banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

ভালোবাসার জাদুকরী মহিমা

আজহারুল ইসলাম


বিবাহিতরা ভালো সৈনিক হতে পারে না, এই অজুহাতে ২৭০ খৃস্টাব্দের দিকে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ-তরুণীদের বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসাহিত ও বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। খবর পেয়ে সম্রাট তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। সম্রাট অবশ্য ভ্যালেন্টাইনের প্রত্যয় ও প্রেমের প্রতি অবিচল বিশ্বাসে মোহিত হয়ে শর্তসাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শর্ত হিসেবে তাঁকে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে রোমান দেবতার প্রতি অনুরক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ভ্যালেন্টাইন রাজি হননি বরং সম্রাটকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান। পরিণতিতে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপনের রেওয়াজ চালু হয়েছে।

অবশ্য, এই কাহিনী তথা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, একে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপি ব্যবসা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপোযোগিতা নিয়ে রয়েছে ম্যালা বিতর্ক। আমরা সেদিকে যাব না। কীভাবে এলো, কারা আনলো ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও যে বিষয়কে কেন্দ্র করে এই দিবস সেই ‘ভালোবাসা’ কিন্তু সার্বজনিন। স্থান, কাল, পাত্র বা জাত-গোষ্ঠীতে বিভাজন বা পার্থক্য থাকলেও ভালোবাসা উপলব্ধি বা আকাঙ্ক্ষায় কারো আগ্রহের কমতি নেই। সেই ভালোবাসা নিয়েই আজকের আলোচনা।

‘ভালোবাসা কাকে বলে?’ সম্ভবত অতি পুরাতন কিন্তু সবসময়ের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রশ্ন। যুগে যুগে হাজারো কবি, সাহিত্যক, দার্শনিক আর অধুনাকালে বিজ্ঞান সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে কোনও সন্দেহ নেই। কোন সাধারণ বা সরল সূত্র দিয়ে ভালোবাসাকে প্রকাশ করা খুবই দুরহ। ভালোবাসার অনুভুতি অনেক বেশি ব্যাক্তি-আপেক্ষিক। এই অনুভুতির সূত্র ধরে বলা যায়, ভালোবাসা একটা আবেগ যেটা ভীষণভাবে অনুভুত হয়। যেমনটা হয়, ঘৃণার বেলায়, দুঃখের সময় অথবা রাগান্বিত হলে। তীব্র অপছন্দ থেকে ঘৃণা তৈরি হয়। আমরা অপছন্দের জিনিস বা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। সেটার কোন মঙ্গল চাই না। বরঞ্চ ধ্বংস হলেই ভালো। অন্যদিকে, ভালোবাসা হলো কাছে টানার, একত্রিত হওয়ার, বিকশিত হওয়ার আবেগ। এই আবেগ সামান্য কিছু সময় থেকে অনেক বছরব্যাপি উপলুব্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান বলছে এগুলো আমাদের প্রাথমিক আবেগ যা সবার মাঝে থাকে। মস্তিস্কে লিম্বিক সিস্টেম নামে একগুচ্ছ ব্রেইন স্ট্রাকচার রয়েছে যা মুলত এই আবেগগুলোর জন্য দায়ী। আর আবেগগুলো দায়ী সৃষ্টি অথবা ধ্বংসে।

অন্য মানুষের অন্দরমহলে কী ঘটছে, কী চাচ্ছে সে অবচেতনে সেটা বুঝতে সাহায্য করে আমাদের আবেগ। আমরা অন্যের অনুভুতি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারি এবং সে অনুসারে নিজের চিন্তা, অনুভুতি, অথবা কার্যক্রম সাজিয়ে ফেলি। এই বিষয়টাকে শারীরবিদরা নাম দিয়েছেন ‘লিম্বিক অনুরণন’ (Limbic Reasonace)। অবাচনিকভাবে এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে পরস্পরের আবেগ অনুভুতিগুলো বিনিময় হয়ে খাপ খেয়ে যায়। এই আবেগীয় খাপ খাওয়াটাই আসলে ভালোবাসা। আর এই জন্যই বুঝি দু’জন দু’জনের সান্নিধ্য বা তাকিয়ে থাকার মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা চরমভাবে পুলকিত হন। চোখ যে মনের সদর দরজা। এভাবে একটা গভীর, আন্ত-ব্যাক্তিক সম্পর্ক তৈরি হয়, অনেকটা অবচেতনে। অন্যের আবেগীয় চাহিদাগুলো বোঝার এবং সেই অনুসারে আবেগীয় প্রতি-উত্তর দেয়ার ক্ষমতার মধ্যে একটা ছান্দিক মিলন ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে। সেটা হতে পারে মায়ের সাথে শিশুর অথবা প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে।

