banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 15, 2025

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব-২

আফরোজা  হাসান


নিজ জীবনের আলোকে, আমার বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে বুঝেছি শরীয়তের বিধান সমূহকে জীবন ধারণের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মতোই দেখতে হবে। অর্থাৎ, ক্ষুধা লাগলে যেমন খাদ্যের সন্ধানে যাই, ঘুম পেলে যেমন ঘুমোতে যাই, আযান শুনলে তেমন নামায পড়তে যাবো। এখানে স্পেশাল বলে কিছু নেই। খাদ্য আর ঘুমের অভাবে যেমন আমার শরীর ঝিমিয়ে যাবে, নামাযের অভাবে ঝিমিয়ে যাবে আত্মা। আর সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীর ও আত্মা দুটোই চনমনে থাকা প্রয়োজন।

আমার প্রতিটা সন্তানেরই নিজস্ব একটা করে স্বপ্ন আছে তাদের নিজ নিজ জীবনকে ঘিরে। যে কোন কাজই ওদেরকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায় শুধুমাত্র তাদের স্বপ্নটা মনে করিয়ে দিলে। আমি আর ওদের বাবা শুধু ভালোবাসা আর আদর দিয়ে ওদের মনে আরেকটা স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছি। তবে শুধু মুখে বলে না স্বপ্নটা গেঁথে দিয়েছি আমাদের কথা, কাজ, আচার-ব্যবহার দ্বারা। মুখে সারাক্ষন উপদেশ পরামর্শ দিতে আমরা নারাজ। এতে বাচ্চারা বিরক্তও হয় মনে মনে। আমরা তাই করে দেখানোতে বিশ্বাসী। বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠানোর সময় জড়িয়ে ধরে আদর আর শুভ সকাল বলার আগে সালাম দিতে কখনই ভুল করিনা আমরা। আস্তে আস্তে ওরা বুঝে নিয়েছে ঘুম থেকে উঠার পর সালাম দেয়াটাই ওদের প্রথম করণীয়।

আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের পরিবারের সবার জীবনের প্রতিটা সকাল একে অপরের কল্যাণ কামনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়। ঠিক একই ভাবে খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলে, খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলে, কোন কাজ করার চিন্তা করলে ইনশাআল্লাহ বলে, বিস্ময় বা মুগ্ধতা প্রকাশে সুবহানাল্লাহ বলে বলেই আমরা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি ওদের করণীয়। বার বার বলার চেয়ে আসলে নিজে করে দেখানোটাই অনেক বেশি সহজ। আর বাচ্চারা যেহেতু স্বভাবতই অনুকরণ প্রিয় তাই এভাবে শেখালে নতুন কিছু শিখছে ভেবে আরেকটা বোঝা ভাবারও সুযোগ থাকে না। এভাবেই আমরা অনেক কিছু শিখিয়ে ফেলতে পারি বাচ্চাদের খুব সহজেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দোয়া গুলোও এভাবে শিখিয়ে ফেলা যায়। খুব অল্প সময়েই আমার বাচ্চারা নিত্য প্রয়োজনীয় সব গুলো দোয়া মুখস্থ করে নিয়েছিল। অথচ টেরই পায়নি আমরা ওদেরকে দিয়ে স্পেশ্যাল কিছু করিয়ে নিচ্ছি।

