banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

পরিষ্কার_পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর

ঘরকন্যা


রান্নাঘর ভালো থাকলেই পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকবে। রান্নাঘরই হচ্ছে বাসা-বাড়ির সেই স্থান, যা সবেচেয়ে বেশি নোংরা হয়। কিছু সহজ টিপস, আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার জন্য।

সাবান ও গরম পানি

থালাবাসন এবং রান্নাঘরের দেয়াল এর তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি। ফলে চর্বি ভাব দূর হবে।

কাগজে কাটাকাটি
পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে নিয়ে কাটাকাটির কাজ করুণ। রান্নাঘরের মেঝেতে কাটাকাটির কাজ করবেন না।

পোকা মারা স্প্রে
ময়লার ঝুরিও নোংরা হবে কম। আর রোজ ময়লার ঝুরির আশেপাশে একটু পোকা মারার স্প্রে ছিটিয়ে দিন। এতে ময়লার ঝুড়িতে পিঁপড়াও ধরবে না।

টিস্যুর ব্যবহার
প্রত্যেকবার চুলার কাজ শেষ হলে চুলাটি একটি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন।
রান্নাঘর অনেকটাই কম ময়লা হবে।

এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই
রান্নাঘরে ব্যবহারের জন্য পছন্দের ফ্লেভারের এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই কিনে নেবেন। এর মাধ্যমেও গন্ধের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

লবণ ও গরম পানি
রান্না করার সময় চুলার ওপর চা,তরকারির ঝোল ছলকে পরে এবং শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। এক চামচ লবন আর গরম পানি দিয়ে ভাল করে ঘষে নিলে তা সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পানিতে ভিজিয়ে রাখুন
পেঁয়াজ বা রসুন ইত্যাদি যেসব খাবারের খোসা বাতাসে ওড়ে, সেগুলো কাটার আগে পানিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। খোসা উড়ে ঘর নোংরা হবে না।

রান্নাঘরে সম্ভবপর কম জিনিস রাখা গেলে স্বাচ্ছন্দ্য ও সুন্দর থাকবে। নোংরাও হবে কম।

 

