All posts by Oporajita

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বড় পরিবর্তন

১৮ মার্চ ২০২৫: ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০” সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন।
সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে সাম্প্রতিক ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গত ৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসিয়ার ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেখান থেকে “ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ” গঠিত হয়, যা পরদিন মশাল মিছিলের মাধ্যমে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সারাদেশে শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার অবশেষে এই সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইনের সংশোধনীতে যেসব পরিবর্তন আসছে

১. বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন:
১৬ বছরের কম বয়সী শিশু ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

এতে তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২. তদন্ত ও বিচার দ্রুততর করা:
ধর্ষণ মামলার তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

আগে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ না হলে জামিনের সুযোগ ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে।

৩. ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন:
বর্তমানে শুধু ঢাকায় CID Forensic Lab থাকায় প্রমাণ পরীক্ষায় বিলম্ব হয়।

নতুন করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ২টি ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হবে।

৪.DNA রিপোর্ট ছাড়াই বিচার:
ধর্ষণের মামলায় DNA রিপোর্ট দেরিতে এলে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা যাবে।

তবে, এতে মিথ্যা মামলার আশঙ্কা থাকায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

৫. ধর্ষণের সংজ্ঞায়ন স্পষ্টকরণ:
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণকে আলাদা অপরাধ হিসেবে আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণের মামলার তদন্ত দ্রুততর করা হবে।

৬. ভিকটিম প্রোটেকশন:
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর জন্য ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে।

ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আঘাত বা জখম করলে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

৭. মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান:
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা করলে বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

৮.দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ বিচারক নিয়োগ:
বিশেষ Judicial Service Commission গঠন করে নতুন বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, আগামী বৃহস্পতিবার এই সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সংশোধনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আইনের অপব্যবহার রোধে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন পক্ষ মত প্রকাশ করেছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, আইন চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশের আগে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা উচিত। সংশোধনীর ফলে যেন নতুন কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি না হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়, সেটিই এখন মূল বিষয়।

 

সহকারী জজ পরীক্ষায় দেশসেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হালিমাতুস সাদিয়া

 

১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে দেশসেরা হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক ৩বারের সাফল্যকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষস্থান অর্জন করলেন তিনি।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ এ এম রেজা জাকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া মূলত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লোহালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে মোট ১০২ জন সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী, সুব্রত পোদ্দার (৪৭তম) ও নূর-ই-নিশাত (৫২তম), চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

এই অসাধারণ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হালিমাতুস সাদিয়া বলেন “এই অর্জন শুধুমাত্র আমার একার নয়, এটি আমার মা-বাবা, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে আমি গর্বিত। দেশবাসীর দোয়া চাই, যেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনও এই সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন “আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

উল্লেখ্য, এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরপর তিনবার বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অর্জন করায় নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো।

 

জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় গুরুতর প্রভাব

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ুজনিত দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে নারীরা নানা সংকটে পড়ছেন। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়া এবং দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের হার বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে “জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সংগঠকরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীদের বাস্তব সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী ও কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক মেয়েশিশুর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দারিদ্র্যের শিকার হওয়ায় মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, যা বাল্যবিয়ের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগকবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ ব্যবস্থা না থাকায় নারী ও কিশোরীরা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত পানি অধ্যুষিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

সভায় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, নারীদের জন্য দুর্যোগকালীন নিরাপদ আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ এবং সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, সরকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করে নারীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ ৩১টি জেলা থেকে আগত সংগঠকবৃন্দ। বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নারীদের রক্ষা করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মতবিনিময় সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই: নারীদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ পদক্ষেপ

 

আলেয়া বেগম, একজন গৃহকর্মী, প্রতিদিনের কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত ছিলেন। ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া—এই সব কাজের পর শরীরে ব্যথা হওয়াটা তার কাছে স্বাভাবিকই মনে হতো। কিন্তু একদিন প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর, তিনি বুঝতে পারেন এটি সাধারণ ক্লান্তি নয়। হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর পর ধরা পড়ে—তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
চিকিৎসা চলাকালীন তিনি বেশ কিছুদিন কাজে যেতে পারেননি। এই সুযোগে তার কর্মস্থলে অন্য গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে অসুস্থতার কারণে শুধু যে তার শারীরিক দুর্বলতা বেড়েছে তা-ই নয়, জীবিকাও হারিয়েছেন তিনি। সুস্থ হওয়ার পর নতুন কাজ খুঁজতে গিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।

আলেয়ার গল্পটি দেশের হাজারও নিম্নআয়ের নারীর চিত্র ফুটিয়ে তোলে, যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর কর্মসংস্থান হারানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতার শিকার হন।

ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে কেন?
২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫৭৫ জনের মধ্যে ২৯৫ জনই ছিলেন নারী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীদের শারীরিক ও সামাজিক অবস্থান তাদের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
১. জৈবিক কারণ: নারীদের শরীরে রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হরমোনজনিত জটিলতা বেশি থাকে, যা ডেঙ্গুর প্রভাবকে তীব্র করে তোলে।

২. সময়মতো চিকিৎসার অভাব: নিম্নআয়ের নারীরা চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, ফলে ডেঙ্গু গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

3. সামাজিক কারণ: পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব নারীদের ওপর বেশি থাকে। তারা নিজের অসুস্থতা এড়িয়ে যান, যা পরে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে।

অর্থনীতিতে প্রভাব
দেশের মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০% নারী, যারা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ডেঙ্গুর মতো রোগে আক্রান্ত হলে, তারা শুধু নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আলেয়ার মতো গৃহকর্মীরা অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ হারান, চিকিৎসার জন্য খরচ বহন করতে হয় এবং সুস্থ হওয়ার পর নতুন কাজ পেতে বাধার সম্মুখীন হন। তাদের জন্য কোনো সামাজিক সুরক্ষা না থাকায়, একবার অসুস্থ হলে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় নেন।

নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় দরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ
ডেঙ্গু মোকাবিলায় নারীদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাব অনেক নারীর জীবন সংকটে ফেলে দেয়।
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে নারীদের মধ্যে বিশেষ প্রচারাভিযান চালানো প্রয়োজন।

২. ওয়ান-স্টপ সার্ভিস বুথ: নারীদের চিকিৎসা সহজ করতে এক জায়গায় পরীক্ষা, চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩. ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: নিম্নআয়ের নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্লাটিলেট কাউন্ট ও অন্যান্য পরীক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার।

ডেঙ্গু শুধু একটি রোগ নয়, এটি নারীদের জীবিকা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা সৃষ্টি করে। আলেয়ার মতো হাজারো নারী এই সমস্যার শিকার হচ্ছেন, অথচ তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা গেলে, এই ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে নারীদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে।
তথ্য সুত্র ঃ দ্য ডেইলি স্টার

 

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য রাসুল (সা.)-এর সুন্নত

 

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যেমন একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, শাসক ও দাঈ ছিলেন, তেমনই দাম্পত্য জীবনে ছিলেন স্নেহশীল, দায়িত্বশীল ও শ্রেষ্ঠ স্বামী। তাঁর জীবনের অনুসরণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির শিক্ষা।

নবিজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি সর্বদা সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতেন এবং সাহাবিদেরও তাঁদের স্ত্রীদের প্রতি উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেছেন—
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করে। আর আমি আমার স্ত্রীর প্রতি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

নিচে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নত উল্লেখ করা হলো, যা পালন করলে দাম্পত্য জীবন আরও সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠবে—

১. স্ত্রীর কাছ থেকে চুল আঁচড়ে নেওয়া
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন—
“আমি হায়েজ অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মাথা আঁচড়ে দিতাম।” (বুখারি ২৯৫)

২. স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে ঘুমানো
আয়েশা (রা.) বলেন—
“রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমাতেন।” (বুখারি ৪৬০৭)

৩. স্ত্রীর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করা

তিনি আরও বলেন—
“আমি নবিজির (সা.) সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং জয়ী হয়েছিলাম। পরে আমি মোটা হলে তিনি দৌড়ে আমাকে পরাজিত করেন এবং বলেন, ‘এ বিজয় সেই পরাজয়ের বদলা।’” (আবু দাউদ ২৫৭৮)

৪. স্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে গোসল করা

“আমি ও নবিজি (সা.) একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম।” (বুখারি ২৫০)

৫. স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা

“নবিজি (সা.) আমার কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন আমি হায়েজ অবস্থায় ছিলাম।” (বুখারি ২৯৭)

৬. স্ত্রীর প্রশংসা করা
রাসুল (সা.) বলেছেন—
“নারীদের মধ্যে আয়েশার মর্যাদা অন্য সকল নারীর তুলনায় এমন, যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যের তুলনায়।” (বুখারি ৩৪১১)

৭. স্ত্রীর কাজে সহায়তা করা

হজরত আসওয়াদ (রা.) বলেন—
“আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবিজি (সা.) ঘরে কী করতেন? তিনি বললেন, তিনি পরিবারকে সাহায্য করতেন এবং নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন।” (বুখারি ৬৭৬)

প্রিয় নবী (সা.)-এর দাম্পত্য জীবনের সুন্নতগুলো আমাদের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত। যদি প্রতিটি স্বামী পরিবারে এই সুন্নতগুলো পালন করেন, তাহলে সংসার হবে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এক সুন্দর আশ্রয়স্থল।

 

শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন শেখা বিষয় সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রস্তুত করে, যা শিশুর স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষত, গভীর রাতের ঘুম শিশুর শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং তার মস্তিষ্ককে সুসংগঠিত রাখে।

ঘুমের একটি বিশেষ ধাপ হলো REM (Rapid Eye Movement), যেখানে শিশুর মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং নতুন শেখা তথ্য সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করে। এই ধাপে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে এবং স্মৃতি শক্তিশালী হয়।

অন্যদিকে, NREM (Non-Rapid Eye Movement) ধাপে শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয় এবং শেখা বিষয়গুলোর দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ ঘটে। তাই গভীর ঘুম শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

শিশুর বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে। নবজাতক শিশুদের দিনে ১৪-১৭ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, কারণ এই সময় তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সবচেয়ে বেশি হয়। ৩-১২ মাস বয়সী শিশুদের ১২-১৫ ঘণ্টা এবং ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০-১৪ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং শেখার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যখন রাতে পর্যাপ্ত ঘুমায়, তখন তারা সারা দিনে শেখা বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে মনে রাখতে পারে। রাতের ঘুমের সময় মস্তিষ্ক শেখা তথ্যকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। দিনের ঘুমও কিছুটা সহায়ক, তবে রাতের গভীর ঘুম সবচেয়ে কার্যকর। নতুন কিছু শেখার পর পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর স্মৃতি মজবুত করতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, শেখার দক্ষতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শিশুর সঠিক ঘুম নিশ্চিত করা তার সার্বিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন: জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত

 

নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, জানিয়েছে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। সম্প্রতি সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা জানান, নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তা শুধুমাত্র নারীর সমস্যা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমস্যা।

‘ঢাকাতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা করতে আয়োজিত এই সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায়। বক্তারা জানান, এ ধরনের সহিংসতা রোধে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, বর্তমানে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সহিংসতার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নারীর প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা এবং দুর্বলতার কারণে সহিংসতা বেড়েছে। এজন্য নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

তথ্যসুত্র :আজকের পত্রিকা

 

কেশবপুরের প্রিয়া খাতুন: সাইক্লিং ও হকিতে দেশসেরা হওয়া কিশোরী

 

গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়া খাতুন বর্তমানে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক তারকা। কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের প্রিয়া সাইক্লিংয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হয়েছে এবং হকি দলের অধিনায়ক হিসেবে দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৫৩তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রিয়া সাইক্লিংয়ে স্বর্ণপদক জয় করে এবং তার নেতৃত্বে গড়ভাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রিয়া খাতুন রাজনগর বাকাবর্শী গ্রামের কৃষক শাহজাহান মোড়ল ও লাকি বেগমের মেয়ে। দারিদ্র্য ও সামাজিক সংকট মোকাবিলা করে প্রিয়া ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ শুরু করে। সাইক্লিং ও হকি খেলার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে এবং গত বছর সাইক্লিংয়ে রাজশাহী থেকে প্রথম হওয়ার পর মনোবল বৃদ্ধি পায়। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন তাকে একটি রেসিং সাইকেল উপহার দেন।

প্রিয়া তার সাফল্যের জন্য পরিবার ও শিক্ষকদের সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মেয়ের এই সাফল্যে তার মা গর্বিত, এবং এলাকার বাসিন্দারা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রভাত কুমার বসু বলেন, গ্রামের মেয়েরা এই জাতীয় সাফল্য অর্জন করে সত্যিই গর্বের বিষয়। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

টোকিওর প্রযুক্তি উন্নয়নে নারী নেতৃত্ব

 

টোকিওকে আরও আধুনিক, স্মার্ট ও নিরাপদ নগরীতে রূপান্তর করতে বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে টোকিও মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট (টিএমজি)। ২০১৬ সাল থেকে গভর্নর ইউরিকো কোইকের নেতৃত্বে নারীরা এই রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন।

টোকিও মেট্রোপলিটন অ্যাসেম্বলির ১২৭ সদস্যের মধ্যে ৪১ জন নারী, যারা শহরের উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ব্যবসা ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের মধ্যে নোবুকো ইরি উল্লেখযোগ্য, যিনি শহরের বিনোদন ও রাতের জীবন পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার মতে, টোকিওর আকর্ষণ ধরে রাখতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিক ও বিনোদন খাতের বিকাশ অপরিহার্য।

“সুশি টেক টোকিও” নামের বিশ্বব্যাপী সম্মেলনে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ ও বিনিয়োগকারীরা একত্র হন, যেখানে স্মার্ট সিটি ও টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। নতুনভাবে চালু হওয়া “পাবলিক ডে” অনুষ্ঠানে শিশু ও পরিবারদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, রোবট পরিচালনা ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিআর গেমের সুযোগ থাকছে।

নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ টোকিওর উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। নোবুকো ইরি মনে করেন, নারীদের উপস্থিতি শিশুবিকাশ, শিক্ষা ও নার্সিংয়ের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে সহায়ক। টিএমজি বৈচিত্র্য, নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে টোকিওকে ভবিষ্যতের সেরা শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট: নারী শিক্ষার অগ্রদূত

 

সমাজের পরিবর্তন আনতে কিছু মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট তেমনই একজন সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন, যিনি নারী শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রবেশের সুযোগ পান।

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট জন্মগ্রহণ করেন ৫ মার্চ ১৮৫৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে। তার বাবা জন ওয়ার্ক গ্যারেট ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহাইও রেলওয়ের প্রেসিডেন্ট। ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষা ও নেতৃত্বের মূল্যবোধ শিখেছিলেন।
তবে তার মায়ের অকালমৃত্যু এবং সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য তাকে ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, নারীদের যদি শিক্ষার সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিতে পারবে না। এই উপলব্ধিই তাকে নারী শিক্ষার জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

মেরি গ্যারেট তার সম্পদ ও প্রতিভা কাজে লাগিয়ে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করতে চেষ্টা করেন। তার উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ হলো—

Johns Hopkins School of Medicine-এ নারীদের সুযোগ

১৮৯০-এর দশকে, Johns Hopkins School of Medicine আর্থিক সংকটে পড়ে। তখন মেরি গ্যারেট ৩,৫০,০০০ ডলার অনুদান দেন, কিন্তু শর্ত দেন যে এই মেডিকেল স্কুলে নারীদেরও সমানভাবে ভর্তি ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তার এই পদক্ষেপের ফলে প্রথমবারের মতো নারীরা Johns Hopkins-এ চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের সুযোগ পান। এটি নারীদের চিকিৎসা শিক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দেয়।

Bryn Mawr School প্রতিষ্ঠা

১৮৮৫ সালে, তিনি Bryn Mawr School for Girls প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এটি ছিল উচ্চমানের একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হতো।

শিক্ষার পাশাপাশি তিনি নারীদের অধিকার ও সমতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি National American Woman Suffrage Association-এরও একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের প্রচারণায় অর্থ সহায়তা দেন।

মেরি গ্যারেট বিয়ে করেননি এবং তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই সমাজসেবা ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করেন। তার বন্ধুমহলে ছিলেন অনেক প্রভাবশালী নারীবাদী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক, যাদের সঙ্গে মিলে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রকল্পে কাজ করেছেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, আত্মবিশ্বাসী এবং নেতৃত্বগুণসম্পন্ন। তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সংগঠক হিসেবে দক্ষতা তাকে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট ৩ এপ্রিল ১৯১৫ সালে, ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার রেখে যাওয়া শিক্ষানীতি ও দান-অনুদানের ফলে অসংখ্য নারী উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
আজকের দিনে নারীদের শিক্ষায় যে অগ্রগতি দেখা যায়, তার পেছনে গ্যারেটের মতো দানশীল ও দূরদর্শী মানুষের অবদান অপরিসীম। নারী শিক্ষার উন্নয়নে তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

শিশু যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপের দাবি ২৬ এনজিওর

 

বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ২৬টি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত ‘শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক’। সংগঠনটি সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

নেটওয়ার্কের সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এক বিবৃতিতে জানায়, শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে, যা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ক্রমবর্ধমান হার দেশের জন্য গুরুতর সংকেত। এটি রোধ করতে সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারা বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিশু কল্যাণ পরিষেবার সমন্বয় এবং একটি শিশু সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে।

‘শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক’ জোটের সদস্য সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইনসিডিন বাংলাদেশ, জাগো নারী, কাঠপেন্সিল, মানব কল্যাণ পরিষদ (এমকেপি), মৌমাছি, পরিবর্তন-খুলনা, সুসমাজ ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, শিশুরাই সব সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন।

এই জোট যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে এবং শিশুদের সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায়।

তথ্যসূত্র -আজকের পত্রিকা

 

সংগ্রামী বিলকিস বেগম পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’

 

জীবনের চরম সংকটময় মুহূর্তে ভেঙে না পড়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন রাজশাহীর বিলকিস বেগম। সংসার ও স্বামীকে বাঁচানোর সংগ্রামে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী, তৈরি করেছেন নতুন পথ। তাঁর এই অদম্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান’ ক্যাটাগরিতে তিনি পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি কারিগরপাড়া গ্রামের এই নারীর জীবন ছিল এক কঠিন পরীক্ষার মতো। স্বামী রশিদ খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়েন, পা ভেঙে শয্যাশায়ী হন। সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে পাহাড়সম ঋণের বোঝা চেপে বসে তাঁদের পরিবারে। ১৭টি এনজিওর কাছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ টাকা। টানাপোড়েনের মধ্যে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিজেদের আবাদি জমি বন্ধক রাখতে হয়।
কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিলকিস বেগম হার মানেননি। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির কৌশল শিখে নতুন জীবনের সূচনা করেন তিনি। ধীরে ধীরে এই কাজে দক্ষতা অর্জন করে নিজের আয়ের পথ গড়ে তোলেন। নিজের উপার্জনে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত হারানো জমিও ফিরে পান। এখন তাঁর মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা।

নারীর ক্ষমতায়নের এই অসাধারণ দৃষ্টান্তকে স্বীকৃতি জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অদম্য নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। গত ১১ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এই বছর রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে ৩৯ জন নারীকে মনোনীত করা হয়েছিল, যাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিলকিস বেগম ছাড়াও পুরস্কার পেয়েছেন আরও চারজন সংগ্রামী নারী। অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য নওগাঁর সাপাহারের সেফালী খাতুন, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্যের জন্য সিরাজগঞ্জের চৌহালীর আয়শা সিদ্দিকা, সফল জননী হিসেবে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের লাইলী বেগম এবং নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য নওগাঁ সদরের শাবানা বানু এই সম্মাননা অর্জন করেছেন।

এই সম্মাননা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সকল নারীর জন্য এক অনুপ্রেরণা। কঠিন পরিস্থিতিতেও নারীরা যদি সাহস করে এগিয়ে যান, তবে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন-এই বার্তাই ছড়িয়ে দিলেন বিলকিস বেগম ও তাঁর মতো আরও অদম্য নারীরা।

 

স্বাস্থ্যকর ও হালকা ইফতার রেসিপি

 

ইফতার মানেই সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি আনার মুহূর্ত। স্বাস্থ্যকর ও হালকা খাবার ইফতারে গ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
নিচে তিনটি সহজ ও পুষ্টিকর ইফতার রেসিপি দেওয়া হলো, যা সুস্বাদু ও উপকারী। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং হজমে সহায়ক হবে।

দই-চিড়া
দই-চিড়া একটি হালকা ও সহজপাচ্য খাবার, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এটি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়ক।
উপকরণ:
১ কাপ চিড়া
½ কাপ মিষ্টি দই
১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি
১টি কলা (ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালী:
১. চিড়া ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. একটি বাটিতে দই, চিনি/মধু ও চিড়া মিশিয়ে নিন।
৩.চাইলে এর সাথে টুকরো করে কাটা কলা মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

ছোলার সালাদ
ছোলা প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং সহজে হজম হয়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ইফতার আইটেম।
উপকরণ:
১ কাপ সিদ্ধ ছোলা
১টি ছোট টমেটো (কুচি করা)
১টি শসা (কুচি করা)
১টি পেঁয়াজ (কুচি করা)
১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
১ চা চামচ লেবুর রস
½ চা চামচ চাট মসলা
পরিমাণমতো লবণ

প্রস্তুত প্রণালী:
সব উপকরণ একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।মিশ্রণটি ৫-১০ মিনিট রেখে দিন, যাতে স্বাদ ভালোভাবে মিশে যায়।ঠান্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবেশন করুন।

ঠান্ডা শরবত
ইফতারে ঠান্ডা শরবত শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রশান্তি এনে দেয়। এটি সহজেই তৈরি করা যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে দারুণ কার্যকর।
উপকরণ: (তরমুজের শরবত)

১ কাপ তরমুজের রস বা ২ টেবিল চামচ
১ গ্লাস ঠান্ডা পানি
১ টেবিল চামচ মধু
১ চিমটি বিট লবণ (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
তরমুজ ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস বের করুন, এর সাথে ঠান্ডা পানি, মধু ও বিট লবণ মিশিয়ে নিন।
ভালোভাবে নেড়ে আইস কিউব দিয়ে পরিবেশন করুন তরমুজের শরবত।

স্বাস্থ্যকর ইফতার আপনাকে সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উজ্জীবিত রাখবে। এসব সহজ ও পুষ্টিকর খাবার ইফতারে যুক্ত করে সুস্থ থাকুন!

