banner

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

বিজ্ঞাপন ছাড়াই ঈদ আয়োজন

আবারো ঈদ, আবারো ‘ব্রেক ফ্রি ঈদ ফেস্ট: স্বপ্নের আয়োজন, বিরতিহীন বিনোদন’ নিয়ে আসছে জিটিভি। তবে এবার দেশের সর্বপ্রথম কোন চ্যানেল হিসেবে ঈদের সাত দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত সকল অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপন বিরতিহীন প্রচার করবে চ্যানেলটি। যা বাংলাদেশের টেলিভিশন সম্প্রচার ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

গত ঈদ উল আজহায় সর্বপ্রথম রাত্রিকালীন সকল অনুঠান বিরতিহীনভাবে সম্প্রচার করে জিটিভি। সেই সফলতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে, ধারাবাহিকভাবে এবারের ঈদ-উল-ফিতরের সকল নাটক, টেলিছবি, ছায়াছবি ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে কোন বিজ্ঞাপন বিরতি রাখবে না চ্যানেলটি।

শুধু তাই নয়, দর্শকদের শ্রেণী বিবেচনায় হলিউডের এনিমেটেড ও ব্লকবাস্টার সিনেমা আয়োজন: ‘কিডস্ সিনে ফেস্ট’ যাতে ‘আইস এইজে’র মত দুনিয়া কাঁপানো ছবি দেখানো হবে।

একাধিক ফেষ্টের সমন্বয়ে এবারের ঈদ আয়োজন সাজিয়েছে জিটিভি। এর মধ্যে নাটককে সাজিয়েছে ৩টি ক্যাটাগরিতে- রোমান্টিক সব একক নাটক নিয়ে চ্যানেলটি প্রচার করবে : ‘রোমান্টিক ফেস্ট’, মোশাররফ করিমের ৭টি কমেডি নাটক নিয়ে: ‘কমেডি ফেস্ট’ এবং ৭টি অঞ্চলের ভাষায় নির্মিত নাটক নিয়ে ‘আঞ্চলিক ফেষ্ট’ যাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালি, বরিশাল, পাবনা এবং খুলনার আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত নাটক প্রচারিত হবে। এছাড়াও মোশাররফ করিমের একটি ধারাবাহিক নাটক থাকবে।

অন্যদিকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্যে রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেষ্ট’। এতে বিজয়ী শর্ট ফিল্ম নিয়ে এই আয়োজনে বাংলাদেশ, ইরান, কোরিয়া, ভারত, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের শর্ট-ফিল্ম টিভিতে দেখতে পাবেন দর্শক।

বিরতিহীন ঈদ আয়োজনে আরও থাকছে- ‘টেলিফিল্ম ফেষ্ট’, দেশের জনপ্রিয় সব সেলিব্রেটিদের নিয়ে ‘সেলিব্রেটি ফেষ্ট’। সামিয়া আফরিনের উপস্থাপনায়  এই ফেষ্টে অংশগ্রহণ করবেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও আয়েশা দম্পত্তি, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন, অপি করিম, তারিন, শমী কায়সার, আফসানা মিমি, চঞ্চল চৌধুরী, অমিতাভ রেজা প্রমুখ।

ছায়াছবির দর্শকদের কথা বিবেচনায় প্রতিদিন তিনটি করে ছায়াছবি : ৭টি রোমান্টিক বাংলা ছায়াছবি নিয়ে ‘রোমান্টিক সিনে ফেষ্ট’, আরও ৭টি জনপ্রিয় বাংলা ছায়াছবি নিয়ে লেট নাইট সিনে ফেস্ট এবং দুপুরে সাতটি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছায়াছবির ‘ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার’ হবে জিটিভিতে।

 

ইতিকাফ : কেন করবেন, কীভাবে করবেন?

