banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 386 বার পঠিত

দেশ-বিদেশে ধুনটের নারীদের তৈরি টুপি

Bogra-Cap

 

আলমগীর হোসেন, বগুড়া : এক সময় ধুনট উপজেলার অনেক নারী সংসারের কাজ সেরে দিনের অনেকটা সময় ঘরে বসে বা পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প গুজবে কাটাতেন। এখন তারা টুপি সেলাইয়ে এত ব্যস্ত যে, কারও সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। তবে ঈদের আগে ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। টুপি তৈরিতে শুধু গৃহিনীরাই নন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও ব্যস্ত।

 

উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, টুপি সেলাই করার এসব দৃশ্য। তাদের তৈরি টুপি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির পাশাপাশি রফতানি হচ্ছে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এখানকার ২১৫টি গ্রামের প্রায় ৭৫ হাজার নারী টুপি সেলাইয়ে যুক্ত। আয় করে সংসারে কাজে লাগাচ্ছেন ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন। সেলাই কাজে ব্যস্ত মহিলারা জানান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার কারণে এখন টুপির চাহিদা বেশি।

 

চৌকিবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ মোমেনা খাতুন বলেন, ‘ছেলের বাবার একলার কামাই দিয়া আগে আমাগোরে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর আমাগোরে তেমন কোনো কষ্ট করতে হচ্ছে না।’ তিনি ৫-৬ বছর আগে থেকে টুপি সেলাই শুরু করেছেন। ঘরের কাজ শেষ করেও দৈনিক ৩-৪টা টুপি সেলাই করেন। তিনি জানান, টুপি বিক্রিতে হাটে-বাজারে যেতে হয় না। বাড়িতেই পাইকারারা এসে প্রতি সপ্তাহে টুপি কিনে নিয়ে যায়। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয়।

 

ওই গ্রামের রাশেদা খাতুন বলেন, ‘আগে হাত খরচের ৫/১০ টাকা স্বামীর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হতো। অভাবের সংসারে কোনো কোনো দিন ৫ টাকাও দিতে পারত না। কিন্তু যখন থেকে টুপি সেলাই শুরু করছি, তখন থেকে আর কারও কাছে হাত পাততে হয় না।’ তিনি প্রতিমাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা আয় করেন।

 

timthumb

 

মোমেনা ও রাশেদা খাতুনের মতো ওই গ্রামের গৃহবধূ লাকি, সনি, কুলসুম, রানু, পারুলসহ আরও অনেকেই টুপি সেলাই করে এখন স্বাবলম্বী। চৌকিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সাথি খাতুন মায়ের কাছে টুপি সেলাই শিখেছে। এখন প্রতিমাসে ৩০টি টুপি সেলাই করে ৫/৬শ’ টাকা আয় হয়। লেখাপড়ার খরচ বাবা-মার কাছ থেকে নিতে হয় না। ধেরুয়াহাটি গ্রামের নিবারন চন্দ্রের মেয়ে রত্না রায় টুপি সেলাইয়ের টাকা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। রত্না গত বছর মথুরাপুর জিএমসি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

 

টুপি সেলাইয়ের কাঁচামাল সুতা ও ক্রুস কাটা পাইকাররা সরবরাহ করেন। ক্রুস কাটার দাম ২৫ টাকা ও সুতার ডলার ৫০ থেকে ১০০ টাকা। কারও টাকা না থাকলেও বাকিতে কাঁচামাল যোগান দেন তারা। পরে টুপি কেনার কাঁচামালের দাম কেটে রেখে বাকি টাকা দেন।

 

চালাপাড়া গ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গ্রামে সুতা ও ক্রুস কাটা সরবরাহ করতে হয়। পরের সপ্তাহে সেলাই করা টুপি কিনে আনি। প্রতিটি টুপির দাম প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আগে শুধু এক ডিজাইনের টুপি তৈরি হতো। এখন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে টুপিরও বাহারি নাম ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে। যেমন- নব্বইফুল, কলারফুল, বকুলফুল, তালাচাবি, স্টার, গুটি, বিস্কুট, আনারস, মৌচাক ও মাকড়শার জাল। সবচেয়ে বেশি দাম নব্বইফুল ও আনারসের। নব্বইফুলের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা, আনারস ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মৌচাক ২৮ থেকে ৩০ টাকা, মাকড়শার জাল ২০ থেকে ২৫ টাকা, বিস্কুট ২৫ থেকে ৩০ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব টুপি ঢাকার চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করেন। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রেও রফতানি হয়।’

 

টুপি তৈরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ধুনট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ফর পুওর পিপলস (ডিসিপি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। ডিসিপি টুপি সেলাই প্রকল্পটি তত্ত্বাবধায়ন ও সহজ শর্তে উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে। এর নির্বাহী পরিচালক এনামুল বারী সরকার বলেন, ‘পাইকারদের তুলনায় আমরা কমদামে ভালো সুতা সরবরাহ করি এবং বেশি দামে টুপি ক্রয় করে থাকি। তাছাড়া নতুন নতুন বিভিন্ন ডিজাইনের টুপিসহ কারুশিল্প বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। টুপি সেলাইয়ের পাশাপাশি কারুশিল্পে প্রশিক্ষিত দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।’

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ ১০ জুলাই ২০১৪

Facebook Comments