banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 340 বার পঠিত

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে-শেষ পর্ব

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে এ জন্য নয় যে তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,
বরং এ জন্য যে আপনি শান্তিতে থাকার যোগ্য”
জীবনের তিক্ততা,শত্রতা, আক্রোশ,বিষাক্ততাকে ছেড়ে দিন,চলে যেতে দিন(let go)।
আমরা পৃথিবীতে যখন আসি তখন কষ্ট,যন্ত্রনা,প্রতারনা,বিশ্বাস- ঘাতকতা,আক্রোশ,শত্রুতা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না।

১। যারা আঘাত করে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করুন:
ক্ষোভ,ক্রোধ,আক্রোশ,অপমান বোধের কারনে এ রকম ভালোবাসা দেখানো কঠিন মনে হতে পারে।
তবে নিজের মনের শান্তির জন্যই আমাদেরকে তেমনটি করতে হবে।
মার্টিন লুথার কিং(জুনিয়র) বলেছেন” অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার দূর করা যায় না।এক মাত্র আলোই তা করতে পারে।ঘৃনা দিয়ে ঘৃনা দূর করা যায় না।এক মাত্র ভালোবাসা দিয়েই তা করতে হয়।”
অন্যকে ক্ষতি করতে চেয়ে আমরা কিন্তু অবশেষে নিজেরই ক্ষতি করে বসি।
যখনই নেতিবাচক স্পন্দন (negative vibe)প্রকাশ করবেন,তখন আপনি নিজের স্পন্দনকেই নীচে নামিয়ে আনবেন।
আপনি যা আপনার কাছে তেমন কিছুই আকৃষ্ট হবে।
তাই প্রতিশোধ পরায়নতা আপনার নিজের কষ্ট পীড়নকে বাড়িয়ে তুলবে।
যার প্রতি এই ঘৃনা আক্রোশ, তার এতে কিছু যায় আসে না।
যে পর্যন্ত ঘৃনা,আ্ক্রোশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে,;ভালোবাসা, দয়া,করুনায় ফিরতে না পারবেন,ততক্ষন আপনি প্রকৃত ” মুক্তি” পাবেন না।
তাই যারা আপনাকে আহত করেছে, আঘাত করেছে,অপমান করেছে বা ছোট,হেয়,তুচ্ছ করেছে; যত কঠিনই হোক তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ভালোবাসতে হবে
(গত কালই এক বৃদ্ধা মহিলাকে চেম্বারে দেখলাম।তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ বড় ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছেন।তার স্বামী অনেক আগেই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে একই বাড়ীতে বসবাস করছেন।স্বামীর কাছ থেকে সারা জীবন আঘাত,অপমান আর অবহেলাই পেয়ে এসেছেন।
গত কয়েক মাস যাবৎ স্বামীর ২ য় স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর মনো মালিন্যের কারনে ২ য় স্ত্রী বাসা ছেড়ে চলে যান।ফলে স্বামীর খাওয়া দাওয়ার ভার তার উপর পড়ে।এই দায়িত্ব পালন করতে তার মন চাচ্ছে না।যে তাকে এত অবহেলা,নির্যাতন করেছে,নিজ হাতে রান্না করে তাকে খাওয়াতে কিছুতেই মন চাচ্ছে না।কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।কেননা তার আশ্রয়ে আছে এবং লোক লজ্জা।
সঙ্গে তার মেয়ে ছিল।আমি তাকে নিজের মনের শান্তির জন্যই পুরনো ঘৃনা,আক্রোশ মুছে ফেলে স্বামীকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখতে বললাম।তার মেয়েও আমার সঙ্গে একমত হলেন।কিন্ত্ ওনাকে নারাজ মনে হলো।
উল্লেখ্য উনার ডিপ্রেশন এতে আরো গভীর হয়েছে ও ঔষধ তেমন কাজ করছে না।)
তবে এই ক্ষমা করে দেওয়াটি রাতারাতি করতে হবে তেমন নয়।অল্প অল্প করে ভালোবাসতে চেষ্টা করে আপনি ক্রমাগত ভাবে দেখবেন ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন।
***
মূলত: আবেগগত যন্ত্রনার প্রতি আমাদের এক ধরনের “নেশা” তৈরী হয়ে যায়।আমরা এই নেশা আকড়ে ধরে থাকি।
কিন্তু যখনই কষ্ট পাওয়ার নেশা ছাড়তে পারবো আমরা প্রকৃত ভাবে স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্দি করতে পারবো।
2। নিজের সর্বোত্তম রুপটি অর্জনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন:(Focus on becoming best version of yourself)
মনে রাখবেন” আহত মানুষ অন্য মানুষকে আহত করে।নিরাময় প্রাপ্ত মানুষ অন্যকে নিরাময়ের চেষ্টা করে।”
পৃথিবীতে এত যন্ত্রনা,,কষ্ট চলমান রয়েছে,কেননা যারা আহত হয়েছেন,আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন,তারা সে যন্ত্রনাকে “জীবন্ত” করে রেখেছেন।এ ভাবে অন্য জনের মধ্যে তা সন্চালিত করে দিচ্ছেন।( গোত্রে গোত্র যুদ্ধ,ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ,এমনকি পরিবারে পরিবারেও ব্যক্তি ব্যক্তিতে যুদ্ধ একারনেই চলে আসছে)
মনের ও আত্মার স্বাচ্ছন্দ্য,সহজতা বিনষ্ট হওয়ার এই অসুখ এ ভাবে সন্চালন হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
*** অন্যকে ছিড়ে-ফুড়ে তছনছ করে দেওয়ার দিকে সব দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে,বরং নিজকে নির্মান করার দিকে আমাদের বেশী নজর দিতে হবে।
৩। মনে রাখবেন চূড়ান্ত নিখুত হওয়ার প্রত্যাশা, অবাস্তব অপ্রত্যাশিত:
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে মানুষ ভুল করে এবং এ রকম ভুল অহরহই হয়।
যদিও এ রকম ভুলের কিছু ক্ষেত্রে খারাপ পরিনতি হয়ে থাকে(যেমন ঐ মহিলার স্বামীর ভুল), কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সে সব দূর্ঘটনাবশত ঘটে থাকে,উদ্দেশ্যমূলক নয়।
আমরা প্রত্যেকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত
এবং আমাদের বেশীর ভাগই ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যের জন্য মন্দ কিছু করতে চাই না।
মনে রাখতে হবে আমরা একই সমুদ্রে সাতার কাটছি এবং একই স্রোতের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি।
আমরা সবাই চাচ্ছি এই ঢেউয়ের মাঝে কোন রকমে মাথা উপরে রেখে ভেসে থাকতে।
এরই মাঝে আমরা কিছু ভুল করে বসি।
মানষকে ভুল করতে এলাউ করুন এবং এ ভাবে ভুলের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন
এবং মনে রাখুন সম্ভবত আপনিও একই ভুল করেছিলেন( ঐ মহিলারও কি কোন ভুল ছিল না?)।
অন্যকে ক্ষমা করা সহজ হবে যদি মনে রাখেন আপনার মতন তারাও মানুষ এবং মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে।

*** ক্ষমা করার সময় বলুন
” আমি ক্ষমা করে দিচ্ছি ও নিজকে মুক্ত করছি।
আমি উজ্জলতর এক ভবিষত্যের দিকে আমার যাত্রাকে অগ্রসর করছি।

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com

Facebook Comments