banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 728 বার পঠিত

 

সবজি রাজ্যের ছালেহা

আবু আক্তার করন, মেহেরপুর : অবহেলিত নারীর জীবন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত হতে পারেন জেলার সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের ছালেহা বেগম। স্বামীর অবহেলাকে তোয়াক্কা না করে উঠানের পাশে জমিতে গড়ে তুলেছেন রকমারি সবজির বাগান। এলাকাবাসী বাগানটির নাম দিয়েছে ছালেহা বেগমের জীবন্ত সবজি বাজার।

 

Shofolota-01

 

সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের ছালেহা বেগমের বিবাহিত জীবনের প্রথমদিকটা খারাপ ছিল না। কিন্তু ১০ বছর আগে স্বামী লিয়াকত আলী অন্যত্র বিয়ে করে বিদেশ চলে যান। এরপর ঠাঁই হয় বাবার বাড়িতে। বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে পান একটি ছোট বাড়ি ও বাড়ি সংলগ্ন এক টুকরো জমি। ওই টুকরো জমিতে গড়ে তোলেন বিভিন্ন সবজিসহ ফলের বাগান। সবজি বিক্রি করে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয়। ফল বিক্রি করে বছরে আরও ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের খরচ বাদে ওই টাকা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাতনী তামান্নাকে সহায়তা করে আসছেন। এ সফলতা দেখে স্বামী তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানান।

 

Shofolota-02

 

ছালেহা খাতুন বলেন, স্বামী আমাকে ফেলে বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকে বাবার বাড়িতে এসে পৌনে দুই বিঘা জমির উপরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করি। এখন এ সবজি চাষ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি চলি এবং তামান্নাকে সহযোগিতা করি। তিনি আরও বলেন, আমার বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাহিদা। যার কারণে আমাকে সবজি বিক্রি করতে বাজারে যাওয়া লাগে না। বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।

 

Shofolota-03

 

সবজি কিনতে আসা রেখা খাতুন জানান, আমরা এখান থেকে প্রতিদিন সবজি কিনে নিয়ে যাই। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকলেও আমাদের সমস্যা হয় না। বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে তাৎক্ষণিক নিজ হাতে সবজি তুলে নিয়ে যাই। এ ছাড়া সবজিতে কোনো প্রকার বিষ দেওয়া থাকে না, এ কারণে আমরা বিষমুক্ত সবজি খেতে পারি। আরেক প্রতিবেশী শেফালী খাতুন জানান, সালেহার সবজি বাজারটা হওয়ায় এলাকার অনেকের উপকার হয়েছে। আমাদের যখন মন চায় আমরা ইচ্ছামতো সবজি এখান থেকে কিনে নিতে পারি। আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় যদি এ ধরনের জমি থাকত তাহলে আমিও সবজির আবাদ করতাম। এখন গ্রামের অনেক গৃহবধূ বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ শুরু করেছেন।

 

Shofolota-03

 

ছালেহা খাতুনের নাতনী শাহেনা আক্তার তামান্না মোবাইলে জানান, নানী প্রতি মাসে লেখাপড়ার খরচ বাবদ আড়াই হাজার টাকা দেন। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন, এখন অনেক ভালো আছেন।

 

Shofolota-02

 

ছালেহার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিভাগ। সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ সালেহা বেগমের সবজি চাষে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের চাঁদবিল গ্রামের সালেহা বেগম নিজ উদ্যোগে তার বসত বাড়ির আঙ্গিনাসহ আশপাশে সবজি চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এটি নজিরবিহীন। আমার ইউনিয়নসহ সারা জেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে যদি একজন করে সালেহা বেগম থাকেন, তাহলে আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতিসহ পুষ্টিহীনতা দূর হবে।

 

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/৪ সেপ্টম্বর ২০১৪ই.

Facebook Comments