গত ৫০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসছেন ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা সুভদ্রা সরকার। এমন কি দুমাস আগে যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও তিনি ভোট দিয়েছেন। অথচ এতো বছর পর তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে জেলে পাঠিয়েছেন বিদেশি চিহ্নিতকরণের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তারা ওই নারীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
অনেকের অভিযোগ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অনেক এলাকাতেই বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে হয়রানি শুরু হয়েছে নতুন করে। আর এ কারণেই আসামের বঙাইগাঁও জেলার বাসিন্দা বৃদ্ধা সুভদ্রাকে আজ কোকরাঝাড় জেলের মধ্যে একটি বিশেষ আটক-শিবিরে আটক থাকতে হচ্ছে।
বঙাইগাঁও জেলার সীমান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার রঞ্জিত বর্মন বলেন, ‘ওই নারীর কাছে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠানো হয়েছিল আদালতে হাজির হয়ে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে। কিন্তু তিনি আসেননি, তাই ট্রাইবুনাল একতরফা রায় দিয়ে দিয়েছেন। এখানে পুলিশের কিছু করার নেই। তারা এবার হাইকোর্টে গিয়ে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণ করতে পারেন।’
এ ব্যাপারে অবশ্য বৃদ্ধার নাতি প্রহ্লাদ সরকার বলেন, ‘কয়েক দফায় নোটিশ এসেছিল ঠাকুমার নামে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, আদালাতে যেতে পারেননি। আমার কাকা সব নথি নিয়ে গিয়েছিল। তাই মামলাটা ঝুলে ছিল। হঠাৎই ঠাকুমাকে নিয়ে এসপির অফিসে যেতে বলা হয়। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’
তাছাড়া সত্তরের শেষ আর আশির দশকের মাঝ পর্যন্ত চলা আসাম আন্দোলনের শেষে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতেও বলা আছে- ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর পরে যারা বাংলাদেশ থেকে আসামে আসবেন, তাদের বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হবে। অথচ ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে সুভদ্রা সরকারের। তাহলে তিনি কী করে অনুপ্রবেশকারী হন?
সম্প্রতি আসামে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার তৈরি হয়েছে। তাদের ভোটের মূল স্লোগানই ছিল অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে। তবে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যদি কেউ পালিয়ে আসামে চলে আসেন, তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা সরকারি ভাবেই ঘোষণা করেছে বিজেপি।
অবশ্য এর প্রতিবাদও জানিয়েছে বাঙলাভাষী হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলন করে আসা ‘সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন’। সংগঠনটির বঙাইগাঁও জেলা সভাপতি সম্রাট ভাওয়ালের দাবি, রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরই বাংলাভাষী হিন্দুদের ওপর হয়রানি বেড়ে গেছে। একটু এদিক ওদিক হলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মূলত যারা একদম গরীব, অশিক্ষিত তাদেরই বেছে বেছে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। তারা রোজগারের কথা ভাববে না নথি নিয়ে কোর্টে দৌড়াবে?