banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 615 বার পঠিত

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিক আছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কি রে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনে হচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমেট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ সময়। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

Facebook Comments