোর দিন (নিজেকে আড়াল করে), এটা করেছে – বলার মাধ্যমে হালকা একটা দোষারোপের ভঙ্গি করুন। এতে করে মায়ের মনে ‘ছেলে আমার কথা শুনবে না’ এই ধরণের ডিফেন্সিভ ভাবটা থাকবেনা। উনি মন খুলে কথা বলতে পারবেন। আপনি আন্তরিকভাবে শুনলেই উনার মনটা অনেক শান্ত হয়ে যাবে। সমস্যা যদি ঘরের কাজ সংক্রান্ত হয় তাহলে কাজটা আপনি শুরু করুন, স্ত্রীকে আগে থেকেই রাজি করিয়ে রাখবেন যাতে সেও জয়েন করে।
img20171010_233546
বউ শাশুড়ি ঘটিত সমস্যা ত আর হাদীস এ নেই, কিন্তু তার সূত্রপাত যেখানে, ভালবাসা জনিত ঈর্ষা, তার উদাহরণ কিন্তু ঠিকই আছে। আয়িশা (রা) এর ঘরে মেহমানদের জন্য রাসুলুল্লাহ (স) এর অপর স্ত্রী খাবার পাঠিয়েছিলেন। আয়িশা (রা) রাগে খাবার সহ বাটি মাটিতে ফেলে দেন। কী অস্বস্তিকর অবস্থা! রাসুলুল্লাহ (স) করলেন কী, ‘তোমাদের মা ঈর্ষায় পড়েছেন’ বলে নিজেই ভাঙা টুকরাগুলো মাটি থেকে তুলতে লাগলেন। মেহমানদের সামনে অপমান করা হয়েছে মনে করে রাগ করলেন না, শাস্তি দিলেন না, মেহমানদের কাছে বললেন ‘তোমাদের মা’; আবার অপর স্ত্রীর বাটি ভেঙে তার উপর অন্যায় করা হয়েছে, এ জন্য আয়িশা (রা) এর ঘর থেকে একটা বাটি নিয়ে উনাকে ফেরত দিলেন।
img20171010_232834
কে ঠিক আর কে বেঠিক সে বিচার করতে যাবেন না ভুলেও। দুজনেই অবুঝ, দুজনেই আপনাকে খুব ভালবাসে, দুজনেই চায় আপনার ঘরটাকে সুখ দিয়ে ভরিয়ে তুলতে। আপনার কাজ শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা করা। শেকড় থেকে জীবনীশক্তি আর সঙ্গী গাছের থেকে দৃঢ়তা পেলে একটি গাছ ফুলে ফলে ছায়ায় কত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে চিন্তা করে দেখেছেন?

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

(১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হল “পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতার পথ।”
img20171010_075948
১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছরের মত ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। । কিছু দেশে এই দিনকে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসাবে পালন করা হয় । সেই ১৯৯২ সময় ১৫০টি দেশের সমন্বয়ে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেল্থ- এর উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

গত সাত বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় কি কি ছিল?
আসুন এক নজরে দেখে আসি…
img20171010_070808
২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য:
‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়বে,এই সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের মূল উদ্দেশ্য।
img20171010_070451
২০১৬ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’

বর্তমান বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ,বংশগতি ও অন্যান্য শরীরবৃত্তিক ও মনোসামাজিক মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম দুটি কারণ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।
img20171010_070054
২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য:
‘মানসিক স্বাস্থ্য মর্যাদাবোধ’

মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও মানুষ। তাদের সমাজে অন্যান্য ব্যক্তির মতো সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
img20171010_065721
২০১৪ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সিজোফ্রেনিয়ার সাথে বসবাস’

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পায় না। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তরা যাতে সবচেয়ে ভালো সেবা এবং এই রোগ থেকে উত্তরণের সুযোগ পায়, সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
img20171010_065458
২০১৩ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ”

মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ বা বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্মিলিত বিষয়গুল নিয়ে খোলা বা উন্মুক্ত আলোচনায় উত্সাহিত করা। এবং প্রয়োজনে সহায়তা এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরদার।
img20171010_065101
২০১২ সালের প্রতিপাদ্য:
“বিষণ্নতা: একটি বিশ্বব্যাপী সঙ্কট”

পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার প্রায় দ্বিগুণ। বিষণ্নতার কারণে ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা ব্যাহত হয়।
img20171010_064845
২০১১ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ”

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যদি বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এবং কার্যকরী ও সম্মানজনক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, তবে জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরিত হবে। ফলে তা মানব ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণকর হবে।
img20171010_064238
২০১০ সালের প্রতিপাদ্য:
“নগরায়ণ: জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ”

ঐতিহাসিকভাবে,শহর হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি ইঞ্জিন,সংস্কৃতি কেন্দ্র। কিন্তু যখন মানব সম্ভাব্যতা অসীম হয়, তখন সম্পদ সীমিত। নগরায়ণ সমস্যার সৃষ্টি করে, কিন্তু সমাধান করতে হলে এখনই ভাবতে হবে।
img20171010_080942
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয় প্রতি বছর।
রেফারেন্স: Wiki, WHO.

ফাতেমা শাহরিন

 

দাম্পত্য -৫

দম্পতি মানে কী? আভিধানিক অর্থে জায়া আর পতি।
img20171009_155336
সুখী দম্পতি মানে তাহলে একজোড়া সুখী চড়াই চড়ানি – সমীকরণটা যদি এত সহজ হত, তাহলে চারপাশে শুধু সুখেরই বন্যা বইত।
img20171009_155508
বিয়ের সাথে সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে চলে আসে শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয় স্বজন। বিয়ে হলে একটা ছেলেকে বা একটা মেয়েকে একই সাথে অনেকগুলো বন্ধন তৈরি করতে হয়। এদের একেকটার ডাইমেনশন একেক রকম। যেমন শ্বশুর শাশুড়ির চাহিদার সাথে শ্যালক সম্বন্ধীয় আত্মীয়ের চাহিদার মিল নেই।
img20171009_155137
একটা নতুন বউ বা নতুন জামাই, বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন হাসি খুশি, লাজুক একটা ভাব নিয়ে সম্পর্কের বাঁধনে জড়ায়, নানা ধরণের আত্মীয়ের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তা থেকে একটু সরে আসলেই অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়।
img20171009_154613
আজকের লেখাটা শুধু ছেলেদের উদ্দেশ্য করে লিখব। আমি জানি, বিয়ের আগে ছেলেরা খুবই ভয় পেয়ে যায় তার সবচেয়ে প্রিয় দু’জন মানুষ, মা আর স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে তাই নিয়ে। অনেক ছেলেই এই অশান্তির ভয়ে বিয়ে করতেও চায়না।
img20171009_155101
তারা বুঝেও উঠতে পারেনা কী এমন হয়ে গেল সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে, যে ঘরে পা দিয়েই মায়ের ছলছল চোখ, স্ত্রীর অগ্নিবর্ষণ (অথবা উল্টোটা) দেখতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম হয়ত আপনি আসাতে পরিস্থিতি বদলাবে, কিন্তু মনটাকে বদলাবে কে? মায়ের কাছে বউয়ের নামে অসন্তোষ, বউয়ের কাছে মায়ের নামে গঞ্জনা – এসব শুনে শুনে ছেলেটার ত মানুষের উপর থেকে সম্মানটাই উঠে যাওয়ার কথা। প্রথম প্রথম ছেলেটার মন খারাপ থাকে, নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়, একটা সময় বুঝতে পারে, উপেক্ষা করাটাই সহজতম পন্থা। দুইজন কে আলাদা আলাদা তাল দিয়ে মন রক্ষা করলেই সুন্দর শান্তি থাকবে ঘরে। আর সব মেয়েলি ব্যাপার নিয়ে ছেলেদের মাথা ঘামাতে নেই। তাদের সমস্যা তারাই সমাধান করুক, এ সময়টা বরং আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।
img20171009_154819
আমি দাবি করছিনা আমি এই হাজার বছরের সমস্যার কোন ইনস্ট্যান্ট সমাধান নিয়ে এসেছি। আমি চাই আপনি আপনার ভূমিকাটাকে একটু যাচাই করুন। একজন সন্তান হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে, একটা পরিবারের প্রধান হিসেবে (শ্বশুরেরা সাধারণত মৌনী ঋষি হন – সময় মত খাবার, গরম পানি আর সংবাদপত্র পেলেই তাদের চলে তাই ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট এর হর্তাকর্তা হিসেবে) আপনার কি আরো কিছু করার ছিল? আমি জানি এটা এমন এক সমস্যা যা নিয়ে অফিসের কলিগের সাথে আলাপ করা যায়না। বন্ধুরাও হয়ত ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়েই দায় সারবে। কিন্তু আপনি কি আরো একটু বুদ্ধি খরচ করে আরো একটু বেশি ইফোর্ট দিয়ে পরিবেশটাকে বদলাতে পারতেন? নিদেনপক্ষে আপনার মা ও স্ত্রীর মধ্যে দূরত্বটা একটু ঘুচাতে পারতেন?
img20171009_155838
প্রথমেই বলি, ছেলেরা ভুল আশা করে যে তার স্ত্রী তার মাকে ঠিক তার মত করেই ভালবাসবে। যদি না পারে, তাহলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মেয়েরা এত সংকীর্ণমনা কেন? কিন্তু ব্যাপারটা যে অসম্ভব যে কোন মানুষের জন্যই! মায়ের সাথে সম্পর্কটা গড়ে ওঠে অনেক বছরের আদর ভালবাসার উপর ভিত্তি করে। সন্তানের দোষ মায়ের চোখে ধরা পড়ে না, তেমনি বাবা মায়েরও অনেক অন্যায় ছেলে মেয়েরা দেখেও না দেখার ভান করে।
img20171009_154106
অন্য মানুষের জন্য ত এটা করা যায়না। একটা ছেলে কি পারবে তার স্ত্রীর মাকে আপন মায়ের সমান ভালবাসতে? হ্যা, সার্ভিস হয়ত আপন মায়ের সমান দেয়া যায়, কিন্তু দোষ ক্ষমা করার বা উদারতার রেঞ্জটা কিন্তু এখানে কমই হবে, আর এটা খুবই ন্যাচারাল। মানতে কষ্ট হলে নিজেকে দিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন। শ্বশুরবাড়িতে এক মাসের জন্য থেকে আসুন। জামাই হিসেবে না, ছেলে হিসেবে। বাজার করে দিন, বিল দিন, শ্যালিকাকে পড়ান, সংসারের খরচপাতির ব্যবস্থা করুন, শাশুড়িকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান, তখনই বুঝতে পারবেন অন্য একটা পরিবারে গিয়ে ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে দিনের পর দিন সবাইকে খুশি রাখা কত কঠিন।
img20171009_162454
দ্বিতীয়ত, একজন ভাল মা মানেই একজন ভাল শাশুড়ি না। একজন চমৎকার মানুষ মানেই একজন ভাল বৌমা না। একজন ভাল লেখক যেমন ভাল প্রশাসক না – তেমনি একেকটা সম্পর্কের ডাইমেনশন একেকরকম, দায়িত্বগুলিও ভিন্ন। সেজন্য আপনার ফেরেশতাসম মা শাশুড়ি হিসেবে ব্যর্থ হলে বুক ভেঙে যাওয়ার কোন কারণ নেই। যে মেয়েটা ফুল দেখত, গান গাইত, চিঠি লিখত, বিয়ের পর ঘরে এসে চরম পলিটিক্স শুরু করলে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরকার নেই।
img20171009_163212
তৃতীয়ত, মা আর স্ত্রী – এদের মধ্যে যে বন্ধন তা আপনাকে কেন্দ্র করেই রচিত। এই সম্পর্ক কোন খাতে বইবে – সেটাও অনেকটা নির্ভর করছে আপনার সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন তার উপর। এটা একটা টাগ অব ওয়ারের মত, দুটো নারী তাদের সমস্ত কিছু দিয়ে একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, পুরস্কার আর কিছু না, আপনার অখন্ড মনোযোগ। বাস্তবিক, আমার মনে হয়, ছেলেটার একটা ক্লোন করে যদি দু’জনের হাতে দুটো ধরিয়ে দেয়া যেত – তাহলে বেশ হত।
img20171009_154519
চতুর্থ, এরকম সিলি বিষয় নিয়ে এরা এমন করে কেন – এরকম একটা উঁচুদরের চিন্তা করে গা বাঁচিয়ে চলার অবকাশ নেই। সিলি বিষয়গুলি মোটেও সিলি না, কারণ এর কারণে পরিবার নামক দেয়ালটায় বড়সড় ফাটল দেখা দিচ্ছে। আপনি কি শুধু এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখবেন, আর মাঝে মধ্যে দুই পক্ষেই হাত লাগাবেন? এর বেশি কি আপনার কিছু করার নেই?

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

বেঁচে থাকার আকুল আকুতি….(সুইসাইড নোট)

জীবন সুন্দর… আকাশ বাতাস পাহাড় সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেচে থাকা।
img20171008_140038
তবুও কেন যেন জীবনকে জীবন দিতে ইচ্ছে করে না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মানুষের আত্মকথা——
img20171008_133632
আমি প্রায়ই মৃত আইডিগুলোতে ঘুরে বেড়াই। বিশেষ করে যারা সুইসাইড করে তাদের।
প্রতিটি আইডি প্রায় একই রকম।
মাত্র ছয়মাসের স্টাটাস পড়লেই বোঝা যায়
কি প্রচন্ড “ডিপ্রেশন” তাকে গ্রাস করে রেখেছিল।
img20171008_133023
কি চেয়েছিল তারা-
♣প্রত্যেকই হয়ত একটু সহানুভূতির আশায়,
♣কাউন্সিলিং এর আশায়,
♣খড়কুটো আকড়ে ধরে হলেও বেঁচে
থাকার নেশায়,
♣বারবার লিখে গেছে,
কি লিখত তারা:
♣তার মন ভালো নেই।
♣কেউ কেউ সরাসরিই দিনের পর দিন
সংকেত দিয়ে গেছে,
♣এই পৃথিবীতে সে আর বেশিদিন নেই।
img20171008_140513
♣♣♣আমি অবাক হয়ে দেখেছি,
মৃত আইডি বিবাহিত হলে,
তার বেশিরভাগ বন্ধুই,
দাম্পত্যকলহ ভেবে এড়িয়ে গেছে।
অথচ সেই একই আইডির পোস্ট করা
ছবিতে লাইক,কমেন্ট উপচে পরেছে।
♣♣♣আর মৃত আইডি আনম্যারিড হলে,
সেখানেও একই।
যা কয়েকটা কমেন্ট আছে,সেগুলি এরকম-
♣দোস্ত কবে মরবি?
♣বুদ্ধি না পাইলে ফুনাইস।
♣চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে যান।
♣স্মাইলি ইমো
♣মিলাদের আইটেমে কিন্ত লাড্ডু চাই।
………..আরো ব্লা ব্লা ব্লা।
img20171008_132955
আর যখন সব শেষ,রিপ্লাইয়ের আশা নেই।
তখন তাদেরই কষ্টে ভরা কমেন্ট,
♣কিভাবে পারলি?
♣ক্যামনে ভুলব তোকে?
♣তুই এত বোকা?
♣একবার খুলে বলতি,
♣আমরা কি ছিলাম না?
আসলে কি ছিল কেউ? আমি বলছি না,এই হাহাকার মিথ্যে। আমরা হয়ত না বুঝেই ফানি কমেন্ট করি
বা ইগনোর করি।
কিন্তু আমার বন্ধুর মৃত্যুর জন্য,
আমি কি একটু হলেও দায়ী না?
img20171008_141251
প্রতিটি মানুষেরই দুঃখ কষ্ট থাকে। তবে একেকজনের দুঃখ কষ্ট গ্রহন করার ক্ষমতা একেকরকম।
♣কেউ হয়ত হাসিমুখে স্বামীর মারের দাগকে
বাথরুমে পরে যাওয়ার দাগে পাল্টে নেয়।
♣আবার কেউ হয়ত স্বামির চোখে,সামান্য
অবহেলার আভাস পেলেও ভেঙে পড়ে।
…….কারো কষ্টই কিন্ত কম না।
কষ্ট পাওয়ার ধরন আলাদা হতে পারে
কিন্ত বুকের পোড়াটা মনে হয় সবারই এক।
আজ পাবলিকলি বলছি,
গত কয়েকটা বছর ধরে আমি প্রচন্ড
ডিপ্রেশনে ভুগছি। একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমাকে গত চারটা মাস ধরে ডিপ্রেশনের ঔষধ খেতে হচ্ছে।
img20171008_133531
♣কতদিন যে রাতদিন মিলিয়ে আমি
চারঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারিনা!!!
♣আমার ক্লান্তি,
♣আমার অবসন্নতা,
♣আমার ভালো লাগেনা রোগ
♣আমাকে ধীরে ধীরে নিঃশ্বেষ করে দিচ্ছে।
♥♥ভাবছেন দাম্পত্য কলহে আছি?
কসমকেটে বলছি, না না না…
♣টুকটাক মান অভিমান সবার যেমন থাকে,
আমাদেরও আছে।
তাহলে কেন এই ডিপ্রেশন ??????
আমি জানিনা,সত্যিই জানিনা। হয়ত এর কারনঃ
★আব্বুর হঠাৎই চলে যাওয়া।
★খুব প্রিয় কিছু মানুষের অকাল মৃত্যু।
★অতীতের জালে আটকে থাকা।
★নিজের জন্য সময় বের করতে না পারা।
★প্রতিদিনকার একঘেয়ে রুটিন।
★অতিরিক্ত আবেগ।
★নিজের মা কে পরাধীনতার শেকলে বাধা
দেখতে দেখতে বড় হওয়া।
★বাবার বাড়ি বলতে কিছু না থাকা।
★ভাইবোন নেই, মনটা উজাড় করে কথা
বলার কেউ নেই।
★সারাটা বছর সুখে দুখে খুশিতে
img20171008_135019
মা কে জড়িয়ে থাকি।আর আমার কাছে ঈদ মানে এখন,এক আতংকের নাম।কারন তখন মাকে এখানে সেখানে রেখে আমি ঈদ করতে যাই।
★আমার কিছু চেয়ে নিতে,বলে বলে করে নিতে
♣একেবারেই ভালো লাগে না।
চাইলে,বললে তো রাস্তার মানুষও
এগিয়ে আসে।
♣যে আমার আপন,কাছের,
সে আমাকে বুঝে নিতে না পারলে,
আমি বুঝাই না।
শুধু অভিমান জমা করি।

★মনটা এখনও প্রচন্ড শিশু,ছটফট করে,
আল্লাদে গদগদ করে।
শরীরটা? এত্ত বড় বড় দায়িত্ব কর্তব্য করে।
★আমার বর,
প্রচন্ড বাস্তববাদী, ওয়েল প্লানার,
হঠাৎই ইচ্ছে হলো তাই!!!
আমার জীবনে নাই!!নাই!!!নাই!!!!
★ডিপ্রেশন যে একটা রোগ
তা আমার পরিবার একেবারেই বুঝেনা।
♣আমার মা মনে করে,
ঝাপিয়ে পরে সংসার সামলালেই আমি
হাবিজাবি চিন্তা করতে পারব না।
♣আমার বর মনে করে,
ফেসবুকই আমার মাথা নষ্ট করছে।
আগে তো এরকম ছিল না।
★আমার বরের কাছে,জীবন মানে,
দৌড়াও,ছুটে চল,দুই হাতে কামাও,চার হাতে জমাও।
এদিক সেদিক ভবিষ্যতে তাকানো যাবে।
♣আমার কাছে,জীবন মানে,
শুধু ছুটে চলা না।
শুধু দম নেয়া না।
আজই যদি না থাকল,কাল দিয়ে কি করব? জীবন মানে বেঁচে থাকা।
♥♥এটুকু পড়েই হাপিয়ে গেছেন?
ভাবছেন এগুলো ডিপ্রেশনের কারন!!
মানুষ কত বড় বড় দুঃখ বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়!!
ঐ যে আগেই বলেছি, একেকজনের কষ্টের ধরন একেকরকম।
♥♥কেউ কেউ একটি ঘাসফুল না দেখার কষ্টে, মরে যেতে চায়।
আমরা একজন আরেকজনের মনস্তত্ত্ব,
কতটুকুই বা বুঝি?????
img20171008_133313
আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি,আমাদের দেশে বোধসম্পন্ন মেয়েরা,একদম দেয়ালে পিঠ না ঠেকে গেলে
মুখ খোলে না।
♣বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায়,
♣দিশেহারার চূড়ান্ত পর্যায়ে,
♣লোকলজ্জার মাথা খেয়ে সংকেত পাঠায়।
কাল থেকে আমার মন এত্ত খারাপ,এত্ত খারাপ
যে, মনে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই।
♥♥তারপর একবুক আশা নিয়ে
অপেক্ষায় থাকে ঘুরে দাড়ানোর।
অজানা আকুতি,বুঝতে চায়,কেউ আছে।
শুনতে চায়,দূর বোকা,আমরা আছি না?
img20171008_133718
(আমাদের আসেপাশে অনেক ভাই বোন ডিপ্রেশনে ভুগছেন। সুতরাং তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের পাশে দাড়ানো এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।)

আসুন তাদের পাশে দাড়াই।

লিখেছেন: ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক(সাইকিয়াট্রি)
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
email: zubayer_miah@yahoo.com

 

সে বাংলাদেশেই ফিরে এসেছিল

পড়াশোনার জন্য এক বাঙ্গালী নারী গেলেন আমেরিকাতে। সেখানেই পড়াশোনার সময় পরিচয় হলো এক আমেরিকান ছেলের সাথে। তার সাথে তার বন্ধুত্ব হলো ভালবাসা হলো এবং বিয়েও হলো। সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটি। এদিকে বাংলাদেশে বাবা মা ভাই বোন কত করে বুঝালো কিন্তু সে শুনলো না। তার পর? মেয়েটির সাথে আমেরিকান ছেলেটির বিয়ে হলো।

img20171008_003707
স্থায়ী ভাবে ম্যানহাটনে বসবাস শুরু করলো এবং এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে এক ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম হলো। ছেলেটি ছিল রাজপুত্রের মত সুন্দর। তাকে যে দেখতো সেই কোলে নিয়ে আদর করতে চাইতো। ছোট্ট রাজপুত্রটিও সবার কোলে যেত।

একটু একটু করে রাজপুত্রটি বড় হতে লাগলো আর তার বন্ধু বাড়তে শুরু করলো। ক্লাসে সবাই তার বন্ধু,অন্য ক্লাসের সবাইও তার বন্ধু। এতো সুন্দর দেখতে আর এতো স্মার্ট যে তাকে দেখে ছেলে মেয়ে সবাই তার বন্ধু হতে চাইতো। সে কাউকে নিরাশ করতো না।

img20171008_003757
স্কুলের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে বিশ্বের ইতিহাস নিয়ে জানতে চেষ্টা করতো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।
এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেড সিক্সে ওঠার পর সে জানতে পারলো বাংলাদেশের কথা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা।

img20171008_004329
একটা জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তা ভেবে সে খুবই অবাক হলো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।

img20171008_005441
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।

img20171008_003850
বাবা জানতে চাইলেন সেই দেশটা সেই জাতির নাম কি? ছেলেটি বললো বাঙ্গালী আর বাংলাদেশ।

ছেলের কথা শুনে বাবা চুপ করে গেলেন।তাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটি বললো বাবা তুমি হঠাৎ চুপ করে গেলে কেন? তুমি কি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানো? আমার খুব ইচ্ছে ওই দেশটাতে একবার ঘুরতে যাবো। বাবার চোখেও তখন জল এসে গেল। বাবা বললেন ওই দেশটা তোমার রক্তে মিশে আছে। তোমার মম ওই দেশেই জন্মেছে!!
বাবার কথা শুনে ছেলেটি ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো। তার এগার বছরের জীবনে সে কোন দিন মমকে এসব কথা বলতে শোনেনি। মম দেখতে একটু অন্যরকম তা বলে মম কখনো মুখে একটা বাংলা কথাও উচ্চারণ করেনি। মমের উপর তখন তার ভীষণ রাগ হলো। অফিস থেকে ফিরে আসার পর সে আর মমের সাথে কথা বললো না। তার যে ভীষন অভিমান হয়েছে। মম জানতে চাইলেন আমার রাজপুত্রটার আজ মুড অফ কেন? আমার সাথে আড়ি দিছে কেন? সে তখন ভীষন রাগ দেখিয়ে বললো I hate you mom, I really hate you. ছেলের কথা শুনে ভীষন রকম চমকে উঠলেন মহিলাটি। তিনি ভাবতেই পারেননি তার ছেলে তাকে ঘৃণা করতে পারে। তিনি তখন জানতে চাইলেন কেন তুমি আমাকে ঘৃনা করো?

img20171008_004226
সে তখন বললো পৃথিবীর সব থেকে সেরা দেশে তুমি জন্মেছ সব থেকে সেরা জাতীর মানুষ তুমি অথচ কোন দিন সেটা আমাকে বলোনি। আমি ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি পড়তে গিয়ে সেই দেশ সেই জাতি সম্পর্কে জেনে আবেগে কেঁদেছি।

img20171008_004437
বাসায় ফিরে যখন জানলাম তুমি সেই দেশে সেই মাটিতে সেই আলো বাতাসে জন্মেছ অথচ কোন দিন সেই পরিচয় কাউকে দাওনি এমনকি আমাকেও দাওনি তখন তোমাকে আমার ঘৃণা করতেই ইচ্ছে হয়েছে। এমন সোনালী ইতিহাস যারা মনে রাখেনা যারা পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তারাতো ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্য।

ছেলেটির কথা শুনে মহিলার চোখে বহুকাল পর শ্রাবণ ধারা নেমে এলো। তার মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের কথা,নিজের বাবা মা ভাই বোনের কথা। সে তখন ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্যরি বললো। ক্ষমা চাইলো। ছেলেটি তখন বললো তোমাকে ক্ষমা করতে পারি যদি তুমি আমাকে সেই সোনার দেশে নিয়ে যাও। মা তাতে রাজি হলেন। বাবার তখন খুবই ব্যস্ততা আর ছেলেটির তখন সামার ভ্যাকেশান শুরু হচ্ছে সেই বিশাল

img20171008_004401
ছুটিতে সে মাকে সাথে করে পৃথিবীর সব থেকে সেরা জাতির দেশ তার মায়ের দেশ বাংলাদেশে চলে আসলো।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরলো অনেক বন্ধু হলো। এক মাসের ছুটি যখন প্রায় শেষ তখন মা বললেন এবার তো আমাদেরকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে হবে। ছেলেটি বললো যেতে হয় তুমি যাও আমি যাব না। এই দেশটা ছেড়ে আমি পৃথিবীর আর কোথাও যাবনা। আমি বাংলা শিখবো বাংলায় লিখবো বাংলায় পড়বো বাংলায় কথা বলবো। যে ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেই ভাষায় কথা বলতে না পারলে আমার জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। তার মা তাকে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারলেন না শেষে তিনি আমেরিকাতে ফোন করে ছেলেটির বাবাকেও বিষয়টা জানালেন তখন তিনি বললেন ঠিক আছে ও তাহলে বাংলাদেশেই থাকুক আমিও না হয় বাংলাদেশে চলে আসবো।

img20171008_003733
তার পরেরটুকু সব ইতিহাস। ছেলেটি বাংলাদেশে থেকে গেল, বাংলাদেশের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হলেও পাশাপাশি বাংলা শিখতে শুরু করলো। একদিন দুদিন করতে করতে সে বাংলা এতো ভাল ভাবে আয়ত্ব করলো যে কেউ বলতেই পারবে না জাজাফী নামের সেই ছেলেটি ক’দিন হলো বাংলা লিখতে শিখেছে।
—-
লেখকঃ জাজাফী
www.zazafee.com

 

অমনোযোগীতা বাচ্চাদের বৈশিষ্ট্য (প্যারেন্টিং)

বাচ্চাদের সমস্যাগুলো নিয়ে লেখালেখি করা দরকার। সেই চিন্তা ভেবে এই লেখার সুত্রপাত।
আপনি আপনার পর্যবেক্ষণ করুন। অল্পতেই উত্তেজিত হওয়া,ভাঙ্গচুর করা,ছোট ভাইকে পিটানো,অতিরিক্ত জিদ করা,বন্ধুদের সামান্য দুষ্টুমিকেও সহ্য করতে না পারা ইত্যাদির কারণে সে ঘরে ও ঘরের বাইরে সবাইকে সব সময় ব্যস্ত রাখছে কিনা।
কিছু পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হল,

img20171007_162252
স্কুলে বা স্কুলের বাইরে অন্যকাজে গভীর মনোযোগ দিতে না পারা। প্রায়ই ভুল করা বা বিস্তৃত বিষয় বুঝতে কষ্ট হওয়া।

img20171007_162656
কোন কাজে এমনকি খেলাধূলার ক্ষেত্রেও একটানা বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা। বার বার একটা থেকে আরেকটা কাজ করা।

img20171007_162532
যখন তাকে উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলা হয় তখন তার দিকে তাকালে মনে হয় সে সেসব কথা মনোযোগ দিয়ে কখনও শুনছে না।

img20171007_162423
অমনোযোগীতার কারণে নির্দেশমত স্কুলের পড়া ও লেখা এবং অন্যান্য কাজ ঠিকমত করতে না পারার কারণে কপ্লেইন করা।

img20171007_162927
যেসব কাজ করতে চিন্তাভাবনা ও শৃঙ্খলতা দরকার সেসব কাজ করতে অসুবিধাবোধ করা।

img20171007_165205
যেসব কাজে দীর্ঘক্ষণ মনোসংযোগ দরকার যেমন পরীক্ষার সময়, দীর্ঘ লেকচার শোনা, এক্সপেরিমেন্ট করা,হোম ওয়ার্ক করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনীহা,অপছন্দ বা ঠিকমত করতে না পারা।

img20171007_162953
লেখাপড়া কিংবা খেলার জন্য দরকারি জিনিস যেমন বই, খাতা, পেন, পেন্সিল, এডমিট কার্ড, খেলনা ইত্যাদি প্রায়ই হারিয়ে ফেলে।

img20171007_164413
খুব সহজেই মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরে যায়।যেমন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল, ঠিক ঐ সময় দরজার পাশ দিয়ে কেউ যাচ্ছে সাথে সাথেই তার মনোযোগ সেদিকে চলে যায়।

img20171007_164348
দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই কথা-বার্তা ভুলে যায়। এবং এর জন্য সে প্রায় ধমক খায়।

img20171007_162215
রেফারেন্স:DSM-5

Fatema Shahrin

 

দাম্পত্য -৪

আমার বিয়ের আগে একটা মাত্র উপদেশ পেয়েছিলাম আমার এক কাজিনের থেকে, সে বলেছিল, যত যাই হোক, তোদের একটা কমন পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট রাখবি। যাতে তোদের শখের জিনিসটা নিয়ে আলোচনা করতে পারিস, দেখবি অনেক ঝড়ের মধ্যেও ওটা তোদের কাছাকাছি রাখবে।

img20171007_122856
আমি এত ভাল বুঝি নাই। কমন পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট – আমাদের ত আনকমন ইন্টারেস্ট খুঁজে পাওয়াই কষ্ট বেশি। এক সাবজেক্টে পড়াশুনা করেছি, এখনও একই জায়গায় একসাথে পড়ি, কমন না কী? সবই ত কমন। যাই হোক, মূল্যবান উপদেশটার মাথা মুণ্ডু হদিস করতে না পেরে শিকেয় যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম। ল্যাব এ জয়েন করার পর আমার সুপারভাইজর কাপলটাকে দেখে খুউব ভাল লাগত। ভদ্রলোক বেশ আলাভোলা সাইন্টিস্ট, ভদ্রমহিলা খুব কেয়ারিং, অর্গানাইজড। আমরা বাসায় এসে বলাবলি করতাম, আমরা ওদের মত কাপল হব, হ্যা?

img20171007_123050
একই ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করাটা অনেকটা ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে করার মত। পারস্পরিক সমঝোতা তৈরি হওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। উল্টোটাও হতে পারে, ব্যক্তিত্বের সংঘাত আরো বেড়েও যেতে পারে, কারণ ভুলগুলো আরো বেশি চোখে পড়বে।
কিন্তু ভলান্টারি কাজ একসাথে করার মধ্যে যে আনন্দ তার কোন তুলনা হয়না। এতে ত কোন কিছু পার্থিব লাভ বা ক্ষতি নেই, তাই ভুলচুক হলেও অত গায়ে লাগেনা। আবার কাজটা না করলেও ত সে পারত – এরকম একটা মেন্টালিটি থাকে, তাই ছোট্ট কাজকেও খুব মহৎ লাগে। অন্যের জন্য স্বার্থ ছেড়ে কাজ করার একটা বাই ডিফল্ট ভাল অনুভূতি আছে, সেটা প্রিয় মানুষটার সাথে ভাগাভাগি হলে আনন্দটা বহুগুণ বেড়ে যায়। হয়ত কোনদিন ভাল করে চোখ মেলে দেখেন নি, যে তার ভেতর এত মহত্ত্ব আছে। আর কিছু না, ছোট্ট একটা চ্যারিটিও দুজন মিলে প্ল্যান করে করলে হঠাৎ একটা উপলব্ধি আসে, ‘কীসের জন্য তেল নুন চাল ডাল নিয়ে ঝগড়া করছি? আমরা একসাথে ত আছি অ-নে-ক উপরের লেভেলের কাজ করার জন্য।’ আমার সত্যিই মনে হয় আল্লাহ এরকম ইফোর্ট দেখলে এত খুশি হন যে নিজ উদ্যোগে তখন ঘরটা শান্তি দিয়ে ভরে দেন। আর ভাল কাজ একসাথে মিলে করলে খুব গর্বও হয়, আমার বউ/ স্বামী আর দশজনের মত না, সে অন্যদের কথা ভাবে, সে স্বার্থপর না।

Square_07102017_124236
অনেক দম্পতির নানা কারণে ঘরের বাইরে ভলান্টারি কাজ করার সুযোগ নেই। আসলে বাইরে যাওয়ার দরকারও নেই। সন্তান মানুষ করার কাজটাকে যদি কেউ জাস্ট আল্লাহ কে খুশি করার উদ্দেশ্যে পূর্ণ ইফোর্ট দিয়ে করে, তাহলে এর চেয়ে বড় চ্যারিটি আর হয়না। কিন্তু এই প্যারেন্টিং ইস্যু তে এসে দম্পতিরা সবচেয়ে বেশি ধরা খেয়ে যান। তারা এটাকে ঘাড়ের উপর চেপে বসা একটা বোঝা মনে করেন। যদি ভাবতেন একটা নতুন মানুষের জীবনের ট্র্যাক ঠিক করে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের দুজন কে এক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাহলেই হয়ে যেত। স্বামী স্ত্রী করেন কি, একজন আরেকজনের উপর রাগ উঠলে বাচ্চাদের সামনে বা বাচ্চাদেরই উপর প্রতিশোধ নেন। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বাচ্চারা শিখে ফেলবে এই ভয়ে রাগ টা কপ করে গিলে ফেলা, কারণ shaping up someone’s personality is a far more superior task than winning in this psychological tug of war.

img20171007_130734
নিদেনপক্ষে অন্য মানুষটার শখের বিষয়টাতে আন্তরিকভাবে উৎসাহ দিলেও হয়। এই যে বিখ্যাত লেখকরা প্রায় সময়ই অদৈহিক ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, বেশির ভাগ সময় এটার শুরু হয় তাদের যার যার সৃষ্টি নিয়ে উঁচুমানের মত বিনিময় থেকে।

জাগতিক বিষয়াদি হয়ত তার স্ত্রী সামলাচ্ছে, কিন্তু ভাবনার জগতে, সৃষ্টির জগতে সে একদম একা। অন্তত ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর বর্ণনা পড়ে আমার ওরকমই মনে হয়েছে। এক জনপ্রিয় সাহিত্যিক তার স্ত্রী সম্পর্কে লিখেছিল, ওর অনেকগুলো মুগ্ধ করা গুণের মধ্যে একটা হল আমি টুকরো টাকরা কাগজে যাই লিখি ও যত্ন করে একটা বাক্সে গুছিয়ে তুলে রাখে, যদি পরে কাজে লাগে! এক অভিনেত্রী তার স্বামী এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়ার পর দুঃখ করে বলছিলেন, আমার সম্পর্কে কাগজে যত রিপোর্ট আসত সব সে সংগ্রহ করে লেমিনেট করে রাখত।

img20171007_122556
লেখার শুরুতে যে বলেছিলাম, ম্যাজিক স্পেল বা তালিসমান – আমি নিশ্চিত এটাই সে জিনিস। আপনাদের মধ্যে যত সমস্যাই থাকুক, খুঁজে এমন একটা কাজ বের করুন, যেটা দুজনের কাছেই নিঃস্বার্থ ভাল কাজ মনে হয়। যদি সেটা হয় ধর্মচর্চা বা প্রচার, তাহলে ত কথাই নেই। একসাথে করে দেখুন, সঙ্গের মানুষটার জন্য নতুন করে ভালবাসায় বুকটা ভরে যাবে। মনে হবে, s(he) may not be the perfect person of the world, but s(he) is perfect in my world.

দাম্পত্য – ৩
http://oporajitabd.com/?p=8495
দাম্পত্য – ২
http://oporajitabd.com/?p=8468
দাম্পত্য – ১.
http://oporajitabd.com/?p=8455

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

জাপানের মা, জাপানের সন্তান (প্যারেন্টিং)

প্রথম আলো পত্রিকায় “জাপানের মা, জাপানের সন্তান (প্যারেন্টিং)” নামে চমৎকার একটা আর্টিকেল বের হয়। সেই আর্টিকেলটায় তুলে ধরা হল।

img20171006_132548
জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছি। এ সময় নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি জাপানি ভাষা বেশ ভালোভাবে শেখায় তাদের অনেক কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম।

img20171006_135829
অবাক হয়েছি সন্তানদের প্রতি জাপানি মায়েদের আদর-ভালোবাসা দেখে। সন্তান জন্মের আগে থেকেই সন্তানকে
♦কীভাবে লালন-পালন করতে হবে,
♦তাকে কী খাওয়াতে হবে,
♦কোন ঋতুতে কী ধরনের পোশাক পরাতে হবে,
♦ছোটখাটো সমস্যা হলে বাড়িতে বসেই কী করে তার সহজ সমাধান করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন।
জাপানে বেশির ভাগ লোক শিক্ষিত, তাই তাদের জন্য এটি করা সহজ।

img20171006_132519
মায়ের বুকের দুধ যে শিশুর জন্য একমাত্র উপযোগী খাবার- তা জাপানি মায়েরাও মেনে চলেন। কর্মজীবী মায়েরা বিরতির সময় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে আসেন। বেশি দূরে হলে বুকের দুধ প্যাকেট করে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে রেখে আসেন। আমি জাপানের চিকিৎসক মায়েদেরও এমনটি করতে দেখেছি।

img20171006_132329
বেশির ভাগ বাড়িতে দেখেছি দাদা-দাদি থাকেন। কোনো কোনো বাড়িতে দাদা বা দাদির একজন থাকছেন। পরিবারের সব সদস্য বয়স্কদের দিকে খেয়াল রাখেন। সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকতে না পারেন তার দেখাশোনা করার উপযোগী কর্মী রেখে দেন।

img20171006_132440
আরেকটি বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে। এক বছর বয়স হওয়ার আগেই শিশুরা জাপানে পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য হতে পারে। মা তার সন্তানের নামে প্রতি সপ্তাহে তিনটি বই ধার করতে পারেন। একটু বড় হওয়ার পর মা সন্তানকে নিয়মিত লাইব্রেরিতে নিয়ে আসেন। গল্প ও ছবির বই পড়ে শোনান। হাঁটিহাঁটি পা পা করছে এমন শিশুও দেখেছি সেলফ থেকে নিজের পছন্দমতো ছবি অথবা ছড়া গল্পের বই এনে মায়ের হাতে দিচ্ছে পড়ে দেওয়ার জন্য।
এভাবে বইয়ের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে যায়। ছুটির দিনে লাইব্রেরিতে ছোটদের রূপকথার গল্প বলার জন্য কর্মী থাকেন। শুধু তাই নয়, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে যেসব শিশু থাকে, তাদেরও বই পড়ে শোনানো হয়। তিন বছর বয়স হলে প্রতি মাসে বাধ্যতামূলক একটি করে বই কিনতে হয়। ছোটবেলা থেকে এই আগ্রহ জন্মায় বলেই হয়তো বাস বা ট্রেনের জন্য অযথা বসে না থেকে বই পড়তে দেখেছি ওদের।

img20171006_132200
স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে মায়েরা শিশুকে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে ওঠা-বসা, আচার-ব্যবহার, আদব-কায়দা (বড়দের সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে কথা বলা এবং ভক্তি করা জাপানি সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য) নিজ হাতে খাওয়া ও নিজে বাথরুমে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

img20171006_132252
জাপানে মনে করা হয় যে প্রতিটি ভালো ছাত্রের পেছনে একজন নিবেদিত মা থাকেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজে নিয়মিত সন্তানকে পার্কে, সাঁতারের ক্লাসে এবং পিয়ানো অথবা নৃত্যের ক্লাসে নিয়ে যান। মা রাতে সবার পরে বিছানায় যান কিন্তু ভোরে ওঠেন সবার আগে। কারণ প্রত্যেকের পছন্দমাফিক আলাদা টিফিনবাক্স প্রস্তুত করার জন্য তার বেশ সময় প্রয়োজন হয়।

তিনি খুব সতর্কতার সঙ্গে সন্তানের স্কুল এবং গ্রুপ কোচিং নির্বাচন করেন।

img20171006_132126
কাজ থেকে ফিরে বাড়ির কাজে সাহায্য করেন, ভালো বইয়ের খোঁজ রাখেন। প্রয়োজনে সন্তানের জন্য আরও বেশি কাজ করেন। যাতে সন্তানের পড়তে কষ্ট না হয়। সে জন্য জাপানি মাকে যথার্থই ‘কিউইকু মামা’ অর্থাৎ ‘অ্যাকাডেমিক মাদার’ বলা হয়ে থাকে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক প্রথম আলো & মহীয়সী

ডা. লুৎফুন নাহার
লেখক: চর্ম, অ্যালার্জি ও লেজার বিশেষজ্ঞ সেন্ট্রাল হাসপাতাল, গ্রিনরোড, ঢাকা

 

দাম্পত্য -৩

কমফোর্ট আর স্বস্তি একটা ঘরে সুখের ফোয়ারা বইয়ে দিতে পারে সত্যি, কিন্তু এর বাইরেও দাম্পত্য জীবনে অনেক কিছুই করার আছে।

..
স্বামী স্ত্রী উত্তম বন্ধু রূপে শুধু একে অপরকে নিরাপত্তাই দিয়ে যাবে জীবনভর, এর বাইরে আর কিছু নয় – ব্যাপারটা এমন নয়। আর চাহিদা অনুযায়ী পরিপূর্ণ আরাম না পেলেই যে সংসার উচ্ছন্নে যাবে – তাও না। পুরোপুরি স্বতন্ত্র দু’জন মানুষের আচরণ সব সময়ই পছন্দ মত হবে – এমন ভাবাটা ঠিক না। পদে পদে কমফোর্ট নষ্ট হবে, কমিউনিকেশন এর সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে, ক্ষুদ্রতা দেখে বুক ভেঙে যাবে – সম্মানের বদলে জায়গা করে নেবে করুণা – এমন অনেক কিছুই হতে পারে। তখন কি আল্লাহর প্রতিশ্রুত শান্তি সে ঘর থেকে হারিয়ে যাবে? বিয়ের উপর যে এত বার করে গুরূত্ব আরোপ করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স) যে বলেছেন, দ্বীন এর অর্ধেক হচ্ছে বিবাহ – তা কি দুটো ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যেই ভুল হয়ে যাবে? তা কী করে হয়?

..
আমার কাছে মনে হয় দাম্পত্যের দ্বিতীয় স্তরের পূর্ণতা আসে যখন স্বামী স্ত্রী সত্যি সত্যি একে অপরকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে। যখন একজন অপরজনের দোষত্রুটি গুলি চিহ্নিত করে সেগুলি বদলানোর জন্য কাজ করে। আমি ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাপার কিচ্ছু বুঝি না, আমার স্বামী ধৈর্যের সাথে অল্প অল্প করে একটু করে কাজ দিয়ে আমাকে মানুষ করার চেষ্টা করছে। অপর দিকে তার লেখা নিয়ে একটা ভীষণ রিপালশন কাজ করে। আমি চেষ্টা করছি প্রতি সপ্তাহে ছলে বলে কৌশলে যে করেই হোক একটা করে তার কাছ থেকে লেখা আদায় করতে। ও লেখায় সরগর না হলে কি আমার ঘর ভেঙে যাবে? আমার কী দায় পড়েছে ওকে দিয়ে লেখাতে? কিন্তু আমরা ত আগামী অনেকগুলো বছর ইনশাল্লাহ একসাথে থাকব, আল্লাহ ছয়শ কোটি মানুষের মধ্যে থেকে আমাদের দুজন কেই এক সাথে জীবন কাটানোর সুযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে কি আল্লাহর এতটুকু প্ল্যান ছিলনা, যে আমার উইকনেস ও দূর করবে, ওর টা আমি?

..
একই কথা স্পিরিচুয়ালিটির বেলায়ও। স্পিরিচুয়ালিটি আর স্বামী স্ত্রী নিয়ে ভাবতে গেলে আমার কেবল একটা উদাহরণই মনে আসে। লতানো গাছ দেখেছেন, ঐ যে ছোট ছোট আঁকশির মত বের হয়ে একটা কিছু ধরে বেয়ে ওঠে? এমন দুটো গাছ যেন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একজন আরেকজনের থেকে সাপোর্ট নিয়ে দ্রুত উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এই গাছ দুটোর একটা শক্ত দৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড়ানোও হতে পারে, আরেকটা তার উপর ভর দিয়ে উপরে উঠবে। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর একজন বেশি প্র্যাক্টিসিং, অপরজন কমও হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাপোর্ট দিয়ে দিয়ে টেনে তুলতে হবে। ভেবেই দেখুন না, কী একটা জুটল কপালে – এই ভেবে কপালকে দোষ না দিয়ে এভাবেও ত দেখা যায় – আল্লাহ আপনার স্ট্রেংথ জানেন, আল্লাহ পারফেক্ট কম্প্লিমেন্ট খুঁজে দিয়েছেন আপনার জন্য। এখনকার যে অশান্তি হচ্ছে, তা হচ্ছে এ কারণে যে আপনি আপনার করণীয় সবটুকু করছেন না। আপনার কথা ছিল অনেক বেশি নিজেকে উন্নত করার, আর উদাহরণের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে অপরজন কে শেখানোর। আপনি তা না করে আরো ভাল কিছু পেতে পারতেন এই আফসোস এ মাথা কুটে মরছেন।
এমনকি ভাল, আরো ভাল – এই মাপকাঠিটাও ত মানুষের জন্য অসম্পূর্ণ। সে হয়ত বিচার করার সময় একটা স্বভাবের দোষ ধরে ভাগ্যকে ধিক্কার দিচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে হয়ত তাদের মধ্যে এত সুন্দর সামঞ্জস্য – যেটা তার কাছে এতই ন্যাচারাল যে টেরও পাচ্ছেনা এর মূল্য কত।

...
আগের লেখায় একটা পাথরের কথা বলেছিলাম না? আপনি হয়ত আপনার সম্পর্কের এবড়ো খেবড়ো অংশটাই শুধু দেখছেন, একটু সময় নিয়ে উল্টে দেখুন, তার অনেক ভালো দিকও চোখে পড়বে।

..
রাসুলুল্লাহ (স) ত বলেছেন, স্ত্রীদের সাথে নরম আচরণ কর, কারণ তার এক আচরণ তোমার অসন্তুষ্টির কারণ হলেও, অন্য আচরণ তোমায় সন্তুষ্ট করবে। স্বামীদের জন্য এটা আরো বেশি সত্যি। কারণ আমরা স্ত্রীরা অভিযোগে মুখর হতে খুবই পারদর্শী।
আমি ঘরের কাজে অপটু, বাইরের কাজে অকর্মণ্য। ভাবনার জগতে ক্রীড়ণক, বাস্তব জীবনে জড়ভরত। আমার অতি প্র্যাক্টিকাল স্বামীর অভাবে আমি অর্ধেক না, এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকতাম বোধহয়। কিন্তু আমার যেটুকু অগুণ আছে তাই দিয়ে ঠেলেঠুলে এমন একটা জায়গা করে নিয়েছি যে জানি ওই জায়গার দখল পাকাপাকি ভাবে আমার হয়ে গেছে। গুণ যেখানে কম, অধ্যবসায়ের সেখানে পুরো ব্যবহার ত করতেই হবে, তাই না? তাই ওর অদক্ষতাগুলোতেই আমার যত জোর। আল্লাহকে ধন্যবাদ ও দেই, অন্তত একটা কিছু যোগ করার মত যোগ্যতা ত আমার আছে। যদি কমফোর্টই সুখের একমাত্র ইয়ে হত, তাহলে আমি ফেল করতাম নির্ঘাত।

১
এক রাতে প্রচণ্ড গরমে পুরো আড়াই ঘন্টা লোডশেডিং ছিল আমাদের এলাকায়। খুব দেশ দেশ লাগছিল সময়টাকে। আমরা অন্ধকার ঘরে মনের সুখে গপ্পো করেছি অনেকক্ষণ। লোডশেডিং হওয়াতে আমাদের মনে এতই ফুর্তি হয়েছিল, গল্পের ফাঁকে সে নিজে গান বানিয়ে সুর দিচ্ছিল। আমি তখন ওকে বললাম, আমি তখন ওকে বললাম, Thanks to Allah, He joined a composer with a singer, a speaker with a writer, a philanthropist with a pure mind.

(পরের পর্বের জন্য অপরাজিতার সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

ডিম কাহিনী

..

ডিম পেড়েছে শিয়াল মশাই
ডিম পেড়েছে হাতি
ডিম পেড়েছে পাশের বাড়ির
আবুল মিয়ার নাতি।

তাল মিলিয়ে ডিম পেড়েছে
দোয়েল-কোয়েল-টিয়ে
কে জিতে আর কে হারে
চিন্তা এটাই নিয়ে।

হঠাৎ করে উটপাখিটা
পাড়ল বিশাল ডিম
জয়ী হয়ে নাচছে যে তাই
টিম ডিমা টিম ডিম।

...

Sumaiya Barkatullah
Zoology

 

দাম্পত্য – ২

দাম্পত্য জীবনে হারমনি প্রতিষ্ঠা করা এমন না যে একটা তুড়ি বাজালাম আর হয়ে গেল। ইনফ্যাক্ট প্রতিদিনের কাজকর্মের মুখ্য উদ্দেশ্যই আমাদের হওয়া উচিৎ হারমনি আনা, যতক্ষণ এক সুরে সুর বাজে, মনে হয় এর বেশি আর কী চাওয়ার আছে জীবনে? কিন্তু মানুষ ত অনেক ভাবেই দুজনে মিলে সুখে থাকতে পারে, তাই না?
স্বার্থপরের মত, ভোগবিলাসীর মত, অন্যায়কারীর মত – এদের হারমনিও ত হারমনি। কিন্তু তাতে স্বর্গীয় সুখ কই? ফেরেশতাদের ডানা বিছানো ‘সুকুন’ কই? আল্লাহ যে বলেছেন অমন পরিবারে তিনি রহমত নাযিল করেন, ফেরেশতারা সে পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন?

