banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

রেসিপি ( পিঁয়াজু এবং কাঁচা আমের শরবত)


রেসিপি


ঠান্ডা ঠান্ডা কাঁচা আমের শরবত

কাঁচা আমের শরবত ইফতারিতে খেতে মজা। গরমকালের জন্য পারফেক্ট শরবত কাঁচা আম।

উপকরণ

কাঁচা আমের টুকরো এক বাটি, ৪ চামচ লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়ো, বরফকুচি, পুদিনা পাতা।

বানানোর পদ্ধতি

কাঁচা আমের টুকরোর সাথে অল্প লেবুর রস, পরিমান মত চিনি, স্বাদ মত লবণ, দুটো কাঁচা মরিচ, আদা কুচি, জিরাগুঁড়োসহ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন ভালো করে। এবার একটি বাটিতে লেবুর রস নিন। যে গ্লাসে শরবত খাবেন সেই গ্লাসটি উল্টো করে গ্লাসের মুখটা লেবুর রসে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এবার লেবুর রস থেকে গ্লাসটিকে সরিয়ে ঠিক একই ভাবে বিটনুন ও জিরের গুঁড়ো অল্প লাগিয়ে নিন। এর ফলে শরবত খাওয়ার সময় বেশি স্বাদ পাবেন।

পরিবেশন
পুদিনাপাতাসহ, বরফকুচি দিয়ে পরিবেশনের করতে পারেন।

মচমচে পিঁয়াজু

ইফতারির সবচেয়ে মজাদার আইটেম হলো পিঁয়াজু। আর সেই পিঁয়াজু যদি মচমচে হয় তাহলে কত মজা হতে।

 উপকরণ
মসুর ডাল, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ চালের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, আদা বাটা, পাউরুটি, রসুন বাটা, ধনিয়া পাতা কুচি, লবণ, তেল।

প্রস্তত প্রণালী 
মসুর ডাল ভাল করে ধুয়ে ২-৩ ঘণ্টা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। একটু দানাদার থাকতে নিয়ে নিন। ব্লেন্ড করা বা বাটা ডাল একটি বাটিতে নিয়ে তেল ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার প্যানে তেল গরম করে ১ টেবিল চামচ মত ডালের মিশ্রণ নিয়ে গোল করে তেলে ছাড়ুন।

পরিবেশন

প্যানে জায়গা অনুযায়ী আরও পিঁয়াজু তেলে দিন এবং মাঝারি আঁচে উভয় পাশ হাল্কা বাদামী করে ভেজে নিন।
ভাজা হয়ে গেলে কিচেন টিস্যুতে তুলে নিন। এভাবে সব পিঁয়াজু ভেজে গরম গরম পরিবেশন করুন আপনার ইফতারির টেবিলে।

 

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন

চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা : বাধা দেয়ার স্বামী খুন


নারী সংবাদ


কুমিল্লার চান্দিনায় সেহেরী রান্নার সময় এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধা দেয়ায় ছুরিকাঘাতে ওই গৃহবধূর স্বামীকে খুন করেছে প্রতিবেশি মামা। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চান্দিনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ছায়কোট এলাকায় এ ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে।

গৃহবধূর স্বামী নিহত ফারুক হোসেন (২৬) ছায়কোট এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশি দুই মামা- হত্যাকারী জানে আলম (৩৫) ও তার ভাই মোর্শেদকে (৩৭) আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ। তারা একই এলাকার রহমান ড্রাইভারের ছেলে।

স্থানীয় ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায়। আর ওই ঘটনার রেশ ধরে বৃহস্পতিবার ইফতারের পর গৃহবধূর স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে ধর্ষণের চেষ্টাকারী জানে আলম। পরে রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার।

নিহতের মা নাছিমা বেগম জানান, ‘গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায় আমার পুত্রবধূ রান্না ঘরে সেহেরী তৈরি করছিল। এসময় প্রতিবেশী জানে আলম আমার পুত্রবধূকে রান্নাঘর থেকে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি জমিতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় পুত্রবধূর চিৎকার শুনে আমার দুই ছেলে ফারুক ও জালালসহ বাড়ির লোকজন বের হয়। এ সময় জানে আলম তাকে ছেড়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপর আমার দুই ছেলেসহ অন্যান্যরা জানে আলমের বাড়িতে গেলে জানে আলম উল্টো আমার ছেলেদের মেরে ফেরার হুমকি দেয়।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে আমরা এলাকার কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই এবং তারা জানে আলমের বাড়িতে গিয়ে তাকে পায়নি। মঙ্গলবার ভোর থেকেই জানে আলম আত্মগোপন করে।

বৃহস্পতিবার ইফতারের পর প্রচন্ড গরমে আমার ছেলে ফারুক হোসেন আমাদের বসতঘর সংলগ্ন একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এসময় জানে আলম ও তার ভাই মোর্শেদ এসে বিষয়টি কেন এলাকায় জানাজানি হলো বলেই আমার ছেলের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।’

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল সালাম জানান, ‘দুটি পরিবারই হতদরিদ্র। তবে জানে আলম মাদকাসক্ত এবং চরিত্রহীন। ভোর রাতের সেহেরী তৈরি করার উদ্দেশ্যেই গৃহবধূ বাইরের রান্না ঘরে রান্না করছিল। এসময় গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে জানে আলম। ঘটনার পর সে আত্মগোপন করে এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফারুককে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই ছুরি নিয়ে বাড়িতে আসে।’

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল ফয়সল জানান, ছুরিকাঘাত করার পরপর নিহতের মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা রাত ৯টায় ধর্ষণের ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করি। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘটনার মূলহোতা জানে আলমসহ তার বড় ভাই মোর্শেদকে আটক করি। রাত অনুমান ১টার দিকে ঢামেকে মৃত্যু হয় ছুরিকাঘাতে আহত ফারুক হোসেনের। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৪


সাদিয়া মুকিম 


আমরা যা করতে পারি – অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করা । যেমন: ইফতার অল্প করা,

একটু পরে অল্প রাতের খাবার খাওয়া , সেহেরীতেও পরিমিত খাওয়া । ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার আমরা খাবো কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ না দিয়ে বরং অল্প অল্প করে বার বার পরিমিত এবং ক্যালরি মান অনুযায়ী খেতে হবে। না হলে কিন্তু শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।

সেহেরী না খাওয়া: – সেহেরি একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয় , প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রাখা হয়েছে। রহমতের ফেরেশতারা এ সময় সেহেরী কারীদের জন্য দোয়া করেন। তাই এই সুবর্ণ সুযোগ হারানো ঠিক নয় । আর সেহরী না খেলে সারা দিনের ঘাটতিতে শরীর ও দুর্বল হয়ে যাবে ।

অনেকে মনে করেন, সেহরি না খেয়ে এক বেলা শুধু ইফতারে খেলে ওজন কমবে।কিন্তু এতে হিতে তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তিআসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয় । আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ওজন কমানো না বরং সিয়াম পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

আমাদের করণীয় হলো কষ্ট হলেও সেহেরি খেতে হবে । একান্ত অরুচী হলে একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খাওয়া চাই । অনেকেই আম -দুধ -চিড়া খেয়ে থাকেন ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মাঝে বরকত রয়েছে। (বুখারী)

এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ

“আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” (মুসলিম)

ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় : সারাদিনের রোযা শেষে অনেকেই প্রতীক্ষায় থাকি গরম এক কাপ চা এর জন্য । এমনকি অনেকে সেহরী এবং ইফতার উভয় সময়েই চা পান করেন। খেয়াল রাখতে হবে রোজায় চা, কফির মাত্রা যেনো কম হয় । তা না হলে পানিশুণ্যতা , কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

কারণ, ক্যাফেইন হলো diuretic, যা শরীর থেকেপানি বের করে দেয়।

একান্ত না পারলে বা চা বা ক্যাফেইন যদি খেতেই

হয় , তবে হালকা ক্যাফেইনযুক্ত খাওয়া যেমন:গ্রিন টি। সেহেরিতে ক্যাফেইন না খাওয়াই ভালো, সারাদিন তাহলে পানি পিপাসা লাগবে এবং শরীরে পানি শুন্যতা তৈরী হবে।

রোজা রাখাকে ওজন কমানোর উপায় মনে করা :অনেকে মনে করেন রোজা রেখে ডায়েট করবেন ও ওজন কমাবেন। এটি ভুল, কারণ রোজা রেখে আমরা আল্লাহর ইবাদত করছি , আল্লাহ রোজার মাস দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতে, আত্মশুদ্ধি করতে । তাই রোজার মাসকে ডায়েটিং এর মাস না মনে করে আল্লাহতায়ালা আখিরাতকে লাভ করার, গুনাহ মোচন করার যে অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন, তা আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

অন্যান্যদের ও ইফতারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া — আমরা নিজেরাতো সামর্থ্যের মধ্যে সবচাইতে ভালো খাবারগুলো সেহরি ও ইফতারে খাচ্ছি, আসুন না তাঁদের পাশেও দাঁড়াই যারা এক মুঠো খাবার ও খেতে পারছেন না অভাবের তাড়ণায়!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ একজন রোযাদারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও রোযাদার ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব

রয়েছে যদিও রোযাদারের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না।(তিরমিযী)
অনেক পুষ্টিমান যুক্ত, ক্যালরি যুক্ত, স্বাস্থ্যমান বজায় রেখে সেহরি ও ইফতার করছি কিন্তু এই আমি আর আপনি যেনো আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিক স্বরুপ আমানতকে অপচয় যেনো না করি!

আমরা যেখানে খাদ্যের পুষ্টি মান নিয়ে এতো আলোচনায় মুখর আমাদের এই পৃথিবীর আরেক প্রান্তে ই কোনো মা এই মুহূর্তে তার সন্তানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে এই কষ্টে যে তাদের কাছে এমন কোনো খাবার নেই যা দিয়ে ক্ষিদে নিবারণ সম্ভব ! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শুকর আদায় করার তৌফিক দান করুন।

খাওয়ার সময় যে খাবারটুকু প্লেটের কোনায় রয়ে যায়, পাতিল ধোয়ার সময় নিচে যে ভাত টুকু লেগে থাকে, ময়লা ফেলার সময় যে উচ্ছিষ্ট ফেলতে যাচ্ছি তখন যেনো আমরা প্রত্যেকেই মনে রাখি إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ আল্লাহ অপচয় কারীকে ভালোবাসেন না!

“.وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾….তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের ভালো বাসেন না ।” (সূরা আ’রাফঃ৩১)

রমাদ্বানের বরকতময় সময় চলে যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের ঠিকভাবে ইবাদাত করে উনার সন্তুষ্টি এবং আমাদের পাপ মোচন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার- ওয়েবসাইট সমূহ)

 

উপবাসী ভোজন

উপবাসী ভোজন


ফাতিমা মারিয়াম


বাদল অনেকদিন পর চাচাতো বোন কেয়া আপার বাসায় এসেছে। ছোট বাচ্চারা মামাকে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি।মামার সাথে কিছুক্ষণ খেলা করার পর তারা নিজেদের রুমে চলে গেল। এবার কেয়া আপা এসে বাদলের সাথে গল্প শুরু করল। কথার এক পর্যায়ে কেয়া বাদলকে বলল-‘আম খাবি বাদল? তোর দুলাভাই রাজশাহী থেকে আম আনিয়েছে। একেবারে বাগান থেকে আনা, ফর্মালিন মুক্ত। কাল পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছিলাম, ফ্রিজে আছে। দিব তোকে?’

-‘আপা কী বলছ? আমি রোজা রেখেছি!’

-বাহ! ভালো, তুই তাহলে এখন রোজা রাখিস?

-হুমমম…আমি এখন বড় হয়ে গেছি।

এমন সময় পাশের বাসার ভদ্রমহিলা আসলেন। তিনি আসার পর বাদল উঠে অন্য রুমে গেল। উনি কিছুক্ষণ গল্প করে চলে যাওয়ার পর কেয়া আপা বাদলের কাছে এসে বসলেন। ‘আর বলিস না ভাই, এদের নিয়ে হয়েছে জ্বালা। পাশের বাসার ভাবী আসলেন না? উনি এসেই শুরু করলেন উনার ঈদের শাড়ির বাজেট কত? ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোন মার্কেট থেকে শপিং করবেন? উনার স্বামী উনাকে কত টাকা দিয়েছেন কেনাকাটার জন্য? এসব হাবিজাবি। আরে বাপু, আমরাও তো শপিং করি এইভাবে তো মানুষকে বলে বেড়াই না…হুঁহ!

বাদল মাথা নাড়িয়ে বলল- আপা কিছু মানুষের কাজই হল নিজেকে জাহির করা। এদের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখাই ভালো।

– হুম ঠিক বলেছিস! এখন বল তোরা বাসার সবাই কেমন আছিস? বাবুলের বউ কেমন? সবার সাথে মানিয়ে চলে?

বাবুল হল বাদলের বড় ভাই। কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়েছে।

-আর কি বলব আপা! ভাবী সংসারের কোন কাজই পারেনা। আম্মাকেই সব কিছু করতে হয়! ভাবীকে কিছু কাজ করতে বললেই সে আম্মাকে এসে বলবে আম্মা আপনি দেখিয়ে দেন। আরে! এত বড় মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে কোন কাজ না শিখেই! আম্মার হয়েছে যত জ্বালা!

