banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: April 2024

 

সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


(এক)

সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে শাহেদার। স্বামী রাশেদ আর শাহেদা গার্মেন্টসে এ কাজ করে। পাশাপাশি দুই রুম ভাড়া নিয়ে একই বাসায় শ্বশুর শাশুড়ি সহ থাকে। সংসারে আরো আছে দুই ননদ। দুজনই স্কুলে পড়ে। শাহেদার শ্বশুর ভ্যান এ করে সবজি বিক্রি করে। মোটামুটি সংসার ভালো চলে। বিয়ের পর যেহেতু এটা প্রথম ঈদ তাই শ্বাশুড়িসহ সবার মনে আশা শাহেদার বাপের বাড়ি থেকে এবার এই পরিবারের সবার জন্য কাপড়চোপড় আসবে!

-অ বউ তুমার বাপের বাড়ির থন কাপড় পাঠাইব কবে? তুমার মায়েরে কইবা শুধু জামা কাপড় দিলেই হইব না; ঈদের লাইগা চিনি, সেমাই আরো জা লাগে সব কিছুই দিতে অইব। নইলে সবার কাছে আমরা মুখ দেখামু ক্যামনে? তুমার মায়েরে মনে রাকতে কইবা এইটা তুমার বিয়ার পরে পরথম ঈদ।

শুধু শাশুড়িই নয় দুই ননদ, শ্বশুর, স্বামী সবার মুখেই প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে শাহেদার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে! অথচ তারা একবারও ভাবছে না যে ওরা বাবা মা কিভাবে এতগুলো মানুষকে খুশি করবে? বাবা রিকশা চালায়, মা বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে। শাহেদার আরও ছোট তিনটা ভাই বোন আছে। তাদেরকে নিয়ে কত কষ্ট করে চলতে হয়! শাহেদার বিয়ের পর তার আয়টাও এই পরিবারে চলে এসেছে। মায়ের কাছে এসব কথা বলতে তার মন চাইছে না।

সে একা একাই এই যন্ত্রণা বয়ে যাচ্ছে।

(দুই)

তিন ছেলের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরলো মিনা আর শফিক।

শফিক বলল- যাক! এবার আসল কাজটা শেষ হয়ে গেছে।

মিনা হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিল।

– মিনা, কাল তো আমি সময় দিতে পারব না, তুমি মার্কেটে গিয়ে তোমার জন্য যা লাগবে কিনে নিও।

-শুধু আমার জন্য কিনব? তুমি কিছু কিনবে না?

– আমার জন্য আর কি কিনবে? আমি শ্বশুর বাড়ির একমাত্র জামাতা তারাই তো আমাকে দিবে…হাহাহা। শ্বশুর বাড়ি থেকে কবে যে ঈদের গিফট পেয়েছিলাম মনেও নেই। বিয়ের পর দুই তিন বছর দিয়েছিল… এখন তারা তো মনে হয় ভুলেই গেছে এই সব সামাজিকতা।

মিনা পাশের রুমে গিয়ে চোখের পানি মোছে। স্কুল শিক্ষক বাবার কানে এসব কথা তোলার কোন মানেই হয়না। বাবার সংসারে তো আর ঝামেলা কম না। মা অসুস্থ, ছোট ভাই দুইটির পড়ালেখার খরচ, সংসার খরচ সব মিলিয়ে বাবা মায়ের কষ্টের কথা মনে করে সে চুপচাপ সব সময়ই শফিকের এসব কথা সহ্য করে যায়। অথচ শফিক ভালো চাকুরী করে ভালো বেতন পায়। বাচ্চাগুলো এত ছোট সেজন্য সে নিজেও কোন জব করতে পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সে এসব অপমান সয়ে যায়।

(তিন)

হিমেল বাসায় এসে দেখে মৌ বেশ খুশী!

-এই শোন না! আজকে আম্মু এসে টাকা দিয়ে গেছে। চল দুই একদিনের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলি। আগে আব্বুর দেয়া টাকার ঈদ শপিং শেষ করি!

– বল কি! টাকা দিয়ে গেছে? আমিতো ভাবলাম এবার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে দেশের বাইরে গিয়ে ঈদ শপিং করব! বিয়ের পর প্রথম ঈদে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েছিল! মাত্র একবার!! এতো টাকা দিয়ে তোমার আব্বু করবে টা কি শুনি? মেয়ে আর জামাইকে একটু মনের মত কেনাকাটাও করতে দিতে পারে না?

– দেশের বাইরে যেতে এত ইচ্ছে করে? তোমার নিজের টাকায় যাও না! আমার আব্বুর আশায় থাক কেন? তোমার তো প্রচুর টাকা। এমন তো না যে তোমার নিজের কিছু নেই। লজ্জা করে না পরেরটা আশা করতে? তারা যা দিয়েছে তা যদি তোমার পছন্দ না হয় তা হলে তোমার কিছু কেনা লাগবে না! আমি আমার জন্য আর হৃদিতার জন্য কিনে নেব! যত্তসব!!!

– তুমি দেখি রেগে যাচ্ছ! আমি কোন কথাটা মিথ্যা বললাম!

-রাগব না তো কি করব? সব সময় তুমি এমন সব কথা বল! কত সহ্য হয়! তুমি এসব কথা বন্ধ না করলে আমি হৃদিতাকে নিয়ে আম্মুর কাছে চলে যাব।

-আহা! রাগ করছ কেন? আচ্ছা চল,
আগামীকাল শপিং সেরেই ফেলি।

অনলাইন এক্টিভিটিস

 

রান্নার টুকিটাকি টিপস (রকমারি

রোজকার রান্না এবং রান্নাঘরকে গোছালো রাখতে টুকিটাকি অন্যতম কিছু উপকরণ সম্পর্কে জানি। ধরুন, পেঁয়াজ মত ঝাঁঝালো একটি মসলা উপাদানটি কাঁটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। কি করলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। এরকম সাতটি বিষয় আলোকপাত করা হল:

ঝাঁঝালো পেঁয়াজ

ঝাঁঝালো এ মসলা উপাদানটি কাটার সময় চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি চলে আসে। একারণে না কেঁদে পেঁয়াজ কাটার জন্য চুইংগাম চিবুতে থাকুন।

পিঁপড়া সমাচার

মাঝেমধ্যে ঘরে পিঁপড়া তার সদলবল নিয়ে আয়োজন পাতে। এ সময় ছোট বড় সকলকে পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হয়। ছোট্ট একটি কাজ করতে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ঘরে ‘শসার খোসা’ ফেলে রাখুন।

ইঁদুরের যন্ত্রণা

শহরের চেয়ে গ্রামে এ সমস্যাটি বেশ প্রকট। এক্ষেত্রে সহজে ‘গোলমরিচ’ ব্যবহার করে এ সমস্যাটি থেকে সমাধান পাওয়া যায়।

আয়না কাঁচে অস্পষ্ট

নেলপালিশের জন্য ব্যবহৃত স্প্রিড ব্যবহার করে সহজে আয়নাকে ঝকঝকে করা যায়।

মাথার চুলে অথবা কাপড়ে চুইংগাম

মাথার চুলে ভুল করে চুইংগাম লেগে গেলে পমেট(মেরিল অথবা ভেসলিন) লাগিয়ে সহজে ওঠানো যায়। তাছাড়া কাপড়ে লাগলে কাপড়টিকে ফ্রীজে রেখে দিলে ঘন্টাখানেক তাহলে চুইংগাম ছেড়ে যাবে।

ডিম সিদ্ধ খোসা ছাড়ান

ডিমের খোসা ছাড়ানোর আগে যদি পানিতে লেবুর রস চিপে দেওয়া যায় তাহলে সহজে এবং সুন্দরভাবে খোসা ছাড়ানো যায়।

সাদা কাপড়ে বাড়তি উজ্জ্বলতা

সাদা কাপড় পরিষ্কার করে ধুয়ে তা আবার লেবু সহ গরম পানিতে ১০মিনিট রাখলে পানি থেকে উঠাতে দেখা যাবে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।

 

পিতা পুত্রের আত্মকাহিনী

গাজী আনোয়ার শাহ্


পৃথিবীতে নিজের খুশিমত আসিনি, খুশিমতো চলেও যাব না। জীবন হাত ধরে নিয়ে এসেছিল বলেই এসেছি। মৃত্যু
হাত ধরে নিয়ে চলে যাবে, তখন চলে যাব।

সব সময় বৃষ্টির ফোঁটার হাত থেকে বাঁচাত। রাতের বেলা আকাশের তারা গোণা হতো এই বটগাছের ছায়ায় বসে। হঠাৎ বটগাছটা বাতাসে মিলিয়ে যায়, মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝিনি, এর মর্ম কি। আজ বুঝি।

ওহ হ্যাঁ,বাবার কথা বলছিলাম আর কি।

“বাবা”এই চরিত্রটা একটু অদ্ভুত। কখনো হয়ত খুব কাছ থেকে আপনি তাকে পাবেন না। তবে দুরে গেলেই হয়ত বুঝতে পারবেন বাবা নামক এই মানুষটি আপনার কত কাছে ছিলো। প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে রাজকন্যা এবং তার ছেলে রাজপুত্র । এই বাবা তার সন্তানের জন্য কতটা ছাড় দিয়ে থাকেন তা হয়ত একটা ছেলে বাবা হওয়ার আগে টের পায় না।

জানেন, আমাদের দেশের মায়েরা সন্তানদের সারাদিনই বকাবকি করে, আর সে সময়টাতে সন্তানের আশ্রয়স্থল থাকে বাবা। মায়ের বকাবাদ্য হয়ত বাবার কোল পর্যন্ত শোনা যায় না। তাই পরম শান্তিতে বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া যায়। তবে, বাবারাও হয়ত রাগে। সে সময়টাতে হয়ত মায়ের কোল পর্যন্ত গিয়েও সন্তানের নিস্তার হয় না।

একটা কথা শুনেছিলাম, একটা মেয়ে তখনই মা হয় যখন সে জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। আর একটা ছেলে তখনি বাবা হয় যখন সে তার নিজ সন্তানকে কোলে নিয়ে দুচোখ ভরে দেখতে পারে।

আমার বাবাটাও না ঠিক একই রকম ছিলো, শেষ সময়টায় বাবা খুব অসুস্থ ছিলো। সেবার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে বাবাকে খুশি রাখতে পেরেছি বলে মনে হতো। বাবা সন্তান হিসেবে হয়তো দোয়া করতো। মাঝে মাঝে বাবা হাসতো, খুব অদ্ভুত একটা হাসি। হয়ত বুঝি নি, সেই হাসিটাতে ছিলো শত কষ্টের মাঝেও আমাকে খুশি রাখার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা।

আমার বাবাটা হয়ত খুব স্বার্থপর ছিলো, তাই যখনই কোন ভালো কাজ করতাম তখনই বলে উঠতো:-

আমার ছেলে।
আর খারাপ কাজ করলেই হয়ে যেতাম মায়ের ছেলে।এটাই হয়ত প্রত্যেক বাবার রীতি।

সেই বাবাটা আজ নেই। হারিয়ে গেছে সেই বটগাছটার মত। আজ বুঝি, এই বাবাটা আমার কত কাছে ছিলো।আমার এখনো মনে পড়ে বাবার সাথে আমার শেষ স্মৃতিগুলো। পাশেই বসা ছিলাম শেষ সময়টা পর্যন্ত।

ছয় মাস হতে চললো ক্যাম্পাস, বন্ধু, আড্ডা কোন কিছুতেই কেউ খুঁজে পায়নি আমাকে। আমিতো বাবার মাথার পাশে বসে বাবাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতাম। বাবার সাথে গল্প করতাম। বাবার খত মাংসের ড্রেসিং করতাম। মাঝে মাঝে গোস্তের স্তুপ কেটে তার উপর আমাকেই ব্যান্ডেজ করতে হতো। রক্ত, পুঁজ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটা ছেঁড়া আমাকে বিরক্ত করতে পারেনি, আমি বাবাকে ভালোবাসি। বাবার কোলে শিশুবেলা ঘুমাতাম। তাই আমিও গল্প বলে বাবার ঘুম পাড়াতাম।
বাবা নয় কেবল পুরো পরিবারের মধ্যমনি হয়ে উঠেছি। আমার অনুপস্থিতি কেউ মেনে নিতে পারতো না।

শেষ সময়টা বাবাকে কালেমা পড়াচ্ছিলাম আর মুখে হালকা পানি দিলাম। তখনো বুঝতে পারিনি বাবা ঠিক এখনি এতিম করে চলে যাবে। খুব কষ্ট পেতো বাবা, কিন্তু সব সময়ই একটি দোয়া করতাম বাবা তোমার অসুখটা যেন না বেড়ে যায়, যেভাবে আছো, থাকো। আমি এখানেই স্বর্গের সুখ খুঁজে পেয়েছি। সন্ধ্যে বেলা প্রায়শই ঘরে থাকা হয় না। কিন্তু বাবার মৃত্যুর দিন আমি বিকাল থেকেই ঘরে।

বাবা আজ আর নেই। আমি কান্না করিনি। কেনো জানি ভুলে গিয়েছিলাম কান্না করতে। আমি পারি না কাঁদতে। সবাই আকাশ ভারি করে ফেলছে, আমি নিতান্তই চুপ। আমার কান্নাগুলোকে হিমালয়ের স্তুপের নিচে চাপা দিয়ে দিয়েছি।

(মাইকে ভেসে আসছে
“একটি শোক সংবাদ…..।” লইন্নালিল্লাহির………রাজীউন।
মরহুমের জানাযার নামাজের সময়…………. )

পুরোটা রাত ধরেই বাবার নিথর দেহের পাশে নিশ্চুপ বসে আছি। তখনো আমি কান্না করিনি। হয়ত বুঝতে পারছি ঠিক করে নিজের ব্যাথার পাহাড় ভাঙ্গবো। এখনো কান্না করি না, শুধু মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্বলজ্বল করা তারাগুলোর মাঝে বাবাকে খুঁজি। হয়ত একদিন খুঁজে পাবো বাবাকে ওই দূর আকাশে, যে আমায় দেখে হাসছে আর দোয়া করছে।

বাবার দেহকে চার খুঁটির খাটে নিয়ে সকালেই বের হলাম ইদগাহের দিকে। নামায হবে, শেষ নামায। আমিই নামায পড়াই। বাবারও তাই ইচ্ছা ছিলো। শেষ করে নিয়ে চললাম স্থির পায়ে গোরস্তানের ছোট্ট সে ঘরের দিকে। পিছনে মানুষের স্রোত। নির্বাক আমি। বাবাকে রেখে দিলাম সে ঠিকানায়, যে ঠিকানায় যাবে বলে জন্মেছিলো বাবা। আজ তাকে রবের কাছে সমর্পণ করে দিলাম। মাটির পর মাটি পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল বাবা।

ফিরে আসছি ঘরের দিকে, বাবাকে একা রেখে অন্ধকারের সে ছোট্ট কুঠিরে। কাল পর্যন্ত আমার সব ছিলো, ঠিক এখন আমি এতিম। গভীর রাত এখন, শুয়ে আছি বাবার স্মৃতিকে বুকে জড়িয়ে। যে খাটে বাবা নির্বাক শুয়ে ছিলেন মাসের পর মাস। আজ একাই শুয়ে আছি আমি।

বাবা এখন আমি তোমার জন্য কাঁদবো। পৃথিবীর সব ঘুমিয়ে পড়েছে, নিশ্চুপ চারিপাশ। নিরব, নিথর, ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ সময়ে বাবা ঘুম থেকে উঠে রবের দুয়ারে হাত তুলো কাঁদতো। আজ আমি রবের কাছে কেঁদে বলছি, হে প্রভু তুমি বাবাকে জান্নাতের মেহমান করে নাও। তোমার প্রিয় পাত্র হিসেবে কবুল করো। (আমিন)

ভালো থাকুক সকল বাবারা। এপারের অথবা ওপারে।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ।

কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

সখের সাইকেল

ডা.সাকলায়েন রাসেল


একটা মেডিকেলে চান্স পেলেই হলো
–আব্বা-আম্মার চাওয়াটা ঠিক এতোটুকুই ছিল। সে জায়গায় যখন চান্স পেলাম ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজে’ তখন তাদের সে কি আনন্দ !

দু’জনে আমাকে কাছে বসিয়ে বলল, তোমার ফলাফলে আমরা আনন্দিত, গর্বিত। এর বিনিময়ে তুমি কি চাও বলো?

‘একটা’ সাইকেল কিনে দাও!!!

আমার এই সামান্য চাওয়ায় বাবা-মা দু’জন বিস্মিত হলেও খুব দ্রুত একটা সাইকেল কিনে দিলেন। বংশাল থেকে, দাম ৩২০০ টাকা।

ফার্স্ট ইয়ার থেকে থার্ড ইয়ার। সব বিনোদন যেন আমার সাইকেলকে ঘিরেই। সাইকেল চালিয়ে বাসা থেকে সোজা ফজলে রাব্বি হল। এরপর সিড়ির গোঁড়ায় গিয়ে সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে এক দৌড়ে তিন তলা। সেখান থেকে আবার সাইকেল চালিয়ে আমার রুমে প্রবেশ।

মন খারাপ লাগলে সাইকেল চালাতাম। বিকাল হলে সাইকেল চালাতাম। জ্বর এলেও সাইকেল। এবারের ১৬ ডিসেম্বর, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট, শত শত সাইকেল।

রঙ বেরঙের সাইকেল… কত ছেলে মেয়ে একসাথে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে ! মনটা ফিরে গেল মেডিকেল কলেজের সেই ফার্স্ট ইয়ারে!

ইদানিং সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মন চায় আবারও এর হ্যান্ডেল ধরি। পকেটে যা আছে তা দিয়ে ভাল একটা সাইকেলও কেনা যাবে। কিন্তু তা কি আর হবে? বয়স বাড়ছে…। মানুষ থেকে আবার ইতোমধ্যে ডাক্তারে পরিনত হয়েছি!!! পাছে লোকে যদি কিছু বলে? এই ‘পাছের লোকটাকে’ কেন যে এতো ভয়!!!!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অন্য, এক নীল ব্যাথা- বেবি ব্লুস

ফাতিমা খান


নীল আকাশ, নীল জল, নীল নির্জনতা কিংবা নীল নীল ব্যাথার কথা আমরা গল্প, কবিতা বা গানে অনেক শুনেছি। কিন্তু এমন এক নীল কষ্টের কথা কি কেউ জেনেছেন যা একজন মা সন্তান জন্মদানের পর থেকে ভুগেন? আমরা কজনে জানি তাদের কষ্টের কথা?

তাহলে আসুন একটা গল্প বলি। গল্প না ঠিক, সত্য ঘটনা।

ভদ্রমহিলা আমার ডাক্তার কলিগের স্ত্রী।ঘটনা তাদের তৃতীয় সন্তান জন্মের সময়ের। এমনিতে তিনি অত্যন্ত অমায়িক ও স্বামী সংসারের প্রতি বেশ যত্নশীল । কিন্তু কি যে হল, বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তিনি হঠাত করে একদম বদলে গেলেন। সারাক্ষন কাঁদেন, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, ঘুম নাই চোখে, বড় দুই বাচ্চাকে শুধু শুধুই বকা ঝকা করছেন, তার জীবনের কিছু বাকী নাই…জাতীয় কথাবার্তা বলেন।
এদিকে নানা জনে নানারকম কথা বলছে, ‘ বাচ্চা সুস্থ হয়েছে তো?’ ‘মেয়ে বাচ্চা বলে কি মন খারাপ?’ ‘মায়ের জন্য মন কাদছে কি? দেশে পাঠিয়ে দেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্বামী বেচারা টেনশনে পড়ে গেলেন। ডিউটি করবেন নাকি ঘর সামলাবেন। ঘটনা চরমে পৌছালো যখন একদিন ভদ্রলোক বাসায় ফিরে দেখেন তার স্ত্রী চাকু নিয়ে বসে আছেন স্বামীকে খুন করবে বলে !

ডাক্তার সাহেব অবশেষে সব সামাল দিয়েছেন অনেক ধৈর্যের সাথে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ভাল কাজে লেগেছিল সেদিন। এখন তারা ভালই আছেন।

প্রসুতি মায়ের এই সমস্যার নাম পোস্ট পার্টাম ব্লুস ( Postpertum blues) বা বেবি ব্লুস ( baby blues) অথবা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpertum depression)।

আজ দেখা হয়েছে এমন আরেকজন মায়ের সংগে। দাতের চিকিৎসার জন্য আসলেও উনার প্রোফাইলে গাইনোকলজিস্ট এর কমেন্টে দেখলাম উনি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন। অযথাই কান্নাকাটি করছেন, স্বামীকে সহ্য করতে পারছেন না।

বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিছুটা বিষন্নতায় ভুগেন। শতকরা প্রায় ১৫ জন মা ই বেবি ব্লুসে আক্রান্ত হন।কিন্তু আমরা অনেকেই কিংবা তার পরিবার ও স্বজনরা ব্যাপারটা বুঝতে পারিনা।সবসময় মন খারাপ থাকা, খাওয়া দাওয়া না করা, অকারণে কান্নাকাটি করা,ঠিকমত না ঘুমানো, কখনো কখনো ভয় পাওয়া এর কিছু লক্ষণ। সাধারনত সপ্তাহ দুয়েক এরকম সমস্যা স্থায়ী হতে পারে। কখনো এর বেশীও হয়।

লক্ষণগুলো যদি তীব্র হয়ে যায় একপর্যায়ে রোগিনীর সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি হতে পারে। কখনো নিজের সন্তান বা স্বামীকেও খুন করার ইচ্ছে জাগতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস।

জেনে রাখা ভাল যে বেবি ব্লুস এ আক্রান্ত মায়েরা কিন্তু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত বা পাগল নন। তাদের সমস্যাগুলো সাময়িক। প্রসবের পরপর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতেই পারে। এসময় দরকার তার অনেক যত্ন আর সাইকোলজিকাল সাপোর্ট।পুষ্টিকর খাবার, রুটিন লাইফ ও রিল্যাক্স থাকলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। কখনও যদি এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

দশ দশটি মাস একটি ভ্রূনকে গর্ভেধারন, নিজের স্বাস্থ্য, পুষ্টি থেকে প্রতিদিন একটু একটু নিঃশেষ করে একটা পুরা মানব শিশুর বৃদ্ধি অত:পর প্রসব খুব নগন্য কোন ঘটনা নয়। এসময় তাদের দেহ, মন, হরমোন সবকিছুতেই এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এমনিতেও একজন প্রসুতি মা পরিবারের সবার যত্ন আত্তির হকদার ও মধ্যমণি হওয়া উচিত। মনে রাখবেন একজন সুস্থ মা ই আপনাকে একজন সুস্থ সন্তান দিতে পারে।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

এন্ডোমেট্রিওসিস: নারীদের জন্যে এক আতঙ্কের প্রতিশব্দ

ডা.মারুফ রায়হান খান


এন্ডোমেট্রিওসিস বিষয়টাকে একেবারে সহজ ভাষায় বোঝানো অনেকাংশে মুশকিল। জরায়ুতে ৩টি স্তর থাকে। একেবারে ভেতরের স্তরটাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়ামের কোষ যখন জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে।

কোথায় কোথায় এটা ছড়াতে পারে ?

– ডিম্বাশয়
– গর্ভনালী
– পাউচ অফ ডগলাস
– পেটের ভেতর যে পর্দায় মোড়ানো থাকে সেখানে
– ব্রড লিগামেন্ট
– এপেন্ডিক্স
– আগে অপারেশান হয়েছে সে কাটা জায়গায়
– নাভী
– যোনি
– জরায়ুমুখ
– ফুসফুস
– নাক

কাদের বেশি হয়ে থাকে এ রোগ ?

১. ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী।
২. সাদাদের বেশি হয়।
৩. যাদের পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকে।
৪. উচ্চবিত্ত পরিবারে।
৫. বিলম্ব করে বিয়ে করা।
৬. বিলম্ব করে সন্তান নেয়া।
৭. সন্তানহীন।

উপসর্গ কী কী থাকে ?

১. প্রায় ২৫ ভাগ নারীরই কোনো উপসর্গ থাকে না।
২. মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা (৫০%)। মাসিক শুরু হবার কয়েকদিন আগেই ব্যথাটা ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু মাসিক চলাকালীন সময় এটা তীব্রতর হয়। মাসিক শেষ হবার পরেও কিছুদিন এ ব্যথা থাকতে পারে।
৩. যৌনমিলনের সময় তীব্র ব্যথা (২০-৪০%)।
৪. বন্ধ্যাত্ব (৪০-৬০%)।
৫. পেটে ব্যথা।
৬. বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে করতে অসুবিধা হওয়া, কখনও কখনও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
৭. পায়খানা করার সময় ব্যথা, ডায়রিয়া, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
৮. দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্তি, অবসন্নতা।

চিকিৎসা :

অল্পবয়সী বিবাহিত মেয়েদের বাচ্চা নিতে বলা হয়, এতে দেখে যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এ রোগের চিকিৎসায় নিম্নোক্ত অপশনগুলো আছে।
১. হরমোনের মাধ্যমে চিকিৎসা।
২. অপারেশান
৩. হরমোন এবং অপারেশানের যৌথ চিকিৎসা
৪. রেডিওথেরাপি, ইত্যাদি ।

এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধ করা যায় কী ?

এর প্রতিরোধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা পাওয়া যায় না। তবে তাড়াতাড়ি সন্তান নিয়ে নেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত চিকিৎসকের চেক-আপে থাকা উপকার বয়ে আনতে পারে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মাইক্রোটিচ পদ্ধতি

আফরোজা হাসান


মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বল্পসময়ে পাঠদান করা হয়। বাংলায় একে বলে অনুশিক্ষন পদ্ধতি। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ- মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সব কৌশল একত্রে আয়ত্ত না করে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আয়ত্ত করানো হয়। মাইক্রোটিচিং মূলত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে বিকশিত হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার উন্নয়ন সাধন, বিভিন্ন কার্যকর শিখন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং কার্যকর ফলাফল প্রয়োগ ও গ্রহণ ক্ষমতার উন্নয়ন।

১৯৫০ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন, রবার্ট বুশ এবং কিম রোমনি প্রথম মাইক্রোটিচিংয়ের ধারণা উপস্থাপন করেন। ১৯৬০ সালের দিকে ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন ও তাঁর সহকর্মীদের মাধ্যমে এই পদ্ধতি আরো বিকশিত হয়। তাদের উপস্থাপিত টিচিং পদ্ধতি হল টিচ, রিভিউ, রিফ্ল্যাক্ট এন্ড রিটিচিং। ১৯৭০ সালের কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এডুকেশন মিনিস্ট্রি তাদের প্রশিক্ষণ সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে এই পদ্ধতি গ্রহন করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে এই পদ্ধতি আরো বাস্তবধর্মী ও কার্যকরী ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে বিকাশ লাভ করে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই পদ্ধতি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। বর্তমানে এই পদ্ধতি কানাডা আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।

এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। আর প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য এই পদ্ধতিতে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে-জ্ঞান আহরণ বা অর্জনের ধাপ, দ্বিতীয় হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় হচ্ছে স্থানন্তর ধাপ। সাবজেক্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে কি শিখছে, পুর্ববর্তী শিক্ষার সাথে এর সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোটিচ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে নয়টি বিষয় প্রত্যক্ষ করা যায়-

১। পাঠ পরিকল্পনা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ানো হয় তার সুনির্দিস্ট উদ্দেশ্য ও সঠিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে টিচারদের মধ্যে।

২। আরোহী পদ্ধতি অনুসরণ। অর্থাৎ, ক্লাসে শুরুতেই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষন করা।

৩। উপস্থাপন। মানে হচ্ছে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয় তার ব্যাখ্যা, বর্ননা, সঠিক বিশ্লেষণ ও উদাহরণ প্রদান করা।

৪। উদ্দিপনা পরিবর্তন। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের অবসাদ বা একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলার জন্য অঙ্গভঙ্গি, নড়াচড়া, সেন্স অব হিউমারের প্রয়োগের মাধ্যমে নীরবতা ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা।

৫। কণ্ঠস্বরের সঠিক ব্যবহার। সঠিক এবং স্পষ্টভাবে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টোনের ওঠা-নামা।

৬। শক্তি সঞ্চার। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সনাক্ত করে তাদের উৎসাহিত করা এবং সাড়া দেয়া।

৭। প্রশ্নোত্তর। মানে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন করা, প্রশ্নের মোকাবেলা করা এবং প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা।

৮। নীরবতা ও ইঙ্গিত। মানে হচ্ছে কথা না বলেও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে বক্তব্য প্রকাশ করা।

৯। মূল্যায়ন। কি পরিমাণ উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে তা দেখা।

( ম্যাগাজিনে বিশাল বড় করে লেখা ছিল মাইক্রোটিচ পদ্ধতি সম্পর্কে। এখানে আমি শুধু মূল অংশটুকু সংক্ষেপে লিখেছি। দাদুর পাঠশালাতে এতো তথ্য ঢোকানোটা জটিল লাগছিলো তাই আলাদা লিখে দিলাম)

 

সৌন্দর্যকে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ

মুশফিকুর রহমান আশিক


“সুন্দর” এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। ফর্সা মানেই সুন্দর না ফ্রেশ মানেই সুন্দর এই জিনিসগুলা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন !!

