নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে ‘আইডিএলসি পূর্ণতা’ নামে সেবা কার্যক্রম চালু করেছে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।
জাহিদ ইবনে হাই জানান, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তারা প্রয়োজনীয় দলিল ও ঋণ অনুমোদনপত্র প্রস্তুতে সহায়তা করা এবং নির্দিষ্ট বিপণি বিতানে বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় মূল্য সুবিধা উপভোগ করতে বিশেষ ‘মূল্যছাড় কার্ড’ দেবেন। এ ছাড়া পূর্ণতা প্রকল্পের অধীনে চাহিদা অনুযায়ী চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা।
সূত্র- ইত্তেফাক
নিষ্পাপ শৈশবে- যখন উড়ে যাওয়া এরোপ্লেন দেখে পাইলট হতে ইচ্ছে করে, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে রঙবেরঙের পসরা দেখে পথে পথে ঘুরে ফেরি করতে ইচ্ছে করে, দাদার রেডিওর সমস্ত পার্টস খুলে- আর না লাগাতে পেরে স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখে ভবিষৎ সায়েন্টিস্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে দুনিয়া জয়ের, স্কুল ম্যাগাজিনে নিজের প্রথম প্রকাশিত লেখা ভবিষৎ সাহিত্যিকের ক্ষুদে বুকটা ভরিয়ে তুলছে- সেই সময়ই কিছু শিশুকে মুখোমুখি হতে কুৎসিত অন্ধকারের, বিনা অপরাধে রঙিন নিষ্পাপ স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের ভীড়ে, জীবনটা হয়ে ওঠে বিভীষিকা।
ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া মেয়েটি টিচারের কাছে পড়তে যেতে চাচ্ছে না। তার অভিযোগ টিচার তাকে ব্যথা দেয়। বাবা-মা ধমক দিয়ে পাঠালেন। তারা বললেন, ‘এসব তোমার ফাঁকি দেওয়ার ছল!’ চোখ মুছে শিশুটি টিচারের কাছে পড়তে বসলো। সে জানে না কেন স্যার তাকে কিছু জায়গায় এভাবে ছোঁয়।
গৃহকর্ত্রীর দূর-সম্পর্কের ভাই এসেছে বাসায়। দুপুরবেলা তারই হেফাযতে দশ বছরের কাজের মেয়েটিকে রেখে গৃহকর্ত্রী গেছেন শপিংয়ে। …… লোকটা মেয়েটিকে হুমকি দিলো কাউকে কিছু বললে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলবে।
সাত বছরের ফুটফুটে ছেলেটাও বুঝতে পারলো না চাচ্চু তার সাথে বারবার এমন করছে কেন। চাচ্চু বলেছে এটা একটা সিক্রেট মজার খেলা- কাউকে বলা যাবে না। কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছে, ব্যথা লাগছে। আম্মু-আব্বুকে কি তার বলা উচিত? যদি তারা বিশ্বাস না করে? ওকেই পঁচা ভাবে? আচ্ছা, চাচা তো খুব ভালো, তাকে কত কি মজার খেলনা দেয়- কত গল্প করে! বলে দিলে কি চাচা আর কখনো ওকে আদর করবে না? সে কীভাবে বলবে আম্মু-আব্বুকে?
মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে মায়াবতী কন্যাশিশুটি যখন বলে উঠলো গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসে তার সাথে কী নির্মম ঘটনাটা ঘটে গেছে, হতভম্ব মা মেয়ের চোখের জল মুছে বললেন, ‘চুপ করে থাকো, কাউকে বোলো না!’
কাকে আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ বলছি?
চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ (CSA) কে বলা যায়, “the imposition of sexual acts, or acts with sexual overtones, by one or more persons on a child (under 18)”– Save the children, CSA Draft Policy.
• শিশুর গোপন অঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ,
• শিশুকে কারো গোপনাঙ্গ ধরতে বলা,
•penetration of a child’s mouth with a penis,
• শিশুর পর্ন ছবি তোলা,
• শিশুকে পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং শিশুর সামনে নগ্ন হওয়া,
• শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে ঢোকানো, বাল্যবিবাহ,
• শিশুর সাথে বয়স অনুপযোগী sexual behavior নিয়ে আলোচনা,
• শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা (যা ছেলে বা মেয়ে শিশু যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে)
ইত্যাদি। সুতরাং, কেবল ধর্ষণ নয়, শিশু-যৌননির্যাতন একটি ব্যাপক পরিসরের শব্দ।
শিশুর উপর প্রভাব-
মানসিক
বিষণ্নতা, সহিংস আচরণ, আত্মপীড়নমূলক কার্যকলাপ (নিজেকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া), আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ও হীনমন্যতা, দুঃস্বপ্ন, অসামাজিক আচরণ, সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারা, হঠাৎ হঠাৎ চমকে ওঠা, আত্মহত্যার প্রবণতা (কিশোর বয়েসীদের ক্ষেত্রে), স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে বাধা।
শারীরিক
শিশু গুরুতরভাবে আহত হতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে চিরতরে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে পারে, নিউরোল্যজিকাল ড্যামেজ, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, রাতে বিছানা ভেজানো ইত্যাদি।
কিছু তথ্য-উপাত্ত-
১৯০টি দেশের উপাত্ত নিয়ে তৈরি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে বিশ্বে প্রতি দশ জনে একজন মেয়েশিশু ধর্ষিত অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। WHO এর হিসেব মতে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতে ৫৩ভাগ শিশু শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স- নামে একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকতা রোকসানা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ শিশু পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্ষণ থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শসহ কোন না কোন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।’ ১৯৯৭ সালে তারা শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেন, যার মধ্যে ৪৬ জনই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ মাত্র ৪ জন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়েসী ২৮৬ জন শিশু সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯ ভাগ শিশু ধর্ষণের শিকার।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে ৩৯৬ জন শিশু (অনূর্ধ্ব ১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের কাউনসেলিংয়ের আওতায় আসে তাদের ৮৬ ছেলেশিশু। ছেলেশিশুরাও শংকার বাইরে নয়।
দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে এই নিয়ে এখনো সরকারীভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো সমীক্ষা করা হয় নি। সামান্য নথিভূক্ত তথ্য-উপাত্ত যা পাওয়া যায় তা মোটেই প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে না। কারণ, এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশই হয় অভিভাবকদের অসচেতনতায় অজানা থেকে যায় অথবা লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
কীভাবে একজন নির্যাতনকারীকে চিনবেন? কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে?