নবীজি ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফ বলতে কী বুঝায় বা এর পরিচয় কী?
পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে এতেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ‘ইতিকাফ’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে বা নারীদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

কোরআন-হাদিসে ইতিকাফ প্রসঙ্গ
পবিত্র কোরআনের আয়াতে সূরা বাকারা : ১৮৭নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা মসজিদে এতেকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না

নবীজি ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফ কত প্রকার ও কি কি?
ইতেকাফ তিন প্রকার- ১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব, ৩. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কিফায়া। ইতিকাফ করার মানত করলে সে ইতিকাফ আদায় করা ওয়াজিব। রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কিফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া মানে হলো, একটি মহল্লা বা এলাকার সবার পক্ষে অন্তত একজন আদায় করতে হবে। না হয় পুরো এলাকাবাসীর গুনাহ হবে। আর রমজানের শেষ ১০ দিন ব্যতিরেকে যত ইতেকাফ করা হবে- তা মুস্তাহাব। কোনো ফুকাহা ইকরাম একে নফল ইতিকাফও বলেছেন।

ইতিকাফ আদায় করা বা সহিহ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত রয়েছে?
ইতিকাফ আদায় করা বা সহিহ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে: ১. পুরুষের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা। ২. ইতিকাফের নিয়ত করা ৩. বড় না পাক থেকে পাবিত্রতা অর্জন করা। এবং ৪. রোজা রাখা

ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ কী?
মসজিদুল হারামে আদায়কৃত ইতিকাফ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ। তারপর মসজিদে নববীর ইতিকাফ এবং তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস। তারপর উৎকৃষ্ট ইতেকাফ হলো- কোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে রীতিমতো জামায়াতে নামায হয়। এরপর মহল্লার মসজিদে।

একজন মুসলিম কেন ইতিকাফ করবে?
১- একটি ইসলামের বিধান মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে । ২-মানবীয় পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকার চর্চা। ৩- শবে কদর তালাশ করার উদ্দেশ্যে।

মহানবী (সা.) বলেন, আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম দশদিন ও মাঝের দশদিন এতেকাফ করেছি অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বলেছেন, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা লাইলাতুল কদরকে অর্জন করতে চায়, তারা যেন শেষ দশকে এতেকাফ করে।

৪- মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা। ৫- দুনিয়ামুখি মানসিকতা ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা। ৬. এছাড়া হাদিসে ইতিকাফ করার ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে, এইসব ফজিলত অর্জনের উদ্দেশ্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। যেমন এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দু’টি হজ ও দুটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে অপর একটি হাদিস বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এতেকাফ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন। প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (বায়হাকি)।

ইতিকাফের সময় কি কি কাজ করা যাবে এবং কি কি কাজ করা যাবে না
এক. এতেকাফের মধ্যে যেসব কাজ করা জায়েজ বা করা যাবে
১. পেশাব পায়খানার জন্যে বাইরে যাওয়া জায়েয। মনে রাখতে হবে এসব প্রয়োজন এমন স্থানে পূরণ করতে হবে যা মসজিদের নিকটে হয়।
২. ফরয গোসলের জন্যেও এতেকাফের স্থান থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয। তবে মসজিদেই গোসল করার ব্যবস্থা থাকলে সেখানেই গোসল করতে হবে।
৩. খানা খাওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যায় যদি খানা নিয়ে আসর কোনো লোক না থাকে। খানা আনার লোক থাকলে মসজিদে খাওয়াই জরুরী।
৪. জুমা ও ঈদের নামাযের জন্যেও বাইরে যাওয়া জায়েয।
৫. যদি কোথাও আগুন লাগে, অথবা কেউ পানিতে পড়ে ডুবে যাচ্ছে অথবা কেউ কাউকে মেরে ফেলছে অথবা মসজিদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে এসব অবস্থায় এতেকাফের স্থান থেকে বাইরে যাওয়া শুধু জায়েযই নয় বরঞ্চ জরুরী।
৬. জুমার নামায আদায়ের জন্য বা কোনো জরুরত পুরণ করার জন্যে বের হলো এবং এ সময়ে সে কোনো রোগীর সেবা করলো অথবা জানাযায় শরীক হলো তাহলে তাতে কোনো দোষ হবে না।
৭. যে কোনো প্রাকৃতিক অথবা শরীয়াতের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয।
৮. যদি কেনাবেচার কোনো লোক না থাকে এবং বাড়ীতে খাবার কিছু না থাকে তাহলে প্রয়োজনমত কেনাবেচা করা এতেকাফকারীর জায়েয।
৯. আযান দেয়ার জন্যে মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয।
১০. এতেকাফ অবস্থায় কাউকে দীন সম্পর্কে পরামর্শ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়া জায়েয। বিয়ে করা, ঘুমানো এবং আরাম করা জায়েয।