তুমি ফর্সা হও, শ্যামলা হও, কালো হও কিংবা তোমার চোখ ছোট হোক, নাক লম্বা হোক আর কান বড় হোক কিংবা চুল কম থাকুক আর বেশি থাকুক। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে এমন কেউ আছে, যার কাছে শুধু তোমাকেই “সুন্দর” লাগবে !

তুমি যেমন আছো, তেমনই “সুন্দর” লাগবে। তোমার ছোট চুলই তার কাছে অসাধারণ লাগবে। তোমার বড় চুলের খোপার মাঝে সে আটকে যাবে। তোমার এলোমেলো চুলের মাঝে তার লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটুকু সে আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নিবে !!

তোমার ছোট ছোট চোখই তার কাছে মায়াময় লাগবে। তোমার বড় চোখের অতল গভীরতায় সে ডুবে যাবে। তোমার দৃষ্টিতেই সে হারিয়ে যাবে !!

তোমার কন্ঠ যেমনই হোক, সে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে চাইবে। তুমি গান গাইতে পারো আর নাই পারো, তোমার প্রতিটা কথাই তার জন্য গান হবে !!

তুমি উচ্চতা নিয়ে ভেবো না। এমন কেউ আছে, যে তোমার মত খাটো কাউকেই চায়, হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে আগলে ধরে রাখতে চায় সবসময়। তুমি লম্বা বলে একদমই টেনশন করো না একটুখানি মাথা উঁচু করে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে কারো খুব ভালো লাগবে। এমন কেউ আছে। নিশ্চয়ই আছে!

তোমার গায়ের রং যেমনই হোক, সে চোখ বুজলেই তোমাকে দেখবে। সে শিল্পী না হয়েও কল্পনার ক্যানভাসে সবটুকু আবেগ দিয়ে তোমাকে আঁকবে। তোমার রংটাই তার তুলিতে একমাত্র রং হবে!

আয়নার দিকে তাকিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। আশেপাশের দশটা মানুষের কথায় তুমি নিজেকে ছোট ভেবো না। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। তুমি কালো না, ফর্সা না, খাটো না, মোটা না।
তুমি সুন্দর !!

তুমি মানো আর নাই মানো, তুমি সুন্দর। কারো কাছে তুমি অবশ্যই সুন্দর। তুমি শুধু অপেক্ষা করো। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্ত থেকে কেউ তোমাকেই খুঁজছে। তোমাকেই তার লাগবে। আর কাউকে না।

হুম, তোমাকেই !!”

লেখকের ফেসবুক:
https://www.facebook.com/ash.ashique.

 

গর্ভাবস্থায় আপনার ভ্রুণের সঠিক গঠন ও বৃদ্ধি- আপনার খাদ্যতালিকা

ডা.ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় একটি ভ্রুণের গঠন ও বৃদ্ধি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রথম ৪ সপ্তাহ ভ্রূণে একটি দৈহিক কাঠামো তৈরী হয়, অতঃপর পর্যায়ক্রমে হাত, পা, চোখ, নাক, কান সহ অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ গঠন হয়। ২৪ সপ্তাহের একটি ভ্রূনের স্বাভাবিক ওজন হয় ১.৪ পাউন্ড। এই ওজন ২৮ সপ্তাহ বা সাত মাসে ২.৫ পাউন্ডে বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ যে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে অন্যতম হল মায়ের শারিরীক অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস।

একজন সুস্থ ও পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণকারী মায়ের সন্তান সাধারনত সুস্থই হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতেও পারে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৬-৭ মাসে বাচ্চার বৃদ্ধি হার তুলনা মুলকভাবে কারও কারও ক্ষেত্রে কম থাকে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। যদি ৭ মাসেও বাচ্চার ওজন ‘যদি একটু কমও হয়’ তবুও চিন্তার কিছু নেই, এ ক্ষেত্রে মায়েদের খাবারের দিকে বিশেষ ভাল করে নজর দিতে হবে। শেষের তিন মাস বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে বাচ্চার ওজন এর চেয়েও কম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।

আসুন দেখে নেই কোন কোন খাবারগুলো খেলে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবেঃ

(১)ভাত, রুটি, অন্যান্য, শর্করাজাতীয় খাবার- ওজন বাড়াতে শর্করাজাতীয় খাবারের জুড়ি নেই। ভাত বা রুটি ছাড়াও সুজি কিংবা ওটস ও গমের দানার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে, এর সাথে মেশাতে পারেন পছন্দের মাংস বা সিজনিং বিভিন্ন সবজি ও ডিম বা পছন্দের মাংস দিয়ে নুডুলস প্রতিদিনের তালিকায় থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় রুচির তারতম্য হয় খুব বেশী। সেক্ষেত্রে একই খাবার ভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন ভাত ভাল না লাগলে পায়েশ, চালের গুড়ার রুটি বা পিঠা বা চিড়া দই বিকল্প খাবার হতে পারে।

(২)ফল ও শাকসবজি- রকমারী ফল বা ফ্রুট সালাদ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। কলাতে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ভরপুর। ওজন বাড়াতে কলা আর আমের তুলনা নেই।প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় কলা রাখা যেতে পারে। পাচমিশালি শাকসবজি রান্না বা স্যুপ করে দুবেলা খাবারের সাথে খেতে পারেন। ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উচ্চ মাত্রায় থাকে এসব খাদ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ফল রস করে খাওয়ার চেয়ে এমনিতে ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশী ভাল। পালং শাক, লালশাক, কচুশাক, লাউ কুমড়া, ঢেড়শ সহ সব ধরনের মৌসুমী শাকসবজি সবচেয়ে উপকারী। কমলা বা লাল সবজি বিটা ক্যারোটিন ও আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি আলু ওজন বাড়াতে ও খনিজ এর সরবরাহ করতে খুব সহযোগী।

(৩)ডাল ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার – অম্ল বা এসিডিটির যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ডাল বা ছোলা জাতীয় খাবার আমিষের অন্যতম উৎস। তবে এগুলো কাঁচা বা ভাজা খাওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। মাছ, মাংসের পর এই লিগিউমস গুলো প্রোটিন যুক্ত খাবার যা গর্ভের সন্তানের ওজন বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে আছে মুগ, মসুর, ছোলার ডাল, সীমের বিচি ইত্যাদি। ডালের স্যুপ বা পাতলা ডাল উপাদেয় ও পুষ্টিকরও বটে।

(৪)বাচ্চামুরগী বা কবুতর- অনেকের ধারণা শুধু দুধ বা ডিম বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করবে। এ ধারণা ঠিক নয়। বাচ্চা মুরগির ঝোল বা কবুতরের মাংস নিয়মিত খেতে পারেন। এটি বাচ্চার ওজন বাড়াবে ও সন্তান জন্মদানের পরও মাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।

(৫)মাছ ও মাংস- সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে ও প্রোটিনের ভাল উৎস। সামুদ্রিক বা নদীর মাছ বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর। তবে তাজা ও কেমিকেলমুক্ত হতে হবে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে যেগুলো হজমে দেরি হয় বা মার্কারীযুক্ত থাকে সেগুলো না খাওয়াই ভাল। ছোটমাছ ক্যালশিয়ামের যোগান দেয় যা বাচ্চার হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এ সময় যেকোন এলার্জিক মাছ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। রেডমিট বা গরু ও খাশির মাংসতে ওজন বৃদ্ধি ও আয়রনের যোগান দিতে খুব সহায়ক। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ ও মাংস অবশ্যই থাকা উচিৎ।

(৬)ড্রাই ফ্রুট ও বাদাম- এর মধ্যে আছে খেজুর, কিসমিস, শুকনো এপ্রিকোট, চিনাবাদাম, এলমোন্ড বা কাঠবাদাম, কাজু ইত্যাদি। পিনাট বাটার বা শুধু চিনাবাদামও দ্রুত ওজন বাড়ায়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। সুতরাং গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে এসময় খেজুর খেতে মায়ের দুর্বলতা কমবে পাশাপাশি বাচ্চার জন্য উপকারী।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি

মুশফিকুর রহমান আশিক


গত কয়েকদিনে ফেইসবুকে যে ব্যাপারটা খুব বেশি চোখে পড়ছে সেটা হলো, লোকাল বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে।  দুজনের লেখা ঘটনা পড়লাম, সকাল ১০-১১ টার মত সময়ে যখন লোকাল বাসে একটা মেয়েকে দরজা আটকে হ্যারাজ করার মত সাহস করা হয়, সেটা ভয়াবহ রকমের অ্যালার্মিং!

সকাল ৯ টায় এলিফ্যান্ট রোডের মত একটা ব্যস্ত এলাকায় শত শত মানুষের সামনে থেকে যেদিন আমার ফোন হাইজ্যাক করা হয়েছিল, সেদিনই বুঝে গেছিলাম এই দেশে আমাকে বা আপনাকে কেউ সিকিউরিটি দিবে না। নিজে সাবধান থেকে যতটুকু পারা যায়, ততটুকুই !

যেহেতু মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটা বেশি হচ্ছে, যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন, কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেনঃ

১) বাসটা খালি কিনা
বাস যদি খালি হয়, অবশ্যই অবশ্যই উঠবেন না

২)অল্প কিছু যাত্রী
বাসে অল্প কিছু যাত্রী থাকলেও না উঠার চেষ্টা করবেন। যদি উঠতেই হয়, যাত্রীদের অবস্থা দেখে নিবেন।

এবার আসি যাত্রীদের অবস্থা দেখার বিষয় নিয়ে। দুটো ঘটনা পড়ে যেটা বুঝলাম, বাসওয়ালারা বেশ চালাক হয়ে গেছে। এরা বাস একদমই খালি না রেখে নিজেদেরই কিছু স্টাফ হেলপারকে যাত্রী সাজিয়ে বসিয়ে রাখে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই বাসে উঠার সময় যদি সন্দেহ হয় যে যাত্রীরা তাদেরই কেউ, দয়া করে উঠবেন না। এখানে নিজের Deduction Skill কাজে লাগান।

৩) গেটের কাছে বসুন
বাসে যদি উঠেই পড়েন, গেটের কাছে বসবেন। পেছনে যাবেন না। পেছনে গেলে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যদি দেখেন কোন একটা স্টপেজে বাসের সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে, এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনিও নেমে যান। লাগলে ওখান থেকে অন্য উপায়ে বাসায় যাবেন। কিন্তু বাসে যেন একা পড়ে না থাকেন – এটা খেয়াল রাখবেন।

৪) বিপদে পড়ে গেছেন
কখনো যদি মনেই হয় বাসের ভেতর আটকে গেছেন, বিপদে পড়ে গেছেন, ফোন বের করে কোন বন্ধু বা কাউকে ফোন দিয়ে জোরে জোরে বাসের নাম, লোকেশন এগুলা জানিয়ে দিন। একটু হলেও সেটা বাসের ড্রাইভারকে ভীত করবে।

৫)999 ফোন দিন
আমি জানিনা বাংলাদেশে 999 এ ফোন দিলে ইমারজেন্সি পুলিশের হেল্প পাওয়া যায় কিনা। সেটাও ট্রাই করা যেতে পারে

৬)অ্যাথলেটিক হন
নরম বা দুর্বল হয়ে থাকার দিন এখন আর নাই। পারলে একটু অ্যাথলেটিক হন। আপনার কারাতে শেখার দরকার নাই। কিন্তু লাফিয়ে বাস থেকে নামতে পারার মত ক্যাপাবিলিটি যেন থাকে। এইটা নিশ্চিত করবেন !!

৭)বিকল্প চিন্তা করুন
রাতের দিকে যদি ট্রান্সপোর্ট না-ই পান, চেষ্টা করবেন UBER কিংবা Pathao তে আসার। ফাঁকা লোকাল বাসে উঠার চেয়ে UBER Pathao এর কার বা বাইকে উঠা ভালো। আনইজি লাগতে পারে। কিন্তু ঐখানে আপনার পুরা জার্নিটা ট্র্যাক করা হয়, ড্রাইভার/রাইডার এবং কার/বাইক এর ইনফরমেশনও থাকে। তাই সিকিউর বলা যায়। টাকা বেশি লাগুক। জীবনের মূল্যটা বেশি।

চোখ-কান খোলা রেখে চলবেন। নরমালি আপনি যে রাস্তায় নিয়মিত হাঁটেন, খেয়াল রাখবেন কেউ আপনাকে ফলো করছে কিনা। নিয়মিত এক রাস্তায় না চলে মাঝে মাঝে রুট চেঞ্জ করবেন। নিজের নিরাপত্তাটা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে। কারো ভরসায় থেকে লাভ নেই !

এই লেখাটা পারলে শেয়ার করেন। আমার ফ্রেন্ড আর ফলোয়ার লিস্ট মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের অর্ধেকের কাছেও যদি এটি পৌছায়, হয়তো অনেকের লাইফ সিকিউর হবে। প্রতিদিনই আমার আপনার মা-বোন-বান্ধবী কিংবা আপনজন বাইরে বের হচ্ছে। তাদেরকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব !!

আপনার বাসায় যারা আছেন, কাছের মানুষ যারা আছেন, তাদেরকে জানান, সতর্ক করেন। আমরা আসলে নিজেরা বিপদে পড়ার আগ পর্যন্ত টের পাই না যে কতটা সতর্ক থাকা দরকার ছিল !

“আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।”

KUET

 

রেখেছি তোমায় হৃদমাঝারে

ফাতিমা শাহীন


এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে বারোটার ঘর পেরিয়েছে। বাসায় এসে বিশ্রাম নিয়ে দুটো খেতে বসেছি। ডাইনিং টেবিলে রুসাফী বললো, আম্মু , তুমি কি শিওর যে আমরা প্রপারলি কানে শুনতে পাচ্ছি ? আমি ম্লান হেসে বললাম, আমি বোধহয় এখনো ততটা শিওর নই…..।

আসলে ঢাকায় কত শব্দের ভেতরে যে আমরা ছিলাম ! প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্থানে নানান ধরণের শব্দ। চেনা অচেনা , বোধগম্য অবোধগম্য শব্দরাজি এ ক’দিনের মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যেন।

অন্যদিকে, নভেম্বর-জানুয়ারি মাস বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মাস। জোহর নামাজের পর থেকেই চতুর্দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে ওয়াজের ধ্বনি। মাঝে মাঝে কোন কোন রাতে না ঘুমিয়ে কান পেতে থাকতাম যে কোন একটি ওয়াজের প্রতি মন:সংযোগ করে শুনবো বলে, কিন্তু সে উপায় কি আর আছে ? শত মাইকে , শত কণ্ঠে হিদায়াতের কত না মহান বাণী ধ্বনিত হচ্ছে , কিন্ত কোনটাই শুনে কোন কিছু বোঝার উপায় নেই।

তবুও , বছরের পর বছরভর , নি:শব্দ ও স্তব্ধতায় মোড়া এই আমাকে কি যে নিবিড় মমতার অচ্ছেদ্য এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল আমার প্রিয় ঢাকা ! ফিরে আসার দিন এয়ারপোর্টে আসার পথে আমার হৃদয়খানি সহস্র টুকরো করে ঢাকার পথে পথে আমি ছড়িয়ে রেখে এসেছি। কান পেতে তৃষ্ণার্তের মত শুনে নিয়েছি শত মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি , রাজপথের ব্যস্তসমস্ত মানুষের উচ্চকণ্ঠ , কারণে অকারণে বেজে ওঠা যানবাহনের হর্ন , ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল ….।

মাঝে মাঝে অকারণেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনের আয়নায় ভেসে ওঠে চারতলা একটি বাড়ির বারান্দা , যেখানে বাতাসে উড়ছে আম্মুর শুকোতে দেয়া শাড়ির আঁচল, আব্বুর সবুজ গামছাখানি … আমার পুরো বাংলাদেশ হয়ে ! চোখ ভিজে ওঠে অজান্তেই ….
সেই ভেজা চোখ মুছতে ওই আঁচলখানির ছোঁয়া পেতে মন কেবলি হাহাকার করে ওঠে …. কেবলি …।।

 

এক মায়াবতী, রূপসী কিশোরীর করুণ কাহিনী

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


আমিরুল -বর্তমানে বয়স ৩২। সে ছোটকাল থেকে অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। তারা এক ভাই ও এক বোন। বোন বিয়ে করে জার্মান চলে যায়। তার খালু ও মা চেয়েছিল তার ঐ বোনের সঙ্গে তার খালাতো ভাইকে বিয়ে দেবে। তার মা ঐ ছেলেকে জামাই বাবা বলে ডাকতো। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্হা খারাপ থাকাতে ঐ মেয়ের এক ইন্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়।

আমিরুল মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও সে মা- বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়াতে, তার খালু চেয়েছিল তার সঙ্গে তার এক মেয়েকে বিয়ে দেবে। ঢাকায় আমিরুলদের একতলা একটি বাড়ী আছে। গ্রামে ও প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু ঐ মেয়ে এরকম হাবাগোবা, কুৎসিত চেহারার, অকর্মন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। এতে ঐ বাবার মনে আফসোস থেকে যায়। এ কারণে সে লোক তার কনিষ্ঠ কন্যাকে আমিরুলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে।

এই মেয়েটির বয়স তখন ১২-১৩ বছর হবে। সে দেখতে শ্যামলা, কিন্তু খুবই সুশ্রী, মিষ্টি চেহারার, মায়াবতী মেয়ে। এ বিয়ে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের মধ্যে মতানৈক্য হয়। তবে এ লক্ষি টাইপের, অল্প বয়সী মিষ্টি চেহারা লাজুক মেয়েটি, বাবার কথার অবাধ্য হয় না। সে রাজি হয়ে যায়।

অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে কি, সেক্স কি, ভবিষ্যৎ কি তেমন বুঝতো না। সবাই আশা করেছিল ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও, কিছু করতে বা বুঝতে না পারলে ও তাদের একটি সন্তান হলে, মেয়েটি তাকে নিয়ে কোন ভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।

কিন্তু সে সব দিক থেকেই অপারগ। আমিরুল বউ কি,ভালোবাসা কি,সেক্স কি, দায়িত্ব কি – কিছুই বুঝে না। বরং তাকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো থেকে শুরু করে সব কিছু এই মেয়েকে করতে হয়। নিজ মা- বাবা যা করতে হিমসিম খায়, যা করতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে যায়- এ মেয়ে অবলীলায় তা করে যায়। ২-৩ বছর পরেও যখন আত্মীয়রা দেখলো আমিরুল কোন সন্তান তো দিতে পারছে না,বরং তার তেমন শারিরীক সম্পর্ক করার চিন্তা, চেষ্টা, আগ্রহ, ধারনা কোনটিই নাই- তখন উভয় পক্ষের আত্মীয়রা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমিরুলের বউয়ের বয়স এখনো কম আছে, সে সুন্দরী তাই এভাবে তার জীবন নষ্ট করা ঠিক হবে না।

সবাই তখন ঐ মেয়েকে আমিরুলকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করতে বলে।

কিন্তু এই ২-৩ বছরের মধ্যে মায়াবতী মেয়েটি এক মায়ার জালে জড়িয়ে যায়।সে বলে ওকে ছেড়ে যাবো চিন্তা করলেই আমার বুক ফেটে যেতো, কান্না পেতো।

ভাবলাম আরেকটি বিয়ে করলে সে স্বামী যে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি? এ যদি আবার কোন মেয়েকে বিয়ে করে সে মেয়ে পারলে আমি কেন পারবো না? তাছাড়া আমি তো অন্য সবদিক থেকে ভালো আছি। ভালো খাচ্ছি, ভালো পড়ছি,সবার আদর পাচ্ছি। এমনকি ও আমাকে পছন্দ করে, আমার মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়। আমি একে কিভাবে ছেড়ে যাবো? ও এতো অসহায়, ও আমার উপর নির্ভরশীল – আমি চলে গেলে ওর কি হবে? না পেলাম স্বামীর সোহাগ বা দৈহিক আনন্দ। না পারুক আমার জন্য কিছু করতে, হোক সে দেখতে কুৎসিত। সে তো সরল, অন্য পুরুষের মতন তার তো কোন বদ স্বভাব নেই-

আমার শুধু একটি সন্তান হলেই চলবে।

কিন্তু এরপর আমিরুলের আরো অবনতি হয়, অস্বাভাবিক আচরণ বেড়ে যায়, সারাক্ষণ হা করে থাকে, লালা জড়ে।তাকে সে লালা মুছে দিতে হয়, তার খামখেয়ালি পণা, অবাস্তব আবদার মেটাতে হয়। তার দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই, সন্তান তো দূর থাক। অনেক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়েছে। সবাই বলে এর উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলে স্যার, আপনার অনেক প্রশংসা শুনে এসেছি। আমি সেক্স চাই না,ভালোবাসা, আদর চাই না, আমাকে শুধু একটি সন্তান পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

একে আমি ছাড়তে পারবো না -ছাড়ার চিন্তা করলেই কান্না আছে, বুক ফেটে যায়। ওকে সুস্হ করে আমার একটি সন্তান হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন স্যার
এ কাহিনী কি বলে:

(১) অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েকে নিয়ে নিজ মা- বাবারাই যেখানে থাকে অতিষ্ঠ। সেখানে একটি রুপসী,কিশোরী কি দেখে মায়ায় জড়ালো?

(২) টাকা পয়সা,সম্পত্তির লোভে অনেক গরীব মা- বাবা তাদের সুন্দরী, গুনবতী মেয়েদেরকে ও আমিরুলের মতন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে থাকে। একদিকে প্রতিবন্ধীদের ও অধিকার রয়েছে ঘর সংসার করার, আবার একটি গরীব ঘরের মেয়ের ও অধিকার, সাধ থাকে -একজন স্বাস্হ্যবান, সুস্হ, উপার্জনক্ষম, স্বাভাবিক স্বামীর ঘর সংসার করার।

এ দুয়ের সহজ ও ভালো সমাধান কি?

(৩) আমিরুলের মিষ্টি, রূপবতী বউ কিন্তু নিজ থেকে তাকে মেনে নিয়েছে। একজন কিশোরী -তরুনী মেয়ে সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, দৈহিক চাহিদা থেকে বন্চিত থেকেও সে আমিরুলের সঙ্গে সংসার করতে হাসিমুখে রাজি।শারিরীক আনন্দের জন্য নয়, শুধু ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তার জীবনের একমাত্র চাওয়া,আকাঙ্ক্ষা তার যেন একটি সন্তান হয়। হোক তা ছেলে বা মেয়ে। এ যুগে এমন ত্যাগী, নিবেদিতা স্ত্রী কতজনের আছে?

৪। কিন্তু এরকম ত্যাগ কি শুধু গরীবরা করবে? বা শুধু নারীরা করবে? কোন পুরুষ কি এমন কোন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী কোন কুৎসিত মেয়েকে এভাবে আপন করে নিবে?

এমন উদাহরণ কি আছে?

সাইকিয়াস্ট্রি, ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ

 

বিষণ্ন চোখ ও ভুবনজয়ী হাসি

গাজী আনোয়ার শাহ্


শৈশব স্মৃতি মনে হলে ভাবি অনেক ভালোই ছিলাম, জীবন বাগানে কেবল ফুলের চাষ হতো। সুঘ্রাণ ছড়াতো মেশকের মত। হতাশা, দুরাশা, অপ্রাপ্তি, খারাপ লাগা, শূন্যতা, হারানোর ভয় কিছুই ছিলো না। জীবনটা একটা সুখ সম্পদ ছিলো ছোটবেলায়। পাপ, অন্যায়, কদর্য, হিংসা, ঈর্ষা, পরিশ্রীকাতরতা, হীনমন্নতা, নিচুতা এসবের স্থান ছিলো না। এ রাজ্যের একক অধিপতি ছিলাম আমি নিজেই।

আজ এই মুহুর্তে ভাবছি জীবনখানি দুধের সরের মত ভাসছে, এখানে আর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। একটু তাপ লাগলেই সরটি দুধের সাথেই মিলিয়ে যায়, অর্থাৎ জীবনের কোন মানে খুঁজে পাই না। বৃথা মনে হয় সব।

এ জীবনে ২৭৬ টি পূর্ণিমা দেখেছি, ২৭৫ টি অমাবস্যা দেখেছি, ১৩৮ টি বসন্ত পেয়েছি, ৪৬ টি ইদ উপোভোগ করেছি, ২৩ টি বৈশাখ পেয়েছি। অনেক পাওয়া হয়ে গেছে ন্যাচারালি।

জীবনটা রূপার থালার মতোই উজ্জল হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্র আমাকে ভিন্ন কিছু বলছে। জীবন জুড়ে আছে কাঁটাসুদ্ধ গোলাপ। ফুলের কাটাই বিঁধছে দেহে। জানিতো ফুলশয্যা সবসময় আনন্দময় নয়। এখন ভয়ে আমার পা কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। জিভ সীসার মত ভারী হয়ে গেছে। জীবনকে নিয়ে আমি শঙ্কিত।

জীবন কোন ম্যাজিক নয়, কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে রণ সৈনিকের ভূমিকায় অগ্রগামী হতে হয়। না হলে সর্বনাশ সুনিশ্চিত। অনেক সুখ স্মৃতি মনের অজান্তেই পায়ের নিছে চাপা দিতে হয়। জীবন গদ্যময়। অতিরিক্ত মায়া করলেই মারা পড়তে হয়। বারবার থতমত খেয়ে খেই হারিয়ে আবার সম্বিত ফিরে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক বাস্তবায়নই জীবন।

অভিমান ভালোবাসার মত, কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই জীবন যদি তোমার সাথে অভিমান করে হতাশ হবার কিছু নেই। এসবই আমার এখন সান্ত্বনা। অথচ বাস্তু হারিয়ে এখন আমি পথের ভিখারি। জনমানব নেই এ দিগন্তে। ঘটে চলে অদ্ভুত কান্ড। যেন নিশুতি রাত। বিষণ্নতা চেয়ে যায় সর্বময়। অশরীরী আত্মারা হঠাৎ হঠাৎ ছুঁয়ে যায় দেহখানা। চোখ মুছতে হয় নিরবে।

আমি হতে চেয়েছিলাম মহাবীর। সর্বত্যাগী ভবঘুরে হতে চাইনি। পরিধেয় বস্ত্রও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু হয়েছে এসব। অনিবার্য নিয়তি যে কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে তা বুঝতে বাকি নেই। জীবনটা বরাবরই আড়চোখে তাকিয়েছে আমার দিকে।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মহৎ এবং সবচেয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা গুলি নাকি রাতে করা হয়। সাধুরা ঈশ্বর চিন্তা করেন রাতে। কুৎসিততম অপরাধগুলি করতে অপরাধীরা রাতে বের হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রাত বিশ্রামের কাল। আমার জন্মটাও হয়েছিলো রাতে।
আমার জীবন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সহজ সরল কোন কল্পচিত্র ছিলো না। সংগ্রাম আর সংগ্রামই আমার জীবন। আমি নিজেই শিল্পী। আমি চির রহস্য। আমি অজানা। আমি বঞ্চিত। আমি অবহেলিত।

পর্ব -১
আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু

দ্য স্লেভ


কেস স্টাডি-১

জহীরের ক্লামমেট রুমা।
ওরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওদের সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক দারুন। একে অপরের সাথে তুই সম্বোধনে কথা বলে। তাদের মত এখানে আরও অনেক বন্ধু আছে। ওরা মোটেও প্রেমিক প্রেমিকা নয়,বরং ভাল বন্ধু। একজন আরেক জনের কথা জানে। একে অপরের সাথে সাধারণভাবে মিশে। উভয়ের পরিবারে উভয়ের যাতায়াত আছে। উভয়ের সাথে আরও ডজন ডজন বন্ধু বান্ধবী জড়িত আছে।

জহীর একদিন রুমাকে অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল
-ওর সাথে আমাকে একটু ফিট করে দিবি ? হঠাৎ রুমার গা জ্বলে উঠল, যদিও জানেনা সেটা কেন হল।
কিন্তু বন্ধু বলেছে, কিছু তো করতেই হবে। রুমা মেয়েটার সাথে দেখা করল এবং বলল
-জহার তোমাকে পছন্দ করে। মেয়েটা বলল-আমি কারো সাথে প্রেম করতে চাইনা। আর এটা করবও না। তুমি তো জানই আমি একা থাকা পছন্দ করি।

মেয়েটার এই না বোধক কথায় রুমা কেন যেন খুশী হয়ে উঠল। এবার সে জহীরের কাছে এসে বলল-দোস্ত আমি তোমার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছি। সেই সকাল থেকে মেয়েটাকে অনেক বুঝালাম তোমার ব্যাপারে কিন্তু বিকেলে এসে জানলাম, সে ইতিমধ্যেই বিয়ের ব্যাপারে অন্যের বগলদাবায় চলে গেছে। বাপ মায়ের পছন্দে বিয়ে করছে। আরে বাবা তুই এংগেইজড তা আগে বলবি তো, আমি শুধু ব্যাটারী পোড়ালাম।

জহীর বলল-হুমম তাইলে আর কি, দেখি আরেকটা ধরা যায় কিনা।

এভাবে সময় চলে যায়। উভয়েই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। পরীক্ষার পর রুমা জহীরকে বলে, আচ্ছা পরশ ছেলেটা কিন্তু দারুন, কি বলিস? জহির হেসে বলে হ্যা পরশ ভাইকে যতটা চিনি তিনি ভালই। কিরে প্রেমে পড়লি নাকি ?