-হুম তুই ঠিকই বলেছিস। আমাদের পরিবারের বউগুলি একটাও ভালো পড়েনি। আমাদের মইন কে তো ওর বউ ভেড়া বানিয়ে রেখেছে। বউয়ের কথায় উঠে বসে।

– তারপর দেখনা আপু ভাবীর বিয়ের পর এইটা প্রথম রমজান। ভাবীর বাবার বাড়ি থেকে এখনও আমাদের বাসায় ইফতারি পাঠায়নি।
………

এসব কথোপকথন এভাবেই দীর্ঘায়িত হতে থাকে; আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাদল কিন্তু বোনের আহবানে কিছুই খায়নি। কারণ সে রোজা রেখেছে। কিন্তু কথার এক পর্যায়ে যখনই অন্যের সমালোচনা বা গীবত চলে এলো তখনই তারা দুজন একে অন্যকে উৎসাহিত করে যায়। এভাবেই আমরা আমাদের সিয়ামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে চলে যাই। খাদ্যপানীয় গ্রহণ না করেও নিজেদের সিয়ামকে শুধুমাত্র উপবাসে পরিণত করে দিই।

অথচ আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে আমরা জানি যে আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (রোযা রাখার পরও) মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী ও মুসলিম)

কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে এর অনুশীলন আমরা করিনা। এই রোজার দিনে কেউ এক প্লেট সুস্বাদু খাবার দিলে সেটা এড়িয়ে যেতে পারলেও এক ঝুড়ি মন্দ কথা সানন্দে গ্রহণ করি এবং তাকেও এক ঝুড়ি বা তারচেয়েও বেশি উপহার দিই।

অথচ সূরা আল হুজুরাতে আল্লাহ গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। ‘হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।’ [আল হুজুরাত-আয়াত নং-১২]

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করে আমাদের সব ইবাদাত কবুল করে নিন। আমীন।

 

রেসিপি (ভেজা ভেজা ছোলা বুট)

(ভেজা ভেজা ছোলা বুট)


রেসিপি


ভেজা ভেজা ছোলা বুট
ছোলা বুট হলো ইফতারির মুল আকর্ষণ। সাথে মচমচে মুড়ি। আসুন রমজানের শেষে আবার নতুন করে দেখে আসি ভেজা ভেজা ছোলা বুট তৈরি করার নিয়মটি

উপকরণে যা লাগবে

ছোলা সিদ্ধ পরিমাণ মত, পেঁয়াজ কুচি,
টমেটো কিউব করে কাটা, কাঁচামরিচ কুচি, তেল, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, লেবুর রস, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা গুঁড়ো, লবণ স্বাদমতো এবং ধনে পাতা কুচি ইচ্ছে।

পদ্ধতি
সামান্য লবণ ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ছোলা বুট সেদ্ধ করবেন, তেল দিয়ে গরম করে আদা-রসুন বাটা দিয়ে একটু লালচে হয়ে এলে এতে পেঁয়াজ কুচি দিবেন। পেঁয়াজ কুচি নরম হয়ে এলে বাকি সকল মসলা একের পর এক প্যানে দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষাতে থাকুন। মসলা কষে আসার পর টমেটো কুচি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ছোলা বুট ঢেলে দিন। ভালোমতো নাড়াতে থাকুন মসলা মাখা মাখা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর লেবুর রস দিয়ে ভালো করে নেড়ে উপরে ধনে পাতা কুচি ছিটিয়ে নামিয়ে নিন। ব্যাস, তৈরি মজাদার ছোলা বুট।

স্পেশাল আলুর চপ

উপকরণ

আলু ৫০০ গ্রাম,
ডিম ১টি সিদ্ধ করে ভর্তা করতে হবে,
কাঁচামরিচ কুচি ১ চা চামচ,
ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
পেয়াজ বেরেস্তা করা ২ টেবিল চামচ,
গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ,
ডিম ১টি ফেটানো,
বিস্কুটের গুঁড়ো পরিমাণমতো,
তেল ভাজার জন্য পরিমাণমতো,
লবণ স্বাদ অনুযায়ী।

প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে আলু সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ মেখে রাখতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে একে একে তাতে আলু ভর্তা, ডিমের ভর্তা, কাঁচামরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, গরম মশলা গুড়ো, স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে ভালোভাবে ভাজা ভাজা করে আবার মেখে নিতে হবে। হাল্কা হাতে চ্যাপটা আকারের চপগুলো প্রায় ১০-১২টি করে ফ্রিজে প্রায় ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মিশিয়ে গরম ডুবন্ত তেলে ভেজে টিস্যু পেপারে তুলে রাখতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো মজাদার আলুর চপ।

 

এক গুচ্ছ মুক্তো-১ (কুরআন থেকে)


সাদিয়া মুকিম 


৩৪) প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা তাদের পশুদের উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করতে পারে । কেননা তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ্‌, অতএব তোমরা তার [ ইচ্ছার ] নিকট আত্ম সমর্পন কর। এবং সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে ।

ব্যাখ্যা – এই আয়াতের অর্থ এই যে, এই উম্মতকে কোরবাণীর যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা কোন নূতন আদেশ নয়। পূর্ববর্তী উম্মতদেরও কোরবাণীর আদেশ দেয়া হয়েছিলো। এই কোরবাণী হতে হবে শুধু মাত্র এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য। কোরবাণীর পশুর রক্ত মাংস কিছুই আল্লাহ্‌র কাম্য নয়। বান্দার একাগ্রতা ও নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা হচ্ছে কোরবাণীর প্রতীক যা পশু কোরবাণী ও তার মাংস গরীবদের সাথে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়। কোরবাণীর পশুর উপরে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করা হজ্জ্বের আনুষ্ঠানিকতার এক প্রধান অংশ।

“সুসংবাদ দাও ” তাদের জন্যই সুসংবাদ যারা বিনয়ী। দম্ভ বা অহংকার যাদের উদ্ধত ও অত্যাচারী করে তোলে নাই। যারা জাগতিক অর্থ সম্পদ ক্ষমতা সব কিছুর জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আল্লাহ্‌ সন্তুষ্টি লাভের জন্য গরীব ও নির্যাতিতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে, যারা সুখে – দুঃখে স্বাচ্ছন্দে ও অভাব অনটনে আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সন্তুষ্ট থাকে তারাই বিণীত।

বিনয় এমন একটা গুণ যা আল্লাহ্‌র নিকট অত্যন্ত প্রিয়। মোমেন বান্দার চরিত্রে এই গুণটির প্রকাশ ঘটবে।

৩৫) যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যাকিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে৷

ব্যাখ্যা -আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে পাক-পবিত্র রিযিক ও যে হালাল উপার্জন আমি তাদেরকে দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে৷ আবার খরচ করা মানেও সব ধরনের যা-তা খরচ নয় বরং নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনদের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা,আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জন কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য আর্থিকত্যাগ স্বীকার করা৷ অভাবগ্রস্থদের মাঝে দান করা আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর শ্রেষ্ঠ ভাষা।

 

বিবাহের উদ্দেশ্য-১

বিবাহের উদ্দেশ্য-১


কানিজ ফাতিমা


যদিও মানুষের জৈবিক চাহিদা শালীন উপায়ে পূরণ বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তথাপি এটি বিবাহের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য নয়। কুরআনের স্পষ্ট ভাষা অনুযায়ী দু’জন মানুষের মিলনের মাধ্যমে শান্তি ও স্বস্তি অর্জন করাই বিবাহের মূল লক্ষ্য।

“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর রূম : ২১)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নর ও নারীর সম্পর্ককে একে অপরের সাহায্যকারী রূপে বর্ণনা করেছেন যেখানে পরস্পর পরস্পরকে ভাল কাজে ও আল্লাহর দেয়া খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে।

“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক তারা পরস্পরকে ভাল কাজে সহায়তা করে ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আত তাওবাহ : ৭১)

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল কারযাবী (রহ.)র মতে, “একটি জাতি গঠনের মূল ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে ইসলাম যেমন সৎ ব্যক্তি গঠনকে উৎসাহিত করে, ঠিক তেমনি একটি সুষম সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সুসংহত পরিবার গঠনকেও ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এটা সর্বজন সম্মত যে, বিবাহ, যা একজন নারী ও একজন পুরুষকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে, একটি পরিবারের গোড়া পত্তন ঘটায়। বিবাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে সুসংহত পরিবার গঠনের আর কোন পথ নেই। এটিই একমাত্র বৈধ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক অনুমোদিত।

বিভিন্ন যুগে বিবাহের বিপক্ষে কিছু দর্শন বা মতবাদ সমাজে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে। পারস্যে (বর্তমান ইরান) ইসলামের আগমন ঘটার পূর্বে মানির দর্শন (Mani’s Philosophy) প্রচলিত ছিল, সেখানে মনে করা হতো এ পৃথিবীর সবকিছু হচ্ছে শয়তানের প্ররোচনা। কাজেই পার্থিব সব ভোগ বিলাস ত্যাগ করতে হবে। এ ধারণার বশবর্তীরা বিবাহ বর্জনকেও নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের একটি উপায় বলে মনে করতো।

খ্রীস্ট ধর্মেও গোড়া সন্নাসবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে- যেখানে পার্থিব সবকিছু ত্যাগ করে বৈরাগ্য বরণ করার কথা বলা হয়। এতে মহিলাদের সব ধরনের প্ররোচনার উৎস এবং শয়তানের মূর্ত প্রতীক হিসেবে চি‎িহ্নত করা হতো। নারীসঙ্গ আত্মাকে কলুষিত করে এবং স্বর্গ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে নেয়।

এই আধুনিক যুগেও পশ্চিমা বিশ্বে একদল লোক রয়েছে যারা মহিলাদের বিষাক্ত সাপের সাথে তুলনা করেন, যাদের স্পর্শ মধুর কিন্তু ছোবল ভয়াবহ বিষাক্ত। তারা আরও দাবী করে যে বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের হাতের মুঠোয় ভরে ফেলে এবং তাকে দায়িত্বের শেকলে বন্দী করে। কাজেই একজন পুরুষ যে স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছে, কেন স্বেচ্ছায় নিজ গলায় বিবাহ নামক বন্দীত্বের শিকল জড়িয়ে নেবে- দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান যুগের কিছু মুসলমান যুবক এই গোষ্ঠির বিকৃত চিন্তাকে গ্রহণ করেছে এবং বিবাহের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাচ্ছে। যদি তারা তাদের জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের জন্য সে চাহিদা পূরণের যে পথটি খোলা থাকে তা হলো- ব্যভিচার, যা ঘৃণ্য ও অবৈধ। অথচ তারা বিবাহের মাধ্যমে শালীন উপায়েই তা লাভ করতে পারতো

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-৩


সাদিয়া মুকিম


আমরা যা করতে পারি চিনি মুক্ত খাবার ও পানীয় পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। যেমন: ফলের শরবত, বিভিন্ন রকমের ফ্রেশ ফল , চিনি যুক্ত না করে দই এর শরবত ইত্যাদি। কোমল পানীয় পান না করে করে ইফতার থেকে সেহেরী পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। এক্ষেত্রে ইসুবগুল এর ভুষির শরবত এবং ডাবের পানি অনেক সহায়ক ।

জটিল শর্করা না খাওয়া: শর্করা জাতীয় খাবার

আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, তাই অনেকে মনে করি রোজায় বেশি বেশি শর্করা খাওয়া উচিত। অনেকেই অন্যান্য সময়ের চাইতে রমাদ্বানেই বেশী ভাত খান । আমাদের দেশে সাধারনত: সাদা ভাত

বা সাদা আটা খাওয়া হয়। যা শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে একটু পরেই আবার খেতে ইচ্ছা করে, তাছাড়া এগুলো হজম হতে সময় কম লাগে, ফলে ক্ষুধাও তাড়াতাড়ি লাগে।

আমরা যা করতে পারি সম্ভব হলে সাদা শর্করা বাদ দিয়ে লাল শর্করা: যেমন: লাল আটা, লাল চাল খেতে অভ্যাস করতে পারি। এগুলোতে low-glycaemic index থাকে,তাই হজম হয় আস্তে আস্তে এবং ক্ষুধা লাগে দেরীতে । রক্তে চিনির পরিমান তাড়াতাড়ি বাড়তে দেয় না। সম্ভব হলে সব সময়ের জন্য অভ্যাসে পরিণত করলে আমাদের ই কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশা আল্লাহ।

একেবারেই বেশী না খাওয়া – ইফতার বা সেহরীতে যেনো মনে না করি সারা দিন খাই নি বা অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে এজন্য বেশী করে খাই – এটা একেবারেই সঠিক না । এভাবে খাবার টেবিলের উপর পাগলের মতো ঝাপিয়ে পড়ে হাপুশ হুপুশ খাওয়া রোজার যে আসল উদ্দেশ্য–সংযম,সেই সংযম কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে নষ্ট হয়

আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া । তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা,গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি বেড়ে যাতে পারে । আবার অনেকে সেহেরিতেও অনেক বেশি খান,মনে করেন, বেশি খেলে পরে ক্ষুধা লাগবে না, এটিও ভুল ধারণা।

 

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)

প্যারেন্টিং (সন্তানের না বলা কথা বুঝি)


ফাতেমা শাহরিন


সন্তানকে বাবা মা প্রাথমিকভাবে চান যাতে মা বাবার মনের মত ভাল সন্তান(?) সন্তান হোক। নিজেদেরকে শান্ত রাখুক। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্ল্যানিং। প্রথম থেকেই যদি সন্তানের না বলা অভিমান, আবেগ, চাওয়া বুঝেন মা-বাবা তাহলে সমাধান হয়ে যায় গোড়ার থেকেই অনেক সমস্যায়।

