banner

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 13, 2025

 

ফিতরা

দ্য স্লেভ


আমরা যাকাতের বিষয়ে জানি কিন্তু ফিতরার বিষয়ে অবগত নই বললেই চলে। যাকাত অবশ্য সঠিকভাবে প্রদান করিনা আমরা। আর রমজানেই কেবল যাকাত নিয়ে আলোচনা করাই তার প্রমান। অথচ বিষয়টা রমজান কেন্দ্রীক নয়। এটা নিসাব পরিমান অর্থ সংক্রান্ত এবং তা এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।

জাকাতের ২টা পরিমাপক আছে, একটা স্বর্ণ অন্যটা রৌপ্য। যেটার সাথে মিলে, সেটায় নিয়মানুযায়ী জাকাত দিতে হবে। যদি রুপার তুলা(প্রায় ১০ গ্রাম) ৫০০ টাকা হয় তাহলে সাড়ে ৫২ তুলার দাম ২৬২৫০(রুপার বর্তমান দাম সম্ভবত আরেকটু বেশী) হয় । আর এই পরিমান টাকা কারো ব্যাংকে বা ঘরে ১ বছর পড়ে থাকলে তার উপর ২.৫% জাকাত দিতে হবে। জাকাত সর্ব প্রথম আপন লোকদেরকে দিতে হবে, এতে জাকাতও আদায় হবে আবার আত্মীয়তাও রক্ষিত হবে। এমনকি স্ত্রী তার গরিব স্বামীকেও জাকাত দিতে পারে।

কিন্তু ফিতরার ব্যাপারে আমরা প্রায় জানিনা বললেই চলে। এটা রমজানে প্রদান করতে হয় শেষের দিকে এবং ঈদের নামাজের পূর্বে। ভালো হয় যদি ঈদের আগের দিন প্রদান করা হয়। রসূল(সাঃ) খেজুর,কিসমিস,বার্লি ইত্যাদীর এক সা(আনুমানিক আড়াই কেজী বা ৩ কেজী বা কিছু কম বেশী পরিমান) পরিমান ফিতরা দিতেন। তবে আলেমরা বলেন এটা প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। তবে কেউ খেজুর বা উক্ত দামী খাদ্য দ্বারাও করতে পারে। বিশেষ করে ধনীরা ফিতরা দিবে দামী খাবারের পরিমানে। সেটাই উত্তম।

ফিতরা খাদ্য দ্বারা দিতে হবে এটাই সুন্নাহ কিন্তু অনেকে উক্ত পরিমান টাকা দ্বারাও ফিতরা দেওয়া যাবে বলেছেন। তবে খাদ্য দ্বারা দেওয়াই উত্তম। যারা বিদেশে আছে এবং আশপাশে গরিব মানুষ নেই, তারা দেশে টাকা পাঠালে সেটা দিয়ে অন্যরা খাদ্য কিনে খেতে পারে। এটা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি আদায় করবে যার মোটামুটি খেয়ে পরে চলে যায়। ফিতরার জন্যে যাকাতের নিসাব পরিমান সম্পদ হওয়া জরুরী নয়।

আমি ভাবছিলাম খেজুর কিনে দেব, কিন্তু মসজিদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা টাকা সংগ্রহ করছে এবং এটা দ্বারা তারা খাদ্য কিনে এখানে বসবাসকারী গরিবদেরকে প্রদান করবে। ইমাম বললেন খাদ্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে,, তাদের হাতে টাকা দিলে হবেনা। এর একটা আলাদা অর্থ আছে। ঈদে গরিব লোকেরা যাবে ভালো খাবার খেতে পারে তার জন্যেই ফিতরা। বাস্তবে দেখা গেছে গরিবদেরকে টাকা দিলে তারা সেটা দিয়ে পরিবারের জন্যে খাবার না কিনে গরিবি হালে ঈদ করে, এতে তাদের পরিবার ভালো খাবার খেতে পারেনা। ফিতরা আসলে তাদের ঈদের দিন উত্তম খাবার নিশ্চিত করে।

সুন্নাহ থেকে আমার মনে হয়েছে যেই লোক যেই মানের খাবার ঈদের দিন খায়,তিনি সেই মানের খাবার ফিতরা হিসেবে প্রদান করবেন। এ কারনেই তৎকালীন আরবের বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত খাদ্যের উপর রসূল(সাঃ) ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার লেখা পড়ে যারা ভাবছেন ফিতরা তার উপর কর্তব্যরূপে আরোপিত হয়েছে কিনা,,, তারা এত না ভেবে ফিতরা দিয়েই ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন দয়া করে

আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদতকে কবুল করুন এবং সম্মান বৃদ্ধি করুন।

 

ভালো থাকাটাও একটি শিল্প

আফরোজা হাসান


খুব ছোটবেলায় শখ করে গান (হামদ, নাত, গজল) শিখেছিলাম। মামণির এক বান্ধবী বাসায় এসে গান শিখাতেন। উনার কাছেই প্রথম জেনেছিলাম যে, গান হচ্ছে একটা শিল্প। আর শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে প্রয়োজন অনেক সাধনার। সত্যি অনেক সাধনা করেছিলাম। সেই সময় আইসক্রিম খুব পছন্দ করতাম কিন্তু কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে যাবে সেই ভয়তে আইসক্রিম খেতাম না। কুসুম গরম পানি, আদা, লেবু, মধু, যষ্টিমধু আরো কত কি খেতাম সুন্দর কণ্ঠস্বরের জন্য। আর সকালে উঠে খালি গলার আ-আ-আ-আ- সেতো ছিলোই। এইসব কষ্ট খুব মনের আনন্দ নিয়ে করতাম কারণ আমার শখ ছিলো শিল্পী হবার। আর মানুষ যখন মন থেকে কোন কিছু হতে চায়, তখন তারজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যেতে পারে। আমিও পেরেছিলাম। আর সেই কষ্ট ও ত্যাগের ফল স্বরূপ কিছু পুরষ্কার, আপনজনদের প্রশংসা, স্পেশ্যাল মূল্যায়ন যোগ হয়েছিলো জীবন ঝুলিতে।

ছোটবেলা থেকেই রান্নার ভীষণ শখ ছিল। স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমার রান্না খেয়ে পরিতৃপ্তির ধ্বনি তুলছে। সবচেয়ে পছন্দ করতাম যেই মানুষটির রান্না তাকে গিয়ে ধরেছিলাম আমাকেও তার মত রাঁধুনী বানিয়ে দেবার জন্য। উনি হেসে বলেছিলেন, আমার রান্না মজা হবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমি রান্না করতে ভালোবাসি। উপভোগ করি রান্না করাটাকে। আসলে উপভোগ না করলে মানুষের কোন গুণ বিকশিত হয় না পরিপুর্ণ ভাবে। কারণ কোন কিছুকে উপভোগ না করলে মানুষ সেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। আর মন যেখানে অস্থির বা অমনোযোগী সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করাটাই আসলে ঠিক না। তাই কোন কিছুতে পারদর্শী হতে সেই জিনিসকে ঘিরে মনে সুখ সুখ আবেশ থাকাটা খুব জরুরি। তাই ভালো রান্না করতে হলে তোমাকে সবার আগে ভালবাসতে হবে রান্নাকে। কেননা রান্না একটি সাংঘাতিক আর্ট। একদম ছবি আঁকার মতো। মনের মাধুরী মিশিয়ে যে শিল্পকে রূপদান করতে হয়। রান্নাকে আমি ছবি আঁকার মতই বহু যতনে আয়ত্ত্ব করতে চেষ্টা করেছি এরপর থেকে।

মানুষের মন নিয়ে স্টাডি করতে করতে আজ হঠাৎ একটা উপলব্ধি হলো। মনে হলো শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে হলে সেই সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। প্রয়োজন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চেষ্টার। নিরলস ভাবে লেগে থাকার ইচ্ছার। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যার প্রচেষ্টা যত বেশি থাকে, সে তত বেশি সফল হয়। ঠিক তেমনি ভালো থাকতে জানাটাও মনে হয় এক ধরনের শিল্প। কেননা এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ভালো থাকার জীবনাপোকরণে ভরপুর থাকা স্বত্ত্বেও হতাশা-নিরাশায় দিনযাপন করছে। জীবনকে ঘিরে শুধুই হাহাকার ধ্বনি তোলে তারা। আবার কিছু মানুষ দেখেছি যারা জীবনাপোকণেরর সন্ধানে ছুটে চলছে একরাশ তৃপ্ততা নিয়ে। তাদের কণ্ঠে সর্বদা ধ্বনিত হয় “আলহামদুলিল্লাহ”।

আসলে ভালো যে আছি সেটা বুঝে নিতে জানতে হয়, শিখতে হয়। আর সেজন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের। প্রয়োজন হয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। দরকার হয় প্রচণ্ড চেষ্টা ও নিরলস লেগে থাকার ইচ্ছার। ত্যাগ করতে হয় অনেক অ-নে-ক কিছুকে। তা না হলে কখনোই অর্জন করা যায় না মনের আরাধ্য প্রশান্তিকে।