banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 231 বার পঠিত

 

বখাটের অত্যাচারে নিভে গেলো আরেকটি জীবন প্রদীপ!

অপরাজিতা ডেস্কঃ বখাটের অত্যাচারে দশম শ্রেণিতে উঠে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন নাহিদা আক্তার। যৌন হয়রানির ভয়ে লেখাপড়া ছেড়ে তিন বছর ধরে বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু বখাটে নাহিদ ছৈয়াল (২৬) পিছু ছাড়েনি। পথে-ঘাটে কোথাও সুযোগ পেলেই কুপ্রস্তাব দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল নাহিদ। একই সুযোগ নিতে বাড়ির একটি বিয়ে অনুষ্ঠানেও হাজির হয় নাহিদ ছৈয়াল। এখানে এসেও যৌন হয়রানি শুরু করলে প্রতিবেশীরা দোষারোপ করেন নাহিদাকেই। শেষ পর্যন্ত অপবাদ আর অপমান সইতে না পেরে বিয়েবাড়িতেই আত্মহত্যা করে বসেন নাহিদা আক্তার (১৮)।
গতকাল বুধবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
প্রতিবেশী বাবলু গাজীর ঘরে গোপনে কীটনাশক পান করে তিনি আত্মহত্যা করেন। বাবলু গাজী নিজেও নাহিদাকে অপবাদ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বখাটে নাহিদ একই গ্রামের আলী আকবর ছৈয়ালের ছেলে। এ ঘটনায় নাহিদার মা-বাবা আত্মহত্যার প্ররোচনায় নাহিদ ছৈয়ালসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
নিহত নাহিদার পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনারা গ্রামের দিনমজুর মোখলেছ গাজীর মেয়ে নাহিদা আক্তার। প্রায় চার বছর আগে থেকে নাহিদাকে বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল নাহিদ ছৈয়াল। তখন (২০১১ সাল) নাহিদা একই গ্রামের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাকে যৌন হয়রানি করত নাহিদ। এক পর্যায়ে নাহিদের অত্যাচার সহ্য সহ্য করতে না পেরে দশম শ্রেণিতে উঠে ২০১২ সালে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন নাহিদা। এর পরেও বিভিন্ন সময় নাহিদাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকে নাহিদ ছৈয়াল। কিন্তু নাহিদ গ্রাম-সম্পর্কে ভাগ্নে হওয়ায় তার প্রস্তাবে রাজি হননি নাহিদা। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নাহিদা সম্পর্কে বিভিন্ন কুৎসা রটাতে শুরু করে বখাটে নাহিদ।
মঙ্গলবার রাতে নাহিদাদের বাড়ির আবু তাহের গাজীর মেয়ে আলো আক্তারের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আসে নাহিদ ছৈয়াল। এ সময় বাড়ির অনুষ্ঠানে নাহিদাও অংশ নেন। রাতে নাহিদা একই বাড়ির বাবলু গাজীর ঘরে গেলে নাহিদ ছৈয়াল তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এভাবে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাঁকে উত্ত্যক্ত করে ও প্রেমের প্রস্তাব দেয়। নাহিদা বিষয়টি তাঁর বান্ধবী জান্নাতকে জানান। পরে জান্নাতের সহায়তায় তিনি ওই ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। বিষয়টি পরে নাহিদা তাঁর মা-বাবাকেও জানান। কিন্তু পরিবারকে জানানোর কারণে গতকাল সকালে বাবলু গাজী ও বখাটে নাহিদের মামা নান্নুগাজী নাহিদাকে গালিগালাজ করে খারাপ অপবাদ দেন। ফলে মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে বাবলু গাজীর ঘরেই নাহিদা অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাঁর গায়ে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হয়। জ্ঞান ফিরে আসার পর নাহিদাকে তাঁর মা নিজেদের ঘরে নিয়ে যান। কিন্তু ঘরের মধ্যে মেয়েকে রেখে আবার বিয়ে বাড়িতে আসেন নাহিদার মা আনোয়ারা বেগম। এই ফাঁকে খালি ঘরে ধানক্ষেতে দেওয়ার জন্য রাখা কীটনাশক নিয়ে তা বাবলু গাজীর ঘরে গিয়ে পান করেন নাহিদা। কীটনাশক পান করার পরে নাহিদা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। প্রথমে তাঁকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়। আর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তিনি মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নড়িয়া থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার। নাহিদার বান্ধবী জান্নাত আক্তার বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। সে সময় স্কুলে যাওয়ার পথে নাহিদ ছৈয়াল নাহিদাকে উত্ত্যক্ত করত।’ নাহিদার মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিন বছর ধরে নাহিদ ছৈয়াল আমার মেয়েটাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ওর জন্য মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমার মেয়েটিকে বখাটে নাহিদ বাঁচতে দিল না। ওই বখাটের উৎপাতেই আমার মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’ এ ব্যাপারে কথা বলতে নাহিদ ছৈয়ালের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। নাহিদের মা জানুয়া  বেগম বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনাই আমার জানা নেই। এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে মেয়ের পরিবার থেকে কেউ আমাদের কাছেও আসেনি।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Facebook Comments