banner

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 441 বার পঠিত

 

সামান্য ভুলে শিশু গৃহকর্মীকে বর্বর নির্যাতন


নারী সংবাদ


চার মাস আগে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর ব্যবসায়ী শরীফ চৌধুরীর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয় ১২ বছরের শিশু হাওয়া। প্রতি মাসে তার পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু বেতন তো দূরের কথা, প্রতিদিন তার কপালে জুটত বেধড়ক পিটুনি। কাজে সামান্য ভুল হলেই চলত অমানবিক নির্যাতন। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হতো না। এভাবে দিনের পর দিন নির্যাতনের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। স্বজনের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে বুধবার তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। অভিযানে কথিত মানবাধিকার কর্মী গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাইমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, অভাবের তাড়নায় কাজ করতে এসেছিল ছোট্ট শিশুটি। কিন্তু এই দম্পতি তার ওপর মারাত্মক নির্যাতন চালিয়েছে। শরীরে চট জড়িয়ে তাকে পেটানো হয়েছে। শিশুটির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। অমানবিক এ ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালায় পুলিশ। গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী নিজেকে মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পরিদর্শক বলে দাবি করেন এবং চোটপাট করেন। পরে অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। স্ত্রীসহ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।

নির্যাতিত শিশুর মামাতো বোন শাহনাজ বেগম ঢামেক হাসপাতালে জানান, হাওয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার নগরকুল গ্রামে। তার বাবার নাম শুনু মিয়া। চার ভাইবোনের মধ্যে হাওয়া সবার বড়। চার মাস আগে তাকে দক্ষিণ বনশ্রীর ই-ব্লকে ৮/২ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলায় কাজ করতে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলেন না স্বজনরা। ওই বাসায় গেলেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেননি শরীফ চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাইমা। বারবার এভাবে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে শিশুটি কী অবস্থায় রয়েছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তার ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন চলছে বলে নানাভাবে খবর পেয়ে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গতকাল তারা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ দুপুরে ওই বাসায় অভিযান চালায়।

খিলগাঁও থানার এসআই সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রথমে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। গৃহকর্তা শরীফ চৌধুরী নিজেকে মানবাধিকার কর্মী দাবি করেন এবং শিশুটিকে পুলিশের সামনে আনতে আপত্তি জানান। পরে পুলিশ চাপ দিলে তিনি শিশুকে ঘর থেকে বের করে আনেন। এ সময় দেখা যায়, সে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে। তার মাথার চুল ছোট করে দেওয়া হয়েছে। তার চোখেমুখে যন্ত্রণা ও ভয়ের ছাপ। প্রথমে সে পুলিশ দেখেও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে বোঝানো হয়, তাকে উদ্ধারের জন্যই এসেছে পুলিশ। তার স্বজনরাও সঙ্গে আছে। ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পর শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে তার ওপর চালানো নিষ্ঠুর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। পান থেকে চুন খসলেই তাকে মারধর করা হতো। নানা কৌশলে তাকে নির্যাতন করতেন ওই দম্পতি। সুত্র: সমকাল।

Facebook Comments