দুই. এতেকাফে যেসব কাজ করা না জায়েজ বা অবৈধ
১. এতেকাফ অবস্থায় যৌনক্রিয়া করা এবং স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা হলে এতেকাফ নষ্ট হবে।
২. এতেকাফ অবস্থায় কোনো দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহ তাহরিমী। বাধ্য হয়ে করলে জায়েয হবে।
৩. এতেকাফ অবস্থায় একেবারে চুপচাপ বসে থাকা মাকরূহ তাহরিমী। যিকির ফিকির, তেলাওয়াত প্রভৃতিতে লিপ্ত থাকা উচিত।
৪. মসজিদে বেচাকেনা করা। লড়াই-ঝগড়া করা, গীবত করা অথবা কোনো প্রকার বেহুদা কথা বরা মাকরূহ।
৫. কোনো প্রাকৃতিক ও শরয়ী প্রয়োজন ব্যতিরেকে মসজিদের বাইরে যাওয়া অথবা প্রাকৃতিক ও শরয়ী প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে সেখানেই থেকে যাওয়া জায়েয নয়। তাতে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।

রাসুল [সা.] কীভাবে ইতেকাফ করতেন?
১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ পালন করেছেন। [বোখারি : ২০২৬।]

২. এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল পাক-পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।

৩. এতেকাফকালীন রাসুল কোন অসুস্থ ব্যক্তির দর্শনে যেতেন না, অংশ নিতেন না কোন জানাজায়, বর্জন করতেন স্ত্রী সংস্পর্শ বা সহবাস। আয়েশা রা. বলেন : এতেকাফকারীর সুন্নত হচ্ছে অসুস্থের দর্শনে গমন না করা, জানাজায় অংশ না নেয়া, নারী সংসর্গ ও সহবাস বর্জন করা এবং অত্যবশ্যকীয় কোন প্রয়োজন ব্যতীত এতেকাফ হতে বের না হওয়া। [আবু দাউদ : ২৪৭৩।]

৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যবশ্যকীয় কোন কারণ ব্যতীত এতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় কোন কারণ ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না। [বোখারি : ২০২৯।]

৫. এতেকাফরত অবস্থায় রাসুলের স্ত্রী-গণ তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং কথোপকথন করতেন তার সাথে। সাফিয়া রা. বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় আমি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এলাম, তার সাথে আলাপ করে অত:পর চলে এলাম…। [বোখারি : ৩০৩৯।] প্রমাণ করে, এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল স্ত্রী-গণের সংবাদ নিয়েছেন। এতেকাফের ফলে যে মূর্খরা তাদের পরিবার-পরিজনের কথা ভুলে যায়, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

যে ৫টি ভুলে নিজেই ধ্বংস করছেন নিজের জীবন!