আস্তে আস্তে মনে হল,
দাম্পত্য নিয়ে মানুষ তিন স্তরে সন্তুষ্ট থাকতে পারে।

..
এক, একজন আরেকজনের কমফোর্ট হবে। তা শুধু খাবার দাবার, আর অন্যান্য শারীরিক কমফোর্ট ই না। দু’জনের নিজস্ব জগতের অশান্তি শেয়ার করে হালকা হবে, বাইরে অনেক অপমান সহ্য করে ঘরে এসে নিশ্চিন্তে মাথা গুঁজতে পারবে। এমন নিরাপত্তা আর প্রশান্তি পেলে একটা সংসারে আসলে আর কিছু লাগেনা।

্্
রাসুলুল্লাহ (স) তাঁর পনের বছরের বড় (এ নিয়ে দ্বিমত চলছে আজকাল) স্ত্রীর কাছে এতটাই নিরাপত্তা, সম্মান আর ভালবাসা পেয়েছিলেন, খাদিজা (রা) মারা যাওয়ার অনেক বছর পরেও তাঁর কথা ভেবে রাসুলুল্লাহ (স) এর চোখে পানি চলে আসত। আসবেই ত। জিবরাইল (আ) কে প্রথমবার দেখে উনি ভয়ে এত উপর থেকে নেমে ঘরের মধ্যে এসে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে টুড়িয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন ‘আমাকে কি জ্বীন এ ধরেছে?’ উনার স্ত্রী কোত্থেকে জানবে উনার কী হয়েছে? উনি কি ফেরেশতা মারফত আগে খবর পেয়েছিলেন? উনি যা জানতেন তা হল, মুহম্মদ (স) কত অসাধারণ মানুষ। এরকম একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে উনি রেফারেন্স টানলেন রাসুলুল্লাহ (স) এতিমদের কত যত্ন করেন, কত সত্যবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কথা এখানে বলা কি খুব প্রাসঙ্গিক ছিল?
“খাদিজা (রা) যা করেছেন তা হল উনি রাসুলুল্লাহ (স) এর নিজের সম্পর্কে ভয়, শঙ্কা দূর করে দিয়েছেন তাঁর সম্পর্কে অনেক পজিটিভ কথা বলে।”

..
আমরা আমাদের পার্টনারের ভঙ্গুর সময়ে কতটুকু ভাল কথা বলি?
আর আউট অব কনটেক্সট প্রশংসা? অসম্ভব! আউট অব কনটেক্সট অভিযোগ করা যায়, কিন্তু প্রশংসা? কদ্যপি নহে!
আমার বাসায় হিটার ঠিক করতে এক ইলেক্ট্রিশিয়ান এসেছিল, ভদ্রলোক খুব কথা বলতে পছন্দ করেন, কথায় কথায় বলেছিলেন, তোমাদের মেয়েদের আমি হিংসা করি। you don’t know the power of your words. শুধু মুখের কথা দিয়ে you can bring a lion out of a mouse.
খাদিজা (রা) এর মত প্রজ্ঞা যদি সব ছেলেমেয়ের থাকত, শুধু কথা দিয়েই কত শান্তি তৈরি করতে পারত ঘরে।
একই ভাবে মন খারাপ হলে তার টেক কেয়ার করা,
বাইরে অপমান জনক একটা কিছু ঘটলে ঘরের মানুষটা আরো অনেক বেশি kindness দিয়ে তার মনের জোর ফিরিয়ে আনা – এ বিষয়গুলোতে অনেক বেশি যত্নশীল হওয়ার দরকার আছে।

..
ছেলেরা বোঝে না মেয়েদের কমফোর্ট কেবল ভাল শপিং করতে পারার স্বাধীনতার মধ্যেই না। এপ্রিসিয়েশন একটা ছেলের জন্য যতটা ইন্সপায়ারিং, একটা মেয়ের জন্য তার চেয়েও বেশি।
অনেক সময়ই মেয়েটার চিন্তাভাবনা বা বাইরের কাজে ম্যাচিউরিটি ছেলেটার মত হয়না, তখনও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেয়া মেয়েটার মানসিক শক্তি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়েটার বাইরে এক্সপ্লোর করার সুযোগ সমানভাবে হয়না। এর প্রভাব যদি তার চিন্তায়, আচরণে পড়ে, আর তার কারণে স্বামীর থেকে তিরস্কৃত হতে হয়, তাহলে মেয়েটার কী দায় পড়েছে সংসারের ঘানি টানতে?
সে ও ত স্মার্ট হওয়ার, আধুনিক হওয়ার জন্য সময় ব্যয় করতে পারে, ঘরে সময় না দিয়ে।

..

এই সব খুঁটিনাটি অনেক কিছুই দুই পক্ষে মনের মধ্যে জমা হয়।
তার কিছু কথা বলে, কিছু ক্ষমা করে, আর পুরোটা আল্লাহর থেকে রিটার্ণ পাওয়ার আশায় মন থেকে মুছে ফেলে কমফোর্ট বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
ও! কমফোর্ট এর কথা এতবার বলেছি, একটা কথা বলিনি,
“পুরোনো জামার awesome উদাহরণটা খুব সংক্ষেপে কুরআনে আছে। husband and wife are garments for each other. তাও রোজার নিয়মের দুইটা আয়াতের মাঝখানে দেয়া।”

..
নোমান আলি খান এর ব্যাখ্যা করেছেন খুব সুন্দর করে, রোজায় ইফতার, সেহরি, তারাবী, কুরআন পড়া – এসব রুটিনের মধ্যে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে যেন কভার করে যাতে দুজনই সমানভাবে স্পিরিচুয়ালি এগোতে পারে। লিংক টা এখানে পাবেন।
http://www.youtube.com/watch?v=t6Cd08mUjvU

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

দাম্পত্য-১

আমার বিয়ের পর থেকে বিবাহ নামক সম্পর্কের বাঁধনটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। ধুম ধাম করে বড় করে মেহেদী, বিয়ে, রিসেপশন এর পরে কী হয়? জমকালো সাজে বউটা বেশ আনন্দের সাথে নতুন ঘরে পা রাখে। তারপর কী হয়? আনুষ্ঠানিকতার লৌকিকতা যত ফিকে হয়ে আসে, মেহেদীর নকশা যত মিলিয়ে যেতে থাকে, বউটাও কি তত মেয়ের মত হয়ে মিশে যায় এই পরিবারে?

..
অচেনা বা অর্ধচেনা মানুষটি কি তার বাকি সব বন্ধনের অভাব ভুলিয়ে দিতে পারে?
বিয়ের আগে আমার একমাত্র বিবাহিত বান্ধবীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম,
বিয়েটা আসলে কী বলত?
তুই তোর বরকে কি মাথায় করে রাখিস? কোন কিছু পছন্দ না হলে কী করিস?
বাবা মায়ের কথা যেমন আমরা পছন্দ না হলেও মেনে নেই, এখানেও কি তুই তাই করিস?
নাকি বন্ধুর মত মতে না মেলা পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে তর্ক করিস?
ওর কোন একটা কাজ অন্যায় দেখলে তুই কীভাবে সামলাস? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আচ্ছা পাঠক, বলুন ত, আপনাদের মধ্যে কি একজনও আছে যে বিয়ের আগে এসব ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে আসে?
একজনও কি আছে যে বলতে পারে, না, আমার মা আমাকে এগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? ছেলেদের অবস্থা ত আরো ভয়াবহ। ছেলেকে স্বামী হওয়ার জন্য প্রস্তুত করার দায়িত্ব বাবার, এইটাত বাবারা কল্পনাই করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এ যুগের বাবারা কি জীবিকা ছাড়াও জীবনে শেখার কিছু আছে এটা জানেন?

..
বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরই যেটা হয়, একগাদা অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে তারা সংসার শুরু করে। মেয়েটা মনে করে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ছেলেটার চিন্তা জুড়ে থাকবে শুধু সে। তার চাওয়া পাওয়ার দিকে শতভাগ মনোযোগ থাকবে। অপর দিকে ছেলেটা দেখে কল্পনার পরী জোছ্না রাতে গল্প করতে আসলেই বেশ লাগে। সিন্দাবাদের ভুতের মত ঘাড়ে চেপে থাকলে অসহ্য বোধ হয়। ফলাফল, মেয়েটার অভিযোগ, আর ছেলেটার উদাসীনতা। স্বপ্নের নীড় স্বপ্নের দেশেই পড়ে থাকে। এর সাথে যদি অভিভাবকদের অন্যায় ব্যবহার যোগ হয়, তখন এই স্বপ্নকাতর কপোত কপোতীর কী যে দশা হয় বলাই বাহুল্য। একটা সময় হয়ত মেয়েটার মন কঠোর হয়ে যায়, ছেলেটা নিজের মত করে ভাল থাকতে শিখে যায়, দুজনেই কষ্টগুলোকে একা একা সামাল দিতে শিখে যায়। দূর দেশে কেঁদে মরে অপূর্ণ স্বপ্নগুলো। তার কান্না ভুলতেই বোধ করি এত এত বাস্তবতায় নিজেকে বেঁধে ফেলতে হয়।
যাই হোক।

...
আমি কখনও চাইনি আমার বা আমার বন্ধুদের দাম্পত্য জীবন এমন হবে। তাই শুধু খুঁজতাম একটা তালিসমান, একটা ম্যাজিক স্পেল – যেটা ফলো করলে স-ব সমস্যা নিমিশেই ফিনিশ হয়ে যাবে।

...
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে একটা মনে গেঁথে থাকার মত মন্তব্য শুনেছিলাম ড: মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুখে, একটা অনুষ্ঠানে মনে আছে বলেছিলেন, “যে এই সম্পর্কটা একটা পুরনো জামার মত।” আমার এই তুলনাটা এত ভাল লেগেছিল! শুনেই মনে হয় কমফোর্ট আর কমফোর্ট। আমার বান্ধবীও বলল, প্রবলেম হলে মনে জমায় রাখবি না। কথা বলে সলভ করবি। বলে ফেললে দেখবি শান্তি।

..(1)
আমি প্রথম প্রথম তাই করতাম। কিন্তু ফলাফল দেখে বুঝলাম এ পদ্ধতি সবসময় সবার জন্য না।
কখনো কখনো একটু নিরবতা অনেক কথা বলে। দুজনের মতে না মিললে আমার মনে হাজার যুক্তি দাঁড়িয়ে যেত, তা বলার জন্যে আর ঠিকটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যেন আর তর সইত না। অঙ্ক কষে দুইয়ে দুইয়ে চার না মিললে হতবুদ্ধি হয়ে যেতাম। আমি ত ঠিক ই বলেছি। ঠিক বললেই ঠিক হয় না কেন? আবার দেখলাম আমি ভুল করলে প্রাণপনে মনটা চায় একটু যেন রেহাই দেয় ও, কিছু যেন না বলে। বুঝলাম, আমার ন্যায়ের ঝাণ্ডার চেয়ে ওর নিরব সহিষ্ণুতা অনেক বেশি শক্তিশালী।

♥
কিন্তু চুপচাপ থাকার পক্ষে কোন রেফারেন্স পাচ্ছি না ত! আর এটা কেমন কথা? দোষ দেখলে খালি চুপ করে থাকলে হবে? কত সময় কাজে ঝামেলা লেগে যায়, কথা পছন্দ হয়না, তখন শুধু চুপ থেকে চোখের পানি ফেলব নাকি? আর এভাবে আদৌ ত কোনদিন কেউ কাউকে উপরে তুলতে পারবনা, উল্টা মনে অনেক অভিমান জমা হবে। কী করি? উত্তরটা একদিন পেয়ে গেলাম কুরআনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে। তাফসিরে একটা কোণে ছোট্ট করে লেখা,
“spouses are to establish peace and harmony.”
এই হারমনি নিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম, করতেই থাকলাম।
হারমনি মানে কী?
হারমনি মানে এক সুরে গাঁথা,
ছন্দ মিলিয়ে চলা।
একসাথে মিলে সুন্দর একটা গান রচনা করা। একসাথে, একই ছন্দে তালে তাল মিলিয়ে একটা কিছু তৈরি করা – এমনভাবে যেন কোথাও কর্কশ সুর না বাজে। আমার এই বিজ্ঞ জজ সাহেবের ভূমিকা কি হারমনি তৈরি করছে? মোটেও না। তার মানে কি যেভাবে চলে চলুক বলে তালে তাল মিলিয়েই যাব? অবশ্যই না।
দুটো ভিন্ন স্কেলের কম্পোজিশন কে এক জায়গায় আনতে হলে কখনও তর্ক, কখনও ধৈর্য, কখনও একটু অভিমান – অনেক কিছুই ব্যবহার করতে হয়।
যা বুঝেছি,
“সায়েন্স এর জটিল বিষয়াদি বুঝতে যেটুকু বিদ্যা খরচ হয়, হিউম্যান সাইকোলজি বুঝতে তার চেয়ে অনেক বেশিই কসরত করতে হয়।” কিন্তু সবশেষে যে তানটা বাঁধা হবে তার চমৎকারিত্বে আশ্চর্য হয়ে যেতে হবে। এ যেন একটা ঝড়ো হাওয়ার মত, শক্তিকে শক্তি দিয়ে বাধা দিয়ে প্রলয় আরো বাড়াতেও পারেন, বাঁশির মধ্য দিয়ে বইয়ে অপূর্ব সুর ও তুলতে পারেন।

Waiting Waiting
(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

শিশুদের বয়সানুযায়ী কাজের তালিকা

...
অনেকক্ষেত্রে আমরা বাবা মায়েরা সন্তানের প্রতি ভালোবাসার দরুন, তাদের দিয়ে কোনো কাজ করাতে চাইনা,ভাবি বড় হলে তখন করবে।ভাবুন তো,কোনো কাজ না পারা ছেলে/মেয়েটি দেশে/বিদেশে হল লাইফে কিভাবে কি করবে?অথবা,আপনার স্বামী/স্ত্রীই যখন একেবারেই প্রচন্ড আদরে বড় হওয়া,কোনো কাজ না পারা মানুষ হোন, আপনার কেমন লেগেছে /লাগবে?
সন্তানকে নিয়ে একসাথে কাজ করলে বরং বাবামার সাথে সন্তানের বন্ধুত্ব বাড়ে।সম্পর্ক হয় গভীর। আমরা বয়স অনুযায়ী আমাদের সন্তানদের ঘরের কাজ ভাগ করে দিতে পারি।

...
২-৩ বছর

এ বয়সে শিশুরা সব কাজ করতে চায়,ঘর ঝাড়া থেকে রুটি বানানো সব।বাধা দেবেন না।করতে দিন,যদি সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে।এতে তার কাজে আগ্রহ বাড়বে।আর বিরক্ত হওয়া যাবে না।
মূলত এ বয়সে,শিশুদের কিছু নিয়ে আসতে বলুন,বা,নির্দিষ্ট কিছু রেখে আসতে বলতে পারেন।যেমন,শিশুর নিজের ডায়পার নিয়ে আসা,ও ফেলে আসা।
খেলনা গুছাতে বলা।
ময়লা কাপড় বালতিতে ধুতে দেয়া।
খাবার টেবিলে ম্যাট বিছাতে দেয়া।
কম ধূলাযুক্ত স্থান মুছতে দেয়া।

...
৪-৫ বছর

নিজের খেলনা একাই গুছানো
বিছানা গুছানো
নিজের রুম গোছানো
হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার বানানো, যেমন স্যান্ডউইচ বানানো
রান্না ঘর গুছাতে সাহায্য করা,যেমন হাড়ি,পাতিল, প্লেট জায়গা মত রাখা
ছোট,নিচু,আসবাবপত্র মুছতে দেয়া
গাছে পানি দেয়া

10-11
৬-৭ বছর

ময়লা ফেলা
চারকোণা কাপড় (টাওয়েল,রুমাল) ভাজ করা
জিনিষ মিলিয়ে রাখা,যেমন,মোজা মিলিয়ে রাখা
রান্নার কাজে সাহায্য করা – সবজি(মটরশুঁটি, আলু,পটল,গাজর) ছেলা
সন্তানকেও খাবার বানাতে দেয়া – সালাদ, কাস্টারড বানানো
বাগান করতে দেয়া
নিজের রুম নিজে ঝাড়ু দেয়া ও মোছা
মাকড়শার ঝুল ঝাড়া
বাথরুমে টয়লেট পেপার রাখা

...
৮-৯ বছর

বাল্ব /লাইট লাগানো বা বদলানো
কাপড় ধোয়া,ভাজ করা ও গুছিয়ে রাখা
বাজার করতে সাথে নিয়ে যাওয়া ও বাজার গুছিয়ে রাখা
খাবার টেবিল নিজে নিজে গুছানো
নিজের প্লেট,গ্লাস নিজে ধোয়া
আসবাবপত্র মোছা
রান্না ও বেক করা,যেমন,ডিমের জরদা বানানো, কেক/বিস্কুট বানানো
হ্যান্ডওয়াস রিফিল প্যাক ভরা

...
১০-১১বছর

নিজের বাথরুম ধোয়া
সিম্পল খাবার রান্না করা
রান্নাঘর নিজে গুছানো, হাড়ি,পাতিল ধোয়া
ছোট সেলাই করা – বোতাম লাগানো, হেম দেয়া
বাজার করা টুকটাক

...
১২বছর ও তার উপরে

কাপড় আয়রন করা
ছোট ভাইবোন কে দেখে রাখা
সবধরনের রান্না করতে দেয়া
পুরো বাসা ঝাড়ু দেয়া,মোছা
ইলেক্ট্রনিক কাজ করা
বাজারের লিস্ট করা ও নিজে বাজার করা
বাসা মেরামতের কাজে সাহায্য করা

কাজের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে ভাগ করা উচিৎ না।শিশুরা কাজ ভাগ করে না,আমরা ওদের এই ভুল ধারণা দেই,এটা মেয়ের কাজ আর এটা ছেলের….

পজেটিভ প্যারেন্টিং
ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

 

আসুন মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানি

অদৃশ্যমান অদৃশ্যমান
মৃত্যু (Death) মানে জীবের জীবনের সমাপ্তি। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে আমরা বলি মৃত।

মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়,
তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া।

মৃত্যু আসলে স্থায়ী জীবনে প্রবেশের দরজা। মৃত্যুর মাধ্যমেই আমরা পরকালের জিন্দেগীতে প্রবেশ করি।

...
মৃত্যুর ইসলামিক দৃষ্টিকোণঃ
মৃত্যু সম্পর্কে ক্বুরআনের কিছু আয়াত,

সূরা আলে ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“সমস্ত প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।”

সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে
“আল্লাহর আদেশ ছাড়া কারো মৃত্যু হয় না। এটা এমন এক পরিণতি যা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে।”

সূরা আলে সূরা সাবা ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“বলুন, তোমাদের জন্যে একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে যাকে তোমরা এক মহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না এবং ত্বরান্বিত ও করতে পারবে না।”

সূরা লুক্বমান ৩৪  নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই কিয়ামত (-এর ক্ষণ) সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে আছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী আছে। কোন প্রাণী জানে না সে আগামীকাল কী অর্জন করবে এবং কোন প্রাণী এটাও জানে না যে, কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত, সবকিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন।”

সূরা আলে সূরা জুমার ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”

সূরা আলে সূরা আশশুরা ৮১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন।”

সূরা আলে সূরা ওয়াকিআ ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।”

সূরা আলে সূরা কাহফ ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।”

সূরা আলে সূরা কাহফ ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমি জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।”

সূরা আলে সূরা হাজ্জ্ব ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমিই জীবনদান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।”

সূরা আলে সূরা আল আ’রাফ ১২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“তারা বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের নিকট ফিরে যেতেই হবে।”

সূরা আলে সূরা আনকাবুত ৫৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।”

সূরা আলে সূরা আল ইমরান ১৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আর তোমরা মৃত্যুই বরণ কর অথবা নিহতই হও, অবশ্য আল্লাহ তা’আলার সামনেই সমবেত হবে।”

সূরা হাদীদ ২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।”

সূরা মুনাফিকুন ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।”

মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মৃত্যু বাক্যটি ১০৮টি আয়াতে ১১৮বার উচ্চারিত হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি আয়াত আপনাদের সামনে পেশ করা হল। প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে স্থায়ী নয় কেউ-ই।
রেফারেন্স:উইকিপিডিয়া,কোরআন।
অপেক্ষা অপেক্ষা

ফাতেমা শাহরিন
‘সাইকোলজি’

 

জোনাকির ঘুম

...

অপ্রস্ফুটিত অনূভুতি,
নিস্তব্ধতা কেটে
রাতের আধারকে ঘেঁষে বস।
চুপ…
জোনাকিরা ঘুম ঘুম ঘোরে
মৃদু আলো জ্বালিয়ে বলে
“ঘুমোও ত ভাই ”
এখনও প্রভাত ফোটেনি!!!

কামিনী গাছের মগডালের
পাখিটাও আড়মোড়া দেয়,
ওঠ…
ঝিম ধরে শব্দ খুঁজে মরি,
ঝিঁঝিপোকাদের ঠিক তখনই
বোবা ধরে….
নিস্তব্ধতা আবার,
বিরক্তিকর আলসেমি রাত
আকাশের চাঁদ তারারাও
মেঘেদের কোলে লুকিয়ে পড়ে। 

ক্লান্ত পথিক,
পা অবসাদে লুটে,
ঘুম, ঘুম, ঘুম
শক্ত লাঠিতে ঘুণ ধরেছে
কবে কে যানে…

নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ
কতকাল আর…
সুখ, অনুভূতি, ভুল শব্দরা
সেই ছাতা পরা ডায়েরির শেষ
পাতায়।

আজ
মায়াময় পৃথিবী
মৃদু ভালবাসা নেই বলে প্রতিধ্বনি তুলে…
কেন?
রাত,
নদীর সন্ধি 
পথিক বসে রয়
ঠিক মাঝ দরিয়াতে এখনও…
কেন?

হঠাৎ একদিন খেয়াল হল,
লেখকের দেহে প্রাণ নেই,
কই যেন যায়…
জেগে ওঠে মন
এখনই নামবে জোয়ার
আর সে যাচ্ছে ত যাচ্ছে
হারিয়ে যাচ্ছে ….
পানির অতল থেকে অতলে
না ফেরার দেশে
কেন?
হয়ত কলমের কালি শেষ।।

অজান্তেই অট্টহাসিতে 
ডুকরে ওঠে পানির ঢেউ আর বাতাসের
শো শো শো….

হুতুমপেঁচাটা ঐ দূরে ডাকছে
কেন?
বড় বিমর্ষতা করে….
কাঁপিয়ে তোল পৃথিবীকে।

অসমাপ্ত গল্পরা কেন?
মাঝ পথে থমকে দাড়ায়।

...

 

মজবুত “ভালবাসা” পারস্পারিক বন্ধনে

To love means to be actively concerned for the life and the growth of another.
[Irvin D. Yalom]
সাধারণত অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যারা অভিনয়ে পারদর্শী বা মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন(সাইকোলজিস্ট), তারা সর্বদা নিখুঁত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। হ্যা, অভিনেতা সুন্দর অভিনয়ের মাধ্যমে একটি চরিত্রকে দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন বৈকি। আর সাইকোলজিস্টরা তাত্ত্বিক জ্ঞান আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করেন। কিন্তু তারাও অন্যদের মতই মানুষ। তাদের জীবনেরও ভিন্ন ভিন্ন গল্প আছে। তারাও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করেন।

♥
♥Love is not a battlefield. Your head is.(ভালবাসা নয় কোন যুদ্ধ বরং মস্তিষ্কের যুক্তিবুদ্ধি)

সম্পর্ক জড়িয়ে থাকে ভালবাসা দিয়ে, ভালবাসা মানে যুদ্ধ নয়। যে সব সম্পর্কে অবনতি হয়, সেটাকে চিন্তা করলে, ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন ব্যক্তির এই ভালোবাসাটাকে যুদ্ধক্ষেত্র রূপে ধরা হয় না, বরং তাদেরকে যুক্তিবুদ্ধির সাথে চিন্তার দ্বন্দ্ব খোঁজা হয়। তাই সব মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ এই, আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, চিন্তা, নিউরনের খেলা, সংজ্ঞা, ট্রিগার, নিরাপত্তাহীনতা, স্বপ্ন এবং নিজেদের সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস সব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত হয় আমাদের ‘ভালবাসা’। “প্রস্ফুটিত ভালবাসা” খুব সুন্দর শব্দ। হ্যা, শেষ পর্যন্ত এটা আমাদের প্রশান্তি অনুভূতি দেয়।
আপনার চিন্তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
প্রশ্ন করুন,
What is love?

...
♥There is no such thing as perfect.(পারফেকশন হল একটি আপেক্ষিক শব্দ)

পারফেকশন এর ব্যাপারটা যেহেতু আপেক্ষিক সুতরাং আমার কাছে যা পারফেক্ট, আপনার কাছে তা পারফেক্ট নাও হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে বললে, পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুই পারফেক্ট নয়। তাই নিজেকে এবং নিজের সঙ্গীকে সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়ার নাম ভালবাসা।

...
♥Love is peeling an onion, not biting an apple.(ভালবাসা পেয়াজ কাটার এর মত, অ্যাপেল মত নয়)

পেয়াজ কাটতে গেলে চোখ দিয়ে পানি আসবে, অস্তিত্ব অনুভূতি থাকে। অনুভূতি প্রকাশিত হয়, যন্ত্রণা বুঝা যায়। অ্যাপেল কাটার মত নিস্প্রাণ নয় ভালবাসা।

...
♥If someone wants to be with you, you will know.(সত্যিকার অর্থে পাশে থাকা মানুষটির উপস্থিতি জানতে চেষ্টা করা)

যদি সত্যিকার অর্থে কেউ যদি আপনার পাশে থাকে, তাহলে আপনিও তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারবেন। সে অর্থে আপনার হাতটা কেউ ধরেছে বা ধরবে বলে কোন সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, আপনিও তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। বোঝার চেষ্টা করার মাঝেই ভালবাসা লুকায়িত থাকে। সেক্ষেত্রে বন্ধন মজবুত এবং স্থায়ী হয়।

*** ***
♥No one’s ever really “ready” for a relationship.(“প্রস্তুতি নিয়ে” কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে না)

রিলেশনশিপ এর মত ব্যাপারগুল আচমকা হয়, যেটার জন্য সাধারণত মানুষ তাৎক্ষণিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কোন সময় পায় না।
যেমন, বন্ধুত্ব।
আপনি শুধু অন্তর থেকে তা অনুভব করতে পারবেন।

...
♥Hold love. Don’t grab it.(ভালবাসাকে ধারন করতে হয়, দখল করা যায় না)

ধরুন যদি বলি,
পাখিকে, আলতো করে ধরতে হয়, বেশি শক্ত করে ধরলে কষ্ট/মরে যায়, মানে if I grab it, it’ll die.
ভালোবাসাও তেমনই। নিজের ভিতর অস্তিত্ব অনুভূত হয়, শক্ত করে অধীনে নিলেই উড়ে যায়।

...
♥Don’t stop believing.(বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখুন)

বিশাস করা থামিয়ে দিবেন না, তাহলে স্বপ্ন গুলো থেমে যাবে। অবিশ্বাসীদের মনে শুধু সন্দেহের জন্ম হয়।
তাই সর্বদা বিশ্বাস জাগ্রত রাখুন।

মুল:
জন কিম
অনুবাদ:
আফরিন তাসলিমা
সুমাইয়া তাসনিম
ফাতেমা শাহরিন

অপ্রত্যাশিত কিছু ভুল পারিবারিক বন্ধনে

...
পরিবার হচ্ছে একটি চমৎকার সংগঠন।
আমরা পরিবারকে কিছুটা রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী থাকেন, প্রেসিডেন্ট থাকেন, আর বাকী সবাই জনগণ।

একটা পরিবারের মুল চালিকাশক্তি হচ্ছে পারস্পারিক বন্ধন। দায়িত্ব, সম্মান আর ভালোবাসাযুক্ত থাকলে, পরস্পরকে চুম্বক আর ইস্পাতের মত দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে।
আর Barbara Greenberg ভদ্রলোক একজন সাইকোলজিস্ট তিনি অসংখ্য ক্লাইন্ট দেখেছেন, অতঃপর তার মনে হল আসলে সন্মানিত পরিবারগুলতে কেন যেন আস্তে আস্তে পারস্পারিক বন্ধনগুল নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ২৫ বছর ধরে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করছেন। অনেক বয়সের ব্যক্তিদের দেখেছেন।

তার মতে, বিভিন্ন ধরণের আবেগীয় কষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয় মুলত পরিবারের সদস্যদের কাজ থেকে।

এই পোস্টটি তিনি অনেকগুল জীবনের বাস্তব চিত্র দেখে তা থেকে তুলে এনেছেন Barbara Greenberg।

কিভাবে এই বিভ্রান্তিকর পারিবারিক ডায়নামিক্সের সেটটি সন্নিবেশিত হয়।
যা সত্যিকার অর্থে ভয়ঙ্করভাবে বিভ্রান্তিকর।

আসুন দেখা যাক সেই অপ্রত্যাশিত মূল্যবান কারণগুল,

মডেলিং মডেলিং
***মডেলিং(Modeling)

“””বাবা বাবা….বৃদ্ধ মা ঘর থেকে ডাকছেন ছেলেকে।
ছেলে ঘন্টা খানেক আগে অফিস থেকে এসে
ফ্রেশ হয়ে তার ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলছেন।
জি মা, এই মাত্র অফিস থেকে এসেছি,
ফ্রেশ হয়ে আসি।

♦পাঁচ বছরের আয়ান অবাক হয়ে বলে বসে,
“বাবা তুমি মিথ্যে বলছ”।””””

কিছু পরিবারের সদস্যরা কথা এবং কাজে যখন দ্বিমুখী পদক্ষেপ নেন।
ছেলে বৃদ্ধ মায়ের আবেগ অনুভব করেনি ছোট্ট ছেলেটিও বড় হয়ে তার বাবার আবেগ বুঝতে সমস্যায় পড়তে পারে। ইতিহাস রিপিট নেক্ট ইতিহাস।

সম্ভবত আপনি দেখছেন আপনার মা বাসার কাজের মেয়েটিকে মানুষ হিসেবে প্রাপ্ত সন্মান দিচ্ছেন, সন্তান হিসেবে এই দৃশ্যটির আপনি সাক্ষী। যখন আপনি ক্রমবর্ধমান ঐ পর্যায়ে যাবেন। আপনি তাই করবেন যা শিখছেন। সুতরাং বাড়িতে আমরা এই মডেলিং দেখে দেখে বন্ধন গড়া শিখি।

উচ্ছ্বাস উচ্ছ্বাস

***শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ(Power and Control)

ধরুণ,
ছোট্ট মেয়ে কণা এবার ছয় বছর।
এই দাদা এক গ্লাস পানি দাও ত।
প্রায় দাদাজান কণাকে এভাবেই বলে দাদাজান এক গ্লাস পানি দাও ত।
কণার বাবা শুনে চমকে উঠে।
তুমি বেয়াদব এর মত তোমার দাদার সাথে কথা বল ঠাস..ঠাস দিব কিন্তু
ভদ্রতা শিখছ না তুমি।
সরি বল, সরি বল দাদাজানকে।
এই যে আমরা দেখি কিছু বাচ্চা বুলিং(অন্য বাচ্চাদের খোটা দেয়, নানান ধরনের কটু কথা, নাম বিকৃতি বা পোশাক আশাক নিয়ে কষ্ট দেয়)
কেন করে তারা এই রূপ পাওয়ার আর অতিরিক্ত কন্ট্রোল পরিবেশে। অর্থাৎ প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের উচ্চ ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ উচ্চ মাত্রার প্রয়োগের ফলে বাচ্চাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ গড়ে উঠে।

ক্লান্তি ক্লান্তি

***ক্লান্তি(Exhaustion):

“”””হ্যালো
হ্যা শুনছ তুমি।

♦আসসালামু আলাইকুম, কি অবস্থা?

অবস্থা কি বলব? আম্মার কাছে বাবুকে দিয়ে একটু বাথরুমেও যেতে পারি না।
আজকে কি হয়েছে শোন…..

ছেলেটি খুব খুব বিরক্ত প্রথম প্রথম মায়ের নামে কথাগুল শুনলেও
এখন বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন দিন দিন।
বউ ফোন করলে হু হা বললেও ফোন পাশে রেখে দেন।
আগের টান কি কমছে।
নিজের সন্তানরা দাদা দাদী সম্পর্কে কি ভাবছেন???”””

মাঝে মাঝে কেউ কেউ কোন আত্মীয় বা আপনজনের কিছু আচরনে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন।
তারা এর আচরনের পরিবর্তন এর ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়েন, ভাবেন অনেক সহ্য করেছি আর না। ফলে তাকে অপ্রয়োজনীয়, বাতিল মানুষের তালিকায় ফেলে দেন অজান্তে কারন প্রত্যেকেরই কষ্ট সহ্য করার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে।

নতুন জীবন নতুন জীবন

***নতুনভাবে জীবন শুরু:

“মেয়েটির একটা ছেলের সাথে খুব খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল,
বিয়ের আগে দীর্ঘ সময়ের পরিচিত জায়গা থেকে চলে যেতে হচ্ছে যাতে ছেলে পক্ষ এ বিষয়টি কোন ক্রমে টের না পায়।””

জীবনের কোন বেলায় যখন আমার পরিবার, আমার আশেপাশের মানুষজন, আমার ছোটবেলা এবং আমার অতীত সম্পর্কে অনেক কিছু জানে কিন্তু আমি চাইনা অতীতের কোন কিছুই সামনে আনতে তখন আমি কিভাবে আমার অতীতকে ভুলে জীবনের নতুন গল্প লিখব? একটা পথ হচ্ছে, এসব জানে যারা তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া।
আপনার পরিবার এবং অন্যান্য সম্পর্ক থেকে অনেক দূরে সরে যায়। সম্ভবত ভুল অতীত স্মরণ করিয়ে দিতে চান না কেউ।
এর একটি উপায় হল সেই সব সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া।
যাতে আপনার গল্প পুনর্লিখনে কেউ বাধা হয়ে না দাড়ায়।

বিশ্বস্ততা বিশ্বস্ততা
***বিশ্বস্ততা:
“বিয়ে ত করেছ?
♦জি।
কিছু বিষয় এখন তোমাকে মেনে চলতেই হবে।
♦জি।
তোমার বোনের বাচ্চাদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি আর লাফালাফি ছেড়ে দিতে হবে।
♦মানে, কেন?
কেন মানে যে কোন একটা পরিবার এখন বেছে নিতে হবে বুচ্ছো।
♦না।
হয় বাবার বাড়ি নয়ত শশুড় বাড়ি।”

ধরুন আপনি এমন একটা সিচুয়েশন এ পড়লেন যে আপনাকে পুর্বের সম্পর্কের বাচ্চা এবং নতুন সম্পর্কের পার্টনারের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেয়া কি সহজ,সাধারনত??
মোটেই না।
কিন্তু অনেকেই এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়।
তখন বন্ধন ভেঙ্গে পড়ে।

এর ফলে আত্মীয়তার বন্ধনে, অর্থাৎ বাবা-মার সাথে সন্তানদের, ভাই-বোনদের মাঝে এবং এরূপ অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের (ফুপু, মামা, খালা) একে অপরের সাথে দিন, মাস, বছর এবং এমনকি কখনো কখনো সারা জীবনের জন্য আর সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না।

বন্ধন বন্ধন
আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং পারিবারিক বৈষম্য নিয়মনীতির সংশোধন করা দরকার। তা না হলে ইতিহাস ঘেটে দেখা যাবে এর ক্ষতিকর দিক আছে। যে সম্পর্কের পুনর্বিবেচনা করার সামান্য ইচ্ছা এবং শক্তি রয়েছে।সেখানে সহযোগিতা করা দরকার।
আপনি আপনার পারিবারিক গতিবিদ্যার নির্দিষ্ট সেট বুঝার চেষ্টা করুন। তা প্রত্যেকের সৌভাগ্য বয়ে আনবে।

লেখক:
Barbara Greenberg,
Ph.D
clinical psychologist
অনুবাদ:
Amina Anzum Mishu
&
Fatema Shahrin

 

বাহারি কুশন

চেয়ারের এক কোণে পড়ে থাকার যুগ শেষ। শুধু কুশন দিয়েই এখন ঘরের চেহারায় আনা যায় নতুনত্ব। কুশন সাজিয়ে রাখার পরিবেশনাতেও যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ঢং। বড় সোফা হোক বা নিচু, ঘরে ডিভান-শতরঞ্জি, যা-ই রাখা হোক, কুশন থাকবেই।

বসার ঘর ছাড়াও শোয়ার ঘর আর শিশুর ঘরে কুশন রাখতে পারেন। থাকতে পারে ঘর বা বারান্দার এক কোণে রাখা দোলনাটাতেও। নানান স্থানে ব্যবহারের উপযোগী কুশন পাবেন অনায়াসেই। শুধু অন্দরসজ্জার বাকি দিকগুলো খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়, তাহলে ঘর সাজানোর সময় আর আলাদা করে ভাবতে হবে না। কোন ঘরে কোন স্থানে ব্যবহার করতে চাইছেন, এর ভিত্তিতে কুশনের আকার বেছে নিতে হবে। কুশন কভার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কতটা সময় বা সুযোগ পাচ্ছেন, এর ওপর নির্ভর করবে কোন উপকরণে তৈরি কভার আপনার জন্য ভালো।

একটি জায়গার জন্য ভিন্ন নকশায় তৈরি একই রঙের কুশন কভার বেছে নেওয়া যায়। ভিন্ন রঙের কাপড়ে একই নকশা থাকলে তা-ও সুন্দর দেখাবে। এমনকি রং বা নকশায় মিল না থাকলেও অন্তত একই কাপড়ে তৈরি কুশন ব্যবহার করা উচিত। একেবারেই মিল না রেখে নানান ধরনের কুশন বেছে নিলে তা ভালো দেখায় না।

ঘরভেদে কুশন কাভার ব্যবহারের নির্দেশনাবলি জানালেন অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী

 বসার ঘর
মাঝারি আকারের বসার ঘরে শুধু সোফা আর চেয়ার রাখার সুযোগ থাকে। এমন ঘরে শুধু সোফাতেই কুশন রাখতে পারবেন। সোফার আকার-নকশা অনুযায়ী কুশন ও এর কাভার বেছে নিন। বেত, কাঠ বা বাঁশের তৈরি সোফা থাকলে দেশজ নকশার কুশন কভার বেশ লাগে। গ্রামীণ চেক, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কাঁথা স্টিচ বা অ্যাপ্লিক বেছে নিতে পারেন। কুরশি কাঁটার কাজ করা থাকলেও ভালো দেখাবে। পর্দা ও অন্যান্য আসবাবের দিকেও খেয়াল রাখুন কুশন কাভার বেছে নেওয়ার সময়।

ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সোফা (গদিওয়ালা, বড় সোফা) থাকলে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি কাপড়ের কুশন কভার মানানসই। এ ছাড়া কাতান, সার্টিন, লেস, নেটের কুশন কভার বেছে নিতে পারেন। সোফার জন্য সাধারণত ১৪ বাই ১৪ থেকে ১৮ বাই ১৮ আকারের কুশন ব্যবহার করা হয়।

বসার ঘরটা বড় হলে সোফা ছাড়াও থাকতে পারে ডিভান বা শতরঞ্জি। ডিভান থাকলে নকশিকাঁথা বা নকশিকাঁথার চাদর বিছিয়ে কাঁথা স্টিচ বা নকশিকাঁথার কুশন কভার দিয়ে সাজানো যায়। রঙিন শতরঞ্জিতে বড় কুশন মানায়। ২০ বাই ২০ থেকে শুরু করে ২৮ বাই ২৮ আকারের কুশন ব্যবহার করতে পারেন।

শোয়ার ঘরে
শোয়ার ঘরে বালিশের সামনে কুশন রাখতে পারেন কিংবা বালিশ ছাড়াই শুধু কুশন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক দেশেই শোয়ার ঘরে বালিশের পরিবর্তে শুধু কুশন রাখার প্রচলন রয়েছে। বালিশ না রাখলে অবশ্যই ভালো মানের কুশন ও কাভার ব্যবহার করা উচিত। ভালো মানের দেশীয় সুতি কাপড় কিংবা চায়নিজ বা জাপানিজ কাপড়ের কুশন কিনতে পারেন। বালিশ থাকলে এর কভারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশনের আবরণ বেছে নিন। একটু হালকা রঙের কাপড়ই এই ঘরটার জন্য ভালো।

শিশুর ঘরে
শিশুর ঘরে কুশন কভার রাখলে ওর মানসিকতার দিকে লক্ষ রেখে সেটি বেছে নিন। প্রজাপতি, টেডি বিয়ার, সিনড্রেলা বা ফুটবলের নকশায় তৈরি কুশন কভার হতে পারে ওদের পছন্দসই। বিছানায় তো রাখতেই পারেন, শিশুর ঘরে ডিভান থাকলে সেখানেও এমন কুশন রাখা যায়। এই ঘরের জন্য একটু গাঢ় রঙের কাপড় বেছে নেওয়া ভালো, নইলে সহজেই নোংরা হয়ে যেতে পারে।

 অন্য যেথায় একটু আরাম
বাড়িতে আলাদা লিভিং রুম থাকলে সেখানে নানান আকৃতির কুশন রাখতে পারেন। চারকোনা বা কোলবালিশের আকৃতির কুশন জড়িয়ে একটু শান্তিতে বসতে পারেন। আড্ডা চলতে পারে বড় কুশনের ওপর বসেও।

 কেমন করে মেলাই
গুলসান নাসরীন চৌধুরী জানালেন, রং-বেরঙের কুশন কভার দেখতে ভালো লাগে। তবে কোনো এক দিক থেকে একটু মিল রেখেই রং বেছে নেওয়া উচিত। হয়তো একই কাপড়ের তৈরি কুশন বেছে নেওয়া হলো; কোনোটাতে লালের ওপর লাল গোলাপ, কোনোটাতে হলুদের ওপর হলুদ গোলাপ আবার কোনোটায় বেগুনির ওপর বেগুনির গোলাপের নকশা থাকল। আবার হয়তো ঘরের একটা দেয়াল সি গ্রিন; এই ঘরের চারটি সোফার কুশনের কভারগুলোর প্রতিটিই সি গ্রিন রঙের, তবে একটিতে হ্যান্ড পেইন্ট করা রয়েছে সাদা গোলাপ, একটিতে সাদা বেলি, একটিতে সাদা রজনীগন্ধা আর অন্যটিতে ফুটিয়ে তোলা সাদা দোলনচাঁপা; অসাধারণ দেখাবে।

 যত্নের কথাও ভাবুন
ব্যস্ত জীবনে যত্ন নিয়ে সুতি কাপড় পরিষ্কার করা, ধোয়ার পর শুকানো ও ইস্ত্রি করার সময় মেলা ভার। তাই কৃত্রিম তন্তুর কাপড় বেছে নিতে পারেন। চট করেই পরিষ্কার করা হয়ে যাবে, বাড়তি ঝামেলা নেই। তাই নিজে কেমন সময় পাবেন কুশন কভারের যত্ন নেওয়ার, সেটিও খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়।

 কোথায় পাবেন, কেমন দাম?
বাজার ঘুরে পাওয়া গেল বৈচিত্র্যময় সব কুশন কভারের খোঁজ। ফ্যাশন হাউস আড়ং, মায়াসির, নিপুণ, বিবিয়ানা, যাত্রায় পাবেন নানান নকশার কুশন আবরণ। ফুল বা পাতা; বাহারি নকশা—সবই পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলে। পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি কুশন-আবরণ পাবেন ফ্যাশন হাউস যাত্রায়। প্রিন্টের, এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক করা কুশন কভার রয়েছে আড়ংয়ে, মিলবে সুতি বা সিল্ক যেকোনো কাপড়ই। এর বাইরে অন্য ধাঁচের কুশন কভার পাবেন ক্ল্যাসিক্যাল হোম টেক্সে। মখমলের নকশা করা বা চুমকি বসানো কুশন কভার পাবেন এখানে। আধুনিকতার ছোঁয়া পাবেন এখানকার কুশন কভারে, জ্যামিতিক আকারের ব্যবহারে একটু অন্য নকশায়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, চাঁদনি চক আর গাউছিয়া মার্কেটেও পাবেন বিভিন্ন ধরনের কুশন কভার। আকার, কাপড়ের ধরন ও নকশাভেদে প্রতিটির দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

 

পুরনো কাপড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে কাঁথায়

যদি নির্দিষ্ট সময় ধরেই বলতে হয়, তবে বলা যায় ছয় মাস বা এক বছর অন্তর অন্তর প্রায় সব বাড়িতেই জমে যায় কিছু পুরনো কাপড়। পুরনো জিন্স, শার্ট, টি-শার্ট, ওড়না বা টাইগুলো একসঙ্গে জমিয়ে রাখা হয়। বলা ভালো, সাধারণ এসব বাজেয়াপ্ত কাপড় বর্জ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে তুলনামূলক কম। বর্জ্য কম উৎপাদন যেমন পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ, তেমনি প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত উপকরণগুলো পুনর্ব্যবহার করতে পারাও সবুজ জীবনযাপনের অংশবিশেষ। তাই পুরনো এসব কাপড় দিয়ে যদি ব্যবহার উপযোগী কাঁথা তৈরি করা যায়, তাহলে একই সঙ্গে পণ্য পুনর্ব্যবহার, বাজেয়াপ্ত থেকে রক্ষা করা ও কেনাকাটার খরচ কমানো— এ তিন ভূমিকায় আপনি থাকতে পারছেন।

পুরনো টি-শার্টের সামনে বা পেছনে যদি কোনো নকশা বা লেখনী থাকে, তাহলে সেগুলোকে নির্দিষ্ট মাপে কেটে সংরক্ষণ করুন। অর্থাত্ আপনার সংগ্রহে যদি পাঁচটি টি-শার্ট থাকে, তাহলে সবগুলোর নকশাকার অংশকে ৫ ইঞ্চি বাই ৫ ইঞ্চি এ মাপে বা এর থেকে বড় মাপে কেটে নিন। উপর-নিচ বা পাশাপাশি রেখে সেলাই করুন। শার্টের ক্ষেত্রে স্ট্রাইপ বা রঙের মিল করে নিতে পারেন। আপনার কাপড়ের ধরনের সামঞ্জস্যও রাখা যেতে পারে। সবগুলো টুকরো তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো একসঙ্গে সেলাই করে বানিয়ে ফেলতে পারেন নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বা আপনার পছন্দের আকারের কাঁথা। এভাবে পুরনো টাই এমনকি টি-শার্টের ট্যাগও কাজে লাগানো সম্ভব নান্দনিক কাজে।

 

বাতাস বিশুদ্ধ রাখবে শখের ঝাড়বাতি

আলো ঘর সাজানোর অনুষঙ্গের মধ্যে অন্যতম। শুধু ঘর আলোকিত করার জন্যই নয়, ঘরের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রেও আলোকসজ্জার জুড়ি মেলা ভার। বহুকাল আগে থেকে আলোর ব্যবহার হয়ে আসছে ঘর সাজানোর কাজে। তাই তো অভিজাত কিংবা শৌখিন কারো বাড়িতে দেখা মেলে আকর্ষণীয় ঝাড়বাতির। অনুষঙ্গটি দ্রুত ঘরের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।

পরিবেশবাদীরা হয়তো এতক্ষণে ভাবা শুরু করেছেন, এতে শক্তির তথা বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে ভীষণ। আবার সেসব ঘরের ভেতরের পরিবেশ গরম করে ফেলছে মুহূর্তেই। কিন্তু এমন যদি হয়, আপনার ঘরের সিলিংয়ে ঝোলানো ঝাড়বাতিটি ঘরের ভেতর বাতাস বিশুদ্ধ করার কাজটি করছে আপনাতেই। তাহলে অবাক লাগবে নিশ্চয়ই। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে যদি ঘরের ভেতরের বাতাস বিশুদ্ধ করা যায়, তাহলে তো সেটাই ভালো।

সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাড়বাতি আবার কাজ করবে বাতাস বিশুদ্ধকারক হিসেবেও। এমন কিছুই তৈরি করেছেন লন্ডনের এক নকশাকার ও প্রকৌশলী জুলিয়ান মেলসিওরি। তিনি তৈরি করেছেন এমন একটি ঝাড়বাতি, যা শুধু ঘরকে আলোকিতই করবে না, সঙ্গে চারপাশের বাতাসও বিশুদ্ধ করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া লন্ডন ডিজাইন উইকে এটি প্রদর্শিত হয়েছে। ঝাড়বাতিটিতে ব্যবহার করা কাচের টুকরো পরিপূর্ণ করা হয়েছে সবুজ শৈবালে, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন নির্গমন করে।

সবাই যখন ঘর সাজানোর প্রতিটি অনুষঙ্গে পেতে চান সবুজের ছোঁয়া, সেদিক থেকে বাদ যাবে কেন সিলিংয়ে ঝোলানো সুন্দর ঝাড়বাতিটি। সেদিক বিবেচনায় জুলিয়ানের তৈরি করা ঝাড়বাতিটি শুধু পরিবেশবান্ধব আলোর উত্সই নয়, সঙ্গে অনেকখানি সৌন্দর্য বিলাবে ঘরময়। ঝাড়বাতিটিতে ব্যবহার করা সবুজ শৈবাল নকশায় জুড়ে দিয়েছে অনন্যতা। মজার বিষয়, বিশেষ এ বাতি ব্যবহার করা যাবে ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে যেকোনো স্থানে, যেখানের বাতাস বিশুদ্ধ করার প্রয়োজন।

বাইরে থেকে হঠাত্ দেখলে ঝাড়বাতিটিকে বেশকিছু পাতা ছড়িয়ে বসে থাকা ঝুলন্ত গাছের মতোই মনে হবে। ঝুলে থাকা বাতিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি বেশকিছু নকল পাতা। যদিও সেসব পাতা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আসল যেকোনো পাতার মতোই।

জুলিয়ান শুধু একজন নকশা প্রকৌশলীই নন, সেসঙ্গে তিনি প্রথম সারির একজন জৈব রাসায়নিক প্রযুক্তি গবেষকও। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি ‘আর্টিফিশিয়াল লিফ’ নামে একটি পরিকল্পনা হাতে নেন। এর পেছনে বেশ সময় ব্যয় করেন। ধীরে ধীরে সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তৈরি করেন অভিনব এ ঝাড়বাতি। মাইক্রোবায়োলজিক্যাল লাইফ ফর্মের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করে, ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে জুলিয়ানের বায়োনিক লিফ প্রস্তুত করা হয়েছে। বলা চলে, এসব একত্র হয়েই সুন্দরের আধার ঝাড়বাতিটি প্রস্তুত হয়েছে।

সূত্র: ইনহ্যাবিট্যাট

সন্তানের উৎসাহ এবং উদ্দীপনা বাড়ানোর কিছু উপায়!

ধরুন আপনার সন্তান হঠাৎ কোনো অপরাধ করে ফেললো। অপরাধ করার ফলে তার মধ্যে শাস্তি পাওয়ার চেয়েও বেশি যে ভয়টি কাজ করে তা হলো, আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়। তাই তাকে জানতে দিন শত অপরাধ করার পরেও সে আপনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না।

...
“বাহ! তোমার ঘর তো খুব পরিষ্কার!” “বিছানা গুছিয়ে ফেলেছো? দারুণ!” “তোমার কাপড়গুলো কী চমৎকার ভাঁজ করেছো! সাবাশ!” – এইসব ছোট ছোট কথায় আপনার সন্তান তার প্রতি আপনার আস্থা আর সমর্থন টের পায়। এগুলোর মাধ্যমে সে বুঝতে পারে তার চেষ্টার কদর করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোনও ইতিবাচক কথায় বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। ফলে তাদের মাঝে ভালো কাজ গুলো বার বার করার স্পৃহা জন্মে।

...
আমরা মানুষ, আর মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। বাচ্চাদের কাছে ভুল স্বীকার করার এবং ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহস থাকা জরুরী। এতে তারা বুঝতে পারবে যে আমরা তাদের সম্মান করি ও গুরুত্ব দেই। এতে বাচ্চারা শেখে যে, কেউ ভুল করলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ, এবং একই ভুল বার বার করা উচিৎ নয়।

।।।
নেতিবাচক অনুভুতি চেপে রাখলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাজনিত মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের রাগ করার অধিকার আছে। বাচ্চারা ব্যথা পেলে বা হারানো খেলনার জন্য মন খারাপ করলে তাদের কাঁদতে দেয়া উচিৎ। নেতিবাচক অনুভূতি বা তার প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসলে শিশুর স্বকীয়তা এবং স্বতঃস্ফূর্ততার ওপরেই নিষেধাজ্ঞা।
পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বাচ্চাকে শেখানো কীভাবে কারো ক্ষতি না করেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়।

...
ভয় পাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার- এটা বাচ্চাকে বুঝতে দেয়া জরুরী। দুনিয়ার সবাই-ই কিছু না কিছু নিয়ে ভয় পায়, আর ভয়কে জয় করা ভা ভয় সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়াই সাহস। আপনার বাচ্চা যদি কিছু নিয়ে ভয় পায়, তাহলে তাকে আপনার নিজের ছোটবেলার গল্প বলুন, বলুন আপনি কী নিয়ে ভয় পেতেন, আর কিভাবে সেই ভয়কে সামলে নিয়েছিলেন।

...
শিশুর পছন্দকে প্রাধান্য দিন। এতে করে সে শিখবে কিভাবে নিজের মনের কথা শুনতে হয়, আর কিভাবে তার বিশ্বাস, ইচ্ছা বা আগ্রহের সাথে যায়না এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হয়। যেসব বাচ্চাকে সব কিছুই পছন্দ করে দেয়া হয়, তারা বড় হয়ে নিষ্ক্রিয়, নির্ভরশীল এবং সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
শিশুদের কাছে প্রশ্নহীন আনুগত্য চাওয়ার আগে ২০ বছর পরের কথা ভাবুন। আপনি কি তাকে এমন মানুষ বানাতে চান, যে নিজের মনের কথা না শুনে অন্যরা যাই বলে তাই শোনে?

---
বাচ্চাকে তার পূর্ববর্তী সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিন। এতে সে তার নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং আরও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

পজেটিভ প্যারেন্টিং ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

তেষ্টা..