ভালোবাসার ধরনের মধ্যেও ভিন্নতা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা একটা সাধারণ সূত্র দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে পরিপূর্ণ ভালোবাসাকে দেখা হচ্ছে চরম আবেগ, প্রতিশ্রুতি আর পারস্পরিক অন্তরঙ্গের সুষম মিশ্রণ হিসেবে। অনেকটা সমবাহু ত্রিভুজের তিন বাহুর মতো। যদি, তিনটা বাহু সমান না হয়? তাহলে, ভালোবাসা হবে তবে অসম্পূর্ণ। যেমন, শুধু অন্তরঙ্গ থাকলে সেটাকে পছন্দ বলা যায়। আবার ভালোবাসায় বিমুগ্ধদের মধ্যে শুধু তীব্র আবেগ থাকে, প্রতিশ্রুতি, অন্তরঙ্গের বালাই নেই।

একজন মানুষ ভালোবাসায় পড়লে বা ভালোবাসা পেলে কী অনুভব করে? লেখক-নির্মাতারা সুচারুভাবে সেই চিত্রায়ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন বা যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। আমরা দেখেছি, প্রেমে পড়লে মানুষকে একটু বোকা অথবা সাহসী হতে। অন্যসব চিন্তা বা কাজকর্ম ফেলে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। একটা অদৃশ্য কিন্তু স্পস্টত অনুমেয় ঘোরের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা ব্রেইন এর পরীক্ষা (এফএমআরআই) করে দেখেছেন এ সময় প্রেমিক-প্রেমিকার মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দীপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। অবশ্য অন্য কোনও কারণেও শরীরে ডোপামিন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, ড্রাগ। আবার এই ঘোর দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। হয়তোবা, এই ঘোর রূপান্তরিত হয় সচেতনতায়, সামাজিকতায়।

পরিপূর্ণ ভালোবাসায় মগ্ন একজন মানুষের দেহ ও মন দুটোতেই ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে তার ভেতরের আবেগ অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ পায় অন্যের ভালোবাসার মাধ্যমে। বুঝতে পারে ‘আমার আমি’কে। নান্দনিক সৌন্দর্য তাকে যেন শীত কালে গরম চাদরের মতো মুড়িয়ে রাখে। সঙ্গত কারণেই অন্য নেতিবাচক আবেগগুলো দুর্বল হতে থাকে। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, ক্রোধ ব্যপকভাবে হ্রাস পায়। ফলে, নিজের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। নিজেকে মুল্যবান ভাবতে পারে, নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারে। একবুক সাহস নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে থাকে। এতদিন শুধু অন্যদের রোল মডেল ভাবতো, এখন নিজেকেও তাদের মতো ভাবতে পারে।