 

সৈয়দা তাহিয়া হোসেন:কর্মজীবনে নারীর সফলতা ও আত্মনির্ভরতার গল্প

 

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে দক্ষতা অর্জন ও কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এই বিশ্বাসকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছেন সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, যিনি বর্তমানে গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (CHRO)। তাঁর পেশাগত যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, তখনও তাঁর স্নাতক শেষ হয়নি। ব্যবসায়ী বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও বাবা তাঁকে আগে অন্য কোথাও কাজ শেখার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি চাকরির খোঁজ শুরু করেন এবং প্রথম কাজ পান একটি ডাচ চকলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ এইচআর ক্যারিয়ারের পথচলা।

মানুষের সঙ্গে কাজ করার প্রবল আগ্রহ থেকেই তাহিয়া মানবসম্পদ বিভাগে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনি বলেছিলেন, “আমি মানুষের জন্য, মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই।” এই কথার প্রতিফলন তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে দেখা গেছে। চাকরির শুরুতেই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পরামর্শে তিনি এইচআর বিভাগে কাজ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, ব্যবসার পাশাপাশি কার্যকর এইচআর প্র্যাকটিস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, শেখার প্রক্রিয়া থেমে গেলে ক্যারিয়ারে উন্নতি করা সম্ভব নয়।

একজন দক্ষ নেতা হিসেবে তাহিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহমর্মিতা ও ভারসাম্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ও সমতা রক্ষা করা জরুরি। অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের পক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

ডিজিটাল যুগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। তাহিয়া মনে করেন, শুধুমাত্র টেলিকম খাতের চিন্তাধারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়; বরং টেকনোলজির সাথে একীভূত হয়ে কাজ করতে হবে। নতুন স্কিল অর্জনের পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাহিয়ার মতে, এটি একটি বিশাল পরিবর্তন, যেখানে নতুন ট্যালেন্টের সাথে কাজ করার পাশাপাশি পুরোনো কর্মীদেরও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে।

নারীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরিতে গ্রামীণফোন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাহিয়া বলেন, গ্রামীণফোনে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না; যোগ্যতার ভিত্তিতেই সবাই সম্মান পান। একসময় ম্যানেজমেন্ট টিমে একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বাস করেন, নারীদের চিন্তাভাবনায় স্বতন্ত্রতা থাকে, যা ব্যবসায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা। তাহিয়া মনে করেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নারীদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে, তারা কী চান এবং কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব। অফিসে একজন নারীর নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে জায়গা তৈরি করতে হয়, যা কখনো কখনো কঠিন হলেও, সেটাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, “কাজের ওনারশিপ না দিলে নারীরা পিছিয়ে পড়বেন।”

তাহিয়া হোসেনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর বাবা। তাঁর বাবা সবসময় তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শিখিয়েছেন। বাবার ব্যবসায় কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও তিনি প্রথমে চাকরির মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। চার বছর পর যখন বাবা তাঁকে নিজ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেন, তাহিয়া তখন জানান, তিনি নিজের ক্যারিয়ার এখানে গড়তে চান। এই সিদ্ধান্তই তাঁকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

সৈয়দা তাহিয়া হোসেনের জীবনগল্প প্রমাণ করে যে, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও নিরলস পরিশ্রম অপরিহার্য। নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করতে হলে তাদের নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে। তাহিয়ার মতো নারীরা যখন নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন, তখন এটি অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

 

অক্ষমতা নয়, অদম্য ইচ্ছাই শক্তি: জেসিকা কক্সের গল্প

 

পাইলট মানেই ককপিটে তীক্ষ্ণ নজর, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা। সাধারণত দুই হাতের সহায়তায় এই কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু জেসিকা কক্স প্রমাণ করেছেন, শুধু পায়ের ব্যবহার করেও একজন দক্ষ পাইলট হওয়া সম্ভব।

দুই হাত ছাড়া জন্ম নেওয়া জেসিকা শুধু উড়োজাহাজই চালান না, তিনি একজন সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার এবং মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টধারীও। অক্ষমতাকে কখনোই প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি তিনি। ১৪ বছর বয়সের পর থেকে কৃত্রিম হাত ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পায়ের মাধ্যমেই সব কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে থাকেন।

জেসিকার পাইলট হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের রোটারি ক্লাবের এক আলোচনা সভায় রবিন স্টোড্ডার্ড তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি প্লেন চালাতে চান?’ পাশে থাকা জেসিকার বাবা সেদিন সোজা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ’। এরপর অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক করা জেসিকা শুরু করেন পাইলট হওয়ার প্রস্তুতি।

জেসিকা কক্স ৩৫ বছর বয়সের মধ্যেই দক্ষ যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে ওঠেন। তাঁর জীবনদর্শন স্পষ্ট:“আমি কখনো বলি না, আমি এটা করতে পারব না। শুধু বলি, আমি এখনো এ বিষয়ে কাজ করছি।”
এই মানসিকতার জোরেই তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসধারী বিশ্বের প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাহুবিহীন পাইলট হয়েছেন।

২০১২ সালে তিনি প্যাট্রিককে বিয়ে করেন। বিয়েতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান তিনজন হাতবিহীন ব্যক্তিকে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, “হাত না থাকলে জীবন অর্থহীন হবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। হাতবিহীন ব্যক্তিরাও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে থাকা জেসিকা কক্স এর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রকল্প ছিল ‘লাইফ উইদ ফিট’ নামক ইউটিউব চ্যানেল। এটি প্রথম দুই বছরে এক মিলিয়ন ফলোয়ার অর্জন করে।
এরপরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘রাইটফুটেড ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল’, যা পরবর্তী সময়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। তাঁর জীবনীভিত্তিক বই ‘Disarm Your Limits’ এবং তাঁকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ১৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে।

জেসিকা কক্স কেবল একজন সফল পাইলটই নন, তিনি দুনিয়াজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছেন। তাঁর গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানুষের মানসিকতা ও ইচ্ছাশক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের বিক্ষোভ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারহীনতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে অপরাধীরা এসব জঘন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নারী অধিকারকর্মীরা। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৩মার্চ(বৃহস্পতিবার) মানববন্ধন করে নারী অধিকার আন্দোলন।

মানববন্ধনে নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মান্নান বলেন, আজ নারীরা নিরাপদ নয়। ধর্ষণের ঘটনায় দেশবাসী ক্ষুব্ধ, আমরাও মর্মাহত। বিচার দ্রুত কার্যকর না হওয়ায় অপরাধের হার বেড়ে চলেছে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত ও কঠোর শাস্তি কার্যকরের দাবি জানাই।

নারী অধিকার নেত্রী নাজমুন্নাহার বলেন, গত ১৭ বছরে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে বহু নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনার বিচার হয়নি। জনসম্মুখে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না।

বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম বলেন, আগে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটত, কিন্তু কঠোর শাস্তির কারণে তা কমে গেছে। ধর্ষকদেরও একইভাবে কঠোর ও প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে অপরাধের হার হ্রাস পাবে।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যাপক আফিফা মুশতারী বলেন, এই অপরাধের বিচার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা চাই দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হোক।

সম্প্রতি ঝিনাইদহে হিজাব পরিহিত নারীদের ওপর হামলা এবং শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনায় মানববন্ধনে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা ৯০ দিনের মধ্যে এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে প্রস্তাবিত দাবিসমূহ
১. নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২. দোষী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথা সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সরকার পদক্ষেপ নেবেন। সেক্ষেত্রে শরীয়াহ আইনে বিচার করা যেতে পারে। কঠোর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শামসুন্নাহার লাকি, বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম নীরু, শিক্ষিকা ফারহানা সুমাইয়া মিতু, সৈয়দা শাহীন আকতার, আসিফা সিদ্দিকা, কোহিনূর ইয়াসমিন লিপি, বিশিষ্ট সমাজসেবী মর্জিনা খাতুন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেত্রী কামরুন্নাহার প্রমুখ।

নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন শেষ হয়।
তথ্যসূত্র ঃকালবেলা

 

১৫ মার্চ সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন

 

দেশের শিশুদের অপুষ্টি দূর করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ মার্চ (শনিবার) সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে, যার ফলে বর্তমানে এ রোগ প্রায় বিলুপ্ত। ভিটামিন ‘এ’ শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে না, বরং ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে সহায়ক। তবে অনেক শিশু মায়ের দুধ বা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ‘এ’ পায় না, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

বছরে দুইবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে দেশে ৯৮% শিশু এ সেবা পাচ্ছে, ফলে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত অন্ধত্ব প্রায় নির্মূল হয়েছে। এই সফলতা ধরে রাখতে এবারও এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিশুদের ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

মন্ত্রণালয় থেকে সব অভিভাবকদের আহ্বান জানানো হয়েছে যে,৬মাস থেকে ৫বছর বয়সী শিশুদের নিকটস্থ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য।

আসুন সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপুষ্টি দূর করে সুস্থ ও সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই উদ্যোগে সবাই সহযোগী হই।

 

পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের জন্য থাকবে নারী শিক্ষক

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাস্ট) পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের চেহারা শনাক্তের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

এ উদ্যোগের ফলে পর্দানশীন শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে ও স্বস্তির সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। অনেক সময় নিকাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের চেহারা শনাক্তের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়, যা তাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আলাদা নারী শিক্ষকের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। এছাড়া, এটি ইসলামী মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি উদ্যোগ, যা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও অনুসরণযোগ্য হতে পারে।

এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং তাদের পরীক্ষার সময় কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
তথ্যসুত্রঃsomc

 

দেশজুড়ে নারী ও শিশু ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

 

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ নারী ও শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়, যেখানে তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এ সময় সমাজকর্মী মুঈদ হাসান তড়িৎ, শিক্ষার্থী তাওহীদা ইসলাম স্বপ্নীল ও প্রেমা সরকারসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।”
তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগেরও দাবি জানান।

এদিন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাদের মতে, সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ ও নৃশংস সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

একই দিনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ-মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

ইডেন মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, “এভাবে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে নারীরা কোথাও নিরাপদ নন।”

এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানান।
দেশজুড়ে এমন প্রতিবাদ কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

 

নারী খামারিদের সংখ্যা বাড়াতে হবে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

 

নারীদের আরও বেশি করে খামার ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, পোলট্রি শিল্প শুরু থেকেই কৃষকের সঙ্গে যুক্ত, আর কৃষকের বাড়িতে মুরগি পালনের মূল দায়িত্ব ছিল নারীদের। তাই এ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে নারী খামারিদের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো ও সেমিনার-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরিদা আখতার বলেন, “ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের সংখ্যা বাড়লে পোলট্রি শিল্প আরও বিকশিত হবে, যা সরাসরি তাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত।” ফিডের উচ্চমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সব পক্ষ একত্রে কাজ করলে ফিডের দাম কমানো সম্ভব। কারণ, পোলট্রি শিল্পই আমাদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে।”

শিশুদের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “পোলট্রিকে যদি অস্বাস্থ্যকর কিছু খাওয়ানো হয়, তাহলে তা মানুষের খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে অর্গানিক ফুড নিয়ে নতুন ভাবনা তৈরি হয়েছে। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক হতে হলে আমাদের অর্গানিক চাষের দিকে যেতে হবে।”

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই মেলা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোলট্রি মেলা বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন,প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।

এ ধরনের উদ্যোগ পোলট্রি শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

প্রথমবারেই সহকারী জজ চবির তানিয়া সুলতানা

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তানিয়া সুলতানা। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই তিনি বিজেএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন।

তানিয়া সুলতানার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের রাউজানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার। অনার্স ও মাস্টার্স জীবনে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন, যা তার বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভিত্তি গড়ে তোলে।

তবে তিনি পুরোপুরি নিয়োজিত হন মাস্টার্স শেষ করার পর। প্রথমেই তিনি বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাস বিশ্লেষণ করেন এবং বিগত বছরের প্রশ্ন ঘেঁটে বুঝতে চেষ্টা করেন কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এরপর নির্দিষ্ট বই ও রিসোর্স ঠিক করে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিবিড় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।

তানিয়া কখনো সময় ধরে পড়াশোনা করেননি; বরং প্রতিদিন নির্দিষ্ট টপিক শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতেন। লিখিত পরীক্ষায় সফলতার জন্য তিনি বিষয়ভিত্তিক গভীর প্রস্তুতি নিয়েছেন, কারণ এই পরীক্ষাটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি মূলত রিভিশনের ওপর জোর দেন।

প্রস্তুতির সময় মানসিক চাপ থাকলেও তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। পরিবারের স্বপ্ন এবং নিজের লক্ষ্য তাকে বারবার সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। ১০ দিনের লিখিত পরীক্ষার সময় সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, স্বপ্ন পূরণের অদম্য ইচ্ছাই তাকে ধরে রেখেছে।

তানিয়া সুলতানা বিশ্বাস করেন, যারা ভবিষ্যতে সহকারী জজ হতে চান, তাদের অনার্স জীবন থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধরে রাখতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। একাগ্রতা ও সঠিক প্রস্তুতিই বিজেএস পরীক্ষায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

তানিয়া সুলতানার এই অর্জন প্রমাণ করে, লক্ষ্য ঠিক থাকলে এবং পরিশ্রমি হলে সাফল্য ধরা দিতেই বাধ্য!

 

নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল যে জাতি!

🔘নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস রচনা করেছিল যে জাতি , তার  গৌরবময় পরিচয় আজ কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেছে সে সোনালী অতীত, সে স্বর্নালী-বর্নালী মর্যাদাবান মানুষগুলো!
🔘আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা -ইসলামের ইতিহাসে একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
নারী অনাত্মীয় হলেও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা ও সৌন্দর্য। তার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা সকলের দায়িত্ব। ইসলাম নারীদের অধিকারকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যে ইসলামের ইতিহাসে নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘঠিত হওয়ার ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ‘বনু কাইনুকা’ নামের একটি গোত্রের সঙ্গে।
একজন সাহাবি তার মুসলিম বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।
🔘মদীনায় বনু কাইনুকা ছিল ইহুদিদের তিনটি গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টপ্রকৃতির একটি গোত্র। পেশার দিকে থেকে তারা ছিল স্বর্ণকার, কর্মকার ও পাত্র নির্মাতা।
আবু আওন থেকে ইবনে হিশাম ঘটনাটি যেভাবে বর্ণনা করেছেন-
একদিন জনৈকা মুসলিম নারী বনু কাইনুকা গোত্রের বাজারে দুধ বিক্রি করে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে এক ইহুদি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়েছিলেন।
সেখানে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইহুদি তাঁর মুখের নেকাব খোলানোর অপচেষ্টা করে, ওই নারী এতে অস্বীকৃতি জানান। ওই স্বর্ণকার গোপনে মুসলিম নারীটির (অগোচরে) পরিহিত বস্ত্রের পেছন দিক থেকে এক প্রান্তে পিঠের ওপরে গিঁট দিয়ে দেয়, এতে করে তিনি বসা থেকে উঠতে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে পড়েন।ভদ্র মহিলাকে বিবস্ত্র করে নরপিশাচের দল আনন্দে করতালি দিচ্ছিল। মহিলাটি ক্ষোভ ও লজ্জায় আর্তনাদ করতে থাকেন। সেটা শুনে জনৈক (প্রতিবাদী) মুসলিম ওই স্বর্ণকারকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রত্যুত্তরে ইহুদিরা মুসলিম লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হত্যা করে।
এরপর নিহত মুসলিম ব্যক্তির পরিবার ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের কাছে বিচার চাইলে এর ফলে মুসলিম ও বনু কাইনুকার ইহুদিদের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
🔘 রাসূল সাঃ এর আগে এ গোত্রের অনেক অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন কিন্তু এ ঘটনার পর রাসুল (সা.)-এর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় তিনি মদিনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনজির (রা.)-এর ওপর অর্পণ করে হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর হাতে মুসলিমদের পতাকা প্রদান করে সৈন্য বাহিনী নিয়ে বনু কাইনুকা গোত্রকে শায়েস্তা করতে এগিয়ে যান।ইহুদিরা মুসলিমদের ভয়ে দূর্গের ভেতর আশ্রয় গ্রহণ করে দূর্গের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিনভাবে তাদের দুর্গ অবরোধ করেন।
প্রায় ১৫ দিন সে গোত্রের দূর্গ অবরোধ করে রাখার পর তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অবশেষে আত্মসমর্পন করলে তাদের সকলকে বন্দি করা হয়। (সূত্রঃসিরাত ইবনে হিশাম )
এ হচ্ছে যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।
🔘রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় এ ঘটনা প্রমান করে যে ইসলাম নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি কতটা গুরুত্ব দিয়েছে।যার কারনে নিজেদের মধ্যেতো নয়ই কোন কাফের বেঈমানরা পর্যন্ত নারীদের উপর ফুলের টোকাটা দেবারও সাহস পায়নি কখনো!
দুঃখ জনক বিষয় ! আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ,পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের নারী ও শিশুরা তাদের ঘরেও নিরাপদ নয়। কোন্ পশুত্বের সমাজে আমাদের বসবাস!
জাহেলিয়াতকেও হার মেনে গেছে! ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছে শিশু পর্নোগ্রাফি (CSAM) সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় অবস্থানে আছে ,অর্থাৎ আমাদের দেশ থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি সার্চ করা হয় অনেক বেশী , আবার এসবের ভিডিও পাঠানো হয় । আমাদের রুচিবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ! এ অস্লীলতার সয়লাবে এ সমাজে এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধা থেকে ২ বছরের শিশুরাও মোটেই নিরাপদ নয় ।
🔘শুধু আইন করে নয় , আইনের কঠোর ও তড়িৎ বাস্তবায়ন যেমন জরুরী তেমনি সমস্যার সাময়িক সমাধান নয় এর কার্য-কারণ সম্পর্কের দিকে গভীরে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন! আমরা দেখেছি ২০২০ সালে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করেও ধর্ষণ কমানো সম্ভব হয়নি।
আসলে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজটা পঁচে গিয়ে এখন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকো।
🔘প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কীয় কারিকুলামের ঘাটতির সাথে সাথে সমাজে পারিবারির শিক্ষা , সচেতনতা, নীতি- নৈতিকতার শিক্ষা, আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা, দ্বীনি পরিবেশ মেইন্টেন করা-
সমাজের উপর মহল থেকে শুরু করে নীচের মহল সর্বত্র এর দারুন অভাব বোধ হচ্ছে।
আমরা আমাদের সমাজে আর একটি আছিয়াকেও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দেখতে চাই না। আসামীদের বিচারের মাধ্যমে দ্রুত মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখতে চাই।

-সাবিকুন্নাহার_মু্ন্নী
১০ মার্চ , ২০২৫ইং.

 

এস্টার হোবার্থ মোরিস: নারী অধিকারের পথিকৃৎ

 

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস (Esther Hobart Morris) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।

১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং।তবুও তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করে, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।

১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশিরভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
১৮৭১ সালে ইউটা (Utah) যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে।
আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।

 

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তবু কেন থামছেনা অপরাধ?

 

 রাফসান গালিব: দেশে ধর্ষণের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এক সপ্তাহ আগেও। ঘটনাটি ঘটেছিল কখন? ছয় বছর আগে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবার পরেও কেন ধর্ষণ রোধ করা যাইতেছে না? এর অন্যতম কারণ হইল, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা।

বগুড়ার তুফান সরকারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই অনেকের। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের চুল কেটে দিছিল তুফান৷ গোটা দেশে ঝড় উঠে এই ঘটনায়৷ তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়৷

হাইকোর্ট এই ঘটনার বিচার করতে ছয় মাস সময় বেধে দেয়। কিন্তু ৩ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় না। পরে ঠিকই তুফান সরকার জামিনে বের হয়ে মা-মেয়েকে হুমকি দেয়া শুরু করে। সেই তুফানের আজও বিচার হয় নাই।

একের পর ধর্ষণের ঘটনায় ঘটতে থাকায় এবং ধর্ষণের বিচার যথাযথভাবে করতে না পেরে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সংসদে ধর্ষককে ক্রসফায়ার দেয়ার মতো ভয়ংকর দাবি উঠেছিল। বিচারবহির্ভূতভাবে র‍্যাব দিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত কয়েকজন হত্যাও করা হয়। মানুষ ক্রসফায়ারকে সেলিব্রেট করে৷ কী দুর্ভাগ্য আমাদের!

ধর্ষণের বিচার কেন দ্রুত হবে না? কেন বছরের পর বছর আটকে থাকবে? এমন সময় বিচারের রায় হয়, তখন মানুষ ঘটনার কথাই ভুলে যায়। ফলে মৃত্যুদণ্ড দিয়েও সেই রায় আর সমাজে দৃষ্টান্তমূলক হয় না। ধর্ষণের ঘটনার ২০ বছর পর রায় হয়েছে, এমনও ঘটেছে। এটা তো বিচারের নামে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরেক ভয়াবহ ও বাজে দৃষ্টান্ত আছে, তা হলো ধর্ষকের সঙ্গেই ভুক্তভোগীর বিয়ে দেয়া। আদালতের সম্মতিতেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাও এখানে ঘটেছে৷ যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ধর্ষণের পর ধর্ষকের সাথে বিয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি আরেক চরম জুলুম চাপিয়ে দেয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে কেন করা হবে না? একেবারে বিশেষ বা জটিল কোনো কেস ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার অবশ্যই সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ দেশে ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহের ভেতরে বিচারের রায় দেয়ার দৃষ্টান্তও আছে৷

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে। সরকারকে এইখানে অবশ্যই বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে৷ একটা ধর্ষণের বিচার চলতে চলতে আরও কয়েক ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

শুধু আইন বানাইলেই হবে না, শাস্তি বাড়াইলেই হবে না; বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে৷ এইটার ফলাফল নিকট অতীতেই আছে। নারীদের উপর এসিড সন্ত্রাস কিন্তু আমরা এভাবেই বন্ধ করতে পেরেছি৷

দ্রুত আইন প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে মানুষ ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই আবার আহবান করবে। পারলে নিজেরাই ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে৷ এইটা তখন আরও খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে আমাদের সমাজকে। সরকারকে বলব, এমন ঘটনা ঘটার আগেই ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকর করুন।

*
ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যে ধরনের ফেসবুক পোস্ট ভিক্টিমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও পোটেনশিয়াল রেপিস্টকে সত্যিকারের রেপিস্ট হইতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারে- এইটা নিয়ে বিশ্লেষণ পড়ুন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/share/p/1NpGnsHhHo/

 

রমদ্বানে স্তন্যদানকারী মায়েদের করণীয়

 

রমদ্বানের রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। তবে ইসলামে মা ও শিশুর সুস্থতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় রয়েছে।

স্তন্যদানকারী মায়ের রোজার বিধান
যদি কোনো মা রোজা রাখার কারণে নিজের বা সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াতের ভিত্তিতে ইসলাম বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজার বাধ্যবাধকতা শিথিল করেছে।
হাদিসেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য অর্ধেক নামাজ ও রোজা মাফ করে দিয়েছেন এবং অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্যও রোজা মাফ করে দিয়েছেন।” (তিরমিজি: ৭১৫, ইবনে মাজাহ: ১৬৬৭)

রোজা না রাখলে করণীয়
যদি কোনো মা রোজা রাখতে অক্ষম হন, তাহলে পরে সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে। তবে কিছু আলেমের মতে, কাজার পরিবর্তে দরিদ্রদের খাওয়ানোও গ্রহণযোগ্য হতে পারে, বিশেষত যদি দীর্ঘ মেয়াদে কাজা রাখা কঠিন হয়।

রমদ্বানে স্তন্যদানকারী মায়ের করণীয়
১.পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার: সেহরি ও ইফতারে প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল ও পানীয় গ্রহণ করুন।

২.শরীরের অবস্থা বোঝা: যদি রোজার কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয় বা দুধের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে আল্লাহর দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করুন।

৩.বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: ডাক্তার বা ইসলামি আলেমের পরামর্শ নিন।

ইসলাম সহজ দ্বীন। তাই মা ও শিশুর সুস্থতা রক্ষায় ইসলাম প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করা উচিত।

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: হোমাইরা জাহান সনম

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক অনন্য নাম হোমাইরা জাহান সনম। প্রতিকূল পরিবেশ, সামাজিক বাধা ও নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তিনি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে তিনি হয়েছেন গর্বিত এক বাংলাদেশি। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার প্রত্যন্ত এক হাওরবেষ্টিত গ্রাম বড়ই-এ জন্ম হোমাইরা জাহান সনমের। গ্রামের সাধারণ মেয়েদের মতো তিনিও নানা সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হতো তাঁকে। কিন্তু এসব বাধা তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
শৈশবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন হোমাইরা, কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা তাঁকে সেই পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। তবে তিনি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে কীটতত্ত্ব (এনটোমোলজি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর হোমাইরা কিছুদিন পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস ইন্টারন্যাশনাল (CABI)-এ প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দেন। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁর কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও গবেষণার প্রতি একাগ্রতার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম অর্জন করেন।
২০২৪ সালে তিনি এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

বর্তমানে এপিএএআরআই-তে হোমাইরা জাহান সনম কৃষি গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়গুলো হলো-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা,প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা,কৃষি বাণিজ্যে স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি মান নিশ্চিতকরণ।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

হোমাইরা চান, বাংলাদেশের কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে তিনি কাজ করছেন। তার স্বপ্ন, দেশের কৃষকদের জন্য সহজ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি নিশ্চিত করা, যাতে কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন এবং উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

হোমাইরা জাহান সনমের জীবনগল্প প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে যেকোনো সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর পথচলা বাংলাদেশের তরুণদের, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার এক উজ্জ্বল মুখ, হোমাইরা জাহান সনম—যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, আর এগিয়ে চলেন নতুন সম্ভাবনার পথে।

তথ্যসুত্র – the daily star

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫: সমতা, অধিকার ও ক্ষমতায়নের প্রতীক

 

নারী–পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখলেও, আজও তারা নানা বাধা ও বৈষম্যের সম্মুখীন হন। তাই, এই দিনটি শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, বরং এটি একটি আন্দোলন, যা নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
১৯০৮: নিউইয়র্কে প্রায় ১৫,০০০ নারী ভোটাধিকার, কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য সুযোগ এবং লিঙ্গবৈষম্যের অবসানের দাবিতে আন্দোলন করেন।

১৯০৯: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় নারী দিবস’ (National Women’s Day) পালিত হয়।

১৯১০: ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী সম্মেলনে (International Socialist Women’s Conference) জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন (Clara Zetkin) আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

১৯১১: প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।

১৯১৩-১৪: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, রাশিয়ার নারীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে ৮ মার্চ) প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেন।

১৯৭৫: জাতিসংঘ (United Nations) আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং এটি ‘নারীর অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তির দিন’ (Day for Women’s Rights and International Peace) হিসেবে ঘোষণা করে।

১৯৯৬: জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নারী দিবসের জন্য একটি বার্ষিক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে— “Celebrating the Past, Planning for the Future” (অতীতকে উদযাপন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য
নারীরা সমাজের অন্যতম চালিকাশক্তি হলেও, এখনও তারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নেতৃত্ব এবং আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল কারণগুলো হলো—

লিঙ্গসমতা (Gender Equality)
★কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

★নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর সম্পৃক্ত করা।

নারীর ক্ষমতায়ন (Women’s Empowerment)
★শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রযুক্তিতে নারীদের সম্পৃক্ত করা।

★অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

নারী সহিংসতা প্রতিরোধ (Ending Violence Against Women)

★পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

★নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ (Leadership & Participation)
★নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা।

★নারীদের মতামত ও কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য
প্রতি বছর জাতিসংঘ নারী দিবসের জন্য একটি বিশেষ থিম নির্ধারণ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো—

“For ALL women and girls: Rights. Equality. Empowerment.”
(সমস্ত নারীদের জন্য: অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন।)
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিশ্বের সব নারী ও কন্যার জন্য সমান অধিকার, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নারী দিবস উদযাপন কিভাবে করা হয়?
প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে নারী দিবস নানা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়—