বয়স, চেহারা, লিঙ্গ, পেশা ভেদে একজন শিশু-যৌননির্যাতনকারী যে কেউই হতে পারে। সুতরাং তাকে চেনা তত সহজ নয়। এরা শিশুদের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সাধারণত গল্প বলে ও উপহার দিয়ে প্রথমে এরা শিশুদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করে নেয়, এরপর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করে। খুব পরিকল্পিতভাবে এগোয়।
আমরা পেডোফিলিয়ার কথা জানি। এটা একটা সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়ার রোগীরা কেবল শিশুদের (যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি) প্রতি আসক্ত থাকে। কেন কিছু মানুষ- এই ঘৃণ্য আচরণটি করে- এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেসব শিশু শৈশবে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো এদের কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।
পেডোফাইলদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমনঃ এরা প্রধাণত হয় পুরুষ (তবে কদাচিৎ নারীও হতে পারে), সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এদের তেমন সখ্য থাকে না বরং এদের সখ্য থাকে শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে।
এখানে, স্মর্তব্য যে, সব পেডোফাইল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন করে না এবং সব শিশু যৌন নির্যাতনকারীই পেডোফাইল নয়।
নির্যাতনকারী শিশুকে সাধারণত যে কথাগুলো বলে-
আপনার শিশুকে রক্ষার্থে আপনার করণীয়-
নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুকে শেখান-
আপনার শিশুকে/ কিশোর সন্তানকে ধীরে ধীরে তার বয়স উপযোগী sexual education আপনাকেই দিতে হবে, নাহলে কেউ তাকে বিকৃত ধারণা দিয়ে তাকে নির্যাতন করার সুযোগ নিতে পারে। একদিনে সব শেখানোর চেষ্টা করবেন না।
১) শিশুকে তার প্রত্যেকটি গোপন অঙ্গের নাম জানান। কোন অঙ্গগুলো প্রকাশ করা যাবে কোনগুলো গোপন রাখতে হবে তার পুরোপুরি জ্ঞান তাকে দিতে হবে। আপনার শিশুকে বোঝান- কোনটি ‘ভালো আদর’ কোনটি ‘মন্দ আদর’। কেউ তাকে ‘ভালো আদর’ করলে কোন সমস্যা নেই। ‘মন্দ আদর’ করলেই সাথে সাথে বাবা/ মা/ বাসার বড় কাউকে জানাতে হবে।
২) তাকে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়াতে বলুন। সে যাদের পছন্দ করবে না তাদেরকে যেন কখনো এই ত্রিভূজের মধ্যে আসতে না দেয়। (ছবিটি ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।)
৩) তাকে আরো বলতে পারেন- তোমার শরীরের তিনটি জায়গা (নিচের ছবিতে চিহ্নিত) আছে, অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারে যদি কেউ এগুলো মন্দভাবে ধরে। তাকে এ-ও বুঝিয়ে বলতে পারেন- কখনো কখনো গোসল করিয়ে দেয়ার সময় মা হয়তো ধরতে পারে। অসুখ হলে বাবামায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার ধরতে পারে। ‘ভালো আদর’ করার জন্য কখনো কেউ জড়িয়ে ধরতে পারে। কিন্তু তুমি যখনই বুঝবে কেউ ‘মন্দ আদর’ করবার জন্য ধরেছে তাকে জোরে ‘না’ বলতে হবে। যদি সে না শোনে তাহলে চিৎকার দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন আর তাকে তুমি যতই ভালোবাসো না কেন। সেই জায়গা থেকে সরে নিরাপদ কোন জায়গায় চলে আসতে হবে। অবশ্যই মা কিংবা বাবা যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো তাকে বলে দিতে হবে। (আইডিয়াটি ‘সত্যমেভ জয়তে’র চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ’ নিয়ে করা এপিসোডের ওয়ার্কশপ থেকে নেয়া হয়েছে।)
৪) আপনার শিশুকে শেখান- যে সিক্রেটের সাথে খারাপ কাজ জড়িয়ে থাকে সে ‘সিক্রেট’ বলে দিতে হয় নাহলে বিপদ হয়।
৫) তাকে বলুন, যারা ‘মন্দ আদর’/ ‘খারাপ আদর’ করবে তারা কখনো ভালো মানুষ নয়, তাদের ভালোবাসা যাবে না।
৬) অনলাইনে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ নিয়ে শিশুদের উপযোগী ভালো ভালো সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপের ভিডিও পাবেন, শিশুকে সাথে নিয়ে সেগুলো দেখান। আপনার শহরে কোন ওয়ার্কশপ হলে সেগুলোতে শিশুকে নিয়ে যেতে পারেন।
আপনার শিশুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হন। যেন সে তার সব কথা আপনার সাথে নিঃসঙ্কোচে শেয়ার করতে পারে। তাকে একথা জানান যে, তাকে আপনি ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন, আপনি সবসময় তাকে সাহায্য করবেন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হবেন। কোন শিক্ষক কেমন, কে তাকে আদর করে, তাকে কী কী দেয়, সে স্কুলে কী কী করে- গল্পচ্ছলে শিশুর কাছ থেকে জেনে নিন।
ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড হলো, এখন আপনার করণীয় কী?
