banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 906 বার পঠিত

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।
ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।
সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
আশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠলো। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”।
“স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন।
আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

Facebook Comments