★ নারীর অর্জন ও সাফল্যের স্বীকৃতি প্রদান।
★ নারী অধিকার বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন।
★ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রচারণা।
★নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি।
★কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য নীতি প্রণয়ন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, এটি একটি সচেতনতা ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন।
নারীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করা সময়ের দাবি। শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নয়, বরং নারীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে উন্নত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

গাজীপুরে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

গাজীপুরে যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মাসের ১৮তারিখ মঙ্গলবার গাজীপুর শহরের আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) কনফারেন্স রুমে এ সভার আয়োজন করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত ব্র্যাকের “অগ্নি প্রকল্প”-এর আওতায় যৌথভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।

সভায় প্রকল্পের সমন্বয়কারী আসমা খানম রুবা স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন জেলা ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান। আলোচনায় বক্তারা নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা জানান, “অগ্নি প্রকল্প”-এর মাধ্যমে পরিবহন, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৪টি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সভায় উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৪ জন, অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩১ জন, বাল্যবিবাহ হয়েছে ৫৫টি এবং অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি। আলোচকরা এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র আইনের কঠোর প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, বরং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৭৮ জন ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪২ জনকে প্রাথমিক কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়েছে, ৭৯ জনকে আইনি সহায়তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ৮ জন চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।

বক্তারা উল্লেখ করেন, নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন ও কার্যকর প্রয়োগ জরুরি।

সভায় প্রকল্প সমন্বয়কারী আসমা খানম রুবা বলেন “নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণমাধ্যম কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।”

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নৈতিকতার গুরুত্বারোপ করেন এবং এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। বক্তারা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে সমাজে নারীরা নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

 

বই রিভিউ: Revive Your Heart – Nouman Ali Khan

 

এটি একটি ইসলামিক অনুপ্রেরণামূলক বই, যেখানে লেখক আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জের মুখে একজন মুসলিম কীভাবে কোরআনের শিক্ষা থেকে শক্তি ও দিকনির্দেশনা নিতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেছেন।
যারা মানসিক প্রশান্তি খুঁজছেন, আত্মউন্নয়ন চান, অথবা ইসলামের গভীর দর্শনকে সহজভাবে বুঝতে চান, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি বই। উস্তাদ নোমান আলী খান খুবই সহজ ভাষায় গভীর বিষয় ব্যাখ্যা করেন, যা নতুনদের জন্যও সহজবোধ্য।

বইটি মোট পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত, এবং প্রতিটি অধ্যায়েই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়ে দুআ বা আল্লাহর সাথে যোগাযোগের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয়েছে। লেখক বলছেন, আমরা শুধু বিপদে পড়লেই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, কিন্তু তখন যদি দোয়া কবুল না হয়, তখন অনেকেই মনে করেন যে আল্লাহ তাদের দোয়া শোনেন না। তবে, এই অধ্যায়ে শেখানো হয়েছে কিভাবে আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেন এবং দোয়ার বিপরীতে কিছু হলেও সেটা যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা, তাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় একটি সক্রিয় মুসলিম কমিউনিটি গড়ে তোলার বিষয়ে। লেখক মুসলিম সমাজের বিভক্তির দিকে নজর দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন কিভাবে আমাদের মধ্যে অন্যের প্রতি অতিরিক্ত ধারণা ও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়, যা আমাদের ঐক্যের শক্তি ও একতা কমিয়ে দেয়। এটি সমাজের জন্য একটি বড় ক্ষতি, যা আমাদের ঈমানের পরিপূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তৃতীয় অধ্যায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে। এখানে লেখক আমাদেরকে সতর্ক করেছেন, কিভাবে ছোটখাটো আর্থিক লেনদেনের কারণে আমাদের চরিত্র ও শান্তি বিপর্যস্ত হতে পারে। অর্থের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হতে পারে এবং অর্থের প্রভাবে কিভাবে জীবন বদলে যেতে পারে, তা তিনি তুলে ধরেছেন।

এছাড়া, বইটির প্রচ্ছদ ও অনুবাদ বেশ ভালো, সহজ এবং সাবলীল ভাষায় লেখা, যা পাঠককে বইটির প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে সহজে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।

সার্বিকভাবে, Revive Your Heart একটি দারুণ অনুপ্রেরণামূলক বই, যা প্রতিটি মুসলিমের জীবনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও সম্পর্ক আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।যাপিত জীবনে শান্তি, ঈমান এবং দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করতে চাইলে এই বইটি একবার হলেও পড়া উচিত।

 

রমদ্বানের প্রস্তুতি: মহানবী (সা.)-এর নীতি ও শিক্ষা

 

রমদ্বান মাস ইসলামের পবিত্রতম মাস, আর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ মাসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিতেন। তিনি শুধু রমদ্বান শুরু হলে আমল বাড়াতেন না, বরং রজব ও শাবান মাস থেকেই রমদ্বানের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এখানে আমরা মহানবী (সা.)-এর রমদ্বানের প্রস্তুতি গ্রহণের পদ্ধতি তুলে ধরছি।

১. রজব মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু
ছয় মাস আগেই মহানবী (সা.) রমদ্বানের বরকত লাভের দোয়া করতে শুরু করতেন। বিশেষত, রজব মাস এলেই তিনি বলতেন—
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শা‘বানা, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমদ্বান পর্যন্ত পৌঁছে দাও। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৪৬৮)

২. শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
মহানবী (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি রাসূল (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি কোনো মাসে রোজা রাখতে দেখিনি।” (বুখারি, হাদিস: ১৯৬৯)
তবে যারা শাবান মাসের শুরু থেকে নফল রোজা রাখতেন না, তাদের জন্য শেষের দিকে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন, যেন তারা রমদ্বানের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারে।

৩. শাবানের শেষে চাঁদ দেখা
প্রতি আরবি মাস শুরুর আগে রাসূল (সা.) চাঁদ দেখার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। তিনি সাহাবিদের চাঁদ দেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপনের নির্দেশ দিতেন।
নতুন চাঁদ দেখলে তিনি এই দোয়াটি পড়তেন—
اللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান, নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

৪. রমদ্বানের ফজিলত ও গুরুত্ব আলোচনা
শাবান মাসে মহানবী (সা.) সাহাবাদের রমদ্বানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতেন। তিনি বলতেন, “তোমাদের কাছে বরকতময় রমদ্বান এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তার সিয়ামকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়, আর এতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো।” (সুনানে নাসায়ি)

৫. আত্মিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া
রমদ্বানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মহানবী (সা.) ইবাদতের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতেন। তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অধিক পরিমাণ দু’আ এবং যিকিরের মাধ্যমে আত্মিক শক্তি অর্জন করতেন।
শারীরিকভাবে প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতেন, যাতে রমদ্বানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করা সম্ভব হয়।

৬. পরিবার ও সমাজকে প্রস্তুত করা

রাসূল (সা.) তার পরিবার ও সাহাবিদের রমদ্বানের জন্য প্রস্তুত করতেন। তিনি তাদেরকে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, সদকা ও অন্যান্য ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করতেন।
তিনি বিশেষত শিশুদের রোজা রাখার প্রতি আগ্রহী করতেন এবং ছোটদের ধীরে ধীরে রোজার প্রতি অভ্যস্ত করার উপদেশ দিতেন।

মহানবী (সা.) আমাদের জন্য রমজানের প্রস্তুতির অনন্য আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি রজব থেকে প্রস্তুতি শুরু করতেন, শাবানে নফল রোজার মাধ্যমে অভ্যাস গড়ে তুলতেন, রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং তার পরিবার ও সাহাবিদের আত্মিকভাবে তৈরি করতেন।
আমাদেরও উচিত মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া, যেন আমরা এই পবিত্র মাসের সর্বোচ্চ বরকত লাভ করতে পারি।

 

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা: ২০২৪ সালের জরিপে উদ্বেগজনক চিত্র

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’–এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়, যেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ নারী তাঁদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই এই হার ছিল ৪৯ শতাংশ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হন নিজের স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে। নন-পার্টনার সহিংসতার তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার হার অনেক বেশি, যা নারীদের নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা আরও গভীরভাবে প্রকাশ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ওপর সহিংসতার হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় খুব একটা কমেনি। ২০১৫ সালের জরিপে জীবদ্দশায় সহিংসতার হার ছিল ৭৩ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে সামান্য কমে ৭০ শতাংশ হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক ১২ মাসের হিসেবে এই হার ৪১ শতাংশ, যা এখনো যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষ করে শারীরিক সহিংসতার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নারীরা স্বামীর কাছ থেকে তিনগুণ বেশি নির্যাতনের শিকার হন, আর যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি।

এছাড়া, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সহিংসতার শিকার হন। গবেষণায় উঠে এসেছে, এইসব এলাকার নারীরা তাঁদের জীবদ্দশায় এবং সাম্প্রতিক ১২ মাসে অদুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের তুলনায় বেশি মাত্রায় সহিংসতার সম্মুখীন হন। অর্থাৎ, পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক কারণ নারীদের প্রতি সহিংসতার মাত্রাকে আরও তীব্র করে তোলে।

এই জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো—নারীদের ৬৪ শতাংশ তাঁদের ওপর হওয়া সহিংসতার কথা কাউকে বলেন না। পারিবারিক সুনাম রক্ষা করা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ এবং সমাজে সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি এর মূল কারণ। অনেক নারী মনে করেন, সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও চুপ থাকা তাঁদের জন্য নিরাপদ, কারণ বিচারপ্রক্রিয়ায় জটিলতা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া তাঁদের পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলেয়া আক্তার। এছাড়া ইউএনএফপিএর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে এবং অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এই জরিপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৭,৪৭৬ জন নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এতে শহর, গ্রাম, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা এবং বস্তির নারীদের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পুরো দেশের পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
জরিপের ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো বাংলাদেশে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। এটি মোকাবিলার জন্য আইন ও নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে, নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেও ব্যাহত করবে।

তথ্যসুত্রঃপ্রথম আলো

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘প্রবাহমান দৃষ্টিভঙ্গি’ শুরু হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনী,চলমান ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারাক আলভী, অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চিত্র সমালোচক আইয়ুব ভূঁইয়া। উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথিরা নাজমুন নাহার রহমানের শিল্পকর্মের প্রশংসা করেন এবং তাঁর চিত্রকলার বৈচিত্র্য ও গভীরতা নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রদর্শনীতে শিল্পীর ২৩টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, যেখানে রং, আকৃতি ও বিমূর্ত ধারার অনন্য সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। নাজমুন নাহার তাঁর শিল্পকর্মে বাস্তবতা ও কল্পনার এক অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে আধুনিক বিমূর্ত শিল্পের প্রভাব স্পষ্ট, যা ভিন্নমাত্রার শৈল্পিক অভিজ্ঞতা দিচ্ছে দর্শকদের।

নাজমুন নাহার রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারত ও নেপালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন এবং ফ্রান্স, ভারত ও নেপালে নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। তবে এটি তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী, যা তাঁর শিল্পীসত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা শিল্পীর সৃষ্টিশীল কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেকে তাঁর চিত্রকর্মকে সময় ও সমাজের বহুমাত্রিক প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন। শিল্প সমালোচকদের মতে, নাজমুন নাহারের কাজে জীবনের গভীরতা, অনুভূতির সূক্ষ্মতা ও নান্দনিক সৌন্দর্যের চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে।

 

রিমান্ডের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা

 

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার অপরাধ কী ছিল? তিনি হেফাজত নেতাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের জামিনের জন্য লড়েছিলেন। কিন্তু এই আইনসঙ্গত কাজই তার জীবনে এক ভয়াবহ বিভীষিকা নিয়ে আসে। তাকে জঙ্গি বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়, রিমান্ডে নিয়ে চলতে থাকে অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন।

২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট। রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডিতে শাকিলা ফারজানার বাসায় প্রায় ২০০ জন র‍্যাব সদস্য হানা দেয়। কোনো প্রশ্ন, কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাকে জানানো হয়—”আপনাকে জঙ্গি অর্থায়নের মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো।” এই ঘোষণার পরপরই তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়, তুলে নেওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে।
তিনি তখনো বুঝতে পারছিলেন না, আসলে কী ঘটছে। কিছুক্ষণ পর তাকে একটি ছোট ঘরে ঢোকানো হয়। সেই ঘর থেকে ভেসে আসছিল বিদ্যুতের শকের শব্দ। তীব্র সেই শব্দে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় ভয়াবহ মারধর। কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দে!” আতঙ্কিত শাকিলা তখন কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। কিন্তু তারা থামেনি। অকথ্য গালাগালির সঙ্গে চলতে থাকে চড়, থাপ্পড়, লাথি। পাশে থেকে ভেসে আসছিল তার সহকারী আইনজীবী লিটনের চিৎকার। তাকেও ধরে এনেছিল তারা।

অমানবিক নির্যাতনের পর তাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়ি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিছু সময় পর ওয়্যারলেসে এক কর্মকর্তা বলেন, “স্যার, আমরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সামনে। অপারেশনে যাব?”
এই কথা শুনেই শাকিলার মনে হয়েছিল, এবার বোধহয় সব শেষ। তাকে গুলি করে হত্যা করে ‘জঙ্গি’ হিসেবে চালিয়ে দেবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করে, গন্তব্য পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ সদর দফতর।
সেখানে পৌঁছানোর পর তার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর তাকে বলা হয়, “সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছে। আমরা যা বলব, তাই বলবেন।” অর্থাৎ, পুরো ঘটনাটি মিডিয়ার সামনে সাজানো হবে।

শাকিলাকে প্রথমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারপর আরও দুদিন রিমান্ডে রেখে চলতে থাকে অকথ্য নির্যাতন। রিমান্ডের প্রথম দিনই তার ওপর চলে পাশবিক অত্যাচার। একজন কর্মকর্তা, যিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার মুখের সামনে এসে মদের গন্ধ ছাড়ছিলেন, সঙ্গে চলছিল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ও লাথি।
তিনি পরে জানতে পারেন, এই কর্মকর্তা আর কেউ নন, সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
এমনকি তাকে ভয় দেখানো হয়, “তোমার বড় ছেলেকে ধরে এনে জঙ্গি বানিয়ে দেব।” সেই মুহূর্তে শাকিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিৎকার করে বলেন, “ওর দিকে হাত না বাড়িয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।”

কারাগারে পাঠানোর পরও তার নির্যাতন থামেনি। সেখানে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার জন্য প্রতিদিন তিন ঘণ্টা লোহার গারদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো।
একদিন তিনি দেখেন, জেলগেটের বাইরে তার মা দাঁড়িয়ে আছেন। পরে জানতে পারেন তার মা প্রতিদিন জেলগেটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন, মেয়েকে একবার দেখার আশায়।
কারাগারে মাঝেমধ্যে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখতেন, তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এক নারী অবয়বের কেউ সামনে ব্লেড নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল, যেন যে কোনো মুহূর্তে আঘাত করবে। ভয়ে শাকিলা চিৎকার করে উঠতেন।

মুক্তি পেলেও স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে
প্রায় ১০ মাস বন্দি থাকার পর ২০১৬ সালের ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে জামিন দেয়। তিনি মুক্তি পান, কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় মূল্যবান সময়, হারিয়ে যায় স্বাভাবিকতা।
শাকিলা ফারজানার বাবা এই মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি। মেয়ের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার কষ্টে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।
আজও শাকিলা ফারজানা সেই বিভীষিকাময় রাতগুলোর কথা মনে করলে শিউরে ওঠেন। তিনি শুধু একজন আইনজীবী ছিলেন, যিনি বিচার বিভাগের নিয়ম মেনে জামিন করিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তাকে ‘জঙ্গি’ বানিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকারে পরিণত করে।

এই নির্মমতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে তো? নাকি ঘটে যাওয়া এই অন্যায় বিচারহীনতাই থেকে যাবে আমাদের সমাজের চিরস্থায়ী বাস্তবতা হিসেবে?

 

বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে: বাংলা একাডেমি

 

অমর একুশে বইমেলায় নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলা একাডেমি। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমি এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বইমেলার ওয়াশরুমের পাশে নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হবে।

শুরুতে এই উদ্যোগটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি পরিচালনা করছিল, যারা স্পন্সরের সহায়তায় কাজ করছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি না নিয়ে বইমেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছিল, যা মেলার নিয়মের পরিপন্থী। ফলে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বাংলা একাডেমি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সংকোচ পোষণ করে না এবং নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য বইমেলার নীতিমালার আওতায় বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে। অতীতেও বইমেলায় বিভিন্ন জরুরি উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং এবারও সেই ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
এদিকে, ‘স্টে সেইফ’ ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করার ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম-এর সুপারিশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে তাদের স্টল বন্ধ করতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে সমস্যা ছাড়া কার্যক্রম চালালেও, পরে বিভিন্ন পক্ষ থেকে আপত্তি আসতে শুরু করে।

এ বিষয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং এটি নিয়ে বইমেলায় বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে, সেখানে বইমেলায় এটি নিয়ে আলোচনা হওয়াটা হতাশাজনক। তবে বাংলা একাডেমির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাধা তৈরি হওয়া উচিত নয়। বাংলা একাডেমি নিশ্চিত করেছে, বইমেলায় নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হবে।

 

‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ পেলেন ঢাকা বিভাগের পাঁচ সংগ্রামী নারী

 

আত্মশক্তির প্রতীক হয়ে সমাজে পরিবর্তন এনে দেওয়া ঢাকা বিভাগের পাঁচজন সংগ্রামী নারী পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’। রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এই বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে রাজবাড়ির স্বপ্না রানী ঘোষ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের মাসুদা আক্তার, সফল জননী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের সেলিনা মজিদ, নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করায় ফরিদপুরের লিপি বেগম এবং সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ফরিদপুরের সামর্তবান এই পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রতিটি পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৫৮ জন নারী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিত পাঁচজনকে চূড়ান্তভাবে ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ‘আমরা নারীর অসহায়ত্বের গল্প বেশি বলি, কিন্তু আমাদের ইতিহাসে নারীর বীরত্বের অসংখ্য উদাহরণ আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, অথচ তাঁদের অবদান অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যায়। আমাদের উচিত এই বীর নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের গল্পগুলো সংরক্ষণ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি, কৃষি ও পরিবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। গৃহস্থালি কাজে একজন নারী প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা ব্যয় করেন, অথচ সেই শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং নারীদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ চব্বিশের অভ্যুত্থানে নারীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা নারীদের নাম আমরা কি মনে রেখেছি? চব্বিশের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১১ জন নারীর কথা কি আমরা বলি? আমাদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে ইতিহাসের ন্যায়সংগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খানসহ আরও অনেকে।
বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
নারীদের সংগ্রাম, সাহস ও সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সমাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফেব্রুয়ারি মাস

 

নারী অধিকারের লড়াই দীর্ঘ এবং কঠিন হলেও, এর ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাস এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভাষার জন্য যেমন এই মাস তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি নারীদের আইনগত ও পেশাগত অধিকারের ক্ষেত্রেও এটি স্মরণীয়। নারী ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন—ফেব্রুয়ারি এসব অর্জনের সাক্ষী।

নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের পথচলা
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং প্রথমবারের মতো একটি আইন পাস করে, যেখানে নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। এটি ছিল বিশ্বের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত। এই আইন কার্যকরের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কর্মী এবং নারী অধিকারের অগ্রদূত। তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে ওয়াইওমিংয়ের প্রথম নারী পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই সাফল্যের পর নারীদের ভোটাধিকার আরও সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যও নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।

নারীদের আইন পেশায় প্রবেশ
নারীরা দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারছিলেন না। তবে ১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়। এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।

ফেব্রুয়ারি: সংগ্রাম ও অর্জনের মাস
‘ফেব্রুয়ারি’ শুধু ক্যালেন্ডারের একটু মাসের নাম নয়; এটি নারী অধিকার আদায়ের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এস্টার হোবার্থ মোরিসের মতো নারীদের অবদানের ফলে আজ নারীরা ভোটাধিকার ও পেশায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, ফেব্রুয়ারি তার অন্যতম প্রতীক।
এই মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, লড়াই আজও শেষ হয়নি। অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, প্রতিটি পরিবর্তন সম্ভব,যদি আমরা অবিচল থাকি।

 

লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা পিঠা

 

শীতের সন্ধ্যায় এক কাপ গরম চায়ের সাথে পাটিসাপটা পিঠা,আহা!বাঙালির ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই পিঠার বিশেষত্ব হলো এর নরম ও সুস্বাদু ক্ষীরসার পুর। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরেই সহজে লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা তৈরি করা যায়।

উপকরণ
চালের গুঁড়া – ১ কাপ
ময়দা – ২ কাপ
সুজি – ১ কাপ
গুড় – ১ কাপ
লবণ – পরিমাণমতো

ক্ষীরসার পুর তৈরির উপকরণ:
ক্ষীর ও ছানা – ২ কাপ
চিনি – ২ চা-চামচ
গুঁড়ো দুধ – ১ কাপ
কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ
ঘি – ২ টেবিল-চামচ
তেজপাতা – ২টি
এলাচ – ২টি
লবণ – এক চিমটি

প্রথমে ক্ষীরসার পুর তৈরি কররার জন্য একটি সসপ্যানে ঘি গরম করে তেজপাতা ও এলাচ ফাটিয়ে দিতে হবে। এরপর তাতে ক্ষীর, ছানা, চিনি, গুঁড়ো দুধ ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ নেড়ে নেড়ে মিশ্রণটি ঘন ও আঠালো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এবার বেটার তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়া, ময়দা, সুজি, গুড় ও লবণ একসাথে নিয়ে মেখে নিতে হবে। এরপর এতে একটু একটু করে পানি দিয়ে মসৃণ ও পাতলা ব্যাটার তৈরি করুন।ব্যাটারটি কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিতে হবে, যাতে এটি সেট হয়ে যায়।

এরপর একটি ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল ব্রাশ করে নিয়ে একটি বড় চামচ দিয়ে ব্যাটার ঢেলে দিন এবং প্যানটি হালকা ঘুরিয়ে ব্যাটারটিকে চারদিকে ছড়িয়ে দিন, যাতে পাতলা রুটির মতো হয়।
এক মিনিটের মধ্যে এটি কিছুটা শক্ত হয়ে আসবে, তখন এর ওপর আগেই তৈরি করা ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিতে হবে।
এক মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর এতে ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিন।
এভাবে সব গুলো পাটিসাপটা তৈরি করুন।

গরম গরম পরিবেশন করুন মিষ্টি ও সুগন্ধি ক্ষীরসা পাটিসাপটা। চাইলে উপরে গুড় বা ক্ষীর ছড়িয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
শীতের সন্ধ্যায় এ যেন এক টুকরো মিষ্টি আনন্দ!

