ধরুন আপনার সন্তান হঠাৎ কোনো অপরাধ করে ফেললো। অপরাধ করার ফলে তার মধ্যে শাস্তি পাওয়ার চেয়েও বেশি যে ভয়টি কাজ করে তা হলো, আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়। তাই তাকে জানতে দিন শত অপরাধ করার পরেও সে আপনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না।
“বাহ! তোমার ঘর তো খুব পরিষ্কার!” “বিছানা গুছিয়ে ফেলেছো? দারুণ!” “তোমার কাপড়গুলো কী চমৎকার ভাঁজ করেছো! সাবাশ!” – এইসব ছোট ছোট কথায় আপনার সন্তান তার প্রতি আপনার আস্থা আর সমর্থন টের পায়। এগুলোর মাধ্যমে সে বুঝতে পারে তার চেষ্টার কদর করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোনও ইতিবাচক কথায় বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। ফলে তাদের মাঝে ভালো কাজ গুলো বার বার করার স্পৃহা জন্মে।
আমরা মানুষ, আর মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। বাচ্চাদের কাছে ভুল স্বীকার করার এবং ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহস থাকা জরুরী। এতে তারা বুঝতে পারবে যে আমরা তাদের সম্মান করি ও গুরুত্ব দেই। এতে বাচ্চারা শেখে যে, কেউ ভুল করলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ, এবং একই ভুল বার বার করা উচিৎ নয়।
নেতিবাচক অনুভুতি চেপে রাখলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাজনিত মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের রাগ করার অধিকার আছে। বাচ্চারা ব্যথা পেলে বা হারানো খেলনার জন্য মন খারাপ করলে তাদের কাঁদতে দেয়া উচিৎ। নেতিবাচক অনুভূতি বা তার প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসলে শিশুর স্বকীয়তা এবং স্বতঃস্ফূর্ততার ওপরেই নিষেধাজ্ঞা।
পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বাচ্চাকে শেখানো কীভাবে কারো ক্ষতি না করেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়।
ভয় পাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার- এটা বাচ্চাকে বুঝতে দেয়া জরুরী। দুনিয়ার সবাই-ই কিছু না কিছু নিয়ে ভয় পায়, আর ভয়কে জয় করা ভা ভয় সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়াই সাহস। আপনার বাচ্চা যদি কিছু নিয়ে ভয় পায়, তাহলে তাকে আপনার নিজের ছোটবেলার গল্প বলুন, বলুন আপনি কী নিয়ে ভয় পেতেন, আর কিভাবে সেই ভয়কে সামলে নিয়েছিলেন।
শিশুর পছন্দকে প্রাধান্য দিন। এতে করে সে শিখবে কিভাবে নিজের মনের কথা শুনতে হয়, আর কিভাবে তার বিশ্বাস, ইচ্ছা বা আগ্রহের সাথে যায়না এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হয়। যেসব বাচ্চাকে সব কিছুই পছন্দ করে দেয়া হয়, তারা বড় হয়ে নিষ্ক্রিয়, নির্ভরশীল এবং সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
শিশুদের কাছে প্রশ্নহীন আনুগত্য চাওয়ার আগে ২০ বছর পরের কথা ভাবুন। আপনি কি তাকে এমন মানুষ বানাতে চান, যে নিজের মনের কথা না শুনে অন্যরা যাই বলে তাই শোনে?
বাচ্চাকে তার পূর্ববর্তী সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিন। এতে সে তার নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং আরও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
পজেটিভ প্যারেন্টিং ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/