All posts by Oporajita

 

এক আসবাবেই বহু কাজ, জায়গা ও খরচ বাঁচানোর জাদু!

শহুরে জীবনে জায়গার সংকট ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বুদ্ধিমানের মতো বাসা গোছানো এখন একরকম আর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছোট ফ্ল্যাট, সীমিত বাজেট আর নিত্যদিনের ব্যবহারে সহজ-সরল সমাধান খুঁজতে গিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন মাল্টিপারপাস ফার্নিচার, অর্থাৎ বহুমুখী আসবাব। এক আসবাবেই যখন দুই -তিনটি কাজ হয়ে যায়, তখন আলাদা আলাদা ফার্নিচার কেনার দরকার পড়ে না-এটাই এক চরম লাইফ হ্যাক!

একটা সোফা যদি খাট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়, বা একটি টেবিল যদি পড়ার টেবিল আর খাবার টেবিল দুটোই হয়, তাহলে আপনি অর্ধেক জায়গায় পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছেন।
বিশেষ করে ৮০০–১০০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটে থাকা ব্যাচেলর, নতুন দম্পতি কিংবা ছোট পরিবারগুলোর জন্য এটি এক দারুণ সল্যুশন।

বাংলাদেশে এখন হাতিল, আকতার, পারটেক্স, ইশো, অটবি, নাভানা সহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড এই ধরনের আসবাব তৈরি করছে। যেমন, হাতিলের স্টোরেজ সোফা—বসে গল্পও হবে, আবার ভেতরে রাখা যাবে কম্বল বা বই। এমনকি বাচ্চাদের পড়ার টেবিল থেকেও রাতের বেড হয়ে যাচ্ছে এক ক্লিকে! আর নন–ব্র্যান্ডেড দোকানগুলো থেকেও অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় পছন্দমতো আসবাব।

মূলত ইউরোপীয় ডিজাইনের ছোঁয়ায় তৈরি এসব আসবাব দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি হালকা ও সহজে সরানো যায়। ডিজাইনগুলো মিনিমাল, কিন্তু ব্যবহারভিত্তিক—একটা তাক, আবার সেটাই বিছানা। অথবা ড্রেসিং টেবিল, যার নিচে স্টোরেজ বক্স!

মূল্য? ১০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ পর্যন্ত, তবে ইএমআই সুবিধায় ৩–১২ মাসের কিস্তিতে সহজেই কেনা যায়, বাড়তি চার্জ ছাড়াই। একটু বেশি দামের হলেও, কাজের দিক থেকে এটি পুরোটাই স্মার্ট ইনভেস্টমেন্ট।

যারা নতুন বাসা নিচ্ছেন বা পুরোনো বাসা নতুনভাবে গোছাতে চাইছেন-বহুমুখী আসবাব হতে পারে আপনার পরবর্তী স্মার্ট সিদ্ধান্ত। জায়গা কম, কিন্তু ফাংশনালিটি চাই? এই লাইফস্টাইল হ্যাক আপনার জন্যই!

 

একজন নারীর সত্যিকারের সৌন্দর্য: আত্মার ১০টি অনন্য গুণ

সৌন্দর্য মানে শুধু বাহ্যিক রূপ নয় বরং একজন নারীর আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, ও হৃদয়ের উষ্ণতায়ই তাঁর প্রকৃত সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়। চলুন জেনে নিই এমন দশটি গুণাবলি যা একজন নারীর আত্মিক সৌন্দর্যকে অনন্য করে তোলে।

১. মমত্ববোধ ও সহানুভূতির প্রকাশ
তিনি শুধু দুঃখ দেখা পর্যন্ত থেমে থাকেন না, যতটুকু পারেন ততটুকু সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তাঁর মমত্ববোধ নিঃস্বার্থ ও আন্তরিক।

২. আশাবাদী মনোভাব
জীবনের কঠিন সময়েও তিনি আশার আলো খুঁজে নেন এবং অন্যদের সেই আলো দেখাতেও চেষ্টা করেন।

৩. অকৃত্রিমতা ও আত্ম-গ্রহণযোগ্যতা
তিনি যেমন, তেমনভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করেন। নিজের শক্তি ও দুর্বলতা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

৪. জীবের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতা
মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি—সবকিছুর প্রতিই থাকে তাঁর শ্রদ্ধা। তিনি বিশ্বাস করেন, সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া মানে মানবিক হওয়া।

৫. গভীর সহানুভূতি ও হৃদয়ের সংযোগ
তিনি কেবল অনুভব করেন না, অন্যের ব্যথা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। এই সহানুভূতিই তাঁকে করে তোলে এক শক্তিশালী মানবিক ব্যক্তিত্ব।

৬. নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
তাঁর ভালোবাসা হয় শর্তহীন। পরিবার, বন্ধু, সমাজ—সব জায়গায় তিনি ভালোবাসার রূপ ছড়িয়ে দেন। নিজের প্রতিও থাকে এক গভীর সম্মান ও স্নেহ।

৭. সাহস ও দৃঢ়চেতা মনোভাব
ভয়ের উপস্থিতিতেই তিনি সাহস খুঁজে নেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে জানেন।

৮. কৃতজ্ঞতাপূর্ণ মন
তিনি জীবনের প্রতিটি আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞ থাকেন—ছোট বিষয়েও খুঁজে নেন প্রশান্তির উপলক্ষ।

৯. অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মিক শান্তি
বাহ্যিক সাফল্য নয়, তিনি অভ্যন্তরীণ প্রশান্তিতেই তৃপ্ত। বর্তমানে বাঁচেন, জীবনের রূপ-রস উপভোগ করেন সম্পূর্ণভাবে।

১০. অন্যদের অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা
তিনি নিজে শুধু ভালো থাকেন না, বরং অন্যদেরও জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেন। তাঁর কর্ম, কথা এবং উপস্থিতিই হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার উৎস।

এই গুণাবলিগুলো কাউকে নিখুঁত করে না, বরং একজন নারীর মানবিক ও আত্মিক সৌন্দর্যকে আলোকিত করে তোলে। এমন নারীরা সমাজে নীরবে আলো ছড়িয়ে দেন—নিজের মতো করে, নিজের বিশ্বাসে।

রালফ ওয়াল্ডো এমারসনের ভাষায়, “সৌন্দর্য মুখে নয়, হৃদয়ের আলোয়।”
আমাদের চারপাশে এমন হৃদয়ের আলোকিত মানুষ হোক প্রতিদিনের প্রেরণা।

 

গাজার পথে গ্রেটা থুনবার্গের সাহসী অভিযান

বিশ্বজুড়ে যখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে, তখন কেউ কেউ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও দাঁড়াচ্ছেন মানবতার পক্ষে। তাদেরই একজন হলেন সুইডিশ মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। জলবায়ু আন্দোলনের কিশোরী কণ্ঠ থেকে যুদ্ধবিরোধী সাহসী প্রতিবাদী হিসেবে তার বিবর্তন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।

২০২৫ সালের ৯ জুন, ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি ত্রাণবাহী জাহাজ গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, ওষুধ, স্যানিটারি সামগ্রীসহ মানবিক সহায়তা বহন করছিল জাহাজটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রমের সময় ইসরায়েলি বাহিনী এটি জবরদখল করে। জাহাজে থাকা ১৩ জন মানবাধিকার কর্মীর মধ্যে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গও। অপহরণের ঠিক আগে গ্রেটা একটি ভিডিও বার্তায় বিশ্ববাসীকে জানান, “আমাদের আটক করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।”

জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল গাজার প্রথম নারী মৎস্যজীবী ম্যাডলিন কুল্লাবের নামে। আশা ছিল, এ জাহাজ একদিন মানবিক বার্তা নিয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছাবে। কিন্তু যুদ্ধ সেই আশা স্তব্ধ করে দেয়।

গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৮ সালে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেন এবং সুইডিশ সংসদ ভবনের সামনে ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’ শুরু করেন। তার আন্দোলনে পরে দশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসেন তিনি।

২০১৯ সালে কার্বনমুক্ত নৌযান করে ইংল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যান। সেখানে বিশ্বনেতাদের প্রশ্ন করেন: “মানুষ মারা যাচ্ছে, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে, আমরা গণবিলুপ্তির মুখে—তোমাদের সাহস কীভাবে হয়?”

তার স্পষ্টভাষী প্রতিবাদ বিশ্বনেতাদের অনেকেরই বিরাগভাজন করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে “রাগী কিশোরী” বলেও কটাক্ষ করেন। জলবায়ু, মানবাধিকার এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে গ্রেটাকে বারবার হুমকি ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এমনকি জেলও খাটতে হয়েছে।

বর্তমানে গ্রেটা রাশিয়া, ইসরায়েল, আজারবাইজান ও মরক্কোর যুদ্ধনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সক্রিয়। ইউক্রেন, ফিলিস্তিন ও আর্মেনিয়ার মতো যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে তার ভূমিকা শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং সরাসরি মানবিক সহায়তায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমেও স্পষ্ট।

গ্রেটার পরিবেশসচেতন জীবনধারাও প্রশংসনীয়। তিনি উড়োজাহাজে যাত্রা এড়িয়ে চলেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ তার বিমানযাত্রার ছবি প্রকাশ করে বিতর্ক তোলে।

২০০৩ সালে জন্ম নেওয়া গ্রেটার মা অপেরা শিল্পী মালেনা এরম্যান এবং বাবা অভিনেতা সভান্তে থুনবার্গ। TEDx-এ গ্রেটা বলেন, “আমি আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানতে পারি, কিন্তু বুঝতে পারিনি কেন কেউ কিছু করছে না।”

তার লেখা দুটি বই—Scenes from the Heart (২০১৮) এবং No One is Too Small to Make a Difference (২০১৯)—বিশ্বজুড়ে আলোচিত। দ্বিতীয় বইয়ের বিক্রিত অর্থ তিনি মানবতার কাজে ব্যয় করবেন বলেও জানান।

গ্রেটার কণ্ঠ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-বিশ্বে ন্যায়, মানবতা ও পরিবেশের পক্ষে দাঁড়ানোর এখনই সময়। যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তার মতো মানুষ যতদিন থাকবেন, ততদিন পৃথিবীর সৌন্দর্য বেঁচে থাকবে।

Photo Credit: BBC Bangla

36 total views, 9 views today

 

শোনো, বন্ধু হও! প্যারেন্টিং মানে আদেশ নয়, সহযাত্রা

বাসায় ফিরে এসে যখন দরজায় আপনার ছোট্ট সন্তান ছুটে আসে, কিংবা বৃদ্ধ মা-বাবা এক কাপ চায়ের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকেন—তখন আপনি কি ভাবেন? আপনি কি শুধু নির্দেশ দেন, নাকি একটু নরম সুরে, সহমর্মিতায় কথা বলেন? পরিবার মানে শুধু কর্তৃত্ব নয়, পরিবার মানে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বোঝাপড়ার সম্পর্ক, যেখানে সবাই একে অপরের বন্ধু।

অনেকেই মনে করি, সন্তান জন্ম দিলেই আমরা “ভালো” বাবা-মা হয়ে যাই। কিন্তু সন্তানের জন্য সত্যিকারের ভালো পিতামাতা হয়ে ওঠা আলাদা ব্যাপার। এটা দায়িত্ব, ধৈর্য ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়।

❝আমার সন্তান আমার স্বপ্ন নয়, সে নিজের স্বপ্ন নিয়ে জন্ম নিয়েছে❞
প্যারেন্ট হিসেবে, আমি আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারি না। আমি তাকে শুধু দেখাতে পারি ভালোটা কী, মন্দটা কী। আমি পার্থক্য চিনতে শেখাতে পারি যাতে সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

কিন্তু আমাদের সমাজে কী ঘটে? ছেলেমেয়েদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বাবা-মার ইচ্ছার গদি। তারা যদি আকাশে উড়তে চায়, আমরা তাদের পাখা কেটে দেই। যদি তারা সমুদ্রে ভাসতে চায়, আমরা বলি—না, তোমাকে শুধু ডাক্তার হতে হবে। জাহাজের নাবিক হওয়া মানেই জীবন নষ্ট।

এই যে চাপ, এই ডমিনেশন—আমি এর ঘোর বিরোধী। আমরা কখনো তাদের জিজ্ঞেস করি না, “তুমি কী হতে চাও?” “তোমার স্বপ্ন কী?” বরং আমরা নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো তাদের উপর চাপিয়ে দিই। এটা কি পিতামাতার দায়িত্ব? নাকি এক ধরণের মানসিক আগ্রাসন?

শুধু নম্বর নয়, জীবনটাও গুরুত্বপূর্ণ
আমরা সন্তানদের এমনভাবে লালন পালন করি, যেনো তারা আমাদের কর্মচারী। পরীক্ষায় ভালো নাম্বার আনতে বলি, মানে আনতেই হবে। পাশের বাসার মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার, সুতরাং আমার মেয়েকেও হতে হবে। কিন্তু পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে কি আমরা কখনো জানতে চেয়েছি—সে আসলে কী হতে চায়?
সে কি উড়তে চায়, না ডুবতে চায়? তার চোখের স্বপ্নগুলো কি আমরা সত্যিই দেখি?

আমরা এই জটিল প্রতিযোগিতামূলক সমাজে আমাদের সন্তানদের এমন একটা দৌড়ে নামিয়ে দিচ্ছি, যেখানে তারা নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। এক সময় দেখা যায়—চাপ নিতে না পেরে একটা শিশু আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। তখন আমরা কেবল বলি—“ও খুব দুর্বল ছিলো।” আসলে, আমরা কি তার পাশে ছিলাম?

🌱 বন্ধু হোন, বোঝার চেষ্টা করুন
একজন আদর্শ অভিভাবক মানে “বন্ধু” হওয়া। তার সাথে হাঁটা, তার স্বপ্ন শুনা, ভুল করলে ভালোবেসে শেখানো। একসাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া—কীভাবে সে ভালো মানুষ হতে পারে। তাকে এমন পরিবেশ দেওয়া, যেখানে সে ভয় নয়, ভালোবাসা নিয়ে বড় হতে পারে।

আমার সন্তান, আপনার সন্তান, আমাদের বাবা, আমাদের মা—প্রতিটা জীবনই মূল্যবান। ইনডিভিজুয়াল জীবন মানেই আলাদা এক জগৎ। চলুন না, প্রতিটা জীবনের প্রতি সম্মান রাখি।

📌 সন্তান কোন ‘প্রজেক্ট’ নয়-সে একজন মানুষ
সন্তান আমাদের “প্রজেক্ট” না যে ঠিক করে দেওয়া যাবে কোথায় পৌঁছাবে। সে একজন স্বতন্ত্র মানুষ। তারও অনুভূতি আছে, চিন্তা আছে, স্বপ্ন আছে। তাকে বোঝা, তাকে ভালোবাসা, তাকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে দেওয়াটাই পিতামাতার দায়িত্ব।

শুধু বলবেন না, “আমি তোমার জন্য সব করেছি।” বরং এমন কিছু করুন যাতে সে নিজে বলতে পারে, “আমার মা-বাবা আমার জন্য একটা বেঁচে থাকার জায়গা ছিলেন।”

Photo Credit: Sahlah

 

শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে করণীয় ও বর্জনীয়

শিশুদের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে সচেতনতা থাকা জরুরি। বিশেষ করে জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর হলো শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়টাতেই স্মৃতিশক্তি প্রভাবিত হওয়ার ভিত্তি তৈরি হয়। তাই অভিভাবক হিসেবে কিছু কাজ নিয়মিত করলে শিশুর মনে রাখার ক্ষমতা আরও উন্নত হতে পারে।

করণীয়
১. খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো:
শিক্ষাকে আনন্দময় করতে হলে খেলাধুলা ও গেম-ভিত্তিক শেখানো কার্যকর। মেমোরি গেম, ধাঁধা, শব্দজট, চিত্রপরিচিতি—এসব খেলার মাধ্যমে শিশুর শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং শেখা বেশি সময় ধরে মনে থাকে।

২. কল্পনা করার অভ্যাস গড়ানো:
শিশুকে গল্প শোনানোর পর বলা যেতে পারে, “এবার চোখ বন্ধ করে ভাবো, তুমি কী দেখলে?”—এভাবে কল্পনাকে সক্রিয় করলে স্মৃতিও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. শেখা বিষয় অন্যকে শেখাতে উৎসাহ:
যে জিনিসটা সে শিখেছে, তা যদি কাউকে (যেমন ছোট ভাই/বোন, দাদি-নানি) শেখাতে পারে, তাহলে বিষয়টি তার মনে আরও ভালোভাবে গেঁথে যায়। এতে তার আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।

৪. ভেঙে ভেঙে শেখানো:
বড় কোনো তথ্য বা অধ্যায়কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে শেখালে শিশুর পক্ষে তা সহজে মনে রাখা সম্ভব হয়। প্রতিটি ধাপকে বোঝার সুযোগ দিলে তার ধারণা আরও পরিপক্ব হয়।

৫. হাইলাইট এবং রঙের ব্যবহার:
শিশুদের জন্য পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা বাক্য রঙিন কলম দিয়ে হাইলাইট করে দেওয়া যেতে পারে। শিশুরা রঙের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, যা তার মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

৬. দৈনন্দিন রুটিনে শেখার সময়:
শিশুর জন্য একটি নির্দিষ্ট পড়ার ও শেখার সময় নির্ধারণ করলে সে অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখে। শেখার সময়টা যেন চাপমুক্ত ও আনন্দদায়ক হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. গল্প বলার অভ্যাস গড়ে তোলা:
ঘুমানোর আগে গল্প বলা শিশুর কল্পনাশক্তি ও শব্দভাণ্ডার বাড়ায়। পাশাপাশি, গল্পের ধারাবাহিকতা মনে রাখার চেষ্টা করাও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।

৮. শরীরচর্চা ও খেলাধুলা:
দৌড়, লাফঝাঁপ, বল খেলা, সাইকেল চালানো—এসব শারীরিক কসরত শিশুর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, মানসিক চাপ কমায় এবং শেখার আগ্রহ বাড়ায়।

৯. পুষ্টিকর খাদ্য:
শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখুন ডিম, মাছ, দুধ, বাদাম, তাজা ফল, সবজি এবং যথাসম্ভব প্রাকৃতিক খাবার। চকলেট, সফট ড্রিংকস বা ফাস্টফুড কমিয়ে দিলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

১০. পর্যাপ্ত ঘুম:
বয়স অনুযায়ী শিশুকে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে দিতে হবে। গভীর ঘুমই তার মস্তিষ্ককে পুনরায় সজীব করে এবং শেখা মজবুত করে।

১১. আবেগিক নিরাপত্তা:
শিশু যেন তার ভুল বলার ভয়ে ভীত না থাকে বা প্রশ্ন করতে সংকোচ না করে, সেজন্য তাকে সহানুভূতির সঙ্গে বড় করতে হবে। এতে শেখার আগ্রহ বাড়ে।

১২. নিয়মিত বইপড়া:
কমিক বই, ছবি সহ গল্পের বই বা ইসলামিক শিশুতোষ বই পড়ার অভ্যাস গড়লে সে শব্দ চিনতে শেখে, ভাষা রপ্ত করে এবং কল্পনা শক্তি বাড়ায়—যা সবকিছু মিলিয়ে স্মৃতিকে জোরদার করে।

বর্জনীয়
শিশুকে অতিরিক্ত পড়ার চাপ দেওয়া যাবে না। এতে শেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়।

তার প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হওয়া বা উত্তর না দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে সে ভবিষ্যতে জিজ্ঞেস করতে ভয় পায়।

“অমুকের মতো হতে হবে” বলে তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। এতে শিশুর আত্মসম্মানবোধ নষ্ট হয়।

প্রতিযোগিতা বা পরীক্ষার চাপে না রেখে শেখার আনন্দটা উপভোগ করতে দিন।

টিভি, মোবাইল, ট্যাব—এসব ডিভাইসে অতিরিক্ত সময় কাটানো শিশুর মনোযোগ ও স্মৃতির বড় ক্ষতি করে।

বড়দের ঝগড়া বা চিৎকার শিশুর মানসিক স্থিতি নষ্ট করে; তাই ঘরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি উপরের সব কৌশল অনুসরণ করেও শিশুর মধ্যে স্মরণশক্তি, মনোযোগ বা আচরণগত সমস্যা লক্ষ করা যায়, তাহলে শিশুবিশেষজ্ঞ বা মনোবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কখনো কখনো সমস্যার পেছনে শারীরিক বা নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল কারণও থাকতে পারে।

এই পরামর্শগুলো শুধু শিশুদের মেধা বাড়ানোর জন্য নয়, বরং তাদের সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পথও তৈরি করে।

 

এক ডিমে শুরু,এক মহীয়সীর মসজিদ নির্মাণ ইতিহাস

বাংলাদেশের হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো স্থাপত্যশিল্প। এই ভূখণ্ডের নয়নাভিরাম মসজিদগুলো যুগে যুগে বিমোহিত করেছে অগণিত দর্শনার্থী আর ইতিহাসপ্রেমী মানুষকে। তবে এমন একটি মসজিদের কথা কি শুনেছেন, যার গোড়াপত্তন হয়েছিল মাত্র একটি ডিম দিয়ে?
হ্যাঁ, হবিগঞ্জ জেলার এক নিভৃত পল্লী প্রজাতপুরে দাঁড়িয়ে আছে এমনই এক মসজিদ—যার পেছনে লুকিয়ে আছে এক মহীয়সী নারীর অতুলনীয় ত্যাগ, ধৈর্য ও একাগ্রতা।

সরাসরি গল্পে আসা যাক। হবিগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরের এই প্রজাতপুর গ্রামের এক নারী, যিনি ‘বেঙ্গির মা’ নামে পরিচিত, নিয়ত করেছিলেন নিজের উপার্জিত অর্থেই গড়ে তুলবেন একটি মসজিদ। স্বামীর অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি সে অর্থ স্পর্শ করেননি।

ঘটনা ১৯০২ সালের। প্রজাতপুর ও লালাপুর গ্রামের মাঝামাঝি একটি স্থানে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি। শুরুটা ছিল একটি মাত্র ডিম দিয়ে! সেই ডিম মানত করে একটি মুরগির নিচে রাখেন তিনি। ধীরে ধীরে সেই ডিম থেকে ছানা, ছানা থেকে ডিম—এভাবে একসময় একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন বেঙ্গির মা।
খামারের মুরগি বিক্রি করে জমাতে থাকেন টাকা। এক সময়, নিজ চেষ্টায় এক লাখ টাকা জোগাড় করেন এবং তা দিয়েই নির্মাণ করেন মসজিদ। তিনি প্রথমে এর নাম রাখেন ‘এক আন্ডার মসজিদ’। সময়ের সাথে মসজিদটির আসল নাম হয়ে ওঠে—‘বেঙ্গির মায়ের মসজিদ’।

আজও শতবর্ষ পেরিয়ে সেই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদের মূল ভবন এখনো অক্ষত রয়েছে, যদিও ২০০৯ সালে এলাকাবাসী এর বর্ধিত অংশ সংস্কার করেন এবং সম্প্রতি আবার রং করা হয়।
মসজিদের খতিব মাওলানা আলমাছ উদ্দিন বলেন, “আমি মসজিদের ইতিহাস শুনে বিস্মিত। নিয়ত থাকলে মানুষ কী না করতে পারে!”

বেঙ্গির মার উত্তরপুরুষ রাকিল হোসেন বলেন, “আমার দাদির দাদি বেঙ্গির মা শুধুমাত্র একটি ডিম থেকেই যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তা এখনো আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

বর্তমানে মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে আছেন বেঙ্গির মার বংশধর রূপ উদ্দিন, লন্ডনপ্রবাসী আবদুল হারিছ, ব্যবসায়ী হেলিম উদ্দিন, রাকিল হোসেন ও শামীনুর মিয়া।
এলাকাবাসীর দাবি, এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়া হোক সরকারের পক্ষ থেকে।

এক ডিম থেকে শুরু হয়ে গড়ে ওঠা এই মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনাই নয়, আত্মনিবেদনের এক চিরন্তন স্মারক।

 

৩৫ থেকে ৩৯ বয়সী নারীদের মধ্যে এইচপিভি সংক্রমণ সর্বাধিক

সম্প্রতি ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রধান কারণ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচআর-এইচপিভি) সংক্রমণের হার অঞ্চলভেদে ভিন্ন হলেও একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা স্পষ্ট,৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

সিলেট অঞ্চলে এই হার সবচেয়ে বেশি (৬.৪%), যেখানে গ্রামীণ এলাকায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। সবচেয়ে কম সংক্রমণ পাওয়া গেছে রাজশাহীতে (১.৭%)। গবেষণার আওতায় থাকা ৩,৮৫৬ জন নারীর মধ্যে মোট ১৩৮ জন এইচপিভি পজিটিভ ছিলেন, অর্থাৎ গড় হার ৩.৬%।

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি, কক্সবাজার ও বাগেরহাটে পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, বিবাহিত নারীদের মধ্যে সংক্রমণের গড় হার ২.৫৬% হলেও ঝালকাঠিতে তা ছিল ৩%। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ভাইরাস ধরন ছিল এইচপিভি-১৬, যা ক্যানসার সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ।

স্ক্রিনিং পদ্ধতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, ভায়া + এইচপিভি পরীক্ষার সমন্বিত পদ্ধতি একক পরীক্ষার তুলনায় রোগ শনাক্তকরণে বেশি কার্যকর। এ গবেষণায় ৪,৭৯২ জন নারী অংশ নেন এবং ফলাফল অনুযায়ী, যৌথ পদ্ধতিতে পজিটিভ পাওয়া যায় ৫.৯% নারীর, যেখানে শুধুমাত্র এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ে তা ছিল ৩.৭%।

জাতীয় পর্যায়ের গবেষণায় ৩০-৬০ বছর বয়সী নারীদের ওপর পরিচালিত আরেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণের হার ছিল ৩.২%। এর মধ্যে ১% ছিলেন এইচপিভি-১৬ পজিটিভ এবং ০.২% ছিলেন এইচপিভি-১৮ পজিটিভ।

এছাড়াও, ডিএইচআইএস২ ভিত্তিক ই-হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম (ই-এইচআইএস) ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্রিনিং ও ট্র্যাকিং কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বর্তমানে ১৪,২১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক এই সিস্টেম ব্যবহার করছে। যদিও ইন্টারনেট সংযোগ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা আগামীতে আরও কার্যকর স্ক্রিনিং কার্যক্রম গড়ে তুলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন:
উপকূলীয় ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে স্ক্রিনিং জোরদার

৩৫-৪৪ বছর বয়সী নারীদের অগ্রাধিকার

জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ই-স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম সংযুক্তকরণ

ল্যাব ও হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টের ডিজিটাল সংযুক্তি

ভায়া ও এইচপিভি’র যৌথ ট্রাইএজ পদ্ধতি নিশ্চিতকরণ

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এই স্ক্রিনিং কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিল এবং ভবিষ্যতে নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট গঠনের পরিকল্পনাও জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের এই ধরণের উদ্যোগ নারীস্বাস্থ্য সচেতনতা, ক্যানসার প্রতিরোধ ও দ্রুত রোগ শনাক্তকরণে একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

📌পাঠকদের জন্য পরামর্শ:
৩৫ বছর বয়স পার হওয়ার পর সকল নারীর উচিত নিয়মিত এইচপিভি ও জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

 

মন্থর জীবনের আহ্বান: ক্লান্ত পুঁজিবাদের যুগে ‘কিছু না করা’র বিপ্লব

ধীরে চলা, বিশ্রামের জন্য সময় বের করা: এ কি শুধু বিলাসিতা, নাকি এক জরুরি প্রয়োজন?

আজকের ব্যস্ত, প্রযুক্তি-নির্ভর জীবনে, যেখানে মানুষ প্রতিদিন ‘আরো করো’ সংস্কৃতির শিকার, সেখানে ‘কিছু না করা’ হয়ে উঠছে এক নিঃশব্দ প্রতিবাদ! এক নতুন জীবনদর্শন!

একটি বছর শুধু বিশ্রামে কাটানো, কেমন শোনায়?
নেই অফিস, নেই ইমেইল, নেই ক্যারিয়ারের দৌড়ঝাঁপ-শুধু নিজেকে সময় দেওয়া।
এক সময় এটা ছিল “ব্যর্থতা”র প্রতিচ্ছবি, কিন্তু আজ তা হয়ে উঠেছে আত্মউপলব্ধির পথ। এই ধরণের ধীর জীবনচর্চা এখন পুঁজিবাদী ব্যস্ততার বিরুদ্ধে এক নীরব বিপ্লবের রূপ নিচ্ছে।

ব্রিটিশ লেখিকা এমা গ্যানন একসময় ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ‘গার্লবস’ কালচারের প্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এক চরম বার্নআউট তাঁর জীবন পাল্টে দেয়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, স্ক্রিনের দিকে তাকাতেও কষ্ট হতো, হাঁটতে গেলেও ক্লান্তি ছাপিয়ে যেত। এই অবস্থায় তিনি এক বছর কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরতি নেন।

এই অভিজ্ঞতাই জন্ম দেয় তাঁর আত্মজীবনীমূলক দুই খণ্ডের বই “A Year of Nothing”। বইটিতে তিনি বলেছেন কীভাবে দিনগুলো কাটিয়েছেন পাখি দেখা, শিশুদের কার্টুন দেখা, জার্নাল লেখা আর ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটার মতো সহজ কিন্তু শান্তিপূর্ণ অভ্যাসে। তাঁর মতে, “ঘুম, আকাশ দেখা, হাঁটাহাঁটি -এগুলো বিলাসিতা নয়, বরং আমাদের মানসিক সুস্থতার অপরিহার্য অংশ।”

‘কাজই যদি জীবনের মানদণ্ড হয়’ – এই বিশ্বাসে ধাক্কা
আজকের সমাজে ‘ব্যস্ততা’কে সাফল্যের মাপকাঠি ধরা হয়। কিন্তু এই ধারণার বিরুদ্ধেই দাঁড়াচ্ছে নতুন প্রজন্ম। অনেক লেখক-চিন্তক এখন বলছেন, বিশ্রামও এক ধরনের হতে পারে অগ্রগতির চালিকাশক্তি।

জেনি ওডেলের “How To Do Nothing” বইটি দেখিয়েছে, কীভাবে প্রযুক্তি আমাদের মনোযোগ চুরি করছে, এবং ‘কিছু না করাও’ এক রাজনৈতিক অবস্থান হতে পারে।

অলিভার বার্কম্যানের “Four Thousand Weeks” মনে করিয়ে দেয়, আমাদের জীবনের সময় সীমিত, তাই তা যেন আমরা ব্যস্ততার আড়ালে হারিয়ে না ফেলি।

“নিকসেন” নামে এক ডাচ ধারণা বলছে – ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু না করাটাই নিজেকে সময় দেওয়ার একটি পদ্ধতি।

অক্টাভিয়া রাহিম তাঁর বই “Pause, Rest, Be”–তে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

ক্লডিয়া হ্যামন্ডের “The Art of Rest” বইয়ে দেখা যায় গবেষণালব্ধ প্রমাণ – বিশ্রাম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কতটা জরুরি।

এই ‘মন্থরতার’ ঢেউ কোথা থেকে এলো?
এক কথায়- আমরা ক্লান্ত,খুব বেশি ক্লান্ত।
নিত্যদিনের কাজের চাপে, সোশ্যাল মিডিয়ার অপূর্ণতার প্রতিযোগিতায়, স্ক্রিনে আটকে থাকা জীবনে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। কোভিড-প্যান্ডেমিক অনেককে প্রথমবারের মতো বাধ্য করেছে থামতে, নিজেকে সময় দিতে। সেখান থেকেই অনেকেই বুঝেছেন-ধীরে চলা মানে পিছিয়ে পড়া নয়।

তবে, ‘কিছু না করা’ কি সবার জন্য সম্ভব?
সমালোচকেরা বলেন, এই “বিশ্রামের জীবন” মূলত সেইসব মানুষের জন্য, যাদের আর্থিক সুরক্ষা আছে। সবকিছু ছেড়ে শুধু নিজের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ কি সবার আছে?

এই প্রশ্ন থেকেই স্পষ্ট হয় – ধীরে চলার পথও এক ধরনের প্রিভিলেজ। কিন্তু তাই বলে এই বার্তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় না। বরং এটি মনে করিয়ে দেয় – যতটা সম্ভব, আমাদেরও দরকার কিছুটা থেমে যাওয়া, কিছুটা বিশ্রাম, কিছুটা নিজের খেয়াল রাখা।

‘কিছু না করা’ এখন আর অলসতার প্রতীক নয়। বরং এটি হয়ে উঠছে এক সচেতন সিদ্ধান্ত -প্রযুক্তি, ব্যস্ততা, আর অকারণ চাপের বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটি কৌশল।
বই পড়া, গাছপালায় পানি দেওয়া, কিছু সময় নীরবে বসে থাকা-এসব আজকের দুনিয়ায় এক ধরনের বিপ্লব।

ক্লান্ত এই সময়ে, আপনি কি প্রস্তুত একটু থামতে!

 

ঈদের ভোজের পর পেট ভার? দূর করুন সহজ উপায়ে!