আপনি নিজেই নিজের জীবন ধ্বংস করছেন না তো? স্বার্থপর শব্দটা আমাদের সমাজে এত প্রচলিত যে, নিজের কথা ভাবা মানেই যেন অপরাধ। আশপাশের মানুষকে মনোযোগ দিতে দিতে আমরা ভুলে নিজের দিকে মনোযোগ দিতে। আমাদের মন সারাক্ষণ এই চিন্তায় ব্যাস্ত থেকে যে, কে কী ভাবলো, কে কী বলবে! আমরা চিন্তা করতে ভুলে যাই, আমরা কি চাই। জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো চোখ বন্ধ করে সবাই যেভাবে নেয় সেভাবে নিয়ে ফেলি। ভাবি না, আমাদের সুখ-দুঃখগুলো আমাদের স্বপ্নকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। একটা ভুল সিদ্ধান্ত সারাজীবনের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে! আসুন জেনে নিই, আপনার অজান্তেই হয়ত এই বিষয়গুলো ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে আপনার জীবনকে।
ভুল মানুষ পছন্দ করা
আপনার জীবনসঙ্গী যদি একজন ভুল মানুষ হয় তাহলে জীবনটাই ভুলে ভরে যায় যেন! সঠিক মানুষ কে? ভুল মানুষ মানে কি? সম্পর্কের কিছু শর্ত থাকে। যে মানুষটি সেই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন তিনিই আপনার জীবনের সঠিক মানুষ। এই শর্তগুলো আলাদা হয় মানুষ ভেদে। ভাল বোঝাপড়া, অর্থ-কড়ি, বন্ধুত্ব মিলে গেলেও অনেক সময় দাম্পত্য সুখের হয় না। কখনো কখনো জীবনের হতাশা গ্রাস করে বেঁচে থাকের সৌন্দর্য্যকে। কখনো আবার জন্ম নেয় অশ্রদ্ধা, ঈর্ষা! সম্পর্কের টানাপোড়েন মানসিক ক্ষয় ঘটায় সবচেয়ে বেশী। কারণ মানুষ আর যা কিছু ত্যাগ করেই বেঁচে থাকুক না কেন ভালবাসার সম্পর্কগুলো তার জীবনে থাকে অক্সিজেনের মত। এই অক্সিজেন ছাড়া জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে।
নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করা
আমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে ইতস্তত বোধ করি সবসময়। এজন্য যেমন অনেক সময় আমাদের অনুরোধে ঢেকি গিলতে হয় তেমনি অন্য দিকে হয়ত সময় পেরিয়ে যায় আর প্রিয়জনকে বলা হয় না, তিনি কতটা বিশেষ আমাদের জীবনে। এই ভুল করবেন না। প্রতিদিন যে মেয়েটাকে নিয়ে স্বপন সাজিয়ে চলেছেন, তাকে বলুন তাকে ছাড়া আর ভাবা যায় না সামনের দিনগুলির কথা। মাকে জড়িয়ে ধরে বলুন, তাকে কতটা ভালোবাসেন! আমরা খেয়াল করি না, কিন্তু মুখ ফুটে না বলা সম্পর্কে তৈরি করে শূন্যতা। কখনো কখনো এই শূন্যতায় হারিয়ে যায় মানুষটা। আর আমরা ডুবে যাই হতাশায়।
অতিরিক্ত প্রত্যাশা
জীবনের কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশাও জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমাদের স্বপন হওয়া উচিত আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। স্বপন দেখার পাশাপাশি বাস্তবতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। সফলতা আর ব্যর্থতা চলে পাশাপাশি। মেনে নিতে হবে ব্যার্থ হলেও। বেশীর ভাগ মানুষের জীবনে হতাশা নেমে আসে প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশার হিসেব মেলে না বলে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশাকে পাড়ি দিতে হয় বন্ধুর পথ, মানিয়ে চলতে হয় অনেক পারিপার্শ্বিকতা। তার সাথে যোগ হয় নিজেদের ছোট ছোট ভুল পদক্ষেপ। ফলে সবসময় মেলে না সফলতার সুখপাখি। বাস্তবতা বোধের ঘাটতি জীবনকে ঠেলে দেয় ধ্বংসের দিকে।
অতীত দিয়ে বর্তমানকে বিচার করা
ফেলে আসা সময় দুই ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের জীবনে। এক, অতীতের ভয়ংকর কোন স্মৃতি কেড়ে নিতে পারে বর্তমানের প্রতি ভরসা। দুই, সুন্দর অতীতকে মনে করে বর্তমানের টানাপোড়েন মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে আমাদের। দুইটাই খুব বড় ভুল, যা ক্ষমতা রাখে জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার। ভাল থাকতে হলে জীবনে থাকা চাই সন্তুষ্টি। আর সেজন্য বর্তমানকে বর্তমান দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। উপভোগ করতে হবে সবটা আনন্দ আজই, কারণ যা চলে গেছে তা ফিরে আসে না। যা আছে তা অমূল্য, তাকেই সাজাতে হয়। এভাবেই ভাল থাকা যায়।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা
আপনার বন্ধুরা আপনার চেয়ে বেশী সফল? আপনার ভাই বোনেরা আপনার চেয়ে অনেক ভাল আছে? সব সময় নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে আপনি নিজেই হয়ত নিজেকে হিনমন্য করছেন। হিনমন্যতা রূপ নিতে পারে মানসিক ব্যাধিতে। এই ব্যাধি তিলে তিলে শেষ করে দেয় মানুষকে। নিজেকে ভালবাসুন, আপনার যা কিছু আছে তাই নিয়ে আরও ভাল জীবনযাপনের জন্য পরিশ্রম করুন। নিজের সফলতাকে শুধু নিজের দেওয়া শ্রমের সাথেই তুলনা করুন। অন্যের সাথে নয়।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার

 

রেস্টুরেন্ট স্বাদের মজাদার চিকেন চাপ এখন তৈরি হবে ঘরে

চিকেন চাপ রেস্টুরেন্টে গেলে অনেকেই এই খাবারটি অর্ডার করে থাকেন। পরোটা, নান রুটি অথবা পোলাও সবকিছুর সাথে খেতে দারুন লাগে এই খাবারটি। ভারতে একটু ভিন্নভাবে তৈরি করা হয় চিকেন চাপ। রোজায় সেহেরিতে হোক অথবা ঈদে তৈরি করে নিতে পারেন মজাদার এই খাবারটি। আসুন তাহলে চিকেন চাপের রেসিপিটি জেনে নেওয়া যাক।

উপকরণ:

৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস (বড় করে কাটা)

জাফরন

লবণ

২ চা চামচ মরিচের গুঁড়ো

১/২ চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো

২ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো

১/২ চা চামচ চিনি

১ চা চামচ গরম মশলা

১টি ছোট পেঁয়াজের পেস্ট

১০০ মিলিগ্রাম টকদই

৫ টেবিল চামচ বেসন

১ টেবিল চামচ আদা রসুনের পেস্ট

তেল

২ টেবিল চামচ ঘি

১ চা চামচ গোলাপ জল

প্রণালী:

১। প্রথমে রান্না করার পাত্রে জাফরন গলানো পানি, লবণ, লাল মরিচ গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো, ধনিয়া গুঁড়ো, চিনি, গরম মশলার গুঁড়ো, পেঁয়াজের পেস্ট, টকদই, বেসন, আদা রসুনের পেস্ট ভাল করে মিশিয়ে নিন।

২। এরপর এর সাথে ৩ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

৩। মশলা তৈরি হয়ে গেলে এতে মুরগির টুকরো দিয়ে ৩০ মিনিট মেরিনেইট করার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।

৪। চুলায় প্যান গরম করতে দিন। প্যান গরম হয়ে আসলে এতে ঘি দিয়ে দিন।

৫। তারপর এতে মেরিনেইট করা মাংসের টুকরোগুলো দিয়ে দিন। সাথে মশলা এবং প্রয়োজন পড়লে সামান্য পানি দিয়ে দিতে পারেন।

