banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 907 বার পঠিত

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৩)

আফরোজা হাসান


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভিমানে মনের আকাশ মেঘলা হয়ে উঠলো আলিসবার। বিকেলে ফেরার কথা মঈনের অথচ এখন রাত নয়টা বাজে। গত সপ্তাহেও দুই দিন এমন দেরী করে বাসায় ফিরেছে মঈন। ফিরতে দেরী হবে সেটা ফোন করেও তো জানাতে পারে, তাহলে তো আর এভাবে অস্থির হয়ে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে হত না তাকে। এসে সরি সরি করবে, একশোটা কারণ দেখাবে কিন্তু একটা ফোন করতে কতটুকু সময়ই বা লাগে? কিছুক্ষণ বইপত্র নাড়া চাড়া করে দেখলো মন বসাতে না পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো সে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাগানে বসে গল্প করছে। অজান্তেই এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো আলিসবার মুখে। গত চার মাসে সে এটা খুব ভালো মতো বুঝে গিয়েছে যে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মহা ভাব। একে অন্যেকে ছাড়া কিছুই বোঝে না দু’জন। পর মুহুর্তেই মঈনের কথা মনে পড়লো তার। অভিমানের মেঘ আরো ঘনীভূত হলো মনের মাঝে। মঈন বুঝি এখনো ফেরেনি? প্রশ্ন শুনে ঘুরে বড় জা’কে দেখে আলিসবা বলল, জ্বী না ভাবী।

-অন্তরা হেসে বলল, তাহলে আমার সাথে চলো। রান্না করতে করতে গল্প করবো।

-রাতের রান্না তো হয়ে গিয়েছে ভাবী।

-হুমম…জানি। কিন্তু তোমার ভাইয়া মাত্র ফোন করে বললেন কয়েকজন মেহমান আসবে উনার সাথে।

-রান্নাঘরে ঢুকে আলিসবা বলল, ভাইয়া বুঝি এমন প্রায়ই করেন?

-কি? হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসা?

-জ্বী।

-হেসে, হ্যা।

-আমার আব্বুরও এই অভ্যাসটা ছিল। হঠাৎ করে মেহমান নিয়ে হাজির হতেন। আম্মুকে তখন অনেক বিপদে পড়তে হতো। হয়তো সারাদিন পর একটু বিশ্রাম নেবার জন্য ঘরে ঢুকেছেন আর আব্বুর ফোন মেহমান নিয়ে আসছি। ঘরে কি রান্না হয়েছে, বাজার আছে কিনা এইসব নিয়ে কোন কথা নেই। এক কথা মেহমান নিয়ে আসছি। এগুলো খুব অন্যায় মনে হয় আমার কাছে।

-হেসে, সমস্যা কি জানো? এগুলো যে অন্যায় সেটা ছেলেরা বোঝেই না। আমার তো মনেহয় সংসারের এসব টুকিটাকি বিষয় বোঝার ট্যালেন্টই ছেলেদের নেই। বিয়ের প্রথম প্রথম আমিও বেশ বিরক্ত হতাম। পরে দেখলাম যে এটা উনার স্বভাব। উনি মেহমানদারী করতে পছন্দ করেন। আর এটা যেহেতু খারাপ কিছু না বরং ভালো তাই নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি এবং ধীরে ধীরে মানিয়েও নিয়েছি।

-তারপরও ভাবী। কত রকমের সমস্যা থাকতে পারে একটা মেয়ের। হাজবেন্ডের এটা বোঝা উচিত।

-হেসে, আসলে সংসার জায়গাটাই বোঝাপড়ার। দুজনেরই বুঝতে হবে দুজনকে। হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসার কাজটি নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেন না আবির? আবার এমনও না যে রোজ রোজ করেন এটা। হয়তো কোন ফ্রেন্ড বা পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো। কখনো আবির অফার করে, কখনো উনারা নিজেরাই আসতে চান বাসায়। এখন এটাকে ইস্যু করলে অশান্তি তো আমাদের দু’জনের জীবনেই আসবে।

-কিন্তু বিষয়টা তো একেবারে ইগনোর করার মতও না।

-আই থিংক ইস্যু করার মতও না। সংসারে সচারচর যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি যেমন মেহমানের জন্য মোটামুটি একটা প্রিপারেশন নিয়েই রাখি সবসময়। আলাদা করে কিছু খাবার রেডি করেই রাখি হঠাৎ আসা মেহনাদের আপ্যায়নের জন্য। তাই তেমন কোন অসুবিধায় পড়তে হয় না কখনোই। এটা না করে যদি আমি রোজ রোজ খিটপিট করতাম আবিরের সাথে, তাহলে আমার জীবনের শান্তিই তো বিঘ্নিত হতো তাই না?

-হেসে, সবসময় কি এত পজেটিভ থাকা সম্ভব ভাবী? কষ্ট হয় না আপনার?

-হয়। কিন্তু আমার কাছে সেই কষ্টের চেয়ে সংসারের শান্তি অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেজন্য স্বামীর দোষ ধরে সময় নষ্ট করার চাইতে, দোষটা আসলেই দোষ কিনা এবং আমার কতটুকু ছাড় আর উনার কতটুকু সংশোধন দরকার, সময়টাকে সেই কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করি। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, দোষ খুঁজে আমরা যেই সময়টা ব্যয় করি, সেই সময়টা যদি একে অন্যেকে বোঝার ও সংশোধন করার জন্য ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে সংসারটা অনেক সহজ হয়ে যেত আমাদের জন্য।

-হেসে, এত পজেটিভ চিন্তা করার শক্তি কোথায় পান আপনি?

-হেসে, জ্ঞান হবার পর বাবা প্রথম যে জিনিসটা আমাকে শিখিয়েছিলেন তা হচ্ছে, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র স্বরূপ। প্রতি মুহুর্তে তাই জীবন আমাদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা নেবে। তাই সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেমন প্রস্তুতি আমরা স্কুল-কলেজের পরীক্ষার জন্য নিয়ে থাকি অনেকটা সেরকম। অন্যের উপর ভরসা করে কি আমরা পরীক্ষার হলে যাই? কখনোই না। কারণ আমরা জানি যার যার পরীক্ষার তাকেই দিতে হবে। আমার বিয়ের দিন বাবা আমাকে এই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

-জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র এটা?

-হেসে, বাবা বলেছিলেন সবসময় মনে রাখবে স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় মতো সংসারটাও একটা পরীক্ষা তোমার জন্য। কারো সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর দেয়া মেধা-প্রতিভা ও নিজের পরিশ্রমের জোড়ে জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় যেভাবে তুমি প্রথম হয়েছো, তেমনি সংসার নামক পরীক্ষাতেও প্রথম হবার ইচ্ছা ও চেষ্টা জারি রাখতে হবে তোমাকে। আর যারা জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় টপ করতে চায়, অন্যেরা কি করছে কি করছে না সেসব দেখার সময় তাদের থাকে না। জীবনের ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোতে সফল হতে হতে তারা ছুটে চলে আখিরাতের চূড়ান্ত সফলতার পানে।

চলবে…..

পর্ব-২

Facebook Comments