আরে নাহ, উনাকে ভাল লাগে,এইটুকই।
-উনার সাথে কিন্তু আমার জানাশোনা আছে, বলব নাকি কিছু ?
: নাহ, সময় হলে আমিই বলব।
পরশ জহীরের ১ বছরের সিনিয়র কিন্তু সম্পর্ক বন্ধুত্বের। একদিন পরশের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জহীর রোমার কথা বলে। পরশও খানিক খুশী হয়,কারন বাংলাদেশে মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের কাছে নিজের ভাল লাগার বিষয়টি জানায় না। কিছু দিনের মধ্যেই পরশের সাথে রোমার ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। রোমা এসব কথা আবার জহীরকে বলে। উভয়ে নানান রকমের পরিকল্পনা উভয়কে জানায়।
চলছিল এভাবে…

একদিন পয়সা ওয়ালা এক ছেলের সাথে রুমার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে। রুমাও রাজি। ছেলেটা দেখতে বেশ। বিয়েতে জহীর অনেক দায়িত্ব পালন করে। জাকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল। বর রুমাকে নিয়ে চলে গেল।

কিন্তু এরপর জহীরের বুকের ভেতর কেন যেন একটা তোলপাড় শুরু হল। বিয়ের আসরে রুমাকে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে ভাবছিল, আহ এতটা দিন ওর পাশে থাকলাম, আজ আরেকজন থাকবে…

পরক্ষণেই আরেক চিন্তা আসে,
নাহ একি ভাবছি…ও তো শুধুই আমার বন্ধু, আমার প্রেমিকা নয়।.. তাহলে এসব চিন্তা কেন মাথায় আসছে? না এসব ভুলিতে চাই।

ভুলতে চাইলেও সারারাত জহীর ঘুমাতে পারল না। বারবার রুমাকেই মনে পড়তে থাকল। ২দিন পর সে রুমার শশুড়বাড়ি ফোন দিল রুমার নাম্বারে। ফোন রিসিভ করল তার স্বামী। জহীর নিজের পরিচয় দেওয়ার পর রুমার স্বামী বলল-সে তো ঘুমাচ্ছে। স্বাভাবিক কথাই হল কিন্তু জহীরের কাছে মনে হল এই ফোন করাটা ভদ্রলোক ভাল চোখে দেখেনি।

জহীর চিন্তা করল না আর ফোন দিবেনা। আর তাকে তো আর সেভাবে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জহীরের আরেক মন তাকে আরও যোগাযোগের ইঙ্গিত দিল। জহীর নিরুপায় হয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করল। রুমাও তার সাথে স্বাভাবিক কথা বার্তা বলল। এভাবে পূর্বের মত না হলেও জহীর রুমার সাথে যোগাযোগ ধরে রাখল। সে যখন একা থাকে,তখন তার নানান কথা মনে পড়ে। এমনও মনে হয়, এক সাথে এতদিন কাটালাম
-সে সময় যদি ওকে আটকাতাম, ভালই হত। আবার চিন্তা করে, নাহ সে তো ছিল শুধুই বন্ধু।

এভাবে তাদের যোগাযোগ চলতে চলতেই জহীর একদিন এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর কালে ভদ্রে রুমার সাথে কথা হয়। রুমাও তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একসময় তাদের যোগাযোগ প্রায় শুন্যের কোটায় চলে যায়। জহীর চিন্তা করে এক সময়ের সব থেকে বিশ্বস্ত, চমৎকার বন্ধুটি কিভাবে হারিয়ে গেল।

কেস স্টাডি-২

কামালের বন্ধু আরিফ। তারাও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। প্রথমে ভাল সম্পর্ক ছিলনা। কিন্তু আরিফের ভাই অসুস্থ্য হলে তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। নেগেটিভ রক্ত পাওয়া কষ্টকর কিন্তু কামালের রক্তের সাথে মিলে। সে দেয়। এরপর থেকে যেন তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট,রাস্তার মোড়, নদীর ধার, উভয়ের বাড়ি সকল স্থানেই তারা আড্ডা মারে। এমন কোনো কথা নেই যা শেয়ার করেনা।

কামালের বিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে আরিফের বিয়ে। সবকিছু সেই ঠিকঠাক করে। পুরো অনুষ্ঠান সেই পরিচালনা করে।

বিয়ে হয়ে গেল। কামাল বৌ আনল ঘরে। আগের মত আরিফের সাথে আড্ডা না হলেও কথা হয়। ইতিমধ্যে আরিফও বিয়ে করেছে, সেখানে কামালই বেশী দায়িত্ব পালন করেছে। উভয়ে উভয়ের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু তারা ঠিকই সময় বের করে মাঝে মধ্যে আড্ডাবাজি করে। আবার কখনও কখনও উভয়ের স্ত্রীসহ কোথাও ঘুরতে যায়।

কামাল এবং আরিফ উভয়কে ভুলে যায়নি। সাংসারিক কাজ তাদেরকে পরষ্পরের কাছাকাছি না রাখলেও মানুষিকভাবে তারা এখনও অটুট।



উপরের ঘটনাগুলো খুবই বাস্তব। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে দেখবেন, এমনটাই বেশী ঘটে। একজন মেয়ের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব, মেয়ের সাথে মেয়ের এবং ছেলের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব বেশী।

একজন মেয়ে কোনো ছেলের বন্ধু হলেও এবং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তাদের উভয়ের শারিরীক, মানুসিক অবস্থার কারনে সে সম্পর্ক একই গতিতে চলে না। উভয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করলেও সেখানে কিছু আকর্ষণ তৈরী হয় যা বিপরীত লিঙ্গগত আকর্ষণ এবং যা সহজাত। মূলত তারা এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করেই নিজেদের সম্পর্কে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে।

একজন ছেলে সাধারণত সেই মেয়েটির সাথে তার এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় না, যার রূপ, গুন তার কাছে ভাল লাগেনা। অথবা তার চোখে সুন্দর ও অসুন্দর এমন সব মেয়েরাই যদি তার বন্ধু হয়,তবু সে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বা যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুন্দরীদের প্রাধান্য দেয়। অথচ ছেলেটি অন্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আমলে আনেনা। সেখানে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি সবথেকে কুৎসিত হতে পারে। বিষয়টি মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

আমরা যদি আজকের প্রগতিশীলদের দিকে তাকাই, সহজে দেখতে পাব তারা ছেলে মেয়ের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে বলছে। একটা ছেলে বন্ধু আর মেয়ে বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য নেই, সেটাই তারা বলছে। এবং এভাবেই আচরণ করতে বলছে।

অথচ তারা যে প্রকৃতিকে বিশ্বাস করে, সেই প্রকৃতি অনুযায়ীই তাদের চিন্তা ভুল। এখানে বাস্তবে আমরা নারী,পুরুষের আচরণে অবশ্যই ভিন্নতা দেখী। এবং বাস্তবতা বলে নারীর সাথে পুরুষের বন্ধুত্বের চাইতে, পুরুষের সাথে পুরুষের, নারীর সাথে নারীর বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব বেশী।

আমি এখানে স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টি আলোচনায় আনিনি। শুধু নারী পুরুষের অবাধ বন্ধুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ-২)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সাহসের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে কি আপনি সাহস যুগিয়ে থাকেন? সন্তান প্রতিপালনের জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সন্তানের কিছু মৌলিক বিষয় অবগত করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে, সন্তানকে ঝুঁকি নিতে উদ্ভূত করুন, সম্ভাবনাকে তুলে ধরুন। সন্তানকে ভুল করতে দিন, ভুল থেকে মৌলিক বিষয়টি শিখতে সহযোগিতা করুন। সন্তান সাহায্য করুন তার উৎসাহের বিষয়কে খুঁজে পেতে। কেন না, প্রতিটি আগ্রহই উৎকর্ষের শীর্ষে পৌছে দেয় সন্তানের সম্ভাবনা সমুহকে। সন্তানকে এমনভাবে তৈরি করুন, সে নিজেকে কোথায় পৌছাতে চায়,
খুঁজে পায়,
জিজ্ঞেস করুন জানার চেষ্টা করুন, জানুন।

উল্লেখ্য, বিপুল উপকরণের ভীড়ে,তাঁকে দরকারী বিষয়গুলো দিয়ে সজ্জিত করুন, তার মননশীল চারপাশ।

স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক

পিতামাতাকে তাঁর সন্তানকে জীবনের উদ্দেশ্য কি,তা বোঝাতে হবে,কেন তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে,স্রষ্টা তাকে কেনই বা সৃষ্টি করলেন।জীবনের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সন্তুষ্টিরর জন্য হয়,তেমনি চেতনা গ্রোথিত করে দিতে হবে।

ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদের আলো দেখাতে পারেন, ফুল পাখি,নদী, এমনকি প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস দেখিয়েও তাঁকে রবের মহিমা শেখাতে পারেন, আল্লাহ চিনতে সাহায্য করতে পারেন।

সুন্দর করে মনীষি, নবী-রাসূলদের জীবনী শুনাতেন পারেন, যা সন্তান তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, বারবার সুন্দর বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।

তাদের সাথে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক যেকোন বিষয়ই আলোচনা করে শুনাতে পারেন, এমনকি কবিতাও।

যেটা তাদের চিন্তায় দাগ কেটে যায়। তাতে শৈশব থেকেই চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে,গভীরতা আসবে।

সন্তানের সার্বিক উন্নয়নে ইনভেস্টমেন্টের প্রশ্নপত্র

আপনি কি সন্তানের সার্বিক উন্নয়ন বলতে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও খেলাধুলাকেই বুঝে থাকেন? আপনার সন্তানের আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি? সন্তান চাওয়া মাত্রই তা পূরণ করেন, নাকি ধৈর্যশীলতার প্রশিক্ষণ দেন?

অনুপ্রেরণা
আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে লাভে অনুপ্রেরণা দিন, যার প্রতিশ্রুতি পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগেই দেওয়া হয়নি।

ত্যাগের মানসিকতা অর্জন
বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলতে শিখান, এতে সে ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করবে।

মিলেমিশে খাওয়ার অভ্যাস
খাবার খাওয়ানোর বেলায়ও মিলেমিশে খেতে অভ্যস্ত করুন।

ভালো আচরণ
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন।

শৈশব হচ্ছে চমৎকার সুযোগ,সন্তানকে সুন্দর করে গড়ার। এ সময় আপনি তাঁকে যেভাবে চান, সেভাবেই তৈরি করতে পারেন।

আপনি যদি নিজে স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, গভীর রজনীতে নিভৃতে তাঁকে খুঁজেন, সন্তানও তাঁর সান্নিধ্য চাইবে।বার্ধক্যের সময় রাত জেগে, আপনার সেবা করবে,উদার ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। আপনি যখন কবরে শায়িত থাকবেন, আপনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করবে।

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জন্ম মরণের ইতিহাস খুঁজি

ডা. মারুফ রায়হান খান


তিনি এই নিয়ে ৪ বার গর্ভধারণ করলেন। গর্ভে ৩ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস থেকে তারা ৩ অপূর্ণ সত্ত্বা মরে গেলো। এবারে যে এসেছে গর্ভে তার বয়স ২১ সপ্তাহ। হঠাত করে গতকাল থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে শকে চলে গেলো পেশেন্ট…বাচ্চা তো টেকার আশা নেই-ই, মা-কে শেষ পর্যন্ত আই সি ইউতে পাঠাতে হলো। ৭ বছরের সংসার জীবনে এখনও সন্তানের মুখই দেখা হয়নি তার, ‘মা’ ডাক শুনে অন্তর জুড়ানো তো আরও অনেক দূরের গল্প।

১০ বছর, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর পেরিয়ে গেলো দাম্পত্যজীবনের। কতো জায়গায় ঘুরলো, কতো ডাক্তার দেখালো। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর কিছু তো বাদ নেই। শুধু একটা সন্তানের আশায়। জীবনে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই। শুধু একটা সন্তান চায়। স্রষ্টার কাছে কতো কেঁদেছে, কতো আকুতি-মিনতি করেছে। যতো টাকা লাগুক চিকিৎসায়, জায়গা-জমি সব বিক্রি করে দেবে, যা করতে বলবে করবে–শুধু সন্তানের মুখটা দেখতে চায়। এক মানব জীবন পূর্ণ করতে চায়। পারে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারে আর সন্তান এলো না। কতো শত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার আর কান্নার গল্প।

আমরা প্রায়ই এমন রোগী পাই যারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান ধারণ করে ফেলেন। এই বাচ্চা রাখতে তারা কিছুতেই চান না। কতো বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ শরীর ধারণ করে ফেলে, হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকে–তবুও তারা নষ্ট করে ফেলেন। এবোর্টিফেশিয়েন্ট ওষুধ খান। এটা সেটা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে মেরে ফেলেন। অবৈধভাবে অবৈধ মানুষ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নষ্ট করিয়ে ফেলেন। ওয়ার্ডে একবার দেখেছিলাম মা’টা বাচ্চা নষ্ট হবার ওষুধ খেয়ে এসেছিলেন–হসপিটালে এসে ১৯ সপ্তাহের সেই সত্ত্বাটি যখন বের হলো, এই এতোটুকুন হাত-পা-নাক-কান-গলা-বুক-পেট…ছোট্ট বুকে ছোট্ট হৃদয়টা তখনও স্পন্দন দিয়ে যাচ্ছিলো…।

হায়রে বাচ্চা! কতোজনের পরম আরাধ্য আবার কতোজনকে বিপদে ফেলে দিয়ে, অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে জন্মের আগেই মরে যাবার ইতিহাস…

নদীর এপার আর ওপার…

আমার খুব প্রিয়…রবীন্দ্রনাথ…
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস…।

 

বহে সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


আম্মু, আমার না আব্বু আর তোমার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। আমরা এখন আর একসাথে থাকিনা কেন?

কেয়া চুপ করে সামিরার কথা শুনে যায়।

জানো, স্কুলে আমার বন্ধুদের কাছে গল্প শুনি তারা ছুটির দিনে বাবা মায়ের সাথে কত্ত জায়গায় বেড়াতে যায়! আমরা আবার কবে একসাথে বেড়াতে যাব?

কেয়া একটু হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েকে কেয়া কিভাবে বোঝাবে সামিরা যা আশা করছে তা আর কখনো সম্ভব নয়। একসাথে তাদের আর কখনোই বেড়ানো হবেনা।

শুধুমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কী কষ্টই না সে ভোগ করেছে। প্রায় দুইটা বছর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছে। প্রথম দিকে নির্যাতন ছিল শুধু মানসিক। পরে গায়ে হাত তোলা পর্যন্ত গড়ায়। আর অবজ্ঞা অবহেলা তো ছিলই।

একটা মানুষ আর কত সহ্য করতে পারে? মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবে জাকিরকে বহু বোঝানোর চেষ্টা করেছে। ফেরানোর চেষ্টা করেছে।

পরিবারের পছন্দেই জাকিরকে বিয়ে করেছিল সামিরা। শুরুতে জাকির এমন ছিল না। আর দশটা পরিবারের মতই বেশ সুখ আর আনন্দে জাকির কেয়ার দিন কেটে যাচ্ছিল। কখনো বড় ধরনের কোন ঝামেলা হয় নি। বিয়ের প্রায় দুই বছর পর সামিরার জন্ম হয়। তিনজনের সংসারটা যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘সুখের সংসার’ ছিল।

কিন্তু কীভাবে যে কি হয়ে গেল! কেয়া আজো তার হিসেব মেলাতে পারে না।

প্রায় তিন বছর আগের কথা। সামিরার বয়স তখন তিন বছর। কেয়া খেয়াল করে জাকিরের আচরণে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের অনেক পরে বাসায় ফেরে। কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহার করে। প্রায়ই ছুটির দিনে সকালবেলা বাইরে চলে যায়। ফেরে সেই অনেক রাতে। বাসায় যতক্ষণ থাকে মোবাইল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলেই যায়। কেয়াকে দেখলেই আচমকা কথা থামিয়ে দেয়।

ধীরে ধীরে কেয়ার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। পরে সে সুযোগ মত কল লিস্ট চেক করতে গিয়ে সুমির নাম্বার পায়। কেয়া জাকিরের কাছে সুমির পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু জাকির তাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দেয়। জাকিরের বিভিন্ন আচরণে কেয়ার মনে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে।

একদিন সে সুমিকে ফোন করে। তখন সুমি অকপটে তার কাছে সব কথা স্বীকার করে। সুমি একটি এনজিওতে চাকুরী করে। আজ প্রায় এক বছর ধরে তাদের পরিচয়। অবসর সময়ে দুজনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কেয়া চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল। সে কিভাবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে?

জাকিরকে সে খুব বোঝাতে থাকে এই পথ থেকে ফিরে আসার জন্য। সে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও জাকিরের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে।

কিছুদিন পরে কেয়া জানতে পারে সুমির সাথে জাকিরের আর কোন যোগাযোগ নেই। সে এতে বেশ খুশিই হয়। কিন্তু এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। জাকির আবার আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তারপর আবার এই সম্পর্ক শেষ হয়। আবার আরেকজন……।

সুমি থেকে শুরু করে প্রতিটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক অনেকদূর পর্যন্ত গড়ায়। প্রায়ই সে কাউকে না কাউকে নিয়ে অফিসের ট্যুরের কথা বলে কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যায়।
এবার কেয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে সামিরাকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসে। মা বাবাকে সব কিছু খুলে বলে। উনারাই কেয়াকে বলেন তোর আর ফিরে যেতে হবেনা। তবুও কেয়া আশায় আশায় ছিল জাকির হয়ত অনুতপ্ত হয়ে তাকে নিতে আসবে! কিন্তু নিতে আসা তো দূরের কথা। একটু যোগাযোগও করেনা। মেয়ের প্রতিও তার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই! গতমাসে কেয়ার পক্ষ থেকেই ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

কেয়া একটি স্কুলে চাকুরী নিয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে দিন কেটে যায়……
কেটে যাচ্ছে।

[এভাবে আমাদের সমাজে অনেক কেয়া জীবন যাপন করছে। এক বা একাধিক বাচ্চার দায়িত্ব মাকেই বহন করে তিল তিল করে বাচ্চাদের মানুষ করে তোলে। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব সমাজেই কেয়া বা সামিরা আছে। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে যেসব নারী দিনাতিপাত করছে তাদের নিয়েই আমার নতুন সিরিজ ‘ঝিনুক নীরবে সহে’।]

 

লজ্জাকর পেশা কি?

মুহাম্মদ হুমায়ন কবীর


কালো করে একটা মেয়ে ছোট একটা জবের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব রেস্টুরেন্টের মালিক সোজা বলে দিচ্ছে, দেখো, আমাদের এখানে কোনো লোক লাগবে না। অন্য কোথাও যাও। কালো মেয়েটা হতাশ হয়ে অন্য রেস্টুরেন্টে যায়।

এভাবে একদিন জব পেয়ে গেলো এক রেস্টুরেন্টে। মালিক প্রথম দিনই তাকে বলে দিলো, কখনও দেরি করে আসা চলবে না। তাহলে চাকরি বাতিল। সবকিছু মাথায় রেখেই মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার নিচ্ছে, তারপর খাবার পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। খাওয়া শেষ হওয়ার পর টেবিল পরিস্কার করছে। কাজের কিছু অদক্ষতায় বকাও খাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কখনও হয়তো কোনো কাস্টমারের সামনে থেকে কফির মগ নিতে গিয়ে গায়ে একটু কফি ফেলে দিয়েছে। কাস্টমার প্রচণ্ড রেগে নালিশ করেছে মালিকের কাছে। মেয়েটি হয়তো কাঁদো কাঁদো গলায় মালিককে সরি বলে কোনো ভাবে পারও পেয়ে গেছে।

গায়ের রঙ কালো বলে সম্ভবত রেস্টুরেন্টের অন্য ছেলেরা তাকে খুব একটা পাত্ত্বাও দেয়নি কিংবা কোনোদিন তার সহকর্মীর জন্মদিনে তার বাসায় গেলো। কেক কাটার পর যে খাবার দেয়া হলো, সহকর্মী লক্ষ্য করে দেখলো কালো মেয়েটি সেটি একদমই খেতে পারছে না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, খাবারে সমস্যা কিনা। কালো মেয়েটি বললো, না, পেট ভরা, তাই খেতে পারছে না।

কোনোদিন হয়তো রেস্টুরেন্টের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কম দামি গাড়িতে করে কোথাও ঘুরতেও গিয়েছিলো কালো মেয়েটি। কম দামি গাড়িতে বেশ কষ্টও হয়েছে তার। মুখ খুলে কিছু বলেনি কাউকে। সবকিছু চেপে গেছে আর ভেবে নিয়েছে, আমি অন্য দশটি মানুষের মতোই মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেনো।

দিন হয়তো এভাবেই যাচ্ছিলো। একদিন তার সহকর্মীর কেউ একজন দেখলো যে, কালো মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার পর আড়াল থেকে ছয়জন বিশালদেহি মানুষ তাকে ঘিরে রাখে। রেস্টুরেন্টে শুরু হলো গুঞ্জন, কানাকানি। এভাবে ঘটনা চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। বেরিয়ে আসে কালো মেয়েটির পরিচয়। সবাই জানতে পারে, কালো মেয়েটি প্রেসিডেন্টের মেয়ে। তারপর দেশে দেশে আলোচনা উঠে, নিউজ হয়।

বিশ্ব জেনে যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছোট মেয়ে সাশা ওবামা নিজের পরিচয় লুকিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন । গ্রীষ্মকালীন ছুটির ফাঁকে ম্যাসাচুসেটসের মার্থাস ভিনিয়ার্ড নামের একটি দ্বীপের ওই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছেন তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত সাশার সহকর্মীরাও তাকে চিনতে পারেনি। পরে রেস্টুরেন্ট ঘিরে সার্বক্ষণিক ছয়জন গোয়েন্দার অবস্থান বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলে।

এদিকে বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা বলেন, -“সন্তানদেরকে একটা বয়সের পরে রাজকীয় বিলাসিতা ছাড়তে বাধ্য করেছি। কারণ তাদের সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হবে। অন্য দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে শিখতে হবে তাদের।”

এবার আপনি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণ এবং তাঁদের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের কথা ভাবুন। নিজেদের অবস্থার কথাও ভাবা যেতে পারে।

 

শীতের পিঠাপুলি (চিতই ও ভাঁপা)

শীতকাল মানে নানান রকম মজাদার পিঠা বানানো ঘরে ঘরে। এ সময়ে ব্যস্ত সবাই রাস্তার ধারেই কিনে খেতে অভ্যস্ত তবুও আসুন দেখি দুটি পরিচিত পিঠা দুধ চিতই এবং ভাঁপা পিঠা বানানো নিয়ম।

ভাঁপা
ভাঁপা পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানতঃ চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরী করা হয়।

লাগবে যা যা

  • চালের গুড়া,
  • লবন,
  • পানি,
  • দুধ,
  • দানা খেজুরের গুড় এবং
  • নাড়িকেল কুড়ানো

কিভাবে বানাবেন
প্রথমে তরল খেজুর গুড় চালের গুড়ার মিশিয়ে নিন এতে রং ভাপা পিঠার সুন্দর এবং মজাদার হবে লবন+পানি মিশিয়ে ডাই তৈরী করা। অর্থাৎ একদম শুষ্ক চালের গুড়িতে পরিমান মত লবণ মেশাতে হবে। এরপর দুধ ও অল্প পরিমাণ তরল খেজুর গুড় দিয়ে হালকা ভেজা ভেজা করতে হয়। মাখানোর পরও যেন ঝরঝরে থাকে, একদম ভিজে যেন না যায়। এরপর বাটিতে চালের গুড়ি দিয়ে তার উপর নারকেল কোরানো আর দানা খেজুর গুড় দিতে হবে।

এরপর আপনার পছন্দের সাইজ অনুযায়ী ভাপা পিঠা বানিয়ে ফেলুন জলীয় বাষ্পের আঁচে। পাঁচ-ছয় মিনিট পর পিঠা উঠিয়ে পরিবেশন করুন|

চিতই
ঐতিহ্যবাহী আরেক পিঠার নাম চিতই পিঠা। চালের আটা পানিতে গুলিয়ে গরম তাওয়াতে ভেজে এই পিঠা তৈরি হয়। এই পিঠা গুড় ( বিশেষত ঝোলা গুড়) দিয়ে খাওয়া হয়। এটি শুকনো অথবা দুধ ও গুড়ের তৈরি সিরায় ভিজিয়েও খাওয়া হয়।

লাগবে যা যা 

  • চালের গুড়া তিন কাপ,
  • খেজুরের গুড় ১ কেজি,
  • দুধ ২ লিটার,
  • পানি ১ লিটার,
  • পরিমান মতো লবণ এবং
  • এলাচ ৪/৫ টুকরা

কিভাবে বানাবেন
পরিমাণ মতো পানি চালের গুড়া ও সামান্য লবন মিশিয়ে মাঝারি ঘনত্বের গোলা বানিয়ে নিতে হয়। পিঠা গুলো তৈরি করবার জন্য মাটির খোলা বা লোহার কড়াই ব্যবহার করা হয়। কড়াইটি তেল দিয়ে মুছে মুছে চালের গুড়োর গোলা ঢেলে গোল গোল পিঠা তৈরি করে নিন।
সুবিধা মতো পাত্রে গোল আকারে চিতই বানিয়ে নিন। এবার ১ লিটার দুধে এলাচ, তেজপাতা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ আধা লিটার হলে পিঠাগুলো এর মধ্যে ছেড়ে দিন।

সিরা তৈরির উপকরণ: খেজুরের গুড় ২ কাপ, দুধ ৪ লিটার, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, পানি ৪ কাপ। খেজুরের গুড় পানি দিয়ে জ্বাল দিন। এলাচ, দারুচিনি দিয়ে ফুটে উঠলে নামিয়ে গরম পিঠা গুড়ের সিরায় ছাড়ুন। তারপর জ্বাল কমিয়ে দিন। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর পিঠা পরিবেশন করুন।

পিঠা খেতে ভালোবাসে সব বাঙালি। খুব কম সংখ্যক হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে বলা মুশকিল।

 

বই রিভিউ : পথের পাঁচালী এবং আমার অনুশীলন

গাজী আনোয়ার শাহ্


পথের পাঁচালী
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ইরানি মুভি “দ্যা চিলড্রেন অফ হ্যাভেন” অসাধারণ খ্যাতি কুড়িয়েছেন তার অনবদ্য সৃষ্টিশীল শিল্প প্রতিভা দ্বারা। যে মুভিটি হিন্দিতেও নকল করা হয়েছে। এক বাক্যে অসাধারণ। ছোট বাচ্চা (ভাই, বোন) দুটির কর্মকুশলতা, ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে আহত পরিবারের এক অনন্য সমাচার।

বাংলা সাহিত্যের টর্চবিয়ারার, মশালবাহি লেখকের “পথের পাঁচালী” এমন একটি বাস্তব, জীবন্ত, সার্বজনীন রচনা যার স্বীকৃতি সর্বশেষ অস্কার পর্যন্ত পৌঁছেছে।

চলচ্চিত্র হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে
পথের পাঁচালী ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত ও সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটিবাংলা চলচ্চিত্র। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরউপন্যাস পথের পাঁচালী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটিসত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। অপু ত্রয়ীচলচ্চিত্র-সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর মুখ্য চরিত্র অপুর শৈশবকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা চিত্রায়িত করা হয়েছে।

**৯৫৫শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(স্বর্ণকমল পুরস্কার)
**শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(রজতকমল পুরস্কার)
**৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) ভারত১৯৫৬পাল্ম দর
**শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল
**ওসিআইসি পুরস্কার – বিশেষ উল্লেখ১৯৫৬
** ৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসব ফ্রান্স
১৯৫৬ ভ্যাটিকান পুরস্কার, রোম– ইতালি
১৯৫৬ গোল্ডেন কারবাও, ম্যানিলা– ফিলিপাইন
১৯৫৬ মেধার ডিপ্লোমাএডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব স্কটল্যান্ড
১৯৫৭ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ‘সাজনিক গোল্ডেন লরেল’বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব জার্মানি
১৯৫৭শ্রেষ্ঠ পরিচালক জন্য গোল্ডেন গেট
শ্রেষ্ঠ ছবি জন্য গোল্ডেন গেটসান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫৮শ্রেষ্ঠ ছায়াছবিভ্যানকুভার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কানাডা
১৯৫৮ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড স্ট্র্যাটফোর্ড ফিল্ম ফেস্টিভাল কানাডা
১৯৫৮ সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র, জাতীয় বোর্ড পর্যালোচনা পুরস্কার
১৯৫- যুক্তরাষ্ট্র১৯৫৯সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রনিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উত্সব যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৬কিনেমা জাম্পু পুরস্কার সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র জন্য– জাপান
১৯৬৯শ্রেষ্ঠ অইউরোপীয় ছায়াছবির জন্য বদিল পুরস্কার– ডেনমার্ক হতে পুরুষ্কার লাভ করে।

রবীন্দ্রনাথের অনুগামী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার গ্রামীণ জীবনের ছিন্নমূল প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবার গুলোর একটি জীবন বৈচিত্র্য শিল্পীর তুলিতে অঙ্কন করে জনমানুষের হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের জীবননান্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পুতুল নাচের ইতিকথা”, জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” এর মত অনেক লেখকের মত গ্রাম বাংলার চিত্র জীবন্ত করে উপস্থাপন করেছেন।

উপন্যাসটির প্রাধান চরিত্র দুই ভাইবোন অপু ও দূর্গা।

উপন্যাসটি সাধু ভাষায় বলে সুখপাঠ্য নয়, ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পড়তে হবে। প্রথমে কঠিন মনে হলেও চরিত্রগুলো খুঁজে নিতে পারলে রসালো হবে।



সারসংক্ষেপ

পথের পাঁচালী’ প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখা একটি বিখ্যাত সামাজিক বাস্তব উপন্যাস। এটি উপন্যাস হলেও পড়ার সময় একটিবারের জন্যও মনে হয় না যে এটা উপন্যাস। বরং লেখকের স্বচ্ছ -সাবলীল ভাষায় আমাদের সমাজের বাস্তব ও জীবন্ত ছবিটিরই একটি সহজ-স্বাভাবিক রূপ তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে।

আমরা, থার্ড জেনারেশান, কখনও কী ভেবেছি যে একজন নারীর কিরকম অনুভূতি হয় যখন সে ক্রমাগতভাবে নির্যাতিত, অবহেলিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত হয়, কারণ তার কোন আয়ের উৎস নেই, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, গঠনগত দূর্বলতার কারণে?

