banner

রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: May 1, 2025

 

জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা : কী বলে ইসলাম

জন্ম বার্ষিকী পালন ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন এমন এক সামাজিক প্রথা হিসাবে চালু হয়ে গেছে যে, কেউ যদি এটা পালন না করে তাহলে তাকে অপরাধী মনে করা হয়। এটা শরীআত পরিপন্থি।

আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস ইত্যাদি দিবস পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে শহীদ দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। শরীআতের দৃষ্টিতে এই কর্মকান্ড বৈধ্য আছে কি?

বর্তমানে আমাদের দেশে জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী পালন করার যে রেওয়াজ প্রচলিত আছে তা বিদআত ও না জায়েয। কারণ এই সকল কাজের জন্য আগে থেকেই দিন তারিখ নির্ধারণ করে রাখা হয় এবং সেদিন খুব ধুমধাম সহকারে দিনটি পালন করা হয়। জন্ম বার্ষিকী পালন ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন এমন এক সামাজিক প্রথা হিসাবে চালু হয়ে গেছে যে, কেউ যদি এটা পালন না করে তাহলে তাকে অপরাধী মনে করা হয়। এটা শরীআত পরিপন্থি।

অনুরূপভাবে শহীদ দিবস পালন করাও না জায়েয। শহীদ দিবস পালন করা যদি পুণ্যের কাজ হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম উহুদের দিনকে শহীদ দিবস হিসাবে পালন করতেন। (ফাতাওয়ে রাশিদিয়া-২৪৫)

মাওলানা মিরাজ রহমান

 

