All posts by Oporajita

 

“ভুলেও সন্তানকে অভিশাপ দিবেন না”

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। আমাদের পাড়ার আব্দুল্লাহ যে কিনা পানিতে ডুবে মারা যায় তাঁর মা পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিশোর সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে পাগলপারা হয়ে কাঁদছেন। মায়ের বাঁধভাঙ্গা কান্না আর বিলাপ শুনে উপস্থিত কারো পক্ষেই চোখের পানি সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
img20171126_231028
♦মায়ের চোখের পানি
তিনি কাঁদছেন আর বিলাপ করে বলছেন,
‘ও বাবুর আব্বু তুমি আমাকে মেরে ফেল। আমিই তোমার সন্তানকে হত্যা করেছি। গতকালই ওর জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমি বলেছি, ‘তুই মরিস না; মরলে দশটা ফকিরকে খাওয়াতাম।’
img20171126_231427
♦দুরন্তপনা বালক
হ্যা, সত্যিই তিনি আগেরদিন ছেলেটির দুরন্তপনায় অস্থির হয়ে এমন বলেছিলেন। তখন একজন পাগলেরও ভাবার অবকাশ ছিল না যে গর্ভধারিণী মা সত্যিই তার সন্তানের অমঙ্গল কামনা করছেন। কিন্তু অসচেতনভাবে কামনা করা দুর্ঘটনাও কখনো সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে।
img20171126_225141
♦মায়ের অভিশাপ
আব্দুল্লাহর মা গতকাল রাগের মাথায় যে কথা উচ্চারণ করেছিলেন কে জানত আজই তা বাস্তব হয়ে দেখা দেবে।
ঘটনা হলো, সেদিন দুপুরে ছেলেটি তার মায়ের সঙ্গে শুয়ে ছিল। তিনটার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে একরকম জিদ করেই সে মায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজতে। বাড়ির বাইরে এসে সে আশপাশের সমবয়সী আরও কয়েকটি কিশোরকে পেয়ে যায়। সবাই মিলে কোন বুদ্ধিতে যেন দল বেঁধে যায় পাশের মহল্লার একটি নতুন পুকুরে গোসল করতে। সেখানে গিয়ে সবার আগে সে-ই লাফ দেই পুকুরে।
img20171126_231729
♦পুকুরের টলমল পানি
অবুঝ কিশোর ঠিক বুঝতে পারেনি লাফ দিলে পুকুরের প্রায় গভীরে গিয়ে পৌঁছবে সে। যেখানে সাঁতার না জানা একটি কিশোরের জন্য অপেক্ষা করছে অবধারিত মৃত্যু। ঘটনা যা হবার তাই হল। বাচ্চাগুলোর চোখের সামনেই সে পানিতে ডুবল। ওরা ভাবল সে বুঝি তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। কিছুক্ষণ পর তারা ওকে না পেয়ে ভয়ে আশপাশের লোকদের ডেকে আনল। ততক্ষণে অবশ্য তার ক্ষুদেকায় দেহ থেকে প্রাণপাখি উড়াল দিয়েছে।
img20171126_224658
♦মায়ের কাছে সন্তান
মা তার সন্তানকে অবর্ণনীয় কষ্টে গর্ভে ধারণ করেন। অমানুষিক কষ্টে পৃথিবীর আলো-বাতাসে আনেন। তারপর নিজের ভালোবাসা আর ত্যাগের সবটুকু উজাড় করে অসহায় একটি শিশুকে যথাক্রমে সুস্থ, সবল, সজ্ঞান ও স্বাবলম্বী করে তোলেন। সন্তান মানুষ করতে গিয়ে বাবা-মাকে যে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় তা শুধু বাবা-মায়েরাই জানেন। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এ কষ্ট আরও বেশি। এখানে রোজ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়াই করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়।
img20171126_232704
♦মায়ের ভালবাসা
অভাবের কারণে একজন নবীন মাকেও একহাতে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব আর অপরহাতে বুকের ধন সন্তানটিকে আগলাতে হয়। অনেক মা আছেন যারা সময়মত বাচ্চার খাবারটিও যোগাতে পারেন না রুচিমত। বিশেষত যেসব বাচ্চা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। দরিদ্র পরিবারে এসব শিশুকে যে কত কষ্টে মা জননী বড় করে তোলেন তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এ সময় মায়েদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন হয়।
img20171126_224736
♦মা’ যখন ধৈর্যহারা
অথচ প্রগলভ চরিত্রের অনেক মা’কে এ সময় ধৈর্যহারাও হতে দেখা যায়। অনেক মা সন্তানের ওপর বিরক্ত হয়ে তাকে অবলীলায় অভিশাপ দিয়ে দিয়ে বসেন। স্নেহময়ী জননী হয়তো তার জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের যে কোনো অনিষ্ট রোধ করতে চাইবেন। কিন্তু তিনিই আবার রাগের মাথায় অবচেতনে আদরের সন্তানটির অনিষ্ট কামনা করে বসেন।
গ্রাম-বাংলায় প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদের দুরন্তপনা বা দুষ্টুমিতে নাকাল হয়ে অনেক মা সরাসরি বাচ্চার মৃত্যু কামনা করে বসেন। ‘তুই মরিস না’, ‘তুই মরলে ফকিররে একবেলা ভরপেট খাওয়াতাম’, ‘আল্লাহ, আমি আর পারিনে’, ‘এর জ্বালা থেকে আমাকে নিস্তার দাও’- এ জাতীয় বাক্য আমরা অহরহই শুনতে পাই। বিশেষত কৈশোরে এসে গ্রাম-বাংলার শিশুদের দুরন্তপনা কখনো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে কিশোর সন্তানকে উদ্দেশ করেই সাধারণত মায়েরা এমন অসহিষ্ণু বাক্য উচ্চারণ করে থাকেন। তাই এ সময় মাকে অনেক বেশি ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
img20171126_225356
ইসলামের সার্বজনীন আদর্শের ধারাবাহিকতায় এ বিষয়টি সম্পর্কেও আমরা দিকনির্দেশনা পাই তারই কাছে। এ ব্যাপারেও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।
ইসলাম কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া বা বদ দু‘আ করাকে সমর্থন করে না। আপন সন্তানকে তো দূরের কথা জীবজন্তু এমনকি জড় পদার্থকে অভিশাপ দেয়াও সমর্থন করে না।
img20171126_232146
♦আল হাদীস
জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাতনে বুওয়াত যুদ্ধের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি মাজদী ইবন ‘আমর জুহানীকে খুঁজছিলেন। পানি বহনকারী উটগুলোর পেছনে আমাদের মধ্য থেকে পাঁচজন, ছয়জন ও সাতজন করে পথ চলছিল। উকবা নামক এক আনসারী ব্যক্তি তাঁর উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিল এবং তাকে থামাল। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দিল। উটটি তখন একেবারে নিশ্চল হয়ে গেল। তিনি তখন বললেন ধুত্তুরি।
‘তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’
এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের উটকে অভিশাপদাতা এই ব্যক্তিটা কে?
তিনি বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি এর পিঠ থেকে নামো।’ আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্তুতির এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেবেন।’
[মুসলিম : ৭৭০৫]

♦♦♦হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, অর্থাৎ তোমরা কোনো মুহূর্তেই নিজের বিরুদ্ধে, নিজের সন্তান বা সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করো না। কারণ, হতে পারে যে সময় তুমি দু‘আ করছো, তা দিনের মধ্যে ওই সময় যখন যা-ই দু‘আ করা হোক না কেন তা কবুল করা হয়। তোমরা তো এ সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত নও। (মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ : ৭/৭০৩)

♦♦♦ হাদীসটি বর্ণনা করে আরেক ব্যাখ্যাকার বলেন, ‘হাদীসটি রাগের মাথায় মানুষের তার পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে দু‘আ করার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে। হাদীসটি এর কারণও তুলে ধরে। আর তা হলো, এ দু‘আটি কবুলের বিশেষ মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। ফলে মানুষের সবই কবুল হয়ে যায় চাই তা ভালো হোক বা মন্দ, যা সে তার পরিবার বা সম্পদের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে না।’
[আবদুল মুহসিন, শারহু সুনান আবী দাউদ : ৮/২৮৮]
img20171126_232204
♦আল কোরআন
নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে দু‘আ করার অর্থ তো নিজেই নিজেকে হত্যার তথা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ – البقرة: ١٩٥
‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [ সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫]

অতএব প্রতিটি মাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার রাগের মাথায় উচ্চারণ করা বাক্য যদি সত্যে পরিণত হয় তাহলে কেমন লাগবে?
আমি কি তা সহ্য করতে পারব?
img20171125_125224
এ জন্য রাগের মাথায়ও কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করা যাবে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে শুধু মায়েদেরই নয়, আমাদের সবারই উচিত নিজের, নিজের সন্তান ও সম্পদের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করা থেকে সংযত হওয়া। রাগের সময় সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেওয়া।
img20171126_225441
আর মেয়েদের সবিশেষভাবে বলতে চাই, মা, আপনি অনেক ধৈর্য ধরেছেন, অনেক কষ্ট করেছেন, আরেকটু সবর করুন। রাগের মাথায় সন্তানকে অভিশাপ দেয়া থেকে সংযত থাকুন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমীন।

#সংগৃহীত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে
images(37)
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।
img20171125_125115
শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।
img20171125_124745
একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।
img20171125_124845
বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?
img20171125_125224
প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।
img20171125_125323
যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।
প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।
img20171125_124715
এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।
img20171125_124910
এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।
img20171125_125000
টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।
এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

নাতীর সাথে পিইসি পরীক্ষা দিলেন নানী -নাজমুস সাকিব

শিক্ষার কোনো বয়স নেই, সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় নাতির সাথে অংশগ্রহণ করে একথা বাস্তবে প্রমাণ করলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগম।
এ বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন। হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্গাচাষি আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম। ওই দম্পতির চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দু’জন ভ্যানচালক ও তৃতীয় ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। ছয় বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোনো রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেকোনো মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন।
পরের দিন একমাত্র মেয়ে রহিমার তৃতীয় সন্তান জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন প্রথম শ্রেণীতে। ধাইয়ের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন স্কুলে কাস করতেন। ছয় বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতি জায়েদ ও দেবরের ছেলে মুহিবের সাথে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন।
সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন। পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম প্রতিবেদককে জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি। জন্মেছিলাম দরিদ্র পরিবারে, লেখাপড়া তো দূরের কথা ভরণ-পোষণ ঠিকভাবে দিতে পারেনি পরিবার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় আরেক দরিদ্র পরিবারে। দরিদ্র হওয়ায় সন্তানদেরও পড়াশুনা করাতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, গত ছয় বছরে সব কাস পরীক্ষায় নাতির বয়সী সব শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনেক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে।
সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এ বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেড়িয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, এটাই প্রমাণ করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই।
চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বদর উদ্দিন জানান, আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর দেখিনি।

সুত্রঃ নাজমুস সাকিব ত্রিশাল (ময়মনসিংহ), নয়াদিগন্ত

 

কেন বাচ্চারা শিক্ষকদের ভালবাসে?-আফরোজা হাসান

ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে

শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে।

শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।

একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে।

বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না।

বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো?

প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।

যারা সীটে বসে ছিল তাদের একজন বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে। আমরা তো চুপ করে বসে ছিলাম।

প্রফেসর বললেন, অন্যের কষ্ট, বিপদ দেখে তোমাদের মনে এতটুকু দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়নি এটা তো সবচেয়ে বড় অন্যায়। মনেরেখো তুমি অন্যের সাথে যে আচরণ করবে তোমার সাথেও অন্যেরা সেই আচরণই করবে। আজ তুমি অন্যের কষ্ট দেখে হাসলে, কাল তোমার কষ্টে অন্যেরা হাসবে। আজ তুমি কাউকে সাহায্য করতে কার্পন্য করলে, কাল তোমার বিপদে কাউকে খুঁজে পাবে না পাশে। এখানে তোমরা সবাই বন্ধু। একসাথে পড়বে, খেলবে, হাসবে, একের বিপদে অন্য সাহায্য করবে। আর যদি এমন না করো তাহলে কখনোই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে না জীবনে।

এখন বলো তোমরা কি ভুল করেছো? সবাই স্বীকার করে নিলো যে তারা ভুল করেছে। প্রফেসর বললেন, এখন যদি আমি তোমাদেরকে শাস্তি না দেই তাহলে তোমরা এই ভুলটা মনেরাখতে পারবে না এবং আবারো যখন এমন কোন পরিস্থিতি আসবে একই ভুল করবে। বাচ্চারা তখন খুশি মনে ওদের শাস্তি মেনে নিয়েছিলো।

এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা বাবা-মা বা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না কিন্তু সেই কথাটা যদি স্কুলের টিচাররা করতে বলে তাহলে বিনা ঝামেলাতে করতে রাজী হয়ে যায়। আগে আমি বেশ অবাক হতাম এর কারণ কি হতে পারে চিন্তা করে। কিন্তু স্কুলে জয়েন করার পর বুঝেছি কেন বাচ্চারা এতো পাগল টিচারদের জন্য। কেন এতো ভালোবাসে টিচারদেরকে। কারণ উনারা সেই ভালোবাসা অর্জন করে নেন তাদের কথা, কাজ আর আচরণের দ্বারা।

টিচিং কোর্স করার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিলো টিচারদের প্রতি ভালোবাসা বাচ্চাদেরকে অনেক বেশী উৎসাহিত করতে পারে পড়াশোনার প্রতি। বাচ্চাদের মনে যদি এই বিশ্বাস তৈরি করা যায় যে টিচাররা তাদেরকে ভালোবাসেন আর তাদের ভালো চান বলেই প্রয়োজনে তাদেরকে বকা দেন আর শাস্তি দেন এবং এরফলে উপকার তাদেরই হয় তাহলে স্কুল ও পড়াশোনার প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে।

এই চমৎকার আইডিয়াটা কিন্তু পারিবারিক জীবনেও এপ্লাই করা যায়। বাচ্চার মনে যদি বাবা-মা আর পরিবারের লোকজন এই বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করতে পারেন যে, তারা যা বলেন তাদের উপকার ও মঙ্গলের জন্যই বলেন তাহলে বাচ্চাদের মনে অকারণ রাগ, ক্ষোভ বা হতাশা সৃষ্টির সুযোগ অনেক কমে যায়। বাবা-মা যা করছেন আমার ভালো জন্য করছেন এবং আমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছেন বাচ্চার মনে এই নিশ্চয়তা সৃষ্টির দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হবে। কথা, কাজ ও আচরণ দিয়ে বাচ্চার কাছে নিজেদেরকে কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 

দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হুদা দম্পতি

সম্পত্তি হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের অন্যতম সুন্দর উপায় হল ‘দান’। ভূ-সম্পত্তির মালিকরা তাঁদের স্নেহধন্য মানুষকে বা ভালোবাসার ব্যক্তিকে সাধারণত দিয়ে থাকেন। কিন্তু ডা.দম্পতির দানের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন কাজ করে সবার কাছে স্বরণীয় ও সম্মানিত হয়ে গেলেন।

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্বেচ্ছায় কোনো মূল্য বা বিনিময় ব্যতিরেকে ব্যক্তিকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানকে ‘দান’ করা যায়। আবার মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি নিস্বার্থভাবে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানের নামেও দেওয়াকে ‘দান’ বুঝায়। দানের ক্ষেত্রে আটটি ক্ষেত্র রয়েছে। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল বা ভবিষ্যৎ দানেরও বিধান রয়েছে। কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিনিময় ব্যতিরেকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তা ধরা হয় ‘দান’।
FB_IMG_1511450666163
৫ তালা বাড়িটি দানের এই সিদ্ধান্ত শুধু ডা.হুদা ওনার একার নয়, সাথে রয়েছেন তার স্ত্রী ডা.রোকসানা হুদা। দুজনে মিলে “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” হস্তান্তর করেছেন।
FB_IMG_1511450649585
ডা.হুদা ও ডা.রোকসানা হুদা আজ ২৩শে নভেম্বর তাদের তেজস্তুরি বাজারের ৫ তালা বাড়ি টি “আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কে দান করলেন। ডা:দম্পতির ইচ্ছানুযায়ী এই বাড়িতে একটি মেয়েদের অনাথালয় যাকে আমরা “হোম” বলি, স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দান সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-দানের প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি এবং দখল হস্তান্তর। স্থাবর বা অস্থাবর সব ধরনের সম্পত্তি যে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দান করা যায়।
FB_IMG_1511450655291
“আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম” কতৃপক্ষ তাদের এ দান যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করে নেন সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সমাজের অন্যান্য বিওবানরাও অনুসরন করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

 

একটি জাতীয় দৈনিকের মোটা দাগের শিরোনাম “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা” -ডা.কবীর জুয়েল

আমাদের বহির্বিভাগে প্রায়শঃই নিজেকে বড় মনে করা, বেশী কথা বলা, মাত্রাতিরিক্ত খোশ মেজাজী রোগীর দেখা মেলে, আজও এমন এক ম্যনীক-(অসুস্থতাজনিত ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী)রোগী এলো’, ইতিপূর্বে সে কক্ষনোই আমাদের এখানে আসে নাই কিন্তু তার শারিরীক ভাষা ও বাচন ভঙ্গীতে মনে হচ্ছে এই হাসপাতালের-ই উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা বুঝি পরিদর্শনে ঢুকলেন, সাথের মানুষগুলো ইতস্ততভাবে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন, টেবিলে একটি জাতীয় দৈনিক রয়েছে যার ‘মোটা দাগের শিরোনাম’ ছিল “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর খেলাপী ঋন সোয়া লাখ টাকা”, রোগীটি কোন রকম সৌজন্যতার তোয়াক্কা না করে পত্রিকাটি নিয়ে পড়তে লাগলো, আমরা রোগের তীব্রতা বুঝতে সাধারণতঃ এ ধরনের রোগী-কে প্রশ্ন করে থাকি, কি করেন, কি করতে পারেন,কি হতে ইচ্ছা করে, কি হতে চান? মজার ব্যাপার হলো এরা এদের কাছেপিঠে যা আছে তা নিয়েই কল্পনাপটু হয়ে ওঠে, তাই প্রশ্ন করা মাত্রই রোগী-টি নির্বিঘ্নে উত্তর দিলো
–“আমি ঋনখেলাপী হবো; এমন মজার পেশা আর নাই, আমি হবোই।
কেন হতে চান, জিজ্ঞেস করতেই তার কথার তুড়ি ছুটতে লাগলো…
–“বড় বড় কোম্পানি খুলবো,ব্যবসাসফল ব্যক্তিত্ব হবো, দেশ বিদেশ ঘুরতে থাকবো, ক্রিকেট টিম বানাবো, আমার এলাকায় দাতব্য চিকিৎসালয়ে আপনাদের মতো দুই ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুষবো, লোকের বাহাবা পাবো, নির্বাচন করে নেতা হবো, বেশী সমালোচনা হলে ঋন অবলোপন করাবো, বার্ধক্যকালে হজ্জ করে একটি বিশাল মসজিদ তৈরী করবো,,,”
তার কথা থামছেই না, আমরাও অনেকাংশে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওর সাথে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছিলাম,
এ ধরনের ম্যনীক রোগকে Infectious Manic Episode বলা হয়।
আমার junior Colleague বললো – ওনাকে Injection দিতে হবে, অন্তঃবিভাগে ভর্তি করতে হবে, সে ওয়াড বয় ডেকে ওকে তড়িঘড়ি করে Injection দিচ্ছে, কিন্তু রোগী-টি তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে আর বলছে…
–“আমাকে কেন Injection দিচ্ছেন, আমি কি ভুল বলেছি, আমি অনেক বড় হতে চাই, অনেক অনেক বড়,,,, তাইতো ঋনখেলাপী হতে চাই —-অন্যায় কি বললাম, আমি রোগী না, আপনারাই রোগী।”
এই প্রথম আমার সত্যি নিজেকে রোগী মনে হলো,মনে হলো চিকিৎসক, সেবিকা,ওয়াড বয়কে বলি, ওকে Injection দিয়োনা,ও-তো সত্য বলেছে,পারলে Injection গুলো তাদের দাও যারা কক্ষনো সত্য বলেনা, যারা পরের টাকায় পোদ্দারি করতে করতে পগার পার হয়ে যায়, কক্ষনো ধরা পড়েনা, ধরা পড়লেও জামাই আদরে থেকে দ্রুততম সময়ে জামিন নিয়ে নেয়, কিন্তু জামিনের শর্ত পালন করেনা, পুনরায় ভয়ানক রকমের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করে,,,,,, কিন্তু মুখে থাকে জনদরদ, কক্ষনোই ঋনখেলাপি হওয়ার প্রকৃত কারন মেনে নেয়না, মিথ্যাচারণ করে সব ঢেকে দেয়।

 

‘স্বার্থলোভী মানুষের দল’ -জিনাত তাসনিম

অগোচরে অন্তরালের রক্ত ক্ষর বুঝিবা
অমাবশ্যার মধ্যরাতে নিস্তব্দ কোন বাড়ির কলঘরে
জল গড়িয়ে যায়

টপ টপ টপ…

সব শূণ্যতার ধোয়ায় দম আটকে যায়
সময়,বিশ্বাসের বেলীতলে শীতের শুস্কতায় ভাসে,
আজকাল স্বপ্নের অনাগোনা নাই
দুঃস্বপ্নের দল মশকের মতন করে গুনগুন।

পদ্মের জল দেখিনা
সাগরের জলেও ভাসিনা
কেবল কুয়াশা মাখা ভোরে
কাকের শব্দ শুনে জেগে উঠি
স্বার্থলোভী মানুষের দল।

 