যদি আবার ভালবাসতে হবে বলিস,
তবে বলে দিই,
ও আমার আর হবেনা।
অমন উজাড় করে দেবার মন
আমার আর নেই এখন।
যা পারিনা,
তা পারবো বলে আর
বসতে চাইনা ভদ্রলোকদের আসরে।
আজকাল বড্ড উছন্নে গেছি জানিস!
মনে আর ভদ্রলোকদের জন্য মায়া হয় না…
আমার কেবল অভদ্রদের মায়া হয় ইদানিং।
যত ছোটলোক, নিচুজাত, অচ্ছুতদের মায়া হয়…
আমি কেবল ভালবেসে ফেলি পথকে।
ঘরকে আর পারিনা…
আমার কেবল যুগ যুগ ধরে
হেটে যেতে মন চায় পৃথিবীর পথে।
কেবল মনে হয়,
হাটতে থাকি,
হাটতে থাকি…..
হাটতে হাটতে একদিন লুটিয়ে পড়ি
পথের প্রশান্ত বুকে।
পথের ধূলায় ঢেকে যাবে
আমার মুখোশের গায়ে লেগে থাকা যুগান্তরের ক্লান্তি।
আমার আসল-নকল সবটা ঢেকে যাবে তাতে…।
আমার সমস্ত রেখে যাবো পথের কাছে।
সমস্ত অর্জন, প্রাপ্তি, আমিত্ব…
শেষ নিঃশ্বাসে পথের কোলে মাথা রেখে
মস্তিষ্কের স্নায়ু হাতড়ে খুঁজবো
তরল আবেগগুলো,
নিষ্কলঙ্ক ভালবাসাগুলো,
সে সময়গুলো;
যখন সবাইকে ভালবাসতাম খুব!
নিস্প্রাণ নেত্রজোড়ায়
দুধের সরের মত ভেসে থাকবে নিস্পাপ অনুভূতিরা।
আমৃত্যু এত অমৃত পান করেও
তেষ্টায় খুব ছটফট করবো হয়ত,
কিন্তু তাতে কি?
এক জীবনে কারইবা তেষ্টা মেটে!

...

সুমাইয়া তাসনিম
(সাইকোলজি)

ধোঁয়া মাখা সময়

....

ভালোবাসা?
কই গেল হাস্যমাখা সব মুখ
রাত্রির বাইরে জলন্ত গ্রাম
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

....

কান্না ঢাকা মেঘ বৃষ্টি
মানুষ, মানুষ এবং কোথায় মানুষ বল
ধোঁয়া মাখা বিকাল
ফোঁটা ফোঁটা লাল ঢেউ
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

রক্তের ঝড়
রক্তের ঝড়

বসন্ত এর প্রেমময় দুপুরের গান
স্বপ্ন পাগল মন
হারিয়ে গেলি কোথায় বল
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

বসন্তের ঢেউ
বসন্তের ঢেউ

ঘুম,
কিভাবে ঘুমাও তোমরা রোজ?
অজস্র শব্দ, চিৎকার, কান্না
অবুঝ আমার ভোর
চোখ বোঝ
ব্যর্থ চেষ্টা
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

জলন্ত আগুন
জলন্ত আগুন

সময় মরেছে কবে
রংবেরঙের পাখনা ডানার
স্বপ্নে আলিঙ্গন
অর্থহীন ধূসর আকাশ
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

কবে আসবে ভোর
কবে আসবে ভোর

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে-শেষ পর্ব

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে এ জন্য নয় যে তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,
বরং এ জন্য যে আপনি শান্তিতে থাকার যোগ্য”
জীবনের তিক্ততা,শত্রতা, আক্রোশ,বিষাক্ততাকে ছেড়ে দিন,চলে যেতে দিন(let go)।
আমরা পৃথিবীতে যখন আসি তখন কষ্ট,যন্ত্রনা,প্রতারনা,বিশ্বাস- ঘাতকতা,আক্রোশ,শত্রুতা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না।

১। যারা আঘাত করে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করুন:
ক্ষোভ,ক্রোধ,আক্রোশ,অপমান বোধের কারনে এ রকম ভালোবাসা দেখানো কঠিন মনে হতে পারে।
তবে নিজের মনের শান্তির জন্যই আমাদেরকে তেমনটি করতে হবে।
মার্টিন লুথার কিং(জুনিয়র) বলেছেন” অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার দূর করা যায় না।এক মাত্র আলোই তা করতে পারে।ঘৃনা দিয়ে ঘৃনা দূর করা যায় না।এক মাত্র ভালোবাসা দিয়েই তা করতে হয়।”
অন্যকে ক্ষতি করতে চেয়ে আমরা কিন্তু অবশেষে নিজেরই ক্ষতি করে বসি।
যখনই নেতিবাচক স্পন্দন (negative vibe)প্রকাশ করবেন,তখন আপনি নিজের স্পন্দনকেই নীচে নামিয়ে আনবেন।
আপনি যা আপনার কাছে তেমন কিছুই আকৃষ্ট হবে।
তাই প্রতিশোধ পরায়নতা আপনার নিজের কষ্ট পীড়নকে বাড়িয়ে তুলবে।
যার প্রতি এই ঘৃনা আক্রোশ, তার এতে কিছু যায় আসে না।
যে পর্যন্ত ঘৃনা,আ্ক্রোশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে,;ভালোবাসা, দয়া,করুনায় ফিরতে না পারবেন,ততক্ষন আপনি প্রকৃত ” মুক্তি” পাবেন না।
তাই যারা আপনাকে আহত করেছে, আঘাত করেছে,অপমান করেছে বা ছোট,হেয়,তুচ্ছ করেছে; যত কঠিনই হোক তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ভালোবাসতে হবে
(গত কালই এক বৃদ্ধা মহিলাকে চেম্বারে দেখলাম।তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ বড় ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছেন।তার স্বামী অনেক আগেই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে একই বাড়ীতে বসবাস করছেন।স্বামীর কাছ থেকে সারা জীবন আঘাত,অপমান আর অবহেলাই পেয়ে এসেছেন।
গত কয়েক মাস যাবৎ স্বামীর ২ য় স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর মনো মালিন্যের কারনে ২ য় স্ত্রী বাসা ছেড়ে চলে যান।ফলে স্বামীর খাওয়া দাওয়ার ভার তার উপর পড়ে।এই দায়িত্ব পালন করতে তার মন চাচ্ছে না।যে তাকে এত অবহেলা,নির্যাতন করেছে,নিজ হাতে রান্না করে তাকে খাওয়াতে কিছুতেই মন চাচ্ছে না।কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।কেননা তার আশ্রয়ে আছে এবং লোক লজ্জা।
সঙ্গে তার মেয়ে ছিল।আমি তাকে নিজের মনের শান্তির জন্যই পুরনো ঘৃনা,আক্রোশ মুছে ফেলে স্বামীকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখতে বললাম।তার মেয়েও আমার সঙ্গে একমত হলেন।কিন্ত্ ওনাকে নারাজ মনে হলো।
উল্লেখ্য উনার ডিপ্রেশন এতে আরো গভীর হয়েছে ও ঔষধ তেমন কাজ করছে না।)
তবে এই ক্ষমা করে দেওয়াটি রাতারাতি করতে হবে তেমন নয়।অল্প অল্প করে ভালোবাসতে চেষ্টা করে আপনি ক্রমাগত ভাবে দেখবেন ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন।
***
মূলত: আবেগগত যন্ত্রনার প্রতি আমাদের এক ধরনের “নেশা” তৈরী হয়ে যায়।আমরা এই নেশা আকড়ে ধরে থাকি।
কিন্তু যখনই কষ্ট পাওয়ার নেশা ছাড়তে পারবো আমরা প্রকৃত ভাবে স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্দি করতে পারবো।
2। নিজের সর্বোত্তম রুপটি অর্জনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন:(Focus on becoming best version of yourself)
মনে রাখবেন” আহত মানুষ অন্য মানুষকে আহত করে।নিরাময় প্রাপ্ত মানুষ অন্যকে নিরাময়ের চেষ্টা করে।”
পৃথিবীতে এত যন্ত্রনা,,কষ্ট চলমান রয়েছে,কেননা যারা আহত হয়েছেন,আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন,তারা সে যন্ত্রনাকে “জীবন্ত” করে রেখেছেন।এ ভাবে অন্য জনের মধ্যে তা সন্চালিত করে দিচ্ছেন।( গোত্রে গোত্র যুদ্ধ,ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ,এমনকি পরিবারে পরিবারেও ব্যক্তি ব্যক্তিতে যুদ্ধ একারনেই চলে আসছে)
মনের ও আত্মার স্বাচ্ছন্দ্য,সহজতা বিনষ্ট হওয়ার এই অসুখ এ ভাবে সন্চালন হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
*** অন্যকে ছিড়ে-ফুড়ে তছনছ করে দেওয়ার দিকে সব দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে,বরং নিজকে নির্মান করার দিকে আমাদের বেশী নজর দিতে হবে।
৩। মনে রাখবেন চূড়ান্ত নিখুত হওয়ার প্রত্যাশা, অবাস্তব অপ্রত্যাশিত:
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে মানুষ ভুল করে এবং এ রকম ভুল অহরহই হয়।
যদিও এ রকম ভুলের কিছু ক্ষেত্রে খারাপ পরিনতি হয়ে থাকে(যেমন ঐ মহিলার স্বামীর ভুল), কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সে সব দূর্ঘটনাবশত ঘটে থাকে,উদ্দেশ্যমূলক নয়।
আমরা প্রত্যেকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত
এবং আমাদের বেশীর ভাগই ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যের জন্য মন্দ কিছু করতে চাই না।
মনে রাখতে হবে আমরা একই সমুদ্রে সাতার কাটছি এবং একই স্রোতের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি।
আমরা সবাই চাচ্ছি এই ঢেউয়ের মাঝে কোন রকমে মাথা উপরে রেখে ভেসে থাকতে।
এরই মাঝে আমরা কিছু ভুল করে বসি।
মানষকে ভুল করতে এলাউ করুন এবং এ ভাবে ভুলের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন
এবং মনে রাখুন সম্ভবত আপনিও একই ভুল করেছিলেন( ঐ মহিলারও কি কোন ভুল ছিল না?)।
অন্যকে ক্ষমা করা সহজ হবে যদি মনে রাখেন আপনার মতন তারাও মানুষ এবং মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে।

*** ক্ষমা করার সময় বলুন
” আমি ক্ষমা করে দিচ্ছি ও নিজকে মুক্ত করছি।
আমি উজ্জলতর এক ভবিষত্যের দিকে আমার যাত্রাকে অগ্রসর করছি।

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com

 

এই সময়ে ঘর পরিষ্কার রাখবেন যেভাবে

বর্ষাকাল চলে গেলেও বৃষ্টির রাজত্ব এখনও ফুরায়নি। রোদ যেমন উঁকি দিচ্ছে ঠিক তেমনি মহাসমারোহে চলে আসছে বৃষ্টিও। ঝুম বৃষ্টিতে নাকাল হচ্ছেন অনেকেই। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালি আচরণের প্রভাব পড়ে আমাদের আবাস্থলেও। আমাদের শখের ঘর-দুয়ার, আসবাবপত্র সবকিছু যেন হয়ে ওঠে স্যাঁতস্যাঁতে। তাই এসময়ে ঘরের ভেতরকার পরিবেশ সতেজ রাখতে আপনাকে করতে হবে কিছু কাজ।

দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে কোনো আসবাবপত্র রাখবেন না। এতে আসবাবপত্র ড্যাম হয়ে যায়, যাতে বাসা বানায় ঘুনপোকা। তাই দেয়াল থেকে দূরত্ব বজায় রেখে আসবাবপত্র রাখুন। আরও সম্ভব হলে আসবাবপত্রের পেছনের অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।

আলমারিতে বা ওয়ারড্রবে কাপড় রাখলে তার সঙ্গে রাখতে পারেন নেপথোলিন। এর কারণে পোকামাকড় থাকবে আসবাবপত্র এবং কাপড় থেকে অনেক দূরে। এর সঙ্গে দামি আসবাবপত্রের নিচে টিনের বা কাচের পাত্রে এক টুকরা সালফার বা গন্ধক রাখতে পারেন। যা পোকামাকড় থেকে আসবাবপত্রকে মুক্ত রাখবে।

আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে কাঠের বদলে হার্ডবোর্ডের আসবাবপত্র ব্যবহার করা উচিত। কারণ বোডের ভেতরের অংশ ফাঁপা। এতে ঘুনে ধরার প্রবণতা যেমন থাকে না তেমনি এটি সহজে নষ্টও হয় না। সঙ্গে সঙ্গে যত্ন খুব সহজে নেয়া যায়। তাই আপনি ইচ্ছা করলে কাঠের বানানো আসবাবপত্রকে হার্ডবোর্ডের আবরণ দিতে পারেন।

ঘরের এক কোণে হিটার রাখতে পারেন, যা ঘরকে রাখবে শুষ্ক। এটি আপনি রাখতে পারেন লিভিং রুম, ড্রয়িংরুম এবং গেস্ট রুমে।
ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে ঘরে একের অধিক লাইট ব্যবহার করা উচিত। এতে ঘরের আর্দ্রতা যেমন বাড়বে তেমনি মনে হবে আপনি বাইরেই আছেন। এর সঙ্গে করতে পারেন সেলিং এ লাইট। যাতে পর্যাপ্ত আলো ঘরে থাকে। কর্নারেও এসব লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিকল্প নেই। তাই যতটা সম্ভব ঘরে আলোর ব্যবস্থা রাখুন এবং ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে আপনি যেমন থাকবেন সুস্থ তেমনি আশপাশে পরিবেশ হবে সুন্দরভাবে বসবাসের যোগ্য।

 

আলুর দম তৈরির রেসিপি

বিকেলের নাস্তায় কিংবা রাতের খাবারে লুচি কিংবা রুটি-পরোটার সঙ্গে আলুর দম খেতে বেশ। তবে অনেকেই আলুর দম তৈরির সঠিক রেসিপি জানেন না। রেসিপি জানা থাকলে ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন মজাদার এই আলুর দম। রইলো রেসিপি-

উপকরণ: আলু ১০টি, পিয়াজ বাটা -১ চামচ, আদা+রসুন বাটা -১ চামচ, টমেটো পেস্ট -২ চামচ, মরিচ+হলুদ গুরা-১/২ চামচ, গরম মসলা -১/২ টেবিল চামচ, ধনিয়া গুড়া-১/২ টেবিল চামচ, জিরা গুড়া-১/২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৪ টি, ধনেপাতা কুচি-৩ টে চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালি: প্রথমে আলু খোসা ছাড়িয়ে লবণ ও সামান্য হলুদ গুড়া দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার একটি কড়াইতে তেল দিয়ে সব মশলা দিয়ে কষাতে হবে। কষানো হলে আলুগুলো দিয়ে ঢেকে দিয়ে সামান্য পানি দিতে হবে। ১৫মিনিট পরে ঝোল শুকিয়ে এলে নামানোর আগে ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে পরোটা অথবা লুচির সাথে পরিবেশন করুন।

 

রঙ বাংলাদেশে শারদ উৎসবের পোশাক

বর্ষা থিতিয়ে এসেছে। চারপাশের উজ্জ্বল সবুজের মাঝে মাথা তুলেছে কাশের দল। রোদ আর ছায়ার লুকোচুরির মধ্যেই তরতরিয়ে বাড়ছে তারা। আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি সত্বেও প্রকৃতি প্রস্তুত শারদ উৎসবকে স্বাগত জানাতে। আর কদিন পরেই বাঙালি মেতে উঠবে উদযাপনে। প্রকৃতির মতো উচ্ছ্বল এখন সবাই উৎসবের রঙে রঙ মেলাতে।

শারদ উৎসবে ফ্যাশনের ছোয়া দিতে দেশের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন হাউজ ‘রঙ বাংলাদেশ’ নিয়ে এসেছে পোশাকের বিশেষ কালেকশন। কেবল বড়দের নয়, ছোটদের পোশাককে সমান গুরুত্ব দিয়ে আকর্ষণীয় করা হয়েছে।

রঙ বাংলাদেশ বরাবরই বিভিন্ন থিমে সংগ্রহ সাজিয়ে থাকে। এবারো সেই ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। শারদীয় আয়োজনকে সুন্দর করতে থিম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে পদ্ম, শিউলি, নানা ধরনের ক্যালিওগ্রাফি, দুর্গার অলংকার ও গনেশের অবয়।

লাল, সাদা, অফহোয়াইট, মেরুন আর গেরুয়াকে উপজীব্য করে সাজানো এবারের সংগ্রহে নকশাকে মনোগ্রাহী করতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে কমলা, ফিরোজা, ক্রিম, টিয়া, নীল, অ্যাশ, সোনালী হলুদ ও মেজেন্টা।

বড়দের জন্য রঙ বাংলাদেশ-এর শারদ সংগ্রহে রয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিস, লং স্কার্ট-টপস, সিঙ্গেল কামিজ, শর্ট ও লং পাঞ্জাবি, উত্তরীয়, ধুতি, শার্ট, টি-শার্ট ও ফতুয়া।

আর শিশু কিশোরদের সংগ্রহের এবারের থিম পদ্ম, শিউলি, ক্যালিওগ্রাফি আর দুর্গার শোলার অলংকার। মূল রঙ অফহোয়াইট, হলুদ আর বাসন্তীর সঙ্গে আরো ব্যবহার করা হয়েছে লাল, মেজেন্টা, সবুজ ও নীল। মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি এই পূজায় তৈরি করেছে ফ্রক, কামিজ আর থ্রিপিস।
এ সময়ের আবহাওয়া উষ্ণ আর আর্দ্র। তাই শারদসংগ্রহের বেশিরভাগ পোশাক সুতি কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কালেকশনকে উৎসবময় করতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে বলাকা সিল্ক, হাফ-সিল্ক, জয়সিল্ক, এন্ডি কটন এবং এন্ডি সিল্ক। ষষ্ঠী থেকে দশমী, কুমারী পূজা থেকে সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ থেকে প্রসাদ বিতরণ, প্রতিদিন সন্ধ্যা আর সকালের অঞ্জলি থেকে ভাসান- প্রতিটি উপলক্ষ্যকে বর্ণময় আর আনন্দময় করতে সেভাবেই দৃষ্টিনন্দন পোশাক তৈরি করা হয়েছে।

এবারের এই উৎসব সংগ্রহে নকশা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। নানা ধরনের প্রিন্টের ব্যবহার এই কালেকশনের মূল বৈশিষ্ট্য। নকশার চাহিদা অনুযায়ী কারচুপি, মেশিন ও হ্যান্ড এম্বয়ডারির পাশাপাশি তাই ব্যবহার করা হয়েছে ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্ট।

পূজা কালেকশনে রঙ বাংলাদেশ-এর শাড়ি কেনা যাবে: সুতি শাড়ি ৮৫০-৪,০০০ টাকা, হাফ সিল্ক ২,২৫০-৮,৫০০ টাকা, মসলিন ১০,৫০০-২০,০০০ টাকা।

সালোয়ার-কামিজ ২,০০০-৪৫০০ টাকা, সিঙ্গল কামিজ ৮৫০-৩,০০০ টাকা, স্কার্ট-টপস ১,২০০-২,৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮৫০-৪,০০০ টাকা, টি-শার্ট ৩৫০-৫০০ টাকা, পলো শার্ট ৬৫০-১,২০০ টাকা, শার্ট ৬৫০-১,৮০০ টাকা, ফতুয়া ৭৫০-১,২৫০ টাকা, উত্তরীয় ৩৫০-৫০০ টাকা, ধুতি ৬৫০-১,০৫০ টাকা, ব্লাউজ পিস ৩০০-৫০০ টাকা, আনস্টিচড ১,৫০০-৪,০০০ টাকা, অলংকার সামগ্রী ৫০-২,০০০ টাকায় পাওয়া যাবে।

শিশু কিশোরদের পোশাকের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি ৬০০-৮৫০ টাকা, ফ্রক ৬০০-১,০৫০ টাকা, শার্ট ৫০০-৭০০ টাকা, সিঙ্গল কামিজ ৬০০-১,০৫০ টাকা, শাড়ি ৯৫০-১,১৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। এছাড়া পাওয়া যাবে ঘর সাজানোর জন্য নানা সামগ্রী।

পূজার পোশাক, গয়না ও ঘর সাজানোর সামগ্রী রঙ বাংলাদেশ-এর সবগুলো শাখা ছাড়াও, ঘরে বসে অনলাইনেও (www.rang-bd.com) কেনার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে রয়েছে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধা। এছাড়া প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য রয়েছে গিফট ভাউচার, যার মাধ্যমে প্রিয়জন নিজের পছন্দ মতো কেনাটাকা করতে পারবে।

ঘুম ভাঙা প্রশ্ন

..... …..

মাঝেমাঝে সময় আসে,
যখন খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে।
অন্যকে নয়,নিজেকেই।
কিন্তু অনেক উত্তরের প্রচণ্ড উপস্থিতির কথা চিন্তা করে
প্রশ্নের ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করে না।
ঘুম ভাঙা প্রশ্নগুলো বড্ড বদমেজাজি হয়,
উত্তরের তোয়াক্কা করে না।
নিজের অস্তিত্বের অহংকার টিকিয়ে রাখতে
উত্তরের টুঁটি চেপে ধরে।
অনেক উত্তরের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতির মাঝে
নিজের রহস্যময়তার জাল বুনে যায়।
উত্তরসমুহের পিতৃত্ব স্বীকার করে না এমন প্রশ্নগুলো,
ক্রমাগত ভীড় করে রূপোপজীবি অবচেতন মনে।
অতঃপর সচেতন মনে জন্মের দোষ বয়ে বেড়ায়
জন্মেই পরিচয়হীন একগুচ্ছ ভিন্ন ভিন্ন উত্তর।

স্বপ্ন স্বপ্ন

Ivanhoe Mukit

ঘূর্ণিপাক মেঘ

ঘোলা মেঘের জল
এমন কার হৃদয় আছে বল
কার এমন মন খারাপ
মন হাসে,
কে বলেছে ঠিক হয়ে যাক সব
কবে কে দাড়িয়ে শুনতে চায়,
পথের ঐ হাক ডাক….
কিসের টানে সহজ হবে সব
কিসের টানে আসবে ছুটে।
মাঝ দরিয়া ক্লান্ত মাঝি
শোন,
মিথ্যা আশায় বসবে আর না কেউ
স্বপ্নের ঘোর…
ঠিক ঠিক কাটবে একদিন।
কি কারণে হারিয়ে গেলাম,
খোঁজ রাখে কে,
কবে কে কার বল।
সেদিনের বিকেলের ছায়ায়
কোন পাতাদের খোঁজে
কোন বাগিচার মায়ায়
অজস্র পাখি হারিয়ে যায় রোজ।
ধূর…
মেঘ করেছে,
বিষাদ মাখা আকাশ
হতাশারা সব পায়ের নিচে ঘুমায়।
ধর,
কড়া রোদে মেজাজ বড্ড বাজে
কই কেউ ত বুঝে নাই,
কেউ বুঝে নাই কখন রাত্রী জাগে।
অবুঝ পৃথিবী,
ডুব কারে কয় শোন….
কে শোনে কার কথা,
থাক না এসব,
হাজার গল্পে হোক,
এবার জীবন নিখোঁজ।

 

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৬: ক্রিটিকের সাথে পাল্লা দেয়ার উপায়

এই পর্বে ওভার জেনারালাইজেশন ও গ্লোবাল লেবেলিং এর বিরূদ্ধে কী করা যায় সে নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগের পর্ব তে বলা হয়েছিল এ দুটো ক্ষেত্রে একটা ব্যর্থতাকে টেনে টেনে পুরো জীবনের/ব্যক্তিত্বের উপর দাগ ফেলা হয়। এই যেমন, মিটিং এ দেরি করে আসলাম, আমার মত অলস, অকর্মণ্য পৃথিবীতে কেউ নেই। বাসায় সুন্দরভাবে মেহমানদারি করতে পারলাম না, আমি জীবনেও ঘরকন্না শিখব না।

ওভারজেনারালাইজেশন গন্তব্য
ওভারজেনারালাইজেশন গন্তব্য

ওভারজেনারালাইজেশন যখনই মনের মধ্যে হতে চাইবে, এ প্রশ্নগুলো করতে হবে,

১. আমার এই চিন্তার ভিত্তি কী? ২. আমার কাছে কি এই সিদ্ধান্তে পৌছানোর জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আছে? ৩. ঘটনাটা থেকে আমি যে উপসংহার টানছি, তার বদলে অন্যভাবে কি ভাবা যায়? ৪. গৎবাঁধা মন্তব্য না করে, পরিষ্কারভাবে বল, একদম পয়েন্ট আকারে। ৫. ভবিষ্যৎ দেখার দায়িত্ব তোমাকে কে দিল?

ধরা যাক, সূচি সবসময় মনে করে,

– আমাকে কেউ পছন্দ করেনা – বন্ধুরা কেউ আমাকে দাওয়াত দেয়না – সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে – আমি একটা গাধা স্টুডেন্ট – পুরো পৃথিবীতে আমার একটাও বন্ধু নেই – আমার সারা জীবনেও কোন বন্ধু হবে না

সূচির এক্ষেত্রে যা করা উচিৎ –

প্রথমেই মনটাকে একটা ধমক দেয়া উচিৎ, এইসব ফালতু চিন্তা মনে আসার জন্য। ধমক দিলে কিছুক্ষণের জন্য ক্রিটিকের বিরূদ্ধে লড়াই করার সাহস পাওয়া যায়। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ, এরকম সারাজীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার জন্য আমার হাতে কী প্রমাণ আছে? সারা পৃথিবীতে আমার একটাও বন্ধু নেই – আমি সারা পৃথিবীর সবার সাথে মিশি নি। আমি পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখিনি! আমাকে ‘কেউই’ পছন্দ করেনা কথাটা কি ঠিক? হ্যা, সঞ্চিতা আমাকে দেখতে পারেনা, মুহায়মিন ও না। কিন্তু রূপন্তি আমাকে ভীষণ ভালোবাসে! হ্যা, দুই দুইটা ক্লাশমেটের জন্মদিনে আমাকে দাওয়াত দেয়নি, কিন্তু সেদিন ও তো পিকনিকের প্ল্যান সবাই মিলে করলাম! তারপর আত্মীয়দের বাসায়, পাশের বাসার আপুর ঐখানে তো আমি প্রায়ই যাই! সুতরাং, আমাকে কেউ পছন্দ করেনা, কেউ দাওয়াত দেয়না – এগুলি ঠিক কথা না। আমার কোন বন্ধু নাই, এটাও ঠিক না! হয়ত যেমনটি চাই তেমন বন্ধু নেই, কিন্তু একেবারে নেই এটা মিথ্যা কথা! সুতরাং এইসব দুঃখবাদি চিন্তাভাবনা আমাকে বাদ দিতে হবে! আমি মোটেও এত একা নই, যতটা আমি ভাবি।

আর আমি গাধা স্টুডেন্ট না। আমি ছবি আঁকতে পারি খুব ভালো। আমার ক্রিয়েটিভিটি আছে। আমি এদের স্ট্যান্ডার্ডে ভালো করতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু আমার পছন্দের ফিল্ডে আমি খুব ভালো করি। ক্রিয়েটিভিটি মুখস্ত বিদ্যার চেয়েও অনেক বেশি দামি।

পাশাপাশি, সূচি যদি মনে করে সে মোটা, নাকটা বিচ্ছিরি, অসামাজিক, তখন মনে মনে নিজেকে ধমক দিতে হবে, বলতে হবে, আমি ছোট ব্যাপারকে বড়সর করে ফেলছি। মোটা বললে যদি মন খারাপ হয়, তখন বলতে পারে, টার্গেট ওজনে আসার জন্য আমাকে ষোল কেজি কমাতে হবে।

আমি এই, আমি সেই – এই চিন্তাটা দূর করতেই হবে। তাতে করে সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবেনা। কিন্তু বিষয়টাকে মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

আমার নিজের বেলায় যেমন, আমি বলতে ভালোবাসি আমি নিওফোবিক (নতুন যে কোন কিছুকেই আমি ভয় করি।) কথাটা সত্যি, পিএইচডি শেষ করে চাকুরি খুঁজতে ইন্টারভিউ দিতে হবে, আমি কখনও ইন্টারভিউ দেইনি, তাই ওটা ভাবতেই ভয় করে, মনে হয় আমাকে কেউ কখনও চাকরি দেবেনা। কনফারেন্সে প্রথমবার পোস্টার প্রেজেন্ট করতে কেমন দুরু দুরু বুক – অথচ ব্যাপারটা কিছুই না! প্রথমবার ক্লাশে লেকচার দিতে গিয়ে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা।

যাই হোক, সেল্ফ ক্রিটিক এর এই পর্যায়ে পেছন ফিরে দেখি, জীবনে নতুন কাজের সংখ্যা কম না। রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়েছি এমন একটা, ডিপার্টমেন্টে আর কেউ আগে করেনি। সোশ্যাল ওয়ার্ক এর নতুন কোন সুযোগ আসলে যেটুকুই হোক অংশ নেয়ার চেষ্টা করেছি। আর অত কিছু কেন, নতুন পরিবেশে, নতুন দেশে টিকে থাকতে পারে যে, তার আর কিছু নিয়ে ভয় করার দরকার আছে?

মোকাবেলা
মোকাবেলা

নতুন জিনিস দেখলে এখনো ভয় লাগে, কিন্তু আবার পুরনো সফলতা মনে করে মনকে সাহস দিলে, আর একটু একটু করে একধাপ করে এগোলে জিনিসটাকে মোকাবেলা করা যায়। এতদিন পর্যন্ত নতুন কাজের কথা কেউ বললেই পিছিয়ে যেতাম, মনকে বলতাম, আমি নিওফোবিক, আমার সময় লাগবে। তারপর ফেলে রাখতাম অনেকদিন। এখন মনে হচ্ছে, তার বদলে এভাবে ভাবতে হবে, আগে করিনি? জানিনা কেমন হবে? ঠিক আছে, আরো একটু জেনে বুঝে নেই। পুরনো কাজগুলিও তো একসময় নতুন ছিল। শুরু না করলে তো ওগুলো চিরকাল নতুনই থেকে যেত!

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৫: এস্টিম ধ্বংসকারী চিন্তাগুলো

গত কয়েক পর্ব মন দিয়ে পড়লে আশা করা যায় ক্রিটিক কে ভাল করে চেনা, ও তার সাথে ফাইট করার একটা মোটামুটি আন্দাজ হয়ে যাবে। ক্রিটিক কে চেনার ও বোঝার শেষ নেই। যতই চেনা যাবে, ততই মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে হবে, হায় আল্লাহ! আমি ত এগুলোর সবগুলোই করি! হ্যা, ক্রিটিক অমনই চতুর। কখনও লজিক, কখনও ইনটুইশন, কখনও পর্যবেক্ষণের ভেক ধরে মনের ভেতর হানা দেয়। বস্তুতঃ একটা বাস্তব ঘটনাকে অবাস্তব পন্থায় বিশ্লেষণ করার এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ক্রিটিক ভদ্রলোকের ছলচাতুরি ছাড়া আর কিছু না। এই পর্বে ক্রিটিকের কয়েকটা অতিপরিচিত কৌশল আলোচনা করা হবে।
ওভারজেনারালাইজেশন
ওভারজেনারালাইজেশন

১. ওভারজেনারালাইজেশন: একটা ঘটনা থেকে পুরো পৃথিবীর সমুদয় ঘটনার প্রতি জেনারেল ধারণা করা। একটা ইন্টারভিউ খারাপ হল, ধরে নেয়া, আমি জীবনেও ভাল ইন্টারভিউ দিতে পারব না। একবার প্রেজেন্টেশনে হাঁটু কাঁপল, ঘোষণা করে দেয়া, বক্তৃতা আমার জন্য না।

ক্রিটিক ওভারজেনারালাইজেশন টেকনিক ব্যবহার করছে কিনা তা বুঝতে পারবেন যদি সে ঘন ঘন ‘never’, ‘always’, ‘all’, ‘every’, ‘none’, ‘nobody’, ‘everyone’, ‘everybody’ – এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে থাকে।

 গ্লোবাল লেবেলিং
গ্লোবাল লেবেলিং

২. গ্লোবাল লেবেলিং: একটা ঘটনা থেকে পুরো ব্যক্তিত্বটার উপরে একটা জেনারেল ধারণা করা। যেমন, ভাইভা বোর্ডে ভাল উত্তর দিতে পারলাম না, ‘আমি একটা স্টুপিড, আনস্মার্ট গাধা।’ ওভারজেনারালাইজেশনের মতই, তবে এখানে ঘটনার বদলে মানুষটাকে বাজে বাজে বিশেষণ দেয়া হয়।

গ্লোবাল লেবেলিং হচ্ছে কিনা বুঝতে পারবেন, যদি আপনার ক্রিটিক আপনার চেহারা, পারফর্মেন্স, বুদ্ধিমত্তা, সোশ্যাল স্কিল নিয়ে কমন, আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকে। এই যেমন, ‘আমি একটা অকর্মণ্য কুঁড়ে অলস’, ‘আমি কিছুই পারিনা’, ‘আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা’, ‘আমি একটা স্পাইনলেস’, ‘আমার ফ্যামিলি একটা আজাব।’
চিন্তার ফিল্টারিং
চিন্তার ফিল্টারিং

৩. ফিল্টারিং: এই প্রক্রিয়ায় ক্রিটিক বাস্তব ঘটনার সবগুলো আলো শুষে নিয়ে কেবল অন্ধকারটাই দেখায়। আপনি কেবল বিশেষ কয়েকটা মন্তব্যই শুনতে পাবেন, বাকিগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশও করবে না। একটা ফাটাফাটি প্রেজেন্টেশন দিলেন, বস একফাঁকে বলল, তোমার বক্তব্যে coherence কম। ব্যাস! এত বছর ধরে প্রেজেন্টেশন দিয়েও যদি একটা গুছানো প্রেজেন্টেশন দিতে না পারি, তাহলে করছি টা কী? এই নিয়ে মন খারাপ, ছোট হয়ে থাকা, আপসেট থাকা, লেবেলিং করা… ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে বস যে এতগুলো তথ্যের উপস্থাপনকে প্রশংসা করলেন, প্ল্যানটা সুন্দর বললেন, এত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ দিলেন – এগুলো মনের কোথাও ঠাঁই পেলনা।

ফিল্টারিং হতে থাকলে প্রশংসাগুলো মনে হতে থাকে বানিয়ে বানিয়ে বলা, আর সমালোচনাগুলো অনেক মৃদু আকারে বলা। এক ফোঁটা সমালোচনা তখন বড় একটা কাজের ফলাফলকে ম্লান করে ঐ অতটুকুর মধ্যেই নিয়ে আসে।

পোলারাইজড থিংকিং
পোলারাইজড থিংকিং
৪. পোলারাইজড থিংকিং: পোলারাইজড চিন্তাভাবনায় পৃথিবীটা আপনার কাছে সম্পূর্ণ সাদা আর কালো। প্রতিটা ঘটনা, কাজ হয় মন্দ নাহয় ভালো। আপনি নিজেকে সাধু নয় চোর, সফল বা লুজার, হিরো বা ভিলেইন – এভাবে চিত্রিত করে ফেলেন।

মনের ভেতর ভাবনাগুলো যদি এমন হয়, ‘স্কলারশিপটা না পেলে আমার জীবন শেষ’, ‘বউ ভাল না বাসলে বেঁচে থেকে আর লাভটা কী’… তবে বুঝবেন আপনি পোলারাইজেশন জ্বরে আক্রান্ত।

 সেল্ফ ব্লেইম
সেল্ফ ব্লেইম

৫. সেল্ফ ব্লেইম: সব ঘটনার দোষ আপনার। সবকিছুর জন্য আপনি পরোক্ষভাবে হলেও দায়ী। নিদেনপক্ষে আপনার ভাগ্য দায়ী। রাস্তায় অভাবনীয় জ্যামের কারণে মিটিং এ দেরি হল, আপনার দোষ। আপনার স্বামী আপনার সাধের এক্সপেরিমেন্টের রান্নাটা পছন্দ করল না, আপনার দোষ।

সেল্ফ ব্লেইম আপনার ভাল দিকগুলোর ব্যাপারে আপনাকে পুরোপুরি অন্ধ করে দেয়। আপনার চালানো তিনটি প্রজেক্টের দুটি সফল আর একটি চরমভাবে ব্যর্থ হলে আপনি আজীবন তৃতীয়টির জন্য নিজেকে দায়ী করে গেলে, আর বাকি দুটোর জন্য সমভাবে গর্ববোধ না করলে আপনার মাঝে সেল্ফ ব্লেইম রোগ আছে।

পারসোনালাইজেশন
পারসোনালাইজেশন
৬. পারসোনালাইজেশন: পার্সোনালাইজড জগতে আপনি নিজেই আপনার জগত হয়ে বসে থাকেন। প্রতিটা ঘটনাই যেন আপনাকে ঘিরে আবর্তিত। কিন্তু আপনার হাতে কোন কন্ট্রোল নেই। আপনি হতভাগা, সবাই আপনাকে কষ্ট দেয়।

পারসোনালাইজেশনের মধ্যে একধরণের সেল্ফ অবসেশন বা নার্সিসিজম আছে। ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে ঢুকলেন, সাথে সাথে আর সবার সাথে তুলনা করা শুরু করে দিলেন, কে আমার চেয়ে বেশি স্মার্ট, কার চেহারা বেশি ভাল, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ বলল, ‘ভাল লাগছে না’, আপনি ধরে নিলেন আপনার সাথে তার বিরক্ত লাগছে।

মাইন্ড রিডিং
মাইন্ড রিডিং
৭. মাইন্ড রিডিং: আমি অন্যের ভাব বুঝতে পারি। সে কী ভাবছে আমি জানি। আমি থিসিস দেরি তে জমা দিলাম, সুপারভাইজরের থমথমে ভাব। পরিষ্কার বলে দেয়া যায় তিনি আমার উপর বিরক্ত। আমার শাশুড়ি জানতে চাইলেন এতক্ষণ কোথায় ছিলাম। তার মানে উনি হিসাব চাচ্ছেন আমি কোথায় কোথায় গিয়ে ঘরের কাজ ফাঁকি দিচ্ছি।

মনের মধ্যে যদি, ‘আমি জানি’, ‘আমি শিওর’, ‘আমার মনে হচ্ছে’, ‘আমি এগুলি ভাল বুঝি’ – ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা আসে, তাদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিন। এসব আপনার সাইকিক পাওয়ার না, ক্রিটিকের হাতিয়ার।

 ইমোশনাল রিজনিং
ইমোশনাল রিজনিং
৮. ইমোশনাল রিজনিং: প্রবল দুঃখের সময় আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কোন ঘটনায় ক্রিটিক হয়ত এসে কানে কানে বলল, ‘কুঁড়ে, অলস।’ আপনার হালকা একটা মন খারাপের ভাব হল। মন খারাপ ভাবটা বাড়তেই থাকল।

ক্রিটিক এইবার আবার এসে বলবে, ‘তুমি যা মনে কর, তুমি ত তাই। তোমার নিজেকে অলস মনে হচ্ছে, তুমি ত আসলেই অলস।’ এর মধ্যে আপনি হয়ত ভুলেই বসে আছেন, ‘অলস’ আপনি আপনাকে বলেন নি, ক্রিটিক বলেছে। এই পুরো চিন্তার শুরুটা ক্রিটিক কে দিয়ে। মাঝপথে মন খারাপকে পুঁজি করে ক্রিটিক আপনার সেল্ফ এস্টিমটাকে নাড়া দিয়ে গেল।

Ref: Self Esteem by McKay and Fanning
নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

সমকামিতা বর্তমান সমাজের বড় ফ্যাশন

ছোটবেলায় সন্ধি বিচ্ছেদে পড়েছিলাম দম্পতি = জায়া + পতি। ‘জায়া’ মানে স্ত্রী আর ‘পতি’ মানে স্বামী। তাহলে দুইটা ছেলে “বিয়ে” করলে তাদেরকে কি পতি পতি বলা উচিত? আর দুইটা মেয়ে করলে জায়া জায়া?
এ কেমন বিচার?

বর্তমানে অনেক মহল এসব হালকা কথায় হয়ত বড়ই বিরক্ত হয়ে উঠবেন।

বিয়ে বন্ধন বিয়ে বন্ধন

আপাতত ব্রিটেনে হয়ে যাওয়ায় প্রথম “মুসলিম গে বিয়ে” নিয়ে যার পর নাই সমকামিরা অনেকেই উচ্ছ্বাসিত। কোন আসল বিয়েতে কাচ্চি বিরিয়ানি খেলেও বোধ হয় তারা এতটা আনন্দ অনুভব করতেন না। আফটার অল, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি নিজেদের সম্মতিতে একসাথে যৌনকর্ম করার লাইসেন্স চায় তো করুক না। ওদের তো অধিকার দেয়াই উচিত। আপনার আমার ক্ষতি কী তাতে!

ভাবুন তো একবার, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোন,
বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলে যদি নিজেদের সম্মতিতে এ রকম যৌনকর্ম করার লাইসেন্স চায় তো তাদেরও তো করতে দেয়া উচিত? তাই নয় কি?
নাকি তাদেরকে করতে দিবেন না, আপনার এসব ভেবে বমি আসতেছে? আপনার বমি আসলে কি ঘটনাগুল থেমে থাকবে?
তাদের “অধিকার” তখন কিভাবে অর্জিত হবে?
‘মুসলিম গে বিয়ে’ কথাটায় মুসলিম শব্দটা শুনছেন?

তার মানে গে সাপোর্টাররা যদি হিপোক্রিট না হয়। অবশ্যই হিপোক্রিট। তাহলে তারা ভাই-বোন, বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলের মধ্যে যৌনকর্ম সমর্থন করবে না আগামীকাল তার কি নিশ্চয়তা আছে?

এসব কি “আধুনিকতা” কই রাখবেন এই সমাজকে?

অনেক বুদ্ধিমান প্রগতিশীল আবার দাবি করে গে/লেসবিয়ান হওয়া নাকি “প্রাকৃতিক”, এতে কারো কোন হাত নেই সবই জেনেটিক অর্থাৎ জন্মগত।

চলুন দেখি বিজ্ঞান কী বলে?

কোন কিছু জেনেটিক কারণে হয় না পরিবেশগত কারণে হয় তা নির্নয় করার জন্য বিজ্ঞানের সবচেয়ে কার্যকরী মেথড হলো “মনোজাইগোটিক” যমজদের নিয়ে গবেষণা। কারণ তারা একই ভ্রূণ থেকে জন্ম হয় বলে তাদের জেনেটিক কোড একদম বা প্রায়একই রকম।

তো সমকামিতা হওয়া যদি জেনেটিকই হয়, তাহলে তো একজোড়া যমজের মধ্যে যদি একজন সমকামী হয় তাহলে তো আরেকজনও সমকামী হবে। আর একজন সমকামী না হলে আরেকজনও হবে না। যেহেতু দুজনের জেনেটিক কোড একদম একই, তাই ত?

১০০% ক্ষেত্রে না হলেও তার মধ্য থেকে ৮০-৯০% ক্ষেত্রে তো এমন হওয়ার কথা?

Can you guess what was the real percentage that researchers have found?

আমেরিকার বিখ্যাত Columbia University-এর গবেষক, Peter Bearman এবং Yale University-এর গবেষক, Hannah Brückner আবিষ্কার করলেন ছেলে যমজদের ক্ষেত্রে এই রেট মাত্র ৭% আর মেয়ে যমজদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫%! (American Journal of Sociology. Volume 107 (5): Page 1179–1205)। তাহলে এটা কি জেনেটিক্স কারণে। নিজেকে প্রশ্ন করুন?

তাহলে ৮০-৯০% হওয়ার কথা ছিল। আর সেখানে ৫-৭% দেখা যাচ্ছে! তার মানে বোঝা গেল, “সমকামিতা প্রাকৃতিক” এই দাবি পুরাটায় অযৌক্তিক।

এটা একটা সমস্যা।
সবচেয়ে বড় কথা মানসিক সমস্যা।
সমস্যাকে সমাধানের প্রথম ধাপ হলো সমস্যাকে সমস্যা বলে স্বীকার করে নেয়া। সমস্যাকে অস্বীকার করে কখনোই তা সমাধান করা সম্ভব নয়।

অবশ্য অনেকেই মানতে চাইবেন না সমকামিতা কোন “মানসিক সমস্যা”। যেহেতু বর্তমানে তা উঠানো হয়েছে।

Homosexuality Mental Disorder Homosexuality Mental Disorder

সমকামী এবং তাদের সাপোর্টকারী গোষ্ঠী মানতে চাইবেন, কি চাইবেন না কিন্তু American Psychological Association(APA) ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সমকামিতাকে “Mental Disorder” হিসেবে গণ্য করে এসেছে।
তাহলে ১৯৭৪ সালের দিকে এমন কী হলো? না কোন বৈজ্ঞানিক কারণে নয়। এটায় তারা বুঝেই Disorder রেখেছিল।

সমকামীদের আন্দোলন সমকামীদের আন্দোলন

১৯৭০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কোতে চলছিল APA এর অধিবেশন। গে সাপোর্টাররা সেই অধিবেশনে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে এবং সাইকিয়াট্রিস্টদের বিদ্রূপ-উপহাস করতে শুরু করে। তাদের নেতা Frank Kameny যে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট না হয়েও সাইকিয়াট্রিস্টদের অধিবেশনে ঢুকে মাইক ছিনিয়ে নেন।

তার মত ছিল,
“সাইকিয়াট্রি হলো আমাদের মূর্তিকার শত্রু। সাইকিয়াট্রি আমাদের উপর নিষ্ঠুর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাইকিয়াট্রির উপর যুদ্ধ ঘোষণা করছি।” ( Homosexuality and American Psychiatry: The Politics of Diagnosis (1981) by Ronald Bayer; Princeton University Press; page 105)

পরবর্তীতে তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে APA সমকামিতাকে Mental Disorder হিসেব থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়, তার স্বপক্ষে যথেষ্ট scientific evidence না থাকা সত্ত্বেও।

মানুষের মানসিক সমস্যা বা মনঃ বিকৃতি থাকতে পারে। তার মানে এই না যে সেই বিকৃতিকে আমরা হ্যা বলে দিব, আরো উৎসাহ দিতে থাকাটা স্বাভাবিক নয়। সেই বিকৃতি কিভাবে আরোগ্য করা যায় তার পথ খুঁজতে হবে। আর যদি আরোগ্য সম্ভব না হয় তাহলে ভবিষ্যতে কারো জানি এমন না হয় বা তার থেকে অন্য কারও যাতে না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর সেখানে যদি উল্টা একে সমর্থন করা হয়, এবং স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?
পারিবারিক বন্ধন হুমকির সম্মুখীন হবে। আর সমাজে তা ছড়িয়ে পরবে।

৭০ এর দশক থেকে যদি সমকামিতাকে ব্যাধি হিসেবে অস্বীকার করা শুরু না হতো তাহলে গত ৫০ বছরের বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মধ্যে এর প্রতিকার/প্রতিষেধক আবিস্কার হয়ে যেত। আজ সমকামীরা আরোগ্য লাভ করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত। সমাজে সমকামিতার ভয়ানক অধ্যায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দাম্পত্যকলহ আর বিবাহবিচ্ছেদ এর মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এই সমস্যার ব্যাপারে সচেতনা বৃদ্ধি করা দরকার
সমস্যাকে সমস্যা বলুন
সমস্যাকে সমস্যা বলুন

সচেতনায় সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

Zeesan Rahman Chowdhury
Psychology (DU)
Master of Business Information System
University of Canterbury

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে- ১ম পর্ব

শান্তিই শক্তি শান্তিই শক্তি

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে এ জন্য নয় যে তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,
বরং এ জন্য যে আপনি শান্তিতে থাকার যোগ্য”
……………………………………………………………..
জীবনের তিক্ততা,শত্রতা, আক্রোশ,বিষাক্ততাকে ছেড়ে দিন,চলে যেতে দিন(let go)।
……………………………………………………………..
ভাসমান সুখ ভাসমান সুখ

আমরা পৃথিবীতে যখন আসি তখন কষ্ট,যন্ত্রনা,প্রতারনা,বিশ্বাস- ঘাতকতা,আক্রোশ,শত্রুতা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না।
যতই জীবন পরিক্রমায় ঘাত- প্রতি ঘাতের মধ্যে যেতে থাকি ততই এ সব কষ্টকর,অপ্রীতিকর অনুভূতি গুলো আমাদের মনে জমা হয়।
যদি সঠিক সময়ে, দ্রত এ সব কষ্টদায়ক,পীড়াদায়ক,বিষাক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলোকে মন থেকে সরিয়ে দিতে না পারেন,সে গুলো ক্রমাগত জমতে থাকবে ও জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।
ঘৃনা,আক্রোশ জমা রাখলে আমরা আক্ষরিক অর্থেই “অসুস্হ” হয়ে পড়বো।
এর ফলে মন তার সহজতা ও স্বাচ্ছন্দ্য হারাবে( dis-ease of mind)। ফলশ্রতিতে অনেক শারীরিক রোগের উৎপত্তি হয়।
প্রথম দিকে অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারটি কঠিন মনে হতে পারে।
কিন্তু জীবন সুস্হ ও সুখী রাখতে হলে,জীবনে এগিয়ে যেতে হলে এটি প্রয়োজনীয় এবং জীবন যন্র্রনার প্রলেপ ঝেড়ে ফেলতে এটি জরুরী।
Eckhart Tolly তার ” the power of now”বইতে এ ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
এই টিপস গুলো আপনার ” আবেগগত ক্ষত” গুলোকে নিরাময় করতে এবং আপনার অন্তরাত্মায় পুনরায় আনন্দের আলো প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।

মেনে নিন মেনে নিন

১। বর্তমানে যে রকম আছেন,স্রেফ সেটি মেনে নিন,সে রকমটি থাকুন। পরিবর্তনের বাড়তি চেষ্টা করবেন না
( don’t try,just be):
………………………………………………………………
নিজের উপর আস্হা রাখুন এবং এ বিশ্বাস রাখুন যে সব সময়েই আপনার ভিতর রয়েছে ” অবিশ্বাস্য রকমের সুপ্ত শক্তি”। ( incredible potentiality)।
অতীতের কষ্ট যন্ত্রনাকে যেমন ধরে রাখবেন না,তেমনি নিজের জীবন অগ্রগতির সমালোচনা করে নিজেকে বাড়তি কষ্ট দিবেন না।
*** লম্বা করে শ্বাস নিন এবং মনে রাখবেন আপনি নিজকে যতটুকু কৃতিত্ব দিচ্ছেন,প্রকৃত পক্ষে আপনি তার চেয়ে বেশী কৃতিত্বের দাবীদার।

………………………………….
অহেতুক চিন্তা নয়অহেতুক চিন্তা নয়

২। চিন্তার সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করবেন না,স্রেফ নীরবে সে গুলো পর্যবেক্ষন করুন(don’t identity with any thoughts- just silently observe them):
…………………………………………………………..
আমাদের মস্তিষ্কে উদ্ভুত চিন্তা গুলো স্বতস্ফুর্ত ভাবে বুদবুদের মতন আসতে থাকে।( অটোমেটিক থট)
এ গুলো থেকে আমরা বিযুক্ত থাকতে পারি না।নিজেদেরকে সে চিন্তা গুলোর সঙ্গে যুক্ত করে ফেলি।
ফলে সে চিন্তা গুলো বাস্তব ও সত্য মনে হয়।
অথচ এ রকম চিন্তার বেশীর ভাগই অবাস্তব ও অসত্য।
National Science Foundation গবেষনা করে দেখেছেন এক জন মানুষের মনে প্রতি দিন গড়ে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার চিন্তা উদ্ভুত হয়।
এর ৮০% হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তা
এবং ৯৫% বার বার ঘুরে ফিরে মনে আসতে থাকে
তার মানে আমরা আসলে চিন্তা করি না, আমাদের নিছক সে গুলো বার বার মনে পড়ে।
এই সত্বস্ফুর্ত চিন্তা গুলোকে নিজের মনে করা ঠিক হবে না।
এ গুলো আসবে আবার চলে যাবে( যদি আমরা যেতে দেই)।
আমরা অহেতুক মনো কষ্টে ভুগি এই চিন্তা গুলোকে বাস্তব ও সত্যি মনে করে।
আমাদের ইগো চেষ্টা করে এই নেতিবাচক চিন্তা গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে।
কিন্তু সে তা পারে না।
তাই চিন্তার সঙ্গে যুদ্ধ না করে, পিছিয়ে আসুন।
এ সব চিন্তাকে বিতাড়িত বা পরিবর্তনের চেষ্টা না করে এ গুলোকে শুধু নৈর্বক্তিক ভাবে অবলোকন করুন,পর্যবেক্ষন করুন।
নিরবে দেখুন নিরবে দেখুন

মনে রাখবেন আপনার প্রকৃত সত্বা রয়েছে আপনার হৃদয়ে ও আত্মায়,আপনার ব্রেইনে নয়।
তাই চিন্তার দিকে নয়,নজর দিন নিজের অনুভূতির দিকে
যখনই তা করতে পারবেন আপনার চিত্ত উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সীতে স্পন্দিত হতে থাকবে(vibrate in higher frequency)।
ফলে ধ্বংসাত্বক,ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত চিন্তা গুলো আপনার মনে কম আসবে।
*** মনে রাখবেন আপনার ব্রেইনে কোন চিন্তা ঢুকবে সেটি হয়তো আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না,কিন্তু সে চিন্তার প্রতি কি ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন,সেটি আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।
ভালবাসুন ভালবাসুন

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৪: ক্রিটিক কে মোকাবেলা

ক্রিটিকের সাথে ফাইট করার বেস্ট উপায় হচ্ছে তার উদ্দেশ্য, অভিসন্ধি বুঝে ফেলা। এই যেমন একটা সিগারেট কোম্পানি যদি গবেষণা টবেষণা করে বের করে যে তামাকের সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক নেই, আমরা স্বভাবতই বিশ্বাস করতে চাইব না, কারণ তার উদ্দেশ্যই ভাল ছিলনা। আর উদ্দেশ্য অসাধু থাকলে কাজের মধ্যে কতরকমের ভুল জিনিস ঢোকানো যায়, তা সদ্য একটা প্রাইভেট ইউনির বিজ্ঞাপন দেখলেই বোঝা যায়।

ত তৃতীয় পর্ব থেকে আমরা ত জেনেছিই ক্রিটিকের মূল উদ্দেশ্য কীভাবে খুঁজে বের করতে হবে। এবার আসি জানার পরেও মগজের ভেতর তার কথোপকথন কীভাবে বন্ধ করা যায়।

প্রথমে সবচেয়ে কঠিন পন্থাটাই বলি। ক্রিটিকের সাথে কথা বলা। কীভাবে, একটা উদাহরণ দিচ্ছি:

আমার পরিচিত এক ছোট আপু বিভিন্ন সমস্যার কারণে দু’বছরের মাস্টার্স কোর্সটায় সেরকম কাজ করতে পারেনি। সময় শেষ হওয়ার পর তার এখন এতই খারাপ লাগছে, সে ঠিক করেছিল দু’বছরে যত টাকা স্কলারশিপ হিসেবে পেয়েছে সেটা ফেরত দেয়ার অফার করবে। তাছাড়া যতবারই পুরনো নিজের সাথে এখনকার নিজেকে মেলায়. মন থেকে ক্রিটিক বারবার করে বলে, ‘আমি কিচ্ছু পারব না, আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমার কত সখ ছিল পিএইচডি করব, সোশ্যাল ওয়ার্ক করব, আমি কিছুই করতে পারিনা, আমার কোন যোগ্যতাই নেই… ইত্যাদি ইত্যাদি।’ তার অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল, যে কোন ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার সাহসটাই তার চলে গিয়েছিল, নিজের সম্পর্কে ভাল চিন্তা করতে, একটু খুশি হতেও তার অপরাধবোধ হত। হতাশার চেয়েও বেশি অপরাধবোধ আর আত্মবিশ্বাসের অভাব তাকে শেষ করে দিচ্ছিল।

ক্রিটিক কে মোকাবেলা করার জন্য তাকে কিছু টিপস দিয়েছিলাম –

প্রথমেই পারিবারিক সমস্যাগুলোতে সে যেভাবে হাল ধরেছে সেদিকে উল্লেখ করে বললাম, এগুলো তোমার মানসিক শক্তি নির্দেশ করে। এ বিষয়টা নিয়ে মোটামুটি তার সাথে বেশ খানিকটা কথা বলে তাকে কনভিন্স করলাম যে একজন স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে তার অনেক গুণ আছে এপ্রিসিয়েট করার মত। একাডেমিক লাইফে এই গুণগুলোর অনেকগুলিই দরকার পড়ে। এরপর তাকে কিছু মেন্টাল এক্সারসাইজ দিলাম, নিজেকে প্রশ্ন করতে –

– আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা, এই কথার ভিত্তি কী? – আমি দুই বছর কোন রিসার্চ করি নি।

– কেন করনি? পারনা দেখে? – না, বিভিন্ন সমস্যার কারণে

– এখন সমস্যা না থাকলে করতে পারবে? – মনে হয় পারব।

– তার মানে তুমি পারনা এই কথাটা ঠিক না, বলতে পার সুযোগ হারিয়েছ।

তারপর আবারো প্রশ্ন কর –

– আমার পক্ষে কি পাগলের মত কাজ করে ডিগ্রীটা নেয়া সম্ভব? – হ্যা/ না

– যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য জায়গায় মাস্টার্স/পিএইচডির জন্য চেষ্টা করা সম্ভব? – হ্যা/ না

– যদি মাস্টার্স/পিএইচডি না করি, তাহলে কি আমার পক্ষে মানুষের জন্য কাজ করার সব সুযোগ শেষ হয়ে যাবে? আমার জন্য কোনটা বেশি হতাশার? ডিগ্রী না পাওয়া, নাকি মানুষের জন্য কাজ করতে না পারা? যদি ডিগ্রী না থাকে তাহলে অন্যান্য আর কী কী উপায়ে আমি কাজ করতে পারি? তার সুবিধা অসুবিধাগুলো কী?