ঈদের ভ্রমণে ঘুরে আসুন সাজেক

‘সাজেক’ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। বন্ধুবান্ধব নিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো হোক আর হোক পরিবার নিয়ে সময় কাটানো অথবা শুধু একা একা প্রকৃতিকে উপভোগ করা যেটাই হোক আপনার উদ্দেশ্য সাজেক কিন্তু হতাশ করবে না আপনাকে। এমনকি ঋতুভেদে এর সৌন্দর্য্য বদলাবে কিন্তু কমবে না কোন অংশে।
মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে,
আঁধার করে আসে,
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি
তোমারি আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কবিগুরু হয়ত কবিতাটি লিখেছিলেন একলা জানালার পাশে বসে। কিন্তু সাজেকের মেঘ আপনাকে কবিগুরুর এই কবিতার প্রেমিক চরিত্রের মতই উদাস করে তুলবে। পাহাড়ের পর পাহাড়, তার উপর দিয়ে ভেসে চলেছে মেঘ। মেঘের উপর হাসছে সূর্য্য, মেঘ ভেদ করে পাহাড়ে রোদ পড়ছে না কোথাও কোথাও, সেই মেঘের ছায়ার লুকোচুরি দেখাও যে মনকে শান্ত করে, আনন্দ দেয়, বলে প্রকৃতিতে আর কোন সত্য নেই, একটাই সত্য- সৌন্দর্য্য।
মেঘের পাশেই যে কোন রিসোর্টে রুম ভাড়া নিয়ে মেঘের মাঝেই কাটিয়ে আসতে পারেন আপনার ঈদ। তবে ঢাকা থেকে ফোনে বুকিং দিয়ে যেতে অবশ্যই। সাজেকের সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হল, জায়গাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। রাতেও পাহাড়ের কোলে বসে অনুভব করতে পারবেন মেঘের সিক্ত ছোঁয়া। তারা ভরা আকাশ গল্প শোনাবে আদিম কোন পাহাড়ী মেয়ের, দুরন্ত কিশোরীর মত্ন হবে উল্কা পতন, দূরের আকাশে বিদ্যুৎ ঝলকে হঠাত হঠাত দেখিয়ে দেবে রাতের পাহাড়ের নিথর মূর্তি।
অবশ্যই দেখবেন-
কমলক পারা-
সাজেক থেকে একটু সামনে পাহাড়ের উপরে কমলক পারার অবস্থান। ছোট একটি গ্রাম এটি। সম্প্রতি এখানে একটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। কমলক এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। সর্বোচ্চ পয়েন্ট থেকে পাবেন চমৎকার প্যানারমিক ভিউ। আর সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য তো রয়েছেই।
ঝর্ণা
বর্ষায় সাজেকে পাবেন বেশ কিছু ঝর্ণা। তবে কমলক ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। অবশ্যই একজন গাইড নেবেন। স্থানীয় যে কেউ গাইড হিসেবে আপনাকে সাহায্য করবে।
যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন-
১। পর্যটকদের নিরাপত্তার সুবিধার্থে সাজেকে এখন ২টি প্রবেশ সময় নির্ধারন করা হয়েছে। সকাল ১১ টা এবং বিকেল ৩টা। অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে আর্মি চেক পয়েন্টে পৌছতে হবে আপনাকে। সাজেক ত্যাগের ক্ষেত্রেও এই সময়সূচি প্রযোজ্য।
২। আদিবাসিদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। তারা আপনাকে অনেক সহযোগিতা করবে।
৩। যদি পাহাড়ে ট্রেকিং করতে চান অবশ্যই ভালো জুতা পরবেন।
৪। মশার উপদ্রপ অনেক তাই ওডোমস সাথে নেবেন।
৫। উচ্চতা অনেক বেশী, তাই রোদের তাপ অনেক বেশী। সান্সত্রিম ব্যবহার করুন।
থাকার ব্যাবস্থা-
সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
রুন্ময় : এটি সাজেকে অবস্থিত। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।
আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। যোগাযোগ : পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।
ইমানুয়েল রিসোর্ট : এটিতে ৮ টি রুম আছে। সব গুলো কমন বাথ। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮( বিকাশ)
সারা রিসোর্ট: এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই – ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৭২৪৬৮৯৪২। লক্ষন – ০১৮৬০১০৩৪০২।
জলবুক রিসোর্ট: এটি কমলকের কাছাকাছি পাহাড়ে অবস্থিত। প্রতি কক্ষের সাথে এটাচ বাথ আছে। যোগাযোগ- ০১৮৬০৯৯৫৯৫।
যাতায়াত:
ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন – আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।শ্যামলী পরিবহন – আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ । শান্তি পরিবহন- আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস কদমতলী(চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।
খাগড়াছড়ি বা দিঘিনালা থেকে যেতে পারবেন চাদের গাড়ি, সি এন জি বা মোটর সাইকেল এ। চাদের গাড়িতে ১২/১৪ জন যেতে পারবেন ৬-৭ হাজার টাকা খরচ পড়বে। সি এন জি তে ৩-৫ জন, ৩-৪ হাজার টাকা। মোট্রসাইকেল এ ২ জন ১৫০০-৩০০০ টাকা লাগবে।
* ঈদের সময় খরচ আরও বেশী হতে পারে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী

 

‘আর্টিস্ট মজনু খাঁ’ চরিত্রে নিশো

ঈদ উপলক্ষে পদ্মনাভ দাস গুপ্তের ‘চ্যাপলিন’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় নাটক ‘আর্টিস্ট মজনু খাঁ’। আসাদদুজ্জামান সোহাগের চিত্রনাট্যে নাটকটি নির্মাণ করেন মেহেদী হাসান জনি। বিরহী মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় নাটকটিতে অভিনয় করেছেন কায়েস চৌধুরী, আফরান নিশো, শারলিন ফারজানা, বাসার বাপ্পি, শরিফুলসহ আরো অনেকে। ঈদের অনুষ্ঠানমালায় ঈদের দশম দিন বৃহস্পতিবার রাত ৭ টা ৫০ মিনিটে নাটকটি মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচার হবে।

‘আর্টিস্ট মজনু খাঁ’ নাটকটির কাহিনীতে দেখা যাবে, মজনু (আফরান নিশো) নামের হতদরিদ্র লোকটির একমাত্র পেশা হচ্ছে বিভিন্ন বিয়ে বাড়িতে, জন্মদিন কিংবা যে কোন অনুষ্ঠানে মানুষকে হাসানোই তার কাজ। তাই বলে সবসময় যে মানুষ হাসে তা নয়। মজনু চার্লি চ্যাপলিনের বিশেষ ভক্ত। চ্যাপলিনের মত পোশাখ পোশাক পরে তারই আদলে বিভিন্ন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে সে। তার খেলা দেখে বাচ্চারা মজা পায়। কিন্তু তার এই কাজের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

