banner

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

ভালবাসার স্বপ্নরা অশ্রুতে লুকায়

ডা.সাকলায়েন রাসেল


ও বয়স ৩৫! বাড়ী জলঢাকা!
নীরার এই তথ্যগুলো আগেই দেখে নিলাম। পরণে শাড়ী। পরিপাটি গেট আপ। এই বয়সটাকেও আমি সন্ধিকাল বলি। কারণ এই সময়ে মেয়ে থেকে মা হয়ে যায় বেশিরভাগ মেয়ে। দেহে তাই পরিপূর্ণ নারীভাব চলে আসে। ছেলেরাও বাবা হয়। তবে তাদের পুরুষভাব আসতে কমপক্ষে চল্লিশ লাগে!

কথাটা ফানি। তবে সত্য বলে প্রমাণিত হয় অনেক সময়। মেয়েদের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশ হতে কমপক্ষে ১৫ বছর লাগে!
নীরাকে অবশ্য তেমন মনে হল না। বয়স লুকাইনি সে। তবে ৩৫ এর চেয়ে বেশি বয়স্কা লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। এই বয়সে ওর দেহে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসারের মত হাই প্রোফাইল রোগ গুলো বাসা বেঁধেছে।

নীরাও আপন করে নিয়েছে তাদের। থাকে না তাই ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণে আসে না প্রেসারও। না আসলে তাতে কি! পাত্তা দেয় না নীরা।

থাক না। ওতো কন্ট্রোল করে কি হবে?
রোগের কথা জানাচ্ছিল নীরা। পাশে সাথে আসা ভদ্রলোকও দুই একটা সমস্যা ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। ভদ্রলোকের পরিচয় নেয়া হয়নি। তবে কথাবার্তায় স্বামী সুলভ ভাব স্পষ্ট।

নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করে নিলাম, আপনাদের সম্পর্ক?
অবাক হলাম। কারণ লোকটি উত্তর দিতে কয়েক সেকেন্ড পজ নিলেন। অনেকটা ভাইভা বোর্ডের মত। সহজ প্রশ্ন কিন্তু টেনশনে মাথা থেকেই আউট।
হঠাৎ ‘ও হ্যা… মনে পড়েছে’!

লোকটি শুরু করলেও শেষ করলেন নীরা।

‘আমার স্বামী’। লোকটি মুচকি হাসিতে সম্মতি দিলেন। যার শাব্দিক রূপ উত্তর সঠিক হয়েছে। লোকটি হেল্পফুল। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মুখটাও কষ্টে মেখে রেখেছেন।

না নীরা প্রেসার বা ডায়াবেটিসের কথা বলতে আসেনি। তার শরীরে অনেক সমস্যা। ঢাকার বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে। কাজ হয়নি। ইন্ডিয়া গেছে। লাভ হয়নি।

কোন এক টিভিতে আমার সাক্ষাৎকার দেখেছে। খুব ভাল লেগেছে তার। তাই আসা। অনেক আশা নিয়ে। সাথে আসা ভদ্রলোক সে ভিডিও দেখালো। স্যার, অনেক আশা নিয়ে। এসেছি।

কত জায়গায় দেখালাম। কাজ হয়নি। কেউ ভাল করে বলেও না কি হয়েছে। প্রোগ্রামে আপনার কথা শুনে খুব ভাল লেগেছে। তাই আসলাম। আপনার সিরিয়াল না পেয়ে গত ৫ দিন ঢাকাতেই আছি।

নীরার ব্যথার সমস্যা। এ ব্যথা মূলত পায়ে। হাটতে গেলে ব্যথা। বসে থাকলেও ব্যথা। ব্যথা হয় ঘুমের মাঝেও। তীব্র ব্যথা না। ব্যথার চেয়ে জ্বালাপোড়া বেশি। তার চেয়েও বেশি রগে টান ধরা। জ্বালাপোড়া আছে হাতেও। পিঠেও মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সকালে। অসহ্য ব্যথা। প্রতিদিন সকাল আসে তাই কান্না হয়ে। নীরা কান্নার শব্দে বাসার সবাই জেগে উঠে।

ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক। কাজ হয়নি। ফিজিক্যাল মেডিসিন। রিউম্যাটোলজিস্ট। অর্থোপেডিক্স। ফিজিওথেরাপিস্ট। ঘুরে এসেছে চেন্নাই থেকেও।

