banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 777 বার পঠিত

 

ইন্টেরিয়র ডিজাইন যেভাবে প্রভাব ফেলে আপনার মনস্তত্বে

মানুষের মনস্তত্ত্বের উপর ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রভাব নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। ফিচারটির প্রথম পর্বে আমরা জেনেছি, রঙ কীভাবে আমাদের মনে ছাপ ফেলে। একইসাথে জেনেছি একটি বাড়ির রঙ কেমন হওয়া উচিৎ, কোন ঘরের হবে কী রঙ এবং কেন! আজ আমরা কথা বলব ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অন্য আরও যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে। শুধু রঙই নয়, বাড়ির আকৃতি, জানালার ধরণ, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা এসবেরও প্রভাব পড়ে আমাদের মস্তিষ্কে। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত-
গৃহসজ্জা প্রকাশ করে আপনার ব্যক্তিত্ব
সমাজবিজ্ঞানী Jean Baudrillard তার ‘The System of Objects’ বইতে গৃহসজ্জার ব্যাপারে আলাদাভাবে জোর দেন। দেয়ালে রঙ দেওয়ার পরের কাজটিই হল সেই রঙের সাথে মিলিয়ে আপনার ঘরের সাজ কেমন হবে সেটা। জায়গাকে পূর্ণ করছে এমন প্রতিটি জিনিসই মানুষের কাছে আপনার পছন্দ সম্পর্কে একটি মেসেজ দেয়। জিনিসটি যে কোন কিছুই হতে পারে। দেয়ালের একটি ওয়ালম্যাট থেকে শুরু করে ফুলদানির নীচের ম্যাটটি পর্যন্ত আপনার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে।
মানুষ আপনার গ্ররহসজ্জাকে মূল্যায়ণ করে ৩ ভাবে।
কতটা কাজের-
জিনিসটি কি আপনার কাজের? অর্থাৎ সেটা জরুরী ছিল বলে ব্যাবহার করা নাকি নেহায়েতই সৌখিনতা? ডাইনিং টেবিলটা কি পুরো পরিবারের একসাথে বসার জন্য পারফেক্ট?
বিনিময় মূল্য-
দামের সাথে জিনিসগুলোর প্রয়োজনীয়তার সামঞ্জস্য আছে তো? অর্থাৎ, আপনার ব্যয় করার ধরণ কেমন? আপনি কি একটা বেডরুম স্যুটের সমান দামে শুধু একটি সোফা ক্রয় করবেন?
প্রতীকী-
আপনার পছন্দের জিনিসগুলো কি কোনভাবে আবেগের সাথে জড়িত? আপনি কি একটি পারিবারিক ছবিকে দেয়ালে জায়গা দিয়েছেন নাকি কোন প্রিন্ট করা পেইন্টিং বেছে নিয়েছেন ঘর সাজাতে?
চিহ্ন-
জিনিসগুলোর সাথে কি কোন চিহ্নের সংযোগ আছে? কোন প্রতীক? কোন ব্রান্ডের প্রতীক অথবা কোন জাতির বিশেষ কোন নিদর্শন? নাকি শুধু গৃহসজ্জাই তার কাজ?
এই পয়েন্টগুলো পড়তে পড়তে আপনি নিজেই নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন আপনার কোন কাজটি আপনার সম্পর্কে মানুষকে কি তথ্য দিতে পারে। আপনি যদি সব আসবাব পরিবারের সবার কথা মাথায় রেখে কেনেন তাহলে বোঝা যায় আপনি একজন সৌহার্দ্রপূর্ণ আবেগী মানুষ। পরিবারের সাথে আপনার সম্পর্ক ভাল। আপনার ঘরের কর্ণারটি যদি নানান বন্ধুদের স্মৃময় ছবিতে পরিপূর্ণ থাকে তাহলে বোঝা যায়, আপনি আপনার জীবনে সময়ের মূল্য অর্থ দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে দেন। আপনার ব্যয় যদি অযথা দামী জিনিসের ক্ষেত্রে বেশী হয় তাহলে বোঝা যায় আপনি কেমন অর্থ প্রতিপত্তির মালিক তা সবাইকে বোঝাতে চাইছেন।