যখন কাজ থাকে তখন হয়ত দিনে দু’বেলা খাওয়া জোটে কিন্তু যখন কাজ থাকেনা তখন একপ্রকারে না খেয়েই থাকতে হয়। ঘরে মা মরা রাতুল (শরিফুল) নামে একমাত্র সাত বছরের ছেলে রয়েছে তার। দুবেলা খাওয়া জুটুক কিংবা না জুটুক প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরা এই মানুষটার জীবন। ছেলেটাও হয়েছে তার একেবারে ন্যাটা। বাপ যেমন ছেলেও তেমন। সারাক্ষন হাসতে আর ফুর্তি করতে ভালোবাসে দু’জনে।

একদিন একটি অনুষ্ঠানে বাবা-ছেলে পারফর্ম করতে গিয়ে পরিচয় হয় এনজিও কর্মী নিতু (শারলিন ফারজানা) সঙ্গে। তাকে মুগ্ধ করে বাবা ও ছেলের এই অদ্ভূত জীবনের ক্যামেস্ট্রি। মজনুর কর্মহীন দু:খী জীবনে একটু স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবার জন্য নিতুই একদিন মজনুকে টেলিভিশনে পারফর্মমেন্স করার সুযোগ করে দেয়। আর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। এভাবেই নাটকের কাহিনী এগিয়ে চলে।

 

সাংবাদিকতার অনুসরণীয় যে নারীরা

পৃথিবী এগিয়ে চলছে। আর তার সাথে সাথে এগিয়ে চলছে মানুষও। শুধু পুরুষই নয়, তাদের পায়ের সাথে সমান তাল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরাও। ঘরে-বাইরে কোথায নেই নারীরা? বিশেষ করে নারী সাংবাদিক, তাদের কথা তো মোটেই ভুলে যাওয়ার মতন নয়। জীবনের বাজি রেখে দুর্গম থেকে দুর্গমতর স্থান থেকে তারা এনে দিয়েছেন খবর, করেছেন অসম্ভব রকমের কষ্ট, আর উঠে এসেছেন সবার চাইতে উঁচুতে। আর সারা বিশ্বের নারী সাংবাদিকদের ভেতরে এমন শ্রেষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিকের কথাই নীচে বলা হল।

 

১. জিল আব্রামসন

কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন মার্কিন এই লেখক ও সাংবাদিক। সেসময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে দ্যা হার্ভার্ড ইন্ডিপেন্ডেন্টে এ কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে চলে যান টাইম ম্যাগাজিনে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সালের সময়টা জিলের সেখানেই কাটে। এর পাশাপাশি দ্যা আমেরিকান ল ইয়ারে এক যুগ কাটান তিনি। ১৯৮৬ সালে জিল লিগ্যাল টাইমের প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং দুই বছর পর দ্যা ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে চলে যান। সেখানে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল অব্দি কাজ করেন তিনি। সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে যোগদান করে খুব দ্রুত চলে যান অনেক উপরে। তবে ১৯৯৭ সালে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে চলে যান জিল। আর ২০০০ সালে সেখানেই ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এখানে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু ঝামেলার মুখোমুখি পড়তে হয় তাকে। ১৯৯৫ সালে জিল ও তার ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের সহকর্মী জেন মায়ার যৌথভাবে স্ট্রেঞ্জ জাস্টিস:দ্যা সেলিং অব ক্লারেন্স থমাস বইটি লেখেন। ২০০০-২০০১ সালের এই এক বছর জিল প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন। একই সময়ে আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস এন্ড সায়েন্সের ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে টাইমসের সাথে ৬ মাসের জন্যে কাজ করার কথা বলা হলেও ২০১১ সালে টাইমস জিলকে নিজেদের সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ও ঘোষণা করে। তবে ২০১৪ তে এসে টাইমস থেকে তাকে না করে দেওয়া হয়। তবে এখনো অব্দি মানুষ তাকে টাইমসের সম্পাদক হিসেবেই এক নামে চেনে। ২০১২ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকানুযায়ী বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী নারীর ভেতরে অন্যতম একজন হিসেবে জিলকে নির্বাচিত করা হয়।