কুরবানির ঈদ মানেই মাংসের বাহার -রোস্ট, কাবাব, কোরমা কিংবা বিরিয়ানি! কিন্তু এতসব মজাদার খাবারের পর অনেক সময় পেট ভার, গ্যাস্ট্রিক কিংবা অস্বস্তি দেখা দেয়। মূলত ফাইবারজাতীয় খাবার কম খাওয়া ও অতিরিক্ত ঝাল-মসলাযুক্ত মাংস হজমে সমস্যা তৈরি করে। তাই খাওয়ার আনন্দ ঠিক রেখে, পেট সুস্থ রাখার জন্য মেনে চলুন এই সহজ ৫টি উপায়:

১.পর্যাপ্ত পানি পান করুন (তবে সময়মতো)
খাওয়ার সময় একসাথে বেশি পানি পান না করে, খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বা পরে পানি পান করুন। এতে হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় না, বরং খাবার ভালোভাবে ভাঙতে সহায়তা করে। ঈদের ব্যস্ততায় পানি পানের কথা একদম ভুলে যাবেন না।

২.এক বাটি টক দই খান
মাংসজাতীয় খাবার খাওয়ার পর এক বাটি টক দই পেটের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রো-বায়োটিক উপাদান অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করে। ফলে পেট ভার ভাব অনেকটাই কমে আসে।

৩. আদা-লেবুর মিশ্রণ
আদা কুচি, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও হালকা গরম পানি মিশিয়ে খেলে হজমে সহায়তা হয় এবং পেটের অস্বস্তি দূর হয়। চাইলে আদা দিয়ে হালকা চা তৈরি করে খেতেও পারেন। এটি পেটের গ্যাস দূর করতে বেশ কার্যকর।

৪. হাঁটা বা হালকা চলাফেরা করুন
খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া উচিত নয়। অন্তত ১৫–২০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। এতে হজম ভালো হয়, খাবার পাকস্থলীতে জমে থাকে না এবং পেট ফাঁপা কিংবা ভার ভাব কমে।

৫. পুদিনাপাতা বা জিরা পানি পান করুন
ঈদের মসলাদার খাবার খাওয়ার পরে এক গ্লাস পুদিনা পাতা বা জিরা ভেজানো হালকা গরম পানি পান করলে হজমে আরাম মেলে। এগুলো প্রাকৃতিক হজম সহায়ক এবং পেট ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে।

ঈদের আনন্দের সঙ্গে যেন হজমের অস্বস্তি না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এই সহজ ৫টি স্বাস্থ্য টিপস মেনে চললে কুরবানির ঈদের মজাদার খাবারের আনন্দ নষ্ট না করেই পেটকে রাখা যাবে সুস্থ ও হালকা।

ঈদ মোবারক! 🌙🍖

 

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, অধিকার হোক সুরক্ষিত

 

‘মা’ এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশাল এক পৃথিবী। মা শুধু একটি সম্পর্ক নয়, ভালোবাসা, মমতা, ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের অপর নাম। একজন নারীর জীবনে মাতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আর এই মাতৃত্বকাল যেন নিরাপদ হয়, সে দায়িত্ব সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র-সবার।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ২১ কোটি নারী গর্ভধারণ করেন। তাদের মধ্যে দুই কোটির বেশি নানা ধরনের জটিলতায় ভোগেন, এবং প্রায় ৮০ লাখ নারীর জীবন প্রসবজনিত কারণে হুমকির মুখে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৮০০ নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এর বাইরেও ৭০ লাখ নারী প্রসব পরবর্তী গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন এবং আরও প্রায় ৫ কোটির বেশি নারী ভোগেন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যায়।

বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক। প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি লাখ জীবিত সন্তানের জন্মে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়। আর প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন মা প্রাণ হারান প্রসবজনিত জটিলতায়।

দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোর চিত্র আরও করুণ—প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী এখনও বাড়িতেই সন্তান প্রসব করেন, যেখানে নিরাপদ ও মান-সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি দুর্লভ। এছাড়া নবজাতকের মৃত্যুহারও উদ্বেগজনক—প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ২১ জন মারা যাচ্ছে।

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে নাইরোবিতে প্রথম বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ মে ‘জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো—
মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস,

নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা,

গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ,

নারীর মাতৃত্বকালীন অধিকার প্রতিষ্ঠা।

২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: “মাতৃস্বাস্থ্যে সমতা; বাদ যাবেনা কোনো মা”। এটি একটি সময়োপযোগী বার্তা, যা সকল শ্রেণি-পেশার নারীদের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।

মাতৃত্বকালীন সংকটের কারণসমূহ
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে দেশে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে:

দক্ষ মিডওয়াইফ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীর অভাব

জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতি

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের অভাব ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশনের বেড়ে চলা

গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদানের প্রতি উদাসীনতা

দরিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতা

কর্মজীবী নারীদের উপর গর্ভকালেও কঠিন শ্রমের চাপ

পরিবার ও সমাজের অসচেতনতা

বর্তমানে দেশে প্রায় ২২ হাজার প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ প্রয়োজন, অথচ রয়েছেন মাত্র এক হাজারের মতো। ফলে নারীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে করণীয়
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

✅ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
✅ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
✅ প্রয়োজনীয় টিকা ও ওষুধ গ্রহণ
✅ ভারী কাজ ও মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা
✅ গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ
✅ দক্ষ মিডওয়াইফ ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব
✅ প্রসব-পরবর্তী পর্যাপ্ত সেবা ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা

সঙ্গে থাকতে হবে পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি, সচেতনতা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।

মাতৃত্বকালীন সময়ে নিরাপত্তা নারীর অধিকার—এটি যেন বিলাসিতা নয়, বরং মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। নিরাপদ মাতৃত্ব কেবল একজন মায়ের জীবন নয়, একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করে। তাই ‘মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, অধিকার হোক সুরক্ষিত’—এই শ্লোগান হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।

রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার একত্রিত হয়ে যদি সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এ নামিয়ে আনা সম্ভব।

আমরা চাই, প্রতিটি মা যেন তার মাতৃত্বকালীন সময়টি কাটাতে পারেন সম্মান, সেবা ও নিরাপত্তার সঙ্গে।

 

ঢাকা মেডিকেলে নিকাবধারীদের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক

 

দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজেও পরীক্ষার সময় নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের চেহারা শনাক্তের জন্য আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট)-এও একই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা এই সময়োপযোগী ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, “নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তের ক্ষেত্রে আলাদা নারী শিক্ষক নিয়োগ একটি যৌক্তিক, শালীন ও ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল ব্যবস্থা। এটি নারীদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

প্রসঙ্গত, নিকাব পরিহিত অনেক ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে চেহারা শনাক্তের সময় নানা ধরনের বিড়ম্বনা বা হেনস্তার মুখে পড়েন। অথচ আলাদা নারী শিক্ষক থাকলে সেই প্রক্রিয়া সম্মানজনক ও স্বাচ্ছন্দ্যে সম্পন্ন হয়, যা পরীক্ষার্থীর জন্য মানসিক প্রশান্তি এবং শিক্ষা জীবনের স্বাভাবিকতাকে বজায় রাখতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা আশা প্রকাশ করে যে, দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে পর্দানশীন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

 

আরাফাহ দিবসের গুরুত্ব-ফজিলত, জানুন কেন দিনটি এত মর্যাদাপূর্ণ!

 

ইসলামের মহিমান্বিত দিনগুলোর মধ্যে যিলহজ্জের ৯ তারিখ, অর্থাৎ আরাফাহ দিবস অন্যতম। এটি শুধুমাত্র হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনই নয়, বরং এই দিনকে ঘিরে রয়েছে অগণিত বরকত, ফজিলত ও রহমত। এই দিনে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, দো‘আ কবুল করেন এবং অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আসুন জেনে নিই, কেন আরাফাহ দিবস এত গুরুত্ববহ এবং আমাদের কী করণীয়।

🕋 আরাফাহ দিবস : মর্যাদা ও ফজিলত
🔹 ১. ইসলামের পূর্ণতা লাভের দিন

এই দিনে কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নাজিল হয়:

> “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম।”
📖 [সূরা মায়েদা: ৩]

এ আয়াতটি আরাফাহ দিবসে, শুক্রবার, হজ্জের সময় নাজিল হয়েছিল। এক ইহুদি বলেছিল, “এমন আয়াত আমাদের উপর নাজিল হলে আমরা তা ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম।” খলীফা উমর (রাঃ) জবাবে বলেন, “আমরা জানি এটি কবে, কোথায় এবং কী অবস্থায় নাজিল হয়েছে।”
📚 বুখারী: ৪৫, ৪৬০৬

🔹 ২. এটি ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “আরাফাহ দিবস, কুরবানির দিন এবং তাশরীক-এর দিনগুলো মুসলিমদের ঈদের দিন। এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।”
📚 আবু দাঊদ: ২৪১৯

আরাফাহ দিবসের ফজিলত
🟢 ১. দু’বছরের গুনাহ মাফ হয়

আরাফাহ দিবসে রোযা রাখা অ-হাজীদের জন্য সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “আমি আশা করি এই দিনের রোযা আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
📚 মুসলিম: ১১৬৩

তবে হাজীরা এদিন রোযা রাখেন না, বরং আরাফাতে অবস্থান করে দো‘আ, যিকর ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করেন।

🟢 ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় দিন

> “আল্লাহ তাআলা আরাফার দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, ‘দেখো, আমার বান্দারা ধুলায় ধূসরিত হয়ে এসেছে, তারা কী চায়?’”
📚 মুসলিম: ১৩৪৮, ইবনু মাজাহ: ৮১

🟢 ৩. দো‘আ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

> “সবচেয়ে উত্তম দো‘আ হল আরাফাহ দিবসের দো‘আ। আর আমি ও আগের নবীরা যেটা বলেছি তা হলো—
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ”
📚 তিরমিযী: ২৮৩৭

এই যিকর বারবার বলা, আল্লাহর প্রশংসা করা ও নিজের জন্য এবং উম্মাহর জন্য দো‘আ করা এই দিনে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ।

আমাদের করণীয়
🔸 যারা হজ্জ করছেন না, তারা এদিন রোযা পালন করবেন।
🔸 যিকর-আযকার বেশি বেশি করবেন।
🔸 তওবা ও ইস্তিগফার করবেন।
🔸 দো‘আ ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর রহমত চাইবেন।

আরাফাহ দিবস শুধু হজ্জ পালনকারীদের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের সব মুসলমানের জন্য এটি এক অপার ফযীলতের দিন। আসুন আমরা এই দিনের গুরুত্ব অনুধাবন করে, যথাযথ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।

 

কুরবানির ইতিহাস ও গুরুত্ব

ইসলামে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ইবাদত, যার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের প্রিয় বস্তু ত্যাগ করে। এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয় বরং আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের প্রকাশ। কুরবানি ঈদুল আজহার মূল ভিত্তি, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য ত্যাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার বার্তা নিয়ে আসে।

কুরবানির ইতিহাস
কোরবানির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদায় হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে:
“তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের কাহিনী যথাযথভাবে শুনাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল। তাদের একজনের কুরবানি কবুল হল এবং অন্যজনেরটা কবুল হল না। সে বলল- অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব।
অপরজন বলল -আল্লাহ শুধু মুত্তাকীদের কাছ থেকেই কবুল করেন।” (সূরা মায়েদা: ২৭)

পরবর্তী সময়ে কুরবানির চূড়ান্ত রূপ ও তাৎপর্য প্রকাশ পায় হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে। আল্লাহ তাকে আদেশ করেন স্বপ্নে পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে।
“অতঃপর যখন সে (ইসমাইল) পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন সে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি। এখন তুমি চিন্তা করো, তোমার মত কী? সে বলল, হে পিতা! আপনি যা আদেশ পাচ্ছেন তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন।” (সূরা ছাফফাত: ১০২)
“আর আমি তার পরিবর্তে একটি মহান কোরবানি দান করলাম।” (সূরা ছাফফাত: ১০৭)

কুরবানির শরয়ী গুরুত্ব
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানি একটি ওয়াজিব ইবাদত। ঈদুল আজহার দিনগুলোতে সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য এটি আদায় করা অপরিহার্য। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” (মুসনাদে আহমাদ)

কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কুরবানি করো।” (সূরা কাউসার: ২)
এই নির্দেশ থেকে বোঝা যায়, কুরবানি নিছক একটি সামাজিক উৎসব নয় বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে এটি আজও বহাল আছে। হাদিসে এসেছে, “এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।” (ইবনে মাজাহ)

কুরবানির ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেন:
“আল্লাহর কাছে কুরবানির দিন মানবজাতির কোনো আমলই কুরবানির চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা খুশিমনে কুরবানি করো।” (তিরমিজি)

যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসুল! কুরবানি কী?” তিনি বলেন, “এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।” সাহাবারা আবার জিজ্ঞেস করেন, “এতে আমাদের কী পুরস্কার আছে?” তিনি বলেন, “প্রতিটি পশমের জন্য একটি করে নেকি।” (মিশকাত)

তাকওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক:
আল্লাহ বলেন,
“তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ: ৩৭)
আরও বলেন,
“বল, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবকিছুই বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য।” (সূরা আন’আম: ১৬২)

এই ইবাদতের মাধ্যমে একজন মুমিন তার আত্মাকে খাঁটি করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের ভালোবাসার বস্তু ত্যাগ করে এবং জীবনের প্রতি মোহ কমিয়ে তাকওয়ার পথে অগ্রসর হয়। এটি কেবল পশু জবাই নয়, বরং আত্মিক পশুত্ব জবাইয়ের এক প্রকৃত ইবাদত।

কুরবানির সামাজিক প্রভাব
কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সামাজিক প্রভাব। কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন করার মাধ্যমে সমাজে সহানুভূতি, সাম্য ও ঐক্যের চর্চা হয়। ধনী ও গরিবের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয় এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে কিছু মানুষ কুরবানিকে কেবল সামাজিক রেওয়াজ, স্ট্যাটাস দেখানো বা পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে দেখে। কিন্তু ইসলাম কুরবানিকে ত্যাগ, সহানুভূতি ও তাকওয়ার উৎসব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে গরিবের মুখে হাসি ফোটে, ধনী-গরিবের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি হয় এবং মুসলিম সমাজে সাম্যবোধ জাগ্রত হয়।

কুরবানির শর্ত ও মাসআলা
১. কুরবানি শুধুমাত্র ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত করতে হবে।
২. যে ব্যক্তির কাছে কুরবানির তিনদিনে (১০-১২ জিলহজ) যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
৩. পশু হতে হবে নির্ধারিত বয়সের: গরু ও মহিষ দুই বছর, ছাগল ও ভেড়া এক বছর।
৪. কুরবানির পশু যেন দৃষ্টিগোচর ত্রুটিমুক্ত ও সুস্থ হয়।
৫. কুরবানি নিজ হাতে করা উত্তম, না পারলে উপস্থিত থেকে অন্যের মাধ্যমে করানো।
৬. কুরবানির গোশত গরিব, আত্মীয় ও নিজের মধ্যে বণ্টন করা সুন্নত।
৭. যে ব্যক্তি কুরবানির নিয়ত করবে সে যেন কুরবানির আগ মুহুর্ত পর্যন্ত নখ,চুল বা শরীরের পশম না কাটে

কুরবানি একটি বহুমাত্রিক ইবাদত, যার ভেতর আছে ইতিহাস, শিক্ষা, আত্মিক শুদ্ধি ও সামাজিক কল্যাণ। এটি পালন করতে হবে বিশুদ্ধ নিয়তে, শরিয়তের নির্দেশনা মেনে। বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, বরং অন্তরের খাঁটি ইমান ও তাকওয়ার সঙ্গে কুরবানি করলে তবেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।

আসুন, আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যথাযথভাবে কুরবানি আদায় করি, তাকওয়ায় পরিপূর্ণ জীবন গঠন করি, এবং আমাদের পরিবার, সমাজ ও উম্মাহকে কুরবানির মাধ্যমে ঐক্য ও সহানুভূতির পথে পরিচালিত করি।

আরওয়াহ আনাম

 

কোরবানির ঈদে ঝামেলা কমাতে আগেই সংরক্ষণ করুন সবধরনের মসলা

কোরবানির ঈদ মানেই ঘরে ঘরে মাংসের নানা পদ রান্না। আর এইসব সুস্বাদু রান্নার আসল রহস্য লুকিয়ে থাকে সঠিক মসলা ব্যবহারে। তবে সময় বাঁচাতে ও রান্নার ঝামেলা কমাতে মসলা আগে থেকেই সংরক্ষণ করে রাখা অত্যন্ত কার্যকর। মসলা যদি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে তার গন্ধ, স্বাদ ও কার্যকারিতা দীর্ঘদিন পর্যন্ত অটুট থাকে। তাই রান্নাঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো কীভাবে দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায়, তা জানা জরুরি।

শুকনা মসলা সংরক্ষণ
১. বাতাসরোধী কাঁচের বোতলে রাখুন।
শুকনা মরিচ গুঁড়া, ধনে, জিরা, গরম মসলা ইত্যাদি কাঁচের বা ফুড-গ্রেড প্লাস্টিকের বোতলে সংরক্ষণ করুন।

➡️ টিপস: মসলা ব্যবহারের সময় চামচ অবশ্যই শুকনো রাখবেন।

২. শুকনা ও ঠাণ্ডা জায়গায় রাখুন।
রান্নাঘরের চুলার পাশে রাখবেন না। আলো ও গরমে মসলার ঘ্রাণ ও গুণ নষ্ট হয়।

৩. ফ্রিজে রাখা যায় কিছু মসলা।
গরমের সময় মরিচ গুঁড়া বা হলুদ গুঁড়া ফ্রিজের ড্রায়ার বক্সে রাখা যায়। এতে পোকামাকড় বা ঘাম জমে না।

🧄 বাটা মসলা সংরক্ষণের পদ্ধতি।
১. আদা-রসুন বাটা সংরক্ষণ
সম পরিমাণ আদা ও রসুন বেটে হালকা তেলে ভেজে নিন।

ঠাণ্ডা হলে কাচের বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন।

৭-১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

২. মরিচ বাটা
কাঁচা মরিচ বেটে সামান্য লবণ দিয়ে ছোট কন্টেইনারে রাখুন।

আলাদা আলাদা ভাগে ফ্রিজে রাখলে প্রতিবার পুরোটা বের করতে হয় না।

৩. ফ্রিজিং (আইস কিউব ট্রিক)
আদা, রসুন, পেঁয়াজ বা কাঁচা মরিচ বেটে আইস কিউব ট্রেতে রেখে ফ্রিজে দিন।

জমে গেলে বের করে জিপলক ব্যাগে রেখে দিন।

ব্যবহারের সময় একটি কিউব বের করলেই হবে।

✅ সংরক্ষণের সময় কিছু অতিরিক্ত টিপস:

যেকোনো পাত্রে রাখার আগে অবশ্যই তা শুকনো ও পরিষ্কার রাখবেন।

বেশি সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে একটু তেল বা ভিনেগার মিশিয়ে নিলে ভালো থাকে।

ব্যাচ ধরে মসলা বানান, যেন পুরোনোটা শেষ না করে নতুনটা খোলা না হয়।

মসলা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তাই মসলাগুলো যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা দরকার, যাতে সময়, পরিশ্রম ও খরচ—তিনটিই সাশ্রয় হয়। উপযুক্ত উপায়ে সংরক্ষিত মসলা আপনার রান্নাকে করে তুলবে আরও সুস্বাদু ও প্রাণবন্ত। আশাকরি এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি কুরবানির পরও দীর্ঘদিন মসলার আসল স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।

 

ডা.তাসনিম জারা:নেতৃত্বের মঞ্চে নতুন মাত্রা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে একটি ব্যতিক্রমধর্মী নাম বারবার আলোচনায় আসছে—ডা. তাসনিম জারা। চিকিৎসক, শিক্ষক, স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কনটেন্ট নির্মাতা ও এখন একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তার উত্থান শুধু বিস্ময়কর নয়, বরং অনুপ্রেরণাদায়কও।

ডা. তাসনিম জারার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে, যেখান থেকে তিনি MBBS ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “এভিডেন্স-বেইজড হেলথ কেয়ার” বিষয়ে MSc ডিগ্রি অর্জন করেন ডিস্টিংকশনের মাধ্যমে। এরপর যুক্তরাজ্যের RCOG থেকে DRCOG ও Royal College of Physicians থেকে MRCP ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি Higher Education Academy UK-এর অ্যাসোসিয়েট ফেলো হিসেবেও স্বীকৃত।

বর্তমানে ডা. জারা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ইন্টারনাল মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ম ও ৬ষ্ঠ বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়ান। এই বৈশ্বিক পর্যায়ের ক্যারিয়ারের মাঝেও তিনি বাংলা ভাষাভাষী জনগণের জন্য কনটেন্ট নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তার তৈরি স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিডিওগুলো কোটি কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি “সহায় হেলথ” নামে একটি প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা বাংলাভাষায় প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তথ্য সহজভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। কোভিড-১৯ এর সময় তার সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি ২০২১ সালে ব্রিটিশ সরকারের ‘ভ্যাক্সিন লুমিনারি’ স্বীকৃতি লাভ করেন।

এই ব্যতিক্রমী মেধাবী মানুষটি এখন সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রার সময় থেকেই তিনি নেতৃত্বের প্রথম সারিতে রয়েছেন।

রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি যখন নিজ দলেরই উত্তরাঞ্চলের এক নেতার বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, অনেকেই বিষয়টি হালকা ভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু এতে প্রকাশ পেয়েছে—ডা.জারা দলগত রাজনীতির ভেতর থেকেও জবাবদিহিতা ও নৈতিকতার পক্ষে অবস্থান নিতে সাহস রাখেন। এমন অবস্থান সচরাচর দেখা যায় না।

অনেকেই বলে থাকেন, রাজনীতি সবার জন্য নয়। কিন্তু ডা. তাসনিম জারা যেভাবে তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, একাডেমিক কৃতিত্ব এবং সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন, তা নিঃসন্দেহে এক নতুন ধারার সূচনা করছে।

একজন তরুণী, যিনি ইউকের নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনের বাইরে এসে বাংলাদেশের বাস্তবতায় কাজ করছেন, তার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকা উচিত। তাকে নিয়ে কুৎসা রটানো বা ব্যক্তিগত আক্রমণের বদলে তার কাজ ও উদ্দেশ্যকে মূল্যায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

আমরা আশা করি, ডা. তাসনিম জারার এই যাত্রা নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার পথেই চলবে। তিনি যেন হয়ে ওঠেন এক অনন্য উদাহরণ—যেখানে একজন নারী, একজন চিকিৎসক ও একজন শিক্ষকের সম্মিলিত রূপে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করে যেতে পারেন।

#DrTasnimJara #বাংলাদেশের_নারী #রাজনীতিতে-নারী #WomenInLeadership #HealthcareToPolitics #womensupportingwomen #InspiringBangladeshi #OxbridgeToPolitics

 

ঢাবিতে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ: নারীদের অধিকার আদায়ে নতুন পদক্ষেপ

 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা করেছে। ২০২৫ সালের ২৮ মে, সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করেন, যেখানে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়।

স্মারকলিপিতে যেসব দাবিগুলো তুলে ধরা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সহজলভ্যতা

পর্যাপ্ত কমনরুম, নামাজরুম ও ওজুখানার ব্যবস্থা

মাতৃত্বকালীন সময়ে সহযোগিতা প্রদান

আবাসন সংকট নিরসন ও জরুরি প্রয়োজনে হলে প্রবেশাধিকার

যৌন হয়রানিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ

মেডিকেল সহায়তা এবং হলভিত্তিক ওষুধের প্রাপ্যতা

ঢাবি শাখার সভানেত্রী সাবিকুন্নাহার তামান্না জানান, “দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নতুন করে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমরা শাখা পর্যায়ে কাঠামো গঠন করতে সক্ষম হয়েছি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”

সেক্রেটারি আফসানা আক্তার বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও সম্মানজনক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি। ইসলামী ছাত্রীসংস্থা অতীতেও নারীদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।”

ইসলামী মূল্যবোধ, নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা ও নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সংগঠনের এই নতুন যাত্রা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না—
আপনি কি মনে করেন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামভিত্তিক সংগঠনগুলোর কার্যকর উপস্থিতি শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে?

বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নারী শিক্ষার্থীরা কোন কোন সমস্যায় বেশি ভুগছেন বলে আপনি মনে করেন? সমাধানে কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত?

একটি ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্বে নারী শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা কি সময়ের দাবি নয়? আপনি কি এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন?

আপনি কি মনে করেন, নামাজরুম, কমনরুম, মাতৃত্বকালীন সহায়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত?

একজন সচেতন মুসলিম নাগরিক হিসেবে আপনি নারী নেতৃত্বে ইসলামী সংগঠনের এমন উদ্যোগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

 

দাসত্বের শিকল ছিঁড়ে যারা স্বপ্ন দেখে:ছোট্ট ইকবাল মাসীর গল্প

 

পৃথিবীতে কিছু গল্প থাকে, যেগুলো উপন্যাস নয়, সিনেমাও নয়—তবু সেগুলো বাস্তবতার এমন নির্মম অধ্যায় হয়ে ওঠে, যা পাঠক বা শ্রোতার মনজগত কাঁপিয়ে দেয়। তেমনই এক ছোট্ট বালকের নাম ইকবাল মাসী— বয়স ছিল মাত্র বারো, অথচ লক্ষ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখার মত সাহস বুকে নিয়ে যার বেড়ে উঠা।

ইকবালের জন্ম ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের লাহোরে। মা মারা যাওয়ার পর পরিবারের আর্থিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। তার বাবা মাত্র ৮০০ রুপি বা ৮ ডলারের বিনিময়ে মাত্র চার বা পাঁচ বছর বয়সেই ইকবালকে এক কার্পেট কারখানায় বিক্রি করে দেন। শুরু হয় দাসত্বের জীবন—দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ, হাতের ছোট আঙুল দিয়ে গাঁথতে হতো সূক্ষ্ম সুতো, পায়ে পড়তো শিকল যাতে পালাতে না পারে। খাবার অপ্রতুল, নিদ্রা সীমিত, স্বাস্থ্যহীনতা নিত্যসঙ্গী।

কিন্তু মানুষ শুধু মাংস আর হাড়ের কাঠামো নয়, মনের ভিতর একটি আশ্চর্য আলো থাকে। ১০ বছর বয়সে ইকবাল সেই আলোকে সঙ্গী করে পালিয়ে যায় বন্দিদশা থেকে। দুর্ভাগ্যবশত ধরা পড়ে আবারও বিক্রি হয়। এবার মূল্য ১০ ডলার, আর কাজ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি সপ্তাহে ১৪০ ঘণ্টা।

তবুও ইকবালের মনের আগুন নিভে যায় না। একদিন আবারও পালিয়ে যায়, সিনেমার মতই এক মানব-ময়লার নালার ভিতর দিয়ে। আশ্রয় নেয় একটি এতিমখানায়, সেখান থেকে একজন সদয় মানুষ, হাফেজ ইব্রাহিম, তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। অসাধারণ মেধাবী ইকবাল মাত্র দুই বছরে প্রাইমারি শিক্ষার পাঁচ বছরের পাঠ শেষ করে।

স্কুল জীবনেই সে যুক্ত হয় Bonded Labour Liberation Front (BLLF) নামের এক সংগঠনের সঙ্গে। এই সংগঠনের হয়ে ইকবাল নিজের কণ্ঠকে করে তোলে হাজার হাজার শিশুর কণ্ঠস্বর। বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শিশুদের মুক্ত করার জন্য কাজ করে। তার নেতৃত্বে প্রায় ৩,০০০ শিশু শ্রমিক মুক্তি পায় দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে।

ইকবালের কণ্ঠ বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের Reebok Human Rights Award তাকে সম্মানিত করে। সেখানে ইকবাল বলে “আমার স্বপ্ন হলো, বিশ্বের কোনো শিশু যেন আর দাসত্বে বন্দি না থাকে। কোনো শিশু যেন স্কুলের জায়গায় কারখানায় কাজ করতে বাধ্য না হয়।”

ইকবালের এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতো যেখানে শিশুরা বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাবে, কাঁটা-সুতোয় নয়। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে যখন তার আন্দোলন তুঙ্গে, যখন সে বোস্টন থেকে লাহোরে ফিরে আসে—১৯৯৫ সালের ১৬ এপ্রিল, দুর্বৃত্তদের গুলিতে চিরতরে থেমে যায় ইকবাল। মাত্র ১২ বছর বয়স,হ্যাঁ মাত্র ১২।

এই ছোট্ট কিশোরটি যদি বেঁচে থাকত, আজ তার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে যেতো। হয়তো আরও ৪০ হাজার শিশু মুক্তি পেতো তার হাত ধরে। তার অকালমৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানিই নয়, একটি সম্ভাবনার মৃত্যু।

তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর প্রবর্তন করে “The Iqbal Masih Award for the Elimination of Child Labor”—যা প্রতিবছর শিশু শ্রম প্রতিরোধে অবদান রাখা সাহসী কর্মীদের দেওয়া হয়।

আজ যেখানে আমরা এক মিনিটের কাল্পনিক বিনোদন চিত্রে মেতে উঠি অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিনেমা,অথচ সবচেয়ে সাহসী স্ক্রিপ্ট জন্ম নেয় বাস্তবের বুক চিরে।
এই ছোট্ট নীরব হিরোর আত্মবলিদান যেন ভুলে না যাই।ইকবালের এই ত্যাগ বয়ে যাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

 

গর্বিনী মা সম্মাননায় ভূষিত ১২ জন মা

 

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ‘গরবিনী মা ২০২৫’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ১২ জন গর্বিনী মা। সন্তানদের গঠন ও সফলতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁদের এই সম্মাননা প্রদান করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

রোববার (১১ মে) ঢাকার মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি ছিল ‘গরবিনী মা’ সম্মাননার দশম বার্ষিক আয়োজন।
সম্মাননায় ভূষিত মায়েরা হলেন—
মনোয়ারা বেগম (নাসরীন আফরোজের মা), রেজীয়া বেগম (বিচারক রেজাউল করিমের মা), রেজিয়া খাতুন (তানজীমউদ্দিন খানের মা), আয়েশা আক্তার (হুসনে আরা শিখার মা), ফরিদা আফরোজা (কাজী নুসরাত এদীবের মা), রাজিয়া কাদের (সরদার এ নাঈমের মা), হাজেরা বেগম (প্রকৌশলী সাইফুল বারির মা), রাজিয়া খাতুন (মাহফুজুর রহমানের মা), লুৎফুন্নাহার লুৎফা (সংগীতশিল্পী কনার মা), লায়লা রহমান (অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমুর মা), কানিজ ফাতেমা (অভিনেতা আবদুন নূর সজলের মা) এবং শ্রীমতী শৈল বালা (বর্ষা রানীর মা)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি, সব মায়ের দোয়ায়। মা বেঁচে থাকলে আজকের এই অবস্থানে আমাকে দেখে গর্ব করতেন।”

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, “প্রতিটি দিনই মা দিবস। নারীরা এখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছেন।”
সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে এনএসডিএ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, “আমার জীবনের সব অর্জনের পেছনে মায়ের ত্যাগ রয়েছে। খুব কম বয়সে মা আমাদের বড় করার দায়িত্ব নেন।”
বিচারক রেজাউল করিম অনুষ্ঠানে বলেন, “মায়ের পাশাপাশি বাবাদেরও সম্মানিত করা উচিত।”
তানজীমউদ্দিন খান মাকে “সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক” আখ্যায়িত করেন।
ছাত্রবৃত্তিপ্রাপ্ত বর্ষা রানী জানান, তাঁর মা সংসার চালাতে মানুষের বাসায় কাজ করতেন, অনেক সময় নিজে না খেয়ে তাঁকে খাওয়াতেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সব মাকে সম্মান জানানো সম্ভব না হলেও তাঁদের ত্যাগকে স্মরণ করিয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন।”
সঞ্চালনায় ছিলেন শান্তা জাহান। বক্তব্য দেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্মাননার প্রধান উদ্যোক্তা আশীষ কুমার চক্রবর্তী। তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর এই সম্মাননা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

নাঙ্গেলির আত্মত্যাগ বনাম আধুনিক প্রদর্শনবাদ: কোনটা প্রকৃত সাহস?

 

ইতিহাসের পাতাজুড়ে নারীর মর্যাদা ও অধিকার বারবার পদদলিত হয়েছে সামাজিক শোষণ, ধর্মীয় কুসংস্কার ও শ্রেণিবৈষম্যের কারণে।
তেমনি এক নির্মম ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় দক্ষিণ ভারতের বর্তমান কেরালা রাজ্যের চের্থালা অঞ্চলের এক লজ্জাজনক কর প্রথার, যার নাম ছিল ”মুলাক্কারম” বাংলায় যাকে বলা যায় “স্তন কর”।

ঔপনিবেশিক আমলের পূর্বে তৎকালীন সমাজে নিম্নবর্ণের নারীদের যদি নিজেদের স্তন ঢেকে রাখতে হতো, তবে তাদের দিতে হতো কর। স্তনের আকার অনুযায়ী করের পরিমাণ নির্ধারিত হতো—যত বড় স্তন, তত বেশি কর! যারা কর দিতে পারত না, তাদের জনসমক্ষে স্তন অনাবৃত রাখা ছিল বাধ্যতামূলক।
এই অমানবিক ও অবমাননাকর প্রথা নারীর শরীরকে পণ্য ও করযোগ্য সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল।

এই অপমানজনক করব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এক সাহসিনী নাঙ্গেলি। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ নিম্নবর্ণের নারী, কিন্তু সাহস ছিল হাজারো মানুষের চেয়েও বেশি।
যেদিন জমিদারের লোক কর আদায়ে তার বাড়িতে আসে, নাঙ্গেলি ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন হাতে নিজের কাটা দুই স্তন নিয়ে।
রক্তাক্ত সেই দৃশ্য দেখে জমিদারের লোকজন আতঙ্কে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেদিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নাঙ্গেলির এই আত্মত্যাগ শুধু একটি অন্যায় প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং নারীর মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতার সংজ্ঞা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে সমাজকে।
তার মৃত্যুর পরপরই মুলাক্কারম প্রথা বাতিল হয়।
কিন্তু ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে যায় একটি প্রশ্ন—
নারীর শরীর কি সমাজের সম্পদ? নাকি তার ব্যক্তিগত সম্মান?

এখন দেখি ইসলাম কী বলে?
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর শরীর করযোগ্য বা অন্যের সম্পত্তি কিংবা প্রদর্শনযোগ্য কোনো বস্তু নয়, বরং তার সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সব মানুষের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
ইসলাম নারীর মর্যাদাকে ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে—

> “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের উপর চাদরের (জিলবাব) একটি অংশ নামিয়ে দেয়। এটি তাদের চেনার জন্য সহজ এবং উত্ত্যক্ত না হওয়ার জন্য উত্তম।”
(সূরা আহযাব, আয়াত ৫৯)

ইসলামে পর্দার বিধানের কারণে নারীদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই, বরং এটি নারীর সুরক্ষায় এবং তাকে সম্মানিত করার এক চমৎকার মাধ্যম।
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নারীর শরীর কর আরোপের বা প্রদর্শনের বস্তু নয়, বরং তা গোপন রাখার ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সমাজের এবং নারীর নিজস্ব অধিকার।

কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য—
নাঙ্গেলির আত্মত্যাগের শতাব্দী পেরিয়ে এসেও বর্তমান সমাজে নারীদের একটি শ্রেণি শরীরকে আবারও উপস্থাপন করছে প্রদর্শনের বস্তু হিসেবে।
‘আমার শরীর আমার অধিকার’, ‘পোশাকের স্বাধীনতা’র নামে চলছে শরীর প্রদর্শনের এক প্রকার মহড়া।

কিছু নারী মনে করেন, শরীর দেখানোই স্বাধীনতা কিংবা সাহস।
অথচ প্রকৃত সাহস দেখিয়েছিলেন সেই নারী নাঙ্গেলি, যিনি নিজের স্তন কেটেছিলেন তা দেখানোর জন্য নয়, বরং ঢাকার অধিকার রক্ষায়।

আজ প্রশ্ন উঠতেই পারে—
নারীর স্বাধীনতা কি নিজেকে উন্মুক্ত করা?
নাকি নিজেকে সম্মানের সঙ্গে গুটিয়ে রাখা?