স্বামী লোকটাকে বেশ ব্যস্ত মনে হল। এ ব্যস্ততা মোবাইল নিয়ে। ভিডিওটা বের করলেন। স্যার আপনার এই প্রোগ্রামটা ইউ টিউবে দেখেছি। তখন থেকেই ভক্ত। ভাবছি একবার হলেও আপনাকে দেখাব।
আমি কাগজপত্র চেক করলাম। কড়া কড়া ঔষধ ইতোমধ্যে খাওয়া শেষ। আমার প্রেসক্রিপশনে নতুন করে দেয়ার জন্য কিছুই রাখা হয়নি।

নীরাকে দেখলাম। সব পালস নরমাল। ডুপ্লেক্স এর সাহায্য নিলাম। না খারাপ কিছুই ধরা পড়ল না। নীরার উপসর্গ একেবারেই বে-মানান। কোন রোগের সাথে তাই মেলানো গেল না। নীরাকে পরীক্ষা করে নিজ চেয়ার এসে হেলান দিয়ে বসলাম। নীরা ও তার স্বামীর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা! অপেক্ষায় আছে আমি কি বলি। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভাঙ্গালো স্বামী।

– স্যার, কিছু বোঝা গেল? ও ভাল হবে তো?

নীরার মুখ আঁধারে ঢাকা। স্বামীর প্রশ্নে তার সায় আছে। সেও এর জবাব চায়।

আমি স্বামীর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। সবটুকু মনোযোগ তখন নীরার দিকে।

নীরা, ভুলে যান আমি আপনার ডাক্তার। ধরেন, আমি আপনার অতি পরিচিত কেউ একজন। গল্প করছি। জানিনা কিছুই। বুঝিনা অনেক কিছু। এমন কেউ। আমার কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।

-কোন কাজ কি গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন? আই মিন কাজে কনসেন্ট্রেশন কেমন আপনার?
প্রশ্ন কমন পড়েছে। উত্তর দিতে নীরাকে চিন্তাই করতে হল না।
@না পারিনা, কোন কিছুতেই মনোযোগ নেই আমার!

-আপনার কোলাহল খারাপ লাগে? গ্যাদারিং এড়িয়ে চলেন?
@জ্বী, কোলাহল একদম সহ্য করতে পারিনা।

-গান শোনেন? টিভি দেখেন?
@না গান শোনা, টিভি দেখা, সিনেমা দেখা কোন কিছুই ভাল লাগে না আমার!

নীলার চোখে মুখে বিরক্তি রেখাটা স্পষ্ট হল। মনে হল আশেপাশে কোথাও গান বাজছে। নীরার সহ্য হচ্ছেনা।
স্বামীর দিকে তাকালাম।

-একটা মুচকি হাসির ছাপ আমার মুখে। আপনার উপর রাগ টাগ করে নাকি?
স্বামী থতমত খেল। মুখে একটা মরা মরা হাসি আঁকার চেষ্টা করল। তাকে কিছু বলতে দিলাম না। আবারো নীরার দিকে তাকালাম।

-মেজাজ কি খুব খিটমিটে থাকে?
@নীরা সাথে সাথে সায় দিল। জ্বী স্যার, খুব বেশি। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। সব সময় খিটমিট করি।

-ঘুম কেমন হয়?
@নাই বললেই চলে। একটু ঘুম আসলেও গভীর ঘুম কখনোই হয়না।

নীরাকে কিছুটা বিচলিত মনে হল। কারণ যে রোগ নিয়ে এসেছে তার সাথে এসব প্রশ্ন যায় না। আমিও সময় সংক্ষিপ্ত করায় মনোযোগী হলাম। বাইরে রোগীর ভীর। একজনকে বেশি সময় দিলে বাকীদের অপেক্ষার প্রহর বেড়ে যায়।

-আচ্ছা শোনেন। দুজনকে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ‘সোমাটোফর্ম ডিজওর্ডার’ নামে একটা রোগ আছে। এটা মনের রোগ। কিন্তু প্রকাশ পায় দেহে। অর্থাৎ মনের কিছু দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয় শরীরে। মনে হবে শরীর ব্যথা। এ সমস্যা। ও সমস্যা। তিনি আসলে মানসিক রোগী না। আবার অনেক বড় মানসিক সমস্যাও।

আমি সতর্ক। নীরা যাতে আবার ভেবে না বসে আমি তাকে মানসিক রোগী ভাবছি।
এমনই একটি রোগের নাম ফাইব্রোমায়ালজিয়া। সর্বাঙ্গে ব্যথা। খুব বেশি কষ্ট হয় না। আবার একেবারে সারেও না সহজে। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা পরে বিরক্ত হয়ে পড়ে।
চেম্বারের আবহাওয়া ততোক্ষণে অনেকটা স্তব্ধ। গুমোট ভাব। । মনে হল এখনই ঝড় নামবে। কথা শেষ করে আনতে হবে।

-এবার সরাসরি নীরাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার মনের মাঝে কি তীব্র কোন কষ্ট আছে?