২. আরিয়ানা হাফিংটন

দ্যা হাফিংটন পোষ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক আরিয়ানা হাফিংটনের লেখক ও অভিনেত্রী হিসেবেও বেশ পরিচিতি রয়েছে। গ্রীসে ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত সাংবাদিক কন্সটানটিনোস ও এলি স্ট্যাসিনোপোউলোর মেয়ে এই নারী মিডিয়াকর্মী ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে প্রথম বিদেশি ও তৃতীয় নারী হিসেবে ক্যামব্রিজ ইউনিয়নে যোগ দেন আরিয়ানা। আরিয়ানা বড় বোন আগাপি বেশ ভালো লেখক হিসেবে পরিচিত। তখন তিনি নিজের লেখালেখি শুরু করেছিলেন। এদিকে বার্নার্ড লেভিনের সাথে বেশকিছু জায়গায় যেমন- ফেস দ্যা মিউজিকের একটি সংখ্যায় দেখা যায় আরিয়ানাকে। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিবিসিতে তাদেরকে একসাথে কাজ করতে দেখা যায়। বার্নার্ডের অনুপ্রেরণায় তার সম্পাদকীয় সাহায্য নিয়ে লিখতে শুরু করেন আরিয়ানা। কিন্তু একটা সময় তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে ১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন তিনি। এরপর তেকে একের পর এক বই লিখে যান আরিয়ানা। নারীদেরকে নিয়ে ১৯৭৩ সালে দ্যা ফিমেল ও্যমেন লেখেন তিনি। এরপর ন্যাশনাল রিভিউ এর পাতায় ছাপান বেশ কিছু আর্টিকেল। একে একে প্রকাশিত হয় তার লেখা মারিয়া ক্যালাস ও পাবলো পিকাসোর জীবনী। মাইকেল হাফিংটনকে বিয়ে করার পর কনজারভেটিভ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। কাজ করতে থাকেন আরো বেশি। ১৯৯৭ সালে নিজের লেখা গানের জন্যে অ্যামি এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন আরিয়ানা। ১৯৯৮ সালে রেডিও অনুষ্ঠান লেফট, রাইট এন্ড সেন্টারে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। এবং একটা সময় রিপাবলিকদের সমর্থন করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ডের দূত হিসেবে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পরে বার্লিনের সামিটে যোগদেন তিনি। ২০১৪ সালে বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকার ৫২ তম অবস্থানে রাখে তাকে ফোর্বস।