পছন্দমতো পোশাক পরা নারীর অধিকার বটে, তবে সেটি যেন আত্মমর্যাদা ও সামাজিক সংবেদনশীলতার সীমা অতিক্রম না করে।
সত্যিকারের শক্তি হলো নিজেকে সংযত রাখা, আত্মমর্যাদায় দৃঢ় থাকা-
যেমন ছিলেন নাঙ্গেলি, যেমন শিক্ষা দেয় ইসলাম।

লেখকঃ আরওয়া আনাম

 

পেশা ও নেশায় ফটোগ্রাফি: মৌসুমি সিরাজ স্মৃতির গল্প

বর্তমান সময়ে নারীরা শুধু সাংবাদিকতাই নয়, ফটোগ্রাফির মতো চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রেও নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। তেমনি একজন উল্লেখযোগ্য নাম মৌসুমি সিরাজ স্মৃতি। তাঁর ক্যামেরায় বন্দি হওয়া পাখি ও বন্যপ্রাণীর ছবি দেশের জাতীয় পত্রিকা ছাড়াও ভারতের বহু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ যাত্রায় তিনি অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।

ছোট ভাইয়ের হাতে পুরোনো একটি ক্যামেরা দেখেই ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় স্মৃতির। শৈশবে আঁকাআঁকির প্রতি ভালোবাসাই ধীরে ধীরে গড়িয়েছে ছবির ভাষায় কথা বলার দিকে। পারিবারিক একটি সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সাথে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে। এখন তিনি স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে গড়া ছোট্ট পরিবারে থাকেন, পেশায় পূর্ণকালীন ফটোগ্রাফার।

স্মৃতি মূলত ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে পারদর্শী। শুরুতে নিজেই ছবি তুলতে তুলতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তারপর অনলাইন ও সরাসরি বিভিন্ন কোর্স করে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলেন। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য, মনোযোগ আর সত্যিকারের ভালোবাসা।

দেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তাঁর ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। একক প্রদর্শনী না করলেও তিনি অংশ নিয়েছেন অনেক যৌথ প্রদর্শনীতে—দেশে যেমন, তেমনি বিদেশেও; ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ইতালিতেও।

নিজেকে কখনো “সফল” দাবি না করলেও, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করেন। স্মৃতির মতে, তাঁর এ পর্যায়ে আসার পেছনে তিনটি মূল গুণ: ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, এবং সমালোচনায় মন না দেওয়া।

স্মৃতি মনে করেন, ভালো ছবি তুলতে হলে শুধু ভালো ক্যামেরা থাকলেই হবে না; জানতে হবে কারিগরি দিকগুলোও। যাঁরা শুরু করছেন, তাঁদের একজন অভিজ্ঞ মেন্টরের কাছে পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রথমে একা একা বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতেন। পরে তাঁর সঙ্গে পুষ্পিতা, রেহনুমা, লাবণ্য ও সোফিয়া জামান নামে আরও কিছু তরুণী যুক্ত হন। এভাবে একটি নারীকেন্দ্রিক দল গড়ে ওঠে, যারা দলবেঁধে বিভিন্ন এলাকায় পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে যান—এ ধরনের উদ্যোগ এখনো দেশে বিরল।

স্মৃতির স্বপ্ন একদিন তাঁর তোলা ছবিগুলো নিয়ে একটি একক প্রদর্শনী করার। পাশাপাশি তিনি একটি ফটোগ্রাফি স্কুল গড়ে তুলতে চান, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু ফটোগ্রাফিই নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনও হবে।

 

গরমে সর্দি-কাশি-জ্বর? প্রতিরোধে ঘরোয়া টোটকা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

 

প্রচণ্ড তাপদাহে জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। সূর্যের প্রখর তাপে শুধু গরমই নয়, শরীরও পড়ছে চাপে। ফলে বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানান শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষেরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশের তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন ও অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, টনসিল, ফ্যারিঞ্জাইটিস, সাইনোসাইটিস এমনকি অ্যাজমা বা নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

কেন এই সময়ে ঝুঁকি বেশি?
গরমে ঘাম ও ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর থেকে দ্রুত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাইরাল ইনফেকশন সহজেই আক্রমণ করে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গরমে সচেতন না হলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর থেকেও বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে। এজন্য দরকার জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন।

সুস্থ থাকতে যেগুলো মেনে চলবেন:
প্রচুর পানি ও তরল পান করুন: শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে স্যুপ, ডাবের পানি, লেবু শরবত ও ওআরএস পান করুন।

সহজপাচ্য ও হালকা খাবার খান: তৈলাক্ত ও ঝাল খাবার এড়িয়ে হালকা খাবার গ্রহণ করুন, প্রয়োজনে দিনে বারবার খান।

প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিন: জ্বর বা দুর্বলতা অনুভব করলে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিদিন গোসল করুন: অতিরিক্ত ঘাম হলে শীতল রাখতে গোসল উপকারী।

হালকা রঙের সুতির পোশাক পরুন: এতে ত্বক ও শরীর উভয়ই সজীব থাকবে।

দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়ান।

উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: তিন দিনের বেশি জ্বর, অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, মাথা ঘোরা, চোখ বসে যাওয়া ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ—এসব দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ:
১. নারকেল তেল:
নারকেল তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় এটি ঠান্ডা-কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি শরীরের ফ্যাট কমাতেও সহায়ক। তবে অবশ্যই খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করুন।

২. আদা ও আমলকি:
আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণে গলা ও বুকে জমা ঠান্ডা দূর করতে কার্যকর। আমলকি ভিটামিন ‘সি’-এর উৎস। প্রতিদিন সকালে ৩০ মি.লি. আমলকির রসের সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩.দুই কাপ পানিতে কিছু আদা কুচি সেদ্ধ করে এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে গলার খুসখুসে ভাব কমে এবং গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া উপশম হয়।

গরমের এই সময়টাতে সাবধানতা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে যত্নই পারে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে। প্রতিদিনের ছোটখাটো যত্ন আর সঠিক খাদ্যাভ্যাসে আপনি হয়ে উঠতে পারেন রোগমুক্ত,সতেজ ও প্রাণবন্ত।

 

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল ও ফজিলত

পবিত্র জিলহজ মাস ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদত হজ্ব পালিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কুরবানি করে থাকে। এ মাস তাকওয়া, আত্মত্যাগ,আত্মসমর্পণ এবং ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম, যার মধ্যে প্রথম দশ দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ
শপথ ফজরের এবং দশ রাতের।
(সূরা ফজর: ১-২)

মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে “দশ রাত” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনু কাসীর)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহর কাছে নেক আমল করার জন্য বছরের কোনো দিন এই দশ দিনের চেয়ে প্রিয় নয়।”
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও না?”
তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়ে আর কিছুই ফিরে আনেনি (অর্থাৎ শহীদ হয়েছে)।”
(সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

জিলহজের প্রথম দশ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল
১. অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা এই দশ দিনে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো।”
(মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

তাশরিকের তাকবির:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد
এই তাকবির ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার বলা ওয়াজিব।

২. রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ – আরাফার দিন)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছরের এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৩. কুরবানি করা (১০-১২ জিলহজ)।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো।”
(সূরা কাউসার: ২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“মানুষের কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির দিনে রক্ত ঝরানোর চেয়ে অধিক প্রিয় নয়।”
(তিরমিজি: ১৪৯৩)

৪. কুরবানির নিয়তে চুল ও নখ না কাটা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে।”
(সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)

৫. অন্যান্য নফল ইবাদত ও নেক আমল।

এই দশ দিনে সকল নেক আমলের ফজিলত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই যতটা সম্ভব নিচের আমলগুলো করা উচিত:
-নফল নামাজ

-কুরআন তিলাওয়াত

-অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার

-ইস্তিগফার (তওবা)

-সালাতুত তাসবিহ

-দান-সদকা

জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। এ সময়টিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপূর্ব সুযোগ লাভ করি। তাই এই দশ দিন যেন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও জান্নাতের পথে এক নতুন যাত্রার সূচনা হোক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত দিনগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।

 

হবিগঞ্জে নারীদের জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ

 

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় নারীদের জন্য নির্মিত হয়েছে জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদ। ‘হযরত ফাতিমা (রা.) মহিলা মসজিদ ও হিফজ ভবন’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দারুল হিকমাহ জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার বালিকা শাখায় স্থাপন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ পৌরসভার পূর্বতিমিরপুর এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রী একসাথে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পাশাপাশি এখানে হিফজ বিভাগে কোরআন মুখস্থ করা ও ইসলামি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

দাখিল শ্রেণির ছাত্রীদের মতে, একত্রে সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় তাদের মধ্যে আত্মিক প্রশান্তি ও একতার অনুভূতি তৈরি করছে। হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, এই মসজিদ কেবল নামাজের জায়গা নয়, বরং ইসলামী আদর্শে বড় হওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও।

২০২২ সালের ১৫ মার্চ হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটির উদ্বোধন করেন। মসজিদটি নির্মাণ করেন প্রবাসী সমাজসেবক ও মাদ্রাসার শুভানুধ্যায়ী মামুন চৌধুরী। তার এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, মসজিদটি নারীদের পর্দা ও অজুর সুবিধা নিশ্চিত করে একটি মনোরম ও নিরাপদ ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে কুরআন-হাদীস চর্চার আয়োজন হয়, যাতে স্থানীয় ছাত্রীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীরাও অংশ নেন।
এছাড়াও হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দূরপাল্লার যাত্রী নারীরা পথিমধ্যে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য এমন সুযোগ খুবই সীমিত হওয়ায়, এই মসজিদটি অনেক ধর্মপ্রাণ নারীর জন্য একটি বিশেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

 

মতের অমিল, মনের মিল: সম্পর্ক টিকে রাখার অদ্ভুত সমীকরণ

পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্ক কি কেবল ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা?
একত্রে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেওয়া সেই সমস্ত দাম্পত্য জীবনের ভিত কি প্রতিদিনের পরম মুগ্ধতায় গড়া?
না, প্রেমের সেই একরঙা কল্পনায় সত্যি মেলে না।

জীবন আসলে এক সমান্তরাল দুই ধারার যাত্রা, যেখানে একদিকে রোদ, অন্যদিকে ছায়া। একজন চায় ফ্যানের শীতল ঝাপটা, অন্যজনের দরকার এসির স্থির প্রশান্তি। কেউ রাত্রে আলো জ্বালিয়ে ঘুমায়, কেউ চায় নিঃশব্দ অন্ধকার। কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে ভালোবাসে, আরেকজনের চোখে বাড়ির ভাতেই থাকে শান্তি। কেউ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে, কেউ আবার সূর্য ওঠার আগেই দিন শুরু করে।

মতের এই অমিল, চাওয়া-পাওয়ার এই টানাপড়েনের মধ্যেই জন্ম নেয় এক গভীর সখ্যতা, যা প্রেমের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী।

অনেকেই ভাবেন—একসাথে থাকার মানে, একে অপরের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে ফেলা। কিন্তু না, আসল সম্পর্ক তৈরি হয় যখন একজন আরেকজনের ভিন্নতাকে জড়িয়ে ধরে। প্রতিদিনের ছোট ছোট খুনসুটি, কারণহীন ঝগড়া, কিছুটা অভিমান—এসবই আসলে এক অন্য ভাষায় বলা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা চোখে পড়ে না, তবুও অনুভবে ছুঁয়ে যায়।

ভাবতে পারেন, একদিকে এত অমিল—তারপরও দেখা যায় সেই দুই মানুষ একদিন পাহাড়ে ঘুরতে যাচ্ছে, কাঁধে মাথা রেখে ছবি তুলছে, একসাথে সিনেমা দেখছে, নতুন গাড়ির স্বপ্ন দেখছে, মনের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছে তাদের ছোট্ট ঘরটা।
এটাই তো সম্পর্কের সৌন্দর্য। এই অমিলের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে অদ্ভুত এক সমীকরণ, যাকে ছকে ফেলেও মেলানো যায় না।

আমরা সম্পর্কের শুরুতে যা করি, সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল—আমরা মিল খুঁজি। কে কী পছন্দ করে, কার সঙ্গে কতটা মিলে যায়—সেই হিসেব কষি। অথচ, যেটা মিলছে না, সেটাই তো আসল দেখার জায়গা।

ভালোবাসা গড়ে ওঠে মতের মিল দিয়ে নয়—মতের অমিল আর মনের মিল দিয়ে।

জীবনটা আসলে একটা দীর্ঘ উপন্যাস। প্রতিটি অধ্যায়ে মতের দ্বন্দ্ব, কিছু ঝগড়া, কিছু অভিমান থাকবেই। কিন্তু সেই বইয়ের পাতাগুলো ভরে ওঠে যদি প্রতিটি বাক্যে থাকে সহানুভূতি, সম্মান আর একটুখানি হাসি।

তাই, সারাটা জীবন ভালোবাসবে এমন কাউকে খোঁজার দরকার নেই। বরং এমন কাউকে খুঁজুন, যার সঙ্গে আপনি প্রতিদিন একটু একটু ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারেন।
কারণ দিনের শেষে, ভালোবাসা মানে সারাক্ষণ একসাথে হাসা নয়—বরং ঝগড়ার মাঝেও আলতো করে হাতটা ধরে রাখা।
মতের অমিল থাকুক, থাকুক হাজারটি।
শুধু যেন মনের মিলটা থেকে যায়…
ঠিক বাতাসের মতো—দেখা যায় না, কিন্তু গায়ে লাগলেই বোঝা যায়, শান্তি দেয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মাননায় ভূষিত ছয় সাহসী নারী উদ্যোক্তা

 

এই বছর মে মাসের প্রথম দশকের শেষের দিকে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক গৌরবময় পরিণতির মাধ্যমে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মাননা দিয়েছে ছয় জন অনন্য নারী উদ্যোক্তাকে, যাঁরা তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রমে নিজ নিজ এলাকায় গড়েছেন কর্মসংস্থানের পথ।
সম্মাননা পাওয়া ছয় উদ্যোক্তার মধ্যে রয়েছেন রাঙামাটির ছেনছেন রাখাইন, যিনি ২৫ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধনে গড়ে তোলেন ‘মে রাখাইন বার্মিজ স্টোর’। আজ তাঁর প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ি তাঁতের পোশাক যেমন পিনন, খাদি, ব্লাউজ ও খামি উৎপাদন ও বিপণনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়াচ্ছে।
বাগেরহাটের রোজি আহমেদের ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’ কোকো ফাইবার দিয়ে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব খেলনা ও পোষাপ্রাণির জন্য সামগ্রী, যা এখন ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে। ফরিদপুরের সাবেকুন নাহারের ‘লাম ক্রিয়েশন’ পাট ও কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছে দৃষ্টিনন্দন ঝুড়ি, মাদুর ও ব্যাগ।
সিলেটের রোজিনা আলিম ‘মিনার কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্থানীয় রাসায়নিক পণ্যের এক নির্ভরযোগ্য উৎস। ঢাকার সাভারের আয়েশা বেগমের ‘মুসলিম জুয়েলারি ওয়ার্কশপ’ রুপা, পিতল ও তামার অলংকার রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
পাবনার হোসনে আরা স্বামীর মৃত্যুর পর ‘আকলিমা সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম’ চালিয়ে নারীর স্বাস্থ্যসেবায় রেখেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর প্রতিষ্ঠান পেয়েছে কবি সুফিয়া কামাল স্বর্ণপদকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, “দেশের উন্নয়নে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা অপরিহার্য। এ ধরনের উদ্যোগ নারীদের সাহস ও স্বপ্ন দেখার পথ প্রশস্ত করবে।”

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করা হয় এবং আয়োজকরা জানান, চার দিনে প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।

 

নারীর নামে সংস্কৃতির অপব্যাখ্যার প্রতিবাদ

উত্তরবঙ্গে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ সমাজের বিদ্যমান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূলধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ নারী জাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় নারী অধিকারকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে জয়পুরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘উত্তরবঙ্গ নারী জাগরণ মঞ্চ, জয়পুরহাট জেলা’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব উদ্বেগের কথা উঠে আসে। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সভাপতি নাজনীন নাহার, সিনিয়র সহসভাপতি শাহনাজ পারভীন, সহসভাপতি তাহরীমা কামরুন, সেক্রেটারি সাবেকুন নাহার, সদস্য আকরিমা, রিম্মি খাতুনসহ অন্যান্যরা।

বক্তারা বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা যেন সমাজের মূল ভিত্তি—ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক কাঠামো ও ঐতিহ্যকে উপেক্ষা না করে। তাদের মতে, কমিশনের অন্তত ২০টি সুপারিশ দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক বাস্তবতার পরিপন্থি, যা বাস্তবায়ন হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি এবং দীর্ঘমেয়াদে নারীর প্রকৃত উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে।

তারা আরও দাবি করেন, এই সুপারিশমালায় বিদেশি প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে এবং অনেক সুপারিশ পরিবারব্যবস্থা, নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সভায় বক্তারা সরকারের প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আবহকে বিবেচনায় রেখে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

আলোচনা শেষে আয়োজক সংগঠন এক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, তারা শিগগিরই এসব সুপারিশ বাতিলের দাবিতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী সচেতন নাগরিক ও অন্যান্য নারী সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

 

নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলের দাবিতে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ বাতিলের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন একদল নারী শিক্ষার্থী। ২২মে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে স্বরূপ ইসলামিক কালচারাল অর্গানাইজেশনের ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবাদকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল:
“নারী-পুরুষ বাইনারি, এই শর্তেই দেশ গড়ি”,
“যৌনকর্মী স্বীকৃতিদান, মায়ের জাতির অপমান”,
“সমতার নামে নারীর বিকৃতি চলবে না”,
“সে নো টু এলজিবিটি অ্যাজেন্ডা” প্রভৃতি।

শিক্ষার্থী জান্নাতুল সুমাইয়া সাফি বলেন, কমিশনের প্রস্তাবনার অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম ও জাতিসত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব দাম্পত্য অস্থিরতা বাড়াবে। পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে যৌনকর্মীদের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পথ প্রশস্ত করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা সালেহা ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’কে সমালোচনা করে বলেন, এতে দেশের নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও অশালীন পোশাকের মাধ্যমে নারীত্বকে অপমান করা হয়েছে এবং ধর্মীয় শিষ্টাচারকে ‘উগ্রবাদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ধারণা মানব কল্যাণ নয়, বরং চিকিৎসার প্রয়োজন এমন বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন:
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাহার,
২. ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন কমিশন গঠন,
৩. পতিতাবৃত্তি নির্মূল ও নারীদের হালাল উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা,
৪. সংবিধানসম্মতভাবে ধর্মীয় বিধানসমূহ রক্ষা করে নারী উন্নয়নের ভারসাম্যপূর্ণ রূপরেখা প্রণয়ন।

 

বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’

 

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন স্বীকৃতি ‘বুকার পুরস্কার’ এবার পেয়েছেন ভারতীয় লেখিকা বানু মুশতাক। ৭৭ বছর বয়সী এই গুণী সাহিত্যিককে ১৯ মে (মঙ্গলবার) এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কান্নাড়া ভাষায় রচিত তাঁর গল্পসংকলন Heart Lamp/ ‘হার্ট ল্যাম্প’-এর জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দিপা ভাস্তি।

১২টি ছোটগল্পের এই সংকলনে দক্ষিণ ভারতে বসবাসরত মুসলিম নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক, পারিবারিক টানাপোড়েন, সংগ্রাম ও সামাজিক বাস্তবতা সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গল্প যেন জীবনের অন্তর্নিহিত গল্পগুলোকে নতুন ভাষা ও আবেগে প্রকাশ করেছে।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন,
“একটি বিভাজনময় সময়ে, সাহিত্য আমাদের সেই শেষ আশ্রয় যেখানে আমরা একে অপরের মনোজগতে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাস করতে পারি। এই বইয়ের জন্ম সেই বিশ্বাস থেকে যে— কোনও গল্পই ছোট নয়। মানুষের জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতার জালে প্রতিটি সুতোই পুরো চিত্র বহন করে।”

পেশাগত জীবনে তিনি একাধারে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী। বিশেষভাবে নারীর অধিকার নিয়ে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে সাহিত্যের বাইরেও একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজচিন্তাকে তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, বুকার পুরস্কার চালু হয় ১৯৬৯ সালে। প্রথমদিকে এটি শুধু ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ দেশগুলোর লেখকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৯৯ সালে তা সকল ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে এর নাম সংক্ষিপ্ত করে ‘ম্যান বুকার’ রাখা হলেও বর্তমানে এটি পরিচিত ‘বুকার পুরস্কার’ নামে।
বানু মুশতাকের এই অর্জন শুধু ভারতীয় সাহিত্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

 

শখ থেকে শখের বাজার

 

নারী উদ্যোক্তাদের পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। সমাজের বাঁধা, পরিবার ও পরিচিতজনদের নেতিবাচক মন্তব্য—সবকিছু পেরিয়ে যারা এগিয়ে যান, তারাই সফল হন। আজ আমরা কথা বলছি এক এমনই অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোক্তার গল্প নিয়ে, যিনি শুধুমাত্র শখের বসে শুরু করেছিলেন ব্যবসা, আর এখন সেটাই তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

লালমনিরহাট জেলার বারেকটারী গ্রামের ফাতেমা পারভিন মাত্র ২৮ বছর বয়সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। করোনার সময়ে সবাই যখন গৃহবন্দী, তখন ফাতেমার মাথায় আসে এক নতুন আইডিয়া। কুষ্টিয়ার ছোট বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি শুরু করেন ‘শখের বাজার’ নামের অনলাইন ব্যবসা।

শুরুটা ছিল মাত্র ৫,০০০ টাকা বিনিয়োগে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফলে এখন তার মাসিক আয় ৪০-৫০ হাজার টাকা! অনলাইন ব্যবসার সাফল্য দেখে তিনি লালমনিরহাট শহরে ‘শখের বাজার’ নামে একটি শোরুমও চালু করেছেন।

তার ব্যবসার মূল পণ্যগুলো হলো—বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন সিঁদল, কুমড়ার বড়ি, সরিষার তৈল, গাওয়া ঘি, নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি। এছাড়াও, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রও তিনি বিক্রি করেন।

ফাতেমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নিজের পরিবারের কিছু মানুষ। তারা মনে করতেন, নারীদের ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই, বরং সংসার সামলানোই তাদের দায়িত্ব। কিন্তু ফাতেমার মা তাকে সবসময় মানসিক শক্তি যুগিয়েছেন, যা তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ফাতেমা বলেন, “পরিবারের বাঁধাই হয়তো আমার জেদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি, মেয়েরাও পারে।”

ফাতেমার স্বপ্ন তার ‘শখের বাজার’ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। বিশেষ করে, তিনি চান তার প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র নারী কর্মীদের কাজের সুযোগ করে দিতে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান।

এই অনন্য সাফল্যের জন্য বিশ্ব নারী দিবস ২০২৫-এ লালমনিরহাট সরকারি কলেজ ফাতেমা পারভিনকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
ফাতেমার এই যাত্রা প্রমাণ করে—সঠিক ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও লেগে থাকার মানসিকতা থাকলে শুধু শখ নয়, তা হয়ে উঠতে পারে পেশা এবং সাফল্যের পথ।

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো ছড়িয়ে দিতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন!

 

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

“নারী কমিশনের সুপারিশমালা ও নারী সমাজের প্রত্যাশা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা ১৫মে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সদস্য নাসিমা বেগম ঝুনু।

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ও ফোরামের সহকারী সেক্রেটারি উম্মে খালেদা জাহান। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মিলনে একটি নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের দিকেই ইসলাম আহ্বান জানায়। অথচ নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা ইসলামী মূল্যবোধ ও পারিবারিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে ইসলাম নারীর জন্য দেনমোহর নির্ধারণ করে সম্মানিত করেছে, সেখানে সমান অধিকারের নামে কি নারীর সেই সম্মান হরণ করা হচ্ছে না?”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি ও সাহিত্যিক শামীমা রহমান শান্তা, যিনি বলেন, নারী সংস্কার কমিশন সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করে পক্ষপাতমূলকভাবে গঠিত হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য সৃষ্টি হতে পারে।

এশিয়ান টিভির সহ-বার্তা সম্পাদক জাবালুন নূর বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তা উপেক্ষিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে নারীদের ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।

ফোরামের সদস্য তাসলিমা মুনীরা বলেন, “নারী সংস্কার কমিশন নারীর পারিবারিক দায়িত্বকে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করে নারীদের পরিবার বিমুখ করছে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।”

লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. সাজেদা হুমায়রা বলেন, “এই সুপারিশমালা আমাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে আঘাত করেছে।” তিনি বলেন, ইসলামিক পারিবারিক আইন কুরআন-ভিত্তিক, তা এড়িয়ে নতুন বিধান প্রবর্তনের প্রয়াস কুরআনকে অস্বীকার করার শামিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার” জাতীয় স্লোগান নারীর সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভাঙার অপচেষ্টা। ইসলাম নারীর শরীরকে আমানত হিসেবে দেখেছে এবং তাকে মর্যাদাসম্পন্ন দায়িত্ব প্রদান করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে নাসিমা বেগম ঝুনু বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। এই সুপারিশ জাতিকে নৈতিকতা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত করবে।” তিনি নারী সমাজের পক্ষ থেকে কমিশনের সুপারিশ বাতিল এবং নতুনভাবে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের দাবি জানান।

সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য সাইয়্যেদা রাহাত তাসনিয়া ও ডা. জোবায়দা।

 

গরমে নারীর শরীরের বিশেষ সময়ে বিশেষ যত্ন কেন জরুরি

 

বাংলাদেশের মতো দেশে গরমকালের তাপদাহ শুধু অস্বস্তিই নয়, বরং কখনো কখনো তা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। নারীর জীবনচক্রে এমন কিছু পর্যায় আছে—যেমন মাসিক, মেনোপজ, গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান—যেগুলোতে শরীরের ভেতর হরমোনের নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের সময় শরীর এমনিতেই কিছুটা দুর্বল ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে গরমের বাড়তি চাপ যুক্ত হলে শারীরিক অস্বস্তি, পানিশূন্যতা এবং রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

পিরিয়ড চলাকালে করণীয়
পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে রক্তের সঙ্গে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। আবার গরমে অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে আরও পানি বেরিয়ে যায়। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার না খাওয়া হলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে মাথাঘোরা, দুর্বলতা এমনকি মূর্ছা যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। এই সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া দরকার। স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়মিত বদলানো, শরীর শুকনো রাখা এবং ঘামে ভেজা কাপড় দ্রুত পাল্টে ফেলা জরুরি।

মেনোপজের পর
মেনোপজের পরে অনেক নারীর হঠাৎ করে গরম অনুভব হওয়া বা ঘাম দিয়ে জেগে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয়। একে বলে “হট ফ্ল্যাশ”। এই সমস্যাগুলো গ্রীষ্মকালে আরও বেশি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তাই ঘরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখার চেষ্টা করতে হবে। হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা, মাথার পাশে অতিরিক্ত ফ্যান রাখা কিংবা ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ ও শরীর মুছে নেওয়া কিছুটা আরাম দিতে পারে। রাতের বেলায় ঘাম হলে বালিশ উল্টে দেওয়া, কারণ বালিশের অপর পাশ তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে।

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান: বাড়তি সতর্কতা দরকার
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের সময় শরীরের পানির প্রয়োজন আরও বেশি হয়। গরমের মধ্যে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক তরল ও লবণ বের হয়ে যায়, যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। দিনে কয়েকবার লবণ মেশানো শরবত খাওয়া যেতে পারে, যদি চিকিৎসক এ বাপারে নিষেধ না করেন। নিরাপদ পানি ও টাটকা খাবার গ্রহণ করতে হবে, কারণ এই সময়ে হেপাটাইটিস ই-এর মতো সংক্রমণ মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আরামদায়ক ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরতে হবে। প্রয়োজনে দিনের সবচেয়ে গরম সময়টা ঘরের ভেতরে কাটানো উত্তম।

নারীর জীবনের এই প্রাকৃতিক সময়গুলোতে গরম আবহাওয়া সরাসরি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বাঁধা না দিলেও, বাড়তি অস্বস্তি ও জটিলতা তৈরি করে। তাই গরমে নারীর নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।বিশেষ করে পানি গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা এবং পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও উচিত নারীদের এই সময়গুলোতে সহমর্মী ও সচেতন থাকা।

পাঠকের জন্য প্রশ্ন:
আপনার পরিবারের নারী সদস্যরা গরমে কোন ধরণের অস্বস্তিতে পড়েন? তাঁদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে আপনি কীভাবে সাহায্য করেন?

 

‘ফ্যামিলি এইড’-এর আত্মপ্রকাশ: পারিবারিক বন্ধন সুসংহত করতে ইসলামী উদ্যোগ

 

বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার (BILRC) চালু করেছে একটি নতুন সামাজিক প্রকল্প—‘ফ্যামিলি এইড’, যা পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় ও অধিকার রক্ষায় কাজ করবে ইসলামী শরিয়াহর আলোকে।

শনিবার ঢাকার পল্টনের নোয়াখালী টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও ‘ফ্যামিলি এইড’ প্রকল্প পরিচালক শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পশ্চিমা প্রভাব ও সামাজিক অস্থিরতায় আমাদের পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। ইসলামভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলায় আমরা কাজ শুরু করেছি ২০২৩ সাল থেকে।”
এই প্রকল্পের আওতায় পারিবারিক, মানসিক ও আইনগত সমস্যায় ভুক্তভোগীরা পাবেন বিশেষজ্ঞ সহায়তা। বর্তমানে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত একটি টিম এই সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। সেবাগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সেবাও প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘একাডেমি টোয়েন্টি ওয়ান’-এর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, “দাম্পত্য কলহ ও সামাজিক অস্থিরতা ভয়াবহ হারে বাড়ছে। এর প্রতিকারে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর বলেন, “পারিবারিক সমস্যা সমাধানে শুধু নারী বা শিশুকে কেন্দ্র করে কাজ করলে চলবে না। পুরুষরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। শরিয়াহ সকল পক্ষকে সমান সম্মান দিয়ে দেখে, এটিই ‘ফ্যামিলি এইড’-এর ভিত্তি।”

বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে এক ছাদের নিচে আইনজীবী, মনোবিদ ও পারিবারিক পরামর্শদাতারা একযোগে কাজ করবেন। এতে করে সেবা গ্রহণকারীরা পাবেন এককেন্দ্রিক ও সুসমন্বিত সহায়তা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রুহুল আমীন রাব্বানী, মনোবিদ সুমাইয়া তাসনিম, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মারদিয়া মমতাজ ও লিগ্যাল কনসালট্যান্ট ফাইজা তাবাসসুম।

 

বাংলাদেশি নার্সদের বিশ্বমঞ্চে উত্থান: বিএমইউ ভিসির আশাবাদ

 

বাংলাদেশি নার্সরা বিশ্বজুড়ে নিজেদের গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পাবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।

বিশ্ব নার্স দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গুণগত নার্সিং শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি নার্সদের চাহিদা তৈরি করা সম্ভব।”

তিনি জানান, বিএমইউ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নার্সিং শিক্ষা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারিকুলাম চালু করেছে। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে।

ডা. শাহিনুল আলম বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখতে চাই। ফিলিপাইন বা ভারতের কেরালার মতো বাংলাদেশও নার্স রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে, যা থেকে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব।”

তিনি নার্সদের উদ্দেশে বলেন, “নার্সিং কেবল চাকরি নয়, এটি মানবতার সেবার মহৎ এক পেশা। এই দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। রোগীর কষ্ট লাঘবে নার্সরাই ভরসাস্থল।”

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার এবং হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন।

গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগের শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ গাজী জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নার্স কর্মরত আছেন। তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে বিদেশে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটবে।

দিনব্যাপী আয়োজনে নার্সিং পেশার গৌরব, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা তুলে ধরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়, যাতে অংশ নেন নার্সিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১৫টি দেশে নার্স প্রেরণ করছে। ২০২৪ সালে নার্স রপ্তানি থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক আয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরে এই আয়ের পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

মেয়েদের আত্মরক্ষা ও প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার

নারীদের আত্মরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এমনটি জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

সোমবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘কথা বলো নারী’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘নারীর চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শারমীন মুরশিদ বলেন, “আমরা যেসব মেয়েদের ট্রেইন-আপ করব, সেখানে তাদের জেন্ডার রিলেটেড অ্যাওয়ারনেস থেকে শুরু করে, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, সেলফ ডিফেন্স ট্রেনিং, প্যারামিলিটারি ট্রেনিং—সবটুকুই ভাবা হয়েছে। যেটা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। এটা নারীদের জন্য একটা ক্ষেত্র হবে, যেটাতে তারা মাথা উঁচু করে তাদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি নিরাপত্তাটা দিতে না পারি, তাহলে নারীর বিকাশ ঘটবে না। মেয়েরা যদি স্কুলে, রাস্তায় বা বাসে নিরাপদ না থাকে, তাহলে কীভাবে একটি সুন্দর পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলবে? এই বিষয়গুলোতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।”

উপদেষ্টা আরো বলেন,‘চব্বিশে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের আমরা কাজে লাগাতে চাই। সোশ্যাল ফোর্স হিসেবে দেখতে চাই। সাইবার সেফটি তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদেরকে দেখতে চাই।’

তরুণদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, “তোমরা কী ভাবছো, কী চাইছো—তোমাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমাদের কৌশল সাজাতে চাই।”

সাইবার বুলিংয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আমাদের আলাদা একটি ইউনিট গঠন করতে হবে।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, ড. রেজওয়ানা কবীর স্নিগ্ধা, উমামা ফাতেমা প্রমুখ।

 

ইসলামে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার

ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান যা মানবজাতির প্রতিটি দিককে নির্দেশনা দিয়েছে। নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে এমন এক সময়ে ইসলাম যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে , যখন নারীদেরকে সমাজে অবজ্ঞা করা হতো, সম্পত্তির অধিকার তো দূরের কথা, তাদের মানুষ হিসেবে বিবেচনাও করা হতো না। অথচ আজ, মুসলিম সমাজে নারীদের সেই ইসলাম-স্বীকৃত অধিকার, বিশেষত সম্পত্তিতে অধিকার, ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: স্পষ্ট কোরআনিক ঘোষণা
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে। আর নারীদের জন্যও রয়েছে অংশ তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে—অল্প হোক বা বেশি—এটি একটি নির্ধারিত অংশ।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৭)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, নারীরাও সম্পত্তিতে সমানভাবে অধিকার রাখে। ইসলাম আগমনের পূর্বে আরব সমাজে নারীরা সম্পত্তির কোনো দাবিদার ছিল না। ইসলাম এসে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারীর মর্যাদাকে নিশ্চিত করেছে।

উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর অধিকার: কন্যা, স্ত্রী, মা, ও বোনের মর্যাদা
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে (ফরায়েজ) নারীর অংশকে নির্ধারণ করা হয়েছে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ও অবস্থানের ভিত্তিতে। কন্যা সন্তান বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশের মালিক হয়। যদি সন্তান থাকে, স্ত্রী পায় অষ্টমাংশ; সন্তান না থাকলে পায় চতুর্থাংশ। মা তাঁর সন্তানের সম্পত্তিতে ষষ্ঠাংশ পান, আর বোন নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ভাইয়ের সম্পত্তিতে অংশীদার হন।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমাদের স্ত্রীদের যদি সন্তান না থাকে, তবে যা কিছু তারা রেখে যায়, তার অর্ধেক তোমরা পাবে। আর যদি সন্তান থাকে, তবে যা কিছু তারা রেখে যায়, তার চতুর্থাংশ তোমরা পাবে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ১২)

“পুরুষ দ্বিগুণ পায়” – এই বিধান কেন?
সাধারণভাবে বলা হয়, পুত্র সন্তান দ্বিগুণ পায়, কন্যা পায় অর্ধেক। কোরআনে বলা হয়েছে:
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে নির্দেশ দেন—পুরুষ সন্তানকে দুই নারীর সমান অংশ দিতে হবে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ১১)
অনেকেই এই আয়াতকে বৈষম্য মনে করেন, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে যৌক্তিকতা। ইসলাম পুরুষের উপর পরিবারের ভরণপোষণ, স্ত্রীর খরচ, সন্তানদের শিক্ষা, বোনের বিয়ে, এমনকি বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ, অধিক সম্পত্তির বিপরীতে পুরুষের উপর আর্থিক দায়িত্বও অধিক। পক্ষান্তরে, নারীকে সম্পত্তি প্রদান করা হলেও তাঁর উপর কোনো বাধ্যতামূলক আর্থিক দায়িত্ব নেই। সে চাইলে ব্যয় করতে পারে, না চাইলে তা সঞ্চয় করতেও পারে।

দেনমোহর ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি:
ইসলামে নারীর জন্য বিবাহের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক। এটি স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর প্রতি একটি সম্মানসূচক উপহার ও তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটি পরিশোধ না করে স্ত্রীকে তালাক দিলে বা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে, স্ত্রী আইনি ও শরয়ি অধিকার অনুযায়ী দেনমোহর দাবি করতে পারে।
কোরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর আনন্দ সহকারে প্রদান করো। যদি তারা স্বেচ্ছায় মোহরের কোনো অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা খেয়ে ফেলতে পারো আনন্দের সঙ্গে।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৪)

নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা:
ইসলাম নারীর উপার্জন ও সম্পত্তির উপর তার একচ্ছত্র মালিকানা স্বীকার করেছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“পুরুষ যা অর্জন করে, তা তার জন্য; আর নারী যা অর্জন করে, তা তার জন্য।”
(সূরা নিসা: আয়াত ৩২)
এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নারীর উপার্জন তারই সম্পদ, কেউ জোরপূর্বক তা নিতে পারে না। এমনকি স্বামীও নয়। এটি আধুনিক নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি যুগান্তকারী ভিত্তি।

সামাজিক বাস্তবতা: কেন নারীরা বঞ্চিত?
বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইসলাম নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করলেও আমাদের সমাজেই নারীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, এমনকি শহরের শিক্ষিত পরিবারেও অনেক নারী তাদের পিতৃসম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। “বিয়েতে অনেক পেয়েছে”, “ছেলেরা তো সংসার চালায়”—এই অজুহাতে ইসলামি অধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
এটি একপ্রকার জুলুম। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।”
(সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৮)
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো হক আত্মসাৎ করবে, সে কিয়ামতের দিন সাতবার জাহান্নামে যাবে।”
(সহীহ বুখারী)

এছাড়াও; বর্তমান বিশ্বে ‘নারীর স্বাধীনতা’ ও ‘সমান অধিকার’ স্লোগানে পশ্চিমা নারীবাদীদের একটি অংশ ইসলামকে আক্রমণের অস্ত্র বানিয়েছে। তারা সমতার নামে এমন এক সমাজ গড়ে তুলছে যেখানে একজন নারীকে তার স্বাভাবিক শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক চরিত্র থেকে সরিয়ে অর্থ উপার্জনের যন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।