নিজেকে স্থিতিশীল রাখুন

মা বাবা ও পরিবারের সবাইকে খুব শান্ত ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। যদি বাড়ীর লোকের মধ্যে মতের অমিল হয় তার কথা না বুঝে, প্রকাশ করতে না দেয় ওদের বিকাশে সুন্দর হবে না। সন্তানরা খুব সহজেই পরিবারের মেরুকরন বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে।

নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন

বাড়ীর মধ্যে সন্তানের সাথে কথা বলুন। সন্তানকে কিছু খেলনা দিয়ে আলাদা করে জানতে চান কেমন কাটলো সারাদিন। লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত হয় কারণ এই সময় সন্তান অনেক কথায় বলতে পারেন। সন্তানের ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার চেষ্টাও করবেন। অ্যাটেনশন পেলে ওদের মধ্যে শান্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

ধীরে ধীরে সময় নিন

সন্তান প্রয়োজনীয় কিছু বলতে চাইছে বা বলা শুরু করেছে সময়টা প্যারেন্টিং এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় বাচ্চাকে স্নেহের সাথে বোঝাতে হবে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার নিজস্ব চাহিদা নিশ্চয় করে, তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে।

সন্তানকে সবসময় উপদেশ নয়

অনেকসময় চুপ হয়ে যায় সন্তানরা এরকম বহি:প্রকাশ ঘটানোর কারণ হল উপদেশ আর শাসন। এখনকার সন্তানরা গন্তব্যস্থল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শপিং মল। সেখানে সার সার সুন্দর করে সাজানো খেলনাপাতির সামনে নি:সন্দেহে তাদের চাহিদার পরিমান হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। বার বার কাউন্সেলিং করে বুঝাতে হবে আপনারা উপদেশ বা শাসন নয় বরং জানতে চান ওকে বুঝার জন্য।

রেফারেন্সঃ
প্যারেন্টিং আর্টিকেল অনলাইন।

 

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা | প্রেগনেন্সিতে সিয়াম পালন ও করণীয়।


সোহানা তাসনিম অনুভা


অনেক মায়েদের প্রশ্ন থাকে যে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা কিংবা রাখলে করণীয় কী হবে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করবে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতার উপরে। ইসলামে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা রয়েছে, যেমন ভ্রমণকারী, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, সন্তানকে দুগ্ধ পান করা অবস্থা ইত্যাদি। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-“যদি কোন গর্ভবতী মায়ের গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হবার আশঙ্কা তৈরি করে, তবে সে রোজা থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং পরবর্তীতে তার সুবিধাজনক সময়ে সে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করে নেবেন।” এখন যদি কোন মা মনে করেন তিনি রোজা রাখবেন, তবে তাকে প্রথমে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। জেনে নিতে হবে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা তার এবং গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে কিনা।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৪-৭ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ড রোজা রাখার জন্য বেশি নিরাপদ, কারণ প্রথম ৩ মাসে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে এবং প্রেগনেন্সির শেষের দিকে পানি এবং খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রেগনেন্সিতে যদি অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন/উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ডিজিজ, ঘন ঘন প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে রোজা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করণীয়

১) সেহরি এবং ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলের রস, ডাবের পানি শরীরে পানির চাহিদা দূর করবে।

২) ফলের মধ্যে খেজুর এবং কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, যা দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩) প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সেহরি এবং ইফতারের সময় খেতে হবে।
৪) বেশিক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

৫) দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

রোজাদার মায়েদের যে সমস্যাগুলো দেখা
দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
১. বমি হলে।

২. অজ্ঞান হয়ে গেলে।

৩. বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভূত হলে, সাধারণত বলা হয় গর্ভের বাচ্চা ১২ ঘন্টায় ১০-১২ বার মুভমেন্ট করবে। এর থেকে কমে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. লেবার পেইন বা পেটে ব্যথা অনুভূত হলে, কারণ ডিহাইড্রেশন-এর কারণে অনেক সময় ইউটেরাস-এর কনস্ট্রাকশন শুরু হতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে ইত্যাদি।
এই ছিল গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করনীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।

সবাই ভালো আর সবাই সুস্থ থাকুন।
সবার জন্য শুভকামন

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২


সাদিয়া মুকিম


আমাদের করনীয় হবে যথাসম্ভব ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন: কাঁচা ছোলা , চিড়া- দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ,জাউ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা । সাথে মৌসুমী ফল, সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সেহরীতে,ডাল বা ডিম, স্বজি,মাছ ,গোশত যোগ করা যেতে পারে। বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, দুধ, মিষ্টি আলু, ডাল, ফল, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে হবে । প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । সুষম খাবার (balance diet) এর আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে খাবার মেন্যু । যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি খেতে হবে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ।অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, ভুনা ও লবনাক্ত খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।

যেসব খাবার, ফল, স্বজি পানি কন্টেইন করে সেসব খাবার ইফতারিতে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। যেমন- তরমুজ, পেঁপে,বাংগী,জাম্বুরা, কমলা, শশা, স্ট্রবেরী, বেরীস,সালাদপাতা, আভোকাডো, পীচ, চেরী, ঝুক্কিনী, আসপারাগাস, সেলারি, গাজর, টমেটু , ফুলকপি, ডাটা, ব্রোকলি ইত্যাদি ।

অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত – ইফতারের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপযোগী কারণ এতে আছে শর্করা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা ।

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭,সহীহ]।

চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাওয়া: – আমাদের ইফাতরের টেবিলে রং বে রং এর পানীয় বা শরবত থাকেই । খুব বেশী চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে দরকার নেই, তাই নিয়মিত চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়।

যেমন: ট্যাং, ট্রাডিশনাল মিষ্টি , পায়েশ, ফালুদা, শাহী জিলাপি, কেক, বিস্কিট ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও উচ্চ ক্যালোরীযুক্ত । এগুলো রোজায় প্রতিদিন না খেয়ে মাঝে মাঝে হাওয়া যেতে পারে। এছাড়া যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু না করাই ভালো।

 

দোয়াই হলো ইবাদত !

কোন মুসলমানের দোয়া বৃথা যায় না তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করবেন


কুয়েত


বিসমিল্লাহ-হির-রাহ’মানির রাহীম।

কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনোই বৃথা যায় না

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তির দুয়া কবুল করা হয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়ো করে। (তাড়াহুডা করার অর্থ হচ্ছে, দুয়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সে) বলে, আমার প্রভুর নিকট দুয়া তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দুয়া কবুল করলেন না।”

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, বান্দার দুয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দুয়া না করে, আর যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসুল! তাড়াহুড়ো মানে কি?

তিনি বললেন, কোন দুয়াকারী ব্যক্তি বলে, দুয়া করলাম, আবার দুয়া করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার দুয়া কবুল করছেন। কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দুয়া করা ত্যাগ করে দেয়। সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪০, সহীহ মুসলিমঃ ২৭২৯।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যেকোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুয়া করে (তা ব্যর্থ যায় না) হয় আল্লাহ (সে যা চায়) তাকে তাই দান করেন, অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দুয়াকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দুয়া না করবে। একটি লোক বলল, তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দুয়া করব। তিনি বললেন, আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। তিরমিযীঃ ৩৫৭৩, আহমাদ ২২২৭৯, হাদীসটি হাসান সহীহ।

দুয়া তিনভাবে কবুল হতে পারে

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুয়া করে, যে দুয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুয়া অবশ্যই কবুল করে নেন।

(১) যে দুয়া সে করেছে, হুবহু সেভাবে তাই কবুল করেন, অথবা

(২) তার দুয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন, কিংবা

(৩) এই দুয়ার মাধ্যমে তার উপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুয়া করতে থাকবো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। আদাবুল মুফরাদঃ ৭১০ ও মুসনাদে আহমদ।

দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ

কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে, এই পাপগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।

দুআ কবুলের অন্তরায় সমূহ

(১) হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
(২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা
(৩) দুয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা
(৪) অন্তরের উদাসীনতা
(৫) ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-২


আফরোজা হাসান 


যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম। প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে। এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা। টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।এ

ই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১


আফরোজা হাসান 


ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা। ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে। শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে। বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো? প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

 

ডালে সজিনা

উপকরণ :  ডাল সিদ্ধ করা ২ কাপ, সজিনা ১০ টি সাইজ করে কাটা, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ-তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি : সজিনা দিয়ে তেল বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিন। পরে নামার আগে ধনিয়া পাতা দিয়ে গরম গরম রুটি বা ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে।

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-১


সাদিয়া মুকিম 


আসসালামুআলাইকুম। আশা করি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এই রমাদ্বানে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াত, দোআ, সাদাকাহ ইত্যাদি পবিত্র ও বহুল সওয়াবের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।

অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি সেহরি এবং ইফতার এ দুটোও গুরুত্বপূর্ন ইবাদাত । তবে এ দুটোকে ঘিরে আমাদের উপমাহাদেশে রয়েছে বিরাট খাদ্য বিভ্রান্তি। বিষয়টি ইবাদতের পরিবর্তে ভোজোৎসব হয়ে দাঁড়িয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই ।

সেহরি এবং ইফতার নিয়ে রমাদ্বানের আগে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বেশ কিছু আর্টিকেল পড়েছিলাম। এর মাঝে বেশিরভাগ ছিলো স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক। যেগুলো পড়ে আমরা নিজেরা উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সেখান থেকে সংগৃহ করে কিছুটা সংযোজনা করে আজকের এই সচেতনতা পোস্ট টির অবতারণা।

রমাদ্বানে সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারের মুহূর্ত যখন আসে স্বভাবতঃ আমাদের চোখে ভেসে উঠে রকমারি বাহারি ভোজ্যবিলাসী ইফতারি সামগ্রী । অনেকেই আছি ভাজা পোড়া ছাড়া ইফতার মুখে ও নিতে না পারার কঠিন (? ) অভ্যাস। এটা ঠিক দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকার পর মুখ রোচক খাবার খাওয়ার আগ্রহ জন্মায় তবু নিজেদের স্বাস্থ্যের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে ইফতার ও সেহরিতে আমরা কী ধরণের খাবার মেন্যুতে রাখছি !

ভাজা -পোড়া, গুরুপাচক খাবার :- ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে আমাদের যাদের কপাল কুঁচকে যায় ,তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- একটু চিন্তা করলেই সহজবোধ্য হবে যে, আমাদেরকে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ ঘন্টা আর ইউরোপে প্রায় ১৮ ঘন্টা সিয়াম করতে হচ্ছে। সারাদিনের সিয়ামে আমাদের পাকস্থলি ক্ষুধার্ত ও দুর্বল অবস্থায় থাকে । অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়,তা বন্ধ থাকে । তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকার ফলে যখন ইফতার শুরু হয় ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার দিয়ে তখন পাকস্থলি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় । এতে যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে সেটার পরিমাণ যায় বেড়ে আর যাদের নেই তাদেরও লক্ষণ শুরু হয়ে যাবে স্বল্প সময়ে । তাছাড়া পেটে জ্বালা পোড়া করা , পেটের সমস্যা,

কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, অবসাদ, হজমের সমস্যা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা শুরু হয়ে যাবে অল্প দিনে । এই সমস্যা ছাড়াও এই খাবারগুলোর ক্যালোরি মান অতি উচ্চ থাকায় আমরা অল্প খেলেও পেট ভরা অনুভূত হবে দ্রুত । যেমন- পিঁয়াজু,বেগুনী, আলু চপ, সমুচা, সিংগারা, বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম, ছোলা ভুনা, ফাস্টফুড ইত্যাদি ।

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৫…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৫…
ওমর আল জাবির

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।

এই আয়াতটি একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। আমাদের অনেকের ভেতরেই একটা ভুল ধারণা আছে যে, আমরা মনে করি: আমরা আল্লাহর تعالى জন্য যত কষ্ট করবো, তত সওয়াব। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আল্লাহর تعالى কাছে সবচেয়ে পছন্দের ইবাদত হচ্ছে ফরজ ইবাদতগুলো। তিনি কখনই চান না আমরা যেন নিজেদেরকে জোর করি, ইচ্ছা করে কষ্ট দেই। তিনি চান আমাদের জীবনটা যেন সহজ, সুন্দর হয়। আমরা যেন দুনিয়ার হাজারো প্রলোভন থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তারপর একদিন জান্নাতে গিয়ে চিরজীবন আনন্দে থাকতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে অনেকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে কঠিন সব ইবাদত, হাজারো শর্ত জুড়ে দিয়ে ধর্মকে অনেক কঠিন করে গেছেন। যার ফলাফল হয়েছে, গত কয়েক প্রজন্ম ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে।

আজকাল অনেকেই বলেন, “ধর্ম মানলে জীবন অনেক কঠিন হয়ে যায়। এটা করা যাবে না, ওটা দেখা যাবে না, এটা বলা যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। জীবনের প্রতি পদে বাঁধা। ধর্ম মানলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যায়। ধর্ম ছাড়াই অনেক ভালো আছি।”

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বার-এ গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। নানা ধরণের অসুখে ভুগত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কী লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমাদের জীবনটা সহজ হয়, এরকম কঠিন না হয়। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করো, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ করো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]

বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]

ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিয়েন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং, আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর تعالى অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

রোজা নিয়ে সূরা আল-বাক্বারাহ’র শেষ আয়াতটি এসেছে একটি আয়াত পরে—

রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে ঘনিস্ট হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক, তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তিনি তোমাদেরকে নিঃশর্তে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পাওয়ার চেষ্টা করো। খাও, পান করো, যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা অন্ধকারের রেখা থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা না হয়। তারপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা সম্পূর্ণ করো। মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা, এর কাছেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ তার বাণীকে মানুষের জন্য পরিস্কার করে দেন, যেন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৭]

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

সূত্র:

[১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।[২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।[৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।[৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।[৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran[৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran[৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।[৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।[৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।[১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি[১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি[১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।[১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।[১৪] তাফসির আল কুরতুবি।[১৫] তাফসির আল জালালাইন।[১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৪…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৪…
ওমর আল জাবির

এরপরের আয়াতে আমরা জানবো রমজান মাসের আসল গুরুত্ব কী—

রমজান মাস, যখন নাজিল হয়েছিল কুর’আন —মানুষের জন্য পথনির্দেশ, পরিস্কার বাণী যা পথ দেখায় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তাই তোমাদের মধ্যে যে সেই মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে সে যেন পরে একই সংখ্যক দিন রোজা রেখে পূরণ করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না। তিনি চান তোমরা যেন নির্ধারিত সময় পূরণ করো, তোমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। [আল-বাক্বারাহ ১৮৫]

রমজান মাসের আসল গুরুত্ব হচ্ছে যে, এই মাসে কুর’আন নাজিল হয়েছে। এই মাসেই আল্লাহ تعالىমানবজাতিকে পথ দেখানোর জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারি পরিস্কার বাণী পাঠিয়েছেন। একারণেই এই মাসটি মুসলিমদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস হচ্ছে কুর’আন উদযাপনের মাস। এই মাসে আমাদের কুর’আনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যেই বাণী মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য একজন মানুষ ২৩ বছর কঠিন সংগ্রাম করেছেন, শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ নির্যাতন সহ্য করেছেন, যেন এই বাণী একদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছুতে পারে, আপনি-আমি তা জানতে পারি, সেই বাণী আমাদেরকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। যদি আমরা তা ভালো করে বুঝে, নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে সেটা হবে রাসুল (সা) এবং সাহাবাদের (রা) এত বড় ত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৩…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৩…
ওমর আল জাবির

নিজের উপর জোর করে, অসুস্থতা বাড়িয়ে রোজা রাখতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেননি। আমাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করি জোর করে আল্লাহকে تعالىখুশি করার। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে কোনো জবরদস্থি করতে বলেননি।

তাফসিরগুলোতে এই নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। একাধিক সাহাবি (রা) থেকে আসা মত অনুসারে: কারো যদি অসুস্থতা বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। গর্ভবতী বা শিশু বাচ্চাকে দুধ পান করান এমন মা, বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষরা রমজান মাসে রোজা রাখতে কষ্ট হলে বা স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি থাকলে, প্রতিটি রোজার বদলে একদিন করে একজন গরিব মানুষকে সাধ্যমত খাওয়াবে। একইভাবে সফরে থাকলেও রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, যদি রোজা রাখার ফলে কষ্টের সৃষ্টি হয়।[১১][৩][৬] তবে একাধিক মাযহাবের মত অনুসারে কেউ যদি রমজানের পরে রোজা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে গরিব খাওয়ানো যাবে না, নিজে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুতরাং অসুস্থতা সাময়িক হলে এবং মা’দের রমজানের পরে রোজা রাখতে হবে, গরিব খাওয়ালে হবে না।

কী ধরণের অসুস্থতা হলে এবং কী ধরণের সফর হলে রোজা না রাখলেও হবে, এনিয়ে বিভিন্ন ফিকহ-এর আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।[১১][৩][৬]যেহেতু আল্লাহ تعالى এখানে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, তাই তারা আশংকা করেছেন যে, মানুষ ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেবে এবং একটু অসুস্থ হলেই, বা সামান্য সফরে গেলেই রোজা রাখা ছেড়ে দেবে। তাই তারা সফরের দৈর্ঘ্য কতটুকু, কতদিনের হতে হবে, এনিয়ে কিছু শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য হাদিস থেকে এই শর্তগুলোর পক্ষে ইজমা হওয়ার মতো যথেষ্ট দলিল পাওয়া যায়নি বলে একাধিক তাফসিরবিদদের মত।[৩][৬] তাদের বক্তব্য হচ্ছে: আল্লাহ تعالى এখানে কোনো শর্ত দেননি, কারণ রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। কেউ যদি আল্লাহর تعالى সাথে প্রতারণা করতেই চায়, নিজের প্রবৃত্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তার জন্য এই সব শর্ত থাকা বা না থাকাটা একই কথা। যে সবসময় সুযোগ খুঁজে কীভাবে আইনের ফাঁকফোকর বের করে পার পেয়ে যাওয়া যায়, তাকে হাইকোর্ট দেখিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। বরং এই সব মানুষকে ঠিক করতে গিয়ে অন্য সবার জন্য ধর্মের মধ্যে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে, তা উলটো মানুষকে ধর্মের প্রতি নিরুৎসাহিত করে।[৬]

আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহই تعالى আমাদেরকে দিয়েছেন, কোনো মানুষ তা নির্ধারণ করেনি। কখন মানুষকে শক্ত নিয়ম দিতে হবে, কখন ছাড় দিতে হবে, ছাড় দিলে তার সুদূর প্রসারি ফলাফল কী হবে —এটা আল্লাহ تعالى যে কোনো মানুষের থেকে ভালো জানেন। সুতরাং কোনো এক প্রজন্মের ইসলামকে হালকা ভাবে নিয়ে অবহেলা করা দেখে, সে প্রজন্মের আলেমরা যদি ইসলামে নানা শক্ত নিয়ম, শর্ত যোগ করেন, তাহলে সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবসময় কল্যাণকর নাও হতে পারে, বরং তাদের প্রতি অন্যায় হয়ে যেতে পারে। একারণে আল্লাহ تعالى যদি কোনো নিয়ম মানার বেলায় শিথিলতা দেন, তাহলে আমাদের আল্লাহর تعالى প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে হবে।[৬]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ২…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
২…

ওমর আল জাবির

এখন প্রশ্ন হলো, রোজার সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক কী?

একজন মানুষ যখন রোজা রাখে, সে একটা বিরাট সময় নিজেকে তার শারিরিক চাহিদা, কামনা থেকে নিজের ইচ্ছায় দূরে রাখে। ক্ষুধায় তার পেট মোড়ায়। হাত বাড়ালেই খাবার। ইচ্ছে করলেই সে মুখে একটু খাবার দিয়ে ক্ষুধাটা দমিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু না! সে নিজেকে বোঝায়: “মাগরিব হোক, তারপরে ইফতার, এর আগে কোনো খাবার নয়।” পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই এক গ্লাস পানি, কোমল পানীয়। শুকনো গলা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি নেমে যাওয়ার সুখকর চিন্তা তার মনে ঘুরপাক খায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “মাগরিব আসুক। এর আগে এক ফোঁটাও পানি না।” সারাদিন অফিস-স্কুল-কলেজে তার চোখের সামনে নানা প্রলোভন ঘুরে বেড়ায়। কিছুক্ষণ পর পর বিপরীত লিঙ্গের হাতছানি। টিভি ছাড়লেই অশ্লীলতা। ইন্টারনেটে গেলেই কামনার সাগরে ডুবে যাওয়া যায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “আমি রোজাদার। আমি এখন কোনো খারাপ কিছু দেখতে পারি না, কোনো খারাপ কিছু করতে পারি না।” দিনে কয়েকবার সে সুযোগ পেয়েছে মিথ্যা বলে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার, নিজের দোষ ঢাকার, অন্যায়ভাবে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার, অন্যের গীবত করার। কিন্তু না, সে নিজেকে সংযত করে, “আমি রোজাদার, আমি এখন মিথ্যা বলতে পারি না। আমার রোজা ভেঙ্গে যাবে।”

যখন আমরা রোজা রাখি না, তখন আমাদের শারীরিক চাহিদা আসলেই আমরা সেটা মিটিয়ে ফেলি, পাপ কাজের ইচ্ছা জাগলে করে ফেলি। ক্ষুধা লাগলেই খাই। পিপাসা পেলেই পান করি। কামনা জাগলে, তা পূরণ করে ফেলি। সুযোগ পেলেই মিথ্যা বলি, ঘুষ খাই, অন্যায় করি, গীবত করি। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে ক্রমেই প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে ফেলি। যার ফলে দিনে দিনে কুপ্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকি। প্রবৃত্তি জিততে থাকে, আর আমরা হারতে থাকি। কিন্তু যখন আমরা রোজা রাখি, প্রতিদিন একটা বিরাট সময় আমরা আমাদের প্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে রাখি। কিছুক্ষণ পর পর প্রবৃত্তি চাড়া দিয়ে উঠে, আমাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু তখনি আমরা সেটাকে পরাজিত করে নিজের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেই। এভাবে দিনের পর দিন আমরা প্রবৃত্তির উপর জিততে থাকি। তখন সেটা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। আল্লাহর تعالى নির্দেশ মানা, অন্যায় থেকে দূরে থাকাটা তখন আমাদের জন্য আরও সহজ হতে থাকে। এভাবেই আমরা রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করি।[১]

প্রাচীন আরবরা ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ করতে যেত। কিন্তু ঘোড়া উটের মতো উত্তপ্ত মরুভূমিতে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়। এরা পানি ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একারণে আরবরা ঘোড়াকে মরুভূমির প্রখর উত্তাপে বার বার দৌড়িয়ে মরুভূমিতে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ দিত। এভাবে ঘোড়াকে প্রচণ্ড তাপে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি করাকে তারা সিয়াম বলত। সিয়াম, যাকে আমরা রোজা বলি, মুমিনদের জন্য একধরনের মিলিটারি ট্রেনিং। এটি আমাদের শক্ত করে, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ট্রেনিং দেয়।[১][১৬]

এরপরের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শেখাবেন, কোন পরিস্থিতিতে রমজানে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়—

রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪]

সুত্র: কুরআনের কথা

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ১…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
১…

ওমর আল জাবির

সূরা আল-বাক্বারাহ’র নিচের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সিয়াম অর্থাৎ রোজা রাখার নির্দেশ দেবেন এবং কেন আমরা রোজা রাখি, রোজা রেখে কী লাভ, তা শেখাবেন।

তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, শোনো, উপর রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যে রকম তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও। [আল-বাক্বারাহ ১৮৩]

এখানে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, রোজা রাখার উদ্দেশ্য না খেয়ে থাকা নয়, বরং রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি সচেতনতা বাড়ানো। প্রথমে বোঝা দরকার তাকওয়া কী।

তাকওয়া শব্দটির অর্থ সাধারণত করা হয়—আল্লাহকে ভয় করা। এটি পুরোপুরি সঠিক অনুবাদ নয়, কারণ ‘ভয়’ এর জন্য আরবিতে ভিন্ন শব্দ রয়েছে—যেমন খাওফ خوف, খাশিয়া خشي, হিযর حذر; শুধু কু’রআনেই ১২টি আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন গভীরতার ভয়, সতর্কতা, আতঙ্ক ইত্যাদি তুলে ধরার জন্য। এর মধ্যে ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে ‘সবসময় পূর্ণ সচেতন’ থাকা বা আল্লাহর কথা মনে রেখে নিজেকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা।[১][২]

ধরুন, আপনি প্রতিদিন কী করেন, সেটা নিয়ে একটা ‘রিয়েলিটি টিভি শো’ বানানো হচ্ছে। আপনার বাসার সবগুলো রুমে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সবসময় আপনার সাথে একজন ক্যামেরাম্যান আপনার দিকে ক্যামেরা তাক করে রেখেছে। আপনি কী বলছেন, কী করছেন, কী খাচ্ছেন, কী দেখছেন, সবকিছু প্রতি মুহূর্তে রেকর্ড করা হচ্ছে। কল্পনা করুন, যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে আপনার মানসিক অবস্থা কী হবে? আপনি প্রতিটা কথা বলার আগে চিন্তা করবেন যে, আপনার কথাগুলো মার্জিত হচ্ছে কি না, আপনার হাঁটার ধরন ঠিক আছে কি না, আপনি উল্টোপাল্টা দিকে তাকালে সেটা আবার রেকর্ড হয়ে গেলো কি না। আপনি টিভিতে যেসব হিন্দি সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন, মুভি দেখেন, যেসব গান শুনেন, ইন্টারনেটে যে সব সাইট ঘুরে বেড়ান, সেগুলো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে গেলে লোকজনের কাছে মান-সন্মান থাকবে কি না। এই যে ক্যামেরাম্যানের প্রতি আপনার চরম সচেতনতা, এটাই তাক্বওয়া। আল্লাহর تعالى প্রতি আপনার ঠিক একই ধরনের সচেতনতা থাকার কথা।

সুত্র: কুরআনের কথা

 

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)

রমজান মাসের ৩০ আমল (পর্ব- ১)


হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল


এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে।

আল-কুরআনে এসেছে,
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।

কুরআনে এসেছে,
‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]
রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

সিয়াম পালন করা

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]”

সহীহ্ভাবে কুরআন শেখা

রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

চলবে…..
.