 

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন দিগন্ত খুলছে ‘সমৃদ্ধি’

 

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীল বিকাশে কাজ করছে প্রজেক্ট ‘সমৃদ্ধি’।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রকল্প পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। তাদের তৈরি ব্যাগ, টুপি, পাপোশ, জায়নামাজ ও নকশিকাঁথার মতো পণ্য বাজারজাত করে ‘সমৃদ্ধি’। এই উদ্যোগ শুধু নারীদের আয়ের পথ সুগম করছে না, বরং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রচারেও ভূমিকা রাখছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত জাহান নাদিরা, আবদুল খালেক সরকার, সুমাইয়া আফরিন অর্থি, আরাফাত বিন সোহেল, মো. সৌরভ হোসেন, মশিউর রহমান ও জারিন তাসনিম রিথি মিলে শুরু করেন ‘সমৃদ্ধি’। প্রথমে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে।

নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই উদ্যোগ।
বিরাট গ্রামের শিমলা বেগমের মতো অনেক নারী এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শিমলা আগে থেকেই সেলাই জানতেন, তবে কখনো ভাবেননি পুরোনো কাপড় থেকে নতুন কিছু তৈরি করে আয় করা সম্ভব। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত ব্যাগ তৈরি করছেন, যা তার পরিবারের আয় বাড়াতে সহায়তা করছে।

শুধু নারীদের জন্য নয়, ‘সমৃদ্ধি’ শিশুদের জন্যও কাজ করছে। প্রকল্পের সদস্যরা স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ক্লাইমেট আইডল’ কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে এবং সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতে ‘সমৃদ্ধি’ আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চায়। উদ্যোক্তারা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, একটি মানসম্মত পাঠাগার স্থাপন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা করছেন।

সহপ্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা জানান, তাদের লক্ষ্য শুধু নারীদের স্বাবলম্বী করা নয়; বরং পুরো এলাকার জীবনমান উন্নত করা। তিনি বলেন, “আমরা চাই, ‘সমৃদ্ধি’ শুধু একটি উদ্যোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।”

নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা ও শিশুদের বিকাশ—এই তিনটি দিককে একত্রে নিয়ে কাজ করছে ‘সমৃদ্ধি’। এলাকাবাসীর আশা, এই উদ্যোগ আরও বড় হবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

 

শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : শামীমা হানিফ

প্রিয় নবী রহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৫৬)

তাই শাবান মাস হলো নবীজির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, ভক্তি ওপ্রেম ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। তা হবে সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, “হে বৎস! যদি পারোএ ভাবে সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও প্রতি হিংসা না থাকে; তবে তা–ই করো।” অতঃপর বললেন, “হে বৎস! এটাই আমার সুন্নত সুমহান আদর্শ। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালোবাসল; যে আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।””
(তিরমিজি শরিফ: ২৬২৭)
শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির–আজকার, তাসবিহ তাহলিল, দোয়া কালাম, দান–সদকাহ–খয়রাত,উমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘

“”আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ,১: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)

#শাবান মাস তাৎপর্য ও আমল:
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদে’র সুন্নত রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রয়েছে নফল রোজা। এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন–তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যায় এবং তা করা উচিত।
সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ফরজ ওয়াজিব ছুটে না যায় এবং কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত না হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা। নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত–বন্দেগি করতেন।
চাঁদের ২৯ ও ৩০ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত, চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত; চান্দ্রমাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া।

প্রিয় বোনেরা আজ রাত থেকে অর্থাৎ আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ সুন্নাত রোজা রাখা যেতেপারে,এর অনেক মাহাত্ম্য ও ফজিলত রয়েছে।১৪ ই শাবান,রাতের ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমরা বেশী তাসবিহ,দরুদ পড়বো, কুরআন অধ্যায়ন করবো জ্ঞান চর্চার জন্য চেষ্টা করবো বেশী বেশী তাহাজ্জুদ নামাম পড়বো,। ইনশাআল্লাহ,

“””সমাপ্ত “”””””

 

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বর্জন: মাসুমা তাসনিম

#যদি আপনি পরকালের জীবন বিশ্বাস করেন,জান্নাতে যাওয়ার আশা রাখেন তাহলে অবশ্যই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসকে না বলতে হবে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্যের সাথে ইসলামের কোন ধরনের সম্পর্ক নাই। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এটি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে শান্তি।

#বিবাহ বহির্ভূত প্রেম বাস্তবতা বিবর্জিত থাকে। এটি ক্ষণস্থায়ী মনের আনন্দ। এটি একটি নেশাগ্রস্থতা। যখনই নেশা কেটে যায় তখন তাদের কাছে পরিষ্কার হয় সে পুরোপুরি একটি ঘোরের মধ্যে ছিল। সেই অবস্থা কাটিয়ে তার জন্য সরল পথের টিকে থাকা খুব লড়াইয়ের ব্যাপার। একটা শক্ত,মজবুত মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তখন। কত জন সেটি পায়? প্রেম ভালোবাসার পাপের পথটা খুবই পিচ্ছিল হয়। সেখান থেকে ফিরে আসতে চাইলেও আবার পেছনে ফিরে যায়। এজন্য ওই জগত থেকে বের হয়ে আসার চাইতে মৃ*ত্যুকে তারা শ্রেয় মনে করে।

#এই দিবস পরিবার ব্যবস্থায় মারাত্মক ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। আমাদের অভিভাবকরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার পুকুর স্বরূপ। তারা তাদের সন্তানের হিতাকাঙ্খী। তারা অভিজ্ঞতার আলোকে কল্যাণজনক সিদ্ধান্ত নিতে চান। অনেক নেশাগ্রস্থ ছেলে – মেয়েকে দেখা যায় তারা ওই সময় অভিভাবকদের কল্যাণ কামনাকে অভিশাপ মনে করে। বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না বাবা মাকে। লাঞ্ছিত- অপদস্থ করতেও পিছুপা হয় না। প্রয়োজনে তাদেরকে খু*ন করতেও চায়।

#এটাতো দুনিয়ার লাঞ্ছনা। আর আখিরাতের ভয়াবহ আযাব তো আছেই। আসুন, সময় থাকতে সোচ্চার হই। বিবাহ বহির্ভূত সমস্ত ভালবাসাকে না বলি। আল্লাহর কসম! আমার ভাগ্যে বিবাহ , ভালোবাসার যে রিজিক আছে সেটা আমি পাবই ইনশাআল্লাহ।

#মাসুমা_তাসনিম
#সেন্ট_ভ্যালেন্টাইন_বর্জন
১৩/০২/২০২৫

 

এক মাসে ২০৫ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার

 

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ২০৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন নারী, যার মধ্যে ৪২ জন কন্যাশিশু। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০ জন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জন কন্যা। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে দুইজন কন্যা। যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন দুজন। নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আটজন, যাঁদের মধ্যে চারজন কন্যাশিশু।
এছাড়া, উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন তিনজন (একজন কন্যা), অ্যাসিডদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুজন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। দুই গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও কিছু উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বিভিন্ন কারণে ৪৯ জন (১১ জন কন্যাসহ) হত্যার শিকার হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন, তাঁদের মধ্যে তিনজন কন্যাশিশু। অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরও সাতজন কন্যা।

এছাড়া সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন দুজন, যাঁদের একজন কন্যা। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি, আর বাল্যবিবাহের চেষ্টা করা হয়েছে তিনটি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে এ ধরনের অপরাধ রোধে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

তথ্যসূত্র:
বাংলা ট্রিবিউন
আইটিভি বিডি
আজকের পত্রিকা

 

১১ বছর বয়সী সুবার ঘটনা: সামাজিক ও নৈতিক বিশ্লেষণ

 

সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া ১১ বছর বয়সী মেয়ে সুবার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, দুই বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় নওগাঁ জেলার এক ছেলের সাথে, যা পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপ নেয়। ঢাকায় অসুস্থ মায়ের সাথে থাকা অবস্থায়, সুবা তার মাকে হাসপাতালে রেখে উক্ত ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে নওগাঁর মধ্যপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে।

এই ঘটনা আমাদের সমাজের বর্তমান নৈতিক ও পারিবারিক অবস্থার একটি বাস্তব প্রতিফলন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম শিশুদের সহজেই প্রভাবিত করছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাবের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী অপরিণত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, অনেকেই এই ঘটনার কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণের আইনকে দোষারোপ করছেন। তাদের মতে, যদি বিয়ের বয়স কম হতো, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তবে বাস্তবতা হলো- বিয়ে শুধু ভালো চরিত্র গঠনের উপায় নয়; বরং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত হওয়াও জরুরি। শুধুমাত্র বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হলে, সমাজে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।

এই ঘটনার মূল কারণ খুঁজে সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। পিতামাতা, শিক্ষক ও সমাজের দায়িত্ব হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা, আত্মসংযম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার শেখানো, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া এবং শিশুদের আবেগিয় ও মানসিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া।
শুধু বিয়ে নয়, বরং যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে।

 

একুশে পদক পেলো সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত হলো! জাতীয় নারী ফুটবল দল এবছর একুশে পদক ২০২৫-এ ভূষিত হয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাদের এই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করছে।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়। মোট ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ২০২২ ও ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
নারী ফুটবলারদের এই সাফল্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে।

একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
নারী ফুটবল দলের এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য রইলো শুভেচ্ছা!

 

চট্টগ্রামে পাঁচ সংগ্রামী নারী পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’

সমাজ উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে সফলতা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচজন নারীকে ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, এবং সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন।
সম্মাননা পাওয়া পাঁচজন নারীর প্রত্যেকেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কামালপাড়া ইউনিয়নের নিগার শারমিন। শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সফলতার স্বীকৃতি পেয়েছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রেহেনা সুলতানা। সফল জননী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের চেমন আরা বেগম। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার মোহাজেরপাড়া এলাকার জাহানারা ইসলাম। এছাড়া নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য কক্সবাজার সদরের ঘোনার পাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম সম্মানিত হয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেয়া খান বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত অবস্থা থেকে উঠে এসে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের স্বীকৃতি দিতেই এই আয়োজন। এতে অন্য নারীরাও উৎসাহিত হবেন। আমাদের সমাজে এখনো নারীদের অনেক অবদান স্বীকৃত হয় না, তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নারীদের এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন বলেন, “সমাজে মানুষে মানুষে বিভাজন আছে। মানসিক বাধা দূর করা দরকার। নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নত বিশ্বে নারী-পুরুষ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছে। শুধু চাকরি করলেই সফল বা স্বাধীন বলা যাবে না। আপনার নিজের জীবন নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই আপনি স্বাধীন।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ কর্মসূচির পরিচালক মনির হোসেন এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা।

এই স্বীকৃতি শুধু পাঁচজন নারীর জন্য নয়, বরং সমস্ত সংগ্রামী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, চাকরিজীবী, শিক্ষিকা এবং নির্যাতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানো নারীদের সম্মানিত করে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ আবারও প্রমাণ করলো—নারীরা যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে সক্ষম।

 

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি শিল্পের নব পথিকৃৎ রুমেয়সা কুরতুলুস

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি দীর্ঘ শতাব্দী ধরে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। “শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়” -এই প্রবাদটি তুরস্কে ক্যালিগ্রাফির স্থায়িত্ব ও গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। একসময় এই শিল্প রাজপ্রাসাদ, মসজিদ এবং পাণ্ডুলিপিকে অলঙ্কৃত করত, কিন্তু আধুনিক যুগে বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল স্ক্রিন ও নিওন সাইনের ভিড়ে এর সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তবু কিছু শিল্পী এখনো এই ঐতিহ্যকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা করছেন, এবং তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রুমেয়সা জয়নেপ কুরতুলুস।
ইস্তাম্বুলের উস্কুদারে নিজের ক্যালিগ্রাফি স্টুডিও ‘কেবিকেচ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র ২৬ বছর বয়সেই কুরতুলুস ক্যালিগ্রাফি শিল্পে নতুন জীবন আনতে শুরু করেন। তার কাজ শুধু ব্যক্তিগত শিল্পীসত্তার প্রকাশ নয়, বরং তুরস্কের ঐতিহ্য রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার মাধ্যম।

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ইতিহাস দীর্ঘ। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর এটি আরও সমৃদ্ধ হয়। তবে ১৯২৮ সালে তুরস্কে লাতিন বর্ণমালা চালুর ফলে আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রভাব কমতে থাকে, এবং এখান থেকেই আধুনিক তুর্কি ক্যালিগ্রাফির নতুন শাখার জন্ম হয়। এমিন বারিন ছিলেন এই পরিবর্তনের অগ্রদূত। তিনি আরবি ক্যালিগ্রাফির নান্দনিকতাকে লাতিন শৈলীর সঙ্গে একত্রিত করে এক নতুন ধারা তৈরি করেন।

কুরতুলুসও তার ক্যালিগ্রাফি শৈলীতে ঐতিহ্যগত কুফিক স্ক্রিপ্ট, লাতিন ক্যালিগ্রাফি ও আধুনিক ডিজাইনের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে তার সৃষ্টি ‘শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়’ এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে তিনি তুরস্কের বর্ণমালা সংস্কারের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তার কাজে আরবি ও লাতিন অক্ষরের অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়, যা কেবল দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং ঐতিহাসিক সংযোগও তুলে ধরে।

তার শিল্পীসত্তা শুধু সৃজনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
কুরতুলুসের আর্কিটেকচারাল শিক্ষার প্রভাব তার কাজে স্পষ্ট -তিনি ক্যালিগ্রাফিকে শুধুই অক্ষরের নকশা হিসেবে দেখেন না, বরং স্থাপত্যশিল্পের মতোই এটি একটি কাঠামোগত উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে, ক্যালিগ্রাফি শুধু শিল্প নয়, এটি একটি সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির প্রতিচিত্র।

২০১৭ সালে তার প্রথম প্রদর্শনী ‘রেঞ্জ খোদা’ দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এটি ছিল একটি মাল্টি-সেন্সরি প্রদর্শনী, যেখানে শুধু চোখ নয়, স্পর্শের মাধ্যমেও শিল্পকর্ম অনুভব করা যেত। বিশেষ করে, একটি ব্রেইল ক্যালিগ্রাফি কাজ ‘আল্লাহ’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা তাদের প্রার্থনার অনুভূতিকে বাস্তবে রূপ দেয়।

কুরতুলুসের কাজ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশ প্রশংসিত। ২০২৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রোমান হলিডে কনফারেন্সে অংশ নেন এবং প্রথন তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা স্বরূপ ‘ড্যান্সিং লেটার্স’ স্কলারশিপ অর্জন করেন।

বর্তমানে, তিনি তার স্টুডিওতে নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনা করছেন, যেখানে নতুন প্রজন্মকে ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার কাজ শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণই নয়, বরং এটি একটি নবজাগরণ।

রুমেয়সা কুরতুলুস প্রমাণ করেছেন যে ক্যালিগ্রাফি শুধুমাত্র অতীতের স্মারক নয়,বরং এটি একটি প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল শিল্পধারা, যা সময়ের সঙ্গে নবায়িত ও বিকশিত হচ্ছে।

 

সুনীতা কৃষ্ণন: এক সাহসী সংগ্রামী নারী

 

শৈশব থেকেই অন্যের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি গভীর সহানুভূতি ছিল সুনীতা কৃষ্ণনের। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নাচ শেখাতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সেই গড়ে তোলেন একটি স্কুল, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেন।
কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আনার এই প্রয়াস সহজ ছিল না। ১৫ বছর বয়সে এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন তিনি—আটজন দুর্বৃত্ত তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এই নির্মম অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিকূলতার কাছে হার না মেনে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প নেন।
পরবর্তীতে তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট যোসেফ কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল নারী পাচার ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।

১৯৯৬ সালে, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দেখতে পান, পরিবারও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।এই অবস্থায় তিনি থেমে যাননি। হায়দ্রাবাদে এসে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেন।
নিজের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রজ্জ্বলা’, যা আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যান্টি-ট্রাফিকিং শেল্টার। এখানে পাচার হওয়া এবং নিপীড়িত মেয়েদের উদ্ধার, আশ্রয়, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নারী পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি লেখালেখি ও সেমিনারেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

সুনীতা কৃষ্ণন শুধু সমাজের জন্য কাজ করলেও নিজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তাঁর স্বামী, চলচ্চিত্র পরিচালক রাজেশ টাচরিভারের কাছ থেকেও কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন না। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান “Real Men Don’t Buy Sex” আজ কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
নারী পাচারের বিরুদ্ধে অবিসংবাদিত ভূমিকার জন্য তিনি ২০১৬ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং আরও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন।

নারী পাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁকে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে—১৪ বার শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি, এমনকি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সমাজ থেকে এই অমানবিক প্রথা নির্মূল করা।
সুনীতা কৃষ্ণন প্রমাণ করেছেন, একক প্রচেষ্টায়ও সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং অপরিসীম মানবিকতা আজ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা।

 

নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার; সিলেটের মাহজাবীন

 

সফলতার গল্প সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে, আর সেই গল্প যখন নিজ দেশের কারও হয়, তখন তা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনই এক অনুপ্রেরণার নাম মাহজাবিন হক, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

মাহজাবিন হকের শৈশব কেটেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ এনামুল হক পূবালী ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০০৯ সালে মাহজাবিন তার পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ও মহাকাশবিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি মিশিগান রাজ্যের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নাসায় যোগদানের আগে মাহজাবিন দুই দফায় নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্নশিপ করেন। প্রথমবার তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে নাসার স্থায়ী নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করে।
ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি নাসা, অ্যামাজনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব পান। তবে তিনি নাসায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে নাসায় কাজ করা নিঃসন্দেহে এক বিশাল অর্জন। মাহজাবিন প্রমাণ করেছেন যে পরিশ্রম, মেধা ও একাগ্রতা থাকলে বিশ্বের যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব। তার সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে।
বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা যে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে, মাহজাবিন হক তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

 

জালালুদ্দিন রুমি ও তিতির পাখি

 

বিস্তীর্ণ বনের সরু পথ ধরে হেঁটে চলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। প্রকৃতির নীরবতা তার চিন্তাকে গভীরতর করে তুলছে। হঠাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে আসা একটি বড় কালো তিতির পাখি তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। দক্ষ হাতে পাখিটিকে ধরে ফেললেন রুমি।
পাখিটিকে দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন— একে আগুনে ঝলসাবেন, নাকি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে রান্না করবেন!
ঠিক তখনই পাখিটি রুমির হাতের ভেতর নড়েচড়ে উঠে কণ্ঠে আহ্বান জানাল,
“রুমি! জীবনে এত মাংস খেয়েও তোমার লোভ ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে।”
রুমি একটু বিস্মিত হলেন, তারপর বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে প্রথম পরামর্শ এখানেই দাও। যদি মূল্যহীন মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তোমাকে হত্যা করবো।”

পাখিটি বলল,
“তুমি সবসময় অন্যের কথায় বিচলিত হয়ে পড়ো। অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় জড়ানো তোমার স্বভাব। অথচ মানুষকে তাদের মতো থাকতে দিলে, তোমার জীবন আরও শান্ত হবে।”
রুমি চিন্তা করলেন, এতে সত্যিই গভীর এক জ্ঞান আছে!
তিনি বললেন, “তাহলে দ্বিতীয় পরামর্শ বলো।”
পাখিটি বলল, “আমি গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শ দেবো। আগে আমাকে মুক্ত করো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসল।

পাখিটি গাছের ডাল থেকে বলল,
“রুমি! অতীতকে কখনো বদলানো যায় না। তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে থাকো।”
রুমি গভীরভাবে তা চিন্তা করলেন। কিন্তু তখনই পাখিটি হঠাৎ হেসে বলল,
“যাই হোক, তুমি বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা ছিল। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে, তবে সেই হীরা পেয়ে তোমার তিন পুরুষ আরাম করে কাটাতে পারতো।”
এই কথা শুনে রুমি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন! তার বুক ধক করে উঠল। হতভম্ব হয়ে তিনি পাখিটিকে ধরতে দৌড় দিলেন।
পাখিটি তখন উঁচু স্বরে বলল,
“রুমি! তুমি দেখছি আমার দ্বিতীয় পরামর্শের কথাই ভুলে গেলে! আমি তো বলেছিলাম, অতীতকে বদলানো যায় না। আর ভাবো তো, আমি যেখানে মাত্র দুই কেজির, সেখানে কীভাবে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আবারও ভুল করেছেন।

এবার রুমি তিতিরকে অনুরোধ করলেন, “তোমার তৃতীয় পরামর্শটা দাও। এবার আমি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনবো।”
পাখিটি বলল,
“সবার কাছে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা গ্রহণ করতে চায়। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”

রুমি এবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিটির প্রতিটি পরামর্শই জীবন বদলে দেওয়ার মতো!
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে তিনি বনের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু এবার তার চিন্তাধারা আগের চেয়ে অনেক পরিণত ও শান্ত।

গল্পের শিক্ষা:

✅ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
✅ অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
✅ উপদেশ কেবল তাদেরই দিতে হবে যারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

আরওয়া আনাম

 

প্রতারণার ফাঁদে নারী প্রবাসীরা: সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস

 

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন অনেক বাংলাদেশি নারী। এই প্রতারণা রোধে সতর্কতা জারি করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
দূতাবাসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু চক্র নারী কর্মীদের ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় তারা বিপদের মুখে পড়ছেন।

বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে নারী কর্মীদের নিয়োগের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে ট্যুরিস্ট বা অন্য কোনো ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, অনেক নারী এজেন্সির প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এমনকি হচ্ছেন শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার।

বাংলাদেশ হাইকমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোনো নারী যেন দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণামূলক প্রস্তাবে সাড়া না দেন। কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি যদি নারী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজের নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক।
হাইকমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় এসেছেন এবং প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রবাসে নিরাপদ থাকুন, প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন।

 

নারীর আত্মরক্ষার কিছু কার্যকরী কৌশল: সচেতনতা-প্রশিক্ষণ

বর্তমান সমাজে নারীর সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মরক্ষার কৌশল শেখা নারীদের জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় নয়, এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যম। অপরাধের ঝুঁকি এড়াতে ও নিজেকে রক্ষা করতে নারীদের সচেতন এবং সক্ষম হতে হবে। এই প্রবন্ধে নারীর আত্মরক্ষার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল শেয়ার করা হলো।

১. নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ান

নারীদের আত্মরক্ষার মূল ভিত্তি হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। দৃঢ় মনোভাব অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতার প্রতি নিরুৎসাহিত করে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা জরুরি।

২. আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন

আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নারীদের শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। বিশেষ কিছু কৌশল, যেমন:

কারাতে ও মার্শাল আর্ট: শারীরিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কার্যকর।

সেলফ-ডিফেন্স ট্রেনিং: আক্রমণকারীকে সামলানোর সহজ কৌশল শেখা।

৩. সবসময় সতর্ক থাকুন-
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। নারীদের উচিত:

অপরিচিতদের সঙ্গে একা চলাফেরা এড়ানো।

রাতের বেলা আলোকিত ও জনবহুল রাস্তায় চলাচল করা।

সন্দেহজনক পরিবেশ দেখলে দ্রুত সরে যাওয়া।

৪. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন

প্রযুক্তি নারীর সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন:

মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাড়ানো।

লাইভ লোকেশন শেয়ার করা।

জরুরি অবস্থায় পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে কল করা।

৫. সুরক্ষার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন

কিছু সহজে বহনযোগ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম নারীদের আত্মরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

পেপার স্প্রে: এটি চোখে ব্যবহার করলে আক্রমণকারী সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে।

অ্যালার্ম ডিভাইস: বিপদের সময় জোরে শব্দ করে সাহায্য চাইতে কার্যকর।

৬. আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন

নারীদের তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় এবং আইনের সাহায্য নেওয়া যায় তা জানা জরুরি।

৭. মানসিক শক্তি অর্জন করুন

বিপদের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ঠান্ডা মাথায় কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত মানসিক প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।

নারীর আত্মরক্ষার কৌশল শুধু সুরক্ষা নয়, এটি একটি আত্মসম্মানের বিষয়। সচেতনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নিজের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়িয়ে নারীরা সমাজে আরও নিরাপদ ও স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই হলো নারীর সবচে বড় শক্তি।

 

বুক রিভিউ- বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)

 

ড. হিশাম আল আওয়াদির লেখা “বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” একটি অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার পথ দেখায়। বইটির মূল ধারণা হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এবং শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আধুনিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
লেখক দেখিয়েছেন, মহানবী (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নেতা, চিন্তাবিদ এবং মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী যেমন ধৈর্য, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তা বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু
বইটিতে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন গুণাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের স্মার্ট জীবনযাপনের জন্য সহায়ক:

যোগাযোগ দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের মন জয় করতেন, তা বইটির অন্যতম আকর্ষণ। আধুনিক কর্মজীবনে এটি সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমস্যা সমাধান ও সংকট মোকাবিলা
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংকট এবং সেগুলো মোকাবিলার জন্য তাঁর ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমাদের শেখায় কীভাবে জটিল পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দেওয়া যায়।

মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা
মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে কীভাবে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়, তা এই বইয়ের অন্যতম মূল শিক্ষা।

লিডারশিপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আধুনিক যুগের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর।

মুখ্য বার্তা
বইটির মূল বার্তা হলো, মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের শেখায় কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং নৈতিকতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের স্মার্ট এবং সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

“বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি আধুনিক জীবনের একটি প্রাসঙ্গিক গাইড। এই গাইডলাইন আমাদের নৈতিক এবং পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। বইটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে ধারণ করে একজন স্মার্ট, দক্ষ, এবং মানবিক মানুষ হওয়া সম্ভব।

 

শিশুর স্ক্রিন আসক্তি কমিয়ে ফাইন মোটর স্কিল বাড়ান

বর্তমান সময়ে শিশুরা আগের চেয়ে বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিংবা টেলিভিশনের প্রতি তাদের ঝোঁক এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ কিছু কাজ করতেও তারা এখন হিমশিম খায়। জুতার ফিতা বাঁধা, বোতাম লাগানো, চামচ ধরা, কাঁচি চালানো কিংবা কলম দিয়ে ঠিকমতো লেখা—এসব কাজ আগের তুলনায় অনেক শিশুর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুরা এখন হাতে-কলমে কাজ কম করছে, ফলে তাদের ফাইন মোটর স্কিলস (Fine Motor Skills) গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ফাইন মোটর স্কিলস হলো আমাদের হাত ও আঙুলের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার ক্ষমতা, যা লেখা, আঁকা, জুতা বাঁধার মতো কাজে দরকার হয়। কিন্তু প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুরা এসব কাজে দক্ষতা হারাচ্ছে।
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এটি আরও প্রকট হয়েছে। মহামারির সময় শিশুরা ঘরবন্দি ছিল, স্কুলে যেতে পারেনি, খেলাধুলার সুযোগ কমে গিয়েছিল। অনেকেই তখন অনলাইনে পড়াশোনা করত, যার ফলে হাতে-কলমে লেখার চর্চা কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির সময় যারা জন্মেছে, তারা ছয় মাস বয়সে ফাইন মোটর স্কিলস পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, এর কারণ হতে পারে মায়ের মানসিক চাপ, আবার কেউ বলেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।

তবে শুধু মহামারি নয়, এর অনেক আগে থেকেই শিশুরা হাতে কাজ করার সুযোগ হারাচ্ছে। একসময় শিশুরা পাজল খেলত, কাঠের ব্লক দিয়ে টাওয়ার বানাত, রঙ করত, কাটাকুটি করত। এসব কাজ শিশুদের ধৈর্য বাড়াতে এবং হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখন তারা বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ফলে হাতের ব্যবহার কমে গেছে। অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা বা ছবি আঁকা করাও উপকারী হতে পারে, কিন্তু এতে হাতে-কলমে কাজ করার যে বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার, তা তৈরি হয় না।