ত এই পরামর্শ অনুযায়ী সেই বোন আরো সুন্দর করে কাজটা করেছে। প্রথমেই ট্র্যাক করেছে তার কোন সিদ্ধান্ত কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করে করা। এই যেমন বোর্ড পরীক্ষার সময় যে কোন সমস্যা উপেক্ষা করে ঠিকই ভাল করেছে, এখন পারছে না, তার মানে তার আগের গুণগুলো আর নেই। সে যখন বলতে গিয়েছে, এখন ত সমস্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, মন তাকে উল্টো বুঝিয়েছে, কাজ না পারলে সবাইই অমন বলে।

দ্বিতীয়ত, কাজ করেনি, এই অপরাধবোধ থেকে তার এ ধারণা হয়ে গেল, সে শুধু টাকা নষ্ট করেছে, আর এখন এর প্রায়শ্চিত্ত করতে তাকে হন্যে হয়ে টাকা রোজগার করতে হবে, ফেরত দেয়ার জন্য। মাঝখান থেকে মাস্টার্স যে করা আর সম্ভবই না, সেটা নিশ্চিত করে ফেলল ক্রিটিক ভদ্রলোক।

ত এবার যখন ক্রিটিক তাকে বলল, ‘আমি কিছু পারবনা’, তখন সে উল্টো বলল, আমার এই এই গুণগুলো আছে, কেন বলছ পারবনা? ক্রিটিক মিনমিন করে বলল, দুই বছর ত পারনি। সে উত্তর দিল, ‘হুম! কিন্তু এই দুই বছরে আমি অনেক মানসিক শক্তি অর্জন করেছি। প্ল্যান না করে, চেষ্টা না করতে দিয়ে কেন আগে থেকেই বলছ পারব না?’

ব্যাস! ক্রিটিক চুপ!

এর পরের ঘটনা আরো চমৎকার, লেখার লোভ সামলাতে পারছি না। সেই আপু থিসিস এর পুরো প্রেশারটাকে ছোট ছোট ভাগ করে পাঁচটা জার্নাল পেপার লেখার মত করে নিল। রিয়েলিস্টিক প্ল্যান, কবে কোথায় সাবমিট করবে, এরকম করে প্ল্যান।

গুছিয়ে সুপারভাইজরের কাছে প্রেজেন্ট করল, কীভাবে কোন কাজটা করতে চাইছে। সুপারভাইজর এরকম এপ্রোচ দেখে জানাল কন্সেপ্টটা বুঝতে ও বেশ খানিকটা সময় নিলেও, উনি ওর প্ল্যানিং এ খুবই খুশি। আগ বাড়িয়ে বললেন তার কাছে পিএইচডি করার জন্য। শুধু তাই না, এরই মধ্যে ওর দুটো কনফারেন্সে পেপার অ্যাক্সেপ্টেড হয়েছে, অন্যসময় হলে সে হয়ত ভাবত,
কনফারেন্স পেপারই ত, জার্নাল পেপার ত আর না – কাজের কাজ না করে এসব করে কী হবে? কিন্তু এখন সে এই ঘটনাগুলোকে স্টেপিং স্টোন হিসেবে নিচ্ছে।

ক্রিটিক এত নাজুক, যে ঘুরে দাঁড়ালে তার ক্ষুদ্রতা দেখে রীতিমত দুঃখ হয়। হ্যারি পটার এ অমন ছিল না – যার যার ভয়গুলো এক একটা রূপ নিয়ে আসে, তারপর মন্ত্র পড়ে রুখে দাঁড়ালেই হাস্যকর হয়ে যায় – ঠিক একই কাহিনী। আমরা সবাই ক্রিটিকের সাথে ফাইট করার যোগ্যতা রাখি, এতে কোন সন্দেহ নেই। সাহসটা রাখি ত?
সাহস

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

কবি হাবীবাহ্ নাসরীন সাহিত্যে প্রণোদনা পুরস্কার পেলেন

কবি হাবীবাহ্ নাসরীন কবি হাবীবাহ্ নাসরীন

এ বছর সাহিত্যে প্রণোদনা পুরস্কার পেলেন কবি হাবীবাহ
নাসরিন। মুলত সেন্টার ফর ন্যাশনাল কালচার ২০১১ সাল থেকে সাহিত্যে “প্রণোদনা পুরস্কার” দেওয়া শুরু করে।সে বছর এ পুরস্কার প্রদান করা হয় নব্বই দশকের অন্যতম কবি সৌমিত্র দেবকে।

কবি হাবীবাহ্ নাসরীনের রচিত কবিতাগ্রন্থ “কবিতা আমার মেয়ে” ও উপন্যাস “তুমি আছো তুমি নেই” এর জন্যে স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রিয় এ লেখিকার কাছে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

‘হাবীবাহ নাসরিন বলেন-‘পাঠকের ভালোবাসা একজন লেখকের বড় অর্জন। আর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও নিশ্চয়ই তারই অংশ বিশেষ। লেখকরা স্বীকৃতির জন্য লেখেন না, তবু তরুণদের উৎসাহিত করতে এ ধরণের সম্মাননা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আমার জীবনের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে সাহিত্য প্রণোদনা পুরস্কার স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পেশায় সাংবাদিক হাবীবাহ্ নাসরীন লাইফস্টাইল ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজপোর্টাল “জাগোতে”। এছাড়াও অনেক পত্রিকায় কাজ করেছেন।

কবি হাবীবাহ্ নাসরীনকে অপরাজিতা পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।

 

জাজের চোখে যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালায় অসঙ্গতি

পুরনো নীতিমালা সংশোধন করে যৌথ প্রযোজনার ছবির জন্য নতুন নীতিমালা আসছে শিগগির। সম্প্রতি নতুন নীতিমালার একটি খসড়াও প্রকাশ করেছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০১২ সালের নীতিমালার ভিত্তিতে নতুন নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে।

তবে এই নীতিমালায় কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছে দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। জাজ মাল্টিমিডিয়া এই খসড়ার কিছু অসঙ্গতি ও তাদের মতামত তুলে ধরেছে তাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে লিখেছে-

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নীতিমালা – ২০১৭ (প্রস্তাবিত)
গ.
(০২) যেকোনো ব্যবসায় ব্যবসায়ী তার কিছু গোপনীয়তা রাখবে। তাই বিনিয়োগের পরিমাণ জানা একজন প্রযোজকের জন্য অবশ্যই অস্বস্তিকর। তাছাড়া সিনেমা সম্পূর্ণভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক বাজেট করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেমন, বৃষ্টি বা শিল্পীর অসুস্থতার কারণে শুটিং ৩ দিন বেড়ে গেলে, সিনেমার খরচ ১০ লক্ষ টাকা বেড়ে যায়। যা কখনই পূর্বে অনুমান করা সম্ভব নয়।

(০৪) যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের বিদেশি প্রযোজকের প্রদত্ত অনুমতি / ছাড়পত্র / এন্ডোরসমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। এবং তা প্রিভিউ কমিটিকে সিনেমা দেখানোর সময় তা দাখিল করতে হবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন দ্বারা সত্যায়িত করা, যৌথ প্রযোজনার প্রক্রিয়াকে জটিল করবে।

(০৬) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের পরীক্ষা ও পর্যালোচনার কমিটিতে অবশ্যই শিল্পী সমিতির প্রতিনিধি থাকার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। কারণ চলচ্চিত্রে একজন শিল্পী শুধু মাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে। তাই শিল্পী সমিতির প্রতিনিধিত্ব এই প্রক্রিয়ার শুধু জটিলতাই বাড়াবে।

(০৭) চলচ্চিত্রের প্রযোজক অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে বাছাই কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে দেওয়া বঞ্চনীয়।

(০৯, ১০ ও ১১) যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য আবেদন পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে বিএফডিসি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বিএফডিসির সিদ্ধান্ত পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে, মন্ত্রণালয় তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য থাকবে। আবার কেন ফাইল বিএফডিসি তে আসবে? এর কোনো প্রয়োজন নেই। এতে শুধুই সময় ক্ষেপণ মাত্র। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনই চূড়ান্ত অনুমোদন বলে বিবেচনা করতে হবে।

(ঙ)
(০১) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের কাহিনী মৌলিক হতে হবে, কিন্তু যদি কোনো সিনেমার অবলম্বনে বানানো হয়, তবে সেই ক্ষেত্রে কপি রাইটের পত্র দাখিল করতে হবে।

(০২) চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নিয়োযিত পরিচালক, মুখ্য অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীর সংখ্যা, যৌথ প্রযোজকগণ যৌথ প্রযোজনা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোনো একজন পরিচালক হলেই হবে। তবে শিল্পী ও কলাকুশলী সমানুপাতিক হারে হবে।

(০৪) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন কাহিনী ও চিত্রনাট্যের প্রয়োজন অনুসারে হবে।

(০৫) এই পয়েন্ট সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। অনেক সময় অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কিন্তু ব্যস্ত আর্টিস্টের শিডিউল চলে যাবে বলে প্রযোজক শুটিং করতে বাধ্য হন।

(০৬) যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার ৪৫ দিন অতিক্রান্ত না হলে চলচ্চিত্র প্রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়া যাবে না।

(১০) যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্মাতাগণের সঙ্গে ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা ও ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজিকরণের জন্য বিদেশি যন্ত্রপাতি আনা ও নেওয়ার জন্য বিএফডিসির অনুমোদনই যথেষ্ট।

(যেখানে বড় বড় গার্মেন্টস ও অন্যান্য আমদানি রপ্তানিতে অভিজ্ঞ্য ফ্যাক্টরি হিমসিম খায় ও দীর্ঘ সময় লাগে, সেখানে আমদানি রপ্তানিতে অনভিজ্ঞ চলচ্চিত্র প্রযোজক গণ কীভাবে এত সব অফিসের সম্মুখীন হবে?)

এদিকে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (চলচ্চিত্র) ইউছুব আলী মোল্লা খসরা নীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সব বিষয়ই রাখা হয়েছে খসড়াটিতে। এখন এ বিষয়ে আমরা সকলের মতামত নিচ্ছি। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত নেওয়া হবে। অন্তর্ভুক্ত করার মতো যদি কোন মতামত পাওয়া যায় তবে তা যুক্ত করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে।’

সবশেষে জাজের দাবি, নীতিমালায় এসব অসঙ্গতি দূর করা না গেলে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়। দর্শকদের ভালো ছবি উপহার দেয়া সম্ভব নয়। যার ফলে ভালো ছবি না হলে দর্শকরা হলে ফিরবে না, যার জন্য সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।

 

জীবন ও সম্পর্কের বৈধ মাধ্যম বিয়ে

ইসলাম জীবন ও যৌনতার বাস্তবতাকে অকপটে স্বীকার করে। বিয়ের মাধ্যমে পাশবিক বিশৃঙ্খলামুক্ত জীবন ও যৌনতাকে ইসলাম বৈধতা দিয়েছে।

যৌনতার উশৃঙ্খলতাসহ বিশ্ব মানবতাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখতেই আল্লাহ তাআলা শান্তির দূত হিসেবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করছেন। নাজিল করেছেন পবিত্র কুরআনুল কারিম।

কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা, স্বভাব-চরিত্রসহ সর্বক্ষেত্রেই কুরআনের আলোকে প্রিয়নবি দেখিয়েছেন সঠিক পথ। যৌনতাকে পাশবিকতায় না নিয়ে মানব বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করতে এবং পাশাবিক উন্মাদনায় উদ্বুদ্ধ না হয়ে বিয়ে প্রথার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম।

জীবন ও যৌনতার উত্তম ব্যবস্থা হলো বিয়ে। যে সব কারণে যৌনস্খলনের সৃষ্টি হয়, বিয়ের মাধ্যমে সে সবের প্রতিবিধান তথা সমাধান করেছে ইসলাম।

এক কথায় যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ আয়োজনকে ইসলাম একেবারেই সহজ করেছে। তাইতো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে বিয়ে খরচ কম ও সহজ, সে বিয়েই বরকতপূর্ণ।’ (বয়হাকি)

যুবকদেরকে প্রতি প্রিয়নবির আহবান

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বিয়ের ফলে যুবকদের দৃষ্টি অবনত থাকবে আর গুপ্তাঙ্গ থাকবে পবিত্র। যে যৌন ক্ষমতার যথার্থ প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল মানব অস্তিত্ব ও তার পবিত্রতা। সে যৌনতার ব্যাপারে অপবিত্রতা তথা পাশবিকতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসলাম।

আবার লোভাতুর দৃষ্টি ও অবাধ মেলামেশা যেহেতু যৌনাপরাধের মূল উৎস, তাই এগুলোকে ইসলাম পরিষ্কারভাবে নিষেধ করে দিয়েছে।

সুস্থ ও সুশৃঙ্খল পথে যৌন কামনা পূরণের মাধ্যমে বৈধ মানব বংশ বৃদ্ধির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। আর তারা হলো-
>> আজাদি চুক্তিবদ্ধ গোলাম- যে তার রক্তমূল্য আদায় করতে চায়।
>> পবিত্রতার মানসে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি এবং
>> আল্লাহর পথের মুজাহিদ। (তিরমিজি)

পরিশেষে..
যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে একজন মু’মিন বান্দা আল্লাহর সমীপে পবিত্র ওয়ে ওঠার পথ খুজে পায় এবং বিয়ে করা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামসহ সব নবি-রাসুলের আদর্শ। তাই জীবন যৌনতার পরিশুদ্ধতায় বিয়ের মাধ্যমে যুবকের চরিত্র পবিত্র রাখা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যুবকদের যৌনতার পাশবিক বিশৃঙ্খলা থেকে হেফাজতে করে বিয়ের মাধ্যমে উত্তম যৌন সম্পর্ক স্থাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

যেসব কারণে কখনোই সফল হতে পারবেন না আপনি

সাফল্যের মুকুট মাথায় পরতে কে না চায়? প্রত্যেকটি মানুষই কঠোর পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করার জন্যে। কেউ সফল হয় আবার কেউবা ব্যর্থতাকেই আপন করে নেয়। কিন্তু এটি মোটেই কাম্য নয়। আমাদের প্রত্যেক কাজের শেষে থাকে ভালো-মন্দের কারুকার্য।

আমরা অনেকেই কোন কাজে ব্যর্থ হয়ে গেলে মুষড়ে পড়ি, ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাই। কিন্তু আপনি কি জানেন সবকিছুরই একটি কারণ আছে? আপনি যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ব্যর্থ হচ্ছেন, সেটিরও একটি কারণ আছে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে বুঝুন ও জানুন, দেখবেন সবকিছু খুব সহজ হয়ে গিয়েছে এবং সফলতার মুকুট আপনি পরিধান করতে পারছেন।

আজকের ফিচারে আপনাকে জানানো হবে কোন কোন কাজগুলোর জন্য আপনি প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছেন এবং এগুলো চলতে থাকলে আপনি কখনোই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছবেন না। চলুন তবে জেনে আসা যাক-

আপনি জানেন না সফলতা ব্যাপারটা আসলে কি

সফলতা অর্জন না করার অন্যতম প্রধান কারণ হলো আপনি জানেনই না সফলতা কী! হয়তো আপনি অনেক বেশি সিনেমা দেখেন সেখান থেকে কোন ধারণা নিয়ে নিজের মধ্যে সাফল্যের সংজ্ঞা আয়ত্ব করে নিয়েছেন। যখন অন্য কারো মুখে সাফল্যের কথা আপনি শোনেন, সেটা কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে না-ও খাটতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, সফলতা অর্জন করার জন্য নিজে বুঝতে চেষ্টা করুন সফলতা কী।

কোন ব্যাপারে আপনি উদ্যমী আপনি জানেন না

আপনি সব সময় এক ধারণা থেকে অন্য ধারণায় ঝাঁপিয়ে বেড়ান, যেটি শুনতে একটু ভালো লাগে সেদিকেই আপনার মনোযোগ গিয়ে পড়ে। অপরাহ উইনফ্রে একবার বলেছিলেন, ‘উদ্যম হলো শক্তি। উদ্যমী হওয়ার দরুণ আপনি যে শক্তিটা পাচ্ছেন সেটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন’। তিনি এটি অনুধাবন করতে পেরেছেন যে কোন বিষয়ে উদ্যমী না হওয়া সত্ত্বেও আপনি যদি সেটি নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তবে বেশিদূর পৌছতে পারবেন না।

নিজের জীবনকে পরীক্ষা করুন। কোন ব্যাপারটা আপনাকে আনন্দিত করে তোলে, কোন বিষয়ে আপনি উদ্যমী সেটি বুঝতে চেষ্টা করুন। একেবার শুরু করলেই দেখবেন, সাফল্য আপনার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছে।

আপনি কাজে সময় দিতে চান না

আপনি হয়তো ম্যালকোম গ্ল্যাডওয়েল এবং তার ১০,০০০ ঘণ্টার নিয়মের কথা শুনেছেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করেছেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যক্তিগণ কঠোর পরিশ্রমেই তাদের সময় ব্যয় করেছেন। তারা তাদের কারুশিল্প এবং গবেষণায় সময় বিনিয়োগ করেছেন। ব্যর্থ হলেও বারংবার চেষ্টা করে গিয়েছেন। আপনি চেয়েছেন বলেই যে সাফল্য আপনার দ্বারপ্রান্তে চলে আসবে, এমনটা কিন্তু নয়। আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কেবল তখনই আপনি সফল হবেন।

আপনি সঠিক মানুষের সঙ্গে মেশেন না

জিম রনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘আপনি যে পাঁচজনের সঙ্গে মেশেন, তাদেরই প্রতিফলন আপনি’

আমাদের এমন মানুষের সঙ্গে মেশা উচিৎ যাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য সাফল্য অর্জন করা। যখন আপনার চারপাশ ইতিবাচকতায় পরিপূর্ণ থাকে, তখন সহজেই আপনি সফলতার পথে অগ্রসর হতে থাকবেন। এতে করে আপনি অসংখ্য সফল ব্যক্তিবর্গের সঙ্গেও মিশতে পারবেন। এভাবে আপনার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।

আপনার মানসিকতা ইতিবাচক নয়

আশেপাশের সবকিছু আপনার কাছে অসহ্য মনে হয়। আপনি সাফল্যের ছিটেফোঁটাও কোথাও দেখেন না। পৃথিবীর কোথাও ইতিবাচকতার বিন্দুমাত্র আপনি খুঁজে পান না। আপনি যখনই নিজের মানসিকতা বদলে নেতিবাচকতা থেকে দূরে নিয়ে যাবেন, তখনই আপনি নতুন এক জগতের সন্ধান পাবেন। সুতরাং, নিজেকে এবং নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে ইতিবাচক করার চেষ্টা করুন।

সবশেষে এই বলা যায় যে, ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আপনার চরিত্রে থেকে থাকে, তাহলে সেগুলোকে বদলে ফেলুন আজই। নিজেকে পুনরায় গঠন করা শুরু করুন। সফলতা অর্জন করার যে পন্থাসমূহ রয়েছে, সে অনুযায়ী চলতে শুরু করুন। আপনিই জয়ী হবেন।

 

কালাই-রুটির মনোয়ারা বেগম

আধো আলোছায়ায় বসে আছেন মনোয়ারা বেগম। বয়স জিজ্ঞাসা করামাত্রই হেসে বলেন, ‘বয়স বুলতে (বলতে) নেই।’ কালাই-রুটি বানান কবে থেকে? একগাল হেসে বললেন, জন্মের পর থেকে বানাচ্ছি। রাজশাহী শহরে সাহেববাজার এলাকায় নিয়মিত কালাই-রুটি তৈরি করেন তিনি। এলাকায় পরিচিত মুখ। খুব যত্ন নিয়ে বানাচ্ছেন কালাই-রুটি। তাঁর হাতের রুটি একবার নয়, বারবার খেতে আসে সবাই। বানানোর নিয়ম জিজ্ঞাসা করতেই বললেন মনোয়ারা বেগম, ‘আপনারা পাইরবেন নাহ। আগে হামরা (আমরা) তো মাষকলাই ডাল দিতাম বেশি আর আটা দিতাম সামান্য। কিন্তু সব জিনিসের দাম বাইরে যাওয়ায় আমরা এইর মধ্যে কলাই আর আটা মিশাই। দুই কেজি আটার সঙ্গে দুই কেজি কালাইর ডাল দিই। কাঁচা পানি আর একটু লবণ দিয়ে আটার সঙ্গে ভালো করে মিশাই। এরপর মোটা করে রুটি বানাই। মাটির পাত্রে এই রুটি সেঁকতে হয়। খড়ির চুলায় তাতে স্বাদ পাওয়া যায় ভালো।’

রুটির সঙ্গে সামান্য মরিচ আর বেগুনপোড়া ভর্তা। বরেন্দ্রভূমিতে সন্ধ্যাকালীন নাশতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই খাবার।

হাসিখুশি মানুষ। সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। কিছুক্ষণ পরপর পান মুখে দেন। পানের মুখে কথা বলতে বলতে গান গেয়ে ওঠেন নিজের পছন্দের।

মনোয়ারা বেগমের এক মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেমেয়েরা অন্য কাজ করে। তাঁর স্বামী কৃষিকাজ করেন পদ্মার চরে। মায়ের কাছ থেকে শেখা রুটি বানানোর কাজ মনোয়ারা বেগম একাই করেন। মনোয়ারা বেগমের পরিবারে এই রুটি ছিল মূল খাবার। তাঁর মা বানাতেন আর সব ভাইবোন মিলে সকালে খেতেন। রুটি বানাতে বানাতে সেই গল্পই করলেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

পরিবারে দুজনের জন্য যে টাকা লাগে তা হয়ে যায় এই রুটি বিক্রি করে। প্রতিদিন ৪০০ টাকার আটা-ডাল কেনেন। বেচা-বিক্রি তেমন নেই, কোনো দিন শ পাঁচেক বা হাজারখানেক টাকা পাওয়া যায়। তবে বৃষ্টির দিনে হাজার টাকার বিক্রি হয়। কারণ বৃষ্টির দিনে শখ করে মানুষ গরম কালাই-রুটি বেশি খায়।

মনোয়ারা বেগম কালাই-রুটি বানান বছরের পর বছর ধরে। তাই তো তাঁর নিজের মনে হয় তিনি বোধ হয় জন্মের পর থেকেই এই কাজ করছেন। আর তাই হয়তো তাঁর এই কাজে ক্লান্তি নেই।

 

মেজবানি গরুর মাংস রান্না করার পারফেক্ট রেসিপি

চট্টগ্রামে বিখ্যাত মেজবানি মাংস আক্ষরিক অর্থেই অতুলনীয় একটা খাবার। যিনি একবার খেয়েছেন, আজীবন তাঁর মুখে লেগে থাকবে এর স্বাদ। তবে হ্যাঁ, মজাদার এই খাবারের “সিক্রেট” রেসিপি কিন্তু বাবুর্চিরা দিতে চান না। তাই ঘরেই যতই রান্না করুন না কেন, ঠিক যেন বাবুর্চির হাতের স্বাদ মেলে না।

চিন্তা নেই, এখন থেকে আপনার রান্না মেজবানি মাংসও হবে ঠিক বাবুর্চিদের মতই। কেননা আমি নিয়ে এসেছি সেই দারুণ সহজ রেসিপি। এই রেসিপিতে আপনি সহজেই আনতে পারবেন সেই অসাধারণ সুস্বাদ।

উপকরণ:

গরুর মাংস ২ কেজি (ছোট টুকরা করে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে নেয়া)

২ কাপ পেঁয়াজ কুচি করা। ও ১ কাপ পেঁয়াজ বাটা।

তেল ১/২ কাপ (সয়াবিন + সরিষার)

আড়াই টে চামচ আদা বাটা

দেড় টে চামচ রসুন বাটা

১ চা চামচ করে শাহি জিরা ও ধনিয়া গুঁড়া।

১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া

ঝাল বিহীন স্পেশাল শুকনা মরিচ গুঁড়া ৩-৪ টে চামচ বা পরিমান মতো (আমি এখানে কাশ্মিরি শুকনা মরিচ গুঁড়া ব্যবহার করেছি। এটায় ঝাল কম হয়ই বাট কালার টা অনেক সুন্দর হয়। চট্টগ্রামে ব্যবহার করা হয় মিষ্টি মরিচ গুঁড়া। )

৮-১০ টা কাঁচা মরিচ (বা নিজের পরিমাণ মতো)

১ টে চামচ চিনি

৩/৪ টা তেজ পাতা।

৪/৫ টা ভাজা আলু (ইচ্ছা। আপনি খেতে চাইলে দিতে পারেন)

মেজবানি মাংস স্পেশাল মশলা:

২-৩ টা এলাচ,

২ টুকরা দারচিনি (১” সাইজ),

৪-৫ টা লবঙ্গ,

১/৮ পরিমাণ জায়ফল,

১/২ চা চামচ জয়ত্রি,

গোলমরিচ ৫-৬ টা,

১/২ চা চামচ পোস্তদানা সব একসাথে পানি দিয়ে বেটে পেস্ট করে নিতে হবে।

প্রনালি:

  • -পেঁয়াজ কুচি, চিনি ও তেজপাতা ছাড়া বাকি সব উপকরণ মাংসের সাথে মাখিয়ে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে
  • -একটা পাত্রে তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও তেজ পাতা দিয়ে হালকা লাল হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে।
  • -ভাজা হয়ে গেলে এবার মাখান মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ কষাতে হবে। ৪-৫ মিনিট।
  • -এবার বেশি করে পানি দিয়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। ১ ঘণ্টার মতো।
  • -রান্না করার সময়ই ঢাকনা টা ভালো করে সিল করে নিতে হবে।
  • -হয়ে গেলে নামানর আগে ভাজা আলু দিয়ে দিন।

মনে রাখুন

  • -সব মশলা ভালো করে পেস্ট করতে হবে।
  • -মাংস ভালো করে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে।
  • মাংসের পিস ছোট ছোট হতে হবে।
  • -সবচেয়ে জরুরি রান্নার পাত্রের ঢাকনা অবধাকনা ভাল করে সিল করে নিতে হবে। ও অল্প জ্বালে রান্না হবে।

 

লা রিভে বর্ণিল পোশাক

বাংলাদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভের শো রুম ও ওয়েবসাইটে এসেছে বর্ণিল সব পোশাক। ছোট বড় সবার জন্য নানা রঙের ও নানা ধাঁচের পোশাকে সেজেছে খ্যাতনামা এই পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। লা রিভের শোরুমে রয়েছে নানা রকম পোশাকের পাশাপাশি ফ্যাশনের নানা অনুষঙ্গও।

হালে নারীদের পোশাক মানেই একটু লম্বা ঝুলের ও বৈচিত্রময় রঙের সমাহার। আর সেই কথা মাথায় রেখেই ঈদুল আজহায় লা রিভ নিয়ে এসেছে বৈচিত্রময় ডিজাইনের সব টিউনিক। হালফ্যাশনের ‘ট্রেইল কাট টিউনিক’, ‘শার্ট স্টাইল লং টিউনিক’ ছাড়াও রয়েছে এশিয়ান টিউনিকে ফিউশনসহ ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের নানারকম টিউনিক। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রিন্স কাটের স্টাইল টিউনিকও।

আরো আছে দুই লেয়ারের টিউনিক ডিজাইন। লা রিভের এবারের আয়োজনে ওই ডাবল লেয়ার টিউনিকগুলোতেই আরো একটি লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যা পোশাকে এনেছে আরো অভিজাত ভাব।

লম্বালম্বিভাবে কাটা স্লিট টিউনিক হালের ফ্যাশন দুনিয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ। পোশাকের সামনে অথবা পাশ থেকে চেরা এই টিউনিকগুলো পালাজ্জো অথবা স্কার্টের সঙ্গে সমানভাবে পরা যায়। কিন্তু এবার শুধু টিউনিকেই নয়- সালোয়ার কামিজ, দোপাট্টায় এই স্লিট কাট নিয়ে এসেছে লা রিভ। এগুলো টপ, হারেম ও পালাজ্জোর সঙ্গে মানানসই।

নারীদের পোশাকের রঙে এবার আনা হয়েছে অভিনব বৈচিত্র। সবুজ, সোনালী, গাঢ় সামরক সবুজ, আইভরি, সরিষাদানা, শরতের কমলা রঙ, দারুচিনির বাদামি রঙ, নীল এবং কার্নিশনসহ নানা রঙের পোশাকে সেজেছে লা রিভের শো রুমগুলো।

লা রিভে ছেলেদের ঈদের পোশাকে ৭০ দশকের বিমূর্ত ও ঐতিহ্যবাহী ফ্যাশন ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালানো হয়েছে। পাঞ্জাবি বিশেষ করে সেমি ফিট, রেগুলার ফিট, জাকুয়ার্ডস এবং বিশেষ বিভিন্ন পাঞ্জাবিতে পুরোনো ফ্যাশনগুলোর আধুনিকায়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শার্ট ও টি-শার্টেও আরামদায়ক ও উন্নতমানের ফেব্রিকের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ধারণা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

শিশুদের জন্য লা রিভে বরাবরই ঈদে জমকালো আয়োজন থাকে। ১ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশুদের জন্য আধুনিক ও আরামদায়ক পোশাক পাওয়া যাবে সঠিক দামে। রয়েছে সদ্যজাত শিশুর জন্যও ঋতুভেদে আরামদায়ক নানা পোশাক।

ছেলে শিশুদের ঈদের পোশাক পাঞ্জাবিতে গাড় রঙের বৈচিত্রপূর্ণ কাজ করা হয়েছে। ছোট মেয়েদের জন্য পোশাকে প্রিন্ট ও বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের পোশাকের পাশাপাশি আধুনিক ফ্লোরাল ডিজাইনের ফ্রক, সালোয়ার কামিজ, দোপাট্টা ও ঘাগড়া চোলি পাওয়া যাচ্ছে। এসব পোশাকে বরাবরের মতোই কটন ও সিল্কের পোশাক তো থাকছেই সঙ্গে নানা রঙ ও ঢংয়ের পোশাকগুলো লা রিভের শিশুদের পোশাকে এনেছে বৈচিত্র। শোরুম ছাড়াও রয়েছে অনলাইনে পোশাক কেনার সুবিধা। ওয়েবসাইট: www.lerevecraze.com।

 

ঘর গোছানোর দরকারি টিপস

সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা হচ্ছে ঘর। একটি সাজানো পরিপাটি ঘর নিমিষেই আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। বাড়িতে যারা থাকেন প্রত্যেকেরই দায়িত্ব থাকার জায়গাটি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। ঘর গোছানোর সময় খেয়াল রাখবেন যার ঘর গোছাচ্ছেন তার রুচি এবং পছন্দ সম্পর্কে। প্রতিদিন একটু একটু করে গোছানো যদি আপনার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে পর পর কয়েক দিন ছুটি আছে এমন দিন বেছে নিন। কাজ ভাগ করে নিন।

সব একবারে পরিষ্কার বা গোছাতে যাবেন না। সব কিছু রাখার নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দিন যাতে আপনার স্বামী এবং সন্তানরা তাদের প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে সবকিছু পায়।

অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আলমারির একেবারে পেছনে রাখুন। যাতে অফিসে যাওয়ার সময় কাজের জিনিসগুলো হাতের কাছে পান। মনে রাখবেন বাইরে যান বলে ঘর গোছানোর সময় পান না এই অজুহাতটা কিন্তু ঠিক নয়।

জামাকাপড় যেখানে-সেখানে ফেলে না রেখে ওয়ারড্রবে ঢুকিয়ে রাখুন। ভাঁজ করে রাখবেন। ব্যবহারের পর যেখানকার জিনিস সেখানেই রেখে দিন। বই পড়া হয়ে গেলে বুক শেলফে সাজিয়ে রাখুন, রান্না হয়ে গেলে মশলাগুলো ক্যাবিনেটে রেখে দিন।

প্রতিটি ঘরে ছোট একটি ডাস্টবিন রাখুন। বাথরুমে রাখুন ওয়াল হ্যাঙ্গার। এর মধ্যে সব দরকারি জিনিস ভরে রাখুন। রান্না ঘরেও ব্যবহার করুন ড্রয়ার। এতে মশলার কৌটা, বাসনপত্র রাখুন। আর এ কাজগুলো নিয়মিত করলে দেখবেন আপনার ঘর সব সময়ই গোছানো লাগছে।

বাড়িতে যার যে জিনিসটার প্রয়োজন, সে সেই জিনিসটা হাতের কাছে রাখুন। নিজের ব্যবহার করা জিনিস অন্যের হাতের কাছে না রাখাই ভালো। এতে করে সবাই সবার ঘর গোছাতে সহায়ক হবে।

ঝটপট ঘর বসার ঘরটা গোছাতে সোফার কুশনগুলো সাজিয়ে ফেলুন সঙ্গে কুশন কভারগুলো বদলে দিতে পারেন। আপনার নিজের বেডরুমটিও চট করে গুছিয়ে ফেলুন। বিছানায় নতুন চাদর লাগান, বালিশের কভারগুলো বদলে দিন।

ঘর পরিষ্কার করা শেষে এয়ারফ্রেশনার স্প্রে করে দিন, ফুলদানির আগের ফুলগুলো ফেলে নতুন ফুল রেখে দিন।

 

স্টেইনলেস স্টিলের বেসিন ব্যবহারে মৃত্যু ঝুঁকি!

রান্নাঘরের সিঙ্ক বা বেসিন মানেই ময়লা এবং জীবাণুদের বাসা, প্রতিটি বর্গক্ষেত্র ইঞ্চিতে ১৮ হাজার ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই তথ্য নতুন নয় বা বিস্ময়কর নয়, কারণ সেখানে ময়লা ধোয়া হয়।

কিন্তু নিউ সায়েন্টিস্টে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, বেসিনে আপনি কি ফেলেন, সেটাই কেবল স্বাস্থ্য উদ্বেগের একমাত্র কারণ নয়।

চীনামাটির অথবা তামার বেসিনের তুলনায় স্টেইনলেস স্টিলের বেসিন নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে- লেজিওনাইরেস রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই সমস্যাটি তখন শুরু হয় যখন স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্কের ওপরের নিরাপদ আস্তরণ ক্ষয়ে যাওয়া শুরু হয়, ফলে সম্ভাব্য এই মারাত্মক রোগের জন্য একটি আদর্শ কারণ তৈরি করে।

মায়ো ক্লিনিকের মতে, লেজিওনাইরেস রোগের উপসর্গগুলো মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, শরীর ঠান্ডা এবং উচ্চ জ্বর হিসেবে শুরু হয় এবং দিন দিন বাড়তে থাকে যার সঙ্গে যুক্ত হয় কাশির সঙ্গে রক্ত, শ্বাস প্রশ্বাসে দুর্বলতা, বুকের ব্যথা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা এবং স্নায়বিক পরিবর্তন।

লেজিওনাইরেস রোগ প্রতিরোধে উইলকো ভ্যান ডের লুগ্টের তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণায় গবেষকরা, বিভিন্ন ধরনের বেসিনের কলে লেজিওনেলা অ্যানিসা ব্যাকটেরিয়া ছাড়া এবং এই ব্যাকটেরিয়া সহ পানি পরীক্ষা করে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, স্টেইনলেস স্টিলের বেসিনের কল এই ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে উর্বর পরিবেশের সৃষ্টি করে। পরীক্ষায় লেজিওনাইরেস রোগের ৫০ শতাংশ ঝুঁকি পাওয়া গেছে। স্টেইনলেস স্টিলের নিরাপদ আবরণ ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পর মরচে পড়ে এবং এই মরচে লেজিওনেলা অ্যানিসা ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

৫ দিনব্যাপী অনলাইন মেলা

প্রথমবারের মতো ই-কমার্স শপ অর্থাৎ অনলাইনের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে এক ছাদের নিচে শুরু হচ্ছে, বাংলাদেশ অনলাইন ফেয়ার ২০১৭। রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের হোয়াইট হলে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ৫ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

১৭ সেপ্টেম্বর রোববার, সকাল সাড়ে দশটায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার। মেলায় মোট ৫০টি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলার আয়োজক বাংলাদেশ অনলাইন বিজনেস ফোরাম।

মেলাতে থাকছে দেশি ও বিদেশি কাপড়, কসমেটিক্স, জুয়েলারি, মেন্স কালেকশন, ফার্নিচার, লেদার প্রোডাক্ট। আরো থাকছে হ্যান্ডিক্রাফটের দারুণ সব ক্রিয়েটিভ আইটেম। বাচ্চাদের জন্য থাকছে কিডস কালেকশন।

মেলা জমজমাট করার জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান থেকে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেনাকাটায় ৫% থেকে শুরু করে ৫০% পর্যন্ত ছাড়। ৩০০ টাকার পণ্য কিনলে মেয়েদের জন্য থাকছে ফ্রি মেহেদী। ১০০০ টাকার একটি পণ্য কিনলেই মিলবে ৫০-৮০ টাকার একটি ফ্রি ফুড কুপণ। এই কুপণটি দিয়ে মেলার যেকোনো ফুড স্টল পছন্দের ফুড খাওয়া যাবে। থাকছে ফ্রি ফটোশুটের সুবিধা।

অস্বাভাবিক যৌনাচার আমাদের কি ক্ষতি করছে

কোথায় অধিকার কোথায় অধিকার

প্রচুর কেইস স্টাডি করতে হচ্ছে। আমি ব্যাপারটা এনজয় করি, কিন্তু খুব কষ্ট লাগে… ভাবি, মানুষ যে কেন এমন হয়…।
জিনিসটা দামী, সুন্দর, দুর্লভ, মনোমুগ্ধকর হতে পারে কিন্তু জিনিসটা ত আমারই সম্পত্তি, কেউ ত নিয়ে যাচ্ছেনা। আমারই ত! আমি ত যখন চাই এটা হাতে নিয়ে দেখতে পারি, ব্যবহার করতে পারি যেভাবে চাই সেভাবে, কেউ ত আরা করার নেই।
পুরুষেরা এটা ভুলে যায় যে, একজন মানুষকে কখনো সম্পত্তি বানানো যায়না, দখল করা যায়না, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা যায়না। একজন মানুষকে প্রতিদিন নিজের করে নেওয়ার জন্য ভালোবাসা দিয়ে যত্ন করতে হয়। যতদিন এই চেষ্টা থাকে, ততদিন বন্ধন থাকে। এছাড়া যেটা কাগজে থাকে, সেই কাগজ সামাজিকতা ছাড়া আর কী?

নারীদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ঘটনা এমন যে, যখন তারা নিজেকে একেবারে সমর্পণ করে দেয়, খুব বেশি নির্ভর করতে শুরু করে সঙ্গীর উপর, তখন কেন জানি পুরুষেরা তাদের উপর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে… কিংবা এই নারীটিকে তার অর্জন করা হয়ে গেছে ভেবে শো’কেসে(পড়ুন ঘরে) ফেলে রাখে(ব্যতিক্রম ভিন্ন কথা)। কখনো দরকারে ব্যবহার করে, কিন্তু তার প্রতি আকর্ষণ আর সেভাবে বোধ করেনা।

আর পুরুষদের ব্যাপারটা আরো কষ্টকর… আমার খুব কষ্ট হয়েছিল আক্ষরিক অর্থেই। সামাজিক ভাবে অনেকরকম স্ট্রাগল তাদেরকে করতে হয়। কিন্তু এই সময়ে তারা যে কতকিছুর মধ্য দিয়ে যায়, কতটা মানসিক শক্তি থাকতে হয়, কতকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয় আর পুরুষ বলে সেটা কখনওই প্রকাশ করতে পারেনা এই পুরুষ শাসিত সমাজে, যেখানে পুরুষের দূর্বলতা থাকতে নেই, সেটা গভীরে না গেলে দেখা সম্ভব না।
নারীদের সমস্যাগুলো আমরা জানি। তারা বলার জায়গা পেলে বলে। কিন্তু এই সমাজে একজন পুরুষ প্রায় কিছুই বলতে পারেনা যা তার গোটা জীবন জুড়ে ঘটে যাচ্ছে। কারণ তাকে বলতে দেওয়া হয়না। তার বলার নিয়ম নেই।।

আমাদের সমস্যা কি
আমাদের সমস্যা কি

আরেকটা জিনিস কি জানেন, এই বাংলাদেশে, এই মুসলিম প্রধান ও রক্ষণশীল চিন্তাধারার দেশে, যেখানে যৌন বিষয়গুলো একটা নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরে আবদ্ধ রাখার অলিখিত আইন আছে, সেখানে প্রায় ৯০% বা তারও বেশি মানুষের সমস্যাগুলো যৌনতা বিষয়ক।
আপনি কথা বলার সুযোগ দেন প্রপারলি, দেখবেন কি ভয়ংকর এক মহামারী এই সমাজের ভেতরটা নিঃশব্দে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে অথচ আপনি টেরও পাননি।

না বলা কথা না বলা কথা

যৌনতার সমস্যা বলতে কেবল, বিবাহ বহির্ভূত বা বিবাহপূর্ব ব্যাভিচার নয়, অস্বাভাবিক ও চরম বিকৃত যৌনজীবন চর্চাকারী একটি অসুস্থ সংস্কৃতি সবার অলক্ষ্যে গড়ে উঠছে।
কিভাবে গড়ে উঠছে তা আপনি আমি দেখছিনা, তাকাচ্ছিনা, অংশগ্রহণ করছিনা বলে আমি আপনি মুক্ত হয়ে যাচ্ছি তা না। বরং এই যে আপনি এই লেখাটায় “যৌনতা” শব্দটা দেখে অস্বস্তি বোধ করছেন, এই ব্যাপারটাও এসব অস্বাভাবিকতাগুলোকে স্পেস দিচ্ছে।

আপনি হয়ত অভ্যস্ত না, কিন্তু আপনি এই অসুস্থ সমাজেরই একটা অংশ। আর নগরে আগুন লাগলে, সে আগুন মসজিদ-মন্দির আলাদা করেনা, হিন্দু বা মুসলমান বুঝেনা।
ধরুন আপনি একজন অভিভাবক। আপনার ছেলেকে শহরে পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষার্থে। আপনি কি কল্পনাও করবেন, আপনার আদরের ছোট্ট ছেলেটি, প্রাপ্তবয়স্ক একজন যুবক হওয়ার পরেও একই পরিবারের মা ও মেয়ের ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়ে প্রতিদিন উভয়ের দ্বারা ধর্ষিত হতে হতে ক্লান্ত হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছে?
ভাবনার বিষয় ভাবনার বিষয়

সেক্স এডুকেশনের প্রয়োজন আছে কিনা, থাকলে সেটা কিভাবে, কখন, কার মাধ্যমে, কোন বয়সে সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। সেটা উঁচুতলার আলোচনা। কিন্তু আপনার সন্তান, তার ব্যাপারে আপনাকে ভাবতে হবে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনতা তিনটি সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সমাজ তৃষ্ণা মেটাতে অসংখ্য স্বাদের পানীয়, ক্ষুধা মেটাতে অগণিত রেস্তোরাঁয় অফুরন্ত খাবার অফার করছে, যৌনতার ক্ষেত্রে কিছুই অফার করছেনা ভাবছেন? আপনি নাক সিটকালে বা চোখ ফিরিয়ে নিলে এটা বিলুপ্ত হয়ে যায়না।
সচেতন হোন। প্লিজ।

মানুষ বুঝা মানুষ বুঝা

আর আমরা, এগিয়ে যাওয়ার অংশ হিসাবে নারীদেরকে স্বনির্ভর করছি, সুযোগ দিচ্ছি, নিজে নারী হিসাবে সে সুযোগ আমিও নিচ্ছি, তা পাচ্ছি বলে। কিন্তু পুরুষের সুযোগ সংকুচিত করে নারীকে প্রাধান্য দেওয়া হোক তা আমি চাইবো না। এই সমাজে মানুষ রুপী পশু হিসাবে বেড়ে ওঠা পুরুষদের আপনি আমিই তৈরি করছি। তাকে স্বাভাবিক আবেগ, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা দিয়ে, তার আবেগকে তাচ্ছিল্য করে, তাকে আরো আরো আরো পুরুষালি হতে বাধ্য করে ও অনেক স্পর্শকাতর স্থানে ক্রমাগত বঞ্চিত করে পাশবিক এক সত্তা তার মধ্যে বেড়ে উঠতে ও তাকে মানবীয় অনুভূতি বুঝতে অক্ষম এক জন্তু হিসেবে গড়ে উঠতে বাধ্য করছি। আর তার উপরে আরো চাপিয়ে দিচ্ছি এক্সপেকটেশনের বিশাল বোঝা। আর এভাবেই বেঁচে থাকতে থাকতে একজন অমানুষের মত আচরণ করা ব্যক্তি বুঝতেই পারেনা তার আচরণটা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি এগুলো নিয়ে ভাবতে চান না? এছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে? আছে। কিন্তু বাসে আপনার বা আপনার স্ত্রী, বোন বা কন্যা সন্তানের পায়ের সাথে পা ঘষতে থাকা ব্যক্তিটিকে আপনি কিভাবে শায়েস্তা করবেন? সে না থাকলে আরেকজন, নইলে আরেকজন, নইলে আরেকজন তার জায়গা পূরণ করবে। কিন্তু যে মেয়েটির স্পর্শকাতর অঙ্গে স্পর্শ করা হয়েছে বলে সে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা গোসল করে আর চিৎকার করে কাঁদে, তাকে স্বাভাবিক জীবন আপনি কিভাবে ফিরিয়ে দেবেন? স্পর্শকারীকে ফাসি দিয়ে?
অতি আধুনিকতা ও অতি রক্ষণশীলতা একত্রে গিলতে গিয়ে এই সমাজের বদহজম হচ্ছে।

শিক্ষা দরকার শিক্ষা দরকার

যৌনতার ব্যাপারগুলোকে আপনি কিভাবে দেখবেন আপনার ব্যাপার, কিন্তু বাথরুম সাফ করতে ঘেন্না লাগে বলে পুরো ঘর পরিষ্কার করলেন বাথরুম ছাড়া, কি লাভ? বাথরুমে স্যার/ম্যাম, আপনাকে যেতেই হবে। আর অপরিচ্ছন্ন বাথরুম ব্যবহার করলে পরে রোগবালাইও আপনারই হবে।

সুমাইয়া তাসনিম
সাইকোলজি

 

শিশুর সুস্থভাবে বিকাশে আপনার সচেতনতা

নতুন একটা মানব শিশুর সাথে সাথে জন্ম হয় নতুন বাবা মারও। সুন্দর আর সুস্থ পরিবার গঠন করতে হলে মার ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ বাবার ভূমিকাও। সুতরাং সন্তানদের লালন পালনের দিকে খেয়াল রাখা উভয়েরই দায়িত্ব। দায়িত্ব ভাগাভাগি করার সুযোগ থাকলে উভয়ের বন্ধনের জন্যে খুব ভাল। আর যেহেতু বাবা উপার্জনের জন্য অধিকাংশ সময় বাইরে থাকেন তবুও যতটুকু কাজে সহযোগিতা করা সম্ভব। সন্তানের দায়িত্ব সবার।

শিশুর জন্মের সাথে জন্ম নেয় নতুন মা বাবা শিশুর জন্মের সাথে জন্ম নেয় নতুন মা বাবা

মা বাবার চিন্তার ধারার পরিবর্তন প্রয়োজন। আপনার শিশুটির সঠিকভাবে লালন-পালন বা বিকাশের জন্য কেবল,দুই ঘন্টা পর পর খাবার,একটি আরামদায়ক বিছানা আর ঘর ভর্তি খেলনা প্রয়োজন নয় বরং এগুল আপনার পোষা প্রাণীর জন্য যথেষ্ট। কারণ তার মানসিক বিকাশ বা আবেগীয় বুদ্ধির প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনার শিশু সন্তানের মানসিক বিকাশ বা আবেগীয় বিকাশের প্রয়োজন আছে,বরং সন্তানের প্রয়োজন অনেক কিছু আরও অনেক বিষয়।

কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ

♦♦♦ কিছু পদক্ষেপ আমাদের শিশুদের সঠিক বিকাশে ভুমিকা রাখতে পারে,

♣কোলে বসানো:
খেয়াল করুন, আপনার শিশুকে কারো কোলে বসতে দিবেন আর দিবেন না।

♣কাপড় পাল্টানো:
সন্তানের বয়স দু’বছরের বেশী হলেই তার সামনে আর আপনি কাপড়চোপড় পাল্টাবেন না।

♣অন্যের কমেন্ট যাচাই করুন:
প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ আপনার শিশুকে উদ্দেশ্য করে বলছে: ‘আমার বৌ’, ‘আমার স্বামী’- এটা অ্যালাউ করবেন না।

♣খেলার ধরণ খেয়াল করুন:
আপনার শিশু যখন বলছে সে খেলতে যাচ্ছে, কোন্ ধরণের খেলা সে খেলছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন, উঠতি বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে অ্যাবিউজিং প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছে।

♣স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং ভক্তদের সম্পর্কে জানুন: স্বাচ্ছন্দবোধ করছে না এমন কারো সাথে কোথাও যেতে আপনার শিশুকে জোরাজুরি করবেন না। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন, আপনার শিশু বিশেষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কের ভক্ত হয়ে উঠেছে কিনা।

♣বাচ্চার পরিবর্তন লক্ষ্য করুন:
দারুণ প্রাণচ্ছল কোন শিশু হঠাৎ নির্জিব হয়ে গেলে, তাকে প্রশ্ন করুণ। তার মনের অবস্থাটা পড়তে চেষ্টা করুণ।