৪. ক্রিস্টিয়ান আমানপুর

১৯৫৮ সালের ১২ই জানুয়ারি জন্ম নেওয়া ক্রিস্টিয়ানের প্রধান পরিচয় তিনি একজন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক। সিএনএন প্রধান আন্তর্জাতিক মুখপাত্র এবং সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল এর আমানপুর অনুষ্ঠানটির বর্তমান উপস্থাপক তিনি।  এবিসি নিউজেও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০১৪ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে তিনিই একমাত্র সাংবাদিক যাকে সবচাইতে বেশি সংখ্যক বিশ্বনেতা অনুসরন করেন। তবে এত পরিচিতির তুঙ্গে থাকা এই নারীর শুরুটা হয় ইরানে। ব্রিটিশ-ইরানি আমানপুর ইরানে নিজের প্রাথমিক শিক্ষা নেবার পর ইউনিভার্সিটি অব রোডে আইল্যান্ডে সাংবাদিকতার ওপরে পড়াশোনা শেষ করেন। সে সময় একই সাথে ডব্লিউবিআরইউ-এফএম ও এনবিসিতে কাজ করতেন তিনি। ১৯৮৩ সালে সিএনএনে ডেস্ক সহকারী হিসেবে যোগ দেন আমানপুর। এরপর কাজ শুরু করেন মুখপাত্র হিসেবে। আমানপুরের জীবনের সবচাইতে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনাটি ঘটে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়। এরপর থেকেই একনাগাড়ে অনেকগুলো জায়গায় মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে পারসিয়ান গালফ ওয়ারের ওপর করা তার কাজ পুরো বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। একের পর এক অসাধারন সব কাজের বিনিময়ে সিএনএন এর প্রধান আন্তর্জাতিক মুখপাত্রের স্থানে উঠে আসেন আমানপুর আর সেখানেই ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল অব্দি কাজ করে যান। যুদ্ধের অনেক দূর্গম স্থান থেকে নানারকম তথ্য ও ইন্টারভিউ এনে দেওয়া ছাড়াও মোজাম্মদ খাতামী, মাহমুদ আহমেদিনিজাদ, টনি ব্লেয়ার, হিলারি ক্লিনটন, গাদ্দাফি, পারভেজ মোশাররফ সহ আরো অনেকের সাথে কথা বলেছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে এসে সিএনএন ও এবিসি নিউজের কোনটাকে বেছে নেওয়া হবে এই নিয়ে কথা-বার্তা চলতে থাকলে যৌথভাবে উভয় জায়গাই তাকে কাজ করতে অনুমতি দেয়।

লিখেছেন-
সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ফিচার রাইটার

 

রেস্টুরেণ্ট স্বাদের সবজি তৈরি করে ফেলুন খুব সহজে

মাংস খেতে খেতে বিরক্ত চলে এসেছে নিশ্চয়। স্বাদ বদলাতে অনেকেই সবজি, মাছ রান্না করছেন। প্রতিদিন একই ধরণের সবজি খেতে কার ভাল লাগে বলুন? সবজি রান্নাটি একটু ভিন্নভাবে করা গেলে দারুন হয়, তাই না? প্রতিদিনকার সবজি রান্না করুন একটু ভিন্নভাবে রেস্টুরেন্ট স্টাইলে।

উপকরণ:

গ্রেভির জন্য

৩টি বড় টমেটো

২টি মাঝারি আকারে পেঁয়াজ

২ টেবিল চামচ কাজুবাদাম

১-১/২ টেবিল চামচ তেল

সবজির জন্য

১/৪ কাপ আলু কুচি

১/৪ কাপ গাজর কুচি

১/৪ কাপ ফুলকপি

১/৪ কাপ বিনস

১/৪ কাপ মটরশুঁটি

১/৪ কাপ ক্যাপসিকাম কুচি

১/৪ কাপ পনির কুচি

২-৩ টেবিল চামচ মাখ

২-৩ টেবিল চামচ ক্রিম

ধনেপাতা কুচি

লবণ স্বাদমত

১-১/২ টেবিল চামচ কাশ্মেরী লাল মরিচ গুঁড়ো

১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো

১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো

১/২ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়ো

১/২ চা চামচ কাসরি মেথি

১/২ চা চামচ আদা রসুন পেস্ট

৩-৫ টেবিল চামচ তেল

১টি ভাজা পাঁপড় (ইচ্ছা)

প্রণালী:

১। গ্রেভির জন্য প্রথমে প্যানে তেল গরম করতে দিন।

২। এরপর এতে টমেটো কুচি, কাজুবাদাম এবং পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মঝারি আঁচে নাড়ুন।

৩। টমেটো নরম হয়ে এলে এতে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।

৪। এখন আরেকটি প্যানে তেল গরম করতে দিন। এতে আলু কুচি, গাজর কুচি দিয়ে ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন।

৫। আবার ফুলকুপি, বিনস, এবং পনির দিয়ে ভেজে নামিয়ে ফেলুন।

৬। এখন বাকি তেলের সাথে মাখন দিয়ে দিন। মাখন গলে গেলে আদা রসূনের পেস্ট দিয়ে নাড়ুন।

৭। এরপর এতে টমেটো পেস্ট, লবণ, লাল মরিচ গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে নাড়ুন।