 

ভুলে ভরা জীবন


জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


(১)
আমি বাবা-মা’র পঞ্চম সন্তান। আমরা তিন ভাই দুই বোন। আমি সবার ছোট । বড়গুলো শহরে পড়াশোনা করে। আমি গ্রামের বাড়িতে থাকি। গ্রামের বাড়িতে এমন কোন কাজ নাই, যা আমাকে দিয়ে করানো হয় না।
প্রতিদিন সকালে লঙ্কাপোড়া দিয়ে পানতা খেয়ে মক্তবে যাই। তারপর স্কুল। স্কুল ছুটি হলে প্রতিদিন বাজারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাবার সাথে বাজারে যাওয়া রুটিন কাজ। বাজার হতে এক বস্তা সস্তা তরকারি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। সন্ধ্যায় মুড়ি-চা খেয়ে পড়তে বসি। ছুটির দিনেও বাড়িতে অনেক কাজ। কোন রেহাই নাই। বাবাও সারাক্ষণ একাজ সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অথচ, বাবা চাইলে এই কাজের জন্য একটা শক্ত সামর্থ্যেবান লোক রাখতে পারে। সে টাকা তাঁর আছে। কিন্তু খালি পয়সা বাঁচানোর ধান্ধা।
দাদা-দাদির একমাত্র সন্তান বাবা। উত্তরের বিলে কানি কানির ধানী জমি আছে। সবগুলো দো’ফসলি। বাড়ির এক পাশে বিরাট পুকুর। বিকালবেলা পুকুরে বড় বড় রুই-কাতলা ভুশ ভুশ করে ভাসে। কিন্তু এই মাছ আমাদের কপালে জোটে না। মোটা দাগে বিক্রি হয়, স্থানীয় স্কুল-কলেজের হোস্টেলে। বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছোট মাছ।
গ্রামে লোকজন আড়ালে বাবাকে হাড় কিপ্টে, বখিল বলে। পথে-ঘাটে আমাকে “পোতাইয়ার পোলা” বলে। কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে ইচ্ছে করে না।

মানুষের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বাবা আসলে কিপটা। মাত্র দুইটা পাঞ্জাবি। একটার কলার ছেঁড়া অন্যটার বগলের তলে জোড়াতালি দেয়া। এইসব বাইরের যে কারো চোখে পড়ে।
একবার ছোট মামা মস্করা করে পাঞ্জাবির ফুটোতে আঙুল দিয়ে ছিড়ে দিল, বাবা তাকে বাড়ি ছাড়া করেছিল। মামা আর কখনো বাবার সামনে পড়েননি।
পরিবারে কারো দু’টার বেশী জামা-প্যান্ট নেই। অথচ গ্রামে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ গরীব গৃহস্থের ছেলেমেয়েদের কত রঙিন জামা! এই নিয়ে মনে মনে রাগ পুষে রাখি বটে বাবার মুখোমুখি হবার সাহস হয় না।

আমার অন্য ভাইবোন, যারা শহরে পড়াশোনা করে, সবাইকে বাবা নিয়মিত মানি-অর্ডার করেন। হিসাব পাক্কা। মাস শেষে কত টাকা বাঁচলো তার চুলচেরা হিসাব চাই।
পড়ালেখার খরচ দিতে কোন কার্পণ্য নেই। তবে কড়ায়-গন্ডায় তার হিসাব চাইই। নইলে পরের মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ।
বাবা বাজারে গেলে, সব্জিওয়ালা, মাছওয়ালা হাসি-ঠাট্টা করে। সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
– হাক্কু, অনে পরে আইসসুন। এহনো বড় মাছ বেচা শেষ ন অয়।
সবার শেষে উনি মাছ কিনবেন। এটা জেলেরাও জানে।কি লজ্জ্বার কথা! একবার ভাবুন তো! বাবা বাজারে গিয়ে পাহাড়ি লোকজনের ভাগে বেচা শাক-সবজি খুঁজে বেড়ান। সস্তার জন্য নয়তো আর কি হতে পারে?
মাংসের দোকানে গিয়েও সস্তা খুঁজে মরেন। আমি বন্ধু-বান্ধবের সামনে পড়ে যাই। ওদের বাবা কিনেন গরুর রানের মাংশ আর বাবা কিনেন সস্তা গরুর নলা-পায়া আর হাড়ওয়ালা মাংশ। লজ্জ্বায় মাথা হেটঁ হয়ে আসে। পরদিন বন্ধুরা স্কুলের এ নিয়ে আলোচনা করে আর হাসাহাসি করে।
অথচ ধান বেচা, মাছ বেচা আর বাগানের ফল বেচা টাকায় আমাদের রাজকীয় হালে চলার কথা কিন্তু বাবার এইসব কিপ্টামির কারণে আজ ফকিন্নী হালতে চলাফেরা। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। তবে জিনিসপত্র একটার বেশি দুটো কারো নেই। নতুন কিছু কেনার আগে পুরানোটা তিনি বারবার চেক করেন। কাপড় না ছেঁড়া পর্যন্ত কোন নিস্তার নাই। ইচ্ছেকৃত ছিঁড়লে,তিনি ঠিক ঠিক ধরে ফেলন। শাস্তি হিসাবে বাধ্যতামূলক ঐ ছেঁড়া কাপড় পরতে হবে।

মা যেন কেমন। দু’টোর বেশী শাড়ি নাই। এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই। বাবার সব কাজের এ যেন অন্ধ সমর্থক।
আমি প্রতিদিন এই কারাগার হতে মুক্তি চাই। কবে ম্যাট্রিক দিয়ে শহরে পা দেব, এই চিন্তায় দিন যায়। এই রকম কিপ্টা বাবাকে আমি ঘৃনা করি। আমি এভাবে মানুষের হাসি-ঠাট্টার পাত্র হতে চাই না।

(২)
সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে বয়স বাড়ে। বড় বোনদের বিয়ে হয়ে গেল। খুবই সাধারণ বিয়ে। অনেকটা গছিয়ে দেয়ার মতো। কোন ঢাকঢোল নেই, মাইকের গানবাজনা নেই,। কেবলমাত্র পঞ্চাশ জনের মতো লোকের খাওয়া-দাওয়া।ভাগ্য ভালো, বোনদের গায়ের সুন্দর রঙের কারণে বিয়ে আটকায় নি। বড় ভাই বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছে। হাড়কিপটে লোকের ছেলেকে কোন পাগলে মেয়ে বিয়ে দেবে? ওরা বিদেশি মেম বিয়ে করে ভালো কাজ করেছে।

আমি পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। আজ এই জেলা, কাল এই জেলা। এখন নিজের টাকা নিজে ইচ্ছেমতো খরচ করি। মাকে দামী শাড়ি কিনে দিই। বাবার জন্য কিছু কিনতে ইচ্ছে করে না। কিনলে রাগারাগি করেন। বাড়তি খরচ তাঁর সহ্য হয় না। হাতে নগদ টাকা পেলে খুশি। তিনি জমিয়ে রাখেন।

তিনি সহজে গাড়ি চড়েন না। চা খান না। পান-বিড়ির অভ্যাস নেই। এতে নাকি খালি পয়সা খরচ হয়। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যান না, পাছে কিছু কিনতে খরচ হয়। বাটা কোম্পানির অক্ষয় সেন্ডেল জোড়ার ফিতে ছিঁড়ে গেলে, নতুন ফিতে লাগিয়ে নেন। সেন্ডেল ক্ষয় হয়ে মাটি স্পর্শ না করা পর্যন্ত কোন তালাক নাই।
-এই শালার পুত টাকা জমিয়ে কি করবে বুঝি না।
মাঝে মাঝে রাতেরবেলা ঘর ফিরতি মাছওয়ালা বাড়িতে হাঁক দেয়, কাক্কু, বাড়ি আছোনি?
তিনি ধড়পড় করে উঠে বলেন, হ বাজি; আছি।
-একটা বড় মাছ আছিল। অনর লাই রাহি দি।
এটা সম্ভবত পঁচা মাছ। খুবই সস্তা। বাবা মাছটা কেনার জন্য লাফিয়ে উঠেন।
-আইচ্ছা। রাহি জ। টেঁয়া পরে লইয়ু।
মা দ্রুত হাত চালিয়ে মাছ কুটেন আর রান্না ছড়িয়ে দেন। কোন ক্লান্তি নেই। কোন অভিযোগ নেই।
মাঝে মাঝে চমকে উঠি, কিভাবে এইরকম এক কিপটে লোকের সাথে ৪০ বছর একটা মেয়ে সংসার করে!
আমার কোন মান -সম্মান নেই। স্কুলে আমার সাথে জেলে-মুচি-কামার-কুমারের ছেলেমেয়েরাও পড়ে। অথচ গ্রামে একটু সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা কিন্ডারগার্টেন-এ পড়ে। কি সুন্দর ড্রেস পড়ে, মাথায় ক্যাপ আর উজ্জ্বল রঙের ব্যাগ পিঠে স্কুলে যায়। আর আমি পড়ি অতি সাধারণ এক স্কুলে,যেখানে লুঙ্গি পরে টিচাররা স্কুলে আসে।
বাবার কোন রুচি নেই। টাকা বাঁচাতে গিয়ে ছেলের ইজ্জতের দিকে খেয়াল নেই।।
বাবার প্রতি কেমন বিতৃষ্ণা জমে রইল। মাঝে মাঝে একটু আধটু পত্র যোগাযোগ হয়। বছরে দুইটা ঈদের যে কোন একটাতে বাড়ি যাই। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। দশজনে মন্দ বলবে, এই ভয়ে তবু বাড়ি যাওয়া।

(৩)
বাবার মৃত্যুর খবরে চমকে উঠি। আমার তখন সিলেটে পোস্টিং। মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি ফিরি। বাড়ি লোকে লোকারণ্য। পা ফেলার জো নেই। বোনেরা ফ্যামিলি নিয়ে আগেই হাজির। লোকজন সামলাচ্ছে। বোনের জামাইরাও ব্যস্ত। প্রবাসী ভাই দ্রুত বিমানের টিকেটের অভাবে আসতে পারে না।
এত কিপ্টামির পরও এখানে মানুষের ঢল নামে। শেষ পর্যন্ত ভালোই ভালোই দাফন কাফনের কাজ শেষ হলো। পথে হরি কাকার সাথে দেখা, তিনি কাঁদছেন।
-বাবু, তোয়ার বাপর নান মানুষ আর নইবু। ইবা উগগা ফেরেশতা আছিল।
আমি দোটানায় পড়ি। জানি, মানুষ মারা গেলে, সবাই ভালো ভালো কথা বলে, কত কত তারিফ করে! অথচ জীবিতকালে সবাই তাঁরে কিপটে ছাড়া কিছু ভাবল না। তিনি কেঁদে কেঁদে হিক্কা তোলেন। বললেন,
-বাবু, তোয়ার বাপ আত্তুন মাছ কিনিতো। টেঁয়া আছে তবু হনোদিন ধুম গরি মাছ ন লইতো। একদিন আঁই পুচ গরনের পরে কি হওইয়ে জানো না?
– ওডা, আঁই যদি বেয়াগ মাইনসের আগে মাছ লই ফেলি, মাইনষে বদ দোয়া দিব। মনে গরিবু টেঁয়ার গরমে বড় মাছ আগে লই ফেলাই। আঁই এতাল্লাই আস্তে ধীরে মাছ লই। কেউত্তুন বড় মাছ খাইতু মন চাইলে, ইতারা আগে লই ফেলক।

বাড়িতে এতগুলো পাহাড়ি লোকজন বাবাকে শেষ দেখা দিতে এসেছে দেখে অবাক হই। তাদের মধ্যে বয়স্ক একজন বলল,
-বাবু, তোয়ার বাপ আরারঁতুন বেয়াক সময় শাক-সব্জি কিনিতো। আরাঁর লগে হনোদিন দরদাম ন গইরতো। দামের তুন বেশি টেঁয়া দিতো। আঁরা ত ভিক্ষা ন গরি; এতাল্লাই আঁরারে বেশি দয়া গইরতু। তোয়ার বাপ বেশি গম মানুষ আছিল।

বোডিং স্কুলের হল সুপার আমাকে অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
-তোমার বাবা আমাদের হোস্টেলে তোমাদের পুকুরের মাছ অর্ধেক দামে দিতো। আমাদেরকে বলতেন,
-মাস্টার সাব, বাপ-মা ছাড়া ছেলেরা এখানে একা একা থাকে। আমি না হয়,অর্ধেক দামে মাছ দিয়ে একটু সাহায্য করি। ওরা এখানে কিইবা খেতে পায়, তাতো জানি না।

গ্রামের অনেকগুলো এতিমখানাগুলো কিভাবে চলে,আমরা কোন্দিন ভুলেও টের পাইনি। আমরা এতদিন জানতে পারিনি, আমাদের জমিনের অর্ধেক ধান কোথায় যায়? একজন কিপটে মানুষের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ শরীক হবার আগে কেউ বাবাকে চিনতে পারিনি। আমরা কখনো তাঁর ভেতরটা পড়তে পারেনি। তিনি হয়তো নিজেকে আড়াল করেছিলেন নতুবা আমরা ছিলাম নির্ঘাত অন্ধ। এই যে ভুলেভরা জীবন! বাবাকে কখনো বলা হয়নি, তাঁকে কত্ত ভালোবাসি।

আমরা ভীষণ স্বার্থপর। আমরা শুধু নিজের সুখের কথা, আরামের কথা ভেবেছি।

ছবির উৎস : ইন্টারনেট।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা……১


আফরোজা হাসান


আজ মিহিরের মনে অনেক আনন্দ কারণ দেড়মাস পর দাদুভাই আর দাদুমনিকে আবার কাছে পেয়েছে। দুজনই হজ্জ করতে সৌদিআরব গিয়েছিলেন। মিহিরের জন্য অনেক উপহার নিয়ে এসেছেন তারা। সব উপহারের মধ্যে থেকে কাবা ঘরের শোপিস হাতে নিয়ে মিহির বলল, এটা দিয়ে আমি কি করবো দাদুভাই? দাদুভাই মিহিরকে কাছে টেনে হেসে বললেন, তুমি জানো এটা কি?