তাদের দাবি, নারী-পুরুষকে সব দিক থেকে এক রকম করতে হবে—এমনকি দায়িত্ব ও শারীরিক কাঠামোর পার্থক্য উপেক্ষা করে হলেও। এর বিপরীতে ইসলাম নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে রক্ষা করে ভারসাম্যপূর্ণ দায়িত্ব বন্টন করেছে। ইসলাম সমতা নয়, ন্যায় (Justice) প্রতিষ্ঠা করে—যা প্রকৃত মানবিকতার ভিত্তি।

রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

পরিশিষ্ট
ইসলামেই নারীর প্রকৃত অধিকার
ইসলাম নারীকে কেবল সম্পত্তির অধিকার দেয়নি; দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা। যে সমাজ ইসলামি শরীয়ত মেনে চলে, সেখানে নারী কখনো বঞ্চিত হয় না। বরং যারা ইসলামি জ্ঞান ও ন্যায়বিচার থেকে সরে গেছে, তারাই নারীদের প্রকৃত শত্রু। তাই আমাদের উচিত ইসলাম প্রদত্ত নারীর সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন-হাদীস অনুযায়ী নারীর অধিকার বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

আছিয়া হত্যা মামলা: হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, বাকিদের খালাসে মায়ের ক্ষোভ

 

মাগুরায় ৮ বছরের শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আদালত প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তবে মামলার বাকি তিন আসামি সজীব শেখ, রাতুল শেখ ও রোকেয়া বেগমকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আছিয়ার মা আয়েশা বেগম।

শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার বাদী আয়েশা বেগম বলেন, “আমরা এই রায় মেনে নিতে পারছি না। একজনের ফাঁসি হলেও বাকি তিনজনের খালাসে আমাদের মন ভাঙা।”

২০২৫ সালের ৬ মার্চ, আছিয়া তার বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৩ মার্চ ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে মারা যায় সে। এ ঘটনায় আছিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত শেষে ১৩ এপ্রিল অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় এবং ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। মাত্র ১২ কার্যদিবসে মামলার বিচারকাজ শেষ হয়।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানিয়েছেন, বাদী রায়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে

তথ্যসুত্র ঃবিডি নিউজ,,যুগান্তর,,ইত্তেফাক

 

নারী উদ্যোক্তা গড়ার অগ্রদূত জান্নাতুল হক

 

নারীর ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে যাঁরা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন জান্নাতুল হক। ২০১৩ সালে মাত্র একটি ফেসবুক পেজ ‘আমান্দ ফ্যাশন’ দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়। তখন দেশে এফ-কমার্সের সূচনালগ্ন, আর সেই সময়েই তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পথ খুঁজে নেন।
ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যার নাম ‘শৈলীর ছোঁয়া’। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন জনপ্রিয় ফুড ব্র্যান্ড এজিউর কুইজিন–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে।

জান্নাতুল হকের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে রয়েছে পারিবারিক প্রেরণা, বিশেষ করে তাঁর স্বামী আশরাফ উদ্দিন–এর ভূমিকা, যিনি একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী। স্বামীর উৎসাহেই তাঁর ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং তাঁর সহযোগিতায় তিনি ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন। পরে এটিকেই তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

জান্নাতুল হকের শৈশব কেটেছে সিরাজগঞ্জে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। এই পারিবারিক বন্ধন ও আদর্শ তাঁকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

শিক্ষাজীবনে তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০০৮ সালে চাইল্ড অ্যান্ড সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (Masters) সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে।

ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল হকের স্বপ্ন ছিল দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) নিয়ে কাজ করার। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করাটা তাঁর কাছে আবেগের জায়গা।
তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, অনেক নারী সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করলেও সামাজিক বাধা ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে মাঝপথে থেমে যেতে হয়। এই সমস্যাগুলো তাঁকে নাড়া দিয়েছে।
এই তাড়না থেকেই ২০২২ সাল থেকে তিনি ১০০ এর বেশি নারী উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন। শুধু অর্থ নয়, তিনি দিয়েছেন মানসিক সহায়তা,ব্যক্তিগত পরামর্শ,বিপণন সহযোগিতা,নেটওয়ার্কিং সুবিধা।
এই সব সহায়তার ফলে অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিচ্ছেন এবং রপ্তানি বাজারে পণ্য সরবরাহ করছেন।

তিনি বলেন,“আমি ১০০ নারী উদ্যোক্তাকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাতে তাঁরা নিজেরাই ই–কমার্স ও এফ–কমার্সে দক্ষ হয়ে ওঠে।”

নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য জান্নাতুল হক তৈরি করতে চান একটি সমন্বিত কো–ওয়ার্কিং স্পেস। সেখানে থাকবে-একাধিক উদ্যোক্তার কাজের জায়গা,ছোট ছোট ওয়্যারহাউস,পণ্য সরবরাহ ও ডেলিভারির ব্যবস্থা,সাপ্লাই চেইন পরিচালনার পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা বড় করতে পারবেন, তৈরি করতে পারবেন নিজস্ব অফিস ও বড় আকারের স্টোরেজ সুবিধা।

জান্নাতুল হক ই–কমার্স খাতের উন্নয়নে নিরাপদ ব্যবসা পরিবেশ, গ্রাহকের আস্থা, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, আধুনিক লজিস্টিক ও পেমেন্ট সিস্টেম, স্টার্টআপ ফান্ড এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নীতিমালা গঠনের ওপর জোর দেন।
তিনি মনে করেন “ই-কমার্স খাত কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের নয়, এটি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি বড় হাতিয়ারও হতে পারে।”

জান্নাতুল হকের যাত্রা প্রমাণ করে, একজন নারীর আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম আর প্রেরণায় গড়ে উঠতে পারে এক সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি। তাঁর কাজ শুধু নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও রাখছে গভীর প্রভাব।

তথ্যসুত্রঃ সারাবাংলা, যুগান্তর, সিমেক নিউজ.কম

 

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের, পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের ২০% নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। পাশাপাশি, সিএমএসএমই খাতে ২৫% ঋণ বিতরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মধ্যে ১৫% নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং ব্যবসায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়াবে।

তবে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক নারী উদ্যোক্তাই প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা পান না বা ঋণ পেতে নানা জটিলতার মুখোমুখি হন। তাছাড়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতিকে কতটা আন্তরিকভাবে অনুসরণ করবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোর মনিটরিং বাড়ানো, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

পাশাপাশি, নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নেটওয়ার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এই নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

আপনার বিছানা কি গোপনে অসুস্থতার কারণ হয়ে উঠছে?

 

ঘুম!!শরীরে বিশ্রামের প্রয়োজন। অথচ আপনি জানেন কি, বছরে গড়ে একজন মানুষ তার বিছানায় ২৬ গ্যালনের মতো ঘাম ঝরায়? এই ঘাম, ধুলা, ত্বকের মৃত কোষ, ছত্রাক—সব মিলিয়ে আপনার আরামদায়ক বিছানাটিই হয়ে উঠতে পারে জীবাণুর অভয়ারণ্য!

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট ফিলিপ টিয়েরনো এ নিয়ে দিয়েছেন চমকে দেওয়ার মতো এক সতর্কতা। তিনি বলেন, অপরিষ্কার চাদরে ঘুমানো ঠিক যেন কুকুরের বিষ্ঠা স্পর্শ করার পর হাত না ধোয়ার মতোই ক্ষতিকর! কারণ, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই চাদরে জমে যেতে পারে ঘাম, পরাগকণা, ধুলোমাইটের বর্জ্য, এমনকি ছত্রাকের স্পোর—যা অ্যালার্জি ও নানা রকম সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

এ সমস্যা থেকে বাঁচতে টিয়েরনোর পরামর্শ খুবই স্পষ্ট:
আপনার বিছানার চাদর প্রতি সপ্তাহে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার করুন গরম পানি এবং উচ্চ তাপে শুকানোর পদ্ধতি, যাতে সব রকম ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিশ্চিহ্ন হয়। শুধু চাদর নয়—বালিশের কভার ও তোষকের কভার পরিষ্কার রাখাও জরুরি। কারণ, বালিশে থাকতে পারে অন্তত ১৬ প্রকারের ছত্রাক!

শুধু সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনার ঘুমানোর জায়গাটা হয়ে উঠতে পারে এক শান্ত, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর আশ্রয়—যেখানে জীবাণুর কোনো ঠাঁই নেই।

 

আল-আকসা: ইতিহাসের হৃদয়ে পোড়া প্রার্থনার মিনার

জেরুসালেম—একটি শহরের নাম নয় কেবল, এটি ইতিহাসের ধুলিকণায় লেখা বিশ্বাস, বেদনা ও বিজয়ের এক অনন্ত কাব্য। এই পবিত্র শহরের বুকে হৃদয়ের মতোই স্পন্দিত মসজিদুল আকসা, যে স্থান একাধারে ঈমানের প্রথম অভিমুখ, নবী করিম (সা.)-এর মেরাজের সফরের গন্তব্য এবং মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সেই আল আকসা আজ শুধু ইট-পাথরের একটি স্থাপনা নয়; এটি মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস ও ঐক্যের প্রতীক। যুগের পর যুগ ধরে এই মসজিদ সাক্ষী থেকেছে যুদ্ধ, বিজয়, বিশ্বাসঘাতকতা এবং পুনর্জাগরণের।

এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখবো আল আকসার অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এক দীর্ঘ, রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়—যা একইসঙ্গে বেদনার, তেমনি অহংকারের।

পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের হৃদয়ে অবস্থিত জেরুসালেম। আর এখানেই ইসলামের এক অনন্য ধন—মসজিদুল আকসা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা, মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থান হিসেবে মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান।

আল আকসা: এক দৃষ্টিতে অতীত ও বর্তমান
আল কোরআনের পবিত্র আয়াতে ‘বরকতময় ও পবিত্র ভূমি’ হিসেবে বর্ণিত এই ভূমি অসংখ্য নবী ও রাসূলের পদধূলিতে ধন্য। প্রাচীন যুগে এটি ছিল ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। ইতিহাসের পাতায় আল আকসা ঘিরে ফুটে ওঠে সুলতান সালাহউদ্দীনের বীরত্বগাথা, খলীফা ওমরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মুসলিম শাসকদের নির্মিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বর্ণালী অধ্যায়।
জেরুসালেমের এই ভূমিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহরসহ বহু মনীষী।

আল আকসা কমপ্লেক্স: শুধু একটি মসজিদ নয়, জ্ঞান-ঐতিহ্যের শহর
প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্স কোনো একটি স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্থাপত্য-ঐতিহ্যের মহাসমারোহ। চার দেয়ালের ভিতর বিস্তৃত প্রায় দুই শতাধিক স্থাপনা—মসজিদ, মিনার, মেহরাব, মিম্বারসহ একেকটি ইট যেন বহন করে শতাব্দীর ইতিহাস।

নির্মাণ ইতিহাস: হাজার বছরের শেকড়

১.ইসলাম পূর্ব যুগ: আদি নিদর্শনের শুরু
মসজিদুল আকসা পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। মক্কার মসজিদুল হারামের ৪০ বছর পর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, কেউ বলেন আদম (আ.) এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা, কেউ বলেন নূহ (আ.)-এর পুত্র সাম, আবার অনেকের মতে ইব্রাহিম (আ.) এই পবিত্র স্থানের ভিত্তি স্থাপন করেন।

২.নবীদের যুগ: পবিত্রতার উত্তরাধিকার
নূহ (আ.)-এর প্লাবনে ধ্বংস হওয়ার পর ইব্রাহিম (আ.) মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর দাউদ (আ.) এবং তাঁর পুত্র সুলাইমান (আ.) সময়কালে মসজিদ পরিণত হয় এক বিস্তৃত কমপ্লেক্সে। সুলাইমান (আ.) নির্মাণ করেন হায়কাল-ই-সুলাইমানি, যা পরবর্তীতে ইহুদিদের বিশ্বাসে রূপ নেয় সলেমন ট্যাম্পলে।

ইহুদি ও খ্রিস্টান আধিপত্য: ইতিহাসের উল্টো পৃষ্ঠা
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বুখতে নাসর হায়কাল ধ্বংস করে স্মৃতিচিহ্ন লুটে নেয়। ৭০ বছর পর ইরানি সম্রাটের সহায়তায় ইহুদিরা নির্মাণ করে ‘সেকেন্ড ট্যাম্পল’। এরপর গ্রিক সম্রাট অ্যারোটেনিস একে গ্রীক মন্দিরে রূপান্তর করেন। খ্রিস্টান শাসকরা আবারও এর রূপান্তর ঘটায় গির্জায়। এ সময় ইহুদিরা ভূমিহীন, আশ্রয়হীন জাতিতে পরিণত হয়—যেমনটা কোরআনে উল্লেখিত ‘লাঞ্চনার জাতি’।

ইসলামোত্তর যুগ: পুনর্জাগরণের আলোকবর্তিকা
মেরাজের রাতে রাসূল (সা.)-এর আল আকসা সফর শুধু অলৌকিক ঘটনা নয়, এক নতুন যুগের সূচনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ হিজরিতে খলীফা ওমর (রা.) মসজিদে ওমর নির্মাণের মাধ্যমে এখানে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক নির্মাণ করেন কুব্বাতুস সাখরা।
স্বর্ণচূড়া বিশিষ্ট অষ্টকোণাকৃতির এই স্থাপনা ইসলামী স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কেন্দ্রের পাথরটি ইহুদিদের মতে পৃথিবীর ‘ফাউন্ডেশন স্টোন’।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে আল আকসা হয়ে ওঠে ইসলামি জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠিত হয় অসংখ্য মাদরাসা ও প্রতিষ্ঠান। যদিও শিয়া ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়ের হাতে কিছু সময় এটি বিভ্রান্ত মতবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, কিন্তু সেলজুক সুলতানরা পুনরুদ্ধার করে ইসলামের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন। ইমাম গাজালির আল আকসায় অবস্থান, জ্ঞানের দীপ্তি ছড়ায় এই কমপ্লেক্সে।

ক্রুসেড থেকে আধুনিক যুগ:রাজনৈতিক বৈরি বাতাস

মসজিদ আল আকসা—ইতিহাস, ধর্ম এবং রাজনীতির এক অম্ল-মধুর মিশেল। জেরুসালেমের হৃদয়ে অবস্থিত এই পবিত্র স্থানকে ঘিরে ইতিহাসের অনেক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে এর মর্যাদা বহু পুরনো হলেও, এর ইতিহাসে এক গভীর মোড় আসে ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে, যখন প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করে। তারা আল-আকসা মসজিদকে “সলোমনের মন্দির” বলে ঘোষণা করে এবং কুব্বাত আস সাখরাকে “টেমপ্লাম ডোমিনি((Templum Domini)” বা ঈশ্বরের গম্বুজ হিসেবে রূপান্তর করে ফেলে। মসজিদটি তখন খ্রিষ্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে, আর আল-আকসা মসজিদকে ব্যবহার করা হয় কখনও ঘোড়ার আস্তাবল, কখনও রাজপ্রাসাদ হিসেবে।

১১১৯ খ্রিষ্টাব্দে নাইটস টেম্পলাররা মসজিদটিকে তাদের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এই সময়ে স্থাপত্যগত অনেক পরিবর্তন আসে—উত্তরের বারান্দা সম্প্রসারিত হয়, নতুন এপস তৈরি হয়, এবং অভ্যন্তরে একটি বিভক্তকারী দেয়াল নির্মিত হয়। পশ্চিমে ও পূর্বে খিলানযুক্ত নতুন অংশ সংযোজিত হয়, যা পরে একটিতে মহিলাদের নামাজের স্থান এবং অন্যটিতে ইসলামী জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক দখলের অবসান ঘটে ১১৮৭ সালে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে। বিজয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মসজিদের অভ্যন্তরে থাকা খ্রিষ্টানদের স্থাপনাগুলো(টয়লেট, শস্যগুদাম) সব সরিয়ে ফেলা হয়। মেঝে আচ্ছাদিত হয় দামি কার্পেটে, গোলাপজল ও সুগন্ধি ছিটিয়ে তা আবার নামাজের উপযোগী করে তোলা হয়। সালাহউদ্দিন তখন মসজিদে স্থাপন করেন এক ঐতিহাসিক মিম্বর, যা আগে 1168 সালে সুলতান নুরউদ্দিন জেনগির আদেশে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং তার মৃত্যুর পরে সমাপ্ত হয়।
পরবর্তী শতকগুলোতে মামলুক ও উসমানীয় শাসকদের অধীনে আল-আকসা ধীরে ধীরে নতুন মাত্রা পায়।
১৩৪৫ সালে মামলুক সুলতান আল-কামিল শামান মসজিদের পূর্ব দিকে আরও দুটি সারি ও ফটক সংযুক্ত করেন। উসমানীয়রা ১৫১৭ সালে জেরুসালেমের শাসন নিলে মসজিদে বড় কোনো স্থাপত্য পরিবর্তন না আনলেও আশেপাশে নানান উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। কাসিম পাশার ফোয়ারা, নতুন সেতু এবং মুক্ত গম্বুজ নির্মাণ হয় এই সময়েই। ১৮১৬ সালে গভর্নর সুলাইমান পাশা আল-আদিল মসজিদের জীর্ণ অবস্থা দেখে পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
বিশ শতকে এসে আল-আকসা নতুন করে সংস্কারের সুযোগ পায়, যখন জেরুসালেমের গ্র্যান্ড মুফতি আমিন আল-হুসাইনি তুর্কি স্থপতি মিমার কামালউদ্দিন বেককে দায়িত্ব দেন মসজিদ ও আশেপাশের স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। পুরনো উমাইয়া ভিত্তি শক্তিশালী করা হয়, কাঠের বিমের পরিবর্তে কংক্রিট ও পিতল ব্যবহৃত হয়, ভেতরের আর্চ ও গম্বুজের সৌন্দর্য পুনর্নির্মাণ করা হয়। খোদিত আরবি লিপি ও ফাতেমীয় আমলের মোজাইকও প্লাস্টারের আড়াল থেকে উদ্ধার করে দৃশ্যমান করা হয়।

তবে সব ইতিহাস আনন্দদায়ক নয়। ১৯২৭ ও ১৯৩৭ সালের ভূমিকম্প মসজিদে ব্যাপক ক্ষতি করে, যাকে ১৯৩৮ ও ১৯৪২ সালে আবার মেরামত করা হয়।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ছিল এক মোড়বদলের ঘটনা, যেখানে মুসলিমরা হারায় মসজিদুল আকসার কার্যত নিয়ন্ত্রণ। যদিও নামমাত্রভাবে এটি পরিচালিত হয় জর্ডান-ফিলিস্তিনের ওয়াকফের তত্ত্বাবধানে, বাস্তবে প্রতিটি প্রবেশপথে রয়েছে দখলদার সেনাদের কঠোর নজরদারি। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের আগে পোহাতে হয় অসহনীয় চেকিং, কখনো কখনো বন্ধ থাকে প্রবেশদ্বার।

কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট, যখন এক অস্ট্রেলীয় পর্যটক ডেনিস মাইকেল রোহান মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুনে নুরউদ্দিনের তৈরি সেই ঐতিহাসিক মিম্বর পুড়ে যায়। রোহান বিশ্বাস করতেন এই আগুনের মাধ্যমে তিনি যীশুর দ্বিতীয় আগমন ত্বরান্বিত করতে পারবেন। এই ঘটনার ফলে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং তার ফলস্বরূপ গঠিত হয় ওআইসি—ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা।

১৯৮০-এর দশকে ফের উগ্রবাদী ইহুদি সংগঠন গুশ এমুনিম আন্ডারগ্রাউন্ড আল-আকসা ও কুব্বাত আস সাখরা উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাদের লক্ষ্য ছিল, এই দুই পবিত্র স্থাপনা ধ্বংস করে সেই স্থানে ”তৃতীয় ইহুদি মন্দির(থার্ড টেম্পল)” নির্মাণ করা।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, যখন ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এরিয়েল শ্যারন এক হাজার সশস্ত্র রক্ষী নিয়ে আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করেন। ফিলিস্তিনিরা প্রতিবাদ করে, এবং সংঘর্ষের সূচনা হয়—যা পরবর্তীতে “আল-আকসা ইন্তিফাদা” নামে ইতিহাসে স্থান পায়। এই ইন্তিফাদা চলে পাঁচ বছর, ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ফিলিস্তিনে।
২০১৪ সালে ইসরায়েলি পুলিশ ১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো আল-আকসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তারা শুধু প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।

২০১৪ সালের পর থেকে আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা ও দখলদারিত্বের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, তা মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মসজিদে প্রবেশে মুসলমানদের জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে—বিশেষ করে রমজানের মতো পবিত্র মাসে, যেখানে পুরুষদের জন্য ৫৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ বহু ফিলিস্তিনির জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী নিয়ম ভেঙে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো প্রায় ১৮০ জন ইহুদি উপাসককে আল-আকসা চত্বরে প্রার্থনার অনুমতি দেয়। এ পদক্ষেপ মুসলিমদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, কারণ এটি মসজিদের দীর্ঘকালীন ধর্মীয় মর্যাদা ও স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
মুসলমানদের দাবি, এই পরিবর্তন ইসরায়েলের পরিকল্পিত নীতির অংশ, যার মাধ্যমে মসজিদের নিয়ন্ত্রণে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এই সংকট শুধু ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক মুসলিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন আল-আকসার ধর্মীয় অবস্থান ও মুসলমানদের অধিকারে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও আল-আকসা মসজিদ তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বিশ্ব বিবেকের সামনে প্রশ্ন তুলে দাঁড়িয়ে আছে—একটি মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ উপাসনাস্থলের আশায়।

সমাপ্তি
আল-আকসা মসজিদ শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি একটি প্রতীক—বিশ্বাস, সংগ্রাম ও অটল অবস্থানের প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যে মিনার একবারও মাথা নোয়ায়নি, বরং প্রতিটি দখল, প্রতিটি আগুন, প্রতিটি গুলির শব্দে আরও বেশি দৃঢ় হয়ে উঠেছে তার আত্মিক অবয়ব। ক্রুসেডারদের বিজয়, সালাহউদ্দিনের পুনরুদ্ধার, উসমানীয়দের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা আধুনিক যুগের দখলদারিত্ব—সব কিছুর মধ্য দিয়েই আল-আকসা থেকেছে অমলিন, অভ্রান্ত।

আজও, যখন জেরুসালেমের আকাশে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে, তখনও মসজিদুল আকসার আঙিনায় ভোরের আলো পড়ে নিঃশব্দে। সেই আলোয় ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণ যেন চিত্রিত হতে থাকে—মিম্বর, মিনার ও মোজাইকে। সময়ের শত আঘাত, রাজনীতির শত হিসাব-নিকাশ আর বেদনার অতল থেকে উঠে আসা এই মসজিদ তাই কেবল ইবাদতের স্থান নয়, হয়ে উঠেছে এক জাতির আত্মপরিচয়ের অন্তর্নিহিত প্রতিচ্ছবি।

এখনও আল-আকসা থেকে ধ্বনিত হয় আজানের ধ্বনি—ভেঙে দেয় দেয়ালের সীমা, জাগিয়ে তোলে আত্মা। যতদিন ঈমান টিকে থাকবে, ততদিন আল-আকসাও টিকে থাকবে—বিশ্বাসের প্রতিরূপ হয়ে, দুনিয়ার সমস্ত নির্যাতনের বিপরীতে মাথা উঁচু করে।
আল আকসা আজও আমাদের ডাকে, ইতিহাসের প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যেন সে ফিসফিস করে বলে—
“আমাকে ভুলো না, কারণ আমার মাঝে লুকিয়ে আছে তোমার আত্মপরিচয়, তোমার সংগ্রাম, তোমার ঈমান।”

লেখকঃ আরওয়া আনাম

 

‘মাতৃত্বই শ্রেষ্ঠ পরিচয়’—মা দিবসে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের বিশেষ উদ্যোগ

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসি আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা ‘মাতৃত্বই পৃথিবীর সবচেয়ে মহৎ পেশা’।
এই প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ১১ জন মায়ের জীবনগাথা ভিডিওচিত্রে ধারণ করেছে, যেখানে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ও মাতৃত্বের ভারসাম্য রচনার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই ভিডিওগুলোতে উঠে এসেছে—কীভাবে এক একজন মা সংসার, সন্তান এবং কর্মক্ষেত্রে সমান নিষ্ঠায় দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ, মমতা এবং ধৈর্যের অনন্য দৃষ্টান্তগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো—সমাজে মায়েদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের জীবনের অজানা অধ্যায়গুলো সবার সামনে তুলে ধরা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সন্তান লালন-পালন কোনো সাধারণ দায়িত্ব নয়; বরং এটি এক মহান ত্যাগের কর্মযজ্ঞ, যা অন্য যেকোনো পেশার তুলনায় অনেক বেশি ভালোবাসা ও ধৈর্য দাবি করে।

মাতৃত্বকে একজন নারীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পরিচয় হিসেবে তুলে ধরাই এই প্রচারণার প্রধান বার্তা।

 

নারীর স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রযুক্তির বিপ্লব: বুয়েটের ‘নিওস্ক্রিনিক্স’ টিমের বিশ্বজয়

 

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্তন ক্যান্সার। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত না হওয়ায় এই রোগে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন;বিশেষত আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যেখানে সচেতনতা ও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাব প্রবল। ঠিক এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের গর্ব ‘বুয়েট’-এর একটি তরুণ দল এনে দিল এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি, যা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

জন হপকিন্স হেলথকেয়ার ডিজাইন কম্পিটিশন ২০২৫-এর ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক বিভাগে বিজয়ী হয়েছে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের উদ্ভাবনী দল ‘নিওস্ক্রিনিক্স’।
তাদের তৈরি প্রযুক্তি—একটি AI-ভিত্তিক ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন, যা নারীদের নিজে থেকেই ঘরে বসে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ করে দেয়। শুধুমাত্র লক্ষণ বিশ্লেষণ করেই প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভাব্যতা শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

এই প্রকল্পের মূল নেতৃত্বে ছিলেন ফাহমিদা সুলতানা,’নিওস্ক্রিনিক্স’ টিমের লিড ইনোভেটর।
একজন নারী হিসেবে, নারীর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তার নেতৃত্ব এই প্রকল্পকে দিয়েছে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি। বাস্তব অভিজ্ঞতা, নারীর সমস্যা সম্পর্কে অনুভব, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা—এই তিনের সমন্বয়ে তিনি টিমকে এগিয়ে নিয়ে যান সঠিক সমাধানের পথে।

দলটির অন্যান্য সদস্যরা-এইচ এম শাদমান,
সাদাতুল ইসলাম,মো. হাসনাইন আদিল,পৃথু আনান।
তত্ত্বাবধান করেছেন-অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান, বুয়েট।
তথ্য ও মেডিকেল সহায়তায় ছিলেন-জারিন তাসনিম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ,রিবাতুল ইসলাম, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে স্বাস্থ্যপরিসেবা এখনো শহরকেন্দ্রিক এবং নারীরা বহু সময় দ্বিধা বা লজ্জায় স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, সেখানে এই প্রযুক্তি হতে পারে এক প্রযুক্তিনির্ভর আর্শীবাদ। এটা কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং নারীর স্বাস্থ্য অধিকার ও সচেতনতার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

অভিনন্দন নিওস্ক্রিনিক্স টিম এবং বুয়েট!
তোমাদের উদ্ভাবন একদিন লাখো নারীর জীবন বাঁচাবে।

#NeoScreennix
#WomenInTech
#HealthcareInnovation
#DigitalHealth
#BangladeshPride
#BreastCancerAwareness

 

মুন্সিগঞ্জে দুই তরুণীকে মারধর: দোষীদের শাস্তির দাবি মহিলা পরিষদের

 

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধর এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সোমবার (১৩ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ মে ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী একটি লঞ্চ মুন্সিগঞ্জে সাময়িক যাত্রাবিরতি করলে দুই তরুণী ঘাটে নেমে কিছু কেনাকাটার জন্য বের হন। তখন স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে লঞ্চে হামলা চালানো হয় এবং দুই তরুণীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। প্রকাশ্যে একজন যুবক বেল্ট দিয়ে তাঁদের আঘাত করে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

মহিলা পরিষদ বলছে, এটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা, অবমাননা ও বৈষম্যের একটি গভীর সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মৌলিক অধিকারের ওপর এ ধরনের হামলা একটি ভয়ংকর বার্তা দেয়।”
সংগঠনটি নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও সামাজিক মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

 

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের প্রেক্ষিতে ঢাকায় আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিভাজন ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে।

‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: বিতর্ক ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বুধবার (৭ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে। গবেষণা ও সামাজিক উন্নয়নমুখী সংগঠন ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ কারণে অবিলম্বে কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন বাতিল করতে হবে। তারা সব ধর্ম ও মত-পথের নারীদের সমন্বয়ে নতুন করে একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। বিশেষভাবে ইসলামিক চিন্তাবিদদের কমিশনে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তারা তুলে ধরেন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,
“সরকার কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না। পদে পদে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার সরকারও সেসব ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছে। নারী সংস্কার কমিশনও আরেকটি ষড়যন্ত্র। এ জন্য এই কমিশন প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন,
“কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন যাচাই না করেই আপনি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে করে সরকার কার্যত জনগণের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চান?”

ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন,“কমিশনের প্রস্তাবগুলো জাতিকে চূড়ান্ত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি উদ্যোগ। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতকে উপেক্ষা করে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাই প্রায় সব মহল থেকেই এগুলোকে পরিত্যাজ্য বলে মনে করা হচ্ছে।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (চাকরিচ্যুত) মো. হাসিনুর রহমান বলেন,“এই কমিশন পরিবারের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। এটি বৃদ্ধাশ্রমকে প্রমোট করার কমিশন। এর মাধ্যমে মানুষকে ইসলামী মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চলছে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবদুল মান্নান বলেন,“কমিশনের বেশির ভাগ প্রস্তাব ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিন্ন পারিবারিক আইনসহ অনেক প্রস্তাব অন্যান্য ধর্মেরও পরিপন্থী। তাই এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে হবে।”

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী অধ্যাপক শামীমা তাসনীম বলেন,“কমিশনের প্রস্তাবগুলো দাম্পত্য কলহের নতুন ইস্যু তৈরি করবে। বাস্তবায়িত হলে পরিবারের মহিলা সদস্যদের কাছে পুরুষ সদস্যদের শত্রু করে তুলবে।”

বক্তারা আরও বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিক নয়, বরং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুলফিকার হাসান। সঞ্চালনা করেন ওয়ান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মুহাম্মাদ আবদুল মান্নান।

আরও বক্তব্য রাখেন:বুয়েটের অধ্যাপক মো.ফখরুল ইসলাম,
অ্যাডভোকেট ইকতেদার আহমেদ,মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী,সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা খানম,আইপাস বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. শামিলা নাহার,আইনজীবী সাবিকুন নাহার মুন্নি,ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর খলিলুর রহমান মাদানী,মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।

 

মুসলিম হবার ‘অপরাধে’ চিকিৎসা বঞ্চিত অন্তঃসত্ত্বা নারী!

 

কলকাতার কস্তুরী দাস মেমোরিয়াল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বা মুসলিম নারী। অভিযোগ, হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সি কে সরকার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ওই রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ভুক্তভোগী নারী গত সাত মাস ধরে নিয়মিত ওই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তবে সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই চিকিৎসক ডা. সি কে সরকার বলেন, “পহেলগাঁও ঘটনার পর আমি মুসলমান রোগী দেখা বন্ধ করেছি। হিন্দুদের উচিত তোমার স্বামীকে হত্যা করা, তাহলে বুঝবে যন্ত্রণা কাকে বলে।”

চিকিৎসকের এমন বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে হতবাক হয়ে পড়েন রোগী ও তাঁর পরিবার। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্যত্র চিকিৎসা নিতে যান। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদে রয়েছেন।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নেটিজেনদের প্রশ্ন, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা কীভাবে একজন চিকিৎসকের নৈতিকতা এবং শপথের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

এদিকে আরও জানা যায়, কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতাল জে এন রে হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পতাকার প্রতি ‘অসম্মান’ দেখানোর অভিযোগ তুলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

এ ধরনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও চিকিৎসাসেবার মৌলিক নীতিমালা আদৌ কি এসব ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিদ্বেষের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ থাকছে?