♣যৌনমূল্যবোধ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা:
বয়:সন্ধি পেরোচ্ছে এমন বাচ্চাকে যৌনমূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিন। আপনি যদি এ কাজ না করেন, তবে সমাজ তাকে ভুল টা শিখিয়ে দেবে।

♣কার্টুন, ছবি আর বই গুলতে কি দেখে:
কোন ছবি, কার্টুন ইত্যাদি বাচ্চাদের জন্য আনলে আগে তা নিজে দেখুন। কোন বই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই তা কোমলমতি সন্তানের হাতে দিন।

♣বাচ্চাদের দিকে নজর দিন:
আপনি নিশ্চিত হন যে আপনি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অপশন অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন কেবল নেটওয়ার্কে, বিশেষ করে সেই সমস্ত নেটওয়ার্কে যেখানে আপনার শিশু প্রায়শই ভিজিট করে।

♣বাচ্চাদের প্রযোজনীয় বিষয় শেখান:
তিন বছর বয়স হয়েছে এমন সন্তানকে তাদের ব্যক্তিগত গোপন স্থানসমূহ কিভাবে পরিস্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হয় তা শেখান। সতর্ক করে দিন যেন সেসব এলাকা কেউ স্পর্শ করতে না পারে- নিষিদ্ধদের মধ্যে আপনিও আছেন (মনে রাখবেন চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম এ্যান্ড উইথ ইউ)।

♣নিরবে তালিকাভুক্ত করুন:
কালো তালিকাভুক্ত করুণ সেই সব বই, গান, মুভি, পরিবার বা ব্যক্তিকে- আপনি মনে করেন যে বা যা আপনার শিশুর মনের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে।

♣নিজের সন্মান বুঝান:
আপনার শিশুকে ভিড়ের বাইরে গিয়ে দাড়ানোর মূল্যবোধ শেখান।

♣অভিযোগ আমলে নিন:
আপনার শিশু যদি কারো সম্পর্কে অভিযোগ করে তবে দয়া করে বিষয়টি নিয়ে মুখ বুজে থাকবেন না।

মনে রাখবেন, আপনি হয়ত বাবা মা হয়েছেন দু’দিন আগে,বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, যে কোন ব্যথাই কিন্তু সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়.।
আপনার সচেতনতা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা।

চল এগিয়ে যাই সামনে চল এগিয়ে যাই সামনে

 

চুল সাজে ঝুঁটিতে

কোরবানি ঈদ মানেই নানা কাজের ঝক্কি-ঝামেলা। এর মাঝে তো সাজটাও ঠিক রাখা চাই। ঈদের দিন নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার নানা আয়োজনের মাঝে চুলের সাজ অন্যতম। ঈদের দিন সকালে হালকা সাজ হিসেবে চুলে ঝুঁটি করার পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা মুন্নি। তিনি বললেন, এখন যেহেতু দিনের বেলা বেশ গরম থাকে এবং ঈদের দিন বিভিন্ন রকমের কাজ থাকে, সে জন্য যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই ঝুঁটি হতে পারে আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ একটি সমাধান।

স্টাইলিংয়ের আলাদা কোনো বয়স বা সময়সীমা নেই, তাই ঝুঁটি করতে পারেন যে কেউই। হালকা সাজের জন্য সামনের চুলগুলোতে একটু বেণি করে পেছনে টেনে ঝুঁটি করা যেতে পারে। আবার পাশে সিঁথি টেনে সামান্য টুইস্ট করেও চুলে স্টাইলিশ ঝুঁটি বাঁধতে পারেন।

অপরদিকে, যাঁদের সামনের চুল ছোট অর্থাৎ চুলে ব্যাংগস কাট, লেয়ার অথবা ফ্রেঞ্চ কাট দেওয়া, তাঁরা সামনের চুলগুলো খোলা রেখে পেছনে একটু ওপর করে ঝুঁটি করতে পারেন। তবে কেউ যদি সামনের চুলগুলো খোলা রাখতে না চান, সে ক্ষেত্রে হালকা মুজ দিয়ে সামনের চুলগুলো আটকাতে পারেন। মাঝারি ধাঁচের চুলের সঙ্গে মেসি পনিটেইল এবং কেউ যদি চান সাধারণভাবে ঝুঁটি করে সেটা ফোল্ড করে বাঁধতে পারেন।

শুধু ঘরে নয়, বেড়াতে গেলেও একইভাবে ঝুঁটি করে বের হতে পারেন যে কেউ। যেকোনো দাওয়াত কিংবা পার্টিতেও চুলের ঝুঁটি দিতে পারে ভিন্ন লুক। এমনকি শাড়ির সঙ্গে যে কেউ চুলে ঝুঁটি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ব্লাউজের গলার কাট কেমন। তবে যাদের কাঁধ ভারী, তাঁদের জন্য পনিটেইল না করাই ভালো, হালকা গড়নের যে কেউই শাড়ির সঙ্গে ঝুঁটি করলে তা সুন্দরভাবে মানিয়ে যাবে।

 

চা পান করেই পাবেন পরিষ্কার ত্বক

চা আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি পান করি। অনেকে আবার একটু বেশিই পান করে। সকালে উঠে এক কাপ চা দিয়ে দিনটা শুরু না হলে কেমন একটি ফিকে ব্যাপার হয়ে যায়।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এই চাতেই লুকিয়ে রয়েছে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য।

পরিস্কার ও উজ্জ্বল ত্বক দেবে যেসব চা
ক্যামোমাইল টি: এই ধরনের চায়ে কুয়েরসেটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা চোখের ক্লান্তি দূর করে, ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। অনিদ্রা প্রতিরোধ করে। ক্যামোমাইল টি ব্যাগ চোখের উপরে কিছুক্ষণ রেখে দিলেই এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জ্যাসমিন টি: এটি অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল। ত্বকের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

গ্রিন টি: অতি মাত্রায় সূর্যালোক ত্বকে ক্যানসারের সম্বাবনা বাড়িয়ে তোলে। গ্রিন চা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ত্বকের বলিরেখা এবং রিঙ্কলস দূর করে। নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।

ব্ল্যাক টি: এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

আদা চা: পেটের সমস্যা হলে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে। আদা চা হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বক পরিষ্কার থাকে।

পিপারমিন্ট টি: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই চা খুবই উপকারি। ত্বকে অতিরিক্ত তেলের উৎপাদন কমায়। মৃত কোষকে ত্বকের উপর থেকে সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

হোয়াইট টি: গ্রিন টি-র থেকেও অনেক বেশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে এতে। ত্বকের ম্যাট্রিক্স মেটালোপ্রোটিনেজ মাত্রা কমিয়ে ত্বকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

কম্বু চা: ত্বকে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। সানবার্ন দূর করে।

ম্যাট চা: জাপান থেকে এই চা এসেছে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। খাওয়ার পাশাপাশি ম্যাট চা পাউডার ত্বকে প্যাক হিসাবে লাগাতেও পারেন।

সূত্র: জিনিউজ।

 

এফডিসির জোছনা বেগম

খাবারের দোকানের ক্যাশ কাউন্টারে বসে আছেন শান্ত। সাইনবোর্ডবিহীন এই দোকানের নাম জানতে হলো শান্তর কাছ থেকে—‘হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। শান্তর সামনের বেশ কয়েকটা টেবিল ও বেঞ্চ। সেখানে নানা বয়সী লোকজন দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। খাওয়া শেষ করে এসে বিল মেটাচ্ছেন কেউ কেউ। খানিক পরে শান্ত উঠে দাঁড়ালেন। চেয়ার ছেড়ে দিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। চেয়ারে বসলেন একজন মধ্যবয়সী নারী। শান্ত পরিচয় করিয়ে দিলেন—‘আমার মা’। গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন শান্ত।

হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের অবস্থান কারওয়ান বাজার রেলগেট পার হয়ে এফডিসির পাশে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজগুলোর পেছনে। ‘এফডিসির খাবার’ বলে খ্যাত খাবার রান্না হয় এখানে। যে তিনটি হোটেল থেকে শুটিং স্পটে খাবার যায় এবং স্থানীয়রা ‘এফডিসি’র খাবার খান, তারই একটি হালিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। অন্য দুটির চেয়ে এখানে খাওয়ার পরিবেশও ভালো। তাই ভিড়টা বেশ।

খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে একেকজন আসছেন আর বিল দিচ্ছেন। শান্তর মা তাই ব্যস্ত। একবার সামনের টেবিলের ড্রয়ার খুলছেন, টাকা রাখছেন। ভাংতি ফেরত দিচ্ছেন। কাস্টমার টিস্যু পেপার চাইলে সেটাও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

দুপুর গড়িয়ে এসেছে। এফডিসির খাবার তালিকায় বড় জায়গাজুড়ে থাকা ‘কালা ভুনা’ও শেষ ততক্ষণে। হোটেলের ভিড় খানিকটা কমে এসেছে। তবে এই ফাঁকে কথা হয়েছে শান্তর সঙ্গে। পুরো হোটেলটি শান্তর মা জোছনা বেগম দেখভাল করেন। প্রায় ১৫ বছর আগে শান্তর বাবা আবদুল হালিম হোটেলটা করেছিলেন বটে, কিন্তু বছর সাতেক ধরে তিনি বিছানায় পড়ে রয়েছেন। শরীরের এক পাশ অবশ তাঁর।

ভিড় কমে এলে মুখোমুখি বসি জোছনা বেগমের। শুরু করেন শুরুর গল্প। জোছনা বেগমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। স্বামীর বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। ঘটকের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। পাত্র হিসেবে আবদুল হালিমের বড় পরিচয় ছিল তিনি এফডিসির লোক। ‘এফডিসির লোক’ ব্যাপারটি পরিষ্কার করেন ছেলে শান্ত। ‘আমার বাবাকে এফডিসি এলাকার সবাই চেনেন। উনি একসময় সিনেমার প্রডাকশনে কাজ করতেন। তাই সবাই খুব পছন্দ করতেন। পরে হোটেল চালু করেছেন।’

ছেলের মুখের কথা টেনে নিয়ে জোছনা বেগম বলেন, ‘আমার বিয়ের পরে সবকিছু ভালোই চলছিল। বছর ঘুরতে ছেলে হলো। স্বামীকে সবাই চিনত বলে প্রতিদিন অনেক অর্ডার আসত। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটা থেমে যায়।’ ততদিনে জোসনা বেগম তিন সন্তানের মা।

তারপর জমানো টাকা দিয়ে বছরখানেক স্বামীর চিকিৎসা করিয়েছেন। এই হাসপাতাল থেকে সেই হাসপাতাল। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানো ছাড়া বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। তারপর একদিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। সংসার তো চালাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে স্বামীর ব্যবসায় হাত দেন জোছনা বেগম।

ব্যবসার হাল ধরার শুরুর দিকে গল্পগুলো মনে করে বলেন, ‘শান্তর বাবা অসুস্থ হওয়ার পর হোটেলের কর্মচারীরা সবাই চলে যায়। কারণ, তাদের তো আর বসে বসে বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। বছরখানেক পরে আমি যখন নতুন করে শুরু করি, তখন তারা আরেক জায়গায় কাজ নিয়েছে। তাই নতুন নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়েছে। প্রচার করতে হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে এগোচ্ছি।’

জোছনা বেগমের অধীনে এখন ১১ জন নিয়মিত কর্মী রয়েছেন এই দোকানে। তাঁদের কেউ বাজার করেন, কেউ রান্না, আর কেউ শুটিং বাড়িতে খাবার পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করেন।

জোছনা বেগম বললেন, ‘এফডিসির খাবারের আলাদা কদর আছে সবার কাছে। এ কারণে আমাকেও বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। সকালে বাজারটা যেন ভালো হয়। রান্নাটা যেন ভালো হয় এমনকি পরিবেশনটাও যেন সুন্দর হয়।’

তাহলে সংসার?

‘সেটাও আমি দেখি। কাছেই বাসা। তাই সকালে রান্না বসিয়ে দিয়ে চলে যাই। দুপুরে এসে শুটিং বাড়িতে খাবার পাঠানো এবং হোটেলে আসা কাস্টমারদের খাওয়ানো দেখভাল করি। তারপর দুপুরের পর বাসায় গিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করি। বাড়তি পরিশ্রম হলেও করতে তো হবেই।’ বলেন জোছনা বেগম।

কথা বলার এক ফাঁকে শান্ত জানিয়ে রাখে, এখানে খাবারের দাম কিন্তু কম। সব প্যাকেজ সিস্টেম। ভাত, ডাল সবজি ও গরুর মাংস দিয়ে খেলে ১২০ টাকা। গরুর মাংসের জায়গায় মুরগি খেলে ৯০ টাকা এবং মাছ খেলে ৮০ টাকা। তবে অর্ডার করলে যেকোনো খাবারই রান্না করে দেওয়া হয়।

ছেলের কথা বলার ফাঁকে মা উঠে গেলেন। রান্নাঘরে গিয়ে বাবুর্চিকে বুঝিয়ে দিলেন, কীভাবে হাঁস রান্না করতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে ছয়টা চুলার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই হাসিমুখে জোছনা বেগম বললেন, ‘রাতে একটা হাঁস রান্নার অর্ডার আছে। সেটাই বলে দিচ্ছিলাম। রাতে তো অর্ডার ছাড়া রান্না হয় না এখানে।’

স্বামীর হঠাৎ অসুস্থতায় নিশ্চয়ই অশান্ত হয়ে গিয়েছিল জোছনা বেগমের জীবন। িকন্তু জোছনা বেগম থেমে যাননি। ব্যবসা, স্বামীর চিকিৎসা, সংসার এবং সন্তানদের মানুষ করে চলেছেন শান্তভাবেই। জীবনের অমাবস্যা নিজেই দূর করছেন জোছনা।

মানব মনের সৃজনশীলতায় মা বাবার ভূমিকা

পাশের বাড়ির ভাবী এসেছেন বাসায়। আপনার আড়াই বছরের মেয়েটিকে ওর খেলনাগুলো দিয়ে কাছেই বসিয়ে দিলেন ভাবীর মেয়ের সাথে খেলতে। গল্প করছিলেন আপনারা, হঠাত চিৎকার শুনতে পেলেন। দৌড়ে গিয়ে দেখলেন আপনার মেয়ে অতিথির মেয়েকে মারছে, তার হাত থেকে নিজের খেলনা কেড়ে নিচ্ছে। সেই সাথে সমান তালে দুইজনই চিৎকার করে কাঁদছে। অপ্রস্তুত দুই মা সাথে সাথে রিএক্ট করে ফেললেন। আপনি মেয়েকে দুইটা মার লাগিয়ে দিলেন। প্রতিবেশি ভাবীও নিজের মেয়েকে টেনে নিয়ে বকা শুরু করলেন, ওকেই দোষারোপ করতে থাকলেন। চিৎকারের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। আপনার মেয়ে কিছুতেই নিজের খেলনা শেয়ার করতে রাজি না।

আপনার তিন বছরের একমাত্র ছেলেটি খাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা করে। মুখ থেকে থু করে ফেলে দেয়, জোর করে খাওয়াতে গেলে জেদ করে হাতের কাছে যা পায় ছুড়ে ফেলতে থাকে।

আপনার দুই বছরের মেয়েটি মোবাইলে কার্টুন দেখছিল। একটা জরুরি ফোন করার জন্য হাত থেকে নিয়ে নিলেন আর সাথে সাথে শুরু হলো ছেলের চিৎকার। আপনি দিচ্ছেন না বলে একসময় মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল। কাজেই বাধ্য হয়ে ওকে থামানোর জন্য তাড়াতাড়ি কাজ সেড়ে ফোনটা দিয়ে দিলেন হাতে।

শূন্য থেকে চার বছরের নিচের বাচ্চারা আক্ষরিক অর্থেই অবুঝ শিশু। ওরা যখন জেদ করে তা হলো রাগ আর হতাশার বায়োলজিক্যাল রেসপন্স। জোরে একটানা চিৎকার করতে থাকা, উলটো হয়ে পড়ে যাওয়া, হাত পা ছুড়তে থাকা, দম আটকে কাশতে কাশতে বমি করে দেয়া – এগুলোকে টেম্পার ট্যান্ট্রাম (temper tantrum) বলা হয়। টেম্পার ট্যান্ট্রাম সাধারণত দুই থেকে চার বছর বয়সীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না পারা, নিজের কিছু শেয়ার করতে না চাওয়া – এগুলোও এই বয়সী শিশুদের বৈশিষ্ট্য। এর প্রতিকার সম্পর্কে জানার আগে আসুন জেনে নেই এর কারণ সম্পর্কে।

আমাদের মানবিক আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ও সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontral cortex) নামের অংশ থেকে। এই অংশটি আমাদের ব্রেইনের অন্যান্য অংশের চাইতে সবচেয়ে দেরিতে ডেভেলপ হয়, এটি চার বছর বয়স থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করতে শুরু করে। ঠিক একারণেই চার বছরের আগে শিশুদের সামাজিকতা আর মানবিক আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে ইম্যাচিওর্ড ধরা হয়। আর তাই এই বয়সে ওরকম জেদ অথবা অসামাজিক আচরণ করাটাই স্বাভাবিক।

চার বয়সের নিচের বাচ্চারা যুক্তি-তর্ক বোঝে না। চারপাশের সাধারণ ব্যাপার স্যাপার আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও ওদের কাছে তা দশ গুন বিভ্রান্তিকর। যেমন – পানির ফিল্টারের ট্যাপ ছেড়ে দিলে কী সুন্দর করে পানি পড়তে থাকে, বড়রা কেন এতে রাগ হয় তা ওর ছোট্ট মাথায় ঢোকে না। চকলেট, চিপস, আইস্ক্রিম খেতে কি মজা! বড়রা কেন খেতে নিষেধ করে তা কি ও বোঝে? ছোট ভাইয়ার খেলনা ওর খেলতে ইচ্ছা করলে কেড়ে নিতেই পারে, এতে ওকেই কেন বকা দেয়া হবে? কার্টুন যে সময়টা সবচেয়ে বেশি মজা লাগতে থাকে, ঠিক তখনই মা আর দেখতে দেয় না! এসব কারণে জেদ করাটাই কি স্বাভাবিক না?

এই বয়সের শিশুরা যা বোঝাতে চায় বা বলতে চায় তা প্রকাশ করার সঠিক ভাষা ওর জানা থাকে না। বড়রা কি চায় তা-ও অনেক সময় বুঝতে কষ্ট হয়।

টেম্পার ট্যান্ট্রাম মূলত যে সব কারনে হয়ে থাকেঃ
ক. অনুভূতি প্রকাশের অযোগ্যতা
খ. স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত কিছু করতে না পারা
গ. পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা
ঘ. ক্ষুধা, একঘেয়েমি, ক্লান্তি, বিষণ্ণতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা

এবার আমরা জানব এই সমস্যাগুলো কেমন করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

১. রুটিন মেনে চলুন
প্রতিদিনের খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, খেলার একটা প্রাত্যহিক রুটিন সেট করে ফেলুন। দিনের প্রত্যেকটা কাজ সময়মত হলে বাচ্চার মেজাজ ঠিক থাকে। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে অহেতুক জেদ করবে না, অল্পতে কষ্ট পেয়ে অসামাজিক আচরণও করবে না। যৌথ পরিবারে রুটিন মেনে চলা মুশকিল, তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু সম্ভব।

২. ব্যস্ত রাখুন, সময় দিন
আপনার শিশুর ক্ষুধা, একঘেয়েমি, ক্লান্তি, বিষন্নতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা এড়াতে তার প্রয়োজনগুলো যথাসময়ে পূরণ করুন। এমন রুটিন সেট করবেন না যা বাচ্চার জন্য মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। বাসায় সবসময় হেলদি স্ন্যাকস, ফল ইত্যাদি রেডি রাখুন, বাচ্চার সময় কাটানোর প্রয়োজনীয় উপকরণও (খেলনা, বই ইত্যাদি) যেন হাতের কাছেই থাকে।

ঘুমানোর আগের সময়টা উত্তেজনাকর খেলাধুলা থেকে দূরে রাখুন। ওইসময় বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লে (যেমন দৌড়ঝাঁপ করা, অতিরিক্ত দুষ্টুমি, খিলখিল করে হাসা..) সহজে বিছানায় যেতে চাইবে না।

৩. নিষেধাজ্ঞার কারনগুলো দূর করুন
“এটা ধরো না”, “ওটা নিও না” অথবা “ওখানে যেও না”, “না, এটা কোর না”… এসব কথা যেন বলা না লাগে সেই ব্যাবস্থা করুন। অর্থাৎ, বাচ্চার জন্য বিভ্রান্তিকর, বিপদজনক এমন যে কোন কিছু ওর হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে ফেলুন। আপনি যে ওর ভালোর জন্য বলছেন তা এই বয়সে ওর বোঝার কথা না। ঘরটাকে এমন রাখুন যেন ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে।

৪. স্বাধীনভাবে বেছে নিতে দিন
খাওয়ার সময় ওর কাছে জানতে চান কোনটা খেতে চায় – এটা নাকি ওটা? সিম্পল অপশন দিন। জামা পরানোর সময় কোন রঙ পরবে জানতে চান – নীল নাকি সাদা? কিছু ব্যাপার ওর নিয়ন্ত্রণে আছে বুঝতে দিন।

৫. “হ্যা/না” বলুন, “হয়তো/হতে পারে” নয়
অস্পষ্ট, বিভ্রান্তিকর উত্তর দেয়া দেখে বিরত থাকুন। যখন বুঝতে পারে না আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, ও তখন রেগে যায় আর জেদ করতে থাকে। অথচ এটা প্রকাশ করতে পারে না যে সে আপনার কথা বুঝতে পারছে না। কাজেই হ্যা অথবা না, যা বলবেন স্পষ্ট করে বলবেন। যেটা হ্যা বলবেন, সেটা না যেন না হয় খেয়াল রাখবেন।

অনেক সময় বাচ্চারা আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেদ, কান্নাকাটি করে থাকে। ওকে পর্যাপ্ত সময় দিন। খাওয়ানো, ঘুম পারানোর কাজে না, এমনি বসে একটু খেলা করুন ওর সাথে। ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে অথবা লং জার্নিতে – এমন কোন সময় যখন দীর্ঘক্ষণ ওকে আপনার সাথে বসে থাকা লাগবে; ওর সাথে কথা বলুন, গেইম খেলুন।

এখন জেনে নেই জেদী বাচ্চাকে শান্ত করার কিছু উপায়।

১. জেদ শুরু হওয়ার সাথে সাথে, বা শুরু হতে যাচ্ছে বুঝতে পারলেই তাকে হাসানোর চেষ্টা করুন। যেমন একটা কলা নিয়ে কানে ফোনের মত ধরে হ্যালো হ্যালো করুন। তবে হাসানোর চেষ্টা করলে কিছু বাচ্চার কান্না আরো বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে অন্য পন্থা অবলম্বন করুন।

২. আপনার সোনামণির টেম্পার ট্যান্ট্রামের সময় কখনোই উলটো রাগ দেখাবেন না। গায়ে হাত তোলা বা বকাঝকা তো কখনোই নয়। ওর উপর চিৎকার না করে কোলে তুলে নিন, নরম স্বরে কথা বলুন। জানি এটা বলা যত সহজ করা ততই কঠিন। বাচ্চা যখন মাটিতে পড়ে হাত পা ছুড়তে থাকে, প্রতিবাদ করতে শ্বাস আটকে রাখে, এমন কি কোলে নিলে আপনাকে মারতে থাকে – জেনে নিন ওর বয়সির জন্য এসব স্বাভাবিক ট্যান্ট্রাম। ওই সময়টা যুক্তি-তর্ক কোন কাজে লাগবে না, ওর সাথে রাগারাগি করেও লাভ হবে না। বরং এতে জেদ আরো বাড়বে।

৩. ট্যান্ট্রাম যদি এমন পর্যায়ে থাকে যা বাচ্চার জন্য বা অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর নয়, তাকে ইগনোর করুন। অহেতুক অনর্থক চিৎকার শুরু করলেই অন্য দিকে চলে যান, শুনতে পাচ্ছেন না এমন ভান করুন। এভাবে জেদ করে কোন লাভ হচ্ছে না বুঝতে দিন।

৪. জেদ করলেই যা চাই তা পাব – এমন একটা ধারণা যেন জন্ম না নেয়। আপনার মোবাইল নেয়ার জন্য জেদ করলে কিছুতেই মোবাইল ধরতে দিবেন না। আপনার কাজ শেষে মোবাইলটি ওর হাতের নাগালের বাইরে রেখে দিন। একবার যখন বুঝে ফেলবে যে এভাবে চাইলে কিছু পাওয়া যায় না, পরের বার আর এমন করবে না। কিন্তু জেদের ভয়ে একবার দিলেন তো দুইজনই হেরে গেলেন। ভবিষ্যতের জন্যেও তা সুখকর হবে না।

৫. বাইরে কোথাও গেলে অথবা বাসার অতিথির সামনে যদি ট্যান্ট্রাম শুরু করে, তাকে শান্তভাবে একই কথা বার বার বলে শান্ত করুন। অন্য কারো সামনে বকাঝকা করলে বা গায়ে হাত তুললে ও অপমানিত বোধ করবে, সেই সাথে ট্যান্ট্রাম আপনার কন্ট্রোলের বাইরে চলে যেতে পারে।

৬. আপনার শিশুটি যদি জেদ করে অন্যকে মারতে থাকে বা জিনিসপত্র ছুড়তে থাকে, সাথে সাথে থাকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে যান। কিছু না বলে শান্ত হতে সময় দিন। বিয়ের দাওয়াত বা রেস্টুরেন্টে এমন হলে সাথে নিয়ে বের হয়ে যাবেন। জড়িয়ে ধরে আদর করে শান্ত করুন। তারপর আবার ভেতরে নিয়ে যান।

৭. চার বছরের নিচের শিশুদের ট্যান্ট্রামের জন্য শাস্তি দেবেন না কখনোই। আর রেগে মারধোর করলে আপনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। পরে মাথা ঠান্ডা হলে নিজেরই আফসোস হবে। মনে রাখবেন, শারীরিক আঘাত করলে বাচ্চারা মানসিকভাবেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শারীরিক আঘাত ক্ষণস্থায়ী হলেও মানসিক আঘাত দীর্ঘস্থায়ী।

আপনার সন্তান আপনার কথা শুনবে আপনাকে ভালোবাসে বলে, ভয় পেয়ে নয়।

পরিশেষে দুআ করি আল্লাহ যেন প্রত্যেক মাকে অফুরন্ত ধৈর্য আর সহনশীলতা দান করেন। মা হিসেবে আল্লাহ যেই মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা যেন সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন। আমীন।

#প্যারেন্টিং #টেম্পার_ট্যান্ট্রাম

লিখেছেন: Sihinta sharifa (Cornelia Stephanie)

 

সেলিনার বনসাই রাজ্য

সেলিনা পারভিন চেনা-অচেনা কিংবা বিলুপ্তপ্রায় গাছের সমারোহ ঘটিয়েছেন তাঁর আঙিনায়।  কুষ্টিয়ার মেয়ে সেলিনা পারভিন কলেজে পড়ার সময় নিয়মিত ম্যাগাজিন পড়তেন। সেই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত পছন্দের বিষয়ের লেখাগুলা কেটে রাখতেন। একদিন কুষ্টিয়ারই ছেলে কাজল মাহমুদের সঙ্গে ঘর-সংসার পাতলেন। স্বামীর কর্মস্থল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা-বাগান। চলে এলেন এখানে। কাজল মাহমুদ ওই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক।

চা-বাগানের নীরব-নিভৃত, কোলাহলমুক্ত স্থানটিই যেন তাঁর ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা সৃষ্টিমুখরতাকে জাগিয়ে তুলল। প্রশিক্ষণ ছাড়াই ম্যাগাজিন থেকে কেটে রাখা লেখাগুলো পড়ে, ছবি দেখে হাত দিলেন নতুন এক শিল্পে। যার নাম বনসাই। সেটা ১৯৯৮ সালের কথা। বললেন, ‘কেউ প্রশংসা করবে। এ জন্য কাজটি করিনি। নিজের ভেতরের ভালো লাগা থেকেই কাজটিতে হাত দেওয়া।’

সেই যে শুরু হলো। ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করলেন গাছ। টবে লাগানো হলো। কোনোটি পুরোনো গাছের গোড়ায় জড়িয়ে দেওয়া হলো। এক নিবিড় শ্রম ও অধ্যবসায় পেয়ে বসে তাঁকে। গাছটির বয়স হচ্ছে, কিন্তু ওটা একটি সীমিত উচ্চতায় আটকে আছে। গাছটির সারা শরীরজুড়ে লাবণ্যের কমতি নেই। সবুজ পাতা, অনেক বছরের আলো-জল খাওয়া শাখাগুলোও সময়ের সমৃদ্ধ মেজাজ নিয়ে দুলছে। এই পরিবেশটাকে গাছের শরীরজুড়ে ধরে রাখতে লাগে অনেক সময় ও পরিচর্যা। দিতে হয় নিয়মিত সেচ ও সার। সামান্য হেলাফেলার সুযোগ নেই। স্বামী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসারে বনসাইগুলোও সমান যত্ন-আত্তি পায়। এই কাজটির মধ্য দিয়ে চার দেয়ালে আটকে না রেখে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি।

স্বামী কাজল মাহমুদ সমানে তাঁকে উৎসাহ জুগিয়ে চলছেন। সেলিনা পারভিনের শিল্প সৃষ্টির এই কাজ এখন আর তাঁর নিজের পরিধিতেই আটকে নেই। তাঁর এই বনসাই দেখে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি তাঁকে সদস্য করেছে। তিনি বনসাই সোসাইটির একাধিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে তাঁর প্রদর্শিত বনসাই পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। বাণিজ্যিকভাবেও বনসাইয়ের সম্ভাবনা আছে। অনেকেই ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কিংবা গাছের প্রতি মমতা থেকেই নানা জাতের বনসাই কিনে থাকেন। একটি বনসাইয়ের দাম ১ হাজার থেকে ৪-৫ লাখ টাকাও হতে পারে। তিনি এ পর্যন্ত প্রদর্শনীতে ১ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটি বনসাই বিক্রি করেছেন। পরিবহনের অসুবিধার জন্য প্রদর্শনীতে নেওয়া বনসাইগুলো ছিল ছোট আকারের।

সেলিনা পারভিন বলেন, ‘অনেকে মনে করছেন এটাকে ছোট করে রাখা হয়। এটা আসলে ঠিক না। বরং এ চর্চার মাধ্যমে গাছের আরও প্রসার বাড়ছে। দেখা যাবে অনেক গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এই চর্চার মাধ্যমে অনেকে অনেক গাছ এখন চিনতে পারছে। বনসাই প্রদর্শনীতে এসে অনেকে প্রকৃতিপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’

বনসাইচর্চার পাশাপাশি তিনি বনসাইয়ের ওপর বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। ছবিও আঁকেন। বই পড়েন। লেখেন কবিতা। সেলিনা পারভিন নিজের শিল্পসত্তাকে ঘর-সংসারের গতানুগতিকতায় বেঁধে না রেখে মুক্ত করেছেন শিল্পের আঙিনায়। তাঁর উঠোনজুড়েই প্রকৃতির রাগ-রং ফুটে আছে।

 

পিতা-মাতার নাম উল্লেখ ছাড়া কি বিয়ে বৈধ হবে?

হ্যাঁ, পিতা-মাতার নাম উল্লেখ না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হবে। বিয়ে শুদ্ধ হতে ছেলে এবং মেয়ের পক্ষে পিতা বা অভিভাবকের ইজাব কবুল করলেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। হানাফি মাজহাব অনুসারে সাবালিকা মেয়ে নিজেই বিয়ের সম্মতি দিতে পারে।

আপনার পরিচিত ঐ মেয়ে এবং ছেলের বিয়েতে পাত্রের পিতা-মাতার নাম উল্লেখ করা ছাড়াও বিয়ে শুদ্ধ হবে। কেননা ওই বিয়েতে যে দুজনের বিয়ে হয়েছে তারা দুজনই উপস্থিত ছিলেন এবং সাক্ষীরা নির্দিষ্ট করতে পেরেছেন যে কার মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শুকরিয়া।

 

এবারের ঈদেও শাকিব ছাড়া গতি নাই!

ঢাকাই ছবিতে শাকিব খান একক আধিপত্য বিস্তার করেই চলছেন। সেটা বহুদিন ধরেই। ক্ষমতাবলে নয়, অভিনয়গুণে, দর্শকদের ভালোবাসার কারণে। এবারের আসছে ঈদুল আজহায় ব্যতিক্রম ঘটছে না। ‘শিকারি’ ও ‘নবাব’ এর মতো বিগ বাজেট ও মানসম্পন্ন ছবি না থাকলেও আসছে ঈদে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সূত্রে জানা গেছে- মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির চূড়ান্ত তালিকায় এখন পর্যন্ত তিনটি ছবি রয়েছে।

আর দুটি ছবিতেই রয়েছেন নায়ক শাকিব খান। তারমধ্যে ছবি দুটি হলো- আবদুল মান্নানের ‘রংবাজ’, শাহাদৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘অহংকার’। অন্য আরেকটি ছবি হল জাহাঙ্গীর আলম সুমন পরিচালিত চিত্রনায়িকা পপি অভিনীত ‘সোনাবন্ধু’। হামলা, বহিস্কার, নিষিদ্ধ, অবাঞ্চিত ও মামলা যাই হোক না কেনো, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই সময়ে শাকিব ছাড়া আর কোন গতি নাই!

কারণ অন্য নায়ক যারা রয়েছেন তারা ফিল্মি পলেটিক্স ও নানান কারণে নিজেদেরকে সেভাবে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে পারেননি। যেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে শাকিবের ছবিরই কাটতি বেশী, তাই সিনেমা দুটি নিয়ে পরিবেশক, হল মালিক থেকে শুরু করে দর্শকেরও আগ্রহ সেদিকেই। ইতোমধ্যেই ঈদের ছবির বড় বড় পোস্টার, বিলবোর্ড ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে সিনেমাপাড়া খ্যাত কাকরাইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক নির্ধারিত প্রেক্ষাগৃহগুলো।

‘রংবাজ’ ও ‘অহংকার’ ছবি দুটির হল বুকিং ঈদুল ফিতরের পরপরই শুরু হয়েছে। ছবি দুটির প্রযোজক ও পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে শতাধিক হল চূড়ান্তও হয়ে গেছে ছবি দুটির। শাকিব এবারের ঈদের ছবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ঈদে দর্শকের জন্য ভালো ছবি উপহার দেয়ার চেষ্টা করি। বিগত ঈদগুলোতে দর্শকরা আমার ছবি পছন্দ করেছে। ছবিগুলো মুক্তির পর তাদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পেয়েছি আমি। এবারের ঈদেও তেমনটিই আশা করছি। দুটি ছবিই দুই ধরনের গল্পের। দুটি ছবিতেই দর্শক দুই শাকিবকে খুঁজে পাবে।’

এদিকে মাস খানেক আগেও শোনা গিয়েছে এবারের ঈদে আটটি ছবি মুক্তি পাবে। কিন্তু সে তালিকায় কাটছাট হয়ে পাঁচটি ছবিই বাদ পড়ে গেল। সে ছবিগুলোর প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু বিষয়ে জটিলতা ও সঠিক সময়ে শুটিং শেষ করতে না পারায় তারা ছবিগুলো দর্শকদের আগ্রহ থাকা স্বত্বেও মুক্তি দিতে পারছে না।

গেল ঈদে শাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কলকাতার আরেক জনপ্রিয় নায়ক জিত। এর আগের ঈদেও ছিলেন। পরপর দুটি ঈদে শাকিবের ছবির সঙ্গে জিতের ‘বাদশা’ ও ‘বস ২’ ছবি দুটি মুক্তি পায়। ‘বাদশা’ ছবি দিয়ে জিৎ শাকিবের ‘শিকারি’ ছ’বির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, গেল ঈদে শাকিবের ‘নবাব’-এর কাছে জিতের ‘বস ২ টিকতেই পারেনি।

এবার শাকিবের বিপরীতে অন্য কারও বিগ বাজেটের ছবি নেই। যার কারণে ধরে নেওয়াই যায় ফিল্মি মাঠ এবারও শাকিবের দখলে। এদিকে এগিয়ে রয়েছেন বুবলিও। এবারের তিনটি ছবির মধ্যে দুটি ছবির নায়ক শাকিবের নায়িকাই শবনম বুবলিই। বিষয়টা কাকতালীয় হলেও গত বছর ঈদুল আজহায় শাকিব খানের বিপরীতে একসঙ্গে দুটি ছবি মুক্তির মধ্য দিয়ে অভিষেক হয়েছিল বুবলীর।

চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের খুব বেশি সময় পার না হলেও এরইমধ্যে অনেক বিষয়েই আলোচনায় এসেছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলি। তবে নিজের জায়গাটা বেশ আঁটসাটভাবেই বেঁধেছেন তিনি। এবার কোরবানির ঈদেও দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের কাজে প্রাধান্য দিয়েই চলতে চাই। আসছে ঈদে দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। দর্শকদের দেখার আহ্বান জানাই।’

এদিকে ঢাকাই ছবির এক সময়ের ভীষণ জনপ্রিয় নায়িকা পপি। যদিও সে তকমায় এখন ভাটা পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরেই তার কোন ছবি ঈদে মুক্তি পায় নি। তবে আসছে ঈদে ব্যাতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে। পপি অভিনীত ‘সোনাবন্ধু’ ছবিটিও মুক্তি পাবে। আর এ কারণে দারুণ উচ্ছ্বসিত এ নায়িকা।

এ ছবিটি নিয়ে পপি বলেন, ‘সোনাবন্ধু’ একটি গ্রামীণ গল্পের ছবি। এতে ভিন্ন ধরনের একটি চরিত্রে কাজ করতে পেরে আমার অনেক ভালো লেগেছে। সম্প্রতি ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। আমি এ ছবিতে রশ্মি নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখানে বেশিরভাগ সময় দর্শক আমাকে সাদা কাপড়ে বিধবা মেয়ে হিসেবে দেখতে পাবে। আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ডি এ তায়েব।’

কিন্তু ছবি মুক্তি পেতে আরও বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও ইউটিউবে ছবির গান, ট্রেলার ও টিজার প্রকাশ হয়ে গেছে। যার কারণে সে মাধ্যমগুলোতে ছবিগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা চলছে রীতিমত। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে। ‘রংবাজ’ ছবিটির ট্রেলার আনুষ্ঠানিক মুক্তির আগেই ইউটিউবে ফাঁস হয়েছে গিয়েছে!

 

হিজড়ারা কী মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারবে?

হিজড়া- মানব সমাজে বসবাসকারী একটি মানব সম্প্রদায়। যারা নারী নয় আবার পুরুষও নয়। তবে কী তারা? তারা হিজড়া। মানব সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণিই হিজড়া নামে পরিচিত। স্বাভাবিক দশটা নারী বা দশটা পুরুষের মতো হিজড়া সম্প্রদায় স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারে না। কারণ তারা নাকি স্বাভাবিক মানুষ নয়। এটা একান্তই এই সমাজের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম। প্রচলিত রীতি।

ইসলাম অন্য দশজন নারী ও পুরুষের মতো হিজড়াদের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। মহান আল্লাহ তাদের জন্য দিয়েছেন মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। একজন স্বাভাবিক নারী ও পুরুষের মতো তারাও আল্লাহ মহানের সৃষ্টি। তারা স্বাভাবিক নিয়মে ইবাদাত করতে এবং মহান স্রষ্ঠার হুকুম-আহকাম মান্য করবে। অন্যান্য মুসলিমদের মতো মুসলিম হিজড়ারা রীতিমত নামাজ আদায় করতে, রোজা রাখবে এবং জাকাত ফরজ হলে তা আদায় করবে। এসব ইবাদতের মাধ্যমে অন্য মুসলিমরা যেমন পূণ্য বা সাওয়াব লাভ করে তারাও সেভাবে লাভ করবে। তারাও সমানভাবে অংশীদার হবেন কল্যাণে-অকল্যাণের।

হিজড়া কারা কিংবা কীভাবে নির্ধারিত হবে? এটা নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাখ্যা ও গবেষণা রয়েছে। তবে ইসলাম এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কথা বর্ণনা করেছে। হাদিসে এসেছে। হজরত আলি (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কি-তা জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, ‘সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।’ [সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস ১২৯৪;  কানজুল উম্মাল, হাদিস ৩০৪০৩;  মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস ১৯২০৪]

ইবাদত ও আরাধনার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে, নামাজ আদয় করার জন্য হিজড়ারা কী মসজিদে যেতে পারবে, নাকি ঘরে বসেই নামাজ আদায় করবে? প্রথম কথা হলো, হিজড়াদের ওপর জামাতের সাথে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে উপস্তিত হয়ে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয়। তাই তারা ঘরেই নামাজ আদায় করবে বা করতে পারবে এবং এতে কোনো সমস্যা হবে না। নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। [আশ–শরহুল মুমতি ৪/১৪০] তবে যদি কোনো হিজড়া মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। [মওসুআতুল ফিকহ ২৫/২০]

এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় হলো- যদি মসজিদে পড়তেই হয় তাহলে পুরুষ ও শিশুদের পেছন কাতার করে দাঁড়াবে। সামনের কাতারে দাঁড়াবে না। [মাওসুআতুল ফিকহ ২০/২৩]

কোনো হিজড়া নামাজের ইমাম হতে পারবে না। এমনকি শুধুমাত্র হিজড়াদের জামাতেও তারা ইমামতি করতে পারবে না। ইমাম হবেন অন্য পুরুষ। [মওসুআতুল ফিকহ, ৬/২০৪] সর্বোপরি কথা হলো, একজন সাধারণ নারীর মতো হিজড়াদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। তবে নামাজ আদায় করতে হবে। বিনা কারণে নামাজ ত্যাগ করা যাবে না বা উচিত হবে না।

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

ক্যারিয়ারে পরিবর্তন চাইছেন? এমবিএ খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার!

আপনি কি এরই মাঝে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ভাবছেন, ক্যারিয়ার জীবনে কী করে একটু ইম্প্রুভমেন্ট করা যায়? তাহলে আপনার জন্যই আমাদের এই প্রতিবেদন।

আপনি যদি পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে এ বিষয়ে অনিশ্চিত হয়ে থাকেন তাহলে এখনই সময় নিজেকে পুনরায় যাচাই করার। বর্তমান চাকরির বাজার অসম্ভব প্রতিযোগিতার একটি ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে নিজেকে নতুনভাবে গড়তে হবে, পরিবর্তন করতে হবে। আপনাকে হতে হবে বুদ্ধিমান, পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে শিখতে হবে। পাশাপাশি যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মনমানসিকতা রাখতে হবে। এ সবকিছুই আপনি শিখতে পারবেন একটি মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(এমবিএ) কোর্সের মাধ্যমে।

এমবিএ (মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)

এটি আন্তার্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মাস্টার ডিগ্রি। এতে-

  • ব্যবসা বিষয়ে তাত্ত্বিক ভিত্তির আলোচনা করা হয়।

  • ইন্টার্নশিপ, গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট এবং আলাাদা প্রজেক্টের বাস্তবিক কিছু সুযোগ থাকে ছাত্রছাত্রীদের ইম্প্রুভ করার জন্য।

  • ম্যানেজমেন্ট এবং নেতৃত্ব বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়।

  • কম্যুনিকেশন, মোটিভেশন এবং নেগোসিয়েশন বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়।

  • ক্যারিয়ারে বৈশ্বিক সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়।

  • স্বাধীন ব্যবসায় যোগ্য করে তোলা হয়।

এমবিএ মূলত একটি প্রফেশনাল কোর্স যা একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে সহায়তা করে। বর্তমান বাংলাদেশে শুধু যে ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীরাই এমবিএ পড়ে থাকেন তা না অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এই কোর্সটি করতে আগ্রহী হন। কেননা এই কোর্সে একটি ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যা যা প্রয়োজন এর সবকিছুই শেখানো হয়।

কোর্স ডিটেইল:

মোটামুটি ২ ধরনের প্রোগ্রামে এমবিএ করানো হয়। একটি রেগুলার এমবিএ যেখানে যেকোনো সাবজেক্ট থেকে স্নাতক করা ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। আরেকটি হলো এক্সিকিউটিভ এমবিএ বা ইএমবিএ। এতে শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। একটি পরিপূর্ণ কোর্সে মোট ৬৪ ক্রেডিট থাকে যার ৬০ ক্রেডিট ২০ টি সাবজেক্টে, ২ ক্রেডিট থিসিসে এবং ২ ক্রেডিট ভাইভাতে থাকে। ইএমবিএ এর জন্য থাকে ৪৫-৫০ ক্রেডিট। এমবিএ তে পড়ানোর বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ফিন্যান্স, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, বিপণন, ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও হোটেল ব্যবস্থাপনাসহ মোট ২০ টা সাবজেক্ট এবং ১ টা থিসিস থাকে। এগুলোর যেকোনো একটিকে মেজর হিসেবে নিয়ে কোর্সটি সম্পন্ন করতে হয়। প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫ টা এবং সর্বনিম্ন ২ টা সাবজেক্ট নেয়া যায়। পুরো কোর্সটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১ বছর ৪ মাস থেকে ২/৩ বছর পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। কোর্স ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

 

‘আমি এখন সাইকেলে আসি’

এদের একজন শারমিন আক্তার কমলগঞ্জ উপজেলার হাজি মো. উস্তোওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি বিদ্যালয় থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চক কবিরাজী গ্রামে। প্রতিদিন বাসে করে স্কুলে আসতে হতো তাকে। বাস না পেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। এতে ভাড়া লাগত ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

শারমিন আক্তার বলে, ‘আগে সাইকেল চালাতে পারতাম না। সাইকেল পাওয়ার পর শিখেছি। এখন আর প্রতিদিন ভাড়া লাগে না। আমি এখন সাইকেলে স্কুলে আসি।’ একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির আরেক ছাত্রী তামান্না জান্নাতও আসে সাইকেলে।

কালীপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মৌমি রানি বৈদ্য থাকে দেওরাছড়া চা-বাগানে। বিদ্যালয় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখন সে-ও বাইসাইকেলে আসা-যাওয়া করে। এ রকম সাইকেলের গতিতে ছোটা ছাত্রীর সংখ্যা কমলগঞ্জে ৮০।

মিরতিঙ্গা চা-বাগানের মতি বারাইকের মেয়ে সাধনা বারাইক পড়ে কালীপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে। এখন মেয়ের সাইকেল হয়েছে। এতে খুব খুশি মতি বারাইক। বলেন, ‘মেয়ে আগে হেঁটে যাইত।’ এ রকম মেয়ে সাইকেল পাওয়ায় খুশি দেওরাছড়া চা-বাগানের আরেক অভিভাবক লক্ষ্মী নারায়ণ কুর্মী। এই অভিভাবকেরা মেয়েদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে এসেছিলেন। এই মেয়েরা মিলনায়তনে আসার আগে সাইকেল শোভাযাত্রা করেছে। এটাও এলাকার মানুষের চোখে একটা নতুন ঘটনা। মাস দু-এক আগে এই সাইকেলগুলো হাতে পেয়েছে তারা।

এই সাইকেলের একটা ইতিহাস আছে। তখন নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হয়ে কমলগঞ্জে যোগ দিয়েছেন মো. মাহমুদুল হক। একদিন উপজেলার একদম দক্ষিণ সীমান্তের চাম্পারায় চা-বাগান এলাকায় গিয়েছেন। দেখেন অনেক মেয়ে দল বেঁধে হেঁটে যাচ্ছে। তিনি গাড়ি থামিয়ে ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলেন, তারা কোথায় পড়ে। বাড়ি কোথায়। জানতে পারলেন, তারা পদ্মা মেমোরিয়াল পাবলিক হাইস্কুলে পড়ে। পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে তারা স্কুলে আসা-যাওয়া করে। তখনই বাইসাইকেলের বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে। তিনি কথা বলেন উপজেলা পরিষদের সব সদস্যের সঙ্গে। সবাই সম্মতি দেন। ৮০টি বাইসাইকেল কেনা হয়। খুঁজে খুঁজে স্কুলের দূরবর্তী ও দরিদ্র পরিবারের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের বাছাই করা হলো। মাস দু-এক আগে এই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সাইকেল। এরা যত দিন স্কুলে আসা-যাওয়া করবে, এই সাইকেল তাদের। পড়া ছেড়ে দিলে, এসএসসি পাস করলে সাইকেল নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দেবে—এটাই শর্ত।

ইউএনও মো. মাহমুদুল হক বলেন, এই বাইসাইকেলের মাধ্যমে অনেকগুলো সূচক একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিদিন বাইসাইকেলে চড়ে আসা-যাওয়া করলে মেয়েরা শারীরিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও এর প্রভাব পড়বে। অনেক ছাত্রীই এই বাইসাইকেল চালানো উপভোগ করছে। অনেক অভিভাবক তাঁদের মেয়েদের বাইসাইকেল কিনে দিচ্ছেন। শিক্ষার অগ্রগতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে।

সেদিন (৭ আগস্ট) এরা সবাই এসেছিল এমন একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে কেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে, কেন বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না, বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণার পর কতটা বাল্যবিবাহ কমেছে—এমন কথাবার্তা হচ্ছিল। ইউএনও বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণার বছরপূর্তিতে আয়োজন করেছিলেন এই পর্যালোচনা সভার। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পদ্মা মেমোরিয়াল পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামা কান্ত সিংহ বলেন, ‘আমার স্কুলে ১২টা সাইকেল পেয়েছি। যারা পেয়েছে তাদের বাড়ি কলাবন, সোনারায় এলাকায়। স্কুল থেকে পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরে। ওরা খুব আনন্দ করে আসে। তাদের উপস্থিতি ভালো। এই উদ্যোগটা চমৎকার। তাদের সাইকেল নিয়ে অন্য মেয়েরা প্র্যাকটিস করে। অন্য অভিভাবকেরাও উৎসাহিত হয়েছেন তাঁদের মেয়েদের সাইকেল কিনে দিতে।’

 

বাড়িতেই তৈরি করুন মুচমুচে চিকেন কাটলেট

উপকরণ

# মুরগীর বুক- ৪ টি (বোন লেস হলে ভালো। তাতে সময় বাঁচবে। বোনলেস না পেলে পাখার ১ ইঞ্চি করে হাড় মাংসের সঙ্গে লাগানো রেখে বাকি হাড় মাংস থেকে তুলে ফেলুন। ১ ইঞ্চি হাড় কাটলেটে বোঁটার মতো থাকবে। বোনলেস হলে এই হাড়টা থাকবে না। তবে সব ক্ষেত্রেই মাংস হালকা হাতে ছুরি দিয়ে কেঁচে নিন ভালো করে। তবে মাংস যেন বেশি ভর্তা না হয়ে যায়।)

# টমেটো সস-২ টেবিল চামচ,

# কাঁচামারিচ বাটা-১ চা চামচ,

# সরষের গুঁড়ো-১ চা চামচ,

# গোলমরিচ গুঁড়ো- আধা চা চামচ,

# আদা বাটা সিকি চা চামচ,

# রসুন বাটা-সিকি চা চামচ,

# লবণ-আন্দাজমতো

# ওয়েসটার সস-২ চা চামচ,

# ময়দা-২ টেবিল চামচ,

# ডিম-ফেটান-১টি,

# টোস্ট বিস্কুটের গুঁড়ো-পরিমাণ মত

# তেল ভাজার জন্য-পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রনালী

– টোস্টের গুঁড়ো বাদে সব মশলা একসাথে মেশান।

– মেশানো মশলায় মুরগী ভালোভাবে মাখিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন।

– প্রত্যেক টুকরো মাংস টোস্টের গুঁড়োয় গড়িয়ে কাটলেটের আকার নিন। টোস্টের গুঁড়োর সাথে খানিকটা কর্ণ ফ্লেক্স গুঁড়ো মিশিয়ে নিলে কাটলেট হবে আরও মুচমুচে।

– গরম তেলে কাটলেট বাদামি করে ভেজে তুলুন।

সসের সঙ্গে পরিবেশন করুন। আর সাথে একটু সালাদ হলে তো কথাই নেই!

