All posts by Oporajita

 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: একটি পর্যালোচনা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করছি, এই প্রতিবেদনের একটি পর্যালোচনা জরুরি, যাতে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং বাস্তবায়নের দিকগুলো যাচাই করা যায়। প্রায় দুইশো পৃষ্ঠার এই বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে মোট ১৭টি অধ্যায় রয়েছে। এটি প্রণয়ন করা হয়েছে বর্তমান নারী নীতির ভিত্তিতে, এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশও করা হয়েছে।
যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের নিয়ে কাজ করেন, তারা এই প্রতিবেদনের বড় একটি অংশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন বলেই মনে হয়। নারীর উন্নয়ন, মেধার বিকাশ এবং গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপনা—এই বিষয়গুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রতিটি খাতের জন্য কেবল বর্তমান নয়, পরবর্তী সরকারগুলোর করণীয়ও তুলে ধরেছে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয় এবং ভালো পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করে।
তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই প্রতিবেদনকে আরও বিস্তৃত ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।
প্রথমত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পালাবদলের সময় নারীদের সক্রিয় ভূমিকা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। দেশের প্রতিটি স্তরের নারী তখন ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটানোর আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন। এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, তা যেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং একটি আর্কাইভে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়—এমন একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে শহরাঞ্চলে নারী ও কন্যাশিশুর জন্য সূর্যের আলো, খোলা জায়গায় নিরাপদে হাঁটার সুযোগ এবং প্রাইভেসি সহ শরীরচর্চার ব্যবস্থা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। স্বাস্থ্যকর প্রজন্ম গঠনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ অবহেলিত। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রতিবেদনটিতে থাকা উচিত।
এবার আসা যাক কিছু নির্দিষ্ট সুপারিশে, যেগুলো পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে:
১। ধারা ৩.২.১.১, ১২.৩.১.১ (জ) ও ১২.৩.২.৩-এ যৌনকর্মীদের সুরক্ষা ও শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হলেও, এই পেশায় বাধ্য হয়ে আসা নারীদের সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। এতে করে এই পেশায় থাকা নারীরা যেমন ভবিষ্যতে পুনরায় নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, তেমনি আরও নারীদের এই পেশায় ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত যেন তারা সম্মানের সঙ্গে বিকল্প জীবনে ফিরে যেতে পারেন, তাদের সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ নিশ্চিত হয় এবং দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
২। ধারা ৩.২.২.১.২-এ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় মোহরানা আদায় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইসলামী পারিবারিক আইনে মোহরানা বিবাহের সময়ই পরিশোধযোগ্য। এটি বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাই এখানে আইন অনুযায়ী মোহরানা বিবাহের সময়েই আদায়যোগ্য—এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা উচিত এবং তা বাস্তবায়নে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ থাকা দরকার।
৩। ধারা ৩.২.২.১.১১ ও ৩.২.৩.১.১-এ সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব এসেছে, যা আমাদের সমাজের বহুধর্মীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না। এই সুপারিশ CEDAW-এর একটি প্রভাব হতে পারে, তবে আমাদের দেশে প্রতিটি নাগরিক যেন নিজের ধর্ম অনুযায়ী পারিবারিক ও সম্পত্তির অধিকার পায় এবং প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে পারে—এমন সুপারিশ থাকা উচিত।
৪। CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) আন্তর্জাতিকভাবে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার একটি সনদ, যা বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে সংরক্ষণসহ স্বাক্ষর করেছে। সংরক্ষিত ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধারা ২ এবং ধারা ১৬(১)(c), যেগুলো ইসলামী শরীয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, যা অপ্রয়োজনীয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মানসূচক। বরং সনদে স্বাক্ষরকালে যেভাবে এই সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল, সেটি বজায় রেখেই এর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানোর সুপারিশ করা উচিত ছিল।
সবশেষে আমি মনে করি, দেশের শিক্ষিত ও সচেতন নারীদের প্রতিনিধিত্বে একটি নতুন কমিশন গঠন করে এই প্রতিবেদনটি সংশোধন করা জরুরি, যাতে এটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

-মারদিয়া মমতাজ

 

বিয়েতে সম্মতিমূলক সম্পর্ক

এটা সত্যি! বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের শিকার অনেক নারীই হচ্ছেন। এটা ভয়াবহ ধরনের পারিবারিক সহিংসতা। এর ফলে অনেক নারী প্রচণ্ড ট্রমায় পড়ে যান। তবে এটা কি আইন দিয়ে থামানো যাবে?
বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে মামলার সুযোগ থাকলে আরও অনেক মিথ্যা মামলার সুযোগ হয়ে যায়। বরং এর মোকাবেলায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতনতাই বেশি জরুরি।
বিয়ে একজন নারী ও একজন পুরুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক চাহিদাপূরণের সিভিল কন্ট্রাক্ট। বিয়ের মাধ্যমে তারা একে অপরকে শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হবার সম্মতি প্রদান করে। শারীরিক সম্পর্ক সম্পাদনের জন্য হাজবেন্ড ও ওয়াইফ উভয়েরই সম্মতি থাকাটা জরুরি। একজনের সম্মতি আছে, অন্যজনের নেই- এমন হলে হবে না।
বিয়ে এমন একটা জিনিস যেখানে স্বামী বা স্ত্রী কারোই একে অপরের কোনো ক্ষতি করার অধিকার নেই। ইসলামিক দিক থেকে, বিয়ের চুক্তির মাধ্যমেই স্বামী, স্ত্রী একে অপরকে শারীরিকভাবে উপভোগ করার অধিকার দেয়। তাই স্ত্রীর দিক থেকে দায়িত্ব হলো, তার স্বামীর আহবানে সাড়া দেয়া যদি না তার কোনো শারীরিক বা মানসিক এক্সকিউজ থাকে। আর যদি কোনো এক্সকিউজ থাকে, তাহলে স্বামীরও দায়িত্ব তাকে জোরপূর্বক ইন্টিমেসিতে বাধ্য না করা। যদি এই বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, একজনের কষ্ট হচ্ছে তারপরও সেটাকে উপেক্ষা করে আরেকজন তা আদায় করে নিচ্ছেন। তাহলে এটা জুলুমের পর্যায়েই চলে যায় এবং ইসলাম সেটাকে কোনোভাবেই অনুমতি দেয়নি। ইসলাম যে কোনো প্রকার জুলুমকেই হারাম করেছে। সুতরাং ইসলামে বিয়ে পরবর্তী এই জোরাজোরিকে রেইপ বলা যায় না বরং তা হবে একজনের প্রতি আরেকজনের জুলুম।
ফিজিক্যালি আল্লাহ ছেলেদের এবং মেয়েদের আলাদা করে বানিয়েছেন। ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট ছাড়া সরাসরি ফিজিক্যাল ইনভলভমেন্টের কথা অনেক মেয়েই মেনে নিতে পারে না। প্রোপার ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্টের অভাবে অনেক মেয়েরাই ইন্টিমেসির ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড থাকেন না। আবার অনেক মেয়েরা হাজব্যান্ডের ডিমান্ড ফলো করাটাকে একটা ডিউটি হিসেবে পালন করে। যতই টায়ার্ড বা স্ট্রেসড থাকুক না কেন, তাদের মাঝে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকুক বা না থাকুক। এ দুটি অবস্থার কোনোটিই কাম্য নয়। বরং ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়ে তোলার দিকে যত্নবান হওয়াই বেশি প্রয়োজন। স্ত্রীর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনের ক্ষেত্রে তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা এবং তার সম্মতি নেওয়া একজন স্বামীর অবশ্যই দায়িত্ব। আর এটা ধর্মীয় ও মানবিক উভয় দিক থেকেই।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, প্রাপ্তবয়স্ক দুইজন পুরুষ ও নারীর অবশ্যই সম্মতির ভিত্তিতেই বিয়ে হওয়া উচিত। এবং পুরুষ ও নারী উভয়ের উচিত নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের যথাযথ সম্মান করা। অ-সম্মতিমূলক যৌন সম্পর্ক দু’জনের জীবনেই নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে। কারণ যে কোনো বিষয়ে জোর খাটানো তো সহিংসতাই!

-ড. সাজেদা হোমায়রা

 

শুধু পানিতে চাষযোগ্য ৬টি উপকারী ভেষজ গাছ

 

নিত্যদিনের রান্নাঘর কিংবা বারান্দার ছোট্ট এক কোণেও সবুজের ছোঁয়া আনা সম্ভব, শুধুমাত্র কিছু পানিভিত্তিক চাষযোগ্য গাছের মাধ্যমে। এগুলো যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি স্বাস্থ্য ও স্বাদের জন্য দারুণ উপকারী। নিচে এমন ৬টি গাছের পরিচয় দেওয়া হলো—

১. পুদিনা (Mint)
তাজা সুবাসে ভরপুর পুদিনা গ্রীষ্মের হালকা রোদে সহজেই টিকে থাকে। কাণ্ড কেটে পানিতে রাখলেই দ্রুত শিকড় গজায়। পানীয়, সালাদ কিংবা রান্নায় ব্যবহার হয় বহুবিধ।

২. পার্সলে (Parsley)
রান্নার উপকরণে সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর পার্সলে পানিতে রাখার ২–৩ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের করে। এটি সালাদ, স্যুপ ও গার্নিশিংয়ে অনন্য।

৩. রোজমেরি (Rosemary)
মৃদু ঘ্রাণে মন ভোলানো রোজমেরি শুধু রান্না নয়, ঘরের বাতাসেও আনে প্রশান্তি। ডাল পানিতে রেখে আলোয় রাখলেই ধীরে ধীরে শিকড় জন্মায়।

৪. ওরেগানো (Oregano)
ইতালিয়ান রান্নার অঙ্গ হিসেবে পরিচিত এই হার্বটি সহজেই পানিতে শিকড় ছাড়ে। এর সুগন্ধ ও স্বাদ খাবারে নিয়ে আসে এক আলাদা মাত্রা।

৫. গ্রিন অনিয়ন / পেঁয়াজ পাতা (Green Onion)
পেঁয়াজের গোড়া কেটে পানি ভর্তি পাত্রে রাখলে খুব দ্রুতই গজিয়ে ওঠে নতুন পাতা। প্রতিদিন রান্নায় কিংবা সালাদে ব্যবহার উপযোগী।

৬. থাইম (Thyme)
সুগন্ধি এই গাছটি পানিতে রাখলেই অল্পদিনে নতুন শিকড় গজায়। রোস্টেড খাবার কিংবা হালকা চায়ের সঙ্গে এর স্বাদ হয়ে ওঠে অনন্য।

এইসব ছোট ছোট সবুজ গাছ কেবল শোভাই বাড়ায় না, বরং অল্প যত্নে আমাদের জীবনে আনে স্বাদ, সুগন্ধ ও প্রশান্তির ছোঁয়া।

 

স্বাস্থ্য টিপস:ননস্টিক প্যানে চিরস্থায়ী বিষ!

 

আমরা অনেকেই রান্নার জন্য ননস্টিক প্যান ব্যবহার করি, কারণ এতে তেল কম লাগে এবং পরিষ্কার করাও সহজ। কিন্তু জানেন কি, এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি?
ননস্টিক প্যানে যে টেফলনের প্রলেপ থাকে, তা প্লাস্টিক জাতীয় এক ধরনের পলিমার, যাকে বলা হয় ‘ফরেভার কেমিক্যাল’। এই রাসায়নিক সহজে ভাঙে না, পরিবেশেও বিলীন হয় না, এমনকি শরীরেও থেকে যায় দীর্ঘদিন। একে ‘চিরস্থায়ী বিষ’ বলা হয় এ কারণেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, ননস্টিক প্যানে সামান্য একটি স্ক্র্যাচ থেকেও প্রতি রান্নায় প্রায় ৯ হাজার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাইক্রো-প্লাস্টিক কণা খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। আর যদি প্যানটির প্রলেপ উঠে যায়, তাহলে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২০ লাখ পর্যন্ত!
এই ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে এটি নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
ভয়াবহ ব্যাপার হলো—এক জরিপ অনুযায়ী, ৯৯% আমেরিকানের রক্তেই এই রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তাই যতই সুবিধাজনক হোক, পুরনো বা স্ক্র্যাচ পড়া ননস্টিক প্যান এবং প্লাস্টিক খুন্তি ব্যবহার থেকে এখনই বিরত থাকুন।
সুস্থ থাকতে সাবধান হোন, সচেতন হোন।

উৎস: Science of the Total Environment

 

স্বপ্ন বুনে চলেছেন ইফ্ফাত আলম জেসিকা

একজন নারীর স্বপ্ন কখনো শুধু তাঁর নিজের থাকে না—তা হয়ে ওঠে অনেকের আশ্রয়, আশাবাদ এবং এগিয়ে চলার শক্তি। ইফ্ফাত আলম জেসিকা তেমনই এক স্বপ্নবাজ নারীর নাম, যিনি নিজেকে ছাপিয়ে অন্যদেরও সামনে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছেন।

শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের পাঠ তিনি পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবার বদৌলতে বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্টের নিপাট পরিবেশে। পরিবারে অভ্যাস ছিল সাদামাটা পোশাকে ঈদের আনন্দ খোঁজার, আর সেখানেই গজ কাপড় দিয়ে তৈরি সাধারণ জামা নিজের হাতে সাজিয়ে ভিন্নমাত্রায় তুলে ধরতেন ছোট্ট জেসিকা। তখনই যেন বোনা হতে থাকে সৃষ্টিশীল এক ভবিষ্যতের বীজ।

সাধারণ মধ্যবিত্ত চিন্তার রেলগাড়িতে চড়ে তিনিও একসময় ছোটখাটো একটি চাকরিতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকত সুই-সুতার জগতে। নিজ হাতে বানানো কুশন কভার, ব্লাউজ কিংবা কাপড়ের কারুকাজ—এসবই ছিল তাঁর প্রাণ। একদিন সহকর্মীদের উৎসাহে নিজের কাজের কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলেন, আর সেখান থেকেই খুলে গেল এক নতুন দরজা।

প্রথম অর্ডার, প্রথম আয়, প্রথম বিনিয়োগ—সবকিছুর শুরু যেন এক রঙিন গল্পের মতো। নিজের হাতে তৈরি করা ডিজাইন থেকে জন্ম নেয় ‘সর্বজয়া’ নামের একটি উদ্যোগ। এটি শুধুই একটি ফেসবুক পেজ নয়, বরং নারীদের জন্য আত্মনির্ভরতার এক চলমান কর্মক্ষেত্র। এখন এই উদ্যোগে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জনের মতো নারী। কেউ ওয়ার্কশপে, কেউ ঘরে বসেই।

তবে এ পথটা সহজ ছিল না। পেছনে টানতে চেয়েছে সমাজের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি, অনুশাসনের চোখরাঙানি আর “নারীর কাজ নয়” ধরনের তির্যক মন্তব্য। কিন্তু জেসিকা হার মানেননি। মা-বাবা, ভাই এবং স্বামীর সমর্থন ছিল তাঁর পাশে। আর ছিল নিজের প্রতি বিশ্বাস—যা তাঁকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে তুলেছে।

আজ ‘সর্বজয়া’ শুধু পণ্য বিক্রির মাধ্যন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার এক পাঠশালা। সৃজনশীল নকশায় তৈরি ব্লাউজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, কুশন কভার—সবকিছুতেই রয়েছে জেসিকার ছাপ। এই উদ্যোগ এখন প্রতি মাসে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছে।

জেসিকার চোখে ভবিষ্যৎ স্পষ্ট—তিনি চান সর্বজয়া একদিন হয়ে উঠুক একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ড, যা স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর সেই ব্র্যান্ডের প্রতিটি সেলাইবাঁধা থাকবে একেকটি নারীর গল্প, সংগ্রাম আর বিজয়ের চিহ্ন।

 

নারী” মানে শুধুই জন্মগত নারী—যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—সমতা আইনের আওতায় “নারী” বলতে শুধুমাত্র জৈবিক অর্থে জন্মগত নারীকেই বোঝানো হবে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারীরা এই সংজ্ঞার আওতায় আসবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই সর্বসম্মত রায় যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকার প্রয়োগে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের ব্যাখ্যার প্রশ্নে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামক নারী অধিকার সংস্থা। তাদের যুক্তি ছিল, কেবল জন্মগত নারীদেরই লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে আদালতের কাছে প্রশ্ন ছিল—২০১০ সালের সমতা আইনে “নারী” ও “লিঙ্গ” শব্দগুলো দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? এটি কি জন্মগত লিঙ্গ, নাকি ২০০৪ সালের জেন্ডার রিকগনিশন আইনে (Gender Recognition Act) উল্লিখিত GRC (Gender Recognition Certificate) সনদধারীদের নতুন লিঙ্গ পরিচয়?

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লর্ড হজ রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আইনে ‘নারী’ ও ‘লিঙ্গ’ শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটিই ছিল আমাদের মূল কাজ।” তিনি জানান, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের সমতা আইনে ‘নারী’ বলতে বোঝানো হয়েছে জৈবিক নারী, এবং ‘লিঙ্গ’ বলতে বোঝানো হয়েছে জন্মগত জৈবিক লিঙ্গ।

তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, এই রায় যেন সমাজের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে দেখা না হয়। বরং এটি কেবল একটি আইনি সংজ্ঞার বিষয়। লর্ড হজ বলেন, “এই রায় ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারকে হ্রাস করছে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানি থেকেও আইন সুরক্ষা দিয়ে থাকে।”

Gender Recognition Certificate (GRC) যুক্তরাজ্যে একটি আইনি দলিল, যা কাউকে তার বর্তমান লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী স্বীকৃতি দেয়। স্কটল্যান্ড সরকার দাবি করে, GRC থাকা মানেই ব্যক্তি তার নতুন লিঙ্গ অনুযায়ী সব ধরনের সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু ফর উইমেন স্কটল্যান্ড পাল্টা যুক্তি দেয়—লিঙ্গ একটি ‘অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা’, যা কোনো আইনি দলিল দিয়ে বদলানো সম্ভব নয়।

রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ড-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, “আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—যে নারীরা তাঁদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন।”
তারা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন—নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান শুধুমাত্র নারীদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।

রায় প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি জানান, স্কটিশ সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে। তারা এখন আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো—যুক্তরাজ্যে সমতা আইনের প্রয়োগে “নারী” শব্দের সংজ্ঞা এখন কেবল জৈবিক নারীকে বোঝাবে, যদিও ট্রান্সজেন্ডারদের আইনগত সুরক্ষা বজায় থাকবে। এটি একদিকে যেমন জন্মগত নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষার বার্তা দেয়, অন্যদিকে সমাজে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে আলোচনার দরজা আরও প্রসারিত করে।

 

বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না

অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন যে তাদের বাচ্চা মোবাইল বা টিভি ছাড়া খেতে চায় না। তবে বাস্তবতা হলো, বাচ্চা নিজে থেকে মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না – এই ধারণা আমরা প্যারেন্টরাই তৈরি করেছি। শিশুরা যা শেখে, সেটি তাদের আশপাশের পরিবেশ ও বড়দের আচরণ দেখে শেখে। আমরা যদি প্রথম থেকেই মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার না করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে দিই, তাহলে শিশুরাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে খেতে শিখবে।

মোবাইলের ওপর নির্ভরতা কোথা থেকে এলো?
১. কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা ও সহজ সমাধানের সন্ধান-
বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারেই মা-বাবা কর্মজীবী। ফলে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নানী, দাদী বা গৃহকর্মীদের ওপর পড়ে। তাদের ধৈর্য্য, শারীরিক সামর্থ্য বা সময় সীমিত থাকে। বাচ্চার খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টার পরিবর্তে স্ক্রিনটাইম সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। এতে বাচ্চা চুপচাপ ভিডিও দেখতে দেখতে খেয়ে ফেলে, আর কেয়ারগিভারের জন্যও কাজ সহজ হয়ে যায়।

২. পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খায়, যা তাদের শেখারই একটি অংশ। কিন্তু অনেক প্যারেন্ট চান না যে ঘর নোংরা হোক বা বাচ্চা হাতে-মুখে মাখিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুক। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার গুঁজে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলেন। এতে শিশুর নিজে খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, এবং মোবাইল সামনে দিলে সে যান্ত্রিকভাবে খেয়ে নেয়।

শিশু কীভাবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া শিখবে?

১. ধৈর্য ধরুন, শিশু নিজে খেতে শিখবে
শিশুকে খেতে শেখানোর জন্য সময় দিতে হবে। নিচে পাটি বিছিয়ে বা চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে তার সামনে খাবার দিন। সে খাবার ধরবে, মুখে তুলবে, ফেলবে, নোংরা করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন এভাবে চেষ্টা করলে, দেখবেন ২ বছরের মধ্যেই সে নিজে খেতে শিখে গেছে।

২. ক্ষুধা লাগার সুযোগ দিন
যখন শিশুর সত্যিকারের ক্ষুধা লাগবে, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই খেতে চাইবে। মোবাইলের কারণে মনোযোগ নষ্ট হলে শিশুর ক্ষুধাবোধও কমে যায়। তাই খাবারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, এবং তার আগে বা পরে অযথা স্ন্যাকস খেতে দেবেন না।

৩. শিশুর ওজন ঠিক থাকলে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না

অনেক অভিভাবক মনে করেন বাচ্চা কম খাচ্ছে, তাই তারা জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং সে সুস্থ থাকে, তবে কম-বেশি খাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

৪. মোবাইল ছাড়াই মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর উপায় খুঁজুন

যদি কখনো শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো দরকার হয়, তাহলে ভিডিও ছাড়া অন্যান্য উপায় ব্যবহার করুন। যেমন—
তার সামনে ছোট গল্প বলুন,খাওয়ার সময় রঙিন প্লেট-বাটি ব্যবহার করুন, তাকে খেলনা বা বই দিন, যাতে সে নিজে ব্যস্ত থাকে।
মুড়ি বা অন্য শুকনো খাবার দিয়ে গুণতে বা সাজাতে দিন।

সচেতন হোন, শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন
শিশুর স্ক্রিন অ্যাডিকশন মূলত অভিভাবকদের তৈরি করা সমস্যা। শুরু থেকেই যদি নিয়ম মেনে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়, তবে পরে এটি নিয়ে সমস্যা হবে না।

তাই আজ থেকে “বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খায় না” বলা বন্ধ করুন, এবং ধৈর্য ধরে শিশুকে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।

 

সাহসী নারী অ্যাগনোডিস

প্রাচীন গ্রিসে নারীদের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান লালন-পালনের জন্যই উপযুক্ত মনে করা হতো। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এক নারী জন্ম নিয়েছিলেন, যিনি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তার নাম ছিল অ্যাগনোডিস।

অ্যাগনোডিস ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের নিয়ম তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের চুল কেটে, পুরুষের বেশ ধরে তিনি ভর্তি হন আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত মেডিকেল স্কুলে। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে তিনি সেখানে সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র শেখেন এবং একদিন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসেন এথেন্সে।

একদিন রাস্তায় হাঁটার সময় তিনি শুনতে পান এক প্রসূতি নারীর আর্তনাদ। ব্যথায় কাতর সেই নারী কোনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে রাজি ছিলেন না, কারণ তখনকার সমাজে নারীদের পুরুষের স্পর্শ নেওয়া ছিল লজ্জার বিষয়। অ্যাগনোডিস তখন নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন, নিজেকে একজন নারী হিসেবে প্রমাণ করেন এবং সফলভাবে প্রসব করাতে সাহায্য করেন।

এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং নারীরা অ্যাগনোডিসের কাছে ছুটে আসতে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে অ্যাগনোডিস তাদের কষ্ট বুঝতে পারবেন এবং নিরাপদে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এটি পুরুষ চিকিৎসকদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা অভিযোগ করেন, অ্যাগনোডিস একজন পুরুষ, যিনি নারীদের প্রলুব্ধ করছেন।

অ্যাগনোডিসকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। প্রথমে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে তিনি আসলে একজন নারী। কিন্তু সত্য প্রকাশের পরও শাস্তি এড়ানো গেল না। সমাজের নিয়ম ভঙ্গ করে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিদ্রোহ। সেই সব নারীরা, যাদের অ্যাগনোডিস সুস্থ করেছিলেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিচারকদের স্ত্রীরাও সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং ঘোষণা করেন, “যদি অ্যাগনোডিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে আমাদেরও দিতে হবে।”

নারীদের এই ঐক্য ও প্রতিবাদের মুখে বিচারকদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। আইন পরিবর্তন করা হয় এবং তখন থেকে নারীরা নারীদের চিকিৎসা করার অনুমতি পান।

অ্যাগনোডিস ছিলেন গ্রীসের প্রথম নারী চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তার সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্যও।
নারীদের ইতিহাস গড়া কখনোই সহজ ছিল না। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে নিরব সংগ্রাম ও বাধার পাহাড়। কিন্তু যখন এক নারী অন্য নারীর পাশে দাঁড়ায়, তখনই সত্যিকার পরিবর্তন আসে।

এই গল্প শুধু অ্যাগনোডিসের নয়, এটি সমস্ত সাহসী নারীর গল্প—যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সমাজের গোঁড়ামি ভেঙে সামনে এগিয়ে যায় এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
তুমি কি সেই ইতিহাসের অংশ হতে প্রস্তুত?