শিশুর আয়না বা রোল মডেল হল তার বাবা-মা। শিশু তার বাবা-মাকে দেখতে দেখতে এবং অনুকরণ করে বেড়ে ওঠে। তাই আমরা নিজেরা ভালো মানুষ না হলে আমাদের বাচ্চারাও ভালো মানুষ হবেনা। সৌভাগ্য গুনে যদি হয়েও যায় প্রতিকূল পরিবেশে গেলেই তার মধ্যের প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যেহেতু গড়ে ওঠার পথটা ইতিবাচক ছিলনা তাই নেতিবাচক চিন্তাটাই তাদের মনে আগে দোলা দেয়। চাঁদ দেখলে মুগ্ধ হবার বদলে নিজের অজান্তেই তারা চাঁদের দাগ খুঁজতে শুরু করে। কারন চলার পথে তারা শেখেনি যে পৃথিবীতে নিখুঁত বলে যেহেতু কিছু নেই, কেউ নেই সেহেতু জীবনের সার্থকতা দাগকে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা ক্ষমা করে দেবার মধ্যেই। শিশুর আত্মিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পরিবার -কেই পালন করতে হয়।
পরিবার যদি আত্মিক বিকাশের পথকে সুগম করে দিতে পারে, তাহলেই সম্ভব হয় শিশুর আত্মার বিকাশ। তবে এর সাথে সাথে ছোটবেলা থেকেই শিশুকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে। কেননা আত্মিক বিকাশের মূল দায়িত্ব ব্যক্তিকেই পালন করতে হয়। যেমন, কোন একটি বাগানের মালী পানি দিয়ে সার দিয়ে যত্ন করে বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে, কিন্তু মালী চাইলেই ফুল ফোটাতে পারেনা। তাই ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, দোষ-গুণের মধ্যে যাতে পার্থক্য নির্নয় করতে পারে সে শিক্ষাও ছোটবেলা থেকেই দিতে হবে শিশুকে। যাতে জীবনে চলার পথে নিজ বিবেচনার দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিশু তার আশেপাশের প্রতিটা ঘটনা থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। শুধু তার সাথে অন্যদের সম্পর্ক বা আচরণ থেকেই নয় বরং তার আশেপাশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকেও সে শেখে। তাই বাবা-মা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আশেপাশের মানুষজন, এমনকি স্কুলের পরিবেশও শিশুর চাল-চলন, আচার-আচরণ, কথাবার্তাকে প্রভাবিত করে। প্রভাবিত করে তার গ্রহণ-বর্জন ক্ষমতাকেও।

চলবে….

পর্ব -১

 

আমার বই পড়া (শেষ পর্ব)

রায়হান আতাহার


ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। পড়তে ভালোবাসতাম। নতুন বই পেলেই পড়ার জন্য উশখুশ করতাম। সেই আমি হঠাৎ করে বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এত পড়ার চাপ ছিল যে, এরপর থেকে বই দেখলেই কেন যেন অভক্তি কাজ করতো। একেবারে না পড়লে নয়, ওটুকুই পড়তাম পরীক্ষা পাশের জন্য। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই বলতে গেলে পড়াই হত না। এই সময়টাতে যা পড়েছি তার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের বই। টানা বেশ কয়েকটা বই পড়েছি তাঁর। লেখাগুলো ভালো লাগতো। কিন্তু নেশা তৈরি করতে পারেনি।

ফেসবুকিং আর মুভি দেখে সময় পার করে দিচ্ছিলাম। এমন সময় বইপড়ুয়া কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেলাম। তাদের বই পড়া, বই নিয়ে আলোচনা, ফেসবুকে পোস্ট দেখে বই পড়ার আগ্রহ আবার ফেরত আসলো। আমি বিশ্বাস করি, বই পড়তে দেখলে ও বই পড়ুয়াদের সান্নিধ্যে থাকলে বই পড়ার স্পৃহা তৈরি হয়। আমার মাঝেও তাই হয়েছিলো।

নতুন করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মানোর পর বইয়ের প্রতি আমি বলতে গেলে সর্বভুক হয়ে গেলাম। সবার লেখাই পড়তে ভালো লাগতো। এর মাঝে পরিচয় হয়ে গেল আহমদ ছফার সাথে। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড লেখকদের তালিকা তৈরি করলে আহমদ ছফার নাম প্রথমে থাকবে। তাঁর লেখা প্রথম যে বইটি পড়েছি, তা হলো ‘যদ্যপি আমার গুরু’। ছফা ও প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের সাথে পরিচয় হবার পর নিজের মাঝে পরিবর্তন আবিষ্কার করতে লাগলাম। ছফার আরো কিছু বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। প্রতিটি লেখাতেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন প্রিয় এই লেখক।

