ফারিনা মাহমুদ
সন্তানকে যেমন একজন মা জন্ম দেয়, সন্তানও তেমনি একজন “মা” এর জন্ম দেয়। দুটোকেই আমার সমান আনন্দের আর সমান বিষ্ময়ের মনে হয়।
আল্লাহ !! আপনার বাচ্চা এখনো ফিডারে দুধ খায়? আমারটা তো সেই কবে থেকে মুরগির রান নিজে চিবিয়ে খায়, আর কিছুদিনের মধ্যে গরুর রানও পেরে যাবে ইনশাল্লাহ।
অথবা,
এখনো মাত্র আড়াইটা দাঁত উঠেছে ? আমার বাবুর তো আক্কেল দাঁতও উঠলো বলে।
মা মাত্রই এই কথাগুলোর সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ফলাফল, নিজে হীনমন্যতায় ভোগা, এক বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার তুলনা করে
“আমি কি ভুল করলাম”
জাতীয় মানসিক চাপের মধ্যে ডিপ ফ্রাই হওয়া ।
বাস্তব হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে:
নো টু চাইল্ড আর সেইম । একেকটা বাচ্চা একেক বয়সে একেক রকম ভাবে বড় হয়, শরীর ও মন দুই দিক থেকেই।
যেটা লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো, নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের কতোটা কাছাকাছি বা দুরে আপনার বাচ্চা এবং এই সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শ আপনি সঠিক মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন কিনা।
অনাবশ্যক মানুষজনের অকারণ পাকনামি কানে ঢুকলে তা কান পর্যন্তই থাকতে দিন, মাথায় ঢুকতে দেবেন না । আমি তো আমার বাচ্চাকে কোনদিন সন্ধ্যায় গোসল করাইনি অথবা আমি তো ৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাবার ব্লেন্ড করে খাইয়েছি- এইসব থিওরি আসলে যার যার নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে যায়।
পৃথিবীর হাজার হাজার মা বাচ্চাকে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যেও রাতে গোসল দিয়ে ঘুম পাড়ায় (আমি নিজেও তাই করি) অথবা ছয় মাস বয়স থেকে ফিঙ্গার ফুড দেয়া শুরু করে (আমি দিতে পারি নাই কারন আমার বাচ্চা চোক করতো এবং আমি ভয় পেতাম ওর গলায় খাবার আটকে গেলে) । কোনটাতেই মহাভারত রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই।
কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ব্লেন্ড খাবে না আবার কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ঘড়ি ধরে দুপুর ১২ টায় গোসল করবে না ।
কাজেই – বাচ্চা বড় করার তরিকায় কোনো রাইট এন্ড রং নাই।
শুনতে হবে সবারটাই কিন্তু মানতে হবে বাস্তবে নিজের জীবনের সাথে যা ভালো খাপ খায়। ঠিক সেটায়।