যখন একজন পরিচারিকা তার জীবনের শেষ দিনে চলে আসে, তখন তার সামাজিক পরিস্থিতি কেমন হয়? যখন কোন নারী অল্পবয়সে স্বামী হারা হয় এবং সমাজ তাকে আবার বিয়ে করবার অনুমতি দেয় না, তখন সেই নারীর সামাজিক অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর অত্যান্ত নিখুঁতভাবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” উপন্যাসে রয়েছে।

এই উপন্যাসের প্রথম অংশে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে দানবীয় আকার ধারণ করতে দেখি। ইন্দির ঠাকুরনের বিয়ে অল্পবয়সে এমনই এক লোকের সাথে লোকের সাথে দেয়া হয়, যে বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আর কখনও ফিরে আসে না। তখন আয়হীন ইন্দির ঠাকুরনের আবাসস্থল হয় তার পিতার বাড়িতে, এবং তাদের ও তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িই তার স্থান হয়।

সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হত যে সে একজন আশ্রিতা, করুণার পাত্রী ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত, কিন্তু দিন শেষে তার পথ এসে শেষ হত হরিহরের বাড়িতেই। একবার ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে তাকে একেবারে বের করে দেয়া হয় এবং মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের ইতি ঘটে। মৃত্যু হয় অসহায়ত্বেরর।

এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ ‘আম আঁটির ভেঁপু’-এ অত্যন্ত সুচারুভাবে হরিহরের সন্তানদ্বয়- বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপুর টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

দূর্গা একপর্যায়ে অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় দুর্গার মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে দুর্গা মারা যায়।

উপন্যাসের শেষ অংশ ‘অক্রুর সংবাদে’ চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরীবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক সাফল্যের সাথে দেখিয়েছেন, যে একজন ব্রাক্ষ্মণ নারীর(সর্বজয়া) কি অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে স্বামী হরিহরও মারা যায়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ ছিল না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ায় না।

অবশেষে সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দি পুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না।

কিন্তু বলাই বাহুল্য যে এই সামাজিক বৈষম্য আজকের একবিংশ শতাব্দিতে এই উন্নত সমাজেও পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত এই উপন্যাস আদি ও বর্তমান সামাজিক উত্থান-পতন ও সামাজিক কুসংষ্কারেরই প্রতিচ্ছবি।


লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্ম:১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয়ভারতীয় বাঙ্গালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।

পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপিও রচনা করেন।

বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনেসত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

অধুনা ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে, ১ নভেম্বর ১৯৫০ তিনি মারা যান।

আনোয়ার শাহ্
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ।

 

ভালো ও মন্দের ব্যাপারে শিশুদের দৃষ্টি উন্মোচন

আফরোজা হাসান


ভাইয়ার পাঁচ বছর বয়সি জমজ দুই পুত্রের চেহারা যেমন একদম আলাদা একে অন্যের থেকে স্বভাবেও দুইজন সম্পূর্ণ ভিন্ন! নুবাঈদ চঞ্চল, ছটফটে, মেজাজি, এলোমেলো এবং খুবই দুষ্টু স্বভাবের! আর নুসাঈব শান্ত, চুপচাপ, গোছানো, কেয়ারিং এবং খুবই পাকা পাকা কথা বলা স্বভাবের! দুই ভাইয়ের পছন্দ-অপছন্দও আলাদা আলাদা! ভাইয়ার গাছপালা ভীষণ পছন্দ। এই স্বভাবটা নুসাঈব পেয়েছে। প্রকৃতির কোলে কোলে থাকলে খুব পছন্দ করে। নুবাঈদ এর উল্টো। সে বাগানে যায়ই গাছপালার শান্তি ভগ্ন করতে। দেখা যায় নুবাঈদ বাগানে খেলার সময় টান দিয়ে একটা ফুল বা গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলেছে। নুসাঈব ছুটে গিয়ে গাছে হাত বুলিয়ে আদর মেশানো কন্ঠে গাছের নাম ধরে বলবে, তুমি ব্যথা পেয়েছো? আহারে… তোমাকে আদর। নুবাঈদ ছোট মানুষ তো তাই বেশি বেশি দুষ্টুমি করে। তুমি রাগ করো না কেমন! আমি পাপাকে বলে দেব যেন নুবাঈদকে বকে দেয়। তোমাকেও যেন এসে সরি বলে। তুমি পানি খাবে? আচ্ছা তোমাকে পানি এসে দিচ্ছি। এই হচ্ছে আমাদের দুই সোনা পুটুলের অবস্থা!

একে সাথে হলেই দুই ভাই খুটখাট শুরু করে দেয়। আজ নুবাঈদ বসে ড্রইং করছিল। নীল রঙ শেষ হয়ে গেলে নুবাঈদ পাশে বসে থাকা নুসাঈবকে বলল, যাও তো রুম থেকে আমাকে নীল কালারের পেন্সিল এনে দাও। নুসাঈব নিজের ড্রইং নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই যেতে রাজী হলো না! নুবাঈদ তখন তেড়ে এলো নুসাঈবকে মারতে। ভাইকে তার দিকে তেড়ে আসতে দেখে নুসাইব ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে ফু দিতে শুরু করলো নুবাঈদের দিকে। নুবাঈদ চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি আমাকে ফু দিচ্ছো কেন? নুসাঈব বলল, শয়তান করায় বলেই মানুষ দুষ্টু কাজ করে। মারামারি অনেক দুষ্টু কাজ। তুমি আমাকে মারতে এসেছো কারণ এখন শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। পাপা বলেছে শয়তানের দুষ্টামি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। সেজন্য আমি ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে তোমাকে ফু দিয়ে দিচ্ছি। যাতে শয়তানের দুষ্টমি থেকে আল্লাহর তোমাকে সাহায্য করেন। তাকে শয়তান বলেছে ভেবে নুবাঈদ ঝাঁপিয়ে পড়লো নুসাঈবের উপর।

ভাইয়া ছুটে এসে দুই পুত্রকে আলাদা করলেন। নুবাঈদ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, আমাকে শয়তান বলেছে। আমি শয়তান না। আমি ফেরেশতা। নুসাঈব প্রবল ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, আমি তোমাকে শয়তান বলিনি তো। শয়তান তোমার ভিতরে ঢুকে তোমাকে দিয়ে দুষ্টূ কাজ করাতে চাচ্ছিলো। আমি তাই দোয়া পড়ে শয়তানকে তাড়িয়ে দিয়েছি। নুবাঈদ তখন কিছুটা শান্ত হলো। এক মূহুর্ত চুপ থেকে সেও ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলে নুসাঈবকে ফু দিয়ে বলল, তুমি আমার কথা শোনোনি। আমাকে রঙ পেন্সিল এতে দাওনি। এটাও দুষ্টু কাজ। শয়তান তোমার মধ্যে ঢুকে ছিল বলে তুমি এই দুষ্টূ কাজটি করেছো। আমি ফু দিয়ে দিয়েছি এখন শয়তান চলে গেছে। যাও আমাকে নীল রঙের পেন্সিল এসে দাও। নুসাঈব এক মূহুর্ত দ্বীধা করলো এরপর রুমে গিয়ে রঙ পেন্সিল এসে দিলো নুবাঈদকে। ভাইয়া দুই পুত্রকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, মাশাআল্লাহ তোমরা দুইজনই আজ অন্নেক ভালো কাজ করেছো! এভাবে সবসময় নিজের সাথে সাথে একে অন্যের কাছ থেকেও দুষ্টু শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে আল্লাহর সাহায্য চাইবে। পাপার মুখ দেখে প্রশংসা শুনে তো দুইজনই একদম গদগদ হয়ে গেলো।

দুই বাবা সোনার ঘটনাটি টাইম মেশিন হয়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তিন বছর অতীতে। ইউরোপের এই বৈরী পরিবেশে শরীয়তের আলোকে সন্তানদেরকে গড়ে তুলতে চান এমন কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে একটি ফ্যামেলি প্রোগ্রাম করতাম আমরা নিয়মিত। বাচ্চাদের শরীয়তের আলোকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানান ধরণের ইভেন্ট ছিল আমাদের সেই প্রোগ্রমে। ছোট বাচ্চাদেরকে গল্প আকারে কিংবা ছোট ছোট প্রশ্নাকারে শেখালে ওরা মজা যেমন পায় তেমনি শিখতেও পারে দ্রুত। আমরা এমন অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছিলাম ইসলামের মূল বিষয় সমূহকে ঘিরে। যেমন, তোমার সৃষ্টিকর্তা কে? পৃথিবীর সকল মানুষকে কে সৃষ্টি করেছেন? গাছ গাছালী এবং ফল ফলাদি কে সৃষ্টি করেছেন? সকল কাজ কোন দিক থেকে শুরু করতে হয়?যে কোন কাজ করা,যাওয়া,খাওয়া,পড়া,শোয়া, শুরু করতে হয় কি বলে?কেন সকল কাজের শুরুতে আমরা বিসমিল্লাহ বলবো? ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন প্রশ্নে প্রশ্নে ওদেরকে শয়তান সম্পর্কেও জানিয়েছিলাম। বুঝিয়ে বলেছিলাম শয়তান কিভাবে কুমন্ত্রণা দেয় মনে। কিভাবে মানুষকে দিয়ে দুষ্টু কাজ করায়! কিভাবে ভালো কাজ থেকে বিরত রাখে! সাথে সাথে এটাও বুঝিয়ে বলেছিলাম আমরা, কেন ভালো কাজ করতে হবে, কেন দুষ্টু কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের সাথে সাথে অন্যদেরকেও ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতে হবে, দুষ্টু কাজ করা থেকে বিরত করতে হবে।

শয়তান সম্পর্কে বাচ্চাদের সাথে প্রোগ্রাম করে আসার পর তো সব বোনদের বাসা থেকে ফোন আসতে শুরু করলো। কেউ বলল, আপু কি শেখালেন আমার ছেলে তো সারাদিন ফাইটিংয়ের উপরেই থাকে অদৃশ্য শয়তানের সাথে! আরেকজন বললেন, একটু পরপরই শুনি আমার মেয়ে বিড়বিড় করে ‘আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ছে। জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয়, শয়তান যাতে আমার কাছে আসতে না পারে তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি। অবশ্য আমার নিজের ঘরের অবস্থাও একই রকম ছিল। নাকীব কখনো ছুটে এসে বলতো, আম্মুতা জানো একটু আগে কি হয়েছে? শয়তান এসে আমাকে খুবই দুষ্টু একটা কাজ করতে বলেছিল। আমি শয়তানকে ইচ্ছে মত মেরে গুড়াগুড়া করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি। আবারো কখনো ওর রুম থেকে প্রচন্ড ক্যারাটে প্র্যাকটিসের শব্দ ভেসে এলে কি হচ্ছে জানতে চাইলে জবাব দিতো, আম্মুতা শয়তানকে মারছি আমি। বাচ্চারা নতুন কিছু শিখলে প্রথম প্রথম যা হয় আরকি। তবে অন্য আর সব কিছুর চেয়ে এই ব্যাপারটায় খুব জোড়ালো প্রভাব ছিল বাচ্চাদের সবার মধ্যে। তারা অনেক সাবধান হয়ে গিয়েছিল দুষ্টুমির ব্যাপারে। টুকটাক মিথ্যা যা বলতো সেটার পরিমাণ আরো কমে গিয়েছিল। ভালো কাজের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল।

আবারো অনুভব করেছিলাম যে, বাচ্চারা আসলে অনেক নরম, কোমল ও পবিত্র মনের অধিকারী। ভালোর প্রতি, কল্যাণের প্রতি ওদের মানসিক ও আত্মিক টান সহজাত। ওরা সুন্দর থাকতে, সুন্দর দেখতে এবং সুন্দর কিছু করতে পছন্দ করে। ওদের মনের ভেতরটা আসলে বিশাল বড় সাদা এক ক্যানভাস। যে রঙয়ের আঁচড়ই সেই ক্যানভ্যাসে পড়ে ওরা মুগ্ধ হয়ে সেটাকে অবলোকন করে। তারপর পাশে পড়ে থাকা সেই রঙয়ের তুলিটাই তুলে নেয় নিজে কিছু আঁকার জন্য। তাই বাচ্চাদের সামনে কোন কিছুকে উপস্থাপন করার সময় সতর্কতার প্রয়োজন খুব খুব খুব বেশি। বিশেষ করে শরীয়তের বিধি-নিষেধ, জীবনের চলার পথের কল্যাণকর ও অকল্যাণ বিষয়সমূহ, ভালো কোনটা, মন্দ কোনটা ইত্যাদি সবকিছু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং ছোটবেলা থেকেই নিজের সাথে সাথে অপরকেও ভালো কাজে উৎসাহিত ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও দায়িত্ব পালনের শিক্ষা দিতে হবে। ছোটবেলাতেই যদি ভালো কিছু করার পথের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং মন্দ পথকে আকর্ষনীয় ও সহজ করে সামনে পেশ কারী শয়তান সম্পর্কে সাবধানতার অবলম্বন করতে এবং সেই ব্যাপারে প্রভুর কাছে সাহায্যে প্রার্থনা করার শিক্ষার বীজ বুনে দেয়া যায় শিশুদের মনে! এবং সেই বীজকে বিকশিত করার লক্ষ্যে পরিমিত যত্ন নেয়া হয়, আগাছা দূরীভূত করা হয়! তাহলে ইনশাআল্লাহ ভালো ও মন্দ সম্পর্কে মোটামুটি স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নিয়ে শিশুরা বড় হতে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে শিখে যাবে ধীরে ধীরে!

 

ঘর সাজানোর কারুকাজ

অল্প খরচে এবং অলস সময়গুল ধরে রাখতে সবচেয়ে আনন্দময় কাজ হল ঘর সাজানো। আজকের আয়োজনে নানান রং এর কাগজ দিয়ে ঘর সাজানোর কৌশল শিখি। চলুন এখনি দেখে ফেলি কিভাবে নিজের প্রসাদকে অপূর্ব করে তোলা সম্ভব কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি

আপনার বাসায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য তৈরি করা যাবে সামান্য কাগজ দিয়ে। আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। সহজ উপায়ে ঘরের চেহারা পাল্টে দেবার জন্য কাগজের প্রজাপতি হতে পারে একটি সুন্দর উপাদান। এছাড়া আপনি ফুল, লতা পাতা এবং নানান ন্যাচারাল জিনিজও তৈরি করতে পারেন কাগজ দিয়ে।

কাগজের প্রজাপতি বানানোর কৌশলটি ধাপে ধাপে শিখে। আমরা সহজে ঘর সাজাতে পারি।

কি কি লাগবে

আর্ট পেপার পুরু এবং বড় সাইজের এক কালারের কাগজ আপনার বিভিন্ন প্রিন্ট পছন্দ হলে সেটিও রাখুন, পেন্সিল, কাঁচি, আঠা।

ধাপে ধাপে কৌশল

১ম ধাপ
প্রথমেই প্রজাপতি সিলেকশন(রংবাহারি, নাকি এক কালার, নাকি প্রিন্ট)। পেন্সিল দিয়ে প্রজাপতি আঁকতে পারেন অথবা যদি আপনি আর্টে পারদর্শী না হন তাহলে বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক বা কাগজের প্রজাপতি কিনে নিতে পারেন ছোট থেকে বড় সাইজের দু একটা প্রজাপতি। এবার ছাপ দিয়ে দিয়ে আঁকুন।

২য় ধাপ
আঁকা অংশের পাশ দিয়ে কাঁচি দিয়ে প্রজাপতিগুলো কাটুন। ইচ্ছেমত প্রজাপতি বানাতে পারেন। তবে ছোট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় করে অনেকগুলো প্রজাপতি বানালে দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগবে। ৩০-৫০ টি বানাতে পারেন। খুব নিখুঁত করে কাঁটার চিন্তা করবেন না তাহলে মন খারাপ হতে পারে।

৩য় ধাপ
কাটা হয়ে গেলে। আঠা লাগানোর পালা। আঠা লাগানোর আগে প্রজাপতিগুলো মাঝখানে হালকা ভাঁজ করে নিন। যাতে দেয়ালে লাগানোর পর দেখতে সুন্দর ও জীবন্ত মনে হয়। কোথায় লাগাবেন এবং কতগুল লাগাবেন তার উপর সুন্দর বিষয় নির্ভর করবে না বরং আপনার পছন্দের উপর সৌন্দর্য নির্ভর করে।

আপনার যে কোন রুমের দেয়ালে বা শুধু ড্রয়িং রুমে অথবা এক পাশে দেয়ালের এই প্রজাপতিগুলো আটকে দিতে পারেন। খুবই সহজ উপায়ে এবং তেমন খরচ ছাড়াই রুমের ডেকোরেশন হয়ে যাবে।

 

বইয়ের সাথে সখ্যতা

বৈশালী রহমান


বাংলা সাহিত্যের একটা শাখা নিয়ে আমার একটু ক্ষোভের মতো আছে। সেটা হলো, ভৌতিক গল্প।

গত এক বছর ধরেই ফেসবুকিং কমিয়ে পড়াশোনা করছি প্রচুর। শুধু রিসার্চের পড়াশোনাই নয়, বাংলা সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নন ফিকশন ইত্যাদিও ঝালাই করে নিচ্ছি খানিকটা।

সাহিত্যের অন্য শাখাগুলো যেমন রোমান্টিক, রহস্য, রম্য, ট্র্যাজেডি ইত্যাদিকে বাংলা সাহিত্য এবং সাহিত্যিকেরা আপন করে নিলেও এই হরর বা ভৌতিক শাখাটা কেন যেন অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ সাহিত্যিকরাই ভূতের গল্প লিখতে গিয়ে সেটাকে করে ফেলেছেন একেবারে ছেলেমানুষি বিষয়, হাস্যকর বস্তু, যেমনটা দেখা যায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “অদ্ভুতুড়ে সিরিজ” এ, নয়তো বিদেশী পিশাচ বা জম্বি কাহিনির অক্ষম অনুকরণ, যেটা করেছেন রহস্য পত্রিকা বা সেবা প্রকাশনী কেন্দ্রিক লেখকেরা।

বাংলার প্রকৃতি, পরিবেশকে আপন করে নিয়ে তার ভিত্তিতে গা ছমছমে ভূতের গল্প লিখতে দেখেছি খুব কম লেখককেই। তবে ভূতের গল্পে চমৎকার মানবিক প্রলেপ নিয়ে এসেছেন তারাশঙ্কর, মনোজ বসু বা পরশুরাম।

পরশুরামের বিখ্যাত গল্প “ভূষণ্ডীর মাঠে” তে ধর্মীয় কিছু সংস্কার নিয়ে ভূতের সংলাপের মাধ্যমে চমৎকার স্যাটায়ার রয়েছে। আবার “মহেশের মহাযাত্রা” পরশুরাম সুলভ স্যাটায়ার দিয়ে শুরু হলেও শেষ দিকে বেশ গা ছমছম করেই ওঠে। হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় নামে এক স্বল্প পরিচিত লেখকও চমৎকার কিছু ভূতের গল্প লিখেছেন। শরদিন্দু তাঁর বিখ্যাত চরিত্র বরদাচরণের জবানিতে লিখে গেছেন কয়েকটি অসাধারণ ভৌতিক গল্প।

বাংলায় প্রথম সম্পূর্ণ ভৌতিক উপন্যাস লেখেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, যদিও তাঁর লেখার মধ্যেও “শিশুদের জন্য প্রযোজ্য” ছাপই প্রবল। বড়োরা ওইসব লেখা পড়ে ভয় পাবে, এই সম্ভাবনা কম। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারও চমৎকার দুটি পিশাচ উপন্যাস এবং কিছু ভৌতিক ছোটো গল্প লিখেছেন। কিন্তু সেইসব লেখার অধিকাংশের মধ্যেও কিছুটা মৌলিকতার অভাব আছে বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে। বিদেশী গল্পের ছাপটা বেশ প্রকট। তবে কিছু কিছু গল্প সত্যিই চমৎকার।

আমার মতে, সার্থক ভৌতিক গল্প সেটাই, যেটা দেশ-কাল-পরিস্থিতি-পরিবেশকে তুলে ধরে এমন একটা ভয়ংকর আবহ এর সৃষ্টি করবে, যাতে করে গল্প পড়ার পর পাঠকের একা একা অন্য রুমে যেতেই ভয় লাগবে। যেখানে বাংলায় সার্থক ভূতের গল্পেরই অভাব, সেখানে ভূতের গল্পের একটা অনবদ্য অনুষঙ্গ, তন্ত্র, তান্ত্রিক সন্ন্যাসী প্রভৃতি সহযোগে বেশ “উপাদেয়” ভৌতিক গল্পের অভাব থাকাটা স্বাভাবিক। এই অভাব খানিকটা পূরণ করেছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে সৃষ্ট এবং পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাতে জীবন্ত রূপ পাওয়া চরিত্র তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো। তারপর হাতে এলো অলাতচক্র। তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর আরেকটি মাস্টারপিস। এরপর তন্ত্র এবং তান্ত্রিক চরিত্র সম্বলিত ভূতের গল্প পড়ার জন্য মনটা আনচান করছিল। কিছু থার্ড ক্লাস গল্প হাতে এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

মনে হচ্ছিল, আমি লিখলেও বোধহয় এর চেয়ে ভালো লিখতে পারতাম। ঠিক এ সময়েই খানিকটা রহস্যজনক ভাবেই ঠিক গতকাল রাত দুটোর সময় হাতে চলে এলো গজেন্দ্রকুমার মিত্র মহাশয়ের “অলৌকিক কাহিনি সমগ্র”।

মিত্রমশাইয়ের নাম যারা মনে করতে পারছেন না, তাঁরাও অনেকেই বোধহয় তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাস “পৌষ ফাগুনের পালা”র নাম শুনে থাকবেন। এটি মূলত একটি ট্রিলজি, যার প্রথম দুটি হলো “কলকাতার কাছেই” এবং “উপকণ্ঠে”। এই ভদ্রলোক যে এত অসাধারণ ভূতের গল্প লিখতে পারেন এটা জানা ছিল না। কী অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেন তিনি! অভিজ্ঞতা নিশ্চয় জানেন ভূতের গল্পে ভয় পাওয়ার জন্যে পরিবেশ একটা বিরাট ভূমিকা রাখে। আর মিত্রমশাইয়ের গল্পের আরেকটি অসাধারণ বিষয় হলো প্লট। হাজারবার শোনা বা পড়া ভূতের গল্পের চিরাচরিত প্লটের মতো নয়।

বইটির সব গল্প ভালো লাগেনি। অন্তত দশটি গল্প নিম্নমানের মনে হয়েছে। তবে ছয়শ পৃষ্ঠার একটি সংকলনে এটুকু ছাড় বোধহয় দেওয়াই যেতে পারে।

তারানাথ তান্ত্রিক এবং অলাতচক্র পড়ার পরে যাদের কাছে অন্য সব ভূতের গল্পই পানসে বলে মনে হচ্ছে, তারা এই বইটি পড়ে ফেলতে পারেন। সময়টা বৃথা যাবে না। বিশেষ করে শীতের রাতে কম্বলের তলায় ঢুকে বইটা পড়লে ভয় পাওয়ার গ্যারান্টি ১০০%।

লেখিকা: ডেপুটি ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রাসঙ্গিক কথা

ডা. সাকলায়েন রাসেল


মাত্র মাসের ব্যবধানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল..দু’জন মা! না.. গ্রামের কোন এক অজপাড়া গাঁয়ের জরিনা খাতুন না..। আমিও কাউকে ছোট করে বলছি তা ঠিক না।

মারা গেল একেবারে শিক্ষা ও আর জ্ঞানের আলোয় পরিপূর্ণ দুই মা..দু’জনেই পেশায় চিকিৎসক! সবে মাত্র জীবন শুরু করেছিল..দেশকে, পরিবারকে কিছু দেয়ার আগে হারিয়ে গেল একেবারেই অকালে.. একজনতো গেল পেটে ৯ মাসের বাচ্চা সহ!

খবর দু’টো চোখ ভিজিয়ে দেয়..জীবনের সব ছন্দ যেন মুহুর্তেই থামিয়ে দিতে চায়..প্রশ্নরা আঁছড়ে পড়ে মনের কোণে?

চলে যাওয়াটা যদি এতোই স্বাভাবিক.. বেঁচে থাকার তবে কেন এত্তো আয়োজন!!!

কেন এত্তো স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা?
প্রেগন্যান্সিটাকে আমার কাছে.. ১০ নং বিপদ সংকেতের মত মনে হয়… চুল থেকে মাথা পর্যন্ত যেন মায়ের শরীরে ঝড় বইতে থাকে.. এ ঝড়কে আড়াল করার প্রবণতা প্রথম চোখে পড়ে গ্রামে..শহরেও কিছুটা!

বউকে ডাক্তার দেখাননি কেন?..এমন প্রশ্নের উত্তরে কিছু পুরুষের উত্তর থাকে..ওর তো কোন সমস্যা ছিল না তাই দেখাইনি! ভাবখানা এমন যে প্রেগন্যান্ট তো কি হইছে, অসুস্থ তো আর না! অথচ প্রেগনেন্সি নিজেই একটা বড় রোগের নাম!

অন্তত আমার কাছে! যতই তাকে ফিজিওলজিক্যাল কন্ডিশন বলা হোক না কেন…গ্রামের অজ্ঞ স্বামীর চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে শহরের আধুনিক মেয়েরা! গ্রামের মেয়েদের মত শহরের মেয়েরা  আড়াল করে না!..স্মার্টলি শো করে! গ্রামের ‘সাধ’ অনুষ্ঠান তাই শহরের আধুনিকতায় ‘বেবি শোয়ার’ হয়ে যায়!

