banner

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 831 বার পঠিত

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……১


আফরোজা হাসান


অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ফিজিক্সের বাংলা কি মনে করতে পারছে না সাহিল। এক সময় হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলো। ইয়া আল্লাহ! একি দেখছে?! সব দেখি সাদা! সেকি বইয়ের বদলে খাতা খুলে বসেছে নাকি? চোখ বন্ধ করে মাথাটাকে ডানে-বামে, উপরে-নীচে বার কয়েক ঝাঁকি দিয়ে তাকানোর পর দেখলো অক্ষর ফুটতে শুরু করেছে বইয়ে কিন্তু সবই ঝাপসা। কেমন যেন মাথা ঘুরতে শুরু করলো সাহিলের। সবসময় পরীক্ষার আগের দিন এমন হয় তার। মনেহয় কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে। আগে যা পড়েছিল সেসবও মাথার ভেতর থেকে একদম হাওয়া হয়ে যায়। রিলাক্স হওয়া উচিত আসলে আমার ভাবলো সাহিল। বই বন্ধ করে ভাইবারে ঢুকে কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করলো। ঠিক করেছিল পরীক্ষার শেষ হবার আগে ফেসবুকে যাবে না। কিন্তু অটল থাকতে পারলো না। গত দু’দিন ঢোকেনি লগিন করতেই দেখলো ইনবক্সে দশ বারো জনের ম্যাসেজ। জাস্ট একটু ঘুরে দেখেই চলে যাবে এই নিয়্যাতে ঢুকলেও কিভাবে যে পনে দুইঘন্টা পেড়িয়ে গেলো টেরই পেলো না। ঢুকেছিল রিলাক্স হতে কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো রাত এগারোটা বাজে। চোখের সামনে আবারো সব ধোঁয়া ধোঁয়া লাগতে লাগলো। এখনো ছয়টা চ্যাপ্টার রিভাইস দেয়া বাকি তার!

ধূর, কেন যে ঢুকতে গিয়েছিল এই সময় ফেসবুকে? নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো সাহিল। নিজের সেল্ফ কন্ট্রোল পাওয়ার আরো বাড়ানো দরকার ফিল করলো। এমন না যে সে পড়তে চায় না বা পড়ার প্রতি আকর্ষণ ফিল করে না। জ্ঞানার্জন করতে হবে এটা নিয়ে কোনই দ্বিমত নেই সাহিলের। তার সমস্যা শুধু একটাই মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। পড়তে বসলে কিছুক্ষণ পরই শুধু মনেহয় যাই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা ফেসবুকে। এভাবে করেই সময়গুলো যে কিভাবে কেটে যায় টেরই পায় না। টের পায় পরীক্ষার আগের দিন। তখন এমন চোখে মুখে আঁধার দেখে। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হতে শুরু করলো। এখন চেষ্টা করলেও পড়া হবে না। বই বন্ধ করে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো সাহিল। ক্ষুধার সামান্য নড়াচড়া অনুভব করছে পেটের মধ্যে। খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে রওনা দিলো। ফ্রীজ খুলেই মন ভালো হয়ে গেলো। বিকেলেই অবশ্য ঘ্রান পেয়েছিল লেয়ার পুডিংয়ের। তার সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি খাবার এটা। প্লেটে বড় বড় দু পিস পুডিং নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই ল্যাপটপ হাতে বিরক্ত মুখে রুম থেকে বড় আপাকে বেড়িয়ে আসতে দেখলো সাহিল। বোনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, তোমার বেয়াদ্দব লেপুকে কি আবারো বোবায় ধরেছে আপা?

ছোট ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো রাহমা। বলল, কবে দেখবি এইটারে ধরে একটা আছাড় দিয়ে ভেঙে গুড়া গুড়া করে দেব আমি।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তোমাকে কষ্ট করে আছাড় দেয়া লাগবে না আপা। তুমি এভাবে তোমার লেপুকে হাতে করে দু’চারদিন ঘরের এদিক সেদিক ঘোরো। দেখবে ও নিজ থেকেই জাম্প দিয়ে পড়ে গিয়েছে তোমার হাত থেকে।

কপট রাগ দেখিয়ে রাহমা বলল, বেশি ফাজলামো শিখেছিল তাই না? ধোলাই খেতে না চাইলে সামনে থেকে যা। এই দাঁড়া তোর এগজামের প্রিপারেশনের কি অবস্থা সেটা বলে যা?

আপা তোমাকে হান্ডেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি পাশ করবো ইনশাআল্লাহ।

তুই কি শুধু পাশ করার জন্য পড়িস নাকি?

আপারে দুঃখের কথা কি বলবো। আমি পড়তে তো জ্ঞানার্জন করার জন্যই চাই। কিন্তু শেষ মেষ শুধু কোন মতে পাশ করাটাকেই বিশাল বড় অর্জন মনেহয়।

চিন্তা ও কর্মের ভারসাম্য না থাকলে এমনই হয়। যা তুই সামনে থেকে আমার। এমনিতেই নানান যন্ত্রণায় আছি। ফাঁকিবাজ টাইপ বাচ্চাকাচ্চা আশেপাশে থাকলে সেই সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে।

সাহিল হেসে বলল, আপা তুমি সমস্যা মোকাবিলা করো কিভাবে?

সমস্যা দিয়ে।

সাহিল অবাক হয়ে বলল, মানে?

মানে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কথা শুনিসনি? আমি তেমন সমস্যা দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করি। পরে তোকে বুঝিয়ে বলবো। এখন তুই যা তো। আচ্ছা শোন আমাদের কম্পু বিশেষজ্ঞ কোথায় বলতে পারবি?

সাহিল হেসে বলল, ভাইয়া না তোমাকে নতুন ল্যাপটপ এনে দিলো। তারপরও এটা ব্যবহার করার দরকার কি?

রাহমা বলল, সেটা তুই বুঝবি না। চার বছর ধরে সুখে দুঃখে আমার সাথে সাথে থেকেছে। আমার কত অত্যাচার সহ্য করেছে রাত-দিন। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে শব্দ বন্ধ হয়ে যায় বলে আমি মুহুর্তেই তাকে বিদায় করে নতুন একটাকে কোলে তুলে নেবো? বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আমি তাই ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে আমার জীবন থেকে বের করে ফেলে দেবো না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওকে সুস্থ্য করার শেষ চেষ্টাটাও ব্যর্থ হয়ে যাবে।

সাহিল হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো এমন ভাবে বলছো যেন এটা কোন যন্ত্র না বরং মানুষ।

আজ যন্ত্রের সাথে এমন নির্দয় হতে পারলে, কাল মানুষের সাথেও যে হয়ে যাবো না সেই গ্যারান্টি কে দেবে? তাই আজ যন্ত্রের সাথে দরদী হবার চেষ্টা করছি। যাতে ভবিষ্যতে মানুষের ব্যাপারেও হতে পারি।

সাহিল হেসে বলল, তোমার কথা আমাকে খুব মুগ্ধ করে আপা।

(চলবে)

Facebook Comments