হুম জানি তো এটা হচ্ছে আল্লাহর কাবা ঘর। এখানেই তো তোমরা গিয়েছিলে হজ্জ করতে। আচ্ছা দাদুভাই আল্লাহই কি এই ঘর বানিয়েছেন?

হেসে, না দাদুভাই। তবে আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহীম(আ)তাঁর ছেলে ইসমাইল(আ)কে নিয়ে কাবা ঘর বানিয়েছিলেন। সে এখন থেকে বহু বহু বছর আগের কথা। একবার কি হয়েছিলো জান?

কি হয়েছিলো দাদুভাই?

আবরাহা নামে এক দুষ্টু রাজা ছিল। সে ঠিক করেছিল সেই কাবাটা সে ভেঙে ফেলবে। কারণ তার ছিল অনেক শক্তি। ইবরাহীম(আ) আর ইসমাইল(আ) আল্লাহর কথা মত কাবা বানানোর পর থেকে অনেক দূর থেকে মানুষরা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবায় আসতো। তাই তার মনে কাবাকে ঘিরে খুব হিংসার সৃষ্টি হলো। সে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে দামি দামি জিনিসপত্র দিয়ে ভীষণ সুন্দর একটা উপাসনালয় বানালো। তারপরে মানুষকে দাওয়াত দিলো যাতে সবাই তার উপাসনালয়ে আসে। কিন্তু কেউ এলো না বরং সবাই আগের মতোই কাবা ঘরেই যাচ্ছিল ইবাদতের করতে। তাই সে ভীষণ রেগে ঠিক করলো কাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে।

দুষ্টু রাজাটা তখন কি করলো দাদুভাই?

সে তখন অনেক সৈন্য সামন্ত আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।

তারপর কি হলো দাদুভাই?

আবরাহা তার সৈন্য বাহিনী আর বিশাল এক হাতির বহর নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে আসছে শুনে তো মক্কার মানুষেরা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তাদের তো অস্ত্র বলতে ছিল শুধু ঢাল, তলোয়ার আর বর্ষা। এত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে কিভাবে লড়াই করবে তারা ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই তারা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের কোন বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো না।

মিহির ভীত কণ্ঠে বলল,তাহলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা কাবা ঘর ভেঙ্গে ফেলেছিল?

না দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সেই ক্ষমতা কোথায় যে তারা আল্লাহর ঘর ভেঙ্গে ফেলবে। আল্লাহ তো সর্ব শক্তিমান। নিজের ঘরকে দুষ্টুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আবাবীল পাখী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

হাসি ফুটে উঠলো মিহিরের চেহারাতে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,আবাবীল পাখীরা দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করেছিল?

হেসে, তা বলতে পারো।পাখীদের প্রত্যেকের কাছে ছিল তিনটি করে পাথর। যা তারা সেনা বাহিনীর উপরে ছুড়ে দিয়েছিল। সেই ছোট্ট ছোট্ট নূরী পাথর বৃষ্টির ফোঁটার ঝরে পড়েছিল দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের উপর। যারফলে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে মিহির বলল, খুব ভালো হয়েছে। কত্তো বোকা আল্লাহর ঘর ভাঙতে এসেছিল। উচিত শিক্ষা হয়েছে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের।

হেসে নাতীকে কোলে টেনে নিয়ে, ঠিক বলেছো দাদুভাই দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যরা ভীষণ বোকা ছিল। এমন অনেক বোকা মানুষ আছে যারা ক্ষমতা ও সম্পদের কারণে নিজেদেরকে অনেক বিশাল কিছু মনে করে। যারফলে তারা আল্লাহ্‌র সাথে লড়াই করতে চায়। কিন্তু…

দাদার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,আল্লাহ তো সর্বশক্তিমান তাই কেউ জিততে পারে না লড়াইতে।

হেসে,একদম ঠিক বলেছো। আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে আসে দুষ্টু রাজা ও তার সৈন্যদের মতই করুণ অবস্থা হয় তাদের।

চোখের সামনে কাবাঘরের শোপিসটা তুলে ধরলো মিহির। কিছুক্ষণ দেখে বলল, আমি আল্লাহর ঘরকে কোথায় রাখবো দাদাভাই?

তুমি কোথায় রাখতে চাও?

একটু চিন্তা করে মিহির বলল, আমার পড়ার টেবিলের উপর। এক্ষুনি রেখে আসি আমি। দাদার কোল থেকে নেমে নিজের ঘরের দিকে ছুট লাগালো মিহির।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার- শেষ পর্ব


ডা. মারুফ রায়হান খান


যারা নিয়মিত Sulfonylureas (Glipizide, Gliclazide, Glimeperide –ওষুধের প্যাকেটের গায়ে ছোট্ট করে ওষুধের এই জেনেরিক নেইম লেখা থাকে) প্রতিদিন সকালে খেতেন, তারা একই ডোজে ইফতারের সময় সেটা খাবেন। আর যারা এ ওষুধটি দুবেলা খেতেন, সকালে ও রাতে–তারা সকালের ডোজের পুরোটা ইফতারের সময় খাবেন। তবে রাতের ডোজের কেবল ‘অর্ধেকটা’ সেহরির সময় খাবেন।

যারা Metformin (Oramet, Comet, Metfo, Met, Informet ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) ৩ বেলা ৫০০ মিলিগ্রামের একটি করে ট্যাবলেট খেতেন, তারা ইফতারে একসাথে দুটো ট্যাবলেট অর্থাৎ মোট ১০০০ মিলিগ্রাম খাবেন। আর সেহরিতে ৫০০ মিলিগ্রামের ১টি ট্যাবলেট খাবেন।

যারা দুবেলা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, সকালের ডোজটা সমপরিমাণ ইফতারের আগে নেবেন। আর রাতের ডোজের ‘অর্ধেক’ পরিমাণ সেহরির সময় নেবেন। ধরা যাক, কেউ সকালে ৩০ ইউনিট এবং
রাতে ২০ ইউনিট ইনসুলিন পেতেন। রমাদানে তিনি ইফতারের আগে সকালের ডোজের পুরোটা অর্থাৎ ৩০ ইউনিট ইনসুলিনই নেবেন। আর সেহরির সময় রাতের ডোজের অর্ধেক (২০/২=১০) অর্থাৎ ১০ ইউনিট ইনসুলিন পাবেন।

আপনি ডায়াবেটিক হোন কিংবা নন-ডায়াবেটিক, সুস্থ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে যেন সবগুলো রোজা রাখতে পারেন সে দু’আই করি। তবে মারাত্নক শারীরিক অসুবিধার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে যদি একান্তই রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে দয়া করে মন খারাপ করবেন না। আপনার নিয়্যাত তো নিষ্কলুষ ছিল, আর আল্লাহ তো অন্তরের খবরও জানেন। পরবর্তী সময়ে সে রোজাগুলো কাজা আদায় করা যাবে। এই রমাদানটি হোক এ যাবতাকালের আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রমাদান। আমীন।

 

চলতি মাসে ৯ দিনে ৩ জনের মৃত্যুসহ ধর্ষণের শিকার ৪১ শিশু !!!


নারী সংবাদ


শিশু ধর্ষণ! মে মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ, এই প্রথম নয় দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ৪১ শিশু ধর্ষণের শিকার। নিষ্পাপ তিনটি শিশু মারা গিয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে মেয়ে শিশু ৩৭ জন এবং ছেলে শিশু চারজন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটি জানায়, ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে তিন শিশু লাশ পাওয়া যায়। আহত হয়েছে ৪১ শিশু। এছাড়া ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে আরও তিন শিশু। ফলে মোট নির্যাতনের শিকার ৪৪ জন শিশু।

শাহানা হুদা রঞ্জনা মতে, ‘ছয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আমরা ধর্ষণের শিকার শিশুদের সংখ্যাটি নির্ণয় করেছি। আসল সংখ্যাটি হয়ত আরও বেশি। এ সংখ্যাটি অস্বাভাবিক।’ (মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক)

নারী ও শিশু র্ধষণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিমও। তিনি বলেন, ‘শিশুধর্ষণের ঘটনাগুলো খুবই অ্যালার্মিং। আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে তাদের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে। শাস্তির বিষয়টি পরে, সবার আগে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, সবাইকেই এ নিয়ে আরও বেশি কথা বলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলে সত্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি হয়নি। এটি হতাশাজনক ব্যাপার।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থাটি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ‘শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’

 

সেহেরিতে টমেটো ভর্তার রেসিপি


রেসিপি


উপকরণ
আপনি টমেটো – ২ টা মাঝারি আকারের
নিতে পারেন। কাঁচামরিচ – ৩-৪ টা বা আপনার স্বাদ মত। পেঁয়াজকুচি- ৩ টেবিল চামচ নিবেন। আর লবন স্বাদমত।
সরিষার তেল- ১ চা চামচ এবং ধনিয়াপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ নিন।

পদ্ধতি
টমেটোর গায়ে সামান্য তেল মাখিয়ে একটি প্যানে নিয়ে মাঝারি আঁচে টেলে নিন (মাঝে মাঝে টমেটো নেড়ে দিন)। আপনি চাইলে প্যান ঢেকে দিয়ে টমেটো পুড়াতে পারেন। টমেটো নরম ও পোড়া পোড়া হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা হতে রাখুন। প্যানে কাঁচামরিচ নিয়ে মাঝারি আঁচে নরম ও হাল্কা পোড়া পোড়া হয়ে আসা পর্যন্ত টেলে নিন। এবার টমেটোর চামড়া ছাড়িয়ে একটি বাটিতে নিন। তাতে মরিচ পোড়া, পেঁয়াজকুচি, ধনিয়াপাতাকুচি, লবন ও সরিষার তেল দিয়ে একটি চামচ বা হাত দিয়ে ভাল করে ভর্তা করে নিন। আপনি চাইলে চপারে দিয়েও ভর্তা করতে পারেন।

পরিবেশন
টমেটো ভর্তার মধ্যে ধনিয়া পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

গল্পে গল্পে শিশুদের হাদীস শেখা


আফরোজা হাসান


দুপুর থেকে ছেলের কর্মকাণ্ড দেখে খুবই মজা পাচ্ছিলো তাইয়্যেবাহ। বছর খানেক আগে আরিশকে একটি পিগি ব্যাংক কিনে দিয়েছিল। দুপুরে সেটা ভাঙার পর হিসাব করে দেখা গিয়েছে সব মিলিয়ে আরিশের জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো। জমানো টাকার পরিমাণ চারশো ইউরো দেখে যতটা আনন্দিত হয়েছে আরিশ তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি আনন্দিত হয়েছে এই তথ্য জানার পর যে, চারশো ইউরো মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা। এরপর থেকে টাকা দিয়ে কি করবে সেই পরিকল্পনা করছে আরিশ। একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হতে না হতেই সেটা বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি পরিকল্পনার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে দিচ্ছে। তাইয়্যেবাহ চুপচাপ ছেলের কান্ড দেখে আনন্দ নিচ্ছিলো। নিজ থেকে কোন পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেনি। জানা আছে শেষমেশ তার কাছেই আসবে আরিশ ঘুরে ফিরে। এবং তাইয়্যেবাহর জানাকে সত্য প্রমাণিত করে বিকেলবেলা আরিশ হাজির হলো তার জমানো অর্থ সম্পদ সহ। খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল, আম্মু আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না আমার টাকা দিয়ে কি করবো। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবো বাবা। কিন্তু তারআগে বলো তোমার কি কি করতে ইচ্ছে করছে তোমার টাকা দিয়ে।

গড়গড় করে নিজের পছন্দের একগাদা গেমসের নাম বললো আরিশ। যেগুলো কিনতে ইচ্ছে করছে। এছাড়া আগামী রামাদানের ঈদ উপলক্ষ্যে বাবা তাকে যে গেমসটা কিনে দেবার কথা বলেছেন সেটাও এখনই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ঈদের সময় বাবার কাছ থেকে অন্যকিছু নেবে। নতুন যে হালাল খাবারের বুফে রেস্টুরেন্টটা হয়েছে তাদের বাসায় কাছে সেখানে বাবা, আম্মু, ভাইবোন আর খুব প্রিয় দুজন বন্ধুকে নিয়ে খেতে যেতেও ইচ্ছে করছে। নানাভাই, নানুমণি, দাদাভাই, দাদুমণিকে তাদের পছন্দের কোন উপহার দিতে ইচ্ছে করছে। এমন আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছের কথা জানালো আরিশ।

ছেলের পরিকল্পনা শুনে তাইয়্যেবাহ হাসি মুখে বলল, তোমার টাকা তুমি অবশ্যই নিজের মতো খরচ করতে পারো। আম্মুর এতে কোনই আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার নিশ্চয়ই মনেআছে বেশ কয়েকদিন আগে আম্মু তোমাকে বলেছিলাম, কোন কাজ করার সময় আমাদের সম্মুখে যখন অনেকগুলো অপশন খোলা থাকে। তখন আমাদের চেষ্টা করা উচিত সবচেয়ে উত্তম কাজটি করার।

হ্যা, আম্মু আমার মনেআছে তো তোমার কথা। সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে এসেছি। তুমি বলে দাও কি করবো আমি।

তুমি কি ভেবে দেখেছো তোমার টাকা দিয়ে সবচেয়ে উত্তম কি কাজ করা যায়?