 

পুদিনা: আপনার দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যকর লাইফ হ্যাক

 

পুদিনা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শুধু তাজা সুগন্ধই দেয় না, বরং এটি আমাদের শরীরের জন্য একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর হেলথ টিপস শেয়ার করা হলো, যা আপনাকে পুদিনা ব্যবহার করে জীবনকে আরও সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করবে।

ত্বকের যত্ন: গরমে ত্বকে ফুসকুড়ি বা জ্বালাপোড়া থাকলে, কিছু পুদিনা পাতা চটকে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করুন। এটি ত্বককে শান্ত করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর: পুদিনা পাতা পানি দিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং দাঁত-মাড়ি থাকবে সুস্থ।

হজমশক্তি বৃদ্ধি: পুদিনা পাতার চা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে। খাবারের পর এক কাপ পুদিনা চা পান করুন।

মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন: পুদিনার পাতার গন্ধ মাথাব্যথা কমাতে এবং মাইগ্রেনের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। নাকের উপরর কিছু পুদিনা পাতা রেখে গভীর শ্বাস নিন।

ক্লান্তি দূরীকরণ: পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ক্লান্তি দ্রুত দূর হবে এবং আপনি চাঙ্গা অনুভব করবেন।

কফ দূর: পুদিনা পাতা, তুলসী, আদা ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে কফ ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

উকুন মুক্ত চুল: পুদিনার শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি উকুন দূর করবে।

শরীর ঠান্ডা রাখা: গরমে পুদিনা পাতা খাওয়া শরীরকে শীতল রাখে এবং জ্বরের উপসর্গ কমায়।

হার্ট সুস্থ রাখে: পুদিনা রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে: পুদিনা পাতা অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

পুদিনার সহজ কিছু ব্যবহার আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। তাই, দৈনন্দিন জীবনে এটি অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর সমাধান।

 

ক্যামেরা হাতে শেষ নিঃশ্বাস: শহীদ ফটোগ্রাফার ফাতিমা হাসুনা

 

আজকের প্রভাতে যখন সূর্য উঠেছে, তখন গাজার আকাশে কেবল ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। সেই ধ্বংসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন এক সাহসিনী—ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা, যিনি শহীদ হয়েছেন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বর বোমা হামলায়। গাজা শহরের নাফাক অঞ্চলে নিজ বাড়িতে চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য।

ফাতিমা হাসুনা শুধু একজন আলোকচিত্রী নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস, গাজার চোখে দেখা সত্যের নির্ভীক ভাষ্যকার। তাঁর হাতে ছিল ক্যামেরা, আর হৃদয়ে প্রতিরোধের আগুন। তাঁর প্রতিটি ছবি একেকটি ভাষ্য, যা দখলদারদের গোলার চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল না।

গাজা যখন আগুনে জ্বলছে, চারপাশে ধ্বংস আর মৃত্যু, তখন ফাতিমা ছুটে যেতেন ঘটনাস্থলে—হাতে ক্যামেরা, চোখে আগ্রহ, হৃদয়ে সাহস। তিনি তুলতেন সেইসব ছবি, যা পৃথিবীর অনেক মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। ধুলায় ঢাকা পথ, কাঁদতে থাকা শিশু, খালি থালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা—এসবের মধ্যেই তিনি দেখাতেন আগ্রাসনের চেহারা।

এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা বলেছিলেন—
“আমি অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছি। আমি কাজ করি হৃদয় দিয়ে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্যে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে!”
“আমার ক্যামেরা আমার অস্ত্র। তারা আমার দেশ ও জনগণকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু আমার চিত্র/ছবিকে পারবেনা।”

এগুলো আজ আর কেবল বাক্য নয়, এখন ইতিহাসের এক একটি স্তম্ভ। ফাতিমার ক্যামেরা আজ নীরব, কিন্তু তাঁর ছবিগুলো আজও কথা বলে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে যে রক্ত ঝরে, তার সাক্ষী হয়ে আছে তাঁর প্রতিটি ক্যাপচার করা মুহূর্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুতে শোক আর শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই লিখেছেন—”ফাতিমার লেন্স থেমে গেলেও, তাঁর তোলা ছবি ইতিহাসের বুক থেকে কেউ মুছতে পারবে না।”
আরো বলা হচ্ছে—
“তিনি ছিলেন গাজার প্রতিরোধের এক নারীচিত্রী, যিনি প্রমাণ করে গেছেন—প্রতিরোধ মানে শুধু অস্ত্র নয়, প্রতিরোধ মানে সত্যের চিত্র তুলে ধরা।”

তিনি বলেছিলেন: “আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। আমি ছবি তুলি, কারণ কেউ তো আছে, যাকে দেখাতে হবে আমাদের উপর কী ঘটছে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে।”
তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত ছিলেন তার সংগ্রামের ক্যামেরা হাতেই।

আজ তাঁর এই অস্ত্র থেমে গেছে। কিন্তু তাঁর প্রতিরোধ এখন ছবি হয়ে বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, উম্মাহর চেতনায়।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ তাঁকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন, জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন।

 

রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সহজ টিপস

 

রান্নাঘর শুধু খাবার তৈরির জায়গা নয়, এটি আমাদের পরিবারের সবার সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই রান্নাঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে চিটচিটে তেল, খাবারের গন্ধ এবং ধুলো-ময়লা জমে রান্নাঘর অস্বাস্থ্যকর হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই রান্নাঘরকে ঝকঝকে রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কিছু কার্যকর টিপস।

১. রান্নাঘরের বেসিন ও সিঙ্ক পরিষ্কার রাখার উপায়
ওয়াশবেসিন বা সিঙ্ক পরিষ্কার করতে খানিকটা কোক বা পেপসি ঢেলে ৫ মিনিট রেখে মুছে ফেলুন, এতে দাগ ও ময়লা সহজে উঠে যাবে।

চুলার আশেপাশে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে মসলিন কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

২. রান্নাঘরের তাক, কেবিনেট ও কাউন্টার পরিষ্কার রাখা
মার্বেল পাথরের কেবিনেট বা কাউন্টার পরিষ্কার করতে খাবার সোডা পানিতে গুলে রাতে লাগিয়ে রাখুন, সকালে সাদা সিরকা মিশ্রিত পানি দিয়ে মুছে ফেলুন।

তেল চিটচিটে তাক বা কাঠের র‍্যাক পরিষ্কার করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে পরিষ্কার করুন।

রান্নাঘরের জানালা বা বারান্দার গ্রিল পরিষ্কার করতে কেরোসিন ও সরিষার তেল মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে লাগিয়ে দিন, এতে জং ধরা রোধ হবে।

৩. হাঁড়ি-পাতিল ও বাসনকোসন পরিষ্কার করার কৌশল
পোড়া দাগযুক্ত হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করতে সিরিষ কাগজে গুঁড়া সাবান লাগিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

পুরোনো হাঁড়ি থেকে তেল কালির দাগ তোলার জন্য চা পাতা বা কফি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন।

চিনেমাটির পাত্রের দাগ লবণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে সহজেই দূর হবে।

বাসনকোসনে কষ লাগলে টক দই বা দুধের সর দিয়ে ঘষে ধুলে দাগ চলে যাবে।

৪. রান্নাঘরের দুর্গন্ধ ও পোকামাকড় দূর করার উপায়
রান্নাঘরে পোড়া গন্ধ বা অন্যান্য দুর্গন্ধ দূর করতে কিছুটা সিরকা চুলায় দিয়ে শুকানো অবধি জ্বাল দিন।

মশা, মাছি ও পিঁপড়ার উপদ্রব কমাতে ঘর মোছার পানিতে সামান্য ডিজেল মিশিয়ে নিন।

এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করলে রান্নাঘর শুধু ঝকঝকে ও পরিপাটি থাকবে না, বরং জীবাণুমুক্ত ও স্বাস্থ্যকরও থাকবে!

 

শিশুরা কি জন্মগতভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী? গবেষণার দুই মেরু দৃষ্টিভঙ্গি

 

মানুষ জন্মগতভাবে বিশ্বাসী—এটা তো আমরা অনেকেই জানি বা মানি। তবে প্রশ্ন হলো, “মানব শিশু কি জন্মগতভাবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী?” এই দাবি একজন বিশিষ্ট গবেষকের—অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক জাস্টিন এল. ব্যারেট। উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও নানা রকম মানসিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তিনি দাবি করেন, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই কোনো এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। এই দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতেই তিনি লিখেছেন Born Believers নামের বইটি (২০১২), যেখানে তাঁর ও সহ-গবেষক নিকোলা নাইটের কাজের সারাংশ তুলে ধরা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের একটি ডকুমেন্টারিতে ব্যারেট বলেন, শিশুরা যখন বেড়ে ওঠে, তখন তারা চারপাশের জগতের জটিলতাকে দেখে মনে করে—এসব কিছু নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরি করেছেন। এটা যেন তাদের মস্তিষ্কের একটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি, যেটা পরিবেশের ওপর নির্ভর করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় তিন বছর বয়স থেকেই শিশুরা অতিপ্রাকৃত কোনো সত্ত্বার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে শুরু করে। সূর্য দেবতা, প্রকৃতির আত্মা, এমনকি ঈশ্বরের ধারণা—এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নানা সংস্কৃতিতে একরকম রয়ে যায়। তবে তারা বড়দের মতো একমাত্রিক বা ধর্মবিশেষভিত্তিক ভাবনায় আটকে থাকে না। বরং তারা এসব সত্ত্বাকে “সবজান্তা” বা অত্যন্ত জ্ঞানী হিসেবে দেখে।

জাস্টিন ব্যারেট মনে করেন, শিশুরা জন্ম থেকেই ‘ক্রিয়েটর’ বা ‘সৃষ্টিকর্তা’র ধারণা ধারণ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি আগে থেকেই থাকে, কেবল বড় হয়ে সেই বিশ্বাসে ধর্মীয় কাঠামো বা সংস্কৃতির ছোঁয়া পড়ে।

তবে, এই দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে রয়েছে আরেকটি গবেষণা। ”Genius Science” নামের একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীর জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়—শিশুদের অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস মূলত শেখানো জিনিস। ক্যাথলিন করিভিউ নামের এক গবেষক এবং তার দল ৬৬ জন শিশুর উপর তিন ধরনের গল্পের ভিত্তিতে পরীক্ষা চালান—ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং রহস্যভিত্তিক।

গবেষণায় দেখা যায়, ঐতিহাসিক গল্পগুলোকে প্রায় সব শিশুই সত্য হিসেবে নিয়েছে। তবে ধর্মীয় গল্পে পার্থক্য দেখা গেছে—যারা ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে সত্য ধরে নিয়েছে; অন্যদিকে যারা ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে রূপকথা বলেই মনে করেছে। রহস্যমূলক গল্পেও এমনই পার্থক্য দেখা গেছে।
ক্যাথলিন করিভিউর মতে, ধর্মীয় গল্প ও বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা আলাদা করতে তুলনামূলকভাবে কম সক্ষম হয়। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন—এটা যে ক্ষতিকর, এমনটা নয়। বরং বাস্তববাদী জ্ঞান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস—দুটোই একসাথে শেখানো দরকার।
এই প্রসঙ্গে ব্যারেটের প্রতিক্রিয়া ছিলো, “ধর্মনিরপেক্ষ শিশুদের আচরণই বরং অস্বাভাবিক।” তিনি মনে করেন, করিভিউর গবেষণাটি ম্যাসাচুসেটসের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ এলাকায় পরিচালিত হওয়ায় সেখানকার শিশুদের ফলাফলকে সাধারণ শিশুদের মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা ঠিক নয়।

তবে এক জায়গায় দুজন গবেষকই একমত—শিশুদের চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠার পেছনে পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে।

এই দুই গবেষকের বক্তব্য এবং গবেষণালব্ধ প্রমাণ পড়ার পর আমার কাছে যেটা স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো—শিশুরা একদিকে যেমন শোষণক্ষম, অন্যদিকে কিছু কিছু ধারণা তারা যেন জন্মগতভাবেই ধারণ করে। ব্যারেটের মতে, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে একজন সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর করিভিউর গবেষণা বলছে—এই বিশ্বাস আসলে শেখানো হয়।

আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো, শিশুদের মন একদম খোলা মাঠের মতো। সেখানে তারা যা দেখে, যা শোনে, তাই থেকে বিশ্বাস গড়ে তোলে। তারা কল্পনা করে, প্রশ্ন করে, শেখে—আর এই শেখার উৎস যদি হয় যুক্তি বা বাস্তবতা, কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস—তবে তার প্রভাব পড়বেই।
তাই হয়তো বলা যায়, শিশুরা জন্ম থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিশ্বাস নিয়ে আসে না, তবে তারা বিশ্বাস গড়তে সক্ষম একেকটি সম্ভাবনাময় চিন্তাশক্তির ধারক। তাদের সামনে বাস্তবতা, কল্পনা, ধর্ম এবং যুক্তি—সব কিছুরই পরিসর খুলে দিতে হবে, যেন তারা নিজের মতো করে বুঝে নিতে পারে কোনটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে।

আরওয়া আনাম

 

জান্নাতুল ফেরদৌসের সাহসী উদ্যোগ: পরিবেশবান্ধব ক্যাফে ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন

 

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় গেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে। প্রধান সড়কের পাশে একটি দালানের দ্বিতীয় তলার ছাদ যেন এক সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। গাছপালায় ঘেরা এই ছাদে রয়েছে একটি ক্যাফে, যার নাম “ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস”। এটি শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়; বরং এটি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন এক তরুণ উদ্যোক্তা—জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট যেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎনির্ভর, সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস একটি ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর ক্যাফের রান্নাঘর, আলোকসজ্জা এবং এমনকি কফি মেশিন পর্যন্ত চলে সৌরবিদ্যুতে। ছাদে বসানো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ক্যাফেটি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে আনে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায়ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, খাবার পরিবেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং সচেতন নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি জায়গাও তৈরি করেছে।

শুধু একটি ব্যবসা গড়ে তোলাই জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য নয়। তিনি তাঁর ক্যাফের লভ্যাংশের একটি অংশ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা সহায়তা, নারীদের ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।
জান্নাতুলের এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর লন্ডনপ্রবাসী বড় ভাই মঞ্জুর মিয়া। বিদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দেখে তিনি জান্নাতুলকে এই বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর জান্নাতুল গবেষণা ও পরিকল্পনা করে তাঁর এই ক্যাফে বাস্তবায়ন করেন।

বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক করছেন। তবে তার অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত—গত ৯ বছর ধরে তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য কেবল নিজে সফল হওয়া নয়; তিনি চান, বাংলাদেশের নারীরা আরও বেশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তিনি মনে করেন, নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে তাদেরকে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সমাজকে তাদের এই পথচলায় সহযোগিতা করতে হবে।
ভবিষ্যতে তিনি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে নারীরা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে পারবেন। তার বিশ্বাস, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও প্রয়োজন। শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না; বরং টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন এবং সচেতন জীবনধারার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

শিশুদের জন্য বিপজ্জনক একজিমা হারপেটিকাম

 

শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও আদর দেখানো আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এই অভ্যস্ত আচরণ কখনো কখনো শিশুদের জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে। একজিমা হারপেটিকাম (Eczema Herpeticum) নামক একটি ভয়ানক ভাইরাস বিশেষভাবে শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে থাকা হারপেস ভাইরাসের মাধ্যমে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ শিশুদের জীবনের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এবং এর উপসর্গগুলো যদি দ্রুত সনাক্ত না করা হয়, তবে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম: কি এবং কেন বিপজ্জনক?
একজিমা হারপেটিকাম একটি অত্যন্ত গুরুতর ভাইরাস যা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকতে পারে। অধিকাংশ মানুষ জানেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস থাকতে পারে। এই ভাইরাসের উপস্থিতি কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকতে পারে, এবং একসময় চুমু বা শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি শিশুদের মধ্যে প্রবেশ করে। শিশুর শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে, তা তাদের ত্বকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা ফুলে ওঠা লাল দাগ, ফোসকা, এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
একজিমা হারপেটিকামের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ যদি অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হয় তবে শিশুদের শরীরে ক্ষতি সাধন করতে পারে, বিশেষত মস্তিষ্ক বা চোখের মধ্যে, যা পরবর্তীতে স্থায়ী অঙ্গগত ক্ষতি হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম সাধারণত চুমু দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্করা জানতেও পারেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস আছে, এবং তারা সন্তানের প্রতি স্নেহ বা আদর দেখাতে গিয়ে unknowingly ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশ করাতে পারেন।

মেডিকেল বিজ্ঞানের মতে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চুমু এবং নিকট শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঘটে।

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার উপায়
মেডিকেল বিজ্ঞান এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, তবে আমাদের কয়েকটি সোজাসুজি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, অন্যের শিশুকে চুমু দেওয়া বা অযথা শারীরিক যোগাযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষত যদি আপনি জানেন যে আপনার শরীরে কোনো ভাইরাস বা সংক্রমণ থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শিশুদের যদি কোনো অস্বাভাবিক দাগ, লালতা বা ফোসকা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

একজিমা হারপেটিকাম বা অন্যান্য ভাইরাস শিশুদের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং এর প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর প্রতি ভালোবাসা এবং আদরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার বিষয়টিকে আমাদের কখনো অবহেলা করা উচিত নয়।

সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন এবং আপনার শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

 

মার্কিন পুরস্কার প্রত্যাখ্যানে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেলেন উমামা

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা উমামা ফাতিমাকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর অটল অবস্থানের জন্য তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষিত ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (IWOC) অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানানোর পর, সেই সাহসী অবস্থানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

গত শনিবার (২৯ মার্চ) রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারী শিক্ষার্থীদের সম্মিলিতভাবে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

উমামা ফাতেমা বলেন, “ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন জানানো এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে এই পুরস্কারটি বিতরণ করা হচ্ছে। যা এই পুরস্কারের নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই আমি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছি।”

এই সাহসী সিদ্ধান্ত ও নৈতিক অবস্থানের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন উমামা ফাতেমা। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণ ও বিভিন্ন প্রবাসী ফিলিস্তিনি সংগঠন তার এই অবস্থানকে সাহসিকতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে “ভয়হীন সংহতির কণ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সেই সঙ্গে তাকে একটি সম্মাননা স্মারকও প্রদান করা হয়, যা রামাল্লায় অবস্থিত ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন অনেকেই নীরব , তখন উমামা ফাতেমার মতো একজন তরুণীর পক্ষে থেকে এমন অবস্থান আমাদের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা দেয়। তিনি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন, তিনি আমাদের কণ্ঠও।”

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ’ পুরস্কার দিয়ে আসছে এবং ২০২৩ সাল থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’। ২০২৫ সালে এই গ্রুপ অ্যাওয়ার্ডটি বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাহসী নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।

তবে উমামা ফাতেমার নৈতিক অবস্থান এই সম্মাননাকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।

 

গুঁড়া তেলাপোকা দূর করার ৫টি কার্যকরী উপায়

 

গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব অনেকের জন্যই বিরক্তিকর। তবে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে ৫টি সহজ ও কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো—

১. বোরিক অ্যাসিড ও চিনি মিশ্রণ
এক চা-চামচ বোরিক অ্যাসিড, চিনি ও আটা মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করুন।

তেলাপোকার লুকিয়ে থাকার জায়গায় রাখুন।

এটি খেলে তেলাপোকা ধ্বংস হয়ে যাবে।

২. বেকিং সোডা ও চিনি ব্যবহার করুন
সমান পরিমাণ বেকিং সোডা ও চিনি মিশিয়ে তেলাপোকার চলাচলের স্থানে ছিটিয়ে দিন।

চিনি তেলাপোকাকে আকৃষ্ট করবে, আর বেকিং সোডা খেলে তারা মারা যাবে।

৩. লবণ ও ভিনেগার স্প্রে করুন
এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ লবণ ও দুই চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন।

তেলাপোকা দেখলেই সরাসরি এটি স্প্রে করুন, দ্রুত প্রভাব পড়বে।

৪. ঘর পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
রান্নাঘর ও বাথরুম সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন।

খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা দ্রুত পরিষ্কার করুন।

তেলাপোকার লুকানোর সম্ভাব্য স্থান, যেমন ক্যাবিনেট ও সিঙ্কের নিচের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

৫. ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার ব্যবহার
তেলাপোকা ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

তেলাপোকার চলাচলের স্থানে পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার পাতা রাখুন।

পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার তেলের কয়েক ফোঁটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাবেন।

উপরের উপায়গুলো নিয়মিত কাজে লাগালে সহজেই গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী: নারীর কণ্ঠে গাজার মুক্তির ডাক

 

ঢাকার রাজপথ যেন সেদিন রূপ নিয়েছিল গাজা উপত্যকার প্রতিচ্ছবিতে। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান—চারপাশে ছিল ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিরোধের আগুন। শত সহস্র মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল অবিচারের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ। সেই স্বরলিপিতে নারীর কণ্ঠ ছিল অনস্বীকার্য ও দৃঢ়—মমতার মাটি থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের উচ্চারণ, যেখানে প্রতিটি পা যেন গাজায় নিহত এক শিশুর জন্য ন্যায়ের দাবি হয়ে গর্জে উঠেছে।
২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নেন। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সমাবেশে নারী-পুরুষের কণ্ঠ এক হয়ে উচ্চারিত হয়েছে: “ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে আছি”।

ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এমনকি নারায়ণগঞ্জের মদনপুর বা কেরানীগঞ্জ থেকেও নারীরা যোগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা—সবাই একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে।
মনিকা নামের এক নার্সিং শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যত দূরেই থাকি, গাজার জন্য এই মুহূর্তে পাশে থাকা মানেই প্রতিবাদ।” নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৬১ বছরের শান্তা বেগম বললেন, “ফোনে ইউটিউবে দেখে জানলাম গাজার কথা, তাই এসেছি।”
প্রকৌশলী সোনিয়া খান প্রশ্ন তুলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে চুপ থাকা মানেই তা সমর্থন করা।” কেরানীগঞ্জের শিক্ষক মাবিয়া আক্তার জানান, “আমরা বাংলাদেশি নারীরাও মুসলিম উম্মাহর পাশে আছি।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের নারীদের কান্না ও শিশুদের নিথর দেহ দেখে অনেকেই আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি।

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত এ সমাবেশে নারীদের দৃপ্ত অংশগ্রহণ জানিয়ে দিল—তারা শুধু ঘরের নয়,মানবতার প্রশ্নে তারা সদা সবখানে জাগ্রত।
সোহরাওয়ার্দীর প্রান্তর সাক্ষী হয়ে রইল সেই অঙ্গীকারের—মানবতার বিরুদ্ধে কোনো জুলুম মেনে নেবে না এ প্রজন্ম।
আর গাজার ধ্বংসস্তূপের গায়ে হয়তো একদিন এই কণ্ঠগুলোর প্রতিধ্বনি পৌঁছে যাবে, জানিয়ে দেবে—তারা একা ছিল না। অস্ত্র নয়, ভালোবাসা ও প্রতিবাদের ভাষা নিয়েই
বাংলাদেশের নারীরাও তাদের পাশে ছিল।

 

ধর্ষণ আইন সংশোধন: বলাৎকারও ধর্ষণের আওতায়, অর্থদণ্ড বাড়ানো হলো

 

সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যেখানে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলাৎকারকেও ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার বিধান করা হয়েছে।

নতুন আইনে বলাৎকারকেও ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার ফলে নারী, শিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুর ক্ষেত্রেও এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, যা পূর্বে ছিল ৬০ কার্যদিবস। প্রয়োজনে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া যেতে পারে। বিচার কার্যক্রম অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

ধর্ষণের শাস্তি পূর্বের মতোই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড থাকবে। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে আগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হতো, যা বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে নারী বা শিশুকে হত্যা বা বিকৃত করার অপরাধে অর্থদণ্ড ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুকে মারাত্মক জখম করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, কারো ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিতে পারবে এবং শাস্তি দিতে পারবে। এই অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।
শিশু ধর্ষণের মামলার জন্য প্রতি জেলায় ও মহানগরে পৃথক শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

যৌতুকের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আওতার বাইরে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, নতুন আইনে বলাৎকারকে ধর্ষণের আওতায় আনা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “অর্থদণ্ড বাড়ানোর ফলে সাজা কার্যকর হওয়ার হার কমে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া জামিনের সুযোগ নিয়ে আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে, যা বিচারের কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।”
এই সংশোধনী আইন বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কঠোর ও দ্রুত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই এর সফলতা নিশ্চিত করবে।

 

তালবিনা: শরীর ও মনের প্রশান্তির এক পরিপূর্ণ খাবার

 

আধুনিক জীবনের ক্লান্তি, মানসিক চাপ আর শরীরের দুর্বলতার মাঝে আমরা অনেকেই খুঁজে ফিরি এমন কিছু—যা প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর এবং একইসাথে আত্মার প্রশান্তিও দেয়। ঠিক এমন একটি উপকারী খাবার হচ্ছে তালবিনা। এটি এমন এক খাবার, যা শুধু শরীরকে নয়, মনের অস্থিরতাকেও প্রশমিত করে।
তালবিনা হল যবের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একধরনের তরল খাবার, যা ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে এসেছে,
“তালবিনা রোগীর মনকে প্রশান্ত করে এবং তাকে শক্তি জোগায়।” — (সহীহ বুখারী)

এই একটি হাদীস থেকেই বোঝা যায় তালবিনার গুরুত্ব কতটা গভীর। তালবিনা এমন এক খাবার, যা শরীরকে দেয় প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি, আর মনকে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। এটি হজমে সহায়ক, পেটের সমস্যা দূর করে এবং মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।

তালবিনা তৈরির সহজ রেসিপি
তালবিনা বানানোর ঘরোয়া ও সহজ রেসিপি:

উপকরণ
যবের গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
দুধ – ১ কাপ (চাইলে পানি বা দুধ-পানির মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে)
মধু – ১ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
খেজুর কুচি – ২-৩টি (ঐচ্ছিক)
ছোট এলাচ – ১টি (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালি:
একটি হাঁড়িতে যবের গুঁড়া ও দুধ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে
অল্প আঁচে রান্না করতে থাকুন। চামচ দিয়ে ঘনঘন নাড়তে থাকুন যেন নিচে লেগে না যায়।
মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে খেজুর কুচি ও এলাচ দিন।প্রাকৃতিক সুগন্ধ ও মিষ্টতা পেতে রান্না শেষে মধু মিশিয়ে দিন।

গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। চাইলে উপরে কিছু বাদাম কুচি বা কিশমিশ ছিটিয়ে নিতে পারেন।

কেন তালবিনা খাবেন?
তালবিনা শুধু অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নয়, বরং প্রতিদিনকার সুস্থ জীবনের জন্যও এক অসাধারণ খাবার। এটি শিশু, বয়স্ক, নারী বা পুরুষ—সবার জন্য উপযোগী। নিয়মিত খেলে হজমশক্তি বাড়ে, মন ভালো থাকে এবং শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়।
আপনি কি আজ থেকেই তালবিনাকে আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে প্রস্তুত?

 

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ: রাষ্ট্রীয় দায় ও করণীয়

বাংলাদেশ উন্নয়নের এক ক্রমবর্ধমান পথে হাঁটছে—এই কথা আমরা প্রতিদিন শুনি, দেখি, পড়ি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৪ সালের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ সমতায় শীর্ষে এবং বৈশ্বিকভাবে ৯৯তম অবস্থানে রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। তবে এই অগ্রগতি ও অর্জনের গর্বের মাঝেই রয়ে গেছে কিছু গোপন, কষ্টকর ও ভয়াবহ প্রশ্ন—এই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীরা কোথায়? তাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা কি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পেরেছে?

বছরের শুরু থেকে বছরের শেষে, ধর্ষণের পরিসংখ্যান প্রতিদিনের সংবাদের এক করুণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪০১ জন নারী ও শিশু। শুধু জানুয়ারি মাসেই সংখ্যা ছিল ৩৯, আর ফেব্রুয়ারিতে ৪৮। এটি নিছক সংখ্যা নয়—প্রতিদিন ঘটে যাওয়া যন্ত্রণার দলিল। প্রতিটি ঘটনায় কেঁপে উঠে একটি জীবন, একটি পরিবার। সমাজে ধর্ষণ এখন এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই আর বিস্মিতও হন না—এটা যেন এক ভয়ানক সহনশীলতা তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা গেছে কিছুটা পরিবর্তন। দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। বিভিন্ন সংগঠন সংস্কারের কথা বলছে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে যারা সম্ভাবনার কথা বলছে, বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে নারী কি সেই স্বপ্নের অংশ হতে পেরেছে? যৌন সহিংসতা, নারী নিপীড়নের হার কি কমেছে? নারীর নিরাপত্তাবোধ কি বেড়েছে? বরং প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা ও খবরে তার বিপরীতটাই প্রমাণ হয়। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এখন শুধু ঘর-বাড়ি বা রাস্তায় নয়, ভার্চুয়াল জগতেও নারীর অস্তিত্বকে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভিউ বাড়ানো’ বা ‘ট্রেন্ডিং’ হওয়ার নামে যেসব ভিডিও তৈরি হয়, তার অনেকগুলোতেই নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্বেষপূর্ণ উপস্থাপন রয়েছে। সেইসঙ্গে ততাকথিত ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলেও নারীকে বস্তু হিসেবে বর্ণনা করে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়, তা শোনে কিশোর-তরুণরা বেড়ে উঠছে একটি ভিন্ন মনস্তত্ত্ব নিয়ে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিয়ন্ত্রণে কতটুকু সক্রিয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই সমাজে নারী বিদ্বেষ এখন আর গোপন নয়—তা আজ প্রতিষ্ঠিত, স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ধর্ষণ, নিপীড়ন এখন আর লজ্জাজনক বিষয় নয়—বরং ক্ষমতার প্রকাশের এক নোংরা উপায়।

এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন যেন ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘নারী নিপীড়ন’ বলা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—একটি ভয়াবহ অপরাধকে শব্দচয়নের মাধ্যমে কীভাবে হালকা করে দেখানো যায়? ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ, এবং একে তার প্রকৃত নামে ডাকা উচিত। শব্দের রাজনীতি দিয়ে অপরাধের ভয়াবহতা ঢেকে রাখা যায় না।

এই ক্রমাগত সহিংসতা রোধে শুধু আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন পরিবারে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শিশুরা নির্ভয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে। শিশুদের জানাতে হবে কীভাবে তারা যৌন সহিংসতার শিকার হতে পারে, কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, শিশুদের এসব শেখানো কি ঠিক? কিন্তু বাস্তবতা হলো ধর্ষক কিন্তু কখনো শিশুর বয়স দেখে থামে না। তাই এই লড়াইয়ে শিশুদের অন্ধকারে রাখা মানে তাদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া।

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। শুধুমাত্র আইন ও পুলিশ দিয়ে এই ব্যাধিকে দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমাজে নারীর অবস্থান, মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে নতুন চিন্তা, শিক্ষা ও সচেতনতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, গণমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সবকিছুর সমন্বয়ে নারীর মর্যাদার পক্ষে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি।

এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তাদের নিজ নিজ আদর্শিক অবস্থান থেকে নারীর অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আন্তর্জাতিক লিঙ্গসমতার মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে, আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা আজ এমন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে উন্নয়নকে সত্যিকার অর্থে টেকসই করতে হলে নারীকে নিরাপদ করতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হয় না, যদি সেই রাষ্ট্রের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
বিশ্বাস রাখতে চাই, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে। ধর্ম, গোষ্ঠী, পেশা বা অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী প্রতিটি নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের ঈদ পূনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান

ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিমদের জন্য অন‍্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।কিন্তু পবিত্র রমজানে গাজাবাসীদের প্রতি ইজরায়েলের হামলা আর শিশু হত‍্যা ঈদের আনন্দকে বেদনায় পরিনত করেছে।আমরা গভীর সমবেদনার সাথে মুসলিম ভাই বোনদের স্মরণ করছি-
৯ এপ্রিল, বুধবার নারী অধিকার আন্দোলন কতৃক আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদ্র জন‍ দোয়া অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মাননান।গুলশানে আয়োজিত উক্ত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে
অন‍্যান‍্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন-
নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম, নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার, নারী অধিকার আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি ডা.তাহেরা বেগম,সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী প্রফেসর শামীমা তাসনিম,সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা বকুল।
দেশীকের প্রিন্সিপাল নুরুন্নিসা সিদ্দিকা প্রমুখ।
নুরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন-
মসজিদুল আকসা আমাদের জন‍্য ঐতিহাসিক মসজিদ। তিনটি মসজিদকে কেন্দ্র করে ভ্রমন করা যায়। তা হলো- মসজিদুল হারাম, মসজিদুননবীও আকসা।
মসজিদুল আকসার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। আর এ পরীক্ষায় ঈমানদাররাই বিজয়ী হবে।
তাই আমাদের সার্বক্ষণিক দোয়া ও গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে ঈমানের হক আদায় করতে হবে।

নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম হাদীসের সর্কতবনী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ আল্লাহর ক্ষমা হাসিল করতে পারল না তার উপর আল্লাহর লানত। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন আল্লাহর লানতের মধ্যে না পড়ে যায় কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর লানতের মধ্যে পড়ে যাবে তার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়েই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।সুতরাং আমাদেরকে রমজান পরবর্তী জীবন আচরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে রমজানের শিক্ষা আমরা বাকি এগারো মাস মেনে চলতে পারি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সভানেত্রী শামীমা তাসনিম বলেন আমাদেরকে চিন্তা করে দেখতে হবে কেন ফিলিস্তিনে আজ এই অবস্থা। আমরা মুসলমানরা আমাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়েছি তাই আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করছেন। আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়েছি এবং দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে এবং দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সেক্রেটারি ফেরদৌস আর বকুল ফিলিস্তিনের শিশুদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন ।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মানারাত স্কুলের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মুশফেকা রহমান, নারী উদ্যোক্তা হাবিব হাসনাত চৌধুরী, অন্বেষণ স্কুলের সাবেক প্রিন্সিপাল শিউলি খান,বেগম শারমিন সিদ্দিকী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী আফিফা মুশতারী।

ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অধিবাসী এবং যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য আবেগঘন পরিবেশে দোয়া পরিচালনা করেন ডাক্তার আমেনা বেগম।

সবশেষে নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও দোয়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

 

গণপরিবহনে নারীর সুরক্ষায় চালু হলো ‘HELP’ অ্যাপ

 

নারীর সুরক্ষায় প্রযুক্তির আরেকটি অগ্রগতি—‘HELP’ (Harassment Elimination Literacy Program) নামে একটি অ্যাপ চালু হয়েছে যা গণপরিবহনে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (BJC) এবং সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই অ্যাপের মাধ্যমে নারী যাত্রীরা চলন্ত বাস বা গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারবেন এবং অভিযোগ জানাতে পারবেন।

গত ১৫ মার্চ রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “অনেক সময় ভুক্তভোগীরা নিপীড়নের ঘটনা জানাতে দ্বিধা বোধ করেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে আসা অভিযোগগুলো এখন থেকে সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “একজন নারী নিপীড়নের শিকার হলে, শুধু সেই নারী নয়—পুরো সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

এই অ্যাপটি প্রাথমিকভাবে ঢাকার বছিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলেও, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে নারী যাত্রীরা এর সেবা নিতে পারবেন।
নারীর নিরাপত্তায় এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী। আশা করা যায়, এই অ্যাপ নারীদের চলাফেরায় নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

 

গাজার সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা হুসাইনি

যুদ্ধের ধুলোবালিতে ঢাকা এক জনপদ, যেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে ধ্বংসস্তূপের ওপরে, যেখানে শিশুর কান্না মিশে যায় বোমার বিস্ফোরণে, যেখানে জীবন মানে এক অনিশ্চিত অপেক্ষা। গাজার সেই অগ্নিগর্ভ মাটিতে, ভয় আর মৃত্যুর মাঝেও কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন সত্যের জন্য। তাদের হাতেই রচিত হয় ইতিহাসের সেই অধ্যায়, যা দুনিয়ার শক্তিমানরা মুছে ফেলতে চায় বারবার।
এমনই এক সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা নাজিহ আল হুসাইনি—একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, একজন
মানবাধিকার কর্মী, এক অকুতোভয় কণ্ঠস্বর, যিনি ভয়কে জয় করে বারবার বলেছেন, “আমার কণ্ঠ যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, তোমরা চুপ থেকো না!”

