কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৭ উপলক্ষে মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা সকলে মিলে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি। গ্লোবাল জেন্ডার গেপ রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সকল দেশের ওপরে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিগত আট বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন-১৯২৯ এর স্থলে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ পাশ করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩ ডিএনএ আইন-২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা-তালাকপ্রাপ্ত ও নির্যাতিত নারীদের ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা চালু করা হয়েছে। ভিজিএফ, ভিজিডি ও জিআর কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমেও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কাঠামোতে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সকল কর্মকাণ্ডে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি সব পেশায় নারীরা নিয়োগে সমান সুযোগ পাচ্ছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে উন্নয়নের সক্রিয় অংশীদার করা হলে আমরা একটি সমতাভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৭ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নারী জাগরণের অগ্রদূতদের, যাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠায় নারীর সমঅধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হয়েছে তাদের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা-বোন যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা- প্রধানমন্ত্রী তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
প্রতিবেদক:
অবনী আহমেদ