পিতামাতা ও সন্তানের সম্পর্ক শক্তিশালী করার ১০টি উপায়

সন্তানকে রোজ জড়িয়ে রাখুন বুঝতে দিন আপনার লক্ষ্য তার সাথে থাকা[Aim for 12 hugs (or physical connections) every day]সন্তানকে অত্যন্ত ভালবাসেন তা যেন আপনার প্রতিটি স্পর্শে অনুভূত হয়। সন্তানের বয়স যাই হোক এমনি সম্পর্কের অবনতি কোন ক্রমে তবুও সন্তানকে ভালবাসা বুঝতে দিন। হাতটি আলত করে ধরুণ বলুন আপনি তার সাথেই আছেন।
img20171121_152510
সন্তানদের সাথে খেলুন(Play)
একসঙ্গে খেলাধুলা করুন যে কোন খেলা হতে পারে দৌড়াদৌড়ি বা ওদের পছন্দমত কোন খেলা। খেলছেন এটা বড় কথা। আনন্দমুখর পরিবেশ বজায় রাখুন।
img20171121_152544
সন্তানকে সময় দেবার সময় সকল প্রযুক্তি বন্ধ রাখুন(Turn off technology when you interact)
যতটুকু সময় থাকুন না কেন সন্তানের সাথে মোবাইল, লেপটপ, কম্পিউটার যে কোন ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
img20171121_152643
বন্ধনকে মজবুত করুন সন্তানের ভুল সংশোধন করার আগে(Connect before transitions)
ভুল সংশোধনের সময় সন্তানের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন। যদি সন্তানদের কোন বিষয় আপনার অপছন্দ হয় তবে তাদের বুঝিয়ে বলার আগে তাদের সাথে একান্তভাবে বসুন মত বদলানোর চেষ্টায় আগে বন্ধনকে মজবুত করুন । জোর করবেন না।
img20171121_152430
প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্বাচন করুন( Make time for one-on-one time)
প্রতিটি কাজের জন্য থাকে মৌলিক কিছু সময়। প্রতিটি সন্তানের সুন্দর জীবন অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে চাইলে প্রতিটি সময়কেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করুন। সন্তানদের সমস্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওয়ান টু ওয়ান শেয়ারিং খুব প্রয়োজন।
img20171121_162922
সন্তানকে ক্ষুদ্র আবেগকে মূল্যায়ন করুন(Welcome emotion)
সন্তানকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে সন্তানদের প্রতিটি আবেগ বুঝা, গুরুত্ব দেওয়া এবং ক্লান্তি বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় সন্তানের চাহিদা ও বিশ্বাসের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
img20171121_163127
কথাগুল মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং উপলব্ধি করুন(Listen, and Empathize)
প্রতি দিন অন্তত ১০ বা ১৫ মিনিট সময় সন্তানকে দিন এবং ঐ সময় সন্তানদের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের আনন্দ, বেদনা অনুভূতিগুল ঠিক বাচ্চাসুলভ ভাবেই বুঝার চেষ্টা করুন।
img20171121_201157
ধীরে ধীরে বন্ধনের গভীরে ঢুকে পড়ুন যাতে চারপাশটি প্রশান্তিময় হয়(Slow down and savor the moment)
সন্তানরা সব সময় বুঝতে পারে কখন আপনি তাদের প্রতি যথেষ্ট মনযোগী। আপনার গভীর মনোযোগ ধীরে ধীরে মজবুত বন্ধনের দিকে এগিয়ে যাবে আর বাবা-মার সাথে প্রতিটি মুহুর্ত্বই সন্তানরা উপলব্ধি করবে আনন্দ অনুভূতির সাথে।
img20171121_201240
ঘুমতে যাওয়ার সময় গল্পের রাজ্যের মজাদার আবেশে জড়িয়ে ফেলুন(Bedtime snuggle and chat)
সন্তানকে রোজ ঘুমানোর সময় তাদের সাথে শিক্ষণীয় আর মজার মজার গল্প করুন যাতে আবেশে তাদের চোখ বুঁজে আসে।
img20171121_211354
সন্তানের সাথে উপস্থিত থাকুন বুঝতে দিন(Show up)
দৈনন্দিন কাজে সন্তানদের সাহায্য নিন পাশাপাশি তাদের কাজে আপনিও সাহায্য করুন এবং তারা যেন বুঝতে পারে যে, তাদের বাবা-মা তাদের সাহায্য, মতামতকে বেশ গুরুত্ব দেন।
img20171121_201353

 

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’- ডা.কবীর জুয়েল

‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস-২০১৭।
received_1774602615884743
১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস প্রবর্তন করে বিশ্বের লাখো শিশুর মাঝে একাত্মবোধ, জাগ্রতবোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। লাখো শিশুর অব্যক্ত কথাগুলো শোনার জন্য। কিন্তু আমরা কি শুনতে পাই আমাদের শিশুদের না বলা কথাগুলো? তাদের মনের মাঝে বয়ে চলা কত শত অভিব্যক্তি, কষ্ট, ভয়, একাকীত্ব, প্রশ্নের ঝড়?

আমাদের শিশুদের সাহায্য করার জন্য, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের মাঝে যে মনরোগের লক্ষণসমূহ দেখা যায় তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করছি—–
>> অটিজম বা ভাবের আদান-প্রদানে সমস্যা
>> অতি চঞ্চলতা ও মনোযোগহীনতা
>> অতিরিক্ত রাগ, জিদ, ভাংচুর করা
>> তোতলামী ও পঠনে সমস্যা
>> লিখাপড়ায় অনীহা বা অমনোযোগহীনতা
>> স্কুল পালানো, স্কুলভীতি
>> লিখাপড়ায় ক্রমাবনতি
>> স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা
>> নিরীহ মানুষ, পশু-পাখির সাথে রুঢ় আচরণ করা
>> অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা বলা
>> ক্রমাগত হুমকি প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করা
>> আগুন লাগিয়ে আনন্দ করা
>> বিছানায় প্রস্রাব করা
>> আত্মঘাত বা নিজেই নিজেকে আঘাত ও কষ্ট দেওয়া।

আপনার শিশুর মাঝে যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো হতে একাধিক লক্ষণ দেখতে পান, তবে দেরী না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। উপযোগী কাউন্সিলিং এবং অল্প কিছু ঔষধ আপনার শিশুকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে উদ্ধার করতে পারে। মনোরোগ অন্য সব রোগের মতো একটি রোগ যা সময়মতো চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। লোকলজ্জা, ভয়, সামাজিক গোঁড়ামি বা অজ্ঞতায় থেকে নিজের সন্তানের বিপদ বৃদ্ধি করবেন না। প্রতিটি শিশুর জীবন হোক সুন্দর, নিরাপদ ও আনন্দদায়ক, এই প্রত্যাশা আজকের বিশ্ব শিশু দিবসে।
received_1774602985884706

 

ঘরের সৌন্দর্য (ছোট্টশিশুর ঘর)

ছোট্ট শিশুর ঘর সাজাতে গেলে আপনাকে একটু ভাবতে হবে কারণ একটি শিশু আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রুচি বা পছন্দ একরকম নাও হতে পারে। শিশুর ঘর সাজানোর সময় মনে রাখতে হবে ঘরটা কোন বয়সী শিশুর জন্য সাজানো হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত শিশুর নিজস্ব মতামত আছে কিনা। শিশুটি হাসিখুশি থাকলে আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে তাই শিশুর মত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর সাজানো-গুছানো ঘর শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুর ঘরটি আকর্ষণীয় হতে হলে সর্বপ্রথম রং এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
img20171120_095041
ঘরের রঙ(The color of the house)
উজ্জ্বল রঙের প্রতি শিশদের ঝোঁক থাকে যেমন গোলাপি, বেগুনী, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট্ট শিশুর মতামতের উপর কখন কখন গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখুন সেই রঙের ছোয়া যেন জিনিসপত্রেও থাকে।
img20171120_095349
দেয়ালের সাজ(Wall decoration)
ঘরের রঙের সাথে মিল রেখে দেয়ালকে সাজিয়ে তুলতে হবে। বয়স অনুযায়ী শিশুর পছন্দের কার্টুন, ফুল, পেইন্টিং দিয়ে ফুটিয়ে তুলা যায় ঘরের দেয়ালটি। নানান নকশা আর রঙের ওয়াল পেপার শিশুদের ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
img20171120_190308
ঘরের পর্দা নির্ধারণ(Define the screen of the house)
গাঢ় রং এর দেয়ালের সাথে মিলিয়ে হাল্কা রঙ ব্যবহার করতে পারেন। সুতি বা কটন কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করা যেতে পারে।
img20171120_095148
আলো-বাতাস(Light-air)
বাচ্চাদের ঘরে জোড়ালো আলো হলেই ভালো হয়, কারন কম আলোয় ওদের পড়াশোনা করতে অসুবিধে হবে৷
img20171120_095623
শিশুর ঘরের আসবাবপত্র(Baby furniture)
সাধারণত আসবাব পত্রের রঙ উজ্জ্বল হওয়া দরকার। আসবাবপত্রের সাইজ আর রং যেন শিশুর পছন্দসই হয় নজর রাখুন।
img20171120_095738
বিছানাপত্র(Bedding)
চাদর যেন আরামদায়ক হয়। রঙের ক্ষেত্রে রঙ যেমন লালসে বর্ণের, হাল্কা সবুজ, গোলাপি, নীল রঙ যাতে বাচ্চারা ময়লা করলে সহজে বোঝা না যায়। খুব গাঢ় রঙের চাদর পরিহার করায় ভাল।
img20171120_184427
মেঝের উপর খেলা(Play on the floor)
শিশুর ঘরের মেঝের এক পাশে খেলার জিনিসপত্র দিয়ে আপনি সাজিয়ে দিতে পারেন। একটি সুন্দর রঙের মাদুর বা কার্পেট বিছিয়ে রাখা যেতে পারে যাতে বাচ্চারা সেটার ওপর বসে খেলে।
img20171120_184307
গাছ ঘর(Plant the trees)
শিশুর ঘরের ভেতর জানালা বা দেয়ালে অর্কিড বা আকর্ষণীয় কিছু গাছ লাগান। শিশুটির ঘরটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠবে।
img20171120_190336
পড়াশুনার রাজ্য(State of Education)
দেওয়ালে বই রাখার ব্যবস্থা করে যেতে পারে তাছাড়া বিছানার পাশে টেবিল রাখতে পারেন৷ খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা যেন নাগালের মধ্যে পায়৷

 

“মুঠোফোনে পর্ণগ্রাফী” ১৪ বছরের কিশোর দ্বারা ৭ বছরের শিশু ফারজানা ধর্ষণের পর হত্যা

১৭ সেপ্টেম্বর চাচা রহমত আলীর বাড়ির পেছনে পাওয়া যায় ফারজানার হাত-পা বাঁধা লাশ। ফারজানার বাবা ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিরাজনগর এলাকায় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয় তার মেয়ে ফারজানা আক্তার (৭)। নিহত শিশু ফারজানের বাবা কবির হোসেনের (৩৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
কবিরের সঙ্গে চাচা রহমত ও তাঁর সন্তানদের অনেক দিনের জমি নিয়ে বিরোধ। তাঁরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফারজানাকে হত্যার অভিযোগ এনে চাচাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কবির (৩৫)। সেখানে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন, এঁরাই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। পরে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ চাচাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
হত্যার এজাহারভুক্ত আসামিদের অস্বীকারের মুখে ১৫ দিন পর মামলার তদন্তভার আসে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে। ডিবির কাছেও কবির একই অভিযোগ করেন। কিন্তু নিবিড় তদন্তে জেলা ডিবির এসআই মো. মনিরুজ্জামান দেখেন, ফারজানাকে খুন করেছেন অন্য আরেকজন। সেই খুনি? তাঁর পরিচয় কি?
তার তদারক কর্মকর্তা হলেন জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) দীপক কুমার সাহা।
দীপক কুমার বলেন, ফারজানাকে খুনের অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও তারা যখন অস্বীকার করে আসছিলেন, তখন তারা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ফারজানার লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্থান টানা তিন দিন পরিদর্শন করেন। ফারজানার বাবা কবিরের কাছ থেকে জানতে পারেন, মুক্তিপণের জন্য ৫ লাখ টাকা চেয়েছিল কথিত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। টুকে নেন সেই মুঠোফোন নম্বর। বের করেন মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর)। দেখা যায়, কথিত অপহরণকারীরা কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ফোন করেছেন।
কবিরের দেওয়া তথ্যমতে, কে বা কারা মুক্তিপণের টাকা চেয়েছিল কবিরের কাছে, এর রহস্য খুঁজতে শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার। কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেই মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হয়ে আবার কবিরের বাড়িতে আসেন তারা।
পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দেখেন, কবিরের অন্য এক চাচার ছেলে বাড়িতে নেই।
দীপক কুমার বলেন, ‘কিশোর ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল তাকে ঘিরে? যে ছেলে সব সময় বাড়িতে থাকে, সে কেন হঠাৎ বাড়ি ছাড়া হলো? কৌশলে তাকে আমরা নজরদারি করতে থাকি। তার গতিবিধি অনুসরণ করা হয়। তার বন্ধুবান্ধব কারা, এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকি। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও চালাক। সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু তার আচরণের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সারাক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকত।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ফারজানা মারা যাওয়ায় একা একা ঘরে থাকতে তার ভয় লাগে। এ জন্য সে সেখানে থাকে না।
কবির এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে একই কথা বলেন কিশোরের মা। আরো জানা যায়, ওই কিশোর পিইসি ও জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে সেখানকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগের এই কিশোর এলাকায় মেধাবী ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া এই কিশোর ফারজানাকে খুব আদর করত। ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই কিশোর তাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। সবার সামনে অনেক কান্নাকাটিও করেছে। মারা যাওয়ার পর বাড়িতেও সে ছিল।
৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার করার পর ওই কিশোর ফারজানাকে খুন করার কথা অস্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, ফারজানাকে সে মেরে ফেলতে চায়নি, অসাবধানতায় মারা গেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বললেন, ‘যখন কিশোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তখনো হাতে পৌঁছায়নি। যখন হাতে আসে, তখন দেখি, সাত বছরের ফারজানাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে। ওই কিশোর তার জবানবন্দিতে ধর্ষণ করার কথা অস্বীকার করেছে।’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারজানাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। যৌনাঙ্গে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।’
ফারজানা খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর এখন সংশোধন কেন্দ্রে আছে। তার বাবা মারা যান বিদেশে। দাদা আর মাকে নিয়ে সে থাকত। ফারজানার বাবা কবির এই কিশোরের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। দেখা হলে সে সালাম দিত। তার সঙ্গে বা তার পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। ভালো ছাত্র হিসেবে তাকে স্নেহ করতেন। ওই কিশোর কেরানীগঞ্জের যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বললেন, ওই কিশোর আগে এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়ত। সেখান থেকে খুব ভালো ফলাফল করে। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ না থাকার কারণে তার দাদা তাকে তার স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ছেলেটি গত কয়েক মাসে স্কুলে আসেনি। দেয়নি কোনো পরীক্ষা। আর নিহত ফারজানার বাবা কবির দেখেছেন, প্রায় সময় কিশোরের হাতে মুঠোফোন থাকত। কার সঙ্গে যেন কথা বলত। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। তার মুঠোফোনটি বেশ দামি ছিল।
দীপক কুমার বলেন, কিশোর তাদের বলেছে যে মুঠোফোনটি সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ফারজানাকে হত্যার অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। গ্রেপ্তার করা আসামিরা এখন জামিনে আছেন।
দীপক কুমারের ধারণা, কিশোরটি মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত এমন কিছু দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আর আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে থাকতে পারে।
ফারজানার কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদেন বাবা কবির। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে খুন করেছে, তার ফাঁসি চাই। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি চাই না।’

সমাজের অধঃপতনের চিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোরটি হাতে মুঠোফোন। যার মাধ্যমে নিয়মিত পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ। ধর্ষণের অপরাধ ধামাচাপা দিতেই হত্যা করা হয় শিশুটিকে।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা।

আমার বাচ্চা খায় না! -ডা. মারুফ রায়হান খান

আমার-আপনার পরিচিত যতো মানুষ আছে সম্ভবত তাদের অধিকাংশের বাচ্চাই খায় না! ডাক্তার হোন বা না হোন এই অভিযোগ শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা বেদম কম।

আমি একটু কঠিন সত্যি কথা বলে ফেলি। আসলে শিশু তার প্রয়োজনমতোই খায়–ঝামেলা যা করে থাকেন তা করেন অতি সেন্সিটিভ মায়েরা! মা প্রথম দিকে মনে করেন তার বাবুটি বুঝি পেট ভরে খেলো না; তাই তিনি জোর করে আরও খাওয়াতে চেষ্টা করেন। এতে হয় কী বাবুটা মনে করে খাওয়া-দাওয়া ব্যাপারটা তার কাজ না, বরং এটা তার আম্মুর কাজ। তো আমি কেন খাব! ফলে ও খেতে চায় না।

মনোবিজ্ঞানী এম ই ল্যাম্ব একবার একটা মজার পরীক্ষা করলেন। তিনি একটা ঘরে বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্যে প্রয়োজনীয় খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণ না খাইয়ে রেখে বাচ্চাগুলোকে ঐ ঘরে ছেড়ে দিলেন। দেখা গেলো, যে বয়সী বাচ্চার যে ধরনের খাবার প্রয়োজন তা তারা খুঁজে খেতে থাকলো। অর্থাৎ শিশুরা তাদের চাহিদা ও পছন্দমাফিক খাবার নিজ থেকেই খায়।

আরেকটা ব্যাপার আছে। শিশুটির খাওয়া নিয়ে যে মা দুশ্চিন্তা করেন এটি তারা বুঝে ফেলে। ফলে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে শিশুটি এমন করতে পারে। যদি সে বলে ‘খাব না’–তাহলে মা তার সাথে অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করবে। মা-কে কাছে রাখার একটা ট্রিক হতে পারে এটা!

তো চিকিৎসা কী!

মায়ের জন্যে কষ্টসাধ্য হলেও শিশু খেতে না চাইলে কিছুক্ষণ না খাইয়ে রাখা উচিত। ক্ষুধা লাগলে বাচ্চা শেষ পর্যন্ত খাবেই।

আরেকটা ব্যাপার। বাচ্চা খেলে তাকে এমনভাবে পুরস্কৃত করা শুরু করবেন না যেন সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল নিয়ে এসেছে! যদি একটু খাওয়াতেই তাকে এটা-সেটা গিফট দিয়ে ভরে ফেলেন, আখেরে কিন্তু বিপদে পড়তে যাচ্ছেন এই বলে দিলুম কিন্তু!

ও হ্যাঁ, আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। শিশুর মা-বাবার মাঝে যদি প্রকাশ্য ঝুটঝামেলা চলতে থাকে, তাহলে কিন্তু বাচ্চার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে–এ কারণেও ক্ষুধাহীনতা প্রকাশ করতে পারে। নিজেদের ঝামেলা দূর করুন, বাচ্চাকে নির্বিঘ্নে খেতে দিন!

 

সুখের মুহুর্তগুলো(ইটালি সফরের) -আফরোজা হাসান

img20171117_231842
ভিক্সিনের একটি পার্ক 
জীবনটা যে কতো সুন্দর সেটা নাকি ফেলে আসার পরই বোঝে মানুষ। আমিও অবশ্য এমনটাই মনেকরি। তাই তো জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনার স্মৃতি আমার কাছে খুব বেশি মূল্যবান। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, আনন্দ-বেদনা এবং পাওয়া-না পাওয়ায় ভরা আমাদের জীবন…জীবনের প্রতিটা দিন…প্রতিটা ক্ষণ। জীবন থেকে না পাওয়া, অপুর্নতা, কষ্ট এসব কিছুই কাম্য নয় আমাদের কারোই। কিন্তু যেহেতু এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই সেগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে, মুছে ফেলার চিন্তা না করে কিভাবে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়া যায় এবং সেই শিক্ষার দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসমূহ থেকে দূরে থাকা যায় এমন চেষ্টাই থাকে আমার। আরেকটা চেষ্টা থাকে আমার সেটা হচ্ছে আনন্দময় মুহুর্তগুলো নাগালের মধ্যে রেখে একই আনন্দ বার বার উপভোগ করে জীবন ভাণ্ডারে আনন্দের মাত্রা বাড়ানো। ইটালি সফরও আমার জীবন ভাণ্ডারে এনে দিয়েছে অমূল্য কিছু স্মৃতি নামক রত্ন। 
নাকিব বড় হবার পর ওকে নিয়ে এই প্রথম ট্রেন জার্নি ও প্লেন জার্নি করলাম। ইমগ্রেশন, চেকিং কোন জায়গাতে নাকিবের পাসপোর্ট শো করা লাগছিলো না যেহেতু সে জন্মসূত্রে ইউরোপিয়ান কিন্তু আমাদেরটা শো করতে হচ্ছিলো। বাচ্চাদের সতর্ক ও কৌতূহলী দৃষ্টি ও মন সেটা এড়াতে পারলো না। কেন তার পাসপোর্ট কোথাও দেখাচ্ছে না জানতে চাইলো বাবার কাছে। আমরা এশিয়ান আর ও ইউরোপিয়ান জানার পর তো শুরু করলো প্রশ্নের বাণ ছোড়া। আমার আর ওর বাবার জন্ম, বিয়ে, স্পেন আসা পুরো ইতিহাস জেনে তবেই শান্ত হলো। জবাব দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন হাসান। উনার সেই প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়েও হাসি মুখে ছেলের ননস্টপ প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাওয়ার মুহুর্তটা মনে পড়লে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। 
img20171117_231150
প্লেনের জানালার কাছে বসে বাইরে মেঘ থেকে মোটে চোখই সরাচ্ছিলো না নাকিব। খুবই সিরিয়াস মুড। চোখে সতর্ক দৃষ্টি। কারণ কি জানতে চাইলে বলল, যে কোন সময় মেঘদের মধ্যে এঞ্জেল দেখা যেতে পারে সেটা সে মিস করতে চায় না। একঘণ্টা পর ক্লান্ত হয়ে বলল, বাবা এঞ্জেল কখন আসবে? বাবা বুঝিয়ে বলার পর তো এঞ্জেল দেখতে পারবে না জেনে প্রচণ্ড আশাহত হয়ে বিরাট বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ নাকিব। ইশশ…এখনো ভাবতে মজা লাগে সেই মুহুর্তটা। 
স্কাইপে আফনান-সারা ওদের সাথে নিয়মিত দেখা হলেও সামনাসামনি প্রথম দেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। সাদিয়া আপুকে দেখার পর ভালোবাসাময় সেই আলিঙ্গন। একদিন ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়ে রেখে আমি আর আপু বেড়িয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। সেই দিনটার কথা খুব মনেপড়ে। সারাপথ দুজন ননস্টপ বকবক করেছি। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা এমন একটা মুহুর্ত ছিল কিন্তু মনে মনেও না আবার একা একাও না। সাথে ছিল সাথী হয়ে মনের মতো বোন…বান্ধবী। আলহামদুলিল্লাহ্‌…
img20171117_231308
এই পথ ধরেই হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম
img20171117_231354
ভিক্সিন গিয়ে একদিন বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে গল্প করতে করতে নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে এতো দূর চলে গিয়েছিলাম যে ফেরার পথে আর পা চলছিলো না কারো। পাহাড়ি এলাকা উঁচু-নীচু, আঁকা-বাঁকা পথ কিন্তু যখন হাঁটছিলাম তখন টেরই পাইনি। হাসান বললেন, পাশে যখন নির্ভরযোগ্য সাথী থাকে তখন পথ যতই এবড়ো থেবড়ো হোক না কেন মানুষ নিশ্চিন্তে আর নির্ভিঘ্নে পথ পারি দিতে পারে। কি প্রমাণ পেলে তো আমি যে তোমার নির্ভরযোগ্য সাথী? উনার হাসি আর দুষ্টুমিতে ভরা এই বাক্যটিও অনেক বড় প্রাপ্তি আমার জন্য। 
img20171117_231442
ট্রেন থেকে তোলা পাহাড়ের ছবি 
পুরো ইউরোপ জুড়েই বইছে মন্দা হাওয়া। বাঙ্গালী ভাইয়েরা নানান ধরনের জটিলতা ফেস করছেন। ট্রেন ষ্টেশনে পরিচয় হলো এমন একজনের সাথে। বললেন উনার কষ্টের কথা, অভিমান ঝরে পড়লো ভাগ্যর উপর। যদি সামর্থ্যে কুলায় পৃথিবীর সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আমরা। তবে সেটা যে শুধু জাগতিক হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। একটু পাশে থেকে, দুঃসময়ে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে, মনের কোনে জমে থাকা অভিমানের মেঘকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেতে, উৎসাহমূলক কয়েকটা বাক্য দিয়েও মানুষকে সাহায্য করা যায়। ট্রেনে উঠার সময় সেই ভাইয়ের প্রশান্ত চেহারাটা দেখে আবারো এটা অনুভব করেছিলাম। 
img20171117_231544
পাহাড় 
সফরের কোন এক বাসার পরিবেশ ঢুকেই অনুকূল মনেহয়নি আমার কাছে। সম্পুর্ন ভিন্ন লাইফ স্টাইল আমাদের থেকে। হাসান বললেন, তুমি তো সারাক্ষণ সবাইকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার পরামর্শ দাও। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর অর্থ হচ্ছে, ভালোটা খুঁজে বের করা। কল্যাণটা যে করে হোক উপলব্ধি করা। মনে নেই রাসুল (সঃ) কি বলেছেন, “কারো কোন একটা খারাপ দিকের কারণে তাকে সাথে সাথে অপছন্দ করো না। তার অপর কোন একটা ভালো দিক থাকতেও পারে যার জন্য তুমি তাকে পছন্দ করতেও পারো।” সত্যিই উনাদের আতিথিয়তা আর আন্তরিকতা মুগ্ধ করেছে আমাকে। 
img20171117_231604
পাহাড়ি নদী
কাস্তেল ফ্রাঙ্কোতে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি সবজী বাগান। একদিন বেড়িয়ে ছিলাম আইসক্রিম খেতে। তিনজন মিলে আইসক্রিম হাতে গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সেই স্মৃতিটা খুব নাড়া দেয় মনকে। পুরো সফরে ছেলে আর ছেলের বাবাকে এনজয় করতে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিমাসে একবার করে বের হবো উনাদের সাথে ঘুরতে। আশেপাশের গ্রামগুলোকে ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যাওয়া যায়। নিজের ঘরকুনো স্বভাবের কারণে স্বামী-সন্তানকে যে অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছি সেই জিনিসটা খুব ভালো মতো উপলব্ধি করেছি। 
img20171117_231643
বলোনিয়ার মাছের পার্ক
জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোর হিসাব এতো বেশি করি আমরা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখগুলো দেখেও যেন দেখি না। অথচ ইচ্ছে করলেই জীবন থেকে খুঁজে নেয়া যায় আনন্দময় মুহুর্ত। আর যদি একটু নীচে তাকানো যায়। আমরা তো সুখী শুধুমাত্র আল্লাহ যে অবস্থানটা দিয়েছেন সেটার কারণে। কোন কারণে যদি অবস্থানটা বদলে যেতো তাহলে এতটা সুখী নাও হতে পারতাম। নিজেকে নিয়ে সুখী হবার জন্য মনেহয় এই উপলব্ধিটুকুই যথেষ্ট। 
(ছবি সংগৃহীত)