 

মেঘের মতো ডিম পোচ

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ডিমের একটি খাবার খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। ‘ক্লাউড এগ’ (মেঘসদৃশ্য ডিম) নামক ডিমের এই পোচ ইনস্টাগ্রামে নতুন ট্রেন্ড হিসেবে সাড়া ফেলেছে।

ক্লাউড এগ দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও সুস্বাদু। অনেকেই ক্লাউড এগ-এর ছবি হ্যাশট্যাগে শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে।

ইউটিউবে বাড়ছে এর রেসিপির ভিউয়ার। খুবই সহজ মেঘসদৃশ্য এই ডিম পোচ বানানো। যখন তখন বানিয়ে নিজে তো খেতে পারেনই, মেহমানদারিতে পরিবেশন করেও প্রশংসায় ভাসতে পারেন। আর খাওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন; লাইকের অভাব হবে না।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এর রেসিপি। উপকরণ হিসেবে লাগবে- ১টি ডিম, শক্ত ঝুরা পনির, এক চিমটি লবণ।

প্রথম একটি বাটিতে ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুম আলাদা করে অন্য একটি বাটিতে রাখুন। এবার ডিমের সাদা অংশ মিক্সারে মিক্স করতে থাকুন। ভালোমতো মিক্স হয়ে গেলে এর মধ্যে শক্ত ঝুরা পনির ও লবণ দিয়ে ভালোমতো নাড়ুন যতক্ষণ না সাদা হালুয়ার মতো দেখায়।

একটি ট্রেতে বেকিং পেপার বিছিয়ে তার মধ্যে সাদা হালুয়া কিছুটা ছড়িয়ে দিয়ে  মাঝখানে গর্তের মতো করুন। এটিকে ওভেনে ৪৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৪-৫ মিনিট রাখুন। এরপর বের করে এনে তার মধ্যে ডিমের কুসুম ছেড়ে দিন। এবার ওভেনে ২ মিনিট রাখলেই হয়ে যাবে ক্লাউড এগ।

 

গরম কিংবা বর্ষায় টিউনিক

এখন ফ্যাশন মানেই ফিউশন। দেশি এবং পাশ্চাত্যের মিশেল রয়েছে বেশিরভাগ পোশাকে। সেই ধারায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের টপস, টিউনিক, শার্ট, স্কার্ট। আর এগুলো মধ্যে টিউনিক অন্যতম।

কাঁধ থেকে দেহের মধ্যভাগের নিচ পর্যন্ত কিংবা হাঁটু সমান লম্বা এই পোশাকের প্রচলন হয়ত এসেছে প্রাচীন রোম থেকে।

পোশাকবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘টিউনিক’ শব্দটা এসেছে রোমান ‘টিউনিকা’ থেকে। সেই সময় রোমান নাগরিকরা সাধারণত উৎসবে ই পোশাক পরতো।

শুধু রোমনরা নয়, প্রাচীন গ্রিসেও টিউনিক ঘরানার পোশাকের প্রচলন ছিল। পরে এই পোশাক মধ্যযুগ পার করে বর্তমান যুগে এসেও ঠেকেছে।

পাশ্চাত্যে প্রথম দিকে এই ধরনের পোশাক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য পরার প্রচলন ছিল। পরে সেটা সাধারণ মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। আর এই উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিউনিক ধাঁচের পোশাকের যে প্রচলন আছে সেটা ‘কুর্তা’ নামেই পরিচিত।

টিউনিক সাধারণত একটু পাতলা ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই গরমে যেমন পরতে আরাম তেমনি বর্ষায় ভিজলেও শুকায় তাড়াতাড়ি। বৃষ্টি আর স্যাঁতস্যাঁতে গরম আবহাওয়ায় পোশাক ব্যবহারে আরামের কথা বিবেচনা করে বেছে নেওয়া যায় সুতি কাপড়, সিল্ক, মসলিন, এন্ডি সিল্ক, জয়শ্রী, এন্ডি কটন, জর্জেট, শিফনসহ অন্যান্য আরামদায়ক কাপড়। কারচুপি, এম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, স্টিচিং নকশা উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তোলে।

হাল ফ্যাশনে টিউনিক সম্পর্কে দেশীয় ব্র্যান্ড ‘লা রিভ’য়ের জ্যেষ্ঠ ডিজাইনার বিপ্লব বিপ্রদাস বলেন, “আসলে ওয়েস্টার্ন স্টাইলের সঙ্গে দেশি ঘরানার ফিউশন করে কিছু টপসের ডিজাইনকেই আমরা টিউনিক বলে থাকি। কুর্তি এবং টিউনিকের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। কুর্তি হল কামিজেরই একটি আলাদা স্টাইল। সেক্ষেত্রে টিউনিক টপস এবং দেশি স্টাইলের ফিউশন। আসলে দেশীয়ভাব বজায় রেখে ওয়েস্টার্ন পোশাকের ধাঁচে তৈরি করা হয় এখানকার টিউনিক।”

কিশোরি এবং তরুণিদের মধ্যেই এই পোশাক বেশি জনপ্রিয়। জিন্স বা পালাজ্জোর সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। চাইলে স্কার্ট বা ধুতি-পায়জামার সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়। ফ্যাশনে ভিন্নতার জন্যই নতুন প্রজন্মের কাছে টিউনিক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া যেকোনো পরিবেশের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। বিপ্লব বলেন, “মূলত নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই টিউনিক ডিজাইন করা হয়। তবে নিজের সঙ্গে মানিয়ে যেকোনো বয়সি নারীরাই টিউনিক পরতে পারেন।”

“টিউনিকের ডিজাইনে ভিন্নতা আনার স্বাধীনতা রয়েছে। কাপড়ের ধরণ বুঝে চাইলেই মন মতো ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা পায়। টিউনিকের নিচের অংশ, গলার স্টাইল, হাতা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নতুনত্ব আনার সুযোগ রয়েছে। হাল ফ্যাশনে মূলত টিউনিকের কাট এবং হাতার স্টাইলে ভিন্নতা আনা হচ্ছে। আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে মূলত পোশাকের কাপড় বাছাই করা হয়।” বললেন বিপ্লব।

তিনি আরও বলেন, “এখন বৃষ্টির কারণে জর্জেট, ভিসকস এবং সিল্ক কাপড় বেছে নেওয়া হচ্ছে টিউনিক তৈরিতে। তবে গরমের মৌসুমে সুতি কাপড়ের তৈরি টিউনিক বেছে নিতে হবে। তাছাড়া ভিসকসের সঙ্গে সুতি বা সিল্কের সঙ্গে সুতির মিশেল কাপড়গুলোও উঠে এসেছে পছন্দের তালিকায়।”

“প্রতিদিনের পোশাক হিসেবে টিউনিক বেশ মানানসই। তাছাড়া স্টাইলের পাশাপাশি পোশাকটি বেশ আরামদায়কও বটে তাই অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই ফিউশন পোশাকট।” মতামত দিলেন এই ডিজাইনার।

যেকোনো পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজের শারীরিক গঠন এবং পোশাকটি পরে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন সেই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। আর সব কিছু মিলে যদি যায় তবে যেকোনো পোশাকে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

 

কেমন হবে বসার ঘরের সাজ

অতিথির বসার জন্য এই ঘরের বিকল্প নেই। পরিবারের সবাই অবসরে বসে টিভি দেখে, বই পড়ে, গান শুনে বা বিশ্রামের জন্য কিছুটা সময় কাটায় এই বসার ঘরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বসার ঘরটি থাকে থাকে খোলা, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো দরজা থাকে না। তাই সাজানোটা নির্ভর করে ঘরের কোন অংশে এর অবস্থান তার ওপর।

বসার ঘর কর্ণারে হলে একপাশে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ডিনার ওয়াগন, ওভেন ইত্যাদি রাখুন। এগুলো সবারই প্রয়োজন। আর একপাশে ইচ্ছামতো বসার ব্যবস্থা করে টিভি রাখুন। লো হাইট সোফা বা ফ্লোরিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি মোড়া বা টুলও রাখতে পারেন। দুই সোফার মাঝে রাখতে পারেন ল্যাম্প শেড। তার ভেতরে ইচ্ছামতো রঙের বাতি। রাতে সেটা জেলে দিলে জমকালো আবহ সৃষ্টি করবে।

বাসার মাঝখানে হলে দুই পাশে কম উচ্চতার সোফা এবং এক কোণে টিভি রাখতে পারেন। চাইলে কার্পেট, শতরঞ্জি বা শীতলপাটি দিয়ে ফ্লোরিংও করতে পারেন। এর ওপর ছোট-বড় কয়েকটি রঙিন কুশন দিন। সঙ্গে রাখুন কিছু ইনডোর প্লান্ট।

ঘরটি একটু বড় হলে দেয়ালজুড়ে একটা বইয়ের তাক বানাতে পারেন। টিভি দেখার পাশাপাশি অবসরে বই পড়ার চমৎকার জায়গা হতে পারে এটি। ঘরে বাচ্চা থাকলে একটি কর্নার সাজাতে পারেন তার জন্য। ছোট আকারে তৈরি করুন একটি খেলাঘর, সেখানে রাখুন পুতুল, গাড়ি, ছোট একটি টেবিল, ছবি আকার সরঞ্জাম ইত্যাদি। সামনের দেয়লটি সাজাতে পারেন বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র মিকি মাউস, সিনড্রেলা, ডোরেমন এবং অ্যানিমেশন ছবি দিয়ে।

দেয়ালে শোপিস র্যাকও রাখতে পারেন। এখানে মনের মতো ইনডোর প্লান্ট আর শোপিস শোভা পেতে পারে। সামর্থের মধ্যে সিলিংএ দিতে পারেন ঝাড় বাতিও। কম খরচে দিতে চাইলে রঙিন হ্যাংগিং বাতি দিতে পারেন। বসার ঘরে ঢোকার দরজায় থাকতে পারে নানা ডিজাইনের দোরঘণ্টি।

বসার ঘরের দেয়ালও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেয়াল সাজাতে পারেন পারিবারিক ছবির ফ্রেম দিয়ে। তবে তা অবশ্যই হতে হবে সবার সম্মিলিত হাসি মাখা মুহূর্তের। পারিবারিক ছবি রাখতে না চাইলে কোনো পেইন্টিং, সিনারি বা ফ্লোরাল ফ্রেম দিয়ে সাজান।

 

নারী মূলায়ন : সেকাল-একাল

`নারী’ কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং সে একটি চাহিদা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ- স্থবির। মহান আল্লাহ নারীকে প্রকৃতির অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সভ্যতা বিনির্মানে যুগে যুগে পুরুষের পাশাপাশি নারীও অবদান রেখে এসেছে সমানাংশে। সভ্যতার ইতিহাস আমাদেরকে বলে, কোনো সভ্যতার উর্ধ্বগতি বা অধোগতি নির্ভর করে নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের উপরে। মহান আল্লাহ নারীকে প্রকৃতির অপরিহার্য অংগ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
 
১। বিভিন্ন ধর্ম ও প্রাচীন সভ্যতায় নারীর মূল্যায়ন
প্রাচীন সভ্যতা এবং ধর্মগুলো নারীদের ব্যাপারে বিরুপ মনোভাব দেখিয়েছে। সেই সমাজে নারী স্বাধীন ছিলো না। নারী ছিলো পুরুষের দাসী। নারীর মৌলিক মানবিক অধিকার হরণ করাই ছিলো সেই সমাজের বৈশিষ্ট্য।
ইহুদী ধর্ম নারীকে পুরুষের প্রতারক বলে অভিহিত করেছে। তাদের সমাজে নারীদেরকে চাকরানীর মতো মনে করা হতো।
খ্রীষ্ট ধর্ম নারীদের ব্যাপারে নিকৃষ্টতম অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাইবেল বলছে: প্রথম পাপের সমস্ত দোষ মাতা হাওয়ার। আর যেহেতু নারী আদি পাপের উৎস , মানুষের জন্মগত পাপের কারণ , তাই সব র্ভৎসনা অবস্থা ও ঘৃণার পাত্র সেই।
প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে, মৃত্যু , নরক, বিষ , সর্প এবং আগুন এর কোনটিই নারী অপেক্ষা খারাপ নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে নারী হচ্ছে সকল অসৎ প্রলোভনের ফাঁদ।
বিভিন্ন সভ্যতায় নারীর মূল্যায়নের চিত্রগুলো খুবই নীচ, হীন এব লজ্জাকর।
গ্রীসের জাতীয় উন্নয়নের প্রাক্কালে নারীর অবস্থা ছিলো শোচনীয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে রোম নগরীতে নর সমাজ তাদের Council of the wise সভায় সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, Women has no soul নারীর কোন আত্মা নেই। ৫৮৭ সালে ফ্রান্সে এক সভার সভাদষগণ মহিলাদের মর্যাদা নিরুপনের সময় এভাবে তাদের মত প্রকাশ করেন whether a women could truly be considered a human being or not.
নারীদের মর্যাদা চরমভাবে ভুলন্ঠিত হয়েছে সভ্যতার দাবীদার ইংল্যান্ডে। ৮ম হেনরী মেয়েদের বাইবেল পড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মধ্যযুগের ক্যাথলিক চার্চের গুরুগণ মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতো। ১৯৬৪ সালের আগে অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েদের সমান অধিকার ছিলোনা। ১৮৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত মহিলারা ইংল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে গণ্য হতোনা। ১৮৮২ সালের আগে ইংলিশ মহিলাদের ব্যক্তিগত অধিকার বলে কিছু ছিলো না।
 
২. পাশ্চাত্য সমাজে নারীদের মূল্যায়ন
পাশ্চাত্য সমাজে নারী ছিলো গৃহকোণে আবদ্ধ এবং পুরুষের সেবাদাসী। সব রকমের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণরুপে বঞ্চিত রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। নারী স্বাধীনতার জিগির সেই সমাজ থেকেই উঠেছে। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারী পুরুষের যে সম্পর্ক আমরা লক্ষ্য করি তা বেশ কয়েকটি বিপ্লবের ফল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিল্পব নারীকে পুরুষের সান্নিধ্যে আসার বিরাট সুযোগ করে দেয়।
শিল্প বিপ্লবের সমসাময়িককালে সংঘটিত ফরাসী বিপ্লব (১৭৮৯ খৃ.) নর- নারীকে দেয় অসীম ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই দর্শন ক্রমশ মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে। ব্যক্তি স্বাধীনতার এই দর্শনকে জনপ্রিয় করে তুললো সাহিত্য জগতের যৌন- আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূচনা হয় ফ্রান্সে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফরাসী ঔপন্যাসিক George sand এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই নারী তার উপন্যাসকে অবাধ যৌনতা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এরপর ঘটলো আরেক বিপ্লব-মিডিয়ার বিপ্লব। আবিষ্কৃত হলো সিনেমা এবং টেলিভিশন। নগ্নতা এবং যৌনচার ক্রমশ গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চলতে লাগলো। এভাবে চিত্র দর্শন নাটক, সিনেমা , বিজ্ঞাপন, প্রভূতির অবিরাম প্রচেষ্টায় নারী পুরুষের মধ্যে সমস্ত ব্যবধান দূর হয়ে গেল। আর এ পথ ধরে সমাজে প্রবেশ করলো অসংখ্য সমস্যা।
কয়েকটি বিপ্লব ও ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্বব্যপী রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের ফলে পাশ্চাত্য সমাজে নারী গৃহ অংশের বাইরে চলে আসে নারীরা পুরুষের সমান অধিকারের দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। পুরুষের আরোপিত বাধা-নিষেধের সমস্ত বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করে তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করতে চায়। পুরুষদের কোনো প্রকার প্রাধান্য বিস্তার তারা চায়না। আর পুরুষরাও তাদের হাজার হাজার বছরের প্রাধান্য এক নিমিষে ধুলিস্মাত করতে রাজি হয়না। এভাবে পাশ্চাত্য সমাজ ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে প্রসারিত হতে থাকে। বিগত তিনশ বছর থেকে পাশ্চাত্য সভ্যতা সারা বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করেছে। সর্বত্র প্রায় তার একাচ্ছত্ব রাজত্ব। পাশ্চাত্য সমাজে নারী স্বাধীনতার জিগির তোলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নারী তার অধিকার লাভ করতে পারেনি। নারী তার পৃথক স্বাধীন সত্তা নিয়ে সমাজে নারী হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেনি। পুরুষের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সে আজ কক্ষচ্যুত। তার নারীত্ব আজ লুন্ঠিত দ্রব্য।
 
৩. মুসলিম সমাজে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঢেউ
প্রাচ্যের মুসলিম সমাজেও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঢেউ লেগেছে। পাশ্চাত্যের শত বছরে শাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাচ্যের মুসলিম সমাজের মূল্যবোধ পাল্টে দিয়েছে। মুসলিম সমাজের মেয়েরাও সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নিজেদেরকে অসহায় ভাবছে। তারাও পাশ্চাত্যে নারীর মতো পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন কেটে বাইরে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, গত হাজার বছরে মুসলিম সমাজ ইসলামের সামাজিক বিধান থেকে অনে দূরে সরে এসেছে। যার ফলে আমাদের দেশের মুসলিম মেয়েরা সামাজিক অনিরাপত্তা নির্যাতন এবং অর্থনৈতিক অবিচারের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে অমুসলিম মেয়েদের সমপর্যায়ভুক্ত দেখতে পাচ্ছে। রাসূল সা. ও সাহাবীদের যুগে মুসলিম মেয়েরা যে সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করেছিলো এ অধিকারগুলো পুন:প্রতিষ্ঠিত হলেই মুসলিম নারীদের অধিকারহীনতার অনুভূতির বিলুপ্তি ঘটবে। তারা তাদের পূর্ণ মানবিক অংশ ও সামাজিক মর্যাদা লাভে সক্ষম হবে। এইতো মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যে মুসলিম মেয়েদের একটি বিরাট অংশ প্রকাশ্য রাজপথে নেমে পড়েছে। তারা চায় তাদের অধিকার । কিন্তু ইসলাম নারীদের কি অধিকার দিয়েছে সে সম্পর্কে তারা সজাগ নয়।
৪. ইসলামে নারীর মর্যাদা
ইসলামে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার অধিকারী। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
“তোমরা পুরুষ হও বা নারী, আমি তোমাদের কারো কাজ বিনষ্ট করবো না।” (সূরা ৩: ১৯৫)
নারীর প্রকৃতিগত অবস্থানকে সামনে রেখে ইসলাম তার দায়-দায়িত্বের পারিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। যা নারীর অবমূল্যায়ন বা পরাধীনতা নয়, বরং তার জন্যে মর্যাদা স্বরুপ। ইসলাম নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে তার সঠিক মূল্যায়নই নারীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। ইসলামে নারীর মর্যাদা সংক্ষেপে নিম্নরুপ:
মা হিসাবে মর্যাদা: রাসূল স. কে একজন জিঞ্জাসা করলেন আমার সর্বাপেক্ষা সদ্ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য কে? তিনি বললেন তোমার মা। লোকটি জানতে চাইলো, তারপর কে ? রাসূল সা: বললেন তোমার মা। লোকটি জানতে চাইলো, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার জানত চাইলো তারপর কে? তিনি বললেন তোমার পিতা। (সহীহ বুখারী)
এভাবে ইসলামের পিতার চেয়ে মাতাকে সম্মান- মর্যাদার দিক দিয়ে তিনগুন বেশি মর্যাদার অধিকারী করেছেন।
কন্যা শিশুর মর্যাদা: যে কন্যা সন্তানের ভাগ্যে জীবন্ত প্রোথিত হওয়া অনিবার্য ছিল তার সর্ম্পকে ইসলামের ঘোষণা –
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত ,রাসূল সা. বলেছেন- “যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তানকে কিংবা অনুরূপ তিনটি বোনকে লালন-পালন করেছে, শিষ্ঠাচার শিক্ষা দিয়েছে, স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত এদের সাথে সদয় ব্যবহার করেছে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
স্ত্রী হিসাবে মর্যাদা : বিবাহের পর স্ত্রীর সকল ধরণের দায়দায়িত্ব পুরুষের উপর চাপিয়ে ইসলাম স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। স্বামীর ব্যাপারে স্ত্রীর মূল্যায়নকে সর্বোচ্চ মান প্রদান করে ইসলাম মূলত: নারীকে সর্বোত্তম মর্যাদা দান করা হয়েছে। রাসূল সা. বলেছেন- তোমাদেরকে মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।
 
৫. নারীর মূল্যায়ন : বর্তমান অবস্থা
নারীর অবস্থান উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণীত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন আইন, বিভিন্ন পদক্ষেপ। কিন্তু তবুও পরিবর্তন ঘটছেনা নারীর অবস্থার। তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়, বড় বিপর্যস্ত। বর্তমান সময়েও ঘটেছে নারী নির্যাতনের নানা ধরনের ঘটনা কখনোবা এর ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সব ধরনের নির্যাতনের সোচ্চার প্রতিবাদ শোনা বা দেখা যায়না। কিছু ঘটনার প্রতিবাদ হলেও তা এক সময় আবার থেমে যায়। মিডিয়ার দৃষ্টিও চলে যায় অন্যদিকে। শেষ পর্যন্ত নির্যাতিত নারীকে একাই তার কষ্ট দিয়ে থাকতে হচ্ছে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনোবা বোন, কন্যা হিসাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় প্রতিনিয়তই। এই নির্যাতন শুধু পুরুষ দ্বারাই নয় নারী কর্তৃক ও হচ্ছে। নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকাংশ পরিবারগুলোতেই, অনুপস্থিত।
যৌতুক প্রথা সমাজে একটি সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশীয় আইন ১৯৮০ ও ২০০০ সালে এ নির্যাতন প্রতিরোধে আইন পাশ হলেও মিলছেনা প্রতিকার।
তালাক নারী নির্যাতনের রেকর্ডে যোগ করেছে আরেকটি নিমর্মতা। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে রাগের বশে তালাক দেয়ার ঘটনা ইদানিং খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পারিবারিক ক্ষেত্রে অনেক সময়ই নারীর অবদান ও কষ্টকে খাটো করে দেখা হয়। অনেক পরিবারে নারীদের নূন্যতম খরচের স্বাধীনতাও থাকেনা। চাকুরিজীবি স্ত্রী থেকে স্বামী জোর করে বেতনের টাকাটা নিয়ে নেয়া এটাও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা বয়সী নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের। বাস, ট্রেন, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়। বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা মানসিক পীড়ন থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন এমনকি নিজেদের জীবনেও ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নারী আজ বৈষম্যর শিকার। নারীদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে। নারীদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
 
৬. আধুনিক বিশ্বে নারী সমস্যার ভয়াবহ চিত্র :
ইংল্যান্ডে প্রতি ৪ জনে তিন জন মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বেশির ভাগ নির্যাতনকারী হয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা সহকর্মী।
ভারতে নারী ভ্রুণ হত্যা এবং নারী সন্তান হত্যার জন্য, বিগত শতকে ৫০ মিলিয়ন নারী নিখোঁজ রয়েছ্। ২০০০ সালে পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে ১০০০ নারীকে খুন বা করা হয়েছে।
বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কমপক্ষে ১২.৫ লাখ অবিবাহিত কিশোরী গর্ভধারণ করে।
সুসভ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি হাজারে ৩০৭ জন নারী সহকর্মীদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। সেখানে প্রতি মিনিটে একজন নারী হারায় তার সম্ভ্রম।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ফ্রান্সে ২৪০টিরও বেশি সেক্সক্লাব রয়েছে।
নারী দিবসের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়কারী চীনও কন্যা সন্তান রফতানি করে আয় করে ১৫০ কোটি ডলার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০-১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোর আত্মহত্যার চিত্র শতকরা ৭৬ ভাগ।
অষ্ট্রিয়ায় কর্মস্থলে শতকরা ৮০ জনের মত মহিলা জীবনে একবার কিংবা একাধিকবার বিভিন্ন মাত্রার যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
৭. বাংলাদেশে নারীর অবস্থা
সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভূমিকা রাখলেও নারীর প্রতি প্রায় সব ধরনের সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমির চারপাশ।
২০ মার্চ ২০১৬ কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে আবৃত কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায়। এ ঘটনা দেশবাসীকে করে তুলেছিল ক্ষুব্ধ ও স্তব্ধ। তনু আজ একটি ইতিহাস যা সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহে তলিয়ে গেছে।
ভায়োলেন্স এগেইন্সট উইমেন সার্ভে ২০১৫ শীর্ষক জরিপে প্রকাশিত হয়েছে, দেশে বর্তমানে ৮০ শতাংশ বিবাহিত নারীই নির্যাতনের শিকার এবং দেন মোহর পান মাত্র ১২ শতাংশ নারী।
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে ধর্ষনের ঘটনা বাড়ছে। ২০১৫ সালের ১০৬৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষনের মতো বর্বরোচিত সহিংসতার শিকার হয়েছে যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩৫% বেশী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিস কেন্দ্র এবং আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের ২০১৫ সালের নারী নির্যাতনের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় :
o ধর্ষনের শিকার- ৭৪২
o ধর্ষনের পর হত্যার শিকার- ৮২
o যৌন নির্যাতনের শিকার-৫৯
o এসিড সহিংসতার শিকার- ৩৫
o অপহরণ- ৯২
o যৌতুকের কারণে হত্যা- ১৯২
o যৌতুকের কারণে নির্যাতিত- ১৭৩
o গৃহ পরিচারিকা নির্যাতন- ৩৬
o আত্মহত্যা- ২৯৮
o উত্যক্তের শিকার- ৩১৯
o শ্লীলতাহানির শিকার- ৯৩
 
৮. নারীর অবমূল্যায়নের নেপথ্যের কারণ :
কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব, কেন হচ্ছে এই নির্যাতন, তা পরিপূর্ণভাবে নির্ণয়ের চেষ্টা করা হচ্ছেনা। তাই নির্যাতন ক্রমাগত বেড়েই চলছে। মূলত যে কারণগুলো নারীর মূল্যায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলো নি¤œরূপ:
o মহান আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে অসচেতনতা।
o সমাজে নারীর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে ব্যর্থতা।
o নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা কাঠামো।
o অশ্লীল লেখনী, অশ্লীল মুভি ও পর্ণোগ্রাফির সহজলভ্যতা ।
o তথাকথিত নারী স্বাধীনতা ও অযৌক্তিক সমানাধিকার দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েকগুন বোঝা চাপিয়ে দেয়া।
o নিজেদের সম্মান মর্যাদার প্রতি নারীদেরই উদাসীনতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।
o নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগে উদাসীনতা।
তাই নারী মুক্তি আজ যুগের অনিবার্য দাবী। আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন। প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন। প্রয়োজন একটি সমন্বিত কর্মসূচি ও তৎপরতা, যা রোধ করতে পারবে নারী নির্যাতন। নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগের ম্যাধমে নির্যাতন রোধ করা সম্ভব।
 
আর সর্বোপরি নিজেদের সম্মান মর্যাদার প্রতি নারীদের দৃঢ় সচেতনতা আর বলিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসই তাদেরকে নিয়ে যেতে পারবে মুক্তির দ্বারপ্রান্তে।
 
তথ্যসূত্র:
১। আবদুল হালীম আবু শুক্কাহ: রাসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা।
২। ড. মুস্তাফা আস সিবায়ী: ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী।
৩। নারী নির্যাতন বিষয়ক ওয়েবসাইন ও অনলাইন পত্রিকা।
 
লেখক: সাজেদা হোমায়রা

 

ঈদের চমক নিয়ে আসছেন অপূর্ব-মম

জাফরিন সাদিয়ার রচনায় ও রুবেল হাসানের পরিচালনায় গত ঈদ উল ফিতর এ ‘খুঁজি তোমায়’ নাটকটির জনপ্রিয়তা ও দর্শক পায়। এই জুটি এবার আসছেন একটি রোমান্টিক টেলেফিল্ম ‘ওয়ানস’ নিয়ে।

ভালোবাসার গল্পে দেখা যাবে মফস্বলের সহজ-সরল মেয়ে অর্শি স্থানীয় মাস্তানদের হাতে নির্যাতিত হয়। বাবা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শহরে তার বোনের বাসায় নিয়ে আসে। ফুপুর বাসায় থেকেই অর্শি পড়াশোনা করে। পরিচয় হয় শহরের অতি স্মার্ট ও সুদর্শন জারিফের সাথে।

জারিফ সহজ-সরল অর্শিকে স্বপ্ন দেখায়। এক সময় প্রেমে পড়ে যায় অর্শি। এভাবে গল্প এগিয়ে যায়। গল্পের ক্লাইম্যাক্স সম্পর্কে জানতে চাইলে জাফরিন সাদিয়া বলেন, ক্লাইম্যাক্সটি দর্শকদের জন্য একটি চমক। টেলিফিল্মটিতে অর্শির চরিত্রে অভিনয় করছেন জাকিয়া বারি মম ও জারিফের চরিত্রে থাকছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব।

টেলিফিল্মে আরও অভিনয়ে করেছেন খালেকুজ্জামান, শারমীন আঁখি, রাজিয়া রশিদ, শিখা খান, মাহদী হাসান পিয়াল, সাইদুর এমন প্রমুখ।

জাফরিন সাদিয়া তার নাটকের প্রেজেন্টেশন ও ওয়েব পাবলিসিটিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন দিয়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেন। যা নাটক প্রচারের আগেই দর্শককে আকর্ষিত করে।

এবার ওয়ানস টেলিফিল্মটির জন্য ৩টি টিসার ইউটিউবে ইতিমধ্যে ছাড়া হয়েছে, দর্শকের আগ্রহ ও আকর্ষণ কাড়তে টেলিফিল্মটির এই আয়োজন।

ভালোবাসার এই টেলিফিল্মটিতে সংগীতায়োজন করেছেন অরূপ। জাফরিন সাদিয়ার কথায় কণ্ঠ দিয়েছেন রাফি আহমেদ ও আদনীন মৌরিন।

টেলিফিল্মটির নির্বাহী প্রযোজক মাসুদ উল হাসান। প্রযোজনা করেছেন সাব্বির চৌধুরী, রাসেল আলম ও জাফরিন সাদিয়া। আসছে ঈদ উল আজহায় ‘ওয়ানস’ টেলিছবিটি প্রচার হবে বাংলা টিভিতে।

 

হজ সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে প্রশ্নোত্তর

হজ মুসলিম উম্মাহর সর্বোত্তম ইবাদত। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্ব প্রথম শর্তই হলো আর্থিকভাবে সামর্থ থাকতে হবে। অতঃপর শারীরিক সক্ষমতা লাগবে। আর মানসিক প্রস্তুতিও হজের জন্য আবশ্যক বিষয়।

হজ হলো আল্লাহ তাআলা কিছু অনন্য নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার জন্য পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমার ওই সব স্থানে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া এবং যথাযথ মন নিয়ে পালন করার নাম।

ওই সব নিদর্শন তারই হুকুম পালনকারী প্রিয় বান্দা নবি-রাসুলদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি স্মারক বা ঘটনা। যে ঘটনাগুলো আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দ হয়ে যায়। আর তার পরিদর্শনকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করেন।

হজের নিদর্শন সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো-

>> পবিত্র কাবা শরিফ কে তৈরি করেছেন?
উত্তর : হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালাম পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। কাবার স্মৃতি চিহ্ন মুছে যাওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি হজরত ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে কাবার জন্য নির্ধারিত স্থানেই কাবা নির্মাণ করেন।

>> পবিত্র কাবা শরিফের চারদিকে তাওয়াফ করতে কোন দিককে নির্দেশ করা হয়েছে?
উত্তর : কাবা শরিফকে বাম দিকে তাওয়াফ করতে হবে। সহজে বুঝার সুন্দর উপমা হলো- ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে হবে।

>> হাজরে আসওয়াদ কী?
উত্তর : এটি একটি পাথর। যা প্রিয়নবি বাইতুল্লাহর দক্ষিণ-পূর্ব কোনো নিজ হাতে স্থাপন করেছেন। এখান থেকেই বাইতুল্লাহর দরজার দিকে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

>> মাকামে ইবরাহিম কী?
উত্তর : একটি পাথরের নাম ‘মাকামে ইবরাহিম’। এ পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন। বাইতুল্লাহ নির্মাণে যা লিফটের কাজ করেছিল। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী এ পাথরটি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নিয়ে ওপরে ওঠেছিল এবং নিচে নেমেছিল।

>> মুলতাজেম কী?
উত্তর : হাজরে আসওয়াদ ও বাইতুল্লাহর দরজার মধ্যবর্তী কাবা শরিফের প্রাচীরই হলো মুলতাজেম। যেখানে বুক লাগিয়ে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করে।

>> হাতিমে কাবা কী?
উত্তর : হাতিমে কাবা হলো রুকনে শামি ও রুকনে ইরাকির মধ্যবর্তী গোলাকার আকৃতির স্থান। যা বাইতুল্লাহর অংশ।

>> পানি সন্ধানে কে সাফা ও মারওয়ায় দৌড়েছিলেন?
উত্তর : হজরত হাজেরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর সন্তান হজরত ইসমাইলের জন্য পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়েদৌড়ি করেছিলেন।

>> ‘ঝমঝম’ অর্থ কী?
উত্তর : ঝমঝম শব্দের অর্থ হলো বন্ধ বা থামা। হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ শব্দটি ব্যবহার করে বলেছিলেন ‘ঝমঝম’। যখন পানির খোঁজে বিবি হাজেরা দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। তখন এসে দেখেন শিশু ইসমাইলের পায়ের তলা থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। তখন তিনি পানি প্রবাহিত হওয়া বন্ধের জন্য বলেন, ‘ঝমঝম’।

>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কোন ছেলে নিজেকে আল্লাহর জন্য কুরবানিতে প্রস্তুত ছিলেন?
উত্তর : হজর ইসমাইল আলাইহিস সালাম। যার উপাধি ছিল ‘জবিহুল্লাহ’।

>> হজ সম্পর্কিত অনেক আয়াত সম্বলিত একটি সুরা রয়েছে কুরআনে। তার নাম কি?
উত্তর : সুরা হজ। কুরআনুল কারিমের ১৭তম পারায় রয়েছে এ সুরাটি। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮। যেখানে হজ সম্পর্কিত অনেক আয়াত রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সুরায়ও হজের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্নভাবে হজের আলোচনা রয়েছে।

>> হজের কার্যক্রম শুরু হয় কত তারিখ থেকে?
উত্তর : ৮ জিলহজ থেকে হজ শুরু হয়। মূল হজ হলো ৯ তারিখ। আর আল্লাহ তাআলা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজকে হজের মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

>> আরাফাতের ময়দানে কত তারিখ উপস্থিত হতে হয়?
উত্তর : ৯ জিলহজ দ্বিপ্রহরের আগে। দ্বিপ্রহরের পর থেকে সুর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হলো হজ।

>> আরাফাতের ময়দানে ৯ তারিখ দিন কাটানোর পর হজযাত্রীরা রাত কাটাবেন কোথায়?
উত্তর : মুযদালিফায়। ৯ তারিখ সুর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান থেকে মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হবে হজযাত্রীরা। খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করবেন হজযাত্রীরা।

সেখানে রাত যাপন করা সুন্নাত। আর ফজরের নামাজের পর থেকে সুর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত এ মুহূর্তকাল সময় অবস্থান করা ওয়াজিব।

>> ইহরামের সময় পুরুষরা কি মাথায় কিছু ব্যবহার করবে?
উত্তর : না, পুরুষদের জন্য ইহরামের সময় মাথায় কিছু ব্যবহার করা যাবে না। কোনো টুপি, কাপড় বা পাগড়ি কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না।

>> কোন স্থানকে তাবুর নগরী বলা হয়?
উত্তর : মিনাকে তাবুর নগরী বলা হয়।

>> হজের সময় তীর্থযাত্রীরা সবচেয়ে বেশি কী পড়ে করে?
উত্তর : হজের সময় তীর্থ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি তালবিয়া পড়ে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে অবশ্যেই তালবিয়া পড়ার মাধ্যমেই ইহরাম বাঁধার কাজ সমাপ্ত করতে হবে। তালবিয়াই হলো আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার ঘোষণা।

যেভাবে দুনিয়ার শ্রেণিকক্ষে ছাত্ররা শিক্ষকের নিকট হাজিরার সময় ‘ইয়েস স্যার’, উপস্থিত, লাব্বাইক; ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে।

আল্লাহ তাআলার নিকট তালবিয়া পড়া হলো সে রকমই।

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।’

‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির; আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিঃসন্দেহে সব প্রসংশা এবং নেয়ামত রাজি আপনার এবং পৃথিবীর একচ্ছত্র ক্ষমতাও আপনার; আপনার কোনো অংশীদার নেই।’

>> পাথর নিক্ষেপের জন্য পিলার বা ওয়াল কতটি? এগুলোর নাম কি?
উত্তর : পাথর নিক্ষেপের জন্য ৩টি পিলার বা ওয়াল রয়েছে। এগুলোকে জামারাত বা পাথর নিক্ষেপের স্থান বলা হয়।

হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানির সময় শয়তান প্ররোচনা দিয়েছিল আর তখন পিতা ও পুত্র শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেছিল। সে স্মৃতি স্মরণেই শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

-জামারাহ উলা বা জামারাহ সোগরা (ছোট জামারাহ)
– জামারাহ ওয়াস্তা বা মধ্যম জামারাহ
– জামারাহ আকাবা বা জামারাহ কুবরা (বড় জামারাহ)

>> কোনটিকে হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
উত্তর : আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া। প্রিয়নবি বলেছেন- ‘আরাফাই হজ।’ যারা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পারবে না, তাদের হজ হবে না।

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতবার হজ ও ওমরা করেছেন?
উত্তর : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরিতে ১বার হজ করেছেন।

আর সে হজেই তিনি উম্মতের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি বিদায় হজ নামে পরিচিত।

আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪বার ওমরা পালন করেছেন-
ওমরা ১ : ৬ষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর। যদিও সে বছর তিনি ওমরা পালনে কাবা যেতে পারেননি তথাপিও তিনি মাথা মুণ্ডন করেছেন এবং আল্লাহর নামে পশু উৎসর্গ করেছেন। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় তিনি পরবর্তী বছর ওমরা পালন করবেন।
ওমরা ২ : হুদায়বিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ৭ম হিজরিতে ওমরা পালন করেন।
ওমরা ৩ : হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফেরার তিনি ৮ম হিজরিতে ওমরা পালন করেন।
ওমরা ৪ : ১০ম হিজরিতে হজ সময় তিনি ওমরা পালন করেছিলেন।

 

সফল হতে চাইলে এ ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চলুন…

সফল হতে চাইলে সবাইকে খুশি রেখে চলতে পারবেন না আপনি। যতো বেশি আপনি কাউকে পাত্তা দিবেন, ততো কম আপনি পাত্তা পাবেন। এসব মানুষকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্নের দিকে মনোযোগ দিন। বিষাক্ত মানুষ থেকে দূরে থাকুন। অনেক দেরি কিংবা অনেক দ্রুত বলতে কিছু নেই। আপনার ইচ্ছাশক্তি অনুযায়ী কাজ করুন। কিন্তু দরকারী ব্যাপার থেকে কিভাবে অদরকারী ব্যাপার আলাদা করবেন? আমরা একটি তালিকা তৈরি করেছি যেন আপনি সহজেই সাফল্যের রাস্তা খুঁজে পেতে পারেন। আজ আমাদের প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য হলো-  সফল হওয়ার জন্য কোন ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চলবেন। চলুন জেনে আসা যাক-

অন্য মানুষের বিচার

এক সময় পুরো পৃথিবী নীরব হয়ে যাবে, তখন শুধুমাত্র আপনি নিজের বিবেককে শুনতে পাবেন। সেটিই আপনাকে জানান দিবে যে আদতে আপনার কী করা উচিত। সমস্যা হচ্ছে, আমরা প্রায়শই অন্য মানুষের মতামতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বসি যার দরুণ নিজের ইচ্ছা ও পছন্দের কথাই ভুলে যাই। তবে সফল হতে হলে এ অভ্যাস বদলাতে হবে। আপনার সফলতার জন্য আপনার কী দরকার, তা আপনি ছাড়া অন্য কেউ বুঝবেনা কখনোই।

অতীতের পুরনো স্মৃতিচারণ

অতীতে কি হয়েছে না হয়েছে তা হাজার চেষ্টা করলেও আপনি বদলাতে পারবেন না। তার দরকারও নেই। আপনি বরং নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যান। যে দিন চলে গিয়েছে তার কথা ভেবে সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয় না।

কঠোর পরিশ্রমের পেছনের বেদনা

পৃথিবীতে দুই ধরনের বেদনা আছে। একটি হলো, যেটি আপনাকে কষ্ট দেয় এবং অপরটি হলো যেটি আপনাকে শিক্ষা দেয়। জীবনে যা যা কষ্ট আপনি পাছেন, সবগুলো থেকেই যদি শিক্ষা গ্রহণ করেন তবে আপনিই জয়ী হবেন। কোন কিছু অর্জন করতে হলে আপনাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে, এটিই স্বাভাবিক। মনে রাখবেন, দিন শেষে কাজই কথা বলবে। সুতরাং, আপনি আপনার মতন কাজ করে যান।

হ্যাঁ এবং না বলা

আপনার নিজেরই এটা ঠিক করতে হবে যে কখন আপনি হ্যাঁ বলবেন এবং কখন না বলবেন। একেবারেই খুব বেশি চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন। নিজের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিন। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে করতে নিজেকে ভুলে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এতে আপনার কোন লাভ হবে না।

অধৈর্যশীল চিন্তা

কঠোর পরিশ্রম করার সময় ধৈর্য ধারণ করা শিখুন। যতদূরই আপনি যান না কেন ধৈর্যকে আপনার সাথে রাখুন। অধৈর্যশীল চিন্তা আপনার সাফল্যের শিখরে পৌছতে বাধা সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে হয়তো ফল না পেয়ে কিংবা দেরিতে পেয়ে আপনি কষ্ট পাবেন কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

অনিয়ন্ত্রিত বিষয়সমূহ

কখনো কোন কাজ জোর করে করাতে চাইবেন না বরং সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে শিখুন।  যা হবার তা হবেই। সমস্যাগুলোর কথা না ভেবে সমাধানের কথা চিন্তা করুন। প্রত্যেকটি পরিবর্তনের পেছনেই উদ্দেশ্য থাকে। প্রথম প্রথম হয়তো আপনার খুব কষ্ট হবে কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

প্রতিদিনের ছোটখাটো ব্যর্থতা

খারাপ দিন আসেই মানুষের জীবনে। কিন্তু সেটি কখনো থেমে থাকে না। মনে রাখবেন, আপনার ভুল থেকেই অনেক কিছু শেখার আছে। সুতরাং কোন ভুল কিংবা ব্যর্থতাকে সীমাবদ্ধতা না ভেবে আশীর্বাদ মনে করুন।

বিউটি স্ট্যান্ডার্ড

আপাতদৃষ্টিতে যেসব বিষয় আপনি সৌন্দর্য হিসেবে ধরে এসেছিলেন, সেগুলো বদলানোর সময় এসেছে এবার। ধবধবে সাদার দৃষ্টিকোণ থেকে এবার বের হয়ে বাদামী সৌন্দর্যকে আপন করে নিন।

ভয়-ভীতি

জীবন মানেই ঝুঁকি। আপনি যদি ঝুঁকি না নেন তবে কখনোই সামনে এগোতে পারবেন না। ভয়গুলোর সাথে মোকাবেলা করুন। থেমে থাকলে চলবে না।মনে রাখবেন, জীবন তার আপন গতিতেই এগিয়ে চলে।

মানসিক শঙ্কা

কষ্টের দিনগুলোতেও নিজের উপর ভরসা রাখুন। ভুল মানুষই করে। কেউ না জেনে ভুল করে, আবার কেউ কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ভুল করে। বিশ্বাস রাখুন, জীবন একদিন আপনাকে উপহার দিবেই। এই ভরসাই আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

রক্তের ছোপ আর গুলির চিহ্নের জাদুঘরে

যে সিঁড়িতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু পড়ে ছিলেন, সেখানে কাচের এপারে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি আমরা। বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজিলাতুন্নেছার রক্তমাখা পোশাক দেখে শিউরে ওঠেন ফারজানা, মলি ও শাহনাজ। এমন মৃত্যু কি প্রাপ্য ছিল জাতির জনকের? তিনজনই বলে ওঠেন একসঙ্গে।

টিপটিপ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল সকাল এসে হাজির তাঁরা তিনজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ একটি মিল আছে—তাঁরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকেন। ফারজানা আকতার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর করছেন, মলি হালদার দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে ও শাহনাজ কবীর ব্যবস্থাপনা বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ফারজানা ও মলি হলের রুমমেট। তবে শাহনাজের সঙ্গে সেদিনই পরিচয় হয় বাকি দুজনের। ফজিলাতুন্নেছা হলের এই তিন ছাত্রীকে নিয়ে ১১ আগস্ট গিয়েছিলাম ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে। চাপা একটা উত্তেজনা ছিল তাঁদের মধ্যে। গেটের বাইরে ফলক পড়ার সময় জানালেন, আগে আসার সুযোগ হয়নি। এবারই প্রথম আসা তিনজনের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের বর্ধিত ভবনের শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়রা খাতুন প্রদর্শনী গ্যালারি থেকে দেখা শুরু হয়। আমাদের সঙ্গে ছিলেন জাদুঘরের গাইড বরুণ রাহা। হলে নিয়মিত অনুষ্ঠান হয়, প্রতিবছর আগস্ট মাসে অনুষ্ঠানের কারণে বঙ্গবন্ধুর পরিবার, বিশেষ করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে জেনেছেন এই তিন ছাত্রী।

‘বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে সারা জীবন বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে সমর্থন দিয়েছেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল (১০ আগস্ট) আমাদের হলে অনুষ্ঠান ছিল। আগামীকাল (১২ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার স্মরণে অনুষ্ঠান হবে। প্রতিবছরই হয়। নিজের আগ্রহ থেকেই যাই। এভাবেই তাঁর সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’ বললেন শাহনাজ। তবে মলির জানাবোঝা একটু বেশি। জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ছবি দেখে তার পেছনের ইতিহাস বলতে শুরু করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটা কি জানা আছে এই তিনজনের? হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়েন। বর্ধিত ভবন থেকে আমরা গেলাম পুরোনো ভবনে। একতলায় রান্নাঘর দেখে দোতলায় উঠি আমরা। কাচঘেরা রক্তের ছোপ ও গুলির চিহ্ন দেখে ফারজানা, মলি ও শাহনাজ যেন কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেন না। ‘আমার খুব খারাপ লাগছে। কী ভয়াবহ ছিল সেই রাত, এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ওপর দিয়ে কী দুর্যোগ গিয়েছে, ভাবতেই পারছি না। যারা মেরেছে, তারা আসলে মানুষ হতেই পারে না। মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে?’ ফারজানা বলেন। চোখভর্তি পানি তিনজনেরই।

কত বই এখানে! বঙ্গবন্ধুর লাইব্রেরি ছিল যেখানে, সেটা দেখে তাঁরা অবাক হলেন। শেখ কামাল ও শেখ জামালের শোয়ার ঘর দেখে বিস্ময়ের শেষ নেই। বাহুল্য নেই, কিন্তু রুচিশীল। শেখ কামালের ঘরে কি-বোর্ড, সেতার দেখে শাহনাজ বলেন, ‘শেখ কামাল সংগীতচর্চা করতেন, সুলতানা কামাল কত বড় অ্যাথলেট ছিলেন। সুলতানা কামালের মিষ্টি হাসির সৌরভ যেন এখনো ছড়িয়ে আছে ঘরময়—তাই না?’ তাঁর সঙ্গে সম্মত হন বাকি সফরসঙ্গীরা। কিন্তু মলি ও ফারজানার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। মলি বলেন, ‘এখানে না এলে জীবনে একটা অপূর্ণতা থাকত। আসব আসব করে এখানে আসা হচ্ছিল না। ধন্যবাদ, তাদের এই উদ্যোগের কারণে আসা হলো।’

‘শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে এখন কত বড় হতেন, তাঁর জন্য খুব খারাপ লাগছে।’ একটা দীর্ঘশ্বাসের পর ফারজানা আকতার বলেন। যে নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে তাঁদের জন্মের আগে, সেই ঘটনায় যেন ফিরে গেলেন তাঁরা। নতুন প্রজন্ম জানল, যে বাড়িতে তাঁরা দাঁড়িয়ে, সেখানে ঘটেছিল ইতিহাসের কালো অধ্যায়।

পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান এই তিন ছাত্রীকে ঘুরতে আসার জন্য ধন্যবাদ দেন। বলেন, ‘শিগগিরই আমরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রীদের এখানে নিয়ে এসে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। যেখানে শেখ ফজিলাতুন্নেছার জীবন নিয়ে স্মৃতিকথা বলবেন বিশিষ্টজনেরা।’

তিন ছাত্রী যখন বেরিয়ে এলেন, মন ভারী তাঁদের। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতার কালো ছায়া তখন তাঁদের মন ছেয়ে গেছে। প্রকৃতিও যেন তা বুঝতে পেরেছিল। আবারও আকাশ তাই ছেয়ে গেল কালো মেঘে।

 

চিজ বার্গার তৈরির সহজ রেসিপি

ফাস্টফুডের মধ্যে বার্গার খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। আর তা যদি হয় চিজ বার্গার তাহলে তো কথাই নেই। তবে এই খাবারটি আপনি তৈরি করতে পারেন ঘরে বসেও। কীভাবে? চলুন শিখে নেই-

উপকরণ :
প্যাটি বানানোর জন্য: মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম, গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, লবণ ১ চা-চামচ, তেল ১ চা-চামচ।

বার্গারের জন্য: বার্গার বান ৪টি (মাঝখান থেকে ২ ভাগ করা), মেয়নেজ, বার্গার চিজ ৪টি বা, পছন্দ করলে ৮টি, লেটুসপাতা বড় করে কাটা, টমেটো মোটাকুচি কয়েকটি, পেঁয়াজ মোটাকুঁচি কয়েকটি, সরিষাবাটা ২ চা-চামচ।

প্রস্তুত প্রণালি :
প্যাটির সব উপকরণ ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। ৪ ভাগেভাগ করুন। গোল গোল প্যাটি বানিয়ে অল্প তেল দিয়ে দুই দিকে ভালোভাবে ভেজে নিন। চাইলে গ্রিল করে নিতে পারেন। এবার বার্গার বানের নিচের বানে আগে অল্প সরিষাবাটা দিন। তারপর লেটুস পাতা দিয়ে একটি প্যাটি দিন। এর উপর মেয়নেজ দিয়ে টমেটোকুচি আর পেঁয়াজকুচিও দিন। চিজ দিন। চিজ বেশি পছন্দ করলে একেবারে নিচেও আরেকটা দিন। উপরের বানটা দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার বার্গার।

 

হালকা মেকআপে গর্জিয়াস

নারীর সাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি প্রসাধনী হচ্ছে মেকআপ। নিজেকে আরেকটু আকর্ষণীয় আর অনন্যা করে তুলতে মেকআপ ব্যবহার করে থাকেন বেশিরভাগ নারী। তবে এই মেকআপের আধিক্য আমাদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার বদলে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। বরং হালকা মেকআপেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন গর্জিয়াস।

বেইজ মেকআপের ক্ষেত্রে ভারী ফাউন্ডেশন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। দিনের বেলা ম্যাট ফাউন্ডেশন দিয়ে বেইজ করা ভালো। ত্বক তৈলাক্ত হলে প্রথমে সারা মুখে লুজ পাউডার লাগিয়ে তারপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। এতে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হবে। ত্বক যা-ই হোক, কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে বেইজ মেকআপ শেষ করা ভালো।

রাতের সাজে তৈলাক্ত ত্বকে দিন ‘লিকুইড ফাউন্ডেশন’। আর শুষ্ক ত্বকে ‘ক্রিম ফাউন্ডেশন’। তারপর প্যানকেক দিন। জমকালো আর ভারী সাজেই কেবল প্যানকেক মানানসই। সাধারণত হলুদ আর গোলাপি এই দু’টি রংয়ের প্যানকেক ব্যবহৃত হয়। প্রথমে হলুদ প্যানকেক দিয়ে তারপর ত্বকের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাপি শেইডের প্যানকেক দিন।

সব ক্ষেত্রেই মেইকআপ ব্লেন্ডিং খুব জরুরি। ত্বকের সঙ্গে বেইজ যত ভালোভাবে মিশে যাবে ততই ‘ন্যাচারাল লুক’ আসবে। তারপর কমপ্যাক্ট পাউডার দিন। রাতের জমকালো অনুষ্ঠানে চাইলে ‘শিমার পাউডার’ ব্যবহার করতে পারেন।

নাক একটু টিকালো দেখানোর জন্য নাকের দুপাশে গাঢ় শেইডের কনসিলার দিয়ে উপরে লম্বা করে হালকা শেডের কনসিলার দিন। একইভাবে চোয়ালের শেপ ঠিক করে নিন। কনসিলার ছাড়াও ব্রোঞ্জিং পাউডার দিয়েও কনট্যুর ও হাইলাইট করা যায়। চাইলে চোখও হাইলাইট করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের জন্য ‘ন্যাচারাল স্কিন কালার’ মানানসই। হালকা বা ভারী- সাজ যা-ই হোক, চোখ আর ঠোঁটের সাজ হবে বিপরীত।

চোখের সাজে লাইনার, মাসকারা আর শ্যাডো ব্যবহার করা হয়। দিনের সাজে তিনটি একসঙ্গে ব্যবহার না করে যে কোনো দুটি বা একটিতে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। কাজল ও আইলাইনারের চেয়ে মাসকারা প্রাধান্য দিন।

চোখের পাতা ঘন দেখালে আরও আকর্ষণীয় লাগবে চোখ। সেজন্য কাজল বা আইলাইনার টেনে দিতে পারেন। তিনটি একসঙ্গে কেবল রাতের সাজেই চলতে পারে। ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করুন। ব্লাশন সব সময়ই হালকা হলে ভালো লাগে। এমনকি রাতের পার্টিতেও এখন গাঢ় ব্লাশনের চল নেই।

 

ঘরকন্নার দরকারি টিপস

প্রতিদিনের ঘরের কাজগুলো গুছিয়ে করতে ভালোবাসি আমরা। তবু মাঝেমাঝে একটু এলোমেলো হয়ে যায়। হয়তো রান্নায় লবণ বেশি অথবা কম হয়ে যায়, কখনোবা অসাবধানতাবশত কাপড়ে দাগ লেগে যায়। এরকম আরো কত কী! তাই প্রতিদিনের ঘরকন্নার কাজটাই গুছিয়ে করতে আপনার জন্য রইলো কিছু জরুরি টিপস। অসাবধানতাবশত তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে ফেললে একদলা মাখানো ময়দা ছেড়ে দিন। তরকারি নামানোর আগে ময়দার দলাটি তুলে নিন দেখবেন লবণের মাত্রা কমে গেছে।

  রান্নার সময়ে পাত্রের তলদেশে খাদ্যদ্রব্য আটকে যাওয়া থেকে এবং গরম তেল বাইরে ছিটকে পড়া থেকে রেহাই পেতে হলে সামান্য পরিমাণ লবণ ছিটিয়ে দিন।

আরও পড়ুন: তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে যা করবেন

অনেক সময় পোলাও রান্না করতে গেলে দেখা যায় একটু বেশি নরম হয়ে যায় তখন নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগে। একটি পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে বিছিয়ে তার উপরে পোলাওগুলো ঢেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখুন পোলাওগুলো কেমন ঝরঝরে হয়ে যায়!

