banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 318 বার পঠিত

 

সোনার হরিণ (এক)

সোনার হরিণ (এক)


ফাতিমা মারিয়াম


আজ থেকে প্রায়  চল্লিশ  বছর আগের কথা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রীতা। এই কাহিনী তার জীবন থেকে নেয়া। রীতার কথা শুরু করার আগে তার পরিবার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক!

রীতার মায়ের সাথে তার বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ওরা দুই  বোন বাবার সাথেই থেকে যায়। কারণ ওদের ভরণপোষণ করার কোন সামর্থ্যই তার মায়ের ছিলনা। উনার বাবার বাড়ির অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না।  যেখানে তিনি নিজেই আজ এর দুয়ারে কাল ওর দুয়ারে ঘুরে ফিরে থাকতে লাগলেন, সেখানে তিনি কিভাবে  দুইটি  মেয়েকে নিজের কাছে রাখবেন!
ছাড়াছাড়ি হবার কারণ হল রীতার মা কয়েক বছর ধরে মাঝে মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। একজন পাগলের সাথে স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপন সম্ভব নয়। ফলাফল………তালাক।
রীতার মা ছিলেন তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে তিনি রীতার মাকে বিয়ে করলেন। দুই ঘরের চারটি বাচ্চার দেখাশোনা এবং সংসার পরিচালনার জন্য তিনি তৃতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন।    যিনি এই সংসারে আসলেন তিনি অত্যন্ত রূপবতী একজন মহিলা। দুই সন্তান রেখে তার আগের স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি বাবার বাড়ীতে থাকতেন। এক সময়ে রীতার বাবার সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার অভিভাবক তাকে এইখানে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাচ্চা দুটি নানার বাড়িতেই থেকে যায়। এই সংসারে এসে তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন। চারটি  ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে তার সংসার জীবন শুরু হল। মাঝে মধ্যে তার নিজের সন্তানরাও এসে মায়ের কাছে দুই চার দিন বেড়িয়ে যায়। এই স্বামীর সংসারে তিনি একে একে চার সন্তানের মা হলেন। দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে। অর্থাৎ রীতার বাবার  ঘরে তার সর্বমোট সন্তানের সংখ্যা হল আট। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে রীতার বড়মায়ের ঘরে এক বোন ও এক ভাই। বোনটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে স্বামীর সংসারে বেশ ভালই আছে। এবার তার বাবা ভাইটিকেও বিয়ে করিয়ে দিলেন। নতুন বউ প্রথম প্রথম বেশ ভয়েই ছিল। সৎ শাশুড়ির সংসার না জানি কত সমস্যা হয়! কিন্তু ধীরেধীরে সে দেখল তার শাশুড়ি বেশ ভালো একজন মানুষ। ননদ দেবররাও সবাই বেশ মিশুক। খুবই ভালো। ফলে খুব সহজেই বউটি সবাইকে আপন করে ফেলল। শাশুড়ি যেমন আটটি সন্তানকে নিয়ে নির্ভেজাল জীবন যাপন করছে, নতুন বৌও একইভাবে সবাইকে আপন করে নিলো। এত বড় সংসার নিয়ে শাশুড়ি-বউয়ের বেশ ভালই দিন কাটছিল। রীতার মায়ের ঘরে ওরা দুই বোন……রীতা ছোট।  আটজনের মধ্যে রীতা চতুর্থ। রীতা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার ঠিক আগের বোনটিকে ওর বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে রীতার ভাবীর একে একে দুইটি বাচ্চা হয়ে গেছে।
রীতা  পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না। এটা নিয়ে ওর নিজের বা অন্য কারোও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। সামাজিক আর দশটা নিয়মের মতই স্কুলে যায় আসে। ফলে ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার পর নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংসার এখন আগের চাইতেও অনেক বড়। রীতা এখন মা ও ভাবীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের ও বড় ভাবীর বাচ্চাদেরকে দেখাশোনা এবং সংসারের কাজে মা ও ভাবীকে সাহায্য করে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।
এক নিকটাত্মীয়ের সাথে তার এক বন্ধু আনিস প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। আনিসের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। রীতাদের চাইতে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি ভাল। রীতাদের অবস্থাও ভালো। তবে আনিসের পরিবারের মত নয়। রীতাদের পরিবারের সবার সাথে আনিসের সম্পর্ক বেশ ভাল। এত বড়লোকের ছেলে হয়েও মনে কোন অহংকার নেই। ওদের ভাইবোন সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক। আনিস যখন আসে রীতা এবং অন্য ভাইবোনেরা তার সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটায়।
আনিসের কথাবার্তা, আচার- আচরণ সব কিছু দেখে রীতা খুব মুগ্ধ হয়। রীতাকেও আনিসের কাছে বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে দুজনের এই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। মা ও ভাবী যখন বিষয়টি টের পেল তখন পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। শাসন তিরস্কার কোনকিছুই রীতাকে পিছু ফেরাতে পারেনা। একদিন সবার অগোচরে তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলল।

চলবে…

Facebook Comments