মাতৃকথন ৮

ফারিনা মাহমুদ


কাজেই আমি মনে করিনা তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে। তবে তোমাকে আমি যে পরামর্শ দেবো তা হচ্ছে তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওর একটা ব্লাড টেস্ট করে দেখতে পারো ওর ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল ভালো আছে কিনা, না থাকলে ঐটা একটু পূরণ করা জরুরি। আর তুমি ওর ফুড প্যাটার্নে লিখেছো রাতে ওকে এক বোতল দুধ দেয়া হয় এবং ও এইটা খেয়ে ঘুমায়। তুমি এই দুধ বন্ধ করে দেবে। একেবারেই পারবে না, একটু একটু করে পরিমান কমাবে এবং একসময় বন্ধ করে দেবে। শুরুটা করবে ছুটির দিনের আগের রাতে কারণ ওই রাতে ও উঠে যেতে পারে এবং কান্না করতে পারে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, খায় ই ওই এক বোতল দুধ, ঐটা বন্ধ করে দেবো মানে?
– বাচ্চা যখন থেকে শক্ত খাবার খায়, দুধ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হয়। ১৬ মাস বয়সী বাচ্চা ২ কাপ এর বেশি দুধ বা তার সমপরিমাণ ডেইরী প্রোডাক্ট (দই, পনির) এর বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাওয়া সহজ, টানলেই পেট ভরে। তোমার বাচ্চা জানে রাতে ঐটা খেয়ে সহজেই তার পেট ভরবে। তাই সে কষ্ট করে শক্ত খাবারটা খায় না। আর যখন সে জানবে তার ওই অপশন বন্ধ, আস্তে আস্তে সে ডিনার ঠিক মতো করবে। শুরুতে তোমাদের দুইজনেরই একটু স্ট্রাগল হবে তবে এক সপ্তাহ ফলো করে দেখো, উন্নতি হবে অবস্থার।
ও বলে চললো , আমরা মূল যে ব্যাপারটা খেয়াল করি সেটা হচ্ছে বাচ্চা সব ফুড গ্রুপের খাবার খাচ্ছে কিনা, ফিজিক্যালি একটিভ আছে কিনা, গ্রোথ চার্ট ঠিক আছে কিনা। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার সব বাচ্চার বৃদ্ধি এক বয়সে হয় না। কোনো কোনো সময় বৃদ্ধি একটু স্লো ডাউন হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটা যদি “রিমার্কেবলি লং পিরিয়ড এসোসিয়েটেড উইথ আদার সিম্পটমস” না হয় সেই ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তোমার নিশ্চয়ই এমন কোনো সহপাঠী ছিলো যে শৈশবে বেশ লম্বা থাকলেও কৈশোরে এসে আর অতো লম্বা হয়নি বা উল্টোটা? এটা একটা উদাহরণ হতে পারে গ্রোথ স্লো ডাউনের। তেমনি মেটাবলিজম ও আপ ডাউন হয়। তোমার হয়না? কোনো কোনো দিন তোমার নিশ্চয়ই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার কোনো কোনোদিন অনেকটা খেয়ে ফেলো! ওরও তাই। এ ছাড়া দাঁত ওঠার সময় বা অন্য কোনো সাময়িক পরিবর্তনের কারণেও বাচ্চা কম খেতে পারেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই ফেইজ টা কেটে গেলে বাচ্চা বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া করে নিজে থেকেই নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নেয় ! অসুস্থতা থেকে সুস্থ হবার পরেও বাচ্চার ক্ষুধা বাড়ে এইজন্য।
আমি রিলেট করছি মনে মনে – ভাবি, বাচ্চা ক্যামন আছে? এর উত্তরে প্রায়ই বলি, আর বৈলেন্না ভাবি, দুইদিন ঠিক মতো খায় তো তিন দিনের দিন আবার যেই সেই! আচ্ছা, ঘটনা তাইলে এই!
সুতরাং ফারিনা, ওকে তুমি ওর খাবার দেবে। ও খেতে না চাইলে আধা ঘন্টা খেলতে দেবে এরপর একই খাবার আবার একটু গরম করে দেবে। বুঝতে পারলে? পৃথিবীর কোনো জীব ক্ষুধা পেটে সামনে খাবার রেখে উপোষ থাকে না। একসময় ও খাবেই। ওকে এটা বুঝতে হবে, সারাজীবন ওকেই খাবারের পেছনে ছুটতে হবে, খাবার ওর পেছনে ছুটবে না।যত তাড়াতাড়ি তুমি ওকে এটা বুঝতে দাও, ততই মঙ্গল !
আমি মাথা নাড়লাম। আমার দ্বিধাগ্রস্থ চেহারা দেখে মহিলা হেসে বলে উঠলো,
– এটলিস্ট হি ইস গ্রোইং হাইওয়াইজ হুইচ ইউ কান্ট্ মেইক হ্যাপেন বাই ফোর্স! এন্ড এবাউট ওয়েট? ডোন্ট ওরি, প্রবাব্লি ওয়ান ডে হি উইল অলসো গো টু জিম টু গেট রীড অফ এক্সট্রা কিলোস!
আপডেট : আজ অবধি, আড়াই বছর বয়সী ছেলে আমার স্কিনি একটিভ বয়। জামা কাপড় যথারীতি ঢিলে ঢালাই ! তবে আমি রাতে ওই বোতল ভরা দুধ বন্ধ করে দিয়ে এবং খাবার নিয়ে ওকে জোরাজুরি বন্ধ করে যেই উপকারটা পেয়েছি তা হচ্ছে খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ বেড়েছে। আমার কাছে এটাই বড় কথা। যেটুকু খায়, আনন্দ নিয়ে খায়। পছন্দের খাবার নিজে চেয়েও খায় মাঝে মাঝে। আমি এতেই খুশি। ওর খাবার পরিমান বাড়ানোর চেয়ে আমার নিজের খাবারের পরিমান কমানো নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় আছি!
সতর্কতা : আমি চিকিৎসক নই, ডায়েটিশিয়ান নই, আমি যা লিখলাম তা একান্ত আমার অভিজ্ঞতা। কারো সাথে মিলবে এমন কথাও নেই। যে কোনো ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে উপযুক্ত মানুষের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
হ্যাপি মাদারহুড !

চলবে…
পর্ব-৭

 

যৌতুক না দেওয়ায় রাণীনগরে তালাকের পর দ্বিতীয় বিয়ে : সাফিয়া বিবির আত্মহত্যা

নারী সংবাদ


নওগাঁর রাণীনগরে যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় তালাক দিয়ে স্বামী অনত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি (২৫) নামে এক গৃহবধু বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বোদলা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ সাফিয়া বিবি মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
সাফিয়া বিবি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো: মুক্তার এর স্ত্রী ও বোদলা গ্রামে মৃত শহীদ উদ্দীন সরদারের মেয়ে।
এলাকাবাসি ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, স্বামী মুক্তার হোসেন তার স্ত্রী সাফিয়া বিবিকে শশুরবাড়ী থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য শারিরিক নির্যাতন চালায়। বাধ্য হয়ে সাফিয়া ২০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেয়। পরে আরো টাকার জন্য নির্যাতন করে সাফিয়াকে বাপের বাড়ীতে তাড়িয়ে দেয়।
এর পর থেকে সাফিয়া বাপের বাড়ীতে থাকছেন। এরই স্বামী গোপনে তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পারইল ইউনিয়ন পরিষদে তালাকের কাগজ পৌঁছিলে বিষষটি সাফিয়াকে জানানো হয়। তালাক ও স্বামীর অন্যত্র বিয়ে করার সংবাদ জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে বাবার বাড়ির সবার অজান্তে সাফিয়া বিষপান করে। পরে তার পরিবারের লোকজন জানতে পেরে সাফিয়াকে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে রেফাট করেন। নওগাঁতেও তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মধ্যে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, টাকা-পয়সা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন্দল চলছিল। এছাড়াও তাকে তালাক দিয়ে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি আত্নহত্যা করেছে। যৌতুকের বিষয়ে আদালতে মামলা করতে পারে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা -১