 

আলো ছড়ান যিনি:শিল্পী খাতুনের পাঠাগার

শিক্ষকতা, ব্যবসা আর সমাজসেবার মাঝেও যে কেউ নিজের গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার আছিম কুটিরা গ্রামের শিল্পী খাতুন।

স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে একসময় ঢাকায় বসবাস করতেন শিল্পী। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পর তারা ফিরে আসেন নিজ গ্রাম আছিম কুটিরায়। এখানে কুটিরা ডিএস ক্যাডেট একাডেমিতে পড়ানোর পাশাপাশি নিজের পাঠাভ্যাস চালিয়ে যান। আশপাশের অনেকে তাঁর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তেন, আবার ফেরতও দিতেন। এই আগ্রহ দেখে তিনি নিজেই বই জমিয়ে তৈরি করে ফেলেন একট ছোট্ট পাঠাগার—’কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার।’

গ্রামে একজন নারী হিসেবে পাঠাগার চালানো সহজ ছিল না। শুরুতে অনেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। স্কুলে পড়ানোর সময়ও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন শিল্পী খাতুন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। ধৈর্য আর নিষ্ঠায় গ্রামের নারীদের আস্থা অর্জন করেছেন এবং এখন পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সব সদস্যই নারী।

বর্তমানে পাঠাগারটিতে একসঙ্গে ১৪ জন পাঠক বসে বই পড়তে পারেন। সদস্যসংখ্যা ১৩৭ জন। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ নানা শ্রেণির মানুষ এখানে বই পড়তে আসেন। শিল্পী খাতুন নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে বই কিনেছেন এবং অনেকেই বই উপহারও দিয়েছেন।

শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা নয়, সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোও তাঁর নিয়মিত কাজ। রোজার সময় এতিম, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ইফতার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন। গ্রামের মানুষদের জন্য চালের কার্ডের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষকতার পাশাপাশি স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী খাতুন একটি মুদি ও মনিহারি দোকান চালু করেছেন। এই ব্যবসা তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

শিল্পী খাতুন চান, তাঁর স্কুল ও পাঠাগারের মডেল আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে গ্রামের আরও মানুষ পড়ালেখা ও সচেতনতার আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। এজন্য তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

পারিবারিক কলহের বলি হয়ে ঝরে গেলো একটি প্রাণ

 

চট্টগ্রামের র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের এক নির্জন অফিস কক্ষে সকালটা ছিল অন্যরকম নীরব। অফিসে ঢোকার সময় সহকর্মীরা হয়তো ভেবেছিলেন, প্রতিদিনের মতোই দায়িত্বে নিযুক্ত হবেন তাদের প্রাণচঞ্চল ও দায়িত্বশীল সহকর্মী এএসপি পলাশ সাহা। কিন্তু দরজা খুলতেই এক বিভীষিকাময় দৃশ্য তাদের চোখে পড়ে,রক্তে ভেজা ইউনিফর্মে পড়ে আছেন পলাশ সাহা, হাতে নিজের সার্ভিস রিভলভার।

একজন তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল পুলিশ অফিসার—যিনি রাষ্ট্রের সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে শপথ নিয়েছিলেন, তিনিই কেন নিজেই নিজের জীবন কেড়ে নিলেন? মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া ছোট্ট একটি চিরকুট যেন সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় “আমার মৃত্যুর জন্য মা ও বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না।” কিন্তু এই একটি বাক্যে ঢাকা পড়েনি সেই গভীর পারিবারিক সংকট, যেটি ধীরে ধীরে পলাশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

পলাশ সাহা ৩৭তম বিসিএসের মেধাবী র‍্যাব কর্মকর্তা। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার সন্তান হিসেবে এলাকার গর্ব। সহকর্মীদের ভাষায়, তিনি ছিলেন দায়িত্ববান, দৃঢ়চেতা এবং বিনয়ী। তার এমন করুণ পরিণতি কারো কল্পনায়ও আসেনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে সুস্মিতা সাহার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয়। সেই সম্পর্কের শুরু থেকেই পলাশের মা আরতি সাহার সঙ্গে সুস্মিতার সম্পর্ক খারাপ ছিল। সময়ের সাথে সেই বিরোধ আরও তীব্র হয়ে উঠে। পলাশ চেষ্টা করেও মা এবং স্ত্রীর মধ্যে শান্তি আনতে পারেননি।

ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানা যায় এক বেদনাময় চিত্র। শ্বশুর ভরত সাহা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার মেয়ে সুস্মিতাকে অনেক ভালোবাসত পলাশ। কিন্তু সেই ভালোবাসা তার মা সহ্য করতে পারেনি। মেয়েটা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল কয়েকবার।” পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই সুস্মিতা তার শাশুড়ি আরতি সাহার নির্যাতনের শিকার হন। রান্না নিয়ে অপমান, কথা বলা নিয়ে টিপ্পনি, এমনকি ফেসবুকে আত্মহত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দিয়েও পরে বাধ্য হয়ে তুলে নিতে হয় তাকে।

পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা সংবাদমাধ্যমে জানান, শাশুড়ির চাপে তিনি স্বামীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়েই তুলতে পারেননি। পলাশ খুবই ভালো মানুষ কিন্তু ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত মাতৃভক্ত। এমনকি ৩৫ বছর বয়সেও মা তাকে নিজ হাতে খাওয়াতেন, কোন পোশাক পরবে সেটাও মা ঠিক করতেন। বাড়ির সব সিদ্ধান্তে শাশুড়ির আধিপত্য ছিল। ফলে স্বামীকে ভালোবাসলেও, সুস্মিতা নিজেকে যেন ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ বলে মনে করতেন সংসারে।
বিয়ের শুরুর দিকে সুস্মিতা চেষ্টা করেছিলেন সংসারটাকে গুছিয়ে রাখতে। শাশুড়ির চুলে তেল দেয়া থেকে শুরু করে গোসল করানো পর্যন্ত সব করেছেন। কিন্তু এত যত্ন-আদর সত্ত্বেও সম্পর্কের বরফ গলেনি। বরং দিনের পর দিন বাড়তে থাকে উপেক্ষা ও মানসিক অবহেলা।

সুস্মিতার চাচাতো ভাই পার্থ সাহাও অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য চাপ ও নির্যাতন চলেছে। তবে পলাশকে সবসময় ভালো মনে হয়েছে।

এদিকে পলাশের আত্মহত্যার পর তার আত্মীয়রা সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রীকে দায়ী করে নানা স্ট্যাটাস দিলেও সুস্মিতার দেওয়া তথ্যগুলো স্পষ্ট করে, এটি ছিল এক জটিল মানসিক দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক একচ্ছত্র আধিপত্যের করুণ পরিণতি।

যদিও ঘটনাটিকে আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে: এটি কি নিছক আত্মহত্যা, নাকি মানসিক ও পারিবারিক নির্যাতনের প্ররোচনায় সংঘটিত আত্মহনন? বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় “আত্মহত্যায় প্ররোচনা” একটি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। তবে সামাজিক রীতি অনুযায়ী পারিবারিক কলহকে প্রায়শই গোপন করা হয় কিংবা ‘গৃহস্থালির ব্যাপার’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার ভেতরে লুকিয়ে আছে বৃহত্তর একটি প্রশ্ন—আমাদের সমাজে পারিবারিক সম্পর্ক কীভাবে একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে ভেঙে দিতে পারে? বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা আমাদের আদালতগুলোতে জমে থাকলেও সমস্যা প্রতিরোধে নেই কোনো কার্যকর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নীতি।

সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবার তিনটি স্তরেই প্রয়োজন সচেতনতা, সহনশীলতা এবং সহানুভূতি। নইলে এমন পলাশদের আর শেষ নেই, শুধু সময়ের সাথে নামগুলোই পাল্টাবে।

তথ্যসূত্রঃপ্রথম আলো
যুগান্তর
চ্যানেল ২৪

 

রাবিতে নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এক শিক্ষক ক্লাস চলাকালীন সময় বোরকা পরা ছাত্রীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম ছাত্রীদের ‘কালো কাক’ বলে কটাক্ষ করেন এবং অতীতে বহুবার শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেছেন।

ঘটনার পরপরই মাস্টার্স শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শুধু পোশাক নয়, শিক্ষার্থীদের পারিবারিক পটভূমি, অর্থনৈতিক অবস্থা, এমনকি শারীরিক গঠন নিয়েও বিদ্রূপ করতেন। নাম ধরে অপমান, বাবার পেশা নিয়ে কটূক্তি, অঞ্চলভেদে শিক্ষার্থীদের হেয় করা—এসব ছিল তার বক্তব্যের নিয়মিত অংশ।
এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রায়ই তাদের ‘টোকাই’, ‘বি-ক্লাস’ ইত্যাদি শব্দে অপমান করতেন এবং পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করতেন।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নয়, বিভাগের এক সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেটিকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ড. মুনসি মঞ্জুরুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক সভা ডাকা হয়। সভায় রফিকুল ইসলাম তার আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভবিষ্যতে যদি তিনি পুনরায় এ ধরনের আচরণ করেন, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান।

 

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের মানববন্ধন: মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের মানববন্ধন: ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশ বাতিল এবং নতুনভাবে কমিশন গঠনের দাবিতে গত ৮মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’। বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধকে ভিত্তি করে ইসলামিক স্কলারদের নেতৃত্বে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, নারী সংগঠন, সুশীল সমাজ, শিক্ষক-ছাত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
সংগঠনের সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম অভিযোগ করেন, “নারী সংস্কার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কোনো মুসলিম নারী স্কলারকে অন্তর্ভুক্ত না করে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। এ সুপারিশ নারী সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।” তিনি বলেন, “কমিশনের সদস্যদের উচিত নিজেদের মা, বোন ও কন্যাদের যৌন শ্রমিক হিসেবে কল্পনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তাহলে তারা বুঝতে পারবেন আসল মর্যাদা কোথায়।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দিলে গোটা সমাজ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। গনোরিয়া, সিফিলিস, এইডসসহ নানা রোগ বাড়বে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হবে।
“যৌনকর্ম নয় তো পেশা, সে তো সমাজ নষ্টের নেশা”— এই স্লোগান ধারণ করে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি সাহেল মোস্তারী, তাহমিনা আক্তার সুরমা, নুসরাত জাহান লিজা, হেলেনা আক্তার লাকি ও নাদিয়া বিনতে মাহতাব।

সভাপতির বক্তব্যে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, “এই কমিশনের সুপারিশ নারীর বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা। অথচ ইসলাম নারী-পুরুষকে পরিপূরক হিসেবে চিহ্নিত করে সম্মান, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারী নীতিমালা না হলে তা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বাড়াবে।”

 

অস্বাভাবিক স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম

 

বর্তমানে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো, যেমন ‘সেনোরা’, যেখানে এক প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা।
এত চড়াদামে ন্যাপকিন কিনে ব্যবহার করা শুধুমাত্র একজন মেয়ের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব স্বীকৃত, তবে কেন আমাদের জন্য এটি বিলাসিতা হয়ে দাঁড়াতে হবে? কেন একটি সাধারণ, স্বাস্থ্যকর পণ্য কেনার জন্য আমাদের এত টাকা খরচ করতে হবে?

যে সমস্যাটি আমরা মুখোমুখি হচ্ছি: এই দাম সাধারণ মানুষের জন্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের পরিবারের আয় সীমিত, তারা কীভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনবে? কিছু পরিবারের সদস্যরা হয়তো কাপড় বা তুলা ব্যবহার করছে, যেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কিন্তু, এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে এটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।

প্রতিকার:
১. দামের নিয়ন্ত্রণ এবং সাশ্রয়ী পণ্য: সরকারকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ভ্যাট কমিয়ে, দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন পণ্য সহজলভ্য করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই এটি কিনতে পারে।

স্বাস্থ্যকর বিকল্পের প্রচলন: কোম্পানিগুলির উচিত স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী বিকল্প বাজারে নিয়ে আসা। কাপড় বা তুলা ব্যবহার করার পরিবর্তে, সাশ্রয়ী দামে স্যানিটারি প্যাড পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত।

উৎপাদন খরচ কমানো: কোম্পানিগুলি তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে, বিক্রির দামে সমন্বয় আনতে পারে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খরচ কমানো সম্ভব।

সরকারি নীতি এবং সহায়তা: সরকারের উচিত, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কার্যকর নীতি গ্রহণ করা, যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা এবং দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায়।

স্যানিটারি ন্যাপকিন শুধুমাত্র একটি পণ্য বা খরচের বিষয় নয়, আমাদের সবার স্বাস্থ্য এবং জীবন সুরক্ষার প্রশ্নও বটে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানো, তার মান নিশ্চিত করা, এবং সহজলভ্যতা নারীর মৌলিক অধিকার।
আমরা সকলেই দাবি জানাই, যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন আমাদের সবার জন্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য, এবং নিরাপদ হয়। স্বাস্থ্য বা জীবনের নিরাপত্তা কখনোই একটি শ্রেণীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

#স্যানিটারি_ন্যাপকিন #স্বাস্থ্য_অধিকার #সাশ্রয়ী_মূল্য #জনসচেতনতা #স্বাস্থ্য_নিরাপত্তা #আর্থিক_সাম্য
[8:25 pm, 26/04/2025] +880 1994-004543: ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশন

ভিক্টোরিয়ান যুগ (১৮৩৭-১৯০১) ছিল একটি বিশেষ সময়, যেখানে ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। তবে এর পাশাপাশি এক অনন্য এবং কঠিন ফ্যাশন যুগও তৈরি হয়েছিল, যেখানে নারীদের জন্য সৌন্দর্য অর্জন করতে গেলে শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এই যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফ্যাশন ছিল কর্সেট, যা নারীদের শারীরিক গঠনকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে আনার জন্য ব্যবহৃত হত।

ভিক্টোরিয়ান সমাজে নারীদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি ছিল একটি সুনির্দিষ্ট শরীরের গঠন, যা আওয়ারগ্লাস ফিগার নামে পরিচিত ছিল। এই শারীরিক আকৃতি অর্জন করতে কর্সেট ছিল এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে কর্সেটের ব্যবহারের ফলে নারীদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

অতিরিক্ত টাইট কর্সেট পরার কারণে নারীদের পাঁজরের হাড় বিকৃত হয়ে যেত, যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিত। কর্সেটের চাপে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানচ্যুতি ঘটত, যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা এবং অসুস্থতা তৈরি করত। চিকিৎসা প্রতিবেদনগুলিতে দেখা গেছে, কর্সেট পরা নারীদের মধ্যে বেহুঁশ হয়ে পড়া এবং শ্বাসকষ্ট ছিল অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। এমনকি এক্স-রে এবং সংরক্ষিত কঙ্কালগুলি থেকেও প্রমাণ মিলেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে কর্সেট পরলে পাঁজরের হাড় স্থায়ীভাবে বিকৃত হয়ে যেত।

এছাড়া, ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশনে হুপ স্কার্ট ও ক্রিনোলিনের ব্যবহারও ছিল খুব জনপ্রিয়। এই পোশাকগুলি সাধারণত বৃহৎ স্কার্ট তৈরি করত, যা নারীদের দেহকে বিশাল আকারে প্রদর্শন করত। কিন্তু এসব পোশাকও ছিল মারাত্মক বিপজ্জনক। এগুলি যেমন চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করত, তেমনি এগুলির আগুন ধরারও সম্ভাবনা ছিল, যা অনেক নারীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।

সামাজিক চাপের কারণে নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে এই ধরনের ফ্যাশন এ বাধ্য হতেন। তবে, ১৯শ শতকের শেষ দিকে কিছু ডাক্তার, নারীবান্ধব লেখক ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা নারীদের জন্য আরামদায়ক পোশাকের প্রচলন শুরু করেন। এভাবেই ২০শ শতকের শুরুতে কর্সেটের জনপ্রিয়তা কমে আসে এবং আধুনিক ফ্যাশনের বিকাশ ঘটে।

ভিক্টোরিয়ান যুগের ফ্যাশন নারীদের জন্য এক চরম শারীরিক কষ্টের যুগ ছিল। কর্সেট ও ক্রিনোলিনের মতো পোশাক নারীদের শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু সমাজের চাপে তারা এসব পোশাক পরতে বাধ্য হতেন। আজকের দিনে, সৌন্দর্য এবং ফ্যাশনের মধ্যে আরাম এবং স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা আধুনিক সমাজের অগ্রগতির লক্ষণ।

 

অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনিতা উইলিয়ামস ও তার টীম

দীর্ঘ ১০ মাস মহাকাশে আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে পরিকল্পিত সময়ের আগেই তাঁদের মহাকাশ স্টেশনেই থাকতে হয়েছে। অবশেষে নাসা ও স্পেসএক্সের যৌথ উদ্যোগে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৩ সালের জুনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান সুনিতা ও বুচ। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল কিছু গবেষণা ও পরীক্ষা চালিয়ে দ্রুত ফিরে আসা। কিন্তু স্টারলাইনার মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়, আর দুই নভোচারী সেখানেই আটকে পড়েন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা শুরু থেকেই চেষ্টা করলেও বিষয়টি রাজনৈতিক রূপ নেয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের পর।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও এই বিষয়ে সরব হন এবং দাবি করেন, আগের বাইডেন প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এরপর নাসা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের মাধ্যমে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। গত শুক্রবার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ক্রু ড্রাগন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ২৯ ঘণ্টা পর এটি মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে। নতুন করে চার নভোচারী সেখানে যোগ দেন, যাঁরা আগামী ছয় মাস মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাসার অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের তাকুয়া অনিশি ও রাশিয়ার কিরিল পেসকভ।

এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু সুনিতা ও বুচই নয়, তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরছেন—নাসার নিক হেগ এবং রাশিয়ার আলেকসান্দর গরবুনোভ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই দুজন মহাকাশ স্টেশনে এসেছিলেন এবং তাঁদের ফেরার জন্য আগে থেকেই স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্রু ক্যাপসুলে দুটি ফাঁকা আসন রাখা হয়েছিল।

সোমবার থেকে সুনিতাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়। মহাকাশযানের দরজা বন্ধ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়েই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন। তবে আবহাওয়া, মহাকাশযানের অবস্থা এবং সমুদ্রের পরিস্থিতি তাঁদের ফেরার পথে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, যা পুনরায় পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুনিতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহকর্মীরা ঘরে ফিরছেন। সারা বিশ্ব তাঁদের এই সফল প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

এপ্রিল মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬২টি ঘটনা

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬২টি ঘটনা ঘটেছে, যা মার্চ মাসের তুলনায় ৬৬টি কম। তবে সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি—ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, হত্যা ও আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলো এখনও সমাজে উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়ে গেছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানায়, এপ্রিল মাসে ৯৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ জন শিশু, ৪৩ জন কিশোরী এবং ৮ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৫, যার শিকার হয়েছেন ৪ শিশু, ৮ কিশোরী ও ৯ নারী। এছাড়াও ৪ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ৩৩টি, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬ জন, আর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি। এসিড হামলায় আহত হয়েছেন একজন নারী।

আত্মহত্যার দিক থেকেও মাসটি ছিল হতাশাজনক—১২ কিশোরী ও ২৩ নারীসহ ৩৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের ঘটনা ১১টি (৪ শিশু ও ৭ কিশোরী), আর নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন (২ শিশু, ২ কিশোরী ও ১ নারী)। অস্বাভাবিক মৃত্যু ও হত্যা মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ৬৯ জন নারী, কিশোরী ও শিশু; যাদের মধ্যে ১৮ জন শিশু ও কিশোরী।

এমএসএফের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, অনেক ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা স্থানীয় সালিশে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যা আইনের দৃষ্টিতে বেআইনি। এই ধরনের সালিশি বিচার বিচারব্যবস্থার প্রতি চরম অবহেলার ইঙ্গিত দেয়।

আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

 

শিশুদের শৈশব হোক নিরাপদ, গৃহশ্রমিকের শ্রম হোক মর্যাদাপূর্ণ

(শ্রম সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ)বাংলাদেশের শ্রমজগতে এক নতুন আলো ফেলেছে শ্রম সংস্কার কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন। শিশুদের নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করা এবং গৃহ ও সৌন্দর্য সেবাখাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।

কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে গৃহকর্মে নিয়োজিত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫ অনুযায়ী এমন নিয়োগ ইতোমধ্যেই অবৈধ হলেও, আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় তা নিরবিচারে চলমান।
কমিশন মনে করে, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫’-এর যথাযথ প্রয়োগ না হলে শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত হবে না।

গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নিয়োগের ধরন যাই হোক—আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন কিংবা স্থায়ী—সবার জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, ন্যায্য বেতন, ছুটি, নিরাপদ বাসস্থান ও খাবারের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এ জন্য বাধ্যতামূলক কর্মচুক্তি চালুর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

এছাড়া অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করাও এই প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। কমিশন বলেছে, গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

শ্রম সংস্কার কমিশনের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যসেবাখাতও শ্রমের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিউটি পারলারে কর্মরত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, ডে কেয়ার সুবিধা এবং ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতে পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক মর্যাদা রক্ষার বিষয়েও জোর দিয়েছে কমিশন।

পারলার কর্মীদের নিরাপত্তা বিশেষ করে রাতের সময় বাড়ি ফেরা, কর্মস্থলে হয়রানি রোধ, ও কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, এই শ্রমিকরা শুধুই সেবিকা নন তাঁরা অর্থনীতির নীরব যোদ্ধা, যাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ জরুরি।

শ্রম সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদন শুধু আইনি সংশোধনের আহ্বান নয়—এ এক নৈতিক প্রত্যয়: যে শিশুদের খেলাধুলার সময়, তারা যেন নিপীড়নের শিকার না হয়; যে নারীরা অন্যের ঘর সাজায়, তাঁরাও যেন নিজের জীবনে সম্মান ও নিরাপত্তা পান।

তথ্যসুত্র -প্রথম আলো

 

ডা. সায়েবা আক্তার: মাতৃস্বাস্থ্যের নীরব পথিকৃৎ

 

ডা. সায়েবা আক্তার একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তার উদ্ভাবন ‘সায়েবা’স মেথড’ বিশ্বের মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, তিনি ব্যক্তি হিসেবে নিজে থেকে গেলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।

১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা ডা. সায়েবা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বেশ মেধাবী। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গবেষণা ও চিকিৎসা সেবায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন।

উদ্ভাবন: ‘সায়েবা’স মেথড’
২০০০ সালে, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ (Postpartum Hemorrhage – PPH) প্রতিরোধে তিনি ‘ইউটেরিন বেলুন ট্যাম্পোনেড’ (UBT) নামক একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা ‘সায়েবা’স মেথড’ নামে পরিচিত। উন্নত দেশে এই সমস্যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও, ডা. সায়েবা স্বল্পমূল্যের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা প্লাস্টিকের ক্যাথেটারের মাধ্যমে জরায়ুর ভেতরে বেলুন তৈরি করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রচুর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং হাজারো মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।

ডা.সায়েবা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গাইনিকোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের চিকিৎসা দিতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন।
এছাড়াও, তিনি সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় সহায়তা করতে ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তার উদ্যোগে অনেক দরিদ্র মেয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া, তিনি ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ অর্জন করেন।
তবে, তার কাজ আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল স্বীকৃতি পেলেও, ব্যক্তি হিসেবে তিনি সেই মর্যাদার আসনে আসতে পারেননি,থেকে গেলেন জনমনের আড়ালে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনিসেফসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির প্রশংসা করলেও,ব্যক্তি হিসেবে কাজের জন্য পাননি বিশেষ কোন বিশ্বস্বীকৃতি।
প্রায়শই দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেলেও, তারা ব্যক্তিগতভাবে উপেক্ষিত থাকেন। তার উদ্ভাবন নোবেল পুরস্কার কিংবা র‍্যামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারের যোগ্য হলেও, তিনি এখনো সে পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাননি।

ডা. সায়েবা আক্তার কেবল একজন চিকিৎসক নন, তিনি একজন পথিকৃৎ, মানবতার সেবক। তার উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসুক বা না আসুক, তার কাজের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে বিশ্ব তাকে আরও বড় পরিসরে সম্মানিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

 

রাবিতে ছাত্রীসংস্থার সহায়তা বুথ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের প্রথম ধাপের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা। এ ব্যস্ত সময়ে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা একটি সহায়তা বুথ স্থাপন করেন। এখানে স্যালাইন, পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি যেসব ছাত্রী আবাসন সমস্যায় পড়েছেন, তাদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সংস্থার এক সদস্য জানান, তাদের কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে পরিচালিত হয়—দাওয়াত, সংগঠন ও প্রশিক্ষণ এবং কল্যাণ ও সমস্যা সমাধান। ভর্তি পরীক্ষার সময় অসচ্ছল ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বছরের অন্যান্য সময়েও শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা মানবিক উদ্যোগে অংশ নেয় সংস্থাটি।

আরেক সদস্য জানান, ইসলামী জীবনবোধে আলোকিত আদর্শ নারী গড়ে তোলাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মূল লক্ষ্য। ১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় ১৮ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০ সালে এবং আজও তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থী আফরোজ মনি বলেন, “এ ধরনের সহায়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনেক সময় ছাত্রীদের পক্ষে সরাসরি সহায়তা চাইতে দ্বিধা হয়। কিন্তু এখানে আপুরা পাশে থাকায় আমরা সাহস পাচ্ছি। রাতে থাকার ব্যবস্থাও করেছেন তাঁরা, আমাদের প্রতি তাঁদের যত্নশীল আচরণ অনেক স্বস্তি দিয়েছে।”

 

নারী ও পুরুষের মাঝে মর্যাদায় সমতা, কিন্তু দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রে ন্যায্যতা — এটাই ইসলামের নীতি

আঁখি ফেরদৌসী: একটি দেশের জনগণের জন্য যে কোন ধরনের নীতিমালা প্রণয়নে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে ? যে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে তাহলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও কল্যাণ।সে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট,ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সম্মান,সংবিধান ও আইনি কাঠামো যাতে করে সেই মূলনীতির মাধ্যমে যাদের জন‍্য মূলনীতি প্রনয়ন করা হয়েছে তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।

এবার আসা যাক আলোচিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত নারী নীতিমালার বিষয়ে-
একদম শুরুতেই এই নীতিমালার লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে-
‘‍সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম বিলুপ্তি এবং নারী পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’
অর্থাৎ তাদের মূল ফোকাস নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমতা ।
সংক্ষেপে বললে:
‘সমতা’ মানে সবাইকে সব দিক থেকে একরকম করে দেওয়া।
‘ন্যায্যতা’ মানে যার যা প্রাপ্য, উপযোগী এবং যথার্থ — সেই অনুযায়ী অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়া।
মানুষ হিসেবে মানবিক অধিকার আর সামাজিক বা নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামও সমতার কথা বলে। যেমন-
শুরা আহযাবের ৩৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে-
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’‍

সূরা নাহলের ৯৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।’

সূরা তওবা ৭১ নং এ বলা হয়েছে-

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু [১], তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্‌ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

সূরা নিসার ১২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

আর যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যদি সে মুমিন হয়ে থাকে, তবে এরূপ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।

আরো বলা হয়েছে-

“পুরুষদের জন্য যা তারা উপার্জন করে তার প্রতিফল, আর নারীদের জন্যও যা তারা উপার্জন করে তার প্রতিফল।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৩২)

এই আয়াত গুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে,মানুষ হিসেবে পুরুষ ও নারীর আল্লাহর কাছে সমান। তারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হবেন তাদের কাজের ভিত্তিতে, লিঙ্গের ভিত্তিতে নয়।
তাই ইসলামে যেমন সমতা (equality) গুরুত্ব রয়েছে আবার ন্যায্যতা (equity/justice)-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মানে, ইসলামে নারী-পুরুষকে একই রকম সব দায়িত্ব বা অধিকার দেয়নি, বরং তাদের স্বভাব, যোগ্যতা এবং ভূমিকার উপর ভিত্তি করে ন্যায্য অধিকার ও দায়িত্ব বণ্টন করেছে।
যেমন-পুরুষদের উপর পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব ও নারীদের রক্ষা ও সম্মান দেওয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা সমতার বদলে ন্যায্যতার উদাহরণ। কারণ নারী ও পুরুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য এক নয়, তাই তাদের দায়িত্বও স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“নারী শ্রমিকের শ্রম কখনো বিনষ্ট করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।”
(সূরা আলে ইমরান, ৩:১৯৫)

আরো বলেছেন-
“পুরুষরা নারীদের উপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরের বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের অর্থ দিয়ে তাদের রক্ষা করে।”
(সূরা আন-নিসা, ৪:৩৪)
এখানে বোঝানো হয়েছে, পুরুষের উপর পরিবারের নেতৃত্ব ও দায়িত্ব আর্থিক ও শারীরিকভাবে বেশি। নারীর দায়িত্ব প্রধানত পরিবারকে ভালোভাবে রক্ষা করা ও সহযোগিতা করা। এখানে সমতা নয়, বরং ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

ইসলামে ন্যায্যতার নীতি বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রয়োগ হয়েছে তা দেখা যাক-

১. খাদিজা (রা.) মহানবী (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী, নিজে একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন।
তিনি ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে নিজেকে এবং নবীজি (সা.)-কেও সহযোগিতা করেছেন।
কিন্তু তাঁর উপর পরিবার চালানোর পুরুষের দায়িত্ব চাপানো হয়নি। বরং স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন।
তার মানে নারী চাইলে ব্যবসা করতে পারে, কিন্তু পরিবারের ভরণপোষণের মূল দায়িত্ব পুরুষের — এটি ইসলামের ন্যায্যতার নীতি।

২.ফাতিমা (রা.) ঘরের কাজ করতেন, সন্তানদের দেখাশোনা করতেন, এবং ধর্মীয় অনুশাসনে জীবন পরিচালনা করতেন।
স্বামী হযরত আলী (রা.) ঘরের বাইরের কাজ করতেন এবং আর্থিক দায়িত্ব বহন করতেন।
যখন ফাতিমা (রা.) গৃহকর্মে কষ্ট পেতেন, তখন নবীজি (সা.) তাঁকে ধৈর্য ধারণের এবং তাসবীহ তাহলীলের শিক্ষা দিয়েছেন।
অর্থাৎ নারীর আসল দায়িত্ব পরিবার পরিচালনা করা — কিন্তু এটি দাসত্ব নয়, বরং মর্যাদার কাজ তা তুলে ধরা হয়েছে।

৩. উম্মে সালামা (রা.) হুদাইবিয়ার সন্ধি চলাকালে নবীজি (সা.) মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, তখন উম্মে সালামা (রা.) গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেটা নবীজি (সা.) মেনে নেন।
তাঁর বুদ্ধিমত্তা পুরো মুসলিম উম্মাহকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিল। এ ঘটনা থেকে এটাই বুঝা যায় ইসলাম নারীর বুদ্ধিমত্তাকে সম্মান করে এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পরামর্শে নারীর অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়।
৪. হযরত নুসাইবা বিনতে কা’ব (রা.) — উহুদের যুদ্ধে তিনি নবীজি (সা.)-কে রক্ষা করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন।
যদিও নারীদের উপর যুদ্ধ ফরজ ছিল না, তবুও প্রয়োজনে ইসলাম নারীদের সম্মানজনক ভূমিকা রাখতে অনুমতি দিয়েছে।

ইসলাম ন্যায্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব ভাগ করেছে, তবে চরম প্রয়োজনে নারীও সম্মানজনক অবস্থানে থাকতে পারে বলেও স্বীকৃতি দিয়েছে।ন‍্যায‍্যতার ভিত্তিতে দায়িত্বের বন্টন মানে এই নয় যে ইসলামে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বরং তার যোগ্যতা, প্রয়োজন ও স্বভাবের ভিত্তিতে ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে বাস্তবে নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক (complementary), প্রতিদ্বন্দ্বী (competitive) নয়।

 

বান্দরবানে শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বারা নারী শিক্ষিকা লাঞ্ছনার স্বীকার

 

বান্দরবানে পর্দা ও নিকাব পরিধানের কারণে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী শিক্ষিকাকে মৌখিক পরীক্ষার সময় লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, চিংকুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাশরুফা সাঈদী তুন্না প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রাথমিক শিক্ষকদের চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে কক্ষে প্রবেশের পর পর্দা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পর্দা পরিধান করাকে কেন্দ্র করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ধর্মীয় কটাক্ষ ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং হুমকিও দেন যে, পর্দার কারণে অন্য একজন শিক্ষিকাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, কক্ষে উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারাও এই আচরণের কোনো প্রতিবাদ করেননি। উল্লেখ্য, শিক্ষিকা তুন্না একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী, যিনি প্রতিনিয়ত দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। তাঁর স্বামী তাঁর বদলির বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছিলেন বলেও জানা গেছে।

ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানায়। তারা বলেন, এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন নারীর ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অবজ্ঞাই নয়, বরং তা নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বান্দরবান সদরের মুক্তমঞ্চ চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ। বক্তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বান্দরবান প্রতিনিধি আসিফ ইকবাল, হাবিব আল মাহমুদ, মো. হাবিবুল্লাহ আফফান, রুমানা আক্তারসহ স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “স্বাধীন দেশে একজন নারী তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী চলবেন এটাই স্বাভাবিক। সেখানে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যদি এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন, তবে তা পুরো জাতির জন্য লজ্জাজনক।”

ঘটনার তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ও পুনর্গঠনের দাবিতে ইবিতে মানববন্ধন

 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাহার এবং বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন কমিশন গঠনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নারী শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তারা বলেন, বর্তমান কমিশনের সুপারিশে যৌনকর্মীদের পেশাগত স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান কমিশন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে সুপারিশ করেছে। তারা দাবি করেন, ইসলাম নারীকে যে সম্মান দিয়েছে, তা যথেষ্ট এবং সেই অধিকার বাস্তবায়নের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার আরিফা আক্তার বলেন, “এই কমিশনে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই পশ্চিমা ভাবধারায় প্রভাবিত এনজিও-সংশ্লিষ্ট। তারা বৃহত্তর নারী সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধি নন। নতুন করে কমিশন গঠন করে সংস্কারের প্রস্তাব আনা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “কমিশনের কিছু সুপারিশ কোরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং অন্যান্য ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। যা দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।”

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আরও দাবি জানান, ইসলাম অনুযায়ী নারীদের উত্তরাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, তবে ধর্মীয় বিধান পরিবর্তনের নামে কোনো চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার তারা মেনে নেবেন না।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কতিপয় সুপারিশ পেশ করলে তা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ইবিতে এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

 

চোখ ঘষা: স্বস্তির ফাঁদে লুকানো বিপদ!

চোখ চুলকালে আমরা অনেকেই অবচেতনভাবে হাত দিয়ে ঘষে ফেলি। প্রথমদিকে এটি স্বস্তিদায়ক মনে হলেও, নিয়মিত বা জোরে চোখ ঘষার অভ্যাস আমাদের অজান্তেই নানা ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। চোখ শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ, তাই এর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

চোখ ঘষার ফলে কর্নিয়া বা কনজাংটিভার ওপর চাপ পড়ে, যা চোখে খসখসে ভাব, লালচে রঙ ও ঝাঁঝালো অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—নোংরা বা জীবাণুযুক্ত হাতে চোখ ঘষলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া, যারা গ্লুকোমার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে চোখ ঘষা চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়িয়ে অপটিক নার্ভের ক্ষতি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়ের ঝুঁকি তৈরি করে। আবার, নিয়মিত ঘষার ফলে চোখের চারপাশের নরম ত্বকে বলিরেখা বা ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে, যা বয়সের আগেই চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ফেলে।

সবচেয়ে মারাত্মক একটি দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি হলো কর্নিয়ার গঠন বিকৃতি—যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কেরাটোকোনাস বলা হয়। এ অবস্থায় কর্নিয়া পাতলা ও শঙ্কু আকৃতির হয়ে পড়ে, ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায় এবং তা সারাজীবনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে অ্যালার্জি বা ধুলোবালির কারণে চোখে অস্বস্তি হলে, তাৎক্ষণিকভাবে চোখ ঘষার পরিবর্তে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নেওয়া, কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আইড্রপ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। হালকা চাপ দিয়ে চোখ চেপে ধরা বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়াও আরাম পেতে সহায়ক হতে পারে।

চোখে যদি লালভাব, ব্যথা, ঝাপসা দেখা বা চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। স্মরণে রাখা উচিত—চোখের প্রতি অবহেলা মানেই নিজের প্রতি অবহেলা।

সতর্ক থাকুন, চোখের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।

 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: একটি পর্যালোচনা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করছি, এই প্রতিবেদনের একটি পর্যালোচনা জরুরি, যাতে এর গ্রহণযোগ্যতা এবং বাস্তবায়নের দিকগুলো যাচাই করা যায়। প্রায় দুইশো পৃষ্ঠার এই বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে মোট ১৭টি অধ্যায় রয়েছে। এটি প্রণয়ন করা হয়েছে বর্তমান নারী নীতির ভিত্তিতে, এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশও করা হয়েছে।
যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের নিয়ে কাজ করেন, তারা এই প্রতিবেদনের বড় একটি অংশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন বলেই মনে হয়। নারীর উন্নয়ন, মেধার বিকাশ এবং গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপনা—এই বিষয়গুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রতিটি খাতের জন্য কেবল বর্তমান নয়, পরবর্তী সরকারগুলোর করণীয়ও তুলে ধরেছে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয় এবং ভালো পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করে।
তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই প্রতিবেদনকে আরও বিস্তৃত ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।
প্রথমত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পালাবদলের সময় নারীদের সক্রিয় ভূমিকা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। দেশের প্রতিটি স্তরের নারী তখন ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটানোর আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন। এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, তা যেন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং একটি আর্কাইভে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়—এমন একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে শহরাঞ্চলে নারী ও কন্যাশিশুর জন্য সূর্যের আলো, খোলা জায়গায় নিরাপদে হাঁটার সুযোগ এবং প্রাইভেসি সহ শরীরচর্চার ব্যবস্থা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। স্বাস্থ্যকর প্রজন্ম গঠনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ অবহেলিত। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রতিবেদনটিতে থাকা উচিত।
এবার আসা যাক কিছু নির্দিষ্ট সুপারিশে, যেগুলো পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে:
১। ধারা ৩.২.১.১, ১২.৩.১.১ (জ) ও ১২.৩.২.৩-এ যৌনকর্মীদের সুরক্ষা ও শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হলেও, এই পেশায় বাধ্য হয়ে আসা নারীদের সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। এতে করে এই পেশায় থাকা নারীরা যেমন ভবিষ্যতে পুনরায় নিপীড়নের শিকার হতে পারেন, তেমনি আরও নারীদের এই পেশায় ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত যেন তারা সম্মানের সঙ্গে বিকল্প জীবনে ফিরে যেতে পারেন, তাদের সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ নিশ্চিত হয় এবং দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
২। ধারা ৩.২.২.১.২-এ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় মোহরানা আদায় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইসলামী পারিবারিক আইনে মোহরানা বিবাহের সময়ই পরিশোধযোগ্য। এটি বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাই এখানে আইন অনুযায়ী মোহরানা বিবাহের সময়েই আদায়যোগ্য—এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা উচিত এবং তা বাস্তবায়নে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ থাকা দরকার।
৩। ধারা ৩.২.২.১.১১ ও ৩.২.৩.১.১-এ সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব এসেছে, যা আমাদের সমাজের বহুধর্মীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না। এই সুপারিশ CEDAW-এর একটি প্রভাব হতে পারে, তবে আমাদের দেশে প্রতিটি নাগরিক যেন নিজের ধর্ম অনুযায়ী পারিবারিক ও সম্পত্তির অধিকার পায় এবং প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে পারে—এমন সুপারিশ থাকা উচিত।
৪। CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) আন্তর্জাতিকভাবে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার একটি সনদ, যা বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে সংরক্ষণসহ স্বাক্ষর করেছে। সংরক্ষিত ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধারা ২ এবং ধারা ১৬(১)(c), যেগুলো ইসলামী শরীয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, যা অপ্রয়োজনীয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মানসূচক। বরং সনদে স্বাক্ষরকালে যেভাবে এই সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল, সেটি বজায় রেখেই এর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানোর সুপারিশ করা উচিত ছিল।
সবশেষে আমি মনে করি, দেশের শিক্ষিত ও সচেতন নারীদের প্রতিনিধিত্বে একটি নতুন কমিশন গঠন করে এই প্রতিবেদনটি সংশোধন করা জরুরি, যাতে এটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

-মারদিয়া মমতাজ

 

বিয়েতে সম্মতিমূলক সম্পর্ক

এটা সত্যি! বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের শিকার অনেক নারীই হচ্ছেন। এটা ভয়াবহ ধরনের পারিবারিক সহিংসতা। এর ফলে অনেক নারী প্রচণ্ড ট্রমায় পড়ে যান। তবে এটা কি আইন দিয়ে থামানো যাবে?
বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে মামলার সুযোগ থাকলে আরও অনেক মিথ্যা মামলার সুযোগ হয়ে যায়। বরং এর মোকাবেলায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতনতাই বেশি জরুরি।
বিয়ে একজন নারী ও একজন পুরুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক চাহিদাপূরণের সিভিল কন্ট্রাক্ট। বিয়ের মাধ্যমে তারা একে অপরকে শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হবার সম্মতি প্রদান করে। শারীরিক সম্পর্ক সম্পাদনের জন্য হাজবেন্ড ও ওয়াইফ উভয়েরই সম্মতি থাকাটা জরুরি। একজনের সম্মতি আছে, অন্যজনের নেই- এমন হলে হবে না।
বিয়ে এমন একটা জিনিস যেখানে স্বামী বা স্ত্রী কারোই একে অপরের কোনো ক্ষতি করার অধিকার নেই। ইসলামিক দিক থেকে, বিয়ের চুক্তির মাধ্যমেই স্বামী, স্ত্রী একে অপরকে শারীরিকভাবে উপভোগ করার অধিকার দেয়। তাই স্ত্রীর দিক থেকে দায়িত্ব হলো, তার স্বামীর আহবানে সাড়া দেয়া যদি না তার কোনো শারীরিক বা মানসিক এক্সকিউজ থাকে। আর যদি কোনো এক্সকিউজ থাকে, তাহলে স্বামীরও দায়িত্ব তাকে জোরপূর্বক ইন্টিমেসিতে বাধ্য না করা। যদি এই বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, একজনের কষ্ট হচ্ছে তারপরও সেটাকে উপেক্ষা করে আরেকজন তা আদায় করে নিচ্ছেন। তাহলে এটা জুলুমের পর্যায়েই চলে যায় এবং ইসলাম সেটাকে কোনোভাবেই অনুমতি দেয়নি। ইসলাম যে কোনো প্রকার জুলুমকেই হারাম করেছে। সুতরাং ইসলামে বিয়ে পরবর্তী এই জোরাজোরিকে রেইপ বলা যায় না বরং তা হবে একজনের প্রতি আরেকজনের জুলুম।
ফিজিক্যালি আল্লাহ ছেলেদের এবং মেয়েদের আলাদা করে বানিয়েছেন। ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট ছাড়া সরাসরি ফিজিক্যাল ইনভলভমেন্টের কথা অনেক মেয়েই মেনে নিতে পারে না। প্রোপার ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্টের অভাবে অনেক মেয়েরাই ইন্টিমেসির ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড থাকেন না। আবার অনেক মেয়েরা হাজব্যান্ডের ডিমান্ড ফলো করাটাকে একটা ডিউটি হিসেবে পালন করে। যতই টায়ার্ড বা স্ট্রেসড থাকুক না কেন, তাদের মাঝে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকুক বা না থাকুক। এ দুটি অবস্থার কোনোটিই কাম্য নয়। বরং ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়ে তোলার দিকে যত্নবান হওয়াই বেশি প্রয়োজন। স্ত্রীর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনের ক্ষেত্রে তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা এবং তার সম্মতি নেওয়া একজন স্বামীর অবশ্যই দায়িত্ব। আর এটা ধর্মীয় ও মানবিক উভয় দিক থেকেই।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, প্রাপ্তবয়স্ক দুইজন পুরুষ ও নারীর অবশ্যই সম্মতির ভিত্তিতেই বিয়ে হওয়া উচিত। এবং পুরুষ ও নারী উভয়ের উচিত নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের যথাযথ সম্মান করা। অ-সম্মতিমূলক যৌন সম্পর্ক দু’জনের জীবনেই নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে। কারণ যে কোনো বিষয়ে জোর খাটানো তো সহিংসতাই!

