banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1308 বার পঠিত

 

মাতৃকথন ‘৫’


ফারিনা মাহমুদ


নিছক নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে লেখা শুরু করেছিলাম মাতৃকথন। খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ধীরে ধীরে বেশ অনেকেই আমাকে ইনবক্সে কমেন্টে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন বাচ্চার ব্যাপারে। তাঁরা সবাই জানেন আমি ডাক্তার নই, শিশু বিশেষজ্ঞও নই।

তাহলে আমার কাছে কেন? আমার মনে হয়েছে আমার কথাগুলো হয়ত খুব সাধারণ, আটপৌরে বলেই অনেকের সাথে মিলে গেছে। কাছের মানুষ ভেবেই তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, চাইছেন। এ এক পরম পাওয়া আমার জন্য। শুরু থেকে ব্যাপারগুলো এলোমেলো ছিলো। এখন ভাবছি একটু গুছিয়ে শুরু করবো। যদি একজনেরও একটু উপকার হয়, আমি ধন্য।

###পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নতুন লাগে!

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলে যখন শিশুটা আসে,সে একা আসে না। নতুন মা বাবার জন্য নিয়ে আসে একরাশ আনন্দের বিপরীতে কিছু দুশ্চিন্তা, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন, নির্ঘুম রাত আর কি করবো কি করবো না এই দ্বিধার দোলাচল। এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন বাবা মা? কিভাবে কি করবেন দিশা পাওয়ার আগেই আরো কিছু সমস্যা হাজির হয়।

মা আর বোনেরা এই করতে বলছেন তো শ্বাশুড়ি ননদ ঠোঁট উল্টে বললেন – যত্ত সব ঢং! এইভাবে বাচ্চা পালে নাকি? স্বামী বেচারা অটো হয়ে যান দু পক্ষের কথা শুনতে শুনতে। ফলাফল – সম্পর্কের অবনতি, রাগারাগি ঝগড়াঝাটি!
ব্যাপারগুলো কেন ঘটে?

ঘটে মূলত আমাদের অজ্ঞতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবা মায়েরা নতুন বাচ্চা এবং প্রসূতি মায়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানেন না। ভাবেন নানী দাদী তো আছেই! কিন্তু মনে রাখতে হবে, দিন শেষে বাচ্চাটা যেহেতু আমার, তাই আমারই দায়িত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া। আমার মতে বাচ্চার জিনিসপত্র, নাম আর ঘর সাজানো নিয়ে মাথা ঘামানোর পাশাপাশি কিছু দরকারী বিষয় জেনে নেয়া জরুরি। এতে করে সন্তান জন্ম পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করা সহজ হয়।

১) মায়ের পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন :
প্রসব পরবর্তী ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জের কারণে নিজের ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

প্রচন্ড রাগ, জিদ, অকারণে কান্না এই ধরনের কিছু অদ্ভূত উপসর্গ দেখা দেয়। মা নিজেও মোটামুটি তব্দা খেয়ে যায় তার নিজের আচরণে। অসম্ভব অসহায় লাগে নিজেকে। মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না।

অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, একটা সমময় নিজেকে খুব উপেক্ষিত আর বঞ্চিত মনে হয়। মনে হয় সবাই শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে যাচ্ছে কেন, আমি কি একটা মানুষ, না মানুষের ছায়া! বিশেষত গর্ভাবস্থায় সবার আদর যত্ন পেয়ে এসে এই নতুন পরিস্থিতিতে হঠাৎ খুব খটকা লাগে! ক্লান্ত, অবসন্ন আপনার মাথায় আবার সারাক্ষণ সেই বাচ্চাকে নিয়েই টেনশন, বাচ্চাটাকে কারো হাতে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। মনে হয় চারপাশের সবাই ভুল, আমি ই শুধু ঠিক।

কি করবেন : এই করনীয় এর তালিকাটা মূলত অন্যদের জন্য,

আরো আলাদা করে বললে বাবা দের জন্য।

সাপোর্টিং পার্সন হিসাবে তাদেরকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হবে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে, এইটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, আপনাদের দায়িত্ব মা কে সময় দেয়া।

কাজ ভাগ করে নিয়ে বিশ্রামে সহায়তা করা ।

তাকে আঘাত করে বা দোষ দিয়ে কথা না বলা এবং কেউ যাতে বলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া ।

তার রাগ জিদ ধরে আপনিও তার সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াবেন না যেনো । তর্ক বাড়ছে বুঝলে ব্রেক নিন ।

কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হেঁটে ফিরে আসুন । তাকেও কুল ডাউন টাইম দিন, নিজেও নিন । অবস্থা বেশি খারাপ হলে অবশ্যই চিকিত্সা সেবা নেবেন ।

তবে অবশ্যই আত্মীয়ও স্বজন, শ্বশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এক করে বিচার সালিশ বসিয়ে আরো বড় বিপদ ডাকবেন না।

চলবে….

পর্ব-৪

পর্ব-৩

পর্ব-২

পর্ব-১

Facebook Comments