রমদ্বান মাস ইসলামের পবিত্রতম মাস, আর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ মাসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিতেন। তিনি শুধু রমদ্বান শুরু হলে আমল বাড়াতেন না, বরং রজব ও শাবান মাস থেকেই রমদ্বানের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এখানে আমরা মহানবী (সা.)-এর রমদ্বানের প্রস্তুতি গ্রহণের পদ্ধতি তুলে ধরছি।
১. রজব মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু
ছয় মাস আগেই মহানবী (সা.) রমদ্বানের বরকত লাভের দোয়া করতে শুরু করতেন। বিশেষত, রজব মাস এলেই তিনি বলতেন—
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শা‘বানা, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমদ্বান পর্যন্ত পৌঁছে দাও। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৪৬৮)
২. শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
মহানবী (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি রাসূল (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি কোনো মাসে রোজা রাখতে দেখিনি।” (বুখারি, হাদিস: ১৯৬৯)
তবে যারা শাবান মাসের শুরু থেকে নফল রোজা রাখতেন না, তাদের জন্য শেষের দিকে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন, যেন তারা রমদ্বানের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারে।
৩. শাবানের শেষে চাঁদ দেখা
প্রতি আরবি মাস শুরুর আগে রাসূল (সা.) চাঁদ দেখার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। তিনি সাহাবিদের চাঁদ দেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপনের নির্দেশ দিতেন।
নতুন চাঁদ দেখলে তিনি এই দোয়াটি পড়তেন—
اللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান, নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)
৪. রমদ্বানের ফজিলত ও গুরুত্ব আলোচনা
শাবান মাসে মহানবী (সা.) সাহাবাদের রমদ্বানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতেন। তিনি বলতেন, “তোমাদের কাছে বরকতময় রমদ্বান এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তার সিয়ামকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়, আর এতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো।” (সুনানে নাসায়ি)
৫. আত্মিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া
রমদ্বানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মহানবী (সা.) ইবাদতের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতেন। তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অধিক পরিমাণ দু’আ এবং যিকিরের মাধ্যমে আত্মিক শক্তি অর্জন করতেন।
শারীরিকভাবে প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতেন, যাতে রমদ্বানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করা সম্ভব হয়।
৬. পরিবার ও সমাজকে প্রস্তুত করা
রাসূল (সা.) তার পরিবার ও সাহাবিদের রমদ্বানের জন্য প্রস্তুত করতেন। তিনি তাদেরকে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, সদকা ও অন্যান্য ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করতেন।
তিনি বিশেষত শিশুদের রোজা রাখার প্রতি আগ্রহী করতেন এবং ছোটদের ধীরে ধীরে রোজার প্রতি অভ্যস্ত করার উপদেশ দিতেন।
মহানবী (সা.) আমাদের জন্য রমজানের প্রস্তুতির অনন্য আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি রজব থেকে প্রস্তুতি শুরু করতেন, শাবানে নফল রোজার মাধ্যমে অভ্যাস গড়ে তুলতেন, রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং তার পরিবার ও সাহাবিদের আত্মিকভাবে তৈরি করতেন।
আমাদেরও উচিত মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া, যেন আমরা এই পবিত্র মাসের সর্বোচ্চ বরকত লাভ করতে পারি।