মাহা নাজিহ আল হুসাইনি একজন সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংবাদ প্রচার করে আসছেন। জন্ম কায়রোতে হলেও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি হামলার সময় থেকে তিনি গাজার ঘটনাবলী কভার করতে শুরু করেন। তার বিশ্বাস, সংবাদ দেখা বা না দেখার ওপর যুদ্ধ থামা-না থামার কোনো সম্পর্ক নেই, বরং সাংবাদিকদের দমন করেই ইসরায়েল গাজার সত্য ঘটনাগুলো আড়াল করতে চায়।

সংবাদ মাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে মাহা সচেতন। তিনি জানেন, যে কোনো শাসকগোষ্ঠী খবর ধামাচাপা দিতে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংবাদ পরিবেশনার ঝুঁকি নেওয়া একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ‘মিডল ইস্ট আই’ ও ‘দ্য নিউ হিউম্যানিটেরিয়ান’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন এবং ‘ইউরো মেড মনিটর’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

নারী সাংবাদিকদের ভূমিকা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বজুড়ে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও, আন্দোলনের পর তাদের ভূমিকা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। মাহাও ব্যতিক্রম নন। তিনি মার্টিন এডলার পুরস্কার পেয়েছিলেন, আবার ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন সাহসী সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেও তা বাতিল করে, কারণ তার মতামত প্রতিষ্ঠানটির নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।
এ নিয়ে মাহা বিদ্রূপ করে বলেছিলেন, “সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দিল, কিন্তু চাপের মুখে নিজেরাই সাহস হারিয়ে ফেলল!”

তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। বিশেষ করে হামলার কারণে বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে তার গবেষণা ছিল আলোচিত। তিনি দেখিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দিত্ব, পরিবার হারানো ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসবাসের ফলে বহু ফিলিস্তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরীর উক্তি মনে পড়ে, ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টার রাখা হয়, আত্মার হয় না।’

মাহা মনে করেন, সাংবাদিকতা তার কাছে শুধু পেশা নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার একমাত্র উপায়। তিনি বারবার বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেন, যদি তার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়, তবে বাকিরা যেন নীরব না থাকে, বরং প্যালেস্টাইনের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলতে থাকে।
যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে মাহা বলেছেন, ‘আমি আমার জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি, শুধু এই একটি মুহূর্তের জন্য—শুভ সকাল গাজা।’

ইতিহাস হয়তো তার মতো সাংবাদিকদের ভুলে যাবে, কিন্তু মাহা লড়ে যাচ্ছেন, সত্য প্রকাশের জন্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যই এবারের মূল বার্তা

 

৭ এপ্রিল, রোববার—বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য— ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’—এই স্লোগানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উপর।

বাংলাদেশে এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, গণ-আন্দোলন পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি উল্লেখ করেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারের বর্তমান চিত্র এখনো উদ্বেগজনক, যা আমাদের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৫ সালে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-র আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে দেশে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের এই দিনে(৭এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে রেখে দিবসটির আয়োজন করা হয়, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

 

বিশ্ব থেমে গেল গাজার জন্য

 

৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশ্ব সাক্ষী হলো এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির — ‘The World Stops for Gaza’। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন স্তরে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত—সব জায়গাতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই বার্তা: “গাজা বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও।”
শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট, প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা জানিয়ে দিয়েছে—“গাজা নিঃসঙ্গ নয়”।

বাংলাদেশেও এই আন্দোলনের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ঢাকার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে আজকের দিনজুড়ে গাজার প্রতি সংহতির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ধর্মঘট পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের এ মানবিক অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোট (PUSAB) উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজন করে। এছাড়াও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, চুয়েটসহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও নীরব প্রতিবাদে অংশ নেয়।

এছাড়া;বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ঢাকায় ‘গাজা বিষয়ক সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ’ কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনটি গাজায় চলমান গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানায়। শিবিরের বিভিন্ন ইউনিট আজ র‍্যালি, লিফলেট বিতরণ ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামীকাল ৮ এপ্রিল দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ফিলিস্তিনে আজ পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বহু দেশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণগ্রেফতার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

‘The World Stops for Gaza’ কর্মসূচি যেন এক নতুন প্রতিবাদের ভাষা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসী গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জবাবদিহির দাবি তুলেছে।

মানবতার জন্য, শান্তির জন্য, এবং নিষ্পেষিত মানুষদের জন্য—আজ থেমে গেছে বিশ্ব। এবং এই থেমে যাওয়া যেন হয়ে উঠেছে আরও শক্তভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

 

ফ্রাঙ্কা ভিওলা: নীরবতার দেয়াল ভেঙে যিনি আইন বদলালেন

 

১৯৬৫ সাল, ইতালির সিসিলির ছোট শহর আলকামো। মাত্র ১৭ বছরের কিশোরী ফ্রাঙ্কা ভিওলাকে অপহরণ করে তার সাবেক প্রেমিক ফিলিপ্পো মেলোদিয়া। দিনের পর দিন আটকে রেখে চলে বর্বর যৌন নির্যাতন। উদ্দেশ্য একটাই—ফ্রাঙ্কাকে বিয়ে করে ধর্ষণের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

কারণ তখন ইতালির আইনে ধর্ষণকে ‘ব্যক্তিগত অপরাধ’ হিসেবে নয়, ‘নৈতিকতার লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ফলে ধর্ষক যদি ধর্ষিতাকে বিয়ে করত, তবে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকত না, শাস্তিও হতো না।

কিন্তু ফ্রাঙ্কা ভিওলা সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করেননি। সামাজিক রীতি, ভয় ও লজ্জার দেয়াল ভেঙে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা করেন মেলোদিয়ার বিরুদ্ধে। তার পাশে ছিলেন তার পরিবার। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর ফিলিপ্পো মেলোদিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার সহযোগীদের ৪ বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়। মেলোদিয়া ১৯৭৬ সালে কারামুক্ত হলেও, ১৯৭৮ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

ফ্রাঙ্কার এই সাহসী অবস্থান কেবল ইতালিকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বদলে দিয়েছে আইনের ধারা। তবে পুরোপুরি বদল আসতে সময় লেগেছে। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করলে দায় মাফের আইন বাতিল হয় ১৯৮১ সালে। আর ১৯৯৬ সালে ধর্ষণকে ‘নৈতিকতা বিরোধী’ নয়, ‘ব্যক্তির প্রতি অপরাধ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইতালির আইন।

বর্তমানে ফ্রাঙ্কা ভিওলা ৭৭ বছর বয়সী। ১৯৬৮ সালে তিনি জিউসেপ্পে রুইজি নামের একজনকে বিয়ে করেন। এখনো আলকামোতেই বসবাস করছেন, তিন সন্তান নিয়ে গড়ে তুলেছেন এক শান্ত, সম্মানিত জীবন।

সূত্র: BBC, The Guardian, Wikipedia

 

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নারী গ্রেফতার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র: ইফতার করতে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এজেন্টদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তুরস্কের ডক্টরাল শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ক। তার গ্রেফতারের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দেখা গেছে।

২৫ মার্চ ২০২৫, ম্যাসাচুসেটসের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ককে সাদা পোশাকধারী ICE এজেন্টরা কোনো ওয়ারেন্ট বা আনুষ্ঠানিক কারণ না দেখিয়েই গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টা ধরে তার অবস্থান অজানা ছিল। পরে জানা যায়, তাকে ১,৫০০ মাইল দূরের লুইজিয়ানার বাসিলের এক আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এই স্থানান্তর আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছিল তাকে ম্যাসাচুসেটসেই রাখা হবে।

ICE কর্তৃপক্ষ বলছে, ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করেছেন, যদিও তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ওজতুর্কের সহপাঠী ও সহকর্মীরা জানান, তিনি শুধুমাত্র প্রো-প্যালেস্টাইন মতবাদ সমর্থন করতেন এবং কিছু মতামত প্রকাশ করেছিলেন, যা কোনোভাবেই বেআইনি ছিল না।

রুমেইসা ওজতুর্কের গ্রেফতারের প্রতিবাদে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে।

ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া ক্যাম্পবেল এই গ্রেফতারকে “বিরক্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, “এটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে একজনকে লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও প্রো-প্যালেস্টাইন সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অংশ। তারা অবিলম্বে ওজতুর্কের মুক্তি দাবি করেছে।

 

দেশে দেশে ঈদ উদযাপন

 

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটো ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অভ্যস্ততা অনুযায়ী। যদিও ঈদে কিছু মৌলিক আচার এবং প্রথা পৃথিবীজুড়ে এক থাকে, তবে প্রতিটি দেশের ঈদ উদযাপনের ধরন ও আয়োজন আলাদা। ঈদ সাধারণত আনন্দ, কৃতজ্ঞতা এবং পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়ার দিন।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ঈদ কেমনভাবে উদযাপিত হয়।

বাংলাদেশে ঈদ
বাংলাদেশে ঈদ বিশাল উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে যান। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ দিনে বাঙালি পরিবারের বাড়িতে নানা ধরণের মজাদার খাবার প্রস্তুত হয়, যার মধ্যে সেমাই, কোরমা, বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি জনপ্রিয়। ছোটরা ঈদ সালামি পেয়ে থাকে এবং ঈদের দিনটি পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সৌদি আরবে ঈদ
সৌদি আরবেও ঈদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সেখানে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি উপহার পাঠানো এবং গরীবদের সহায়তা করা একটি প্রচলিত রীতি। মুসলিমরা সকালে ঈদের নামাজ পড়েন এবং তার পর নানা ধরণের মিষ্টান্ন ও খাবারের আয়োজন হয়। বিশেষ করে, মুগলগাল, ঘুরাইবাহ ও জেরিশ খেতে পছন্দ করেন তারা। সৌদিরা মিষ্টি খাবারের জন্য ‘মিষ্টি ঈদ’ হিসেবেও পরিচিত।

ভারত ও পাকিস্তানে ঈদ
ভারত এবং পাকিস্তানে ঈদ উদযাপনের আচার বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে অনেকটা মেলে। এখানে সাধারণত ঈদের নামাজের পর পরিবারের সঙ্গে উপহার বিনিময়, মিষ্টি খাবার খাওয়া এবং ঈদ সালামি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও, রুটি এবং পরোটা থাকে। এই দুই দেশেই ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকে, এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

তুরস্কে ঈদ
তুরস্কে ঈদ ‘সেকের বায়রাম’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘চিনির উৎসব’। এখানে ঈদ সাধারণত পরিবারের মধ্যে সমবেত হয়ে উদযাপিত হয়। তুর্কিরা একে অপরকে ‘বায়রামিনিজ মুবারেক ওলসুন’ বা ‘বায়রামিনিজ কুতলু ওলসুন’ বলে শুভেচ্ছা জানায়। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও এবং পিঠা প্রধান, এবং সারা দেশজুড়ে অনেক ঐতিহ্যগত আনন্দের আয়োজন থাকে।

নাইজেরিয়ায় ঈদ
নাইজেরিয়ায় ঈদ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সবাই সকাল বেলা মসজিদে জামায়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা প্রায়ই একে অপরকে উপহার দেয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘জেলা ফ্রাই রাইস’, ‘মাংসের শুয়া’, এবং ‘পটেটো স্যালাড’ খায়। এখানে স্থানীয় ভাষায় ‘ইদুল ফিতর’ বলা হয় এবং দিনটি সপরিবারে ঘর সাজানো আর উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়।

মিশরে ঈদ
মিশরের ঈদ উদযাপনটি মূলত পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একত্রিত হয়ে খাবার খেয়ে এবং আনন্দ উদযাপন করে। তারা সাধারণত ‘ফাত্তার’ নামক একটি বিশেষ খাবার তৈরি করে, যা ভাত, মাংস এবং রুটি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। মিশরে ‘কুনাফা’ নামক একটি মিষ্টান্ন খাওয়া হয় যা অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিশুদের নতুন জামাকাপড় দেওয়া এবং উপহার দেওয়া এই দেশে একটি প্রচলিত রীতি।

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ ‘লেবারান’ নামে পরিচিত। এখানে সবাই ঈদের আগের দিনগুলিতে ঈদের প্রস্তুতিতে নিতে ব্যস্ত থাকে, আর লোকজন শপিং মলগুলিতে ভিড় করে। ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ খাবারের মধ্যে ‘ল্যাপিস লেজিট’ কেক এবং ‘এস টেম্বাক’ মাংস থাকে। ঈদের দিন, পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে উপহার বিনিময় করে, দয়া ও সহানুভূতি পরিপূর্ণ পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে।

আরব আমিরাতে ঈদ
আরব আমিরাতে ঈদ অনেকটাই সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পূর্ণ। ‘ওউজি’ নামে একটি বিশেষ খাবার এ দিনে জনপ্রিয়, যা ছাগলের মাংস ও ভাতের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়। অন্যান্য খাবারের মধ্যে পাইন বাদামও রয়েছে। এছাড়াও, আমিরাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শো সহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক আয়োজন করা হয়।

মালয়েশিয়ায় ঈদ
মালয়েশিয়ায় ঈদ উদযাপনের আগের দিনটি বেশ ব্যস্ত থাকে। পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন কেটুপাট, কুইহ রায়া, লেমাং, এবং রেন্ডিং প্রস্তুত করে। ঈদে ‘উন্মুক্ত ঘর’ নামক একটি ঐতিহ্য প্রচলিত যেখানে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে এবং আনন্দে মেতে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ
যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে বহু সংস্কৃতি মিশ্রিত, মুসলিমরা ঈদ উদযাপন করেন মসজিদে নামাজ পড়ে এবং এরপর পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে উপহার বিনিময় করে। এখানে অনেক মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস প্রকল্পে অংশ নেয় এবং গরিবদের সাহায্য করে। এই দেশের বড় শহরগুলোতে ঈদ উদযাপন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাবারের স্টল এবং শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।

আইসল্যান্ডে ঈদ
আইসল্যান্ডে মুসলমানরা একটি ছোট সম্প্রদায় হলেও ঈদ উদযাপনটা বেশ আনন্দমুখর হয়। এখানে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন খাবার উপভোগ করে। শিশুরা নতুন পোশাক পরিধান করে এবং উপহার বিনিময় করে।

ঈদ উদযাপন পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ আমাদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং বন্ধন শক্তিশালী করার একটি দিন। আমরা যেখানে থাকি না কেন, ঈদ আমাদের মধ্যে ঐক্য এবং সমবেত আনন্দের এক অনবদ্য অনুভূতি সৃষ্টি করে।
সবার ঈদ আনন্দময় ও সফল হোক, ঈদ মোবারক!

 

ঈদ তো সবার জন্য!

 

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। এক মাস রোজার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর, যে দিনটিতে সবাই নতুন জামা পরে, সুস্বাদু খাবার খায়, পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষের জন্য ঈদ যেন আরেক রকম কষ্টের নাম। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা, যারা দিনরাত পরিশ্রম করেও নিজেদের আর পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন না। তাদের কাছে ঈদ মানেই নতুন দুশ্চিন্তা—কীভাবে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে ছেলেমেয়েদের ছোট্ট একটা চাহিদা পূরণ করবেন।

“সারাদিন কষ্ট করি, তবু ঈদে নতুন শাড়ি জোটে না”
কল্পিত চরিত্র: সন্ধ্যা বেগম(পোশাক কারখানার কর্মী)
সন্ধ্যা বেগম শহরের এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ছোট ছেলেকে পাশের বাসায় রেখে কাজে যান, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। সামান্য বেতনের এই চাকরিটাই তার সংসারের একমাত্র ভরসা। ঈদ আসছে, সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত, অথচ সন্ধ্যা জানেন, এবারও তার নিজের জন্য নতুন শাড়ি কেনার সামর্থ্য হবে না।
‘সারাদিন কষ্ট করি, কিন্তু নিজের জন্য কিছু রাখতে পারি না। মাইয়ারে একটা জামা কিনে দিছি, এইটাই শান্তি। নিজের কথা ভাবার সময় কই!’—বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে যায়।

“ঈদে ছেলেটারে ভালো কিছু খাওয়াইতে পারমু কিনা জানি না”
কল্পিত চরিত্র: রোকেয়া খাতুন (গৃহপরিচারিকা)
রোকেয়া খাতুন মানুষের বাসায় কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রান্না-বান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা—এভাবেই তার দিন কাটে। তিনি জানেন, যাদের বাসায় কাজ করেন, তারা ঈদের দিন ভালো খাবার খাবেন, নতুন জামা পরবেন। কিন্তু তার নিজের ছেলের জন্য ভালো কিছু রান্না করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই তার চিন্তা।
‘ঈদের দিন আমার ছেলেটা আশা করে ভালো কিছু খাবো, কিন্তু কয়দিন ধইরা হিসাব কইরা দেখতাছি, পারমু কিনা জানি না। নিজের জন্য তো ভাবি না, শুধু ওর মুখের দিকে তাকাই।’

“ঘরের চাল ঠিক করার টাকা নাই, ঈদ কেমনে করমু?”
কল্পিত চরিত্র: শাহিদা বেগম (ইটভাটার শ্রমিক)
শাহিদা বেগম কাজ করেন ইটভাটায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা পান, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তার ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে, বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। ঈদের দিন নতুন কাপড় কেনার স্বপ্ন তার নেই, বরং চিন্তা একটাই—ঘরের চালটা মেরামত করতে পারবেন কি না।
‘আমাগো ঘরে হুরকা বাতাস আইলেই পানি পড়ে, এইটা ঠিক করার টাকা জমাইতে পারি না। আবার ঈদ নিয়া ভাবমু কেমনে! ঈদ তো কেবল পয়সাওয়ালাদের জন্য।’

আমরা কি পারি না তাদের মুখে হাসি ফোটাতে?
ঈদ মানে শুধু নিজের আনন্দ না, বরং সবার মাঝে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের আশেপাশের এসব সুবিধা বঞ্চিত নারীরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও ঈদের দিনে একটু সুখের মুখ দেখেন না। তাদের কাছে ঈদ আসে, কিন্তু আনন্দ নিয়ে আসে না।
আমরা যদি একটু সহমর্মিতা দেখাই, তবে তাদের ঈদটাও আনন্দময় হতে পারে। কেউ যদি একজোড়া নতুন জামা কিনে দেয়, কেউ যদি এক প্লেট ভালো খাবার ভাগ করে নেয়, তবেই হয়তো তাদের মুখে একটু হাসি ফুটবে। ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণ হবে, যখন এই শ্রমজীবী নারীরাও বলবেন—‘আমাগোও ঈদ আছে!’

 

ঈদ স্পেশাল চিকেন রোস্ট

 

ঈদ মানেই আনন্দ, আর আনন্দের পরিপূর্ণতা আসে সুস্বাদু খাবারের মাধ্যমে। উৎসবের টেবিলে রোস্টের সুগন্ধ না থাকলে যেন জমেই না! তাই আপনাদের জন্য রইলো এক বিশেষ স্বাদের ঈদ স্পেশাল চিকেন রোস্টের রেসিপি, যা আপনার উৎসবের আমেজকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

উপকরণ:
১টি আস্ত মুরগি (১ কেজি, মাঝারি টুকরা করে নেওয়া যাবে)
৩ টেবিল চামচ টক দই
২ টেবিল চামচ তেল বা ঘি
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া
১ চা চামচ জিরা গুঁড়া
১ চা চামচ ধনে গুঁড়া
১/২ চা চামচ দারচিনি গুঁড়া
১/২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
১ চা চামচ আদা-রসুন বাটা
১/২ কাপ পেঁয়াজ কুচি
১/২ কাপ টমেটো কুচি
১/৪ কাপ কাঁচামরিচ কুচি
২ টেবিল চামচ মধু বা চিনি
১/২ কাপ তরল দুধ (ক্রিমি স্বাদ আনতে)
২ টেবিল চামচ সয়া সস (ঐচ্ছিক)
লবণ স্বাদমতো
কাজু ও কিশমিশ (গার্নিশের জন্য)

প্রণালী:
প্রথমে মুরগিটি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
একটি বাটিতে দই, হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে, দারচিনি, গরম মশলা, আদা-রসুন বাটা, মধু/চিনি, সয়া সস ও লবণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
সবকিছু মুরগির সাথে ভালোভাবে মেখে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রেখে দিন (যদি সম্ভব হয়, রাতভর রাখলে স্বাদ আরও বাড়বে)।

একটি প্যানে তেল বা ঘি গরম করে পেঁয়াজ কুচি করে দিন। পেঁয়াজ সোনালি হলে টমেটো ও কাঁচামরিচ দিয়ে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

ম্যারিনেট করা মুরগি দিয়ে মাঝারি আঁচে কষিয়ে নিন, যতক্ষণ না মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করে।

এবার অল্প আঁচে ঢেকে ১৫-২০ মিনিট রান্না করুন, মাঝে মাঝে নেড়ে দেবেন যাতে নিচে লেগে না যায়।
এরপর ১/২ কাপ গরম পানি দিন এবং ঢেকে দিন। আরও ২০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না মুরগি পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে যায়।
শেষে দুধ দিয়ে ৫ মিনিট রান্না করে নিন, এতে রোস্ট হবে আরও মখমল স্বাদের।
মুরগির রোস্ট হয়ে গেলে পাত্র থেকে নামিয়ে নিন। উপরে ভাজা কাজু ও কিশমিশ ছড়িয়ে দিন।
গরম গরম পরিবেশন করুন পরোটা, নান, কিংবা পোলাওয়ের সঙ্গে।

ঈদের স্পেশাল চিকেন রোস্ট শুধু স্বাদেই নয়, উৎসবের আনন্দেও এনে দেবে নতুন মাত্রা। এই সহজ চুলার রেসিপিতে আপনিও তৈরি করতে পারবেন পারফেক্ট রোস্ট, যা অতিথিদের মন জয় করবে! তাহলে আর দেরি কেন? এবার ঈদে বানিয়ে ফেলুন এই সুস্বাদু রেসিপি!