প্রবাসী মজুমদার


মসজিদ হতে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসেছি মাত্র। অন্দর মহলে ঢুকতেই নাজুকে চোখে পড়ল। জায়নামাজে চুপ করে বসে আছে। সালামের জবাবটা এত ক্ষীণ ছিল যে, মনে হল কিছু একটা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম

– কি হয়েছে তোমার? এমন করে বসে আছ কেন?

– বুকে ব্যথা।

– বেশী।

– অনেকটা তাই-ই।

– কোন দিকে?

– বা দিকে।

– শুরুটা কিভাবে হল? জানতে চাইলাম।

নাজু বলতে লাগল, নামাজে রুকু থেকে সিজদায় যাবার সময় হঠাৎ বাম দিকে টান লেগেছে। ভেবেছিলাম চলে যাবে। এমনটি মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু কফ দিয়ে কিংবা ম্যাচেজ করেও যেন ব্যথাটি যাচ্ছে না। কিট কিটি ব্যথ্যাটা যেন রয়েই গেল।

– আচ্ছা। ব্যথাটা কি এক জায়গায় আছে, নাকি বাম হতেও ছড়িয়ে পড়ছে?

– না। এক জায়গায়। কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছে। ইতি পুর্বে এমন আর কখনো অনুভব হয়নি।

– ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

– গেলেই ভাল। আমার খুব ভয় হচ্ছে।

নাজু অসুস্থতাকে সব সময়ই উপেক্ষা করতে অভ্যস্ত। দ্বিতীয়ত সামান্য সর্দি জ্বরের জন্যও হাসপাতালে টেস্টের নামে ডাক্তারদের হয়রানি আর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা খুবই বিরক্তিকর। হাসপাতালের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য অনেক রোগীই টোকেন নিয়ে দু এক ঘন্টার মার্কেটিং ও সেরে আসে।

যাইহোক, হার্ট জনিত কারণে নাজু যেহেতু আজ হাসপাতালে যাবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। তাকে এতটুকু ভয় পেতে দেখে আমিও তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। সন্তান দুটোকে বাসাতেই রেখে গেলাম।

বিদ্যুতের গতিতেই হাসপাতালের দরজায় গিয়ে পৌছলাম। আল আবির সাসপাতাল। জেদ্দা। রিসিপশনে লম্বা লাইন।অনেক্ষণ দাড়িয়ে সিরিয়াল পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পাকেট থেকে ইনসিওরেন্সের মেডিক্যাল কার্ডটি বের করে এগিয়ে দিতেই রিসিপশনিষ্ট জানতে চাইল,

– কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

– হার্ট স্পেশালিষ্ট ডাক্তার তাহির।

– সরি। একেবারে ওভার বুকড হয়ে আছে।

– মানে?

– রোগীর সংখ্যা এত বেশী যে, রাত একটায় ও রোগী দেখা শেষ করতে পারবেনা। এখন আর একজন বাড়তি রোগী নেয়ার কথা বললে ডাক্তার আমাকে উল্টো মারবে।

অসহায় রিসিপশনিষ্ট এর কথা শুনে থ হয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম

– তাহলে আমি এখন কি করবো? আমাকে যে ডাক্তার দেখাতেই হবে।

– আপনি একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানকে দেখান। ও যদি হার্ট এর ডাক্তার দেখাতে রিকমান্ড করে, তাহলেই আপনাকে রেফার করা যাবে।

তাৎক্ষণিক্ষ রাজী হয়ে গেলাম। জেনারেল ফিজিশিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য স্লিপ দেয়া হল। ডাক্তারের সাথে দেখা করলাম। রোগীর মুখে বিস্তারিত শুনে হাতে আরও একটা স্লিফ ধরিয়ে দেয়া হল। ইসিজি টেস্ট। হার্টবিট দেখতে হবে। না দেখে অগ্রীম কোন কিছু বলা যাবেনা।

মাসের শেষ। পকেটের দাপট অনেকটা ক্ষীণ। দোয়া কালেমা পড়েও টেষ্ট হতে বাঁচার উপায় নেই। তাই অযথা টেস্টের যন্ত্রনায় নিজের হার্টবিট বেড়ে না যাবার জন্য নিজের জন্যও এখন দোয়া পড়ছি।