৬। অল্প আঁচে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৩০ মিনিট রান্না করুন।

৭। গোলাপ জল দিয়ে মাঝারি আঁচে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন।

৮। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার চিকেন চাপ।

 

ফ্যাশন হাউজ এসএ ওয়ার্ল্ডের যাত্রা শুরু

বানিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের পর এবার রাজধানী ঢাকার মিরপুরে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বমানের ফ্যাশন সামগ্রী সংগ্রহশালা ও বিক্রয়কেন্দ্র এসএ ওয়ার্ল্ড।

শুক্রবার (২৪ জুন) এসএ ওয়ার্ল্ড লাইফ স্টাইল শপের উদ্বোধন করবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এ উপলক্ষ্যে উদ্বোধনীর দিন বিকেল ৪টায় মিরপুর ৬ এর এসএ হেইটস(প্লট-১৬, ব্লক-কেএ, সেকশন-৬ মিরপুর, ঢাকা-১২১৬)’-এ অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আয়োজন। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন দেশের জনপ্রিয় মডেল জুটি নোবেল ও মৌ।

বুধবার রাজধানীর কাকরাইলের এসএ পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আয়োজনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এসএ ওয়ার্ল্ড ও এসএ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন এস এ গ্রুপের ডিরেক্টর সামসুল আলম পান্থ, এসএ চ্যানেলের সিইও সৈয়দ সালাহ উদ্দিন জাকী, এসএ গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর হাসান মঞ্জুর এবং এসএ ওয়ার্ল্ডের জিএম পিনাকী চক্রবর্তী।

সংবাদ সম্মেলনে সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসএ গ্রুপ অব কোম্পানিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় যুক্ত হয়েছে এসএ ওয়ার্ল্ড। এসএ ওয়ার্ল্ড মূলত আন্তর্জাতিক মানের একটি লাইফ স্টাইল শপ। বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডেড পণ্যসমূহ বাংলাদেশের মানুষের হাতের নাগালে এনে দিতেই এসএ ওয়ার্ল্ডের যাত্রা। এসএ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের এই ফ্যাশন হাউসটির প্রথম শাখা বিগত ৪জুন চালু হয় চট্টগ্রামের পূর্ব নাসিরাবাদে এসএ পরিবহন পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিসের ভবনে। এবার ঢাকার মিরপুরে চালু হতে যাচ্ছে। এরপর রংপুরসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এর শাখা সম্প্রসারিত হবে।

তিনি বলেন, এই ফ্যাশন হাউজে বিশ্বমানের ব্র্যান্ডের পণ্য সামগ্রী ন্যায্য দামে সীমিত লাভে এবং কিছু পণ্য লাভ ছাড়ায় দেশের মানুষের হাতে তুলে দেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে থেকে জানানো হয় ঢাকার মিরপুর ৬ নম্বরের এসএ ওয়ার্ল্ড এর নিজস্ব ভবনের এই দ্বিতীয় শাখায় থাকবে নারী, পুরুষ ও শিশুদের সব ধরনের পোশাক, প্রশাধনী, জুয়েলারি ও আন্তর্জাতিকমানের আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড পণ্য। এসএস ওয়ার্ল্ড এর ফ্যাশন হাউসে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের নামিদামি শপিংমলের আদলে সব ধরনের উন্নত প্রযুক্তি। থাকবে হালফ্যাশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একদল আধুনিক দক্ষ কর্মীবাহিনী।

 