 

আইওসি’র ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি নির্বাচিত হলেন ক্রিস্টি কভেন্ট্রি

 

ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এর ১৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো নারী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিস্টি কভেন্ট্রি। একই সঙ্গে, তিনি আইওসি’র প্রথম আফ্রিকান সভাপতি হওয়ারও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

জিম্বাবুয়ের সাবেক সাঁতারু কভেন্ট্রি, যিনি ২০১৮ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি তার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায় শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) গ্রিসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪১ বছর বয়সী কভেন্ট্রি ৯৭ ভোটের মধ্যে ৪৯ ভোট পেয়ে প্রথম রাউন্ডে জয় লাভ করেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্পেনের হুয়ান আন্তোনিও সামারা পেয়েছেন ২৮ ভোট।
নবনির্বাচিত আইওসি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কভেন্ট্রি বলেন, “এটা শক্তিশালী সংকেত। এটি নির্দেশ করে যে আমরা সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক হতে পেরেছি এবং আমাদের সংগঠন বৈচিত্র্যময়, এবং আমরা এই পথ অনুসরণ করতে চাই।”

আইওসি’র দশম সভাপতি হিসেবে কভেন্ট্রি আগামী ৮ বছর এই দায়িত্বে বহাল থাকবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন চলতি বছরের জুনে।

খেলোয়াড়ী জীবনে অত্যন্ত সফল কভেন্ট্রি অলিম্পিকে জিম্বাবুয়ের হয়ে সাঁতারে দুটি স্বর্ণপদকসহ মোট সাতটি পদক জয় করেন। এছাড়া, তিনি কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অল-আফ্রিকা গেমসেও একাধিক শিরোপা জয় করেছেন।

 

ঈদে ঘর সাজানোর দারুণ টিপস

 

ঈদ মানেই আনন্দের এক অনন্য উৎসব, যেখানে ঘরভর্তি হাসি-খুশি, প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, আর আত্মার প্রশান্তি মেলে। এই বিশেষ দিনটিকে আরো উজ্জ্বল করে তুলতে ঘরের সাজসজ্জা হতে পারে আনন্দের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমন নতুন পোশাক আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি নান্দনিকভাবে সাজানো ঘর আমাদের মনে উৎসবের আবেশ ছড়িয়ে দেয়। তাই আসুন, ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করতে ঘর সাজিয়ে তুলি একদম নতুন রঙে, নতুন আয়োজনে—

১. থিম অনুযায়ী ঘর সাজান
আপনার পছন্দের বা ট্রেন্ডি কোনো থিম বেছে নিন—যেমন ঐতিহ্যবাহী, মিনিমালিস্ট, রঙিন বা আরবি স্টাইল। এরপর সেই অনুযায়ী কুশন কভার, পর্দা, টেবিল ম্যাট, আর্টওয়ার্ক বা লাইটিং সাজিয়ে তুলুন।

২. নতুন পর্দা ও কুশন কভার ব্যবহার করুন
পর্দা ও কুশন কভারের পরিবর্তন পুরো ঘরের লুক বদলে দিতে পারে। ঈদের আমেজ আনতে উজ্জ্বল রঙ বা হালকা সোনালি ও সাদা রঙের কভার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. দেয়ালে ঈদ স্পেশাল ডেকর যুক্ত করুন

চাঁদ-তারার ওয়াল হ্যাঙ্গিং

ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি বা পোস্টার

ফ্যাব্রিক বা কাঠের আর্টপিস

৪. আলো দিয়ে জাদু করুন
ঈদের রাতে নরম, উষ্ণ আলো পরিবেশকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।

LED ফেয়ারি লাইট

মোমবাতি বা অ্যারোমা ক্যান্ডেল

ল্যান্টার্ন বা আরবি স্টাইলের লাইটিং

৫. অতিথি আপ্যায়নের জন্য টেবিল সাজানো
ডাইনিং টেবিলে সুন্দর রানার, ম্যাচিং প্লেট-মগ, ফ্রেশ ফুলের ছোট তোড়া বা সুগন্ধি মোমবাতি রাখতে পারেন।

৬. সুগন্ধি ও পরিপাটি ঘর
ঘরে একটি ফ্রেশ ও মিষ্টি সুবাস ছড়ানোর জন্য অ্যারোমা ডিফিউজার, ধূপ বা আতর ব্যবহার করতে পারেন।

৭. হাতের তৈরি কিছু সংযোজন করুন
ডিআইওয়াই ক্যান্ডেল হোল্ডার, ফুলদানিতে রঙিন পানি দিয়ে ফুল সাজানো, অথবা কাগজের চাঁদ-তারা তৈরি করে দেয়ালে লাগানো যেতে পারে।

৮. দরজার সামনে ওয়েলকাম ডেকর
প্রবেশদ্বারে ফ্লাওয়ার রেথ, আরবি ক্যালিগ্রাফির ওয়েলকাম বোর্ড বা লাইটিং ব্যানার রাখলে অতিথিরা প্রথম দেখাতেই উৎসবের আমেজ পাবেন।

আপনার ভালোবাসা ও সৃজনশীলতার স্পর্শে ঘর হয়ে উঠুক ঈদের আনন্দের প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ুক উষ্ণতা, অতিথিদের মনে জাগুক প্রশান্তি, আর আপনার হৃদয়ে ফুটে উঠুক এক গভীর তৃপ্তির অনুভূতি।

 

রোজায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়

ডায়াবেটিস এখন বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি দ্রুত বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, কম শারীরিক পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কিছু কিছু ভুল ধারণার কারণে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েন। তাই সুস্থভাবে রোজা পালনের জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলুন।

১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
রোজা রাখা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কিনা, তা জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ওষুধের সময়সূচি ও ইনসুলিন ডোজ পরিবর্তন করতে হতে পারে।

২. রক্তের শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
রোজার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি। শর্করা খুব বেশি কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা বেড়ে গেলে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. সঠিকভাবে সেহরি খান
কখনোই সেহরি বাদ দেবেন না, কারণ এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং রক্তে শর্করা লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

লাল চালের ভাত, ওটস, ডাল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান, যা ধীরে হজম হয়।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দই, বাদাম ইত্যাদি যোগ করুন।

৪. স্বাস্থ্যকর ইফতার করুন
অতিরিক্ত চিনি ও তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন।

বেশি চর্বি, চিনি ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙতে পারেন, এটি প্রাকৃতিকভাবে শক্তি জোগায়।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন শসা, তরমুজ ইত্যাদি খেতে পারেন।

চিনিযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস পরিহার করুন।

৬. ওষুধ ও ইনসুলিনের সময়সূচি ঠিক রাখুন
যারা ইনসুলিন নেন বা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময়সূচি ঠিক করুন।

সেহরি ও ইফতারের সময় ওষুধ গ্রহণের সঠিক নিয়ম জানতে হবে।

৭. অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন
রোজার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে রক্তের শর্করা হঠাৎ কমে যেতে পারে।

গরমে দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়তে পারে, তাই ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।

ভারী ব্যায়ামের পরিবর্তে ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।

৮. বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিলে রোজা ভাঙুন

যদি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ঘাম, ঝাপসা দেখা বা কাঁপুনি অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করুন।

যদি রক্তের শর্করা ৩.৯ mmol/L-এর নিচে নেমে যায় বা ১৬.৭ mmol/L-এর বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

৯. মানসিক চাপ কমান ও পর্যাপ্ত ঘুমান

মানসিক চাপ রক্তের শর্করার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই নিজেকে শান্ত রাখুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।

ডায়াবেটিস রোগীরা রমজানে রোজা রাখতে চাইলে সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম মেনে চললে সুস্থভাবে রোজা রাখা সম্ভব।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

 

এটিজেএফবি সম্মাননা প্রদান করল এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে অবদান রাখা ১০ নারীকে

বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে বিশেষ অবদান রাখা ১০ নারীকে সম্মাননা প্রদান করেছে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)। ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার, ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে সম্মাননা তুলে দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন বিভিন্ন খ্যাতনামা নারী:

পাইলট ক্যাটাগরিতে: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার ফারিহা তাবাসসুম

এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে: বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার তাহমিনা আক্তার

এভিয়েশন গ্রাউন্ড সার্ভিস ক্যাটাগরিতে: বিমানের ম্যানেজার-গ্রাউন্ড সার্ভিস নিলুফা ইয়াসমিন

ক্যাবিন ক্রু ক্যাটাগরিতে: বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড জিনিয়া ইসলাম

ট্যুরিজম সিকিউরিটি ক্যাটাগরিতে: ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা

হোটেল উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: হোটেল সারিনার চেয়রপারসন সাবেরা সারওয়ার নীনা

ট্যুরিজম উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: ওয়ান্ডার উইম্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সাবিরা মেহরিন সাবা

প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: গ্যালাক্সি বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ওয়ামিয়া ওয়ালিদ

সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে: বৈশাখী টিভির যুগ্ম সম্পাদক রিতা নাহার

ভ্রমণ ক্যাটাগরিতে: বিশ্বের ১৭৮টি দেশে বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী প্রথম বাংলাদেশি নাজমুন নাহার

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, “এটিজেএফবি’র এই আয়োজন নারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আজকের ১০ জন নারী তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হয়ে সমাজের অন্যান্য নারীদের অনুপ্রাণিত করবেন।”
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান বলেন, “এটিজেএফবি’র আয়োজন প্রশংসার দাবিদার এবং এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।”
এছাড়া, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতি বছর এই ধরনের উদ্যোগ আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এটিজেএফবি’র সভাপতি তানজিম আনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লবও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

 

ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সন্তানের মা: Valentina Vassilyeva

 

ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যা শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তেমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল ১৮শ শতকের রাশিয়ায়। Valentina Vassilyeva নামের এক রুশ নারী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া মা হিসেবে পরিচিত। তার জীবন ও সন্তান জন্মদানের গল্প আজও মানুষকে বিস্মিত করে।

Valentina Vassilyeva ১৭০৭ সালে রাশিয়ার Shuya অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এক সাধারণ কৃষকের স্ত্রী। সে সময় সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হতো, বিশেষ করে কৃষক পরিবারে, যেখানে বেশি সন্তান মানে বাড়তি কর্মশক্তি। Valentina-র ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠে, কারণ তিনি ২৭ বার গর্ভধারণ করেছিলেন এবং মোট ৬৯টি সন্তানের জন্ম দেন।

Valentina ১৬ বার যমজ, ৭ বার ট্রিপলেট এবং ৪ বার কোয়াড্রুপলেট সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তার ৬৯টি সন্তানের মধ্যে ৬৭ জন বেঁচে ছিলেন এবং মাত্র ২ জন শৈশবে মারা যান। এটি এমন এক রেকর্ড, যা আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি।

এই তথ্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে পাওয়া যায়। ১৭৮২ সালে মস্কোর সরকারের কাছে জমা দেওয়া নথিতে Feodor Vassilyev-এর ৬৯ জন সন্তান থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, এটি Guinness World Records-এও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, যেহেতু ১৮শ শতকের রাশিয়ায় জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না, তাই কিছু বিতর্কও রয়েছে।

অসংখ্য সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও Valentina দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন এবং ১৭৮২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার এই জীবনগাঁথা ইতিহাসে বিরলতম ঘটনার মধ্যে একটি, যা আজও গবেষকদের বিস্মিত করে।

 

ইফতারিতে ডাবের পুডিং

 

গরম আবহাওয়ার মধ্যে ইফতারি যেন এক স্বস্তির আশ্রয়, যেখানে প্রত্যেকটি খাবার আমাদের শরীর ও মনকে প্রশান্তি দেয়। এমনই এক স্নিগ্ধ ও স্বস্তিদায়ক উপাদান হলো ডাবের পুডিং। মিষ্টি, ঠান্ডা এবং সুস্বাদু এই পুডিং ইফতারির টেবিলে এনে দেয় একধাপ বিশেষত্ব। কেবল মুখের স্বাদ নয়,শারীরিক তৃপ্তি প্রদানকারী খাবারও বটে।

ডাবের পুডিং তৈরি করতে কিছু সহজ উপকরণ প্রয়োজন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

উপকরণ:
১. একটি বা দুটি শাঁসযুক্ত ডাবের পানি
২. ২৫ বা ৫০ গ্রাম চায়না গ্রাস (পানির পরিমাণ অনুযায়ী পরিমাণ বাড়ানো যাবে)
৩. পরিমাণমতো চিনি

প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে, গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট চায়না গ্রাস ভিজিয়ে রাখুন। তারপর একটি ডাবের পানি পুরোটা একটি পাত্রে ঢেলে নিন। এরপর, পাত্রটি চুলায় দিয়ে ফুটতে দিন। পানি ফুটতে শুরু করলে, এতে পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে ভালভাবে নাড়তে হবে যেন চিনি গলে পানির সাথে মিশে যায়।
এরপর, ভেজানো চায়না গ্রাস ডাবের পানিতে মিশিয়ে পুরো মিশ্রণ টা থিক না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
এবারমিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে এলে একটি বাটিতে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন ২-৩ ঘণ্টা। ফ্রিজে সেট হয়ে গেলে, উপরের অংশে ডাবের শাঁস বা বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ইফতারে পরিপূর্ণতার জন্য অনবদ্য একটু আইটেম!

 

রমজানে নারীর ব্যস্ততা কমিয়ে সহজ জীবন গড়ার উপায়

 

রমজান, আত্মশুদ্ধির মাস, ধৈর্য ও সংযমের পরীক্ষার মাস। এই মাসে ইবাদতের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও বেড়ে যায় বহুগুণ। বিশেষ করে নারীদের জন্য রমজান যেন এক অনন্ত ব্যস্ততার গল্প হয়ে ওঠে। সেহরি থেকে ইফতার, ইবাদত থেকে পরিবারের দেখভাল—সবকিছু সামলাতে গিয়ে যেন ক্লান্তির শেষ থাকেনা । অথচ একটু কৌশলী পরিকল্পনা ও পারিবারিক সহযোগিতা পেলে এই সময়টাকে আরও সহজ করে তোলা সম্ভব।

পরিকল্পনাই সাফল্যের চাবিকাঠি
যেকোনো কাজকে সহজ করতে দরকার সুপরিকল্পনা। রমজানের প্রতিদিনের কাজ আগেভাগে সাজিয়ে নিলে অযথা ব্যস্ততা কমে যাবে। কোন কাজ কখন করা হবে, কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন, কোন কাজ আগে সম্পন্ন করা উচিত—এসব লিখে রাখলে সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এতে ক্লান্তি যেমন কমবে, তেমনি ইবাদতের জন্যও বাড়তি সময় বের করা যাবে।

বাহুল্য পরিহার, সহজতাই সৌন্দর্য
আমাদের সমাজে ইফতার মানেই যেন বাহারি আয়োজন। প্রতিদিন নানা পদ না থাকলে চলে না, অথচ এত আয়োজন করতে গিয়ে নারীদের বেশ বেগ পোহাতে হয়। অথচ রমজানের মূল উদ্দেশ্যই হলো সংযম ও আত্মশুদ্ধি। তাই প্রতিদিন বাহুল্য এড়িয়ে পুষ্টিকর ও সহজ কিছু খাবার তৈরি করলেই কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

সম্ভব হলে আগেভাগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া
সময় ও পরিশ্রম বাঁচাতে কিছু কাজ আগেই সেরে রাখা যায়। যেমন—সপ্তাহের জন্য মাছ-মাংস কেটে সংরক্ষণ করা, মসলা গুঁড়ো করে রাখা, পেঁয়াজ-রসুন কেটে রাখা বা শরবত তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া। এতে কাজের চাপ অনেকটাই কমে আসবে এবং ইফতারের সময় অস্থিরতা দূর হবে।

পরিবারের সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া
শেয়ারিং এন্ড কেয়ারিং এর মাধ্যমে রমজানের সৌন্দর্য আরো বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্য ও শিশুদেরও ঘরের কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। পেঁয়াজ-রসুন কাটা, শরবত তৈরি, টেবিল সাজানো—এই ছোট ছোট কাজে সাহায্য করলে নারীর ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

নিজেকে ভুলে গেলে চলবে না
দিনভর রোজা রেখে বিরামহীনভাবে কাজ করলে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ নেমে আসতে পারে। তাই কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতারের পর প্রচুর পানি পান করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীর সুস্থ থাকলে ইবাদতেও মনোযোগ বাড়বে, কাজে ক্লান্তিও কমে আসবে।

রমজান মাস নারীর জন্য যেন বোঝা হয়ে না উঠে, বরং এটি আত্মার প্রশান্তি ও পরিবারে সৌহার্দ্য তৈরির মাস হবে। যদি সবাই মিলে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, তাহলে নারীর জন্য রমজানও হবে প্রশান্তিময়। সংযমের এই পথচলা হোক সুস্থ, সুন্দর ও পরিপূর্ণ।

 

কেরানীগঞ্জে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা: তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—সজিব, রাকিব ও শাওন। এছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় তাদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এরশাদ আলম জর্জ জানান, ট্রাইব্যুনাল ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন আসামিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থদণ্ডের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আলী আকবর (২২) ও মো. রিয়াজ (২২) অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন।

২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটিবাজার এলাকায় টহলরত পুলিশ ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনে পুকুর থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, নিহত নারীর নাম মারিয়া। তার বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে পুলিশ আসামি শাওনকে গ্রেফতার করে।
শাওন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, সে নিজে,রাকিব, সজিব, আলী আকবর মিলে মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। পরে রাকিব ও সজিবকেও গ্রেফতার করা হলে তারাও আদালতে একই স্বীকারোক্তি দেয়।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলক কুমার দে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর বিচারকাজ শুরু হলে ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা আসামি রাকিব ও শাওনকে আদালতে হাজির করা হয় এবং রায় শেষে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত সজিব পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

 

ফিলিস্তিনে নারী ও শিশু হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের জাতিসংঘ সদস্য পদ বাতিলের দাবি

 

ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি যুক্তি লঙ্ঘন করে নারী ও শিশুদের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ। তারা ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করে জাতিসংঘের সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

শনিবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি সাঈদা রুম্মান বলেন, “ইসরায়েল যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ নারী ও শিশু। শিশুদের হত্যা, মায়েদের বিধবা করা—এ কোন সভ্যতার নমুনা?”
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের নিষ্পাপ শিশুরা আজ প্রাণ হারাচ্ছে ইসরায়েলের বর্বরতার শিকার হয়ে। অসহায় নারীরা স্বজন হারিয়ে পথে বসেছে। মানবতার নামে যারা কথা বলে, তারা আজ নির্বিকার। জাতিসংঘ যদি এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে মুসলিম বিশ্ব ধরে নেবে, তারা এ গণহত্যার নীরব সহযোগী।”

বক্তারা উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী যুদ্ধের নামে শিশুদের হত্যা করছে, নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জান্নাতুল কারীম সুইটি বলেন, “কোনো সভ্য জাতি নারী ও শিশুর ওপর হামলা চালাতে পারে না। ইসরায়েল আজ প্রমাণ করেছে, তারা মানবতার শত্রু, এক নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র।”
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাহবুবা খাতুন শরীফা বলেন, “ইসরায়েলের হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। তারা কি যুদ্ধ করছে? তাদের অপরাধ কী? এটি মূলত ফিলিস্তিনি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পিত গণহত্যা।”

মানববন্ধনে বক্তারা ফিলিস্তিনে অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানান এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের আহ্বান জানান।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে হবে।
“শিশু হত্যাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া যায় না। অবিলম্বে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,”—বলেন এক নারী নেতা।

বক্তারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ইসরায়েলের সব পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

 

বিশ্ব পানি দিবস: শুধু পানি কেন? পানিকে উপকারী করে তোলার ১০টি উপায়

 

পানি আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। এটি শুধু তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নয়, বরং শরীরের প্রতিটি কোষের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু একঘেয়ে স্বাদের কারনে অনেকেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করতে চান না। তবে, যদি পানিকে কিছু উপকারী উপাদানের সংমিশ্রণে আরও স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করা যায়, তবে তা শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি নানা উপকারও বয়ে আনবে।

আজ ২২মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছর ২২ মার্চ এই দিবস পালিত হয়, যা মিঠা পানির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার প্রচারের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত একটি বিশেষ দিন। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে (ইউএনসিইডি) প্রথম এই দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, এবং ১৯৯৩ সাল থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছর বিশ্ব পানি দিবসে একটি নির্দিষ্ট থিম নির্ধারিত হয়। ২০২৫ সালের থিম হলো ‘গ্লেসিয়ার সংরক্ষণ’, যা হিমবাহের গলনের ফলে সৃষ্ট পানি প্রবাহের অনিশ্চয়তা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে।

বিশ্ব পানি দিবসে আসুন জেনে নিই, কীভাবে আমাদের প্রতিদিনের পানিকে আরও কার্যকরী ও উপকারী করা যায়—

১. লেবু
লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন, যা বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।

২. আদা
আদার জিঞ্জেরল যৌগ হজমশক্তি বাড়ায়, পেট ফাঁপা কমায় এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে কয়েক টুকরো আদা ভিজিয়ে রেখে চায়ের মতো পান করলে এটি শরীরকে উষ্ণ ও সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

৩. দারুচিনি

প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। এক গ্লাস গরম পানিতে দারুচিনির কাঠি ভিজিয়ে রেখে পান করলে এটি বিপাক বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

৪. পুদিনা
পুদিনার পাতা শুধু পানিকে সুগন্ধি ও সতেজ করে না,এটি চর্বি ভাঙতেও সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর রুটিনে একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে। এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো তাজা পুদিনা পাতা যোগ করুন। এটি কয়েক ঘণ্টা বা পুরো রাত ডিটক্স পানীয়তে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন।

৫. হলুদ

হলুদে বিদ্যমান কারকিউমিন প্রদাহ কমায়, লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখে। এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চিমটি হলুদ ও সামান্য গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে এটি দেহের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

৬. আপেল সাইডার ভিনেগার
অ্যাসিটিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ আপেল সাইডার ভিনেগার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন, যা শরীরের চর্বি কমানোর পাশাপাশি বিপাকক্রিয়া দ্রুততর করবে।

৭. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে ক্যাটেচিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। ঠান্ডা পানিতে গ্রিন টি মিশিয়ে লেবুর রস দিয়ে পান করলে এটি আরও উপকারী হয়ে ওঠে।

৮. শসা
শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জলীয় অংশ, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। এক গ্লাস পানিতে শসার টুকরো দিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করলে এটি শরীরের টক্সিন দূর করবে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখবে।

৯. মৌরি
মৌরি শুধু মুখশুদ্ধি হিসেবেই নয়, বরং পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়েও দারুণ কার্যকর। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, গ্যাসের সমস্যা কমায় এবং শরীরকে প্রশান্তি দেয়। গরম পানিতে এক চামচ মৌরি ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা হলে পান করুন।

১০. তালমাখনা
তালমাখনা বা বেসিল সিডস (সাবজা) শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে পান করুন, এটি শরীরের অতিরিক্ত গরম কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

পানি শুধু জীবন রক্ষাকারী উপাদান নয়, এটি সুস্থ থাকার চাবিকাঠিও। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং এতে উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান যোগ করে আরও কার্যকর ও পুষ্টিকর করে তুলুন।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আসুন প্রতিজ্ঞা করি— নিজেকে হাইড্রেটেড রাখব, পানি অপচয় রোধ করব এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিকভাবে পানি পান করব।

বিশ্ব পানি দিবসে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন!

#বিশ্বপানীদিবস #সুস্থজীবন #পানিকেপ্রিয়করুন #ডিটক্সড্রিঙ্ক #স্বাস্থ্যকরঅভ্যাস

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বড় পরিবর্তন

১৮ মার্চ ২০২৫: ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০” সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন।
সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে সাম্প্রতিক ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গত ৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসিয়ার ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেখান থেকে “ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ” গঠিত হয়, যা পরদিন মশাল মিছিলের মাধ্যমে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সারাদেশে শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার অবশেষে এই সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আইনের সংশোধনীতে যেসব পরিবর্তন আসছে

১. বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন:
১৬ বছরের কম বয়সী শিশু ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

এতে তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২. তদন্ত ও বিচার দ্রুততর করা:
ধর্ষণ মামলার তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

আগে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ না হলে জামিনের সুযোগ ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে।

৩. ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন:
বর্তমানে শুধু ঢাকায় CID Forensic Lab থাকায় প্রমাণ পরীক্ষায় বিলম্ব হয়।

নতুন করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ২টি ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হবে।

৪.DNA রিপোর্ট ছাড়াই বিচার:
ধর্ষণের মামলায় DNA রিপোর্ট দেরিতে এলে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা যাবে।

তবে, এতে মিথ্যা মামলার আশঙ্কা থাকায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

৫. ধর্ষণের সংজ্ঞায়ন স্পষ্টকরণ:
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণকে আলাদা অপরাধ হিসেবে আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণের মামলার তদন্ত দ্রুততর করা হবে।

৬. ভিকটিম প্রোটেকশন:
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর জন্য ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে।

ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আঘাত বা জখম করলে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

৭. মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান:
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা করলে বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

৮.দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ বিচারক নিয়োগ:
বিশেষ Judicial Service Commission গঠন করে নতুন বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, আগামী বৃহস্পতিবার এই সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সংশোধনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আইনের অপব্যবহার রোধে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন পক্ষ মত প্রকাশ করেছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, আইন চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশের আগে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা উচিত। সংশোধনীর ফলে যেন নতুন কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি না হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়, সেটিই এখন মূল বিষয়।

 

সহকারী জজ পরীক্ষায় দেশসেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হালিমাতুস সাদিয়া

 

১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে দেশসেরা হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক ৩বারের সাফল্যকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষস্থান অর্জন করলেন তিনি।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ এ এম রেজা জাকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া মূলত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লোহালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে মোট ১০২ জন সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী, সুব্রত পোদ্দার (৪৭তম) ও নূর-ই-নিশাত (৫২তম), চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

এই অসাধারণ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হালিমাতুস সাদিয়া বলেন “এই অর্জন শুধুমাত্র আমার একার নয়, এটি আমার মা-বাবা, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে আমি গর্বিত। দেশবাসীর দোয়া চাই, যেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনও এই সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন “আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

উল্লেখ্য, এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরপর তিনবার বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অর্জন করায় নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো।

 

জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় গুরুতর প্রভাব

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ুজনিত দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে নারীরা নানা সংকটে পড়ছেন। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়া এবং দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের হার বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে “জলবায়ু বিপর্যয়ে নারীর উপর অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সংগঠকরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীদের বাস্তব সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী ও কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক মেয়েশিশুর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দারিদ্র্যের শিকার হওয়ায় মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, যা বাল্যবিয়ের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগকবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ ব্যবস্থা না থাকায় নারী ও কিশোরীরা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত পানি অধ্যুষিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

সভায় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, নারীদের জন্য দুর্যোগকালীন নিরাপদ আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ এবং সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, সরকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করে নারীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ ৩১টি জেলা থেকে আগত সংগঠকবৃন্দ। বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নারীদের রক্ষা করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মতবিনিময় সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই: নারীদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ পদক্ষেপ

 

আলেয়া বেগম, একজন গৃহকর্মী, প্রতিদিনের কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত ছিলেন। ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া—এই সব কাজের পর শরীরে ব্যথা হওয়াটা তার কাছে স্বাভাবিকই মনে হতো। কিন্তু একদিন প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর, তিনি বুঝতে পারেন এটি সাধারণ ক্লান্তি নয়। হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর পর ধরা পড়ে—তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
চিকিৎসা চলাকালীন তিনি বেশ কিছুদিন কাজে যেতে পারেননি। এই সুযোগে তার কর্মস্থলে অন্য গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে অসুস্থতার কারণে শুধু যে তার শারীরিক দুর্বলতা বেড়েছে তা-ই নয়, জীবিকাও হারিয়েছেন তিনি। সুস্থ হওয়ার পর নতুন কাজ খুঁজতে গিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।

আলেয়ার গল্পটি দেশের হাজারও নিম্নআয়ের নারীর চিত্র ফুটিয়ে তোলে, যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর কর্মসংস্থান হারানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতার শিকার হন।

ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে কেন?
২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫৭৫ জনের মধ্যে ২৯৫ জনই ছিলেন নারী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীদের শারীরিক ও সামাজিক অবস্থান তাদের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
১. জৈবিক কারণ: নারীদের শরীরে রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হরমোনজনিত জটিলতা বেশি থাকে, যা ডেঙ্গুর প্রভাবকে তীব্র করে তোলে।

২. সময়মতো চিকিৎসার অভাব: নিম্নআয়ের নারীরা চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, ফলে ডেঙ্গু গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

3. সামাজিক কারণ: পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব নারীদের ওপর বেশি থাকে। তারা নিজের অসুস্থতা এড়িয়ে যান, যা পরে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে।

অর্থনীতিতে প্রভাব
দেশের মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০% নারী, যারা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ডেঙ্গুর মতো রোগে আক্রান্ত হলে, তারা শুধু নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আলেয়ার মতো গৃহকর্মীরা অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ হারান, চিকিৎসার জন্য খরচ বহন করতে হয় এবং সুস্থ হওয়ার পর নতুন কাজ পেতে বাধার সম্মুখীন হন। তাদের জন্য কোনো সামাজিক সুরক্ষা না থাকায়, একবার অসুস্থ হলে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় নেন।

নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় দরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ
ডেঙ্গু মোকাবিলায় নারীদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতার অভাব অনেক নারীর জীবন সংকটে ফেলে দেয়।
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে নারীদের মধ্যে বিশেষ প্রচারাভিযান চালানো প্রয়োজন।

২. ওয়ান-স্টপ সার্ভিস বুথ: নারীদের চিকিৎসা সহজ করতে এক জায়গায় পরীক্ষা, চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩. ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: নিম্নআয়ের নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্লাটিলেট কাউন্ট ও অন্যান্য পরীক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার।

ডেঙ্গু শুধু একটি রোগ নয়, এটি নারীদের জীবিকা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা সৃষ্টি করে। আলেয়ার মতো হাজারো নারী এই সমস্যার শিকার হচ্ছেন, অথচ তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা গেলে, এই ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে নারীদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে।
তথ্য সুত্র ঃ দ্য ডেইলি স্টার

 

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য রাসুল (সা.)-এর সুন্নত

 

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যেমন একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, শাসক ও দাঈ ছিলেন, তেমনই দাম্পত্য জীবনে ছিলেন স্নেহশীল, দায়িত্বশীল ও শ্রেষ্ঠ স্বামী। তাঁর জীবনের অনুসরণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির শিক্ষা।

নবিজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি সর্বদা সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতেন এবং সাহাবিদেরও তাঁদের স্ত্রীদের প্রতি উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেছেন—
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করে। আর আমি আমার স্ত্রীর প্রতি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

নিচে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নত উল্লেখ করা হলো, যা পালন করলে দাম্পত্য জীবন আরও সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠবে—

১. স্ত্রীর কাছ থেকে চুল আঁচড়ে নেওয়া
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন—
“আমি হায়েজ অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মাথা আঁচড়ে দিতাম।” (বুখারি ২৯৫)

২. স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে ঘুমানো
আয়েশা (রা.) বলেন—
“রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমাতেন।” (বুখারি ৪৬০৭)

৩. স্ত্রীর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করা

তিনি আরও বলেন—
“আমি নবিজির (সা.) সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং জয়ী হয়েছিলাম। পরে আমি মোটা হলে তিনি দৌড়ে আমাকে পরাজিত করেন এবং বলেন, ‘এ বিজয় সেই পরাজয়ের বদলা।’” (আবু দাউদ ২৫৭৮)

৪. স্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে গোসল করা

“আমি ও নবিজি (সা.) একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম।” (বুখারি ২৫০)