শিশুরা শুধু ফাইন মোটর স্কিলস নয়, বই পড়ার অভ্যাসও হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা আগের তুলনায় বিনোদনের জন্য বই পড়ছে অনেক কম। অথচ বইয়ের পাতা উল্টানো, মনোযোগ ধরে রাখা, শব্দ অনুসরণ করা—এসবই তাদের হাতের সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ায়।

এই সমস্যার সমাধান কী?
শিশুদের স্ক্রিন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়, তবে তাদের হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। অভিভাবকরা চাইলে সহজ কিছু উপায়ে শিশুর ফাইন মোটর স্কিলস বাড়াতে পারেন।
একটি ভালো উপায় হলো শিশুদের বেশি করে লেখার সুযোগ দেওয়া। রঙ করা, কাটাকুটি করা, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকা—এসব কাজ তাদের হাতের শক্তি বাড়ায়। ব্লক গেমস বা লেগো খেলতে দিলে শিশুরা হাতের নড়াচড়ায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। জুতার ফিতা বাঁধতে শেখানো, বোতাম লাগাতে দেওয়া, রান্নার ছোটখাটো কাজে যুক্ত করা—এসবও সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, শিশুরা যাতে বই পড়ায় উৎসাহিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাতে গল্পের বই তুলে দিলে তারা পাতা উল্টানোর অভ্যাস করতে পারবে, যা তাদের হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জন্য ভালো।

শিশুরা প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠবেই, তবে প্রযুক্তির পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং শিশুদের হাতে কাজ করার সুযোগ বেশি করে দেন, তাহলে তারা এই দক্ষতা ফিরে পেতে পারবে।

 

এবারের সাফল্যগাঁথা: দারিদ্র্য যাকে পিছাতে পারেনি স্বপ্ন পূরণের পথ থেকে

 

জীবনযুদ্ধে বিজয়ীরা হাল ছাড়েন না, প্রতিকূলতাকে পরিণত করেন সম্ভাবনায়। একসময় যে ঘর ভাড়া দিতেও হিমশিম খেত পরিবার, সেই ঘরের মেয়ে আজ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপথে। দারিদ্র্য যার জন্য ছিল চরম বাধা, সেই সীমা আজ প্রমাণ করলেন—“মন যেখানে উচ্চ, সাফল্য সেখানে অনিবার্য।”

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সীমার বাবা একজন বাসচালক, মা গৃহিণী। সংসারের টানাপোড়েন লেগেই ছিল, কিন্তু সীমার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। দারিদ্র্যের অন্ধকারে থেকেও তিনি আলো খুঁজেছেন শিক্ষার পথেই। টিউশনি করে নিজের খরচ চালানো সেই সীমাই এবার দেশের একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

সীমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়েটি যেন অন্তত সাধারণ শিক্ষা শেষ করে, কিন্তু তার মায়ের চোখে ছিল আরো বড় স্বপ্ন। অভাবের কঠিন পথ পেরিয়ে, শত প্রতিকূলতা সয়ে তিনি বুক বাঁধলেন সংগ্রামের জন্য।
সীমার ভাষ্যমতে “পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল, কিন্তু অর্থের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি, টিউশনি করে যা পেতাম, তাই দিয়ে বই-খাতা কিনতাম,”।

তার এই সাফল্যে পরিবার তো বটেই, পুরো এলাকাবাসী,সে এখন অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
কেবল নিজের জন্য নয়, সীমার স্বপ্ন পুরো সমাজকে আলোকিত করা। তিনি বলেন, “একদিন ডাক্তার হয়ে আমি দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে চাই। যারা চিকিৎসা পায় না, তাদের বিনামূল্যে সেবা দিতে চাই। আমি জানি, কষ্ট কাকে বলে, তাই আমি চাই না কেউ কষ্ট পাক।”
সীমার গল্প প্রমাণ করে, “যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।” যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, তবে দারিদ্র্যও স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।
এ গল্প শুধু সীমার নয়, বরং সকল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর। যারা লড়াই করতে ভয় পান, তাদের জন্য সীমা যেন এক জীবন্ত উদাহরণ। কারণ সত্যিই, “দুঃসাহসীরাই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।”

 

সায়েন্স ফিকশন : তারকামন্ত্র

সাল ২১৫৭। পৃথিবী এখন প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ পার করছে। মেঘের ওপর দিয়ে উড়ন্ত নগরী, গ্রহান্তর ভ্রমণের সুযোগ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবাধ ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও এক অদৃশ্য সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে। পরিবেশের ধ্বংস, অবাধ যুদ্ধে শক্তির অপচয় এবং মানবজাতির মধ্যে বাড়তে থাকা বিভক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
ঠিক এই সময়ে, আকাশে একটি নতুন তারা উদয় হয়। এটি কোনো মহাজাগতিক ঘটনা নয়, বরং একটি বিশাল মহাকাশযান। এর ভেতর থেকে একটি বার্তা ভেসে আসে, যা পৃথিবীর প্রতিটি ডিভাইসে সম্প্রচারিত হয়। বার্তাটি ছিল এক অচেনা ভাষায়, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর সব ভাষায় অনূদিত হয়।
“আমরা জেনাসি। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। মানবজাতি নিজেদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা তোমাদের নতুন একটি জীবন দিতে পারি, কিন্তু বিনিময়ে তোমাদের অতীত বিস্মৃত হতে হবে। তোমাদের স্মৃতি মুছে ফেলে একটি শূন্য পাতা থেকে শুরু করতে হবে।”

এই প্রস্তাব শোনার পর পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের “উন্নয়নপন্থী” বলে পরিচয় দেয়, জেনাসিদের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তারা মনে করে মানবজাতির অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করাই ভবিষ্যত অগ্রগতির একমাত্র উপায়।
কিন্তু অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী “নস্টালজিস্টরা” এই প্রস্তাবকে দাসত্বের সামিল বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিশ্বাস, স্মৃতি ছাড়া মানুষ আর মানুষ থাকবে না।
এর মাঝেই এক তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা এই ঘটনার গভীর রহস্য উন্মোচনে এগিয়ে আসে। আয়েশা কাজ করছিল এক গোপন প্রকল্পে, যার মাধ্যমে জেনাসিদের প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছিল। সে আবিষ্কার করে যে, জেনাসিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি একটি ফাঁদ। তারা মানবজাতির স্মৃতিকে শুধুমাত্র মুছে ফেলবে না, বরং সেই স্মৃতিগুলো সংগ্রহ করে একটি বিশেষ অস্ত্র তৈরি করবে।
এই অস্ত্রটি হবে একটি “স্মৃতিশক্তি” বোমা, যা যে কোনো জাতির মস্তিষ্কের স্মৃতি মুছে ফেলতে সক্ষম। জেনাসিরা পৃথিবীকে শুধু সাহায্য করার ভান করছে, আসলে তারা মানবজাতিকে তাদের পরবর্তী শিকার বানাতে চায়। আয়েশা বুঝতে পারে যে, তার হাতে সময় খুব কম।

মহাকাশযানটিতে প্রবেশ করার জন্য আয়েশা একটি বিপজ্জনক মিশন হাতে নেয়। বিদ্রোহীদের একটি দল তার সঙ্গী হয়। জেনাসিদের জাহাজে প্রবেশ করে তারা দেখতে পায়, সেখানে পৃথিবীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতির বিশাল ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এই স্মৃতিগুলো থেকে জেনাসিরা তাদের অস্ত্রের জ্বালানি তৈরি করছে।
অবশেষে, আয়েশা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে তাকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সে এই সিস্টেম ধ্বংস করে তবে পৃথিবী রক্ষা পাবে, কিন্তু একই সঙ্গে পৃথিবীর সব প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মুছে যাবে। অন্যদিকে, যদি সে জেনাসিদের সঙ্গে আপস করে, তবে মানুষের স্মৃতি হারানোর ঝুঁকি থাকবে।
আয়েশা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সে জেনাসিদের সিস্টেম ধ্বংস করার পাশাপাশি, পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠায়—”আমাদের অতীতই আমাদের শক্তি। স্মৃতি হারানো মানে আমাদের অস্তিত্ব হারানো।”

এরমাঝে জেনাসিদের জাহাজ ধ্বংস হয়,আর পৃথিবী আবার নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু করে।
এই মিশন এখানে শেষ হলেও, আকাশে জেনাসিদের মতো আরও কোনো সভ্যতার হুমকি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার মানুষ আরো দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত।

-আরওয়া আনাম

 

দায়িত্ব ফিরছেন ব্রিটিশ রাজবধু কেট মিডলটন

 

ব্রিটিশ রাজবধূ ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। আজ রবিবার প্রকাশিত রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুডের এক প্রতিবেদনের ভূমিকায় তিনি সমাজ উন্নয়নের জন্য সমবেদনা, সমানুভূতি এবং সামাজিক দক্ষতার গুরুত্ব নিয়ে বার্তা দিয়েছেন।

কেট মিডলটন ২০২১ সালে রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুড প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রতিবেদনে তিনি দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য, আসক্তি ও নিপীড়নের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের অবশ্যই নতুন শুরু, পুনরুদ্ধার ও পুনর্ভারসাম্য করতে হবে। এর অর্থ হলো আমাদের নিজস্ব আচরণ, আবেগ ও অনুভূতির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পরস্পরের প্রতি সমবেদনা ও সমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও ভালো হতে হবে, যাতে আমাদের জীবনে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর এ সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের সামাজিক ও মানসিক দক্ষতার বিকাশ এবং সেগুলোকে লালন করা। যদি আমরা উন্নতি করতে চাই, তবে এগুলোকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে কেট ধীরে ধীরে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরছেন। গত সপ্তাহে তিনি দুটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত বছর জানুয়ারিতে কেটের তলপেটে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কেটের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে, কারণ রাজা তৃতীয় চার্লসও ক্যানসারে আক্রান্ত।
২০২৪ সাল ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য ছিল কঠিন সময়। রাজা তৃতীয় চার্লস ও রাজবধূ কেট মিডলটনের অসুস্থতা পুরো রাজপরিবারকে বিপর্যস্ত করেছিল। প্রিন্স উইলিয়ামও বলেছিলেন, বছরটি তাদের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে।
তবে কেটের প্রত্যাবর্তন রাজপরিবার ও তার ভক্তদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে।
কেট মিডলটনের এই বার্তা শুধু রাজপরিবারের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের সবাইকে আরও সহানুভূতিশীল হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০২৫: নারীর সম্মান ও স্বাধীনতার প্রতীক

প্রতি বছর ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হিজাব দিবস। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী নাজমা খান এই দিবসের সূচনা করেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল হিজাব পরিধানকারী নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

২০২৫ সালের বিশ্ব হিজাব দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “Progression, Not Oppression” (প্রগতি, নিপীড়ন নয়)
এবং হ্যাশট্যাগ #UnapologeticHijabi

এই বার্তার মাধ্যমে হিজাব পরিধানকারী নারীদের স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন, তাদের অর্জন এবং সমাজে তাদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

হিজাবের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
ইসলামে হিজাব কেবল একটি পোশাক নয়, বরং এটি নারীর আত্মপরিচয়, শালীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের উত্যক্ত করা হবেনা।” (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৯)

হিজাব নারীকে সম্মানিত করে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি কেবল মুসলিম নারীদের জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির নারীরাও শালীন পোশাক পরিধান করে থাকে। বিশ্ব হিজাব দিবসের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব হিজাব দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
✅ গ্লোবাল ভার্চুয়াল কনফারেন্স
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন – #UnapologeticHijabi হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সচেতনতামূলক পোস্ট করা হবে।
✅ হিজাব চ্যালেঞ্জ – অমুসলিম নারীদের একদিনের জন্য হিজাব পরিধান করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়।
✅ আলোচনা সভা ও কর্মশালা – হিজাবের গুরুত্ব, নারীর অধিকার ও সমাজে হিজাব পরিধানকারী নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

অনেকে মনে করেন হিজাব একটি বাধ্যবাধকতা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একজন নারীর স্বাধীন পছন্দের প্রতীক। বহু মুসলিম নারী-বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাজনীতি, ক্রীড়া ও বিভিন্ন পেশায় হিজাব পরেই সফলতা অর্জন করছেন। তাই বিশ্ব হিজাব দিবস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, নারী হিজাব পরিধান কখনো তার অগ্রগতির অন্তরাল হতে পারেনা।এবং হিজাব পরা বা না পরা এটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

বিশ্ব হিজাব দিবসের মূল বার্তা হলো— নারীর হিজাব পরার স্বাধীনতাকে সম্মান করুন। এটি কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং নারীর আত্মপরিচয়ের একটি অংশ। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য “Progression, Not Oppression” এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আসুন, আমরা একে অপরের সংস্কৃতি ও পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তুলি।

 

আতিয়া বিনতে আমিন: থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি বিজয়ী

মা-বাবা সবসময় চাইতেন মেয়ে চিকিৎসক হোক, তবে আতিয়া বিনতে আমিনের পথটি কিছুটা আলাদা ছিল। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সফল না হওয়া তাকে প্রথম বড় ধাক্কা দেয়। তবে সেবার অতটা ভেঙে না পড়ে তিনি বুঝতে পারেন যে তার আসল লক্ষ্য ছিল অন্যকিছু। তিনি বলেছিলেন, “সাময়িক ব্যর্থতাই আমাকে আসল গন্তব্যে নিয়ে এসেছে।”

বর্তমানে কানাডার মনট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন আতিয়া, গত ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-এ অনুষ্ঠিত থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি) প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিজয়ী হন। থ্রিএমটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের তিন মিনিটে তাদের গবেষণা বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হয়। আতিয়া তার গবেষণায় কালাজ্বর নিয়ে কাজ করেছেন, যা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

আতিয়া ময়মনসিংহের একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তার পরবর্তী সময়টি ছিল অন্যরকম এক যাত্রা,যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলামের অধীনে দুই বছর গবেষণা কাজের সুযোগ পান, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের বৃত্তি পেতে সহায়তা করে।

আতিয়া বলেন, “২০১২ সালের আগে আমি নিজে কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয় জানতাম না, আর এখন আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করি। আগের সেই আমি, যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন না, আজ থ্রি মিনিট থিসিসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি।”
তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আতিয়া বড়। তার গবেষণার বিষয় কালাজ্বর সৃষ্টিকারী পরজীবী এবং এই পরজীবী কীভাবে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কীভাবে বুদবুদের মাধ্যমে পরজীবীটি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। তার গবেষণার ফল শুধু কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরিতেই নয়, ক্যানসারের জন্য নতুন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারেও ভূমিকা রাখবে। এর আগে তার গবেষণা কানাডার কুইবেক প্রদেশে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে।
এছাড়া, ২০২৩ সালে আতিয়া ভ্যানিয়ের স্কলারশিপ লাভ করেন, যা কানাডা সরকারের একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি এবং এর আর্থিক মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি)।
আতিয়া জানান, তার জীবনের সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল যখন তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এবং সেই সময় তিনি বলেন, “জীবনে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!”
আতিয়া বিনতে আমিন বিশ্বাস করেন ”কন্যাসন্তান কখনো বোঝা নই,তারা সুযোগ পেলে পৃথিবী জয় কর‍তে সক্ষম”

 

টাঙ্গাইলে ১৫বছরের কিশোরের ডিপফেক কেলেঙ্কারি: নিরাপদ নেই কোন নারীর ছবি

 

টাঙ্গাইলে মাত্র ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের চাঞ্চল্যকর কর্মকাণ্ড পুরো দেশকে হতবাক করেছে। জানা গেছে, কিশোরটি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া (ডিপফেক) প* ভিডিও তৈরি করে পরে সেই ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করত।
গতরাতে যমুনা টিভির রি প্রতিবেদন টি সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে।

এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপফেক প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এ ধরনের অপরাধের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে নারীরা এই ধরনের অপরাধের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত কিশোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভুক্তভোগীদের ছবি সংগ্রহ করত। এরপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ছবিগুলো দিয়ে ভুয়া ভিডিও তৈরি করত, যা দেখতে একদম আসল ভিডিওর মতো মনে হতো। পরে সেই ভিডিও ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করত।

ডিপফেক হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি, যা ছবি বা ভিডিওতে মানুষের মুখ ও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করতে সক্ষম। বর্তমানে এটি যেভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠছে, এবং সমাজে বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা নারীদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের ছবি অপরাধীদের জন্য সহজ শিকারে পরিণত হতে পারে। অনেকেই হয়তো সচেতন না হয়ে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনলাইনে আপলোড করেন, যা ডিপফেক বা ভুয়া কনটেন্ট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আগে ন্যাশনাল আইডি কার্ডে ছবি দেওয়ার বিষয়ে পর্দানশীন নারীদের আপত্তির প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তাদের সেই দাবি অনেকেই গুরুত্ব দেননি। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনা তাদের দাবি কতটা যৌক্তিক, তা প্রমাণ করে দিয়েছে।

এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আমরা যা করতে পারি

১. ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার থেকে বিরত থাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
২. সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে নিজে সচেতন হওয়া এবং পরিবার ও বন্ধুদেরও সচেতন করা।
৩. আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ: কোনো ধরনের ব্ল্যাকমেইল বা সন্দেহজনক কার্যক্রমের শিকার হলে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা।
৪. পর্দা মেনে চলা: ইসলামের পর্দার বিধান মানলে এ ধরনের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যেতে পারে।

বর্তমান প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনই এর অপব্যবহার বড় ধরনের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে অনলাইনে ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হওয়া জরুরি। আমাদের উচিত সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তির এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত এ ধরনের অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ধরনের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।

 

রসুনের আচার,আপনার খাবারে যোগ করুন নতুন স্বাদ

 

উপকরণ:
রসুন: ৫০০ গ্রাম (খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া)
সরিষার তেল: ১.৫ কাপ
পাঁচফোড়ন: ১.৫ চা-চামচ
শুকনা লাল মরিচ: ১০-১২টি
রসুন বাটা: ১ চা-চামচ
আদা বাটা: ১ টেবিল-চামচ
হলুদ গুঁড়া: ১ চা-চামচ
লবণ: স্বাদমতো
চিনি: ১ চা-চামচ
ভিনেগার: ১ কাপ

প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে রসুনের কোয়াগুলো ভালো করে ছিলে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. কড়াইতে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হয়ে এলে পাঁচফোড়ন এবং শুকনা মরিচ দিয়ে হালকা ভেজে নিন।
৩. এরপর রসুন- আদা বাটা দিয়ে মাঝারি আঁচে কয়েক মিনিট কষিয়ে নিন।
৪. এবার হলুদ গুঁড়া, লবণ, এবং চিনি যোগ করুন।
৫. রসুনের কোয়াগুলো কড়াইতে দিয়ে মসলার সঙ্গে ভালোভাবে মিক্স করুন।
৬. এরপরে ভিনেগার ঢেলে মিশ্রণটি ফুটিয়ে নিন।
৭. তেল উপরে উঠে এলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন, ঠান্ডা হয়ে গেলে আচারটি একটি পরিষ্কার কাচের বয়ামে ভরে সংরক্ষণ করুন।

টিপস:
আচার দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে বয়ামটি ৬/৭দিন কিছুক্ষণ রোদে রাখুন।

খিচুড়ি, পোলাও বা গরম ভাতের সাথে এই আচার খুবই সুস্বাদু।
উপভোগ করুন মজাদার
রসুনের আচার!

 

নির্যাতনের শিকার কিশোরী কল্পনা: বেঁচে ফেরার গল্প

 

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিল কিশোরী কল্পনা। সেখানেই প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয় সে। মালিকপক্ষের নির্মম অত্যাচারে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়, এমনকি সাম্নের চারটি দাঁতও হারায়। প্রতিদিনের নির্যাতনে কল্পনা অসুস্থ হয়ে পড়লেও কেউ তার প্রতি সহানুভূতি দেখায়নি।
অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কল্পনাকে উদ্ধার করে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা শুরু হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলে।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর কল্পনা এখন অনেকটাই সুস্থ। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর দুই-এক দিনের মধ্যেই হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে সে।

তবে তার পরিবার মনে করে, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা ছাড়া কল্পনার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

 

টমেটো ভর্তা রেসিপি

 

টমেটো ভর্তা বাঙালির খাবারের এক অনন্য স্বাদযুক্ত অংশ। নিচে ৫ রকমের টমেটো ভর্তার রেসিপি দেওয়া হলো

১. সাধারণ টমেটো ভর্তা
উপকরণ:

টমেটো – ২-৩টি
পেঁয়াজ কুচি – ১টি
কাঁচা মরিচ – ২টি
সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টমেটোগুলো হালকা পুড়িয়ে নিন।
২. টমেটোর খোসা ছাড়িয়ে, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, লবণ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে পরিবেশন করুন।

২. সরিষা টমেটো ভর্তা
উপকরণ:

টমেটো – ৩টি
সরিষা বাটা – ১ টেবিল চামচ
রসুন কুচি – ২ কোয়া
কাঁচা মরিচ – ২টি
সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টমেটো ভেজে বা পুড়িয়ে নিন।
২. সরিষা বাটা, রসুন, কাঁচা মরিচ ও লবণ দিয়ে টমেটো মেখে নিন।
৩. উপরে সরিষার তেল দিয়ে পরিবেশন করুন।

৩. শুঁটকি দিয়ে টমেটো ভর্তা

উপকরণ:

টমেটো – ৩টি
শুঁটকি (পুঁটি/চিংড়ি) – ২ টেবিল চামচ
পেঁয়াজ কুচি – ১টি
কাঁচা মরিচ – ৩টি
সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টমেটো ও শুঁটকি আলাদা করে পুড়িয়ে নিন।
২. শুঁটকিকে গরম পানিতে ভিজিয়ে নরম করে নিন।
৩. পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ,শুঁটকি ও টমেটো একসাথে বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন। লবণ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে ভর্তা তৈরি করুন।

৪. ডাল টমেটো ভর্তা

উপকরণ:
টমেটো – ৩টি
সেদ্ধ মসুর ডাল – ৩ টেবিল চামচ
রসুন বাটা – ১ চা চামচ
শুকনা মরিচ ভাজা – ২টি
সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টমেটো পুড়িয়ে নরম করে নিন।
২. টমেটো ও সেদ্ধ ডাল একসঙ্গে বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন।
৩. রসুন বাটা, শুকনা মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে পরিবেশন করুন।

৫. নারকেল টমেটো ভর্তা
উপকরণ:
টমেটো – ২টি
নারকেল কোরানো – ৩ টেবিল চামচ
শুকনা মরিচ ভাজা – ২টি
সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ
লবণ – স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টমেটো পুড়িয়ে নরম করে নিন।
২. নারকেল কোরানো, শুকনা মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন।
৩. সরিষার তেল দিয়ে পরিবেশন করুন।

যেকোনো ধরনের ভর্তা গরম ভাতের সঙ্গে দারুণ উপভোগ্য!

