banner

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 775 বার পঠিত

 

বেগম রোকেয়ার আদর্শ বনাম কথিত নারীবাদ

বেগম রোকেয়াকে বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বা বিশেষ করে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত না বলে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলাই শ্রেয়।কারন তিনি বিশেষ কোন নারী জাতির কথা বলেননি।বরং তিনি পুরা নারীজাতির জাগরণের কথাই তার লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন।তিনি যেমন ভারতবর্ষের মুসলিম নারীদের দুর্বলতার কথা বলে গেছেন,তেমনি হিন্দু এবং পাশ্চাত্য সমাজের নারীদের দুর্বলতার কথাও বলে গেছেন।তিনি তার লেখায় পুরো নারী জাতির মানুষিক দাসত্বের কথাই তুলে ধরেছেন বেশি বেশি।তার লেখনির মুল কথা ছিল এই যে , নারী জাতিকে যে হাত, পা, নাক, কান চোখ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে যেন শুধু পুতুলের মত জীবন যাপন না করে, শুধু শুধু অনুর্বর না রেখে একে কাজে লাগানো হোক। অথচ আমাদের তথাকথিত নারীবাদী সমাজ বুঝল যে, শুধু পর্দা প্রথা ছিন্ন করে ঘরের বাইরে এসে স্বেচ্ছাচারিতা করে বেড়ালেই বেগম রোকেয়া হওয়া যায়!!
আমাদের এই নারীবাদী সমাজ তাকে শুধু পুরুষ বিদ্বেষী এবং ধর্ম বিদ্বেষী রুপেই উপস্থাপন করে রেখেছে।তার চিন্তা চেতনার মুল জায়গা থেকে তাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে রেখেছে।বেগম রোকেয়ার আদর্শের এই বিকৃত উপস্থাপনা এবং বর্তমান নারী সমাজের বেহায়াপনা দেখে কিছু মানুষ আবার বলে বসেন যে,নারীসমাজের এই যাবতীয় বেহায়াপনার নিমিত্তে যেই পাপ তা সব চাপবে এই  নারীর উপর যেহেতু তিনিই তাদেরকে এইভাবে ঘর থেকে বের করেছেন।

আমদের বর্তমান তথাকথিত নারীবাদী সমাজের মুল প্রতিমূর্তি হচ্ছে বয় কাট চুল,কপালে একটা বড় লাল অথবা কালো টিপ যা মুখটাকে গৌণ করে শুধু টিপটাকেই উপস্থাপন করে,স্লিভ্লেস ব্লাউজ আর গলায় ভর দিয়ে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো!! যে যত বেশি এই রূপ ধারণ করতে পারবে সে তত বেশি নারিবাদি!!।অথচ তিনি যদি আজ এই নারী সমাজের মধ্যে আবির্ভূত হতেন, তাহলে নিশ্চয় সম্মার্জনী নিয়ে তাড়াতে তাড়াতে তাদের ঘরের মধ্যে ঢুকাতেন!!

এই অশ্লীল বেশধারিরা,এই স্বেচ্ছাচারী নারীরা বেগম রোকেয়ার কোন আদর্শে মুগ্ধ হয়ে তাকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলেন তা বোধগম্য নয়। আজকের এই নারীবাদীরা যদি একটু ভালভাবে ওনার জীবন দর্শন করেন তাহলে নিশ্ছিতরূপেই দেখবেন যে,এই বেগম রোকেয়াই তাদের তথাকথিত প্রগতির চরম অন্তরায়।
আজকের নারীরা মনে করেন যে “পুরুষের সমান অধিকারই অর্থাৎ পুরুষকে যা দেয়া হচ্ছে নারিকেও তাই দেয়া হোক” এই মতবাদ প্রতিষ্ঠাই তার মুল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তিনি বলতেন যে,পুরুষের মাথার শিরস্ত্রাণ তৈরি করতে যতখানি যত্ন ও অর্থ ব্যয় করা হয়, নারীর মাথা ঠাকার ওড়না তৈরিতেও ততখানি যত্ন ও অর্থ ব্যয় করা হক। একটা ছেলের শিক্ষা দিক্ষার জন্য যতখানি অর্থ ব্যয় করা হয়,একজন নারীর জন্যও যেন ততখানিই করা হয়।একটা পুরুষকে কোন কাজের জন্য যতটুকু মজুরি দেয়া হয় নারীকেও তাই দেয়া হোক। একটা নারীর সালোয়ার কামিজ পুরুষকে পরিয়ে বা একটা পুরুষের প্যান্ট শার্ট নারীকে পরিয়ে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা নয়।যার যেখানে যততুকু প্রাপ্য তাকে তত্তটুকু দেয়াই সমানাধিকার। তিনি মনে করতেন যে শুধু ঘরের বাইরে চাকুরি করার জন্য না ,একজন সুগৃহিনী হবার জন্যও একটা নারীর সুশিক্ষা দরকার,একজন সুমাতা হবার জন্যও তাদের সুশিক্ষা দরকার।কারন একটা সন্তান মায়ের জ্ঞান বুদ্ধির অধিকারী হয়ে থাকে অনেকটা।আর তিনি শুধু চাকুরি লাভের জন্য শিক্ষা অর্জনের খুবই পরিপন্থি ছিলেন।