নেতিয়ে যাওয়া লেটুস পাতা তরতাজা করতে হলে একটু আলুর খোসা ছাড়িয়ে কুচিকুচি করে লেটুস পাতা সহ ঠান্ডা পানিতে ছেড়ে দিন দেখবেন কেমন তরতাজা হয়ে উঠেছে।

ফ্রেঞ্চফ্রাই বাচ্চাদের অনেক প্রিয় একটা খাবার। এটি তৈরি করার আগে কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে তারপর শুকিয়ে ভাজলে তা অনেক বেশি মচমচে ও অধিক স্বাদের হয়।

আরও পড়ুন: মশা-মাছি তাড়ানোর উপায়

ফ্রিজ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে এক টুকরো লেবু কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। দেখবেন ফ্রিজে আর কোন গন্ধ থাকবেনা। তবে ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।

পেঁয়াজের স্বাদ ও গন্ধ টাটকা পেতে হলে পেঁয়াজ ভাজার আগে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে দুধে ভিজিয়ে তারপর ভাজতে হবে।

দুধ ফেটে যাওয়ার ভয় থাকলে জ্বাল দেবার আগে সামান্য পরিমাণ খারাব সোডা মিশিয়ে দিন।

পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চাল বা আটা ময়দার পাত্রের মধ্যে একটা তেজ পাতা রেখে সংরক্ষণ করুন।

দই তাড়াতাড়ি জমাতে হলে দুধে এক চা চামচ কর্ণফ্লাওয়ার মিশিয়ে দিন।

 

ভালো লাগবে সবকিছু

‘কিছুই ভালো লাগে না’ বা ‘কিছুই করতে ইচ্ছা করে না’ অনেক সময় নানা চাপের কারণে খানিকটা ঝিমিয়ে পড়লে আমরা এ ধরনের কথা বলি। আপনি যদি একটা দীর্ঘ সময় ধরে এই অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে থাকেন, তবে এখনই সময় সচেতন হওয়ার। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে একঘেয়ে হয়ে যাই বা কর্মক্ষেত্রে দিনের পর দিন অপছন্দের কাজ করতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে নিজেকে নব উদ্যমে ফিরিয়ে আনতে কয়েকটা বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসে, সেগুলো নিয়ে আমাদের হয় আগ্রহ কম থাকে, না হয় আমাদের প্রস্তুতি কম থাকে। যার কারণে আমরা পিছিয়ে আসি। ধীরে ধীরে আমাদের আশপাশের অন্যান্য বিষয় নিয়েও একধরনের খারাপ লাগা কাজ করে। তাই নিজেকে নব উদ্যমে ফিরিয়ে আনতে প্রথমেই জানতে হবে আমার জীবনে কাজটির গুরুত্ব কতটুকু এবং কাজটির ফলাফল কেমন হবে। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে সময়জ্ঞানও অনেক জরুরি। কাজটি যেমনই হোক, আপনি যখনই কাজটি সময়ের মধ্যে শেষ করতে সক্ষম হবেন, তখনই আপনার মাঝে একটা ভালো লাগা কাজ করবে।’
যেসব কাজের চর্চা আপনাকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে—

কঠিন দিয়েই শুরু
নতুন উদ্যমে ফিরে আসতে কঠিন বা আপনার অপছন্দের কাজটি দিয়েই দিন শুরু করতে পারেন। যেহেতু কাজটি আপনার ভালো লাগার জায়গায় নেই, সেহেতু আপনি অবশ্যই চাইবেন কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে। শুধু তা-ই নয়, অপছন্দের কাজ বা কঠিন কাজ কিন্তু কেউই বারবার করতে পছন্দ করে না। তাই পুরো মনোযোগ দিয়ে একবারে কাজ শেষ করবেন।

সময় ধরে কাজ
কাজ করার আগ্রহ যদি একেবারেই না থাকে, তবে চেষ্টা করুন সময় ধরে কাজ করার। ধরা যাক, প্রথম দিকে আপনি ঠিক করলেন টানা ২৫ মিনিট আমি কাজ করব এবং এই ২৫ মিনিটে কাজের বাইরে আর কিছুই করব না। ২৫ মিনিট পর আমি একটু বিরতি নেব, এভাবেই ২৫ মিনিটে সারা দিনের কাজ ভাগ করে নিন। প্রথম প্রথম ২৫ মিনিট পুরোপুরি না-ও হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে আপনার কাজের গতি বাড়তে শুরু করবে। শুধু তা-ই নয়, একটা সময় আপনি দেখবেন আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ এবং আগ্রহ দুটোই বেড়ে গেছে।

সাহায্য নিন
অনেক সময় আমরা একা একা নিজেদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি না। আমাদের তখন আশপাশের মানুষের সাহায্য দরকার হয়। মনে রাখুন, কারও সাহায্য চাওয়া খারাপ কিছু নয় বা এতে করে আপনার নিজেকে ছোট ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আপনি যেহেতু কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, সেহেতু আপনার বন্ধু বা বড় কাউকে বলুন আপনার কাজটি পর্যবেক্ষণ করতে। আপনার কাজটির ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে। এতে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। একান্তই যদি আপনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হতে না চান, তবে নিজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন নিজেকে।

সময়ের কাজ সময়ে
আমাদের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আরেকটি অন্যতম কারণ সময়ের কাজ সময়ে না করা। যখনই আমরা একটা কাজ ফেলে রাখি, তখনই সেই কাজের চাপ আমাদের ভালো না লাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চেষ্টা করুন ‘পরে করব’ এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার। নিজেকে বলুন, আমি আজই করব এবং সঠিকভাবেই কাজটি করব।

শান্তভাবে শুরু হোক
কোনোভাবেই যখন ভালো লাগছে না, তখন বুঝতে হবে আমার মাঝে একটা অস্থিরতা রয়ে গিয়েছে। নিজের মাঝে স্থিরতা আনতে প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন অথবা কোনো এক ছুটির দিনে নিজেকে সময় দিতে পারেন। ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ চা কিংবা কফি পান করতে পারেন জানালার পাশে কিংবা বারান্দায় বসে। এরপর তৈরি করুন কী কী কাজ এখনো পড়ে আছে, তার তালিকা ঠিক করুন, এর মাঝে কোনটি করতে আপনি প্রস্তুত। শুরু করে দিন কাজটি। একটা সময়ের পর দেখবেন, ভালো লাগছে সবই।

 

গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ?

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। গর্ভাবস্থায় তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা জরুরি। রক্তচাপ বেশি হলে তার চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।

গর্ভাবস্থার প্রথম ৫ মাসের মধ্যে রক্তচাপ বেড়ে গেলে সেই মায়ের আগে থেকেই খানিকটা উচ্চ রক্তচাপ ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। যাঁদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁরা সন্তান নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। কিছু রক্তচাপের ওষুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় না। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসক আগে থেকেই ওষুধ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে রক্তচাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে কি না এবং উচ্চ রক্তচাপের কোনো জটিলতা আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে নেওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থার পাঁচ মাস পর যদি রক্তচাপ বেড়ে যায়, তবে তাকে জেসটেশনাল হাইপারটেনশন বা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। এটি সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু গর্ভকালীন রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। নিয়মিত রক্তচাপ মেপে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে নানা জটিলতা হতে পারে। মায়ের পা ফোলা, শরীরে পানি জমা, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, শ্বাসকষ্ট, হার্ট ফেইলিউর, রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি ইত্যাদি হতে পারে। প্রি-একলাম্পসিয়া ও একলাম্পসিয়ার প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। যাঁদের ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা আছে তাঁদের ঝুঁকি বেশি। ওজনাধিক্য, পরিবারে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে বা ২০ বছরের কম বা ৪০-এর বেশি বয়সে মা হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

*গর্ভকালীন নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। রক্তচাপ বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধ নিন। নিয়মিত প্রস্রাবে আমিষ ও অন্যান্য কিছু পরীক্ষা করুন।

*আলাদা লবণ খাবেন না। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারও নয়। যেমন সালাদে বা ফলের সঙ্গে লবণ দেওয়া হয়। আচার, চানাচুর, সয়াসস ও টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ থাকে।

*অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, গরু-খাসির মাংস, ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলুন। কিন্তু প্রচুর তাজা শাকসবজি ফলমূল খান। দুধ, ডিম, মাছ খান।

* ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। দুধ, দই, পনির, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শিম, গাজর ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম আছে।

* চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। রক্তচাপ ১৫০ (সিস্টোলিক) ও ১০০ (ডায়াস্টোলিক) এর বেশি হলেই ওষুধ লাগবে।

* ধূমপান, জর্দা, তামাক, অ্যালকোহল একেবারেই নিষিদ্ধ।

* উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা দেখা দিলে বা রক্তচাপ ১৭০/১১০ বা তার বেশি উঠে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যান।

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়

 

মৈনট ঘাট: বাড়ির কাছে ‘মিনি কক্সবাজার’!

মৈনট ঘাট থেকে দূরে তাকালে সমুদ্রের বেলাভূমির খানিকটা আভাস মেলে। দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় দুলতে থাকা নৌকা, প্রায় ডুবুডুবু স্পিডবোটের ছুটে চলা, পাড়ে সারিবদ্ধ বাহারি রঙের ছাতার তলায় পেতে রাখা হেলান-চেয়ার। ঘাটের কাছাকাছি দুই পাশে হোটেলের সারি। সেগুলোর সাইনবোর্ডে ঘাটের পরিচিতি ‘মিনি কক্সবাজার’।

ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাট। দোহার থেকে দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। নদীর অপর পাড়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন। পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে দোহারের প্রান্তে এখন চরমোহাম্মদপুরে এসে ঠেকেছে। এখানেই ঘাট। ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি পাকা সড়ক চলে এসেছে ঘাট পর্যন্ত। এই রুটে বাস সার্ভিসও চালু আছে বহুদিন থেকে। এখন জনপ্রতি ভাড়া ৯০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে আসতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। আসলে সময় নির্ভর করে পথের যানজটের ওপর।

মৈনট ঘাটের এই হঠাৎ খ্যাতি ঘাটের দক্ষিণ পাশের চরটির জন্য। ঘাটের মাঝি চরমোহাম্মদপুরের বাবুল মোল্লার কাছে জানা গেল, নদীর পাশের এই নিচু জমিটি ২০১৫ সালে বন্যায় তলিয়ে যায়। উত্তর পাশে বালু পড়লেও দক্ষিণের অংশে পুরু হয়ে পলি পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পরে পলি মাটি জমে থাকা জায়গাটি অনেকটা সমুদ্রসৈকতের মতো দেখায়। বালু না থাকায় চলাফেরাও বেশ সুবিধাজনক। নদী পারাপারের সময় অনেকে এখানে এসে ছবি তোলেন। ফেসবুকে সেই ছবি দিতে থাকেন। সেই ছবি দেখে লোকে এখানে বেড়াতে আসতে থাকে। লোকসমাগম গত বছর থেকে বেশি হচ্ছে। এ বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। এ ছাড়া শুক্র-শনিবার আর ছুটির দিনেও ১০ হাজারের মতো লোক এখানে বেড়াতে আসে।

মৈনট ঘাটের বয়স কত, তা কেউ সঠিক বলতে পারে না। তবে মিনি কক্সবাজার হিসেবে তার এই নয়া পরিচিতি বছর দুই হলো, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে।

দ্রুত খ্যাতি লাভ করার প্রতিক্রিয়া ভালো-মন্দ উভয়ই প্রকারেরই। সমুদ্রসৈকত ভেবে গোসল করতে নেমে গত দেড় বছরে এখানে নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর ধরনে বাড়ির কাছেই সমুদ্রসৈকতের আবহ উপভোগ করতে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে এখানে। গড়ে উঠেছে বেশ কিছু খাবার হোটেল। শুকনো মরিচ সহযোগে ডুবো তেলে ইলিশ ভাজার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে পদ্মার বুক ছুঁয়ে ধেয়ে আসা ঘাটপাড়ের ভেজা হাওয়ায়।

মৈনট ঘাট থেকে পদ্মা পার হয়ে লোকে ফরিদপুর যাতায়াত করে। ঘাটে নদী পার হওয়ার বাহনও সদা প্রস্তুত। বাহন দুই ধরনের—ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ৭০-৮০ জন যাত্রী ওঠে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। আর স্পিডবোটে ওঠে ১৫-২০ জন, ভাড়া ১৬০ টাকা। স্পিডবোটের যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেট নেই। ঝুঁকি নিয়েই তারা নদী পারাপার হয়। ঘাটের কিনারে ইজারাদারের টোল আদায়ের ঘর। সেখানে দায়িত্ব পালনকারী ইজাদারের প্রতিনিধি মো. জিয়া দাবি করলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না। তাই লাইফ জ্যাকেটের দরকার নেই। এ বছর তিন কোটি টাকায় তাঁরা ঘাটের ইজারা নিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

লোকসমাগম বাড়তে থাকায় বেশ কিছু নতুন হোটেল হয়েছে। নদীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছাউনি দেওয়া নৌকা এসেছে ডজনখানেক। নৌকায় বেশ ভালোই আয় হচ্ছে। তাই বাবুল মোল্লাও এমন একটি নৌকা নামিয়েছেন এ বছর। ঘণ্টাপ্রতি নৌকা ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা। শতকরা ৪০ টাকা টোল দিতে হয় বলে ভাড়া বেশি—জানালেন বাবুল। এ কারণে ঘাট পার হতে যাত্রীভাড়াও বেশি। স্পিডবোটে ১৬০ টাকা ভাড়ার টোল ১০০ টাকা, ট্রলারে ৮০ টাকা ভাড়ার টোল ৫০ টাকা।

ছাতার তলায় পাতা চেয়ারগুলো ভাড়া নেওয়া যায় প্রতিটি ১০০ টাকা ঘণ্টায়। এগুলো পেতেছেন মিজানুর রহমান ও তাঁর চার বন্ধু।  মিজানুর জানালেন, তিনি ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী। পাশের গ্রামেই তাঁর বাড়ি। একটু আয়-রোজগারের আশায় ২০টি চেয়ার পেতেছেন পাঁচ বন্ধু মিলে।

আয়-রোজগার যে মন্দ হচ্ছে না, তা দেখা গেল। ছাতার তলায় খোলা হাওয়ায় বসে উদার প্রকৃতির অকৃত্রিম শোভা উপভোগ করছিলেন রেহান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী নাদিয়া জামান। তাঁদের ছেলে আর ভাগনেরা সামনের পলিমাটির চরে ছোটাছুটিতে মগ্ন। রেহান দম্পতি জানালেন, ফেসবুক থেকেই তাঁরা মৈনট ঘাট সম্পর্কে জেনে এখানে বেড়াতে এসেছেন। থাকেন ঢাকার জিগাতলায়। গুলিস্তান থেকে বাসে এসেছেন। বেশ ভালোই লাগছে তাঁদের এখানে এসে।

এ রকম আরেকটি দলের দেখা পাওয়া গেল খানিকটা দূরে। দলটি বেশ বড়। পরিবার-পরিজনের ১০ সদস্যের দলের নেতৃত্বে আছেন একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনসুরুল হক। ঢাকার কলাবাগান থেকে নিজেদের গাড়িতে এসেছেন প্রায় দুই ঘণ্টায়। তাঁরা বিস্মিত। ‘ঢাকার এত কাছে এ রকম সুন্দর জায়গা আছে, না এলে বুঝতেই পারতাম না’—এই হলো মনসুরুলের প্রতিক্রিয়া। অন্যরা তখন ব্যস্ত নৌকা ভাড়া করতে।

প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা হবে চরটি। অনেকে হাঁটাহাঁটি করছেন, কেউবা হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখছেন পদ্মা। সাহস করে নেমেও পড়ছেন কেউ কেউ। তবে প্রহরারত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।’ পুলিশ সদস্যদের কাছে জানা গেল, গত প্রায় দেড় বছরে এখানে নদীতে নেমে নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

অনেকের ধারণা, কক্সবাজারের মতো জায়গাটি ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটি নদী, সমুদ্র নয়। এখানে পাড় একেবারে খাড়া। সে কারণে নামলেই গভীরে পড়তে হয়। দক্ষ সাঁতারু না হলে সেখান থেকে ওঠা মুশকিল। এ কারণেই নদীতে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। এখন বহু লোক আসছে। নিরাপত্তার জন্য দোহার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম।

পদ্মার পাড়ে এসে ইলিশের স্বাদ না নিয়ে ফিরলে মনে যেন আক্ষেপ না হয়, সেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন হোটেলওয়ালারা। আস্ত ইলিশ ভাজা থেকে শুরু করে ইলিশ ভর্তা পর্যন্ত ইলিশেরই হরেক রকম পদ পাওয়া যাবে হোটেলগুলোতে। ইলিশ ছাড়া নদীর অন্য মাছ, খাসি-মুরগির তেল-ঝালের তরকারির সঙ্গে বিনা মূল্যের ডাল। পদ্মা রোজ নিউ খাবার হোটেলের মালিক জুলহাস ভূঁইয়া জানালেন, তিনি ২০০০ সাল থেকে এখানে হোটেল ব্যবসা করছেন। তাঁর হোটেলটিসহ আগে এখানে মোটে তিনটি হোটেল ছিল। লোকজনের যাতায়াত কম ছিল। এখন লোকসমাগম বাড়ায় হোটেল হয়েছে ১০টি। এ ছাড়া আছে অনেকগুলো চায়ের দোকান। বিকেলে নদীর চরে ফুচকা চটপটিওয়ালারা যায়। সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট পরিবেশ।

মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে ইলিশের স্বাদ নিন, নৌকায় ভেসে যান কিংবা ছাতার তলায় অলস বসে খোলা হাওয়ার ঝাপটায় শরীর জুড়িয়ে নিন; কোনো সমস্যা নেই, নারী-পুরুষ যে-ই হোন, মনে রাখতে হবে সেই গানটি—‘আমার যেমন বেণি তেমনি রবে চুল ভেজাব না…’। কারণ, পদ্মা প্রমত্তা। তার স্রোত প্রখর, খাড়া পাড় অনেক গভীর। দুঃসাহসী হয়ে ওঠার প্রলোভনে নেমে পড়লে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ বিপদ।

 

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন যেভাবে

কিছুদিন ধরেই চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। রোগটি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও বেশ পীড়াদায়ক। কারণ জ্বর কমে গেলেও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি দীর্ঘসময় ধরে থেকে যায়। আর এই রোগের বাহক হচ্ছে মশা।

চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ানো মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এছাড়া মশা যাতে জন্মাতে না পারে সেজন্য ঘরদোর ও চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।

বাসার ভেতরে ও বাইরে পড়ে থাকা বালতি, ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত যানবাহন, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্লাস্টিক বা মাটির পাত্র, ফ্রিজ বা এয়ারকুলারের নিচে এবং বাড়ির ছাদ বা মেঝের নিচু স্থানে তিন দিনের অতিরিক্ত জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। তাই পরিত্যক্ত জিনিস জমতে দেবেন না এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।

সম্ভব হলে জানালা এবং দরজায় মশা প্রতিরোধক নেট লাগান, যাতে ঘরে মশা প্রবেশ না করতে পারে।

প্রয়োজনে শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে (মুখমণ্ডল ছাড়া)।

চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। সময়মতো সুচিকিৎসায় চিকুনগুনিয়া ভালো হয়।

 

জল ও জঙ্গলের কাব্য : সবুজে দু’দণ্ড স্বস্তি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন গ্রুপ চ্যাটের মৌসুম বলাই যায়; স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে তেমন একটা আমাদেরও আছে। হঠাৎ সেখানে আওয়াজ উঠল- চল ঘুরতে যাই; শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দু’দণ্ড মুক্তির প্রত্যাশায় চল না ঘুরে আসি কোথাও! শুরু হলো গবেষণা: শর্তটা এমন; ভোরে রওনা দিয়ে দিনে দিনে ফেরা; সারাদিন মাটি আর সবুজের কাছাকাছি কোথাও। বেশ কয়েকটা জায়গার চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আমাদের সবারই মনে ধরলো ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’।

কেন? বলছি, একে তো পাখ-পাখালি দুরন্তপনা, বাড়ন্ত স্বাধীনতায় নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা। তার ওপর অফুরান সবুজের মাঠ। মাঁচা করা কুটির। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। পাশের খালে কচুরিপানার ইতস্তত ভ্রমণ আর ছোট্ট ডিঙি নৌকার মৃদু দোলুনি। এর ওপর বাড়তি পাওনা গ্রামবাংলার বারোয়াড়ি ভর্তা, পুকুরের টাটকা মাছ থেকে শুরু করে জিভে জ্বল আসা সব মেন্যু। আছে পাটিতে পা লেপ্টে বসে গ্রামীণ লোকশিল্পীদের কণ্ঠে মন উজাড় করা আবহমান বাংলার জারি-সারি-ভাটিয়ালি গান। আর কী চাই বলুন! সুতরাং এককথায় সবাই রাজি, দে ছুট মাটির টানে জল ও জঙ্গলের কাব্যে।

শোনা গেল, ২০০৫ সালে বিমান বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এক বৈমানিক শখের বসে গড়ে তোলেন শহর থেকে একটু দূরে এই গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি। ইচ্ছে ছিল প্রকৃতির কাব্যে নিজেই ঘুরে বেড়াবেন একা একা, প্রকৃতিচারী হয়ে। আর শুনবেন পাখির মিষ্টি কলতান। পরে অবশ্য তিনিই একদিন ভাবলেন, এর স্বাদ কেন পাবে না আর সবাই? যেই ভাবা সেই কাজ; জীবন হলো আরো সুন্দর সবার আনন্দে।

গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি পুরোটা এলাকাজুড়ে ১০-১২টা শেড; এক একটি শেডের আলাদা আলাদা নাম আর সাইজ: বকুল তলা, বট তলা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে তার মেঠো পথ। একপাশে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো হচ্ছে; চালের আটা দিয়ে রুটি আর চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে হচ্ছে গরম ধোঁয়া তুলে। আরেক পাশে বিশাল হেসেল- পুরোদমে চলছে খাবারের প্রস্তুতি। একদিকে চা-ঘর, দু’ পা ছড়িয়ে বাশের বেঞ্চিতে বসে চা, আহ! চোখে সবুজ আর হাতে গরম চায়ের মগ, অমৃত এই সুখের অফুরান আস্বাদন একদম ফ্রি।

আবার কারো মন চাইলো একটু নৌকা ভ্রমণে; নো টেনশন, বাঁধা আছে বেশ কয়েকটা ছোট্ট ডিঙি। বিলের শাপলার পথ মাড়িয়ে আসতেও কোনো বাঁধা নেই।

মাত্র ৭৫ বিঘা জমির সঙ্গে বিস্তীর্ণ বিলে সাজানো এই কাব্যের প্রতিটি পরতে পরতে স্বস্তির স্বাদ। আর যদি একটু ঝুম বৃষ্টি থাকে তাহলে তো কথাই নেই!

কিভাবে যাবেন
পুবাইল কলেজ গেট থেকে জল-জঙ্গলের কাব্য মাত্র ৩ কিলোমিটার। জয়দেবপুর রাজবাড়ির পাশ দিয়েও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গেলে টঙ্গী স্টেশন রোড বা ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া যায়। জল-জঙ্গলের কাব্য পুবাইল, ডেমুরপাড়াতে অবস্থিত। এছাড়া মহাখালী থেকে নরসিংদী বা কালীগঞ্জগামী যেকোন বাসে উঠুন। ১ ঘণ্টা পর পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর একটা ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে পাইলট বাড়ি। তবে অবশ্যই আগে বুকিং থাকতে হবে।
অথবা ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, আজিমপুর, মহাখালী থেকে গাজীপুর পরিবহন, ঢাকা পরিবহন, ভিআইপি পরিবহন ও বলাকা পরিবহনে শিববাড়ী চলে যাবেন। ভাড়া ৭০ টাকা। শিববাড়ী থেকে অটোরিকশায় ভাদুন (ইছালি) জল-জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।

খরচাপাতি
এখানে জনপ্রতি নেওয়া হয় ২,০০০ টাকা। নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারসহ। খরচটা একটু বেশি মনে হতে পারে। তবে খাবারের বহরা দেখলে তা আর মনে হবে না। সারাদিনের জন্য ১,৫০০ টাকা জনপ্রতি (সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে হালকা নাস্তা)। শিশু (৫-১০ বছর), কাজের লোক ও ড্রাইভার জনপ্রতি ৬০০ টাকা।

যোগাযোগ : কামরুল- ০১৯১৯৭৮২২৪৫

 

যৌথ প্রযোজনার কেমন নীতিমালা চান তারকারা?

ঢাকাই সিনেমাপাড়া এখন উত্তপ্ত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে। এ নিয়ে যেন বিতর্কের শেষ নেই। প্রশ্ন উঠেছে শর্ত ও নীতিমালা না মেনেই চলছে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ! যার ফলে এফডিসির ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবার সোচ্চার হয়েছে। চলচ্চিত্র পরিবারের নেতারা রোববার (৯ জুলাই) তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জানানো হয়, নতুন নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কিত কার্যক্রম স্থগিত।

সিনেমাপাড়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে কেমন হওয়া উচিত যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা? ১৯৮৬ সালের নীতিমালায় বলা আছে, যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী দু’দেশ থেকে সমহারে থাকতে হবে। দু’দেশে শুটিং হতে হবে। কিন্তু ২০১২ সালের পরিবর্তিত নীতিমালায় উল্লেখ আছে দু’দেশের নির্মাতা আলোচনার ভিত্তিতে সব বিষয় চূড়ান্ত করবে। নির্মাতারা বলেন, আসলে এটি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা (২০১২ সংশোধিত) জারি করা হয়।

নতুন নীতিমালা নিয়ে কিংবদন্তি অভিনেত্রী চিত্রনায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘দুই দেশের তারকা শিল্পীদের এক মঞ্চে হাজির করতে, নতুন স্বাদ যোগ করতে যৌথ আয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতেই পারে। এটি আগেও হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা যদি সঠিক না হয়, তাহলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। যারা নীতিমালা নির্ধারণ করবেন তারা যেন অবশ্যই এটা বিবেচনা করেন। নইলে চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। পাশাপাশি সাফটা চুক্তি ও হলের পরিবেশ ইতিবাচক করতে শুনছি তথ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারকে চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে আন্তরিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’

ববিতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যৌথ প্রযোজনার বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছি। এবং প্রযোজনাও করেছি। আমি যৌথ প্রযোজনার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনেই করেছি। সমানসংখ্যক শিল্পী-কলাকুশলী, আমার দেশের সঙ্গে মানানসই গল্প, সমান হারে শুটিং করেছি। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি এখন এসবের কিছুই মানা হয় না। উদ্ভট গল্প, পুরো ছবি দেশের বাইরে শুটিং করে এনে বাংলাদেশে একটা গান আর দু-তিনটা দৃশ্যধারণ করে ছবি মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এটা স্রেফ জালিয়াতি। যারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন আমিও তাদের একটি অংশ। শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে গিয়েছি। আমার চাওয়া থাকবে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মিত হলে যেন দুদেশের সবকিছুর অনুপাত সমান থাকে। দুই দেশের সম্মানও সমুন্নত থাকে।’

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার নামে যেটা হচ্ছে সেটা বেদনাদায়ক। নব্বই ভাগ শিল্পী আসছে ইন্ডিয়া থেকে এবং আমাদের দেশ থেকে নামমাত্র দশভাগ শিল্পী কাজ করছে। এটা না হয়ে যেন ফিফটি-ফিফটি থাকে। এছাড়া ইন্ডিয়াতে যখন ছবিটা রিলিজ হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের পরিচালকের নাম থাকে না, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম থাকে না। এটা ঠিক না। এখন নতুন নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করা উচিৎ যেন দুদেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থরক্ষা করা যায়। যেটাই নীতিমালাতে আসুক না কেন মূল এই বিষয়টি থাকা উচিৎ।

পুরাতন নীতিমালায় এই ফিফটি-ফিফটি হিসেব থাকে তারপরেও যদি না মানা হয়, তবে আমাদের দেশে সেসব ছবি মুক্তি পায় কেন? সেন্সরবোর্ড এটা দেখেই মুক্তি দেয়া উচিৎ। আর নীতিমালা তৈরি বা সংশোধন মূখ্য বিষয় নয়, সেটা মানা হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করতে হবে। আর সাফটা চুক্তি নিয়েও সরকারের নজরদারি খুব প্রয়োজন।’

অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, ‘এখনকার যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় কতটুকু নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে। সমানসংখ্যক কলাকুশলী নিয়ে ছবি নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা কেউ করছেন না। সেন্সর বোর্ডের যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালার ৬নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির জন্য মুখ্য শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যা যৌথ প্রযোজকগণই নির্ধারণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে। একইভাবে চিত্রায়ণের লোকেশন সমানুপাতিক হারে রাখতে হবে। এই নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক করা হোক।

দুই দেশ মিলে যদি যৌথ প্রযোজনা করা যায় তাহলে খুব ভালো। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতাও আছে। আমরা যেহেতু একটা দেশ, আর কলকাতা ভারতের একটা রিজিয়ন তাই অনেক ফাঁকফোকর থেকে যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন। আমাদের এখান থেকে যেসব সিনেমা কলকাতায় যাচ্ছে, ওখানে কেউই সেগুলো দেখছে না। প্রযোজক পর্যায় থেকেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। শুধু শুধু যৌথ প্রযোজনা আর সাফটা চুক্তি। সরকার আন্তরিক হচ্ছে শুনে খুব ভালো লাগছে।’

চিত্রনায়ক বাপ্পী বলেন, ‘আগে বলতে চাই সাফট চুক্তি নিয়ে। এটা আপাতত বাদ দেয়া উচিৎ। কলকাতার চলচ্চিত্র বাজারের অবস্থা ভালো না। আমাদের ছবির তুলনায় তাদের ছবির বাজেট বেশি হওয়ার পরেও ছবিগুলো সেখানে ভালো চলছে না। সেটা তাদের পত্রিকা ও সিনিয়রদের সাক্ষাতকার পড়লেই বুঝা যায়। কলকাতা রঙচঙ দিয়ে নিজেদের দৈন্যতার বিষয়টি ঢেকে রাখছে। কৌশলী ওরা। তাই তারা সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ধরতে চাচ্ছে।

আর যৌথ প্রযোজনায় ছবি যদি নির্মিত হয়, তাহলে সঠিকভাবে ফিফটি-ফিফটি অনুপাতে হতে হবে। শিল্পী, শুটিং লোকেশন, টেকনিশিয়ান সবকিছুই সমান সংখ্যক হবে। এই নিয়মকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। নীতিমালা এমনভাবে হোক যাতে করে যৌথ প্রযোজনায় উৎসাহ না দেয়া হয়। এতে করে লোকাল প্রডাকশনে বেশি বেশি ছবি নির্মাণ হবে। যে গাছে দু’দিন পরপর পঁচন ধরে সে গাছ রাখার চেয়ে কেটে ফেলা উচিৎ। মানে যে নীতিমালা মানাই হচ্ছে না সেটা রাখার দরকারই নেই। যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ দুই-তিন বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়া হোক। আগে আমরা নিজেরা দাঁড়াই। যেহেতু মেঘ কাটতে শুরু করেছে আমার বিশ্বাস সবকিছু ঘুরে দাঁড়াবে।

আর আমি মনে করি আমাদের মূল সমস্যা হলের জিম্মিদশা। প্রযোজকরা ছবি মুক্তি দেয়ার রাজনীতি থেকে রক্ষা পেলে ছবি নির্মাণে উৎসাহী হবে। দেশের মানুষ প্রচুর ছবি দেখে। কিন্তা তারা হলের পরিবেশ না পেয়ে আসেন না। তাই ৬৪ জেলায় ২টি করে সিনেপ্লেক্স চাই আমরা যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে কিংবা বিশ্বস্ত কারো কাছে।’

সংগীত পরিচালক ইমন সাহা বলেন, ‘আমাদের সরকার আমাদের সবকিছু বিবেচনা করেই নীতিমালা বানাবেন বলে মনে করি। কারণ আমাদের জন্য অমঙ্গলকর কোনোকিছু সরকার করেননি আর করবেনও না বলে আমি বিশ্বাস করি। সরকার যে নীতিমালা নির্ধারণ করবেন সেটা আমাদের বিপক্ষে যায় না, আমরা মানি কি মানি সেটা আমাদের ব্যাপার। বিভিন্ন ফাঁকফোকর বের করে আমরা এখানে অনিয়ম ঢুকাই। আমি ‘চুড়িওয়ালা’ নামের যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করেছি, আমার বাবাও ছিলেন। আমি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছিলাম, বাবা গান করেছিলেন। মিউজিকের টেকনিশিয়ানরা বাংলাদেশের ছিলো, সিঙ্গাররা সেদেশের ছিলো। সমান অনুপাত ছিল। তখন নিয়ম ভাঙার ব্যাপার ছিলো না। আমি যৌথ প্রযোজনার প্রায় ৪০টি ছবির সংগীতের কাজ করেছি। আমি কখনোই এখানে অনিয়ম চাই না।

আর সাফটা চুক্তি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। দেখুন আগেই বলেছি সরকার আপনাদে সুবিধা দেয় ভালোর জন্য। আপনি যদি তাকে অপব্যবহার করেন তার দায় রাষ্ট্রের নয়। চলচ্চিত্র শুধু পণ্য নয়, এটা ব্যবসায়েরও জায়গা।’

অর্থনীতিবিদদের মতে যৌথ প্রযোজনার নামে মূল প্রতারণা হয় আর্থিক খাতে। অর্থ পাচারে এরচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। যৌথ প্রযোজনার আড়ালে ভয়াবহ রকম অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলেই অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের অভিযোগ। দেশপ্রেম তথা দেশের চলচ্চিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা কিংবা ভালবাসা জলাঞ্জলি দিয়ে এসব প্রযোজক-নির্মাতারা দেশের সংস্কৃতিবিরোধী, সর্বোপরি দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। যতো দ্রুত সম্ভব এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তথ্য, অর্থ, বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।

পাশাপাশি সাফটা চুক্তির সঠিক ব্যবহার, হলের সমস্যা দূরীকরণ রোধ করতে পারলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও প্রত্যাশা নানা প্রজন্মের চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের।

 

আল্লাহর বন্ধু হওয়ার উপায় ‘ঈমান ও তাকওয়া’

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে তাঁর হুকুম পালন এবং নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাঁর একান্ত আপন ও বন্ধু হওয়াই মানুষের দুনিয়ার জীবনের একমাত্র চাওয়া এবং পাওয়া। এ চাওয়া-পাওয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘ওলি’ বা বন্ধু’।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়বান্দাদের পরিচয় এবং বন্ধু হওয়ার শর্ত এভাবে তুলে ধরেন- ‘জেনে রেখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবেন না; যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন বা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করেন। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৬২-৬৪)

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য দু’টি শর্তারোপ করা হয়েছে। একটি হলো- আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর দ্বিতীয়টি হলো- আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও অবাধ্যতা থেকে আত্মরক্ষা করে চলা বা তাকওয়া অবলম্বন করে চলা।

‘ঈমান এবং তাকওয়া’- এ দু’টি গুণের মধ্যেই আল্লাহর ওলি বা বন্ধুর পরিচয় সীমাবদ্ধ। ঈমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণ হবে; ওই ব্যক্তি বেলায়েতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও তত বেশি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিন করুণাময় আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত অর্থাৎ তত বেশি বেলায়েতের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ)

আল্লাহ তাআলার প্রিয়বান্দা হওয়ার জন্য একজন মুমিনের কাজকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।

প্রথমত, বান্দা আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করবে। দ্বিতীয়ত, ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত হাসিল তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করবে।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি।

অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।

এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি।

আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।

সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক)

পরিশেষে…
ওলি বা বন্ধু হতে হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হতে হলে তাঁর ফরজ বিধানাবলী পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করাও জরুরি।

যারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণে সঠিক ঈমান সংরক্ষণ করেন, দুনিয়ার সব হারাম ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করেন এবং তাঁর ওপর অর্পিত যাবতীয় ফরজ দায়িত্ব যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করেন, তারাই হলেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর নৈকট্য অর্জনে ঈমান ও তাকওয়ার ওপর অটল ও অবিচল থাকার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ইন্টারভিউয়ের চাপ দূর করুন ১০টি কৌশলে

চাকরি ইন্টারভিউ দিতে চাচ্ছেন, নার্ভাস লাগছে?  অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটি ভালো চাকরি আপনার দৈনন্দিন অনেক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে।  কিন্তু যোগ্যতা থাকার  পরও অনেকেই চাকরি পান না শুধুমাত্র নার্ভাসনেসের কারণে। সহজ প্রশ্নের জানা উত্তরটা দিতে পারেন না কিংবা হ্যান্ডশেক করার সময় পড়ে যায় হাতের ফাইলটা। এই সব হয়ে থাকে স্ট্রেসের কারণে।  ভুলগুলো ছোট খাটো কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এইগুলো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।  ইন্টারভিউ স্ট্রেস বা এংজাইটি কমাতে পারেন কিছু কৌশলে।    

১। হেঁটে আসুন

বাইরের সতেজ বাতাস আপনাকে ফ্রেশ একটি অনুভূতি দেবে। ঘর থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন। দেখবেন নার্ভাসনেস অনেকখানি কমে গেছে।

২। খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন

ইন্টারভিউয়ের আগে ক্যাফিন জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। আপনি মনে করছেন কফি আপনার চিন্তা কমিয়ে দেবে, এটি আপনার ভুল ধারণা। ইন্টারভিউয়ের আগে হালকা কোনো খাবার খান। ভারী খাবার আপনাকে ক্লান্ত করে তুলবে।

৩। নিজেকে জোর করবেন না

নিজেকে শান্ত রাখার জন্য নিজেকে জোর করবেন না। এটি শুধু আপনার স্ট্রেস বৃদ্ধি করবে, চিন্তা কমাবে না একটুও।

৪। “স্টপ” মেথড মেনে চলুন

কার্যনির্বাহী কোচ ক্রিস চ্যারিক যেকোনো স্ট্রেস কমানোর জন্য একটি কৌশল বলে দিয়েছেন, তা হলো “STOP”

S- (স্টপ) আপনি যা চিন্তা করছেন তা বন্ধ করে নিজের লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করুন।

T- (টেক) কয়েকবার চোখ বন্ধ করে শ্বাস গ্রহণ করুন।

O- (ওবজারভ) নিজের দিকে লক্ষ্য রাখুন, নিজের মন, আবেগ, অনুভুতি বোঝার চেষ্টা করুন। 

P-(প্রোসিইড) নিজেকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করুন।

এটি আপনার স্ট্রেস কমিয়ে আপনাকে কাজে আরো বেশি ফোকাস করে তুলবে।

৫। খারাপের জন্য প্রস্তুতি নিন

সবচেয়ে বড় ভয় কী? প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না? কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে কী বলবেন, কীভাবে বলবেন সেটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার অনুশীলন করে নিন। হয়তো বা এইরকম কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন পড়তে হবে না আপনাকে। তবুও প্যাকটিস আপনার ভয় কাটাতে সাহায্য করবে।

৬। নিজের সাথে কথা বলুন 

নিজের সাথে কথা বলা অস্বাভাবিকতার লক্ষণ নয়। বরং এটি আপনার ভয় দূর  করতে সাহায্য করবে। আপনি যখন চিন্তিত আপনার মস্তিষ্ক তখন আপনাকে  নানানভাবে ভয় দেখাতে শুরু করবে। সে হয়ত বলবে, ‘আজকে তো নিশ্চিত আমি এলোমেলো বলব।’ আজ কোনভাবেই আমাকে দেখতে ভাল লাগছে না’। নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করুন। কথা বলুন নিজের সাথে। যুক্তি দিয়ে ঠান্ডা মাথায় মনকে বোঝান তেমন কিছুই হবে না, কারণ আপনি এবার যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং এবার ভালো কিছু হবে।

৭। প্রিয় মানুষকে ফোন করুন

স্ট্রেস অনেকখানি কমে যায় প্রিয় কোনো মানুষের সাথে কথা বললে। মা, বোন অথবা প্রিয় বন্ধুর সাথে কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলুন। তাদের ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে সাহস যোগাবে।

৮। গান শুনুন

পছন্দের কোনো গান শুনতে পারেন। এটি আপনার মাথা থেকে দুশ্চিন্তার পরিবর্তে ভালো সুন্দর অনুভূতির যোগান দেবে।

৯। সুপার হিরো অঙ্গভঙ্গি

সুপার হিরো “সুপার ম্যান”,“ব্যাট ম্যান”-কে মনে আছে? সোজা হয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথিবীকে আধিপত্য করার জন্য। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন, গভীরভাবে কয়েকবার শ্বাস গ্রহণ করুন। আর নিজেকে বলুন “ আপনি পারবেন পৃথিবী পরিবর্তন করতে, নিজের সাহস এবং যোগ্যতা দিয়ে”।

১০। এটি শুধু কথোপকথন  

আপনি চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছেন না কিংবা করতে যাচ্ছেন না বাঘের  সাথে লড়াই। মনে রাখবেন আপনি কয়েকজনের মানুষের সাথে আপনার ক্যারিয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন না, আর কিছুই নয়।আপনি যেমন তাদের জন্য কাজ করতে চাচ্ছেন তেমনি তারাও আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

 

জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন। পেয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কান্দির গ্রামের হামিদা বেগম।

কিছুদিন আগে ভরদুপুরে গন্তব্য ছিল হামিদা বেগমের বাড়ি। গ্রামের পথ ধরে বিকেলবেলায় খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটি। সেলাই মেশিনকে ঘিরে উঠানে ২০ থেকে ২৫ জন নারী। তাঁদের মধ্যে ছাত্রীও আছেন বেশ কজন।  সেলাই মেশিনে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন হামিদা বেগম। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।

বাড়ির উঠানে চলছে সেলাই প্রশিক্ষণ। আর তারই ফাঁকে কথা এগোয় হামিদা বেগমের সঙ্গে। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সহায়তা করার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু জন্ম থেকেই তাঁর ডান হাতটি সমস্যা। হাতে তিনি শক্তি পান না। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৯০ সালে ইসলামপুরের সামছুন্নাহার উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী আমান উল্লাহ একজন কৃষক। ২০১০ সালের দিকে গ্রামের শিশুদের জন্য একটি স্কুলও খুলেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন চালাতে পারেননি সেই স্কুল।

টানাপোড়েনের সংসারে নিজেই কিছু আয় করবেন—এটা চাচ্ছিলেন হামিদা বেগম। ২০১৫ সালে প্রতিবন্ধী শিশুশিক্ষা ও পরিচর্যা সমিতি (প্রশিপস) থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। দ্রুতই রপ্ত করেন সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কাজ। পরের বছর প্রশিপস থেকে তাঁকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। ‘শুধু নিজে নিজে না করে গ্রামের প্রতিবেশীদের নিয়ে পোশাক বানানোর কাজ শুরু করি। কিছু কিছু আয় হতে থাকে।’ বললেন হামিদা বেগম। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। গ্রামের অসহায় নারী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করেন। বিনা মূল্যেই শেখাতে থাকেন সেলাইয়ের কাজ।

প্রথমে পাঁচজন নারী হামিদা বেগমের কাছে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন সেলাই শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গত মার্চ মাসে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবন্ধী কোটায় জেলার শ্রেষ্ঠ সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান হামিদা বেগম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছন একটি সেলাই মেশিন। কান্দির গ্রামের দিপা আক্তার বলেন, ‘দরিদ্র মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলায় বড় ভূমিকা পালন করছেন হামিদা আপা। টাকা ছাড়াই তাঁর মেশিন দিয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ আমি নিজেই নিয়েছি।’

দিপার মতো আরেকজন দেওয়ানগঞ্জ এ কে এম আবদুল খালেক মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্রী সাগরিকা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কৃষিকাজ করেন। অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে কিছু করার মতো ব্যবস্থা এই গ্রামে নেই। একদিন হঠাৎ হামিদা আপা বাড়িতে হাজির। লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাইকাজ শেখার পরামর্শ দিলেন। এরপর থেকে আপা নিজের হাতে আমাকে কাজ শেখান। সেলাই মেশিন না থাকায় পরিবারের সবার পোশাক আপার মেশিন  দিয়ে তৈরি করে আনি।’

ঈদের আগের এ সময়টায় হামিদা বেগম এবং তাঁর প্রশিক্ষণার্থীদের যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই। গতকাল সোমবার মুঠোফোনে হামিদা  বলেন, ‘অনেকেই  পোশাক  বানাতে  দিয়েছেন।  এবারে  হয়তো  ২০ হাজার টাকার মতো আয় হবে।’ এই  অর্থ  ভাগ  হবে  যাঁরা  সেলাই  করছেন  তঁাদের সবার মধ্যেই।  নিজেদের  বাড়ির  মানুষ  বা  দরিদ্র  ছেলেমেয়েদের  পোশাক  তৈরিতে  হামিদা  বেগম  কোনো  অর্থই নেন না।

আরও কয়েকটি সেলাই মেশিন থাকলে আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত বলে জানালেন হামিদা বেগম। বললেন, ‘একটি মেশিন দিয়ে এত মানুষের প্রশিক্ষণ সম্ভব হয়ে ওঠে না।’ হামিদা বেগম এখন স্বপ্ন দেখেন একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করার, যাতে গ্রামের সব মানুষের সাক্ষরজ্ঞানটা হয়।

 

চিংড়ির দোপেয়াজা

জিভে জল আনা একটি খাবার চিংড়ির দোপেয়াজা। গরম ভাত, খিচুড়ি কিংবা পোলাওয়ের সঙ্গে খেতে ভীষণ মজা এই চিংড়ির দোপেয়াজা। এটি রান্না করতে সময় খুব কম লাগে এবং কম উপকরণেই রান্না করা যায়। রেসিপি জানা থাকলে আপনিও ঝটপট রান্না করতে পারেন সুস্বাদু চিংড়ির দোপেয়াজা।

উপকরণ : চিংড়ি মাছ আটটি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, তেল কোয়ার্টার কাপ।

প্রণালি : চিংড়ি মাছ খোসা ফেলে নিন। প্যানে তেল দিন। পেঁয়াজ ভেজে নিন। সামান্য পানি দিয়ে সব মসলা দিন। চিংড়ি মাছ ও কাঁচামরিচ দিন। তেলের ওপর উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

ত্বকের উজ্জ্বলতায় ঘরোয়া উপায়ে ব্লিচ

উজ্জ্বল ত্বক কে না চায়! নানা কারণেই আমাদের ত্বক তার উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে হলে কিংবা বাড়াতে চাইলে দরকার বিশেষ যত্নের। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেকেই ব্লিচ করে থাকেন। পার্লারে গিয়ে ব্লিচ করানো অনেকটা খরচ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। চাইলে তাই ঘরে বসে খুব সহজ উপায়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে ব্লিচ করে নিতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং ত্বকের উপরের মরা কোষ দূর করতে পারবেন সহজেই। চলুন জেনে নেয়া যাক-

প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো/বাটা।

যেভাবে ব্যবহার করবেন:  প্রথমে দুধ ও মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে তাজা লেবুর রস ভালো করে মেশান। তারপর হলুদ বাটা/ গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে মাস্কের মতো তৈরি করে নিন। কিছুটা পেস্টের মতো মিশ্রণ তৈরি হবে। এবার এটি পুরো মুখে লাগিয়ে গোল গোল করে পুরো মুখে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। মুখ ধুয়ে ভালো করে মুছে নিন। ৬/৭ ঘণ্টা কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না ত্বকে।

খেয়াল রাখুন: লেবুতে অ্যালার্জি হয় ত্বকে যাদের তারা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন না। দিনের বেলা ব্লিচ করে সরাসরি সূর্যের আলোতে বেরুবেন না, প্রয়োজনে রাতে ব্লিচ করুন।

 

প্রযুক্তির জালে বিপদের ফাঁদ

আমরা ঠিক যে সময়ে এসে মেয়েদের স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছি, ঠিক সেই সময়ে খবরের কাগজ ওলটালেই পড়তে হচ্ছে ধর্ষণের খবর। একটি-দুটি নয়, এ সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। পড়াশোনা জানা-না জানা, ধনী-গরিব, শহর থেকে গ্রাম—যে কোনো পরিবারের সন্তানের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সামগ্রিকভাবে এগোচ্ছি, নাকি দিন দিন বর্বর যুগে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কেন এই পরিস্থিতি?