১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।
২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।
৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।
৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির। ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়েসী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না। নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান। তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে।
• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।
নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন, অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দুরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না, এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না, সে আপনার যত ঘনিষ্ট বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে শালিস করা গেলে ভালো কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।
আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে- একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।
আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে। আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি, আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি। সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার! আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় পবিত্রতায়… আল্লাহর কাছে সে দোয়া রইলো।
লেখায় ব্যবহৃত তথ্যের রেফারেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লিঙ্ক:
১) শিশু যৌন নির্যাতনরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সহায়তা কেন্দ্রসমূহ সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
২) Child Sexual Abuse – উইকিপিডিয়া
৩) ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট
৪) যেভাবে একজন পেডোফাইলকে চিহ্নিত করবেন
৫)নিকটজনের কাছেই শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার (প্রথম আলো)
৬) নিজ ঘরেই যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের যে শিশু মেয়েরা (বিবিসি বাংলা)
৭) সত্যমেভ জয়তে’র পুরো এপিসোডটি
৮ ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত)
ফুটনোট[১]
সম্রাট বাবুরের আত্মজীবনী ‘বাবুরনামা’ পড়ছিলাম।ভাবি নি সেখানেও পেডোফাইলদের দেখা পেয়ে যাবো। বাবুর লিখেছেন, “এ কুৎসিত প্রথা দেশময় এভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে প্রত্যেক সমর্থ পুরুষই ছেলে রাখতো। এমন কি এরূপ ছেলে রাখাকে গর্বের কাজ মনে করা হতো এবং না রাখাকে লোকে অপৌরুষের চিহ্ন বলে বিবেচনা করতো।”
এমনকি, বাবুর নিজেও স্বীকার করেছেন এক কিশোরের প্রতি তার আসক্তির কথা। তবে তার ওই ‘আসক্তি’ কোনো ‘সম্পর্কে’ রূপান্তরিত হয় নি বলেই মনে হলো। তেমন কোন বর্ণনা নেই।
ফুটনোট[২]
হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে আমরা শিশু-পতিতাদের কীভাবে ব্যবহার করা হতো দেখেছি। দেখেছি-ইমতিয়াজ আলীর ‘হাইওয়ে’ চলচ্চিত্রে , যেখানে নায়িকাটির শৈশবে তার ‘আঙ্কেল’ কর্তৃক শারীরিকভাবে বারবার লাঞ্ছিত হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে, সেই যন্ত্রণা কীভাবে তাকে জীবনভর তাড়িত করেছে তাও দেখানো হয়েছে। অনেকদিন আগে দেখা আরো একটি চলচ্চিত্র ‘মিসটিক রিভার’ এ দেখেছিলাম পেডোফাইলরা কীভাবে শিশুদের ব্যবহার করে। ‘ফরেস্ট গাম্প’ মুভিতেও দেখা যায় শৈশবে মেয়েটি তার পিতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন শৈশবে তার চাচা ও মামা কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা।
ফুটনোট[৩]
আমাদের তথাকথিত আধুনিক পরিবারগুলোতে হরহামেশা রগরগে দৃশ্য সম্বলিত হিন্দি/ ইংরেজি চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও চলছে। শিশুর সামনেই। কেউ কিছু মনে করেন না। তো, যে পরিবার শিশুকে ইমপ্লিসিটলি এই শিক্ষাই দিচ্ছে- ‘এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার’ সে পরিবারের শিশুকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা খুবই সহজ। এমনও হতে পারে, শিশুটি পুরো ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেবে, পরিবারকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করবে না। নৈতিকতার শিক্ষা শিশু পরিবার থেকেই পাবে, না?
*****[পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রাসঙ্গিক আলোচনা একান্তভাবে কাম্য। নিজে সচেতন হন, অপরকে সচেতন করুন। একমত হলে শেয়ার করুন।]*****
লিখেছেন-রাহনুমা সিদ্দিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
চারটি চাকা আর ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গাড়ি হয়, তাতে চালকের বসার জায়গা হুইল এইসব জুড়ে দেয়ার পরও বহু কাজ বাকি থেকে যায়। অনেক সময় একটা গাড়ির যথাযথ দাম, চমৎকার ইঞ্জিন কিংবা মাইলেজ আর অন্যান্য জিনিস সুবিধাজনক হলেও শুধুই ‘দেখতে ভালো লাগছে না’ এজন্য একজন খদ্দের সে গাড়িটি কিনার আশা বাদ দেন।
মানুষ হিসেবে করণীয়র গন্ডি পেরিয়ে মানুষ যখনই আরও একটু গভীরে গিয়ে ভাবতে থাকে, আমি কে, কেন এসেছি আর কোথায় যাবো, ভাবনা বা যুক্তির সে জগতে তার লিঙ্গবিচারের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় তার বিশ্বাস, জীবনের লক্ষ্য এবং তার চারপাশের জগত।
নারী অধিকারের কথা আসতেই কেনই যেন সবাই দুইটি চরমপন্থার অনুসারী মানুষের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করে। একদল হলেন ইসলামিস্টরা, যাঁরা প্রায়শই কথা বলার সময় ভুলে যান , তাঁর এই কথাগুলো হয়ত এমন কোন বোন শুনছেন যিনি মুসলমান নন, অথবা যিনি মুসলমান হলেও তাঁর জীবনের সবগুলো প্যারামিটার ইসলামিক নয়। আর একদল হলেন নারীবাদী। এই শ্রেণীর বা এই শ্রেণীভুক্ত হতে চাওয়া মানুষ এমন বজ্রনির্ঘোষে মেয়েদের অধিকার বর্ণণা করেন, শুনতে থাকা মেয়েরা উজ্জীবিত হলেও বাস্তব জীবনে এসে সেসব ‘অধিকার’ প্রয়োগের জায়গা না দেখে ‘যাহা লাউ, তাহাই কদু’ নামক চক্রে ঘরতে থাকেন। আর পুরুষ শ্রোতা হলে তো কথাই নেই, নিজের আর সঙ্গের মহিলাদের কর্ণকুহরে সে ‘অধিকারময়’ লু হাওয়া ঢুকতে না দিয়ে কেটে পড়েন। কারণ, নারী অধিকারের শ্লোগানে কেবল নারীই মানুষ, পুরুষ তার প্রতিপক্ষ কোন এক অপ্রয়োজনীয় সৃষ্টি।
মজার ব্যপার হল, এই দুই দলের কোন দলই খুব স্পষ্ট করে একটা বিষয়ে কথা বলেন না। সেটা হল, নারীর ‘কর্তব্য’। বলেন নাকি? আসুন, আমরাও আলোচনা করি।
মোটাদাগে ভাগ করতে গেলে মানুষের জীবনের অনেকগুলো ভাগের মধ্যে কয়েকটাতেই মাত্র এইসব অধিকার-কর্তব্যের টানাপড়েন দেখা যায়। কি সেগুলো? প্রথমতই হল, অর্থনৈতিক কর্তব্য। এরপর আসে, সামাজিক কর্তব্য, পারিবারিক দায়িত্ব ইত্যাদি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম বা অন্য যে কোন ধর্মে নারীকে যে অধিকারই দেয়া হোক না কেন, আজকাল নারী অধিকার সংস্থা এমনকি রাষ্ট্র পর্যন্ত এ ব্যপারে বেশ সচেতন। ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে, তাকে ‘কম’ মনে করে, অন্যান্য ধর্মে একেবারেই না দেয়া অধিকারকে পাশ কাটিয়ে নারী এখন তার ‘সমানাধিকার’ বুঝে নিতে রাষ্ট্রেরও সহায়তা নিয়ে চলেছে। কিভাবে? বিয়ের বেলায় মোহর বুঝে নেয়া, পিতার অবর্তমানে পিতার সম্পত্তিতে সমান হিস্যা ইত্যাদি। এমনকি অনাদিকাল থেকে চলে আসা পুরুষের একমাত্র অধিকার (!) যৌতুকেও বাগড়া এখন রাষ্ট্রের, নিলেই শাস্তি। বেশ! বিয়ের পর? দারা-পুত্র-পরিবারের চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়, সকল প্রকার বৈধ-অবৈধ, ন্যায্য-অন্যায্য চাওয়াকে পাওয়ায় বানানোর সামাজিক দায়িত্ব কার? পুরুষের। বেশ! এমনকি, যদি স্ত্রী ঘরের রান্না করতে না চান, বাচ্চাদের দেখেশুনে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়ে তাঁর চব্বিশ ঘন্টা ব্যয় না করতে চান, তবে তার বিকল্প ব্যবস্থার জন্য ব্যয় করবে কে? পুরুষ। বেশ!! এ পর্যন্ত ঠিক আছে। ধর্ম বা মানবিকতার দৃষ্টিতে এইটুকু অধিকার খুব দোষের কিছু না।
না, আমি এই বিচারে যাবো না যে কয়টা মেয়ে এ অধিকারটুকু পাচ্ছে। যেহেতু এটি সংবিধানে লিখিত অধিকার, এর ওজন আছে এবং সেই ওজন রক্ষা করে তাকে বাস্তব রূপ দান রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। আজ না হোক, কাল এই অধিকার আদায় হবেই। সেই বিশ্বাস আমার আছে। তবে? নারী, যে অধিকারের দিক থেকে ‘সমঅধিকার’ পাচ্ছে, অন্তত সে ব্যবস্থা করতে সবাই আন্তরিক, কর্তব্যের বেলায় সে কেন ‘সমদায়িত্ববোধ’ অনুভব করবে না? যে নারী, সমাজের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যাকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য বাবা মা থেকে শুরু করে পাড়ার রিকশাওয়ালা পর্যন্ত বাড়তি কষ্ট করে, তার সেই ঋণ কে শোধ করবে? সেই দায়িত্ববোধ, এক কাঁড়ি গয়না পরে ঘন্টাচারেক ধরে ‘ওয়েডিং ফটোগ্রাফী’ তুলে, কিংবা নয় মাস সমাজের জন্য নতুন একজন সুনাগরিককে বহন করেই কি শেষ? কেন? কেন নয়?
সোজা কথা একটাইঃ সমাজের প্রতি নারীর দায়িত্ব কি? আদর্শ অবস্থা ধরে নিই, নারী তার অধিকার বুঝে পাচ্ছে। মুসলিম হলে মুসলিম পারিবারিক আইনে ভাইয়ের অর্ধেক আর অন্য ধর্মের হলে, ধর্ম না দিলেও সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে ভাইয়ের সমান অংশ পাচ্ছে পিতার সম্পত্তিতে। আর মুসলিম হলে মাহর পাচ্ছে। তো, এই পরিমাণ সহায় সম্পদ অর্জনের পর রাষ্ট্র/ সমাজ /পরিবার বলছে, “নেও এইবার আলমারিতে তালা দেও। খুশী তো?”। ব্যাস, সমঅধিকারবাদীদের কাজ কিন্তু আর নাই। এইবার কে আছে, নারীকে কোন কাজ দেবেন? আপাতদৃষ্টিতে কেউই নাই। সুতরাং বৈভব দেখাতে এই মহিলারা বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে যান বেনারসী বা সাউথ কাতান পরে, বাচ্চাকে হরেক কোচিং এ দিয়ে আত্নতৃপ্তিতে ভুগতে থাকেন, অথবা গয়নার স্টাইল জানতে সিরিয়ালের শরণাপন্ন হন। একটা অংশ আছেন, ধর্মকর্মে মন দেন। বাচ্চাদের মানুষ করার সময়টুকু বাদে বাকিটা সময় দেন ইসলামকে জানতে। হায়! এই লাইটহাউসেরা যদি জানতেন, তাঁরই পাশের কোন এক অন্ধকারে হাতড়ে মরছে অন্য কোন নারী। জানেন কি? খুব কম!
আর পুরুষেরা? কামাই করেন উদয়াস্ত খেটে, বাসায় ফিরে পানের ওপর যথাস্থানে চুন দেখতে ভালোবাসেন। আর পার্টিতে গল্প করেন, “আপনার ভাবি, বুঝলেন না, মার্কেটে গেলে আমাকে কাঁদায় ছাড়ে। এতো কেনে তবু শেষ নাই। হে হে হে…” এই সমাজের সুবিধাভোগীদের কেউ স্মরণ করিয়ে দেন না, ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিক অধিকার যেমন দিয়েছে, অলাভজনক সেবামূলক কাজের ভারও নারীকেই দিয়েছে। প্রমাণ চান? সন্তানকে লালন পালনের কাজ, বিনে পয়সায় স্তন্যদান কে করবে? দুই/আড়াই বছর পর্যন্ত? এরপর কে তার প্রাথমিক শিক্ষা দেবে? কি বলে আপনার জ্ঞান?
পুরুষের সাথে নারীর কাজের পার্থক্য মূলত দুইটি। এক, নারীর বাড়তি শারীরিক মানসিক যোগ্যতা। আর দুই, নারীকে অর্থোপার্জনের বাধ্যতামূলক কাজ করতে হবে না। তাই এই কাজ তিনি করতে পারবেন, ইচ্ছেমত, সানন্দে, অন্যদের স্বস্তি দিতে। এবার আসি আর একটু বড় প্রসঙ্গে, সমাজ বা রাষ্ট্র এক্ষেত্রে কি করবে? জবাব হল, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষ যেমন সময়/সুযোগ/ইচ্ছেমতন পেশা বাছাই করে নেন, কোন পিছুটান ছাড়াই, নারীকে সে ব্যবস্থা করে দিবে। উদাহরণ দিই। গুলশান বনানী বলুন, কিংবা ঠাকুরগাঁওয়ের কোন গ্রাম বলেন, সব জায়গায় একদুইজন মুচি থাকে, মাছওয়ালা থাকে, দর্জি থাকে, মুদি দোকানদার থাকেন। কয়জন থাকবে, সরকার সে সংখ্যা ঠিক করে দেন না, তবে কোন পুরুষ যখন সে পেশা বেছে নেয় বাকিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈদ সামনে রেখে কাজের চাপ বাড়লে দর্জিবাড়ির ধান কেটে বাড়িতে আনতে গেরস্থবাড়ির পুরুষটিও হাত বাড়ান। অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু নিজের লাভ না ভেবে সমাজের উন্নতির কথা ভাবে সবাই। কিন্তু নারীর কাজের বেলায় কি আমরা এমনভাবেই হাত বাড়াই?
আপনার আমার স্ত্রী-বোন-মা অসুস্থ হলে খুঁজেপেতে মহিলা ডাক্তার বের করি, আমার আত্নীয়াটির মানসিক আরামের কথা ভেবে, কিংবা মেয়ে সন্তানটির জন্য শিক্ষক হিসেবে কোন মহিলাকেই দেখতে চাই, প্রবাসী হলে চাই আমার আত্নীয়াটি ব্যাঙ্কে কোন মহিলা কর্মকর্তার সহায়তায় সঞ্চয়পত্র খুলুক বা সাহায্য নিক। কিন্তু সমাজের সদস্য হিসেবে, সে ডাক্তার মহিলাটিকে এক বেলা রেঁধে খাওয়াবার পরামর্শ দিই আমার আত্নীয়াদের? আমার মা বোনকে বলি প্রতিবেশী ডাক্তার বা শিক্ষিকা বা অন্য পেশায় নিয়োজিত মহিলাটির সন্তানকে নিজের সন্তানের মত দেখে রাখতে? যতক্ষণ না তিনি নিজে বাসায় ফিরে আসেন? তবে?
পুরুষের যেমন কাজের বৈচিত্র্য আছে, থাকাই দরকার, নারীরও তাই থাকা চাই। কাউকে যেমন হোমমেকার হতে হয়, বা হতে পারার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে, কেউ পারেন, চাকুরীক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করে আরও দশজন নারীর জন্য অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করে দিতে। তবে, এজন্য পুরোটা সমাজকেই একত্র হতে হবে। আবার যারা ঘরে বসে কাজ করতে চান, তাঁরাও যেন কাজ করতে পারেন, এমন দরজাও খোলা থাকা দরকার। কে করবে এই কাজ? আপনি। আপনি পুরুষ না মহিলা, যা ই হোন, আপনিই শুরু করে দিতে পারেন।
আপনি যদি গ্রামে থাকেন, আপনার বাড়ির মেয়ে বউদের নিয়ে বসুন। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সামষ্টিক কাজ ভাগ করে দিন। লেখাপড়া জানা বউটিকে বলুন, রান্নার কাজের সহায়তা করে বিকেল থাকতেই বাড়ির বাচ্চাদে রপড়ানো শুরু করতে। আর তার কিছু কাজ আপনারাই এগিয়ে দিতে পারেন। আর যদি শহরে থাকেন, আপনার এলাকার না পারেন, বিল্ডিং এর মেয়ে বউদের একত্র করুন। অযথা আত্নম্ভরিতা বা নাক উঁচু ভাবের খোলস ছেড়ে বের করে আনুন। যে তিনটি মহিলা কর্মজীবি, তাঁদের বাচ্চার দেখাশোনার জন্য আর এক দুইজন সমবয়সী বাচ্চাদের মা’কে অনুরোধ করুন, খানিকটা বেতনের আদানপ্রদানও হলে ক্ষতি নেই। অন্য দুই একজন রান্নাবিলাসীদের বলুন, সবার জন্য কম দামে বাড়িতে তৈরী খাবার বানিয়ে বিক্রী করতে। যেন, কর্মজীবি মা’টি কাজের তাড়ায় বাচ্চাদের কেনা খাবার খাওয়াতে গিয়ে ঠকে না যান।
এ তো গেলো, ক্ষুদ্র পর্যায়ে। চাইলে আর একটু দূরেও আপনি প্রসারিত করতে পারেন ইনসাফের হাত। মোটের ওপর কথা হল এই যে, যেহেতু মহিলাদের হাতে সংসার চালাবার ভার নেই, এমন কাজ তিনি করতেই পারেন যাতে অন্যদের উপকার হয়, আর তিনি চাইলে অন্তত সে উপকারের খরচটূকু তুলে নিতে পারেন। আর যে মা’কে অর্থোপার্জনের জন্য কাজ করতেই হয়, তিনি তো আরও সাহায্য পাবার দাবীদার। মূল লক্ষ্য হল, নিজেরা ভালো থাকা আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে হাত-পা-মাথাওয়ালা ‘প্রাণী’ না বানিয়ে মানুষ বানানো।
মহিলারা যেইদিন নিজেদের এভাবে তুলে ধরতে পারবেন, সেদিন অবশ্য পুরুষের একটা কাজ কমে যাবে। কি? “আর বলবেন না ভাই, আটটা থেকে এগারোটা রিমোটটা পাই না, কিনেই ফেললাম একটা ট্যাব” গল্প করতে পাবেন না, অথবা বাজারে বাজারে ‘বিবির বিবি (bag bearer)’ হয়ে ঘুরতে হবে না আগের মত। ভাগ্যবান হলে, আপনার স্ত্রী-কণ্যা-বোন বা মা-ও হয়ে যেতে পারেন, মনের রঙ দেখানোর কারিগর। বাইরের রঙ কেনার ঝোঁকে আর সন্ধেগুলা খরচ করতে নাও রাজী হতে পারেন তিনি। কাজ বাড়বেও বৈকি, বাইরে যাবার সময় আপনার চশমাটি এগিয়ে দিতে যেমন আপনার স্ত্রী হাতের মশলা মুছে ছুটে আসেন, মাঝে সাঝে আপনিও দৌড়াতে হতে পারে স্ত্রীর আধখাওয়া চা নিয়ে।
তাতে কি? সুস্থ শরীর আর সুস্থ মনে বেড়ে উঠতে থাকা আপনার সন্তানদের মুখগুলো আপনাকে ভালোবাসার আধার বানিয়ে দিতেই পারে, না? ইচ্ছে করেই মুখ‘গুলো’ বললাম। হোক সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোন পেশার, আপনার স্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা পেলে হয়ত আপনার সন্তানটিকে একাকীত্বের ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে দিতে আপনারা দুজনেই একমত হয়ে যেতে পারেন, নয় কি?
লেখক- ব্লগার অর্ফিয়ুস
আমি বড় হয়েছি বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে, মেক্সিকোর ছোট একটা শহরে। আমাদের বাসা ছিল সমুদ্রের ধারেই। সারা দিন প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম, রাস্তায়-সাগর পাড়ে ফুটবল খেলতাম। এর চেয়ে ভালো শৈশব একজন শিশু আর কোথায় পাবে?
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, আমার নিজের কোনো রোল মডেল আছে কি না, বা অভিনেত্রী হিসেবে আমি কাউকে অনুসরণ করি কি না। জীবনের অনেকটুকু সময় আমি এর উত্তর নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু দেরিতে হলেও আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি, আমার পরিবারের সেই সব নারী যাঁরা প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও সেটাকে বিকশিত করার সুযোগ পাননি, তাঁদের স্বপ্নগুলোকে পূর্ণতা দিতে পারেননি—তাঁরাই আমার জীবনের অনুপ্রেরণা।
আমার মাকে তাঁর স্বপ্নের পথ থেকে সরে আসতে হয়েছিল। তিনি একজন সংগীতশিল্পী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় সমাজে এটাকে ছোট করে দেখা হতো। তিনি নিজেকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতেন যে তাঁর হয়তো সেই যোগ্যতা নেই। সংগীতের সাধনা করার বদলে তিনি বিয়ে করলেন, তাঁর সন্তানেরা জন্ম নিল। এর অনেক বছর পরে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি আবার সংগীতের চর্চা শুরু করলেন এবং অসাধারণ সাফল্য পেলেন।
এরপর মা আমাদের শহরে গান শেখার স্কুল খুললেন। শিশুদের অপেরা শেখাতে শুরু করলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। মেক্সিকো সিটি থেকে ভালো শিক্ষক নিয়ে এলেন। তাঁদের অনেক ছাত্র এখন পেশাদার শিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন।
বাবা-মাকে দেখে আমি সব সময়ই মানুষকে সাহায্য করতে শিখেছি। বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকার রক্ষায় ‘চাইম ফর চেঞ্জ’ যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা তাঁদের কাছ থেকেই আমি পেয়েছি। পৃথিবীর যেখানে জনগণ নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সেখানে নারীরাই সবচেয়ে নিগৃহীত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পাব, সমগ্র আমেরিকাজুড়ে মানব পাচার একটি লাভজনক ব্যবসা। এখানে নারীরা এখনো পারিবারিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এবং তাঁদের সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত বিচারিক ব্যবস্থা নেই।
আমার দাদি মারিয়া লিসা লোপেজ, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। একাধারে তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান কবি, গীতিকার, বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। ইতিহাস ও চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়েও তিনি অনেক কিছু জানতেন।
তিনি নিজেই বিউটি ক্রিম বানাতেন এবং বাজারজাত করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব তিনি করতেন তাঁর রান্নাঘরে। তিনি তাঁর সময়ের চেয়ে অনেকটুকুই এগিয়ে ছিলেন এবং যেকোনো কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু সময়টা তখন ছিল ১৯৩০। তাই তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর স্বামীকে ত্যাগ করেন এবং মেক্সিকো সিটিতে চলে এসে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
নিজেকে একজন মা ভাবতে আমি গর্ব বোধ করি। কিছু মানুষের জন্য মাতৃত্ব একটা কাজের বোঝা। কিন্তু আমার জন্য তা নয়, এটার কারণ হতে পারে আমি আমার মেয়ে ভ্যালেন্তিনা’কে পেয়েছি জীবনের ৪১তম বছরে এসে।
আমার অনেক বন্ধু, যাদের কোনো সন্তান নেই তারা বলে, আমার সঙ্গে থাকা অসম্ভব। কারণ, আমার সব কথাই মাতৃত্বকে কেন্দ্র করে। কিন্তু একজন মা হওয়া হাজারো কাজের চেয়ে ক্লান্তিকর। মা হওয়া ছাড়া আমি এখন কোনো কাজ করছি না। আমি এখন যে কাজটি করছি সেটি টাকার জন্য নয়। এটা মানুষ হিসেবে আমার নিজের উন্নতির জন্য।
আমি যখন অভিনয় শুরু করি, আমাকে বারবার বলা হয়েছিল, আমি যথেষ্ট ভালো না। কিন্তু আমি প্রতিবার নিজেকে বলেছি, আমাকে লেগে থাকতে হবে। আমি এখন বুঝতে পারি, আমার মা ও দাদির অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে কতটুকু সাহায্য করেছিল। ভ্যালেন্তিনাকেও আমি একইভাবে বড় করতে চাই। তার ওপরে আমি কোনো স্বপ্ন বা চাহিদা চাপিয়ে দিতে চাই না। আমি চাই, সে বড় স্বপ্ন দেখবে এবং নিজের যোগ্যতায় সেটা অর্জন করে নেবে।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে, একজন মা হিসেবে আমি সব সময়ই সেরা কিছু করতে চেয়েছি। কারণ, আমি সেই সব মহান নারীকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেয়েছি, যাঁরা নিজেদের প্রতিভার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি।
আমি নিজেকে একজন নারীবাদী হিসেবে ভাবি। কারণ, আমি নারীদের ভালোবাসি এবং তাঁদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। আমি চাই পৃথিবীটাকে নারীদের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে। আমি নারীবাদী কারণ, বন্ধু হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে আমি প্রতিদিনই নারীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছি। অনেক অসাধারণ নারী আমাকে আজকের আমি হিসেবে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান। ২৯ মার্চ, ২০১৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন মনীষ দাশ