তাই নিজের ঘর সাজানোর আগে এই বিষয়গুলো ভাবুন। আপনি হয়ত ভিন্নধর্মী মানুষ। কিন্তু কেনাকাটায় সতর্ক না থাকার কারণে আপনার গৃহসজ্জা আপনার সম্পর্কে মানুষকে ভুল তথ্য দিতে পারে। আবার একইসাথে আপনার মনের ছবি যদি আপনার ঘরে প্রকাশিত না হয় তা আপনাকেও অস্থির করে দেবে। দেখা যাবে, আপনি কিছুদিন পরপরই আসবাব বদলে দিচ্ছেন। এক দেয়ালের ছবি অন্য দেয়ালে সরিয়ে নিচ্ছেন। তার চেয়ে বরং কেনাকাটার সময় আপনার ব্যক্তিত্বের ধরণটাকে বুঝে মিলিয়ে কিনুন।
Perception of Space
ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে একটা কনসেপ্ট ফলো করেন। একে বলা হয় ‘Perception of Space’। তারা চেষ্টা করেন ঘরের জায়গা এমনভাবে ব্যবহার করতে যাতে মনে হয় ঘরটি বেশ বড়। ঘরে যত বেশী ফাকা জায়গা থাকবে তত আপনার মন ভাল লাগবে। অতিরিক্ত আসবাব ঘরের সৌন্দর্য্যই শুধু নষ্ট করে না, আপনার মুডও নষ্ট করে দেয়।
কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি কারও বাসায় বেড়াতে গেলেন আর বাড়িতে ঢুকেই আপনার বিরক্তি অনুভূত হতে লাগল? কখন বের হবেন এমন একটা অস্থিরতা বোধ হতে থাকলো? আমরা আসলে কখনো খেয়াল করি না যে আমাদের এই অস্থিরতার কারণ লুকিয়ে থাকে ঘরের স্পেস ম্যানেজমেন্টের মাঝে।
আপনি যদি আপনার ঘরকে আরও প্রশস্ত এবং বড় দেখাতে চান তাহলে ভারি আসবাবের বদলে হালকা নকশার আসবাব ব্যবহার করুন। পেছনের দেয়ালে লাগান একটি বড় আয়না। চেষ্টা করুন একই ধরণের আসবাব কিনতে, সম্ভব হলে একই রঙের অথবা কম্বিনেশনের। বিভিন্ন কোনায় ব্যবহার করুন আলোকসজ্জা।
Feng Shui
এটি একটি চাইনিজ শিল্প। আপনি যদি আপনার জীবনে অভূত পরিবর্তন আনতে চান তাহলে তা শুরু করতে পারেন আপনার ইন্টেরিয়র ডিজাইন থেকেই। প্রাচীন চাইনিজ আর্ট ফেং সুই ৩ হাজার বছর ধরে সারা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বলা হয়, ফেং সুই এর পদ্ধতিগুলো সৌভাগ্যকে আকর্ষণ করে, সাফল্য, ভালোবাসা এবং ইতিবাচক শক্তিকে জীবনে বয়ে আনে। ফেং সুই তত্ত্ব ঘরের সজ্জায় গুরুত্ব দেয় প্রকৃতিকে। কৃত্রিমতার পরিবর্তে আদিমতাকে সে নিয়ে আসে ঘরের কোণায় কোণায়।
আপনার বাড়ির প্রবেশপথ পরিচ্ছন্ন রাখুন। দরজার রঙ এবং পথের সজ্জা হোক এমন যা মানুষকে স্বাগত জানায়। ফল, পাথর, গাছ, মাটিকে প্রাধান্য দিন গৃহসজ্জায়। বাতাস চলাচলকে বন্ধ নাকরে বরং যত বেশী পারা যায় আলো এবং বাতাস প্রবেশের পথ খোলা রাখুন।
এই সব কিছুই আপনার মস্তিষ্কে শান্তি এবং আনন্দের বার্তা দেবে। অবচেতন মন বাড়িতে প্রবেশ করলেই প্রশান্ত অনুভব করবে। বাড়ির প্রতি একটা আকর্ষণ, মায়ার বন্ধন তৈরি হবে আপনার। শুধু মাথা গোজার ঠাই নয়, বাড়ি হবে এমন জায়গা যেখানে মেলে শরীর এবং মনের সর্বোচ্চ আরাম। শুধু আবাসস্থল নয়, বাড়ি হোক আপনার পরম বন্ধু।
 
লিখেছেন
আফসানা সুমী
Facebook Comments