banner

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 566 বার পঠিত

 

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’


রংধনু


আজ একটা বই পড়া শুরু করেছি। গল্পের বই। বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমন্বয়ে রচিত বইটি। নাম ইয়াসমীন, প্রথম গল্পের নামে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে দুটো গল্প পড়লাম।

যেকোনো বই পড়ে সেখান থেকে কী বুঝলাম, কী শিখলাম এই নিয়ে আলোচনা করা হয়নি কারো সাথে। হবেই বা কিভাবে! তেমন বই পড়ুয়া পাইনি যে। গল্পগুলো পড়ে কেমন কেমন মন খারাপের মেঘ ভর করেছে। আটপৌরে জীবনের গল্প।

প্রথম গল্পটা দুই বান্ধবীর। অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক। আজকের দিনে থেকে মারজান চরিত্রটি অতীতের ডানায় ভর করে বান্ধবী ইয়াসমীনের সাথে কাটানো নানান ঘটনা মনে করছে। অতীত ভ্রমণে যাওয়ার মূল কারণ ইয়াসমীনের চিঠি। চিঠির খাম না খুলে মাদ্রাসায় তাদের দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে ইয়াসমীনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, সেখানে প্রকৃতির খুব কাছে ঝর্ণা, পাহাড় এসব দেখা, অনেক বছর পর ট্রেনে দেখা হওয়া নানা বিষয় নিয়ে বলেছে। অনেক অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত চিটি পড়েছে। ইয়াসমীনের কঠিন অসুখ হয়েছে, বাঁচবে না বেশিদিন হয়ত। পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে তাকে কবর দিতে বলেছিল।

অনেকদিন পর বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সংস্পর্শে গেলাম। নদী, চাদের আলো, গাছপালা, পাহাড়, ঝর্ণা অবলোকন করেছি। কিন্তু গল্পের বর্ণনা বেশি লম্বা করে ফেলেছে আমার মনে হয়েছে। এক জায়গা থেকে হুট করেই আরেক জায়গায় চলে গিয়েছে লেখিকা। আবার কিছু কিছু জিনিস বোঝা যায়নি, বিশেষ করে কয়েকটা চরিত্র। যেমন ইয়াসমীনের বাবার সাথে মারজানের বাবার কি কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা।

দ্বিতীয় গল্পটার নাম সময়। এটা সংগ্রাম করা এক ছেলের গল্প। অভাবের সংসারে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওষুধের দোকানে কাজ করে। অসুস্থ বাবা, মন মরা মা, জীর্ণশীর্ণ ছোট ভাই। এই নিয়ে পরিবার। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভিটে আছে কিন্তু ঘর দুটো ভাঙা, বৃষ্টির পানি পড়ে। ফুফুরাও থাকে সেই ভিটায় ঘর তুলে। একটা আহত কুকুরকে সে পকেটের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছিল। সেই থেকে কুকুর ছেলেটার ভক্ত। প্রতি রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় কুকুর তার সাথে দেখা করে। ছেলেটি চায়ের দোকান থেকে রুটি খাওয়ায় প্রতি রাতে। এর মাঝে ফুফুরা তাদের ভাগের জায়গা বিক্রি করে দেয়। ফুফাতো বোনটি ছেলেটিকে জানায় দাদি কিছুটা জমি ছেলেটিকেও লিখে দিয়ে গেছে। যেন ওই জমিটুকু বিক্রি করে বাড়ি ঠিক করে আর ব্যবসা করে। ফুফাতো বোন বিক্রির সব ব্যবস্থা করে দেয়। এরমধ্যে ফুফুরা সবাই গ্রামে চলে যায়। আর ছেলেটিও ধীরে ধীরে ব্যাবসার প্রসার ঘটায়। বাড়ি গাড়ির মালিক হয়। শেষে এক রাতে ড্রাইভে বের হয়। সেই কুকুরটি ছেলেটিকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় এসেছিল। কিন্তু সে গাড়ি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কুকুরটাকে। কুকুর মারা যায়। ছেলেটি কুকুরকে গালি দেয়, কারণ রক্ত লেগে গাড়ি নোংরা হয়েছে। আর সেই ফুফাতো বোন বা ফুফুদেরও খবর নেয় না ছেলেটি।

সময়ের বদলে বদলেছে ব্যবহার। একসময়ের দরদী লোক হয়ে উঠেছে দাম্ভিক। বাস্তব জীবনেও অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। অতীত ভুলে যায়। কষ্টের সময়ে পাশে থাকা মানুষদের ভুলে যায়। নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। এটা মোটেও ঠিক না। বরং এর উল্টোটাই হবার কথা। কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ সবার প্রতি।

আমার কেন যেন একটা গল্পের শেষও ভালো লাগেনি। তাতে কী! নিজের মত করে শেষ ভেবেছি। ইয়াসমীন আর মারজান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাহাড়ী ঝর্নাঘেরা সবুজ কোনো অরণ্যে কাটাচ্ছে দিনগুলো সেই আগের মত দূরন্তপনায়। আর দ্বিতীয় গল্পের ছেলেটি আত্মীয়ের হক তো আদায় করেই সাথে সেই কুকুরটির জন্যেও বাড়ির আঙিনায় একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সাথে অন্যদেরও সাহায্য করছে জীবনে বড় হওয়ার জন্য।

গল্প পড়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করল তাই লেখার চেষ্টা। আমি অবশ্য জানি না কিভাবে আলোচনা করতে হবে। রিভিউও লিখিনি। নিজের মতামত লিখলাম। আরো কয়েকটা গল্প আছে, পড়ে সেগুলো নিয়েও লিখব ইন শা আল্লাহ্‌।

Facebook Comments