৮। বলক না আসা পর্যন্ত এটি নাড়তে থাকুন।

৯। গ্রেভি রান্না হয়ে গেলে এতে মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট নাড়ুন।

১০। তারপর এতে ভাজা সবজিগুলো দিয়ে দিন।

১১। ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, কাসরি মেথি দিয়ে দিন।

১২। এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট রান্না করুন।

১৩। শেষে ক্রিম, ধনে পাতা কুচি দিয়ে দিন।

১৪। চুলা থেকে নামানোর আগে ভাজা পাঁপড় গুঁড়ো করে দিয়ে মিশিয়ে নিন।

১৫। ব্যস তৈরি হয়ে গেল মজাদার রেস্টুরেন্ট স্টাইল মিক্স ভেজি সবজি!

 

আসন্ন পূজা উৎসবে সেজে উঠুন স্টাইলে

শুরু হতে চলেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের উৎসবের আমেজ তথা উৎসবের সিজন। সুতরাং এখনই সময় ওয়ারড্রব থেকে ক্লাসিক আনারকলি, ঢোলা লেহেঙ্গা, লম্বা কুর্তা, লং স্কার্ট এবং অসাধারণ শাড়িগুলো বের করার। এছাড়া আপনি যদি সম্পূর্ণ ঐতিহ্যগত পোশাকে অভিনব স্টাইলে বের হতে চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন ক্রপ টপ এবং ঢোলা লেহেঙ্গা।

আপনি যদি সমসাময়িক ফ্যাশনে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে কিছুটা সাদাসিধে পোশাকও বেছে নিতে পারেন। এজন্য বেছে নিতে পারেন উজ্জ্বল রঙের বিচিত্র প্রিন্টের পোশাক। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে উপেক্ষা করার মতো কোন যথাযথ কারণ নেই। রাভিনা বলেন, ‘বার্গান্ডি ভোগে এসেছে তার সুন্দর সূচিকর্ম এবং আরি কর্মের সমন্বয়ের পোশাক যা উৎসবমুখর লুক এনে দেবে। গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা আনারকলির সাথে চিকন ও পাতলা সূচিকর্মের লং জ্যাকেট কিংবা ক্রাশ স্কার্ট এখন বড় ট্রেন্ড।’

রাজ শ্রফ, রাভাগে মনে করেন উৎসব উপলক্ষে ড্রেস আপের সময় যে কেউ নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা করা শুরু করে দেয়। তিনি বলেন, ‘ফেস্টিভ ফ্যাশন সবসময় অনেকটা যার যার পছন্দের মতো এবং আপনি ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারবেন না, কিন্তু রঙ, স্টাইল এবং নিজের পছন্দ নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। তরুণদের কাছে এটা অনেকাংশে আধুনিকীকরণ, তবে ভবিষ্যৎ ফ্যাশনে ভারতীয় ক্লাসিকের মতো কিছু নেই।’

আপনি যদি স্টাইলে প্লেফুল লুক নিয়ে আসতে চান তাহলে শাড়ি পরতে পারেন, তবে একটু অভিনব স্টাইলে এবং সাথে গতানুগতিক সোনা ও হীরার গহনা না পরে পরতে পারেন টেরাকোট্টা জুয়েলারি। ডিজাইনার অঞ্জলি শরমা বলেন, ‘ভারতীয় উৎসবের সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে এখানে নিজের মতো পরীক্ষা করে নেওয়াটা গ্রহণযোগ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সিজনে যত বেশি সম্ভব কালার ব্যবহার করা হয়- সেটা টান্ডেম হোক আর মনোক্রোমাটিক!’

