banner

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1198 বার পঠিত

 

মাতৃকথন_২

ফারিনা মাহমুদ


এই .. শোনো … শোনো,
আমার ছবি আপলোড করো না কিন্তু খবরদার ! আমাকে বাদ দিয়ে শুধু বাবুর ছবি দাও …।কিংবা গ্রুপ ছবি তোলার সময় নিজের বেখাপ্পা শরীরটাকে দুইজনের মাঝের চিপায় যথাসম্ভব ঢেকে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
কি? কমন পড়ে? মা হবার পরে মুটিয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়ে আমাদের আড়ষ্টতা কথা বলছি !

‘মাইক্রোস্কোপিক’ একটা জাইগোট থেকে জ্বলজ্যান্ত একটা মানবসন্তান প্রসব … একটা বিন্দু থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের জয়যাত্রা। না, বায়োলজি ক্লাসে পড়া ব্যাঙের জীবনচক্র নয়, মানুষের জীবনচক্রের যাত্রাপথ! সেই যাত্রা কি আর সিরাতুল মুস্তাকিম। মোটেই নয়। একটু একটু করে স্ফীত হয়ে ওঠা শরীরটা কারো কারো ক্ষেত্রে শ্রী হারাতে থাকে নানাভাবে।

জীবনে একটা আঁচড় পড়েনি যে শরীরে, সেই চামড়ায় চিঁড় ধরে। ক্রমশ সেটা রূপ নেয় ফাটলে।
নাকটা কেমন যেন ফুলে ওঠে, ঠোঁটটা কালচে হয়ে যায়। ঘাড়ের কাছে, মুখে, কপালে ছোপ ছোপ কালচে পিগমেন্টেশনের দাগ, ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া পা। আর সর্বশেষ সিজারিয়ানের আড়াআড়ি কাটা কিংবা নরমাল ডেলিভারির থ্রি ডিগ্রি টিয়ারের যন্ত্রনা!!! তবেই না “মা”!

আর যে মুহূর্ত থেকে আদরের ধন বুকে এলো, মায়ের কি আর সময় হয় নিজের দিকে তাকানোর? আমি নিজে ১৯ দিন পরে চুল আঁচড়ানোর সময় পেয়েছিলাম!

কেমন কেমন করে যেন সময় চলে যায়। বাবুটা বড় হয়। একসময় হঠাৎ মায়ের খেয়াল হয়।
একি! আমার এমন হতচ্ছাড়া শ্রী ! হাত পায়ের এ কি দশা? খিদায় তো জান বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পেট ভরে খেতে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ! জামা কাপড় কিছুই গায়ে লাগে না ! নিজেকে কেমন যেন দুনিয়ার সাথে অচল মনে হয়।

..কুরূপা কুৎসিত মোটা একটা মহিলা মহিলা লাগে ! কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টা করেন সান্ত্বনা খুঁজে নিতে। মা হয়েছি, মোটা হওয়া জায়েজ এখন। কেউ কেউ ফ্রাস্টেশনে ধুঁকে ধুঁকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরো!

সমাধানটা আসলে কি?
বাস্তব হলো, আমরা কেউ কেট মিডলটন না, যে প্রসবের ১২ ঘন্টা পর মেকআপ করে হাই হিল পরে ওটি থেকে বের হবো আর লোকে বলবে – মাইরালা !! বাচ্চা আসলে কই আসিলো আর কইত্তে বাইর হইলো?

কাজেই ওইসব রাজ-পুত্রবধুদের কভার করা ম্যাগাজিন দেখে আক্ষেপ করতে গেলে মা না হওয়াই ভালো। আমরা হলাম প্রজাবধু।
আমরা আমাদের শান্তির জন্য যা করতে পারি তা হলো,
♥স্রেফ নিজেকে ভালোবাসা,
♥নিজের একটু যত্ন নেয়া।

হ্যা, “বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাই আমার পৃথিবী” – এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে আপনিও আপনার বাচ্চাটার পৃথিবী। দিনের ২০ ঘন্টা ওর যত্ন নিচ্ছেন, কিন্তু আধটা ঘণ্টা নিজেকে দিন। নিজের শরীরটাকে দিন। নিজের দিকে তাকান, নিজের হাত পা গুলো ম্যানিকিউর-পেডিকিউর এর অভাবে খুব অসুন্দর দেখাচ্ছে?

বাবুকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে একটু পানিতে চুবিয়ে ফেলুন, তারপর বাবু ঘুমালে গোসলটা সেরে নিন। পরদিন চুলটাকে একটু তেল দিয়ে বাঁধুন, তার পরের দিন শরীরটা ভালো করে দেখুন, মুটিয়ে যাচ্ছেন? সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার একটু খোঁজ খবর শুরু করুন।

একদিন, দুদিন … দেখবেন হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে আসছে একটু একটু করে। ফিরে আসছে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি আমাদের সবার জন্য।

স্বার্থপর হতে বলছি না মোটেই, মোটেই ছোট করছি না একজন মুটিয়ে যাওয়া মায়ের চির সাবলীল সৌন্দর্যকে। শুধু বলছি, নিজের জন্য একটু সময় বের করতে প্রতিদিন, যাতে আক্ষেপে না ভূগি। দীর্ঘশ্বাস না ফেলি পুরানো এ্যালবাম দেখে অথবা ক্যামেরার সামনে গেলেই আড়ষ্ট হয়ে না যাই।

দিনশেষে … প্রতিটি মা-ই অনন্যা। মাতৃত্বের গুনে সম্পূর্ণা। তাই একটু বাড়তি যত্ন, ভালোবাসা পাবার অধিকার তাঁদের সবার আগে। তো সেই ভালোবাসাটা না হয় সামান্য একটু নার্সিসিজম দিয়েই শুরু হোক !

কি বলেন ?
শুরু হোক, নিজেকে ভালোবাসা দিয়ে … একটু একটু করে !

Facebook Comments