 

“বই কাব্য” -আফরোজা হাসান

“ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।” কথাটা কে বলেছেন মনে করতে পারছি না! কিন্তু বই বিশেষ করে জীবনী পড়ার সময় আমার সত্যিই মনে হয় যেন কথা বলছি সেই বইয়ের লেখকের সাথে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনিষীদের
চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-কল্পনার মাঝে অবগাহন করে তুলে নিতে চেষ্টা করি মূল্যবান সব মোতি।
img20171117_134600
ছোটবেলায় ভাইয়ার কাছ থেকে জেনেছিলাম, পৃথিবীর শুরু থেকে যুগে যুগে কত শত জ্ঞানী-গুণীরা এসেছেন। আমাদের মতো তারাও কাটিয়েছেন নানারঙের দিন, তাদেরও ছিল জীবনকে ঘিরে আনন্দ-বেদনার কাব্য। তাদের সবার সান্নিধ্য পাওয়া তো সম্ভব নয়। তবে তাদের সেই সব মূল্যবান অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানতে পারি তাদের লিখে যাওয়া বইয়ের মাধ্যমে।
img20171117_134333
আসলেই বই এক অদ্ভুত মিরাকল। বইয়ের আছে পাখীর মত ডানা। আমাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে যেখানে যেতে চাই সেখানেই। বইতে সওয়ার হয়ে আমরা ঘুরে বেড়াতে পারি পৃথিবীর আনাচে, কানাচে, গহীন আমাজন জঙ্গলে, গভীর সমুদ্রে, বহু আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্রহে, চন্দ্রে এমনকি ব্ল্যাকহোলের ভেতরেও।
img20171117_134455
এমন মানুষ যারা কোনদিনও নিজ দেশের বাইরে যেতে পারবে না তারাও বইয়ের আয়নাতে চোখ রেখে দেখতে পারে পৃথিবীর সুউচ্চ শৃঙ্গ হিমালয়, পিরামিড, নীলনদ, মরুভূমির সেই পথ। সেই গুহা যা এক সময় আলোকিত ছিল আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) এর স্পর্শ আলোতে। যেখানে রচিত হয়েছিল মুসলিমদের প্রথম বিজয়ের উপাখ্যান।
img20171117_134427
স্পেনের সেই উপকূল যেখানে ইউরোপের ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান গেয়েছিলেন তারিক বিন যিয়াদ। মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির শৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডোমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে পাঠানো সেই বার্তা “সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্যবীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।” ইতিহাস কি? ইতিহাস হচ্ছে যে কোন জাতির দর্পন। যে দর্পনের আলোতে জাতি আত্মপরিচয়ের সৌভাগ্য লাভ করে, এবং পায় চলার পথের সন্ধান, প্রেরণা, দিক নির্দেশনা। বইয়ের কল্যাণে আমরা জানতে পারি আমাদের সেই অতীত ইতিহাস। যেই ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়ানো রয়েছে আগামীর জন্য শত সহস্র শিক্ষা।
img20171117_134648
মুসলিম বিশ্বের বিপর্যয়ের কারণ সমূহ পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম যে, এই বিপর্যয়ের মূলে বড় তিনটি কারণ হচ্ছে আদর্শ বিমুখতা, বিজ্ঞান বিমুখতা ও ইতিহাস বিমুখতা। আর মুসলিমদের আদর্শ চেতনা ততদিন পর্যন্ত ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠতে পারবে না, যতদিন পর্যন্ত না তাদের মধ্যে গভীর ইতিহাস চেতনা সঞ্চারিত হয়। কেননা ইতিহাস জানা না থাকলে মুসলিমরা তাদের প্রকৃত শত্রু-মিত্রকে চিনতে পারবে না! জানতে পারবে না ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কত ছদ্মবেশে, কত কৌশলে, কত রঙে, কত রূপে শত্রুরা মুসলিম জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে, ধোঁকা দিয়েছে, বিপর্যস্ত করেছে। আমাদেরকে তাই আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। পড়তে হবে বেশি বেশি বই……………।

 

নিজেদের বাচ্চাদের ফার্মের মুরগী বানাবেন না -ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা

ফাইয়াজ হবার পর প্রথম প্রথম আমার সবকিছুতে খুব বেশি চিন্তা হত। ঠিক মত ফাইয়াজের কাথা পরিষ্কার হল কিনা,বার বার নিজের হাত সাবান দিয়ে ধুতাম যেন আমার থেকে ফাইয়াজের ইনফেকশান না হয়। এমনকি বাইরে থেকে কেউ আসলেও তাদের সহজে ফাইয়াজকে কোলে নিতে দিতাম না। তাদের হেক্সিসল দিয়ে হাত এন্টিসেপটিক করে নিয়ে ফাইয়াজ কে আদর করতে দিতাম।
প্রথম মা বলে সবকিছুতে অতিরিক্ত চিন্তা। এমনকি ফাইয়াজের স্বাভাবিক সর্দি,কাশিতেও আমার চিন্তায় ঘুম আসতনা। সাথে সাথে স্টেথো দিয়ে ওর ফুসফুস চেক করতাম, শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি মাপতাম, হার্ট বিট দেখতাম। যখন দেখতাম সবকিছুই নরমাল রেইঞ্জের মধ্যে তখন একটু স্বস্তিতে থাকতাম।
দুইদিন পরপরই বেড শিট চেইঞ্জ করতাম, স্যাভলন দিয়ে সবকিছু ওয়াশ করতে দিতাম। আর কেউ যদি আমার সামনে ফাইয়াজ কে চট করে হাত না ধুয়ে আদর করত সাথে সাথে বিভিন্ন ছুতায় ফাইয়াজকে নিজের কাছে নিয়ে নিতাম।
একদিন দেখি ফাইয়াজের হাতে মশার কামড়ে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। সেটা দেখেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। অজানা আশংকায় রোগ পূর্ববর্তি ইনকিউবেশান পিরিয়ড কাউন্ট করতে লাগলাম,যখন দেখলাম দশ-বার দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু ফাইয়াজের কিছুই হয়নি তখন মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলতাম।
এরকম মোটামুটি দুই থেকে আড়াই মাস পর আমার অতিরিক্ত সচেতনতা কিছুটা কমল।
ছয় মাসের সময় থেকে যখন ওকে বাইরের খাবার দেয়া শুরু করলাম তখন ওর পেট খারাপ হল একবার, প্রচুর পাতলা পায়খানা।সাথে বমি। হাসপাতালে ডিউটি সত্বেও যেতাম না, ফোনে সি.এর কাছে ছুটি চেয়ে নিতাম।ভাবতাম ফাইয়াজের প্রতি কেউ খেয়াল করছেনা তাই নিজেই সারাদিন ফাইয়াজের টেইক কেয়ার করতাম।
ফাইয়াজের ফিডার দিনে চৌদ্দবার গরম পানিতে ফুটাতাম। আমার অবস্থা তখন এমন ছিল পারলে সব কিছু অটোক্লেভ করতাম।
এরপর যখন পেডিয়াট্রিকসে ডিউটি পড়ল তখন হাসপাতালে বাচ্চাদের অবস্থা দেখে রীতিমত শিউরে উঠতাম। সরকারি হাসপাতাল। খুব গরীব গরীব রোগীদের আবাস।
একটা ছয় মাসের বাচ্চার নিউমোনিয়া,সাথে মায়ের কোলে দেড় বছরের বাচ্চা। সেই মা একইসাথে দুইটারেই সামলাচ্ছে। রোগ জীবানুর মধ্যেই বাচ্চাগুলা থাকছে। ঠিকমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন হচ্ছেনা। যে হাতে মা একজনের ভেজা কাথা ধরছে, আবার সেই একই হাত দিয়ে অন্যজনকে দুধ খাওয়াচ্ছে।
এরকম দৃশ্য দেখে সি.এ কে বলতাম, ভাইয়া এসবের মধ্যে বাচ্চারা কেমন করে চিকিৎসা পায়? ভাইয়া হেসে বলত, এসব বাচ্চাদেরই ইমিউনিটি বেশি। ওরা এখনের ধকল গুলা সামলালেই পরে একেবারে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
ততদিনে নিজের বাচ্চার প্রতি আমার আদিখ্যেতা কিছুটা হলেও কমেছে। আর এখন তো পুরাই ছেড়ে দিয়েছি।
আমার আম্মা সবসময় বলে যে বাচ্চাদের ছেড়ে দিলে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। এখন বুঝি সেটার মর্ম।
যদিও আগেই জানতাম, কিন্তু ইদানিং ব্যাপারটা খুব লিটারেলি পালন করছি।
হাইজিন হাইপোথিসিস বলে, যেসব বাচ্চারা ছোটবেলা থেকে জীবানুর সাথে যুদ্ধ করে বড় হয় তাদের অটোইমিউন রোগ,ক্যান্সার এসব হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
এখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম,রোগ বালাই নিয়ে যত পড়াশুনা করি তত ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়।
আমাদের বাসায় ফাইয়াজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল ঘরের চিপা চাপা জায়গা গুলা। দরজার পিছনে, খাটের নিচে, টেবিলের তলে।সেদিন দেখলাম ওর পুরা জামা তে ধুলা বালি, ঝুল ময়লা লেগে আছে, আর সে সেগুলা চেটে চেটে খাচ্ছে। এমনকি জানালার গ্রিল ধরেও সে জিহবা দিয়ে চাটতে থাকে। এসব দেখে এখন আর ভয় পাইনা। খুব স্বাভাবিক ভাবে জামা কাপড় চেইঞ্জ করে, হাত পা সাবান দিয়ে ধুয়ে আবার খেলার জন্য ছেড়ে দেই। সে আবার পূর্ণ উদ্যমে ধুলা বালির সাথে খেলায় মেতে উঠে।
সাদিয়া আপুর ওয়ালে দেখলাম যায়নাব কে কাদার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে, আর সে ইচ্ছা মত কাদাতে লাফালাফি করছে। অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে আপু যে তাকে এত ইউনিক ভাবে ইমিউন সিস্টেম ম্যাচিউর করতে পারছে এটা তো বিশাল ব্যাপার।
আমি নিজে দেখেছি স্পুন ফিডিং কিছু বাচ্চার মায়েরা আছে তারা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে এতই চিন্তিত থাকে যে দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে আসলে বিদেশ থেকেই বাচ্চার খাবার দাবার এমনকি পানি পর্যন্ত প্রিসার্ভ করে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের খাবার,পানি খেলে নাকি তাদের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমি দেশে ও দেশের বাইরে থাকা এসব মেন্টালিটির মাদের বলব, প্লিজ আপনারা বাচ্চার ভাল চিন্তা করতে গিয়ে ওদের লং টার্ম ক্ষতির মধ্যে ফেলবেন না। ফার্মের মুরগি কিন্তু অনেক যত্নে পালিত হয় কিন্তু তাদের আয়ু খুবই কম। নিজেদের বাচ্চাকে এরকম ফার্মের মুরগি বানাবেন না।
জীবন যুদ্ধে যাবার পূর্বে ওদের নিজের ইমিউন সিস্টেমের সাথে যুদ্ধ করে ম্যাচিউর হতে দিন, প্লিজ।

বি.দ্র. বাচ্চার প্রথম ছয়মাসে ওদের ইমিউন সিস্টেম খুব নাজুক থাকে। এসময় সচেতন থাকা আদিখ্যেতা না। সচেতন থাকাটা বরং জরুরি।

 

ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ – ডা. মারুফ রায়হান খান

গতকাল ১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর জরিপে দেখা যায় নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেশি। ডায়াবেটিসে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, খাওয়ার ক্ষেত্রেও জারি হয় অনেক বিধি নিষেধ। বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি নারী এই রোগের শিকার।

♦ডায়াবেটিক কি?
ডায়াবেটিস মেলিটাস(ইংরেজি: Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

♦কখন বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায় কন্টিনিউয়াস, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

♦ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ
ডায়াবেটিক রোগীদেরকে যে এক্সারসাইজ করতে বলা হয়, তা হচ্ছে “মডারেট ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ “। এর মানে হচ্ছে একজন মানুষের হার্ট রেট সর্বোচ্চ যতো হতে পারে তার যেন ৫০-৭০% হার্ট রেট হয় এক্সারসাইজের মাধ্যমে। আমাদের দেশে সাধারণত হাঁটার মাধ্যমেই এক্সারসাইজ করা হয়। সহজে বোঝানোর জন্য বলা হয়ে থাকে স্বাভাবিক হাঁটার চেয়ে দ্রুত হাঁটতে হবে। শরীর যেন ঘেমে যায় সেভাবে হাঁটতে হবে।

-এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে।
-তার মানে হচ্ছে কেউ যদি ৩০ মিনিট করে হাঁটে, তবে সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটতে হবে।
-১ দিন পরপর হাঁটলে ৫০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
-একসাথে টানা দুদিন বা ৪৮ ঘণ্টা হাঁটা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না।
– একনাগাড়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট না হাঁটলে সাধারণত সেটাতে কোনো উপকার হয় না।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, হাঁটা শুরু করার সাথে সাথেই খুব জোরে হাঁটা শুরু না করতে বলা হয়ে থাকে। কেউ যদি ৩০ মিনিট হাঁটে, তাহলে প্রথম ৫-৭ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নেবে, তারপরের ১৫-২০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটবে, আবার তারপরের ৫-৭ মিনিট ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে নিয়ে আসবে।

#বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৭

 

ঘরের সৌন্দর্য…

গাছ দিয়ে রূপকথার নগরী সাজাব আজ। রংয়ের বৈপরীত্য ফুটিয়ে তুলার দিকে নজর দিন গাছ বাছায় করার সময়। লাল, বেগুনী, অরেঞ্জ কালার, সানসেট অরেঞ্জ, মাড রেড, ইয়োলো, ল্যাভেন্ডার প্রভৃতি রঙ বৈচিত্র্য আনতে পারে আপনার ঘরকে। ঘরে গাছের উপস্থিতি বাতাসকে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। আর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছপালা তুলনামূলক সস্তাও বটে।
img20171114_161453
বেলকুনীতে গাছ
বেলকুনীতে আড়াআড়ি ভাবে একটি লোহার রড বা ষ্টীলের তার দিয়ে লাইন বানিয়ে নিন। এরপর টব নির্বাচন করুন, প্লাটিকের টব বা বিভিন্ন সাইজের বোতলের অথবা বাড়ির পেইন্টিঙের জন্য আনা প্লাস্টিকের বালতিটিও ব্যবহার করতে পারেন। 
img20171114_160608
গাছ যখন জানালায়
জানালায় উজ্জ্বল রঙের ফুল বা অর্কিডের গাছ, ছোট্ট ঝুলন্ত পাতাবাহারের গাছ রাখতে পারেন। টবটি জানালায় ঝুলিয়ে দিন। এ সময় সবার আগে মনে রাখতে হবে তা হল বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে যেন জানালাটি পুরো গাছপালা দিয়ে ভরে না যায়। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি না জমে  যেন।
img20171114_161611
বড় বারান্দায় গাছের বাগান
গুল্ম, ফুলগাছ, ক্যাকটাস এসবই বারান্দায় জায়গা পেতে পারে। বড় বারান্দার গ্রিলে খোপার মত ঝুলে রাখা যেতে পারে মানিপ্ল্যান্ট।
img20171114_161010
ড্রয়িংরুমের সাজসজ্জায় গাছ
বাসার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও রুচিপূর্ণ ঘর। তাই দরজার পাশে ফুলের বা সুন্দর একটি গাছ রাখা যেতে পারে। ঘরের কোণায় কোণায় বিভিন্ন পাতাবাহার, বা ফুল গাছের টব জায়গাগুলর চেহারা পালটে দিবে।
img20171114_160657
ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত গাছ
পুরো ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে বদলে দিতে পারে দেয়ালে থাকা গাছের পাতা আর ফুল। রঙ বেরঙের গাছ আর পাতা ব্যতিক্রম করে তুলবে পুরো রূপনগরী। দেয়াল সজ্জায় স্মরণীয় আলোকচিত্র ঝুলাতে পারেন, সাথে থাকতে পারে পেইন্টিং কিন্তু অল্প খরচে গাছপালাও সেই সৌন্দর্য ডেকে আনতে পারে।
img20171114_160824
উঠোনে গাছের সমারোহ
বাসার বাইরে উঠোনে গাছের সমারোহ পুরো বাসার সৌন্দর্যকে আরোও বাড়িয়ে তোলে।সবুজ উঠোন হতে পারে আপনার ভাললাগার জায়গা অনায়াসে।

 

‘ছায়া সঙ্গী…’ ফাতিমা শাহীন

আমি প্রায় প্রতিদিনই রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নারীটিকে ম্যাপল গাছটির নিচে বসে থাকতে দেখতাম!

আমার ছেলেমেয়ে দুটি খুবই দুষ্টু হয়েছে। একটি বছরও হয়নি ওদেরকে এই স্কুলটিতে ভর্তি করিয়েছি , এরই মধ্যে এ দুটো চঞ্চলমতি হিসেবে স্কুলে নাম করে ফেলেছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর এ দুটো আমার কাছে আসতে আসতে নালিশের তুফান তুলে ফেলে। ওদের সামলাতে সামলাতে যখন পার্কিংয়ে রাখা গাড়ির দিকে এগোই, তখনও নারীটিকে স্থির ও অচঞ্চল ভাবে একই জায়গাতেই বসে থাকতে দেখি। মাঝে মাঝে কৌতুহলে ফেটে পড়তে চাইতাম, ইচ্ছে হত তার পাশে গিয়ে বসি, কথা বলি। কিন্তু কখনই কাউকে তার সাথে কথা বলতে ও মিশতে না দেখে ইচ্ছেটাকে আবার নিজের মাঝেই দমিয়ে ফেলতাম। 

আমার বাচ্চা দুটো ছুটির ঘন্টা বাজলেই বুলেট গতিতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ত, তাই নারীটির সন্তানকে তার কাছে ফেরার দৃশ্য কখনই আমার দেখা হতনা। মাঝে মাঝে হয় এরকম, ক্লাস শেষ হবার পর বই ব্যাগ গুছিয়ে শান্ত সুবোধ বাচ্চারা ধীরে সুস্থে অপেক্ষায় থাকা বাবা মায়ের হাত ধরে বাড়ীর পথ ধরে। সবাই তো আর আমার দুটোর মত অস্থিরমতি চঞ্চল চড়ুই পাখিটি নয়!

