banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

আমার বই পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


“হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা-
আমি কিশোর পাশা বলছি অ্যামিরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে, হলিউড থেকে মাত্র কয়েকমাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি, আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম- তিন গোয়েন্দা।

আমি, বাঙালী। থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান, ব্যায়ামবীর, অ্যামিরিকার নিগ্রো। আরেকজন রবিন মিলফোর্ড, আইরিশ অ্যামিরিকান, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরোন এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি, এসো না , চলে এসো আমাদের দলে…”

আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইনগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে এই লাইনগুলো। ক্লাস সিক্সে উঠার পর এক বন্ধুর কল্যাণে “তিন গোয়েন্দা”-র সাথে পরিচয় হয়। এরপর আমাকে আর পায় কে! এক নাগাড়ে পড়তে থাকলাম। ঐ সময়টাতে “তিন গোয়েন্দা” ছাড়া কিছু ভাল লাগতো না।

কিশোর-মুসা-রবিনের পাশাপাশি রাশেদ পাশা, মেরি চাচী, জর্জিনা পারকার, রাফিয়ান, টেরিয়ার ডয়েল, ওমর শরীফ, ডেভিস ক্রিস্টোফার, ভিক্টর সাইমন, ফগ র‍্যাম্পারকট, হ্যানসন সবাইকে বাস্তবে খুঁজে ফিরতাম। এখনো ভালোলাগা অনুভূতিটুকু একটুও কমেনি।

তিন গোয়েন্দার সবগুলো ভলিউম সংগ্রহ করা আমার জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য। কৈশোরের যে এডভেঞ্চার প্রীতি “তিন গোয়েন্দা” দিয়ে শুরু হয়েছিলো তা পূর্ণতা পায় “শার্লক হোমস” দিয়ে। একুশে বইমেলায় “শার্লক হোমস রচনাসমগ্র” কিনেছিলাম, যা আজ অবধি আমার সংগ্রহকৃত অন্যতম সেরা বই।

বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের অনবদ্য কীর্তি “শার্লক হোমস”। শার্লক হোমস, ডাক্তার ওয়াটসন, মাইক্রফট হোমস, প্রফেসর জেমস মরিয়ার্টি, মিসেস হাডসন- প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি মুগ্ধতার নাম। রচনাসমগ্র পড়তে যেয়ে “দ্য ফাইনাল প্রব্লেম” গল্পে শার্লক হোমসের মৃত্যুর ঘটনা পেলাম। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম গল্পটি পড়ে। আবার অবাকও হলাম, কারণ রচনাসমগ্র শেষ হতে তখনো বাকি ছিলো। পরে জানতে পেরেছি, শার্লক হোমসকে পাঠকের চাপে ফিরিয়ে এনেছিলেন ডয়েল। কী যে ভালো লেগেছিলো!

শার্লক হোমসের গোয়েন্দাগিরি তখন আমাকে পেয়ে বসেছিলো। নিজের মাঝে “গোয়েন্দা গোয়েন্দা” ভাব! তবে সেটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় শার্লককে খুঁজেছি বারবার। আমার মত অলস প্রকৃতির পাঠক, যে কিনা এক বই সহজে দ্বিতীয়বার পড়ে না, সেই আমি রচনা সমগ্রটি কতবার পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। “২২১/বি, বেকার স্ট্রীট, লন্ডন”- এখনো আমাকে ঠিক আগের মতই টানে। টিভি সিরিজ কিংবা মুভিতে যখনই শার্লককে দেখার সুযোগ পেয়েছি, হাতছাড়া করিনি।
অগণিত এডভেঞ্চারপ্রেমীদের মতো শার্লক হোমস আমার স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

…..চলবে

১ম পর্ব

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

একই দিনে তিনটা নারী নির্যাতন কেস!

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


প্রথম কেস: মা মেয়েকে নিয়ে আসছে,স্বামী মেরেছে। ইনজুরি গুরুতর না। সারা শরীরে মারের চিহ্ন। চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তারা যাচ্ছেনা সার্টিফিকেট চায়। এই কাজ আমি সাধারণত এভোয়েড করি তাই ইমার্জেনসীতে যেতে বললাম। যদি উপকার হয় কিছু।

দ্বিতীয় কেস: স্বামী স্ত্রী দুইজন একসাথেই এসেছে। মেয়েটার থুতনীতে কাট ইনজুরি।দেখেই বোঝা যায় কেউ মেরেছে। পুরুষটি এসেই বলে।
: সেলাই করে দেন।
: কখন কেটেছে?
: ৫/৬ঘন্টা হবে।

এই পর্যায়ে মহিলা বলে,
: শেষ রাতে।
হিসাব করে দেখলাম প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। ৬ ঘন্টার মধ্যে হলে স্টিচ দেয়া যেতো।
: এখন আর সেলাই দেয়া যাবেনা, চিকিৎসা দিচ্ছি, আর ড্রেসিং করে নিয়ে যান।ভাল হয়ে যাবে। খুব ডিপ ক্ষত না।
পুরুষ টি ক্ষিপ্ত
: ডাঃ বলেছে, সেলাই দিতে।
: আমি কি তাহলে?
: ছেলে ডাঃ বলেছে।
: কেনো,মেয়ে ডাঃ কি চিকিৎসা জানে
না?
: আপনি সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন।
: কিভাবে হইছে?
: স্বামী স্ত্রীর কথা কাটাকাটি।
মনে মনে ভাবলাম, কথা কাটাকাটিতে স্বামীর কিছুই হইলো না!!
বুঝলাম, অশিক্ষিত শ্রেণী, নারীর প্রতি অবজ্ঞা, এরে বুঝায় লাভ নাই। ছেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিলাম।

তৃতীয় কেস: মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের, শিক্ষিতই মনে হলো। মেয়েটা দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে, মেয়েটা টলতেছে। মাথায় ব্যথা পেয়েছে।
টিকিট নিয়েই হেড ইনজুরী কেস লিখে, নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠায় দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এর ওপিডি বন্ধ। তারা ফিরে আসছে।

এই ছেলের মধ্যেও উদ্ধত ভাব।
: আপনি চিকিৎসা দেন। এইটা নরমাল কেস।মাথার বাইরে ব্যথা পাইছে।
বুঝলাম নিউরোর পিওন, এইটা বুঝায় পাঠায় দিছে, ঝামেলা কমানোর জন্যে।বললাম,

: আমি নিউরোসার্জারিতে ট্রেনিং করে আসছি, কোনটা ভিতরের ব্যথা আর কোনটা বাইরের আমি বুঝি। আমরা যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারে, তখন বিপদে পরতে পারেন।

ছেলেটা ভর্তি করবেনা, এখানে আইনত কিছু সমস্যা আছে তাই কোনমতে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি আরও বুঝলাম, ছেলেটা কাপুরুষ শ্রেণীর, মেয়েদের সাথে এই শ্রেণীর পুরুষরা খারাপ ব্যবহার করে বিকৃত আনন্দ পায়। যেহেতু হাসপাতাল আমাদের সিকিউরিটি দেয় না। তাই আমিও বললাম,
: পাশের রুমে ভাল ডাক্তার আছে দেখান।

শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীতে কিছু ছেলেমানুষ আছে যারা মেয়েদের নিম্ন চোখে দেখে, বউ পিটানো বীর পুরুষ এরা।এরা পিওন বা কোয়াককেও গুরুত্ব দিবে, কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে ডাক্তার হোক, ব্যাংকার হোক, টিচার হোক পারলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করবেই।এইটাই তাদের বীরত্ব। এইটাকেই তারা পুরষত্ব মনে করে। অসভ্য ইতর নিম্নশ্রেনীর এই সব পুরুষ মানুষ,যত উচু বা নীচু পরিবার থেকেই আসুক, মেয়েদের সবসময় নিম্নজাতের মনে করে, কারন হয়তো পরিবারে নিজের মাকেও এমন অপমানিত হতে দেখেছে। এরা শিক্ষিত হলেও তাই এদের মানসিকতার পরিবর্তন আসে না।

এর আগের পোস্টে নারী শিক্ষা তথা আমাদের সার্বিক শিক্ষা নিয়েই বলেছি।আজ এইসব কাপুরুষদের জেনেটিক্স নিয়ে বললাম। কিছু অমানুষ বীর পুরুষ যুগে যুগে বুঝবেনা, নারীদের সম্মান করাই প্রকৃত শিক্ষা।

নারী নির্যাতনে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেভাবেই হোক শীর্ষে তো আছি তাইনা?

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
বিসিএস স্বাস্থ্য
সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।