৫. স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা

“নবিজি (সা.) আমার কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন আমি হায়েজ অবস্থায় ছিলাম।” (বুখারি ২৯৭)

৬. স্ত্রীর প্রশংসা করা
রাসুল (সা.) বলেছেন—
“নারীদের মধ্যে আয়েশার মর্যাদা অন্য সকল নারীর তুলনায় এমন, যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যের তুলনায়।” (বুখারি ৩৪১১)

৭. স্ত্রীর কাজে সহায়তা করা

হজরত আসওয়াদ (রা.) বলেন—
“আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবিজি (সা.) ঘরে কী করতেন? তিনি বললেন, তিনি পরিবারকে সাহায্য করতেন এবং নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন।” (বুখারি ৬৭৬)

প্রিয় নবী (সা.)-এর দাম্পত্য জীবনের সুন্নতগুলো আমাদের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত। যদি প্রতিটি স্বামী পরিবারে এই সুন্নতগুলো পালন করেন, তাহলে সংসার হবে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তির এক সুন্দর আশ্রয়স্থল।

 

শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন শেখা বিষয় সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রস্তুত করে, যা শিশুর স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষত, গভীর রাতের ঘুম শিশুর শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং তার মস্তিষ্ককে সুসংগঠিত রাখে।

ঘুমের একটি বিশেষ ধাপ হলো REM (Rapid Eye Movement), যেখানে শিশুর মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং নতুন শেখা তথ্য সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করে। এই ধাপে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে এবং স্মৃতি শক্তিশালী হয়।

অন্যদিকে, NREM (Non-Rapid Eye Movement) ধাপে শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয় এবং শেখা বিষয়গুলোর দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ ঘটে। তাই গভীর ঘুম শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

শিশুর বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে। নবজাতক শিশুদের দিনে ১৪-১৭ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, কারণ এই সময় তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সবচেয়ে বেশি হয়। ৩-১২ মাস বয়সী শিশুদের ১২-১৫ ঘণ্টা এবং ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০-১৪ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং শেখার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যখন রাতে পর্যাপ্ত ঘুমায়, তখন তারা সারা দিনে শেখা বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে মনে রাখতে পারে। রাতের ঘুমের সময় মস্তিষ্ক শেখা তথ্যকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। দিনের ঘুমও কিছুটা সহায়ক, তবে রাতের গভীর ঘুম সবচেয়ে কার্যকর। নতুন কিছু শেখার পর পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর স্মৃতি মজবুত করতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, শেখার দক্ষতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শিশুর সঠিক ঘুম নিশ্চিত করা তার সার্বিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন: জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত

 

নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, জানিয়েছে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। সম্প্রতি সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা জানান, নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তা শুধুমাত্র নারীর সমস্যা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমস্যা।

‘ঢাকাতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা করতে আয়োজিত এই সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায়। বক্তারা জানান, এ ধরনের সহিংসতা রোধে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, বর্তমানে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সহিংসতার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নারীর প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা এবং দুর্বলতার কারণে সহিংসতা বেড়েছে। এজন্য নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

তথ্যসুত্র :আজকের পত্রিকা

 

কেশবপুরের প্রিয়া খাতুন: সাইক্লিং ও হকিতে দেশসেরা হওয়া কিশোরী

 

গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়া খাতুন বর্তমানে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক তারকা। কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের প্রিয়া সাইক্লিংয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হয়েছে এবং হকি দলের অধিনায়ক হিসেবে দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৫৩তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রিয়া সাইক্লিংয়ে স্বর্ণপদক জয় করে এবং তার নেতৃত্বে গড়ভাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রিয়া খাতুন রাজনগর বাকাবর্শী গ্রামের কৃষক শাহজাহান মোড়ল ও লাকি বেগমের মেয়ে। দারিদ্র্য ও সামাজিক সংকট মোকাবিলা করে প্রিয়া ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ শুরু করে। সাইক্লিং ও হকি খেলার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে এবং গত বছর সাইক্লিংয়ে রাজশাহী থেকে প্রথম হওয়ার পর মনোবল বৃদ্ধি পায়। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন তাকে একটি রেসিং সাইকেল উপহার দেন।

প্রিয়া তার সাফল্যের জন্য পরিবার ও শিক্ষকদের সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মেয়ের এই সাফল্যে তার মা গর্বিত, এবং এলাকার বাসিন্দারা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রভাত কুমার বসু বলেন, গ্রামের মেয়েরা এই জাতীয় সাফল্য অর্জন করে সত্যিই গর্বের বিষয়। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

টোকিওর প্রযুক্তি উন্নয়নে নারী নেতৃত্ব

 

টোকিওকে আরও আধুনিক, স্মার্ট ও নিরাপদ নগরীতে রূপান্তর করতে বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে টোকিও মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট (টিএমজি)। ২০১৬ সাল থেকে গভর্নর ইউরিকো কোইকের নেতৃত্বে নারীরা এই রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন।

টোকিও মেট্রোপলিটন অ্যাসেম্বলির ১২৭ সদস্যের মধ্যে ৪১ জন নারী, যারা শহরের উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ব্যবসা ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের মধ্যে নোবুকো ইরি উল্লেখযোগ্য, যিনি শহরের বিনোদন ও রাতের জীবন পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার মতে, টোকিওর আকর্ষণ ধরে রাখতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিক ও বিনোদন খাতের বিকাশ অপরিহার্য।

“সুশি টেক টোকিও” নামের বিশ্বব্যাপী সম্মেলনে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ ও বিনিয়োগকারীরা একত্র হন, যেখানে স্মার্ট সিটি ও টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। নতুনভাবে চালু হওয়া “পাবলিক ডে” অনুষ্ঠানে শিশু ও পরিবারদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, রোবট পরিচালনা ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিআর গেমের সুযোগ থাকছে।

নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ টোকিওর উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। নোবুকো ইরি মনে করেন, নারীদের উপস্থিতি শিশুবিকাশ, শিক্ষা ও নার্সিংয়ের মতো বাস্তব সমস্যা সমাধানে সহায়ক। টিএমজি বৈচিত্র্য, নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে টোকিওকে ভবিষ্যতের সেরা শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট: নারী শিক্ষার অগ্রদূত

 

সমাজের পরিবর্তন আনতে কিছু মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট তেমনই একজন সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন, যিনি নারী শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রবেশের সুযোগ পান।

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট জন্মগ্রহণ করেন ৫ মার্চ ১৮৫৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে। তার বাবা জন ওয়ার্ক গ্যারেট ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহাইও রেলওয়ের প্রেসিডেন্ট। ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষা ও নেতৃত্বের মূল্যবোধ শিখেছিলেন।
তবে তার মায়ের অকালমৃত্যু এবং সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য তাকে ব্যথিত করে। তিনি উপলব্ধি করেন, নারীদের যদি শিক্ষার সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিতে পারবে না। এই উপলব্ধিই তাকে নারী শিক্ষার জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

মেরি গ্যারেট তার সম্পদ ও প্রতিভা কাজে লাগিয়ে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করতে চেষ্টা করেন। তার উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ হলো—

Johns Hopkins School of Medicine-এ নারীদের সুযোগ

১৮৯০-এর দশকে, Johns Hopkins School of Medicine আর্থিক সংকটে পড়ে। তখন মেরি গ্যারেট ৩,৫০,০০০ ডলার অনুদান দেন, কিন্তু শর্ত দেন যে এই মেডিকেল স্কুলে নারীদেরও সমানভাবে ভর্তি ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তার এই পদক্ষেপের ফলে প্রথমবারের মতো নারীরা Johns Hopkins-এ চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের সুযোগ পান। এটি নারীদের চিকিৎসা শিক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দেয়।

Bryn Mawr School প্রতিষ্ঠা

১৮৮৫ সালে, তিনি Bryn Mawr School for Girls প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এটি ছিল উচ্চমানের একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হতো।

শিক্ষার পাশাপাশি তিনি নারীদের অধিকার ও সমতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি National American Woman Suffrage Association-এরও একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং নারীদের ভোটাধিকার আদায়ের প্রচারণায় অর্থ সহায়তা দেন।

মেরি গ্যারেট বিয়ে করেননি এবং তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই সমাজসেবা ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করেন। তার বন্ধুমহলে ছিলেন অনেক প্রভাবশালী নারীবাদী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক, যাদের সঙ্গে মিলে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রকল্পে কাজ করেছেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, আত্মবিশ্বাসী এবং নেতৃত্বগুণসম্পন্ন। তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সংগঠক হিসেবে দক্ষতা তাকে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মেরি এলিজাবেথ গ্যারেট ৩ এপ্রিল ১৯১৫ সালে, ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার রেখে যাওয়া শিক্ষানীতি ও দান-অনুদানের ফলে অসংখ্য নারী উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
আজকের দিনে নারীদের শিক্ষায় যে অগ্রগতি দেখা যায়, তার পেছনে গ্যারেটের মতো দানশীল ও দূরদর্শী মানুষের অবদান অপরিসীম। নারী শিক্ষার উন্নয়নে তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

শিশু যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপের দাবি ২৬ এনজিওর

 

বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ২৬টি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত ‘শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক’। সংগঠনটি সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

নেটওয়ার্কের সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এক বিবৃতিতে জানায়, শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে, যা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ক্রমবর্ধমান হার দেশের জন্য গুরুতর সংকেত। এটি রোধ করতে সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারা বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিশু কল্যাণ পরিষেবার সমন্বয় এবং একটি শিশু সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে।

‘শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক’ জোটের সদস্য সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইনসিডিন বাংলাদেশ, জাগো নারী, কাঠপেন্সিল, মানব কল্যাণ পরিষদ (এমকেপি), মৌমাছি, পরিবর্তন-খুলনা, সুসমাজ ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, শিশুরাই সব সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন।

এই জোট যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে এবং শিশুদের সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায়।

তথ্যসূত্র -আজকের পত্রিকা

 

সংগ্রামী বিলকিস বেগম পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’

 

জীবনের চরম সংকটময় মুহূর্তে ভেঙে না পড়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন রাজশাহীর বিলকিস বেগম। সংসার ও স্বামীকে বাঁচানোর সংগ্রামে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী, তৈরি করেছেন নতুন পথ। তাঁর এই অদম্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান’ ক্যাটাগরিতে তিনি পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি কারিগরপাড়া গ্রামের এই নারীর জীবন ছিল এক কঠিন পরীক্ষার মতো। স্বামী রশিদ খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়েন, পা ভেঙে শয্যাশায়ী হন। সংসারের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে পাহাড়সম ঋণের বোঝা চেপে বসে তাঁদের পরিবারে। ১৭টি এনজিওর কাছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ টাকা। টানাপোড়েনের মধ্যে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিজেদের আবাদি জমি বন্ধক রাখতে হয়।
কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিলকিস বেগম হার মানেননি। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির কৌশল শিখে নতুন জীবনের সূচনা করেন তিনি। ধীরে ধীরে এই কাজে দক্ষতা অর্জন করে নিজের আয়ের পথ গড়ে তোলেন। নিজের উপার্জনে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত হারানো জমিও ফিরে পান। এখন তাঁর মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা।

নারীর ক্ষমতায়নের এই অসাধারণ দৃষ্টান্তকে স্বীকৃতি জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অদম্য নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। গত ১১ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এই বছর রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে ৩৯ জন নারীকে মনোনীত করা হয়েছিল, যাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বিলকিস বেগম ছাড়াও পুরস্কার পেয়েছেন আরও চারজন সংগ্রামী নারী। অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য নওগাঁর সাপাহারের সেফালী খাতুন, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্যের জন্য সিরাজগঞ্জের চৌহালীর আয়শা সিদ্দিকা, সফল জননী হিসেবে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের লাইলী বেগম এবং নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য নওগাঁ সদরের শাবানা বানু এই সম্মাননা অর্জন করেছেন।

এই সম্মাননা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বীকৃতি নয়, বরং সমাজের সকল নারীর জন্য এক অনুপ্রেরণা। কঠিন পরিস্থিতিতেও নারীরা যদি সাহস করে এগিয়ে যান, তবে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন-এই বার্তাই ছড়িয়ে দিলেন বিলকিস বেগম ও তাঁর মতো আরও অদম্য নারীরা।

 

স্বাস্থ্যকর ও হালকা ইফতার রেসিপি

 

ইফতার মানেই সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি আনার মুহূর্ত। স্বাস্থ্যকর ও হালকা খাবার ইফতারে গ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
নিচে তিনটি সহজ ও পুষ্টিকর ইফতার রেসিপি দেওয়া হলো, যা সুস্বাদু ও উপকারী। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং হজমে সহায়ক হবে।

দই-চিড়া
দই-চিড়া একটি হালকা ও সহজপাচ্য খাবার, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এটি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়ক।
উপকরণ:
১ কাপ চিড়া
½ কাপ মিষ্টি দই
১ টেবিল চামচ মধু বা চিনি
১টি কলা (ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালী:
১. চিড়া ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. একটি বাটিতে দই, চিনি/মধু ও চিড়া মিশিয়ে নিন।
৩.চাইলে এর সাথে টুকরো করে কাটা কলা মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

ছোলার সালাদ
ছোলা প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং সহজে হজম হয়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ইফতার আইটেম।
উপকরণ:
১ কাপ সিদ্ধ ছোলা
১টি ছোট টমেটো (কুচি করা)
১টি শসা (কুচি করা)
১টি পেঁয়াজ (কুচি করা)
১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
১ চা চামচ লেবুর রস
½ চা চামচ চাট মসলা
পরিমাণমতো লবণ

প্রস্তুত প্রণালী:
সব উপকরণ একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।মিশ্রণটি ৫-১০ মিনিট রেখে দিন, যাতে স্বাদ ভালোভাবে মিশে যায়।ঠান্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবেশন করুন।

ঠান্ডা শরবত
ইফতারে ঠান্ডা শরবত শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রশান্তি এনে দেয়। এটি সহজেই তৈরি করা যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে দারুণ কার্যকর।
উপকরণ: (তরমুজের শরবত)

১ কাপ তরমুজের রস বা ২ টেবিল চামচ
১ গ্লাস ঠান্ডা পানি
১ টেবিল চামচ মধু
১ চিমটি বিট লবণ (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
তরমুজ ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস বের করুন, এর সাথে ঠান্ডা পানি, মধু ও বিট লবণ মিশিয়ে নিন।
ভালোভাবে নেড়ে আইস কিউব দিয়ে পরিবেশন করুন তরমুজের শরবত।

স্বাস্থ্যকর ইফতার আপনাকে সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উজ্জীবিত রাখবে। এসব সহজ ও পুষ্টিকর খাবার ইফতারে যুক্ত করে সুস্থ থাকুন!

 

সৈয়দা তাহিয়া হোসেন:কর্মজীবনে নারীর সফলতা ও আত্মনির্ভরতার গল্প

 

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে দক্ষতা অর্জন ও কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এই বিশ্বাসকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছেন সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, যিনি বর্তমানে গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (CHRO)। তাঁর পেশাগত যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, তখনও তাঁর স্নাতক শেষ হয়নি। ব্যবসায়ী বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও বাবা তাঁকে আগে অন্য কোথাও কাজ শেখার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি চাকরির খোঁজ শুরু করেন এবং প্রথম কাজ পান একটি ডাচ চকলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ এইচআর ক্যারিয়ারের পথচলা।

মানুষের সঙ্গে কাজ করার প্রবল আগ্রহ থেকেই তাহিয়া মানবসম্পদ বিভাগে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনি বলেছিলেন, “আমি মানুষের জন্য, মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই।” এই কথার প্রতিফলন তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে দেখা গেছে। চাকরির শুরুতেই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পরামর্শে তিনি এইচআর বিভাগে কাজ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, ব্যবসার পাশাপাশি কার্যকর এইচআর প্র্যাকটিস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, শেখার প্রক্রিয়া থেমে গেলে ক্যারিয়ারে উন্নতি করা সম্ভব নয়।

একজন দক্ষ নেতা হিসেবে তাহিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহমর্মিতা ও ভারসাম্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ও সমতা রক্ষা করা জরুরি। অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের পক্ষে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

ডিজিটাল যুগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। তাহিয়া মনে করেন, শুধুমাত্র টেলিকম খাতের চিন্তাধারা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়; বরং টেকনোলজির সাথে একীভূত হয়ে কাজ করতে হবে। নতুন স্কিল অর্জনের পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাহিয়ার মতে, এটি একটি বিশাল পরিবর্তন, যেখানে নতুন ট্যালেন্টের সাথে কাজ করার পাশাপাশি পুরোনো কর্মীদেরও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে।

নারীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরিতে গ্রামীণফোন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাহিয়া বলেন, গ্রামীণফোনে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না; যোগ্যতার ভিত্তিতেই সবাই সম্মান পান। একসময় ম্যানেজমেন্ট টিমে একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বাস করেন, নারীদের চিন্তাভাবনায় স্বতন্ত্রতা থাকে, যা ব্যবসায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা। তাহিয়া মনে করেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নারীদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে, তারা কী চান এবং কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব। অফিসে একজন নারীর নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে জায়গা তৈরি করতে হয়, যা কখনো কখনো কঠিন হলেও, সেটাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে। তাহিয়া বিশ্বাস করেন, “কাজের ওনারশিপ না দিলে নারীরা পিছিয়ে পড়বেন।”

তাহিয়া হোসেনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর বাবা। তাঁর বাবা সবসময় তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শিখিয়েছেন। বাবার ব্যবসায় কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও তিনি প্রথমে চাকরির মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। চার বছর পর যখন বাবা তাঁকে নিজ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেন, তাহিয়া তখন জানান, তিনি নিজের ক্যারিয়ার এখানে গড়তে চান। এই সিদ্ধান্তই তাঁকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

সৈয়দা তাহিয়া হোসেনের জীবনগল্প প্রমাণ করে যে, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও নিরলস পরিশ্রম অপরিহার্য। নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করতে হলে তাদের নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে। তাহিয়ার মতো নারীরা যখন নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন, তখন এটি অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

 

অক্ষমতা নয়, অদম্য ইচ্ছাই শক্তি: জেসিকা কক্সের গল্প

 

পাইলট মানেই ককপিটে তীক্ষ্ণ নজর, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা। সাধারণত দুই হাতের সহায়তায় এই কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু জেসিকা কক্স প্রমাণ করেছেন, শুধু পায়ের ব্যবহার করেও একজন দক্ষ পাইলট হওয়া সম্ভব।

দুই হাত ছাড়া জন্ম নেওয়া জেসিকা শুধু উড়োজাহাজই চালান না, তিনি একজন সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার এবং মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টধারীও। অক্ষমতাকে কখনোই প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি তিনি। ১৪ বছর বয়সের পর থেকে কৃত্রিম হাত ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পায়ের মাধ্যমেই সব কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে থাকেন।

জেসিকার পাইলট হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের রোটারি ক্লাবের এক আলোচনা সভায় রবিন স্টোড্ডার্ড তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি প্লেন চালাতে চান?’ পাশে থাকা জেসিকার বাবা সেদিন সোজা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ’। এরপর অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক করা জেসিকা শুরু করেন পাইলট হওয়ার প্রস্তুতি।

জেসিকা কক্স ৩৫ বছর বয়সের মধ্যেই দক্ষ যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে ওঠেন। তাঁর জীবনদর্শন স্পষ্ট:“আমি কখনো বলি না, আমি এটা করতে পারব না। শুধু বলি, আমি এখনো এ বিষয়ে কাজ করছি।”
এই মানসিকতার জোরেই তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসধারী বিশ্বের প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাহুবিহীন পাইলট হয়েছেন।

২০১২ সালে তিনি প্যাট্রিককে বিয়ে করেন। বিয়েতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান তিনজন হাতবিহীন ব্যক্তিকে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, “হাত না থাকলে জীবন অর্থহীন হবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। হাতবিহীন ব্যক্তিরাও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে থাকা জেসিকা কক্স এর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রকল্প ছিল ‘লাইফ উইদ ফিট’ নামক ইউটিউব চ্যানেল। এটি প্রথম দুই বছরে এক মিলিয়ন ফলোয়ার অর্জন করে।
এরপরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘রাইটফুটেড ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল’, যা পরবর্তী সময়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। তাঁর জীবনীভিত্তিক বই ‘Disarm Your Limits’ এবং তাঁকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ১৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে।

জেসিকা কক্স কেবল একজন সফল পাইলটই নন, তিনি দুনিয়াজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছেন। তাঁর গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানুষের মানসিকতা ও ইচ্ছাশক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের বিক্ষোভ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারহীনতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে অপরাধীরা এসব জঘন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নারী অধিকারকর্মীরা। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৩মার্চ(বৃহস্পতিবার) মানববন্ধন করে নারী অধিকার আন্দোলন।

মানববন্ধনে নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মান্নান বলেন, আজ নারীরা নিরাপদ নয়। ধর্ষণের ঘটনায় দেশবাসী ক্ষুব্ধ, আমরাও মর্মাহত। বিচার দ্রুত কার্যকর না হওয়ায় অপরাধের হার বেড়ে চলেছে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত ও কঠোর শাস্তি কার্যকরের দাবি জানাই।

নারী অধিকার নেত্রী নাজমুন্নাহার বলেন, গত ১৭ বছরে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে বহু নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনার বিচার হয়নি। জনসম্মুখে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না।

বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম বলেন, আগে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটত, কিন্তু কঠোর শাস্তির কারণে তা কমে গেছে। ধর্ষকদেরও একইভাবে কঠোর ও প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে অপরাধের হার হ্রাস পাবে।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যাপক আফিফা মুশতারী বলেন, এই অপরাধের বিচার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা চাই দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হোক।

সম্প্রতি ঝিনাইদহে হিজাব পরিহিত নারীদের ওপর হামলা এবং শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনায় মানববন্ধনে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা ৯০ দিনের মধ্যে এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে প্রস্তাবিত দাবিসমূহ
১. নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২. দোষী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথা সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সরকার পদক্ষেপ নেবেন। সেক্ষেত্রে শরীয়াহ আইনে বিচার করা যেতে পারে। কঠোর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শামসুন্নাহার লাকি, বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার খানম নীরু, শিক্ষিকা ফারহানা সুমাইয়া মিতু, সৈয়দা শাহীন আকতার, আসিফা সিদ্দিকা, কোহিনূর ইয়াসমিন লিপি, বিশিষ্ট সমাজসেবী মর্জিনা খাতুন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেত্রী কামরুন্নাহার প্রমুখ।

নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন শেষ হয়।
তথ্যসূত্র ঃকালবেলা

 

১৫ মার্চ সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন

 

দেশের শিশুদের অপুষ্টি দূর করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ মার্চ (শনিবার) সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে, যার ফলে বর্তমানে এ রোগ প্রায় বিলুপ্ত। ভিটামিন ‘এ’ শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে না, বরং ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে সহায়ক। তবে অনেক শিশু মায়ের দুধ বা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ‘এ’ পায় না, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

বছরে দুইবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে দেশে ৯৮% শিশু এ সেবা পাচ্ছে, ফলে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত অন্ধত্ব প্রায় নির্মূল হয়েছে। এই সফলতা ধরে রাখতে এবারও এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিশুদের ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

মন্ত্রণালয় থেকে সব অভিভাবকদের আহ্বান জানানো হয়েছে যে,৬মাস থেকে ৫বছর বয়সী শিশুদের নিকটস্থ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য।

আসুন সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপুষ্টি দূর করে সুস্থ ও সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই উদ্যোগে সবাই সহযোগী হই।

 

পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের জন্য থাকবে নারী শিক্ষক

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাস্ট) পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের চেহারা শনাক্তের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

এ উদ্যোগের ফলে পর্দানশীন শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে ও স্বস্তির সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। অনেক সময় নিকাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের চেহারা শনাক্তের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়, যা তাদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আলাদা নারী শিক্ষকের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। এছাড়া, এটি ইসলামী মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি উদ্যোগ, যা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও অনুসরণযোগ্য হতে পারে।

এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং তাদের পরীক্ষার সময় কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
তথ্যসুত্রঃsomc

 

দেশজুড়ে নারী ও শিশু ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

 

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ নারী ও শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়, যেখানে তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এ সময় সমাজকর্মী মুঈদ হাসান তড়িৎ, শিক্ষার্থী তাওহীদা ইসলাম স্বপ্নীল ও প্রেমা সরকারসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।”
তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগেরও দাবি জানান।

এদিন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাদের মতে, সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ ও নৃশংস সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

একই দিনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ-মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

ইডেন মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, “এভাবে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে নারীরা কোথাও নিরাপদ নন।”

এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানান।
দেশজুড়ে এমন প্রতিবাদ কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

 

নারী খামারিদের সংখ্যা বাড়াতে হবে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

 

নারীদের আরও বেশি করে খামার ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, পোলট্রি শিল্প শুরু থেকেই কৃষকের সঙ্গে যুক্ত, আর কৃষকের বাড়িতে মুরগি পালনের মূল দায়িত্ব ছিল নারীদের। তাই এ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে নারী খামারিদের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো ও সেমিনার-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরিদা আখতার বলেন, “ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের সংখ্যা বাড়লে পোলট্রি শিল্প আরও বিকশিত হবে, যা সরাসরি তাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত।” ফিডের উচ্চমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সব পক্ষ একত্রে কাজ করলে ফিডের দাম কমানো সম্ভব। কারণ, পোলট্রি শিল্পই আমাদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে।”

শিশুদের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “পোলট্রিকে যদি অস্বাস্থ্যকর কিছু খাওয়ানো হয়, তাহলে তা মানুষের খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে অর্গানিক ফুড নিয়ে নতুন ভাবনা তৈরি হয়েছে। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক হতে হলে আমাদের অর্গানিক চাষের দিকে যেতে হবে।”

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই মেলা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোলট্রি মেলা বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন,প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।

এ ধরনের উদ্যোগ পোলট্রি শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

প্রথমবারেই সহকারী জজ চবির তানিয়া সুলতানা

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তানিয়া সুলতানা। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই তিনি বিজেএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন।

তানিয়া সুলতানার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের রাউজানে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার। অনার্স ও মাস্টার্স জীবনে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন, যা তার বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভিত্তি গড়ে তোলে।

তবে তিনি পুরোপুরি নিয়োজিত হন মাস্টার্স শেষ করার পর। প্রথমেই তিনি বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাস বিশ্লেষণ করেন এবং বিগত বছরের প্রশ্ন ঘেঁটে বুঝতে চেষ্টা করেন কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এরপর নির্দিষ্ট বই ও রিসোর্স ঠিক করে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিবিড় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।

তানিয়া কখনো সময় ধরে পড়াশোনা করেননি; বরং প্রতিদিন নির্দিষ্ট টপিক শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতেন। লিখিত পরীক্ষায় সফলতার জন্য তিনি বিষয়ভিত্তিক গভীর প্রস্তুতি নিয়েছেন, কারণ এই পরীক্ষাটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি মূলত রিভিশনের ওপর জোর দেন।

প্রস্তুতির সময় মানসিক চাপ থাকলেও তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। পরিবারের স্বপ্ন এবং নিজের লক্ষ্য তাকে বারবার সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। ১০ দিনের লিখিত পরীক্ষার সময় সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, স্বপ্ন পূরণের অদম্য ইচ্ছাই তাকে ধরে রেখেছে।

তানিয়া সুলতানা বিশ্বাস করেন, যারা ভবিষ্যতে সহকারী জজ হতে চান, তাদের অনার্স জীবন থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধরে রাখতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। একাগ্রতা ও সঠিক প্রস্তুতিই বিজেএস পরীক্ষায় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

তানিয়া সুলতানার এই অর্জন প্রমাণ করে, লক্ষ্য ঠিক থাকলে এবং পরিশ্রমি হলে সাফল্য ধরা দিতেই বাধ্য!

 

নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল যে জাতি!