শুধু তাই না…তারা জানে বর্ধিত দেহ অবয়বকে কিভাবে আড়াল করতে হয়!..জানে কিভাবে দেহের আগলি ভাবকে মেক আপের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হয়!

প্রেগন্যান্সিতে তাই তারা সৌন্দর্যের আলাদা শিল্পে পরিণত করে! থামতে হয় না তাই শহরের মেয়েদের.. কিংবা থামার সুযোগ পায় না শহরের কর্মজীবী মহিলারা..প্রেগন্যান্সিতে সমভাবে সচল থাকে তারা!

ছুটি মাত্র ৬ মাসের!!

আপনার ইচ্ছায় আপনি তা যেকোন সময় নিতে পারেন! অনেকেই… ঠিক অনেকে না, প্রায় সবাই তাই হিসাব করে..কষ্ট করে প্রেগন্যান্সির সময়টি চালিয়ে নেই ছুটি ছাড়া..বাচ্চা হলে ছুটিটা বেশি কাজে লাগবে…

আর সে কারণে প্রায় সবাই বাচ্চা হওয়ার পর ছুটি নেয়! অনেকে কানাঘুষা করে.. ডাক্তার মেয়েদের বাচ্চাকাচ্চাদের ইদানিং অনেক বেশি সমস্যা হচ্ছে.. বৃহৎ অর্থে কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের মধ্যে সমস্যাযুক্ত সন্তান জন্মদানের হার বেশি!! না এ ব্যাপারে কোন গবেষণা আমার জানা নেই… এসব শুধু বাতাসে শুনি! হতে পারে এর পিছনে,

২ কারণ:

  •  প্রেগন্যান্সিকালীন বিশ্রামহীনতা কিংবা অতিরিক্ত কর্মক্ষম থাকা।
  •  চিকিৎসক কিংবা কর্মজীবী মায়েরা বেশি সচেতন বলে…আগেভাগেই তারা রোগ নির্ণয় করছেন!

অথবা.. আপনি চাইলে আমাকে গালমন্দ করতে পারেন… লোকটা নারী বিদ্বেষী… ইনিয়ে বিনিয়ে চাকরি জীবি মায়ের বিপক্ষে…আর হাউজ ওয়াইফ মায়ের পক্ষে বলছে!

সরি, আমি ঠিক সেভাবে ভাবছিনা! ভাবছি…
কোথাও তো একটা কিছু আছে আছে..না থাকলে চিকিৎসক কিংবা কর্মব্যস্ত “”মায়েদের সন্তানের এতো বেশি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা কেন হচ্ছে?””

সমাধান তবে কি?

ছুটিটাই যেহেতু প্রধান সমস্যা..আমি তাই আমি এটা নিয়েই কথা বলতে চাই!

সিউর না…তবে শুনেছিলাম…ইন্ডিয়ায় একজন কর্মজীবী মা মাতৃত্বকালীন ছুটি সব মিলিয়ে ৫ বছর পান..এ ছুটি তিনি এক সাথে নিতে পারবেন না… ভেংগে ভেঙে মোট ৫ বছর নিতে পারবেন!

এতে দুই সুবিধা:

  • বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় লম্বা ছুটি নিয়ে বিশ্রামে থাকতে পারে।
  • ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার সময় পাশে থাকতে পারে!

এই দুই সুবিধার পিছনে বড় সুবিধা হল…পরিবারের লোকজন চাকুরীজীবী মা কে স্বাগত জানায়…ধরেই নেয় যে, চাকরী করলেও বাচ্চাকাচ্চা লালনে মা ভাল সময় দিতে পারবেন!

কারণ, এই বাংলাদেশেরই অনেক মা সন্তানের কারণেই এক সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাচ্চা পালনকেই অধিক শ্রেয় মনে করেন!

জানি এটা অনেক বড় স্বপ্ন.. পুরণ হতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে! কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কি!!

৫ বছর না হোক…৯ মাস তো পাব!! এর মধ্যে ৩ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে… বাধ্যতামূলকভাবে! বাকী ৬ মাস…সন্তান লালন পালনে! তাও যদি পাওয়া না যায়…

তবে ৬ মাসের কয়েক মাসেক বরাদ্দ থাকুক প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে! সন্তানরা আসুক সুস্থতা নিয়ে… মায়েরা বাঁচুক সন্তানদের আঁচলে রেখে…ভরসার সবটুকু জায়গা জুড়ে!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

অপেক্ষা

আখতারুজ্জামান সেলিম


অপেক্ষাতে কেটে যায় কতো যে সময়
যেজন প্রতীক্ষা করে সেই শুধু জানে
সময় কেমনে কাটে।
বিমানের প্রতীক্ষায় আছি কুর্মিটোলায়
মহাখালী ভরা থাকে ঈদের সময়
ঘরে ফেরা মানুষের শ্বাসে
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকে চাতকচাতকী
ভাটায় নোঙ্গর করে
জোয়ারের পতীক্ষায় থাকে নায়ের মাঝি
প্রেমিকার প্রতীক্ষায় কাটেনা সময়
জন্মের প্রতীক্ষা করে নবদম্পতি
মৃত্যুর পতীক্ষায় থাকে ফাঁসির আসামী,
আমি প্রতীক্ষায় একটি কবিতার
সারাটা জীবন প্রতীক্ষায় থাকে মৃত্যু।

 

কেন হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ?

ফাতেমা শাহরিন


কাজটি অত্যন্ত কঠিন বলা যে, সমাজে অবক্ষয়, নাকি অপসংস্কৃতির প্রভাব, অথবা নারী পুরুষভেদে মারাত্মকভাবে ‘ইগো’ প্রব্লেম। হা, আত্ম অহমিকা বন্ধনকে নাজুক করে দেয় এটা সত্যি কিন্তু আধুনিকতা এবং উচ্চ শিক্ষার হার যে হতে পারে তা বড় বড় পত্রিকায় আসছে শিরোনাম হয়ে। আজকের আধুনিক এবং দ্রুতগতির জীবনে সম্পর্কের বিচ্ছেদ রাষ্ট্রীয় কোন নতুন সমস্যা হয়ে দাড়িয়ে পড়বে কিনা বলা মুশকিল। কেন এই সম্পর্ক গুল ভালবেসে গড়েও ভেঙ্গে পড়ছে?

আসুন দেখি কিছু পয়েন্ট:

১) সেক্সচুয়াল সমস্যা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এক নম্বর সমস্যা হল সেক্সচুয়াল সমস্যা। লোকলজ্জা অথবা অজানা জ্ঞান এব ভুল শিক্ষার জন্য একটি সুমধুর দাম্পত্য জীবন সূচনা লগ্নে অন্ধকার ছায়াতলে ডুবে যেতে পারে। এজন্য সুস্থ যৌন মিলন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। যখন স্বামী-স্ত্রী পরিতৃপ্ত যৌন মিলনে ব্যর্থ হয় তখন তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিশেষে ঘুমের ঘর থেকেই দাম্পত্য জীবন সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।

২) সম্পর্কের অবনতি

দাম্পত্য জীবনে মতবিরোধ ও মনোমালিন্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তাকে বেশী বাড়তে দেয়া যাবে না। তা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কেউ কারো সাথে কথা বলছে না তাহলে সমস্যা জটিলতর হয়ে ক্রমান্বয়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।

৩) নির্যাতন

নির্যাতন তিন প্রকার, কখন শারীরিক, বস মানসিক, সেক্সচুয়াল। যা একটি সম্পর্ককে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বিপদ জনক কারণ হল, দৈহিক ভাবে অত্যাচার, মার-পিট ও রুক্ষ আচরণ অথবা মানসিকভাবে নির্যাতন তথা অপমান, হেয় প্রতিপন্ন, গালাগালি করা। বৈবাহিক বন্ধনে সেক্সচুয়াল নির্যাতন ভয়ংকর রূপে হলেও সমাজে হয়ে অনেক নারী বা পুরুষ নিরবে চুপ থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন যুদ্ধ শেষে সম্পর্ক মরে যায়।

৪) দাম্পত্য জীবনে অনীহা

দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণা একটি জীবনে এক ঘেয়েমী ও বিরক্ত ছড়িয়ে দেয়। এটি সংসার ভাঙ্গার একটি কারণ। দীর্ঘ দিন ঘর সংসার করার পর যদি দেখা যায়, ভালোবাসার উষ্ণতা শীতল হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে পরিণতিতে তা তালাকের দিকে গড়ায়। দীর্ঘদিন গোপন প্রেম, তারপর গোপন বিয়ে, এক সময় সবকিছু ফাঁস। দাম্পত্য জীবনের প্রতি অনীহার জন্ম নেয়।

৫) মাদকাসক্তি

মাদকাসক্তি ব্যক্তির নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়, রাগ বেড়ে যায়, সন্দেহ জন্ম নেয়, এমনি প্রচন্ড অত্যাচারী হিসেবে পরস্পর এর প্রতি সহিংস্র হয়ে পরে। দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংসের অতল তলে নিয়ে যায়। এর ধ্বংসাত্তক দিক অনেক। ফলে.. প্রচুর অর্থ অপচয়, অপর পক্ষের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন, শারীরিক নির্যাতন, সন্দেহ জনক অবৈধ সম্পর্ক আর পরিশেষে দাম্পত্যে জীবন ধ্বংস ‘তালাক’।

৬) বিয়ের পর অবৈধ সম্পর্ক

স্বামী অথবা স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে কেউ যদি পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে তাহলে পরবর্তীতে তা বৈবাহিক জীবনের ইতি টানতে বাধ্য করে। তা জীবনে একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়িয়ে যায়। পরকীয়া মূলত: দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।

আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি দম্পতিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে তাদেরকে একটি সুস্থ, সুন্দর, মধুময়, ও বরকতময় পরিবার গঠন করার তাওফীক দান করুন। এ জন্য পারষ্পারিক ভালোবাসার উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা প্রত্যেক জরুরী। রেফারেন্স: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব। সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠন করবো।

মনোবিজ্ঞান

 

আলোক কণিকার পিছু পিছু

ডা.ফাতিমা খান


প্রতিদিন রোগী দেখা শেষ করে বাসায় ফিরতাম রাত দশটায়। বাসায় এসে ঠান্ডা পানিতে গোসল সেরে আয়েশ করে ধোঁয়া ওঠা চা/কফি খাওয়া ছিল আমার সে সময় প্রতিদিনের অভ্যাস। হয়তো ভাবছেন, এত রাতে চা-কফি ? ঘুম আসবে তো ?
আসবে…ঘুম আসতে চাইলে আসবেই, আর না আসলে কিছু করার নাই, চা-কফির দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমার ঘুম এমনিতেই খুব কম । সারারাত ‘নির্ঘুম প্রহরী’ হয়ে জেগে থাকার অভ্যাস আমার বহুদিনের।

বাসায় ঢোকা মাত্র প্রায়ই দিনই কারেন্ট চলে যেত। আমাদের এলাকার লোডশেডিং এর সময়-জ্ঞানটা ছিল অসাধারণ! প্রতিদিন একই সময় বিদায় নিত, আবার ঠিক সময়মতই চলে আসত। আমার বুয়া রিমির মা ঝটপট ‘বিকল্প বাতি’র ব্যবস্থা করতে করতে ভেংচি কেটে বলত, ”ভাবী আইছে না, অহনই কারেন্টের যাওন লাগব”।

আমি হাসতাম। রিমির মায়ের এই কথায় একটা অব্যক্ত মমতা ছিল। ব্যাপারটা আমার সয়ে গেলেও রিমির মার কষ্ট হত এই ক্লান্ত আমার জন্য। ঢাকা শহরে দিনশেষে সহি-সালামতে ঘরে ফিরতে পেরেছি এই তো অনেক … প্রতিদিন শুকরিয়া নামাজ পড়া উচিত। কারেন্ট চলে গেলে যাক, আমি আমার মত আমার চা/কফির কাপটা নিয়ে সোজা চলে যেতাম আমার ছোট্ট বারান্দাটায়।

হিজিবিজি দালানের ঢাকা শহরেও উপরতলার ফ্ল্যাটগুলোর খোলা জানালা বা বারান্দা দিয়ে চমৎকার ফুরফুরে বাতাস আসে। আর যদি হয় দক্ষিণমুখী বারান্দা, তাহলে ত আর কথাই নাই ! পূর্ণিমারাতে চাঁদের আলোর একটুখানি হলেও দালানের গা গড়িয়ে তৃষার্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্ষার দিনে ঝিরঝির বৃষ্টি সামান্য হলেও বারান্দাটা ভিজিয়ে দেয়। এই বারান্দায় বসেই আমি ভেজা মাটি, বৃষ্টি আর বাতাসের একটা মিশ্র সুবাস নিতাম।

সেদিন রাত বাজে প্রায় ১ টা । ল্যাম্পের আলোয় বই পড়ছিলাম। এসময় বাসার সবাই দিব্যি ঘুমে তলিয়ে থাকে। সবাই বলতে আমার ছেলে, রিমির মা (ঘরের কাজের জন্যই তাকে রাখা হয়েছিল কিন্তু তাকে সবাই আমার আত্নীয়া মনে করত) আর রুবি, আমার ছেলের খেলার সাথী।
রিমির মা কখন যে এসে আমার সামনে দাড়িয়েছে টের পাইনি। টেবিল ল্যাম্প এর কুসুম আলোতে তাকে কিছুটা উজ্জ্বল লাগছে, রিমির মার চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়াবী আর দুখী দুখী ভাব আছে। আজ মনে হচ্ছে এখানে আরও একরাশ মেঘ এসে জড় হয়েছে !

– কিছু বলবে?
_মা ফুন করছিল ভাবী।

– কি বলল ? সব খবর ভাল ? তোমার রিমি কেমন আছে ?
_ভাবী, রিমির বাপ আইছে বাড়িত।
– তো ?

_রিমিরে নেবার চায়। মাও এর হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইছে। আমাদের রাখি আর কুনুখানে যাইব না।

এরকম শপথ রিমির বাপ আগেও অনেকবার করেছে, আবার অনেকবার ভেঙ্গেছেও । রিমির জন্মের আগেই এই লোকটা তার বউ আর অনাগত সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছিল অন্য কারো সংসারের অর্ধাংশ পূর্ণ করতে। এরপর ফিরে এসেছিল ঠিক, কিন্তু কিছুদিন পর সেই আবার একি ঘটনা ঘটায়। প্রতিবার সে হাতে পায়ে ধরে মাফ চায়।

যে বারবার কথা রাখবে না তার কথা দেয়ার কোন অধিকার আছে কি ?
রিমির মা রাও যে কি! এত অন্যায় সহ্য করে কেন?
কিন্তু ওদেরই বা কি দোষ!

আমাদের দেশের সমাজটাই তো এমন, যেকোন সাংসারিক বা সামাজিক ক্রন্দলের নন্দঘোষ হল বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা। এদের কাজ হল মুখে ছিপি এঁটে, কানে তুলা দিয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে কোমড়ে বাঁধা দড়ি মোতাবেক চলতে থাকা। এই অদৃশ্য দড়ির পরিচালক বদলযোগ্য। দড়ি-চালক ভালো হলে তো ঠিক আছে, কিন্তু খারাপ হলে জীবনটা একেবারেই অসহনীয় করে দেয়।

আদর্শহীন মুর্খ সমাজব্যবস্থার এই একটা বিশাল সমস্যা। কিন্তু এগুলো কে বোঝাবে কাকে ?

– তুমি এখন ঘুমাও তো রিমির মা। কাল ভেবে দেখব।

কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। আমার ছোট্ট সংসারে রিমির মায়ের অবদান ছিল অনেক বেশী। টাকা-পয়সা দিলে যতই কাজের মানুষ পাওয়া যাক না কেন, অন্যের সংসারকে আপন করে সাজিয়ে গুছিয়ে সবটুকু ভালবাসা দিয়ে কাজ করবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। রিমির মায়ের স্বভাব-চরিত্র আর অভ্যাসগুলো অন্য আর দশজন কাজের মানুষের মত ছিল না। তাছাড়া কোথাও না কোথাও ওদেরকে আমার একাকীত্বের সাথীও মনে হত। জীবনের অতিরিক্ত ব্যস্ততায় আমি মেশিনের মত হয়ে গিয়েছিলাম , মাঝে মাঝেই কোন অনুভূতি কাজ করত না । আমার স্বস্তিময় জগতটা তখন খুব ছোট..শুধু আমার ছোট্ট ঘরটুকু। সারাদিন রোগবিদ্যা, ছাত্র-ছাত্রী, রোগী আর চিকিৎসার পাট চুকিয়ে ছুটে আসতাম আমার ছোট্ট জগতে, যেখানে আমার সোনামণিটা আমার জন্য অপেক্ষা করত সারাদিন, ওর উচ্ছলতা, দূরন্তপনা আর মিষ্টি হাসির আমেজে ভরে থাকত আমার স্বর্গসম নীড়।
আমার অনুপস্থিতিতে রিমির মা-ই ওকে বুকের মাঝে আগলে রেখেছে। রিমির মা চলে গেলে আমার চেয়ে বেশী কষ্ট হবে ওর। ওর অবুঝ চোখ দুটো খুঁজে বেড়াবে অনেক দিনের চেনা কোলটাকে! কিন্তু শুধু নিজের কথা ভাবলে তো আর চলবে না, আমিই বা এত স্বার্থ্পর হই কেমন করে ??…কি করি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

বিদায় বেলায় রিমির মা অনেক কেঁদেছিল। সে কান্নায় কোন শব্দ ছিল না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ওখানে অসহায়ত্ব চিরস্থায়ীভাবে বাসা বেধেছে। অনিশ্চয়তার এক আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর মুখ ফুটে। যে মানুষ বারবার ধোকা খেয়েছে সে জেনে বুঝে আরেকবার ধোকার জালে তখনই পা ফেলে যখন কোথাও না কোথাও তার বাধ্যবাধকতা থাকে।

রিমি ওর দূর্বলতা। ও বড় হয়েছে। তার ভবিষ্যত চিন্তা করে রিমির মা আবার ফিরে যাবে শ্বশুরবাড়ি। পরে কি হবে, আদৌ তার মেয়েটার পিতৃ-ঠিকানায় আশ্রয় দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা এগুলো ভাবার অবসর নাই। ওদের জীবনটা কূলহীন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া নৌকাটার মত। ঝড়, ঝঞ্জা, বাতাস, জোয়ার-ভাটায় কখনও নাও টলমান তো আবার কখনো মৃদু গতিতে চলমান। রাত হলে দিনের অপেক্ষা…দিন এলে রাতের আয়োজন। অনেক কিছু না-পাওয়া জীবনেও ওদের সীমাহীন স্বপ্নই একমাত্র সম্বল।

যুক্তি বা বাস্তবতার পেশীবহুল হাতটা ওদের স্বপ্নের সাথে পাঞ্জা লড়ে হার মানে বারবার। বিত্তবান আর বিত্তহীনদের স্বপ্নের মাঝে একটা বিশাল তফাৎ হল বিত্তবানদের স্বপ্নগুলো ওদের ঘুম কেড়ে নেয়… আর বিত্তহীনরা স্বপ্নই দেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর। রিমির মায়ের চোখে মুখে এরকম এক স্বপ্ন আমি দেখেছি অনেক বার। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সে অবিরাম ছুটে চলেছে…… ।

একদিন আফসোস করে বলেছিল, ” পোলা হইলে তো কথাই ছিল না ভাবী, মাইয়া।

লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

শিশুর মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সির প্রতিকার এবং চিকিৎসা

ডা.মারুফ রায়হান খান


সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে। এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।
২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।
৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।
৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।
৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।
৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।
৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।
৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

১. পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুটো ভাগের মধ্যে একটি ভাগ আক্রান্ত হয় এবং দেহের যেকোনো একপাশে খিঁচুনি হয়।
২. জেনারেলাইজড সিজার : এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুভাগই আক্রান্ত হয় এবং পুরো শরীরেই খিঁচুনি হয়।

পার্শিয়াল সিজার আবার ৩ ধরনের রয়েছে।

ক. সিম্পল পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় এবং খিঁচুনির পর রোগীর জ্ঞান ঠিক থাকে।
খ. কমপ্লেক্স পার্শিয়াল সিজার : এক্ষেত্রে দেহের এক অংশে খিঁচুনি হয় কিন্তু রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
গ. পার্শিয়াল সিজার উইদ সেকেণ্ডারি জেনারালাইজেশান : খিঁচুনি দেহের যেকোনো একদিকে শুরু হয় এবং তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া
২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান
৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)
৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ
৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন
৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

১. প্রথমেই রোগীর মা-বাবাকে রোগের প্রকৃতি, কী কী বিষয় এ রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে, চিকিৎসা কী, নিয়মিত ওষুধ খাবার গুরুত্ব কী এবং এ রোগের আরোগ্যসম্ভাবনা কেমন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা হয়।
২. মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।
২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে।
৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি

ডা.মনির হোসেন


স্বচ্ছ জলধারা।অনাবিল আনন্দে জলপাথরের বিছানায় শুয়ে বসে গোসল আর হৈ-হুল্লোড়ে সময়ের হিসেব হারিয়ে ফেলার অবস্থা আমাদের। শুধু পা ভিজিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না এখানে আসা মানুষগুলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথরে ভরা বাথটাব বলেই মনে হবে।নীল আকাশ আর থরে থরে বিছানো পাথর। দূরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। এসব কিছুর মেলবন্ধনেই অপরূপ বিছানাকান্দি।হ্যাঁ, সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি। স্রোতধারায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন অন্য এক রাজ্য।

সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জলধারা আর পাথরের মায়াজালে যেখানে হারিয়ে যাবেন নিমিষেই। যেখানে মেঘ, পাহাড় আর জলধারার মিতালী আপনাকে আপন করবে গভীর মমতায়।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টবড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলার বন “রাতারগুল” সিলেটে অবস্থিত। সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন কি? পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার জঙ্গল। এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। বিশাল এ বনে রয়েছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। এ দৃশ্য আসলেই দূর্লভ!

শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দিবে।

 

নিভে যায় নক্ষত্রের আলো 

ফাতিমা শাহীন


দরজার যন্ত্র পাখিটি ডেকে উঠলো দুবার ৷ রিডিং রুমের কাউচে বসে একটি বইয়ে ডুবেছিলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত৷ ডোরবেল শুনে মুখ তুললাম,
থাক,
ঘরে তো লোকজন আরো আছে, খুলে দেবে দরজা কেউ না কেউ৷ আবারও ডুবলাম বইয়ের গহীনে ৷

‘আপা , পাও দুইটা একটু তুইল্লা বসেন , নিচটা ঝাড়ু দিয়া যাই …’

হুকুম মত পা তুলে বসলাম৷ তাকালাম রাহেলার দিকে, থমথমে মুখে রাজ্যের কালো মেঘ ভর করে আছে৷ চোখের কোনায় শুকিয়ে থাকা অশ্রুর দাগও কি চোখে পড়ল আমার!

‘দাঁড়াও রাহেলা!’ কি হয়েছে তোমার? শামসু বুঝি আবারও …..

আমার কথা শেষ হবার আগেই দৌড়ে এসে আমার নামিয়ে বসা পা দুটোর উপর যেন ভেঙ্গে পড়ল রাহেলা৷ একটু সহানুভুতির ছোঁয়া যেন ওর বুকের ভেতর জোর করে চেপে রাখা, ঝরনার মুখ খুলে দিয়েছে কেউ৷ জলপ্রপাতের বাঁধভাঙ্গা জলের মত অশ্রুর প্লাবন বয়ে চলেছে ওর চোখে৷

আস্তে করে শুধালাম ,

‘কি হয়েছে রাহেলা? খুলে তো বলবে আমায়, নইলে বুঝব কেমন করে?’

একটু শান্ত হয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলল,

‘আমার দুইন্যার দিন মনে হয় শ্যাষ গো আপা! কাইলও জরির বাপে আর ফুফায় ফুফু মিল্যা এমুন মাইর মারলো আমারে! আর কইছে, আমারে আর আমার ভাইরে জন্মের মতন শিক্ষা দিয়া দিব!’

বুঝলাম এতক্ষণে! রাহেলার একমাত্র ননদ-নন্দাই ওর ঘরের আশপাশে ঘর ভাড়া নিয়ে এসে উঠেছে ভাই আর মায়ের কাছাকাছি থাকবে বলে৷ আর এসেই শুরু করেছে ভাইয়ের সংসারের উপর খবরদারি৷ সুখের সংসার বলতে যা বোঝায় তা রাহেলার না থাকলেও এতদিন অন্তত নিজে উপার্জন করে খেত বলে স্বস্তিটা ছিল, এখন যেন সেটুকুর ওপরেও শকুনের নজর পড়েছে ! এখন শ্বাশুড়িও যোগ দিয়েছেন তার আদরের মেয়ের সঙ্গে৷ উদ্দেশ্য একটাই, যদি ফাঁকতালে রাহেলার ভাইয়ের কাছ থেকে নগদে কিছু আদায় করা যায়, তবে মন্দ কি!

ওদিকে রাহেলার ভাইয়ের অবস্থা আরো করুণ৷ নিজে করে লোহা লক্করের কারখানায় শ্রমিকের চাকরি, ওদিকে ঘরে রোগে ভোগা বুড়ো বাপ আর ৩/৪ টা অবুঝ বাচ্চার অনাহারক্লিষ্ট মুখ৷ সে ই বা বোনের শ্বশুরবাড়ির খামতি মেটায় কেমন করে!

রাহেলার কান্না আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো আমায়৷

‘ভাইরে কত কইছি, ভাইগো, আমারে এই জাহান্নাম থিকা ছাড়াইয়া লইয়া যাও৷ আমি তোমার ঘাড়ে বইয়া খামুনা, কাম কইরা নিজের ভাত নিজেই জোটামু৷ তাও তুমি আমারে এগো হাত থিকা বাচাও, নাইলে এরা আমারে জানেই মাইরা ফালাইবো৷’

অঝোরে কাঁদতে থাকে রাহেলা, আমারও চোখ দুটো বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।

প্রায় চার পাঁচ দিন হয়ে গেল


রাহেলার খবর নেই৷ ওকে অনেকবার করে বলা আছে , কোনকারনে আসতে না পারলে আমাকে অন্তত একটা খবর যেন পৌঁছায়৷ কখনো কখনো জরিকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে বটে, কিন্তু এখনকার মত এভাবে না জানিয়ে এতদিন ডুব দিয়ে কখনো তো থাকেনি রাহেলা!

বাজার এসেছে৷ কর্তা পাঁচমিশালী মাছের চচ্চরি পছন্দ করেন, তাই আজ নিজে বাজারে গিয়ে মনের সুখে কেজিখানেক পাঁচমিশালী গুঁড়া মাছ নিয়ে সহাস্যবদনে হাজির হয়েছেন৷ রাহেলা আসেনি আজ৷ কে কুটবে মাছ, কে বাছবে সবজি! সে চিন্তা তো আর কর্তাকে করতে হয়না! তিনি তো বাজার করে দিয়েই নিশ্চিন্ত আর সময়মত টেবিলেও হাজির!

গজ গজ করতে করতে ডালায় মাছ নিয়ে সবে কুটতে বসেছি, হঠাৎ বাইরে চাপা একটা গোলমাল শুনে কান সজাগ করলাম৷ শুনলাম অনেক নারী পুরুষের সম্মিলিত চাপা আতঙ্কভরা ফিসফাস! উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি দারোয়ান সিদ্দিক ভাইও ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে৷

‘কি হয়েছে সিদ্দিক ভাই? এত মানুষ কেন এখানে? ‘

‘আপা! সর্বনাশ হইছে! আমাগো রাহেলা …..’

আমার হৃদস্পন্দন যেন লহমায় বন্ধ হয়ে এলো৷ কি হয়েছে রাহেলার! দৌড়ে নিচে নামলাম৷ নিচে দাঁড়ানো শোকার্ত নারী পুরুষেরা হাউমাউ করে যা বলল, তাতে আমার ঝলমলে রোদ্দুরঘেরা সকালটাতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার অমাবস্যার রাত নেমে এলো৷ রাহেলা নেই! ওর পাষন্ড স্বামী আর লোভী, ঝগড়াটে আর হিংসুটে ননদ মিলে ওর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! ওর চিত্কার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে আগুন নিভিয়েছে বটে, কিন্তু ততক্ষণে শরীরের বেশিরভাগই শেষ হয়ে গেছে চিরতরে৷ হাসপাতালে নিতে নিতেই নিষ্ঠুর এই পৃথিবী ছেড়ে ওপারের দিকে যাত্রা শুরু করেছে রাহেলা!