-ড. সাজেদা হোমায়রা

 

শুধু পানিতে চাষযোগ্য ৬টি উপকারী ভেষজ গাছ

 

নিত্যদিনের রান্নাঘর কিংবা বারান্দার ছোট্ট এক কোণেও সবুজের ছোঁয়া আনা সম্ভব, শুধুমাত্র কিছু পানিভিত্তিক চাষযোগ্য গাছের মাধ্যমে। এগুলো যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি স্বাস্থ্য ও স্বাদের জন্য দারুণ উপকারী। নিচে এমন ৬টি গাছের পরিচয় দেওয়া হলো—

১. পুদিনা (Mint)
তাজা সুবাসে ভরপুর পুদিনা গ্রীষ্মের হালকা রোদে সহজেই টিকে থাকে। কাণ্ড কেটে পানিতে রাখলেই দ্রুত শিকড় গজায়। পানীয়, সালাদ কিংবা রান্নায় ব্যবহার হয় বহুবিধ।

২. পার্সলে (Parsley)
রান্নার উপকরণে সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর পার্সলে পানিতে রাখার ২–৩ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের করে। এটি সালাদ, স্যুপ ও গার্নিশিংয়ে অনন্য।

৩. রোজমেরি (Rosemary)
মৃদু ঘ্রাণে মন ভোলানো রোজমেরি শুধু রান্না নয়, ঘরের বাতাসেও আনে প্রশান্তি। ডাল পানিতে রেখে আলোয় রাখলেই ধীরে ধীরে শিকড় জন্মায়।

৪. ওরেগানো (Oregano)
ইতালিয়ান রান্নার অঙ্গ হিসেবে পরিচিত এই হার্বটি সহজেই পানিতে শিকড় ছাড়ে। এর সুগন্ধ ও স্বাদ খাবারে নিয়ে আসে এক আলাদা মাত্রা।

৫. গ্রিন অনিয়ন / পেঁয়াজ পাতা (Green Onion)
পেঁয়াজের গোড়া কেটে পানি ভর্তি পাত্রে রাখলে খুব দ্রুতই গজিয়ে ওঠে নতুন পাতা। প্রতিদিন রান্নায় কিংবা সালাদে ব্যবহার উপযোগী।

৬. থাইম (Thyme)
সুগন্ধি এই গাছটি পানিতে রাখলেই অল্পদিনে নতুন শিকড় গজায়। রোস্টেড খাবার কিংবা হালকা চায়ের সঙ্গে এর স্বাদ হয়ে ওঠে অনন্য।

এইসব ছোট ছোট সবুজ গাছ কেবল শোভাই বাড়ায় না, বরং অল্প যত্নে আমাদের জীবনে আনে স্বাদ, সুগন্ধ ও প্রশান্তির ছোঁয়া।

 

নারী উন্নয়ন নাকি সামাজিক বিপর্যয়? বিতর্কে সংস্কার প্রস্তাব

 

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ ১৫টি সুপারিশ জমা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নিকট, যার মধ্যে কয়েকটি সুপারিশ দেশব্যাপী তীব্র বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

কমিশনের দাবি, তারা সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকারের ভিত্তিতে সমতা নিশ্চিত করতে এসব সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। তবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এই সুপারিশকে ইসলামবিরোধী ও সমাজবিধ্বংসী আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সবচেয়ে বিতর্কিত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করা, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, এবং সিডও (CEDAW) সনদের বিতর্কিত ধারাগুলোর সংরক্ষণ প্রত্যাহার,যা মূলত ইসলামী বিধানকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমা নারীবাদী নীতি চাপিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র।
পতিতাবৃত্তিকে ‘শ্রমজীবী পেশা’ হিসেবে স্বীকৃতি, সংসদে ৩০০ নারী আসন সংরক্ষণ এবং ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’-কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব সুপারিশ সমাজে পারিবারিক সম্পর্ককে দ্বন্দ্বের দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতাকে উস্কে দিতে পারে, যা বাঙালি সমাজে প্রচলিত পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহমর্মিতাকে বিপন্ন করবে।

ধর্মীয় নেতাদের মতে, এসব সুপারিশ ইসলামী শরিয়াহ ও সংবিধানে সুরক্ষিত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামি উভয়েই এ প্রস্তাবনায় ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। হেফাজত কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে ৩ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, অন্যদিকে জামায়াত এই প্রতিবেদনকে ‘গর্হিত’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ছাত্রী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে বলে ”সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট যে প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা জমা দেওয়া হয়েছে, তা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। এটি নারী উন্নয়নের নামে একটি মতাদর্শিক ও পশ্চিম-অনুকরণভিত্তিক আগ্রাসন ছাড়া কিছুই নয়।”

ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলছে, কমিশনের সদস্যরা মূলধারার নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন না এবং এই সুপারিশসমূহ গবেষণার ভিত্তিতে নয় বরং একপেশে মতাদর্শিক অবস্থান থেকে করা হয়েছে। ‘নারীপক্ষ’-এর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশনের সুপারিশগুলোকে পশ্চিমা নারীবাদী ভাবধারার অনুকরণ হিসেবে বিবেচনা করছেন সমালোচকরা।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা এসব সুপারিশকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে এগুলো লিফলেট ও বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এমন সংবেদনশীল ও ধর্মীয় মূল্যবোধ-সম্পর্কিত বিষয়ে সামাজিক ঐকমত্য ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে নারী অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও, তা বাস্তব ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে নয়—এমনটাই প্রত্যাশা দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর। নারী উন্নয়নের নামে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সামাজিক কাঠামোতে বিচ্যুতি তৈরি হয়, তবে তা প্রত্যাশিত অগ্রগতির বিপরীতেই গড়াতে পারে।

 

স্বাস্থ্য টিপস:ননস্টিক প্যানে চিরস্থায়ী বিষ!

 

আমরা অনেকেই রান্নার জন্য ননস্টিক প্যান ব্যবহার করি, কারণ এতে তেল কম লাগে এবং পরিষ্কার করাও সহজ। কিন্তু জানেন কি, এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি?
ননস্টিক প্যানে যে টেফলনের প্রলেপ থাকে, তা প্লাস্টিক জাতীয় এক ধরনের পলিমার, যাকে বলা হয় ‘ফরেভার কেমিক্যাল’। এই রাসায়নিক সহজে ভাঙে না, পরিবেশেও বিলীন হয় না, এমনকি শরীরেও থেকে যায় দীর্ঘদিন। একে ‘চিরস্থায়ী বিষ’ বলা হয় এ কারণেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, ননস্টিক প্যানে সামান্য একটি স্ক্র্যাচ থেকেও প্রতি রান্নায় প্রায় ৯ হাজার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাইক্রো-প্লাস্টিক কণা খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। আর যদি প্যানটির প্রলেপ উঠে যায়, তাহলে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২০ লাখ পর্যন্ত!
এই ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে এটি নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
ভয়াবহ ব্যাপার হলো—এক জরিপ অনুযায়ী, ৯৯% আমেরিকানের রক্তেই এই রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তাই যতই সুবিধাজনক হোক, পুরনো বা স্ক্র্যাচ পড়া ননস্টিক প্যান এবং প্লাস্টিক খুন্তি ব্যবহার থেকে এখনই বিরত থাকুন।
সুস্থ থাকতে সাবধান হোন, সচেতন হোন।

উৎস: Science of the Total Environment

 

স্বপ্ন বুনে চলেছেন ইফ্ফাত আলম জেসিকা

একজন নারীর স্বপ্ন কখনো শুধু তাঁর নিজের থাকে না—তা হয়ে ওঠে অনেকের আশ্রয়, আশাবাদ এবং এগিয়ে চলার শক্তি। ইফ্ফাত আলম জেসিকা তেমনই এক স্বপ্নবাজ নারীর নাম, যিনি নিজেকে ছাপিয়ে অন্যদেরও সামনে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছেন।

শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের পাঠ তিনি পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবার বদৌলতে বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্টের নিপাট পরিবেশে। পরিবারে অভ্যাস ছিল সাদামাটা পোশাকে ঈদের আনন্দ খোঁজার, আর সেখানেই গজ কাপড় দিয়ে তৈরি সাধারণ জামা নিজের হাতে সাজিয়ে ভিন্নমাত্রায় তুলে ধরতেন ছোট্ট জেসিকা। তখনই যেন বোনা হতে থাকে সৃষ্টিশীল এক ভবিষ্যতের বীজ।

সাধারণ মধ্যবিত্ত চিন্তার রেলগাড়িতে চড়ে তিনিও একসময় ছোটখাটো একটি চাকরিতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকত সুই-সুতার জগতে। নিজ হাতে বানানো কুশন কভার, ব্লাউজ কিংবা কাপড়ের কারুকাজ—এসবই ছিল তাঁর প্রাণ। একদিন সহকর্মীদের উৎসাহে নিজের কাজের কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলেন, আর সেখান থেকেই খুলে গেল এক নতুন দরজা।

প্রথম অর্ডার, প্রথম আয়, প্রথম বিনিয়োগ—সবকিছুর শুরু যেন এক রঙিন গল্পের মতো। নিজের হাতে তৈরি করা ডিজাইন থেকে জন্ম নেয় ‘সর্বজয়া’ নামের একটি উদ্যোগ। এটি শুধুই একটি ফেসবুক পেজ নয়, বরং নারীদের জন্য আত্মনির্ভরতার এক চলমান কর্মক্ষেত্র। এখন এই উদ্যোগে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জনের মতো নারী। কেউ ওয়ার্কশপে, কেউ ঘরে বসেই।

তবে এ পথটা সহজ ছিল না। পেছনে টানতে চেয়েছে সমাজের পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি, অনুশাসনের চোখরাঙানি আর “নারীর কাজ নয়” ধরনের তির্যক মন্তব্য। কিন্তু জেসিকা হার মানেননি। মা-বাবা, ভাই এবং স্বামীর সমর্থন ছিল তাঁর পাশে। আর ছিল নিজের প্রতি বিশ্বাস—যা তাঁকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে তুলেছে।

আজ ‘সর্বজয়া’ শুধু পণ্য বিক্রির মাধ্যন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার এক পাঠশালা। সৃজনশীল নকশায় তৈরি ব্লাউজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, কুশন কভার—সবকিছুতেই রয়েছে জেসিকার ছাপ। এই উদ্যোগ এখন প্রতি মাসে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছে।

জেসিকার চোখে ভবিষ্যৎ স্পষ্ট—তিনি চান সর্বজয়া একদিন হয়ে উঠুক একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ড, যা স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর সেই ব্র্যান্ডের প্রতিটি সেলাইবাঁধা থাকবে একেকটি নারীর গল্প, সংগ্রাম আর বিজয়ের চিহ্ন।

 

নারী” মানে শুধুই জন্মগত নারী—যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—সমতা আইনের আওতায় “নারী” বলতে শুধুমাত্র জৈবিক অর্থে জন্মগত নারীকেই বোঝানো হবে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারীরা এই সংজ্ঞার আওতায় আসবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই সর্বসম্মত রায় যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকার প্রয়োগে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের ব্যাখ্যার প্রশ্নে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামক নারী অধিকার সংস্থা। তাদের যুক্তি ছিল, কেবল জন্মগত নারীদেরই লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে আদালতের কাছে প্রশ্ন ছিল—২০১০ সালের সমতা আইনে “নারী” ও “লিঙ্গ” শব্দগুলো দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? এটি কি জন্মগত লিঙ্গ, নাকি ২০০৪ সালের জেন্ডার রিকগনিশন আইনে (Gender Recognition Act) উল্লিখিত GRC (Gender Recognition Certificate) সনদধারীদের নতুন লিঙ্গ পরিচয়?

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লর্ড হজ রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আইনে ‘নারী’ ও ‘লিঙ্গ’ শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটিই ছিল আমাদের মূল কাজ।” তিনি জানান, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের সমতা আইনে ‘নারী’ বলতে বোঝানো হয়েছে জৈবিক নারী, এবং ‘লিঙ্গ’ বলতে বোঝানো হয়েছে জন্মগত জৈবিক লিঙ্গ।

তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, এই রায় যেন সমাজের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে দেখা না হয়। বরং এটি কেবল একটি আইনি সংজ্ঞার বিষয়। লর্ড হজ বলেন, “এই রায় ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারকে হ্রাস করছে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানি থেকেও আইন সুরক্ষা দিয়ে থাকে।”

Gender Recognition Certificate (GRC) যুক্তরাজ্যে একটি আইনি দলিল, যা কাউকে তার বর্তমান লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী স্বীকৃতি দেয়। স্কটল্যান্ড সরকার দাবি করে, GRC থাকা মানেই ব্যক্তি তার নতুন লিঙ্গ অনুযায়ী সব ধরনের সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু ফর উইমেন স্কটল্যান্ড পাল্টা যুক্তি দেয়—লিঙ্গ একটি ‘অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা’, যা কোনো আইনি দলিল দিয়ে বদলানো সম্ভব নয়।

রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ড-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, “আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—যে নারীরা তাঁদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন।”
তারা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন—নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান শুধুমাত্র নারীদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।

রায় প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি জানান, স্কটিশ সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে। তারা এখন আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো—যুক্তরাজ্যে সমতা আইনের প্রয়োগে “নারী” শব্দের সংজ্ঞা এখন কেবল জৈবিক নারীকে বোঝাবে, যদিও ট্রান্সজেন্ডারদের আইনগত সুরক্ষা বজায় থাকবে। এটি একদিকে যেমন জন্মগত নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষার বার্তা দেয়, অন্যদিকে সমাজে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে আলোচনার দরজা আরও প্রসারিত করে।

 

বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না

অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন যে তাদের বাচ্চা মোবাইল বা টিভি ছাড়া খেতে চায় না। তবে বাস্তবতা হলো, বাচ্চা নিজে থেকে মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না – এই ধারণা আমরা প্যারেন্টরাই তৈরি করেছি। শিশুরা যা শেখে, সেটি তাদের আশপাশের পরিবেশ ও বড়দের আচরণ দেখে শেখে। আমরা যদি প্রথম থেকেই মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার না করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে দিই, তাহলে শিশুরাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে খেতে শিখবে।

মোবাইলের ওপর নির্ভরতা কোথা থেকে এলো?
১. কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা ও সহজ সমাধানের সন্ধান-
বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারেই মা-বাবা কর্মজীবী। ফলে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নানী, দাদী বা গৃহকর্মীদের ওপর পড়ে। তাদের ধৈর্য্য, শারীরিক সামর্থ্য বা সময় সীমিত থাকে। বাচ্চার খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টার পরিবর্তে স্ক্রিনটাইম সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। এতে বাচ্চা চুপচাপ ভিডিও দেখতে দেখতে খেয়ে ফেলে, আর কেয়ারগিভারের জন্যও কাজ সহজ হয়ে যায়।

২. পরিচ্ছন্নতার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব
বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খায়, যা তাদের শেখারই একটি অংশ। কিন্তু অনেক প্যারেন্ট চান না যে ঘর নোংরা হোক বা বাচ্চা হাতে-মুখে মাখিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুক। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার সুযোগ না দিয়ে মুখে খাবার গুঁজে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলেন। এতে শিশুর নিজে খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, এবং মোবাইল সামনে দিলে সে যান্ত্রিকভাবে খেয়ে নেয়।

শিশু কীভাবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া শিখবে?

১. ধৈর্য ধরুন, শিশু নিজে খেতে শিখবে
শিশুকে খেতে শেখানোর জন্য সময় দিতে হবে। নিচে পাটি বিছিয়ে বা চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে তার সামনে খাবার দিন। সে খাবার ধরবে, মুখে তুলবে, ফেলবে, নোংরা করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন এভাবে চেষ্টা করলে, দেখবেন ২ বছরের মধ্যেই সে নিজে খেতে শিখে গেছে।

২. ক্ষুধা লাগার সুযোগ দিন
যখন শিশুর সত্যিকারের ক্ষুধা লাগবে, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই খেতে চাইবে। মোবাইলের কারণে মনোযোগ নষ্ট হলে শিশুর ক্ষুধাবোধও কমে যায়। তাই খাবারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, এবং তার আগে বা পরে অযথা স্ন্যাকস খেতে দেবেন না।

৩. শিশুর ওজন ঠিক থাকলে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না

অনেক অভিভাবক মনে করেন বাচ্চা কম খাচ্ছে, তাই তারা জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং সে সুস্থ থাকে, তবে কম-বেশি খাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

৪. মোবাইল ছাড়াই মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর উপায় খুঁজুন

যদি কখনো শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো দরকার হয়, তাহলে ভিডিও ছাড়া অন্যান্য উপায় ব্যবহার করুন। যেমন—
তার সামনে ছোট গল্প বলুন,খাওয়ার সময় রঙিন প্লেট-বাটি ব্যবহার করুন, তাকে খেলনা বা বই দিন, যাতে সে নিজে ব্যস্ত থাকে।
মুড়ি বা অন্য শুকনো খাবার দিয়ে গুণতে বা সাজাতে দিন।

সচেতন হোন, শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন
শিশুর স্ক্রিন অ্যাডিকশন মূলত অভিভাবকদের তৈরি করা সমস্যা। শুরু থেকেই যদি নিয়ম মেনে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়, তবে পরে এটি নিয়ে সমস্যা হবে না।

তাই আজ থেকে “বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খায় না” বলা বন্ধ করুন, এবং ধৈর্য ধরে শিশুকে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।

 

সাহসী নারী অ্যাগনোডিস

প্রাচীন গ্রিসে নারীদের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান লালন-পালনের জন্যই উপযুক্ত মনে করা হতো। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এক নারী জন্ম নিয়েছিলেন, যিনি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তার নাম ছিল অ্যাগনোডিস।

অ্যাগনোডিস ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের নিয়ম তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের চুল কেটে, পুরুষের বেশ ধরে তিনি ভর্তি হন আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত মেডিকেল স্কুলে। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে তিনি সেখানে সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র শেখেন এবং একদিন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসেন এথেন্সে।

একদিন রাস্তায় হাঁটার সময় তিনি শুনতে পান এক প্রসূতি নারীর আর্তনাদ। ব্যথায় কাতর সেই নারী কোনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে রাজি ছিলেন না, কারণ তখনকার সমাজে নারীদের পুরুষের স্পর্শ নেওয়া ছিল লজ্জার বিষয়। অ্যাগনোডিস তখন নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন, নিজেকে একজন নারী হিসেবে প্রমাণ করেন এবং সফলভাবে প্রসব করাতে সাহায্য করেন।

এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং নারীরা অ্যাগনোডিসের কাছে ছুটে আসতে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে অ্যাগনোডিস তাদের কষ্ট বুঝতে পারবেন এবং নিরাপদে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এটি পুরুষ চিকিৎসকদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা অভিযোগ করেন, অ্যাগনোডিস একজন পুরুষ, যিনি নারীদের প্রলুব্ধ করছেন।

অ্যাগনোডিসকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। প্রথমে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে তিনি আসলে একজন নারী। কিন্তু সত্য প্রকাশের পরও শাস্তি এড়ানো গেল না। সমাজের নিয়ম ভঙ্গ করে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিদ্রোহ। সেই সব নারীরা, যাদের অ্যাগনোডিস সুস্থ করেছিলেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিচারকদের স্ত্রীরাও সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং ঘোষণা করেন, “যদি অ্যাগনোডিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে আমাদেরও দিতে হবে।”

নারীদের এই ঐক্য ও প্রতিবাদের মুখে বিচারকদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। আইন পরিবর্তন করা হয় এবং তখন থেকে নারীরা নারীদের চিকিৎসা করার অনুমতি পান।

অ্যাগনোডিস ছিলেন গ্রীসের প্রথম নারী চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তার সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্যও।
নারীদের ইতিহাস গড়া কখনোই সহজ ছিল না। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে নিরব সংগ্রাম ও বাধার পাহাড়। কিন্তু যখন এক নারী অন্য নারীর পাশে দাঁড়ায়, তখনই সত্যিকার পরিবর্তন আসে।

এই গল্প শুধু অ্যাগনোডিসের নয়, এটি সমস্ত সাহসী নারীর গল্প—যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সমাজের গোঁড়ামি ভেঙে সামনে এগিয়ে যায় এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
তুমি কি সেই ইতিহাসের অংশ হতে প্রস্তুত?

 

পুদিনা: আপনার দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যকর লাইফ হ্যাক

 

পুদিনা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শুধু তাজা সুগন্ধই দেয় না, বরং এটি আমাদের শরীরের জন্য একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর হেলথ টিপস শেয়ার করা হলো, যা আপনাকে পুদিনা ব্যবহার করে জীবনকে আরও সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করবে।

ত্বকের যত্ন: গরমে ত্বকে ফুসকুড়ি বা জ্বালাপোড়া থাকলে, কিছু পুদিনা পাতা চটকে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করুন। এটি ত্বককে শান্ত করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর: পুদিনা পাতা পানি দিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং দাঁত-মাড়ি থাকবে সুস্থ।

হজমশক্তি বৃদ্ধি: পুদিনা পাতার চা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে। খাবারের পর এক কাপ পুদিনা চা পান করুন।

মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন: পুদিনার পাতার গন্ধ মাথাব্যথা কমাতে এবং মাইগ্রেনের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। নাকের উপরর কিছু পুদিনা পাতা রেখে গভীর শ্বাস নিন।

ক্লান্তি দূরীকরণ: পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ক্লান্তি দ্রুত দূর হবে এবং আপনি চাঙ্গা অনুভব করবেন।

কফ দূর: পুদিনা পাতা, তুলসী, আদা ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে কফ ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

উকুন মুক্ত চুল: পুদিনার শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি উকুন দূর করবে।

শরীর ঠান্ডা রাখা: গরমে পুদিনা পাতা খাওয়া শরীরকে শীতল রাখে এবং জ্বরের উপসর্গ কমায়।

হার্ট সুস্থ রাখে: পুদিনা রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে: পুদিনা পাতা অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

পুদিনার সহজ কিছু ব্যবহার আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। তাই, দৈনন্দিন জীবনে এটি অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর সমাধান।

 

ক্যামেরা হাতে শেষ নিঃশ্বাস: শহীদ ফটোগ্রাফার ফাতিমা হাসুনা

 

আজকের প্রভাতে যখন সূর্য উঠেছে, তখন গাজার আকাশে কেবল ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। সেই ধ্বংসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন এক সাহসিনী—ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা, যিনি শহীদ হয়েছেন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বর বোমা হামলায়। গাজা শহরের নাফাক অঞ্চলে নিজ বাড়িতে চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য।

ফাতিমা হাসুনা শুধু একজন আলোকচিত্রী নন, তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস, গাজার চোখে দেখা সত্যের নির্ভীক ভাষ্যকার। তাঁর হাতে ছিল ক্যামেরা, আর হৃদয়ে প্রতিরোধের আগুন। তাঁর প্রতিটি ছবি একেকটি ভাষ্য, যা দখলদারদের গোলার চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল না।

গাজা যখন আগুনে জ্বলছে, চারপাশে ধ্বংস আর মৃত্যু, তখন ফাতিমা ছুটে যেতেন ঘটনাস্থলে—হাতে ক্যামেরা, চোখে আগ্রহ, হৃদয়ে সাহস। তিনি তুলতেন সেইসব ছবি, যা পৃথিবীর অনেক মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। ধুলায় ঢাকা পথ, কাঁদতে থাকা শিশু, খালি থালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা—এসবের মধ্যেই তিনি দেখাতেন আগ্রাসনের চেহারা।

এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা বলেছিলেন—
“আমি অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছি। আমি কাজ করি হৃদয় দিয়ে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্যে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে!”
“আমার ক্যামেরা আমার অস্ত্র। তারা আমার দেশ ও জনগণকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু আমার চিত্র/ছবিকে পারবেনা।”

এগুলো আজ আর কেবল বাক্য নয়, এখন ইতিহাসের এক একটি স্তম্ভ। ফাতিমার ক্যামেরা আজ নীরব, কিন্তু তাঁর ছবিগুলো আজও কথা বলে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে যে রক্ত ঝরে, তার সাক্ষী হয়ে আছে তাঁর প্রতিটি ক্যাপচার করা মুহূর্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুতে শোক আর শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই লিখেছেন—”ফাতিমার লেন্স থেমে গেলেও, তাঁর তোলা ছবি ইতিহাসের বুক থেকে কেউ মুছতে পারবে না।”
আরো বলা হচ্ছে—
“তিনি ছিলেন গাজার প্রতিরোধের এক নারীচিত্রী, যিনি প্রমাণ করে গেছেন—প্রতিরোধ মানে শুধু অস্ত্র নয়, প্রতিরোধ মানে সত্যের চিত্র তুলে ধরা।”

তিনি বলেছিলেন: “আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। আমি ছবি তুলি, কারণ কেউ তো আছে, যাকে দেখাতে হবে আমাদের উপর কী ঘটছে। কেউ তো আমাদের কান্না শুনবে।”
তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত ছিলেন তার সংগ্রামের ক্যামেরা হাতেই।

আজ তাঁর এই অস্ত্র থেমে গেছে। কিন্তু তাঁর প্রতিরোধ এখন ছবি হয়ে বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে, সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, উম্মাহর চেতনায়।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ তাঁকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিন, জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন।

 

রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সহজ টিপস

 

রান্নাঘর শুধু খাবার তৈরির জায়গা নয়, এটি আমাদের পরিবারের সবার সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই রান্নাঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে চিটচিটে তেল, খাবারের গন্ধ এবং ধুলো-ময়লা জমে রান্নাঘর অস্বাস্থ্যকর হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই রান্নাঘরকে ঝকঝকে রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কিছু কার্যকর টিপস।

১. রান্নাঘরের বেসিন ও সিঙ্ক পরিষ্কার রাখার উপায়
ওয়াশবেসিন বা সিঙ্ক পরিষ্কার করতে খানিকটা কোক বা পেপসি ঢেলে ৫ মিনিট রেখে মুছে ফেলুন, এতে দাগ ও ময়লা সহজে উঠে যাবে।

চুলার আশেপাশে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে মসলিন কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

২. রান্নাঘরের তাক, কেবিনেট ও কাউন্টার পরিষ্কার রাখা
মার্বেল পাথরের কেবিনেট বা কাউন্টার পরিষ্কার করতে খাবার সোডা পানিতে গুলে রাতে লাগিয়ে রাখুন, সকালে সাদা সিরকা মিশ্রিত পানি দিয়ে মুছে ফেলুন।

তেল চিটচিটে তাক বা কাঠের র‍্যাক পরিষ্কার করতে ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে পরিষ্কার করুন।

রান্নাঘরের জানালা বা বারান্দার গ্রিল পরিষ্কার করতে কেরোসিন ও সরিষার তেল মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে লাগিয়ে দিন, এতে জং ধরা রোধ হবে।

৩. হাঁড়ি-পাতিল ও বাসনকোসন পরিষ্কার করার কৌশল
পোড়া দাগযুক্ত হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করতে সিরিষ কাগজে গুঁড়া সাবান লাগিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

পুরোনো হাঁড়ি থেকে তেল কালির দাগ তোলার জন্য চা পাতা বা কফি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন।

চিনেমাটির পাত্রের দাগ লবণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে সহজেই দূর হবে।

বাসনকোসনে কষ লাগলে টক দই বা দুধের সর দিয়ে ঘষে ধুলে দাগ চলে যাবে।

৪. রান্নাঘরের দুর্গন্ধ ও পোকামাকড় দূর করার উপায়
রান্নাঘরে পোড়া গন্ধ বা অন্যান্য দুর্গন্ধ দূর করতে কিছুটা সিরকা চুলায় দিয়ে শুকানো অবধি জ্বাল দিন।

মশা, মাছি ও পিঁপড়ার উপদ্রব কমাতে ঘর মোছার পানিতে সামান্য ডিজেল মিশিয়ে নিন।

এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করলে রান্নাঘর শুধু ঝকঝকে ও পরিপাটি থাকবে না, বরং জীবাণুমুক্ত ও স্বাস্থ্যকরও থাকবে!