🔘নারী জাতির প্রতি সম্মানের এক অবিস্মরনীয় ইতিহাস রচনা করেছিল যে জাতি , তার  গৌরবময় পরিচয় আজ কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেছে সে সোনালী অতীত, সে স্বর্নালী-বর্নালী মর্যাদাবান মানুষগুলো!
🔘আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা -ইসলামের ইতিহাসে একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
নারী অনাত্মীয় হলেও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা ও সৌন্দর্য। তার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকা সকলের দায়িত্ব। ইসলাম নারীদের অধিকারকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যে ইসলামের ইতিহাসে নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘঠিত হওয়ার ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ‘বনু কাইনুকা’ নামের একটি গোত্রের সঙ্গে।
একজন সাহাবি তার মুসলিম বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।
🔘মদীনায় বনু কাইনুকা ছিল ইহুদিদের তিনটি গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টপ্রকৃতির একটি গোত্র। পেশার দিকে থেকে তারা ছিল স্বর্ণকার, কর্মকার ও পাত্র নির্মাতা।
আবু আওন থেকে ইবনে হিশাম ঘটনাটি যেভাবে বর্ণনা করেছেন-
একদিন জনৈকা মুসলিম নারী বনু কাইনুকা গোত্রের বাজারে দুধ বিক্রি করে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে এক ইহুদি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়েছিলেন।
সেখানে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইহুদি তাঁর মুখের নেকাব খোলানোর অপচেষ্টা করে, ওই নারী এতে অস্বীকৃতি জানান। ওই স্বর্ণকার গোপনে মুসলিম নারীটির (অগোচরে) পরিহিত বস্ত্রের পেছন দিক থেকে এক প্রান্তে পিঠের ওপরে গিঁট দিয়ে দেয়, এতে করে তিনি বসা থেকে উঠতে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে পড়েন।ভদ্র মহিলাকে বিবস্ত্র করে নরপিশাচের দল আনন্দে করতালি দিচ্ছিল। মহিলাটি ক্ষোভ ও লজ্জায় আর্তনাদ করতে থাকেন। সেটা শুনে জনৈক (প্রতিবাদী) মুসলিম ওই স্বর্ণকারকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রত্যুত্তরে ইহুদিরা মুসলিম লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে হত্যা করে।
এরপর নিহত মুসলিম ব্যক্তির পরিবার ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের কাছে বিচার চাইলে এর ফলে মুসলিম ও বনু কাইনুকার ইহুদিদের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
🔘 রাসূল সাঃ এর আগে এ গোত্রের অনেক অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন কিন্তু এ ঘটনার পর রাসুল (সা.)-এর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় তিনি মদিনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবু লুবাবাহ ইবনে আবদুল মুনজির (রা.)-এর ওপর অর্পণ করে হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.)-এর হাতে মুসলিমদের পতাকা প্রদান করে সৈন্য বাহিনী নিয়ে বনু কাইনুকা গোত্রকে শায়েস্তা করতে এগিয়ে যান।ইহুদিরা মুসলিমদের ভয়ে দূর্গের ভেতর আশ্রয় গ্রহণ করে দূর্গের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিনভাবে তাদের দুর্গ অবরোধ করেন।
প্রায় ১৫ দিন সে গোত্রের দূর্গ অবরোধ করে রাখার পর তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অবশেষে আত্মসমর্পন করলে তাদের সকলকে বন্দি করা হয়। (সূত্রঃসিরাত ইবনে হিশাম )
এ হচ্ছে যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।
🔘রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় এ ঘটনা প্রমান করে যে ইসলাম নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি কতটা গুরুত্ব দিয়েছে।যার কারনে নিজেদের মধ্যেতো নয়ই কোন কাফের বেঈমানরা পর্যন্ত নারীদের উপর ফুলের টোকাটা দেবারও সাহস পায়নি কখনো!
দুঃখ জনক বিষয় ! আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ,পবিত্র রমাদান মাসে আমাদের নারী ও শিশুরা তাদের ঘরেও নিরাপদ নয়। কোন্ পশুত্বের সমাজে আমাদের বসবাস!
জাহেলিয়াতকেও হার মেনে গেছে! ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছে শিশু পর্নোগ্রাফি (CSAM) সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় অবস্থানে আছে ,অর্থাৎ আমাদের দেশ থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি সার্চ করা হয় অনেক বেশী , আবার এসবের ভিডিও পাঠানো হয় । আমাদের রুচিবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ! এ অস্লীলতার সয়লাবে এ সমাজে এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধা থেকে ২ বছরের শিশুরাও মোটেই নিরাপদ নয় ।
🔘শুধু আইন করে নয় , আইনের কঠোর ও তড়িৎ বাস্তবায়ন যেমন জরুরী তেমনি সমস্যার সাময়িক সমাধান নয় এর কার্য-কারণ সম্পর্কের দিকে গভীরে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন! আমরা দেখেছি ২০২০ সালে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করেও ধর্ষণ কমানো সম্ভব হয়নি।
আসলে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজটা পঁচে গিয়ে এখন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকো।
🔘প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কীয় কারিকুলামের ঘাটতির সাথে সাথে সমাজে পারিবারির শিক্ষা , সচেতনতা, নীতি- নৈতিকতার শিক্ষা, আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা, দ্বীনি পরিবেশ মেইন্টেন করা-
সমাজের উপর মহল থেকে শুরু করে নীচের মহল সর্বত্র এর দারুন অভাব বোধ হচ্ছে।
আমরা আমাদের সমাজে আর একটি আছিয়াকেও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দেখতে চাই না। আসামীদের বিচারের মাধ্যমে দ্রুত মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখতে চাই।

-সাবিকুন্নাহার_মু্ন্নী
১০ মার্চ , ২০২৫ইং.

 

এস্টার হোবার্থ মোরিস: নারী অধিকারের পথিকৃৎ

 

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস (Esther Hobart Morris) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।

১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং।তবুও তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করে, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।

১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশিরভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
১৮৭১ সালে ইউটা (Utah) যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে।
আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।

 

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তবু কেন থামছেনা অপরাধ?

 

 রাফসান গালিব: দেশে ধর্ষণের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডই। এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এক সপ্তাহ আগেও। ঘটনাটি ঘটেছিল কখন? ছয় বছর আগে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবার পরেও কেন ধর্ষণ রোধ করা যাইতেছে না? এর অন্যতম কারণ হইল, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা।

বগুড়ার তুফান সরকারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই অনেকের। এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের চুল কেটে দিছিল তুফান৷ গোটা দেশে ঝড় উঠে এই ঘটনায়৷ তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়৷

হাইকোর্ট এই ঘটনার বিচার করতে ছয় মাস সময় বেধে দেয়। কিন্তু ৩ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় না। পরে ঠিকই তুফান সরকার জামিনে বের হয়ে মা-মেয়েকে হুমকি দেয়া শুরু করে। সেই তুফানের আজও বিচার হয় নাই।

একের পর ধর্ষণের ঘটনায় ঘটতে থাকায় এবং ধর্ষণের বিচার যথাযথভাবে করতে না পেরে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সংসদে ধর্ষককে ক্রসফায়ার দেয়ার মতো ভয়ংকর দাবি উঠেছিল। বিচারবহির্ভূতভাবে র‍্যাব দিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত কয়েকজন হত্যাও করা হয়। মানুষ ক্রসফায়ারকে সেলিব্রেট করে৷ কী দুর্ভাগ্য আমাদের!

ধর্ষণের বিচার কেন দ্রুত হবে না? কেন বছরের পর বছর আটকে থাকবে? এমন সময় বিচারের রায় হয়, তখন মানুষ ঘটনার কথাই ভুলে যায়। ফলে মৃত্যুদণ্ড দিয়েও সেই রায় আর সমাজে দৃষ্টান্তমূলক হয় না। ধর্ষণের ঘটনার ২০ বছর পর রায় হয়েছে, এমনও ঘটেছে। এটা তো বিচারের নামে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরেক ভয়াবহ ও বাজে দৃষ্টান্ত আছে, তা হলো ধর্ষকের সঙ্গেই ভুক্তভোগীর বিয়ে দেয়া। আদালতের সম্মতিতেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাও এখানে ঘটেছে৷ যথাযথ আইন প্রয়োগ ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই ধর্ষণের পর ধর্ষকের সাথে বিয়ার মাধ্যমে নারীর প্রতি আরেক চরম জুলুম চাপিয়ে দেয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে কেন করা হবে না? একেবারে বিশেষ বা জটিল কোনো কেস ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার অবশ্যই সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ দেশে ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহের ভেতরে বিচারের রায় দেয়ার দৃষ্টান্তও আছে৷

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে হবে। সরকারকে এইখানে অবশ্যই বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে৷ একটা ধর্ষণের বিচার চলতে চলতে আরও কয়েক ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

শুধু আইন বানাইলেই হবে না, শাস্তি বাড়াইলেই হবে না; বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে৷ এইটার ফলাফল নিকট অতীতেই আছে। নারীদের উপর এসিড সন্ত্রাস কিন্তু আমরা এভাবেই বন্ধ করতে পেরেছি৷

দ্রুত আইন প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে মানুষ ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই আবার আহবান করবে। পারলে নিজেরাই ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে৷ এইটা তখন আরও খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে আমাদের সমাজকে। সরকারকে বলব, এমন ঘটনা ঘটার আগেই ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকর করুন।

*
ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যে ধরনের ফেসবুক পোস্ট ভিক্টিমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও পোটেনশিয়াল রেপিস্টকে সত্যিকারের রেপিস্ট হইতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারে- এইটা নিয়ে বিশ্লেষণ পড়ুন এই লিংকে:
https://www.facebook.com/share/p/1NpGnsHhHo/

 

রমদ্বানে স্তন্যদানকারী মায়েদের করণীয়

 

রমদ্বানের রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। তবে ইসলামে মা ও শিশুর সুস্থতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় রয়েছে।

স্তন্যদানকারী মায়ের রোজার বিধান
যদি কোনো মা রোজা রাখার কারণে নিজের বা সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াতের ভিত্তিতে ইসলাম বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজার বাধ্যবাধকতা শিথিল করেছে।
হাদিসেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য অর্ধেক নামাজ ও রোজা মাফ করে দিয়েছেন এবং অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্যও রোজা মাফ করে দিয়েছেন।” (তিরমিজি: ৭১৫, ইবনে মাজাহ: ১৬৬৭)

রোজা না রাখলে করণীয়
যদি কোনো মা রোজা রাখতে অক্ষম হন, তাহলে পরে সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে। তবে কিছু আলেমের মতে, কাজার পরিবর্তে দরিদ্রদের খাওয়ানোও গ্রহণযোগ্য হতে পারে, বিশেষত যদি দীর্ঘ মেয়াদে কাজা রাখা কঠিন হয়।

রমদ্বানে স্তন্যদানকারী মায়ের করণীয়
১.পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার: সেহরি ও ইফতারে প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল ও পানীয় গ্রহণ করুন।

২.শরীরের অবস্থা বোঝা: যদি রোজার কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয় বা দুধের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে আল্লাহর দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করুন।

৩.বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: ডাক্তার বা ইসলামি আলেমের পরামর্শ নিন।

ইসলাম সহজ দ্বীন। তাই মা ও শিশুর সুস্থতা রক্ষায় ইসলাম প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করা উচিত।

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: হোমাইরা জাহান সনম

 

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় এক অনন্য নাম হোমাইরা জাহান সনম। প্রতিকূল পরিবেশ, সামাজিক বাধা ও নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তিনি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে তিনি হয়েছেন গর্বিত এক বাংলাদেশি। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার প্রত্যন্ত এক হাওরবেষ্টিত গ্রাম বড়ই-এ জন্ম হোমাইরা জাহান সনমের। গ্রামের সাধারণ মেয়েদের মতো তিনিও নানা সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হতো তাঁকে। কিন্তু এসব বাধা তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
শৈশবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন হোমাইরা, কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা তাঁকে সেই পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। তবে তিনি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে কীটতত্ত্ব (এনটোমোলজি) বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর হোমাইরা কিছুদিন পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস ইন্টারন্যাশনাল (CABI)-এ প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দেন। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁর কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও গবেষণার প্রতি একাগ্রতার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম অর্জন করেন।
২০২৪ সালে তিনি এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনসে (এপিএএআরআই) টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

বর্তমানে এপিএএআরআই-তে হোমাইরা জাহান সনম কৃষি গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়গুলো হলো-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা,প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা,কৃষি বাণিজ্যে স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি মান নিশ্চিতকরণ।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

হোমাইরা চান, বাংলাদেশের কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে তিনি কাজ করছেন। তার স্বপ্ন, দেশের কৃষকদের জন্য সহজ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি নিশ্চিত করা, যাতে কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন এবং উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

হোমাইরা জাহান সনমের জীবনগল্প প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে যেকোনো সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর পথচলা বাংলাদেশের তরুণদের, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার এক উজ্জ্বল মুখ, হোমাইরা জাহান সনম—যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, আর এগিয়ে চলেন নতুন সম্ভাবনার পথে।

তথ্যসুত্র – the daily star

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫: সমতা, অধিকার ও ক্ষমতায়নের প্রতীক

 

নারী–পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women’s Day) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারীরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখলেও, আজও তারা নানা বাধা ও বৈষম্যের সম্মুখীন হন। তাই, এই দিনটি শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, বরং এটি একটি আন্দোলন, যা নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস
১৯০৮: নিউইয়র্কে প্রায় ১৫,০০০ নারী ভোটাধিকার, কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য সুযোগ এবং লিঙ্গবৈষম্যের অবসানের দাবিতে আন্দোলন করেন।

১৯০৯: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় নারী দিবস’ (National Women’s Day) পালিত হয়।

১৯১০: ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী সম্মেলনে (International Socialist Women’s Conference) জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন (Clara Zetkin) আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

১৯১১: প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।

১৯১৩-১৪: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, রাশিয়ার নারীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে ৮ মার্চ) প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেন।

১৯৭৫: জাতিসংঘ (United Nations) আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং এটি ‘নারীর অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তির দিন’ (Day for Women’s Rights and International Peace) হিসেবে ঘোষণা করে।

১৯৯৬: জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নারী দিবসের জন্য একটি বার্ষিক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে— “Celebrating the Past, Planning for the Future” (অতীতকে উদযাপন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য
নারীরা সমাজের অন্যতম চালিকাশক্তি হলেও, এখনও তারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নেতৃত্ব এবং আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল কারণগুলো হলো—

লিঙ্গসমতা (Gender Equality)
★কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

★নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর সম্পৃক্ত করা।

নারীর ক্ষমতায়ন (Women’s Empowerment)
★শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রযুক্তিতে নারীদের সম্পৃক্ত করা।

★অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

নারী সহিংসতা প্রতিরোধ (Ending Violence Against Women)

★পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

★নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ (Leadership & Participation)
★নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা।

★নারীদের মতামত ও কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য
প্রতি বছর জাতিসংঘ নারী দিবসের জন্য একটি বিশেষ থিম নির্ধারণ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো—

“For ALL women and girls: Rights. Equality. Empowerment.”
(সমস্ত নারীদের জন্য: অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন।)
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিশ্বের সব নারী ও কন্যার জন্য সমান অধিকার, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নারী দিবস উদযাপন কিভাবে করা হয়?
প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে নারী দিবস নানা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়—

★ নারীর অর্জন ও সাফল্যের স্বীকৃতি প্রদান।
★ নারী অধিকার বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন।
★ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রচারণা।
★নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি।
★কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য নীতি প্রণয়ন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, এটি একটি সচেতনতা ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন।
নারীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ তৈরি করা সময়ের দাবি। শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নয়, বরং নারীদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে উন্নত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

গাজীপুরে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

গাজীপুরে যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মাসের ১৮তারিখ মঙ্গলবার গাজীপুর শহরের আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) কনফারেন্স রুমে এ সভার আয়োজন করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত ব্র্যাকের “অগ্নি প্রকল্প”-এর আওতায় যৌথভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।

সভায় প্রকল্পের সমন্বয়কারী আসমা খানম রুবা স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন জেলা ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান। আলোচনায় বক্তারা নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা জানান, “অগ্নি প্রকল্প”-এর মাধ্যমে পরিবহন, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৪টি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সভায় উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৪ জন, অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩১ জন, বাল্যবিবাহ হয়েছে ৫৫টি এবং অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি। আলোচকরা এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র আইনের কঠোর প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, বরং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৭৮ জন ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪২ জনকে প্রাথমিক কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়েছে, ৭৯ জনকে আইনি সহায়তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ৮ জন চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।

বক্তারা উল্লেখ করেন, নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন ও কার্যকর প্রয়োগ জরুরি।

সভায় প্রকল্প সমন্বয়কারী আসমা খানম রুবা বলেন “নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণমাধ্যম কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।”

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নৈতিকতার গুরুত্বারোপ করেন এবং এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। বক্তারা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে সমাজে নারীরা নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

 

বই রিভিউ: Revive Your Heart – Nouman Ali Khan

 

এটি একটি ইসলামিক অনুপ্রেরণামূলক বই, যেখানে লেখক আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জের মুখে একজন মুসলিম কীভাবে কোরআনের শিক্ষা থেকে শক্তি ও দিকনির্দেশনা নিতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেছেন।
যারা মানসিক প্রশান্তি খুঁজছেন, আত্মউন্নয়ন চান, অথবা ইসলামের গভীর দর্শনকে সহজভাবে বুঝতে চান, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি বই। উস্তাদ নোমান আলী খান খুবই সহজ ভাষায় গভীর বিষয় ব্যাখ্যা করেন, যা নতুনদের জন্যও সহজবোধ্য।

বইটি মোট পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত, এবং প্রতিটি অধ্যায়েই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়ে দুআ বা আল্লাহর সাথে যোগাযোগের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয়েছে। লেখক বলছেন, আমরা শুধু বিপদে পড়লেই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, কিন্তু তখন যদি দোয়া কবুল না হয়, তখন অনেকেই মনে করেন যে আল্লাহ তাদের দোয়া শোনেন না। তবে, এই অধ্যায়ে শেখানো হয়েছে কিভাবে আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেন এবং দোয়ার বিপরীতে কিছু হলেও সেটা যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা, তাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় একটি সক্রিয় মুসলিম কমিউনিটি গড়ে তোলার বিষয়ে। লেখক মুসলিম সমাজের বিভক্তির দিকে নজর দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন কিভাবে আমাদের মধ্যে অন্যের প্রতি অতিরিক্ত ধারণা ও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়, যা আমাদের ঐক্যের শক্তি ও একতা কমিয়ে দেয়। এটি সমাজের জন্য একটি বড় ক্ষতি, যা আমাদের ঈমানের পরিপূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তৃতীয় অধ্যায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে। এখানে লেখক আমাদেরকে সতর্ক করেছেন, কিভাবে ছোটখাটো আর্থিক লেনদেনের কারণে আমাদের চরিত্র ও শান্তি বিপর্যস্ত হতে পারে। অর্থের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হতে পারে এবং অর্থের প্রভাবে কিভাবে জীবন বদলে যেতে পারে, তা তিনি তুলে ধরেছেন।

এছাড়া, বইটির প্রচ্ছদ ও অনুবাদ বেশ ভালো, সহজ এবং সাবলীল ভাষায় লেখা, যা পাঠককে বইটির প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে সহজে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।

সার্বিকভাবে, Revive Your Heart একটি দারুণ অনুপ্রেরণামূলক বই, যা প্রতিটি মুসলিমের জীবনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও সম্পর্ক আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।যাপিত জীবনে শান্তি, ঈমান এবং দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করতে চাইলে এই বইটি একবার হলেও পড়া উচিত।

 

রমদ্বানের প্রস্তুতি: মহানবী (সা.)-এর নীতি ও শিক্ষা

 

রমদ্বান মাস ইসলামের পবিত্রতম মাস, আর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ মাসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিতেন। তিনি শুধু রমদ্বান শুরু হলে আমল বাড়াতেন না, বরং রজব ও শাবান মাস থেকেই রমদ্বানের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এখানে আমরা মহানবী (সা.)-এর রমদ্বানের প্রস্তুতি গ্রহণের পদ্ধতি তুলে ধরছি।

১. রজব মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু
ছয় মাস আগেই মহানবী (সা.) রমদ্বানের বরকত লাভের দোয়া করতে শুরু করতেন। বিশেষত, রজব মাস এলেই তিনি বলতেন—
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শা‘বানা, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমদ্বান পর্যন্ত পৌঁছে দাও। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৪৬৮)

২. শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
মহানবী (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি রাসূল (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি কোনো মাসে রোজা রাখতে দেখিনি।” (বুখারি, হাদিস: ১৯৬৯)
তবে যারা শাবান মাসের শুরু থেকে নফল রোজা রাখতেন না, তাদের জন্য শেষের দিকে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন, যেন তারা রমদ্বানের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারে।

৩. শাবানের শেষে চাঁদ দেখা
প্রতি আরবি মাস শুরুর আগে রাসূল (সা.) চাঁদ দেখার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। তিনি সাহাবিদের চাঁদ দেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপনের নির্দেশ দিতেন।
নতুন চাঁদ দেখলে তিনি এই দোয়াটি পড়তেন—
اللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান, নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

৪. রমদ্বানের ফজিলত ও গুরুত্ব আলোচনা
শাবান মাসে মহানবী (সা.) সাহাবাদের রমদ্বানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতেন। তিনি বলতেন, “তোমাদের কাছে বরকতময় রমদ্বান এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তার সিয়ামকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়, আর এতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো।” (সুনানে নাসায়ি)

৫. আত্মিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া
রমদ্বানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মহানবী (সা.) ইবাদতের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতেন। তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অধিক পরিমাণ দু’আ এবং যিকিরের মাধ্যমে আত্মিক শক্তি অর্জন করতেন।
শারীরিকভাবে প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতেন, যাতে রমদ্বানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করা সম্ভব হয়।

৬. পরিবার ও সমাজকে প্রস্তুত করা

রাসূল (সা.) তার পরিবার ও সাহাবিদের রমদ্বানের জন্য প্রস্তুত করতেন। তিনি তাদেরকে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, সদকা ও অন্যান্য ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করতেন।
তিনি বিশেষত শিশুদের রোজা রাখার প্রতি আগ্রহী করতেন এবং ছোটদের ধীরে ধীরে রোজার প্রতি অভ্যস্ত করার উপদেশ দিতেন।

মহানবী (সা.) আমাদের জন্য রমজানের প্রস্তুতির অনন্য আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি রজব থেকে প্রস্তুতি শুরু করতেন, শাবানে নফল রোজার মাধ্যমে অভ্যাস গড়ে তুলতেন, রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং তার পরিবার ও সাহাবিদের আত্মিকভাবে তৈরি করতেন।
আমাদেরও উচিত মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া, যেন আমরা এই পবিত্র মাসের সর্বোচ্চ বরকত লাভ করতে পারি।

 

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা: ২০২৪ সালের জরিপে উদ্বেগজনক চিত্র

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’–এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়, যেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ নারী তাঁদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক বা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই এই হার ছিল ৪৯ শতাংশ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হন নিজের স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে। নন-পার্টনার সহিংসতার তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার হার অনেক বেশি, যা নারীদের নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা আরও গভীরভাবে প্রকাশ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ওপর সহিংসতার হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় খুব একটা কমেনি। ২০১৫ সালের জরিপে জীবদ্দশায় সহিংসতার হার ছিল ৭৩ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে সামান্য কমে ৭০ শতাংশ হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক ১২ মাসের হিসেবে এই হার ৪১ শতাংশ, যা এখনো যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষ করে শারীরিক সহিংসতার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নারীরা স্বামীর কাছ থেকে তিনগুণ বেশি নির্যাতনের শিকার হন, আর যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি।

এছাড়া, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সহিংসতার শিকার হন। গবেষণায় উঠে এসেছে, এইসব এলাকার নারীরা তাঁদের জীবদ্দশায় এবং সাম্প্রতিক ১২ মাসে অদুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের তুলনায় বেশি মাত্রায় সহিংসতার সম্মুখীন হন। অর্থাৎ, পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক কারণ নারীদের প্রতি সহিংসতার মাত্রাকে আরও তীব্র করে তোলে।

এই জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো—নারীদের ৬৪ শতাংশ তাঁদের ওপর হওয়া সহিংসতার কথা কাউকে বলেন না। পারিবারিক সুনাম রক্ষা করা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ এবং সমাজে সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি এর মূল কারণ। অনেক নারী মনে করেন, সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও চুপ থাকা তাঁদের জন্য নিরাপদ, কারণ বিচারপ্রক্রিয়ায় জটিলতা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া তাঁদের পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলেয়া আক্তার। এছাড়া ইউএনএফপিএর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে এবং অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এই জরিপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৭,৪৭৬ জন নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এতে শহর, গ্রাম, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা এবং বস্তির নারীদের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পুরো দেশের পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
জরিপের ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো বাংলাদেশে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। এটি মোকাবিলার জন্য আইন ও নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে, নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেও ব্যাহত করবে।

তথ্যসুত্রঃপ্রথম আলো

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী

 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘প্রবাহমান দৃষ্টিভঙ্গি’ শুরু হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনী,চলমান ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারাক আলভী, অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চিত্র সমালোচক আইয়ুব ভূঁইয়া। উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথিরা নাজমুন নাহার রহমানের শিল্পকর্মের প্রশংসা করেন এবং তাঁর চিত্রকলার বৈচিত্র্য ও গভীরতা নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রদর্শনীতে শিল্পীর ২৩টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, যেখানে রং, আকৃতি ও বিমূর্ত ধারার অনন্য সংমিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। নাজমুন নাহার তাঁর শিল্পকর্মে বাস্তবতা ও কল্পনার এক অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে আধুনিক বিমূর্ত শিল্পের প্রভাব স্পষ্ট, যা ভিন্নমাত্রার শৈল্পিক অভিজ্ঞতা দিচ্ছে দর্শকদের।

নাজমুন নাহার রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারত ও নেপালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন এবং ফ্রান্স, ভারত ও নেপালে নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। তবে এটি তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী, যা তাঁর শিল্পীসত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা শিল্পীর সৃষ্টিশীল কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেকে তাঁর চিত্রকর্মকে সময় ও সমাজের বহুমাত্রিক প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন। শিল্প সমালোচকদের মতে, নাজমুন নাহারের কাজে জীবনের গভীরতা, অনুভূতির সূক্ষ্মতা ও নান্দনিক সৌন্দর্যের চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে।

 

রিমান্ডের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা

 

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার অপরাধ কী ছিল? তিনি হেফাজত নেতাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের জামিনের জন্য লড়েছিলেন। কিন্তু এই আইনসঙ্গত কাজই তার জীবনে এক ভয়াবহ বিভীষিকা নিয়ে আসে। তাকে জঙ্গি বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়, রিমান্ডে নিয়ে চলতে থাকে অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন।

২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট। রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডিতে শাকিলা ফারজানার বাসায় প্রায় ২০০ জন র‍্যাব সদস্য হানা দেয়। কোনো প্রশ্ন, কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাকে জানানো হয়—”আপনাকে জঙ্গি অর্থায়নের মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো।” এই ঘোষণার পরপরই তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়, তুলে নেওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে।
তিনি তখনো বুঝতে পারছিলেন না, আসলে কী ঘটছে। কিছুক্ষণ পর তাকে একটি ছোট ঘরে ঢোকানো হয়। সেই ঘর থেকে ভেসে আসছিল বিদ্যুতের শকের শব্দ। তীব্র সেই শব্দে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় ভয়াবহ মারধর। কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দে!” আতঙ্কিত শাকিলা তখন কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। কিন্তু তারা থামেনি। অকথ্য গালাগালির সঙ্গে চলতে থাকে চড়, থাপ্পড়, লাথি। পাশে থেকে ভেসে আসছিল তার সহকারী আইনজীবী লিটনের চিৎকার। তাকেও ধরে এনেছিল তারা।

অমানবিক নির্যাতনের পর তাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়ি চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিছু সময় পর ওয়্যারলেসে এক কর্মকর্তা বলেন, “স্যার, আমরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সামনে। অপারেশনে যাব?”
এই কথা শুনেই শাকিলার মনে হয়েছিল, এবার বোধহয় সব শেষ। তাকে গুলি করে হত্যা করে ‘জঙ্গি’ হিসেবে চালিয়ে দেবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করে, গন্তব্য পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ সদর দফতর।
সেখানে পৌঁছানোর পর তার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর তাকে বলা হয়, “সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছে। আমরা যা বলব, তাই বলবেন।” অর্থাৎ, পুরো ঘটনাটি মিডিয়ার সামনে সাজানো হবে।

শাকিলাকে প্রথমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারপর আরও দুদিন রিমান্ডে রেখে চলতে থাকে অকথ্য নির্যাতন। রিমান্ডের প্রথম দিনই তার ওপর চলে পাশবিক অত্যাচার। একজন কর্মকর্তা, যিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার মুখের সামনে এসে মদের গন্ধ ছাড়ছিলেন, সঙ্গে চলছিল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ও লাথি।
তিনি পরে জানতে পারেন, এই কর্মকর্তা আর কেউ নন, সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
এমনকি তাকে ভয় দেখানো হয়, “তোমার বড় ছেলেকে ধরে এনে জঙ্গি বানিয়ে দেব।” সেই মুহূর্তে শাকিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিৎকার করে বলেন, “ওর দিকে হাত না বাড়িয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।”

কারাগারে পাঠানোর পরও তার নির্যাতন থামেনি। সেখানে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার জন্য প্রতিদিন তিন ঘণ্টা লোহার গারদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো।
একদিন তিনি দেখেন, জেলগেটের বাইরে তার মা দাঁড়িয়ে আছেন। পরে জানতে পারেন তার মা প্রতিদিন জেলগেটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন, মেয়েকে একবার দেখার আশায়।
কারাগারে মাঝেমধ্যে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখতেন, তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এক নারী অবয়বের কেউ সামনে ব্লেড নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল, যেন যে কোনো মুহূর্তে আঘাত করবে। ভয়ে শাকিলা চিৎকার করে উঠতেন।

মুক্তি পেলেও স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে
প্রায় ১০ মাস বন্দি থাকার পর ২০১৬ সালের ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে জামিন দেয়। তিনি মুক্তি পান, কিন্তু তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় মূল্যবান সময়, হারিয়ে যায় স্বাভাবিকতা।
শাকিলা ফারজানার বাবা এই মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি। মেয়ের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার কষ্টে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।
আজও শাকিলা ফারজানা সেই বিভীষিকাময় রাতগুলোর কথা মনে করলে শিউরে ওঠেন। তিনি শুধু একজন আইনজীবী ছিলেন, যিনি বিচার বিভাগের নিয়ম মেনে জামিন করিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তাকে ‘জঙ্গি’ বানিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকারে পরিণত করে।

এই নির্মমতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে তো? নাকি ঘটে যাওয়া এই অন্যায় বিচারহীনতাই থেকে যাবে আমাদের সমাজের চিরস্থায়ী বাস্তবতা হিসেবে?