আহমদ ছফার লেখার প্রতি ভালোলাগার পাশাপাশি আরো কিছু লেখকদের বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সেরা লেখকদের সেরা বইগুলো পড়ে ফেলা। নতুন-পুরাতন সবার সেরা বইগুলোর নাম দিয়ে একটি ‘বাকেট লিস্ট’ বানানো আছে আমার। ভালো কোন বইয়ের সন্ধান পেলেই ঐ লিস্টে যোগ করে রাখি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘কবি’ উপন্যাসে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “হায়, জীবন এত ছোট কেনে?” বই পড়ার ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। জানি না, তালিকার কত ভাগ বই পড়তে পারবো।
তবে জীবনের শেষভাগে এটুকু তৃপ্তি পেতে চাই যে ভালো কিছু বই সংগ্রহ করেছি ও পড়েছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিয়ে যেতে পারলে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার একটি বড় অংশ পূরণ হবে। সৃষ্টিকর্তা মনের ইচ্ছা পূরণ করুন।

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ফাল্গুন

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


বিসমিললাহ্ হির রহমানির রহিম, আসসালামুয়ালাইকুম সন্মানিত ভাই ও বোনেরা যাত্রা পথে আপনারা নিরাপদ ভাবে বাড়ীতে পৌঁছে যান এই কামনায় শুরু করছি। এই যে দেখছেন আমার কাছে একটা কলম এটা যে সে কলম নয় এর এক দিকে কালো কালি অন্যদিকে লাল কালি, এই একটি কলম বাইরে থেকে কিনলে দাম পড়বে ৫০ টাকা, কোমপানি দিবে ৩০ টাকা আর আমার থেকে কিনলে দাম পড়বে মাত্র ১০ টাকা,১০ টাকা !!আপনার সোনামণির জন্য একটা কিনে নিয়ে যান” এই কথা গুলো নিত্য শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে সুষমার,সুষমা ভাবে এরা প্রতিদিন কত টাকার কলম বিক্রি করে?
সুষমার ভাবনার মধ্যে ছেদ পরে পাশের খালাম্মা গোছের এক মহিলা দাঁড়িয়ে থাকতে ব্যালানস করতে অসুবিধা হচেছ তাই উনার কুনুইয়ের গুতো খেয়ে সুষমা বাস্তবে ফিরে এল খালাম্মা ওর দিকে তাকিয়ে একটা ফিকে হাসি দিলেন। সুষমা লক্ষ্য করল ওদের সামনেই দুই হাতের কর ভরে লাল মেহেদি দিয়ে এক তামাটে রং এর যুবক ৩২টা দাঁত বের করে জনৈক মেয়ের সাথে বাজে রসিকতা করছে অথচ এক বারের জন্য ভাবছে না মার বয়সী এই মহিলাকে বসতে দেয়া ওর সামাজিক দায়িত্ব। সুষমা বাসের ভেতরেই একটা টিপ্পনিও শুনতে পেল, একটা অল্প বয়সী মেয়ে বেশ বুঝা যাচেছ বাসে উঠার পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই, তাই ইচ্ছাকৃত বিশেষ অজ্ঞের খোঁচার থেকে বাঁচতে একটা আর্তনাদ করে উঠেছিল,ব্যাস আর যায় কোথায়,অমনি ২জন সম-স্বরের চেঁচিয়ি উঠল, এত বড়লোকি তো বাসে কেন পেরাইভেটে চড়লেই তো হয়, ২ জনেই এই কথা বলে সেকি বীভৎস হাসি, বেচারা অপমানে লাল হয়ে চোখের পানি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুষমা শাহবাগ থেকে রামপুরা যাবে মোঘোল আমলে বাসে চড়েছে এখনও ৭১ সালেই এসে পৌছায়নি কখন ২০১৮ তে আসবে তার হিসাব খোদ ড্রাইভার সাহেবও বলতে পারেননা…… আর সিট তো সোনার হরিণ, সুষমাতো মাকে বলেছিল নামায পড়ে ওর জন্য দোয়া করতে একটা সিট যেন ও পায় কিন্তু বিধি বাম, যখন বাসে উঠেও দেখতে পায় কোন জনৈক সৌভাগ্যবান জানালার ধারে বসে মহা সুখে ঘুমাতে ঘুমাতে পরে যাচেছ তখন সত্যি সুষমার রাগ, হিংসা কান্না সব এক সাথে পায়।
জোরে ব্রেক করে বাস এসে থামল কাকরাইল স্টপেজে, ওমনি হুরমুর করে অনেকের সাথে সুষমাও নিজেকে সামলে নিল পরে যাবার থেকে। কেউ ধাক্কা দিতে দিতে এবং ধাক্কা খেতে খেতে নামল, উঠল। এই ফাঁকেই শুরু হয়ে গেল মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা এবার সুষমা জিতে গেল, বসতে পারল সোনার হরিণ নামক সিটে, ওখানে আগে থেকেই একজন বসে ছিল এবার আরেক যাত্রী উঠল (বয়স আনুমানিক ৩৫/৩৭ হবে) পাশেই হেল্পপারের সাথে এক কলেজ ড্রেস পরা ছেলের সাথে বেশ গরম কথাবার্তা চলছে হাফ পাশ আছে কি নেই তা নিয়ে। ২০ টাকা ভাড়া ৮ টাকায় রফা হলো, এবার এলো সুষমাদের দিকে নতুন যাত্রীকে হেলপার বলল আনটি বাড়াডা……
বোমটা ফাটল এখন, উনি ২৫ টাকার ভাড়া মেটালেন ৫ টাকা দিয়ে, হেল্পার তেড়ে প্রশ্ন করল কই যাবেন,;উনি তার চাইতে ক্ষিপ্র গতিতে উত্তর দিলেন কি মনে করছ আমরা হিসটুডেনট(student)।হেল্পার বেচারা খুবই কমজোরি গলায় বলল “এ্যাঁ!!” উনি আবার বলে উঠলেন হ্যাঁ, আমরা হিসটুডেনট আমাদের বাড়া এডাই। হেল্পার কোন কথা না বলে ওই ৫ টাকা নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করল। এবার মৌচাক থেকে একজন মেয়ে উঠল, উঠেই সুষমার পাশে বসে থাকা যাত্রীকে খুবই করুণ স্বরে অনুরোধ করল, আপু আমার মোবাইলে কোন ব্যালানস নেই একটা ইমার্জেনসি কল করা যাবে? মহিলা সাথে সাথে ফোনটাএগিয়ে দিল মেয়েটাকে। সে ফোনে বলে উঠল” আসসালামুয়ালাইকুম হ্যাঁ, আব্বা আইসেননি বাসায়, হুনেন আমি মাছ রান্না করচি আপনের কিছু করন লাগব না শুধু বাতটা বসাই দেন, ইছ মিষ্টি কোমবা(কুমড়া) আমি খাই না আননে খাইলে রানদেন, আমি আসি খাট্টা(টক)রান্না করি দিব” ইমার্জেনসি কলের নামে বাপ-মেয়েতে এমন আলাপ চারিতায় জনৈক ভদ্রমহিলা রীতিমত কাঁদো কাঁদো চেহারা করে সুষমার দিকে চাইল………।
এগুলো সুষমা প্রতিদিনই দেখে
যখন বাসে চড়ত না তখন ফাল্গুন নামটা দেখে সুষমা আপন মনে গুনগুনি উঠত,’
কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস……।
আমার সর্বানাশ…’এখন সুষমা মিলিয়ে দেখে আসলেই তো সর্বনাশ, না সর্বনাশও ঠিক ক না এই ফাল্গুন বাসে না উঠলে জীবনের এই দিকটা সম্পর্কে, এত বিচিত্র মানসিকতা সম্পর্কে একদম অজানা থেকে যেত। জীবনের সব কষ্ট থেকেও শেখার আছে।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সিলিং সাইকোলজিষ্ট