নারীদের স্বাধীনভাবে পেশা গ্রহনের ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে নারীরাও জজ,ব্যারিস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সবই হতে পারে।যে পরিশ্রম দ্বারা নারীরা ঘরে কাজ করে সেই পরিশ্রম দ্বারা নারী স্বাধীনভাবে ব্যাবসাও তো করতে পারে।কিন্তু তিনি বলেছেন যে,”কৃষক প্রজা থাকতে জমিদার কেন কাঁধে লাঙ্গল নিতে যাবেন”। অর্থাৎ যেই কাজ করার জন্য যথেষ্ট পুরুষ লোকবল আছে কেন সেই একই কাজ মেয়েরাও কেন করতে যাবে!!জগত সংসারটা হচ্ছে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার।সবাই এখানে একই কাজে পড়ে থাকলে কি এই জয়েন্ট ভেঞ্চার সাকসেস্ফুল হবে !! ডাক্তার বা টিচার হওয়া খুব মহৎ পেশা বলে সবাই যদি বলে যে, সবাই এই মহৎ পেশা গ্রহণ করবে তাহলে খাবার উৎপাদনই বা করবে কে,পরনের কাপড়ই বা বানাবে কে,ডাক্তারের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা তৈরি করবে কে!! আবার ডাক্তারকে দিয়ে যেমন ইঞ্জিনিয়ারের কাজ হবে না তেমনি ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়েও ডাক্তারের কাজ হবে না।তেমনি নারীদের ব্যাপারেও তিনি একই মত পোষণ করতেন।নারীর কাজ পুরুষকে দিয়ে হবে না আর পুরুষের কাজও নারীকে দিয়ে হবে না।

 

মুসলিম নারীদের পর্দার ব্যাপারে তার মতামত ছিল এইরকম যে,”ধর্ম বন্ধন ছিন্ন করে আমি তাদের ঘরের বাইরে আনতে চাই না”।আসলে তিনি শুধু মুসলিম না,কোন ধর্মের নারীদেরই তিনি তাদের ধর্ম ত্যাগের ব্যাপারে অতি উতসাহিত করে কথা বলেননি। আমাদের বর্তমান নারীবাদীরা যেই ইসলামে নারী অধিকাররের বিরুদ্ধে এত সোচ্চার,বেগম রোকেয়া কিন্তু ইসলামে নারীদের যেই অধিকার দেয়া হয়েছে সেটার সাথে বর্তমান নারী অধিকারের বৈপরীত্য দেখে খুবই মর্মাহত হতেন। মহানবী (সাঃ) ফাতিমাকে যেই আদর সোহাগ করতেন তা ভেবে তিনি জাতির কাছে প্রশ্ন করেন যে,”যদি ধরমগুরু মহানবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করেন যে তোমার কন্যার সাথে কিরুপ ব্যাবহার করেছিলে??তাহলে কি উত্তর দিবে?”।তিনি ইসলামকে কখনই নারী অধিকারের পরিপন্থি করে দেখেননি যেভাবে বর্তমানের নারীবাদীরা দেখে থাকেন।

Facebook Comments