বিশ্বে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নারী নেতৃত্বের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত নারী নেতাদের সংখ্যা ছিল ২৫, যা দেশ পরিচালনায় নারী নেতৃত্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নারী নেতার কাতারে সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছেন ব্রিটেনের টেরেসা মে। বুধবার (১৩ জুলাই) ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব নেয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বে নারী নেতাদের সংখ্যা পৌঁছবে ২৬-এ, যেটি হবে নারী নেতৃত্বে নতুন মাইলফলক।
দেশ পরিচালনায় ২০১৬ সালের জানুয়ারি এশিয়ার দ্বীপ দেশ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সেই ইং-ওয়েন। একইমাসে মার্শাল আইল্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন হিন্ডা হেইন। মধ্য জুলাইয়ে এসে সর্বশেষ নারী নেতাদের কাতারে যুক্ত হচ্ছেন ব্রিটেনের টেরেসা মে।
গত ২৩ জুন ব্রেক্সিট ভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার গণভোটের পর রাজনৈতিক পালাবদলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে সামনে চলে আসেন ৫৯ বছর বয়সী ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এই নারী।
২০১৫ সালে ৪ দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে নেতৃত্বে যুক্ত হন নারীরা। দেশগুলো হচ্ছে সুইজারল্যান্ড, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, নামিবিয়া এবং নেপাল। তবে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব প্রতি বছর পরিবর্তন হওয়ায় ২০১৬ সালে ওই পদে দায়িত্বে আছেন জোহান স্নাইডার আম্মান।
২০১৪ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ২০ নারী। সে হিসেবে বছরটি ভবিষ্যত নারী নেতাদের অনুপ্রেরণারও। এরমধ্যে ২০১৬ সালে অনিয়মের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত হন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রউসেফ।
নারী নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় সরকার প্রধানের দায়িত্বে আছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল, যিনি ২০০৫ সালে প্রথম নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তৃতীয় দফায় দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এ্যালেন জনসন সারলিফ। তিনি ২০০৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়া মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কিচনার। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হন। সরকার পরিচালনায় যুক্ত হওয়া নারী নেতাদের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
একইবছর ক্ষমতায় আসেন লিথুয়ারিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবাউসকাইতে। গত ৭ বছর ধরে টানা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ২০১০ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন কামলা পারসাদ বেসেসার। ৬ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত কসোভোর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন আতিফেত জাহজাগা ২০১১ সালে। রাষ্ট্র পরিচালনার অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন গত ৫ বছর ধরে। একই বছর ডেনমার্কের সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন হ্যালে থর্নিং স্মিথ। সেই থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১২ সালে জামাইকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন পর্সিয়া সিমপসন মিলার। সরকার পরিচালনায় দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ নারী। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৩ সালে দায়িত্ব নেন পার্ক গিউন হেই। ৪ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
একই বছর নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন ইরনা সোলবার্গ। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন ৪ বছর ধরে। ২০১৩ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্লোভেনিয়ার সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যালেঙ্কা ব্রাতুসেক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৪ বছর ধরে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন।
ওই বছর উত্তর সাইপ্রাসের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে সাইবেল সাইবার। ৪ বছর ধরে সরকার পরিচালনা করছেন ওই পদে থেকে। ২০১৩ সালে সেনেগালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন অমিনতা তোরে। সরকার প্রধান হিসেবে ৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এ নারী।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৩ সালে দায়িত্ব নেন ইরনা সোলবার্গ। সরকার প্রধান হিসেবে ৪ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন। লামিদোতা স্ট্রজুমা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাটভিয়ার ২০১৪ সালে। সরকার প্রধান হিসেবে সে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ৩ বছর ধরে।
মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন ক্যাথেরিন সাবভা-পানজা। ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন এ নারী। চিলির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিশেল ব্যাশেরেট। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি।
মাল্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন মেরি লুই কোলেইরো প্রেকা। ২০১৪ সাল খেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশটি পরিচালনার। ২০১৪ সালে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন বেইতা জিডলো। তিন বছর ধরে সরকার পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন কালিন্দ গ্র্যাবার কিতারোভিচ, নেপালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব বুজে নেন বিদ্যা দেবি বান্দরি এবং মারিশাসের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেন ম্যারিশা এ্যান মায়ার। নামিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন সারা কুগনগিলওয়ালা।