 

একজন জলবায়ু বিজ্ঞানী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী একজন বিশিষ্ট জলবায়ু গবেষক। প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

প্লাস্টিক দূষণ কীভাবে গঙ্গা নদী থেকে সাগরে গিয়ে পরিবেশ ও প্রাণীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা দলের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। গবেষণার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নীতিমালা প্রণয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।
সুন্দরবনের পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে তিনি পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে কার্পেট ও অন্যান্য পণ্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে এটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিরও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

নারী নির্যাতন ও বৈষম্য রোধে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দেন ড. গাউসিয়া। তার মতে, মা-বাবার উচিত সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্মান করতে শেখানো। নারীদের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং নারীবিজ্ঞানীদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করাই বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হবে।

শৈশব থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পারিবারিক দুর্যোগের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে বন্ধুদের উৎসাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে ওঠা গাউসিয়া তার শিক্ষা জীবনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। নারী হিসেবে গবেষণাক্ষেত্রে বহুবার বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন, তবে কখনো থেমে যাননি। তার ভাষায়, “যেখানেই ‘না’ শুনেছি, সেখানে ‘হ্যাঁ’ করার জন্য লড়ে গেছি। কারণ আমার উদ্যোগে যদি একজনও উপকৃত হয়, তাহলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।”

কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ স্কলারশিপের অধীনে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন তিনি। ছোটবেলায় বিজ্ঞানীদের কাজ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষণার প্রতি আগ্রহী হন এবং পরিবেশ, প্রাণী ও মানবকল্যাণে গবেষণাকে নিজের জীবন লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী তার গবেষণা ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ সমাজের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। পরিবেশ রক্ষা, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নারীর ক্ষমতায়নে তার উদ্যোগ আগামী দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

মাউন্ট এভারেস্ট জয়ী নারীদের অনুপ্রেরণামূলক গল্প

মাউন্ট এভারেস্ট-পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করা সব পর্বতারোহীর স্বপ্ন। এটি শুধুমাত্র শারীরিক শক্তির পরীক্ষা নয়, মানসিক দৃঢ়তারও প্রতীক। বাচেন্দ্রী পাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন পর্যন্ত, অনেক সাহসী নারী তাদের অসীম সাহস ও সংকল্প নিয়ে এই চূড়ায় পৌঁছেছেন। এই নারীরা শুধু ইতিহাস সৃষ্টি করেননি, বরং নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

প্রথম ভারতীয় নারী: বাচেন্দ্রী পাল
১৯৮৪ সালের ২২ মে, বাচেন্দ্রী পাল প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। এই অভিযানে তাকে ভয়াবহ বরফ ধসের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তিনি দমে না গিয়ে সফল হন। তার এই সাফল্য ভারতীয় পর্বতারোহণ ইতিহাসের একটি বড় অধ্যায়।

প্রথম বাংলাদেশি নারী: নিশাত মজুমদার
নিশাত মজুমদার ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। তার এই সাফল্য বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। নিশাতের এই অর্জন বাংলাদেশি নারীদের স্বপ্ন দেখতে এবং তা অর্জনে সাহসী হতে অনুপ্রাণিত করেছে।

ওয়াসফিয়া নাজরীন: সেভেন সামিট বিজয়ী
২০১২ সালের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। তিনি কেবল এভারেস্ট জয় করেই থেমে যাননি; তিনি সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (সেভেন সামিটস) জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তার এই সাফল্য বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

অরুণিমা সিনহা: অদম্য মনোবলের প্রতীক
ভারতের প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড় অরুণিমা সিনহা, যিনি একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পা হারান, ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করেন। তার কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে এই শৃঙ্গ জয় বিশ্বজুড়ে সাহসিকতার একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে।

মালাভাথ পূর্ণা: সর্বকনিষ্ঠ নারী এভারেস্টজয়ী
মাত্র ১৩ বছর বয়সে মালাভাথ পূর্ণা ২০১৪ সালে এভারেস্ট জয় করেন। তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী পর্বতারোহী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। তার এই কৃতিত্ব তরুণদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা।

পিয়ালি বসাক: অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়
পশ্চিমবঙ্গের পিয়ালি বসাক ২০২২ সালে অক্সিজেন ছাড়াই মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। তার এই অসাধারণ সাফল্য ভারতীয় নারীদের সাহসিকতার আরেকটি উদাহরণ।

নারীদের এই সাফল্যের প্রতীকী গুরুত্ব
ভারত ও বাংলাদেশের নারীদের এই কৃতিত্ব শুধু তাদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং তারা প্রমাণ করেছেন যে দৃঢ় সংকল্প এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।

বাচেন্দ্রী পাল থেকে শুরু করে নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন পর্যন্ত, এই নারীদের গল্প আমাদের শেখায় যে শৃঙ্গ জয় করা মানে শুধু পাহাড়ে চড়া নয়, বরং প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে নতুন দিগন্তের সন্ধান করা। তাদের এই অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

 

শবে মেরাজ: মক্কার চ্যালেঞ্জ ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার আলো

শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা, যা শুধুমাত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনে নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই অলৌকিক ঘটনার পটভূমি এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে আমরা এক অনবদ্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার সন্ধান পাই।

মক্কার শত্রুদের চাপ এবং মহানবী (সা.)-এর সংকটময় সময়

শবে মেরাজের প্রাক্কালে মহানবী (সা.)-এর জীবনে এক কঠিন সময় চলছিল। মক্কার কুরাইশরা তাঁর ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে, কারণ তিনি তাওহিদের (আল্লাহর একত্ববাদের) বার্তা প্রচার করছিলেন। তাঁর এই দাওয়াত মক্কার নেতাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এটি তাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এবং ক্ষমতার কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।

এই সময়ে মহানবী (সা.)-এর জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে যখন তিনি তাঁর দুই প্রধান সমর্থক—প্রিয় চাচা আবু তালিব এবং স্ত্রী খাদিজা (রা.)-কে হারান। এই “আমুল হুযন” বা শোকের বছরে তিনি ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে এক গভীর সংকটের মধ্যে ছিলেন। মক্কার কুরাইশ নেতারা মুসলিমদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তাঁকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এই চরম সময়ে মহানবী (সা.) এক মহাসান্ত্বনার সন্ধান পান, যা তাঁকে নতুন উদ্যম ও শক্তি দেয়।

শবে মেরাজের ঘটনা

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে শবে মেরাজ মহানবী (সা.)-এর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। মেরাজের রাতে মহানবী (সা.)-কে মক্কা থেকে বায়তুল মাকদিস এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশে আরশের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এই যাত্রায় তিনি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা লাভ করেন।

শবে মেরাজের আধ্যাত্মিক শিক্ষা

শবে মেরাজ কেবল একটি অলৌকিক ঘটনা নয়; এটি মুসলিমদের জন্য এক চিরন্তন আধ্যাত্মিক শিক্ষা।

১. আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রকাশ:
মেরাজের ঘটনা দেখায় যে আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন। আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে এমন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন, যা মানুষের কল্পনার বাইরে। এটি আমাদের আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখতে শেখায়।

২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান:
মেরাজের রাতে আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান প্রদান করেন। নামাজ হল মুসলিমদের জন্য আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য এবং নৈতিকতার শিক্ষা দেয়।

৩. ধৈর্যের প্রেরণা:
মেরাজের ঘটনা মহানবী (সা.)-এর জীবনে এক বিশাল সান্ত্বনা এবং ধৈর্যের শিক্ষা নিয়ে আসে। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনের কঠিন সময়েও আল্লাহর উপর নির্ভরশীল থাকা এবং ধৈর্য ধারণ করা উচিত।

৪. জান্নাত ও জাহান্নামের দর্শন:
মেরাজের সফরে মহানবী (সা.) জান্নাত এবং জাহান্নামের বিভিন্ন দৃশ্য দেখেন। এটি মানুষের সামনে তাদের কাজের পরিণতি তুলে ধরে, যা সৎ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে এবং পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য প্রণোদনা দেয়।

৫. মানবজাতির ঐক্যের বার্তা:
মেরাজের সময় মহানবী (সা.) বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যা নবীদের ঐক্যের প্রতীক। এটি আমাদের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার গুরুত্ব শেখায়।

৬. আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য:
মেরাজের শিক্ষাগুলোর অন্যতম একটি হলো আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য। এই আনুগত্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনে শৃঙ্খলা ও শুদ্ধতার পরিপূর্ণতা আনতে পারে।

৭. জীবনের কঠিন সময়ে আশার আলো:
মেরাজের ঘটনা প্রমাণ করে যে, কঠিন সময়ের মধ্যেও আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য সাহায্যের পথ তৈরি করেন। এটি আমাদের শেখায় যে, জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।

৮. আত্মশুদ্ধির প্রেরণা:
মেরাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের আত্মশুদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে পারে। এটি আমাদের ভেতরের বিশ্বাসকে মজবুত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পথ দেখায়।

উপসংহার

শবে মেরাজ একদিকে মহানবী (সা.)-এর জীবনের সংকটময় সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা ও অনুপ্রেরণা, অন্যদিকে মানবজাতির জন্য এক চিরন্তন শিক্ষা। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবনের কঠিন সময়েও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখলে তিনি পথ প্রদর্শন করেন। শবে মেরাজ আমাদের জীবনকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করার এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে ধৈর্য ও নৈতিকতার পথ অনুসরণের নির্দেশনা দেয়।

তামান্না সাদিকা
লেখিকা ও গণমাধ্যম কর্মী

 

নুডলস পাকোড়া: ঝটপট তৈরি, স্বাদে অদ্বিতীয়

 

উপকরণ:
নুডলস: ১ প্যাকেট (সেদ্ধ করা)
ডিম: ১টি
পেঁয়াজ কুচি: ২ টেবিল চামচ
১/২টা কাঁচামরিচ কুচি
কর্নফ্লাওয়ার: ২ টেবিল চামচ
লবণ: পরিমাণমতো
গোলমরিচ গুঁড়া:হাফ চা চামচ(যারা ঝাল পছন্দ করেন)
ধনেপাতা কুচি: ১ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:

একটি বড় বাটিতে সেদ্ধ করা নুডলস নিন।
ডিম, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, কর্নফ্লাওয়ার, লবণ, গোলমরিচ ও ধনেপাতা সহ সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করুন।

এখন গরম তেলে এই নুডুলসের বলগুলো দিয়ে সোনালি রঙের মচমচে হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন,ভাজা পাকোড়া গুলো কিচেন পেপারে রাখুন যাতে বাড়তি তেল ঝরে পড়ে।

বিকেলের নাস্তায় একটুখানি সময় বের করে তৈরি করুন, আর পরিবারের সবাইকে খুশি করুন

 

নাজমুন নাহার: বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পরিব্রাজক

 

নাজমুন নাহার, বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বজয়ী পরিব্রাজক হিসেবে ১৭৮টি দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে এই অনন্য অর্জন গড়েছেন। সর্বশেষ ১৭৮তম দেশ হিসেবে তিনি ভ্রমণ করেছেন পাপুয়া নিউগিনি। পাপুয়া নিউগিনির উপ-প্রধানমন্ত্রী জন রোসো তাঁর এই দৃষ্টান্তমূলক রেকর্ডকে সম্মান জানান। এর আগে তিনি ১৭৭তম দেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করেন, যেখানে তাঁর সংগ্রাম ও সাফল্য নিয়ে তাভুলি নিউজে একটি বিশেষ ফিচার প্রকাশিত হয়।

নাজমুন নাহারের এই অনন্য অভিযাত্রা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়। তাঁর প্রতিটি যাত্রায় তিনি বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে গেছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পরিচয়। দেশে ফিরে তিনি ১২ ডিসেম্বর “প্রাইড অব বাংলাদেশ” সম্মাননায় ভূষিত হন।

নাজমুন তাঁর ভ্রমণকে শুধু নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি, ঐক্য এবং পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ওশেনিয়ার ফিজি, টোঙ্গা, ভানুয়াতু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং পাপুয়া নিউগিনি ভ্রমণের সময় তিনি সামুদ্রিক দেশগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছেন এবং বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বভ্রমণে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে নাজমুনকে। বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি ছিলেন তাঁর স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়।
২০০০ সালে ভারতের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর ভ্রমণের সূচনা হয়। এরপর ২০১৮ সালে জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতে ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক অর্জন করেন। ২০২১ সালে তিনি সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে ভ্রমণ করে ১৫০টি দেশের যাত্রা সম্পন্ন করেন এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৭৫টি দেশ ভ্রমণের আরেকটি মাইলফলক সৃষ্টি করেন।

লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ কারী এই ভ্রমণ পিপাসুর অনুপ্রেরণা ছিল তাঁর দাদা আহমদ উল্লাহ, যিনি নিজেও আরব অঞ্চলে ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে সাহস, অধ্যবসায় এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাঁকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। তিনি সুইডেনে উচ্চশিক্ষা লাভ করার পাশাপাশি প্রস্তুতি নেন বিশ্বজয়ের।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, গণমাধ্যম, এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা নাজমুন নাহারকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ডসহ প্রায় ৫৫টি পুরস্কার পেয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি মোটিভেশনাল বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করে তরুণ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সেগুলো পূরণ করতে উৎসাহিত করেছেন।

নাজমুন নাহার কেবল একজন পরিব্রাজক নন; তিনি একটি অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর গল্প শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য একটি উদাহরণ। বেগম রোকেয়া বা প্রীতিলতার মতোই তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আলোর পথ দেখাবেন।একজন নাজমুন নাহার সত্যিই আমাদের লাল-সবুজের পতাকাবাহী তারকা এবং গর্ব।

#NazmunNahar #WorldTraveller #BangladeshiPride #178Countries #GlobalExplorer #FlagBearer #Inspiration #WomenEmpowerment #PeaceAdvocate #EnvironmentalAwareness
#নাজমুননাহার #বিশ্বপরিব্রাজক #বাংলাদেশেরগর্ব #১৭৮দেশ #লালসবুজেরপতাকাবাহী #নারীরপ্রেরণা #শান্তিরদূত #পরিবেশসংরক্ষণ

 

ভারতে বাংলাদেশি নারী ধর্ষনের পর হত্যা:প্রতিবাদ উঠুক

 

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করা এক বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এটি কেবল একটি অমানবিক ঘটনা নয়, বরং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি চরম অবহেলার একটি উদাহরণ।
ভারত, যে দেশ নিজেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে, সেখানে একজন বাংলাদেশি নারীকে এভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বৈধভাবে বসবাসরত যেকোনো বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট দেশের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু এই ঘটনায় তা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
নিহত নারীর পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানাই।
আমরা চাই, এ ধরনের অমানবিকতার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হোক। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা যেন কেবল কাগজে-কলমে না থেকে বাস্তবায়িত হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে আমরা কখনো নীরব থাকবো না।

 

প্রথম সৌদি নারী নভোচারীর:রায়নাহ বারনাভি

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) প্রথম সৌদি নারী নভোচারী রায়নাহ বারনাভি যাত্রা শুরু করেছেন। স্পেসএক্সের ফ্যালকন রকেটটি নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ২০২৩ সালের ২১ মে (রোববার) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৭ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয়।

রায়নাহ বারনাভির সঙ্গে ছিলেন সৌদি রয়্যাল এয়ার ফোর্সের ফাইটার পাইলট আলি আল-কার্নি, মার্কিন ব্যবসায়ী জন শফনার এবং দলের নেতা নাসার সাবেক নভোচারী পেগি হুইটসন। দলটি ২২ মে (সোমবার) মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়।
মহাকাশ স্টেশনে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কাটিয়ে, দলটি ৩০ মে (মঙ্গলবার) পৃথিবীতে ফিরে আসে। ফ্লোরিডা উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় তারা অবতরণ করেন।

এই মিশনে রায়নাহ বারনাভি স্টেম (STEM)সেল গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য স্বপ্ন পূরণের মুহূর্ত। এটি আমাদের প্রমাণ করে, মহাকাশ যাত্রা সবার জন্য সম্ভব।”

হিউস্টনভিত্তিক কোম্পানি এক্সিওম স্পেসের আয়োজনে পরিচালিত এই মিশনে অংশগ্রহণের জন্য প্রতি সিটের সম্ভাব্য ভাড়া ছিল সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার। যাত্রার সময় তাদের দৈনিক খাবার খরচ ছিল দুই হাজার ডলার এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য ব্যয় হয়েছে আরও বেশ কয়েক হাজার ডলার।

এই মিশন সৌদি আরবের মহাকাশ গবেষণায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির আবেদন নাকচ: ন্যায়বিচারের প্রশ্নে নতুন বিতর্ক

 

সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির আবেদন নাকচ করেছে। ড. আফিয়া সিদ্দিকী ২০১০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দি, যেখানে তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে এফবিআই এজেন্টকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। তবে এই অভিযোগ ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।

সম্প্রতি ড. আফিয়া সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে তার আইনজীবী ক্লাইভ স্ট্যাফোর্ড স্মিথ বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমার আবেদন জমা দেন।সাথে ৭৬,৫০০ শব্দের বিশাল দলিলে তার নির্দোষিতা তুলে ধরা হয়। তবে বাইডেন প্রশাসন এই আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মামলাটি শুরু থেকেই বিতর্কিত। অভিযোগের পক্ষে প্রমাণের অভাব, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং তার ওপর কারাগারে অমানবিক আচরণ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। তার আটক ও বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত।
তবে সম্প্রতি আবেদনের প্রত্যাখ্যানের পর ন্যায়বিচারের প্রশ্নে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

 

শিশু অধিকার আইন ২০২৫: ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে

 

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত “শিশু অধিকার আইন ২০২৫” নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে, অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানকে মায়ের স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করার সুযোগ দেওয়া ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সমাজ ও ধর্মীয় নেতারা।
আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারী যদি অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান লালন-পালনের ইচ্ছা বা সক্ষমতা না রাখেন, তবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তানকে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর করতে পারবেন। এই ধারা সমর্থকরা বলছেন, এটি নারীদের মানসিক ও আর্থিক চাপ কমানোর পাশাপাশি পরিত্যক্ত শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
তবে, এই আইনের বিরোধিতা করছেন ধর্মীয় ও সমাজবিজ্ঞানীরা। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, সন্তানকে পরিত্যাগ করা কোরআন ও হাদিসের শিক্ষার পরিপন্থী। সন্তানকে মহান আল্লাহর দান হিসেবে দেখার যে শিক্ষা, তা এই আইনের মাধ্যমে অবহেলিত হবে। হিন্দু ও খ্রিস্টান নেতারাও আইনটিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছেন।
সমাজবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এই ধারা পরিবার কাঠামোকে দুর্বল করে তুলতে পারে। এটি অপব্যবহার করে অনেকেই দায়িত্ব এড়ানোর সহজ উপায় হিসেবে নিতে পারেন। তাছাড়া, এই আইনের ফলে নৈতিক অবক্ষয় এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইনটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে এবং এর চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মতামত নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইনটি বাস্তবায়নের আগে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন প্রয়োজন। পাশাপাশি, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং নৈতিক অবক্ষয় রোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

 

ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কল এর ম্যানস সার্চ ফর মিনিং

 

“ম্যানস সার্চ ফর মিনিং” বইটি বিশিষ্ট মনস্তত্ত্ববিদ ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কলের রচিত এক অনবদ্য সৃষ্টি। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত এই বইটি তার নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা।
ফ্র্যাঙ্কল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক নির্যাতন সহ্য করেছিলেন, কিন্তু এই অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি জীবনের গভীর অর্থ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেন।

ফ্র্যাঙ্কল এই বইতে বলেছেন, “মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে তার জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সক্ষম।” এই বইয়ে তিনি তার “লোগোথেরাপি” নামক থেরাপিউটিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। ফ্র্যাঙ্কল বিশ্বাস করতেন, মানুষের আসল শক্তি তার মনোভাব এবং নিজের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে নিহিত। জীবন সংগ্রামে, এমনকি সর্বোচ্চ কষ্টের মধ্যেও একটি অর্থপূর্ণ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

বইটির প্রথম ভাগে, ফ্র্যাঙ্কল তার নিজস্ব কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে বন্দীদের শারীরিক নির্যাতন, ক্ষুধা, দুর্ভোগ এবং মৃত্যুর মুখোমুখি করে তোলা হয়েছিল। তবে তিনি এটিও বলেছেন, যে ব্যক্তি মানসিকভাবে তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য খুঁজে পায়, সে চরম শাস্তির মধ্যেও নিজেকে সংরক্ষণ করতে পারে। এই অভিজ্ঞতাগুলি তার থেরাপির ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।

বইটির দ্বিতীয় ভাগে, ফ্র্যাঙ্কল তার “লোগোথেরাপি” পদ্ধতির মাধ্যমে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার উপায় ব্যাখ্যা করেন। লোগোথেরাপি মানে হলো, জীবনের উদ্দেশ্য এবং অর্থ খোঁজা। ফ্র্যাঙ্কল বলেন, জীবনের তিনটি প্রধান পথ হতে পারে:
১. সৃজনশীল কাজ বা অর্জন – যা মানুষের কাজের মাধ্যমে তার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।
২. ভালোবাসা এবং সম্পর্ক – অন্যদের প্রতি যত্ন এবং ভালোবাসা অনুভব করাও জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে।
৩. দুর্দশা এবং কষ্ট সহ্য করা– যখন কোনো পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেই পরিস্থিতিতেও মানসিক শক্তি খুঁজে বের করার ক্ষমতা।

“ম্যানস সার্চ ফর মিনিং” বইটি শুধু মনস্তত্ত্ববিদ বা চিকিৎসকদের জন্য নয়, বরং সকল সাধারণ মানুষের জন্যই একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গ্রন্থ। ফ্র্যাঙ্কল জানান, আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো কেবল শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না, বরং আমাদের মানসিক দৃঢ়তা, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা এর মূল ভিত্তি। এই বইটি পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের জীবনে কঠিন মুহূর্তে সত্যিকার অর্থ খুঁজে পেতে এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য স্পষ্ট করতে।

 

সমাজে নারীর অবস্থান:আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের ধারা

 

নারী আন্দোলন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এটি কেবল নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার আন্দোলন।

নারী আন্দোলনের শিকড় বহু প্রাচীন, তবে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি সুসংগঠিত রূপ পায়। বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং সুফিয়া কামাল নারীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য কাজ করেন।
ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী আন্দোলনের মাধ্যমেই নারীর স্বাধিকার, সমান অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়।

সেই ধারাবাহিকতায় আজ নারীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে। NASA International Space Apps Challenge 2023-এ বাংলাদেশি নারীদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নারীসাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। এছাড়া, উদ্যোক্তা নারীরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। রাজনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, এবং সংস্কৃতিতে নারীর দৃঢ় পদচারণা আমাদের সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়।

নারীর সাফল্যের গল্প যতই অনুপ্রেরণাদায়ক হোক, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এখনও নারীর অগ্রগতির পথে বড় বাধা। সামাজিক কুসংস্কার, লিঙ্গ বৈষম্য, এবং সহিংসতা নারীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘SHE’ কর্মশালার মতো প্রকল্পগুলো নারীদের ক্ষমতায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবুও, নারীর প্রকৃত সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

নারী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে চাই সমন্বিত প্রচেষ্টা। নারীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য। আইনি সহায়তা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি নারীর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাছাড়া, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে পরিবার,ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নারী আন্দোলন শুধু নারীদের নয়, সমগ্র সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। অতীতের সংগ্রাম এবং বর্তমানের সাফল্য আমাদের আশাবাদী করে যে, নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ আরও সমৃদ্ধ হবে।

 

পারিবারিক ভাঙনে বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রম

 

সালেহ(কাল্পনিক চরিত্র) এক সময় ছিলেন একটি সুখী পরিবারের প্রধান।
তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ছেলেরা চাকরি সুবাদে শহরে চলে যায়, মেয়েও তার পরিবার নিয়ে পাড়ি জমায় দূর শহরে।বছরে একবারো আসার সময় করতে পারেনা তার আদরের সন্তানেরা। স্ত্রীর মৃত্যু পর একদমই একা হয়ে পড়েন সালেহ, একাকীত্বের চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি শেষ আশ্রয় হিসেবে বেচে নেন বৃদ্ধাশ্রমকে

এটা আজকের বাস্তবতা। পারিবারিক ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাচ্ছে।
সাধারণত; গ্রামীণ সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ় ছিল, কিন্তু আধুনিকতার প্রভাবে ছোট পরিবারের কাঠামো, উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের শহরে চলে যাওয়া, এবং পরিবারের সদস্যদের কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশকারী বৃদ্ধদের সংখ্যা দিনদিন বাড়িয়েছে।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিকতা, বিশ্বায়ন এবং আর্থিক চাপের কারণে অনেক পরিবারে মুলতঃ একটাই সঙ্কট- পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। শহরাঞ্চলে, অনেক তরুণ-তরুণী বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে তাঁদের কর্মজীবনে বেশি মনোযোগী।এর ফলে বৃদ্ধরা একাকী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, বয়সজনিত অসুস্থতার জন্য তারা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননা। ফলে বৃদ্ধাশ্রমকে শেষ অবলম্বন করে নিতে হচ্ছে অনেককে।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৃদ্ধাশ্রম

বাংলাদেশের সমাজে পরিবার এবং সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মূল্যবোধে হ্রাস দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি শহরেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। শহরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অতিরিক্ত আবাসন খরচ এবং চাকরি নিয়ন্ত্রণের কারণে শহরে বৃদ্ধদের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। শহরগুলির মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কও কমে গেছে, এবং এখানকার পরিবারগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। সরকার এবং সমাজের উচিত, পরিবারগুলির মাঝে ভালোবাসা এবং যত্নের বন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মার প্রতি দায়িত্বশীল হয়।
পাশাপাশি, বৃদ্ধাশ্রমের মান উন্নয়ন এবং সেখানে বসবাসরতদের জন্য মানসিক সহায়তা দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র বৃদ্ধাশ্রমই নয়, বরং পরিবার ও সমাজকে আরও সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে, যাতে বৃদ্ধরা সুখী এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন।

 

আসন্ন বিশ্ব নারী দিবসে স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা’২৫

 

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা-২০২৫’ এর দ্বিতীয় আসর। এ আয়োজনে দেশ ও প্রবাসের বিভিন্ন অঙ্গনের সফল ও প্রতিষ্ঠিত ২০ জন নারীকে সম্মানিত করা হবে।

বিজনেস এশিয়া ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে থাকছে বিশেষ চমক। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত দুটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

এছাড়াও, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন দেশ-বিদেশের প্রায় সহস্রাধিক অতিথি। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানটি হবে আরও প্রাণবন্ত।

এ আয়োজনের আরেকটি পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৬ মার্চ ২০২৫, ঢাকার শেরাটন হোটেলে। এখানেও ২০ জন সফল নারীকে সম্মানিত করা হবে।

উল্লেখ্য, ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা’ প্রথমবার আয়োজিত হয় ২০২৪ সালে, যেখানে ৩০ জন উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল।

 

২০বছরের বন্দীদশা থেকে মুক্তির পথে ড. আফিয়া সিদ্দিকী

 

মার্কিন কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তার মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তদবিরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল জাইদি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. জাইদি জানান, ড. আফিয়া গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন। তবে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার আগে তার সাজা কমিয়ে দিতে পারেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ড. জাইদি আরও জানান, তিন সদস্যের একটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এই বিষয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল। যদিও তাদের মূল লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এর পরিবর্তে তারা মার্কিন সিনেটর এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মানবিক কারণে ড. আফিয়ার মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বাইডেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। যদি বাইডেন ব্যবস্থা না নেন, তাহলে পাকিস্তান সরকার নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করবেন।
২০০৩ সালে করাচি থেকে তিন সন্তানসহ আটক হওয়ার পর ড. আফিয়ার জীবন এক অবিশ্বাস্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এটি এমন একটি অপরাধ যার জন্য মার্কিন আইনে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর।
ড. জাইদি বলেন, ড. আফিয়া ২০ বছর ধরে তার সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।
তার এই মুক্তি ২৫ কোটি পাকিস্তানি এবং বিশ্বের ২ বিলিয়ন মুসলমানের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উন্নত করবে।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর এই মুক্তির বিষয়ে পাকিস্তানসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ ও প্রতীক্ষা তৈরি হয়েছে।