বুঝতে পারছি না। তুমি বলে দাও।

তোমার মনেআছে আরিশ গতবার যখন আমরা দেশে গিয়েছিলাম তখন আমার এক খালামণির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম তোমাকে? ঐ যে যার দুই ছেলের সাথে তুমি অনেক খেলা করেছিলে।

মনে নেই আবার। উফফ, ওরা আমাকে অনেক বিরক্ত করেছে। বিশেষ করে ছোট ছেলেটা।

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, বিরক্ত করেছে ঠিক। কিন্তু তোমার সাথে খেলাও তো করেছে। তা না হলে তোমাকে তো একাই খেলা করতে হতো। তাই না?

হ্যা তাও ঠিক।

কিছুদিন আগে কি হয়েছে শুনবে?

কি হয়েছে আম্মু?

আমার সেই খালামণির হাজবেন্ড মারা গিয়েছেন। খালামণি এখন খুবই বিপদে আছেন উনার দুই ছেলে নিয়ে। ওদের লালন-পালন, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদিতে অনেক খরচ। খালামণির এখন এতটা খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। ওদের দুজনের স্কুলে যাওয়াটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরিশের হাস্যেজ্জ্বল চেহারায় ধীরে ধীরে আঁধার ছেয়ে গেলো। মন খারাপ করা কন্ঠে বলল, ওদেরকে সাহায্য করার কেউ নেই? তুমি আর বাবা সাহায্য করছো না কেন?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি আর তোমার বাবা মিলে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তুমি যদি চাও তাহলে তুমিও আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো। তুমিও ওদেরকে সাহায্য করতে পারো।

আমি? আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু?

তোমার মনে নেই সেদিন আমরা দান-সাদাকাহর উপরে হাদীস পড়েছিলাম?

হ্যা আম্মু আমার মনে আছে তো। রাসূল (সঃ) বলেছেন, ”যে ব্যক্তি কোন অভাব গ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন।” এরপর থেকে আমাদের স্কুলের পাশে মেট্রো স্টেশনের কাছে গরীব যারাই সাহায্যের জন্য বসে থাকে আমি তাদেরকে দেখতে পেলেই সাহায্য করি। গত সপ্তাহে তুমি যে আমাকে অনেক বেশি করে কুকিস দিয়েছিলে ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে খাওয়ার জন্য। আমি ফ্রেন্ডদের না দিয়ে ওখানে যে দুজন গরীব মানুষ ছিলেন তাদেরকে দিয়েছি। অনেক খুশি হয়েছিল।

তাইয়্যেবাহ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ।সবসময় এমন চেষ্টা করবে অভাবী মানুষদেরকে সাহায্য করার। জানো রাসূল (সঃ) আরো কি বলেছেন? বলেছেন, “সালাত (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, সিয়াম ঢাল স্বরূপ এবং দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” রাসূল (সঃ) আরো বলেছেন, “খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।” আর সবচেয়ে আনন্দের কি জানো?

কি আম্মু?

রাসূল (সঃ) বলেছেন, “মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব হয়। একটি সাদাকাহ’র; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।” মানে হচ্ছে, তুমি যদি কোন গভীর দুঃখীকে দান করো তাহলে তোমার যে সওয়াব হবে, তুমি যদি আত্মীয়দের কাউকে দান করো তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে।

একটুক্ষণ চিন্তা করে আরিশ বলল, তারমানে আমি যদি উসমান আর উসামাকে সাহায্য করি তাহলে মেট্রো স্টেশনে যারা থাকেন তাদেরকে সাহায্য করার চেয়ে দ্বিগুণ সওয়াব হবে?

ইনশাআল্লাহ অবশ্যই দ্বিগুণ সওয়াব হবে তোমার।

তাহলে আমি এখন থেকে উসমান আর উসামাকেই সাহায্য করবো। কিন্তু ওদেরকে আমি কিভাবে সাহায্য করবো আম্মু? ওরা তো বাংলাদেশে থাকে।

তুমি যদি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাও তাহলে এখান থেকেও করতে পারবে।

আমি সত্যিই ওদেরকে সাহায্য করতে চাই আম্মু।

তাহলে তুমি তোমার জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা উসমান আর উসামার জন্য পাঠাতে পারো। জানো পঁয়ত্রিশ হাজার টাকায় ওদের দুজনের প্রায় এক বছরের পড়াশোনার খরচ চলে যাবে। তবে তোমাকে সব টাকা দিতে হবে না। তুমি চাইলে যে কোন একজনকে সাহায্য করতে পারো।

না না আম্মু আমি দুজনকে ই সাহায্য করতে চাই। তাহলে আমার অনেক বেশি সওয়াব হবে। কিন্তু ওদেরকে টাকা কিভাবে দেবো?

তাইয়্যেবাহ হেসে বলল, এখান থেকে টাকা পাঠিয়ে দেয়া যাবে বাংলাদেশে। তোমার বাবাকে দিলেই উনি পাঠিয়ে দেবেন।

তাহলে এক্ষুণি আমি বাবাকে আমার জমানো সব টাকা দিয়ে আসছি। বলতে বলতেই উঠে ছুট লাগালো আরিশ। তাইয়্যেবাহও আলহামদুলিল্লাহ বলে রব্বের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে করতে ছেলের পিছু নিলো।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-২


ডা. মারুফ রায়হান খান


রোজাতে ডায়াবেটিক রোগীর যে সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন চিকিৎসকরা–তা হচ্ছে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ (Hypoglycemia)।সহজ ভাষায় বলতে গেলে রক্তে গ্লুকোজ/সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৫ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে ধরা হয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া এতো মারাত্নক হতে পারে যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিজন ডায়াবেটিস রোগীর এবং তার পরিবার-পরিজনের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং করণীয় কী তা জানা অবশ্যই প্রয়োজন।

সচরাচর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় :

– অতিরিক্ত ঘাম
– হাত-পা কাঁপা
– বুক ধড়ফড় করা
– বেশি ক্ষুধা লাগা
– উদ্বিগ্নতা
– ঝিমাতে থাকা
– কথা জড়িয়ে যাওয়া
– মনোযোগ প্রদানে বিঘ্ন ঘটা
– অল্পতে রেগে যাওয়া
– বমি বমি ভাব
– মাথা ব্যথা/ মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাথে সাথে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। তা যদি ইফতারের ১০ মিনিট আগেও হয়।

৪. শারীয়াহগত দিক থেকে রোজা রেখে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে কোনো বাধা নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা থাকা অবস্থায় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেহরির ঘণ্টা দুয়েক পর এবং ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য সময়েও পরীক্ষা করা যেতে পারে।

৫. যেকোনো সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৩ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া সেহরি করার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে যায় তখনও রোজা ভাঙতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি বেড়ে গেলেও রোজা ত্যাগ করতে হবে।

৬. ক্যালোরি এবং খাবারের গঠনগত দিক থেকে রমাদানের আগে যেমন স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতেন, রমাদানেও তেমনটাই চলবে। সেহরির সময় অপেক্ষাকৃত জটিল শর্করা যেগুলো হজম ও শোষণ ধীরে ধীরে হয় তেমন খাবার খেতে হবে। সেহরির সময় ভাত, রুটি, নান, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে :

– অনেক বেশি পরিমাণ শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

– মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

– মিষ্টি পানীয় পরিহার করতে হবে। মিষ্টি শরবতের বদলে আল্লাহর দেওয়া ‘প্রাকৃতিক শরবত’ ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।

– ইফতার থেকে সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি খেতে হবে।

আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেহরি যতোটা সম্ভব দেরিতে খেতে হবে আর ইফতার যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাদের ধর্মীয় বিধানও তা-ই শিক্ষা দেয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়।

৭. রোজাতে প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে কোনো বাধা নেই। তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভালো। ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টাখানেকের জন্যে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি অতিরিক্ত নামাজও শরীরচর্চা হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত।

৮. সবশেষে আসা যাক ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নিতে হবে। প্রত্যেকটা রোগীকে চিকিৎসকই ঠিক করে দেবেন এটা। তবে খুব সাধারণভাবে একটু আলোচনা করা যাক।

চলবে…

 

কাঁচা আমের পাতলা ডাল


রেসিপি


গরমে ইফতারির পর রাতের খাবার খেতে বসে এমন একটা আইটেম পেলে নিশ্চিত আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। আমের টক এবং হালকা পাতলা ডাল ভাব আপনার খাবারের মজা অনেক গুন বেশী করে দিবেই। গরমে মুখে স্বাদ বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুন।

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ (উপকরণের অনুমান আপনি নিজেও করে নিতে পারেন)

– হাফ কাপ মুশরী ঢাল।
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– হাফ চামচ গুড়া হলুদ
– কয়েকটা পেঁয়াজ কুচি
– সামান্য ধনিয়া পাতা
– লবণ (পরিমাণ মত)
– পানি (কিছু গরম পানি আগে করে রাখলেই ভাল, প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে)
– কিছু রসুন কুচি (বাগার দেয়ার জন্য)
– সামান্য তেল

প্রণালীঃ
কাঁচা আম ফালা করে নেই।
মুশরী ডাল ভাল করে ধুয়ে হলুদ গুড়া, পেঁয়াজ কুচি, পরিমাণ মত লবণ ও কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে জাল দিতে থাকুন। ডাল গলে গলে আসলে গুটনি দিয়ে আরো গলে মিহিন করে ফেলুন। একটা অনুমান করে কাঁচা আম দিতে হবে।

পরিবেশন
আরো কিছু সময় জাল দিতে হবে। থাকলে কিছু ধনিয়া পাতা কুঁচে দিন, খেতে ভাল লাগবে।

 

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজার উপহার-১


ডা. মারুফ রায়হান খান


আপনার আব্বু-আম্মু বা আত্নীয় কেউ ডায়াবেটিসের রোগী হলে আপনার জন্যে আমার পক্ষ থেকে রমাদানের উপহার এটি।

১. ডায়াবেটিসের রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবে? কোন কোন ক্ষেত্রে পারবে না?

২. রোজা রাখলে কী কী উপকার হবে?

৩. কী কী ঝুঁকি থেকে যায়? কী করণীয় তখন?

৪. রোজা থাকা অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা যাবে কি?

৫. কোন অবস্থায় রোজা অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে?

৬. রোজাতে খাবার-দাবার কেমন হবে?

৭. রোজাতে শরীরচর্চা করা যাবে কীভাবে?

৮. ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে, কখন, কতোটুকু নিতে হবে?

মুসলিমদের জন্যে ইবাদাতের এক ভরা মৌসুম রমাদান। কে না শরীক হতে চায় এই মহিমান্বিত মাসের রহমাতে-বারাকাহতে-মাগফিরাতে-নাজাতে! তবে কিছুটা বিপাকে পড়ে যান ডায়াবেটিসের রোগীরা। অনেকগুলো প্রশ্ন আর সংশয় তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে।

এবার চলুন এক এক করে আমরা প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

১. সারা বিশ্ব জুড়ে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রোজা রাখেন। প্রচুর পরিমাণ লিটারেচারে এসেছে যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীরাই রোজা রাখতে পারেন। তবে এটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তার রোজা রাখতে পারা বা না পারা। সেজন্যে প্রয়োজন রোজা শুরু হবার বেশ কিছুদিন আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যাচাই-বাছাই (Pre-Ramadan Assessment) করিয়ে নেয়া যে তিনি রোজা রাখতে সক্ষম কিনা, রোজাতে কী কী নিয়মকানুন মেনে চলবেন, ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নেবেন ইত্যাদি। রোগীর বিগত দিনগুলোতে ডায়াবেটিসের অবস্থা, জটিলতা, অন্যান্য রোগ, রক্তে চর্বির পরিমাণ, রক্তচাপ ইত্যাদি সবকিছু বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন রোগীটি রোজা রাখতে পারবে কি পারবে না। তবে খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস অনেক কমে গেলেও বুঝতে পারেন না, যাদের ডায়াবেটিস একেবারেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সম্প্রতি ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হয়েছে–তাদেরকে রোজা না রাখতে বলা হয়। তাছাড়া যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো অর্গান ফেইলিউর (যেমন : হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর) আছে তাদেরও রোজা না রাখাই শ্রেয়। এছাড়াও যাদের মারাত্নক চোখের রেটিনায় সমস্যা, স্নায়ুতে সমস্যা, বড় ধরনের রক্তনালীতে সমস্যা, একিউট পেপটিক আলসার, মারাত্নক ধরনের ফুসফুসে যক্ষ্ণা, মারাত্নক ইনফেকশান, মারাত্নক হাঁপানি, বারবার পাথর হওয়া, যেসব ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ, সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে, লিভারে সমস্যা রয়েছে এবং মারাত্নক মানসিক সমস্যা যাদের রয়েছে–তাদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গর্ভবতী এবং শিশুকে বুকের দুধ পান করান তারা রোজা রাখবে না।

২. ডায়াবেটিস রোগীদেরও রোজা রাখলে বেশ কিছু উপকার হয়ে থাকে। যেমন :

– রোজা শরীরের বিপাকীয় (Metabolic) কাজের উন্নতি ঘটায়।

– শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

– উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়।

– শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।

– রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

– সর্বোপরি রোজাতে নিয়মানুবর্তিতার এক অনন্য চর্চা হয়। আর আমরা সবাই জানি নিয়মানুবর্তিতা ডায়াবেটিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।

৩. ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখলে যেসব ঝুঁকি থাকে :

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।

– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)।

– পানিশূন্যতা।

– ওজনের তারতম্য ঘটা।

চলবে….