 

বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে: বাংলা একাডেমি

 

অমর একুশে বইমেলায় নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলা একাডেমি। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমি এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বইমেলার ওয়াশরুমের পাশে নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হবে।

শুরুতে এই উদ্যোগটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি পরিচালনা করছিল, যারা স্পন্সরের সহায়তায় কাজ করছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি না নিয়ে বইমেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছিল, যা মেলার নিয়মের পরিপন্থী। ফলে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বাংলা একাডেমি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সংকোচ পোষণ করে না এবং নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য বইমেলার নীতিমালার আওতায় বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে। অতীতেও বইমেলায় বিভিন্ন জরুরি উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং এবারও সেই ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
এদিকে, ‘স্টে সেইফ’ ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রদর্শনী ও বিক্রি বন্ধ করার ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম-এর সুপারিশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে তাদের স্টল বন্ধ করতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে সমস্যা ছাড়া কার্যক্রম চালালেও, পরে বিভিন্ন পক্ষ থেকে আপত্তি আসতে শুরু করে।

এ বিষয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং এটি নিয়ে বইমেলায় বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে, সেখানে বইমেলায় এটি নিয়ে আলোচনা হওয়াটা হতাশাজনক। তবে বাংলা একাডেমির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাধা তৈরি হওয়া উচিত নয়। বাংলা একাডেমি নিশ্চিত করেছে, বইমেলায় নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হবে।

 

‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ পেলেন ঢাকা বিভাগের পাঁচ সংগ্রামী নারী

 

আত্মশক্তির প্রতীক হয়ে সমাজে পরিবর্তন এনে দেওয়া ঢাকা বিভাগের পাঁচজন সংগ্রামী নারী পেয়েছেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’। রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এই বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে রাজবাড়ির স্বপ্না রানী ঘোষ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের মাসুদা আক্তার, সফল জননী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের সেলিনা মজিদ, নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করায় ফরিদপুরের লিপি বেগম এবং সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ফরিদপুরের সামর্তবান এই পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রতিটি পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৫৮ জন নারী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচিত পাঁচজনকে চূড়ান্তভাবে ‘অদম্য নারী পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ‘আমরা নারীর অসহায়ত্বের গল্প বেশি বলি, কিন্তু আমাদের ইতিহাসে নারীর বীরত্বের অসংখ্য উদাহরণ আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, অথচ তাঁদের অবদান অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যায়। আমাদের উচিত এই বীর নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের গল্পগুলো সংরক্ষণ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি, কৃষি ও পরিবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। গৃহস্থালি কাজে একজন নারী প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘণ্টা ব্যয় করেন, অথচ সেই শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং নারীদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ চব্বিশের অভ্যুত্থানে নারীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা নারীদের নাম আমরা কি মনে রেখেছি? চব্বিশের আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১১ জন নারীর কথা কি আমরা বলি? আমাদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে ইতিহাসের ন্যায়সংগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খানসহ আরও অনেকে।
বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
নারীদের সংগ্রাম, সাহস ও সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে সমাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

 

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফেব্রুয়ারি মাস

 

নারী অধিকারের লড়াই দীর্ঘ এবং কঠিন হলেও, এর ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাস এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভাষার জন্য যেমন এই মাস তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি নারীদের আইনগত ও পেশাগত অধিকারের ক্ষেত্রেও এটি স্মরণীয়। নারী ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইন পেশায় নারীদের অংশগ্রহণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন—ফেব্রুয়ারি এসব অর্জনের সাক্ষী।

নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের পথচলা
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং প্রথমবারের মতো একটি আইন পাস করে, যেখানে নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। এটি ছিল বিশ্বের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত। এই আইন কার্যকরের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কর্মী এবং নারী অধিকারের অগ্রদূত। তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে ওয়াইওমিংয়ের প্রথম নারী পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই সাফল্যের পর নারীদের ভোটাধিকার আরও সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যও নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।

নারীদের আইন পেশায় প্রবেশ
নারীরা দীর্ঘদিন ধরে আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারছিলেন না। তবে ১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়। এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।

ফেব্রুয়ারি: সংগ্রাম ও অর্জনের মাস
‘ফেব্রুয়ারি’ শুধু ক্যালেন্ডারের একটু মাসের নাম নয়; এটি নারী অধিকার আদায়ের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এস্টার হোবার্থ মোরিসের মতো নারীদের অবদানের ফলে আজ নারীরা ভোটাধিকার ও পেশায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, ফেব্রুয়ারি তার অন্যতম প্রতীক।
এই মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, লড়াই আজও শেষ হয়নি। অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, প্রতিটি পরিবর্তন সম্ভব,যদি আমরা অবিচল থাকি।

 

লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা পিঠা

 

শীতের সন্ধ্যায় এক কাপ গরম চায়ের সাথে পাটিসাপটা পিঠা,আহা!বাঙালির ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই পিঠার বিশেষত্ব হলো এর নরম ও সুস্বাদু ক্ষীরসার পুর। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরেই সহজে লোভনীয় ক্ষীরসা পাটিসাপটা তৈরি করা যায়।

উপকরণ
চালের গুঁড়া – ১ কাপ
ময়দা – ২ কাপ
সুজি – ১ কাপ
গুড় – ১ কাপ
লবণ – পরিমাণমতো

ক্ষীরসার পুর তৈরির উপকরণ:
ক্ষীর ও ছানা – ২ কাপ
চিনি – ২ চা-চামচ
গুঁড়ো দুধ – ১ কাপ
কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ
ঘি – ২ টেবিল-চামচ
তেজপাতা – ২টি
এলাচ – ২টি
লবণ – এক চিমটি

প্রথমে ক্ষীরসার পুর তৈরি কররার জন্য একটি সসপ্যানে ঘি গরম করে তেজপাতা ও এলাচ ফাটিয়ে দিতে হবে। এরপর তাতে ক্ষীর, ছানা, চিনি, গুঁড়ো দুধ ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। কিছুক্ষণ নেড়ে নেড়ে মিশ্রণটি ঘন ও আঠালো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এবার বেটার তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়া, ময়দা, সুজি, গুড় ও লবণ একসাথে নিয়ে মেখে নিতে হবে। এরপর এতে একটু একটু করে পানি দিয়ে মসৃণ ও পাতলা ব্যাটার তৈরি করুন।ব্যাটারটি কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিতে হবে, যাতে এটি সেট হয়ে যায়।

এরপর একটি ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল ব্রাশ করে নিয়ে একটি বড় চামচ দিয়ে ব্যাটার ঢেলে দিন এবং প্যানটি হালকা ঘুরিয়ে ব্যাটারটিকে চারদিকে ছড়িয়ে দিন, যাতে পাতলা রুটির মতো হয়।
এক মিনিটের মধ্যে এটি কিছুটা শক্ত হয়ে আসবে, তখন এর ওপর আগেই তৈরি করা ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিতে হবে।
এক মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর এতে ক্ষীরসার পুর দিয়ে রুটিটি পেঁচিয়ে নিন।
এভাবে সব গুলো পাটিসাপটা তৈরি করুন।

গরম গরম পরিবেশন করুন মিষ্টি ও সুগন্ধি ক্ষীরসা পাটিসাপটা। চাইলে উপরে গুড় বা ক্ষীর ছড়িয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
শীতের সন্ধ্যায় এ যেন এক টুকরো মিষ্টি আনন্দ!

 

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন দিগন্ত খুলছে ‘সমৃদ্ধি’

 

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীল বিকাশে কাজ করছে প্রজেক্ট ‘সমৃদ্ধি’।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রকল্প পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। তাদের তৈরি ব্যাগ, টুপি, পাপোশ, জায়নামাজ ও নকশিকাঁথার মতো পণ্য বাজারজাত করে ‘সমৃদ্ধি’। এই উদ্যোগ শুধু নারীদের আয়ের পথ সুগম করছে না, বরং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রচারেও ভূমিকা রাখছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত জাহান নাদিরা, আবদুল খালেক সরকার, সুমাইয়া আফরিন অর্থি, আরাফাত বিন সোহেল, মো. সৌরভ হোসেন, মশিউর রহমান ও জারিন তাসনিম রিথি মিলে শুরু করেন ‘সমৃদ্ধি’। প্রথমে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে।

নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই উদ্যোগ।
বিরাট গ্রামের শিমলা বেগমের মতো অনেক নারী এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শিমলা আগে থেকেই সেলাই জানতেন, তবে কখনো ভাবেননি পুরোনো কাপড় থেকে নতুন কিছু তৈরি করে আয় করা সম্ভব। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত ব্যাগ তৈরি করছেন, যা তার পরিবারের আয় বাড়াতে সহায়তা করছে।

শুধু নারীদের জন্য নয়, ‘সমৃদ্ধি’ শিশুদের জন্যও কাজ করছে। প্রকল্পের সদস্যরা স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ক্লাইমেট আইডল’ কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে এবং সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতে ‘সমৃদ্ধি’ আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চায়। উদ্যোক্তারা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, একটি মানসম্মত পাঠাগার স্থাপন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা করছেন।

সহপ্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা জানান, তাদের লক্ষ্য শুধু নারীদের স্বাবলম্বী করা নয়; বরং পুরো এলাকার জীবনমান উন্নত করা। তিনি বলেন, “আমরা চাই, ‘সমৃদ্ধি’ শুধু একটি উদ্যোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।”

নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা ও শিশুদের বিকাশ—এই তিনটি দিককে একত্রে নিয়ে কাজ করছে ‘সমৃদ্ধি’। এলাকাবাসীর আশা, এই উদ্যোগ আরও বড় হবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

 

শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : শামীমা হানিফ

প্রিয় নবী রহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৫৬)

তাই শাবান মাস হলো নবীজির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, ভক্তি ওপ্রেম ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। তা হবে সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, “হে বৎস! যদি পারোএ ভাবে সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও প্রতি হিংসা না থাকে; তবে তা–ই করো।” অতঃপর বললেন, “হে বৎস! এটাই আমার সুন্নত সুমহান আদর্শ। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালোবাসল; যে আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।””
(তিরমিজি শরিফ: ২৬২৭)
শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির–আজকার, তাসবিহ তাহলিল, দোয়া কালাম, দান–সদকাহ–খয়রাত,উমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘

“”আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ,১: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)

#শাবান মাস তাৎপর্য ও আমল:
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদে’র সুন্নত রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রয়েছে নফল রোজা। এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন–তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যায় এবং তা করা উচিত।
সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ফরজ ওয়াজিব ছুটে না যায় এবং কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত না হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা। নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত–বন্দেগি করতেন।
চাঁদের ২৯ ও ৩০ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত, চাঁদ দেখে দোয়া পড়াও সুন্নত; চান্দ্রমাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া।

প্রিয় বোনেরা আজ রাত থেকে অর্থাৎ আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ সুন্নাত রোজা রাখা যেতেপারে,এর অনেক মাহাত্ম্য ও ফজিলত রয়েছে।১৪ ই শাবান,রাতের ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমরা বেশী তাসবিহ,দরুদ পড়বো, কুরআন অধ্যায়ন করবো জ্ঞান চর্চার জন্য চেষ্টা করবো বেশী বেশী তাহাজ্জুদ নামাম পড়বো,। ইনশাআল্লাহ,

“””সমাপ্ত “”””””

 

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বর্জন: মাসুমা তাসনিম

#যদি আপনি পরকালের জীবন বিশ্বাস করেন,জান্নাতে যাওয়ার আশা রাখেন তাহলে অবশ্যই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসকে না বলতে হবে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্যের সাথে ইসলামের কোন ধরনের সম্পর্ক নাই। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এটি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে শান্তি।

#বিবাহ বহির্ভূত প্রেম বাস্তবতা বিবর্জিত থাকে। এটি ক্ষণস্থায়ী মনের আনন্দ। এটি একটি নেশাগ্রস্থতা। যখনই নেশা কেটে যায় তখন তাদের কাছে পরিষ্কার হয় সে পুরোপুরি একটি ঘোরের মধ্যে ছিল। সেই অবস্থা কাটিয়ে তার জন্য সরল পথের টিকে থাকা খুব লড়াইয়ের ব্যাপার। একটা শক্ত,মজবুত মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তখন। কত জন সেটি পায়? প্রেম ভালোবাসার পাপের পথটা খুবই পিচ্ছিল হয়। সেখান থেকে ফিরে আসতে চাইলেও আবার পেছনে ফিরে যায়। এজন্য ওই জগত থেকে বের হয়ে আসার চাইতে মৃ*ত্যুকে তারা শ্রেয় মনে করে।

#এই দিবস পরিবার ব্যবস্থায় মারাত্মক ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। আমাদের অভিভাবকরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার পুকুর স্বরূপ। তারা তাদের সন্তানের হিতাকাঙ্খী। তারা অভিজ্ঞতার আলোকে কল্যাণজনক সিদ্ধান্ত নিতে চান। অনেক নেশাগ্রস্থ ছেলে – মেয়েকে দেখা যায় তারা ওই সময় অভিভাবকদের কল্যাণ কামনাকে অভিশাপ মনে করে। বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না বাবা মাকে। লাঞ্ছিত- অপদস্থ করতেও পিছুপা হয় না। প্রয়োজনে তাদেরকে খু*ন করতেও চায়।

#এটাতো দুনিয়ার লাঞ্ছনা। আর আখিরাতের ভয়াবহ আযাব তো আছেই। আসুন, সময় থাকতে সোচ্চার হই। বিবাহ বহির্ভূত সমস্ত ভালবাসাকে না বলি। আল্লাহর কসম! আমার ভাগ্যে বিবাহ , ভালোবাসার যে রিজিক আছে সেটা আমি পাবই ইনশাআল্লাহ।

#মাসুমা_তাসনিম
#সেন্ট_ভ্যালেন্টাইন_বর্জন
১৩/০২/২০২৫

 

এক মাসে ২০৫ নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার

 

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ২০৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন নারী, যার মধ্যে ৪২ জন কন্যাশিশু। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০ জন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জন কন্যা। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে দুইজন কন্যা। যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন দুজন। নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আটজন, যাঁদের মধ্যে চারজন কন্যাশিশু।
এছাড়া, উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন তিনজন (একজন কন্যা), অ্যাসিডদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুজন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। দুই গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও কিছু উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বিভিন্ন কারণে ৪৯ জন (১১ জন কন্যাসহ) হত্যার শিকার হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন, তাঁদের মধ্যে তিনজন কন্যাশিশু। অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরও সাতজন কন্যা।

এছাড়া সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন দুজন, যাঁদের একজন কন্যা। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি, আর বাল্যবিবাহের চেষ্টা করা হয়েছে তিনটি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে এ ধরনের অপরাধ রোধে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

তথ্যসূত্র:
বাংলা ট্রিবিউন
আইটিভি বিডি
আজকের পত্রিকা

 

১১ বছর বয়সী সুবার ঘটনা: সামাজিক ও নৈতিক বিশ্লেষণ

 

সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া ১১ বছর বয়সী মেয়ে সুবার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, দুই বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় নওগাঁ জেলার এক ছেলের সাথে, যা পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপ নেয়। ঢাকায় অসুস্থ মায়ের সাথে থাকা অবস্থায়, সুবা তার মাকে হাসপাতালে রেখে উক্ত ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে নওগাঁর মধ্যপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে।

এই ঘটনা আমাদের সমাজের বর্তমান নৈতিক ও পারিবারিক অবস্থার একটি বাস্তব প্রতিফলন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম শিশুদের সহজেই প্রভাবিত করছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাবের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী অপরিণত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, অনেকেই এই ঘটনার কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণের আইনকে দোষারোপ করছেন। তাদের মতে, যদি বিয়ের বয়স কম হতো, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তবে বাস্তবতা হলো- বিয়ে শুধু ভালো চরিত্র গঠনের উপায় নয়; বরং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত হওয়াও জরুরি। শুধুমাত্র বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হলে, সমাজে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।

এই ঘটনার মূল কারণ খুঁজে সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। পিতামাতা, শিক্ষক ও সমাজের দায়িত্ব হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা, আত্মসংযম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার শেখানো, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া এবং শিশুদের আবেগিয় ও মানসিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া।
শুধু বিয়ে নয়, বরং যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে।

 

একুশে পদক পেলো সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত হলো! জাতীয় নারী ফুটবল দল এবছর একুশে পদক ২০২৫-এ ভূষিত হয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাদের এই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করছে।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়। মোট ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ২০২২ ও ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
নারী ফুটবলারদের এই সাফল্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে।

একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
নারী ফুটবল দলের এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য রইলো শুভেচ্ছা!

 

চট্টগ্রামে পাঁচ সংগ্রামী নারী পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’

সমাজ উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে সফলতা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচজন নারীকে ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, এবং সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন।
সম্মাননা পাওয়া পাঁচজন নারীর প্রত্যেকেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কামালপাড়া ইউনিয়নের নিগার শারমিন। শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সফলতার স্বীকৃতি পেয়েছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রেহেনা সুলতানা। সফল জননী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের চেমন আরা বেগম। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার মোহাজেরপাড়া এলাকার জাহানারা ইসলাম। এছাড়া নির্যাতনের বিভীষিকা কাটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য কক্সবাজার সদরের ঘোনার পাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম সম্মানিত হয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেয়া খান বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত অবস্থা থেকে উঠে এসে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের স্বীকৃতি দিতেই এই আয়োজন। এতে অন্য নারীরাও উৎসাহিত হবেন। আমাদের সমাজে এখনো নারীদের অনেক অবদান স্বীকৃত হয় না, তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। নারীদের এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন বলেন, “সমাজে মানুষে মানুষে বিভাজন আছে। মানসিক বাধা দূর করা দরকার। নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নত বিশ্বে নারী-পুরুষ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছে। শুধু চাকরি করলেই সফল বা স্বাধীন বলা যাবে না। আপনার নিজের জীবন নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই আপনি স্বাধীন।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ কর্মসূচির পরিচালক মনির হোসেন এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা।

এই স্বীকৃতি শুধু পাঁচজন নারীর জন্য নয়, বরং সমস্ত সংগ্রামী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, চাকরিজীবী, শিক্ষিকা এবং নির্যাতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানো নারীদের সম্মানিত করে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ আবারও প্রমাণ করলো—নারীরা যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে সক্ষম।

 

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি শিল্পের নব পথিকৃৎ রুমেয়সা কুরতুলুস

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি দীর্ঘ শতাব্দী ধরে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। “শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়” -এই প্রবাদটি তুরস্কে ক্যালিগ্রাফির স্থায়িত্ব ও গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। একসময় এই শিল্প রাজপ্রাসাদ, মসজিদ এবং পাণ্ডুলিপিকে অলঙ্কৃত করত, কিন্তু আধুনিক যুগে বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল স্ক্রিন ও নিওন সাইনের ভিড়ে এর সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তবু কিছু শিল্পী এখনো এই ঐতিহ্যকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা করছেন, এবং তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রুমেয়সা জয়নেপ কুরতুলুস।
ইস্তাম্বুলের উস্কুদারে নিজের ক্যালিগ্রাফি স্টুডিও ‘কেবিকেচ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র ২৬ বছর বয়সেই কুরতুলুস ক্যালিগ্রাফি শিল্পে নতুন জীবন আনতে শুরু করেন। তার কাজ শুধু ব্যক্তিগত শিল্পীসত্তার প্রকাশ নয়, বরং তুরস্কের ঐতিহ্য রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার মাধ্যম।

তুরস্কের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ইতিহাস দীর্ঘ। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর এটি আরও সমৃদ্ধ হয়। তবে ১৯২৮ সালে তুরস্কে লাতিন বর্ণমালা চালুর ফলে আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রভাব কমতে থাকে, এবং এখান থেকেই আধুনিক তুর্কি ক্যালিগ্রাফির নতুন শাখার জন্ম হয়। এমিন বারিন ছিলেন এই পরিবর্তনের অগ্রদূত। তিনি আরবি ক্যালিগ্রাফির নান্দনিকতাকে লাতিন শৈলীর সঙ্গে একত্রিত করে এক নতুন ধারা তৈরি করেন।

কুরতুলুসও তার ক্যালিগ্রাফি শৈলীতে ঐতিহ্যগত কুফিক স্ক্রিপ্ট, লাতিন ক্যালিগ্রাফি ও আধুনিক ডিজাইনের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে তার সৃষ্টি ‘শব্দ উড়ে যায়, লেখা থেকে যায়’ এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে তিনি তুরস্কের বর্ণমালা সংস্কারের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তার কাজে আরবি ও লাতিন অক্ষরের অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়, যা কেবল দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং ঐতিহাসিক সংযোগও তুলে ধরে।

তার শিল্পীসত্তা শুধু সৃজনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
কুরতুলুসের আর্কিটেকচারাল শিক্ষার প্রভাব তার কাজে স্পষ্ট -তিনি ক্যালিগ্রাফিকে শুধুই অক্ষরের নকশা হিসেবে দেখেন না, বরং স্থাপত্যশিল্পের মতোই এটি একটি কাঠামোগত উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে, ক্যালিগ্রাফি শুধু শিল্প নয়, এটি একটি সভ্যতার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির প্রতিচিত্র।

২০১৭ সালে তার প্রথম প্রদর্শনী ‘রেঞ্জ খোদা’ দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এটি ছিল একটি মাল্টি-সেন্সরি প্রদর্শনী, যেখানে শুধু চোখ নয়, স্পর্শের মাধ্যমেও শিল্পকর্ম অনুভব করা যেত। বিশেষ করে, একটি ব্রেইল ক্যালিগ্রাফি কাজ ‘আল্লাহ’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা তাদের প্রার্থনার অনুভূতিকে বাস্তবে রূপ দেয়।

কুরতুলুসের কাজ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশ প্রশংসিত। ২০২৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রোমান হলিডে কনফারেন্সে অংশ নেন এবং প্রথন তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা স্বরূপ ‘ড্যান্সিং লেটার্স’ স্কলারশিপ অর্জন করেন।

বর্তমানে, তিনি তার স্টুডিওতে নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনা করছেন, যেখানে নতুন প্রজন্মকে ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার কাজ শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণই নয়, বরং এটি একটি নবজাগরণ।

রুমেয়সা কুরতুলুস প্রমাণ করেছেন যে ক্যালিগ্রাফি শুধুমাত্র অতীতের স্মারক নয়,বরং এটি একটি প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল শিল্পধারা, যা সময়ের সঙ্গে নবায়িত ও বিকশিত হচ্ছে।

 

সুনীতা কৃষ্ণন: এক সাহসী সংগ্রামী নারী

 

শৈশব থেকেই অন্যের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি গভীর সহানুভূতি ছিল সুনীতা কৃষ্ণনের। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নাচ শেখাতে শুরু করেন। ১২ বছর বয়সেই গড়ে তোলেন একটি স্কুল, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেন।
কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আনার এই প্রয়াস সহজ ছিল না। ১৫ বছর বয়সে এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন তিনি—আটজন দুর্বৃত্ত তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এই নির্মম অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিকূলতার কাছে হার না মেনে, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প নেন।
পরবর্তীতে তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট যোসেফ কলেজ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল নারী পাচার ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।

১৯৯৬ সালে, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দেখতে পান, পরিবারও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।এই অবস্থায় তিনি থেমে যাননি। হায়দ্রাবাদে এসে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেন।
নিজের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রজ্জ্বলা’, যা আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যান্টি-ট্রাফিকিং শেল্টার। এখানে পাচার হওয়া এবং নিপীড়িত মেয়েদের উদ্ধার, আশ্রয়, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নারী পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি লেখালেখি ও সেমিনারেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

সুনীতা কৃষ্ণন শুধু সমাজের জন্য কাজ করলেও নিজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তাঁর স্বামী, চলচ্চিত্র পরিচালক রাজেশ টাচরিভারের কাছ থেকেও কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন না। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান “Real Men Don’t Buy Sex” আজ কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
নারী পাচারের বিরুদ্ধে অবিসংবাদিত ভূমিকার জন্য তিনি ২০১৬ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন এবং আরও বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন।

নারী পাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁকে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে—১৪ বার শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি, এমনকি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সমাজ থেকে এই অমানবিক প্রথা নির্মূল করা।
সুনীতা কৃষ্ণন প্রমাণ করেছেন, একক প্রচেষ্টায়ও সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর দৃঢ়তা, সাহস এবং অপরিসীম মানবিকতা আজ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা।

 

নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার; সিলেটের মাহজাবীন

 

সফলতার গল্প সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে, আর সেই গল্প যখন নিজ দেশের কারও হয়, তখন তা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনই এক অনুপ্রেরণার নাম মাহজাবিন হক, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

মাহজাবিন হকের শৈশব কেটেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ এনামুল হক পূবালী ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০০৯ সালে মাহজাবিন তার পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ও মহাকাশবিজ্ঞানের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি মিশিগান রাজ্যের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নাসায় যোগদানের আগে মাহজাবিন দুই দফায় নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্নশিপ করেন। প্রথমবার তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে নাসার স্থায়ী নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করে।
ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি নাসা, অ্যামাজনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাব পান। তবে তিনি নাসায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

একজন বাংলাদেশি নারী হিসেবে নাসায় কাজ করা নিঃসন্দেহে এক বিশাল অর্জন। মাহজাবিন প্রমাণ করেছেন যে পরিশ্রম, মেধা ও একাগ্রতা থাকলে বিশ্বের যেকোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব। তার সাফল্য বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে।
বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা যে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে, মাহজাবিন হক তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

 

জালালুদ্দিন রুমি ও তিতির পাখি

 

বিস্তীর্ণ বনের সরু পথ ধরে হেঁটে চলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। প্রকৃতির নীরবতা তার চিন্তাকে গভীরতর করে তুলছে। হঠাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে আসা একটি বড় কালো তিতির পাখি তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। দক্ষ হাতে পাখিটিকে ধরে ফেললেন রুমি।
পাখিটিকে দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন— একে আগুনে ঝলসাবেন, নাকি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে রান্না করবেন!
ঠিক তখনই পাখিটি রুমির হাতের ভেতর নড়েচড়ে উঠে কণ্ঠে আহ্বান জানাল,
“রুমি! জীবনে এত মাংস খেয়েও তোমার লোভ ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে।”
রুমি একটু বিস্মিত হলেন, তারপর বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে প্রথম পরামর্শ এখানেই দাও। যদি মূল্যহীন মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তোমাকে হত্যা করবো।”

পাখিটি বলল,
“তুমি সবসময় অন্যের কথায় বিচলিত হয়ে পড়ো। অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় জড়ানো তোমার স্বভাব। অথচ মানুষকে তাদের মতো থাকতে দিলে, তোমার জীবন আরও শান্ত হবে।”
রুমি চিন্তা করলেন, এতে সত্যিই গভীর এক জ্ঞান আছে!
তিনি বললেন, “তাহলে দ্বিতীয় পরামর্শ বলো।”
পাখিটি বলল, “আমি গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শ দেবো। আগে আমাকে মুক্ত করো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসল।