 

নিকাব পরে টকশো করতে নিষেধাজ্ঞা;বিতর্কে চ্যানেল আই

সম্প্রতি চ্যানেল আই-এ একটি টকশোতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক নাফিসা ইসলাম সাকাফি। তবে নিকাব পরে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানালে প্রথমে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাকে টকশোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়নি। পরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে চ্যানেল আই নিকাব পরে অংশগ্রহণের অনুমতি দিলেও, নাফিসা অফিশিয়ালি ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান।

নাফিসা জানান, এটি তার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং দেশে ইসলামবিদ্বেষের একটি উদাহরণ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতীতে রমজানে টিএসসিতে নামাজের ব্যবস্থা করায় ছাত্রলীগের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। তখন নিকাব না করার কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন, আর এখন নিকাব পরার কারণে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নাফিসা ইসলাম সাকাফিসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ চিন্তকরা ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে ”ইসলামোফোবিয়া: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শিরোনামে আলোচনার জন্য ২০জানুয়ারি রাত ৯টায় লাইভে আসবেন।

 

ছবি সূত্রঃ রিপাবলিক টেলিভিশন

 

ড. রাইসা খান তারেক: বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও অনুপ্রেরণার নাম

 

জন্ম বাংলাদেশে হলেও ড. রাইসা খান তারেকের শৈশব কেটেছে সুইডেনে। ছোটবেলা থেকেই রসায়নের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা থাকলেও তার নানির ক্যান্সারে মৃত্যুর ঘটনাই তাকে মেডিক্যাল কেমিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রেরণা দেয়।

২০১৪ সালে রাইসা নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রিতে অনার্স সম্পন্ন করেন এবং ২০১৮ সালে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিক্যাল কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ভিত্তিক কোম্পানি Evonetix-এ সিন্থেটিক কেমিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।

রাইসা এবং তার দল একটি “ডিএনএ প্রিন্টার” তৈরি নিয়ে কাজ করছেন, যা দ্রুত ও নির্ভুলতার সাথে ডিএনএ সিকোয়েন্স তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ শিল্প এবং ডেটা স্টোরেজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এই উদ্ভাবন গবেষণার সময় ও খরচ কমিয়ে বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং গবেষণাগারের কাজকে সহজ করবে।

পেশাগত সাফল্যের পাশাপাশি ড. রাইসা একজন জনপ্রিয় ভ্লগার। তার ইউটিউব ও ফেসবুক চ্যানেল Dr Raysa’s-এ তিনি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট আপলোড করেন। এতে তাকে সহায়তা করেন তার স্বামী নাজমুস সাকিব তারেক, যিনি আইন ও স্টার্টআপ বিষয়ে কাজ করছেন।

ড. রাইসা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন আউটরিচ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে ভূমিকা রাখছেন।

ড. রাইসার মতে, নারীদের বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা দূর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কাজ ও জীবনসংগ্রাম বাংলাদেশের STEM ক্ষেত্রে নারীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

 

আপনার সন্তানকে নিয়মিত খেলতে দিন

 

খেলা একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপায়। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে পড়াশোনা, কোচিং, এবং প্রযুক্তি আসক্তির কারণে শিশুরা প্রকৃত খেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে খেলার গুরুত্ব অনুধাবন করে শিশুদের নিয়মিত খেলতে দেওয়া প্রত্যেক অভিভাবকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

খেলা শিশুর শারীরিক বিকাশে সহায়ক। নিয়মিত খেলার মাধ্যমে শরীর মজবুত হয়, মাংসপেশি শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, খেলাধুলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বদানের গুণাবলী এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে।

খেলা শিশুদের সামাজিক সম্পর্ক গড়তেও সাহায্য করে। দলগত খেলাগুলোর মাধ্যমে শিশুরা পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং শ্রদ্ধাবোধ শেখে। এ ছাড়া, খেলার সময় শিশুরা নিয়ম মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে।

অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত অল্প সময় খেলার জন্য উৎসাহ দেওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলার সুযোগ দিলে তারা আরও বেশি উপকৃত হবে।

আপনার সন্তানকে নিয়মিত খেলতে দিন

 

খেলা একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপায়। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে পড়াশোনা, কোচিং, এবং প্রযুক্তি আসক্তির কারণে শিশুরা প্রকৃত খেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে খেলার গুরুত্ব অনুধাবন করে শিশুদের নিয়মিত খেলতে দেওয়া প্রত্যেক অভিভাবকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

খেলা শিশুর শারীরিক বিকাশে সহায়ক। নিয়মিত খেলার মাধ্যমে শরীর মজবুত হয়, মাংসপেশি শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, খেলাধুলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বদানের গুণাবলী এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে।

খেলা শিশুদের সামাজিক সম্পর্ক গড়তেও সাহায্য করে। দলগত খেলাগুলোর মাধ্যমে শিশুরা পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং শ্রদ্ধাবোধ শেখে। এ ছাড়া, খেলার সময় শিশুরা নিয়ম মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে।

অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত অল্প সময় খেলার জন্য উৎসাহ দেওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলার সুযোগ দিলে তারা আরও বেশি উপকৃত হবে।

 

স্তন ক্যানসার সারাতে ভাইরোথেরাপি সফল ড. বিটা হালাসি

ক্রোয়েশিয়ার খ্যাতনামা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. বিটা হালাসি দীর্ঘদিন ধরে স্তন ক্যানসারে ভুগছিলেন। বাম স্তনে টিউমার শনাক্ত হওয়ার পর তিনবার অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপি করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বারবার টিউমার ফিরে আসায় চিকিৎসার প্রচলিত পদ্ধতিতে আশাহত হয়ে তিনি নতুন পথ খোঁজেন।

শেষমেশ নিজের ওপরই পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেন অনলোলাইটিক ভাইরোথেরাপি (ওভিটি)। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসের ডিএনএ পরিবর্তন করে তা রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয়। এটি ক্যানসারের নির্দিষ্ট কোষগুলোকে টার্গেট করে ধ্বংস করে, অন্য কোনো সুস্থ কোষের ক্ষতি না করে। ড. বিটা নিজেই ভাইরাসটি জৈবিকভাবে পরিবর্তন করে নিজের দেহে প্রয়োগ করেন। অবিশ্বাস্যভাবে তিনি পুরোপুরি সেরে ওঠেন।

তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রচলিত চিকিৎসার অংশ নয়। ড. বিটার এই পদক্ষেপে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলেও বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম মেনে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন না করে নিজেই নিজের ওপর এই থেরাপি প্রয়োগ করায় তাঁর গবেষণাপত্র বহু আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রত্যাখ্যাত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. বিটার অভিজ্ঞতা অনলোলাইটিক ভাইরোথেরাপি নিয়ে আরও গবেষণার পথ সুগম করতে পারে। তবে নিয়মিত ব্যবহারের আগে এটি যথাযথ প্রমাণ এবং অনুমোদনের প্রয়োজন।

ড. বিটার এই সাহসী পদক্ষেপ ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করলেও তা নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত।

 

ধনেপাতার সস,বছরজুড়ে সংরক্ষণের জন্য

উপকরণ:
ধনেপাতা: ২৫০ গ্রাম
জলপাই: ২টি
আদা-রসুন বাটা: ২ টেবিল চামচ
কাঁচা মরিচ: ৩-৪টি(যারা ঝাল পছন্দ করেননা বাদ দিতে পারেন)
সরিষার তেল: ৪ টেবিল চামচ
লেবু: ১টি (রস)
ভিনেগার: ৩ টেবিল চামচ
লবণ: স্বাদ অনুযায়ী

প্রস্তুত প্রণালী:
ধনেপাতা, জলপাই, আদা-রসুন বাটা, লেবুর রস, কাঁচা মরিচ, লবণ এবং সরিষার তেল একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করুন।

পানি একেবারেই ব্যবহার করা যাবেনা,ব্লেন্ড করা সস একটি পরিষ্কার কাচের জারে রেখে উপরে ভিনেগার দিয়ে মুখ ভালমতো বন্ধ করে দিন।

দীর্ঘদিন সংরক্ষনের জন্য জারটি টানা ৭দিন রোদে দিন।

এই সস ভাত বা যেকোন স্ন্যাকস এর সাথে খেতে দারুণ।ট্রাই করবেন নাকি!?

 

নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ‘SHE’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

 

৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘Students Heed to Entrepreneurship (SHE)’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি।

কর্মশালায় ২০০ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মেন্টর এবং অতিথি অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় তিনজন সফল নারী উদ্যোক্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাঁরা হলেন:
জনাবা নিলুফার ইয়াসমিন নীলা, স্বত্বাধিকারী, এস এন ফ্যাশন।
জনাবা নিশাত মাসফিকা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক- রেইনড্রপস টেক এবং ফাউন্ডার- দেশজ ক্রাফটস।
জনাবা হানিয়ম মারিয়া চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও-তাহুর।

তাঁরা তাঁদের ব্যবসায়িক যাত্রা, চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্যের গল্প তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন।
এছাড়া NASA International Space Apps Challenge 2023-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিম তাঁদের উদ্যোগ এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথপরিক্রমা নিয়ে আলোচনা করেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. খোরশেদ আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক জনাবা ফারজানা খান।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন -রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের উপাধ্যক্ষ,শিক্ষক সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তা প্রতিনিধিগণ।

উল্লেখ্য, এসএমই ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে দেশব্যাপী এ ধরনের কর্মশালা আয়োজন করে আসছে। এই ধরনের কর্মশালা শিক্ষার্থীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

দেশে প্রথমবারের মত নারীর দেহে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত

 

রাজধানীর এক ৩০ বছর বয়সী নারীর শরীরে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ওই নারী নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং বর্তমানে আইইডিসিআর এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচএমপিভি সাধারণত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সময়মতো চিকিৎসা পেলে এ ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.):রাসুল (সা.) এর প্রতিরক্ষায় সাহসী নারী

 

হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.), যিনি উম্মে আম্মারা নামে পরিচিত,ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নারী সাহাবী।
তিনি মদিনার বনু খাযরাজ গোত্রে জন্মগ্রহ করেন।
এমন এক সাহসী নারী, যিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিরক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে দ্বিধা করেননি।

উহুদ যুদ্ধে নুসাইবা (রা.) আহতদের পানি সরবরাহ এবং তাদের সেবা করার দায়িত্ব পালন করছিলেন। যখন তিনি দেখতে পেলেন যুদ্ধের ময়দানে বিশৃঙ্খলা তৈরী হওয়াতে শত্রুরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছে, তখন তিনি আর পিছিয়ে থাকেননি।
সঙ্গে থাকা তলোয়ার ও ঢাল হাতে তুলে নেন এবং শত্রুদের মোকাবিলা করতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে দাঁড়ান। নিজেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করর একের পর এক শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সুরক্ষিত রাখেন। তাঁর এই বীরত্বের ঘটনা স্মরণ করে রাসুল (সা.) বলেন
“আজ আমি যেদিকেই তাকাই, দেখি নুসাইবা আমার প্রতিরক্ষায় লড়ছেন।”

যুদ্ধের পর নুসাইবা (রা.)-এর শরীরে অন্তত ১২টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এক আঘাত এত গুরুতর ছিল যে সেরে উঠতে অনেক দিন সময় লাগে। তিনি নিজের জীবনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাসুল (সা.)-কে শত্রুর তীর ও অস্ত্র থেকে রক্ষা করেন।

হযরত নুসাইবা (রা.) শুধু যোদ্ধা ছিলেন না; তিনি ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও ছিলেন সক্রিয় ।
উহুদ যুদ্ধ ছাড়াও তিনি হুনাইন যুদ্ধ এবং হুদাইবিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত ছিলেন।
তাঁর স্বামী এবং সন্তানরাও ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত।

হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন, ঈমান ও সাহস যদি মজবুত হয়, তবে যে কেউ ইসলামের জন্য এক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।

 

আফিয়া সিদ্দিকী :ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় এক নিরপরাধ নারী

 

এটি শুধুমাত্র একটি নীরব কষ্টের গল্প নয়। এটি মানবাধিকারের এক গ্লানিময় অধ্যায়, যেখানে একজন নিরপরাধ মুসলিম নারীকে শুধুমাত্র তার বিশ্বাস, পরিচয় এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অত্যাচারিত ও বন্দী করা হয়েছে। তার নাম—ড. আফিয়া সিদ্দিকী। একজন মেধাবী নিউরো-সায়েন্টিস্ট, একজন মা, এবং একজন মুসলিম নাগরিক—যিনি আজ বছরের পর বছর ধরে একটি শত্রু রাষ্ট্রের কারাগারে নিঃসঙ্গ বন্ধী অবস্থায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো এতটাই বিতর্কিত এবং ভিত্তিহীন যে, এটি কোনভাবেই ন্যায়বিচারের প্রতীক হতে পারে না।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর কাহিনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারের একটি জলন্ত উদাহরণ। ২০০৩ সালে, পাকিস্তানের করাচি থেকে তাকে তার তিন সন্তানসহ অপহরণ করা হয়। এরপর, ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে গ্রেপ্তার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দী হন। তাকে নিয়ে যে মামলা চলছে, তা বিশ্বব্যাপী মানুষের মনে এক গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এবং সবশেষে, ২০১০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে, কিন্তু সেই বিচারের পেছনে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই।

ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে যে এক ভয়াবহ চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে, তা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের সহযোগী শক্তিরা, তাকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ২০০৩ সালে যখন আফিয়া সিদ্দিকী ও তার তিন সন্তানকে অপহরণ করা হয়, তখন তারা কেবল একটি সাধারণ পরিবার , কিন্তু তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে “আল-কায়দার সহযোগী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর, আফিয়া সিদ্দিকীকে যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা সত্যি হৃদয়বিদারক। ২০০৮ সালে তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগারে বন্দী রাখে। সেখানে তাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হয়, অমানবিকভাবে মারধর করা হয় এবং তার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাকে কয়েক মাস ধরে অন্ধকার সেলে রাখা হয়েছিল, খাবার ও পানি দেওয়া হত না, এবং পরপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো।

বিশ্ব মানবাধিকারের মূল্যবোধ যখন নিঃশেষিত, তখন একটি আদর্শ রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ন্যায়বিচার। এই ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের আওয়াজ উঠাতে হবে। আমরা যদি আমাদের কর্তব্য হিসেবে মানবাধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আমাদের মৌলিক বিশ্বাসগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আফিয়া সিদ্দিকীকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়েছে , শুধু ব্যক্তি হিসেবে নয়,সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা এক গুরুতর পরীক্ষা। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তার মুক্তির জন্য আওয়াজ তোলা এখন সময়ের দাবি।

এটি শুধুমাত্র একজন নারীর মুক্তি নয়, এটি আমাদের সম্মানের, আমাদের বিশ্বাসের, এবং আমাদের নৈতিকতার লড়াই।
আমরা কি এই অবিচারের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকতে পারি? আফিয়া সিদ্দিকী এবং তার মতো অন্যান্য নিরপরাধ বন্দীদের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমরা কিভাবে একটি ন্যায়বিচারহীন পৃথিবীতে বাস করব? এটাই আমাদের দায়, আমাদের কর্তব্য।
আমরা যদি এই মুহূর্তে এক হয়ে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আফিয়া সিদ্দিকী এমন একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

 

আল কোরআনে নারীর অধিকার

 

ইসলাম নারীকে মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছে, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নারীর মর্যাদা ও অধিকারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইসলামের আগমনের পূর্বে সমাজে নারী অবহেলিত ও নিগৃহীত ছিল।
পরবর্তীতে কোরআনের নির্দেশনা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নারীদের জীবনে আশীর্বাদ রূপে আসে।

কোরআনে নারীর মর্যাদা
পবিত্র কোরআনে নারী -পুরুষকে সম মর্যাদা দান করে-
“আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি, একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে। আর তাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তারা পরস্পর পরিচিত হতে পারে। তবে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।”
— (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে পুরুষের সমান। ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করেনি; বরং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পৃথকভাবে নির্ধারণ করেছে।

নারীর অধিকার
১. জীবনের অধিকার:

ইসলাম পূর্বে নারী শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। আল্লাহ এ বর্বর প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন:
“যখন জীবিত কবর দেওয়া কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘তোমাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল?’”
— (সূরা আত-তাকওয়ির: ৮-৯)

২. শিক্ষার অধিকার:

ইসলামে জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“তোমরা কি জানো না? যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?”
— (সূরা আয-যুমার: ৯)
এ আয়াত নারীসহ সকল মানুষের জন্য শিক্ষার গুরুত্বকে নির্দেশ করে।

৩. অর্থনৈতিক অধিকার:

ইসলাম নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে। উত্তরাধিকার ও ব্যবসায় তাদের নিজস্ব সম্পত্তি রাখার স্বাধীনতা রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
“পুরুষের জন্য রয়েছে তার উপার্জনের ভাগ এবং নারীর জন্য রয়েছে তার উপার্জনের ভাগ।”
— (সূরা আন-নিসা: ৩২)

৪. বিবাহের ক্ষেত্রে অধিকার:

ইসলাম বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর সম্মতিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“সাবালিকা মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সা.), তার অনুমতির পদ্ধতি কী? তিনি বলেন: তার চুপ থাকা”।
— (সহিহ বুখারি, ৪৮৪৩)

৫. মাতৃত্বের মর্যাদা:

মা হিসেবে নারীর মর্যাদা ইসলামে সর্বোচ্চ। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্টের মধ্যে গর্ভে ধারণ করেছে।”
— (সূরা লুকমান: ১৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
“তোমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করো, তারপর তোমার পিতার প্রতি।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১)

পৃথিবীর যাবতীয় মতবাদ একত্রিত হয়েও নারীর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে যেখানে ব্যর্থ,
পবিত্র কোরআন সেখানেই বিজয়ী। ইসলাম নারীদের আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি ও জীবনাযাপনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের জীবনে নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে।

 

শীতের মুখরোচক স্ন্যাক্স ফুলকপি পাকোড়া

উপকরণ:
ফুলকপি – ১টা মাঝারি (ছোট টুকরো করে কেটে ধুয়ে নিন)

বেসন – ১ কাপ
চালের গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ (খাস্তা করার জন্য)
লবণ – স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
ধনিয়া পাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালি:
ফুলকপির ছোট ছোট টুকরোগুলো সামান্য লবণ দেওয়া ফুটন্ত পানিতে ২-৩ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। তারপর পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করে নিন।

একটি বাটিতে বেসন, চালের গুঁড়া, লবণ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এতে অল্প অল্প করে পানি যোগ করে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট যেন বেশি পাতলা না হয়।
ফুলকপি ডুবিয়ে নিন
সেদ্ধ করা ফুলকপির টুকরোগুলো মিশ্রণে ডুবিয়ে ভালো করে কোট করে নিন।

এবার কড়াইতে তেল গরম করে মাঝারি আঁচে কোট করা ফুলকপির টুকরোগুলো সোনালি বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

অতিরিক্ত তেল শুষে নেওয়ার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন।

এবার উপভোগ করুন গরম গরম ফুলকপি পাকোড়া টমেটো সস বা ধনিয়া চাটনির সাথে।

 

সায়েন্স ফিকশন: তৃতীয় মাধ্যাকর্ষণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বসে ছিল তরুন বিজ্ঞানী ও গবেষক ড.সিনান। মাথার মধ্যে এক দারুণ চিন্তা ঘুরছিল। পৃথিবী, গ্রহ, তারা—এসব সবসময় তাকে আকর্ষণ করেছে। কিন্তু তার গবেষণার বিষয় ছিল নতুন কিছু। সে এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছিল, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তি কমানো যাবে, ফলে মহাকাশযান বা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য কম শক্তির প্রয়োজন হবে।

যদিও এটা ছিল এক অসম্ভব স্বপ্ন তবুও ড. সিনান এবং তার দল কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন।
২০৩৫ সাল, যখন পৃথিবী ক্রমশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছিল, তখন এই প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মহাকাশ গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি না হলে মানুষ ভবিষ্যতে মহাকাশের রিসোর্স কাজে লাগাতে পারবে না।

ড.সিনানের চিন্তা ছিল পৃথিবীকে টেকসই, শক্তিশালী ও শক্তির দিক থেকে আরো স্বাধীন করা।
একদিন তার পরীক্ষামূলক যন্ত্রটির কাজ শেষ হয়ে যায়। এটি “নিউট্রো-এন” নামক একটি ডিভাইস, যা পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তিকে স্থানিকভাবে সামান্য কমিয়ে দিতে সক্ষম। এটি পুরো পৃথিবীতে প্রয়োগের জন্য তৈরি হয়নি, কিন্তু একটি ছোট অঞ্চলে পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারবে।

তারা প্রথমে যন্ত্রটি শহরের ছোট্ট অঞ্চলে দিয়ে পরীক্ষা শুরু করে। যন্ত্রটি চালু করতেই ড.সিনান অনুভব করেন, পৃথিবীর আকর্ষণ কমে যাচ্ছে, আর কিছু সময় পর পুরো অঞ্চলটি হালকা হয়ে উঠছে। নীচের থেকে উপরের দিকে পাখির মতো ছোটো জিনিসগুলো ভেসে উঠতে শুরু করে, এটা ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় কিছুদিন পর। যখন যন্ত্রটি কাজ করতে থাকে, তখন কিছু অদ্ভুত ফলাফল দেখা দেয়। অনেক কিছু হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে। যন্ত্রের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কিছু অঞ্চলে গাছপালা ও পশু-পাখির চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল,পৃথিবীর মৌলিক শর্তগুলো বদলে যাচ্ছিল।

এরপরে পৃথিবী ফের যখন তার সাধারণ নিয়মে ফিরছিল, তখন ড. সিনান বুঝতে পারছিল যে তিনি যা চেয়েছিলেন, তা সম্ভব হলেও
মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়মে অনেক জটিলতা নিয়ে আসবে।

এবার তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা—যন্ত্রটি পৃথিবীর অন্যান্য অংশে পরীক্ষা করবে কি না, অথবা তাকে ফের নতুন কোনো পথ খুঁজে বের করতে হবে।তার এই পরীক্ষামূলক গবেষণার কারনে পৃথিবী ছিল তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ন্ত্রণের এক বিপজ্জনক যাত্রায়।

শেষমেশ; বিজ্ঞানী সিনান এবং তার দল সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা আরো উন্নত গবেষণা করবে এবং যন্ত্রটির ত্রুটি ঠিক করতে চেষ্টা করবে।
কিন্তু একথা পরিষ্কার, পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক বড়।

– আরওয়া আনাম

 

এডব্লিউই প্রোগ্রামে পুরষ্কার পেলো ৬ নারী উদ্যোক্তা

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একাডেমি ফর উইমেন অন্ট্রোপ্রেনরস (এডব্লিউই) বিজনেস পিচ প্রতিযোগিতায় ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে তাদের সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিজয়ীরা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন।

গত সপ্তাহে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার এলিনা শেনসি। তিনি বলেন, “নারীরা যখন নেতৃত্বে আসে, তখন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। এডব্লিউই প্রোগ্রাম নারীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বিকশিত করতে সহায়ক।”

এডব্লিউই প্রোগ্রামটি ২০২২ সালে বাংলাদেশে শুরু হয়। এটি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। এ বছর প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ২৫ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্য থেকে সেরা ছয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বিজয়ীরা সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, খাগড়াছড়ি, যশোর, এবং ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের ব্যবসাগুলো পরিবেশবান্ধব পণ্য, নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা প্রযুক্তি এবং কৃষি উদ্ভাবনের মতো খাতে অবদান রাখছে।

এডব্লিউই প্রোগ্রাম নারীদের জন্য ৩ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং মেন্টরশিপ সেশন পরিচালনা করে। এতে অংশগ্রহণকারীরা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি মার্কেটিং ও অর্থায়নের কৌশল শেখেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা জানান, এই উদ্যোগ নারীদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখছে। বিজয়ীরা তাদের পুরস্কারের অর্থ ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যবহার করবেন।

 

হযরত জুবাইদা (রহ.) :ইসলামী সভ্যতার মহান নারী উদ্যোক্তা

 

ইসলামের ইতিহাসে রাণী জুবাইদা (রহ.) একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী এবং নবী কারিম (সা.)-এর বংশধর। তার প্রকৃত নাম আমাতুল আজিজ হলেও দাদা খলিফা আবু জাফর মানসুরের দেওয়া আদুরে ডাকনাম ‘জুবাইদা’ নামেই তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

জুবাইদার জন্ম ১৪৯ হিজরিতে ইরাকের মসুলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রাসাদে শিক্ষা লাভ করেন এবং কোরআন, হাদিস, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, ও জ্যামিতিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি বিদ্বান, পরোপকারী এবং বুদ্ধিমতী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার দানশীলতা ও কর্মধারার জন্য তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।

রাণী জুবাইদার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো “নহরে জুবাইদা”। ১৯৩ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর তিনি হজপালনে যান। সেখানে হাজীদের পানির কষ্ট দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং পানির সংকট সমাধানে একটি খাল খননের উদ্যোগ নেন। ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান এবং হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খালটি খনন করা হয়। এতে প্রায় ১৭ লাখ দিনার খরচ হয়, যা সে সময়ের এক বিশাল অঙ্ক।