 

কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা

 


নারী সংবাদ


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪) নামে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণকারীরা তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে।

নিহত শাহিনুর কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহিনুর আক্তার তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করেন। সোমবার বিকালে তিনি এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে উঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী-থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।

শাহিনুর বিকালে বাসে উঠার পর থেকে তার বাবা এবং ভাইদের সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়। রাত ৮ টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার বাবার সাথে ফোনে জানান, আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে পারবেন। তার বাবা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন।

সাড়ে আটটার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে তখনো তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। বলেন, আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছতে।

কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সমস্ত যাত্রী নেমে যায়। কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের সাথের চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নীরব জায়গায় শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যা করে বলে স্বজনরা ধারণা করছেন।

তার মৃত্যুর পর ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে এগারোটার দিকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে দুর্ঘটনা কথা বলে লাশ ফেলে রেখে যায়।

হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে আনয়নকারীর নাম পাওয়া যায় আল আমিন, বাবা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময়েও তানিয়া পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌঁছায় তার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গভীর রাতে সংবাদ পায় শাহিনুরের লাশ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে।

তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন জানায়, শাহিনুরের সাথে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসং এনড্রয়েট মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল।

কটিয়াদী থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ড্রাইভার নূরুজ্জামান (৩৯), হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। শাহিনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাগ, কাপড় চোপড় পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ওসি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হবে। তবে তার হাত, মুখ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

 

ইফতারিতে দই-চিড়া-কলা


রেসিপি


উপকরণ

১. মিষ্টি দই ২ কাপ
২. চিড়া ১কাপ
৩. পাকাকলা ২টি (চৌকো করে কাটা)। ৪. লবণ ১ চিমটি
৫.মসলার গুড়া

প্রক্রিয়া

প্রথমে চিড়া ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বাটিতে দই, লবণ, এবং সামান্য মসলা দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিবেন।

ফেটানো দইয়ে চিড়া মেখে এক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।

পরিবেশন

ঠিক ইফতারির ৬ থেকে ১০ মিনিট আগে কলার সঙ্গে দই-চিড়া চামচ দিয়ে মেশাতে হবে। বরফ টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌসি আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১)ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২)ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩)রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪)রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা(অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়)তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্ঠা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা।প্রতি ওয়াক্ত নমিাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একটি খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্ঠা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা,তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনিন্দন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্ঠা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।ইত্যাদি

৫)নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্ঠা করাএবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬)পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭)রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮)শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।(প্রয়োজনে ইত্তেকাফের নিয়ত করা যেতে পারে।ঈদের কেনাকাটা আগে থেকেই করে রাখা যাতে শেষের দিনগুলো ফ্রি থাকা যায়।)

৯)যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০)অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)
সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:
সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ-
৩:৫০মি:-৪:৩০মি: (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা
সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:
বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা
দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে ,রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা।মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)
কোরআন অধ্যায়ন,ইসলামী বই পড়া,হাদিস ইত্যাদি-১১:৩০ থেকে-১২:৩০

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-১২:৩০- ১:০০
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-১:০০-২:০০মি:
সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল
(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)কোরআন পড়ানো,হাদিসের গল্প বলা,ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো,স্কুলের পড়া ইত্যাদি-২:০০-৩:৩০
ইস্তেগফার পাঠ(আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)-৩:৩০-৪:১৫
বিশ্রাম-৪:১৫-৫;০০
কোরআনের সূরা মুখস্ত(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনিন্দন জীবনে পড়েছেন)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ
রাতের খাবার,ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা-৫:০০-৬:১৫মি:
এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো,টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো,আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো ,সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:৬:২০-সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত
এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অথসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারেএবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।
ইফতার গ্রহন–৬:২০(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।}
সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ ৭:০০-৭:৩০
(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ ৭:৩০-৮:০০

রাতে

সালাতুল এশা ,তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৮:০০-১০:০০
রাতের খাবার-১০:০০-১০:৩০
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-১০;৩০-১১:০০
ঘুমের প্রস্তুতি ও ঘুম-১১:০০-২:৩০
মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।আমীন।
(এটি একটি নমুনামাত্র যারা চাকুরিজীবি বা ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চার মা তাদেরজন্য এ রুটিন মেনে চলা কঠিন । তবে তারা যা করতে পারেন তা হলো সময় নয় কাজগুলি গুছিয়ে নিন তারপর সুযোগ মত কাজটি শেষ করুন আর লিস্টে টিক দিয়ে দিন )

আল্লাহ আমাদের রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিন। আমীন।

 

রমজান মাসের ফজিলত – শেষ পর্ব


বিশেষ সংখ্যা মাহে রমজান


সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।  [ তিরমিজি ]

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন : ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ৩


বিশেষ প্রতিবেদন


চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা  বলেন : লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫]

পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। [ মুসনাদ আহমদ ]

অন্য হাদিসে এসেছে : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। [ সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ]

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।

ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। [ তিরমিজি ]

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ২


বিশেষ প্রতিবেদন


দুই. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।

 [ সূরা বাকারা : ১৮৪ ]

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। [ মুসলিম ]

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

রমজান মাসের ফজিলত – ১


বিশেষ প্রতিবেদন


রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]রমজান মাসের ফজিলত – ১

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন : তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।  এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। [ বর্ণনায় : নাসায়ী ]

আমাদের কর্তব্য : আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল :

এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন।
হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সূরা বাকারা : ১৮৩]

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে : যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। [ বোখারি ]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।

 

গণপরিবহনকে নারীবান্ধব করলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে


নারী সংবাদ


বাসা থেকে বেরিয়েছেন আটটা দশ মিনিটে। সোয়া আটটায় এসে পৌঁছেছেন কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। আর এখন বাজে পৌনে নয়টা। এতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ২৫ টির মত তার রুটের গাড়ি চলে গেলেও উঠা সম্ভব হয়নি মনিকার। যাবেন কাওরান বাজার। আর বেশি দেরী হলে তখন অফিসে যাওয়া-না যাওয়া সমান। কারণ আধঘন্টা লেইট হলে অফিসের রেজিস্ট্রি খাতায় নামের পাশে লাল কালি পড়ে যাবে। উপায় না দেখে এখন সিএনজি চালিত অটো রিকশার (সিএনজি নামে পরিচিত বাহন) দিকে এগোয় মনিকা। অন্যসময়ে সে সিএনজির দিকে ভুলেও যায়না। কারণ এই সময় সিএনজির ভাড়া আকাশ ছোঁয়া। আর সেই ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা মনিকার নেই। আর তাই এমন সময় সিএনজিই একমাত্র ভরসা। এতে বেশ কিছু টাকা গেলেও উপায় নেই।
মনিকা বলেন, এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এভাবে রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে গেলে বেতনের একটা মোটা অংকই গাড়ী ভাড়ার পেছনে ব্যয় করে ফেলতে হয়। আর সকাল বেলা এমন অবস্থা হয় যে আমার অন্য কোন উপায় থাকে না। আর এসময় অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি থাকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে আর তাদের অভিভাবকরা। আবার কোন কোন দিন গাড়ীতে উঠতে পারলেও সেখানে পড়তে হয় ঝামেলায়। সিটতো পাওয়াই যায় না। আবার অনেকসময় পুরুষ বসে থাকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে। তাদের উঠতে বললে কেউ কেউ উঠে গেলেও প্রায়ই সময়ই ঝগড়া করতে হয়। আবার অনেকে বাজে মন্তব্যও করে।
সায়মা ইসলাম নামের স্কুলগামী এক ছাত্রীর মা জানান, প্রতিদিনই যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। আর আমাদের সেই সামর্থ্য নাই যে প্রতিদিন সিএনজি রিকশা বা স্কুলের গাড়ী ব্যবহার করব। তাই এই পাবলিক বাসই আমাদের ভরসা। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাই অফিসে।
উপরের ঘটনা দুটি শুধু এই দুই নারীর ক্ষেত্রেই নয়, গণপরিবহন ব্যবহারকারী নারীদের নিত্যসঙ্গী এই বিড়ম্বনা। অনেক নারী যাত্রীর অভিযোগ বাসে উঠার সময় যেমন বিড়ম্বনার শিকার হন তেমনি বাসের ভেতরে যাত্রীদের দ্বারাও অনেক সময় হয়রানির শিকার হন তারা। আবার নারী আসনে পুরুষ বসে থাকলে তাদের উঠাতে গিয়েও নানা ধরণের বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয় তাদের।
তবে এবার এই চিত্র পাল্টানোর আশা করছেন নারীরা। কারণ এখন থেকে তাদের নির্ধারিত আসনের আইনী সুরক্ষা পাবেন তারা। নারী আসনে পুরুষ বসলে বা বসতে দিলে জেল জরিমানার আইনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন বা বসতে দেয়া হয় তবে তাকে এক মাসের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
নতুন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করার বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মানবিধকারকর্মী এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, এই আইনের বিষয়ে প্রচারণা, মানুষকে সচেতন করা এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু অভিযান চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া গেলে গণপরিবহণ আরও নারীবান্ধব হবে।প্রচলিত অনেক আইন রয়েছে যা নারীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। গণপরিবহণে হেল্প লাইনগুলোর নাম্বার টানিয়ে দেয়া উচিত। আর নারীদেরও প্রতিবাদ করতে হবে, কারণ জরিপে আমরা দেখেছি হয়রানির ঘটনায় অর্ধেক নারীই কোন প্রতিবাদ করেন না।
একশনএইড’র এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে গণপরিবহণে যাতায়াত করেন মাত্র ২১ শতাংশ নারী। আবার এসব নারীর অধিকাংশই (৪৭ শতাংশ) চলাচল করেন সিএনজি রিকশায়, আর ১৯ শতাংশ নারীর হেঁটে যাতায়ত করেন। কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে গণপরিবহণে হয়রানির ভয়ে নারীরা এই বিকল্প পরিবহণ ব্যবহার করছেন। সিএনজি অটোরিক্সায় যাতায়াত করছেন সাত শতাংশ নারী। কাজেই গণপরিবহণকে আমরা নারীবান্ধব করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে।
এছাড়াও বর্তমানে অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা চালু হওয়ায় নারীরা কিছুটা স্বত্ত্বি পেয়েছেন বলে মনে করেন এই নারী মানবাধিকার কর্মী। তিনি বলেন, এখন অনেক নারীই এসব অ্যাপস ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন, যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। তবে এসব সেবার মান আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা দেড় লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেখানে যাত্রীদের প্রতি বিশেষ করে নারীদের প্রতি আচরণের বিষয়টিও তাদের প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়। (বাসস)

 

শিশু ধর্ষণ : কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য


নারী সংবাদ


চলতি বছরে প্রথম চার মাসে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ২৯০টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে ৫২, ৬০, ৫২টি করে মোট ১৬৪টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। আর শুধু এপ্রিল মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৫টি শিশু। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭০টির বেশি শশু ধর্ষিত হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফের তথ্য অনুযায়ী গত ৪ মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বিএসএএফের তথ্যে আরো বলা হয়েছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর (প্রথম চার মাসে) শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪%। উল্লেখ্য, সব ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ পায় না। তাই প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলে বিএসএএফ মনে করে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে শিশু ধর্ষণের নানা মর্মান্তিক চিত্র উঠে আসছে। ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটতে থাকায় এবং এসব ঘটনার নৃশংসতায় নাগরিক হিসেবে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনা আমাদের সমাজে শিশুদের অসহায় অবস্থার সার্বিক চিত্রটাই তুলে ধরছে।

বিএসএএফের মতে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধির কারণ মূলত, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, দুর্বল চার্জশিট, শিশুর পক্ষে সাক্ষী-সাবুদ না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে দরিদ্র অভিভাবকের আসামির সাথে আপস করতে বাধ্য হওয়া এবং সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় ইত্যাদি। এসব প্রতিহত করতে আরো ত্বরিত হস্তক্ষেপ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দফতরগুলোকে অনুরোধ জানানো হয় বিএসএএফের পক্ষ থেকে। তারা বলেন, শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধে দ্রুত বিচারের আওতায় শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো নিতে হবে। প্রচলিত আইন সংশোধন করে শিশু ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সেই সাথে রায় দ্রুতগতিতে কার্যকর করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করতে হবে। বিষয়টি এখন আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার পর্যায়ে নেই। শিশু ধর্ষণের অপরাধ জামিন অযোগ্য করা খুবই জরুরি।

তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার অতি দ্রুত এসব ঘটনার প্রকৃতি ও পুনরাবৃত্তিকে বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে পর্যালোচনা করবে এবং প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেবে। প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদে তার শৈশব কাটাতে পারে, সে পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতন ও অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সময়ের দাবি। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত