banner

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 346 বার পঠিত

 

ঈদের ভ্রমণে ঘুরে আসুন সাজেক

‘সাজেক’ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। বন্ধুবান্ধব নিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো হোক আর হোক পরিবার নিয়ে সময় কাটানো অথবা শুধু একা একা প্রকৃতিকে উপভোগ করা যেটাই হোক আপনার উদ্দেশ্য সাজেক কিন্তু হতাশ করবে না আপনাকে। এমনকি ঋতুভেদে এর সৌন্দর্য্য বদলাবে কিন্তু কমবে না কোন অংশে।
মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে,
আঁধার করে আসে,
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি
তোমারি আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কবিগুরু হয়ত কবিতাটি লিখেছিলেন একলা জানালার পাশে বসে। কিন্তু সাজেকের মেঘ আপনাকে কবিগুরুর এই কবিতার প্রেমিক চরিত্রের মতই উদাস করে তুলবে। পাহাড়ের পর পাহাড়, তার উপর দিয়ে ভেসে চলেছে মেঘ। মেঘের উপর হাসছে সূর্য্য, মেঘ ভেদ করে পাহাড়ে রোদ পড়ছে না কোথাও কোথাও, সেই মেঘের ছায়ার লুকোচুরি দেখাও যে মনকে শান্ত করে, আনন্দ দেয়, বলে প্রকৃতিতে আর কোন সত্য নেই, একটাই সত্য- সৌন্দর্য্য।
মেঘের পাশেই যে কোন রিসোর্টে রুম ভাড়া নিয়ে মেঘের মাঝেই কাটিয়ে আসতে পারেন আপনার ঈদ। তবে ঢাকা থেকে ফোনে বুকিং দিয়ে যেতে অবশ্যই। সাজেকের সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হল, জায়গাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। রাতেও পাহাড়ের কোলে বসে অনুভব করতে পারবেন মেঘের সিক্ত ছোঁয়া। তারা ভরা আকাশ গল্প শোনাবে আদিম কোন পাহাড়ী মেয়ের, দুরন্ত কিশোরীর মত্ন হবে উল্কা পতন, দূরের আকাশে বিদ্যুৎ ঝলকে হঠাত হঠাত দেখিয়ে দেবে রাতের পাহাড়ের নিথর মূর্তি।
অবশ্যই দেখবেন-
কমলক পারা-
সাজেক থেকে একটু সামনে পাহাড়ের উপরে কমলক পারার অবস্থান। ছোট একটি গ্রাম এটি। সম্প্রতি এখানে একটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। কমলক এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। সর্বোচ্চ পয়েন্ট থেকে পাবেন চমৎকার প্যানারমিক ভিউ। আর সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য তো রয়েছেই।
ঝর্ণা
বর্ষায় সাজেকে পাবেন বেশ কিছু ঝর্ণা। তবে কমলক ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। অবশ্যই একজন গাইড নেবেন। স্থানীয় যে কেউ গাইড হিসেবে আপনাকে সাহায্য করবে।
যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন-
১। পর্যটকদের নিরাপত্তার সুবিধার্থে সাজেকে এখন ২টি প্রবেশ সময় নির্ধারন করা হয়েছে। সকাল ১১ টা এবং বিকেল ৩টা। অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে আর্মি চেক পয়েন্টে পৌছতে হবে আপনাকে। সাজেক ত্যাগের ক্ষেত্রেও এই সময়সূচি প্রযোজ্য।
২। আদিবাসিদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। তারা আপনাকে অনেক সহযোগিতা করবে।
৩। যদি পাহাড়ে ট্রেকিং করতে চান অবশ্যই ভালো জুতা পরবেন।
৪। মশার উপদ্রপ অনেক তাই ওডোমস সাথে নেবেন।
৫। উচ্চতা অনেক বেশী, তাই রোদের তাপ অনেক বেশী। সান্সত্রিম ব্যবহার করুন।
থাকার ব্যাবস্থা-
সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
রুন্ময় : এটি সাজেকে অবস্থিত। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।
আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। যোগাযোগ : পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।
ইমানুয়েল রিসোর্ট : এটিতে ৮ টি রুম আছে। সব গুলো কমন বাথ। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮( বিকাশ)
সারা রিসোর্ট: এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই – ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৭২৪৬৮৯৪২। লক্ষন – ০১৮৬০১০৩৪০২।
জলবুক রিসোর্ট: এটি কমলকের কাছাকাছি পাহাড়ে অবস্থিত। প্রতি কক্ষের সাথে এটাচ বাথ আছে। যোগাযোগ- ০১৮৬০৯৯৫৯৫।
যাতায়াত:
ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন – আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।শ্যামলী পরিবহন – আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ । শান্তি পরিবহন- আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস কদমতলী(চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।
খাগড়াছড়ি বা দিঘিনালা থেকে যেতে পারবেন চাদের গাড়ি, সি এন জি বা মোটর সাইকেল এ। চাদের গাড়িতে ১২/১৪ জন যেতে পারবেন ৬-৭ হাজার টাকা খরচ পড়বে। সি এন জি তে ৩-৫ জন, ৩-৪ হাজার টাকা। মোট্রসাইকেল এ ২ জন ১৫০০-৩০০০ টাকা লাগবে।
* ঈদের সময় খরচ আরও বেশী হতে পারে।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
Facebook Comments