banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 981 বার পঠিত

 

এই শীতে বাতের ব্যাথায় করনীয়

শীতকালে অনেক সময় জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং জোড়া বা বাতের ব্যথা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পায়। বয়স্ক লোকজন, বিশেষ করে যারা প্রদাহ আর্থ্রাইটিস, রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন তাঁদের কষ্ট বহুলাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়াও পেশী, লিগামেন্ট, হাড় ও স্নায়ুর ব্যথা তীব্ররূপ ধারণ করে। শীতকালে স্বাভাবিক নড়াচড়া কম হয় এবং বায়ুর চাপ কম থাকে বলে মানুষের টিস্যু ফুলে যায়। ফলে জোড়া জমে যায় এবং ব্যথার উদ্রেক করে। শীতের প্রকোপে শরীরের রক্তনালীর খিঁচুনি ও সঙ্কুচিত হলে জোড়া, পেশী ও হাড়ে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং ব্যথা বেড়ে যায়। শীতকালে স্নায়ুর সহ্য ক্ষমতা কম থাকে এবং অল্পতেই উত্তেজিত হয় বিধায় ব্যথার অনুভূতি বেড়ে যায়। শীতকালে ঘাড়, কোমর ও হাঁটুর ব্যথা বেশি বাড়ে। এছাড়াও কটি, গোড়ালি, কাঁধ, কনুই, কবজি ও আঙুলের জোড়া ব্যথাসহ জমে যায়। হাত সামনে পেছনে নেয়া ও হাত দিয়ে কিছু তোলা কষ্টকর। হাঁটু ও কোমর সোজা ভাঁজ করতে এবং বসতে-উঠতে ভীষণ অসুবিধা হয়।
গরম কাপড় পরিধান করে শীত থেকে জোড়াকে রক্ষা করতে হবে। ব্যথা নাশক জেল বা মলম দিয়ে হাল্কাভাবে জোড়ায় ম্যাসেজ করলে ব্যথা নিরাময় হবে। কুসুম গরম পানির সেঁক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের অন্যান্য ওষুধ সেবন করতে হবে। ব্যথা নিরাময়ে জয়েন্টে ইনজেকশন (স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক এ্যাসিড) পুশের প্রয়োজন হয়। এক অবস্থায় (বসা, দাঁড়ানো) আক্রান্ত জোড়াকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে স্টিক, পায়ে কুশনযুক্ত জুতা এবং গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে সাপোর্ট বা ব্রেচ ব্যবহার করতে হবে। হাল্কা ব্যায়াম জোড়া ব্যথা উপশমে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। শীতকালে কঠোর ব্যায়াম আক্রান্ত জোড়ায় রক্ত চলাচল কমিয়ে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। জোড়ার স্বাভাবিক নড়াচড়া এবং পেশী, টেনডন ও লিগামেন্টের নমনীয়তা জোড়াকে ব্যথামুক্ত রাখে।

শীতকালে উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার তীব্রতা কমে আসে। সতেজ শাক-সবজি ও ফলমূল ব্যথা নিরাময়ে খুবই উপকারী। গাজর, শসা, মুলা ইত্যাদি ব্যথা সৃষ্টিকারী পদার্থগুলোকে শরীর থেকে সহজেই বের করে দেয়। প্রতিনিয়ত ফলের রস সেবন জোড়াকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। শীতকালে সকালে খালিপেটে রসুন সেবন করলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জোড়ায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ব্যথা কমে যায়। আদা ও লেবুর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে এবং রাতে সেবন করলে আর্থ্রাইটিস ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এ ও সি সেবন করতে হবে। এতদ সত্ত্বেও ব্যথা উপশম না হলে উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
হাড়, ট্রমা ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং অর্থোস্কোপিক সার্জন
ডিজিল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মিরপুর

Facebook Comments