পাখিটি গাছের ডাল থেকে বলল,
“রুমি! অতীতকে কখনো বদলানো যায় না। তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে থাকো।”
রুমি গভীরভাবে তা চিন্তা করলেন। কিন্তু তখনই পাখিটি হঠাৎ হেসে বলল,
“যাই হোক, তুমি বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা ছিল। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে, তবে সেই হীরা পেয়ে তোমার তিন পুরুষ আরাম করে কাটাতে পারতো।”
এই কথা শুনে রুমি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন! তার বুক ধক করে উঠল। হতভম্ব হয়ে তিনি পাখিটিকে ধরতে দৌড় দিলেন।
পাখিটি তখন উঁচু স্বরে বলল,
“রুমি! তুমি দেখছি আমার দ্বিতীয় পরামর্শের কথাই ভুলে গেলে! আমি তো বলেছিলাম, অতীতকে বদলানো যায় না। আর ভাবো তো, আমি যেখানে মাত্র দুই কেজির, সেখানে কীভাবে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আবারও ভুল করেছেন।

এবার রুমি তিতিরকে অনুরোধ করলেন, “তোমার তৃতীয় পরামর্শটা দাও। এবার আমি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনবো।”
পাখিটি বলল,
“সবার কাছে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা গ্রহণ করতে চায়। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”

রুমি এবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিটির প্রতিটি পরামর্শই জীবন বদলে দেওয়ার মতো!
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে তিনি বনের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু এবার তার চিন্তাধারা আগের চেয়ে অনেক পরিণত ও শান্ত।

গল্পের শিক্ষা:

✅ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
✅ অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
✅ উপদেশ কেবল তাদেরই দিতে হবে যারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

আরওয়া আনাম

 

প্রতারণার ফাঁদে নারী প্রবাসীরা: সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস

 

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন অনেক বাংলাদেশি নারী। এই প্রতারণা রোধে সতর্কতা জারি করেছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
দূতাবাসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু চক্র নারী কর্মীদের ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় তারা বিপদের মুখে পড়ছেন।

বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে নারী কর্মীদের নিয়োগের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। ফলে ট্যুরিস্ট বা অন্য কোনো ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, অনেক নারী এজেন্সির প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এমনকি হচ্ছেন শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার।

বাংলাদেশ হাইকমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোনো নারী যেন দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণামূলক প্রস্তাবে সাড়া না দেন। কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি যদি নারী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজের নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক।
হাইকমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় এসেছেন এবং প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রবাসে নিরাপদ থাকুন, প্রতারণা থেকে দূরে থাকুন।

 

নারীর আত্মরক্ষার কিছু কার্যকরী কৌশল: সচেতনতা-প্রশিক্ষণ

বর্তমান সমাজে নারীর সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মরক্ষার কৌশল শেখা নারীদের জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় নয়, এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যম। অপরাধের ঝুঁকি এড়াতে ও নিজেকে রক্ষা করতে নারীদের সচেতন এবং সক্ষম হতে হবে। এই প্রবন্ধে নারীর আত্মরক্ষার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল শেয়ার করা হলো।

১. নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ান

নারীদের আত্মরক্ষার মূল ভিত্তি হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। দৃঢ় মনোভাব অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতার প্রতি নিরুৎসাহিত করে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা জরুরি।

২. আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন

আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নারীদের শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। বিশেষ কিছু কৌশল, যেমন:

কারাতে ও মার্শাল আর্ট: শারীরিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কার্যকর।

সেলফ-ডিফেন্স ট্রেনিং: আক্রমণকারীকে সামলানোর সহজ কৌশল শেখা।

৩. সবসময় সতর্ক থাকুন-
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। নারীদের উচিত:

অপরিচিতদের সঙ্গে একা চলাফেরা এড়ানো।

রাতের বেলা আলোকিত ও জনবহুল রাস্তায় চলাচল করা।

সন্দেহজনক পরিবেশ দেখলে দ্রুত সরে যাওয়া।

৪. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন

প্রযুক্তি নারীর সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন:

মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাড়ানো।

লাইভ লোকেশন শেয়ার করা।

জরুরি অবস্থায় পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে কল করা।

৫. সুরক্ষার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন

কিছু সহজে বহনযোগ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম নারীদের আত্মরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

পেপার স্প্রে: এটি চোখে ব্যবহার করলে আক্রমণকারী সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে।

অ্যালার্ম ডিভাইস: বিপদের সময় জোরে শব্দ করে সাহায্য চাইতে কার্যকর।

৬. আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন

নারীদের তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় এবং আইনের সাহায্য নেওয়া যায় তা জানা জরুরি।

৭. মানসিক শক্তি অর্জন করুন

বিপদের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ঠান্ডা মাথায় কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত মানসিক প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।

নারীর আত্মরক্ষার কৌশল শুধু সুরক্ষা নয়, এটি একটি আত্মসম্মানের বিষয়। সচেতনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। নিজের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়িয়ে নারীরা সমাজে আরও নিরাপদ ও স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই হলো নারীর সবচে বড় শক্তি।

 

বুক রিভিউ- বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)

 

ড. হিশাম আল আওয়াদির লেখা “বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” একটি অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার পথ দেখায়। বইটির মূল ধারণা হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন এবং শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং আধুনিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
লেখক দেখিয়েছেন, মহানবী (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নেতা, চিন্তাবিদ এবং মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী যেমন ধৈর্য, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তা বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু
বইটিতে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন গুণাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে, যা আমাদের স্মার্ট জীবনযাপনের জন্য সহায়ক:

যোগাযোগ দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের মন জয় করতেন, তা বইটির অন্যতম আকর্ষণ। আধুনিক কর্মজীবনে এটি সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সমস্যা সমাধান ও সংকট মোকাবিলা
তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংকট এবং সেগুলো মোকাবিলার জন্য তাঁর ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমাদের শেখায় কীভাবে জটিল পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দেওয়া যায়।

মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা
মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং ন্যায়পরায়ণ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে কীভাবে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়, তা এই বইয়ের অন্যতম মূল শিক্ষা।

লিডারশিপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আধুনিক যুগের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর।

মুখ্য বার্তা
বইটির মূল বার্তা হলো, মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের শেখায় কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং নৈতিকতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের স্মার্ট এবং সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

“বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ (সা.)” কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি আধুনিক জীবনের একটি প্রাসঙ্গিক গাইড। এই গাইডলাইন আমাদের নৈতিক এবং পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। বইটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে ধারণ করে একজন স্মার্ট, দক্ষ, এবং মানবিক মানুষ হওয়া সম্ভব।

 

শিশুর স্ক্রিন আসক্তি কমিয়ে ফাইন মোটর স্কিল বাড়ান

বর্তমান সময়ে শিশুরা আগের চেয়ে বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিংবা টেলিভিশনের প্রতি তাদের ঝোঁক এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ কিছু কাজ করতেও তারা এখন হিমশিম খায়। জুতার ফিতা বাঁধা, বোতাম লাগানো, চামচ ধরা, কাঁচি চালানো কিংবা কলম দিয়ে ঠিকমতো লেখা—এসব কাজ আগের তুলনায় অনেক শিশুর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুরা এখন হাতে-কলমে কাজ কম করছে, ফলে তাদের ফাইন মোটর স্কিলস (Fine Motor Skills) গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ফাইন মোটর স্কিলস হলো আমাদের হাত ও আঙুলের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার ক্ষমতা, যা লেখা, আঁকা, জুতা বাঁধার মতো কাজে দরকার হয়। কিন্তু প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুরা এসব কাজে দক্ষতা হারাচ্ছে।
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এটি আরও প্রকট হয়েছে। মহামারির সময় শিশুরা ঘরবন্দি ছিল, স্কুলে যেতে পারেনি, খেলাধুলার সুযোগ কমে গিয়েছিল। অনেকেই তখন অনলাইনে পড়াশোনা করত, যার ফলে হাতে-কলমে লেখার চর্চা কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির সময় যারা জন্মেছে, তারা ছয় মাস বয়সে ফাইন মোটর স্কিলস পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, এর কারণ হতে পারে মায়ের মানসিক চাপ, আবার কেউ বলেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে।

তবে শুধু মহামারি নয়, এর অনেক আগে থেকেই শিশুরা হাতে কাজ করার সুযোগ হারাচ্ছে। একসময় শিশুরা পাজল খেলত, কাঠের ব্লক দিয়ে টাওয়ার বানাত, রঙ করত, কাটাকুটি করত। এসব কাজ শিশুদের ধৈর্য বাড়াতে এবং হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখন তারা বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ফলে হাতের ব্যবহার কমে গেছে। অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনা বা ছবি আঁকা করাও উপকারী হতে পারে, কিন্তু এতে হাতে-কলমে কাজ করার যে বাস্তব অভিজ্ঞতা দরকার, তা তৈরি হয় না।

শিশুরা শুধু ফাইন মোটর স্কিলস নয়, বই পড়ার অভ্যাসও হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা আগের তুলনায় বিনোদনের জন্য বই পড়ছে অনেক কম। অথচ বইয়ের পাতা উল্টানো, মনোযোগ ধরে রাখা, শব্দ অনুসরণ করা—এসবই তাদের হাতের সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ায়।

এই সমস্যার সমাধান কী?
শিশুদের স্ক্রিন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়, তবে তাদের হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। অভিভাবকরা চাইলে সহজ কিছু উপায়ে শিশুর ফাইন মোটর স্কিলস বাড়াতে পারেন।
একটি ভালো উপায় হলো শিশুদের বেশি করে লেখার সুযোগ দেওয়া। রঙ করা, কাটাকুটি করা, পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকা—এসব কাজ তাদের হাতের শক্তি বাড়ায়। ব্লক গেমস বা লেগো খেলতে দিলে শিশুরা হাতের নড়াচড়ায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। জুতার ফিতা বাঁধতে শেখানো, বোতাম লাগাতে দেওয়া, রান্নার ছোটখাটো কাজে যুক্ত করা—এসবও সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, শিশুরা যাতে বই পড়ায় উৎসাহিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাতে গল্পের বই তুলে দিলে তারা পাতা উল্টানোর অভ্যাস করতে পারবে, যা তাদের হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জন্য ভালো।

শিশুরা প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠবেই, তবে প্রযুক্তির পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং শিশুদের হাতে কাজ করার সুযোগ বেশি করে দেন, তাহলে তারা এই দক্ষতা ফিরে পেতে পারবে।

 

এবারের সাফল্যগাঁথা: দারিদ্র্য যাকে পিছাতে পারেনি স্বপ্ন পূরণের পথ থেকে

 

জীবনযুদ্ধে বিজয়ীরা হাল ছাড়েন না, প্রতিকূলতাকে পরিণত করেন সম্ভাবনায়। একসময় যে ঘর ভাড়া দিতেও হিমশিম খেত পরিবার, সেই ঘরের মেয়ে আজ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপথে। দারিদ্র্য যার জন্য ছিল চরম বাধা, সেই সীমা আজ প্রমাণ করলেন—“মন যেখানে উচ্চ, সাফল্য সেখানে অনিবার্য।”

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সীমার বাবা একজন বাসচালক, মা গৃহিণী। সংসারের টানাপোড়েন লেগেই ছিল, কিন্তু সীমার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। দারিদ্র্যের অন্ধকারে থেকেও তিনি আলো খুঁজেছেন শিক্ষার পথেই। টিউশনি করে নিজের খরচ চালানো সেই সীমাই এবার দেশের একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

সীমার বাবা চেয়েছিলেন মেয়েটি যেন অন্তত সাধারণ শিক্ষা শেষ করে, কিন্তু তার মায়ের চোখে ছিল আরো বড় স্বপ্ন। অভাবের কঠিন পথ পেরিয়ে, শত প্রতিকূলতা সয়ে তিনি বুক বাঁধলেন সংগ্রামের জন্য।
সীমার ভাষ্যমতে “পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল, কিন্তু অর্থের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি, টিউশনি করে যা পেতাম, তাই দিয়ে বই-খাতা কিনতাম,”।

তার এই সাফল্যে পরিবার তো বটেই, পুরো এলাকাবাসী,সে এখন অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
কেবল নিজের জন্য নয়, সীমার স্বপ্ন পুরো সমাজকে আলোকিত করা। তিনি বলেন, “একদিন ডাক্তার হয়ে আমি দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে চাই। যারা চিকিৎসা পায় না, তাদের বিনামূল্যে সেবা দিতে চাই। আমি জানি, কষ্ট কাকে বলে, তাই আমি চাই না কেউ কষ্ট পাক।”
সীমার গল্প প্রমাণ করে, “যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।” যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, তবে দারিদ্র্যও স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।
এ গল্প শুধু সীমার নয়, বরং সকল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর। যারা লড়াই করতে ভয় পান, তাদের জন্য সীমা যেন এক জীবন্ত উদাহরণ। কারণ সত্যিই, “দুঃসাহসীরাই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়।”

 

সায়েন্স ফিকশন : তারকামন্ত্র

সাল ২১৫৭। পৃথিবী এখন প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ পার করছে। মেঘের ওপর দিয়ে উড়ন্ত নগরী, গ্রহান্তর ভ্রমণের সুযোগ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবাধ ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও এক অদৃশ্য সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে। পরিবেশের ধ্বংস, অবাধ যুদ্ধে শক্তির অপচয় এবং মানবজাতির মধ্যে বাড়তে থাকা বিভক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
ঠিক এই সময়ে, আকাশে একটি নতুন তারা উদয় হয়। এটি কোনো মহাজাগতিক ঘটনা নয়, বরং একটি বিশাল মহাকাশযান। এর ভেতর থেকে একটি বার্তা ভেসে আসে, যা পৃথিবীর প্রতিটি ডিভাইসে সম্প্রচারিত হয়। বার্তাটি ছিল এক অচেনা ভাষায়, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর সব ভাষায় অনূদিত হয়।
“আমরা জেনাসি। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। মানবজাতি নিজেদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা তোমাদের নতুন একটি জীবন দিতে পারি, কিন্তু বিনিময়ে তোমাদের অতীত বিস্মৃত হতে হবে। তোমাদের স্মৃতি মুছে ফেলে একটি শূন্য পাতা থেকে শুরু করতে হবে।”

এই প্রস্তাব শোনার পর পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের “উন্নয়নপন্থী” বলে পরিচয় দেয়, জেনাসিদের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তারা মনে করে মানবজাতির অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করাই ভবিষ্যত অগ্রগতির একমাত্র উপায়।
কিন্তু অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী “নস্টালজিস্টরা” এই প্রস্তাবকে দাসত্বের সামিল বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিশ্বাস, স্মৃতি ছাড়া মানুষ আর মানুষ থাকবে না।
এর মাঝেই এক তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা এই ঘটনার গভীর রহস্য উন্মোচনে এগিয়ে আসে। আয়েশা কাজ করছিল এক গোপন প্রকল্পে, যার মাধ্যমে জেনাসিদের প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছিল। সে আবিষ্কার করে যে, জেনাসিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি একটি ফাঁদ। তারা মানবজাতির স্মৃতিকে শুধুমাত্র মুছে ফেলবে না, বরং সেই স্মৃতিগুলো সংগ্রহ করে একটি বিশেষ অস্ত্র তৈরি করবে।
এই অস্ত্রটি হবে একটি “স্মৃতিশক্তি” বোমা, যা যে কোনো জাতির মস্তিষ্কের স্মৃতি মুছে ফেলতে সক্ষম। জেনাসিরা পৃথিবীকে শুধু সাহায্য করার ভান করছে, আসলে তারা মানবজাতিকে তাদের পরবর্তী শিকার বানাতে চায়। আয়েশা বুঝতে পারে যে, তার হাতে সময় খুব কম।

মহাকাশযানটিতে প্রবেশ করার জন্য আয়েশা একটি বিপজ্জনক মিশন হাতে নেয়। বিদ্রোহীদের একটি দল তার সঙ্গী হয়। জেনাসিদের জাহাজে প্রবেশ করে তারা দেখতে পায়, সেখানে পৃথিবীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতির বিশাল ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এই স্মৃতিগুলো থেকে জেনাসিরা তাদের অস্ত্রের জ্বালানি তৈরি করছে।
অবশেষে, আয়েশা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে তাকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সে এই সিস্টেম ধ্বংস করে তবে পৃথিবী রক্ষা পাবে, কিন্তু একই সঙ্গে পৃথিবীর সব প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মুছে যাবে। অন্যদিকে, যদি সে জেনাসিদের সঙ্গে আপস করে, তবে মানুষের স্মৃতি হারানোর ঝুঁকি থাকবে।
আয়েশা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সে জেনাসিদের সিস্টেম ধ্বংস করার পাশাপাশি, পৃথিবীতে একটি বার্তা পাঠায়—”আমাদের অতীতই আমাদের শক্তি। স্মৃতি হারানো মানে আমাদের অস্তিত্ব হারানো।”

এরমাঝে জেনাসিদের জাহাজ ধ্বংস হয়,আর পৃথিবী আবার নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু করে।
এই মিশন এখানে শেষ হলেও, আকাশে জেনাসিদের মতো আরও কোনো সভ্যতার হুমকি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার মানুষ আরো দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত।

-আরওয়া আনাম

 

দায়িত্ব ফিরছেন ব্রিটিশ রাজবধু কেট মিডলটন

 

ব্রিটিশ রাজবধূ ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। আজ রবিবার প্রকাশিত রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুডের এক প্রতিবেদনের ভূমিকায় তিনি সমাজ উন্নয়নের জন্য সমবেদনা, সমানুভূতি এবং সামাজিক দক্ষতার গুরুত্ব নিয়ে বার্তা দিয়েছেন।

কেট মিডলটন ২০২১ সালে রয়্যাল ফাউন্ডেশন সেন্টার ফর আর্লি চাইল্ডহুড প্রতিষ্ঠা করেন, যা শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রতিবেদনে তিনি দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য, আসক্তি ও নিপীড়নের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের অবশ্যই নতুন শুরু, পুনরুদ্ধার ও পুনর্ভারসাম্য করতে হবে। এর অর্থ হলো আমাদের নিজস্ব আচরণ, আবেগ ও অনুভূতির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পরস্পরের প্রতি সমবেদনা ও সমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও ভালো হতে হবে, যাতে আমাদের জীবনে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর এ সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের সামাজিক ও মানসিক দক্ষতার বিকাশ এবং সেগুলোকে লালন করা। যদি আমরা উন্নতি করতে চাই, তবে এগুলোকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে কেট ধীরে ধীরে রাজকীয় দায়িত্বে ফিরছেন। গত সপ্তাহে তিনি দুটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত বছর জানুয়ারিতে কেটের তলপেটে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কেটের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে, কারণ রাজা তৃতীয় চার্লসও ক্যানসারে আক্রান্ত।
২০২৪ সাল ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য ছিল কঠিন সময়। রাজা তৃতীয় চার্লস ও রাজবধূ কেট মিডলটনের অসুস্থতা পুরো রাজপরিবারকে বিপর্যস্ত করেছিল। প্রিন্স উইলিয়ামও বলেছিলেন, বছরটি তাদের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে।
তবে কেটের প্রত্যাবর্তন রাজপরিবার ও তার ভক্তদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে।
কেট মিডলটনের এই বার্তা শুধু রাজপরিবারের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের সবাইকে আরও সহানুভূতিশীল হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০২৫: নারীর সম্মান ও স্বাধীনতার প্রতীক

প্রতি বছর ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হিজাব দিবস। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী নাজমা খান এই দিবসের সূচনা করেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল হিজাব পরিধানকারী নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

২০২৫ সালের বিশ্ব হিজাব দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “Progression, Not Oppression” (প্রগতি, নিপীড়ন নয়)
এবং হ্যাশট্যাগ #UnapologeticHijabi

এই বার্তার মাধ্যমে হিজাব পরিধানকারী নারীদের স্বাধীনতা,ক্ষমতায়ন, তাদের অর্জন এবং সমাজে তাদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

হিজাবের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
ইসলামে হিজাব কেবল একটি পোশাক নয়, বরং এটি নারীর আত্মপরিচয়, শালীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের উত্যক্ত করা হবেনা।” (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৯)

হিজাব নারীকে সম্মানিত করে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি কেবল মুসলিম নারীদের জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির নারীরাও শালীন পোশাক পরিধান করে থাকে। বিশ্ব হিজাব দিবসের মাধ্যমে নারীদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব হিজাব দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
✅ গ্লোবাল ভার্চুয়াল কনফারেন্স
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন – #UnapologeticHijabi হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সচেতনতামূলক পোস্ট করা হবে।
✅ হিজাব চ্যালেঞ্জ – অমুসলিম নারীদের একদিনের জন্য হিজাব পরিধান করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়।
✅ আলোচনা সভা ও কর্মশালা – হিজাবের গুরুত্ব, নারীর অধিকার ও সমাজে হিজাব পরিধানকারী নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

অনেকে মনে করেন হিজাব একটি বাধ্যবাধকতা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একজন নারীর স্বাধীন পছন্দের প্রতীক। বহু মুসলিম নারী-বিজ্ঞান, শিক্ষা, রাজনীতি, ক্রীড়া ও বিভিন্ন পেশায় হিজাব পরেই সফলতা অর্জন করছেন। তাই বিশ্ব হিজাব দিবস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, নারী হিজাব পরিধান কখনো তার অগ্রগতির অন্তরাল হতে পারেনা।এবং হিজাব পরা বা না পরা এটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

বিশ্ব হিজাব দিবসের মূল বার্তা হলো— নারীর হিজাব পরার স্বাধীনতাকে সম্মান করুন। এটি কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং নারীর আত্মপরিচয়ের একটি অংশ। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য “Progression, Not Oppression” এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আসুন, আমরা একে অপরের সংস্কৃতি ও পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তুলি।

 

আতিয়া বিনতে আমিন: থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি বিজয়ী

মা-বাবা সবসময় চাইতেন মেয়ে চিকিৎসক হোক, তবে আতিয়া বিনতে আমিনের পথটি কিছুটা আলাদা ছিল। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সফল না হওয়া তাকে প্রথম বড় ধাক্কা দেয়। তবে সেবার অতটা ভেঙে না পড়ে তিনি বুঝতে পারেন যে তার আসল লক্ষ্য ছিল অন্যকিছু। তিনি বলেছিলেন, “সাময়িক ব্যর্থতাই আমাকে আসল গন্তব্যে নিয়ে এসেছে।”

বর্তমানে কানাডার মনট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন আতিয়া, গত ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-এ অনুষ্ঠিত থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি) প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিজয়ী হন। থ্রিএমটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের তিন মিনিটে তাদের গবেষণা বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হয়। আতিয়া তার গবেষণায় কালাজ্বর নিয়ে কাজ করেছেন, যা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

আতিয়া ময়মনসিংহের একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তার পরবর্তী সময়টি ছিল অন্যরকম এক যাত্রা,যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলামের অধীনে দুই বছর গবেষণা কাজের সুযোগ পান, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের বৃত্তি পেতে সহায়তা করে।

আতিয়া বলেন, “২০১২ সালের আগে আমি নিজে কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয় জানতাম না, আর এখন আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করি। আগের সেই আমি, যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন না, আজ থ্রি মিনিট থিসিসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি।”
তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আতিয়া বড়। তার গবেষণার বিষয় কালাজ্বর সৃষ্টিকারী পরজীবী এবং এই পরজীবী কীভাবে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কীভাবে বুদবুদের মাধ্যমে পরজীবীটি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। তার গবেষণার ফল শুধু কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরিতেই নয়, ক্যানসারের জন্য নতুন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারেও ভূমিকা রাখবে। এর আগে তার গবেষণা কানাডার কুইবেক প্রদেশে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে।
এছাড়া, ২০২৩ সালে আতিয়া ভ্যানিয়ের স্কলারশিপ লাভ করেন, যা কানাডা সরকারের একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি এবং এর আর্থিক মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি)।
আতিয়া জানান, তার জীবনের সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল যখন তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এবং সেই সময় তিনি বলেন, “জীবনে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!”
আতিয়া বিনতে আমিন বিশ্বাস করেন ”কন্যাসন্তান কখনো বোঝা নই,তারা সুযোগ পেলে পৃথিবী জয় কর‍তে সক্ষম”

 

টাঙ্গাইলে ১৫বছরের কিশোরের ডিপফেক কেলেঙ্কারি: নিরাপদ নেই কোন নারীর ছবি

 

টাঙ্গাইলে মাত্র ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের চাঞ্চল্যকর কর্মকাণ্ড পুরো দেশকে হতবাক করেছে। জানা গেছে, কিশোরটি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া (ডিপফেক) প* ভিডিও তৈরি করে পরে সেই ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করত।
গতরাতে যমুনা টিভির রি প্রতিবেদন টি সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে।

এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপফেক প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এ ধরনের অপরাধের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে নারীরা এই ধরনের অপরাধের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত কিশোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভুক্তভোগীদের ছবি সংগ্রহ করত। এরপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ছবিগুলো দিয়ে ভুয়া ভিডিও তৈরি করত, যা দেখতে একদম আসল ভিডিওর মতো মনে হতো। পরে সেই ভিডিও ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করত।

ডিপফেক হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি, যা ছবি বা ভিডিওতে মানুষের মুখ ও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করতে সক্ষম। বর্তমানে এটি যেভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠছে, এবং সমাজে বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

বিশেষজ্ঞরা নারীদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের ছবি অপরাধীদের জন্য সহজ শিকারে পরিণত হতে পারে। অনেকেই হয়তো সচেতন না হয়ে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনলাইনে আপলোড করেন, যা ডিপফেক বা ভুয়া কনটেন্ট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আগে ন্যাশনাল আইডি কার্ডে ছবি দেওয়ার বিষয়ে পর্দানশীন নারীদের আপত্তির প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তাদের সেই দাবি অনেকেই গুরুত্ব দেননি। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনা তাদের দাবি কতটা যৌক্তিক, তা প্রমাণ করে দিয়েছে।

এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আমরা যা করতে পারি

১. ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার থেকে বিরত থাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ না করা।
২. সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে নিজে সচেতন হওয়া এবং পরিবার ও বন্ধুদেরও সচেতন করা।
৩. আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ: কোনো ধরনের ব্ল্যাকমেইল বা সন্দেহজনক কার্যক্রমের শিকার হলে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা।
৪. পর্দা মেনে চলা: ইসলামের পর্দার বিধান মানলে এ ধরনের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যেতে পারে।

বর্তমান প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনই এর অপব্যবহার বড় ধরনের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে অনলাইনে ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হওয়া জরুরি। আমাদের উচিত সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তির এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত এ ধরনের অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ ধরনের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।

 

রসুনের আচার,আপনার খাবারে যোগ করুন নতুন স্বাদ

 

উপকরণ:
রসুন: ৫০০ গ্রাম (খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া)
সরিষার তেল: ১.৫ কাপ
পাঁচফোড়ন: ১.৫ চা-চামচ
শুকনা লাল মরিচ: ১০-১২টি
রসুন বাটা: ১ চা-চামচ
আদা বাটা: ১ টেবিল-চামচ
হলুদ গুঁড়া: ১ চা-চামচ
লবণ: স্বাদমতো
চিনি: ১ চা-চামচ
ভিনেগার: ১ কাপ

প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে রসুনের কোয়াগুলো ভালো করে ছিলে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. কড়াইতে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হয়ে এলে পাঁচফোড়ন এবং শুকনা মরিচ দিয়ে হালকা ভেজে নিন।
৩. এরপর রসুন- আদা বাটা দিয়ে মাঝারি আঁচে কয়েক মিনিট কষিয়ে নিন।
৪. এবার হলুদ গুঁড়া, লবণ, এবং চিনি যোগ করুন।
৫. রসুনের কোয়াগুলো কড়াইতে দিয়ে মসলার সঙ্গে ভালোভাবে মিক্স করুন।
৬. এরপরে ভিনেগার ঢেলে মিশ্রণটি ফুটিয়ে নিন।
৭. তেল উপরে উঠে এলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন, ঠান্ডা হয়ে গেলে আচারটি একটি পরিষ্কার কাচের বয়ামে ভরে সংরক্ষণ করুন।

টিপস:
আচার দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে বয়ামটি ৬/৭দিন কিছুক্ষণ রোদে রাখুন।

খিচুড়ি, পোলাও বা গরম ভাতের সাথে এই আচার খুবই সুস্বাদু।
উপভোগ করুন মজাদার
রসুনের আচার!

 

নির্যাতনের শিকার কিশোরী কল্পনা: বেঁচে ফেরার গল্প

 

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিল কিশোরী কল্পনা। সেখানেই প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয় সে। মালিকপক্ষের নির্মম অত্যাচারে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়, এমনকি সাম্নের চারটি দাঁতও হারায়। প্রতিদিনের নির্যাতনে কল্পনা অসুস্থ হয়ে পড়লেও কেউ তার প্রতি সহানুভূতি দেখায়নি।
অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কল্পনাকে উদ্ধার করে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা শুরু হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলে।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর কল্পনা এখন অনেকটাই সুস্থ। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর দুই-এক দিনের মধ্যেই হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে সে।

তবে তার পরিবার মনে করে, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা ছাড়া কল্পনার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।