খালটি আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পাথর কেটে এবং ভূগর্ভস্থ টানেল নির্মাণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। খালের পাশেই পানির স্টেশন স্থাপন করা হয়, যাতে স্থানীয় জনগণ সহজে পানি সংগ্রহ করতে পারে। এই নহর শুধু হাজীদের পানির সমস্যা দূর করেনি; বরং মক্কা ও আশপাশের কৃষকদেরও পানির অভাব মেটায়।

রাণী জুবাইদার দানশীলতার উদাহরণ এখানেই শেষ নয়। তিনি কুফা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত ১৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেন। এছাড়াও মক্কায় আরও ৫টি জলাধার ও অনেক অজুখানা নির্মাণ করেন। তার প্রাসাদে ১০০ নারী হাফেজা কোরআন তেলাওয়াত করতেন, যা ২৪ ঘণ্টা চলত।

রাণী জুবাইদার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মানবতার জন্য উৎসর্গীকৃত। ২১৬ হিজরির ২৬ জমাদিউল উলা মোতাবেক ১০ জুলাই ৮৩১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই মহীয়সী নারীর কর্ম ও অবদান আজও বিশ্ব মুসলিমকে অনুপ্রাণিত করে।

 

পাওলো কোয়েলহোর ‘দি আলকেমিস্ট’: আত্ম-উপলব্ধি ও স্বপ্নপূরণের গল্প

দি আলকেমিস্ট (The Alchemist) হলো পাওলো কোয়েলহোর একটি অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস, যা স্বপ্নপূরণ এবং আত্ম-উপলব্ধির গুরুত্ব নিয়ে লেখা। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র সান্তিয়াগো নামের এক আন্দালুসীয় রাখাল, যে তার জীবনকে বদলে দিতে একটি স্বপ্নকে অনুসরণ করে।

গল্পটি শুরু হয় সান্তিয়াগোর এক রহস্যময় স্বপ্ন দিয়ে, যেখানে সে দেখে মিশরের পিরামিডের কাছে একটি গুপ্তধন লুকানো রয়েছে। এই স্বপ্ন তাকে ভাবনায় ফেলে দেয়। এক জিপসি ভবিষ্যদ্বক্তা এবং এক রহস্যময় বৃদ্ধ (মেলসিজেদেক, যিনি নিজেকে সালেমের রাজা হিসেবে পরিচয় দেন) তাকে তার স্বপ্ন অনুসরণ করার পরামর্শ দেয়। তারা তাকে শেখায় যে প্রত্যেকের জীবনে একটি “ব্যক্তিগত কিংবদন্তি” (Personal Legend) রয়েছে, যা পূরণ করাই জীবনের মূল লক্ষ্য।

সান্তিয়াগো নিজের গৃহ ত্যাগ করে এবং গুপ্তধনের সন্ধানে আফ্রিকার মরক্কো পৌঁছে। সেখানে তার প্রথম ধাক্কা আসে, যখন সে প্রতারিত হয় এবং তার সব অর্থ হারায়। তবে এই প্রতিকূলতা তাকে ভেঙে ফেলে না। সে একটি স্ফটিক দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। দোকানের মালিকের জীবনদর্শন থেকে সান্তিয়াগো শিখে যে স্বপ্ন পূরণে ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন।

মরুভূমি অতিক্রম করতে গিয়ে সান্তিয়াগোর দেখা হয় একজন ইংরেজের সঙ্গে, যে বেড়িয়েছে আলকেমির (তাত্ত্বিক সোনা তৈরির বিজ্ঞান) সন্ধানে। তারা মরুভূমি পেরিয়ে এক মরূদ্যানে পৌঁছায়। এখানে সান্তিয়াগোর পরিচয় হয় ফাতিমার সঙ্গে । ফাতিমা তাকে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহ দেয়, যদিও সান্তিয়াগো তাকে ছেড়ে যেতে দ্বিধান্বিত থাকে।

মরূদ্যানেই সান্তিয়াগোর সঙ্গে পরিচয় হয় এক প্রকৃত আলকেমিস্টের। আলকেমিস্ট তাকে শেখায় জীবনের গভীর অর্থ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পদ্ধতি। সে সান্তিয়াগোকে বোঝায় যে মানুষ যতক্ষণ স্বপ্ন অনুসরণ করে, ততক্ষণ প্রকৃতি তার পক্ষে কাজ করে।

আলকেমিস্টের সহায়তায় সান্তিয়াগো শেষ পর্যন্ত মিশরের পিরামিডে পৌঁছায়। তবে সেখানে সে বুঝতে পারে যে আসল গুপ্তধন পিরামিডে নয়, বরং তার যাত্রার শুরুতে ছিল। এই উপলব্ধি তাকে শেখায় যে যাত্রার অভিজ্ঞতাই আসল গুপ্তধন।

সান্তিয়াগোর এই যাত্রা আমাদের শেখায় যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবং বাধা আমাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখে। এটি এমন একটি কাহিনি, যা আত্ম-উপলব্ধি, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ, এবং জীবনের গভীর অর্থ অনুসন্ধানকে তুলে ধরে।

 

চাইল্ড সাইকোলজি: শিশুর মানসিক বিকাশে সেরা অভিভাবকত্ব কৌশল

শিশুর মানসিক বিকাশ তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা, পারিবারিক পরিবেশ এবং অভিভাবকের দিকনির্দেশনা শিশুদের আবেগ, চিন্তাধারা এবং আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। চাইল্ড সাইকোলজি বা শিশুর মনস্তত্ত্ব এই বিকাশকে বুঝতে এবং শিশুর অনুভূতি, সমস্যা ও প্রয়োজন বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।

শিশুরা তাদের অনুভূতি ও চাহিদা সরাসরি প্রকাশ করতে পারে না। তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝা যায়। জিন পিয়াজে বলেন, “Play is the work of childhood.” তার এই উক্তি ইঙ্গিত করে যে শিশুরা খেলার মাধ্যমে শেখে এবং তাদের কল্পনা, চিন্তা ও আবেগ বিকশিত করে। এই শেখার প্রক্রিয়ায় অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর মানসিক বিকাশ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে। শূন্য থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ এবং পরিচর্যাকারীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে তারা কল্পনাশক্তি এবং শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এ সময় তারা প্রশ্ন করতে শুরু করে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করতে আগ্রহী হয়। ছয় থেকে বারো বছর বয়সে তাদের সামাজিক দক্ষতা এবং আত্মপরিচয় গঠিত হয়। এই বয়সে শিশুরা তাদের আশপাশ থেকে মূল্যবোধ এবং নিয়ম-কানুন শিখে।

শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কথা বলা এবং তাদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। তাদের ছোট ছোট সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহ প্রদান করা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। শিশুরা বড়দের আচরণ থেকে শিক্ষা নেয়, তাই অভিভাবকদের ধৈর্যশীল ও নম্র হতে হবে। তাদের সঙ্গে সময় কাটানোও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং সম্পর্ক দৃঢ় করে।

এরিক এরিকসন উল্লেখ করেছেন, “Children love and want to be loved, and they very much prefer the joy of accomplishment over the triumph of hateful failure.” এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে শিশুরা ভালোবাসার পরিবেশে বেড়ে উঠতে চায় এবং তাদের অর্জনের জন্য স্বীকৃতি পেলে তারা আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়।

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করা এবং তাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করা।

সামগ্রিকভাবে, শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সচেতন অভিভাবকত্ব, ইতিবাচক পরিবেশ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা শিশুদের জীবনকে গঠনমূলক ও অর্থবহ করে তুলতে পারে।

 

বাংলাদেশে বিজ্ঞানে নারীর অবদান: অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। একসময় এই ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রাধান্য থাকলেও এখন নারীরাও সমান দক্ষতায় অবদান রাখছেন। তাদের উদ্ভাবন ও গবেষণা শুধু দেশের উন্নয়নই ত্বরান্বিত করছে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াচ্ছে।

ড. ফেরদৌসী কাদরী বাংলাদেশের একজন গর্বিত বিজ্ঞানী, যিনি ডায়রিয়া ও কলেরার টিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি “লরিয়েল-ইউনেস্কো ফর উইমেন ইন সায়েন্স” পুরস্কার লাভ করেন। তরুণ বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা শিশুদের সংক্রামক রোগের জিনোমিক গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তনিমা তাসনিম অনন্যা ব্ল্যাকহোল গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)ব্যবহার করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। অন্যদিকে, ফারহানা সুলতানা পাটের আঁশ দিয়ে পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড তৈরি করে নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

তবে নারীদের বিজ্ঞানচর্চার পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। সামাজিক বাধা, গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও সুযোগের অভাব, এবং লিঙ্গ বৈষম্য তাদের অগ্রযাত্রায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। পারিবারিক দায়িত্ব ও পেশাগত জীবনের সমন্বয়ও অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে।

এই বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য নারীদের জন্য গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি, সচেতনতা বাড়ানো, এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সঠিক সহায়তা পেলে নারী বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। তাদের অবদান ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বিজ্ঞানমনস্ক ও টেকসই রাষ্ট্রে পরিণত করবে।

 

নেকাব পরার কারণে বহিষ্কার, শিক্ষার্থীর অভিযোগে তোলপাড়

 

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে বাউবি’র সমাজতত্ত্ব পরীক্ষা চলাকালে এক শিক্ষার্থীকে নেকাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। উম্মে আনজুমানয়ারা নামের ওই শিক্ষার্থী মহিলা পরীক্ষক বা অন্য নারীর সামনে নেকাব খোলার প্রস্তাব দেন। তবে হলের দুই শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বহিষ্কার করেন।

শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং আগের দুইবার গর্ভপাত হওয়ায় শারীরিক ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তার বক্তব্য শোনেনি। এমনকি, হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষ্য উপেক্ষা করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, তার আইডি কার্ড জব্দ করা হয় এবং প্রিন্সিপাল তাকে “ভুয়া পরীক্ষার্থী” বলে আখ্যায়িত করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৯৯৯-এ কল করলে মাটিরাঙ্গা থানার ওসি উপস্থিত হন। কিন্তু প্রিন্সিপাল তার বক্তব্যে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন।

উম্মে আনজুমানয়ারা প্রশ্ন তোলেন, নেকাব না খুলে পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার কি নেই? বড় আদালতগুলোও নারীদের জন্য পর্দার ব্যবস্থা রাখে। তাহলে পরীক্ষা হলে এমন বৈষম্য কেন? তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট সুবিচার দাবি করেছেন।

এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করে সচেতন মহল। প্রাসঙ্গিক নীতিমালা না থাকলে তা প্রণয়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নারী চিকিৎসক

 

ইসলামের ইতিহাসে নারী সাহাবীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের মধ্যে হযরত রুফাইদা বিনতে সাআদ আল-আসলামিয়া (রাঃ) অন্যতম। তিনি ছিলেন ইসলামি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রদূত এবং নার্সিং পেশার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর অসামান্য সেবা ও দক্ষতা ইসলামি ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

হযরত রুফাইদা রাঃ মদিনার বানু আসলাম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাআদ বিন খায়সামার কন্যা। ইসলামের আগেই তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর দক্ষতাকে মুসলিম উম্মাহর সেবায় নিবেদন করেন।

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান

রুফাইদা রাঃ-কে ইসলামের প্রথম নারী চিকিৎসক বলা হয়। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেন। নবী করিম (সাঃ)-এর অনুমতিক্রমে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করতেন।

 

খন্দক যুদ্ধের সময় ভূমিকা

খন্দক যুদ্ধের সময় রুফাইদা একটি তাঁবু স্থাপন করেন, যা কার্যত একটি মিনি হাসপাতালের মতো কাজ করত। এখানে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করা হতো। তিনি নিজ হাতে আহতদের ব্যান্ডেজ করতেন, রক্তপাত বন্ধ করতেন এবং তাঁদের সান্ত্বনা দিতেন।

প্রাথমিক নার্সিং প্রতিষ্ঠা

রুফাইদা একদল নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যারা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবায় অংশ নিতেন। এটি ইসলামের প্রথম সংগঠিত নার্সিং সেবা হিসেবে বিবেচিত।

ব্যক্তিগত গুণাবলি

রুফাইদা ছিলেন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক সেবায়ও মনোযোগী ছিলেন। যুদ্ধের সময় আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁদের মানসিক শক্তি জোগাতেন।

নবী করিম (সাঃ)-এর প্রশংসা

হযরত রুফাইদার সেবামূলক কাজ নবী করিম (সাঃ)-এর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি রুফাইদার চিকিৎসা দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁকে অনুমতি দেন তাঁর তাঁবুতে আহত সাহাবীদের চিকিৎসা করার।

অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম

যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়াও রুফাইদা মদিনার সাধারণ মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। তিনি বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ইতিহাসে অবদান

রুফাইদার কাজ কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেই নয়, বরং ইসলামে নারীদের ভূমিকার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীরাও সমাজের উন্নয়ন এবং সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

———–

হযরত রুফাইদা বিনতে সাআদ আল-আসলামিয়া (রাঃ)-এর জীবন ও কর্ম মানবসেবার এক অনন্য উদাহরণ। তিনি ছিলেন এমন এক মহীয়সী নারী, যিনি নিজের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। তাঁর অবদান প্রমাণ করে, নারীরাও জ্ঞান, কর্ম ও মানবিকতার মাধ্যমে সমাজে গভীর প্রভাব রাখতে পারে। রুফাইদার জীবন আমাদের শেখায় যে, নিষ্ঠা, মানবিকতা এবং সেবার চেতনা মানুষকে সত্যিকার অর্থে শ্রেষ্ঠ করে তোলে। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক জীবনচর্চা আজও নারী-পুরুষ সকলের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে আছে।

 

কুড়িগ্রামের রিক্তা আক্তার বানু বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়

 

কুড়িগ্রামের চিলমারীর নারী উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী রিক্তা আক্তার বানু স্থান পেয়েছেন বিবিসির ২০২৪ সালের অনুপ্রেরণাদায়ী ১০০ নারীর তালিকায়। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ তাকে এই স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

রিক্তা আক্তার বানু একজন জ্যেষ্ঠ নার্স হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তার প্রকৃত পরিচিতি এসেছে একজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তার মেয়ে তানভীন দৃষ্টি মনি সেরিব্রাল পালসি ও অটিজমে আক্রান্ত। মেয়েকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়ে যখন তিনি সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের মুখোমুখি হন, তখনই তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৯ সালে তিনি নিজের জমি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রিক্তা আক্তার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’। বর্তমানে বিদ্যালয়টি প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাদান ও মানসিক বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে।

বিশ্বের স্বীকৃতি

বিবিসি প্রতি বছর তাদের তালিকায় এমন নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। রিক্তা আক্তার বানু এই তালিকায় বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পেয়েছেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

এই তালিকায় তার পাশাপাশি রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ, নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোনসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী নারী।

সমাজে পরিবর্তনের পথিকৃৎ

রিক্তার বিদ্যালয় শুধু শিক্ষাদানেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার এই উদ্যোগ কুড়িগ্রামের মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য গর্ব

রিক্তা আক্তার বানুর অর্জন বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন, সঠিক উদ্যোগ এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

উল্লেখযোগ্য কাজ:

২০০৯ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।

প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সুযোগ।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি।

উপসংহার

বিশ্বের মঞ্চে রিক্তা আক্তার বানুর এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তার এই অর্জন দেশের অন্য নারীদেরও অনুপ্রেরণা যোগাবে।

সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

 

ড. লামিয়া মাওলার নেতৃত্বে আবিষ্কৃত “ফায়ারফ্লাই স্পার্কল” গ্যালাক্সি: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের যুগান্তকারী সাফল্য

 

বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. লামিয়া মাওলা এবং তার নেতৃত্বাধীন ২১ জন গবেষকের একটি দল নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) থেকে প্রাপ্ত ডেটা ব্যবহার করে প্রাথমিক মহাবিশ্বের একটি নতুন গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ১১ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণার শিরোনাম ছিল:
“Formation of a low-mass galaxy from star clusters in a 600-million-year-old Universe”।

এই গ্যালাক্সির নাম দেওয়া হয়েছে “ফায়ারফ্লাই স্পার্কল”, যা বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৬০০ মিলিয়ন বছর পরে গঠিত হয়েছিল। এটি মহাবিশ্বের প্রথমদিকের গ্যালাক্সিগুলোর গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য দিয়েছে।

“ফায়ারফ্লাই স্পার্কল” গ্যালাক্সির বৈশিষ্ট্য

গবেষণা অনুযায়ী, “ফায়ারফ্লাই স্পার্কল” গ্যালাক্সিটি গঠিত ১০টি কম্প্যাক্ট স্টার ক্লাস্টার এবং দুটি ছোট গ্যালাক্সি নিয়ে। দুটি ছোট গ্যালাক্সির নাম রাখা হয়েছে:

ফায়ারফ্লাই নিউ বেস্ট ফ্রেন্ডগ্যালাক্সিটি থেকে যে আলো পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তা এখানে আসতে সময় নিয়েছে প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন বছর। তবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কারণে এটি এখন আমাদের থেকে আরও অনেক দূরে রয়েছে।

গবেষণার গুরুত্ব:
ড. লামিয়া মাওলার মতে, “ফায়ারফ্লাই স্পার্কল” গ্যালাক্সির গঠন অনেকটাই আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির প্রথমদিককার গঠনের মতো। এটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে আমাদের গ্যালাক্সির জন্ম এবং বিকাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যাবে।

ড. লামিয়া মাওলা: বাংলাদেশের গর্ব

ড. লামিয়া মাওলা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (IUB)-এর সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (CASSA)-এর সহযোগী সদস্য।

CASSA বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষা প্রচারের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম। ড. লামিয়ার এই অবদান বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার জন্য এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস

ড. লামিয়া মাওলার নেতৃত্বে এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য গর্বের একটি মুহূর্ত। এটি প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক গবেষণায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে: Nature জার্নাল

গ্যালাক্সির নাম: ফায়ারফ্লাই স্পার্কল

আলো আসতে সময় নিয়েছে: ১৩.২ বিলিয়ন বছর

নেতৃত্বে: ড. লামিয়া মাওলা

আপনার মতামত:

এই আবিষ্কার সম্পর্কে আপনার কী মতামত? নিচের কমেন্ট সেকশনে জানান!

 

নারীর জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা: সুস্থ ও সুখী জীবনের চাবিকাঠি

নারীর সুস্বাস্থ্য শুধু তার ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং একটি পরিবার ও সমাজের মেরুদণ্ড শক্তিশালী রাখার জন্য অপরিহার্য। দৈনন্দিন জীবনের চাপে অনেক নারী নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারেন না। তবে, সুস্থ থাকা মানে শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও সমানভাবে জরুরি।

স্বাস্থ্য সচেতন নারীদের জন্য কার্যকর টিপস

১. সুষম খাদ্যাভ্যাস

সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত হলো সঠিক পুষ্টি। আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার যুক্ত করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চেষ্টা করুন বেশি করে শাক-সবজি, ফল, বাদাম এবং দুধজাত পণ্য খেতে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। হাঁটাহাঁটি অথবা সহজ কিছু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম যেমন স্কোয়াট করতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করবে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুমের ঘাটতি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন

আপনার মনের যত্ন নিন। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। বই পড়া, অথবা নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন। কোনো সমস্যা বা মানসিক চাপ থাকলে বন্ধু বা পরিবারের সাথে আলোচনা করুন অথবা একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষত, যেসব নারীর পরিবারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য প্রেরণা-
সুস্থ থাকা মানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী থাকা। আপনি সুস্থ থাকলে আপনার পরিবার এবং কাছের মানুষগুলোর আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারবেন।

নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতা কেবল তার নিজের নয়, তার পরিবার ও সমাজের ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলে। সুতরাং, আসুন আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিই এবং একসঙ্গে একটি শক্তিশালী ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি।

 

বুকার পুরস্কার পেলেন ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে

 

আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে নভোচারীদের কাটানো একটি দিন নিয়ে বিস্তারিতভাবে লেখা ‘অরবিটাল’ উপন্যাসের জন্য ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে ‘২০২৪ সালের বুকার পুরস্কার’ পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিচারক প্যানেলের চেয়ারপারসন এডমুন্ড ডে ওয়াল ঘোষণা করেন, বিচারকদের সর্বসম্মতিক্রমে হার্ভেকে বুকার পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

মহাকাশকেন্দ্রে ছয় নভোচারীর এক দিনের কাটানো জীবন নিয়ে লেখা ‘অরবিটাল’ উপন্যাসটিতে পৃথিবী থেকে মহাকাশকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে।

উপন্যাসটি’র কাহিনি অনুসারে, ছয় নভোচারীর মধ্যে দুজন পুরুষ ও চারজন নারী। তারা মহাকাশে একত্রিত হয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। এছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন, সীমানা, টাইম জোনের জটিলতা এবং মহাকাশের সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করেন।

বিচারক এডমুন্ড ডে ওয়াল উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেন, অরবিটাল উপন্যাসটি একটি ক্ষতবিক্ষত পৃথিবীর গল্প। যেখানে মহাকাশচারীরা পৃথিবীর পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়। নিজেদের পৃথিবী থেকে অনেক দূরে, তাদের অস্তিত্বকে নতুনভাবে উপলব্ধি করেন। এডমুন্ড ডে ওয়াল বলেন, উপন্যাসে প্রত্যেকেই একটি বিষয়বস্তু আবার কেউই বিষয়বস্তু নয়।

পুরস্কার ঘোষণার পর লেখক হার্ভে বলেন, তিনি এই ৫০,০০০ পাউন্ড পুরস্কারের অর্থ সেই সব মানুষদের উৎসর্গ করছেন, যারা পৃথিবীর পক্ষে কথা বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন এবং মানবতার সেবা করেন।

অরবিটাল উপন্যাসটির পৃষ্ঠার সংখ্যা ১৩৬, যা ইতিহাসে বুকার পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বই। এ ছাড়া এটি প্রথম কোনো মহাকাশভিত্তিক উপন্যাস, যা এই পুরস্কার অর্জন করেছে।

হার্ভে, যিনি কোভিড-১৯ মহামারির সময় লকডাউনের মধ্যে অরবিটাল বইটি বেশিরভাগ অংশ লিখেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনে যখন সবাই একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তখন মহাকাশচারীদের একে অপরের সঙ্গে থাকা এবং মহাকাশের নির্জনতায় পৃথিবীকে দেখা, তা আমার কাছে অনেক বেশি সম্পর্কযুক্ত মনে হয়েছিল।

চলতি বছর বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত শর্টলিস্টে হার্ভে ছাড়া আরও চারজন লেখক ছিলেন। তাদের মধ্যে মার্কিন লেখক র‍্যাচেল কুশনার (‘ক্রিয়েশন লেক’ বইয়ের জন্য) এবং কানাডীয় লেখক অ্যান মাইকেলস (‘হেল্ড’ বইয়ের জন্য) ছিলেন।

 

আলোচনায় ট্রাম্পের নতুন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী

 

হাওয়াইয়ের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান এবং কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তুলসী গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরবর্তী প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্যাবার্ড একজন ইউএস আর্মি রিজার্ভ কর্মকর্তা। তার গোয়েন্দাবিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও, তিনি তার মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তবে ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তুলসীকে বেছে নেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তিনি ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন এবং ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট তদারকি করবেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক প্রস্তুতিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করা তুলসী গ্যাবার্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর একটি পুরস্কার যে পাবেন, তা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের মতো পদ যে পাবেন, তা বোধহয় কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। কারণ এ বিষয়ে তার কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ট্রাম্প মূলত দেশের গোয়েন্দা সেবাগুলোর সংস্কার করতে চান, কারণ সেগুলো তিনি সন্দেহের চোখে দেখেন। এই ক্ষেত্রে, বিদেশি নীতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা গ্যাবার্ডের নিয়োগকে ট্রাম্পের পরিবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গ্যাবার্ডকে নির্বাচন করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুলসী আমাদের দেশের এবং সব আমেরিকানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি উভয় দলেই ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, এখন তিনি গর্বিত রিপাবলিকান।’

কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?: আমেরিকান সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করা ৪৩ বছর বয়সী তুলসী গ্যাবার্ড হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য, ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন। গ্যাবার্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তবে তিনি ২১ বছর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি তখন হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেন। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড হাওয়াই স্টেট সিনেটর, যিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে যোগদান করেন।

প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম হিন্দু: ২০১২ সালে ১১৩ তম কংগ্রেসে তুলসী গ্যাবার্ড ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। তিনি রিপাবলিকান কাওভিকা ক্রাউলিকে পরাজিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রথম হিন্দু হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হিসেবে কংগ্রেসের সদস্য হন। নাম শুনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মনে হলেও তুলসীর সঙ্গে ভারতের কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি আমেরিকাতেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন। আসলে তার মা হাওয়াই যাওয়ার পর হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। আর নিজের সন্তানদের সবার নামকরণ করেছিলেন হিন্দু নামেই। তার প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গ্যাবার্ড ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী।’

তুলসী গ্যাবার্ড ২০২০ সালের ১১৭ তম কংগ্রেসে পুনঃনির্বাচনের প্রার্থী হননি। তবে ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন, পার্টি ‘একটি অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী’। এরপর গ্যাবার্ড ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন।