banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 461 বার পঠিত

 

চলো ভ্রমণে শুধু দু’জন… শেষ খন্ড।

হঠাৎ লেখার গতি কমে গেলো জাফরের। হোঁচট খেয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে একসময় থেমে গেলো। চোখ তুলে দেখলো সুবহা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সুবহার কথাটা শুনে এত রেগে গিয়েছিল কেন সে? এমন তো নয় যে ফান বোঝে না! ভালোই বোঝে। কিন্তু তবুও সুবহার ফানটা নিতে পারেনি! কেন পারেনি? মানুষের মন আসলেই খুব বিচিত্র! কখনো কখনো অনেক বড় কিছুকেও হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়! আবার কখনো কখনো ছোট্ট একটা ধূলি কণাকেও ঝেড়ে ফেলে দিতে তৈরি থাকে না! কিন্তু যত যাই কিছু হোক না কেন মজা করারওএকটা লিমিটেশন থাকা উচিত! যে কোন সম্পর্কেকে সুন্দর ও গতিশীল রাখার জন্য লিমিটেশন জ্ঞানটা খুব জরুরি! প্রতিটা সম্পর্ক যেমন ভিন্ন, সম্পর্কেও মাঝে বিদ্যমান আদবও ভিন্ন। একটা সম্পর্ক যতই খোলামেলা বা উদার হোক না কেন তাতে বিদ্যমান আদবের বরখেলাপ করা অনুচিত! ইসলামও তো এমনটাই শিক্ষা দেয়! রসিকতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই শরীয়তে। বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত আলী (আ) বলেছেনঃ রাসূল (সা) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেনঃ নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহের লেশমাত্র না থাকে।

ইমাম হাসান (আ.) কে ইমাম আলী (আ) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেনঃ “হে সন্তান আমার! সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।” তোমাকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি” সুবহার বলা এই কথাটিতে কি রসিকতার মাঝে ফেলা যায় ? ঠিক বুঝতে পারছে না জাফর? সেকি ওভার রিঅ্যাক্ট করেছিল নাকি এই ধরণের কথা আসলেই বলা ঠিক না স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যেকে? জানে সুবহা ফান করেই কথাটা বলেছে! কিন্তু ফান করে কি এমন কথা বলা যায় যাতে অন্যের মনে কষ্ট হতে পারে? ফান মানুষ আসলে কেন করে?

ডায়েরী পাশে রেখে জাফর বলল, আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন মানুষ ফান কেন করে?

একটু ভেবে সুবহা বলল, আনন্দ পাবার জন্য।

শুধুই পাবার জন্য?

না দেবার জন্যও।

তাহলে নিশ্চয়ই ফান করে কাউকে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে কষ্ট পেতে পারে তাই না?

হুম… একদমই উচিত নয় এটা।

জাফর হেসে বলল, আমারো এমনটাই মনেহয়। যে কোন সম্পর্কেই ফান আসলে এমন হওয়া উচিত যাতে দুজনই আনন্দ পেতে পারে। অন্যেকে কষ্ট দেবার জন্য যা করা হয় সেটা কখনোই ফান হতে পারে না!

অন্যকে কষ্ট দেয়ার নিয়্যাতে আসলে ফান করাও হয় না সাধারণত।

কিন্তু অন্যেকে ক্ষেপানো, রাগানো না বিরক্ত করার নিয়্যাতে অবশ্যই করা হয়। আমার মতে এটাও ঠিক না! যখন দুজন মানুষ একই রকম নির্মল আনন্দ অনুভব ও উপভোগ করবে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে ফান! সেই হিসেবে ফানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, দুজনের জন্যই সেটা উপভোগ্য হতে হবে। তাছাড়া ফান তো আমরা সাধারণত খুব কাছের মানুষদের সাথেই করি তাই না! যারা মনের খুব কাছের! আর এমন প্রিয় মানুষদেরকে কষ্ট দ্বারা লব্ধ কিছু কি আনন্দের উপকরণ হতে পারে? নাকি হওয়া উচিত?

ভেতরে চেপে রাখা লম্বা শ্বাসটা ধীরে ধীরে বের করে দিয়ে সুবহা বলল, কখনোই হওয়া উচিত নয়। আমি খুব দুঃখিত তোমাকে ঐ কথাটি বলার জন্য।

জাফর হেসে বলল, আমিও খুব দুঃখিত তোমার ফানকে ফান হিসেবে নিতে না পারার জন্য। সম্পর্কের বন্ধন আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে বলেই হয়তো আমি তোমার কাথাটিকে ফান হিসেবে নিতে পারিনি। এখন আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেন দেখি!

সুবহা বললেন, জ্বি কি প্রশ্ন?

জাফর বলল, আপনি এত দূরে বসে আছেন কেন? আপনি যদি এত দূরেই বসে থাকবেন তাহলে কেবিন ভাড়া করার দরকার কি ছিল আমার? শুধু দুজনে মিলে এই ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা ও আয়োজন তো আমরা করেছিলাম জীবনের এই মূহুর্তগুলোর ভাঁজ থেকে শত সহস্র সুখানুভূতির শিহরণ, আনন্দানুভূতি আন্দোলন আর প্রেমানুভূতির বিচ্ছুরণ সমৃদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহের জন্য। যেসব আমরা রেখে যাবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যা ওদের হৃদয়ে ঝরাবে তুমুল শ্রাবণের চাষবাস!

লাজুকতা জড়ানো হাসি ছড়িয়ে পড়লো সুবহার চেহারায়। জাফরের ঠোঁটের কোণেও ফুটে উঠলো ভালোবাসাময় হাসি। ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিলো সুবহার দিকে………

লিখেছেন- ডা.আফরোজা হাসান। সাইকোলজিস্ট,মাদ্রিদ,স্পেন।

Facebook Comments