সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- ফাতেমা শাহরিন
শর্মিলী রহমান একজন শিক্ষার্থী একজন উদ্যোক্তাও বটে। এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পড়াশুনার পাশাপাশি দীর্ঘ পথ ধরে যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে হাটছেন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মিলন্তিকা’। BBA চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলেন ‘মিলন্তিকা’। কিন্তু বর্তমানে তা ঢাকা-চাঁদপুর সহ সারা দেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিলন্তিকায় মুলত পাওয়া যাবে অরিজিনাল cosmetics প্রোডাক্ট এবং imported প্রোডাক্টস।
অপরাজিতা সাথে কিছু কথা হল ‘মিলন্তিকা’র প্রতিষ্ঠাতা শর্মিলী রহমানের সাথে-
অপরাজিতাঃ মিলন্তিকা শুরুর গল্পটা আমাদেরকে একটু বলুন?
শর্মিলী : ছোটো বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল নিজের মত কিছু করা। নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছে। একসময় মনে হলো এখনই উপযুক্ত সময় কিছু না কিছু করার। যেই চিন্তা সেই কাজ, ‘আমি চাঁদপুর শহরে থাকি সেই সুবাদে চাঁদপুর কেন্দ্রিক কিছু করার চিন্তা করি। ভেবে দেখলাম আমাদের এখানে অরিজিনাল cosmetics প্রোডাক্ট এবং imported প্রোডাক্টস এর সুবিধা কম। তখনই আরও ভাল ভাবে চিন্তা টা মাথায় আসে। শুধু চিন্তা আসলেই তো হবে না। লাগবে মূলধন , প্রচার , আর সাহস এবং যোগ্যতা। তাই প্রাথমিক দিকে খুব কাছের বন্ধু মিলে মূলধন জোগাড় করলাম। প্রচার করতে ফেসবুক সাহায্য করেছে, সাথে কাছের বন্ধুরা। যখন সবাই ভালো প্রোডাক্টস পেয়ে বুঝতে পেরেছে। তখন এমনিতেই খুব জলদি প্রচার হয়ে যাচ্ছিলো। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডরা আর আমার বোন এবং আমার মা আমাকে শুরু থেকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন এবং এখনও পাশে আছেন। যার কারণে আজ হয়তো এখানে আসতে পেরেছি। আর এখন আলহামদুলিল্লাহ মিলন্তিকা ঢাকা-চাঁদপুর সহ সারা দেশে সুবিধা দিচ্ছে।
অপরাজিতাঃ শুরুতে দিকে ‘মিলন্তিকা’ প্রচার প্রডাক্ট সিলেক্ট কে কে সাহায্য করেছে?
শর্মিলী: শুরু তেই বলে নিচ্ছি যে উদ্যোগটা আমার একার অবশ্যই ছিলো না। বন্ধুদের সাহায্য নিয়েই এই পথ চলা। হা তবে বলতে পারি এর প্রচার থেকে প্রসারের মূল ভূমিকায় আমি ছিলাম। আর cosmetics প্রোডাক্টস সম্পর্কে আমার বেশ ভালো ধারণা থাকায় এই সেক্টর টাকেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি।
অপরাজিতাঃ আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই কেউ যদি আপনার মত উদ্যোক্তা হতে চায় তাহলে আপনার পরামর্শ কি?
শর্মিলী: দেখুন, নিজ উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে খুব সহজেই করা যাবে এই সব বিজনেস। যদি কেউ করতে চান। শুধু মনোবল রাখতে হবে দৃঢ়ভাবে। যে কোনো একটা ভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টস যা অরিজিনাল এবং সহজলভ্য নয় তা দিয়ে শুরু করতে হবে। তা সীমিত মূল্যের হলেও চলবে। যেমন প্রথম amader6 ব্যবসাটি অরিজিনাল ইন্ডিয়ান কাভেরি মেহেদি দিয়ে শুরু করেছিলাম আমি।কারণ জানতাম তখন আশে পাশে যেখানেই কাভেরি ছিল maximum নকল। তাই যখন আসল টা এনেছিলাম খুব সাড়া পেয়েছিলো। কম মূল্যে দেওয়ায় সবাই টেস্ট করতে হলেও নিয়েছিলো অরিজিনাল কিনা। পরে বোঝার পর এমন আরো অনেক অর্ডার এসেছিল।
অপরাজিতাঃ এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মসংস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
শর্মিলী: সুযোগ অবশ্যই আছে। আমি আমার ‘মিলন্তিকা’ তে অতিশীঘ্রই কিছু কর্মী নিয়োগ করব। যারা অসহায় কিন্তু মেধাবী তাদের কে বেশি গুরুত্ব দিবো। এখন দেখা যায় বেশির ভাগ কোম্পানি গুলো ৫/৬ বছর যোগ্যতা চায় যার কারণে অনেক শিক্ষিত অসহায় মেয়ে চাকরি না পেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে আমি তাদেরকে সুযোগ করে দিতে চাই। যাতে ঘরে বসেও কাজ করতে পারে। এটাই আমার স্বপ্ন।
অপরাজিতাঃ আবার মিলন্তিকা ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
শর্মিলী: একজন নারী হিসেবে পথ চলা মোটেই সহজ ছিলো না। শুরুতেই ফ্যামিলি বাঁধা দিয়েছিল। বড় বোন ছাড়া .. সবাই বলছিলো মেয়েদের ব্যবসা করার দরকার কি ? বিপদ আসবে, পড়ালেখার ক্ষতি হবে ইত্যাদি। সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আসার দিন গুলো adventurous বলা যায় হাহাহা ..। কিন্তু কঠিন ছিল না মোটেই। কারণ তাদের বিশ্বাস জোগাড় দায়িত্বে লাগতে গিয়েই সব দিক ঠিক রাখতে হয়েছিল। পড়ালেখা , ব্যবসা এবং সব কিছু।
অপরাজিতাঃ নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
শর্মিলী: শুরু টা কখনোই মধুর হয় না। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিবন্ধকতা আসবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার জন্ম হবে। হাল না ছেড়ে দিয়ে নিজ যোগ্যতা সাথে এগিয়ে যাওয়া টাই বুদ্ধিমানের কাজ। আজ না হলেও কাল কিছু হবেই।
অপরাজিতাঃ মিলন্তিকা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
শর্মিলী: ‘মিলন্তিকা’ আমার স্বপ্ন। ভবিষ্যতে আমি চাঁদপুর, ঢাকা সহ দেশের সব যায়গাতেই মিলন্তিকার ব্রাঞ্চ ওপেন করতে চাই। মিলন্তিকা যেনো একদিন নামকরা ব্র্যান্ড এ পরিচিতি পায়। সবার দোয়া প্রার্থী।
️মিলন্তিকার কিছু পণ্যের ছবি,