 

শিশুরা কি জন্মগতভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী? গবেষণার দুই মেরু দৃষ্টিভঙ্গি

 

মানুষ জন্মগতভাবে বিশ্বাসী—এটা তো আমরা অনেকেই জানি বা মানি। তবে প্রশ্ন হলো, “মানব শিশু কি জন্মগতভাবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী?” এই দাবি একজন বিশিষ্ট গবেষকের—অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক জাস্টিন এল. ব্যারেট। উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও নানা রকম মানসিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তিনি দাবি করেন, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই কোনো এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। এই দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতেই তিনি লিখেছেন Born Believers নামের বইটি (২০১২), যেখানে তাঁর ও সহ-গবেষক নিকোলা নাইটের কাজের সারাংশ তুলে ধরা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের একটি ডকুমেন্টারিতে ব্যারেট বলেন, শিশুরা যখন বেড়ে ওঠে, তখন তারা চারপাশের জগতের জটিলতাকে দেখে মনে করে—এসব কিছু নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরি করেছেন। এটা যেন তাদের মস্তিষ্কের একটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি, যেটা পরিবেশের ওপর নির্ভর করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় তিন বছর বয়স থেকেই শিশুরা অতিপ্রাকৃত কোনো সত্ত্বার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে শুরু করে। সূর্য দেবতা, প্রকৃতির আত্মা, এমনকি ঈশ্বরের ধারণা—এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নানা সংস্কৃতিতে একরকম রয়ে যায়। তবে তারা বড়দের মতো একমাত্রিক বা ধর্মবিশেষভিত্তিক ভাবনায় আটকে থাকে না। বরং তারা এসব সত্ত্বাকে “সবজান্তা” বা অত্যন্ত জ্ঞানী হিসেবে দেখে।

জাস্টিন ব্যারেট মনে করেন, শিশুরা জন্ম থেকেই ‘ক্রিয়েটর’ বা ‘সৃষ্টিকর্তা’র ধারণা ধারণ করতে প্রস্তুত থাকে। তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি আগে থেকেই থাকে, কেবল বড় হয়ে সেই বিশ্বাসে ধর্মীয় কাঠামো বা সংস্কৃতির ছোঁয়া পড়ে।

তবে, এই দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে রয়েছে আরেকটি গবেষণা। ”Genius Science” নামের একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীর জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়—শিশুদের অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস মূলত শেখানো জিনিস। ক্যাথলিন করিভিউ নামের এক গবেষক এবং তার দল ৬৬ জন শিশুর উপর তিন ধরনের গল্পের ভিত্তিতে পরীক্ষা চালান—ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং রহস্যভিত্তিক।

গবেষণায় দেখা যায়, ঐতিহাসিক গল্পগুলোকে প্রায় সব শিশুই সত্য হিসেবে নিয়েছে। তবে ধর্মীয় গল্পে পার্থক্য দেখা গেছে—যারা ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে সত্য ধরে নিয়েছে; অন্যদিকে যারা ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা সেগুলোকে রূপকথা বলেই মনে করেছে। রহস্যমূলক গল্পেও এমনই পার্থক্য দেখা গেছে।
ক্যাথলিন করিভিউর মতে, ধর্মীয় গল্প ও বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা আলাদা করতে তুলনামূলকভাবে কম সক্ষম হয়। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন—এটা যে ক্ষতিকর, এমনটা নয়। বরং বাস্তববাদী জ্ঞান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস—দুটোই একসাথে শেখানো দরকার।
এই প্রসঙ্গে ব্যারেটের প্রতিক্রিয়া ছিলো, “ধর্মনিরপেক্ষ শিশুদের আচরণই বরং অস্বাভাবিক।” তিনি মনে করেন, করিভিউর গবেষণাটি ম্যাসাচুসেটসের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ এলাকায় পরিচালিত হওয়ায় সেখানকার শিশুদের ফলাফলকে সাধারণ শিশুদের মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা ঠিক নয়।

তবে এক জায়গায় দুজন গবেষকই একমত—শিশুদের চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠার পেছনে পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে।

এই দুই গবেষকের বক্তব্য এবং গবেষণালব্ধ প্রমাণ পড়ার পর আমার কাছে যেটা স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো—শিশুরা একদিকে যেমন শোষণক্ষম, অন্যদিকে কিছু কিছু ধারণা তারা যেন জন্মগতভাবেই ধারণ করে। ব্যারেটের মতে, শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে একজন সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর করিভিউর গবেষণা বলছে—এই বিশ্বাস আসলে শেখানো হয়।

আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো, শিশুদের মন একদম খোলা মাঠের মতো। সেখানে তারা যা দেখে, যা শোনে, তাই থেকে বিশ্বাস গড়ে তোলে। তারা কল্পনা করে, প্রশ্ন করে, শেখে—আর এই শেখার উৎস যদি হয় যুক্তি বা বাস্তবতা, কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস—তবে তার প্রভাব পড়বেই।
তাই হয়তো বলা যায়, শিশুরা জন্ম থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিশ্বাস নিয়ে আসে না, তবে তারা বিশ্বাস গড়তে সক্ষম একেকটি সম্ভাবনাময় চিন্তাশক্তির ধারক। তাদের সামনে বাস্তবতা, কল্পনা, ধর্ম এবং যুক্তি—সব কিছুরই পরিসর খুলে দিতে হবে, যেন তারা নিজের মতো করে বুঝে নিতে পারে কোনটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে।

আরওয়া আনাম

 

জান্নাতুল ফেরদৌসের সাহসী উদ্যোগ: পরিবেশবান্ধব ক্যাফে ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন

 

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় গেলে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য চোখে পড়বে। প্রধান সড়কের পাশে একটি দালানের দ্বিতীয় তলার ছাদ যেন এক সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। গাছপালায় ঘেরা এই ছাদে রয়েছে একটি ক্যাফে, যার নাম “ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস”। এটি শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়; বরং এটি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন এক তরুণ উদ্যোক্তা—জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট যেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎনির্ভর, সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস একটি ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর ক্যাফের রান্নাঘর, আলোকসজ্জা এবং এমনকি কফি মেশিন পর্যন্ত চলে সৌরবিদ্যুতে। ছাদে বসানো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ক্যাফেটি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে আনে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ওরেন্ডা অ্যান্ড বিনস শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায়ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করেছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, খাবার পরিবেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং সচেতন নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি জায়গাও তৈরি করেছে।

শুধু একটি ব্যবসা গড়ে তোলাই জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য নয়। তিনি তাঁর ক্যাফের লভ্যাংশের একটি অংশ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষা সহায়তা, নারীদের ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।
জান্নাতুলের এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর লন্ডনপ্রবাসী বড় ভাই মঞ্জুর মিয়া। বিদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দেখে তিনি জান্নাতুলকে এই বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর জান্নাতুল গবেষণা ও পরিকল্পনা করে তাঁর এই ক্যাফে বাস্তবায়ন করেন।

বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক করছেন। তবে তার অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত—গত ৯ বছর ধরে তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের লক্ষ্য কেবল নিজে সফল হওয়া নয়; তিনি চান, বাংলাদেশের নারীরা আরও বেশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তিনি মনে করেন, নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে তাদেরকে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সমাজকে তাদের এই পথচলায় সহযোগিতা করতে হবে।
ভবিষ্যতে তিনি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে নারীরা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে পারবেন। তার বিশ্বাস, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও প্রয়োজন। শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না; বরং টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন এবং সচেতন জীবনধারার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

শিশুদের জন্য বিপজ্জনক একজিমা হারপেটিকাম

 

শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও আদর দেখানো আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এই অভ্যস্ত আচরণ কখনো কখনো শিশুদের জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে। একজিমা হারপেটিকাম (Eczema Herpeticum) নামক একটি ভয়ানক ভাইরাস বিশেষভাবে শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে থাকা হারপেস ভাইরাসের মাধ্যমে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ শিশুদের জীবনের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এবং এর উপসর্গগুলো যদি দ্রুত সনাক্ত না করা হয়, তবে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম: কি এবং কেন বিপজ্জনক?
একজিমা হারপেটিকাম একটি অত্যন্ত গুরুতর ভাইরাস যা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকতে পারে। অধিকাংশ মানুষ জানেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস থাকতে পারে। এই ভাইরাসের উপস্থিতি কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকতে পারে, এবং একসময় চুমু বা শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি শিশুদের মধ্যে প্রবেশ করে। শিশুর শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে, তা তাদের ত্বকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা ফুলে ওঠা লাল দাগ, ফোসকা, এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
একজিমা হারপেটিকামের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ যদি অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হয় তবে শিশুদের শরীরে ক্ষতি সাধন করতে পারে, বিশেষত মস্তিষ্ক বা চোখের মধ্যে, যা পরবর্তীতে স্থায়ী অঙ্গগত ক্ষতি হতে পারে।

একজিমা হারপেটিকাম সাধারণত চুমু দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্করা জানতেও পারেন না যে তাদের শরীরে হারপেস ভাইরাস আছে, এবং তারা সন্তানের প্রতি স্নেহ বা আদর দেখাতে গিয়ে unknowingly ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশ করাতে পারেন।

মেডিকেল বিজ্ঞানের মতে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চুমু এবং নিকট শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঘটে।

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার উপায়
মেডিকেল বিজ্ঞান এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, তবে আমাদের কয়েকটি সোজাসুজি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, অন্যের শিশুকে চুমু দেওয়া বা অযথা শারীরিক যোগাযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষত যদি আপনি জানেন যে আপনার শরীরে কোনো ভাইরাস বা সংক্রমণ থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শিশুদের যদি কোনো অস্বাভাবিক দাগ, লালতা বা ফোসকা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

একজিমা হারপেটিকাম বা অন্যান্য ভাইরাস শিশুদের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং এর প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর প্রতি ভালোবাসা এবং আদরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার বিষয়টিকে আমাদের কখনো অবহেলা করা উচিত নয়।

সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন এবং আপনার শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

 

মার্কিন পুরস্কার প্রত্যাখ্যানে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেলেন উমামা

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা উমামা ফাতিমাকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর অটল অবস্থানের জন্য তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষিত ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (IWOC) অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানানোর পর, সেই সাহসী অবস্থানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

গত শনিবার (২৯ মার্চ) রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারী শিক্ষার্থীদের সম্মিলিতভাবে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

উমামা ফাতেমা বলেন, “ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন জানানো এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে এই পুরস্কারটি বিতরণ করা হচ্ছে। যা এই পুরস্কারের নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই আমি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছি।”

এই সাহসী সিদ্ধান্ত ও নৈতিক অবস্থানের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন উমামা ফাতেমা। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণ ও বিভিন্ন প্রবাসী ফিলিস্তিনি সংগঠন তার এই অবস্থানকে সাহসিকতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে “ভয়হীন সংহতির কণ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সেই সঙ্গে তাকে একটি সম্মাননা স্মারকও প্রদান করা হয়, যা রামাল্লায় অবস্থিত ফিলিস্তিন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন অনেকেই নীরব , তখন উমামা ফাতেমার মতো একজন তরুণীর পক্ষে থেকে এমন অবস্থান আমাদের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা দেয়। তিনি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন, তিনি আমাদের কণ্ঠও।”

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ’ পুরস্কার দিয়ে আসছে এবং ২০২৩ সাল থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’। ২০২৫ সালে এই গ্রুপ অ্যাওয়ার্ডটি বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাহসী নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।

তবে উমামা ফাতেমার নৈতিক অবস্থান এই সম্মাননাকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।

 

গুঁড়া তেলাপোকা দূর করার ৫টি কার্যকরী উপায়

 

গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব অনেকের জন্যই বিরক্তিকর। তবে কিছু ঘরোয়া ও কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে ৫টি সহজ ও কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো—

১. বোরিক অ্যাসিড ও চিনি মিশ্রণ
এক চা-চামচ বোরিক অ্যাসিড, চিনি ও আটা মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করুন।

তেলাপোকার লুকিয়ে থাকার জায়গায় রাখুন।

এটি খেলে তেলাপোকা ধ্বংস হয়ে যাবে।

২. বেকিং সোডা ও চিনি ব্যবহার করুন
সমান পরিমাণ বেকিং সোডা ও চিনি মিশিয়ে তেলাপোকার চলাচলের স্থানে ছিটিয়ে দিন।

চিনি তেলাপোকাকে আকৃষ্ট করবে, আর বেকিং সোডা খেলে তারা মারা যাবে।

৩. লবণ ও ভিনেগার স্প্রে করুন
এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ লবণ ও দুই চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন।

তেলাপোকা দেখলেই সরাসরি এটি স্প্রে করুন, দ্রুত প্রভাব পড়বে।

৪. ঘর পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
রান্নাঘর ও বাথরুম সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন।

খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা দ্রুত পরিষ্কার করুন।

তেলাপোকার লুকানোর সম্ভাব্য স্থান, যেমন ক্যাবিনেট ও সিঙ্কের নিচের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

৫. ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার ব্যবহার
তেলাপোকা ল্যাভেন্ডার ও পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

তেলাপোকার চলাচলের স্থানে পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার পাতা রাখুন।

পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার তেলের কয়েক ফোঁটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলেও ভালো ফল পাবেন।

উপরের উপায়গুলো নিয়মিত কাজে লাগালে সহজেই গুঁড়া তেলাপোকার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী: নারীর কণ্ঠে গাজার মুক্তির ডাক

 

ঢাকার রাজপথ যেন সেদিন রূপ নিয়েছিল গাজা উপত্যকার প্রতিচ্ছবিতে। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান—চারপাশে ছিল ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিরোধের আগুন। শত সহস্র মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল অবিচারের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ। সেই স্বরলিপিতে নারীর কণ্ঠ ছিল অনস্বীকার্য ও দৃঢ়—মমতার মাটি থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের উচ্চারণ, যেখানে প্রতিটি পা যেন গাজায় নিহত এক শিশুর জন্য ন্যায়ের দাবি হয়ে গর্জে উঠেছে।
২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নেন। শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সমাবেশে নারী-পুরুষের কণ্ঠ এক হয়ে উচ্চারিত হয়েছে: “ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে আছি”।

ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ এমনকি নারায়ণগঞ্জের মদনপুর বা কেরানীগঞ্জ থেকেও নারীরা যোগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা—সবাই একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে।
মনিকা নামের এক নার্সিং শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যত দূরেই থাকি, গাজার জন্য এই মুহূর্তে পাশে থাকা মানেই প্রতিবাদ।” নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ৬১ বছরের শান্তা বেগম বললেন, “ফোনে ইউটিউবে দেখে জানলাম গাজার কথা, তাই এসেছি।”
প্রকৌশলী সোনিয়া খান প্রশ্ন তুলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে চুপ থাকা মানেই তা সমর্থন করা।” কেরানীগঞ্জের শিক্ষক মাবিয়া আক্তার জানান, “আমরা বাংলাদেশি নারীরাও মুসলিম উম্মাহর পাশে আছি।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের নারীদের কান্না ও শিশুদের নিথর দেহ দেখে অনেকেই আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি।

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত এ সমাবেশে নারীদের দৃপ্ত অংশগ্রহণ জানিয়ে দিল—তারা শুধু ঘরের নয়,মানবতার প্রশ্নে তারা সদা সবখানে জাগ্রত।
সোহরাওয়ার্দীর প্রান্তর সাক্ষী হয়ে রইল সেই অঙ্গীকারের—মানবতার বিরুদ্ধে কোনো জুলুম মেনে নেবে না এ প্রজন্ম।
আর গাজার ধ্বংসস্তূপের গায়ে হয়তো একদিন এই কণ্ঠগুলোর প্রতিধ্বনি পৌঁছে যাবে, জানিয়ে দেবে—তারা একা ছিল না। অস্ত্র নয়, ভালোবাসা ও প্রতিবাদের ভাষা নিয়েই
বাংলাদেশের নারীরাও তাদের পাশে ছিল।

 

ধর্ষণ আইন সংশোধন: বলাৎকারও ধর্ষণের আওতায়, অর্থদণ্ড বাড়ানো হলো

 

সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যেখানে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলাৎকারকেও ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার বিধান করা হয়েছে।

নতুন আইনে বলাৎকারকেও ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার ফলে নারী, শিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুর ক্ষেত্রেও এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, যা পূর্বে ছিল ৬০ কার্যদিবস। প্রয়োজনে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া যেতে পারে। বিচার কার্যক্রম অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

ধর্ষণের শাস্তি পূর্বের মতোই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড থাকবে। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে আগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হতো, যা বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে নারী বা শিশুকে হত্যা বা বিকৃত করার অপরাধে অর্থদণ্ড ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুকে মারাত্মক জখম করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, কারো ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিতে পারবে এবং শাস্তি দিতে পারবে। এই অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।
শিশু ধর্ষণের মামলার জন্য প্রতি জেলায় ও মহানগরে পৃথক শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

যৌতুকের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আওতার বাইরে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, নতুন আইনে বলাৎকারকে ধর্ষণের আওতায় আনা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “অর্থদণ্ড বাড়ানোর ফলে সাজা কার্যকর হওয়ার হার কমে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া জামিনের সুযোগ নিয়ে আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে, যা বিচারের কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।”
এই সংশোধনী আইন বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কঠোর ও দ্রুত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই এর সফলতা নিশ্চিত করবে।

 

তালবিনা: শরীর ও মনের প্রশান্তির এক পরিপূর্ণ খাবার

 

আধুনিক জীবনের ক্লান্তি, মানসিক চাপ আর শরীরের দুর্বলতার মাঝে আমরা অনেকেই খুঁজে ফিরি এমন কিছু—যা প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর এবং একইসাথে আত্মার প্রশান্তিও দেয়। ঠিক এমন একটি উপকারী খাবার হচ্ছে তালবিনা। এটি এমন এক খাবার, যা শুধু শরীরকে নয়, মনের অস্থিরতাকেও প্রশমিত করে।
তালবিনা হল যবের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একধরনের তরল খাবার, যা ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে এসেছে,
“তালবিনা রোগীর মনকে প্রশান্ত করে এবং তাকে শক্তি জোগায়।” — (সহীহ বুখারী)

এই একটি হাদীস থেকেই বোঝা যায় তালবিনার গুরুত্ব কতটা গভীর। তালবিনা এমন এক খাবার, যা শরীরকে দেয় প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি, আর মনকে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। এটি হজমে সহায়ক, পেটের সমস্যা দূর করে এবং মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।

তালবিনা তৈরির সহজ রেসিপি
তালবিনা বানানোর ঘরোয়া ও সহজ রেসিপি:

উপকরণ
যবের গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
দুধ – ১ কাপ (চাইলে পানি বা দুধ-পানির মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে)
মধু – ১ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
খেজুর কুচি – ২-৩টি (ঐচ্ছিক)
ছোট এলাচ – ১টি (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালি:
একটি হাঁড়িতে যবের গুঁড়া ও দুধ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে
অল্প আঁচে রান্না করতে থাকুন। চামচ দিয়ে ঘনঘন নাড়তে থাকুন যেন নিচে লেগে না যায়।
মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে খেজুর কুচি ও এলাচ দিন।প্রাকৃতিক সুগন্ধ ও মিষ্টতা পেতে রান্না শেষে মধু মিশিয়ে দিন।

গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। চাইলে উপরে কিছু বাদাম কুচি বা কিশমিশ ছিটিয়ে নিতে পারেন।

কেন তালবিনা খাবেন?
তালবিনা শুধু অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নয়, বরং প্রতিদিনকার সুস্থ জীবনের জন্যও এক অসাধারণ খাবার। এটি শিশু, বয়স্ক, নারী বা পুরুষ—সবার জন্য উপযোগী। নিয়মিত খেলে হজমশক্তি বাড়ে, মন ভালো থাকে এবং শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়।
আপনি কি আজ থেকেই তালবিনাকে আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে প্রস্তুত?

 

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ: রাষ্ট্রীয় দায় ও করণীয়

বাংলাদেশ উন্নয়নের এক ক্রমবর্ধমান পথে হাঁটছে—এই কথা আমরা প্রতিদিন শুনি, দেখি, পড়ি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৪ সালের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ সমতায় শীর্ষে এবং বৈশ্বিকভাবে ৯৯তম অবস্থানে রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। তবে এই অগ্রগতি ও অর্জনের গর্বের মাঝেই রয়ে গেছে কিছু গোপন, কষ্টকর ও ভয়াবহ প্রশ্ন—এই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীরা কোথায়? তাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা কি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পেরেছে?

বছরের শুরু থেকে বছরের শেষে, ধর্ষণের পরিসংখ্যান প্রতিদিনের সংবাদের এক করুণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪০১ জন নারী ও শিশু। শুধু জানুয়ারি মাসেই সংখ্যা ছিল ৩৯, আর ফেব্রুয়ারিতে ৪৮। এটি নিছক সংখ্যা নয়—প্রতিদিন ঘটে যাওয়া যন্ত্রণার দলিল। প্রতিটি ঘটনায় কেঁপে উঠে একটি জীবন, একটি পরিবার। সমাজে ধর্ষণ এখন এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই আর বিস্মিতও হন না—এটা যেন এক ভয়ানক সহনশীলতা তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা গেছে কিছুটা পরিবর্তন। দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। বিভিন্ন সংগঠন সংস্কারের কথা বলছে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে যারা সম্ভাবনার কথা বলছে, বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে নারী কি সেই স্বপ্নের অংশ হতে পেরেছে? যৌন সহিংসতা, নারী নিপীড়নের হার কি কমেছে? নারীর নিরাপত্তাবোধ কি বেড়েছে? বরং প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা ও খবরে তার বিপরীতটাই প্রমাণ হয়। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এখন শুধু ঘর-বাড়ি বা রাস্তায় নয়, ভার্চুয়াল জগতেও নারীর অস্তিত্বকে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভিউ বাড়ানো’ বা ‘ট্রেন্ডিং’ হওয়ার নামে যেসব ভিডিও তৈরি হয়, তার অনেকগুলোতেই নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্বেষপূর্ণ উপস্থাপন রয়েছে। সেইসঙ্গে ততাকথিত ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলেও নারীকে বস্তু হিসেবে বর্ণনা করে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়, তা শোনে কিশোর-তরুণরা বেড়ে উঠছে একটি ভিন্ন মনস্তত্ত্ব নিয়ে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিয়ন্ত্রণে কতটুকু সক্রিয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই সমাজে নারী বিদ্বেষ এখন আর গোপন নয়—তা আজ প্রতিষ্ঠিত, স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ধর্ষণ, নিপীড়ন এখন আর লজ্জাজনক বিষয় নয়—বরং ক্ষমতার প্রকাশের এক নোংরা উপায়।

এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন যেন ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘নারী নিপীড়ন’ বলা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—একটি ভয়াবহ অপরাধকে শব্দচয়নের মাধ্যমে কীভাবে হালকা করে দেখানো যায়? ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ, এবং একে তার প্রকৃত নামে ডাকা উচিত। শব্দের রাজনীতি দিয়ে অপরাধের ভয়াবহতা ঢেকে রাখা যায় না।

এই ক্রমাগত সহিংসতা রোধে শুধু আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন পরিবারে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শিশুরা নির্ভয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে। শিশুদের জানাতে হবে কীভাবে তারা যৌন সহিংসতার শিকার হতে পারে, কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, শিশুদের এসব শেখানো কি ঠিক? কিন্তু বাস্তবতা হলো ধর্ষক কিন্তু কখনো শিশুর বয়স দেখে থামে না। তাই এই লড়াইয়ে শিশুদের অন্ধকারে রাখা মানে তাদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া।

নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। শুধুমাত্র আইন ও পুলিশ দিয়ে এই ব্যাধিকে দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমাজে নারীর অবস্থান, মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে নতুন চিন্তা, শিক্ষা ও সচেতনতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, গণমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সবকিছুর সমন্বয়ে নারীর মর্যাদার পক্ষে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি।

এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তাদের নিজ নিজ আদর্শিক অবস্থান থেকে নারীর অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আন্তর্জাতিক লিঙ্গসমতার মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে, আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা আজ এমন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে উন্নয়নকে সত্যিকার অর্থে টেকসই করতে হলে নারীকে নিরাপদ করতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হয় না, যদি সেই রাষ্ট্রের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
বিশ্বাস রাখতে চাই, রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে। ধর্ম, গোষ্ঠী, পেশা বা অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী প্রতিটি নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

 

নারী অধিকার আন্দোলনের ঈদ পূনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান

ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিমদের জন্য অন‍্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।কিন্তু পবিত্র রমজানে গাজাবাসীদের প্রতি ইজরায়েলের হামলা আর শিশু হত‍্যা ঈদের আনন্দকে বেদনায় পরিনত করেছে।আমরা গভীর সমবেদনার সাথে মুসলিম ভাই বোনদের স্মরণ করছি-
৯ এপ্রিল, বুধবার নারী অধিকার আন্দোলন কতৃক আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদ্র জন‍ দোয়া অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মাননান।গুলশানে আয়োজিত উক্ত ঈদ পুনর্মিলনী ও গাজাবাসীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে
অন‍্যান‍্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন-
নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম, নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার, নারী অধিকার আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি ডা.তাহেরা বেগম,সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী প্রফেসর শামীমা তাসনিম,সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা বকুল।
দেশীকের প্রিন্সিপাল নুরুন্নিসা সিদ্দিকা প্রমুখ।
নুরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেন-
মসজিদুল আকসা আমাদের জন‍্য ঐতিহাসিক মসজিদ। তিনটি মসজিদকে কেন্দ্র করে ভ্রমন করা যায়। তা হলো- মসজিদুল হারাম, মসজিদুননবীও আকসা।
মসজিদুল আকসার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। আর এ পরীক্ষায় ঈমানদাররাই বিজয়ী হবে।
তাই আমাদের সার্বক্ষণিক দোয়া ও গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে ঈমানের হক আদায় করতে হবে।

নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী নাঈমা মোয়াজ্জেম হাদীসের সর্কতবনী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ আল্লাহর ক্ষমা হাসিল করতে পারল না তার উপর আল্লাহর লানত। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন আল্লাহর লানতের মধ্যে না পড়ে যায় কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর লানতের মধ্যে পড়ে যাবে তার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়েই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।সুতরাং আমাদেরকে রমজান পরবর্তী জীবন আচরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে রমজানের শিক্ষা আমরা বাকি এগারো মাস মেনে চলতে পারি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সভানেত্রী শামীমা তাসনিম বলেন আমাদেরকে চিন্তা করে দেখতে হবে কেন ফিলিস্তিনে আজ এই অবস্থা। আমরা মুসলমানরা আমাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়েছি তাই আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করছেন। আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়েছি এবং দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে এবং দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সেক্রেটারি ফেরদৌস আর বকুল ফিলিস্তিনের শিশুদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন ।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মানারাত স্কুলের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মুশফেকা রহমান, নারী উদ্যোক্তা হাবিব হাসনাত চৌধুরী, অন্বেষণ স্কুলের সাবেক প্রিন্সিপাল শিউলি খান,বেগম শারমিন সিদ্দিকী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী আফিফা মুশতারী।

ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অধিবাসী এবং যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য আবেগঘন পরিবেশে দোয়া পরিচালনা করেন ডাক্তার আমেনা বেগম।

সবশেষে নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও দোয়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

 

গণপরিবহনে নারীর সুরক্ষায় চালু হলো ‘HELP’ অ্যাপ

 

নারীর সুরক্ষায় প্রযুক্তির আরেকটি অগ্রগতি—‘HELP’ (Harassment Elimination Literacy Program) নামে একটি অ্যাপ চালু হয়েছে যা গণপরিবহনে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (BJC) এবং সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই অ্যাপের মাধ্যমে নারী যাত্রীরা চলন্ত বাস বা গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারবেন এবং অভিযোগ জানাতে পারবেন।

গত ১৫ মার্চ রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “অনেক সময় ভুক্তভোগীরা নিপীড়নের ঘটনা জানাতে দ্বিধা বোধ করেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে আসা অভিযোগগুলো এখন থেকে সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “একজন নারী নিপীড়নের শিকার হলে, শুধু সেই নারী নয়—পুরো সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

এই অ্যাপটি প্রাথমিকভাবে ঢাকার বছিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলেও, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে নারী যাত্রীরা এর সেবা নিতে পারবেন।
নারীর নিরাপত্তায় এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী। আশা করা যায়, এই অ্যাপ নারীদের চলাফেরায় নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

 

গাজার সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা হুসাইনি

যুদ্ধের ধুলোবালিতে ঢাকা এক জনপদ, যেখানে প্রতিদিন সূর্য ওঠে ধ্বংসস্তূপের ওপরে, যেখানে শিশুর কান্না মিশে যায় বোমার বিস্ফোরণে, যেখানে জীবন মানে এক অনিশ্চিত অপেক্ষা। গাজার সেই অগ্নিগর্ভ মাটিতে, ভয় আর মৃত্যুর মাঝেও কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন সত্যের জন্য। তাদের হাতেই রচিত হয় ইতিহাসের সেই অধ্যায়, যা দুনিয়ার শক্তিমানরা মুছে ফেলতে চায় বারবার।
এমনই এক সাহসি কণ্ঠস্বর মাহা নাজিহ আল হুসাইনি—একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, একজন
মানবাধিকার কর্মী, এক অকুতোভয় কণ্ঠস্বর, যিনি ভয়কে জয় করে বারবার বলেছেন, “আমার কণ্ঠ যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, তোমরা চুপ থেকো না!”

মাহা নাজিহ আল হুসাইনি একজন সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংবাদ প্রচার করে আসছেন। জন্ম কায়রোতে হলেও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি হামলার সময় থেকে তিনি গাজার ঘটনাবলী কভার করতে শুরু করেন। তার বিশ্বাস, সংবাদ দেখা বা না দেখার ওপর যুদ্ধ থামা-না থামার কোনো সম্পর্ক নেই, বরং সাংবাদিকদের দমন করেই ইসরায়েল গাজার সত্য ঘটনাগুলো আড়াল করতে চায়।

সংবাদ মাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে মাহা সচেতন। তিনি জানেন, যে কোনো শাসকগোষ্ঠী খবর ধামাচাপা দিতে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংবাদ পরিবেশনার ঝুঁকি নেওয়া একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ‘মিডল ইস্ট আই’ ও ‘দ্য নিউ হিউম্যানিটেরিয়ান’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন এবং ‘ইউরো মেড মনিটর’-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

নারী সাংবাদিকদের ভূমিকা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বজুড়ে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও, আন্দোলনের পর তাদের ভূমিকা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে। মাহাও ব্যতিক্রম নন। তিনি মার্টিন এডলার পুরস্কার পেয়েছিলেন, আবার ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন সাহসী সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেও তা বাতিল করে, কারণ তার মতামত প্রতিষ্ঠানটির নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।
এ নিয়ে মাহা বিদ্রূপ করে বলেছিলেন, “সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দিল, কিন্তু চাপের মুখে নিজেরাই সাহস হারিয়ে ফেলল!”

তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো গাজার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। বিশেষ করে হামলার কারণে বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে তার গবেষণা ছিল আলোচিত। তিনি দেখিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দিত্ব, পরিবার হারানো ও ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসবাসের ফলে বহু ফিলিস্তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরীর উক্তি মনে পড়ে, ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টার রাখা হয়, আত্মার হয় না।’

মাহা মনে করেন, সাংবাদিকতা তার কাছে শুধু পেশা নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার একমাত্র উপায়। তিনি বারবার বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেন, যদি তার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়, তবে বাকিরা যেন নীরব না থাকে, বরং প্যালেস্টাইনের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলতে থাকে।
যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে মাহা বলেছেন, ‘আমি আমার জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি, শুধু এই একটি মুহূর্তের জন্য—শুভ সকাল গাজা।’

ইতিহাস হয়তো তার মতো সাংবাদিকদের ভুলে যাবে, কিন্তু মাহা লড়ে যাচ্ছেন, সত্য প্রকাশের জন্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যই এবারের মূল বার্তা

 

৭ এপ্রিল, রোববার—বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য— ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’—এই স্লোগানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যের উপর।

বাংলাদেশে এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, গণ-আন্দোলন পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি উল্লেখ করেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারের বর্তমান চিত্র এখনো উদ্বেগজনক, যা আমাদের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৫ সালে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-র আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে দেশে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের এই দিনে(৭এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে রেখে দিবসটির আয়োজন করা হয়, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

 

বিশ্ব থেমে গেল গাজার জন্য

 

৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশ্ব সাক্ষী হলো এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির — ‘The World Stops for Gaza’। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন স্তরে পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত—সব জায়গাতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই বার্তা: “গাজা বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও।”
শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট, প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং কার্যক্রম বন্ধ রেখে তারা জানিয়ে দিয়েছে—“গাজা নিঃসঙ্গ নয়”।

বাংলাদেশেও এই আন্দোলনের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ঢাকার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে আজকের দিনজুড়ে গাজার প্রতি সংহতির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ধর্মঘট পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের এ মানবিক অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোট (PUSAB) উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজন করে। এছাড়াও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, চুয়েটসহ একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও নীরব প্রতিবাদে অংশ নেয়।

এছাড়া;বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ঢাকায় ‘গাজা বিষয়ক সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ’ কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনটি গাজায় চলমান গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।
ইসলামী ছাত্রশিবির ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানায়। শিবিরের বিভিন্ন ইউনিট আজ র‍্যালি, লিফলেট বিতরণ ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আগামীকাল ৮ এপ্রিল দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ফিলিস্তিনে আজ পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বহু দেশে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণগ্রেফতার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।

‘The World Stops for Gaza’ কর্মসূচি যেন এক নতুন প্রতিবাদের ভাষা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসী গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জবাবদিহির দাবি তুলেছে।

মানবতার জন্য, শান্তির জন্য, এবং নিষ্পেষিত মানুষদের জন্য—আজ থেমে গেছে বিশ্ব। এবং এই থেমে যাওয়া যেন হয়ে উঠেছে আরও শক্তভাবে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

 

ফ্রাঙ্কা ভিওলা: নীরবতার দেয়াল ভেঙে যিনি আইন বদলালেন

 

১৯৬৫ সাল, ইতালির সিসিলির ছোট শহর আলকামো। মাত্র ১৭ বছরের কিশোরী ফ্রাঙ্কা ভিওলাকে অপহরণ করে তার সাবেক প্রেমিক ফিলিপ্পো মেলোদিয়া। দিনের পর দিন আটকে রেখে চলে বর্বর যৌন নির্যাতন। উদ্দেশ্য একটাই—ফ্রাঙ্কাকে বিয়ে করে ধর্ষণের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

কারণ তখন ইতালির আইনে ধর্ষণকে ‘ব্যক্তিগত অপরাধ’ হিসেবে নয়, ‘নৈতিকতার লঙ্ঘন’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ফলে ধর্ষক যদি ধর্ষিতাকে বিয়ে করত, তবে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকত না, শাস্তিও হতো না।

কিন্তু ফ্রাঙ্কা ভিওলা সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করেননি। সামাজিক রীতি, ভয় ও লজ্জার দেয়াল ভেঙে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা করেন মেলোদিয়ার বিরুদ্ধে। তার পাশে ছিলেন তার পরিবার। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর ফিলিপ্পো মেলোদিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার সহযোগীদের ৪ বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়। মেলোদিয়া ১৯৭৬ সালে কারামুক্ত হলেও, ১৯৭৮ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

ফ্রাঙ্কার এই সাহসী অবস্থান কেবল ইতালিকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বদলে দিয়েছে আইনের ধারা। তবে পুরোপুরি বদল আসতে সময় লেগেছে। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করলে দায় মাফের আইন বাতিল হয় ১৯৮১ সালে। আর ১৯৯৬ সালে ধর্ষণকে ‘নৈতিকতা বিরোধী’ নয়, ‘ব্যক্তির প্রতি অপরাধ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইতালির আইন।

বর্তমানে ফ্রাঙ্কা ভিওলা ৭৭ বছর বয়সী। ১৯৬৮ সালে তিনি জিউসেপ্পে রুইজি নামের একজনকে বিয়ে করেন। এখনো আলকামোতেই বসবাস করছেন, তিন সন্তান নিয়ে গড়ে তুলেছেন এক শান্ত, সম্মানিত জীবন।

সূত্র: BBC, The Guardian, Wikipedia

 

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নারী গ্রেফতার, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র: ইফতার করতে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এজেন্টদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তুরস্কের ডক্টরাল শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ক। তার গ্রেফতারের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দেখা গেছে।

২৫ মার্চ ২০২৫, ম্যাসাচুসেটসের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ককে সাদা পোশাকধারী ICE এজেন্টরা কোনো ওয়ারেন্ট বা আনুষ্ঠানিক কারণ না দেখিয়েই গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টা ধরে তার অবস্থান অজানা ছিল। পরে জানা যায়, তাকে ১,৫০০ মাইল দূরের লুইজিয়ানার বাসিলের এক আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এই স্থানান্তর আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছিল তাকে ম্যাসাচুসেটসেই রাখা হবে।

ICE কর্তৃপক্ষ বলছে, ওজতুর্ক হামাসকে সমর্থন করেছেন, যদিও তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ওজতুর্কের সহপাঠী ও সহকর্মীরা জানান, তিনি শুধুমাত্র প্রো-প্যালেস্টাইন মতবাদ সমর্থন করতেন এবং কিছু মতামত প্রকাশ করেছিলেন, যা কোনোভাবেই বেআইনি ছিল না।

রুমেইসা ওজতুর্কের গ্রেফতারের প্রতিবাদে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে।

ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া ক্যাম্পবেল এই গ্রেফতারকে “বিরক্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, “এটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে একজনকে লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও প্রো-প্যালেস্টাইন সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অংশ। তারা অবিলম্বে ওজতুর্কের মুক্তি দাবি করেছে।

 

দেশে দেশে ঈদ উদযাপন

 

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটো ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অভ্যস্ততা অনুযায়ী। যদিও ঈদে কিছু মৌলিক আচার এবং প্রথা পৃথিবীজুড়ে এক থাকে, তবে প্রতিটি দেশের ঈদ উদযাপনের ধরন ও আয়োজন আলাদা। ঈদ সাধারণত আনন্দ, কৃতজ্ঞতা এবং পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়ার দিন।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ঈদ কেমনভাবে উদযাপিত হয়।

বাংলাদেশে ঈদ
বাংলাদেশে ঈদ বিশাল উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। ঈদের সকালে সবাই নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে যান। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে কোলাকুলি করে এবং ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ দিনে বাঙালি পরিবারের বাড়িতে নানা ধরণের মজাদার খাবার প্রস্তুত হয়, যার মধ্যে সেমাই, কোরমা, বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি জনপ্রিয়। ছোটরা ঈদ সালামি পেয়ে থাকে এবং ঈদের দিনটি পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সৌদি আরবে ঈদ
সৌদি আরবেও ঈদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সেখানে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি উপহার পাঠানো এবং গরীবদের সহায়তা করা একটি প্রচলিত রীতি। মুসলিমরা সকালে ঈদের নামাজ পড়েন এবং তার পর নানা ধরণের মিষ্টান্ন ও খাবারের আয়োজন হয়। বিশেষ করে, মুগলগাল, ঘুরাইবাহ ও জেরিশ খেতে পছন্দ করেন তারা। সৌদিরা মিষ্টি খাবারের জন্য ‘মিষ্টি ঈদ’ হিসেবেও পরিচিত।

ভারত ও পাকিস্তানে ঈদ
ভারত এবং পাকিস্তানে ঈদ উদযাপনের আচার বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে অনেকটা মেলে। এখানে সাধারণত ঈদের নামাজের পর পরিবারের সঙ্গে উপহার বিনিময়, মিষ্টি খাবার খাওয়া এবং ঈদ সালামি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও, রুটি এবং পরোটা থাকে। এই দুই দেশেই ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকে, এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

তুরস্কে ঈদ
তুরস্কে ঈদ ‘সেকের বায়রাম’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘চিনির উৎসব’। এখানে ঈদ সাধারণত পরিবারের মধ্যে সমবেত হয়ে উদযাপিত হয়। তুর্কিরা একে অপরকে ‘বায়রামিনিজ মুবারেক ওলসুন’ বা ‘বায়রামিনিজ কুতলু ওলসুন’ বলে শুভেচ্ছা জানায়। খাবারের মধ্যে মাংস, পোলাও এবং পিঠা প্রধান, এবং সারা দেশজুড়ে অনেক ঐতিহ্যগত আনন্দের আয়োজন থাকে।

নাইজেরিয়ায় ঈদ
নাইজেরিয়ায় ঈদ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সবাই সকাল বেলা মসজিদে জামায়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা প্রায়ই একে অপরকে উপহার দেয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘জেলা ফ্রাই রাইস’, ‘মাংসের শুয়া’, এবং ‘পটেটো স্যালাড’ খায়। এখানে স্থানীয় ভাষায় ‘ইদুল ফিতর’ বলা হয় এবং দিনটি সপরিবারে ঘর সাজানো আর উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়।

মিশরে ঈদ
মিশরের ঈদ উদযাপনটি মূলত পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একত্রিত হয়ে খাবার খেয়ে এবং আনন্দ উদযাপন করে। তারা সাধারণত ‘ফাত্তার’ নামক একটি বিশেষ খাবার তৈরি করে, যা ভাত, মাংস এবং রুটি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। মিশরে ‘কুনাফা’ নামক একটি মিষ্টান্ন খাওয়া হয় যা অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিশুদের নতুন জামাকাপড় দেওয়া এবং উপহার দেওয়া এই দেশে একটি প্রচলিত রীতি।

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ ‘লেবারান’ নামে পরিচিত। এখানে সবাই ঈদের আগের দিনগুলিতে ঈদের প্রস্তুতিতে নিতে ব্যস্ত থাকে, আর লোকজন শপিং মলগুলিতে ভিড় করে। ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ খাবারের মধ্যে ‘ল্যাপিস লেজিট’ কেক এবং ‘এস টেম্বাক’ মাংস থাকে। ঈদের দিন, পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে উপহার বিনিময় করে, দয়া ও সহানুভূতি পরিপূর্ণ পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে।

আরব আমিরাতে ঈদ
আরব আমিরাতে ঈদ অনেকটাই সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পূর্ণ। ‘ওউজি’ নামে একটি বিশেষ খাবার এ দিনে জনপ্রিয়, যা ছাগলের মাংস ও ভাতের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়। অন্যান্য খাবারের মধ্যে পাইন বাদামও রয়েছে। এছাড়াও, আমিরাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শো সহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক আয়োজন করা হয়।

মালয়েশিয়ায় ঈদ
মালয়েশিয়ায় ঈদ উদযাপনের আগের দিনটি বেশ ব্যস্ত থাকে। পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন কেটুপাট, কুইহ রায়া, লেমাং, এবং রেন্ডিং প্রস্তুত করে। ঈদে ‘উন্মুক্ত ঘর’ নামক একটি ঐতিহ্য প্রচলিত যেখানে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে এবং আনন্দে মেতে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ
যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে বহু সংস্কৃতি মিশ্রিত, মুসলিমরা ঈদ উদযাপন করেন মসজিদে নামাজ পড়ে এবং এরপর পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে উপহার বিনিময় করে। এখানে অনেক মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস প্রকল্পে অংশ নেয় এবং গরিবদের সাহায্য করে। এই দেশের বড় শহরগুলোতে ঈদ উদযাপন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাবারের স্টল এবং শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে।

আইসল্যান্ডে ঈদ
আইসল্যান্ডে মুসলমানরা একটি ছোট সম্প্রদায় হলেও ঈদ উদযাপনটা বেশ আনন্দমুখর হয়। এখানে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন খাবার উপভোগ করে। শিশুরা নতুন পোশাক পরিধান করে এবং উপহার বিনিময় করে।

ঈদ উদযাপন পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ আমাদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং বন্ধন শক্তিশালী করার একটি দিন। আমরা যেখানে থাকি না কেন, ঈদ আমাদের মধ্যে ঐক্য এবং সমবেত আনন্দের এক অনবদ্য অনুভূতি সৃষ্টি করে।
সবার ঈদ আনন্দময় ও সফল হোক, ঈদ মোবারক!