পরিপূর্ণ এই ভালোবাসার জন্য উভয়ের মধ্যে সমানভাবে আবেগীয় অনুরণন (Emotional Reasonance) হওয়া আবশ্যক। তার উপস্থিতি, স্পর্শ, চোখ, ঘ্রাণ যদি আমাকে মোহিত না করে, পুলকিত না করে, তাহলে সেই ভালোবাসায় সম্পূর্ণতা আসে না। অনেককে দেখা যায়, ভালোবাসার জন্য বাজারের লিস্টের মতো বিশাল লম্বা একটা ক্রাইটেরিয়ার ফর্দ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ হতে হবে, লাগবে অমুক, থাকতে হবে তমুক। প্রকৃত ভালোবাসায় এসবেই কী মুখ্য? এসব শর্তযুক্ত ভালোবাসায় স্বস্তি থাকে না, থাকে শংকা। যদি শর্ত পূরণ না হয়? নিজেকে না জেনে, নিজের মনের কথা না শুনে, অন্যের আবেগ না বুঝে, শুধু ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভালোবাসার জন্য হুরুহুরি করলে কোন লাভ হয় না। এতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভালোবাসার যাদুকরী মহিমায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ মানুষের জন্য একটি অপরিসীম পাওয়া। বিবর্তনবাদের মতে নিজের প্রজাতি রক্ষার তাগিদেই মানুষ ভালোবাসে, প্রণয় করে। কারণ যাই-ই হোক না কেন, ভালোবাসার অকৃত্রিম স্বাদ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসাকে নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ করে দিবে, সবার মনে সঞ্চার করবে প্রেম, এই প্রত্যাশা রইল।

সহকারি অধ্যাপক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র: মনোযোগী মন।

 

মাতৃ কথন ১

ফারিনা মাহমুদ


সন্তানকে যেমন একজন মা জন্ম দেয়, সন্তানও তেমনি একজন “মা” এর জন্ম দেয়। দুটোকেই আমার সমান আনন্দের আর সমান বিষ্ময়ের মনে হয়।

আল্লাহ !! আপনার বাচ্চা এখনো ফিডারে দুধ খায়? আমারটা তো সেই কবে থেকে মুরগির রান নিজে চিবিয়ে খায়, আর কিছুদিনের মধ্যে গরুর রানও পেরে যাবে ইনশাল্লাহ।

অথবা,
এখনো মাত্র আড়াইটা দাঁত উঠেছে ? আমার বাবুর তো আক্কেল দাঁতও উঠলো বলে।

মা মাত্রই এই কথাগুলোর সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ফলাফল, নিজে হীনমন্যতায় ভোগা, এক বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার তুলনা করে
“আমি কি ভুল করলাম”
জাতীয় মানসিক চাপের মধ্যে ডিপ ফ্রাই হওয়া ।

বাস্তব হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে:
নো টু চাইল্ড আর সেইম । একেকটা বাচ্চা একেক বয়সে একেক রকম ভাবে বড় হয়, শরীর ও মন দুই দিক থেকেই।

যেটা লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো, নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের কতোটা কাছাকাছি বা দুরে আপনার বাচ্চা এবং এই সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শ আপনি সঠিক মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন কিনা।

অনাবশ্যক মানুষজনের অকারণ পাকনামি কানে ঢুকলে তা কান পর্যন্তই থাকতে দিন, মাথায় ঢুকতে দেবেন না । আমি তো আমার বাচ্চাকে কোনদিন সন্ধ্যায় গোসল করাইনি অথবা আমি তো ৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাবার ব্লেন্ড করে খাইয়েছি- এইসব থিওরি আসলে যার যার নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে যায়।

পৃথিবীর হাজার হাজার মা বাচ্চাকে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যেও রাতে গোসল দিয়ে ঘুম পাড়ায় (আমি নিজেও তাই করি) অথবা ছয় মাস বয়স থেকে ফিঙ্গার ফুড দেয়া শুরু করে (আমি দিতে পারি নাই কারন আমার বাচ্চা চোক করতো এবং আমি ভয় পেতাম ওর গলায় খাবার আটকে গেলে) । কোনটাতেই মহাভারত রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই।

কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ব্লেন্ড খাবে না আবার কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ঘড়ি ধরে দুপুর ১২ টায় গোসল করবে না ।
কাজেই – বাচ্চা বড় করার তরিকায় কোনো রাইট এন্ড রং নাই।

শুনতে হবে সবারটাই কিন্তু মানতে হবে বাস্তবে নিজের জীবনের সাথে যা ভালো খাপ খায়। ঠিক সেটায়।

 

ভালবাসা দিবসে ‘বন্ধু নির্বাচন’ (কাছে আসার গল্প)

রায়হান শরীফ


লিমা কলেজে এসেই আজ শরীফকে খুঁজছে। না,আজ শুধু নয় প্রতিদিনই তো খোঁজে। তবে আজ খোঁজার কারণটা আলাদা, অনেকটা পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজছে।

সহপাঠি একজন বললো তাকে বটগাছের তলায় একা বসে থাকতে দেখেছে। হু একাই তো বসে থাকবে। তার কি অন্য কোনো বন্ধু আছে যে তার সাথে ঘুরবে?