মিষ্টি দিদি

স্বামীর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়ার কথাই ছিল লিপিকা দেবনাথের। কিন্তু দুটি শিশুসন্তান নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। স্বামী রঞ্জন দেবনাথের মৃত্যুর দুই দিন পর লিপিকা স্বামীর রেখে যাওয়া মিষ্টির দোকানের হাল ধরেন। অভিজ্ঞতা ছাড়াই দুই বছর ধরে নিজে চালাচ্ছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এখন সংসার আর ব্যবসা দুটোই সামলাচ্ছেন তিনি।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী বাজারে লিপিকা দেবনাথের মিষ্টির দোকান। আমাদের সমাজে একজন বিধবা নারীর পক্ষে এ ধরনের ব্যবসা করতে হলে মানসিক শক্তি প্রয়োজন। আর তা লিপিকাকে দেখলেই বোঝা যায়। উচ্চশিক্ষিত লিপিকা দেবনাথ চাইলেই চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। তাঁর দোকানে ছয়জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
গত ২৩ মে সকালে মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী বাজারে লিপিকা দেবনাথের সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারি মিষ্টির দোকানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। লিপিকার বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দীঘলদি গ্রামে। ভোলা সরকারি কলেজ থেকে বিএ এবং বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি করেছেন। ২০০৪ সালে যোগ দেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। চাকরির সুবাদে চলে আসেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায়। ২০০৬ সালে পরিচয় হয় তুষখালী বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী রঞ্জন দেবনাথের সঙ্গে। প্রথমে ভালো লাগা এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দেন লিপিকা। দেড় বছর পর প্রথম সন্তান তন্ময় দেবনাথের (৮) জন্ম। চার বছর পর লিপিকার কোলজুড়ে আসে আরও এক সন্তান (তীর্থ দেবনাথ-৪ বছর)।

স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে সুখে চলছিল দিনগুলো। ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রঞ্জন দেবনাথ মারা যান। রঞ্জনের মৃত্যুর পর ব্যবসা দেখভালের মতো কেউ ছিলেন না। শ্বশুর নেই। একমাত্র দেবর আলাদা ব্যবসা করেন। মিষ্টির দোকান চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। বাধ্য হয়ে স্বামীর ব্যবসার দায়িত্ব নেন লিপিকা। সেই থেকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা আড়াইটা আবার বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দোকানে বসেন তিনি। দোকানের ব্যবস্থাপকের কাজ, মিষ্টি মোড়কজাত করা ও পরিমাপের কাজ তিনি নিজেই করেন। তাঁর দোকানে ছয়জন কর্মচারী ও কারিগর রয়েছেন। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন।

লিপিকা দেবনাথ বলেন, ‘শুরুতে দ্বিধা ছিল। তবে আমার স্বামী রঞ্জন দেবনাথ সদালাপী ছিলেন। সবাই তাঁকে ভালোবাসতেন। সবাই আমাকে ব্যবসায় আসার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন।’

দোকান-ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও সংসারের খরচ শেষে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা সঞ্চয় করেন তিনি। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ওই টাকা জমাচ্ছেন।

কীভাবে সংসার ও ব্যবসা সামলান একসঙ্গে? লিপিকা দেবনাথ বললেন, ‘শাশুড়ি ছোট দেবরের সঙ্গে থাকেন। ছোট ছেলেকে মায়ের কাছে ভোলায় রেখে এসেছি। বড় ছেলে দিনে শাশুড়ির কাছে আর রাতে আমার কাছে থাকে।’ রান্নাবান্না দোকানের পেছনে রান্নাঘরে করা হয়। কর্মচারীদের নিয়ে তিন বেলা খাবার দোকানেই খেয়ে নেন। দোকানের মালামাল কেনা, মিষ্টান্ন তৈরি—সব কাজ নিজে তদারক করেন।

লিপিকা বলেন, গান করা ও বই পড়া পছন্দ করলেও কাজের ব্যস্ততায় এগুলো করার সুযোগ পান না। এখন দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানো আর স্বামীর ব্যবসাকে আগলে ধরে বাকি জীবন পার করতে চান তিনি।