প্রাথমিক টেষ্ট ইসিজির পয়সাটা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। রোগীকে নিয়ে ইসিজি করে সীট দেখিয়ে শুয়ে থাকতে বলল। নাজুর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, ওর অনুমান একেবারে ঠিক। হার্টের কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। না জানি কি হয়।

অভয় দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনার চেষ্টা করলেও যেন মন মানছে না। হার্টের রোগে মারা যাওয়া মানুষগুলোর দৃশ্য ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বার বার বলছে, ওমুকের এ হয়েছে। তমুকের ও হয়েছে। হায় আল্লাহরে তুমি আমার বাচ্চা গুলোর দিকে তাকিয়ে একটা ভাল সংবাদ শোনাও।

কিছুক্ষণ জেনারেল ফিজিশিয়ান মহিলাটা রিপোর্ট হাতে এগিয়ে আসল। খুব গাম্ভীর্যতার সাথে বলতে লাগল, তোমার হাটের ইজিসি হার্টের ডাক্তার তাহিরকে দেখিয়েছি। রিপোর্ট এ্যবনরমাল।

– এখন কি করতে হবে? জানতে চাইলাম।

– অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। আমাদের এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়।

– এখনি যেতে হবে? নাকি আগামীকাল?

– এ রিক্স আপনাদের। আমার পরামর্শ হল এখনি কোন বড় হাসপাতালে গেলে ভাল হবে, ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিয়ে চলে গেল।

নাজুকে বুঝিয়ে রাখার কিছুই বাকী রইলনা। ওর হতাশার মাত্রাটা বেড়ে গেল। সন্তান দুটি কথা ভেবে ওর দু চোখ বেড়ে পানি পড়ছে।

আমি ডাক্তার নই। তবুও ডাক্তারের কান্ডজ্ঞানহীন পরামর্শের নমুনা দেখে নিজেই বকাবকি করলাম।
বললাম,

– তোমার মনে আছে? দ্বিতীয় সন্তানের সময় তুমি কতো দোয়া করছিলে আল্লাহ আমাদের একটি কন্যা সন্তান দেয়ার জন্য। কিন্তু ডাক্তার বার বার ছেলে সন্তানের কথা নিশ্চিত করে বললেও অবশেষে কন্যা সন্তান তাসনিয়াকে পেয়ে বিশ্বাসই হচ্ছিলনা। কি আর করবো, অবশেষে ছেলে সন্তানের জন্য কেনা জামাই মেয়ে সন্তানকে পরিয়ে হাসপাতাল হতে বিদায় নিলাম।

প্রথমাবস্থায়, সিফা মেডিকেলের ডাক্তার আয়েশাতো আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে আশ্চার্য হয়ে বলতেই লাগল, বাচ্চা কৈ? বাচ্চাতো খুঁজে পাইনা। এ নিয়েও তুমি কেঁদেছিলে। কিন্তু অবশেষে সবই ভুল প্রমাণিত হল। আমার মনে হয়, এসব ডাক্তারগুলো মেডিকেলে পিছনের টেবিলের ছাত্র ছিল। খোঁজ নিয়ে হয়তবা দেখবে, মেডিক্যালের শিক্ষা বোর্ড এ সব আদুভাইদের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যই হয়তবা সাটিফিকেট দিয়ে বিদায় দিয়েছে…।

কোথায় যাবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ভাবলাম আগে সন্তান দুটোকে বাসা থেকে গাড়ীতে তুলে নেই। বাসায় যেতে যেত বিল্ডিং এর ডাক্তার সাহাবুদ্দিনকে ফোন করলাম। বিষয়টা খুলে বলতেই জানাল, আজ আমার ডিউটি নেই। তবে হাসপাতালে এসেছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য। ইচ্ছে করলে হাসপাতালে চলে আসুন। দেখি রিপোর্টে কি লিখা আছে।

ডাক্তার সাহাবুদ্দিন জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজি ইউনিভার্সিটি মেডিকেলের আই,সি. ইউ. ডিপার্টমেন্টের ইনসেনটিভ কেয়ার এর ইনচার্জ ও স্পেশালিষ্ট। যে কোন বাংলাদেশীর সহযোগীতায় সে সবার অগ্রভাবে। তার কর্মদক্ষতা, ডাক্তারদের সাথে লিয়াজোসহ একজন সিনিয়র ডাক্তার হিসেবে সবার শ্রদ্ধাভাজন।

রাত ১১টা। সন্তানদের গাড়ীতে নিয়ে ছুটে চলেছি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের দিকে। দুরত্ব বাসা হতে প্রায় ৭-৮ কিলো মিটার।

(চলবে)