banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 409 বার পঠিত

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪


আফরোজা হাসান


ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পায়চারি করতে করতে গজগজ করছিল শাবাব। বইয়ের সেলফ গোছানোর ফাঁকে ফাঁকে বোনের দিকে তাকাচ্ছিলো আর মিটিমিটি হাসছিল মাহাম। শাবাব তার হাসি দেখলে খবর আছে তাই হাসি চেপে মাহাম বলল, ভাইয়া কাজটা মোটেই ঠিক করেননি। তাহমিনার হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া উচিত ছিলো তোমাকে। এত কাছের বান্ধবী তোমার।

তুই তো কথাই বলিস না ভাইয়ার চামচি। তুই যদি যেতে রাজী হতি তাহলে ঠিকই ভাইয়া অনুমতি দিয়ে দিতেন। ঝাঁঝের সাথে বললো শাবাব।

আচ্ছা বাদ দাও এসব। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। তাছাড়া এসব অনুষ্ঠানে না যাওয়াই ভালো।

তাহমিনার অনুষ্ঠানটি একদম ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে।

পরিবেশ কেমন সেটা কিন্তু ম্যাটার না শাবাব।

তাহলে ম্যাটারটা কি?

আচ্ছা ধরো পচা, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পাতা দিয়ে যদি খুব সুন্দর করে একটা তোড়া বানিয়ে দেই তুমি কি খুশি মনে সেটা নেবে?

ফেনাচ্ছিস কেন? যা বলার সোজাসুজি বল।

মনেআছে বাবা একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন, পচা খাবার খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে এনে দিলে যেমন আমরা অমৃত ভেবে সেটা খেয়ে ফেলবো না। ঠিক তেমনি শরীয়তে যার অনুমোদন নেই তার উপস্থাপন যেমনই হোক না কেন সেটা সর্বদা বর্জনীয়।

বোনের কথাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না শাবাব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানুষের শরীরে আঘাত করলে যেমন শাস্তি দেয়া হয়, মনে আঘাত দেবার ব্যাপারেও একই বিধান থাকা উচিত ছিল।

কেন?

একজনকে হাতে মারা আর মানসিকভাবে আহত করার মাঝে কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। দেহের আঘাত দেখা যায় আর মনের আঘাত দেখা যায় না, এই তো শুধু পার্থক্য। প্রচণ্ড অভিমানী কণ্ঠে বললো শাবাব।

তুমি ভাইয়ার কথাতে অনেক কষ্ট পেয়েছো তাই না? ভাইয়া তো খারাপ কিছু বলেননি। হ্যা একটু কড়া করে বলেছেন। কিন্তু ভেবে দেখো কড়া করে না বললে কি তুমি মানতে? বরং ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে।

হুমম…এটাও তো ঠিক। আমি তো ভাইয়াকে পটানোর ডায়লগও রেডি করে রেখেছিলাম। ভাইয়া মনেহয় টের পেয়ে গিয়েছিলো সেটা। দুষ্টু হাসি খেলে গেলো শাবাবের চেহারাতে।
হেসে ফেললো মাহাম। বোনের এই মেঘ এই রৌদ্দুর স্বভাবটা খুব ভালো লাগে মাহামের। তার নিজের মধ্যে এই জিনিসটা একদমই নেই। সে সাধারণত রাগ বা জেদ করে না কিন্তু একবার করলে সেসব মনের মধ্যে পুষে রাখতে রাখতে নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে যায়।

দরজা নক হলে শাবাব বলল, বাবা ভেতরে আসো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন ফাইয়াজ সাহেব। দুই মেয়ের মাঝে বসে দুজনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনলাম আমার মায়েদের নাকি মন খারাপ?

শাবাব হেসে বলল, কিঞ্চিৎ মনখারাপ ছিলো বাবা। কিন্তু এখন মন ভালো।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি তো আরো তোদের মন ভালো করতে এলাম।

এই কথা আগে বলবে তো! সাথে সাথে মুখ গোমড়া করে শাবাব বলল, তুমি আসার আগেই মন ভালো হয়ে গেলো কেন? ফাজিল মন আরেকটু অপেক্ষা করলো না কেন? এই দুঃখে আবার মন খারাপ হয়েছে বাবা। নাও এখন মন ভালো করে দাও।

সশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব। বাবার সাথে শাবাব আর মাহামও যোগ দিলো হাসিতে। হাসাহাসির শব্দে হাজির হলেন মিসেস ফাইয়াজও। ভ্রু কুঁচকে বললেন, আপনাদের সম্মিলিত হাসির রহস্য কি?

ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, সাবিহা তুমিই মনেহয় পৃথিবীর একমাত্র নারী যে কিনা স্বামী-সন্তানদের হাসির মধ্যেও রহস্য সন্ধান করো।

কি আর করার বলো ঘর পোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলেও ভয় পাবে এটাই হচ্ছে নিয়ম।

আরেক ঝাপটা হাসির বৃষ্টি ঝরে পড়লো রিমঝিম শব্দে। ভিজবে না ভিজবে না করেও তাতে ভিজতে হলো সাবিহাকে। হাসিমুখে এসে বসলেন স্বামী ও কন্যাদের কাছে। বাবা-মাকে মাঝখানে বসিয়ে দুপাশ থেকে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসলো শাবাব আর মাহাম।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যবসার কাজে আমাকে দু’সপ্তাহের জন্য ইউরোপ যেতে হবে আগামী মাসে।

রোদ ঝলমলে তিনটা চেহারাকে মুহুর্তে মেঘে ঢেকে যেতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, তোমাদের মেয়েদের নিয়ে এই হচ্ছে সমস্যা। পুরো কথা শোনার আগেই রিঅ্যাক্ট করো।

শাবাব হেসে বলল, ওহ তারমানে তুমি যাচ্ছো না? হুররে..
.
হ্যা বাবা তুমি যেও না। তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগে না আমাদের। আদুরে গলায় বললো মাহাম।

স্ত্রীর চোখেও এই শব্দগুলোকেই ঝিলিক দিয়ে উঠতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, উহু তারমানে হচ্ছে তোমরা তিনজনও আমার সাথে যাচ্ছো। কারণ তোমাদেরকে ছাড়া আমারো কোথাও ভালো লাগে না।

ইয়াহু বলে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো শাবাব। মাহামকে টেনে ধরে উঠিয়ে তার সাথে লাফাতে বাধ্য করলো। দুই কন্যার আনন্দ দেখে হেসে ফেললেন সাবিহাও। আর আনন্দ চিকচিক করে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের চোখে।

চলবে

Facebook Comments