দেড় মাস ধরে ভারতের আসাম রাজ্যের শিশু আশ্রমে আছে ছয় বছরের শিশু রনি। টেলিফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলে সে। ফিরতে চায় মায়ের কাছে। ছয় বছরের রনি কোনো নিয়ম বোঝে না। মাকে সে বলে, ‘মা মুই তোর কাছে যাইম, মোক বাড়িত নিয়া যাও।’
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুসা ফেরুসা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রম থেকে স্থানীয় এক বাসিন্দার মাধ্যমে মুঠোফোনে মায়ের কাছে ফোন করেছে শিশুটি। ছেলের আকুতি শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। পাশেই ছিলেন রনির বাবা জয়নাল আবেদীন (৩০)। চোখের পানি মুছে বলেন, দেড় মাস ধরে ছেলেটা আসামের একটি আশ্রমে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দুই দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই হামার ছাওয়াক আনি দেও। তানা হইলে ওর মাকে বাঁচানো যাবে না।’
রনি কীভাবে আসামের ওই আশ্রয়ে গেল, এ ব্যাপারে বাবা জয়নালের দেওয়া ভাষ্য, এলাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সংসারের অভাব লেগেই থাকত। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে এক দালালের মাধ্যমে অবৈধপথে ছয় মাসের শিশু রনিকে নিয়ে ভারতে চলে যান। দিল্লির ঝরঝর জেলার শনিপথ থানার খরগোদা গ্রামে দূর্গা নামের একটি ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী দুজনে কাজ শুরু করেন। সেখানে তাঁদের আরও দুটি মেয়ের জন্ম হয়। তাদের নাম জান্নাতী (৪) ও জেসমিন (দেড় বছর)। এর মধ্যে বড় হয়ে যায় রনি। রনিকে বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ভাবেন তাঁরা।
ছেলেকে বাংলাদেশে পাঠাতে আবার দালালের কাছে যান জয়নাল। তাঁর ভাষ্য, সীমান্ত পারাপারের ভারতীয় দালাল মইনুদ্দিনের মাধ্যমে তিনি আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার টাকিমারী সীমান্ত দিয়ে রনিকে দেশে তার দাদা-দাদির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। গত ১১ এপ্রিল টাকিমারী সীমান্ত পার হওয়ার সময় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা মইনুদ্দিন ও রনিকে ধরে ফেলে। মইনুদ্দিন কৌশলে পালিয়ে যান। রনি বিএসএফের কাছে আটকা পড়ে।
জয়নালের তথ্যমতে, খবর পেয়ে রনির দাদা হজরত আলী কুড়িগ্রাম ৪৫ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধীন চৌদ্দকুড়ি বিজিবি ক্যাম্পে এ ঘটনার কথা জানান। বিজিবি আটক হওয়া রনিকে ফেরত চেয়ে টাকিমারী বিএসএফ ক্যাম্পে চিঠি পাঠায়। এ পর্যন্ত তিন দফা পতাকা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু রনিকে ফেরত দেওয়া হয়নি। মাস খানেক আগে দেশে ফিরে এসেছেন রনির মা-বাবা।
এ ব্যাপারে রনির দাদা হজরত আলীর ভাষ্য, যখন জানতে পারেন বিএসএফ তাঁর নাতিকে নিয়ে গেছে, তখন চৌদ্দকুড়ি বিজিবি ক্যাম্পে ঘটনাটি জানান। সেখানে প্রথম পতাকা বৈঠক হয়। ওইদিন বিএসএফ তাঁকে বলেছে যে রনিকে ফেরত পেতে হলে তার বাবা-মাকে উপস্থিত হতে হবে। বিষয়টি জানার পর রনির মা-বাবা নানা কৌশলে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। বিএসএফের দাবি অনুযায়ী রনির মা-বাবাসহ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় দফা পতাকা বৈঠকে যান। বৈঠকে বিএসএফ শিশুকে ফেরত না দিয়ে জানায়, রনির বাবা-মার রক্ত পরীক্ষার কাগজপত্র, জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড, রনির ছবি ও জন্মনিবন্ধন কার্ড লাগবে। সেগুলো নিয়ে গেলে রনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
তৃতীয় দফা পতাকা বৈঠকে সপরিবারে কাগজপত্রসহ গেলে টাকিমারী ক্যাম্পের বিএসএফ জানায়, রনি আসামের ধুবরীর একটি শিশু আশ্রমে আছে। তাঁকে পেতে হলে আরও ওপর মহলে যোগাযোগ করতে হবে।
রনির দাদা হজরত আলীর ভাষ্য, রনিকে ফেরত না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ সময় আবু তালেব নামের এক ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে রনিকে ফিরিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের জালিরচর গ্রামে। রনিকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চার দফায় ১১ হাজার টাকা হাতিয়ে তিনি পালিয়ে যান।
ফুলবাড়ী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শান্তাদুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি তৃতীয় দফা পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিএসএফের কাছে রনির বাবা-মা, দাদার রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন, ভোটার আইডি কার্ড, ছবি সবই দেওয়া হয়। কিন্তু রনিকে ফেরত দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বিজিবির দইখাওয়া ক্যাম্পের হাবিলদার আলী আহম্মেদের ভাষ্য, শিশু রনিকে ফেরত চেয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিন দফা পতাকা বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। শিশুটির বাবা-মা ও দাদার রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন, ছবি, ভোটার আইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু বিএসএফ শিশুটিকে ফেরত দেয়নি। এখনো যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
সূত্র-প্রথম আলো।