দোকানের কর্মচারীরা বলেন, ‘লিপিকা দেবনাথের মিষ্টি ব্যবহার ও দোকানের সুনামের কারণে ব্যবসা ভালোই চলছে। অন্যান্য দোকানের চেয়ে আমাদের দোকানে বিক্রি বেশি হয়।’ তুষখালী বাজারের ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘দিদির (লিপিকা) দোকানের মিষ্টি ভালো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ হওয়ায় ওই দোকানে ক্রেতা বেশি।’

তুষখালী আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম আকরামুল ইসলাম বলেন, লিপিকা দেবনাথকে দেখে প্রথমে আমরা অবাক হয়েছি। আমাদের সমাজে একজন গ্রামীণ নারীর পক্ষে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা খুব সহজ ছিল না। তবে লিপিকা দেবনাথের অসীম মনোবল ও ধৈর্যশক্তির জন্য তিনি এ ধরনের কাজে সফল হয়েছেন।

 

বাজেটে নারীর হিস্যা ২৭%!

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নারীর জন্য বা নারী উন্নয়নের জন্য কী আছে? তা জানার কৌতূহল থাকতে পারে নারী-পুরুষ সবারই।
টাকার অঙ্কটাই আগে জেনে নেওয়া যাক। অঙ্কের হিসাবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেটে নারীর হিস্যা ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৭১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা থেকে তা আগামী অর্থবছরের জন্য ২০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বেশি। বুঝতে একটু অসুবিধাই হওয়ার কথা। নারী উন্নয়নে এত টাকা! কই, কীভাবে খরচ হয়!
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতিবারই ‘জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করে আসছেন। প্রথমবার ছিল ৪টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন। তবে, কয়েক বছর থেকেই এ প্রতিবেদন করা হচ্ছে ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে। এই প্রতিবেদনেই বছরওয়ারি বাজেটে মোট বরাদ্দে নারী উন্নয়নের অংশ ও পরিমাণ দেওয়া রয়েছে।
প্রতিবেদনে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে তিন ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সাতটি মন্ত্রণালয় নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে জড়িত ৯টি মন্ত্রণালয়। আর বাকি ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর সুযোগ বৃদ্ধিসংক্রান্ত।
জেন্ডার বাজেটের আলাদা প্রতিবেদন করায় কী লাভ হলো তা অবশ্য সরকারই এখনো জানে না। অর্থমন্ত্রী তাই বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, ‘এ উদ্যোগ নারী উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রেখেছে তা মূল্যায়নে একটি সমীক্ষা পরিচালনার কথা ভাবছি।’
আলাদা প্রতিবেদন করা হয়েছে বলেই কিনা বাজেট বক্তব্যে নারী উন্নয়ন নিয়ে বিশদ কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। শুধু বলেছেন, ‘নারীদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ তৈরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা কাজ করছি।’
রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে কর্মজীবী হোস্টেল নির্মাণ, বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার জন্য ৭টি পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা এবং আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও বলেছেন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট খোলা হবে। আর সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে করা হবে ‘চ্যালেঞ্জ তহবিল’ নামে একটি তহবিল।
তাহলে নারী উন্নয়নে ৯২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দের হিসাবটি কী? অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে যত নারী আছে, তাঁদের জন্য এই টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। নারী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, বেসরকারি স্কুল-কলেজের নারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, নারী নির্যাতন বন্ধসহ নারীর জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যেসব সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যয়ভারের যোগফলই হচ্ছে বাজেট বরাদ্দের এই টাকা।
বাজেট বরাদ্দে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা ১০০ কোটি টাকা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমাদ। প্রথম আলোকে কয়েক দিন আগে তিনি বলেন, বরাদ্দ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সরকার টাকা ছাড় করে না। যেমন চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা থেকে শেষ পর্যন্ত ছাড় হবে ৩৪ কোটি টাকা।
জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনের মুখবন্ধে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং নারীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জনে আমাদের আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার যে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির মূলধারায় নারীর সম্পৃক্ত হওয়া।