আমি বজ্রাহত হয়ে বসে পড়লাম৷ আমার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো রাহেলার হাসি ভরা মুখের ছবি৷ কত যে সুখ দুখের কাহিনী উজাড় করে ঢেলেছে আমার কাছে! কখনো হাসিমুখে শুনতাম, কখনো মৃদু বকে আগে হাতের কাজ শেষ করতে তাড়া দিতাম৷ তাতে হয়ত তার মুখের প্রদীপ্ত সুর্যের উপর পাতলা সাদা মেঘ জমত ক্ষণকালের জন্য, পরক্ষনেই আবার সেই মেঘ সরে গিয়ে প্রখর রোদ্দুর খেলা করত শ্যামলা মুখখানিতে৷ আজ সেই রাহেলা নেই! চিরদিনের জন্য চলে গেছে অভিমানিনীর মত, কিভাবে বিশ্বাস করব আমি!

গলায় স্বর ফুট ছিলনা আমার, তবুও এক মহিলাকে জিজ্ঞাস করলাম,

‘ওর ভাই কোথায়? সে জানে তার বোনের খবর?’

‘হ আফা, অর ভাই আছাড়ি খাইয়া কানতাছে আর পুলিশের হাতে পায় ধরতাছে বইনের লাশের লাইগা, নিয়া মাডিডা য্যান দিতে পারে৷’

বোনের লাশ প্রার্থী অসহায় ওই যুবকটির জন্য করুণা হতে লাগলো আমার৷ তার দরিদ্র ঘরে ভাতের দাবিদার একজন বাড়বে বলে বোনের হাজারও আর্তি উপেক্ষা করেছে সে৷ বরং মানিয়ে গুনিয়ে স্বামীর সংসারকেই আপন করে নিতে কত বুঝিয়েছে বোনকে৷ আজ এসেছে বোনের লাশ নিয়ে যেতে! লাশের ভাতের দরকার হয়না, হাজারো চাহিদা মেটানোরও প্রয়োজন পড়েনা৷ বরং বোনটি লাশ হয়ে চিরকালের জন্য তার কাঙ্গাল ভাইটিকে দায়মুক্ত করে দিয়ে গেল!

চোখে আঁচলচাপা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ এক রাহেলার চলে যাওয়ায় পৃথিবী তো থেমে নেই৷ অনেক কাজ পড়ে আছে ঘরে৷ ঘড়ি ধরে সেসব তো শেষ করতে হবে আমাকেই!

 

‘ডায়রিয়ার জীবাণু’ থেকে শিশুদের বাঁচার উপায়

ডা. মারুফ রায়হান খান


পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে ডায়রিয়া। প্রতি বছর অনূর্ধ্ব -৫ বছরের শিশুদের ১০ ভাগই মারা যায় ডায়রিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বারবার পাতলা পায়খানা হওয়াই ডায়রিয়া।

কী হয় ডায়রিয়ার ফলে?

১. শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট) বেরিয়ে যায় পাতলা পায়খানার মাধ্যমে। এর ফলে রোগী পানিশূন্যতায় এবং রক্তে ইলেক্ট্রো- লাইটসের অসামঞ্জস্যতায় ভোগে।

২. পাতলা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক বেরিয়ে যায়। যা হলে রোগীর আরোগ্য দীর্ঘায়িত হয়, আর তা শিশুকে পরবর্তীতেও ভোগায়।

৩. ডায়রিয়াতে শিশুর ওজন কমে যায়। কারণ: খাওয়া কমে যায় – পুষ্টি উপাদান শোষণ হওয়া কমে যায়। – শরীরে পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়।

ডায়রিয়া কয় ধরনের?

৩ ধরনের। যথা :

১. একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া
২. পারসিসটেন্ট ডায়রিয়া
৩. ডিসেন্ট্রি।

এর প্রত্যেকটি নিয়েই আমরা সামনে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।

একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া

যখন ডায়রিয়া ১৪ দিনের কম স্থায়ী হয় তখন তাকে একিউট ডায়রিয়া বলে। এক্ষেত্রে রোগী প্রতিদিন অনেকবার (৩ বার বা তারও বেশি) পাতলা পায়খানা করে। – এক্ষেত্রে পায়খানায় রক্ত থাকে না। – কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাথে বমি এবং সামান্য জ্বর থাকতে পারে।

কোন কোন জীবাণু দিয়ে এটি হয়ে থাকে?

১. রোটা ভাইরাস
২. ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া)
৩. ই. কোলাই (ব্যাকটেরিয়া)

শিশুর ডায়রিয়া

পানিশূন্যতার প্রকারভেদ ও মারাত্নক পানিশূন্যতারর চিকিৎসা একটি ডায়রিয়ার রোগীর কী কী যাচাই করা হয়?

১. পাতলা পায়খানা কতোবার হয়েছে?
২. পাতলা পায়খানা কতোদিন ধরে হচ্ছে?
৩. পায়খানার সাথে কি রক্ত যায়?
৪. বমি হয়েছে কি?
৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কেমন?
৬. কী খাবার এবং পানীয় খেয়েছিল?
৭. সম্প্রতি কি এন্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খেয়েছিল?
৮. পরিবারে বা প্রতিবেশিদের মধ্যে কারও ডায়রিয়া বা ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু হয়েছে?
৯. চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন : – পানিশূন্যতার কোনো চিহ্ন আছে কিনা – পেট ফুলে গেছে কিনা – মারাত্নক অপুষ্টির কোনো চিহ্ন আছে কিনা।

পানিশূন্যতার চিহ্নগুলো কী কী?

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. নেতিয়ে পড়া/ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
২. চোখ খুব ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ৩. কোনো কিছু পান না করতে পারা অথবা পান করলেও খুব দুর্বলভাবে পান করা।
৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে তা খুবই ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া (২ সেকেণ্ড বা তারও বেশি সময়)।

. যদি নিচের ৪টি চিহ্নের মধ্যে শিশুর দুটো বা তার বেশি চিহ্ন উপস্থিত থাকে, তবে শিশুর “কিছু পানিশূন্যতা” দেখা দিয়েছে বলে জানতে হবে।
১. অস্থিরতা, অল্পতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া। ২. চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। ৩. খুব আগ্রহসহকারে যদি শিশু পান করে, যদি তৃষ্ণার্ত থাকে।৪. ত্বক টান দিয়ে ছেড়ে দিলে কিছুটা ধীরে ধীরে আগের জায়গায় ফিরে আসে।

. আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর “মারাত্নক পানিশূন্যতা” বা “কিছু পানিশূন্যতা”র ক্যাটাগোরিতে পড়ার পর্যাপ্ত চিহ্ন নেই তাদেরকে “পানিশূন্যতা নেই” ক্যাটাগোরিতে রাখা হয়।

একিউট ডায়রিয়ার চিকিৎসা 

ক. যাদের “মারাত্নক পানিশূন্যতা” আছে

১. শিরাপথে কলেরা স্যালাইন/ রিংগার’স ল্যাকটেট দেওয়া হয়। যদি না থাকে তবে ডেক্সট্রোজ ইন নরমাল স্যালাইন অথবা নরমাল স্যালাইন দেওয়া হয়।
২. স্যালাইন দরকার হয় : ১০০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট।
৩. শিশুর বয়স যদি ১২ মাসের কম হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম এক ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের ৫ ঘণ্টায় দেওয়া হয়। ৪. শিশুর বয়স যদি ১২ মাস বা তার বেশি হয় তাহলে ৩০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট প্রথম আধা ঘণ্টায় দেওয়া হয়। তারপর পরের ৭০ মিলিলিটার/কেজি বডি ওয়েট পরের আড়াই ঘণ্টায় দেওয়া হয়।
৫. স্যালাইন চলার সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

১৫-৩০ মিনিট পরপর শিশুকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যতোক্ষণ না পর্যন্ত শিশুর হাতে জোরালো রেডিয়াল পালস না পাওয়া যায়। – যখন হিসেব অনুযায়ী পুরো পরিমাণের স্যালাইন দেওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন শিশুকে
আবার যাচাই করতে হবে এবং
নিম্নোক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে :

*১. যদি তখনও “মারাত্নক পানিশূন্যতা” থাকে, তবে আবার “মারাত্নক পানিশূন্যতা”র চিকিৎসা পূর্ববর্ণিত উপায়ে দিতে হবে।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা” থাকে, তবে শিরাপথে স্যালাইন বন্ধ করে মুখে খাবার স্যালাইন দেওয়া হয় ৪ ঘণ্টার জন্যে।
*৩. যদি কোনো পানিশূন্যতা না থাকে, তবে মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।

খ. কিছু পানিশূন্যতা ও কিছু পানিশূন্যতা নেই

এমন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা, ডায়রিয়া পরবর্তী যত্ন যাদের “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন আছে তাদের চিকিৎসা :

১. মুখে খাবার স্যালাইন খেতে দেওয়া হয় হিসেব অনুযায়ী।
২. স্যালাইনের পরিমাণ : ৭৫ মিলিলিটার/ কেজি বডি ওয়েট।
৩. সময় : ৪ ঘণ্টা
৪. এ সময় বুকের দুধ ছাড়া বাকি সব খাবার বন্ধ রাখা হয়।

মনিটরিং

৪ ঘণ্টা পর শিশুকে পুনরায় যাচাই করা হয়।

তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় :

*১. যদি কোনো পানিশূন্যতার চিহ্ন না থাকে, মা-কে প্রতিবার শিশুর পাতলা পায়খানা হবার পর মুখে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে বলা হয়।
*২. যদি “কিছু পানিশূন্যতা”র চিহ্ন থাকে, তবে আবার ৪ ঘণ্টার জন্যে উপরোক্তভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
*৩. যদি “মারাত্নক পানিশূন্যতা” এর চিহ্ন থাকে, তবে শিরা পথে স্যালাইন দেওয়া হয়।

গ. যাদের পানিশূন্যতার চিহ্ন নেই তাদের ক্ষেত্রে

*১. এ চিকিৎসা শিশু বাসায় নিয়ে থাকে, তাই একে “হোম ট্রিটমেন্ট” বলা হয়।
*২. মুখে খাবার স্যালাইন, চিড়া পানি, ভাতের মাড়, লাচ্ছি ইত্যাদি খেতে বলা হয়।
*৩. প্রতিবার পাতলা পায়খানা হবার পর যদি শিশুর বয়স ২ বছরের কম হয় তাহলে ৫০-১০০ মিলিলিটার তরল খাবে। আর যদি শিশুর বয়স ২ বছর বা তার বেশি হয় তবে ১০০-২০০ মিলি তরল খাবে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ

আফরোজা হাসান


অফ ক্লাসে যে কোন এক ক্লাসে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে জ্ঞানার্জন করাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি!

ঘাপটি মেরে বসার জন্য সবসময়ই আমার ফাস্ট চয়েজ থাকে যুক্তিবিদ্যার ক্লাসগুলো!

একদিন যুক্তিবিদ্যার ক্লাসে প্রফ প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তিবিদগণ কাদের কাছ থেকে অতি উন্নত মানের যুক্তির টিউশন নিতে পারে বলো তো?

ক্লাসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলেও আমি অনেকটা অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, শিশুদের কাছ থেকে।

প্রফ বিকট শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, একদম ঠিক বলেছো! আমি বই পড়ে যতটা না যুক্তি শিখেছি তারচেয়ে বেশি শিখেছি আমার তিন ছেলে আর দুই মেয়ের কাছ থেকে! প্রফের সাথে সুর মিলিয়ে বললাম, আমিও পড়াশোনা না করেই যুক্তিবিদ্যার উপর বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে ফেলেছি আমাদের পরিবারের বিচ্ছুকূল আর আমার শিষ্যকূলদের কারণেই!

শিশুদের সাথে যারা নিয়মিত কথা বলেন, তারা সবাই এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে, নিজের কর্মের পেছনে যুক্তি প্রদর্শনে শিশুদের কোন তুলনা চলে না! তারা এমন সব অকাট্য যুক্তি দেয় যে বাবা-মাকে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হতে হয়!

ঠিক তেমনি এটাও ঠিক শিশুদেরকে কোন কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োগ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরি ও ফলপ্রসূ হয়! যেহেতু শিশুরা নিজেরা ওদের কাছে পেছনে যুক্তি দেখায়! সেহেতু কোন কাজের পেছনে ওদেরকেও যুক্তি দেখাতে পারলে বেশ সহজেই মেনে নেয়! আমার পুত্রকে যেমন কোন কিছু করতে বলার সাথে সাথে প্রশ্ন করে, কেন করবো? যদি কারণটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি অপছন্দনীয় বা একটু কষ্টকর হলেও যে হেলে দুলে কাজটা করে বা অন্তত চেষ্টা করে!

বাংলা লেখা ও পড়া শিখতে নাকীব ছোটবেলা থেকেই নারাজ। আমিও খুব একটা প্রেশার দেইনি যেহেতু তার যুক্তি ছিল সে তো বাংলাদেশে থাকে না, মাঝে মাঝে শুধু বেড়াতে যাবে! সেজন্য বাংলা কথা বলতে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ইসহাক খান ভাইয়ার অফিস থেকে আমার বই বাসায় নিয়ে আসা হলো। নাকীব লাফাতে লাফাতে গিয়ে সবার আগে বই হাতে নিলো। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার পর যখন কিছুই বুঝতে পারলো না খুবই ব্যথিত হলো! এরপর যখন শুনলো যে আমি বইতে তার কথাই লিখেছি! সে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিল জানার জন্য। কিন্তু যেহেতু বাংলা পড়তে পারে না তাই কি লেখা আছে বুঝতে পারলো না কিছুই।

কাঁটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবার জন্য আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম, কত শখ করে আমি তোমার কথা লিখেছি বাবাসোনা! কিন্তু তুমি কিছুই পড়তে পারবে না! সাথে সাথে নাকীব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাংলা শেখার! এখন তো আমি সময়ের অভাবে ফাঁকি দিতে চাইলেও সে খোঁচাতে থাকে বাংলা শেখার জন্য।

যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন,

তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য?

তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য?

তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য?

খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য?

ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য?

প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য?

এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন?

আমার কেন ডানা নেই?

দাদুর কেন দাঁত নেই?

বাবা কেন রোজ অফিসে যায়?

ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না?

আচ্ছা দিদার চামড়াকে আয়রণ করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

ব্লগে শিশুদের মনোজগত ভ্রমণকারী দু’চার জনই পাবো জানি! তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, চলুন কয়েকটা দিনের জন্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াই সেই জগতে…! একসময় আমরাও যার বাসিন্দা ছিলাম! দুনিয়ার নানান ম্লানতায় আমাদের যে মনোজগতের ব্যাপ্তি আজ বড় বেশি সংকীর্ণ! প্রায় নিভু নিভু যার আলো……।

মনোবিজ্ঞান

 

‘চার ধরনের মানুষ আছে’

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


(১) আত্মস্বার্থবাদী

যারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ-উদ্দেশ্যের বাইরে কোনো কিছুকে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। এদের মধ্যে যারা স্বীয় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনো কিছু করতে পারে তাদেরকে আমরা সুবিধাবাদী বলি। আর যারা নিজের সুযোগ-সুবিধা চাইলেও অবৈধ ও অন্যায় পথে অগ্রসর হতে চায় না তাদেরকে আমরা নিরীহ নাগরিক হিসাবে সম্মান করি। তারা হলেন সাধারণ পর্যায়ের ভাল মানুষ।

(২) আদর্শবাদী

কিছু লোক আছে যারা কোনো না কোনো আদর্শের সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করে। তারা নিজেদের আদর্শগত ভাল-মন্দের মাপকাঠি অনুসারে নিজেরা কোনোমতে চলে বটে। কিন্তু বাদবাকীদের ব্যাপারে, বিশেষ করে বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের নানা রকমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরা উচ্চকণ্ঠ। আশেপাশে কার কার কী কী ভুল আছে তা তারা সোৎসাহে বলে বেড়াবে। এরা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসাবে উপস্থাপন করে। দেখবেন, আদর্শের মেশিগান হাতে ব্রাশ ফায়ার করার জন্য এরা সদা সর্বদা প্রস্তুত।

(৩) নেতৃত্বপ্রিয়

কিছু লোক আছে যারা সব সময়ে গণ মনোভাবের সাথে থাকে। পাবলিক যা বলে তারাও তা বলে। এতে করে তারা সামাজিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব অর্জন করে। ভাল-মন্দের ব্যাপারে এদের নিজস্ব বিবেচনাবোধ খুব দুর্বল। দৃশ্যত জনসেবায় নিয়োজিত হলেও আসলে একটা পক্ষ নিয়ে লিডারশীপ হাসিল করাই এদের লক্ষ্য।

(৪) সমাজকর্মী

এরা গণ চরিত্রসম্পন্ন। নিজের স্বার্থের চেয়ে এরা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার কথা বেশি ভাবে। আদর্শকে চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তারা মানুষের মধ্যে গ্র্যাজুয়েল প্রসেসে সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী। তাই, মানুষের মন জয় করাকে তারা অগ্রাধিকার দেয়। এই ধরনের লোকেরা নেতৃত্বপ্রিয়দের মতো আপোষকামীও হয় না, আদর্শবাদীদের মতো নির্দয় সমালোচকও হয় না। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের কাছে যায়। মানুষ তাদের কাছে হেদায়েতের জন্য আসবে, তখন তারা হক্ব কথাটা বলবে, মানুষ তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাবে তখন তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, এজন্য তারা অপেক্ষা করে না।
আমি চতুর্থ ক্যাটাগরিতে নিজেকে দেখতে চাই।
আপনি?

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

জলে ভাসা পদ্ম

ফাতিমা মারিয়ম


আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ার সময় আমার মা মারা যায়। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মা’র খুব জটিল একটা রোগ হয়েছিল। ধরা পড়ার প্রায় দেড় বছর বেঁচে ছিলেন। ডাক্তাররা আমার মায়ের রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল। কোন চিকিৎসাই মাকে সারিয়ে তুলতে পারছিল না! দিনদিন মা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

আমাদের ছোট্ট সংসার……সুখের একটি রাজ্য। আমি মা আর বাবা। সব কিছুই কেমন যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। আমি আর বাবা ভীষণ একা হয়ে পড়লাম।

মা মারা যাওয়ার তিন মাস পর নানা-নানু, মামা-খালা, চাচা-ফুফুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবা আর আমার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য আমার একজন ‘আম্মু’ নিয়ে আসল। খালামণি, নানু ও ফুফুরা সবাই মিলে নতুন মাকে ‘আম্মু’ বলে ডাকতে শেখাল। আমি তাই প্রথম থেকেই উনাকে আম্মু বলে ডাকি।

ধীরে ধীরে বাবা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। ছুটির দিনে আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে যায়। হঠাৎ কোন একদিন আমাকে এসে বলে, নিশু চল আমরা আজ বাইরে কোথাও খেতে যাব। কোথায় যাওয়া যায় বল তো?’ আমরা তিনজনে মিলে প্ল্যান করে কোথাও যাই। বাইরে অনেকক্ষণ থেকে বাসায় আসি। আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলাম।

কিন্তু আমার জন্য এই দিনগুলিও বেশিদিন রইল না।

দিন দিন আমার আম্মু যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে! আমি মনে করতাম আমার সাথে উনার সম্পর্ক বেশ ভালো। আমি মনে প্রাণে উনাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। ভাবতাম উনিও আমাকে সেইভাবেই গ্রহণ করেছেন।

ধীরে ধীরে উনি আমার প্রতি কেমন যেন অনীহা প্রকাশ করা শুরু করলেন। আমি বুঝতাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতাম না। কারণ আমি ভাবতাম আমি নিজেই হয়ত ভুল বুঝছি।

প্রায়ই আমি স্কুলে যাবার সময় টিফিন পেতাম না! বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্কুলে যেতাম। স্কুলের ক্যান্টিনে টিফিন কিনে খেতাম। বাসায় ফেরার পরও দেখতাম যে আমার জন্য কোন খাবার নেই।

দুপুরে বাসায় আম্মু আর আমি থাকি। বাবা সকালে নাস্তা খেয়ে অফিসে যায় আর ফেরে রাতে। তাই দুপুরে কি হয় না হয় তিনি জানেন না।

এ ঘটনা কয়েক দিন ঘটার পর আমি বাবাকে জানাই। বাবা কোন পদক্ষেপ নেয় না! তাই আমার প্রতি আম্মুর অবহেলা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে।

এমন দিনও আমার যেত দুপুরবেলা বাসায় ফিরে যখন দেখতাম যে টেবিলে বা ফ্রিজে কোন খাবার নেই তখন পট থেকে মুড়ি নিয়ে শুকনো মুড়ি বা বিস্কিট খেয়ে দিন পার করেছি। রাতে বাবার সাথে বসে যখন ভাত খেতাম তখন আমি বাবাকে বুঝতেই দিতাম না যে আমি দুপুরে ভাত খাইনি।

আম্মুকে খুশি রাখার জন্য আমার বাবার আচরণেও দিন দিন পরিবর্তন আসছিলো। প্রায়ই দেখি আমাকে ছাড়া আম্মু আর বাবা বাইরে ঘুরতে যায়। তারা বাইরে গেলে আমি মন খারাপ করে থাকি। একা একা আমকে বাসায় রেখে যেতে কি আমার বাবার একটুও খারাপ লাগেনা?

বাবার প্রতি ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আমার প্রতি বাবা এতটা উদাসী হয়ে গেল কিভাবে? আমিতো বাবার একমাত্র মেয়ে! এভাবে আরও কয়েক মাস কেটে গেল।

আমার বয়স কম। কতটুকুই বা সহ্য করতে পারি!! ফুফুকে সব জানালাম। ফুফু বাবার কাছে জানতে চাইলেন এসব হয় যে তুই কোন পদক্ষেপ নিস না কেন? বাবা ফুফুকে জানালো যে মিতা (আম্মুর নাম) ভীষণ খামখেয়ালী টাইপের! তাই ওকে বেশি কিছু বলি না!

ফুফু আমাকে উনার বাসায় নিয়ে আসল। ফুফুর বাসা থেকে স্কুল অনেক দূরে। বাসে করে আসা যাওয়া করতে হয়! ফুফু এবং আমাদের সবার ধারনা ছিল কিছু দিন গেলে বাবা এবং আম্মু এসে আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল বাবা আমাকে নিতে আসেনি।

দেড় দুই মাস পর পর আসে! খুব অল্প সময় থাকে। কিছু টাকা হাতে দিয়ে যায় (স্কুল ও কোচিং এর খরচ)। আমি বাসায় যেতে চাই কি না তাও কখনো জানতে চায় না! দেখে মনে হয় বাবা এখন বেশ সুখেই আছে। ফুফু আমাকে সব সময় বলেন-‘তুই নিজ থেকে কখনো যাওয়ার কথা বলবি না। আমরা দেখি তোর বাবা কি বলে?’ কিন্তু ফুফু জানে না, কেউ জানে না আমি সব সময় মনে মনে একটি আহ্বানের অপেক্ষায় থাকি! আমার বাবা একদিন আমাকে এসে বলবে-‘আয় খুকু আয়…!’

অনলাইন এক্টিভিস্ট

 

বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে লেখাটা গত পরশু শেয়ার করেছি সেটির ফরোয়ার্ডিং হিসাবে দেয়া সংক্ষিপ্ত মন্তব্যগুলো ছিল বেশ কড়া। সুখের বিষয় হলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীসহ ইতোমধ্যে ২৬২ জন এটি লাইক করেছে। তন্মধ্যে ৩২জন এটি শেয়ারও করেছে। এই সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন। এটি খুব ভালো লক্ষণ।

আশা করি এক দশকের মধ্যে বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সাদামাটা বিয়ে অনুষ্ঠানের সামাজিক রীতি এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্ততপক্ষে অন্যতম ডমিন্যান্ট সোশ্যাল ট্রেন্ড হিসাবে এটি উঠে আসবে বলে আমার ধারণা।

একটা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষমতা, অর্থ ও বস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নিবারণের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে আপনি জরুরীভিত্তিতে যে কোনো প্রকারে মোকাবিলা করবেন। সম্ভাব্য কম ক্ষতিকে মেনে নিয়ে আমিও বৃহত্তর লক্ষ্যকে অর্জন করার চেষ্টা করবো।

প্রয়োজনে নানা ধরনের আপতকালীন ব্যবস্থা বা compatibility mood এডপ্ট করাতে সমস্যা নাই। সমস্যা হলো, জরুরীভাবে অগত্যা পরিস্থিতিতে গৃহীত সাময়িক ব্যবস্থাকে যখন কোনো সমাজ স্থায়ী ও স্বাভাবিক পন্থা হিসাবে গ্রহণ করে।

এ ধরনের নাজুক বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে কথা বলাই ভালো। দুপুরে খাওয়ার সময়ে ভাত-তরকারী দিয়ে পেটপুরে নরমাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা না হলে কেউ চা-মুড়ি খেয়ে কোনো মতে খিদা মিটাতে ও সময় কাটাতে পারে। তাই বলে কেউ যদি ক্ষুধা পেটে ভাত না খেয়ে হামিশখন চিপস আর চনাচুর খেতে থাকে, তখন সেটা নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি ও সমাজের গুরুতর সমস্যা।

একটা সমাজে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা থাকাটা সমস্যা নয়, সমস্যাকে স্বীকার না করাটাই হলো এক নম্বরের গুরুতর সমস্যা। দেরীতে বিয়ে সব দিক থেকে বিরাট সমস্যা। তা অধিকতর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে উপযুক্ত সময়ে ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করতে পারে না। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো দেরীতে বিয়ের এই ‘কালা জ্বর’ আরো প্রলম্বিত হয় বিয়েতে বাহুল্য ব্যয়ের কারণে।

যে যাই মনে করেন না কেন, আমার কাছে ব্যাপারটা সিম্পল। প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জন নর-নারী মিলিত হবে। পরষ্পর হতে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করবে। একজন আরেকজনকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিবে। একই সাথে এই ‘বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের’ দায়-দায়িত্বও তারা বহন করবে। এরই নাম বিয়ে। সামাজিক স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সাধারণ অবগতিই হলো বিয়ের শর্ত।

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যা অর্জিত হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠানে শ্রেফ ৭জন লোক থাকাই যথেষ্ট। একজন কাজী, দু’জন অভিভাবক, দু’জন সাক্ষী এবং বর ও কনে। কেন বিয়েতে ৫-৭টা অনুষ্ঠান করতে হবে, কেন দফায় দফায় কয়েক শ’-হাজার লোক খাওয়াতে হবে, কেন সামর্থকে ছাড়িয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হবে, তা আমার বুঝে আসে না। অনাবশ্যক এই সব সামাজিকতা কি কাউকে বেহেশতে নিবে? না করলে কি কেউ দোজখে যাবে? যারা এ’সব ফালতু আনুষ্ঠানিকতা করে নাই তারা কি সমাজচ্যূত হয়েছে?

আমি কোনো দিনই কোনো উপলক্ষ্যে এমন কি ৫০ জন লোককেও কখনো দাওয়াত করে খাওয়াই নাই। তাতে কী হয়েছে? আমি কি কম সামাজিক? দীর্ঘদিন আমি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতাম না। সংশ্লিষ্ট সবাই জানতো, বিয়ের বাহুল্য খরচকে অপছন্দ করার কারণে আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই না।

২০০৯ সালে আম্মা মারা যাওয়ার পরে গ্রামে যাওয়া শুরু করি। আত্মীয় স্বজনদেরকে চেনার জন্য এরপর থেকে বিয়েশাদির অনুষ্ঠানেও নিয়মিতভাবে যাই। অবশ্য গিয়ে যা দেখি তাতে করে ফিরে আসার পরে ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট অনুশোচনাতে ভুগি।

১৯৯৪ সালের জানুয়ারীতে আমার বিয়ের সময়ে যদি আমাদের পক্ষ থেকে দাবী করা হতো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যাণ্ডেল টানিয়ে দশ হাজার মানুষকে ‘বৈরাত’ খাওয়াতে হবে, তাহলে আমার শ্বশুর তা-ই করতেন। তখনকার সময়ে পাত্র হিসাবে আমার ততটা ‘বাজার-মূল্য’ ছিলো।

সংশ্লিষ্টরা জানে, আমার শ্বশুর মাদারীপুর শহরে তখনকার সময়ে ছিলেন যথেষ্ট বিত্তশালী। নিজের অনাড়ম্বর বিয়ের উদাহরণ টানলাম এ জন্য যে, বিয়েতে বাহুল্য খরচ রোধ করার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক পজিশনে থাকে স্বয়ং পাত্র ও পাত্রী। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে পাত্রীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার সংসারে শ্বশুড়বাড়ি হতে ‘উপহার’ হিসাবে পাওয়া কিছুই নাই।

কথা আর বেশি না বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আছে কি এমন কোনো সাহসী নারী যে বলবে, “নিজের বিয়েতে আমি এ ধরনের অতিসামাজিকতা ও বাহুল্য ব্যয়কে যথাসাধ্য রোধ করবো”? আছে কি এমন সৎ পুরুষ যে বলবে, “প্রকাশ্য বা গোপন কোনো ধরনের যৌতুক নেয়া ও বাহুল্য ব্যয় ছাড়াই আমি বিয়ে করবো”? এমন কঠিন ওয়াদা করতে তোমরা যারা অনাগ্রহী তারা সারাজীবন আদর্শ-আদর্শ খেলতে পারো, নীতি-নৈতিকতার কথা বলে মানসিক সান্তনা পেতে পারো, আন্দোলন-আন্দোলন জপতে পারো, বাস্তবতা হচ্ছে you are a worthless defender of stagnant status-co. Actually, you are one of them, against whom you are claiming to fight.

