মাগুরা জেলায় এক দশক আগেও শীতের মৌসুমে সকালে রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ত। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠা-পুলির আয়োজন।
পাশাপাশি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের সুনাম তো ছিলই। তবে গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব অনুষঙ্গ। নানাবিধ কারণেই গ্রামের মানুষ যেন ভুলতে বসেছে এসব ঐতিহ্যবাহী উপাদান।
মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা রহিমা বেগম জানান, তিনি প্রতিবছর শীতের সময় বাবার বাড়িতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসেন শুধু খেজুর রস ও রসের তৈরি পিঠা-পুলি খেতে। কিন্তু কয়েক বছর হলো এখন তিনি আর রস খেতে পান না।
তিনি জানান, তার চার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি এবছরও তার ছেলে-মেয়েদের এখন পর্যন্ত খেজুরের রসের তৈরি পিঠা-পুলি খাওয়াতে পারেননি।
মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামের গাছি ওয়ালিয়ার জানান, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছের খড়ি ব্যবহারের কারণে এ গাছ কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছের খড়ি তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এ গাছের চাহিদা প্রচুর।
তিনি জানান, খেজুর গাছের ব্যাপক নিধনের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মাগুরায়ও কমছে খেজুর গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে খেজুরের রস। আসলে গাছ বাঁচাতে পারলেই রস পাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘মাগুরায় কিছু খেজুর গাছ থাকলেও গাছির সংকটে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক গ্রামের ব্যবধানে দু’একজন গাছি পাওয়া গেলেও গাছ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রস সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে খেজুরের রসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী শীতের নবান্ন উৎসবের খেজুর রসের ক্ষির, পুলিপিঠা, রসের মন্ডা মিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এ ঐতিহ্য বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ জাগোনিউজ