স্বামী নিশ্চুপ। শব্দহীন নীরাও। সহসাই নীরবতা ভেঙে গেল। নীরার চোখ লাল হয়ে গেল। কন্ঠ আটকানো। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরল সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

@স্যার, আমার স্বামী আসলে মারা গেছে আড়াই বছর হল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। আমার একটা মেয়ে আছে। ক্লাস নাইনে পড়ে।
আজ আড়াই বছর হল। অথচ এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে পারি না তাকে। সব সময় শুধু ওর কথা মনে পড়ে। উঠতে বসতে তার স্মৃতি আমাকে ঘিরে ধরে। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না। একবারের জন্যও না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব ঘিরে শুধু তার স্মৃতি।

তাকালাম পাশে থাকা লোকটির দিকে। নীরা দ্রুতই কান্নার শব্দ কমিয়ে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল।

@আমি ওকে পরে বিয়ে করি। ও খুব ভাল স্বামী।

নতুন এ পরিস্থিতির বিষয়ে আগে থেকে কিছু আঁচ করতে পারিনি। আমিও তাই বাক্যহীন। নতুন স্বামীর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে অস্থির হলাম। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে। স্বামী অসহায় মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হল তার মাঝেও ঝড়। কান্নাকাটি পুরুষকে মানায় না। তাই সে সেটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

আমি সত্যিই অবাক হলাম এই লোকটিকে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জিজ্ঞাসা, কেমন লাগছে লোকটির?

যে নারীকে সে বিয়ে করেছে একান্ত আপন করে নিতে। সে কিনা ভালবাসার সবটুকু আঁচল পেতে রেখেছে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া প্রাক্তন স্বামীর জন্য!

লোকটি কি বিব্রত? সে কি লজ্জিত? তার স্ত্রী তার সামনেই আগের স্বামীর ভালোবাসায় ডুবে থাকার গল্প বলছে।
আমার কন্ঠই থেমে গেল। কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।

নীরাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, অনেক স্মৃতির অধ্যায় মিলিয়ে একটা জীবন নামক গল্প তৈরি হয়। দরকার কি সে গল্পের কোন অধ্যায় মুছে ফেলার?
আপনি অনেক হারিয়ে অনন্ত পেয়েছেন। আপনি তাই ভাগ্যবতী। স্বামী হারিয়ে বিয়ে করার গল্পটা এদেশে একেবারে সাধারণ। অসাধারণ শুধু নতুন স্বামীকে পাশে বসিয়ে হারিয়ে ফেলা স্বামীকে ভালবাসার সবটুকু অর্ঘ্য দিয়ে সাজানো।

লোকটির দিকে তাকালাম। মানুষ না। তাকে মহামানুষ মনে হল। সব শেষ। তবুও নীরার শুকনা মরুভূমিতে সবুজের চাষী সে! জীবন থেমে যায়, স্বপ্নরা গিয়ে অশ্রুতে লুকায়! অন্যের আঙিনায় দেহরা মেক আপে সাজে। মন শুধু হাতড়ে বেড়ায়। ফেলে আসা স্মৃতির দরজায়।
সব..সব কিছু একদিন স্মৃতি হয়ে যায়।
নীরারা বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে ভালবাসারা।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

ষষ্ঠ এশিয়ান ‘কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ কনফারেন্স (বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী)

ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শেষ হল গত ১২ তারিখ সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) চারদিন ব্যাপী কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী’ সিনেট ভবনে।

‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ ইন এশিয়ান কান্ট্রিজ : স্কোপ অব সিবিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়েই ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শুরু হয়েছিল।

৯ তারিখ শুক্রবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

১০ই ফেব্রুয়ারি শনিবার এ সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “দেশে এতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশু-কিশোররা পর্যন্ত এত বেশি কম্পিউটার ট্যাব ব্যবহার করছে; এখান থেকে অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।”

১১ তারিখ রোববার ঢাবি সিনেট ভবনে সিবিটির কনফারেন্সের কর্মসূচিতে রয়েছিল— ট্রমা, সিবিটি, সাইকিয়াট্রি প্রাকটিসেসসহ সাইকোসিস, নিউরো সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, সাইকোথেরাপির বিভিন্ন , কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ, কম্পিউটারাইজড সিবিটি, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা উপস্থাপন ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের সেই দিনে উপস্থাপক হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ফলাফল তুলে ধরবেন।