আনমনে এসব ভাবছে, লিমা?

আসসালামু আলাইকুম..
শরীফ চমকে উঠেছে লিমাকে দেখে,,,,
অমাবস্যার রাতে যদি চাঁদ দেখত হয়তো এতটা চমকে উঠত না শরীফ। লিমাকে আজ প্রথম দেখছে তা ত নয়! লিমার আচরণ ও গায়ে পরা জামা কাপড়ের ধরণ দেখেই শরীফ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

যে মেয়ে জিন্সপ্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট ছাড়া কখনো জামা পড়েনি। তার আজ এত পরিবর্তন?

আজ লিমা অতি সাধারণ একটা জামা পড়েছে। ওড়না দিয়ে মুখের চারিপাশ ডেকে রেখেছে। তবে মুখটাই শুধু খোলা। আবার মুখে সালাম? জীবনে কখনো তার মা-বাবাকে সালাম দিয়েছে বলে শরীফের বিশ্বাস হয় না। শরীফ এতক্ষণ পাথরের মত তাকিয়েই ছিল। লিমা তার বাহুতে মৃদু আঘাত করায় তার ঘোর কাটলো।

কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমাকে কি নতুন দেখছিস নাকি? গত তিন বছর তো একইসাথে ক্লাস করছি কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলিস না
আজ কি হয়েছে?

নাহ্! কিছু না। বস। কেমন আছিস বলল, শরীফ বললো!
লিমা বলল, আমি তোর গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসতে পারি?

অন্যদিন হলে শরীফ না বলে পাঁচ হাত দূরে সরে যেত। কিন্তু আজ কেন জানি লিমাকে দেখতেই মায়া হচ্ছে। লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে। লিমার মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে, মুখে কিছুই বললো না শরীফ, শুধু হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে গেল!

একটু পরে শরীফ জিজ্ঞেস করলো তুই এই দুইদিন কোথায় ছিলি? তোকে দুইদিনব্যাপী ক্যাম্পসে না দেখে কালকে তোর মেসের ওই দিকে গিয়েছিলাম। তোদের মেসের দিকে তো কখনো যায়নি। আর যাবই বা কেন? ছাত্রীদের মেসেতো যাওয়া নিষেধ।

তাহু (সহপাঠি তাহমিনা) বললো তুই ঘুমাচ্ছিস, তাই চলে আসলাম।
আর তোর ফোনটাও বন্ধ। কেন ছিল?

১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় যে ফোন দিলি তার পর তো তোর কোন খবর নেই।
প্রতিদিন তো সকাল ৭ টা বাজতে না বাজতেই ফোন না ধরা পর্যন্ত দিতেই থাকিস। তোর জ্বালায় ফজরের পর সকালে একটু ঘুমাতে পারি না। অবশ্যই এই দুই দিন শান্তিতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। তবে তোর কলকে খুব মিস করেছি! ওই দিন পার্টিতে গিয়েছিস তাই না?

=এই লিমা, আমার কথা তোর কানে যায় না!

আর রায়হান(সহপাঠি) তাকেও ওই দিনের পর এই দুই দিন দেখছি না। বলতে পারিস ও কোথায়? তুই তো বেশির ভাগ সময় ওর সাথেই থাকিস!