আমরা আমাদের সন্তানদের যথাযথ শিক্ষায় কি শিক্ষিত করতে পারছি না? এখানে আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সব ঘটনা যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে, কিছু মিডিয়ায় খবর প্রকাশ আর আইনি তৎপরতার পর শুধু যে মেয়ের পরিবারে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই পরিবার ছাড়া এটা নিয়ে কথা বলার বা সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, এটা অনস্বীকার্য। সবকিছুরই ভালো ও মন্দ দুটি দিক থাকে। এটি তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সত্যি। সামাজিক মূল্যবোধ আর পারিবারিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কী করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছেলেমেয়েরা যোগাযোগ করবে—সে জন্য প্রস্তুতি খুবই প্রয়োজন।

আমার মনে হয়, প্রথমে আমরা সচেতনতার অভাবের কথা বলে মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রাপ্তি—দুই জায়গা থেকেই দূরে রেখে এক অদ্ভুত পরিবেশে মানুষ করার চেষ্টা করি। এ জন্য একজন মেয়ে জীবনের শুরু থেকেই বেড়ে ওঠে খুব রক্ষণশীলভাবে। সে জানে এটা করা যাবে না, ওখানে একা যাওয়া যাবে না। কিন্তু কেন করা যাবে না, যদি করতে হয় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন অথবা যদি বিপদে পড়েই যায় কী করে নিজেকে রক্ষা করবে—পুরো বিষয় সম্পর্কে সে জানে না। আর কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটেই যায়, আইনি বিচার পেতে কী ধরনের প্রমাণ বা তথ্য উপস্থাপন করতে হবে—এসব নিয়ে যেন জানার কিছু নেই। এ বিষয়ে কখনো বাড়িতে কথা বলা, কারও কাছে জানতে চাওয়ার কালচার থেকে আমরা অনেক দূরে। ছেলেদের সঙ্গেও এই বিষয়গুলো নিয়ে পারিবারিক কোনো  আলোচনা হয় না।

আমার কাছে বিষয়টি এমন যে, আমরা জেনেশুনে চোখ বন্ধ করে রাখাটাকেই নিরাপদ মনে করছি। কিন্তু এই ইন্টারনেটের যুগে কাউকে এর বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সঠিক জীবনদর্শন আর পথ নির্দেশনা এ জন্য খুবই প্রয়োজন। আমার সন্তানকে জানতে দিতেই হবে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। এর জন্য কথা বলতে হবে, আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে, যেন কিছু জানতে তার ভেতরে কোনো দ্বিধা কাজ না করে। সন্তানদের  জানতে দিন—এসবই জীবনেরই অংশ।  আমরা কতটুকু নেব? আমাদের প্রেক্ষাপট কোনটাকে ভালো বলে, কেন ভালো বলে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং   সমাজের দায়িত্ব।

কোনো একটা জিনিস আমরা যদি অপছন্দ করি, তা কেন খারাপ, কেন আমরা চাই না অথবা কী করে এড়িয়ে চলা যায়—সব দিকের তথ্য জানানো প্রয়োজন। আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মানুষের সঙ্গে সহজেই পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখন নিয়মিত কিংবা বলা যায় প্রতি মিনিটেই যোগাযোগ রাখা সম্ভব। নতুন বন্ধু বানানো তো এখন কোনো ব্যাপারই নয়। একটি ছেলে বা মেয়ের বাড়িতে না গিয়ে তার সামাজিক অবস্থান, রুচি, অর্থনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এখন দুই সেকেন্ডের বিষয়। কিন্তু এভাবে ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে তথ্য জানলেই কি একজন মানুষকে চেনা যায়?  সেই তথ্যকে বিশ্লেষণ করে যথাযথ ধারণা বের করার ক্ষমতা তৈরি করাও কিন্তু স্মার্টনেসের  অংশ।

এই ধারণাটা মেয়েদের পরিবার থেকেই দিতে হবে। মেয়েদের অনেক তথ্য জানাতে হবে, জানতে দিতে হবে। আর তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। এতে করে যেসব বিপদ পায়ে পায়ে রয়েছে, সেসব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত একজনের সঙ্গে কতটুকু তথ্য আদান-প্রদান করা ঠিক কিংবা তার সঙ্গে যোগাযোগ কোন পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে, একটি অল্প পরিচিত ছেলের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হলে কোন ধরনের বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার, তা জানা ও আলোচনার দাবিদার। বিশেষ করে, দেখা করার স্থান নির্বাচনের বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে, কথা বলতে হবে। যদিও অপরাধকে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে চাপা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবুও নিজের িনরাপত্তার বিষয়ে মেয়েদেরকে সচেতনভাবে গড়ে তোলাও প্রয়োজন। তাহলে প্রতারণা এবং নানা বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে নিজেদের।

ইন্টারনেটে অনেক তথ্য থাকে—কোনটা সঠিক, কী করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় বা কোন বিষয়টি নিশ্চিত করবে তথ্যের সত্যতা, তা বোঝা ও বের করতে পারতে হবে। অন্যদিকে ছেলেদের ব্যাপারেও পরিবারের ভূমিকা অনেক। মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি, নৈতিকতা ও তার ব্যবহার কী হবে, তার ধারণা ছেলেকে দিতে হবে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার একটা প্রবণতা রয়েছে। মিথ্যা তথ্য প্রদান যে বাংলাদেশের আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটা কি সবাই জানে? ইন্টারনেটের মাধ্যমে এমন করলে তা সাইবার আইনেও অপরাধ। এই আইনগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক প্রয়োগ—এমন অপরাধপ্রবণতা কমতে সহায়ক বলে আমি মনে করি। আইনের প্রচার আর খোলামেলা আলোচনার সুযোগই পারবে অনেককে ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে বিরত রাখতে।

প্রযুক্তির অপব্যবহার কমানোর জন্য সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই। নয়তো প্রযুক্তির জালে আটকে পড়েই আসবে বিপদ।

 

মুনমুনের বাস্তবতা, মুনমুনের স্বপ্ন

‘আমাগো মতো গরিবের স্বপ্ন দেখতে নাই। যে স্বপ্ন পূরণ হইব না, সেই স্বপ্ন না দেখনই ভালো। শুধু কষ্টই বাড়ে।’ সিনেমার সংলাপের মতো কথাগুলো ১৩ বছরের মুনমুন আক্তারের। বেদে সম্প্রদায়ের মেয়েটি হাত-মুখ নেড়ে নেড়ে কথা বলে। কথা বলার ঢঙে বাংলা সিনেমার প্রভাব স্পষ্ট।

গত ২৮ জুন শেষ বিকেলে মুনমুনের সঙ্গে কথা হয় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হেলিপ্যাডে বসে। মাস তিনেকের জন্য এখানে বসত গেড়েছে মুনমুনের পরিবার। বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। বছরের ছয় মাস বাড়িতে থাকে, বাকি ছয় মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ সম্প্রদায়ের বহরের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। এই আয়েই মূলত তাদের সংসার চলে।

কিশোরী মুনমুনের কথায় বালখিল্যতা নেই, আছে বিচিত্র অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ পরিণত মানুষের সুর। ১০ বছর বয়স থেকে সে উপার্জন শুরু করেছে। শৈশবকালীন খেলাধুলার সুযোগ মেলেনি। চার ভাই আর বাবার সংসারে উপার্জনকারী সে আর মা।

প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাই নেই মুনমুনের। এর পেছনের কারণ জিজ্ঞেস করার আগেই ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলতে থাকে, ‘বছরের ছয় মাস বাড়ির বাইরে থাহি। আর পইড়্যাও কী হইতো। এই বাইদ্যার কামই করতে হইতো।’

গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিঙা লাগিয়ে মানুষের ‘ব্যথা সারানো’, ‘দাঁতের পোকা’ ফেলা, ‘বাতের তেল’ বিক্রি করে উপার্জন করে মেয়েটি। তার রোগী মূলত গ্রামের বয়স্ক নারী-পুরুষ। মুনমুনের ভাষায়, ‘বাতের ব্যথা, চাবানি-কামড়ানি হলে শিঙা লাগাই। ঘা হলে পোকা বাইর করি।’ তবে শিশুদের ‘দাঁতের পোকা’ ফেলা আয়ের অন্যতম উৎস।

নিজেকে ‘চিকিৎসক’ হিসেবেই দাবি মুনমুনের। চিকিৎসার ক্ষেত্রে মন্ত্রই তার প্রধান হাতিয়ার; যদিও আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র তাদের এই চিকিৎসা পদ্ধতি সমর্থন করে না। মন্ত্রগুলো মুনমুন মা আলোমতি বেগমের কাছ থেকে শিখেছে। তার ওই চিকিৎসার কাজে গাছের শিকড়বাকড়, বিভিন্ন পশুপাখির তেল, গরু-মহিষের শিং, নানা জীবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে। আর কাটা-ছেঁড়ার কাজ সারে ব্লেড ও কাকিলা মাছের দাঁত দিয়ে।

মুনমুন সকালে ঝুলি নিয়ে বের হয়, ফেরে পড়ন্ত বিকেলে। দুপুরের খাবারটা রুটি-কলা দিয়েই সেরে নেয়। শরীর খারাপ হলেও বিশ্রাম মেলে না। কারণ, পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ১৩ বছরের এই মেয়ে। তবে দিনভর পরিশ্রম শেষে আয় মন্দ নয়। দিন শেষে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা কোঁচরে গুঁজে ঘরে ফেরে।

কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কি না জানতে চাইলে উত্তরে বলে, ‘এত বড় কইলজা কার, আমাগো কিছু কইবে? বিক্রমপুরের নাম শুনলেই ভয় পায়।’

কিছুক্ষণ গল্প করার পর ক্ষীণ স্বরে মেয়েটি জানায়, রাস্তাঘাটে প্রায়শই বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। অনেকে বাজে ইঙ্গিতও করে। খারাপ লাগলে চুপ করে শোনে না, প্রতিবাদও করে। মুনমুনের কথা, ‘কাজ করালে করাবে, না করালে না। খারাপ কতা কইবে ক্যান?’

মাঠের মধ্যে বাঁশের চাটাইয়ে পলিথিন মুড়িয়ে তাদের অস্থায়ী ঘর। সেখানেই কয়েকটি থালাবাসন, কাপড়চোপড় রাখা। সেগুলো গোছগাছ করতে করতেই বলে, ‘এবার ঈদে ৫০০ টাকা দিয়া একটা শাড়ি লইছি। ছায়া-ব্লাউজও লইছি।’

মুনমুনের বিয়ে হয়েছে আট মাস। তবে এখনো বাবার পরিবারের সঙ্গেই থাকছে। দু-দিন ধরে মোবাইল নষ্ট। স্বামী রাহুল সরদারের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় মনটা একটু ভার। ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভাবি, একদিকে বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সাহসী কাহিনি ছাপা হয় সংবাদপত্রের পাতায়, অন্যদিকের বাস্তবতা এই মুনমুনদের জীবন।

আলাপ শেষে মাটির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটি নাচিয়ে মেয়েটি বলে, ‘জানেন আফা, আমার না একটা স্বপ্ন আছে। গোপন স্বপ্ন।’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই লজ্জা মেশানো কণ্ঠে বলে, ‘খুইব মডেল হইতে মন চায়। টিভিতে দেইখ্যা নিজে নিজে মডেলিং শিখছিও।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে, ‘আমরা গরিব, শিক্ষা নাই। যে স্বপ্ন পূরণ হইবে না, সে স্বপ্ন না দেখাই ভালো। তাই না, আফা?’ এ কথা শেষ হতেই মুনমুনের চোখের দিকে তাকাই। দেখি সেখানে চিকচিক করছে মুনমুনের স্বপ্ন হারানোর কষ্ট।

 

বর্ষায় ইলিশ খিচুড়ি

ঝুম বৃষ্টিতে একটু আধটু বৃষ্টিবিলাস করতে সবারই মন চায়। নাগরিক এই ব্যস্ত জীবনে সেই স্বপ্ন অনেকটাই অধরা থেকে যায়। তবু যেটুকু সুযোগ পাওয়া যায়, খাবার টেবিলে একটু ভিন্নতা এনেও করা যেতে পারে বৃষ্টি বিলাস। তেমনই একটি রেসিপি ইলিশ খিচুড়ি।

উপকরণ : পোলাওর চাল ৫০০ গ্রাম, মসুর এবং মুগডাল মিলিয়ে ৪০ গ্রাম, ইলিশ মাছ ৪ পিস, পেঁয়াজ মিহি করে কাটা ১/২ বাটি, রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৮-১০টি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, তেজপাতা ২টি, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, আদা কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ মোটা করে কাটা ১ বাটি, হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, সরিষার তেল, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি : প্রথমে চাল এবং ডাল একসঙ্গে ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ এবং বাকি সব কুচি করা ও গুঁড়া মসলা এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মসলা ভালো করে কষিয়ে চাল ও ডাল দিয়ে ভালো করে ভেজে তাতে পরিমাণমতো পানি এবং কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।

একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে ইলিশ মাছের টুকরার সঙ্গে অন্যান্য সব বাটা ও গুঁড়া মসলা, কালিজিরা, কাঁচামরিচ এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মাখা মাখা করে রান্না করে ফেলুন ইলিশ মাছ। তারপর খিচুড়ি রান্না হয়ে এলে অর্ধেক খিচুড়ি তুলে নিয়ে রান্না করা মাছ বিছিয়ে উপরের বাকি রান্না করা খিচুড়ি ঢেকে দিয়ে আর ১০ মিনিট চুলায় রেখে রান্না করে গরম গরম পরিবেশন করুন ইলিশ খিচুড়ি।

 

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন শেলী

নেশাগ্রস্ত স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় দুই বছর আগে স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন শেলী আক্তার। স্বপ্ন দেখেছিলেন, নিজেই রোজগার করে স্বাবলম্বী হবেন। মায়ের সঙ্গে মিলে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। পুঁজি তেমন না থাকলেও কোনোভাবে কেটে যাচ্ছিল তাঁর জীবন। প্রতিহিংসাপরায়ণ সাবেক স্বামীর সেটি সহ্য হয়নি। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন সাবেক স্বামী। তখন ঘুমিয়েছিলেন শেলী।  ছুড়ে দেওয়া ওই অ্যাসিডে দগ্ধ হয়েছিলেন পাশে ঘুমিয়ে থাকা মা হোসনে আরা বেগমও (৫৫)।

অ্যাসিডদগ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল মা-মেয়েকে। অ্যাসিডে শেলীর মুখ, মাথার এক পাশসহ শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে যায়। মায়ের পুড়ে যায় শরীরের ১০ শতাংশ অংশ। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শেলীর পরিবার। এ সময় শেলীর পাশে দাঁড়ায় ট্রাস্ট। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা চলে শেলীর। চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে শেলীকে অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য  সহায়ক তহবিল থেকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

সুস্থ হওয়ার পর শেলীর পুনর্বাসনেও এগিয়ে এসেছেট্রাস্ট। অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল থেকে তাঁকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ টাকা পেয়ে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্বল পান শেলী। এখন তাঁর স্বপ্ন, মর্যাদা নিয়ে বাঁচার। তিনি বলেন,  ট্রাস্টের কাছ থেকে অর্থসহায়তা পেয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে দোকানের জন্য টুল, চায়ের কাপ ও খাদ্যপণ্য কিনেছি।’ জানালেন, দিন শেষে খেয়ে–পরে বাঁচার মতো আয় করতে পারছেন এখন।

অ্যাসিড ছোড়ার মামলায় পুলিশ ঘটনার তিন দিন পর শেলীর সাবেক স্বামী মো. জাহাঙ্গীরকে ঢাকার রূপনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় জাহাঙ্গীরকে একমাত্র আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। শেলীদের মূল বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। তাঁরা চট্টগ্রাম নগরে অনেক বছর ধরে থাকছেন। অভাবের কারণে শেলীর পড়াশোনা করা হয়নি। শেলীরা তিন ভাই, তিন বোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তাঁরা কুমিল্লায় থাকেন। বড় দুই ভাই ভ্যান চালান। ছোট ভাই স্কুলে পড়ে। পলোগ্রাউন্ড সিআরবি এলাকায় তাঁরা থাকেন। প্রায় ছয় বছর আগে শেলীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে হয়। জাহাঙ্গীরের মূল বাড়ি রংপুরে। তবে তিনিও পলোগ্রাউন্ড এলাকায় থাকতেন। শেলীর একটি ছেলে রয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের পর জাহাঙ্গীর ছেলেকে রংপুরে তাঁদের বাড়িতে রেখে আসেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন—এখন সেই দিনটির অপেক্ষায় আছেন শেলী আক্তার।

 

দমে যাননি আনিলা

আনিলা বলেন, ‘প্রায় প্রত্যেক ধাপে কষ্ট করেছি। আমি কমার্সে পড়ি তখন। আর আমার শ্রুতলেখক দেওয়া হয় বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে এমন একজনকে। তাঁকে কীভাবে বোঝাব উত্তরটা কেমন করে লিখতে হবে। অ্যাকাউন্টিং প্রিয় বিষয় ছিল, তা বাদ দিলাম। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারিনি। সব মিলে আমার চারপাশের গণ্ডিটা ছোট হয়ে আসছে। বেশির ভাগ জায়গায় র‍্যাম্প নেই। বাবা আর ড্রাইভার চ্যাংদোলা করে আমাকে নিয়ে যান। খারাপ লাগে। অথচ বিভিন্ন জায়গার কর্তৃপক্ষ চাইলেই একটা করে র‍্যাম্প বানাতে পারে। এই তো সেদিন রাস্তায় গর্ত থাকায় বাবা ভারসাম্য রাখতে না পারায় হুইলচেয়ার নিয়ে পড়ে গেলাম। স্বাভাবিকভাবে পড়তে বা বেড়ে উঠতে আমার মতো অন্য শিশুদের যাতে কষ্ট করতে না হয়, তা নিয়ে কাজ করতে চাই।’

জন্মের পরপরই সেরিব্রাল পালসির কারণে শারীরিক সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেন আনিলার বাবা ও মা। সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। এখন পর্যন্ত আনিলা দুই হাত ও দুই পা দিয়ে কিছু করতে পারেন না। সব কাজেই মায়ের সাহায্য নিতে হয়। হুইলচেয়ার কেউ টেনে না নিলে তিনি নড়তেও পারেন না। কথা বলতেও অনেক কষ্ট হয়। বই দেখে পড়তে কষ্ট হয় বলে একজন পড়ে শোনান। লিখতে পারেন না বলে শ্রুতলেখক লাগে সব পরীক্ষায়। কিন্তু আনিলার বুদ্ধিমত্তা সব প্রতিবন্ধকতাকে ম্লান করে দিয়েছে। হুইলচেয়ারে জীবনের গণ্ডি আটকে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আনিলার।

আনিলা গান শিখছেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বর্ষপঞ্জি, বুকলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনিলার তোলা ছবি জায়গা করে নিয়েছে। আনিলা বললেন, ‘নিজে স্বপ্ন দেখতে ও অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে চাই। পেছনের কথা ভুলে সামনে আগাতে চাই।’

মেয়ে আনিলাকে একটু ভালো রাখার জন্যই মা মারুফা হোসেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন ও তরী ফাউন্ডেশন। বর্তমানে তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। আর আনিলার বাবা আশফাক-উল কবীর চাকরি ছেড়ে মেয়েকে সময় দিচ্ছেন আর পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন, নিজের মেয়ে এবং এ ধরনের সমস্যায় যারা আছে তাদের জন্য একটি কমপ্লেক্স তৈরির। যেখানে আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে।

বেশির ভাগ স্বাভাবিক স্কুল আনিলাকে ভর্তি করতে চায়নি। অজুহাত ছিল, আনিলাকে ভর্তি করলে অন্যান্য অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে যাবেন। কোনো কোনো স্কুল ভর্তি করলেও দোতলায় ক্লাস থাকায় পড়া সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো স্কুলের চরম অসহযোগিতা আনিলা ও তাঁর বাবা–মায়ের যন্ত্রণাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিত। একটি স্কুল নিচতলায় বসে ক্লাস করতে দিলেও আনিলার ঠাঁই হয়েছিল টয়লেটের পাশে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো, স্কুলে পড়াশোনা বাদ। যে নামকরা স্কুল ভর্তি নেয়নি, সেই স্কুলই সানন্দে তাদের কোচিংয়ে ভর্তি করে। কোচিং আর বাসায় প্রাইভেট পড়েই আনিলা ‘ও লেভেল’ শেষ করেছেন।

আনিলা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে এ পর্যন্ত লন্ডন, ভারত, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও ভুটানে ভ্রমণ করেছেন। আর বাবা–মায়ের সঙ্গে দেশের আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কক্সবাজারের সমুদ্র খুব টানে। বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় হুইলচেয়ার নিয়ে সমুদ্রের একদম কাছ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কক্সবাজারে কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই মন খারাপ হয়। আনিলাকে পাহাড় ততটা টানে না। কেমন যেন শান্ত পরিবেশ।

মা মারুফা হোসেন বললেন, ‘আমি যা দেখব, যা উপভোগ করব, আমি চাই আমার মেয়েও তা দেখবে ও উপভোগ করবে। আমাদের মেয়ে যা দেখতে পারবে না, আমরাও তা দেখব না। একবার মনে হলো, মেয়ে তো নৌকায় ওঠেনি। তারপর মেয়েকে নিয়ে সিলেটের লালাখালে নিয়ে নৌকায় তুললাম। মেয়ে সেন্ট মার্টিন, ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করবে না, তা হতেই পারে না।’

কিন্তু তারপরও মায়ের মন খারাপ হয়। তিনি তাঁর ১৯ বছর বয়সে যা যা করতেন, তা তো মেয়ে করতে পারছে না। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে সময়টুকু দেন মেয়েকে। ছোটবেলা থেকেই মেয়ের সঙ্গে নানান গল্প করেন। সব তথ্য জানান। ইচ্ছে করেই বুয়া এলে কী বলতে হবে বা এ ধরনের নানান টুকিটাকি দায়িত্ব দেন মেয়ের ঘাড়ে, যাতে করে মেয়ে ক্ষমতায়িত হতে পারে। কেননা একদিন বাবা-মাকে ছাড়াই এ পৃথিবীতে মেয়েকে টিকে থাকতে হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে মেয়ের ছোটবেলা থেকেই।

আনিলার মা বলেন, অনেকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে কথা আর হুইলচেয়ার দেখাতে থাকে। মেয়েকে অটিস্টিক বলে। মেয়ের যে অর্জন, তা কেউ জানতে চায় না। মা বললেন, মেয়েকে নিয়ে বের হলে মানুষজনও হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র না দেখে মেয়েকে ঘুরেফিরে দেখতে থাকে। আনিলা যোগ করলেন, ‘একবার হাসপাতালে ভর্তি হলাম। একজন নার্স বললেন, এই ভাঙা হাতে কেমনে করে ইনজেকশন পুশ করব?’

আনিলা যখন শিশু তখন সেভ দ্য চিলড্রেনের ন্যাশনাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে হন গ্লোবাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য। ২০১১ সালে লন্ডনে এ প্যানেলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তরী ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গ্রামে গিয়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়েছেন ‘সুবর্ণ নাগরিক’–এর কার্ড।

আনিলার বাবা আশফাক-উল কবীর বলেন, ‘হুইলচেয়ার কোনো সমস্যা না, সমস্যা হলো আমাদের সমাজের নানান অব্যবস্থাপনা ও মনমানসিকতা। আনিলা আমাদের জন্য কোনো সমস্যা না। ওর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা। আমরা চাই সম্ভাবনাটুকু কাজে লাগাতে।’

মা মারুফা জানালেন, আনিলাকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো পারিবারিক বিরোধ তৈরি হয়নি। পরিবারে স্বামী ও অন্যরা সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

লেবুর নানা গুণ

গরম ভাত কিংবা খিচুড়ির সঙ্গে লেবু না হলে অনেকের যেন চলেই না। লেবুর শরবত গরমের সময়টাতে সবার কাছেই প্রিয় একটি পানীয়। আবার আচার তৈরি করেও অনেকে খেয়ে থাকে। ছোট একটা ফল কিন্তু এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, বি৩, বি১, বি২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, কার্বহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন । লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধে খুব কাজ দেয়। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে ফিট রাখে। এটি আপনার শরীরের পি এইচ ঠিক রাখে। লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।

লেবুর ভিটামিন সি আপনার শরীরের রিঙ্কেল কমাতে সাহায্য করবে। লেবু রুটিন অনুযায়ী খেলে চোখের অসুখের দূর হয়। লেবুতে ২২ প্রকার ক্যান্সার বিরোধী যৌগ আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এটি অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। লেবু রক্তনালীসমূহকে শক্তিশালী করে। এটি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। লেবু

ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ত্বকের অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। লেবুর রস একটি  প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক, যদি এটি মুখে মাস্ক হিসেবে নেয়া হয় তবে এটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করবে এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে দূরে রাখবে। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা একটি ছোট তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে স্কিন পরিষ্কার করলে ব্রণ কমে যায়। এটি রাতে মুখ ধোয়ার পর ব্রণের দাগে লাগিয়ে রাখলে দাগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

 লেবু ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বয়সের কারণে মুখে দাগ পড়লে তাতে লেবুর রস ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়ে যায়। শক্ত ও স্বাস্থ্যবান নখ পেতে একটি বাটিতে লেবুর রস নিয়ে তাতে ১০ মিনিট নখ ভিজিয়ে রাখুন, এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি আপনার চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।

৩-৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস মিক্স করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখুন।

কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং আমলকীর রস মিক্স করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।৪/১ লেবুর রস, কিছু লবণ এবং লেবুর রসের অর্ধেক পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁতে ঘষুন। এটি আপনার দাঁত আরও সাদা করবে।

 

এখনো বাইসাইকেল চালান বাংলা নানি

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩ নভেম্বর। সে হিসাবে প্রায় ৭০ বছর বয়স জহিরন বেওয়ার। তবে তাঁর ছেলে তোরাব আলীর মতে, জহিরন বেওয়ার বয়স ৮০ বছর। কথা সেটা নয়। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের এই নারী এখনো সাইকেল চালান। আর সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাস্থ্যসচেতনতার কাজ করেন। স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে থাকেন।

কিছুদিন আগে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামে গিয়ে জানা গেল, প্রয়াত ছাহেদ আলীর স্ত্রী জহিরন বেওয়াকে সবাই ‘নানি’ বলে ডেকে থাকেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। ছোট ছেলে তোরাব আলীর বয়স যখন সাত-আট মাস, তখন জহিরন বেওয়ার স্বামী মারা যান। সালটা ১৯৬৯ বা ১৯৭০। সংসারের হাল ধরতে হয় জহিরন বেওয়াকে। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা আর এবাড়ি-ওবাড়ি টুকটাক কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন।

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা জহিরন বেওয়া ১৯৮০ সালে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে ধাত্রী ও সেবিকা হিসেবে কাজ পান। জহিরন কাজ করতেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী রেহেনা বেগমের অধীনে। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পুরুষ ও মহিলা বন্ধ্যাকরণ রোগীদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন জহিরন।’

১৯৯৫ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে এখনো বাইসাইকেল চালিয়ে আশপাশের কয়েক গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করার কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ সাধারণ রোগের ওষুধ বিক্রি করেন। জহিরন বলেন, ‘এই কাজ এখন একই সঙ্গে শখ ও পেশায় পরিণত হয়েছে।’

গ্রাম্য ডাক্তার বা পল্লিচিকিৎসকেরা যে ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন, জহিরন বেওয়া সেটাই করছেন বলে জানালেন আদিতমারীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাশেম আলী। দীর্ঘদিন থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে এ কাজ করছেন তিনি।

সরকারি কাজ ছাড়ার পর জহিরন বেওয়া একবার ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভোটে পারি নাই, কিন্তু সব সময় মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াই। টাকার বিনিময়ে কিছু ওষুধ বিক্রি করি। রোগীর সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালে যেতে বলি। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজ করে যেতে চাই।’

তালুক দুলালী গ্রামেই কথা হয় দুলালী পাগলার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার, সহকারী শিক্ষক জোৎস্না বেগম, সাজেদা বেগম, সুরতন বেগম ও ফজিলা বেগমের সঙ্গে। সবাই জানান, জহিরন বেওয়া স্বল্পশি‌ক্ষত হলেও ধাত্রী ও সেবিকার কাজের অভিজ্ঞতায় ছোটখাটো অসুখে মানুষের পাশে দাঁড়ান। এতে অনেকেরই উপকার হয়।

আর সেই উপকার করতে আজও জহিরন বেওয়া সাইকেল নিয়ে বের হন গ্রামের রাস্তায়। হাজির হন বাড়ি বাড়ি।

 

নূরজাহান বেগম লাখো নারীর স্বপ্নের দূত

‘আমারে তুমি করিবে ত্রাণ,
এ নহে মোর প্রার্থনা’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা দিয়েই নূরজাহান বেগমকে তাঁর জন্মদিনে (৪ জুন) স্মরণ করছি। কেন এই কবিতাটি বেছে নিলাম সেই ঘটনাটিও একটু বলতে চাই। ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর। সেদিনই নূরজাহান বেগমের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ফোন করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল নূরজাহান বেগমের কণ্ঠস্বর। গবেষণার কাজে  অফিসে যেতে হবে শুনেই তিনি আমাকে যা বলেছিলেন তা অনেকটা এ রকম—এত দূরে আসতে হয়তো তোমাকে অনেক প্রতিবন্ধকতা এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ তুমি প্রথম আসছ এবং তুমি একজন নারী। মনে রাখবে নতুন পথের যাত্রায় অনেক বাধা আসবে। কিন্তু যাত্রা বন্ধ করা যাবে না। তুমি যখন সেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে, সেখান থেকে ফেরার পথটা তোমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আসার পথের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব বলেই যাওয়ার রাস্তাটা এতটা সুগম হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ কথা স্মরণ রেখো।

দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন আত্মপ্রত্যয়ী নূরজাহান বেগমের সঙ্গে এভাবেই প্রথম পরিচয়ের সূত্রপাত। রবিঠাকুরের ‘আত্মত্রাণ’ কবিতার উল্লিখিত লাইন দুটো যেন এই নারীর অন্তর্নিহিত চরিত্রকেই প্রতিফলিত করছে।

২০০৫ সাল থেকে নূরজাহান বেগমকে নিয়ে আমার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে যে সামান্য জীবন ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে, তাতে নূরজাহান বেগমের সংগ্রামী জীবনের যে ছবি পাওয়া যায় তা সত্যিই বিস্ময়কর।

নূরজাহান বেগম ছিলেন স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই বিষয়ে নূরজাহান বেগম বলেছিলেন, ‘নারী মুক্তির অর্থে আমরা কেউ কেউ অবচেতনভাবে স্বামীকে কিছুটা তোয়াক্কা না করাকেও বুঝে থাকি। কিন্তু আমার জীবনে আমার স্বামী রোকনুজ্জামান খান স্বর্গের দূত হয়েই এসেছিলেন। তাঁর সঠিক সহযোগিতা আমাকে বেগম পত্রিকায় স্থায়িত্ব প্রদান করেছে।’ তাঁর এই কথাই প্রমাণ করে তেজস্বী নূরজাহান বেগম অবচেতন বা সচেতনভাবে স্বামীকে ‘শক্র’ ভাবার মতো মনোভাব কোনো দিন পোষণ করেননি। গবেষণা চলাকালে নূরজাহান বেগম বারবার বলেছেন, ‘একজন উদার পিতা এবং আদর্শ স্বামী—এই দুই পুরুষই আমার জীবনে সফলতা এনে দিয়েছেন।’ তিনি প্রতিটি পরিবারে এমন বাবা ও স্বামীর প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। পিতা ও স্বামী যদি স্বাধীনচেতা হন, তবে নারীর আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

একই সঙ্গে তিনি তাঁর মায়ের অবদানের প্রতি মাথানত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন প্রতিক্ষণ। নূরজাহান বেগম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার মায়ের সহযোগিতা না পেলে আমার কিংবা বাবার ধীরস্থিরভাবে কাজ করা সম্ভব হতো না। ছোটবেলা থেকে সাহস এবং উদ্দীপনার ভিত রচনাকারী আমার মা আমাকে সর্বদা মাথা উঁচু করে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং দুস্থ নারীদের সাহায্য করতে বলেছেন।’

আমি নূরজাহান বেগমকে ‘আপা’ সম্বোধন করতাম। ছিলাম তাঁর নিয়মিত অতিথি। আপা গল্প করতে খুব ভালোবাসতেন। পরিচিত এবং আপনজনদের তিনি কখনো না খাইয়ে ছাড়তেন না। আপার আতিথেয়তা ছিল সর্বজনবিদিত। আলাপচারিতায় তিনি জেনে নিয়েছিলেন আমার প্রিয় খাবারের কথা। যখনই তিনি শুনতেন আমি তাঁর বাসায় যাচ্ছি, হাজির হয়েই দেখতাম কত খাবারের আয়োজন। হরেক রকমের মিষ্টি সাজানো থাকত আমার জন্য। খাবার সামনে রেখে কাজ করলেই তিনি শুধু বকা দিয়ে বলতেন, কিরে তুই খাচ্ছিস না কেন? না খেলে শক্তি পাবি কোথায়? শক্তি না পেলে এগিয়ে যাবি কীভাবে? আমি আপার অন্তরের এত কাছাকাছি চলে এসেছিলাম যে উনি আমাকে ‘তুই’ সম্বোধনে সিক্ত করলেন। আপার বাসায় ১১টা বিড়াল ছিল। মজার বিষয় ওদের প্রত্যেকের আলাদা নামও ছিল। যদিও আপার ডাক্তার হাঁপানির কারণে বিড়ালগুলোকে সরাতে বলেছিলেন। কিন্তু আপা তাঁর মায়ার টানে সেগুলোকে দূরে সরাতে পারেননি।

একদিন হলো কি, টিপু নামে এক বিড়ালকে আপা যত্ন করে খাওয়াচ্ছিলেন, তখন আমি সেই ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত হতেই তিনি বিড়ালটিকে বললেন, দেখ টিপু আমার সঙ্গে তোরও ছবি তোলা হচ্ছে। এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা গল্পে মশগুল হয়ে থাকতাম। গল্পের বিষয় আমাদের লেখার জগৎ, সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জগতের বিভিন্ন খবরাখবর। আপার বড় মেয়ে ফ্লোরা, ছোট মেয়ে মিতিসহ অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হতো।

২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল আপার বাসায় গেলে ফিরে আসার সময় বলেছিলেন ‘আবার কবে আসবি বল?’ তাঁর এ কথা শুনেই বলি, ‘কেন খাবার তৈরি করে রাখবেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আহা। কী রাজভোগ যেন তোকে খাওয়াই? তুই আসবি এটাই আমার আনন্দ।’ তখন আমি তাঁর নিঃসঙ্গতার কষ্ট টের পাই। বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় আমি ভাবিনি এটাই আপার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।

আপাকে কোনো দিন ক্লান্ত হতে দেখিনি। অফিসে তিনি যতক্ষণ থাকতেন ততক্ষণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। বাসায়ও তিনি প্রচুর ব্যস্ত থাকতেন। অফিসে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক দিলরুবা খান। অফিসে দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন আহম্মদ আলী। আমি যতবার অফিসে গিয়েছি ততবারই আহম্মদ আলী আপার কাজের ধরন সম্পর্কে আমাকে বলেছেন, আপা এত যত্নশীল তাঁর কাজে যে কোনো কিছুই ভোলেন না। সবাইকে নিজের মতো কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং সবাইকে খুব ভালোবাসেন। এ জন্য সুদীর্ঘকাল ধরে কাজ করার পরও তাঁকে ছেড়ে যেতে পারেননি আহম্মদ আলী।

২০০৯ সাল। এক রাতে হঠাৎ আপা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাঁপানির কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। দ্রুত আপাকে মনোয়ারা হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। আমার বাসা হাসপাতালের কাছে থাকায় আমি তাঁকে দেখতে গেলাম। রুমে ঢুকে আপার হাতে হাত রাখতেই উনি চোখ খুলে তাঁর ছোট মেয়ে মিতিকে বলেছিলেন, ‘এই মেয়েটা আমাকে নিয়ে গবেষণা করার সময় অনেক কষ্ট  করছে। হয়তো আমার জীবনে এইটাই শেষ কোনো কাজ।’ আমার তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুই আমার অনেক ছবি তুলেছিস। সব সিডি করে আমাকে দিবি।’

কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারিনি আমি। ছোট মেয়ে মিতি খুব কাঁদছিলেন। হঠাৎ ছোট মেয়েকে ডেকে বললেন ছবি তোলার জন্য। ক্যামেরা রেডি করার পর দেখি উনি শোয়া থেকে উঠে বসেছেন, হাতে স্যালাইন লাগানো। আমি তাকে শুতে বলার সঙ্গে সঙ্গে উনি মৃদু হেসে ভারী গলায় বলেছিলেন, ‘এখনো তো শুয়ে পড়িনি। যখন শুয়ে পড়ব তখন আর উঠব না।’ কতটা দৃঢ় ও শক্ত মনোবল থাকলে একজন মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে নিজের উপলব্ধি ব্যক্ত করতে পারেন! আমি সত্যি এতে বিস্মিত হই।

২০১৬ সালের ২৩ মে আপা অসুস্থতার কারণে ৯১ বছর বয়সে মারা যান। ৩৮ নম্বর শরৎ গুপ্ত রোডের আপার বাড়িটিরও এখন ধীরে ধীরে বয়স বাড়ছে। সময় চলছে তার নিজস্ব গতিতে। রাত কেটে আবারও সকাল হয়। আপা নেই, আছে লয়াল স্ট্রিটের বেগম অফিস। সেখানে জমে আছে কত লাখো মেয়ের স্বপ্ন।

 

চুলের পরিচর্যায় মেহেদী পাতা

চুলের যত্নে মেহেদী পাতার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। শুধু হাত আর নখ সাজাতেই নয়, চুল সুন্দর করতেও এর জুড়ি নেই। রূপসচেতন যে কেউই সপ্তাহে অন্তত একদিন মেহেদী পাতা দিয়ে চুলের পরিচর্যা করে থাকেন। নানা উপায়ে নেয়া যায় এই যত্ন। চুল উজ্জ্বল আর ঝলমলে করতে এবং খুশকি তাড়াতে মেহেদী পাতার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। চলুন তবে জেনে নেই। ঘন চুল পেতে চাইলে ১ কাপ পরিমাণ মেহেদী পাতা বাটা, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২/৩ টেবিল চামচ টক দই ভালভাবে মেশান। এবার মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। পরের দিন শ্যাম্পু করে চুল ধুবেন। মাসে মাত্র ২ বার ব্যবহার করুন চুলে মেহেদী পাতা। দেখবেন চুল অনেক ঘন এবং কালো হয়ে গিয়েছে।

চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা রোধ করতে চাইলে ১ কাপ মেহেদী পাতা বাটার সাথে ২/৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ টি ভিটামিন ই ট্যাবলেট মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু করে। সপ্তাহে ১ দিন ব্যাবহারে চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা একেবারে বন্ধ হবে। মেহেদী চুলের জন্য কন্ডিশনারের কাজ করে চুলের রুক্ষতা এবং চুলের আগা ফাটা রোধ করে।

মেহেদী সাদা চুলের জন্য অসাধারণ হেয়ার কালারের কাজ করে। অনেকের অল্প বয়েসেই মাথার চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। তারা নিয়মিত মেহেদী পাতা ব্যবহার করলে চুলের সাদাটে ভাব দূর করতে পারবেন। ২ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ো ১ কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে দিয়ে এতে রঙ চা দিন ১ চা চামচ এবং ২ টি লবঙ্গ। এবার এই পানিতে পরিমাণমতো মেহেদী পাতা বাটা ব্যবহার করে থকথকে পেস্টের মত তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা। ২ ঘণ্টা পরে চুল সাধারণ ভাবে ধুয়ে ফেলুন। সাদা চুল ঢেকে যাবে সহজেই ।

মাথা থেকে খুশকি তাড়াতে মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে নিন। পরিমাণমতো সরিষার তেল গরম করে এতে মেহেদী পাতা ফেলে দিন। ঠান্ডা হলে এই তেলে মেথি বাটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে লাগান। ২ ঘণ্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল খুশকিমুক্ত হবে।

 

রোজায় কী খাবেন, কী খাবেন না

রোজায় কী খাবেন আর কী খাবেন না, এই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন অনেকেই। রোজা রেখে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে সব খাবারকেই মুখরোচক আর মজাদার মনে হয়। তখন যা দেখে তাই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সবধরণের খাবার এই সময় শরীরের জন্য উপযোগী নয়। চলুন জেনে নেই রোজায় কী খাবেন আর কী খাবেন না।

অনেকেই সেহরিতেই চা কফি পান করে থাকেন। কিন্তু এটি একদমই ঠিক নয়। চা-কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে, তাই সেহরিতে চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

পাউরুটি বা শুকনো খাবার খেয়ে রোজা রাখেন অনেকেই। কিন্তু এটি একদমই ঠিক নয়। কারণ এটি স্বাভাবিকভাবে আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করবে তবে তা অল্প সময়ের জন্য। এটি শরীরকে পানিশূন্য করে শক্তিহীন করে তুলবে। সুতরাং শুকনো ও প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট থেকে দূরে থাকুন।

গরমকালে রোজা হলে মানুষ বেশি দুর্বলতা বোধ করে পানির অভাবে। প্রচণ্ড রোদ এবং গরমে দেহ পানিশূন্য হয়ে যায়, তাই সেহরিতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে নিন। প্রায় আধা লিটারের মতো পানি পান করবেন। প্রয়োজনে আরও বেশি পান করুন, কিন্তু এর চাইতে কম করবেন না। শরীর পানিশূন্য হয়ে গেলে শক্তি কমে যায়, তাই এমন খাবার খেতে হবে যা দেহে এনার্জি ধরে রাখতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খাবেন পরিমাণ মতো। এতে ক্ষুধার উদ্রেকও কম হবে এবং এনার্জিও থাকবে অনেক।

একটি উপায়ে সারাদিন দেহকে পানিশূন্যতার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন, আর তা হলো পানিসমৃদ্ধ ফল রাখা সেহরির তালিকায়। আনারস, কমলা, তরমুজ ইত্যাদি ধরণের ফল খান প্রতিদিনের সেহরিতে এতে করেও পুরো দিন সুস্থ থাকতে পারবেন। মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মিষ্টি খাবার আপনার দেহের এনার্জি লেভেল নষ্ট করে দেবে দিনের বেলায় যার কারণে আপনি দুর্বলতা অনুভব করবেন পুরো দিন।

খেজুর দেহের এনার্জি ধরে রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। খেজুর যে শুধুমাত্র ইফতারেই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সেহরির সময়েও দুটো খেজুর খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে পুরো দিন দেহে এনার্জি পাবেন। ভারী খাবার এবং অতিরিক্ত তেল চর্বি ধরণের খাবার খাবেন না একেবারেই সেহরিতে। বিশেষ করে খিচুড়ি, পোলাও বা বিরিয়ানি ধরণের খাবার তো একেবারেই নয়। কারণ এগুলো পুরো দিনই আপনার পেটের সমস্যা ও অস্বস্তির জন্য দায়ী থাকবে।

 

ঈদের নাটকে চঞ্চল-তিশা

ঈদের জন্য নির্মিত সাত পর্বের বিশেষ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করলেন চঞ্চল চৌধুরী ও নুশরাত ইমরোজ তিশা। মাসুম শাহরীয়ারের রচনায় এবং আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় নাটকটির নাম ‘লজ্জাবতী লায়লাকে নিয়ে জুলফিকারের চমক’। সম্প্রতি উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে এই ধারাবাহিক নাটকটির শুটিং সম্পন্ন হয়।

নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘আমরা নির্লজ্জের মতো নানা অন্যায়-অনিয়মে ডুবে আছি। একমাত্র লজ্জাই আমাদের মুক্তির উপায়। লজ্জাবতী লায়লার লজ্জার কারণ চিহ্নিত হয় একটা অসুখ, সোশাল অবস্টাগ্রল সিনড্রম। তার এই লজ্জাকে ঘিরেই দ্বিতীয় কিস্তিতে আমরা আমাদের টিভি নাটকের নানা অসঙ্গতিগুলো দেখবো স্যাটায়ারের আদলে।’ নাটকে আরও অভিনয় করেছেন সুষমা সরকার, আশরাফুল আশিস, আইরিন আফরোজ, শাহনেওয়াজ রিপন, রাশেদ মামুন অপু, বিনোদন সাংবাদিক পান্থ আফজাল, আঁঁখি আফরোজ, জয়নাল জ্যাক, খায়রুল আলম টিপু, আহমেদ সুজন প্রমুখ। ‘লজ্জাবতী লায়লাকে নিয়ে জুলফিকারের চমক’ নাটকটি দেশ টিভির ঈদ অনুষ্ঠান মালায় প্রচার হবে জানা গেছে।

 

সেহরিতে স্বাস্থ্যকর সবজি মুরগি

স্বাস্থ্যকর খাবার সবসময়ের জন্যই প্রয়োজন, সেহরিতে তো অবশ্যই। দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকতে হয় বলে আমাদের শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সেহরির খাবার স্বাস্থ্যকর হওয়া জরুরি। তবে ঘুম ভেঙে উঠে খেতে হয় বলে অনেকেরই মুখে ঠিকভাবে রুচি থাকে না। সেজন্য সেহরির খাবার হওয়া চাই মুখরোচক। তেমনই একটি খাবার সবজি মুরগি। রইলো রেসিপি

Murgi

উপকরণ : গাজর ফুলকপি আলু টুকরা করা পরিমাণমতো, মুরগি ৫০০ গ্রাম মাঝারি টুকরা, লবণ-তেল-হলুদগুড়া- পরিমাণমতো, আদা রসুনবাটা এক টেবিলচামচ, পেঁয়াজকুচি আধকাপ, মরিচগুড়া এক চা চামচ, জিরাগুড়া এক চা চামচ, গরম মসলা গুড়া আধ চা চামচ, টকদই, কাঁচামরিচ চেরা ৫/৬ টি, গোলমরিচ গুড়া আধ চা চামচ, সয়াসস ও ভিনেগার এক টেবিল চামচ করে, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো।

প্রণালি : মাংস লবণ, গোলমরিচ গুড়া, টকদই, সয়াসস ও সিরকা দিয়ে কিছুক্ষণ মেখে রাখুন। সবজিগুলো লবণ দিয়ে একটু সেদ্ধ করে রাখুন। পাত্রে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ভেজে সব মসলা দিয়ে কষান। এবার মাংস দিয়ে কষিয়ে সবজি ও পানি দিন। মাখা মাখা হলে কাঁচামরিচ চেরা, জিরাগুড়া , গরমমসলা গুড়া, ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

 

রোজায় ত্বক সুস্থ রাখতে

শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান। রমজান মাসের খাদ্যাভাস বছরের অন্যান্য দিনের মতো নয়। আর তাই এসময়ে ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে নিতে হবে বাড়তি কিছু যত্ন। সেহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব বেশি পানি পান করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নিজের দিকেও। গরম এবং পানিশূন্যতার কারণে যেন অসুস্থ হয়ে না যান সেজন্য যতটা সম্ভব রৌদ্র এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন। এছাড়াও নিতে হবে বাড়তি কিছু যত্ন। চলুন জেনে নেই- শরীরের পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন জরুরি। প্রতিটি মানুষেরই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করবে, আর জিঙ্ক ত্বককে বিকিরণ থেকে রক্ষা করবে। আপনার ত্বক এমনকি পুরো শরীরের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন প্রতি রাতে গড়ে ৮ ঘণ্টা ঘুম। তাই সুস্থ-সুন্দর থাকতে একটু কষ্ট হলেও রাত না জেগে চেষ্টা করুন একটা ভালো ঘুম দেওয়ার।

Roja

প্রতিদিন সাবান ব্যবহারে আপনার ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। তাই একটি ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন, যা আপনার ত্বককে রুক্ষতা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। প্রতিদিন গোসলের পর মনে করে লোশন লাগান, এতে আপনার ত্বক ভালো থাকবে। গাজর, বাঁধাকপি ও ওলকপি একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। সিদ্ধ হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিন। মুখ ধোয়ার জন্য এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। বাকি ভেজিটেবল ম্যাশ করে নিন। ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, বাঁধাকপিতে প্রচুর মিনারেল রয়েছে। ওলকপি পাওয়ারফুল ক্লিনজার। শুষ্ক ত্বকের জন্য এই কম্বিনেশন খুবই উপকারী। ডিমের কুসুমের সঙ্গে আধা চামচ মধু, ১ চা চামচ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

সারাদিন রোজা রেখে বিকেলে ভেঙে ফেলতাম : পপি

রমজান মাস রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস। প্রত্যেক মুসলমানই চেষ্টা করেন প্রতিটি রোজা রাখার। তারকারাও এর ব্যতিক্রম নন। শুটিংসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি তারাও রোজা রাখার চেষ্টা করেন। চিত্রনায়িকা পপিও তেমনটাই করেন। পাঠকদের জন্য রমজানের দ্বিতীয়দিনে চিত্রনায়িকা পপি জানালেন তার প্রথম রোজা রাখার অভিজ্ঞতা

‘ছোটবেলার সব কিছুই আনন্দের ছিল। তখন খুলনার খালিশপুরে থাকতাম। আমি যখন ছোট তখন রোজা শীতের মধ্যে আসত  উফ, সে কি হাড় কাঁপানো শীত! তার মধ্যে সেহরির সময় উঠে মাকে দেখতাম রান্না চড়াতেন। মা এমনভাবে উঠতেন যেন আমরা আওয়াজ না পাই। কারণ আমরা উঠলেই তাদের সঙ্গে সেহরি খেয়ে রোজা রাখার বায়না থাকত   তখন ছোট থাকায় মা চাইতেন না রোজা রাখি। তবে সেহরি খেলেই রোজা আর ভাঙানো যেত না। দিনে বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম কখন ইফতারের সময় হবে কখন মসজিদ থেকে আজানের আওয়াজ আসবে  ছোটবেলার রোজা রাখার কথা মনে হলেই উৎফুল্ল হয়ে উঠি।’

এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ লাগত বিকেলের দিকে  পানি খাওয়ার জন্য হাহাকার করে উঠতাম। কোনো কোনোদিন না পেরে বিকেলের দিকে রোজা ভেঙে ফেলতাম। অথচ সারা দিন না খেয়ে থেকেছি । আসরের আজানের দিকে রোজা ভেঙেছি অনেকবার। তবে কাউকে বলতাম না। সবাই জানত আমি রোজা রাখছি সেইসব কথা মনে পড়লে এখন হাসি পায়।’

অনেকদিন পর ‘রাজপথ’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন পপি  জাভেদ জাহিদের পরিচালনায় পপির বিপরীতে দেখা যাবে জায়েদ খানকে  পপিকে সর্বশেষ রুপালী পর্দায় দেখা যায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়া কয়েক বছরের পুরনো ‘পৌষ মাসের পিরিত’ ছবিতে  এছাড়া ‘সোনাবন্ধু’ নামের আরেকটি ছবি মুক্তি অপেক্ষায় রয়েছে  গেল সপ্তাহে ‘মেন্টাল’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছেন পপি, যেটি ঈদে আরটিভিতে প্রচার হবে ।

 

আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হতে যাচ্ছেন রুনা লায়লা

দীর্ঘ সংগীতজীবনে বহু পুরস্কার অর্জন করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত গায়িকা রুনা লায়লা। তবে এবারের সম্মাননা বা পুরস্কারের বিষয়টি একটু ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যারিনু ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট’ রুনা লায়লাকে ‘ডিস্টিংগুইশ সেলিব্রেটি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড’এর জন্য মনোনীত করেছে। বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে, ‘বিশিষ্ট তারকা কীর্তিমান পুরস্কার’। ‘ইন্সপায়ারিং ওম্যান ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ইন দ্য গ্লোবাল ইকোসিস্টেম’-শীর্ষক অনুষ্ঠানে ২৫ মে রুনা লায়লার হাতে সম্মানজনক এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

রুনা লায়লা জানান, ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইউনাইটেড নেশনস প্লাজায় ‘ইন্সপায়ারিং উইমেন ক্রিয়েটিভিটি এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইন দ্য গ্লোবাল ইকোসিস্টেম’ অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহণ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ, উপমহাদেশ ও বিশ্ব সংগীতে অবদান এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে রুনা লায়লা বলেন, ‘প্রতিটি সম্মাননাই এক ধরনের স্বীকৃতি। সে হিসেবে প্রতিটি সম্মাননাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এত বছর যেসব পুরস্কার পেয়েছি, প্রতিটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এটা আরও বেশি সম্মানের। কারণ, এটি দেওয়া হবে জাতিসংঘে। শুধু আমার নয়, এটা পুরো বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বলে মনে করছি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করছি। বিশেষ করে সংগীতের মানুষদের জন্য বিষয়টি আরও আনন্দের।’

সংগীত, শিল্পচর্চা এবং নারী উন্নয়নের অনুপ্রেরণা হিসেবে তিনি এই সম্মাননা পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড টাওয়ারে এক অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ই-মেইলের মাধ্যমের রুনা লায়লাকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

রুনা লায়লা বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল গায়িকা হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তাঁর সুনাম আছে। রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দী, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, ইতালীয় ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। ২০১৫ সালে রুনা লায়লা তার সংগীত জীবনের পাঁচ দশক পূর্ণ করেছেন। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশী’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

 

পবিত্র কাবা শরীফ মুসলিম উম্মাহর জন্য নিরাপদস্থান

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন মুসলিম উম্মাহর ইমাম। আর তা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন আল্লাহ তাআলা। আর ইমামের ইবাদতের জন্য ক্বিবলা হিসেবে বাইতুল্লাহকে নির্ধারণ করেছেন। নির্ভয়ে নিরাপদে ইবাদত-বন্দেগির জন্য বাইতুল্লাহকে করেছেন নিরাপদ নগরী।

আর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে এ মর্মে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল যে, বাইতুল্লাহকে রুকু, সিজদা ও তাওয়াফের জন্য পূতঃপবিত্র করার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কা`বা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিলাম। এবং (বলেছিলাম) তোমরা মাক্বামে ইবরাহিমকেই (ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দাঁড়ানোর জায়গাকে) নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ করো।

আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে (আলাইহিস সালাম) তাগিদ দিয়ে বলেছিলাম, আমার এই গৃহকে (কা`বা) তাওয়াফকারী, ই`তিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১২৫)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলঅ এখানে বাইতুল্লাহর দুটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
>> বাইতুল্লাহ হচ্ছে এমন এক পুণ্যস্থান বা নিরাপদ ভূমি; যেখানে মুসলিম উম্মাহ’র কেউ একবার গেলে বারবার যাওয়ার জন্য ব্যকুল থাকে। এটা এমন এক স্পৃহা যা কখনও মিটে না, বরং দিন দিন তা বৃদ্ধি পায়।

>> বাইতুল্লাহ হলো নিরাপদস্থল। এখানো কোনো শত্রু বা বিপদের ভয় থাকে না। তাই জাহেলিয়াতের যুগেও মানুষ কোনো প্রাণের দুশমনকেও আক্রমণ করতো না। ইসলাম এ মর্যাদা ও পবিত্রতাকে শুধু স্থায়ীই করেনি বরং তা আরও বিশেষভাবে আরোপ করেছে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ বাইতুল্লাহ চত্ত্বরে স্থাপিত ঐতিহাসিক মাকামে ইবরাহিমের পাশে তাওয়াফ সমাপ্ত করে দুই রাকাআত নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।

পাশাপাশি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা যেন কা`বা চত্ত্বরকে ইবাদত-বন্দেগির জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখে।

আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশ আজও বিদ্যমান। আজও কাবা প্রাঙ্গণ নিরাপদ। তাওয়াফ শেষ করে হজ ও ওমরা পালনকারীরা মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করে।

বাইতুল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিকারী; হজ ও ওমরা পালনকারী দর্শণার্থীদের জন্য বাইতুল্লাহ চত্ত্বর সদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। আল্লাহ তাআলা নির্দেশের এ ধারা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে অবিরাম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ কা`বার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে; মাকাকে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করতে; নিরাপদ সম্মিলনস্থলের পবিত্র রক্ষা করতে; ইবাদাতকারী, তাওয়াফকারী, ই`তিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীসহ প্রত্যেকের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা ও দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।