সুসান ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘কটন ও সিল্কের তাঁতশিল্পে, সুন্দর সূচিকর্মে এবং সুবিন্যাস্ত ডিজাইনে ভারতীয় সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ। আর যখন এটা উৎসবের সময় হয় তখন এর সমৃদ্ধ কাপড়কে কথা বলতে দিন।’

 

তিনি একজন বিজয়িনী নারী

রেশমা কুরেশি বানো। অ্যাসিড যাকে পোড়াতে পারেনি। ২০০৪ সালে ১৯ বছরের যে নারীর মুখে এসিড ঢেলে দিয়েছিলো তার স্বামী। বৃহস্পতিবার ‘নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক’-এ সগর্বে হাঁটলেন তিনি।

হ্যাঁ, পাঠক সত্যি! এবার ‘পোড়ামুখী’ এক নারী র‌্যাম্প মাতিয়ে দিলেন অর্চনা কোচারের পোশাকে। দীর্ঘ ক্রিম অ্যান্ড ফ্লোরাল গাউনে তাকে দেখাচ্ছিল রাজকীয়! ফ্যাশন উইক প্রযোজনা সংস্থা ‘এফটিএল মোডা’ রেশমাকে আমন্ত্রণ জানান এ বছরের ‘নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক’এ। ফ্যাশন র‌্যাম্পে সৌন্দর্যের প্রথাগত সংজ্ঞাকে ভেঙে দিতেই সংস্থার এই উদ্যোগ। গত বছর যেমন র‌্যাম্প হেঁটেছিলেন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত এক তরুণী।

এসিড আক্রান্ত রেশমার পাশাপাশি এ বছর অর্চনা কোচরের পোশাকে হেঁটেছেন সানি লিওন। দু’জনে ছবিও তুলেছেন একসঙ্গে! অনুষ্ঠানের পর উচ্ছ্বসিত রেশমা বলেছেন, ‘জীবনকে পুরোদমে উপভোগ করার অধিকার আমাদেরও আছে। এখানে এসে আমার বেঁচে থাকার মানেটাই পাল্টে গেল। অসাধারণ অভিজ্ঞতা!’ রেশমার আপাতত একটাই লক্ষ্য— স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়া।

 

পথে পথে হয়রানি: নির্যাতন-নিপীড়নে অনিরাপদ ঢাকা

১৯ বছরের কিশোরী নায়লা।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করতে জয়পুরহাটের মফস্বল এলাকা থেকে ঢাকায় এসেছেন। থাকছেন লালমাটিয়ায় একটি মেসে বন্ধুদের সাথে।দিনের বেলা কোচিং থেকে ফেরার পথে ফুটপাতে হাঁটার সময় লক্ষ্য করেন, একদল ছেলে তার পিছু নিয়েছে।এক পর্যায়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে এসে রিকশা নিয়ে লালমাটিয়ায় রওনা হলে দেখেন,সেই পিছু নেওয়া চলছেই।ছেলেগুলো সেদিন মেস চিনে যায়। পরদিন থেকে শুরু হয় উৎপাত।এক সপ্তাহের মধ্যে চারজন ছেলে অচেনা এই শহরে কিশোরীর টিকে থাকা অনিশ্চিত করে দেয়।ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি।লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশি সহায়তা না নিয়ে মেয়েকে সঙ্গে করে এলাকায় ফেরেন অভিভাবক।মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।অফিস শেষে বাড়িতে ফেরার যানবাহনের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন শাহিনা পারভীন।মোটরসাইকেলে আরোহী দুই যুবক তার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করলে,তিনি প্রতিবাদ করেন।মোটরসাইকেল আরোহী একজন নেমে এসে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করলেও আশপাশ থেকে কেউ তাকে সহায়তা করে না।বেশ কিছুক্ষণ পর তাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।মেয়েটির অভিযোগ,কাছেই একটা টহল পুলিশের ভ্যান থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তার চিৎকার শুনে লোকজন আশেপাশে এলেও কেউ সহায়তা করেনি।একসময় তাকে গালাগালি করে চলে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহীরা।

যে মেয়েদের জীবিকার তাগিদে কিংবা নানা কাজে বাড়ির বাইরে যেতে হয়, তাদেরকে এধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কম-বেশি সবাকেই যেতে হয়। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড-এর ‘নিরাপদ নগরী নির্ভয় নারী’ প্রচারণার অংশ হিসেবে করা এক গবেষণা তথ্য মতে,…

