banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 436 বার পঠিত

 

স্বাতীর রঙধনু

স্বাতীর রঙধনু


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।

Facebook Comments