=কিরে কথা কস না কেন! লিমা এতক্ষণ কিছু শুনছে নাকি আবার চোখে ঘুম চলে আসছে ওর।

লিমার, রায়হানের নাম শোনা মাত্র বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে মোচড় দিয়ে উঠল। তাৎক্ষণিক শরীফের গা থেকে মাথাটা সরিয়ে নিল।

লিমার মুখটা হঠাৎ কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেল, চাঁদের মত মুখটা কেমন অন্ধকারে চেয়ে গেল। চোখ কেমন ছল ছল করে উঠলো, এই বুঝি পানি গড়িয়ে পড়ল কিছুই বলছে না লিমা।

মনে পড়লো ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার কথা। ভালোবাসা দিবসে পার্টিতে গিয়ে ছিলো রায়হানের সাথে।

আনন্দে মেতে উঠেছিলো লিমা,রায়হান সহ হাজারো তরুণ-তরুণী, কিছু ড্রিংক্স না হলে তো পার্টিতে আবার আনন্দ মাটি।

রায়হান-লিমা পার্টি শেষে বাসায় ফিরতে বের হল।

লিমার মাথাটা কেমন যেন ধরেছে বেশ।

রায়হানকে বলতেই সে বললো, চল আমার বাসায়, তা ছাড়া এত রাতে তো তোর মেসের গেটও খুলবে না।

লিমারও মাথা ব্যাথার জন্য বেশি কিছু না বলে রায়হানের গাড়িতে সে উঠে বসল রায়হান পাশে। মাথার ব্যাথাটা এতই বেশি করছে যে, বাসায় কে আছে কি নাই তা দেখার সময়ও ছিল না লিমার।

রায়হান রুম দেখিয়ে দিয়ে অন্য রুমে যেতেই লিমা ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হল, লিমা তার বিবস্ত্র শরীরটা দেখে বুঝতে বাকী রইলো না ওর কাল রাতে কি ঘটে ছিল তার সাথে? কেনই বা কাল রাতে লিমার মাথা ব্যাথা করলো? সেতো এই প্রথম ড্রিংক্স নেয়নি! কত হাজার বার সে ড্রিংক্স নিয়েছে নিজেরও হিসেব নেই। কাল রাতে রায়হান যে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে তা এখন পরিষ্কার।

লিমা রুম থেকে বেরিয়ে সামনের রুমে এসে এক মহিলার দেখতে পেল। এর আগে কখনো আসেনি তাই কাউকে চিনে না সে।

লিমা বললো, আপনি রায়হানের কে?
মহিলাটি বললো, আমি রায়হানের মা।

সকালে উঠেই কোথায় যেন গেল বললো কি যেন কাজ আছে কয়দিন পর ফিরবে বন্ধুদের সাথে গেল।

আসো নাস্তা করে নাও!!
লিমা বললো না,আমারো কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

অন্য একদিন, এই বলেই চলে আসলো,
রুমে এসে কত যে কেঁদেছে লিমা। আর ভেবেছে বন্ধুত্বের দাম এইভাবেই দিলো রায়হান? আমার সরলতা নিয়ে খেলা করেছে রায়হান। কেন?

বিষ খেতে চেয়েছিলো লিমা, গলায় ফাঁসিও দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি।সবসময় হাসিখুশি থাকা মেয়েগুলো তা পারে না হয়ত!

=কিরে কথা বলিসনা কেন??

শরীফের কথায় লিমার স্বরণ এলো সে শরীফের পাশে বসে আছে, না কিছুই বললোনা সে।
সে ভাবছে তার সাথে যা ঘটেছে তাকি তার “নিয়তি না পাপের ফল”?

=শরীফের দিকে না তাকিয়ে শুধু বললো, চল!! ভালো লাগছে না আজ। তোর হাতটা ধরে হাটতে পারি?

দুই জনে উঠে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে লাগলো হাতে হাত রেখে। লিমার মনে হচ্ছে এটাই বিশ্বাসের হাত, বন্ধুত্বের হাত এটাই। ভুল করেছি, বড্ড বেশি ভুল করেছি জীবনে। বন্ধু নির্বাচনে বড় বেশি ভুল হয়ে গেছে!

যে ভুলের জন্য কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না লিমা।