banner

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 211 বার পঠিত

 

নারীর গড় মজুরি কমেছে

দেশের মজুরি পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। নারী-পুরুষনির্বিশেষে দুই বছরে মাসিক মজুরি বা বেতন গড়ে মাত্র ৪৯ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে শ্রমিক ও চাকরিজীবীরা প্রতি মাসে গড়ে ১১ হাজার ৫৪২ টাকা মজুরি পান। ২০১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৯৩ টাকা।
আবার পুরুষদের গড় মজুরি বাড়লেও নারীদের কমেছে। দুই বছরের ব্যবধানে নারী শ্রমিক বা চাকরিজীবীদের মজুরি ৩১৯ টাকা কমে গড়ে ১০ হাজার ৮১৭ টাকা হয়েছে। আর ১১২ টাকা বেড়ে পুরুষদের হয়েছে ১১ হাজার ৭৩৩ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৫ সালের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২ কোটি ৩১ লাখ নারী-পুরুষ মজুরি বা বেতন পান। দুই বছর আগে এমন কর্মজীবীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার।
বর্তমান শ্রমশক্তিতে ৬ কোটি ১৪ লাখ নারী-পুরুষ আছেন। এর মধ্যে কোনো না কোনোভাবে কাজে সম্পৃক্ত আছেন ৫ কোটি ৮৭ লাখ। যাঁরা সপ্তাহে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে কাজ করেন, তাঁদের কর্মজীবী হিসেবে ধরা হয়। শ্রমশক্তিতে থাকা বাকিরা সবাই বেকার। কর্মজীবীদের কয়েকটি ধরন আছে। যেমন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকর্তা, মজুরি কিংবা বেতনভুক্ত কর্মী, বিনা মজুরিতে সংসারের কাজে সহায়তাকারী। মজুরি বা বেতনভুক্ত এই বিপুলসংখ্যক কর্মীর মধ্যে ৩৮ শতাংশ বা ৮৭ লাখের বেশি দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি পান। আর অর্ধেক বা প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ নারী-পুরুষ মাস শেষে বেতন পান, চাকরি করেন।
বিবিএসের ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, সে সময়ে একজন নারী কর্মী মাসে গড়ে ১১ হাজার ১৩৬ টাকা মজুরি পেতেন। পরের দুই বছর তাঁদের গড় মজুরি তো বাড়েইনি, বরং কমে ১০ হাজার ৮১৭ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে, পুরুষেরা এখন মাসে গড়ে ১১ হাজার ৭৩৩ টাকা মজুরি পান। দুই বছর আগে তাঁরা পেতেন ১১ হাজার ৬২১ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, বিবিএস হিসাবটি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) করেছে। তাই পুরো বছরের চিত্র আসেনি। কিছু দিন পর ধান কাটার মৌসুম এলে, এ খাতের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখনো পুরুষদের তুলনায় নারীদের মজুরি কম। আবার দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে নারীদের ধান কাটার কাজে নেওয়া হয় না।

বাংলাদেশের শ্রমবাজারের মজুরিভিন্নতা কেমন—সে চিত্রও উঠে এসেছে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকেরা সবচেয়ে বেশি বেতন পান। তাঁরা মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকা পান। বর্তমানে সারা দেশে এমন সাড়ে আট লাখ চাকরিজীবী আছেন। মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অবহেলিত কৃষি খাতের শ্রমিকেরা। তাঁদের মাসে গড় আয় ৮ হাজার ৫৪৩ টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক মজুরির পরিমাণ ২৮৪ টাকা।

গ্রাম ও শহরের মধ্যে এ মজুরিবৈষম্য রয়েছে। শহরে একজন শ্রমিক বা চাকরিজীবী মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৭৭৬ টাকা পান। আর গ্রামে এর পরিমাণ ১০ হাজার ১২০ টাকা।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, বিনা মজুরিতে গৃহস্থালির কাজে সহায়তাকারীর সংখ্যাও গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এখনো বিনা মজুরিতে ৭৩ লাখ লোক কাজ করেন। এঁদের অধিকাংশই নারী। গত দুই বছরে প্রায় ৩৩ লাখ লোক এই কাজ ছেড়ে মজুরি পাওয়া যায় এমন কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপে বিনা মজুরিতে কাজ করা লোকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬ লাখ।

বিবিএসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মজুরিহীন কাজ থেকে মজুরি আছে এমন কাজে যোগ দিলে প্রথমে মজুরি কিছুটা কম পাওয়া যায়। এমন কাজে যোগদানকারীদের বেশির ভাগই নারী। তাই নারীর গড় মজুরি কমে গেছে।

Facebook Comments