সাহসীদের বলছি, জেনে রাখো, এমন ধরনের আদর্শবাদীদের দিয়েই একটা সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব যারা নিজেরা আদর্শের দাবীকে অন্তত নিজেদের ব্যক্তি জীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করে অন্যদের জন্য নিজেদেরকে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। লম্বা লম্বা কথা বলা বকোয়াজদের সাথে আমি নাই। বিয়ে হোক বাহুল্য ব্যয় বর্জিত সহজতর স্বাভাবিক সম্পর্কের ব্যাপার।

গোপন ও দায়দায়িত্বহীন সম্পর্ক যেমন অন্যায় ও প্রান্তিকতা, অনর্থক এত ঢাকঢোল পিটানো ব্যয়বহুল এসব বিয়ে অনুষ্ঠানও সম-পরিমাণের অন্যায় ও প্রান্তিকতা। এই দুষ্টচক্র হতে সমাজটাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য সমাজকর্মীদের হতে হবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।

সহযোগী অধ্যাপক,
দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

তোমরা যারা ‘সংবাদ পাঠক’ হতে চাও

ডা. সাকলায়েন রাসেল


সবচেয়ে বেশি যে ম্যাসেজটি আসে…ভাই, সংবাদ পাঠক হতে চাই। একটু সাহায্য করবেন, প্লিজ। আজকের লেখা তাঁদেরই জন্যে।

এ পেশায় এসো না যদি
—————————
১। নিউজ পড়লে মানুষ বাহবা দিবে…অনেকে সমীহ করবে…আমি একটু ভাব নিয়ে চলতে পারব…মনে যদি এমন ভাবনা থাকে।
২। আমি নিউজ পড়ি এটা দেখিয়ে…আমার পেশায় স্বার্থ হাসিল করতে পারব!

সংবাদ পাঠক সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা
———————————————-
১। এ পেশায় চেহারা খুব ভাল লাগে…মোটেও না…স্ক্রিনে মোটামুটি ভাল দেখা গেলেই হল।
২। শুধুমাত্র তকদ্বীর করেই সংবাদ পাঠক হওয়া যায়…
না, কারণ এটা এমন এক পেশা যেখানে তোমার যোগ্যতা প্রথম দিন থেকেই স্ক্রিনে দেখা যায়…তকদ্বীর তোমার বাড়তি যোগ্যতা হতে পারে, মূল যোগ্যতা না।
৩। সংবাদ পাঠ করে অনেক টাকা পাওয়া যায়…
না, চ্যানেলগুলোতে যে সম্মানী দেয়া হয় তাতে খুব কম সময়ে সংবাদ পাঠক সম্মানিত বোধ করেন।

সংবাদ পাঠে যোগ্যতা
————————–
১। শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারা।
২। সংবাদ পরিবেশন সুন্দর হওয়া।
৩। ক্যামেরা বান্ধব চেহারা বা স্ক্রিনে সুন্দর দেখায় এমন চেহারা।
৪। সংবাদ মনোস্ক মানসিকতা থাকা।
৫। কমপক্ষে গ্রাজুয়েশন থাকা…অনেক চ্যানেলে এটা শিথিলযোগ্য।

কিভাবে শুরু করবে
———————–
১। যে কোন জায়গা থেকে শর্ট কোর্স করে নিতে পার।
২। ভাল দুটো ফটো তুলে নিও… Side and Front View… প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হলে ভাল।
৩। এবার সিভি তৈরী কর… সিভি হবে সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষনীয়।
৪। কোথায় ট্রেনিং করেছ সেটা বড় কথা নয়… অডিশনে তোমার পারফর্মেন্স গুরুত্বপূর্ণ।
৫। এবার সিভিটা সব টিভি ষ্টেশনে জমা দাও… রেডিও বাদ দিও না আবার…কারণ রেডিও এখন খুব ভাল একটা সংবাদ মাধ্যম… বছরে প্রতিদিনই এসব সিভি জমা নেয়া হয়… সময়মত অডিশনে ডাকা হয়।

অডিশন প্রস্তুতি
——————
১। যে চ্যানেলে যাবে… সে চ্যানেলের পোশাক আশাক আগে থেকেই দেখে নিও… সে রকম পোশাক পরেই অডিশনে যেও… প্লিজ, যেমন খুশী তেমন সেজো না।
২। অডিশনের আগের দিন ঐ চ্যানেলের সব বুলেটিন দেখবে…সেদিনের বা সেদিনের আগের দিনের বুলেটিন সাধারণত পড়তে দেয়া হয়।
৩। আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে হুট করে অডিশন দিবে না…এতে তুমি হতাশ হয়ে যেতে পার।
৪। অডিশনে ভয় থাকবেই…তারপরেও কনফিডেন্স হারাবে না।
৫। প্রতিদিন পত্রিকার খেলার পাতা পড়বে… খেলোয়াড়দের নামগুলো খুব কঠিন হয়… বিশেষ করে টেনিস… সবসময় অডিশনে খেলার অংশটা কঠিন হয়ে থাকে।
৬। সংবাদের মেরিট অনুযায়ী মুড চেঞ্জ করবে…মনে রাখবে, বাংলা শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারা… আর সংবাদপাঠক হওয়া এক কথা নয় ।

আচ্ছা, আমি কি পারব
—————————
আমার চেহারা তো তেমন ভাল না… কন্ঠটাও না… তকদ্বীর করারও কেউ নেই… আমি কি পারব সংবাদপাঠক হতে…এমন প্রশ্ন থাকে অনেকের মনে…যারা নিজেকে নিয়ে শংকায় থাকে তাঁরা আসলে কোন কিছুই পারে না… তুমি, যদি মনে প্রাণে চাও…ধৈর্য ধরতে পার… তবে, অবশ্যই তুমি পারবে…তোমার চাওয়ায় তুমি কতটুকু সৎ… কতটুকু আন্তরিক সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
দুটো কারণে এবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি… প্রথমত, নিজের মধ্যে মাস্টারি ভাব আনতে লেখায় ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করার জন্য… দ্বিতীয়ত, সংবাদ পাঠে মাত্র ৬ বছরের শিশু হওয়ার পরও এসব জ্ঞান দেয়ার সাহস দেখানোর জন্য… আশা করি, আমার প্রিয় সংবাদ পাঠকরা আমাকে ইঁচড়ে পাকা ভাববেন না!
—————————
সবার সফলতা কামনায়—
সাকলায়েন রাসেল

সিনিয়র সংবাদ পাঠক, মাইটিভি
সেক্রেটারী, সমাজকল্যাণ, নিউজ ব্রডকাস্টারস` এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছেন কি?(দাম্পত্য টিপস)

ফাতেমা শাহরিন


বিয়ে মানে অনেক স্বপ্ন, ইচ্ছা, আশা সবকিছুতে বেশি বেশি ভাললাগা টাইপ আমাদের ধ্যানধারণায়। রাইট কিংবা রং কিছু বলছি না। ভাবনা ত ভাবনা। আসলে এমন অনুভূতিকে আমরা ‘বিয়ে’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি না আদৌ। ‘বিয়ে’ মানে বিশাল কিছু। বলা যায়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বা পরিবার গঠন। দুইজন মানুষের সঙ্গে, সঙ্গে দুইটি পরিবার, সব আত্মীয়তার বন্ধন। বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। একটি নতুন পরিবার। একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের অংশ।

আসুন দেখি, বৈবাহিক জীবনের জন্য সুন্দর বাধন গড়তে কি কি প্রস্তুতি আছে আজকের আর্টিকেলে। দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দরকার একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্বাস। আর ছেলে ও মেয়ে উভয়ের আবেগকে সমান দৃষ্টিকোণে গুরুত্ব দেওয়া।

দাম্পত্য টিপস

প্রশংসা
বিবাহিত সম্পর্ক সুন্দর রাখতে চাইলে ধরে রাখুন সবসময় কৃতজ্ঞতা ও মুগ্ধতাময় প্রশংসামুলক বানী। সঙ্গীকে ধন্যবাদ দিন ছোট খাট কাজেও। সামান্য পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মুছকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিন। ধন্যবাদের গুরুত্ব অনেক। প্রশংসা পেলে মুহূর্তেই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। প্রশংসাকারীর জন্য ভালো কিছু করতে ইচ্ছা করে।

দুঃখ প্রকাশ
কোন কারণে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে বা কেউ আঘাত হলে কথা, কাজ, বা আচরণে নিজ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা এবং সরি বলা। কোন কারণে বাইরের কার সামনে ধমক দেয়া একে অন্যকে অসম্মান করা ঠিক না। কাউকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উচ্ছ্বসিত আবেগ
সঙ্গীর ছোটখাট উচ্ছ্বসিত আবেগকে মূল্যায়িত করুন। ছোট ছোট কাজে এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী তা পূরণ করুন অল্প হলেও অভিমানকে প্রকাশ করতে দিন। একে অপরের প্রতি প্রশংসা, মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতাই কিন্তু সব সময় সম্পর্কে সুন্দর করে।

উপহার
পারস্পরিক কথাবার্তা আর ‘সময়’ হল সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা অল্প দামী ব্যক্তির পছন্দের জিনিস মাঝেমধ্যে পাওয়ার অধিকার রাখে সঙ্গীরা। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

সুন্দর ব্যবহার
সুন্দর বিনয়ের সাথে কথা এবং আচরণ করলেও সঙ্গীরা খুশি হন সবচেয়ে বেশি।ভাল কিছুর জন্য যদি আমরা সুন্দর আচরণ করি তবে সেই ভাল কাজটা তার কাছ থেকে বারে বারে ফিরে বসবে ।

ভরসা ও বিশ্বাস
কখনো সন্দেহ নয় বরং ভরসা এবং বিশ্বাসের সাথে সংশয় দূর করুন। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে তাই কোন বিষয়ে সন্দেহ কাজ করলে দুজনে বসে খোলামেলা আলোচনা করা ভরসা করা।জীবনসঙ্গী আপনার মত মানুষ খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। তাই বিশ্বাস আর ভালবাসাকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলুন।

ক্ষুদ্র আবেগকে গুরুত্ব
ভালোবাসার প্রকাশ থাকাটা খুবই প্রয়োজন। তাই কার অভিমান, আবদার, রাগ, ভাল লাগা, ভালবাসার ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্য দেওয়া এবং শ্রদ্ধা করা উচিত। পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা কথাবার্তাকে গোণায় ধরা এবং সন্মান দেয়া। সালাম দিয়ে, উত্তর দেওয়া। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু বলছে আপনি ব্যস্ত হলে পরে বিশেষভাবে সময় নিয়ে কথাটি শুনুন।

ক্ষমা করা
ক্ষমা হল সংসার জীবনে ভালোবাসাকে প্রাণবন্ত করে রাখবার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ঠিক যেমন সুঘ্রাণময় ফুলকে আপনি পানি দিয়ে আরো বেশি জীবন্ত করে রাখেন। দু’জন দু’জনকে জেনে-বুঝে তবেই তো সঙ্গী করা। দুজনে মানুষ। তাই ভুল ভাবনা, ভুল আচরণ, ভুল কোন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করে দেওয়া দুইটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জন্য তার সবটুকু নিয়ে সংসার বাঁধা। ঘরে বাইরে যত রকম অভিজ্ঞতা হোক, হৃদয়ের প্রিয়তম কুঠুরিটা আপনার জন্যই তিনি বরাদ্দ রেখেছেন। তাই ক্ষমা করুন। ক্ষমা চান।

অভিমানটুকু যত্ন করে তুলে রেখে বাসুন সঙ্গীকে ভালো। ভালোবাসা আপনাকে বড় করে দিবে। ভালোবাসা তার কাছে আপনার ওজন বহুগুন বাড়িয়ে দিবে।ভালোবেসে, আপনারা নিজেদের কাছে সম্মানিত এবং আরো প্রিয় পাত্র হয়ে উঠুন।
আপনিই পারেন ভালোবাসা পাওয়ার একটি পথ তৈরি করতে… তাই আজকে থেকে ভাল থাকুন।
রেফারেন্স: বই-সুখী ও সুন্দর জীবন।

সাইকোলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা
মূল বইটির ইংরেজি নাম:
Raising A Muslim Child
লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশনাঃ সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড
সম্পাদনাঃ আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
মোট পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬

বইটির বিষয়বস্তু:
═════════
সন্তান প্রতিপালন ও পরিচর্যা
সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা নিয়ে বাবা-মা, পরিবারের সকলের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের শেষ নেই।বর্তমানে প্যারেন্টিং বিষয় বেশ জনপ্রিয় হতে চলেছে,কিন্তু সঠিক লক্ষ্যে পানে সে প্রচেষ্ঠা প্রবাহিত হচ্ছে কি না, তাই যাচাই করে দেখব, লেখকের দলীল,যুক্তির কষ্টি পাথরে। সন্তানের পরিচর্যায় বইটি সকলের জন্য হতে পারে মাইলস্টোন।

বইটির বিষয়বিন্যাস:
══════════
বইটিতে “সম্পাদেকর কথা”, “দু’টি কথা” শিরোনামে দু’টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়,মৌলিক বটে। প্রথম পর্বে ভূমিকার সাথে, এদু’টি বিষয় ফোকাস করা হবে।
সম্পূর্ন নতুন আঙ্গিকে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন লেখক,

যা আপনাকে সমৃদ্ধ করবে।

যথা-
১. আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে?
২.কার সাথে কেমন হবে সম্পর্কগুল
৩.অফুরন্ত ভান্ডারের সন্ধানের পথে হাটার নাম প্যারেন্টিং
৫.মানবতা বা মানবিকতার প্রতি কি অবদান রাখবে

সম্পাদকের কথা: মানুষ প্রকৃতি গতভাবেই লিগ্যাসি রেখে যাওয়ার বাসনা পোষণ করে, চিন্হ রেখে যেতে চায়। পরকালে বিশ্বাসী হৃদয়ের কাছে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিন মৃত্যুর পর তার আখিরাতে অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে তার একটি হলো ‘নেক সন্তানের ‘ দোয়া। সন্তানকে অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষ করে, পিতা-মাতা এই সুবিধা প্রাপ্ত হতে পারেন। এজন্য বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে আরো বেশী যত্নবান হতে হবে, সন্তান প্রতিপালনে।

দু’টি কথা: লেখক এখানে প্রশ্ন করেছেন, “আপনার আদর্শ ব্যক্তিত্ব হলেন আপনার বাবা কিংবা মা?” আমরা কি আসলেই অনুসরণীয় হতে পারছি সন্তানের কাছে। শুধু পার্থিব নয়, সব জীবনে সাফল্য লাভের উপায় কি তাদের শেখাচ্ছি? পিতা-মাতার ব্যক্তি জীবন বলে কিছু নেই, তারা যা করবে, সন্তান তাই শিখবে।

ভূমিকা: বাবা-মা বড় রকম ভ্রান্ত ধারণ পোষণ করেন, যেটা প্যারেন্টসদের বিশেষ দায়িত্বগুলোকে চাপিয়ে যায়।

✅সন্তানের ভরনপোষন, সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেই,কি দায়িত্ব শেষ?
✅ সন্তানকে বাস্তবতার নিরিখে দায়িত্ব গ্রহনের উপযোগী করে তুলতে হবে।
✅সন্তানকে জনহিত কাজে উৎসাহ দিতে হবে,অন্য দশটা শিশুর চেয়ে তাকে, উপলব্ধি করাতে হবে,মানুষ ধনী না গরীব তা, তার সম্পত্তির উপর নির্ভর করে না।
✅ দরিদ্র মানেই অসম্মানিত নয়।
মানুষের কষ্টে তাকে অশ্রু ঝরাতে দিন।
✅ সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান করে তুলুন, যাতে সে আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিতে পরিণত না হয়।
✅ পরিবার, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে শিখান।

সবোর্পরি, সন্তানকে শিখান যে,তার সকল লাজ হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, আর কারো নয়।

১.আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে:

✅ মানবজাতিকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সুন্দর আদর্শিকভাবে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।
✅সন্তানের সম্পর্ক গড়ে তুলার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রাথমিক দায়িত্ব সঠিকভাবে বোঝা।
✅বাচ্চাকে অবশ্যই চারিত্রিক শিক্ষা দিতে হবে। শিষ্ঠাচার বিষয়টিও বুঝিয়ে দিতে হবে।
✅খাবারের সময়সূচীর ব্যাপারে তাকে ধারনা দিতে হবে,সপরিবারে একত্রে সময় মেইনটেইন করতে শেখান। খাবার সময় টিভি দেখাসহ সব বদভ্যাস ত্যাগ করা।
✅বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজেদের কাজ নিজেরা করে ফেলায় অভ্যস্হ করা।

🔷 সীমা নির্ধারণ করা:
সন্তানের সাথে ভাল বোঝাপরার সম্পর্ক রাখুন, তবে তার একটা সীমারেখা থাকা চাই। বাবা-মা সন্তানের “অভিভাবক”, “বন্ধু ” নয়। কেননা, বন্ধুর উপর বাধন আরোপ করা যায় না। তাকে বোঝাতে হবে শ্রদ্ধা ও যৌক্তিকতার সাথে সে দ্বিমত পোষণ করতে পারে, তবে, আহ্লাদ বা বেয়াদবি নয়।

অর্থবিত্ত সম্পদ বাড়ায় না, বাড়ায় কেবল সম্পত্তি:
সন্তানকে মানুষের জন্য ব্যয় করতে শিখান। তাদের অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝাতে হবে।
‘বিনিয়োগ’ ও ‘ব্যয়’ এ মানদন্ডে বিচার করতে শেখান।

ব্যালান্স শীট:
সন্তানকে চমৎকার ব্যালান্স শীট তৈরি করতে শেখান। তাকে লেনদেনের সুযোগ দিন, পাশাপাশি হিসাব রাখতে বলুন, দেখুন যে, শুধু ব্যয়ই করছে নাকি, বিনিয়োগ করতে শিখছে। সংশোধন শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকেই।

🔹ইঁদুর বনাম বিড়াল: শিরোনাম দেখেই চমকে উঠবেন না, বোঝার স্বার্থে লেখক এ উপমাটি দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, ইঁদুর-বিড়াল লড়াই এ, দু’টি প্রাণীকেই লড়তে হয়। দিনশেষে আসলে আমরা কি তেমনই লড়ে চলছি নাকি,
নিজেদের আত্মউন্নয়ন করছি,
সেটাই যাচাই করা যাক-

✅ইঁদুর দৌড়ানোর মতো অনেক মানুষ লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, বেশী সম্পদ জড়ো করে। এগুলো জাহির করে তৃপ্তিজনক পায়।
✅অন্যের দুঃখ-দুর্দশায় খুশি হয়। অন্যের উপরে থাকাই, এদের জীবনের লক্ষ্য।
✅আর, বিড়াল হওয়া বলতে, নিজেকে শিকারী অনুসন্ধানী করে গড়ে তোলা। নিজেদের উন্নয়ন ও পারস্পারিক সহযোগিতা করা।

ফলে, দক্ষতা লাভ, ভুল থেকে শিক্ষা লাভ, ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা বাড়ে। দিনশেষে, নিজেকে সফল উদ্যোগতার কাতারে খুঁজে পায়, যার আলো কি না গভীর অরণ্যে থেকে ওঠে আসা সিগ্ধ কুয়াশার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।(চলবে)

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব

শারমীন আক্তার সেতু


চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে কিছু উপলব্ধি হল বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টা যদিও খুব স্পর্শকাতর এবং অনেকেই হয়ত এই বিষয়ে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন। করতেই পারেন। কিন্তু এখানে আমি শুধু আমার উপলব্ধি টুকুই লিখেছি এবং সেখান থেকে সবাইকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছি।

আপনার যদি আপত্তি থাকে বা এই বিষয়ের সাথে একমত না হতে পারেন তবে দয়া করে এড়িয়ে যান। অযথা তর্ক করবেন না।

কারণ প্রথমেই আমি বলে নিয়েছি এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমি এখানে একজন সাধারন মানুষ হিসেবে লিখেছি। তাই আমার এই চিন্তাগুলো কেউ আমার পেশাগত চিন্তাভাবনার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। কারন পেশাগতভাবে আমি এভাবে চিন্তা করব না বা করি না।

বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় ব্যক্তিভেদে পার্থক্য আছে। অর্থাৎ একেকজন মানুষ বন্ধুত্বটাকে একেক রকমভাবে চিহ্নিত করবে, একেক রকমভাবে বর্ননা করবে।
কিন্তু দেশ, কাল বা সমাজ সংস্কৃতিভেদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা যাই হোক না কেন সব দেশেই, সব সংস্কৃতিতেই সাধারনত এটাই ধরে নেয়া হয় যে, মেয়ে মেয়ে, ছেলে ছেলে বন্ধুত্ব হবে ।

এরপরে উদারতা, চিন্তার ভিন্নতা, প্রয়োজন, সহজভাবে গ্রহন করার ক্ষমতা , বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বা কৌতূহল ইত্যাদি সব কিছু বিবেচনায় ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় বা হতে পারে।

কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক একটা চাহিদা থাকার কারনে যেটা হয় যে, মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেসব আচরণ স্বাভাবিক মনে হয় বা কোন ক্ষতির কারন হয় না সেটা একটি ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারন হতে পারে।

যেমন, একজন মেয়ে যদি কোন মেয়ের বাসায় রাত্রিযাপন করে বা প্রতি মিনিটে মিনিটে তার মেয়ে বন্ধুটিকে তার নিজের আপডেট দিতে থাকে বা নিজের ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতে থাকে তবে সেটা আমাদের সমাজে দৃষ্টিকটু নয় কিন্তু এই একই কাজই যদি কোন একটি ছেলে এবং
একটি মেয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে সাধারনভাবে সাদা চোখে কোন কিছু চিন্তা না করেই এটা ধরে নেয়া হয় যে তাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব না আরও গভীর কোন সম্পর্ক আছে। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ছেলে আর মেয়ের মধ্যেকার এত গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে অথবা মেয়েটির মধ্যেকার কেউ একজন আরেকজনের প্রতি আবেগীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বা পড়ে। এতে দুজনেই যদি অবিবাহিত থাকে এবং দুজনেই যদি সম্মত থাকে তবে সেই ছেলে এবং মেয়েটির মধ্যে একটি সুন্দর পরিনতি হয়ত দেখা যায়।

এটা গেল অবিবাহিত ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব। কিন্তু যখন এই ধরনের বন্ধুত্ব কোন বিবাহিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে বা অবাহিত মেয়ে বিবাহিত ছেলে বা বিবাহিত মেয়ে অবিবাহিত ছেলের মধ্যে হয় তখন তা পরবর্তীতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক গুনে বেড়ে যায় যখন এই বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা পায় না বা তাদের সঙ্গিনী তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয় না বা তাদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে না বা তাদের সঙ্গিনীর সাথে এডজাস্ট হয় না।

তখন তারা তাদের মানসিক শান্তি খুঁজে নেয়ার জন্য বন্ধুত্ব নামক একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর ধীরে ধীরে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মোড় নেয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় যে, বিবাহিত ছেলে বা মেয়েটি ঘর বর ছাড়তে পারছে না কিন্তু আবার সে নিজের সঙ্গিনীর সাথে সন্তুষ্টও নয় তখন সে তার সঙ্গিনীর কাছে থেকে যা পায়নি তা বন্ধুর কাছে থেকে পূরণ করার চেষ্টা করে ।

এতে করে সে হয়ত নিজেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রেখে তার বন্ধুর কাছে থেকে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু তার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটি যে তার আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ রাখতেই পারবে এমন নাও হতে পারে। আবার দুজনে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলে দুইটি সম্পর্ককেই সমান তালে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে কোন সম্পর্ককেই নষ্ট না করে। এতে হয়ত সম্পর্ক রক্ষা হয় কিন্তু তা সঙ্গিনীর সাথে প্রতারনা করা হয় কিনা তা আমার জানা নেই। বা সেক্ষেত্রে একে অপরকে নিজের প্রয়োজনে নিজের অজান্তেই ব্যবহার করে কিনা সেটাও আমার জানা নেই ।

যাইহোক, আমি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের বিরোধী নই কারন আমারও অনেক ছেলে বন্ধু আছে। কিন্তু চারপাশের অনেক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখে আমি এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অবশ্যই হবে কিন্তু তার একটা সীমারেখা থাকবে বা থাকা উচিত। কারন লিংগগত পার্থক্য এবং একে অপরের প্রতি সহজাত একটি আবেগীয় এবং শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করার অপরিবর্তনীয় প্রবৃতি।

বিশেষ করে বিবাহিত ছেলে এবং মেয়েদের এসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়াটা জরুরী মনে করি। কারণ বিয়ের পর নিজের পরিবারে সুখী না হয়ে এরকম কোন বন্ধুত্বে জড়ালে তা খুব ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ।

এখন বলতে পারেন একজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে আমি এরকম কথা বলতে পারছি কিভাবে? তাহলে আবারও বলব এই লেখাটা আমি একজন সাধারন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছি। আর মনোবিজ্ঞানে কালচারাল ডিফ্রেন্সটাকে কখনই বাদ দেয়া হয়নি বরং অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় । কারন কালচারভেদে মানুষের চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়।

আর বেশীরভাগ কালচারেই এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্সটাকে খারাপভাবে দেখা হয়।

যাইহোক, বিবাহিতরা যদি কাউকে তার বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেন তবে একটু খেয়াল করুন আপনি আপনার সেই বন্ধুর সাথে সেইরকমই আচরণ করছেন কিনা বা সেইরকমই তথ্য বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করছেন কিনা যা অন্য সবার সাথেই করছেন বা একইরকমভাবে একই সময় সবার সাথেই একইরকম সবকিছু করছেন কিনা।

যদি তা না হয়, যদি এমন হয় যে, আপনার সঙ্গী ব্যতীত বিপরীত লিঙ্গের শুধুমাত্র একজনের সাথেই সারাদিনের সব ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি আদানপ্রদান হচ্ছে, আপনার সুখ দুঃখের আলাপ তার সাথেই বেশি হচ্ছে, সব কাজ করতে গেলেই আপনার তার কথা মনে পড়ছে বা তাকে ছাড়া কোন কাজ করতে পারছেন না তাহলে মনে হয় আপনাদের এখনই সতর্ক হওয়ার সময়।

আর যদি আপনি আপনার সব বন্ধুর সাথেই এরকম আপনার ব্যক্তিগত সবকিছু সবসময় সমানভাবে শেয়ার করেন, সমান কেয়ার নেন, সবাইকেই সমান গুরত্ব দেন তাহলে কিছু বলার নেই। তাহলে বুঝতে হবে আপনার অভিযোজন ক্ষমতা এবং সবকিছু ম্যানেজ করার ক্ষমতা খুব ভাল এবং ছেলে মেয়ে বন্ধুত্বে আপনার চেয়ে উদার কেউ নেই এবং ছেলে মেয়ে উভয়ই আপনার কাছে সমান। এরকম হলে সেখানে অন্যকোন সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না ।

কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আপনি নিজে বিশ্বাস করছেন যে, ছেলে মেয়েতে কখনও বন্ধুত্ব সম্ভব নয় কারন একসময় না একসময় কোন একজন সেখানে দুর্বল হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনার নিজেরই কোন ছেলে বা মেয়ে বন্ধু আছে এবং সেখানে আপনি ভাবছেন আপনার নিজের উপর বা আপনার বন্ধুটির তার নিজের উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে তাই আপনাদের বন্ধুত্বে কেউ কারও প্রতি দুর্বল হয়ে যাবেন না। তাহলে কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট হাস্যকর এবং অগ্রহনযোগ্য হবে।

সারমর্ম:
লিঙ্গগত পার্থক্য এবং জৈবিক চাহিদার কারণে ছেলে এবং মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সীমারেখা থাকা জরুরী । কারন আমরা যথেষ্ট উদার হলেও আমাদের আবেগ আমাদের প্রতি যথেষ্ট উদার নয়। আমাদের আবেগ যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

কাউন্সেলর
সফটকল অ্যাসোসিয়েটেড উইথ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

 

‘মৃত্যুকে’ খুব কাছ থেকে দেখার অনুভূতি

ডা.ফাতিমা খান


যে মানুষটাকে ক্ষয়রোগ কোনভাবেই ছাড়ছে না কিংবা রোগবিদ্যা যার কাছে আত্নসমর্পন করেছে, যার আয়ুটাকে চিকিৎসক একটা সময়ের ফ্রেমে বেধে দিয়েছেন সেই মানুষটার স্বত্তাটা দুনিয়ার আর মানুষদের কি নাসিহা করতে চায় বা জীবনের শেষ কয়টা দিন সে কেমন করে কাটাতে চায় তা জানার অবাধ্য একটা সাধ আমার হয়।

নিশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে এখনো যে পৃথিবীর হাওয়া বাতাস তার বুক পেটে মৃদু আন্দোলন তুলছে, সেটুকুই নিশ্চয়ই এই সময়ের জন্য তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

পৃথিবীর আর মানুষদের কাছে এই মানুষটার আপাত অনুরোধ হয়ত এরকম  “এই শুনছ, তোমরা যারা বেঁচে আছ, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। অত চাই চাই পাই পাই কইরো না, দোহাই লাগে।”

মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার সবচেয়ে বেশী সুযোগ হয় ডাক্তার আর নার্সদের।

অসুস্থ মানুষটার চলে যাওয়ার নির্মম খবরটাও আপনজনদের কাছে তারাই পৌছান বেশী। একটু দীর্ঘ অবসর আর একটা সুযোগ পেলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের খুব কাছাকাছি সময় কাটাবো ভেবে রেখেছি।

যেখানে জীবন সমাপ্তির দিকে সেখানেই উপলব্ধির সূচনা, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে যাত্রী মানুষটার অনেকগুলো উপলব্ধি হয় যা আগে অনুভূত হলে হয়ত জীবনটা পুরাই বদলে যেত!

