banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 435 বার পঠিত

 

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?


কানিজ ফাতিমা


Parenting নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশী শুনি তা হলো- “বুঝলাম তো এসব করা খুবই জরুরী….কিন্তু এত কিছু করার সময় কোথায়?”
বাবা- মা হওয়া একটি প্রাকৃতিক নিয়ম ৷ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিটি প্রানীই সন্তান লাভ করে৷ তাই বাবা – মা হওয়ার মধ্যে আলাদা কোনো কৃতিত্ব নেই৷ বাবা-মা হওয়ার মধ্যে তৃপ্তি বা মানসিক সুখ আছে; কিন্তু কোনো কৃতিত্ব নেই৷ কৃতিত্ব আছে “ভালো বাবা-মা” হওয়ার মধ্যে৷ আর ভালো বাবা-মা হতে হলে তিনটি জিনস অবশ্যই লাগবে-
১. parenting এর জ্ঞান
২. যথেষ্ট সময় ও
৩. ধৈর্য

এই তিনটি প্রয়োজনের দ্বিতীয় প্রয়োজনটা নিয়েই প্রশ্ন সবথেকে বেশী- এত কিছুর সময় কোথায়?

আসুন, আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর তালিকা করি-
যেমন ধরুন, আমাদের তালিকাটা হয়ত এমন হবে-
১. সন্তান মানুষ করা
২. সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখা
৩. চাকরি বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন
অনেকে হয়ত লিখবেন –
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা …ইত্যাদি
যাদের ছেলেমেয়ে আছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সন্তান মানুষ করাকে ১ বা ২ নাম্বারে রাখবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ এবার প্রশ্ন হলো যে কাজটি আপনার জীবনের ১ বা ২ নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার জন্য আপনার সময় হবে না? একটু চিন্তা করে দেখুনতো, আপনি কি আপনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পাশে ফেলে রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিচ্ছেন? আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়- গত তিন দিনে আপনি কি কি কাজ করেছেন যা না করলেও হত বা কম করলেও হত; যেমন-

১. মার্কেটে ৪০/৫০ টাকা বাচানোর জন্য দোকান দোকান ঘোরা
২. পোশাকটি ঠিক আপনার পসন্দ মত হওয়ার জন্য কাপড়ের দোকান, টেইলার্স , লেইসের দোকান……সহ আরো অনেক স্থানে প্রচুর সময় খরচ
৩. টেলিফোনে আত্বীয় বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা
৪. মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাবীদের সঙ্গে কোন কাপড়ের কত দাম, কোথায় পাওয়া যায় ….জাতীয় বিষয় নিয়ে লম্বা গল্প
৫. পুরুষদের ক্ষেত্রে অপ্র্য়্যজনীয় রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক
৬. অনুপস্থিত কারো নামে সমালোচনা করে সময় পার করা
৭. কাজের লোকের কাজ নিখুত করানোর জন্য তার পেছন পেছন লেগে থাকা
৮. টিভিতে অপ্রয়োজনীয় সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান দেখা
৯. প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না বান্না করা
১০. নিজে ও নিজের ঘর ফিট রাখতে অতিরিক্ত সময় খরচ
১১. সামাজিক কাজের নামে বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া
১২. বেশী বেশী ফোন করা ও বেশী বেশী ফোন রিসিভ করা
১৩. বেশী বেশী দাওয়াত দেয়া ও বেশী বেশী দাওয়াত নেয়া
১৪. ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় দেয়া

খেয়াল করুন, অনেক কাজই আছে জরুরী কিন্তু তা সন্তান লালনপালনের থেকে বেশী জরুরী না৷ যেমন ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা ও গুছিয়ে রাখা একটি জরুরী কাজ, কিন্ত অনেকে এটা নিয়ে এতটাই করেন যে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় থাকে না৷ অথচ এ মাত্রাতিরিক্ত কাজগুলো কমিয়ে খুব সহজেই আপনার সন্তানের সঙ্গে activity বা গল্প করার সময় বের করতে পারেন ৷

না বলতে শেখা –

আমরা অনেকেই জায়গামত ‘না’ বলতে পারিনা৷ লজ্জা পাই বা মনে করি অন্য পক্ষ কি ভাববে৷ এমনটা ভাবার দরকার নেই৷ চিন্তা করুন কোন কাজটি তুলনা মূলক বেশী গুরুত্বপূর্ণ; আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে না বলে দিন৷ যেমন ধরুন বাচ্চাকে কথা দিয়েছেন কাল তাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন, এমন সময় শ্বশুর বাড়ী থেকে ফোন এলো কাল সেখানে যেতে হবে এক্ষেত্রে অতীব গুরুত্ব পূর্ণ না হলে শুধু লজ্জার খাতিরে ‘হ্যা’ না বলে “না” করে দিন ৷
এটা শুধু বাইরের লোকের সাথেই না, অনেক সময় একেবারে পরিবারের মধ্যেও ঘটে৷ যেমন কাল বাচ্চার পরীক্ষা এমন সময় যদি স্বামী বন্ধুদের দাওয়াত দিতে চায় তবে কারণ বুঝিয়ে তাকে না করে দিন৷
পরিবারের লোকজন যদি প্রতিদিন ৪/৫ রকম রান্না দাবী করে আর এটা যদি আপনার বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে রান্নার রকম কমিয়ে দিন৷

সঠিকভাবে না বলতে পারা একটি বড় গুন৷ ঝগড়া, বিতর্ক না করে বা রূর (Rude) না হয়ে শক্তভাবে “না” বলতে জানা একটি দক্ষতা৷ এটি অর্জন করলে সন্তানের জন্য সময় বের করা সহজ হয়৷ আমাদের চারপাশে অনেক ‘অভিমানী’ মানুষ রয়েছে যারা ‘না’ তে মাইন্ড করেন৷ সেক্ষত্রে ‘না’ মুখে না বলে কৌশলে বুঝিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ যেমন কেউ দাওয়াত দিলে সরাসরি ‘না’ না বলে এমনটা বলা যায় “শুক্রবার হলে কেমন হয়?”

মোটকথা ,অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দেয়া, মাত্রাতিরিক্ত কাজ কমিয়ে দেয়া ও প্রয়োজনে ‘না’ বলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করে নিতে পারি৷

Facebook Comments