banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

একটি অসমাপ্ত ঈদগল্প

রায়হান আতাহার


১.
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিল জাহিদ। ওয়াইফাই চালু করতেই একগাদা ম্যাসেজ আসলো। ঘুমের রেশ কেটে গেলো। কারণ সাধারণত তাকে কেউ প্রয়োজন অথবা শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া ম্যাসেজ করে না। আজ এতগুলো ম্যাসেজ এসেছে, কারণ আজ ঈদ।

ঈদের দিন মানুষের মাঝে এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করে। কিন্তু জাহিদের মাঝে কোন উচ্ছ্বাস নেই। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ জাহিদের। মাস ছয়েক হলো স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে সে।

বাংলাদেশের সাথে সময় ব্যবধানের কারণে বলতে গেলে একদিন আগেই তার ঈদ চলে গেছে। গত রাতেই অনেকের ‘ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা’ পেয়েছে। বাসায় বাবা-মায়ের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় হয়ে গেছে। নামেই শুধু কুশল বিনিময়, ভৌগোলিক দূরত্ব ঈদের দিনটিতে জাহিদ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। ম্যাসেজগুলো পড়তে ইচ্ছে করলো না জাহিদের। ইচ্ছে করলেও লাভ হতো না। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে যেতে হবে তাকে। হাতে সময় কম।

২.
বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে জাহিদ। আসমানি ফোন দেয়ার কথা এ সময়ে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসের আসমানি চরিত্রটি জাহিদের খুব ভালো লেগেছিলো। তাই প্রিয় মানুষটিকে ‘আসমানি’ বলে ডাকে সে।

ফোন আসার সময় পার হয়ে যায়নি। কিন্তু অপেক্ষার সময়গুলো কেন যেন কাটতে চায় না। নিজেই ফোন দেবে কি? না, ঠিক হবে না। ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকে সবারই। ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠলো। হ্যাঁ, ফোনটা আসমানিরই। মোবাইল কানে দিয়ে অন্য দশটা দিনের মতই বের হয়ে গেল জাহিদ। (অণুগল্প)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ঈদের শুভেচ্ছা

অপরাজিতা


“আকাশের বাঁক ঘুরে চাঁদ এল ছবির মতন
নতুন কিশ্তী বুঝি এল ঘুরে অজানা সাগর
আজ এ স্বপ্নের মাঠে রাঙা মেঘ হল ঘন।

আতরের ঘন গন্ধে মাটি চায় হাওয়ার বাঁধন
ঈদের আনন্দ, স্বপ্ন রেখায়িত গোধূলি আকাশ।”

ফররুখ আহমেদ

‘ঈদের শুভেচ্ছা’ বাংলায় মনের জানালা, গদ্য, কবিতা ও অপরাজিতা নিয়ে লেখক, পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যায় নানা আয়োজন। প্রবন্ধ, গান, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কোন কিছুই বাদ যায় না। ঈদকে কেন্দ্র করে কবি- সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, অভিনেতাদের ব্যস্ত সময় কাটে। সত্যি বলতে কী, এমন কোন মুসলিম কবি-সাহিত্যিক কিংবা লেখককে হয়তো পাওয়া যাবে না যিনি ঈদ নিয়ে কোন লেখা লিখেননি। বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকরাও এগিয়ে আছেন।

ঈদকে নিয়ে কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি কয়েকটি লাইন-

“ এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,
হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।
এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।
এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”

কবি কায়কোবাদ ঈদকে পুণ্যমিলনের মহামেলা হিসেবে অভিহিত করলেও ইসলামের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে ঈদের দিনেও গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের কষ্টের যেন শেষ থাকে না।

এ দিকটি ফুটে ওঠেছে শাহাদাত হোসেনের ‘বাংলার ঈদ’ কবিতায়। কবি লিখেছেন,

“বাংলার মুসলমান
শুধু চেয়ে রয়-
মৌন ম্লান ক্লিষ্ট মুখ নির্বাক নিশ্চল।
ফিত্রার খুশী কোথা তার?
কি দান সে দিবে ক্ষুধিতেরে?
নিজেই কাঙাল রিক্ত-
ভিক্ষা মাগি ফিরে দ্বারে দ্বারে।”
এ কবিতায় কবি ফিতরা আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

কবি গোলাম মোস্তফা ঈদকে মানবতার বিরাট প্লাটফর্ম হিসেবে কল্পনা করেছেন। ঈদ উৎসব কবিতায় তিনি লিখেছেন-

“ কণ্ঠে মিলনের ধ্বনিছে প্রেম-বাণী, বক্ষে ভরা তার শান্তি,
চক্ষে করুণার স্নিগ্ধ জ্যোতি ভার,বিশ্ব-বিমোহন কান্তি
প্রীতি ও মিলনের মধুর দৃশ্যে
এসেছে নামিয়া যে নিখিল বিশ্বে
দরশে সবাকার মুছেছে হাহাকার বিয়োগ-বেদনার শ্রান্তি।”

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার লেখা – ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’ এ গানটি ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। সুত্র: Subornolota-সুবর্ণলতা