– এই যে এলেবেলে ছেলেবেলা, রংধনু কৈশোর, উদ্দাম যৌবন কিংবা মলিন প্রৌঢ়ত্ব গেল, কই এগুলো তো কখনো একবারও মাথায় আসেনি! এখন কেমন বিদ্যূত বেগে চলে আসল দেখ!

তাদের এ ধরনের কথাগুলো শুনতে, ওদের সাথে জীবনের গল্প করতে আমার খুব ইচ্ছে হয় । হুট করে কখন কার জীবনের যতি পড়ে যাবে কে জানে!

আত্নসমালোচনা করার একটা অনেক পুরানো অভ্যাস আমার আছে। দিনশেষে চোখ বুজার আগে এই আমার শেষ কাজ। কয়দিন থেকে যে ব্যাপারটা বারবার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল নিজের প্রতি আমি অন্যায় করেছি সবচেয়ে বেশী।

আমার জীবন, দেহ মন সব কিছুর মালিক এক আল্লাহ তায়ালা। তিনি সাময়িক কালের জন্য এই সম্পদগুলো আমানত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী অযত্ন অবহেলা হচ্ছে আমার এই নেয়ামত গুলোর সাথে যার হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।

আমার মনে হয় আমার মৃত্যুর আগে যদি কিছু বলার সুযোগ পাই তাহলে অনেক কিছুর সাথে গুরুত্বপুর্ণ একটা নাসিহা এটাও হবে যে সবাই নিজের প্রতি যত্নবান হোন। আপনি নিজেও আপনার জীবনের অমূল্য রহমত ও নেয়ামত !

লেখক: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,
জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

সব হারিয়ে যাচ্ছে, টিকে আছে শুধু মুখোশ

ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস


সেদিন শুনলাম এক বিয়েতে নাকি ছোটখাটো প্রোগ্রাম। ছোটখাটো বলা হলেও এনগেইজমেন্ট আর আকদ মিলে বেশ বড় মাপের ও জাকজমক করে অনুষ্ঠান হয়েছে মোট ১০টি! ভাবা যায়! আমার তো এক বিয়েতে যেয়ে তারপর বৌভাতে যেতে হলেও মাথার ওপর বাজ পড়ে। কি পরে যাবো, সেই চিন্তাটা খুব মামুলি। কিন্তু দুশ্চিন্তা হলো সময় ও কাজকে ম্যানেজ করা। যানজট নামের মামদো ভূতের দেশে ওরা পারে কি করে এতগুলা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং অংশগ্রহণ করতে?

সেই ১০টি প্রোগ্রামের শুরুটা ‘মিলাদ মাহফিল’ দিয়ে। প্রোগ্রামের হিসাব চেয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, দোহাই লাগে! এটা আমার মত বড্ড পুরানো সেকেলে মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে মেলানো সম্ভব নয়। ৯ নম্বরে যেয়ে আটকে গেছি, সান’গীত (সাবধান! ‘সংগীত’ বললে আবারও কিন্ত ‘মিডল ক্লাস’ ‘সেকেলে’ কিংবা ‘খ্যাত’ মানুষের খাতায় নাম লিখাবেন)। ম্যাহেন্দী, ব্রাইডাল শাওয়ার, ব্যাচেলর্স নাইট, হালদী ১, ২ (হলুদ না, হাল’দী), নিকাহ (‘বিয়ে’ বললে আপনি বেজায় হাসির খোরাক যোগাবেন!) তারপর রিসেপশন; মানে বৌভাত। হলো ৯টা। আর শেষটা যে কি! আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, পান কিনা, পেয়ে যাবেন! হিন্দি সিরিয়াল অনুসরণ শেষ করে আমরা আজকাল নাকি পাকিস্তানি সিরিয়াল চোখ বেঁধে হৃদয়ের কোটরে ভরে নিয়েছি। ১০টার জায়গায় ২০টা হলেও অবাক হবো না। আমরা খুবই উদারমনা, ‘কুল’ জাতি হয়েছি কিনা আজকাল!

যাই হোক,সেতো না হয় গেল এলাহী বড়লোকদের বিয়ে। তাদের পয়সা ফেলার জায়গা নাই; তাই তারা ফেলুক ১০ জায়গায় মানলাম! কিন্ত এই মধ্যবিত্তের কেন এই ‘ঘোড়ারোগ’? শুনলাম মধ্যবিত্তের ঘরেও নাকি আজকাল শুধু একদিনের প্রোগ্রামে ৫/১০ লাখ টাকার ডেকোরেশন হয়! তারপর আছে খাওয়ার খরচ, হল ভাড়া! বুঝি না, একে কি আমাদের অর্থনৈতিক দাসত্ব বলবো, নাকি নৈতিকতার অবক্ষয়? আমি আমার সন্তানের বিয়ে জাকজমকভাবে দেব, সে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক; কিন্ত এই অহেতুক খরচের বহর যখন আমার পুরা সমাজ, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের ভেতর অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে শিক্ষক হিসেবে তা মানতে এবং দেখতে আমার কষ্ট হয়।

আপনার বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠানগুলোর বৈভবের এই কুৎসিত ‘নিষ্কলুষ’ লোক দেখানো প্রতিযোগিতায় হয়তো জিতে গেছেন, আজও হয়তো আলোচনা হয় আত্মীয় স্বজনের মুখে মুখে আপনার এলাহী শান শওকতের বাহার নিয়ে, কিন্তু হেরে গেছে, বলতে গেলে অনেকটা মরেই গেছে হাজারও মধ্যবিত্ত পরিবার। এরা আপনারই আত্মীয় স্বজন।
ছেলে-মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে সাধ তো হয় সবার। সবারই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্ন বুনি আমরা সবাই সেই ছোট কাল থেকে। স্বপ্ন বুনি সেই একদিনের রাজকন্যা কিংবা রাজপুত্র হবার। স্বপ্ন বুনি সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে বিয়ে দেবার। কিন্ত আজকাল এই চিরচেনা স্বপ্নকে জাঁকজমকের আর নতুনত্বের নামে যে ‘এলাহী রুপে’ নিয়ে গেছি, তাতে স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন চলে গেছে অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।

বলতে পারেন, সাধ্যে না কুলালে করবেন না। যেমন আয় তেমনি তো ব্যয়টা হওয়া উচিত। পরম আদরের মেয়েকে বিদায় দিচ্ছে বাবা-মা, কলিজাটা তো ওইখানে ভেঙে খান খান। সেই মুহূর্তে মেয়ের শখ, ছেলে মেয়ের ইচ্ছা, কিংবা ‘ছেলে-মেয়ের মুখ’ রাখার জন্য বাবা মা যদি এখনকার দিনের এই অহেতুক খরচের বোঝাটা মাথায় চেপে নেন, তাকে অবাস্তববাদী বলে দেওয়াটা খুব একটা অনুচিত হবে বলে আমি মনে করি না।

আমার অবাক লাগে ভাবতে, এই ছেলে-মেয়েগুলোর বিচার বুদ্ধির মাত্রা নিয়ে। এরাতো জানে তাদের বাবা-মার সামর্থ কতটুকু। কেমন করে পারে একের পর এক বায়না জুড়ে দিতে? অথবা আকারে ইংগিতে বুঝিয়ে দিতে অনুষ্ঠানের চাকচিক্য আমি কতটুকু চাই। আসলে বিবেকের বলিহারি।

আচ্ছা, বিয়ে মানেটা কি? দুটা মানুষের সঙ্গে সঙ্গে দুটো পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন কিংবা বলা যায়, বিয়ে সমাজের ধারক ও বাহক। মানে এক নতুন পরিবার। বিয়ের অনুষ্ঠান মানে তো আনন্দেরই হবার কথা। আগে মা-খালাদের দেখতাম বিয়েতে যাবার আগে আলমারি থেকে কাতান নামাতেন, লকার থেকে গয়না নামিয়ে বেশ সেজে গুজেই যেতেন। বেয়াই বাড়ির আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে পরিচয় হবে তাই পার্লারেও যেতেন কেউ কেউ। অনুষ্ঠানের গতানুগতিক দৃশ্য ছিল, দু’পক্ষের মুরুব্বিরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এর সঙ্গে ওর সঙ্গে। পরিবারের সবাই যেয়ে বর বউকে দোয়া শুভেচ্ছা দিয়ে আসছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে সানাই বাজছে। পোলাও কোরমা খাওয়া হচ্ছে। সবার সাথে দেখা হওয়াওটাই মূখ্য। আর বউ দেখাটা ছিল মহাআকর্ষণ। বউ লাল শাড়ি পরে যেন লাজুক মুখে সাক্ষাৎ পরী।

আর এখন, ওমা একি! বর বউ দেখবো কি? অপেক্ষায় থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে হ্যালির ধুমকেতুও দেখতে পাবেন; কিন্তু অতিথি আসনের সামনের কাতারে বসেও মিলবে না বর বউয়ের দেখা! দেখবেন কিভাবে? স্টেজের সামনে দুই পক্ষ থেকে আসা ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ মানে ডিএসএলআর ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফারদের ইয়া বিশাল বিশাল ছাতা দিয়ে সব ঢাকা। এখনকার বিয়ের প্রোগ্রামে কাজীর চেয়ে এই ডিএসএলআর ক্যামেরাওয়ালাদের দাম বেশি। কাজী না এলেও বিয়ে হবে, কিন্ত ফটোগ্রাফার ছাড়া বিয়ে? অসম্ভব।

ফটোগ্রাফারই এখন পুরো অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর। তারাই নির্ধারণ করেন বর বউয়ের পাশে বসে কতক্ষণ কথা বলতে পারবেন। স্টেজে উঠে আজকাল বর বউ দেখে আগে-পরে গোছগাছ করে বসে একটা ছবি তোলেন। এরপর ক্যামেরা ওয়ালাদের সহকারী হাতের ইশারায় আপনাকে নেমে যেতে বলবেন, আপনিও নেমে যেতে বাধ্য, কারণ পেছনে লম্বা লাইন।

আবার সবার সামনে বর বউয়ের ছবি তোলার হিড়িক। কাধে হাত মাথায় হাত,সামনে কাত পেছনে কাত, হাতে হাত; কত শত ভঙ্গিমায় কি অবলীলায় যে ছবি তোলা হচ্ছে; ভাবতে পারবেন না! কোথায় যে গেল সেই লাজুক লাজুক মুখের পরীর মতো বউগুলা।

নারী উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলছি একেকে জন। নারীর এগিয়ে চলার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রত্যয় আর দূরদর্শীতা। জেন্ডার ডাইভার্সিটি নিয়ে গবেষণা করা দেখে ভীষণ খুশি হই। যখন দেখি মেয়েরা ফেসবুক টুইটারকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে, টুকটাক কাজ দিয়ে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠছে, তখনও খুশি হই। আমার মনে হতে থাকে, এইতো শুরু। কিন্তু আমার আশার মুখে কেউ যেন কষে কেউ চড় দেয়, যখন দেখি ব্যবসা সফল সেই মেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়- তার সারা জীবনের লক্ষ্য আজ অর্জিত হলো। কারণ তিনি তার বিয়ের জন্য সব্যসাচির লেহেঙ্গা কিনতে পেরেছেন। সেই লেহেঙ্গা কেনার সময়ক্ষণ, ডিজাইনারের সঙ্গে ছবি এবং তার নিচে ক্যাপশন ‘ফাইনালি আই হ্যাভ এচিভড হোয়াট আই ড্রেমট থ্রু আউট মাই লাইফ’! মানে? তার ব্যবসা, তার আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার গল্প, যা কিনা তাকে গর্বিত করার কথা ছিল, কথা ছিল তার গল্প অনুপ্রেরণা জাগাবে আর দশটা মেয়েকে-সবকিছু ছাপিয়ে তার সফলতা হলো সব্যসাচীর লেহেঙ্গা কিনতে পারা! দূরদর্শীতা হায়, তুমি কাঁদো নিরবে।

যার যা ইচ্ছা করুক, খালি মনে হয়, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যবিত্তের বাড়ছে ঋনের বোঝা। উচ্চবিত্তরাও যে সবাই কতটুকু সাদা টাকায় করছেন তাই বা কে জানে! কেমন করে ভুলে যাই এদেশের শতকরা কত ভাগ লোক উচ্চবিত্তের তালিকায় পড়ে আর কতভাগ নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্তের কোটায়। কেমন করে ভুলে যাই এইদেশে আমরা এমনই অনুকরণ প্রিয় সংবেদনশীল জাতি যেখানে ‘পাখি ড্রেস’ না পাওয়ায় অভিমানী কিশোরী আত্মহত্যা করে। বাবা মা ‘বাইক’ দিতে না পারলে চোখের মনি সাত রাজার ধন ছেলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নির্বিকারভাবে বাবা মায়ের স্বপ্নকে হত্যা করে। সেখানে ‘বিয়ে তো একবারই হয়’ শ্লোগানের মোড়কে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেবার খেলা কি পরিণাম ফেলতে পারে সে হিসেব কষা কি কঠিন কিছু?

লেখক: অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র:সমকাল

 

শিশু ধর্ষণের লজ্জা এবং শিশু সোনিয়া লাশ দিয়ে শুরু হল নতুন বছর

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল স্কুলছাত্রী সোনিয়া (১৩)। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোনিয়ার।

সোনিয়া চরাদি ইউনিয়নের হলতা গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে ও চরাদি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সোনিয়ার বাবা দুলাল খান জানান, গত বুধবার সকালে প্রতিবেশী পান্নু খানের বখাটে ছেলে আসাদ খান ডিম ভেজে দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে তার নিজের ঘরে নিয়ে যায়। এসময় আসাদের বাবা-মা কেউ বাসায় ছিল না। এ সুযোগে আসাদ সোনিয়াকে ধর্ষণ করে।

পরে নিজ ঘরে গিয়ে ওই দিন বেলা ১২টায় সে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে তাকে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু সোনিয়ার মৃত্যু হয়।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, শিশুটির পরিবার থেকে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।সুত্র:জাগোনিউজ২৪

 

চাইল্ড অ্যাবিউজ (চাইল্ড ইমোশনাল অ্যাবিউজ)

আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করি তারমধ্যে একটা হচ্ছে কার্টুন দেখা। আমাদের দুজনেরই সবচেয়ে প্রিয় কার্টুনটা শুরু হলেই, চিৎকার করে বলে, আম্মু কার্টুন শুরু হয়েছে আর আমিও ছুটে যাই দেখার জন্য। কোনদিন যদি কোন কারণে একসাথে কার্টুন দেখা না হতো, প্রচণ্ড অভিমান করতো। একবার একটানা প্রায় একসপ্তাহ বিভিন্ন কারণে আমি ওর ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। খেয়াল করলাম তিন-চার দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে ওর অভিমান কমছে এবং আমাকে ডাকা ছেড়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। তিন বছরে যে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল, মাত্র একসপ্তাহে সেটা গতি হারালো। আবার অভ্যাসটা গড়তে অনেকদিন লেগেছিল আমার। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে আমাকে ডাকতে ভুলে যায় আর কোন কারণে ওকে সঙ্গ দিতে না পারলে তেমন অভিমানও করে না।

আমার ব্যালকনি থেকে আমাদের বাড়ির মেইন গেইট দেখা যায়। সকালে যখন ছেলেকে তার বাবা স্কুলে নিয়ে যায় আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। নীচে দাঁড়িয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপর সে বাবার হাত ধরে গুটুগুটু পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যেতো। একদিন ব্যস্ততার কারণে আমি ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। সেদিন স্কুল থেকে বেড়িয়ে সে একদম কান্না করে দিলো অভিমান আর কষ্টের প্রচণ্ডতায়। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলছিল, আমি বার বার উপরে তাকিয়েছি কিন্তু তুমি ছিলে না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একবার বেশ কয়েকদিন ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারিনি। যার ফলাফল প্রথম ঘটনার অনুরূপ। এখনো বেশির ভাগ সময় আমি ডাকলেই উপরের দিকে তাকায় সে, নয়তো না। আর কোনদিন না দাঁড়ালেও কোন অভিমান করে না।

চাইল্ড স্পেশালিস্টের সাথে কথা বলার পর জানলাম যে, শিশুরা যদি তাদের কোন আবেগের যথাযথ মূল্য না পায়, তাহলে একটা সময় সে আবেগের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। আর নিজের আবেগকে প্রতিনিয়ত অবহেলিত হতে দেখার ফলে অন্যের আবেগকেও মূল্যায়ন করতে শিখতে পারেনা। এটা এক ধরণের ইমোশনাল অ্যাবিউজ যার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় শিশুদের নিজেদের আবেগের প্রকাশ ও অন্যেদের আবেগকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা।

বাবা-মাদের একটা সমস্যা হচ্ছে সন্তানদের ভালোর চিন্তায় বা ভালোবাসার কারণে, নিজেদের পছন্দ বা ভালোলাগা গুলোকে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। অনেক বাবা-মা আছেন নিজেদের জীবনের অপুর্ন স্বপ্নকে সন্তানদের দ্বারা পূরণ করতে চান। যার ফলে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেন নিজেদের প্রত্যাশার ভার। জীবনে কি হতে বা কি পেতে চায় বোঝার আগেই শিশুদের শুনতে হয় তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে কিংবা বিজ্ঞানী হতে হবে। নিজের স্বপ্নকে আবেগের সাথে উপলব্ধি করার আগেই বাবা-মার প্রত্যাশার বোঝা চেপে বসে কচি মন গুলোতে। স্বপ্নের পাখীরা আবেগের ডানার অভাবে হারিয়ে ফেলে উড়ার ক্ষমতা।

কম্পিটিশনের হাওয়া বইছে চারিদিকে। স্কুলের সাথে স্কুলের কম্পিটিশন, বাবা-মার সাথে বাবা-মাদের কম্পিটিশন, কোচিং সেন্টারের কম্পিটিশন, শিক্ষকদের কম্পিটিশন, হায় রে কম্পিটিশন……!!! নাইনটি পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে, নাইটি ফাইভ পারসেন্ট মার্কস পেতে হবে……! এই ধরনের ইমোশনাল ব্লাকমেইল আর এক্সপেক্টটেশনের চাপে কোমল প্রাণ শিশুগুলোর শৈশবের আবেগ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আর সেই সাথে হ্রাস পায় আবেগের প্রকাশ, অনুভব, উপলব্ধির ক্ষমতা…….!!!

আমরা যেন ভুলে না যাই যে, সন্তানরা আমাদের সম্পত্তি না, আমাদের স্বপ্ন পূরণের কোন মাধ্যম না। বরং সন্তানরা আমাদের কাছে স্রষ্টার দেয়া আমানত। তাই তাদেরকে এমন করে গড়ে তোলা উচিত যাতে আমানতের খেয়ানত না হয়, বরং আমাদের জন্য হতে পারে সাদাকায়ে জারিয়া।

সাইকোলজি(পিএইচডি)

 

‘অপরাজিতা’ সালতামামি ২০১৭, স্বাগতম ২০১৮

সুখ, স্বপ্নে.. নতুন বছরের আনন্দ হোক অফুরন্ত! জীবনের সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণতা পাক… পূরণ হোক সব স্বপ্ন… সবার ভালবাসার পাত্র … হয়ে ওঠুন! যাইহোক, এমন কতকগুল রং ছড়ানো কথা নিয়ে চলে আসছে নতুন বছর।

চলে গেলো একটি বছর। চিরতরে ছুটি ২০১৭। পৃথিবীর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রবেশ করব আরো একটি নতুন বছরে। পেছনের ভালো কিছুকে আগলে ধরে ও মন্দ সব খবর পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া আবার শুরু হোক মানুষের পথচলা।

নতুন মানেই সম্ভাবনা। নতুন মানেই স্বপ্ন। নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় আজ কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দিলল নতুন বছরের সূর্য।

প্রকৃতির নিয়মে সূর্যকে আরেকবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী। সঙ্গে এনেছে একটি নতুন বছর।

নারী সমাজের জন্য কেমন ছিল ২০১৭ সাল?

নারীরা ২০১৭ সালে বিশাল ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের এ বছর বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে অবস্থান ষষ্ঠ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ-২০১৭-এর তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নারী বৈষ্যমের হার সবচেয়ে কম। এ তথ্য অনুসারে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ নম্বরে। ইনডেক্স তৈরি করা হয় চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে-
১.অর্থনৈতিক কর্মকান্ড,
২.নারীর অংশগ্রহণ ও অংশগ্রহণের সুযোগ,
৩.শিক্ষাবিষয়ক অর্জন, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর হার এবং
৪.রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
যা নারীর উত্তরণকেই প্রমাণ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান দৃঢ়। ২০১৭ সালে সফলতায় দেশ, তথা বহির্বিশ্বে এদেশের নারী তার দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে।
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ বছরই টাইস্ অব লন্ডন তাকে দিয়েছে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাব। যা এ দেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় প্রাপ্তি।
  • দ্বিতীয় মেয়াদে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকী। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এ্যান্ড কিলবার্ন আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং ব্রিটিশ সরকারের ছায়ামন্ত্রী হিসেবে আছেন।
  • ব্রিটিশ পার্র্লামেন্টে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল এ্যান্ড এ্যাকটন আসনে লেবার পার্টি থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুপা হক। এবং
  • তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের বেথনান গ্রিন এ্যান্ড বো আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী।
  • এ বছরের জুন মাসে আর এক মানবতাবাদী বাঙালী নারী, বাংলাদেশ অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারর্সন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজম ডিজঅর্ডার বিষয়ে বিশ্বখ্যাত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। এবং জুন মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে দুই বছরের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।
  • এ বছর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আবিষ্কারেও এগিয়ে আছে বাঙালী নারী। মহাকাশে সহজে ব্যবহার করা যাবে এমন ছোট ও যুগান্তকারী প্রযুক্তির যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য নাসাতে কর্মরত বাংলদেশী বিজ্ঞানী মাহমুদা সুলতানা জিতে নিয়েছেন ২০১৭ সালের নাসার সেরা উদ্ভাবন পুরস্কার।
  • বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ট্রান্সপোর্ট এয়ার ক্রাফটের ‘নাজিয়া আফরিন’ প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পেয়েছেন ইন্সপায়ারিং উইমেন ইন ডিফেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৭।
  • ইন্সপায়ারিং উইমেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন একজন সফল নারী গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ‘ফারজানা চৌধুরী’।
  • বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডাঃ সায়েবা আক্তার নারীর মৃত্যু এড়াতে তার উদ্ভাবিত ‘সায়েবাস মেথড’ নিয়ে আলোচনায় আসেন এ বছর।
  • বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকার জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন অব কারেজ’ পুরস্কার লাভ করেণ শারমীন আক্তার।
  • হস্তশিল্পে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সোনা রানী রায়ের সেলাইকৃত নকশীকাঁথা স্পেনে আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প মেলায় ‘সেরা তালিকায় স্থান পেয়েছে। সোনা রানীর ‘হোয়াইট অন হোয়াইট ময়ূর’ নামে নকশীকাঁথাটি স্পেনের লোয়েভে ক্রাফট প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

নারী নির্যাতন কেমন ছিল দেশে?

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-‘সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে চলি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করি।’ প্রতিবছর ২৫ নবেম্বর বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ২২০ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৬ জন। পুলিশ সদর দফতরের নথি অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৭০৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মামলার ১ লাখ আসামি খালাস পেয়েছেন আর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৮৮.৩৫ শতাংশ আসামি। নারী নির্যাতন মামলায় আসামি খালাসের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। আবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে ১ হাজার ৭৩৭টি ধর্ষণসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ২৫ আগস্ট গণধর্ষণ এবং বর্বর খুনের শিকার হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মেয়ে ‘রূপা’। বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় পৈশাচিক এ ঘটনা ঘটে। নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বগুরার যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনের ছোট ভাই শ্রমিকলীগ নেতা, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদকব্যবসা ও চোরাচালান মামলার আসামি তুফান সরকার। এ বছরের ১৭ জুলাই এসএসসি পাস করা এক কিশোরীকে তার বাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে সে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুলাই তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন কাউন্সিলর রুমকিসহ একদল সন্ত্রাসী মা- মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর নাপিত দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলার অভিযোগ অনুসারে তার মেয়েকে ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই ও তারপরে কয়েকবার ধর্ষণ করে এ তুফান সরকার। এ ঘটনায় তুফান, তার স্ত্রী, বোনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ বছর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দেয়া রায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নরসিংদীর শিবপুরে এক নারীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে সুলতান মিয়া ওরফে জামাই সুলতান (৩৫), শফিকুল ইসলাম শরীফ (৩২), ও ওসমান গণি (৩৪) কে আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। আসামীদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায় নিহত মাহমুদা আক্তার (২৮) ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার কিসমত আহমদাবাদ (চানপুর) গ্রামের মৃত বেল্লাল হোসেনের মেয়ে। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী হত্যার আসামি তাঁদেরই সন্তান ঐশি রহমানের মামলার রায় প্রকাশ পায়। এ রায়ে তাকে মৃত্যুদন্ড- সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। রায়ের কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো বিবেচিত হয়েছে বলে আদালত জানায় তা হলো ঐশির বর্তমান বয়স ১৯ বছরের কম এবং ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের আদর যত্নের অভাবে সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। মাদকাসক্ত। হত্যার দুইদিন পরে সে নিজেই আত্মসমর্পণ করে। এবং ঐশির পরিবার পরিজনের মধ্যে কারও ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত বাংলাদেশী নারীদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আলোচনায় ছিল এ বছর।

কালো কলমে অন্যান্য আলোচিত ঘটনা

এক বছরের আলোচিত বিষয় ছিল ‘রোহিঙ্গা’ ইস্যু। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। নতুন বছরের জন্য যা এক বড় চ্যালেঞ্জ।

হৃদয়স্পর্শী ঘটনা অন্যতম হাওরে পাহাড়ি ঢল, উত্তরের বন্যা, পাহাড় ধসে মৃত্যু, জঙ্গি দমন, এক ঝাঁক গুণী মানুষের প্রয়াণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি।

২০১৭ সালেই ডানা মেলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

প্রত্যাশা করতেই পারি এবার সকল বাধা সরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র। সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি।

২০১৮ সালকে স্বাগতম

শুভ বিদায় ২০১৭ সালকে। ইংরেজি হ্যাপী নিউ ইয়ার (শুভ নববর্ষ) ২০১৮।
কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে আসল নতুন বছরের নতুন আলো। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসা-বিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সম্মিলনের দিন।

নতুন সালকে স্বাগত জানিয়ে এবং নতুন বছরে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সংগঠন। ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীসহ সারাদেশে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বিদায় বছরের সঙ্গে সঙ্গে বিগত দিনের দুঃখ বেদনা ভুলে নতুন দিনে নতুন করে সব শুরু করার তাগিদে মেতে উঠব আমরা। এগিয়ে যাবে দেশ; এমন প্রত্যাশায় শুভ বিদায় ২০১৭।

শুভেচ্ছা ২০১৮। শুভেচ্ছা সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের।