banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 268 বার পঠিত

বিচারহীন অবস্থা ই নারী নির্যাতন কে উৎসাহিত করছে

1402155849.
দেশে ধর্ষণের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হলেও অক্টোবর মাসে তা হয়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান মতে, গত অক্টোবর মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে মোট ১০৩টি । তার মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭ জনকে। এই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সূচকই বেড়েছে। এমতাবস্থায় সমাজের বিশিষ্টজন মনে করেন, বিচারহীনতা ধর্ষণসহ সকল ধরনের নারী নির্যাতনকে উত্সাহিত করছে। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল জানায়, তারা নারী নির্যাতনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। পূর্বের তুলনায় প্রকাশ বেশি হওয়ায় মনে হচ্ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনার রিপোর্টে আরও দেখা যায়, শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ৭ নারী এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ জন। এসিডদগ্ধের শিকার হয়েছেন ১১ জন । তার মধ্যে এসিডদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৯ জন । তার মধ্যে অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে মোট ৬ জন নারীর ক্ষেত্রে। নারী ও শিশু পাচার করা হয়েছেন ২ জন। তার মধ্যে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১ জনকে। ৯৪ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪০ জন নারী।  এদের মধ্যে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ১৬ জনকে। গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮ জন । তার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে। উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ৩৮ জনকে। ফতোয়ার শিকার হয়েছেন ৩ জন। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ২২ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে এবং ২১ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১২ কিশোরী। নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীও। গত অক্টোবর মাসে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ নারী। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ১২ জনকে। এছাড়া অন্যরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এ মাসে ১৯টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় বাড়ি, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
কেন দিনদিন ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান ইত্তেফাকে বলেন, সকলের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে নারী নির্য়াতন হতো না। বিচারহীনতা নারী নির্যাতনকে উত্সাহিত করে। আমাদের এখানে ধর্ষণ করে কেউ শাস্তি পায় না। ধর্ষণের মামলা পুলিশ নিতে চায় না। দুই একটা যদিও নেয় তা শেষ পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারে না অপরাধীকে। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর প্রতি চিরায়ত লোলুপ দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষণসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী । তারপর যোগ হচ্ছে নতুন নতুন কারণ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক,সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কারণেও আজ নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। নারীকে অপদস্ত করার প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য উপায় বেছে নেয়া হচ্ছে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত নয় , ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ শেষে তা প্রচার করেও তারা অর্থ উপার্জন করছে। এই সকল ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধের অভাব আছে। তা রোধ করতে সরকারের কঠোর হওয়ার আহবান জানান তিনি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল -ইসলাম বলেন, ধর্ষণের মামলা গ্রহণ ও শাস্তি দানের জন্য যথেষ্ট প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে দোষী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা যায় না। তবে সরকার এই বিষয়গুলো উতরে ওঠারও চেষ্টা করছে।
সূত্র- ইত্তেফাক। 
Facebook Comments