গত সোমবার অর্থাৎ ১২ ই ফেব্রুয়ারি সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ আরোও কয়েকটি কর্মশালা।
যুব-সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় মনোবিজ্ঞানীদের করণীয় ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুস্থতায় কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কনফারেন্সে মনোবিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং সহৃদয় ব্যক্তিত্ব ধারণ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬ষ্ঠ সিবিটি কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন কৌশল কনফারেন্স এ অংশগ্রহণকারী বক্তব্যে উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল নিউরো সাইকোলজিস্ট ডেভিড এ কুইন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিথ ডবসন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াং হেউ কুন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিয়ান পো ওয়েই, এশিয়ান সিবিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়ুং-হাই কুন, কানাডা প্রবাসী চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সায়েদা নাফিসা বানু, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখসহ আর অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। উঠে আসবে গুরত্বপূর্ণ অজানা তথ্য। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে।

এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিকেল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (এনপিইউ) ও এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি এসোসিয়েশনের (এসিবিটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কনফারেন্স এর সর্বশেষ অভিব্যপ্তি প্রকাশ করেন,

“সব কটা জানালা খুলে দাও না:
আজ যেন আমাদের বিজয়েরই দিন। এই বিজয় শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির নয়। এটি বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের বিশ্বজয়।

গত চার দিনের কর্মযজ্ঞ এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডেলিগেটদের কাছে প্রমান করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা নিয়মিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করে আসছি এবং সবগুলোই ভীষনভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে এবারের কনফারেন্সের ব্যাপারটা বেশ ভিন্ন।

চমৎকার সব ‘কী-নোট’, ওয়ার্কশপ আর সিম্পোজিয়ামে পরিপূর্ন ছিল চারটি দিন। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বিদেশীদের সাথে সমানতালে গবেষনা পত্র উপস্থাপন করেছে, ‘কী-নোট’ দিয়েছে, আর সিম্পোজিয়াম এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা যখন আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশংসা করছিল ওদের শরীরের ভঙ্গীই বলে দিচ্ছিল যে তারা বানিয়ে বলছে না।

এটি কখনোই সম্ভব হত না যদি সারা বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সঙ্গে না থাকতেন। আট তারিখের অমন থমথমে পরিস্থিতির চাপে যদিও আমাদের ব্যাবস্থাপনায় বেশ কিছুটা নেতিবাচক ছাপ পড়েছিল, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শক্তিতে এই ছাপ ওনাদের কারো মনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের চকচকে চোখে যে স্বপ্নের ছোয়া দেখেছি – মনে হচ্ছিল এই স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছা-সেবকের দলের দিকে যতবারই তাকিয়েছি – একগুচ্ছ হাসি ছুটে এসেছে। ঢাকা কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই মাইলফলকটি অর্জনের জন্য।
এই বিজয়ে আমাদের সেনাপতি ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শাহানুর হোসেন আর পদাতিক ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা – পাশাপাশি তাদের পুর্বসুরী ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে হেটে গেছে পুরোটা পথ। ওরা প্রমান করেছে ভাল কাজের জন্য ভাল ইচ্ছা আর পরিশ্রমই যথেষ্ট আর যদি সাথে থাকে জহির ভাই আর মাহমুদ স্যারের মত নির্মোহ নেতৃত্ব তাহলে যে কোন অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।

অনেক গুলো নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিল তাদের উপস্থিতি কতটা জরুরী, অনেকগুলো নতুন নাম হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকবে, আর অনেকগুলো নাম না জানা মানুষের মুখচ্ছবি মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকবে। হয়তো কখনোই বলা হবে না তাদের ভালবাসা, তাদের অবদান কত দারুনভাবে অনুভব করছি।

মীর ফখরুজ্জামান স্যারকে দেখিনি, রোকেয়া ম্যাডাম আর আনিসুর রাহমান স্যারকে খুব কাছ থেকে জেনেছি। এ কয়েকদিন অনেক বার মনে হয়েছে তাদের কথা। আজ না হয় জানালা গুলো খোলাই থাক ওঁদের জন্যে।

দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা, আমাদের সময়, রেডিও স্বাধীন, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। ইয়ুথ এনগেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ডেইলি স্টার ইয়ুথ ফোরাম। (অপরাজিতা:http://oporajitabd.com)