banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1499 বার পঠিত

 

বিয়ে ও পরিবার – ৩

কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে এক সাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর (Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোক না কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে।
তবে প্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন Conflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা অমুক এলাকায় যাব। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পক্ষে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষের মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি, ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পক্ষের মতামত পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে।

দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।
ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।

খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্বামী বা স্ত্রী যদি নিরপেক্ষ চিন্তায় নিজের ভুল বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে ঐ ভুলটি আঁকড়ে ধরে না থেকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ।

চলবে…

পর্ব-২

Facebook Comments