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস ২০১৪ সালের মে-জুন মাসে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে ১২০০ জন উত্তরদাতার স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এর মধ্যে ৮০০ জন নারী ও কিশোরী এবং বাকি ৪০০ জনের মধ্যে ২০০ জন পুরুষ এবং ২০০ জন হলো অনুর্ধ ১৮ বছরের ছেলে।

গবেষণায় দেখা যায়,শতকরা ৮৪ জন নারীকে বখাটেদের কটুক্তি ও অশোভন আচরণের সম্মুখীন হতে হয়েছে।অর্ধেকেরও বেশী নারীকে রাস্তা ঘাটে কুপ্রস্তাব শুনতে হয়েছে। সর্বোপরি ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতাকে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা গায়ে হাত দেওয়ার মতো হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আরও হতাশার দিক হলো,একজন নারী কিন্তু একাধিকবার একাধিক ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যেমন গড়ে একজন নারী গত তিন মাসে ৪ থেকে ৫ বার অশোভন আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন, একইভাবে ৪ থেকে ৫ বার অপরিচিতের কাছ থেকে ‘কুপ্রস্তাব’ পেয়েছেন এবং ২ থেকে ৩ বার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের মত হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।

এছাড়া দেশের ৯৫ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হতে হয়।নারী নেত্রীরা বলছেন,সব থেকে ভয়াবহ বিষয় হলো,যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৪ শতাংশ নারী এ ব্যাপারে কোথাও অভিযোগ করা দরকার বলে মনে করেন না। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশ নারী মনে করেন,পুলিশ অভিযোগকারীকেই দোষারোপ করে।

কেবল পুলিশ না, সামাজিকভাবেও মেয়েটিকেই দোষারোপ করা হয়- বলেন মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কোনও হয়রানির শিকার হলে মেয়েরা পরিবারের সদস্যদের সাথেও শেয়ার করতে সাহস পায় না।সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গিয়ে অভিযোগ করবে সে-তো অভাবনীয়। এমনকি কোনও নারী ধর্ষণের শিকার না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নিতে দ্বন্দ্বে থাকতে দেখা যায়। ফলে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির ঘটনায় নারীরা নিজেদের আড়াল করেই টিকে থাকতে চান।’

অ্যাকশন এইড এর জরিপ বলছে, রাস্তায় বা অন্যান্য পাবলিক পরিসরে হয়রানি দিয়ে বুঝা যায়,শহরে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি নারী অনিরাপদ থাকেন এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক চিন্তিতও থাকেন। অন্তত ১০ শতাংশ নারী পাবলিক পরিসরে নিজেদের অনিরাপদ ভাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাহবুবা নাসরিন  বলেন, ‘আমাদের পাবলিক প্লেসগুলো নারীবান্ধব না। একজন নারী সন্ধ্যার পর অফিস থেকে বের হয়ে নিজের মতো করে বাসায় ফিরবে, তার জন্য তাকে বাড়তি খরচ করতে হয়। বাসে করে যাওয়া অনিরাপদ বলে তাকে কাছের দূরত্বেও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া করতে হয়। ফলে তিনি শুরুতেই নিজে থেকে সতর্ক হতে গিয়ে চলাফেরার পরিধি কমিয়ে দেন। আর যারা সেটা করতে চান না, সমাজ এখনও তাদের সাথে ঘটা যেকোনও অপরাধের জন্য তাদেরই (নারীদেরই) দোষ দিয়ে থাকে। ফলে নারীর জন্য ঘরে-বাইরে সমান অনিরাপদ, যতদিন না আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো যাবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন  বলেন, ‘নিউ মার্কেট গাউসিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নারীদের হয়রানির যে চিত্র তুলে ধরা হয়, সেসব বন্ধে আমাদের পরিকল্পনা আছে। মানুষকে সচেতন করে তোলা জরুরি। নারীদের সার্বিক উন্নয়নে নারী কাউন্সিলর বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে সংবেদনশীলভাবে কাজে লাগানো জরুরি।’ তিনি আরও বলেন,‘ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে কেবল ময়লা আবর্জনা নয়, আমাদের উচিত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ নগরী উপহার দিতে চেষ্টা করা।’