 

ঈদ তো সবার জন্য!

 

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। এক মাস রোজার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর, যে দিনটিতে সবাই নতুন জামা পরে, সুস্বাদু খাবার খায়, পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষের জন্য ঈদ যেন আরেক রকম কষ্টের নাম। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা, যারা দিনরাত পরিশ্রম করেও নিজেদের আর পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন না। তাদের কাছে ঈদ মানেই নতুন দুশ্চিন্তা—কীভাবে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে ছেলেমেয়েদের ছোট্ট একটা চাহিদা পূরণ করবেন।

“সারাদিন কষ্ট করি, তবু ঈদে নতুন শাড়ি জোটে না”
কল্পিত চরিত্র: সন্ধ্যা বেগম(পোশাক কারখানার কর্মী)
সন্ধ্যা বেগম শহরের এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ছোট ছেলেকে পাশের বাসায় রেখে কাজে যান, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। সামান্য বেতনের এই চাকরিটাই তার সংসারের একমাত্র ভরসা। ঈদ আসছে, সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত, অথচ সন্ধ্যা জানেন, এবারও তার নিজের জন্য নতুন শাড়ি কেনার সামর্থ্য হবে না।
‘সারাদিন কষ্ট করি, কিন্তু নিজের জন্য কিছু রাখতে পারি না। মাইয়ারে একটা জামা কিনে দিছি, এইটাই শান্তি। নিজের কথা ভাবার সময় কই!’—বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে যায়।

“ঈদে ছেলেটারে ভালো কিছু খাওয়াইতে পারমু কিনা জানি না”
কল্পিত চরিত্র: রোকেয়া খাতুন (গৃহপরিচারিকা)
রোকেয়া খাতুন মানুষের বাসায় কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রান্না-বান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা—এভাবেই তার দিন কাটে। তিনি জানেন, যাদের বাসায় কাজ করেন, তারা ঈদের দিন ভালো খাবার খাবেন, নতুন জামা পরবেন। কিন্তু তার নিজের ছেলের জন্য ভালো কিছু রান্না করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই তার চিন্তা।
‘ঈদের দিন আমার ছেলেটা আশা করে ভালো কিছু খাবো, কিন্তু কয়দিন ধইরা হিসাব কইরা দেখতাছি, পারমু কিনা জানি না। নিজের জন্য তো ভাবি না, শুধু ওর মুখের দিকে তাকাই।’

“ঘরের চাল ঠিক করার টাকা নাই, ঈদ কেমনে করমু?”
কল্পিত চরিত্র: শাহিদা বেগম (ইটভাটার শ্রমিক)
শাহিদা বেগম কাজ করেন ইটভাটায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা পান, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তার ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে, বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। ঈদের দিন নতুন কাপড় কেনার স্বপ্ন তার নেই, বরং চিন্তা একটাই—ঘরের চালটা মেরামত করতে পারবেন কি না।
‘আমাগো ঘরে হুরকা বাতাস আইলেই পানি পড়ে, এইটা ঠিক করার টাকা জমাইতে পারি না। আবার ঈদ নিয়া ভাবমু কেমনে! ঈদ তো কেবল পয়সাওয়ালাদের জন্য।’

আমরা কি পারি না তাদের মুখে হাসি ফোটাতে?
ঈদ মানে শুধু নিজের আনন্দ না, বরং সবার মাঝে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের আশেপাশের এসব সুবিধা বঞ্চিত নারীরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও ঈদের দিনে একটু সুখের মুখ দেখেন না। তাদের কাছে ঈদ আসে, কিন্তু আনন্দ নিয়ে আসে না।
আমরা যদি একটু সহমর্মিতা দেখাই, তবে তাদের ঈদটাও আনন্দময় হতে পারে। কেউ যদি একজোড়া নতুন জামা কিনে দেয়, কেউ যদি এক প্লেট ভালো খাবার ভাগ করে নেয়, তবেই হয়তো তাদের মুখে একটু হাসি ফুটবে। ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণ হবে, যখন এই শ্রমজীবী নারীরাও বলবেন—‘আমাগোও ঈদ আছে!’

 

ঈদ স্পেশাল চিকেন রোস্ট

 

ঈদ মানেই আনন্দ, আর আনন্দের পরিপূর্ণতা আসে সুস্বাদু খাবারের মাধ্যমে। উৎসবের টেবিলে রোস্টের সুগন্ধ না থাকলে যেন জমেই না! তাই আপনাদের জন্য রইলো এক বিশেষ স্বাদের ঈদ স্পেশাল চিকেন রোস্টের রেসিপি, যা আপনার উৎসবের আমেজকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

উপকরণ:
১টি আস্ত মুরগি (১ কেজি, মাঝারি টুকরা করে নেওয়া যাবে)
৩ টেবিল চামচ টক দই
২ টেবিল চামচ তেল বা ঘি
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া
১ চা চামচ জিরা গুঁড়া
১ চা চামচ ধনে গুঁড়া
১/২ চা চামচ দারচিনি গুঁড়া
১/২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
১ চা চামচ আদা-রসুন বাটা
১/২ কাপ পেঁয়াজ কুচি
১/২ কাপ টমেটো কুচি
১/৪ কাপ কাঁচামরিচ কুচি
২ টেবিল চামচ মধু বা চিনি
১/২ কাপ তরল দুধ (ক্রিমি স্বাদ আনতে)
২ টেবিল চামচ সয়া সস (ঐচ্ছিক)
লবণ স্বাদমতো
কাজু ও কিশমিশ (গার্নিশের জন্য)

প্রণালী:
প্রথমে মুরগিটি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
একটি বাটিতে দই, হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে, দারচিনি, গরম মশলা, আদা-রসুন বাটা, মধু/চিনি, সয়া সস ও লবণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
সবকিছু মুরগির সাথে ভালোভাবে মেখে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রেখে দিন (যদি সম্ভব হয়, রাতভর রাখলে স্বাদ আরও বাড়বে)।

একটি প্যানে তেল বা ঘি গরম করে পেঁয়াজ কুচি করে দিন। পেঁয়াজ সোনালি হলে টমেটো ও কাঁচামরিচ দিয়ে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

ম্যারিনেট করা মুরগি দিয়ে মাঝারি আঁচে কষিয়ে নিন, যতক্ষণ না মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করে।

এবার অল্প আঁচে ঢেকে ১৫-২০ মিনিট রান্না করুন, মাঝে মাঝে নেড়ে দেবেন যাতে নিচে লেগে না যায়।
এরপর ১/২ কাপ গরম পানি দিন এবং ঢেকে দিন। আরও ২০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না মুরগি পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে যায়।
শেষে দুধ দিয়ে ৫ মিনিট রান্না করে নিন, এতে রোস্ট হবে আরও মখমল স্বাদের।
মুরগির রোস্ট হয়ে গেলে পাত্র থেকে নামিয়ে নিন। উপরে ভাজা কাজু ও কিশমিশ ছড়িয়ে দিন।
গরম গরম পরিবেশন করুন পরোটা, নান, কিংবা পোলাওয়ের সঙ্গে।

ঈদের স্পেশাল চিকেন রোস্ট শুধু স্বাদেই নয়, উৎসবের আনন্দেও এনে দেবে নতুন মাত্রা। এই সহজ চুলার রেসিপিতে আপনিও তৈরি করতে পারবেন পারফেক্ট রোস্ট, যা অতিথিদের মন জয় করবে! তাহলে আর দেরি কেন? এবার ঈদে বানিয়ে ফেলুন এই সুস্বাদু রেসিপি!

 

আইওসি’র ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি নির্বাচিত হলেন ক্রিস্টি কভেন্ট্রি

 

ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এর ১৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো নারী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিস্টি কভেন্ট্রি। একই সঙ্গে, তিনি আইওসি’র প্রথম আফ্রিকান সভাপতি হওয়ারও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

জিম্বাবুয়ের সাবেক সাঁতারু কভেন্ট্রি, যিনি ২০১৮ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি তার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায় শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) গ্রিসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪১ বছর বয়সী কভেন্ট্রি ৯৭ ভোটের মধ্যে ৪৯ ভোট পেয়ে প্রথম রাউন্ডে জয় লাভ করেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্পেনের হুয়ান আন্তোনিও সামারা পেয়েছেন ২৮ ভোট।
নবনির্বাচিত আইওসি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কভেন্ট্রি বলেন, “এটা শক্তিশালী সংকেত। এটি নির্দেশ করে যে আমরা সত্যিকার অর্থে বৈশ্বিক হতে পেরেছি এবং আমাদের সংগঠন বৈচিত্র্যময়, এবং আমরা এই পথ অনুসরণ করতে চাই।”

আইওসি’র দশম সভাপতি হিসেবে কভেন্ট্রি আগামী ৮ বছর এই দায়িত্বে বহাল থাকবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন চলতি বছরের জুনে।

খেলোয়াড়ী জীবনে অত্যন্ত সফল কভেন্ট্রি অলিম্পিকে জিম্বাবুয়ের হয়ে সাঁতারে দুটি স্বর্ণপদকসহ মোট সাতটি পদক জয় করেন। এছাড়া, তিনি কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অল-আফ্রিকা গেমসেও একাধিক শিরোপা জয় করেছেন।

 

ঈদে ঘর সাজানোর দারুণ টিপস

 

ঈদ মানেই আনন্দের এক অনন্য উৎসব, যেখানে ঘরভর্তি হাসি-খুশি, প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, আর আত্মার প্রশান্তি মেলে। এই বিশেষ দিনটিকে আরো উজ্জ্বল করে তুলতে ঘরের সাজসজ্জা হতে পারে আনন্দের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমন নতুন পোশাক আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি নান্দনিকভাবে সাজানো ঘর আমাদের মনে উৎসবের আবেশ ছড়িয়ে দেয়। তাই আসুন, ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করতে ঘর সাজিয়ে তুলি একদম নতুন রঙে, নতুন আয়োজনে—

১. থিম অনুযায়ী ঘর সাজান
আপনার পছন্দের বা ট্রেন্ডি কোনো থিম বেছে নিন—যেমন ঐতিহ্যবাহী, মিনিমালিস্ট, রঙিন বা আরবি স্টাইল। এরপর সেই অনুযায়ী কুশন কভার, পর্দা, টেবিল ম্যাট, আর্টওয়ার্ক বা লাইটিং সাজিয়ে তুলুন।

২. নতুন পর্দা ও কুশন কভার ব্যবহার করুন
পর্দা ও কুশন কভারের পরিবর্তন পুরো ঘরের লুক বদলে দিতে পারে। ঈদের আমেজ আনতে উজ্জ্বল রঙ বা হালকা সোনালি ও সাদা রঙের কভার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. দেয়ালে ঈদ স্পেশাল ডেকর যুক্ত করুন

চাঁদ-তারার ওয়াল হ্যাঙ্গিং

ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি বা পোস্টার

ফ্যাব্রিক বা কাঠের আর্টপিস

৪. আলো দিয়ে জাদু করুন
ঈদের রাতে নরম, উষ্ণ আলো পরিবেশকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।

LED ফেয়ারি লাইট

মোমবাতি বা অ্যারোমা ক্যান্ডেল

ল্যান্টার্ন বা আরবি স্টাইলের লাইটিং

৫. অতিথি আপ্যায়নের জন্য টেবিল সাজানো
ডাইনিং টেবিলে সুন্দর রানার, ম্যাচিং প্লেট-মগ, ফ্রেশ ফুলের ছোট তোড়া বা সুগন্ধি মোমবাতি রাখতে পারেন।

৬. সুগন্ধি ও পরিপাটি ঘর
ঘরে একটি ফ্রেশ ও মিষ্টি সুবাস ছড়ানোর জন্য অ্যারোমা ডিফিউজার, ধূপ বা আতর ব্যবহার করতে পারেন।

৭. হাতের তৈরি কিছু সংযোজন করুন
ডিআইওয়াই ক্যান্ডেল হোল্ডার, ফুলদানিতে রঙিন পানি দিয়ে ফুল সাজানো, অথবা কাগজের চাঁদ-তারা তৈরি করে দেয়ালে লাগানো যেতে পারে।

৮. দরজার সামনে ওয়েলকাম ডেকর
প্রবেশদ্বারে ফ্লাওয়ার রেথ, আরবি ক্যালিগ্রাফির ওয়েলকাম বোর্ড বা লাইটিং ব্যানার রাখলে অতিথিরা প্রথম দেখাতেই উৎসবের আমেজ পাবেন।

আপনার ভালোবাসা ও সৃজনশীলতার স্পর্শে ঘর হয়ে উঠুক ঈদের আনন্দের প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ুক উষ্ণতা, অতিথিদের মনে জাগুক প্রশান্তি, আর আপনার হৃদয়ে ফুটে উঠুক এক গভীর তৃপ্তির অনুভূতি।

 

রোজায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়

ডায়াবেটিস এখন বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি দ্রুত বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, কম শারীরিক পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কিছু কিছু ভুল ধারণার কারণে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েন। তাই সুস্থভাবে রোজা পালনের জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলুন।

১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
রোজা রাখা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কিনা, তা জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ওষুধের সময়সূচি ও ইনসুলিন ডোজ পরিবর্তন করতে হতে পারে।

২. রক্তের শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
রোজার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি। শর্করা খুব বেশি কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা বেড়ে গেলে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. সঠিকভাবে সেহরি খান
কখনোই সেহরি বাদ দেবেন না, কারণ এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং রক্তে শর্করা লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

লাল চালের ভাত, ওটস, ডাল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান, যা ধীরে হজম হয়।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দই, বাদাম ইত্যাদি যোগ করুন।

৪. স্বাস্থ্যকর ইফতার করুন
অতিরিক্ত চিনি ও তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন।

বেশি চর্বি, চিনি ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙতে পারেন, এটি প্রাকৃতিকভাবে শক্তি জোগায়।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন শসা, তরমুজ ইত্যাদি খেতে পারেন।

চিনিযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস পরিহার করুন।

৬. ওষুধ ও ইনসুলিনের সময়সূচি ঠিক রাখুন
যারা ইনসুলিন নেন বা নিয়মিত ওষুধ খান, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময়সূচি ঠিক করুন।

সেহরি ও ইফতারের সময় ওষুধ গ্রহণের সঠিক নিয়ম জানতে হবে।

৭. অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন
রোজার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে রক্তের শর্করা হঠাৎ কমে যেতে পারে।

গরমে দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়তে পারে, তাই ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।

ভারী ব্যায়ামের পরিবর্তে ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।

৮. বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিলে রোজা ভাঙুন

যদি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ঘাম, ঝাপসা দেখা বা কাঁপুনি অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করুন।

যদি রক্তের শর্করা ৩.৯ mmol/L-এর নিচে নেমে যায় বা ১৬.৭ mmol/L-এর বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলুন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

৯. মানসিক চাপ কমান ও পর্যাপ্ত ঘুমান

মানসিক চাপ রক্তের শর্করার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই নিজেকে শান্ত রাখুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।

ডায়াবেটিস রোগীরা রমজানে রোজা রাখতে চাইলে সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম মেনে চললে সুস্থভাবে রোজা রাখা সম্ভব।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

 

এটিজেএফবি সম্মাননা প্রদান করল এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে অবদান রাখা ১০ নারীকে

বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে বিশেষ অবদান রাখা ১০ নারীকে সম্মাননা প্রদান করেছে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)। ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার, ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে সম্মাননা তুলে দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন বিভিন্ন খ্যাতনামা নারী:

পাইলট ক্যাটাগরিতে: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার ফারিহা তাবাসসুম

এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে: বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার তাহমিনা আক্তার

এভিয়েশন গ্রাউন্ড সার্ভিস ক্যাটাগরিতে: বিমানের ম্যানেজার-গ্রাউন্ড সার্ভিস নিলুফা ইয়াসমিন

ক্যাবিন ক্রু ক্যাটাগরিতে: বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড জিনিয়া ইসলাম

ট্যুরিজম সিকিউরিটি ক্যাটাগরিতে: ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা

হোটেল উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: হোটেল সারিনার চেয়রপারসন সাবেরা সারওয়ার নীনা

ট্যুরিজম উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: ওয়ান্ডার উইম্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সাবিরা মেহরিন সাবা

প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে: গ্যালাক্সি বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ওয়ামিয়া ওয়ালিদ

সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে: বৈশাখী টিভির যুগ্ম সম্পাদক রিতা নাহার

ভ্রমণ ক্যাটাগরিতে: বিশ্বের ১৭৮টি দেশে বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী প্রথম বাংলাদেশি নাজমুন নাহার

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন, “এটিজেএফবি’র এই আয়োজন নারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আজকের ১০ জন নারী তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হয়ে সমাজের অন্যান্য নারীদের অনুপ্রাণিত করবেন।”
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান বলেন, “এটিজেএফবি’র আয়োজন প্রশংসার দাবিদার এবং এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।”
এছাড়া, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতি বছর এই ধরনের উদ্যোগ আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এটিজেএফবি’র সভাপতি তানজিম আনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লবও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

 

ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সন্তানের মা: Valentina Vassilyeva

 

ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যা শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তেমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল ১৮শ শতকের রাশিয়ায়। Valentina Vassilyeva নামের এক রুশ নারী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া মা হিসেবে পরিচিত। তার জীবন ও সন্তান জন্মদানের গল্প আজও মানুষকে বিস্মিত করে।

Valentina Vassilyeva ১৭০৭ সালে রাশিয়ার Shuya অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এক সাধারণ কৃষকের স্ত্রী। সে সময় সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হতো, বিশেষ করে কৃষক পরিবারে, যেখানে বেশি সন্তান মানে বাড়তি কর্মশক্তি। Valentina-র ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠে, কারণ তিনি ২৭ বার গর্ভধারণ করেছিলেন এবং মোট ৬৯টি সন্তানের জন্ম দেন।

Valentina ১৬ বার যমজ, ৭ বার ট্রিপলেট এবং ৪ বার কোয়াড্রুপলেট সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তার ৬৯টি সন্তানের মধ্যে ৬৭ জন বেঁচে ছিলেন এবং মাত্র ২ জন শৈশবে মারা যান। এটি এমন এক রেকর্ড, যা আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি।

এই তথ্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে পাওয়া যায়। ১৭৮২ সালে মস্কোর সরকারের কাছে জমা দেওয়া নথিতে Feodor Vassilyev-এর ৬৯ জন সন্তান থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, এটি Guinness World Records-এও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, যেহেতু ১৮শ শতকের রাশিয়ায় জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না, তাই কিছু বিতর্কও রয়েছে।

অসংখ্য সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও Valentina দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন এবং ১৭৮২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার এই জীবনগাঁথা ইতিহাসে বিরলতম ঘটনার মধ্যে একটি, যা আজও গবেষকদের বিস্মিত করে।

 

ইফতারিতে ডাবের পুডিং

 

গরম আবহাওয়ার মধ্যে ইফতারি যেন এক স্বস্তির আশ্রয়, যেখানে প্রত্যেকটি খাবার আমাদের শরীর ও মনকে প্রশান্তি দেয়। এমনই এক স্নিগ্ধ ও স্বস্তিদায়ক উপাদান হলো ডাবের পুডিং। মিষ্টি, ঠান্ডা এবং সুস্বাদু এই পুডিং ইফতারির টেবিলে এনে দেয় একধাপ বিশেষত্ব। কেবল মুখের স্বাদ নয়,শারীরিক তৃপ্তি প্রদানকারী খাবারও বটে।

ডাবের পুডিং তৈরি করতে কিছু সহজ উপকরণ প্রয়োজন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

উপকরণ:
১. একটি বা দুটি শাঁসযুক্ত ডাবের পানি
২. ২৫ বা ৫০ গ্রাম চায়না গ্রাস (পানির পরিমাণ অনুযায়ী পরিমাণ বাড়ানো যাবে)
৩. পরিমাণমতো চিনি

প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে, গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট চায়না গ্রাস ভিজিয়ে রাখুন। তারপর একটি ডাবের পানি পুরোটা একটি পাত্রে ঢেলে নিন। এরপর, পাত্রটি চুলায় দিয়ে ফুটতে দিন। পানি ফুটতে শুরু করলে, এতে পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে ভালভাবে নাড়তে হবে যেন চিনি গলে পানির সাথে মিশে যায়।
এরপর, ভেজানো চায়না গ্রাস ডাবের পানিতে মিশিয়ে পুরো মিশ্রণ টা থিক না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
এবারমিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে এলে একটি বাটিতে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন ২-৩ ঘণ্টা। ফ্রিজে সেট হয়ে গেলে, উপরের অংশে ডাবের শাঁস বা বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ইফতারে পরিপূর্ণতার জন্য অনবদ্য একটু আইটেম!

 

রমজানে নারীর ব্যস্ততা কমিয়ে সহজ জীবন গড়ার উপায়

 

রমজান, আত্মশুদ্ধির মাস, ধৈর্য ও সংযমের পরীক্ষার মাস। এই মাসে ইবাদতের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও বেড়ে যায় বহুগুণ। বিশেষ করে নারীদের জন্য রমজান যেন এক অনন্ত ব্যস্ততার গল্প হয়ে ওঠে। সেহরি থেকে ইফতার, ইবাদত থেকে পরিবারের দেখভাল—সবকিছু সামলাতে গিয়ে যেন ক্লান্তির শেষ থাকেনা । অথচ একটু কৌশলী পরিকল্পনা ও পারিবারিক সহযোগিতা পেলে এই সময়টাকে আরও সহজ করে তোলা সম্ভব।

পরিকল্পনাই সাফল্যের চাবিকাঠি
যেকোনো কাজকে সহজ করতে দরকার সুপরিকল্পনা। রমজানের প্রতিদিনের কাজ আগেভাগে সাজিয়ে নিলে অযথা ব্যস্ততা কমে যাবে। কোন কাজ কখন করা হবে, কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন, কোন কাজ আগে সম্পন্ন করা উচিত—এসব লিখে রাখলে সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এতে ক্লান্তি যেমন কমবে, তেমনি ইবাদতের জন্যও বাড়তি সময় বের করা যাবে।

বাহুল্য পরিহার, সহজতাই সৌন্দর্য
আমাদের সমাজে ইফতার মানেই যেন বাহারি আয়োজন। প্রতিদিন নানা পদ না থাকলে চলে না, অথচ এত আয়োজন করতে গিয়ে নারীদের বেশ বেগ পোহাতে হয়। অথচ রমজানের মূল উদ্দেশ্যই হলো সংযম ও আত্মশুদ্ধি। তাই প্রতিদিন বাহুল্য এড়িয়ে পুষ্টিকর ও সহজ কিছু খাবার তৈরি করলেই কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

সম্ভব হলে আগেভাগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া
সময় ও পরিশ্রম বাঁচাতে কিছু কাজ আগেই সেরে রাখা যায়। যেমন—সপ্তাহের জন্য মাছ-মাংস কেটে সংরক্ষণ করা, মসলা গুঁড়ো করে রাখা, পেঁয়াজ-রসুন কেটে রাখা বা শরবত তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া। এতে কাজের চাপ অনেকটাই কমে আসবে এবং ইফতারের সময় অস্থিরতা দূর হবে।

পরিবারের সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া
শেয়ারিং এন্ড কেয়ারিং এর মাধ্যমে রমজানের সৌন্দর্য আরো বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্য ও শিশুদেরও ঘরের কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। পেঁয়াজ-রসুন কাটা, শরবত তৈরি, টেবিল সাজানো—এই ছোট ছোট কাজে সাহায্য করলে নারীর ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

নিজেকে ভুলে গেলে চলবে না
দিনভর রোজা রেখে বিরামহীনভাবে কাজ করলে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ নেমে আসতে পারে। তাই কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতারের পর প্রচুর পানি পান করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীর সুস্থ থাকলে ইবাদতেও মনোযোগ বাড়বে, কাজে ক্লান্তিও কমে আসবে।

রমজান মাস নারীর জন্য যেন বোঝা হয়ে না উঠে, বরং এটি আত্মার প্রশান্তি ও পরিবারে সৌহার্দ্য তৈরির মাস হবে। যদি সবাই মিলে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, তাহলে নারীর জন্য রমজানও হবে প্রশান্তিময়। সংযমের এই পথচলা হোক সুস্থ, সুন্দর ও পরিপূর্ণ।

 

কেরানীগঞ্জে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা: তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড

 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিন যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—সজিব, রাকিব ও শাওন। এছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় তাদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এরশাদ আলম জর্জ জানান, ট্রাইব্যুনাল ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন আসামিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থদণ্ডের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আলী আকবর (২২) ও মো. রিয়াজ (২২) অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন।

২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটিবাজার এলাকায় টহলরত পুলিশ ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনে পুকুর থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, নিহত নারীর নাম মারিয়া। তার বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে পুলিশ আসামি শাওনকে গ্রেফতার করে।
শাওন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, সে নিজে,রাকিব, সজিব, আলী আকবর মিলে মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। পরে রাকিব ও সজিবকেও গ্রেফতার করা হলে তারাও আদালতে একই স্বীকারোক্তি দেয়।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলক কুমার দে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর বিচারকাজ শুরু হলে ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা আসামি রাকিব ও শাওনকে আদালতে হাজির করা হয় এবং রায় শেষে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত সজিব পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

 

ফিলিস্তিনে নারী ও শিশু হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের জাতিসংঘ সদস্য পদ বাতিলের দাবি

 

ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি যুক্তি লঙ্ঘন করে নারী ও শিশুদের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ। তারা ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করে জাতিসংঘের সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

শনিবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি সাঈদা রুম্মান বলেন, “ইসরায়েল যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ নারী ও শিশু। শিশুদের হত্যা, মায়েদের বিধবা করা—এ কোন সভ্যতার নমুনা?”
তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের নিষ্পাপ শিশুরা আজ প্রাণ হারাচ্ছে ইসরায়েলের বর্বরতার শিকার হয়ে। অসহায় নারীরা স্বজন হারিয়ে পথে বসেছে। মানবতার নামে যারা কথা বলে, তারা আজ নির্বিকার। জাতিসংঘ যদি এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে মুসলিম বিশ্ব ধরে নেবে, তারা এ গণহত্যার নীরব সহযোগী।”

বক্তারা উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী যুদ্ধের নামে শিশুদের হত্যা করছে, নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জান্নাতুল কারীম সুইটি বলেন, “কোনো সভ্য জাতি নারী ও শিশুর ওপর হামলা চালাতে পারে না। ইসরায়েল আজ প্রমাণ করেছে, তারা মানবতার শত্রু, এক নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র।”
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাহবুবা খাতুন শরীফা বলেন, “ইসরায়েলের হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। তারা কি যুদ্ধ করছে? তাদের অপরাধ কী? এটি মূলত ফিলিস্তিনি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পিত গণহত্যা।”

মানববন্ধনে বক্তারা ফিলিস্তিনে অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানান এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের আহ্বান জানান।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে হবে।
“শিশু হত্যাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া যায় না। অবিলম্বে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,”—বলেন এক নারী নেতা।

বক্তারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ইসরায়েলের সব পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

 

বিশ্ব পানি দিবস: শুধু পানি কেন? পানিকে উপকারী করে তোলার ১০টি উপায়

 

পানি আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। এটি শুধু তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নয়, বরং শরীরের প্রতিটি কোষের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু একঘেয়ে স্বাদের কারনে অনেকেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করতে চান না। তবে, যদি পানিকে কিছু উপকারী উপাদানের সংমিশ্রণে আরও স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করা যায়, তবে তা শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি নানা উপকারও বয়ে আনবে।

আজ ২২মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছর ২২ মার্চ এই দিবস পালিত হয়, যা মিঠা পানির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার প্রচারের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত একটি বিশেষ দিন। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে (ইউএনসিইডি) প্রথম এই দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, এবং ১৯৯৩ সাল থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছর বিশ্ব পানি দিবসে একটি নির্দিষ্ট থিম নির্ধারিত হয়। ২০২৫ সালের থিম হলো ‘গ্লেসিয়ার সংরক্ষণ’, যা হিমবাহের গলনের ফলে সৃষ্ট পানি প্রবাহের অনিশ্চয়তা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে।

বিশ্ব পানি দিবসে আসুন জেনে নিই, কীভাবে আমাদের প্রতিদিনের পানিকে আরও কার্যকরী ও উপকারী করা যায়—

১. লেবু
লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন, যা বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।

২. আদা
আদার জিঞ্জেরল যৌগ হজমশক্তি বাড়ায়, পেট ফাঁপা কমায় এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে কয়েক টুকরো আদা ভিজিয়ে রেখে চায়ের মতো পান করলে এটি শরীরকে উষ্ণ ও সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

৩. দারুচিনি

প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। এক গ্লাস গরম পানিতে দারুচিনির কাঠি ভিজিয়ে রেখে পান করলে এটি বিপাক বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

৪. পুদিনা
পুদিনার পাতা শুধু পানিকে সুগন্ধি ও সতেজ করে না,এটি চর্বি ভাঙতেও সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর রুটিনে একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে। এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো তাজা পুদিনা পাতা যোগ করুন। এটি কয়েক ঘণ্টা বা পুরো রাত ডিটক্স পানীয়তে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন।

৫. হলুদ

হলুদে বিদ্যমান কারকিউমিন প্রদাহ কমায়, লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখে। এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চিমটি হলুদ ও সামান্য গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে এটি দেহের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

৬. আপেল সাইডার ভিনেগার
অ্যাসিটিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ আপেল সাইডার ভিনেগার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন, যা শরীরের চর্বি কমানোর পাশাপাশি বিপাকক্রিয়া দ্রুততর করবে।

৭. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে ক্যাটেচিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। ঠান্ডা পানিতে গ্রিন টি মিশিয়ে লেবুর রস দিয়ে পান করলে এটি আরও উপকারী হয়ে ওঠে।

৮. শসা
শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জলীয় অংশ, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। এক গ্লাস পানিতে শসার টুকরো দিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করলে এটি শরীরের টক্সিন দূর করবে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখবে।

৯. মৌরি
মৌরি শুধু মুখশুদ্ধি হিসেবেই নয়, বরং পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়েও দারুণ কার্যকর। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, গ্যাসের সমস্যা কমায় এবং শরীরকে প্রশান্তি দেয়। গরম পানিতে এক চামচ মৌরি ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা হলে পান করুন।

১০. তালমাখনা
তালমাখনা বা বেসিল সিডস (সাবজা) শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে পান করুন, এটি শরীরের অতিরিক্ত গরম কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

পানি শুধু জীবন রক্ষাকারী উপাদান নয়, এটি সুস্থ থাকার চাবিকাঠিও। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং এতে উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান যোগ করে আরও কার্যকর ও পুষ্টিকর করে তুলুন।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আসুন প্রতিজ্ঞা করি— নিজেকে হাইড্রেটেড রাখব, পানি অপচয় রোধ করব এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিকভাবে পানি পান করব।

বিশ্ব পানি দিবসে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন!

#বিশ্বপানীদিবস #সুস্থজীবন #পানিকেপ্রিয়করুন #ডিটক্সড্রিঙ্ক #স্বাস্থ্যকরঅভ্যাস