তবে, সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকা মায়ের চোখ যেমন সন্তানের আগমন পথের দিকে তাকিয়ে প্রতীক্ষার ক্ষণ গুনে চলে, তাঁর চোখে কি আমি কখনো তেমন প্রতীক্ষা দেখেছি? দেখেছি হয়তবা, অথবা দেখিনি! তার দৃষ্টি যেন পথ হারিয়ে যাওয়া পাখির মত সুদুর পানেই বিদ্ধ থাকত সারাক্ষণ। বয়স তাঁর কপালে গভীর কয়েকটি বলিরেখা এঁকে দিয়েছিল, যা হয়ত সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছিল তার ফেলে আসা অতীতের, সুখে দুখে মেশানো বিপুল অভিজ্ঞতার! 

সময় কেটে যেতে লাগলো সময়ের নিয়মেই। ম্যাপল গাছটির পাতাগুলো তাদের তারুণ্য হারিয়ে সময়ের সাথে সাথে জীর্ণ হতে লাগলো। উষ্ণ বাতাসে একসময়ে লাগলো শীতল স্পর্শ। কিন্তু নারীটির অবস্থান বদলায়নি কখনই। এমনকি অন্যরাও ওই বেঞ্চটি বাদ রেখে অন্য কোথাও বসত বা জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু বেঞ্চটি খালি থাকলেও কাউকে কখনো ওখানে বসতে দেখিনি। ভেততে ভেতরে আমি ভীষণভাবে তাঁর ব্যাপারে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু তাঁর কাছে গিয়ে, তাঁর পাশে বসে সেই কৌতুহল নিবৃত্ত করার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছিলাম না কিছুতেই!

এমনি সময়ে ঘটনাটি ঘটল। তখনও স্কুল ছুটি হয়নি, একটি ছোট বাচ্চা লাফাতে লাফাতে এগিয়ে আসতে গিয়ে হঠাত জুতার ফিতায় পা বেঁধে হাঁটু মুড়ে আছড়ে পড়ল সিমেন্টের বাঁধাই করা চত্বরটিতে, ওই নারীটির ঠিক সামনেই! ছোট্ট শিশুটির এই আকস্মিক আঘাতপ্রাপ্তি যেন পাথরের একটি প্রতিমাকে জাগিয়ে তুলল নিমেষে! নারীটি ছুটে গিয়ে বাচ্চাটিকে তুলে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমি তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়ে বিমূঢ়! আমার মত অনেকেই ভেতরে ভেতরে নারীটিকে নিয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন হয়ত! আমাদের এতদিনের কৌতুহলের নিবৃত্তি ঘটল অবশেষে। স্কুল অফিসের রিসেপশনিস্ট মাঝবয়েসী মিসেস গিলবার্ট আমাদেরকে যা বললেন তা শুধু বিস্ময়ের ই নয়, বরং করুণ, মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শীও বটে!

নারীটির ছেলে এই স্কুলেই পড়ত। বছর পাঁচেক আগে ক্যাম্পিং এ গিয়ে সবার চোখের আড়ালে বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে সাঁতার কাটতে গিয়ে খরস্রোতা নদীতে ভেসে গিয়েছিল। ব্যাপক অনুসন্ধান করে দুদিন পর তার নিরব নিস্পন্দ দেহ পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকেও প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরের একটি জায়গায়। সেই থেকে নারীটি হারিয়ে ফেলেছেন তার জীবনের স্বাভাবিকতা। আগে তিনি তাঁর নাড়ীছেঁড়া ধনকে পরম মমতায় সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরতেন, আর গত পাঁচটি বছর ধরে তিনি প্রতিদিনই এসে ম্যাপল গাছের নিচে পাতা বেঞ্চটিতে আগের মতই এসে বসে থাকেন, কিন্তু ঘরে ফেরার সময়টিতে তিনি ফেরেন একাকী, এক বুক যন্ত্রণা ও নি:সঙ্গতাকে সাথী করে! আর এতগুলো বছর ধরে তার অকূল অসীম বেদনার মূক সাক্ষী হয়ে ম্যাপল গাছটি পরম মমতায় তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে! এ যেন ‘ মাদার অফ ম্যানভিল ‘ এর উল্টো প্রতিরূপ! 

আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অসম এই দুই সঙ্গীর দিকে। আমার ভাবনায় সাড়া দিতেই যেন পাতা ঝরার এই শেষ লগ্নেও যে কয়টি শুকনো নির্জীব পাতা প্রাণপনে পরম আশ্লেষে আঁকড়ে ধরে ছিল গাছের শাখা, আজ সেই পাতা কটিও যেন তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাহাকার ভরা হৃদয়ের ওই শোকাতুরা মায়ের গায়ে ঝরে পড়ল হালকা হিমেল হাওয়ায়, যেন বা সান্ত্বনাই পরশ বুলিয়ে দিল তাঁকে, আর সব নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল যে কত স্বল্পস্থায়ী আমাদের জীবন, কতইনা ক্ষীন আমাদের আয়ুষ্কাল! হায়, সময় থাকতেই যদি আমরা বুঝতাম ……..! 

 

“মন ও আমি”- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর “মন ও আমি” কবিতাটি থেকে কিছু লাইন খুঁজে দেখা
রং বেরঙ্গের ছবির আলোকে…

মন ও আমি
img20171112_141810
মন! তুমি কোথায় কোথায়?
দিবানিশি খুঁজে, বেরায় পাইনা তোমায়।
আত্মহারা মন! তুমি কোথায় কোথায়?
ঘুরিয়া বেড়াও তুমি কিসের আশায় ?
img20171112_140357
কোন শ্মশানের ঘাটে, কোন নির্জন মাঠে ;
কোন তটিনীর স্রোতে ভাসায়েছ কায়?
তাই কি খুঁজিতে গিয়ে পাই না তোমায়?
img20171112_140015
যথেষ্ট হয়েছে মন! যেয়ো নাক আর
ভ্রমিতে কল্পনা রাজ্যে ছাড়িয়ে সংসার|
এস শান্ত হও ভাই, আর ঘুরে কাজ নাই,
জান তুমি চিরবন্দী সংসার-রাজার ?
অলসের বেড়ী পায়, কত দূরে যাবে, হায়!
তব অপেক্ষায় আছে গৃহকারাগার|
ভুলিয়ে আপন পর ত্যজি এ মায়ার ঘর,
যেযো না স্বপনরাজ্যে খেলিতে আবার!
img20171112_140232
“মনের উক্তি”
সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায়
আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়!
img20171112_140138
খুঁজিব তারার দলে কোন্ গগনের তলে,
আমার সে নিরমাতা রয়েছে রয়েছে কোথায়,
যেজন স্বপন ঘোরে পাগল করেছে মোরে,
এমন উদাসী যেই করেছে আমায়;
img20171112_135930
যাহার বাঁশীর স্বরে থাকিতে পারি না ঘরে,
যাহার যশের গান জগত শুনায়;
img20171112_135827
সে অনন্ত প্রেমময় কেন চাহে এ হৃদয়
অলক্ষিত আকর্ষণে কোথা লয়ে যায়?
দেখা দাও জগদীশ! রয়েছ কোথায়?
শীতল প্রলেপরূপে বিরাজ তথায়?
দেখা দাও প্রেমময়! রয়েছ কোথায়?
কোথা আছ প্রেম-সিন্ধু জগত-ঈশ্বর?
img20171112_140809
আমি যদি হইতাম চারু সুধাকর,
শূন্য পথে ঘুরিতাম নীলাকাশে ভাসিতাম,
আমার আলোকে ধরা হ’ত মনোহর|
img20171112_140620
জলদ পবন ভরে উড়িয়ে গগন পরে
আসিয়া পড়িত কভু আমার উপর|
ধূসর মেঘের তলে লুকাতাম কুতুহলে
বিস্ময়ে দেখিত চেয়ে তারকা নিকর!
দেখা দাও প্রেমসিন্ধু জগৎ ঈশ্বর!
img20171112_140452
অথবা হতেম যদি আকাশের তারা
তোমারি বিধান মতে ভ্রমিয়া অনন্ত পথে,
নীলাকাশে ছড়াতেম কনকের ধারা!
ঘুরিতে ফিরিতে কভু
আপনা ভুলিয়া প্রভু,
ছুটিতাম তব পানে হয়ে আত্মহারা!
হায় ! কেন হই নাই আমি ক্ষুদ্রতারা!
img20171112_135429
সুস্নিগ্ধ জলদ প্রায় ঢাল বারি এ ধরায়
ভাস কি তটিনী-স্রোতে লহরীমালায়?
করি প্রীতি বরিষণ জুড়াও তাপিত জন,
চাহিলে তোমার পানে শান্তির আশায়?

 

ভ্যাকসিন/টিকা ও ধর্মীয় বিরোধ- ডা. মারুফুর রহমান অপু

শিরোনামে অবাক হবার কিছু নেই। জেনে অবাক হবেন আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন কোন না কোন সময় আপনার সেই একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী কেউ না কেউ ধর্মীয় কারন দেখিয়েই ভ্যাকসিনেশন এর বিরোধিতা করেছে। হোক সে খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদী বা হিন্দু! আজকে এই পোস্টটি লেখার কারন হলো আমি ইদানিং বিভিন্ন ফোরামে লক্ষ্য করছি এক শ্রেনীর মানুষ টিকার বিরোধীতা করছেন এবং নিজের সন্তান বা বংশধরদের টিকা গ্রহন থেকে বিরত রাখার মত ভয়ংকর কাজ করছেন কিছু ধর্মীয় ভুল ধারনা কিংবা অপব্যাখ্যার কারনে! কি কি কারনে তারা বিরত থাকছেন তার কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যেমন:
১) এগুলো ইহুদী বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র
– আসলে তা নয়, বহু মুসলিম বিজ্ঞানীই বিভিন্ন সময়ে দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অবদান রেখেছেন। আর ভ্যাকসিন ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকল দেশেই ব্যবহার করা হয়। এটি শিশুদের জন্মগত অধিকার, সুস্থ থাকার জন্য।
২) ভাকসিন শুধুমাত্র গরীব আর মুসলিম দেশেই দেয়া হয় তাও বিনাপয়সায়, ধনী দেশেরা নেয়না
– কথাটি মোটেও সত্য নয়। সারা পৃথিবী শিশুদের মৃত্যুহার কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাই বরং উন্নত দেশে ভ্যাকসিন গ্রহনের হার আরো বেশি। পৃথিবীর সকল শিশু যেন সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেচে থাকতে পারে তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে দেয়া হয়। এটি আপনার শিশুর অধিকার।
৩) রোগ সৃষ্টি ও সুস্থ করার মালিক আল্লাহ তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করার চেস্টা অনৈসলামিক
– বরং উলটো, বেশ কিছু সহীহ হাদিস অনুসারে নবী (স:) বলেছেন রোগ প্রতিরোধ এর কথা, তা হবার আগেই। ইসলামিক ফতোয়া প্রদানকারী বিভিন সংস্থার আলেমগণ তাই ভ্যাকসিন গ্রহনের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশেই টিকা নিষিদ্ধ নয় কেননা ভ্যাকসিন গ্রহনের কারনে যদি কেউ সুস্থ থাকে তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে কেননা তিনিই এটিকে কবুল করেছেন।
৪) ভ্যাকসিন নিলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে কারন এতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে
– এটি একটি ভুল ধারনা। ভ্যাকসিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে বা বাড়ায়। এ প্রক্রিয়ায় জৈবনিক বিক্রিয়ার অংশ হিসেবেই অনেক সময় কোন কোন শিশু (সবাই নয়) কিছুটা অসুস্থ বোধ করতে পারে যেমন জ্বর হওয়া। এটি একটি সাধারন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা দ্রুতই চলে যায়। তবে অনেক সময় অন্যান্য আরো কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে এমনকি মারা গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে যেগুলোর কারন খতিয়ে দেখা গেছে ভ্যাকসিন এর সাথে অসম্পর্কিত। সুতরাং ভ্যাকসিন নেবার পর শিশু অসুস্থ বোধ করলে ভয়ের কিছু নেই, শিশুকে নিকটস্থ চিকিতসকের কাছে নিয়ে পরামর্শ গ্রহন করুন।
৫) ভ্যাকসিনে মূল জীবানুই শরীরে ঢোকানো হয় যা ক্ষতিকর এবং উলটো রোগ তৈরি করে।
– ভুল ধারনা। এটি সত্য যে ভ্যাকসিনে মূল জীবানুকেই বা তার অংশ বিশেষকে ব্যবহার করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত জীবানু বা তার অংশ বিশেষ ব্যবহার করা হয় যার রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নেই কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা আছে। অনেকটা এমন যে বাচ্চাদের চোর বা ডাকাতের ছবি দেখিয়ে বলা তারা দেখতে এরকম, এদের থেকে দূরে থাকো। তাই পরে আসল চোর ডাকাত (রোগ) এলে আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকায় ক্ষতি হয়না। কিছু ক্ষেত্রে জীবিত জীবানূ ব্যবহার করা হয় তবে সেসব ক্ষেত্রে জীবানুগুলো ইনএকটিভেটেড অর্থাৎ রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম করে ফেলা হয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়। তাই ভ্যাকসিনে কোন দূষিত বা ভয়ংকর কিছু নেই যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
৬) ভ্যাকসিনের কারনে শরীরে ক্যান্সারের মত রোগ সৃষ্টি হতে পারে
– একেবারেই বিপরীত ধারনা বরং অনেক ক্যান্সারেই প্রতিরোধ করে ভ্যাকসিন যেমন হেপাটাইটিস এর ভ্যাকসিন লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, জরায়ূমুখ ক্যান্সার ভ্যাকসিন জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এসব ভ্রান্ত ধারনা সাধারনত অস্বীকৃত কোয়াক ডাক্তার বআ হোমিও আয়ুর্বেদ প্র‍্যাকটিশনার যাদের স্বীকৃত যোগ্যতা নেই এমন লোকেরাই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রচারনা করেন।
৭) ভ্যাকসিন ক্ষতিকর এ কারনে হোমিওপ্যাথিতে কোন ভ্যাকসিন নেই।
– আসলে হোমিওপ্যাথিতেও ভ্যাকসিন আছে! তবে পৃথিবীর বহু দেশেই এটিকে বন্ধ করা হয়েছে এমনকি খোদ ইউরোপেই।
নাগরিকের সুস্থতা নিশ্চিত করা রাস্ট্রের দ্বায়িত্ব, সন্তানকে সুস্থ রাখাও বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব। তাই আপনি যদি ভ্রান্ত ধারনায় পড়ে আপনার বাচ্চাকে টীকা না দিয়ে ঝুকিতে রাখেন তাহলে আপনি তার অধিকার নস্ট করলেন, বাবা-মা হিসেবে আপনার দ্বায়িত্বের অবহেলা করলেন এবং রাস্ট্রকেও ব্যার্থ করলেন এমনকি ইসলাম কিংবা আপনার ধর্মের দৃষ্টিতেও রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকার চেস্টার বিরোধিতাও করলেন। সুতরাং এসব ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন। মনে কোন প্রশ্ন থাকলে নিকটস্থ চিকিতসক, ইসলামিক স্কলার এর নিকট জিজ্ঞেস করুন, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞানভান্ডার থেকে তথ্য নিন।
একসময় গুটি বসন্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে, প্লেগ রোগে মহামারীতে মরেছে, আগে ৮-১০টি বাচ্চা হতো তার মাঝে ২-১ মারা যেত অধিকাংশ পরিবারেই এখন এসব কিছুই নেই। পৃথিবীতে গুটি বসন্ত আজ বিলুপ্ত, প্লেগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে, বাংলাদেশ আজ পোলিওমুক্ত এই সবই ভ্যাকসিনের কল্যানে। তাই আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানের আশির্বাদ গ্রহন করুন, নিজে সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারকেও সুস্থ রাখুন।
FB_IMG_1510419749452

 

এক টুকরো সুখের গল্প -ফাতিমা শাহীন

বইগুলো বক্স থেকে বের করে ধুলো ঝেড়ে বুক শেলফে তুলে রাখছিল সেমন্তি। নতুন বাসায় উঠে এসে এখন অবধি আর ফুরসত মেলেনি বইগুলো গোছাবার। এই হলের হাউস টিউটর কোয়ার্টার এ নতুন উঠেছে ওরা , ওরা বলতে ও আর সাদমান। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে তবে এই কোয়ার্টারটি মিলেছে। হলটি অনেক পুরনো, প্রচুর গাছ গাছালি আর তার চেয়েও প্রচুর আছে পাখি। খুব ভোরে পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সেমন্তির, তখন এত ভালো লাগে ওর!

বইগুলো গুছিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায় ও। পুরনো একটা সাহিত্য ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বেডরুমে ঢুকতে গিয়েও না ঢুকে বেরিয়ে পড়ল। সাদমান টক শো দেখছে বেডরুমের টিভিতে, এই সময় ওর হাতে ম্যাগাজিন দেখলেই খেপে যাবে, দরকার কি ঝামেলা বাড়িয়ে! কিন্তু এত সাবধানতা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হলনা, দেখেই ফেলল সাদমান:

আবার ও ওসব ছাইপাশ নিয়ে বসেছ তুমি? শুধু শুধু এগুলো পড়ে কেন যে সময় নষ্ট কর, বুঝিনা! পড়াশুনার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা কর, লেখালেখি কর! ইসলামী সাহিত্য, মুসলিম ঐতিহ্য , সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা, জ্ঞানার্জন তো করতেই হবে , কারণ এগুলোই ত আমার আত্মার তৃপ্তির রসদ জোগায়। কিন্তু সমকালীন সাহিত্য না পড়েও যে থাকতে পারিনা আমি! বাস্তবের যাপিত জীবনের অনুসঙ্গগুলো এত নিবিড় আর সুক্ষ্মভাবে এই সাহিত্যের প্রতিটি লাইনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে, যা আমাকে বর্তমান সমাজ ও জীবনবোধ নিয়ে ভাবনার খোরাক জোগায়। আর সাহিত্যের একজন ছাত্রী হিসেবে এটি নিশ্চয়ই আমার চিন্তাধারার কোনো গুরুতর ভুল হিসেবে নেবেনা তুমি!

( একটুখানি হেসে ) না, এটি কোনো ভুল বা অপরাধ কিছুই নয়। কোনো উপন্যাসে তুমি একবার ডুবে গেলে তোমার আর নাগাল পাওয়া যায়না, এজন্যই বলছিলাম!

বলতে বলতে সাদমান উঠে দাঁড়ালো, এগোলো দরজার দিকে।

একি, তুমি এখন আবার বেরোচ্ছ নাকি?

(জুতা পড়তে পড়তে) হ্যা, একটু ডিপার্টমেন্টে যাব, বেশ কিছু

এসাইনমেন্ট জমেছে, দেখে দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি … কেন, কিছু বলবে?

একটু দ্বিধা করলো সেমন্তি, এবারের পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলো ভিন্ন স্বাদে, ভিন্ন বৈচিত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তারই একটা যে দারুন পছন্দ হয়েছে, তা কেমন করে এই ক্ষণে মুখ ফুটে বলবে ও!

কি হলো, বলবে কিছু? মনে হচ্ছে কিছু চাচ্ছ মনে মনে?

কিছু একটা চাচ্ছি, সেটা ঠিক। কিন্তু তোমার কাছে অনুমতি চাচ্ছি বলে ভেবোনা যে ওটি নিজে অর্জন করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি এজন্যই চাচ্ছি যে, আমার প্রতিটি কাজে তোমার উতসাহ ও সমর্থন থাকলে প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি প্রাপ্তিই আমার কাছে অন্যরকম আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।

তো, কি এমন চাও যাতে আমার সমর্থন দরকার হয়ে পড়ল?

(একটু দ্বিধা করে) একটা ঈদসংখ্যা কিনব কিনা ভাবছি , না….না…কোনো জ্ঞান বিতরনমূলক কোনো কথা বোলোনা কিন্তু আবার! ….. কি হলো, অমন করে দুষ্টু হাসি হাসলে যে…!

সাদমান একটুখানি এগিয়ে এসে সেমন্তির নাকটা একটু নেড়ে দিল। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মুখ ঘুরিয়ে একটু হেসে ছোট্ট করে বলল:

নো!

রাগে গা জ্বলে গেল সেমন্তির। এমন বদ স্বামী পৃথিবীতে আর কোনো মেয়ে পেয়েছে কিনা সন্দেহ! দরজাটা বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে সোফায় বসতে যাবে, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো। তাড়াতাড়ি মুখে নেকাব জড়িয়ে দরজা খুলে দেখল হলের দারোয়ান রশিদ মিয়া দাড়িয়ে আছে। সালাম দিয়ে একটা ব্রাউন পেপার প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল:

আপা, স্যার যাওয়ার সময় এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলে গেছেন।

আচ্ছা, ঠিক আছে, অনেক শুকরিয়া।

অবাক হয়ে প্যাকেটখানি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একখানি নয়….দুখানি নয় ….তিনখানা ঈদ সংখ্যা! তাও আবার মোটা, ঢাউস সাইজের একেকটি ভলিউম! আলাদা করে একটি হাতে নিতেই গড়িয়ে পড়ল একটি চিরকুট, তাতে লেখা:

“পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটির জন্য তার ‘বদ জামাইয়ের’ পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার! কি, রাগ কি কমাতে পেরেছি একটুও?”

বিস্ময়ে, আনন্দে, অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সেমন্তি। মনে মনেই এক ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাদমানের বুকে। মনে হলো কোথাও যেন সেতারে সংগীতের সব কটি রাগ রাগিনী এক সুরে বেজে উঠলো, পাখিরা গেয়ে উঠলো মিলনের গান। আর অজস্র ভালবাসা আর সুখের অনুভূতিরা নানা রঙের ফুল হয়ে ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো মিষ্টি এই স্বপ্নালু দম্পতির উপর!

 

“রান্না ঘরের টিপস”

রান্নার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় সহজ ও মজার কিছু টিপস। যা কাজে লাগবে প্রতিদিনের রান্নায়।
img20171111_142758
রসুনের খোসা(Garlic peel)
একসাথে অনেক রসুন ছাড়াতে সময় বেশি লাগে। আস্ত রসুন ফুটন্ত জলে মিনিট দুয়েক ভিজিয়ে হাতে ঘষলে ওপরের খোসা ছেড়ে যায়।
img20171111_142858
দেশলাই বাক্স(Boarding box)
দেশলাই বাক্সে কয়েকটা শুকনো চাল রেখে দিলে বর্ষাকলেও দেশলাই কাঠির বারুদ ভাল থাকে।
img20171111_143308
আচারে ভিনেগার(Seasoning Vinegar)
আচার তৈরি করার সময় তেলে একটু ভিনিগার মিশিয়ে নিলে আচার অনেকদিন ভালো থাকে।তেলে আচার ডুবিয়ে রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
img20171111_143418
ব্লটিং পেপার(Blotting paper)
বিস্কুটের টিনের ভেতরে ব্লটিং পেপার রেখে দিলে বর্ষাকালেও বিস্কুট মছমছে থাকে।
img20171111_143533
হাতের যত্ন(Hand care)
তরকারি কাটার সময় আঙ্গুলে দাগ পড়লে ভিনিগার অথবা লাবুর রসে লবণ মিশিয়ে আঙ্গুলে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিলে দাগ উঠে যায়। যে সব সবজি বা আনাজ কাটলে হাতে কালচে দাগ হয় তা কাটার আগে হাতে সরষের তল মাখলে কালচে দাগ আর হবে না।
img20171111_143058
বেগুন ভাজা(Fried eggplant)
ভাজার জন্য কেটে রাকা বেগুন বেশ কিছুক্ষণ আগে লবণ-হলুদ মাখিয়ে রাখলে ভাজতে তেল কম লাগে।
img20171111_143020
মসলা সংরক্ষণ(Spice conservation)
বাড়তি বাটা মসলা সামান্য তেল ও লবণ মাখিয়ে রেখে দিলে কয়েকদিন পরও ব্যবহার করা যায়।
img20171111_143607
কেরোসিনের ব্যবহার(Use of kerosene)
পানিতে সামান্য কেরোসিন মিশিয়ে রান্নাঘর মুছলে মাশা-মাছি ও পিঁপড়ের উৎপাত কমে যায়।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (১) -আফরোজা হাসান

রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও। জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।

-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনে হয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-হেসে, আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যার ফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

 

কিভাবে “আবেগ” পরিচালনা করতে হয় আপনার শিশুকে শেখান

শিশুদের ‘আবেগ’ দক্ষতার সাথে বুঝতে শেখানো হচ্ছে প্যারেন্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। আবেগ এক ধরনের ভালোবাসা, ঘৃণা, সুখ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা, রাগ, বিশ্বাস আর ভয়ের সম্মিলিত রূপ। শিশুদের আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে।আবেগ শূন্য মানুষ নাই। মানুষের আবেগ বিকশিত হয় ছোটবেলায়। তাই ছোটবেলা থেকে ইতিবাচক আবেগ গড়ে তোলা দরকার। আর মা বাবা সন্তানের জন্য, সুখী এবং সুস্থ ভবিষ্যত সাজাতে সাহায্য করেন।
তাই আসুন শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌ।শল শিখে নেই।
img20171110_114139
প্রচুর ইতিবাচক শব্দ শেখান(Use feeling words when speaking to your child)
কথা বলার সময় কোন শব্দ দিয়ে কিরূপ মনের ভাব প্রকাশ পায় তা শিশুদের শেখান। কোনো পরিস্থিতিকে কোন আবেগীয় শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়। এছাড়া শিশুদের উদাহরণ দিয়ে শেখান ‘দুঃখ’ আসলে কিরূপ অনুভূতি ‘হতাশ’ বলতে আমরা কি বুঝায়। মনে রাখবেন শিশুদের শেখানোর সময় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে ইতিবাচক কথা বেশি বলুন।
img20171110_113857
শিক্ষিত নয় বরং কৌতূহলী মনের বিকাশ ঘটান (Be more curious and less educating)
আপনার শিশুর অস্বস্তিকর যে কোন অনুভূতি সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাস করুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদের অনুভূতিগুল প্রকাশ করার জন্য কৌতূহলী করে তুলুন। সন্তানের যে কোন অনুভূতি দুঃখ বা ভুল দেখে সে সম্পর্কে কৌশলে জানতে চান। কিন্তু কোনো ক্রমে সন্তানকে শেখাবেন না যে, দুঃখ পাওয়া ঠিক না। ছেলেদের কাঁদতে হয় না অথবা তাদেরকে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করার সময় লজ্জা দিবেন না। ছি ছি এত বাচ্চা এমন কাজ করে না।
img20171110_113948
গণনা করে রাখবেন না(Don’t keep score)
সন্তানরা যে সমস্ত ভুল করে সেগুল হিসাব করে ধরে রাখবেন না এবং পরবর্তীতে সেগুল নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা যাবেন না। যদি আপনি তার ভুলগুল বার বার ধরিয়ে দিতে থাকেন তার মধ্যে হীনমন্যতা জন্ম নিবে। তাই আপনি যদি বুঝতে পারেন বা নাও বুঝতে পারেন তবুও সন্তান ‘কেন’ ভুল করল এই প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যান।
img20171110_113419
বিরূপ অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন (Talk about negative emotions)
যে সব বিষয় আপনার সন্তানের মনে বিরূপভাবে আবেগপ্রবণ করে তোলে, সে বিষয়ে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। কারো মাধ্যমে কষ্ট পেলে, কেউ অপমান করতে, কেউ দোষারোপ করলে সেই বিষয়গুল নিয়ে সরাসরি কথা বলে সমাধান খুঁজতে আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। Respect the uncomfortable feeling and remember it will change. অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলোও খন্ড জীবনের অংশ, সেই সব অনুভূতি গুলকে সন্মান করা এবং বিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন এগুলও পরিবর্তন হবে।
img20171110_113654
আবেগের সাথে পরিচিত করুন(Get a poster of emojis)
ছোট থেকে দুঃখ, কষ্ট, রাগ, হতাশা আর আনন্দ অনুভূতি প্রকাশিত ছবি, ইমেজিং রূপ এর সাথে সন্তানের সাথে পরিচিত করিয়ে দিন।
প্রতিটি ছবির নিচে অনুভূতির নাম লিখতে উৎসাহ দিন।
img20171110_113529
রোজ খুশি আর কষ্টের অনুভূতিগুল নিয়ে আলোচনা করে একটি লিস্ট তৈরি করুন(Talking about the pleasant and unpleasant feelings)
রোজ কিছুটা সময় সন্তানকে নিয়ে বসুন তার অনুভূতি জানার চেষ্টা করুন। কি ঘটনার কারণে আনন্দ বা কষ্টের সৃষ্টি হয়েছে তার উপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং অনুভূতিকে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে আলোচনা বসুন।

 

“সায়াহ্নের দ্বীপশিখা” -ফাতিমা খান

বাড়ীওয়ালার ছেলের বউ আজও বাখুর জ্বালিয়েছে। বিশেষ কিছু সুগন্ধী পাথর বা স্যান্ডেল কাঠের গুড়োর সাথে আরো কি সব তেল টেল মিশিয়ে যেন বাখুর তৈরি হয়। এগুলোকে জ্বলন্ত কয়লার টুকরার উপর রেখে জ্বালানো হলে খুশবুওয়ালা ধোয়া বের হয়। আরবদের আভিজাত্যের অংশ এই বাখুর। আমি নিজেও মাঝে মাঝে জ্বালাই। সুগন্ধী বাখুরের চেয়ে আমার ভাল লাগে ওদের বাখুরদানী গুলো। স্বর্ণ, রূপা বা অন্যান্য ধাতু বা চীনামাটিতে খোদাই করে ডিজাইন করা শৌখিন জিনিস, সেইরকম গর্জিয়াস! রাত গভীর হলে বাড়ী ওয়ালার ঘরে এই বাখুর জ্বলে। তাদের অন্দরমহল ছাপিয়ে বাখুরের খুশবু প্রায়ই আমার ঘরে চলে আসে। আমি চোখ বন্ধ করে থাকি। ভদ্রমহিলাকে এই স্বর্গীয় সুগন্ধীর ট্রেড নেইমটা জিগেস করতে হবে। পুরাই মাতাল করা খুশবু!

ধোয়া ওঠা চা নিয়ে বসেছি। “সোনালি ফয়সালা” বইটা সাথে, চমৎকার শিক্ষনীয় বই। রাত বাজে একটা সাঁইত্রিশ। চায়ের পানিতে বলগ আসার আগে একটু খানি এলাচ গুড়া মিশিয়েছিলাম। আধো রাতে এই লা-জাওয়াব স্বাদের এলাচ চা আমার খুব পছন্দের। “You can never get a cup of tea large enough or a book long enough to suit me “-কথাটা কে বলেছেন মনে নেই, কিন্তু আমার জন্য একশ ভাগ সত্যি ।

আজ সারাদিন শুধু সত্তর বছর বয়সী Alzheimer এ আক্রান্ত রোগীটার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভদ্রমহিলা আমার কাছে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে।মিষ্টি গোলগাল চেহারা। মায়াবী চোখ দুটোতে উদাস চাহনী। দাঁতের কোন কমপ্লেইন তিনি বলতে পারেন নাই। উনার এ্যটেন্ডেন্ট ছিল ছেলের বউ। তিনিই বলতে শুরু করলেন ঠিক এভাবেই…

“ডক্টর, আমার শ্বাশুড়ী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন প্রায় দশ বছর। অবস্থার অবনতিই কেবল হচ্ছে দিনকে দিন। এখন তেমন কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না। এমনকি কখনও কখনও আমাদেরকেও চিনতে পারেন না। আজ দুদিন ধরে দেখছি রাতের বেলা মুখের ভেতর একটু পরপর আংগুল দেন। কি হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, কই কিছুই তো হয়নি। কাল রাতে তাই আমি উনার পাশেই বসেছিলাম, শুধু এটুকু বোঝার জন্য যে উনার ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে। টু এক্সক্লুড দা ডেন্টাল প্রব্লেম, আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। ”

রোগী দেখতে দেখতে ছেলের বউ এর সাথে অনেক কথাই হল। ত্রিশোর্ধ এই ভদ্রমহিলা মক্কার বাসিন্দা। জেনেটিক্স এ রিসার্চ করছেন। স্বামী ফরেন মিনস্ট্রি তে কর্মকর্তা, অফিসের খাতিরে আমেরিকা গিয়েছেন সফরে। বিয়ের পর থেকে শ্বাশুড়ির দেখাশোনা নিজেই করেন। ডিমেনশিয়ার কারণে দ্রুত সব কিছু ভুলে বসেন বলে একসময় পরিবারের সদস্যদের সাথে মায়ের ঝামেলা হয়ে যেত বেশ। শেষ পর্যন্ত এই ছেলের বউ তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। শ্বাশুড়ীর প্রতি নিজের এই যত্নশীলতাকে তিনি খুব সহজ অথচ ভারী একটা ইবাদত বলেই মনে করেন। খুব সাবলীল ভাবেই বললেন, ” তিনি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা ইবাদত। হয়ত আমি প্রতিদিন কাবাঘরে যেতে পারিনা, কিন্তু আমি আমার মালিকের একজন অসুস্থ বান্দার সেবা করতে তো পারছি, বিনিময়টা আল্লাহর কাছেই চেয়ে নেব। ”

আমি মুগ্ধ!
এত সুন্দর মানসিকতা শুধু জ্ঞানীদেরই কি হয়?

সোনালী ফয়সালা বইটায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাখুরের খুশবু এতক্ষণে বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছে। বইটা দ্রুত শেষ করতে হবে.. একটানে পড়ে যাওয়ার মতই একটা বই। শেষ না করে আজ ঘুমও আসবে না!

 

“তোমার জন্য মা”- ফাতিমা খান

” আমার বয়স কতই বা হবে তখন, বড়জোর পাচ কি ছয়। আমার মায়ের জন্মদিনে ‘সাম্পাগিতা’ (বেলী ফুল) ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে ছিলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে মায়ের চোখে তাকিয়ে ছিলাম।স্বপ্নহীন, আশাহীন এক শূন্যতা ছিল তার দুই চোখে, এখনো ভুলিনি।”

লোরেন আমার নার্স। একটানা বলেই যাচ্ছে মায়ের কথা। ওর চোখ দুটো ছলছলে। মানুষের চোখে একই সাথে আনন্দ আর কষ্টের অশ্রু বড় মায়াবী দেখায়!

“আমার মায়ের খুব পছন্দের ফুল সাম্পাগিতা, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি জেসমিন। আমাদের বাড়ির ছোট্ট বাগানটায় জেসমিন ফুলের গাছটা মা ই লাগিয়ে ছিলেন। গাছটা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের স্বপ্ন গুলোও বড় হচ্ছিল প্রতিদিন। বাবা মার বিয়ের সময় আমার মায়ের গহনা বলতে ছিল শুধু এই ফুলের মালা। সাদা গাউন আর সাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো মাকে ব্রাইডাল ফটো গুলোতে এঞ্জেল এর মত লাগছিল! আমার সেই রুপবতী মায়ের সাথে আজকের মায়ের চেহারার সামান্যই মিল খুঁজে পাই।

সাম্পাগিতা আমাদের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার, ডক। তাগালোগ ভাষায় “সাম্পা- কিতা ” অর্থ হল ”আই প্রমিস ইউ”। আমার মাকে বাবা সাম্পাগিতার মালা পরিয়েছিলেন ঠিক বাট হি ডিড নট কিপ হিস প্রমিস।

বাবার নেশা ছিল মদ আর বার বণিতায়। বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাকে গালিগালাজ করতেন, খুব মারতেন। আধা রাতে বাড়ি এসে “লোরেনা……” বলে আমাকে ডাক দিতেন দরজা খুলে দিতে। বাবার স্মৃতি বলতে আমার এটুকুই মনে আছে। মা অনেক কষ্ট পেলেও হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। মায়ের এই গুণটা আমি পেয়েছি। আমিও সূক্ষভাবে এই কাজটা করতে পারি। ভেবে দেখেন দিনের একটানা আটঘন্টা আপনি আমার সাথে কাটান। বাট কুড ইউ এভার প্রেডিক্ট মাই মাইন্ড ডক?..আই বেট, নো। হাহাহা। ”

শুনছি আর ভাবছি সত্যিই তো! আমি তো এই লোরেন কে চিনতাম না। আমি যে লোরেন কে চিনি সে এক জন টিপিকাল হাসিখুশী প্রফেশনাল নার্স।

“মা রাত জেগে ব্র‍্যান্ড বেকারীর অর্ডার গুলো রেডি করতেন। আলো না ফোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো কেক আর বান রুটিগুলো নিয়ে যেতাম ব্র‍্যান্ড বেকারি তে। আমার দুই বছরের ছোট ভাইটা আমার সাথে ছুটে চলত তার ছোট ছোট পায়ে। আমার সাথে আসার তাড়াহুড়োতে তার জুতা পরা হত না। মা চলে যেতেন সাহেব দের বাড়ির লণ্ড্রীর কাজ করতে, বড় পাচ ভাইবোন চলে যেত স্কুলে। মায়ের বানিয়ে রেখে যাওয়া গরম গরম বান এক হাতে আর অন্য হাতে ছোট ভাইটার হাত ধরে আমি চলে যেতাম পাহাড়ের কাছে।

ইউ নোউ ডক, আমাদের প্রভিন্সটা নীল আর সবুজে সাজানো একটা হেভেনলি প্লেস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটো চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন। একতো আমাদের মা আর দ্বিতীয় হল পাহাড় আর সাগর ঘেরা আমাদের এই প্রভিন্স। উইকেন্ডে মা আমাদের নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতেন। মায়ের হাতের লেমন গার্লিক ফিশ গ্রীল…. উফফ! পাহাড়ের পাদদেশে রক্তজবার বাগানের (Gumamela garden) পাশে বসেই আমরা লাঞ্চ শেষ করতাম।
..সেই দিনগুলো আর তো ফিরে আসবে না। কষ্টের সময়গুলো একা একাই পার করেছেন মা,সবটুকু একাই সয়ে নিতেন, শুধু সুখের পুরোটুকু দিতেন আমাদের।

আমি বড় হয়েছি পাহাড়ের গায়ে ছিটকে পড়া সূর্যকিরণ আর সমুদ্রজল লাল করা সুর্যাস্ত দেখে দেখে। সমুদ্র পাড়ের একটা বড়সড় কালো রকে বসে থাকতাম যখন ইচ্ছে। নোনা পানির জোয়ার ভাটা দেখতাম। মুখে ফেনা তোলা ঢেউগুলো দৌড়ে এসে আছড়ে পড়ত পাড়ের বুকে। নীল আকাশে গোল গোল মেঘগুলো দাদুর জটলাপাকানো সাদা চুলের খোপার মত মনে হত।

Have patience, do sacrifice. Bad times will fly like an arrow- মা বলতেন। শুধু যুগের ব্যবধান, আমরা সত্যি সত্যি মায়ের জন্য সাত রত্ন হয়ে গেলাম একদিন। আমার বড় ভাইটা যেদিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করল সেদিন মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। এরপর একে একে আমরা সব ভাইবোন প্রফেশনাল হয়ে গেলাম।

মাকে নিয়ে আমরা ম্যানিলায় চলে আসি। মা আমাদের নতুন বাড়ির নাম দিলেন Heaven of Seven.
ম্যানিলার পশ সোসাইটির মা রাও আমার মাকে আজ ঈর্ষা করে এ‍্যন্ড উই আর প্রাউড অফ হার। “

 

যে সাতটি নিয়ম মেনে বাড়তি মেদকে গুডবাই বলবেন

অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমরা চাই বা খুঁজি খুব দ্রুত ওজন কমানোর নানান কৌশল। অনেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এটা সঠিক সমাধান নয়। কিছু কৌশল আর ব্যায়াম আছে যা বেশ দ্রুতই ওজন কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
আসুন জেনে নেই কৌশল সমুহ:
img20171107_234749
১.রাতের খাবারের ৪ ঘন্টা পর ঘুম
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন রাতে, এতে খাবারের অতিরিক্ত চর্বি ক্ষতি করবে না। রাতে জেগে থাকলে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন না। এই অভ্যাসটি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়। ফলে শরীরে মেদ জমে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন।তাহলে ঘুমানোর আগেই হজম হয়ে যায়।
img20171107_235139
২.পাচঁফোড়ন সম্মিলিত মশলা
রান্নায় আমরা নানান রকম মশলা খেয়ে থাকি। তার মধ্যে বেশ কিছু পাঁচ ফোড়ন মশলা ওজন কমাতে সহায়ক। তারমধ্যে গোল মরিচ, আদা, দারচিনি ইত্যাদি মশলা ওজন কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। ওজন কমাতে ও হার্ট ভালো রাখে।
img20171108_000224
৩.গ্রিন টি
গ্রিন টি ওজন কমাতে উপকারী। প্রতিটি দানায় রয়েছে মানুষের শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক পলিফেনল ও কোরোজেনিক এসিড। তাই দৈনিক ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারলে বছরে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যেতে পারে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিসান দিয়েগোতে একটি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে যে গ্রিন টি ওজন কমায়।
img20171108_000552
৪.ফজরের পর পরই ঘুম থেকে উঠুন
ওজন কমাতে হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারলে তা শরীরকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে, শরীরে বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয় ফলে ওজন কমে। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে থেকে কিছুক্ষণ হাঁটা যেতে পারে।
img20171108_000741
৫.পানি পান করুন পর্যাপ্ত
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ওজন কমানো অন্যতম সহায়ক। পানি পানে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সহজে পুষ্টিগ্রহণ করতে পারে। পানি পান করলে শরীর থেকে দূষিত চর্বি জাতীয় পদার্থ বের হয়ে যায়। তাই ওজন কমাতে হলে পানি পানের কোন বিকল্প নেই।
img20171108_001046
৬.সরবত (লেবু-মধু):
ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানির সাথে দুই চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। লেবু-মধু পানীয় ওজন কমাতে দারুণ পদ্ধতি।

এছাড়া ওজন কমানোর জন্য কিছু ব্যায়াম বা খেলাধূলা

গ্রীষ্মকালের লম্বা দিন ও আবহাওয়ার উষ্ণতা – ওজন কমাবার যথার্থ সময়।
img20171108_001701
সাঁতার :
সাঁতার হল পুরো শরীরের জন্য একটি সুন্দর ব্যায়াম। নিয়মিত সাঁতার কাটলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আরো কর্মক্ষম হয়।সাঁতারের ফলে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ পর্যন্ত ক্যালরি ক্ষয় হয় ।
img20171108_001540
শিখুন সাইকেল চালানো:
সাইকেল চালানোর ফলে পায়ের পেশির সংকোচন প্রসারণ হয় যা খুব ভাল ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে, ওজন বাড়ানোর প্রবণতাও তেমনও কমে যায়।
img20171108_001627
ভলিবল :
খেলার মধ্যে সব ধরনের খেলা গুরুত্বপূর্ণ তবে
ওজন কমাতে চাইলে ভলিবল খেলতে পারেন। ভলিবল একটি মজার এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ ওজন কমানোর কৌশল। ভলিবল খেলা ক্যালরি ক্ষয়ের সাথে সাথে হাত ও চোখের জন্য উপকারী।

 

টুকিটাকি টিপস রান্নাবান্নার

রান্না-বান্না করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলায় হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক রান্না-বান্নার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস।
img20171107_185756
মুগডালের উজ্জ্বলতা
কাঁচা মুগডাল ভেজে পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন, তাহলে ডালের রঙ আর কালো হবে না। ধুয়ে রান্না করলে ডালটাকে দেখতে উজ্জ্বল দেখাবে।
এছাড়া ডালে বাগার দিবার সময়, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে।
img20171107_185550
দ্বিগুণ স্বাদে মাছ রান্না
মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে।
img20171107_191645
বেরেস্তা স্বাদ
গোস্ত জাতীয় রান্না করে শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
img20171107_185526
সুস্বাদু ডিম
ডিম সিদ্ব করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না।
img20171107_185609
তৈলের ব্যবহার
কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।
img20171107_185423
রান্নায় সাবধানতা
চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে। ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। যে কোন মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন।
img20171107_185123
শুকনো মরিচের ঝাঁজ
শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাঁচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন।
img20171107_185008
সুন্দর সবজীর রং
সবজীর রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।

 

সন্তানদের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (পর্ব-২)- ফাতিমা খান

আমার বাচ্চাদের সাথে ডিলিংস এর ব্যাপারে যেটুকু জ্ঞান জন্মেছে তার থেকে কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স শেয়ার করছি। হয়ত সময়ে অসময়ে আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে।
img20171107_104806
♥ছোট হোক বা বড়, সন্তানের যেকোন সাফল্য বা ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করুন। বাচ্চাদের জন্য প্রশংসার চেয়ে বড় টনিক হয়ত দুটো নেই।
img20171107_112231
♥অসফলতা বা কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে সন্তান উদ্বিগ্ন হলে তাচ্ছিল্য না করে সাহস দিন। ” আমি জানি তুমি পারবে, না পারলেও চেষ্টা করে দেখো ” জাতীয় উতসাহমূলক কথাগুলো আজ না হলেও পরবর্তীতে তাদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করবে।
img20171107_111310
♥তাদের শখের কাজগুলোকে মূল্যায়ন করুন। সম্ভব হলে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন। মাঝে মাঝে নিজেদের হাতে গড়া পুরানো শিল্পগুলোর দিকে তাকিয়ে তারা অনেক উদ্দীপিত হবে।
img20171107_112045
♥অবসরে প্রাকৃতিক পরিবেশে একসাথে ঘুরে বেড়ানো বা সময় কাটানো যেতে পারে। এতে করে পারিবারিক বন্ধন শক্ত হওয়ার সাথে সাথে মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে।
img20171107_111439
♥ঘরে বসেও অবসরে মজার কোন মুভি দেখা, গান শোনা, ছবি আকা বা গল্প বলার প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সৃজনশক্তি বাড়াতে এর জুড়ি নেই।
img20171107_111847
♥পারিবারিক অশান্তি বা মনোমালিন্যের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুগুলো সাধারনত বুজদিল হয়ে থাকে। ইতিবাচক চিন্তা করার মত সাহস তারা হারিয়ে ফেলে।
img20171107_104855
♥সন্তানদের রাগ, দুঃখ বা ক্ষোভকে প্রকাশ করতে দিন। এতে তার মন ভারমুক্ত হবে। বাচ্চা জেদ করে কান্নাকাটি করা কালীন ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া মারাত্নক খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সারাজীবন তার মনে এর নেগেটিভ প্রভাব রয়ে যায়।
img20171107_111340
♥সারাদিনে কি কি ভাল কাজ করল তার একটা ডায়রী মেইন্টেইন করতে দিন। সপ্তাহ বা মাস শেষে এগুলোর জন্য পুরষ্কার দিন। দেখবেন ওই ভাল কাজগুলো একদিন না একদিন তার অভ্যাসে পরিণত হবে।
img20171107_104634
ছোটবেলা থেকে পজিটিভ থিংকিং বা ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখালে বয়সের সাথে সাথে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। পজিটিভ এনার্জি সঞ্চিত বাচ্চাগুলো অনেক বিরূপ পরিস্থিতেও সহজে বিচলিত হয়না, বিষন্নতায় ভুগে না। ইতিবাচক চিন্তা তাদের মনোবলকে বলিষ্ঠ করে, জীবনীশক্তিকে বাড়িয়ে দেয় অনেক বেশী। শারিরীক সুস্থতা তো বটেই, মানসিকভাবে সুস্থ সন্তান আমাদের কার না কাম্য!

 

দাম্পত্য (১১) – নুসরাত রহমান

আজকের বিষয়টি একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে। দাম্পত্যের একটি পর্যায়ে আপনার সত্যিই জানা দরকার মেনে নেয়া কাকে বলে।
যদি একই বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার ঝগড়া হয়ে যায়, এর পরেও কোন পরিবর্তন না আসে, একটু ভেবে দেখার দরকার আছে, এই অবস্থা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব কি না। কিছু বাস্তব উদাহরণ দেই –


নাবিলা প্রকৃতি অসম্ভব ভালোবাসে। বৃষ্টি হলে সব এলোমেলো হয়ে যেতে চায় তার। ওর বর ঘরের বাইরে যেতেই চায়না। অফিস এর পর বাকি সময় ল্যাপটপে নাক গুঁজে থাকতেই তার যত আনন্দ। একেকটা দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ওর খুব ইচ্ছে হয় নুপুর পায়ে রাস্তায় হাঁটতে। কিন্তু কার সাথে? একা? একটুও ভালো লাগে না ওর। পূর্ণিমা কত অজস্র বার সমস্ত পৃথিবীতে স্বপ্নের তুলি বুলিয়ে গেল – কিন্তু পার্থ কোনদিনই তাই নিয়ে উচ্ছ্বসিত হল না।
এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, কান্নাকাটি, অভিযোগ, বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া – এমনকি কাকুতি মিনতিও করেছে। ভদ্রতা করে পার্থ সময় দেয়, কিন্তু তাকে যে একটুও ছোঁয় না এসব বুঝতে পেরে নাবিলাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।


আরিফ চটপটে স্মার্ট একটা ছেলে। সংসার, ক্যারিয়ার সবই সময় মত গুছিয়ে নিয়েছে। এখন থেকে আগামি দশ বছরের প্ল্যান মাথায় আঁকা আছে তার। পঁচিশে নিজের খরচে বিয়ে, ঊনত্রিশে নিজ এপার্টমেন্টে প্রথম সন্তান – এগুলো কোনটিই তার পরিকল্পনার বাইরে ছিল না। শুধু, শুধু … ভাবতে ভাবতে ভুরূ কুঁচকে যায় ওর। শুধু এই মিথিলাকে নিয়েই হয়েছে যত বিপদ। চার বছরেও একটু সংসারি হল না মেয়েটা। মানুষের চিন্তায় ঘুম নেই, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নেই, চাকুরিতে মন নেই – কেবল কীভাবে কার কী হল না হল – কাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় – আরে বাবা! নিজের উন্নতি হলেই না দেশের উন্নতি। এত বলে, একটু টাকা পয়সার হিসাব কর, নিজেকে সেটল করার চেষ্টা কর – কীসের কী! মিথিলা ডুবে আছে দশের চিন্তায়।


মুনা ও ইশতিয়াকের বিয়ের বারো বছর হতে চলল। ওদের ঘর টিপটপ সাজানো গোছান। এক কণা ধুলোও পড়তে পারেনা। মুনার মাত্রাতিরিক্ত শুচিবাই এর যন্ত্রণায় ঘরের মানুষগুলি তটস্থ হয়ে থাকে একেবারে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলে খণ্ডপ্রলয় হয়ে যায়। ইশতিয়াকের পরিবার কেবল না, মুনার বাবা মাও অনেক চেষ্টা করেছে। একসময় ইশতিয়াক ভেবেছিল সন্তান আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়নি। সন্তানের যত্নআত্তি সব করেও মুনা কী করে যেন ঠিকই সময় বের করে নেয়।


জামান সাহেব পলিটিক্স এর পোকা। রাতভর টিভি তে টক শো, দিনে সবগুলো পেপার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া – লং ডিস্টেন্স কলে লম্বা লম্বা আলাপ জমানো – উনার আর কিছু নেই, পলিটিক্সই ধ্যান জ্ঞান। উনার স্ত্রী চাকুরি, সন্তান বড় করা, ঘরকন্না সব করেও ভদ্রলোকের মনের থই পান না। স্বাভাবিক ভাবেই উনার মনে জমে আছে অসংখ্য অভিযোগ। যাকে পান তার কাছেই বলে মনের বোঝা হালকা করেন। না, জামান সাহেব পরিবার কে অর্থকষ্টে রাখেন নি কোন দিন, কিন্তু অর্থ সরবরাহের বাইরে সত্যিকার অর্থে তেমন কিছু আর করেনও নি।

এই গল্পগুলো একটাও কি আজগুবি মনে হচ্ছে? নিশ্চয় না। অমন জমে থাকা পুরনো ক্ষোভ কোন্‌ দম্পতির না থাকে? স্বামীটা মনের মত হয়নি, বা স্ত্রী তার নিজের জগতে থাকে – এমন অভিযোগ ছাড়া দম্পতি পাওয়াই ভার। অভিযোগের বৈশিষ্ট্যই এই, একের পর এক প্রলেপ পড়তে পড়তে গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়। যেহেতু অনেকবার চেষ্টা করেও বদলানো যায়নি – তাই যতবার ব্যর্থ হয়েছে ততবার এক পোঁচ করে তিক্ততার রঙ লেগেছে। এরপর যত সময় যাবে, একেকটা অভিযোগ পুরনো সবগুলো স্মৃতির বোঝা সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। তখন ঐ ছোট্ট ঘটনাটাও ক্রমাগত অভ্যাসের কারণে বড় হয়ে দাঁড়াবে। বলে না – ছোট পাপও বার বার করলে বড় পাপ হয়ে যায় – ছোট দুঃখও বার বার ছাপ ফেলতে ফেলতে গভীর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এখানেই ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে। যখন অপরজনের একটা অভ্যাস বা স্বভাব আপনার মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে, কিন্তু সবরকমের চেষ্টা করেও বদলাতে পারেন নি – আপনার পক্ষে কি সম্ভব তাকে মেনে নেয়া? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন –
এই অভ্যাস কি তার মজ্জাগত?
আমি কি আমার পক্ষে যত ধরণের চেষ্টা সম্ভব সব ভাবে চেষ্টা করেছি?
ঐ বিরক্তিকর অভ্যাস/স্বভাবটার বাইরে বাকি সময়টা কি আমাদের সুন্দর কাটে?
ঐ স্বভাবের কারণে আমি যা হারাচ্ছি তাকে মেনে নিয়ে কি আমি সুখে থাকতে পারবো?

উপরের উদাহরণগুলোতে দেখুন, মিথিলা স্বভাবগত ভাবেই পরোপকারী। ওর চিন্তাগুলো এমনভাবেই বিকশিত হয়েছে। ওর পক্ষে আরিফের মত করে চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব, যেমন অসম্ভব আরিফের পক্ষে নিজের জীবনের প্ল্যানের উপরে অন্যের জন্য উপকার করাকে স্থান দেয়া। মুনার ভয়ানক শুচিতার স্বভাবটা না থাকলে ওদের পরিবারে আরও অনেক বেশি আনন্দ থাকত হয়তো, কিন্তু এতে করে ইশতিয়াককে ঘরকন্না সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা প্রায় করতেই হয়না। উপরন্তু ও একটা টিপটপ সাজানো গোছান সংসার পেয়ে যাচ্ছে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলে!

একইভাবে, বৃষ্টিভেজা পথে নাবিলা পার্থকে না পেলেও বৃষ্টির সৌন্দর্য মিথ্যে হয়ে যায়নি। নূপুরের শব্দের প্রতি কোন মোহ না থাকলেও পার্থ তার নিজের মত করে নাবিলাকে ভালবেসেছে। হ্যাঁ, নাবিলার স্বপ্নের মত হয় নি, কিন্তু বাস্তবটাও সুন্দর, অন্যরকম। ঠিক তেমনি করে, মিসেস জামানের এই মানুষটার প্রতি অনেক ক্ষোভ থাকলেও তিনি বুঝে গেছেন, এর বাইরে আর কিছু হবার নয়। যদি জামান সাহেব অন্য রকম হতেন, উনিও অন্য রকমের এক স্ত্রী হতেন। লতায় পাতায় শান্তি অশান্তি সুখ অসুখের মধ্য দিয়েই কেমন করে যেন জীবনটা কেটে যাচ্ছে। উনার চাওয়ার ১০০ ভাগ উনি কোনদিন পান নি, কিন্তু যে পঞ্চাশ ভাগ পেয়েছেন, তার চারপাশেই বৃত্ত রচনা করে আশার পরিধি ছোট করে এনেছেন। দিন শেষে সুখের পূর্ণতার খোঁজে সবাই যে কেবল দিকভ্রান্ত হয়ে ফেরে, তা বুঝতে উনার ভুল হয়নি।

ছাড় দেয়া ক্ষেত্র বিশেষে মহৎ, আবার ক্ষেত্র বিশেষে অন্যায়ও। ইবাদতে ফরজ আর নফলের মাঝে যেমন পার্থক্য স্পষ্ট, সহনশীলতার বেলায়ও তেমনি বিভাজনরেখাটা স্পষ্ট থাকা উচিৎ। অনেক সময় ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার নারী/পুরুষটিকে উপদেশ দেয়া হয় সংসারের স্বার্থে মেনে নিতে। বা স্ত্রীর বা স্বামীর অবশ্যকর্তব্যগুলি পালন করেন না এমন মানুষের বেলায় বলা হয় “তারপরেও তো তোমার সাথে একজন আছে। না থাকলে কী করবা?” উল্লেখ্য, ছাড় দেয়ার বোধ নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে, অন্যে যেন জোর করে রাজি না করায়। আর অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে নিজের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করাকে ছাড় দেয়া বলে না, অন্যায় বলে। আমরা যখন বুঝব অদূর ও সুদূর ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য দাম্পত্যে কোন বিষয়গুলি অপরিহার্য, তখন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটাও সহজ হয়ে আসবে।

 

বই বৃক্ষের চারা- আফরোজা হাসান

জ্ঞানার্জনের পথে চলতে গিয়েই আমার সাক্ষাৎ ঘটে বইয়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম বই পড়ার আনন্দ। একটা সময় সেই আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। মনেহল বই পড়ার আনন্দ যারা উপভোগ করতে জানে না, তারা এক অর্থে সব আনন্দ থেকেই বঞ্চিত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য বইয়ের মতো উৎকৃষ্ট জিনিস আর কিছুই নেই। কারণ বই সেই মানুষ তৈরি করে যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিগৃহীত হতে পছন্দ করে না। তাই আমরা যদি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
img20171104_224846
মনের নরম মাটিতে ছোট্ট একটা বইবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলাম, আজ চেয়ে দেখি মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে আমার মনের সেই বইবৃক্ষ…………
img20171104_224411
বৃক্ষে ধরেছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী নানা ধরণের বই………..
মাতাল হাওয়ায় পরশে মাঝে মাঝেই ঝরে পড়ে যার কিছু পাতা……….
তারপরও তাদের স্পর্শে চিরসবুজ-চিরসজীব থাকে মনের বনভূমি…..
জেগেছে যে নেশা প্রাণে মৃত্যু অবধি ছেড়ে যেন না যায় কভু মোরে………
img20171104_224637
বই সম্পর্কিত আমার প্রিয় কিছু বাণী-

গ্যেটে বলেছেন- কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

@ ভিক্টর হুগো বলেছেন- বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন- পৃথিবী আর সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত, বই পড়া এবং তারজন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন- আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

প্রতিভা বসু বলেছেন- বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

-ওমর খৈয়াম বলেছেন- সুর্যের আলোতে যেরূপ পৃথিবীর সবকিছু ভাস্কর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

-কবি জসিমুদ্দিন বলেছেন- বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। সৃষ্টির আদিকাল হইতে মানুষ আসিয়াছেন আর চলিয়া গিয়াছেন। খ্যাতি-মান-অর্থ-শক্তি কিছুই কেহ রাখিয়া যাইতে পারে নাই। কিন্তু বইয়ের পাতা ভরিয়া তাহারা তাহাদের তপস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের নৈরাজ্য, কি হইতে চাহিয়া কি তাহারা হইতে পারেন নাই সবকিছু তাহারা লিখিয়া গিয়াছেন। বই আপনাকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সকল কালে নিয়া যাইতে পারে। যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নাই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সেই দেশে যাইতে পারিবেন।”
img20171104_223247
আমারো ম্যাক্সিম গোর্কী’র মত বলতে ইচ্ছে করে-আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।
আলহামদুলিল্লাহ!

 

সন্তানের মাঝে পজেটিভ থটস তৈরী করুন (১ম পর্ব) -ফাতিমা খান

মার ছেলে দুজন গল্প শুনতে খুব ভালবাসে। গল্প বলার কথা বললে যেকোন কাজ ছেড়ে আমার পাশে এসে বসে যায়। বড়জন শোয়া অবস্থায় থাকলে বসে পড়ে। গল্প শোনার সময় তার চোখের পলক পড়ে না, মাথাটা কাঁধের আরো কাছে নামিয়ে গাল-গলা ফুলিয়ে গল্প শোনে। তখন দেখতে শান্তশিষ্ট গাদুম গুদুম বিড়ালের মত দেখা যায়। ছোটজন সোজা কোলের মধ্যেই এসে বসে পড়ে, একদম মাথাটা আমার থুঁতনির সাথে লাগিয়েই বসে, যেন এখানে এ্যন্টিনা জাতীয় কোন সরাসরি সংযোগের ব্যবস্থা আছে। ওদের এই আগ্রহ দেখে আমারও ভাল লাগে কিন্তু সমস্যা হল এভাবে ওদের নিয়ে গল্প বলার সময় পাই খুব কম।
img20171103_231344
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, বাচ্চারা ইতিবাচক গল্প পছন্দ করে। যদি কোন গল্পের সমাপ্তি নেতিবাচক হয়, যেমন- শেয়াল কুমিরের বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলল, বা বাচ্চা ডাইনোসর টা পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে গেল, তাহলে আমার দুজনই মন খারাপ করে। বড়জন বলেই ফেলে “গল্পটা এভাবে শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে, আপনি বাকিটা বানিয়ে বলেন”। এই ”বাকিটা বানিয়ে বলেন” এর অর্থ হল “একটা শুভ সমাপ্তি” তারা শুনতে চায়। আমি বানিয়ে টানিয়ে গল্পের একটা খুশী খুশী সমাপ্তি টেনে দেই ( অভ্যাসবশত এই কাজটা মনে হয় আমি ভালই পারি)। ছোটজন গল্প শুরু করার আগেই বলে রাখবে ” আম্মু গল্পটা কিন্তু মজার হতে হবে, আমি স্যাড গল্প পছন্দ করিনা।” তো আমিও ওদের জন্য মজার মজার গল্প জোগাড় করি, না পেলে বানিয়ে বানিয়ে বলি। ওরা তন্ময় হয়ে শোনে।
img20171103_231213
ইদানিং ছোটু আমার অজান্তেই আমার ফোনে “স্টোরিয অফ প্রফেটস” নামের একটা এ্যপ ডাউনলোড করেছে। সেদিন দেখি বসে বসে নবীদের গল্প রিডিং করছে। খুব ভাল কথা, কিন্তু সমস্যা হল গল্পগুলো ঠিক শিশুতোষ ছিল না। হয়ত দশ বারো বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য ওটা একদম পারফেক্ট এ্যপ কিন্তু ওর বয়সোপযোগি মোটেও না। তাই নবীদের এই গল্পগুলো পড়ার পর তার মনে অনেক প্রশ্ন। যেমন- “আম্মু, আদম (আ) কেন ফরবিডেন ট্রি থেকে ফ্রুট খেয়েছিল? উনি কেন আল্লাহর কথা না শুনে ডেভিল এর কথা শুনেছিল?” কিংবা, “নুহ (আ) কেন ছেলে কেনানকে রেখে বিগ উডেন বোট এ করে চলে গিয়েছিল?” এরকম হরেক প্রশ্ন। তার উত্তরগুলো দিতে আমাকে ভাবতে হয়েছিল। উত্তরগুলো এমনভাবে সাজাতে হয়েছে যেন তার মনে ধর্মের প্রতি অভক্তি না আসে আবার উত্তরগুলো সঠিক ও তার কাছে গ্রহনীয় হয়। ধর্ম শিক্ষার ব্যাপারেও সাধারনত আট নয় বছর বয়সের আগে পাপের শাস্তি কিংবা বিয়োগাত্নক ব্যাপারগুলো না বলাটাই ভাল। তাতে ওদের কোমল মনে ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
img20171103_231059
দেশে গিয়ে দেখলাম,ছোট ছোট বাচ্চা গুলো একাকি বা আর সদস্যদের সাথে বসে স্যাটেলাইটের চ্যানেল গুলোতে দেশী বিদেশী ড্রামা সিরিয়ালগুলো নেশার মত দেখছে। নাটকের ক্লাইমেক্স এ তাদের উত্তেজনা থাকে টানটান, plচোখ মুখের ইম্প্রেশনে এটা স্পষ্ট যে তারা মন মস্তিষ্কের সবটুকু দিয়েই ব্যাপারগুলো গ্রহণ করছে। সময়ে অসময়ে ঠিক নাটকের মত সাজ, কথা বা কাজ করতে তারা একটুও পিছপা হয় না।
ছোটকালের শোনা গল্প, দেখা নাটক, ছবি বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কিংবা ওদের সাথে ঘটে যাওয়া উভয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক আচরণগুলো ওদের জন্য শিক্ষার অনেক বড় অংশ হয়ে যায়, বড় হওয়ার পরও এর বিপরীতে কোন কথা বা উপদেশ সহজে গ্রহন করতে চায় না, হোক ভাল বা মন্দ। আজকের পৃথিবীর বেশীরভাগ কিশোর কিশোরী বা যুবক যুবতিদের প্রধান সমস্যা ডিপ্রেশন,যার অংকুর তৈরী হয়ে যায় শিশুকালে।
img20171103_231301
ছেলেদের মাঝে পজিটিভ থটস বা ইতিবাচক চিন্তা আর আদর্শিক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আমি সময় পেলেই চাইল্ড সাইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ি। কখনো একই বিষয় বারবার পড়ি। এই ব্যাপারে আমার একটা ফ্যান্সি আছে। “বড় হয়ে কি হবে?” জাতীয় একটা কমন প্রশ্ন যদি আমার বাচ্চাদের করা হয়, তাহলে আমি চাই ওরা বলুক “একজন ভাল ও সুখী মানুষ হতে চাই”।

 

ওজন কমাতে জেনে নিন কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে

পৃথিবীতে সবচেয়ে মোটা মানুষ কে?
মিসরীয় এক নারী, পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা মানুষ সম্ভবত, যার ওজন ৫০০ কেজি।আবদেল আতির নামে সেই নারীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত ২৫ বছর ধরে তাদের মেয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। বর্তমানে তার ওজন ৫০০ কেজি।

মানুষ কেন মোটা হয়?
প্রতি ৩৫০০ ক্যালরি খাবার খেলে শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তাদের অন্তত আধা কেজি চর্বি শরীরে জমা হবে।
img20171102_142037
মানুষের দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন?
একজন মানুষের দেহে দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন তা একেক জনের জন্য একেক রকম হলেও একজন সুস্থ-সবল পরিপূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ১৮০০ ক্যালরি পরিমান খাদ্য দরকার হয়। অন্য আরেক জরিপে দেখা যায়, একজন সুস্থ ও কর্মক্ষম ১১০ পাউন্ড ওজনের ছেলের (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২৫০০ ক্যালোরির খাবার। একই ওজনের একজন প্রৌঢ়ের প্রয়োজন ২৩৫০ ক্যালোরির খাবার এবং একজন বৃদ্ধের প্রয়োজন ১৯৫০
ক্যালোরির খাবার। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১০ পাউন্ড ওজনের একজন যুবতীর (২৫ বছর) দৈনিক প্রয়োজন ২০৫০ ক্যালোরির খাবার।
img20171102_143121
কোন খাবারে কি পরিমাণ ক্যালরি?
ক্যালরিযুক্ত খাবার ও ক্যালরির পরিমাণঃ
কোন খাবারে কত ক্যালরি

সিদ্ধ ডিম (১টি) : ৮০
ভাজা কিংবা ওমলেট ডিম (১টি) : ১২০
মাখন লাগানো পাউরুটি (১ পিস) : ৯০
আটার রুটি (১টি) : ৬০
পুরি (১টি) : ৭৫
১টা পরোটা + ১ বাটি সবজি : ৩০০
১টা সিঙ্গারা :১০০
১ কাপ ভাত : ১৫০
১টা নান + ১ বাটি ডাল : ৩০০
রান্না মাংস (১ কাপ) : ১৭৫
রান্না সবজি (১ কাপ) : ১৫০
১ কাপ সালাদ : ১০০
১ বাটি ক্লিয়ার স্যুপ : ৭৫
১ বাটি থিক স্যুপ : ১৫০
চিনি ছাড়া রং চা / ব্ল্যাক কফি : ১০
দুধ চা / কফি : ৪৫
দুধ (১ কাপ) : ৭৫
ফলের রস : গড় ১২০
মাখন (১ চা চামচ) : ৫০
ঘি (১ চা চামচ) : ৫০
চিনি (১ চা চামচ) : ৩০
বিস্কুট (১ পিস) : ৩০
বাদাম ভাজা (১ কাপ) : ৩০০
আইসক্রিম (১ স্কুপ) : ২০০
কাবাব (১ প্লেট) : ১৫০
১ বোতল কোমল পানীয় : ২০০

সুতরাং আজকে থেকেই আপনার খাবারের প্রপার ক্যালরি মেন্যু তৈরি করুন।

 

সম্পর্কের অ্যালফাবেট -২

আধুনিক যুগে ‘দীর্ঘমেয়াদি বিবাহিত জীবন’ যেন কল্পনা হয়ে গেছে। প্রথম ধাক্কাতেই সব বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে অধিকাংশরাই দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ দিতে প্রস্তুত থাকেন।অন্যান্য সম্পর্কের মতোই বিবাহিত সম্পর্ক টেকাতেও সহায়তার প্রয়োজন হয়।
আজকের পর্বে E থেকে O পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সম্পর্কের টিপস,

Equal(ন্যায়সঙ্গত বা সমতা): সমতা মানে সমান। প্রতিটি মানুষ নাকি আলাদা, কথাটি কিন্তু একদম সত্য। তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিনগোরানি মনে করেন, দুজন দুজনের হয়ে গেছেন এটায় সমতা। প্রত্যেকেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে সুন্দর বন্ধনেরর জন্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে নিজস্ব ইচ্ছা ও চাহিদা ব্যক্ত করে একটা বন্ধনকে করে তুলতে পারে সুন্দর ।
Flexible(কোমল বা নম্রতা): কোমল আচরণ সবাই পছন্দ করে। এর ঠিক বিপরীতে একগুয়েমীতা আর জেদ। আর এ কারণে দাম্ভিকতা সম্পর্কে যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি নম্রতা দেয়ায় তখনই বন্ধনে মজবুতি বাড়ে। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে সব সম্পর্ককে সুন্দর পরিনতি দিকে নিয়ে যেতে হয়।
Generous(উদার): উদারতা হল দাম্পত্য জীবনের মুল কথা। ভোর বেলা উঠে বউ ঘুম নষ্ট করে অনেক কাজ করে। এটা বিস্তৃত একটি উদারতা। কেউ কেউ মনে করেন শুধুমাত্র উপহার দিতে পারাটা উদারতা। কেউ মনে করে ঘুরতে যাওয়া আর রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোটা উদারতা। আবার অনেক অর্থে কার মূল্যবান সময়, শক্তি, এবং প্রচেষ্টা দিয়ে সম্পর্কটিকে জাগিয়ে তোলা হল সবচেয়ে বড় উদারতা!
Honest(সততা বা সচ্চরিত্র): বিয়ে বেশ কিছু দিন পর নাকি রোমান্স মরে যায়। এর কারণে হিসেবে কেউ কেউ সততা দ্বায় দেয়।প্রয়োজনের সময় যে কোন বিষয়ে যতটা সম্ভব মন খুলে, কোনরকম রাখডাক না রেখে, সচেতনভাবে নিজের চিন্তা ও অনুভুতি প্রকাশ করতে পারলে রোমান্স টিকে থাকবে, টিকে থাকবে সততা।
Interested(কৌতূহলী): নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্ধে উঠে পাশের মানুষটির পছন্দের কাজটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ। কিছু অন্তরঙ্গ সময় কাটান। একজন আরেকজনের প্রতি মনোযোগ। এটা সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিবে।দুজন মিলে কিছু চমৎকার সময় অতিবাহিত করুন।
Just(ন্যায়পরায়নতা বা সমদর্শী): কাছের মানুষটির খারাপ এবং ভালো সবকিছু মেনে নিয়েই ত জীবন। এমন সময় কাটান যেনো একজন অপরজনের কাছে স্পেশাল হয়ে ওঠেন সব ভালো বা খারাপ চিন্তার বাইরে। পুরো মানুষটি যেমন,তেমন ভাবেই তাকে সম্মান করে তার প্রতি সুবিচার করুন।
Kind(অমায়িক দয়া বা যত্নশীল): এটা আসল বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন। দয়া বিষয়টা আসলে অনেকটা নিজের কথা বলে ত অন্যের দিকে তাকানো হয় না, সাধারণ মানুষের সাথে অনুশীলন করা দরকার পরে। সবারই উচিত অন্যের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা এবং কষ্ট টা ঠিক বোঝা, বিশেষ করে সেই সময়গুলতে যখন আপনি জানেন না বা বুঝতেই পারেন না, যে সে ঠিক কিসের সম্মুখীন হয়েছে, আর তার মোকাবেলা করাটা তার জন্য কত কঠিন। এ সময় বুঝতে পারলে দুজনের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
Loving(স্নেহশীল বা ভালবাসা): অযথা বিতর্ক টেনে নিয়ে যাবেন না। ছাড় দেন ভালবাসার মানুষটাকে। ভালোবাসা আসলে কি তা বুঝতে দিন? ভালোবাসা হল কাপেলদের উত্তর মতে, ঘনিষ্ট হওয়া, যত্নশীল আর পরস্পরের প্রতি জড়িয়ে থাকা মায়া।
Mature(পূর্ণবিকশিত বা পরিপক্কতা): দুজনের বা সংসারে,পরিপক্বতার স্বচ্ছতা অতি জরুরি বিষয়। সম্পর্কের পরিপক্কতা, যা সামনের দিনগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখাবে। সুবিস্তৃত রাস্তা বা পথ, আমি জানি না ঠিক সামনে কি আছে? তবুও সেই পথকে মেনে নিয়েছি একসাথে হাটার জন্য। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে বুঝা, দেখাশুনা, একসাথে কাজ করার সময় একজন অপর জনের দৃষ্টিকোণ বুঝতে চেষ্টা করা (বিশেষ করে যখন পরস্পরের দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ ভিন্ন)।
Nurturing(সুশাসিত বা লালন): অনেকেই মনে করেন, একজনই যত্ম নেওয়া হলে তা দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এটা বড় ধরনের ভুল ধারণা। পরস্পরের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী, যত্নবান, এবং সহযোগী বিষয়টি হল ঠিক এমনই। এক সাথে চলার পথে জীবন পরিচালনের জন্য সহযোগী বা সার্পোটার দুজন ব্যক্তি। প্রতিটি যৌক্তিক কাজে উৎসাহ প্রদান করে যত্নশীলভাবে একজন সঙ্গী অপরজনকে।
Open(মুক্ত বা অবারিত): জীবনের বিভিন্ন সময় নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে মুক্ত মনে। এসব ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে মধ্যমপন্থ অবলম্বন করতে হবে। সহজ উপায়ে অনুভূতি প্রকাশ, অনায়াসে বুঝা যায় এমন কথা বলতে হবে। হাসি কান্নার রহস্য নাই। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, সততা অনুরূপ কিছু এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে উন্মুক্ত সচেতনতা বুঝিয়েছেন। নিজেদের সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিকোণ খুঁজে তা সন্মান করার পক্ষে সবাই একমত।
সমস্যা থাকলে কথা বলার মাধ্যমে সমাধান করা খুব দরকার। পরস্পরের কথা ও কাজ মনোযোগ সহকারে শুনা এবং দেখা, তা উপলব্ধি করার পর এ ব্যাপারে একমত পোষণ করার মনোভাব গড়ে তুলুন।

 

ঘরের সৌন্দর্য্য রক্ষায় কি করবেন

ঘর পরিষ্কার করা কঠিন কাজ। পরিষ্কার ও পরিপাটি ঘরে থাকতে ভালো লাগে। পরিষ্কার করার কাজটি সময়সাপেক্ষ হলেও প্রশান্তিকর। সহজ কিছু কৌশল জানা থাকলে এই কাজটি খুব সহজে ও কম সময়ে করা যায়।
সামনে তুলে ধরছি কয়েকটি মজার উপায় যা আপনার ঘরকে পরিষ্কার ঝকঝকে করে তুলতে সহায়তা করবে।
img20171102_122504
ভিনেগার & অলিভ অয়েল(পুরনো টেবিল)
আধা কাপ ভিনেগার এবং আধা কাপ অলিভ অয়েল (জলপাই তেল) মিস্ক করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পুরোনো টেবিলটিকে ভাল করে ঘষুন। দাগ উঠে যাবে এবং টেবিল অনেক মসৃণ হবে।
img20171101_221515
ওয়াশিং পাউডার, হুইটেনার & বোরাক্স পাউডার(কাপড়)
এক কাপ ওয়াশিং পাউডার, এক কাপ কাপড় সাদা করার পাউডার (হুইটেনার) এবং আধা কাপ বোরাক্স পাউডার এর সাথে গরম পানি মিক্স করে বালিশ আর বিছানার চাদর ধবধবে পরিষ্কার করে তুলুন।
img20171102_070548
অয়েল & বেকিং পাউডার(কাঠের আসবাবপত্র)
এক চামচ ভেজিটেবল অয়েল এবং ২ চামচ বেকিং পাউডার মিস্ক করে ব্রাশ অথবা কাপড় দিয়ে ভাল করে দরজার হাতল ঘষুন দাগ পরিষ্কার হবে।
img20171101_221100
ভিনেগার(পানির কল)
পানির কলের মুখ পরিষ্কার এর জন্য কলটি ভিনেগার এর মধ্যে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করুন। যদি ময়লা অনেক ভিতরে থাকে, তাহলে একটি ব্যাগ দিয়ে মোড়িয়ে আরও ১ ঘণ্টা ভিনেগার এর মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরিষ্কার করুন।
img20171101_221415
লবন(লোহার জিনিস)
কাগজের মধ্যে কিছুটা লবন ছিটিয়ে আয়রন মেশিনটি রাখুন। এবার মেশিনটি চালু করে সর্বোচ্চ হিট সেট করুন এবং লবণের মধ্যে ঘষুন। ঘষার সময় পানি স্প্রে (যদি থাকে) বন্ধ রাখতে ভুলবেন না। দেখবেন খুব সহজেই ময়লা উঠে আসবে। ঢালাই লোহার কড়াই এবং অন্যান্য লোহার জিনিসপাতি এভাবে পরিষ্কার করা যায়।
img20171101_221300
উলের তুলো সাথে পাউডার (হুইটেনার) & টুথব্রাশ(গোসলখানা)
গোসলখানায় প্রথমে কিছু উলের তুলো নিয়ে ঠিক ১ সেন্টিমিটার আকারের ছোট ছোট বল বানান। পাউডার (হুইটেনার) এর মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে দাগ ওয়ালা জায়গা গুলোর উপর সারা রাত ফেলে রাখুন। সকাল বেলা টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
img20171101_221149
এমোনিয়া ক্লিনার(রান্না ঘরের চুলা)
রান্না ঘরের চুলোর লোহার অংশ থেকে তেল পরিষ্কার করার জন্য এমোনিয়া ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। একটি প্লাস্টিক ব্যাগ এর মধ্যে চুলোর অংশটি নিয়ে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ এমোনিয়া ক্লিনার ছিটিয়ে ১২ ঘন্টার জন্য ফেলে রাখুন। এরপর পরিষ্কার করুন।
img20171101_221338
স্পিরিট(সোফা পরিষ্কার)
সোফা থেকে ময়লা দাগ দূর করতে একটি পরিষ্কার সাদা ব্রাশ নিয়ে অল্প পরিমান স্পিরিট মিশিয়ে পরিষ্কার করুন। অস্বস্তিকর গন্ধ দূর করার জন্য কিছুটা বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন।

 

রান্নার টুকিটাকি টিপস

আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে মজাদার করে তুলবে।
img20171101_014904
ডাল(Pulses): ডালের মজা জ্বালে! অর্থাৎ যত বেশি সময় জ্বালানো হবে স্বাদ বেড়ে যাবে ততই।
যে তরকারীতে লবন বেশি হবে।
img20171101_014753
লবণের স্বাদ(Taste of salt): পরিমিত লবণ তরকারীর আরো স্বাদ বাড়িয়ে দেয়, তাই কিছু উপকরন দিয়ে দেয়া যেতে পারে। যেমন, আলু, টমেটো, শাক ইত্যাদি। আর অন্যক্ষেত্রে (তরকারী বা তরকারী না হলে) যদি ঘরে কয়লা থাকে তবে তার ছোট এক টুকরা পাতিলে দিয়ে দিলে লবন শুষে নিয়ে নিবে।
img20171101_014644
হলুদ বিড়ম্বনা(Yellow spit): হলুদ বেশী হয়ে যায় তবে ছোট একটা কাপড়ের টুকরা চুবিয়ে দিলে কাপড় কিছু হলুদ টেনে নিয়ে নিবে।
img20171101_014538
চিনির যত্ন (Sugar care): চিনিতে পিঁপড়া ধরলে চিনির পাত্রে কয়েকটি লবঙ্গ রাখুন চিনির পিঁপড়া ছেড়ে যাবে।
img20171101_014445
ডিম ভাঁজি(Fold the eggs): ডিম ভাঁজির সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন , ড়িমের খোসার টুকরা যেন না পড়ে … আর ড়িম অবশ্যই কালো কড়াইয়ে ভাজবেন , তাহলে ভাজাটা ভাল হবে । এছাড়া যখন ডিম সেদ্ধ করা হয়, সে সময় পানিতে আধা চা চামচ লবণ দিন। তাতে ডিম তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে এবং ডিম ফাটবে না।
img20171101_014721
লবণ বিড়ম্বনা(Salt fermentation): যে তরকারীতে বা অন্য কিছুতে লবন বেশি হবে তাতে আটা বা ময়দার একটা গোল্লা (রুটি বানাতে যে কাই করা হয়) বানিয়ে এক পাশে রেখে দিতে হবে। উক্ত আটা বা ময়দার গোলা বেশ কিছু লবন শুষে নেবে। তবে তিনি আরো জানালেন যে, আলু বা টমেটো দিয়ে ঝোল বাড়িয়ে নিলেও লবন কমে যায়। এছাড়া যে তরকারীতে লবন বেশি হবে তাতে কিছু আলু কিংবা কুমড়ার শাক দিলে লবন কমে যাবে। তবে তিনি ছোট বেলায় উনার মায়ের কাছ থেকে দেখেছেন, তরকারীতে লবন বেশি হলে কয়লার টুকরা দেয়া হত।
img20171101_014351
কর্ণ ফ্লাওয়ার(Corn Flowers): তরকারির ঝোল ঘন করতে চাইলে কিছু কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে ঢেলে দিন। লক্ষ্য রাখবেন কর্ণ ফ্লাওয়ারের দ্রবণটি যেন ভালমত তরকারির সাথে মিশে যায়।

 

আজ চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা -২০১৭ এর প্রিলিমিনারির ফলাফল দিয়েছে

চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা – ২০১৭ এর নির্বাচিতদের ফলাফল এর রেজাল্ট বিজ্ঞপ্তি

আজ মঙ্গলবার ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি রেজাল্ট প্রকাশ করবেন। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও ১৪ তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্কুল, স্কুল -২ এবং কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারী শেষ হয়েছে গত মাসের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে, লিখিতপরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ডিসেম্বরের ১ তারিখ।
১৪ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পাসের হার গতবারের তুলনায় অনেক কম মাত্র ৩৮%.

সূত্র জানায়, ফলাফল জানতে ভিজিট করুন- http://ntrca.teletalk.com.bd/result/ঠিকানায়।

নিউজ:https://www.facebook.com/Oporajitabd/

 

৯৮ বছর বয়সী মা দেখাশোনা করছেন ৮০ বছর বয়সী ছেলেকে

সময়ের প্রয়োজনে, ভালোবাসার ফেরিওয়ালা ৯৮ বছরের মার দায়িত্ব এসেছেন তার ৮০ বছরের ছেলে টম। এমন একটি চমৎকার ঘটনা ঘটেছে লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে।
ছেলের প্রতি ভালবাসা নাকি মায়ের প্রতি তীব্র হৃদয়ের টান। কতখানি ভালোবাসা লুকায়িত? নিজের জীবনের থেকেও বেশি। বয়স যেখানে মুখ্য বিষয় না।
৮০ বছর বয়সী ছেলেটির এখন দেখাশোনা করার জন্য ৯৮ বছর বয়সী মা।
এই সর্বোচ্চ সন্মানিত মা অ্যাড কেটিং। অ্যাড কেটিং এবং তার ছেলে টম লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে থাকেন।
৯৮ বছর বয়েসী মা কাছে চলে আসেন ৮০ বছর বয়েসী ছেলে তার আরও ভাল দেখাশোনা করার জন্য একটি কেয়ার হোমে।
টম ২০১৬ সালে লিভারপুলের মোস ভিউ কেয়ার হোমে আসেন কারণ তিনি আরও শারীরিক এবং মানসিক যত্ন এবং সমর্থন প্রয়োজন অনুভব করেন এবং এক বছর পর তার মা তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করছেন।
“আমি প্রতিটি রাতে আমার সন্তান টমকে শুভকামনা ব্যক্ত করি এবং আমি শুভ কামনা প্রকাশ করি সকালকেই।” কিটিং এ কথা বলেন।
টম বলেন, “যখন আমি আবার আমার মামের বাহু দ্বারে ফিরে আসি তার বাহু প্রসারিত হয় এবং আমাকে ভালবাসার টানে আলিঙ্গন করেন কাছে রেখে দেন যত্নে। You never stop being a mum”। তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে মা ছেলে ভাল আছি। এবং আনন্দে দিন কাটছে আমাদের।
কেয়ার হোমের ম্যানেজার ফিলিপ ড্যানিয়েলস বলেন যে, অবিচ্ছেদ্য জোড়া। তিনি বলেন, “একদম বাড়ির মত এরূপ যত্ন মায়ের তার সন্তানের প্রতি, একসঙ্গে দেখতে খুব কমই দেখা যায়।”

সুত্র: The Independent.

 

বিবেকের পাল্লা

কোরবানির গোস্ত মাপা দেখছি
আর ভাবছি ভিন্ন প্রেক্ষাপট,
এক পাল্লায় মানবতা আর
অন্য পাল্লায় জাতীয় স্থায়ী সংকট
রোহিঙ্গাদের বাংলার মাটিতে
দিতে চাই স্থান।
মানবতা যখন ডুকরে কাঁদে
বধির বিশ্ব বিবেকের কান।

ঠিক তার বিপরীতে শংকিত জাতি
ঠাঁই দিলে এরাই হবে জাতির ক্যান্সার
বাংলার ভূমি দখল করে-
বানাবে হয়ত মাদকের ভান্ডার।

এক পাল্লায় মানবতা বিবেক
অন্য পাল্লায় সংশয়
দোদুল্যমান পাল্লাটা যে
স্থির করা দ্বায়।
কোরবানি দিব কাকে?
জাতীয় বিবেক?
নাকি জাতির ভবিষ্যত?
পারছিনা আর মেনে নিতে
দোদুল্যমান প্রেক্ষাপট।

বিবেক যদি দেই কোরবানি
জীবনটাই তো বৃথা
সব ভাবনা বাদ দিয়ে
এসোনা দেখাই মানবতা।

লিখেছেনঃ শরীফা সীমা

 

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা – “রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এখন সময়ের দাবী “

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি,অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট। এই সংকট মোকাবিলায় আর্ন্তজাতিক ভাবে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের কুটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা দরকার। সেই সাথে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা যাতে এদেশে কোন ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে না পরেন, সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

গত ২৮ অক্টোবর সকাল এগারটায় বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন সলিডারিটির উদ্যোগে, ঢাকায় অবস্থিত , মহিলা সমিতির আইভি রহমান হলে, “নির্মম গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি করনীয় এবং পবিত্র হজ্বব্রত পালনের স্মৃতি অভিজ্ঞতা” শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত , মুক্ত আলোচনা সভায়, অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হেল্প এজ ইন্টারন্যাশনাল এর বোর্ড মেম্বার(জাতিসংঘের সাবেক সিডো সদস্য ও বিটিভির সাবেক ডিজি) ফেরদৌস আরা বেগম, বার্ড-এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর নুরুন্নাহার কবীর, বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক রোজী ফেরদৌস , বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক দিনকালের সাবেক কুটনৈতিক প্রতিবেদক মাহমুদা চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মরিয়ম মানসুর,সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে যুক্ত লুৎফুন্নেসা ও বিভিন্ন অঙ্গনের এবং পেশার সাথে যুক্ত নারীরা।

আলোচনা সভায় হেল্প এজ ইন্টারন্যাশনাল এর বোর্ড মেম্বার (জাতিসংঘের সাবেক সিডো সদস্য ও বিটিভির সাবেক ডিজি) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, “রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যে ভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। মিয়ানমার সরকারের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। সারা বিশ্বের সকল মানুষ এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমার এর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। আমার প্রস্তাবনা হলো, ১. মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। সেখানে সসম্মানে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। ২.যতদিন তারা এদেশে আছে, সরকার মানবিক দায়িত্ব নিয়ে জায়গা দিলেও, আমাদের সব বাংলাদেশীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আমরা ১৬ কোটি মানুষ। ১ টাকা করে দিলেও ১৬ কোটি টাকা হয়ে যাবে। ৩.রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নাকি অনেক শিশু ওতরুণীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এখানে নারী ও শিশু পাচারকারীরা যাতে তাদের উদ্দেশ্য সফল না করতে পারে, তাই সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যতদিন তারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে না পারে, ততদিন পর্যন্ত।”

বার্ড-এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর নুরুন্নাহার কবীর বলেন, “নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়া কতটা কষ্টের তা আমরা ‘৭১ সাল থেকেই জানি। আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণসহ যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তা যে কোন দেশে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলে , সেখানেও এত নৃশংসতা দেখা যায় না। তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাসের স্থানগুলো যেন নিরাপদ হয় এবং এখানে কোন নারী ও শিশুরা যেন বঞ্চনার শিকার না হয় , তাদের সম্পদ, অর্থ যেন কেউ হাতিয়ে নিতে না পারে , সে দিকে সরকার কে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজী ফেরদৌস বলেন, “রোহিঙ্গা নারী, শিশুসহ সকলের মানবিক বিপর্যয়ের খবরে আমাদের অন্তরে প্রতিনিয়ত রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি নানাভাবে চাপ প্রদান সহ প্রয়োজনে তাদের শাস্তি প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। শত শত নারী গর্ভবতী দেখা যাচ্ছে। এত নারী কেন গর্ভবতী তা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন ছিল। জানা গেল ধর্ষণের ভয়ে তারা গর্ভধারণ করে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আসছে সে জন্য আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর হজ্জ্বের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে বলবো, এটা আমার স্বপ্ন পূরণের অভিজ্ঞতা। ঐ পবিত্র ভূমিতে গেলে মন অন্যরকম হয়ে যায়। ঈমানের মজবুতি আসে। প্রত্যেক সামর্থ্যবানের হজ্জ্ব করা উচিত। ”

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মরিয়াম মানসুর বলেন, “আমি এখন খবর পড়তে পারি না, খবর দেখতে পারি না আমার কষ্ট হয়। সকল ধর্মে মানবহত্যা নিষিদ্ধ এবং মহাপাপ তাহলে কেন এই হত্যাকাণ্ড? শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে তাদের তো কোনো দোষ নেই। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।”

বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদা চৌধুরী বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে আরো মজবুত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যামে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বলা হচ্ছে ১০ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। এখনও আসছে। আমাদের দরিদ্র এই দেশ এত মানুষের ভার কীভাবে সহ্য করবে? এর একটা স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আজ সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশ আবার বাংলাদেশের উপর রোহিঙ্গা ইস্যুকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য অনেক মুসলিম দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরব ভূমিকা পালন করছে। তাই, আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির বিকল্প নেই ।”

সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট সংঙ্গীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ” হেমন্তের এই সুন্দর সকালে, আমাদের কিছু অসুন্দর কথা বলতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে আমরা ছিলাম শরণার্থী। আমাদেরটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ। আর রোহিঙ্গাদের এটা হচ্ছে মৃত্যুযুদ্ধ। এখানে কোন যুদ্ধ নেই। আছে শুধু মৃত্যুর খবর। বর্তমান বিশ্ব কী করবে তা জানি না, তবে আমাদের নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এই দুটি হাত খুব দুর্বল। এই হাত দুটো দিয়ে কিছু করতে পারছি না। আমাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন দরকার। তা না হলে তো আমাদের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মনটা অনেক বড়। কিন্তু, সামর্থ্য ছোট । রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব নেয়াটা খুব সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু, এর শেষ কোথায়? তাদের তো নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে, সসম্মানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হজ্জ্বের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, হজ্জ্ব করতে পারা আল্লাহ্‌র এক বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্তি। আমার রাসুল যে পথে হেঁটেছেন, আমি সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি, যে ধূলো বালিতে তার স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তার উপর দিয়ে আমি হাঁটছি এ এক বিস্ময়কর আনন্দ। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
received_10208823477658840
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারীর গান পরিবেশনায় এক অন্যরকম আবহ তৈরী হয়। উপস্থিত সবাই অনুরোধ করলে, সভাপতি নিজের লেখা একটি নাতে রাসুল ও একটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সব শেষে একটি কেক কাটা হয়। এতে বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন সলিডারিটির মুক্ত মত প্রকাশ অনুষ্ঠানে আনন্দ এক ভিন্ন মাত্রা পায়। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীফ কো অর্ডিনেটর শাহিন আখতার আঁখি , উইমেন জার্নালিষ্টস ফোরামের প্রচার -প্রকাশনা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের কো অর্ডিনেটর খাতুনে জান্নাত কণা, সাব কো অর্ডিনেটর আকলিমা ফেরদৌসী ও মুশফিকা সাদিয়া। উপস্থাপনায় ছিলেন-টিভি সংবাদ উপস্থাপক ফারজানা মাহবুবা।

 

নৈঃশব্দ্য

চলো ডুব দেই নৈঃশব্দ্যে,
চুষে নেই স্থির মুহূর্তগুলো।

পৃথিবীর বুকে অন্তত একবার
সবকটি ভাষার গলা টিপে ধরে
চলো নীরব হই, একটু দাড়াই।

দেখো, মুহূর্তটা কেমন অচেনা হয়ে উঠবে,
কোন তাড়া নেই, ইঞ্জিনের শব্দ নেই,
একটা আকস্মিক বিস্ময়ে একত্রিত হবো সবাই
আমি, তুমি, সে।

তিমিদের গায়ে আঘাত করা
থামিয়ে দিবে শীতল সাগরের মাঝিরা,
লবণ জমানো সেই লোকটা থেমে গিয়ে
চোখ রাখবে তাঁর আহত হাতের উপর।

যারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল যুদ্ধের,
বিষাক্ত গ্যাস, আর আগুনের যোগান দিচ্ছিল যারা,
আচমকা জিতে যাবে তাঁরা কোন মৃতপ্রায় উত্তরজীবী ছাড়াই।
পরিষ্কার জামা গায়ে জড়িয়ে
এরা হেঁটে বেড়াবে ভাইদের সাথে,
ছায়ার নিচে, চুপচাপ।

চলো লেনদেন সেরে ফেলি
মৃত্যুর সাথে।

চলো একবার — না করি কিছুই,
হয়তো এই বিশাল নীরবতা
ব্যঘাত ঘটাবে আমাদের বিষণ্ণতায়।
হয়তো পৃথিবী আমাদের শেখাবে—
যখন নৈঃশব্দ্যে থেমে যায় সবকিছু,
পর মুহূর্তেই জেগে উঠে জীবন।

Shariful Islam
অক্টোবর ২৫, ২০১৭, ঢাকা ।
[উৎসাহ, নেরুদা’র কিপিং কোয়াইট]

 

“ডুব” বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের স্ট্যাটাস

ডুব হচ্ছে ২০১৭ সালের একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। ধারণা করা হচ্ছে এটি জীবনী সম্পর্কিত একটি নাট্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা করবেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ, এসকে মুভিজ এবং ইরফান খান ফিল্মসের ইরফান খান। চলচ্চিত্রটির শিল্পীগন হলেন ইরফান খান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রোকেয়া প্রাচী এবং পার্ণো মিত্র। গল্পটি তৈরি হয়েছে পরিবারের প্রধান সদস্যের মৃত্যুর পরে দুইটি পরিবারের অটুট বন্ধনের কাহিনী নিয়ে। যেখানে একজন মধ্যবয়স্ক লেখক এক তরুনীর প্রেমে পড়েন যিনি তার মেয়ের বন্ধু। চলচ্চিত্রটির প্রধান ভাষ্য হচ্ছে যে,”মৃত্যু সবসময় সব কিছু নিয়ে যায় না,অনেক সময় কিছু দিয়েও যায়।”
ডুব মুভি নিয়ে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে ফারুকী আইএনএসকে জানায়, “ডুব: নো বেড অফ রোজেস’ সিনেমাটি তৈরি করা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না। সিনেমার নামের মতই এটি ছিলো কষ্টসাধ্য, অর্থাৎ ‘নো বেড অফ রোজেস’। তবে দেশের বাইরে সিনেমাটি প্রশংসিত হয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগছে।”

এ সময় তিনি আরও বলেন, “ডুব’য়ের মুক্তি নিয়ে এ পর্যন্ত যত বাধা ও সমস্যার মুখে পড়েছি আজকের আয়োজনে দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমি সব ভুলে গিয়েছি। দেশের বাইরে অগণিত দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসায় সিক্ত হয়ে খুবই ভালো লাগছে। এখন অপেক্ষায় আছি কবে বাংলাদেশের দর্শক ছবিটি দেখতে পাবে।”

ডুব নিয়ে বিশিষ্ট্য ব্যক্তিরা,

ইরফান খান বলেছেন, ” ‘ডুব’ করার একমাত্র কারণ ফারুকী ”

Nusrat Imrose Tisha…পেজ থেকে,
“ডুব চলছে…..।

Anisul Hoque স্যারে পেজ থেকে,
“দেশের চাইতে বিদেশেই তো হলের সংখ্যা বেশি। আগামীকাল বাংলাদেশের সিনেমার বিশ্বযাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। অভিনন্দন,
সংশ্লিষ্ট সবাইকে।”

গায়ক লুৎফর হাসান তার ফেসবুক পেজে লেখেছেন,
“Mostofa Sarwar Farooki ভাই, কিছু মন খারাপের সংবাদেও আনন্দ আছে। খোঁজ নিলাম, দৌড়ঝাঁপ করলাম। ডুবের টিকেট শেষ। দমবন্ধ অবস্থায় আছি। হয়তো ম্যানেজ হবে, তবে এই টিকেট ফুরিয়ে যাওয়ার খবরে আনন্দিতই। শুভকামনা ভাই ”

কবি হাসনাউল রেজা ফিরোজ ফেসবুক স্ট্যাটাস,
“জাভেদের জীবনে এই দুই নারীর প্রভাব সবচেয়ে বেশী।একজন নুসরাত ইমরোজ তিশা, যিনি জাভেদের বড় মেয়ে।আরেকজন পার্নো মিত্র, যিনি জাভেদের দ্বিতীয় স্ত্রী।
বলার অপেক্ষা রাখেনা,দুজনেই অত্যন্ত অত্যন্ত সু অভিনেত্রী।
তাদের অভিনয় দেখার জন্য হলেও হলে গিয়ে দেখতে হবে “ডুব”…
#ডুব চলছে আপনার পাশের প্রেক্ষাগৃহে”

আহারে জীবন, আহা জীবন, জলে ভাসা পদ্ম জীবন।’
ডুব…..

 

নামে কি আসে যায়,কর্মই নামকে বড় করে -২

বর্তমানে আর একটি নাম অত্যন্ত জনপ্রিয় সেটি আনিসুল হক। হুমায়ুন নামধারীদের নামের শেষ অংশ মিল ছিলনা কিন্তু আনিসুল হক নামে যে তিনজন আছেন তাদের নামের কোথাও কোন বেমিল নেই।

১। আনিসুল হক (সাহিত্যিক)। (Anisul Hoque) । আজ যাকে আমরা সাহিত্যিক হিসেবে দেখছি তিনিও হুমায়ুন আহমেদের মতই অনেক গুলো প্রতিভার অধিকারী। বুয়েট থেকে পাশ করা এই অসাধারণ মানুষটি ইঞ্জিনিয়ারতো বটেই তার সাথে সাংবাদিক,সাহিত্যিক,নাট্যকার এবং বেশ ভাল মানের আর্টিস্টও বটে।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম নিয়ে লেখা তার রচনা গুলো আমাদেরকে দেশ প্রেম শেখায় নিয়ে যায় উত্তাল সেই দিনগুলোতে। মনের মধ্যে বীরত্ব জন্ম দেয়।
প্রেমের উপন্যাস গুলোতে আমাদের জীবনের চতুর্থপর্বে এসেও প্রেম জাগায়,মনে হয় যেন এই বৃদ্ধ বয়সেও আমি এক তরুন কলেজ স্টুডেন্ট।

নিছক ছোটদের আনন্দ দেয়ার জন্য তিনি যখন গুড্ডু বুড়োকে নিয়ে নানা কান্ড ঘটাতে লাগলেন আমরা অবাক হয়ে দেখলাম সেটা কেবল ছোটরাই নয় সেই সাথে বড়রাও গো গ্রাসে গিলছে।

তার লেখা গদ্য কার্টুন কার না ভাল লাগে।

আচ্ছা ধরুন সব কিছু বাদ। এই আনিসুল হক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যে মানের ভক্ত তার বিনিময়ে তার স্থান আমার দৃষ্টিতে এক নাম্বার হবে এটাইতো স্বাভাবিক। তিনি বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশ দলকে যেভাবে সাপোর্ট করেন তার মুগ্ধকর।

২। আনিসুল হক (মেয়র)। এই আনিসুল হক সাহিত্যিক আনিসুল হকের থেকে বয়সে প্রবীন।তিনি আগে লাইম লাইটে ছিলেন না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাকে চিনতাম এবং তার সাথে কয়েকবার আমার দেখাও হয়েছে। তখন তাকে আমার ঠিক সেরকম লাগেনি। বরং তিনি যখন মেয়র পদে দাড়ালেন আমার মনে হলো এই লোকটা নির্বাচিত হলে কিছুই করবেন না।

আহ আমার ধারণা ভুল প্রমান করে দিয়ে তিনি নির্বাচিত হওয়ার সামান্য এ কয়দিনের ব্যবধানে যা করেছেন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে যে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ থেকে সাদেক হোসেন খোকাও তা করেন নি। হ্যা আমি দেখেছি একই সাথে এলাকার সব রাস্তা খুড়ে কাজ শুরু করেছেন। ভোগান্তি হচ্ছে কিন্তু তিনি কোন কাজ ফেলে রাখেন নি। তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচিত হওয়ার পর তার সাথে দেখা হলো। আমার মত সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়ে তিনি হাসিমুখে কথা বললেন। এবং আমার মনে হলো নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি যতটা বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন নির্বাচিত হওয়ার পর তা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুন। এবং দেখবেন অবধারিত ভাবেই তিনি আপনার মনেও জায়গা দখল করে নেবে। যদিনা আপনি ঘোর বিরোধী না হন।

৩। আনিসুল হক (আইন মন্ত্রী)। তিন আনিসুল হকের মধ্যে শেষ জন হলেন বয়সে সব থেকে প্রবীন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আইনমন্ত্রী হওয়ার পর অনেক কিছু হয়েছে। অনেকের চোখ ভিজে উঠেছে আনন্দ অশ্রুতে এবং কারো কারো হয়তো বেদনায়।

তাই দেখা যাচ্ছে বাংলার আকাশে হুমায়ুন আর আনিসুল হক নাম দুটোতে একাধিক ব্যক্তি খ্যাতিমান হয়েছেন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

তাহলে আসুন আমি আপনি আমাদের সন্তানদের নামও ওরকম কারো সাথে মিলিয়ে রাখলে সন্তান তার মত হবে এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসি এবং তাদের মেধা বিকাশে আন্তরিক সহযোগিতা দেখাই। হয়তো সহযোগিতা পেলে সেই ছেলেটিই একদিন নাম কামাবে।
কুসুম কুমারী দাশের সেই কবিতার মত
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”

হ্যা হুমায়ুন আর আনিসুল হক নামধারী মানুষ গুলো শুধু কথায় নয় কাজে বড় হয়েছেন। তাদের জন্য স্যালুট।
………………………..
#জাজাফী
উত্তরা

 

নামে কি আসে যায়,কর্মই নামকে বড় করে-১

ধরুন, শখ করে আমার ছেলেটির নাম রাখা হল আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম! তাই বলে আমার ছেলেটাও ওই নাম পেয়ে তর তর করে বেড়ে উঠবে আর হয়ে যাবে আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে হ্যা তার যদি চেষ্টা থাকে এবং ভাগ্য থাকে তবে সে হয়তো তার নামটাকে বড় করতে পারবে,মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারবে।

অতীতে এবং বর্তমানে একই নাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মে জন্ম নিয়ে কিংবা একই প্রজন্মে জন্মনিয়ে কেউ কেউ একে অন্যকে খ্যাতির দিক থেকে পেরিয়ে গেছে। কখনো কখনো বা তাদের একজনকে অন্যজনের সাথে তুলনা করা বোকামী বলে মনে হবে কারণ এক একজনের ক্ষেত্র এক এক রকম। কিন্তু জগতে কাউকে না কাউকেতো বড় করে দেখতেই হয়।

একদিন যেমন শাহীদ আফ্রিদির রেকর্ডকে মনে হত কেউ ভাংগেই পারবেনা কিন্তু সেটাও ভুল প্রমান করে দিয়ে আরো অনেকেই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক একই ভাবে কারো কারো খ্যাতিকে ছাড়িয়ে গেছে তারই নামে নামধারি অন্য কেউ।

বাংলাদেশে এমন অন্তত বেশ কয়েকটি নাম আছে যে নাম নিয়ে একই সাথে বেশ কয়েকজন খ্যাতির শীর্ষে আরহোন করেছেন।

প্রথমে আসি হুমায়ুন নামটা নিয়ে। না তাই বলে আমি ইতিহাসের পাতা থেকে সম্রাট হুমায়ুনকে আমার এই ক্ষুদ্র লেখাতে টেনে আনতে চাইছিনা। তিনি বরং ইতিহাসের পাতাতে বসেই আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন যে তাকে রেখেও আমরা অন্য হুমায়ুনদের নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

বাংলার আকাশে সম্রাট হুমায়ুন নয় আরো কয়েকজন হুমায়ুন চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন তারা হলেন ১। হুমায়ুন আহমেদ ২। হুমায়ুন ফরিদী ৩। হুমায়ুন আজাদ ৪। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী।

সিরিয়াল অনুযায়ি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বার স্থান দিয়েছি এটা একান্তই আমার মতামত। চাইলে আপনি তাকে দুই নাম্বার বা চার নাম্বারেও নিয়ে যেতে পারেন। কারণ জানেনতো আকাশে চাদ একটাই। সেই চাদকেই হুমায়ুন আহমেদ দেখলেন অসম্ভব সুন্দর রুপে আবার সুকান্ত দেখলেন ঝলসানো রুটি রুপে আবার প্রেমিক তার প্রেমিকাকে চাদের সাথে তুলনা করতে চায়না কারণ চাদের কলঙ্ক আছে।

তাই প্রত্যেকেরই নিজের চিন্তাকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে।

আমি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বারে রেখেছি কারণ তিনি কেবল মাত্র একজন সাহিত্যিক ছিলেন না। তিনি প্রথমে বিজ্ঞানে পিএইচডি ধারি ছাত্র তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেখান থেকে সাহিত্যিক,নাট্যকার,এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রুপে আবির্ভূত হলেন। বাকিদের মধ্যে এক সাথে এতো গুলো প্রতিভা আমি দেখিনি। ও হ্যা তিনি অসাধারণ ম্যাজিক পারতেন এবং আমাদের প্রিয় জুয়েল আইচকে আমি নিজে বলতে শুনেছি “হুমায়ুন আহমেদ পামিং এ আমার থেকেও ভাল এবং বাংলাদেশে এক নাম্বার!}–(জুয়েল আইচ)।

পামিং হচ্ছে কয়েন হাতে নিয়ে পুর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দেখানো যায় এমন এক ম্যাজিক যা দিয়ে চোখের নিমিষে কয়েন অদৃশ্য করে ফেলা হয়।
হুমায়ুন আহমেদের ম্যাজিক মুনশি এবং কালো যাদুকর বই দুটিতে ম্যাজিকের অনেক কিছু বলা হয়েছে আর হ্যা তিনি আর্ন্তজাতিক ম্যাজিশিয়ান সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
একই সাথে তিনি বেশ ভাল ছবিও আকতেন। এই হুমায়ুন আহমেদকে তাই এক নাম্বার হুমায়ুন বলেই চিনতে চেয়েছি।

* হুমায়ুন ফরিদী একজন কোন মানের অভিনেতা ছিলেন সেটা আমি না লিখলেও অন্যরা নিশ্চই সেটা জানেন। তার অভিনয় শৈলি তার ব্যক্তিত্ব এবং তার আবৃত্তি নিয়ে কারো কোন দ্বিমত আমি কখনোই দেখিনি। ব্যক্তি হুমায়ুন ফরিদিও ছিলেন অসম্ভব সদালাপি।

* হুমায়ুন আজাদকে অনেকেই পছন্দ করেন না। আবার অনেকে শুদ্ধপুরুষ রুপে তাকে দেখেন।
আমি হুমায়ুন আজাদকে দুই তিনটা বই দিয়েই বিবেচনা করতে চাই। “আব্বুকে মনে পড়ে” বইটা পড়ে দেখুন। আমার মনে হয় আপনি না খেয়ে মরে গেলেও কোন দিন বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। এবং যারা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছেন তাদেরকে ওই বইটা জোর করে পড়িয়ে দিন। দেখবেন কাদতে কাদতে গিয়ে সেই দিনই বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাসায় নিয়ে আসবে। তার স্ত্রী পুত্র যদি সেটা পছন্দ না করেন তবে হয়তো তাদেরকে এক হাত দেখে নিতেও দ্বিধা করবেনা। আর হ্যা “লাল নীল দিপাবলী” পড়ুন। বাংলা সাহিত্যের জন্মকথা এমন ভাবে লিখেছেন যে আপনি মুগ্ধ না হয়ে যাবেন না। অথচ আপনি কেবল পড়ে আছেন তার “পাক সার জমিন সাদ বাদ” নিয়ে।

* হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনিও সফল একজন মানুষ।

এই চার হুমায়ুন বাংলার আকাশে উজ্জল করে রেখে গেছেন তাদের নাম।”

#জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০

 

রূপচর্চায় বরফ-লেবু এবং হাটা

ত্বক এবং শরীর যতবেশি সতেজ থাকে তাকে ততবেশি আকর্ষণীয় দেখায়। তাই লেবু ও বরফের পাশাপাশি হাটার কোন বিকল্প নেই। অপরূপ সতেজ ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পদ্ধতি জানা দরকার।

♥দীর্ঘ সময় মেকআপ ধরে রাখতে: মেকআপ শুরু করার আগে এক টুকরো বরফ নিয়ে ভাল করে মুখে ঘষে নিন। যখন দেখবেন জলটা একেবারে শুকিয়ে গেছে, তখন মেকআপ শুরু করুন। এমনটা করলে ফাউন্ডেশন খুব ভাল ভাবে ত্বকে শোষিত হয়।

♥সাধারণভাবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সমপরিমাণ শশার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিন। কটন বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগাতে থাকুন। মিশ্রণটি মুখে লাগানোর সাথে সাথে যদি জ্বালা করে, তবে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। তারপর বরফ লাগান।

♥ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করার ক্ষেত্রে লেবুর রস ও দুধের মিশ্রণও বেশ কার্যকরী। একটি বড় লেবুর অর্ধেক অংশ কেটে তার রস বের করে নিন। এবার তার সাথে ১০ টেবিল চামচ তরল দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। ধীরে ধীরে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো মিশ্রণটা ত্বক শোষণ করে। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

♥ত্বককে টানটান করে: একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো বরফ নিয়ে নিন। এবার সেটি ভাল করে মুখে ঘষুন কিছুক্ষণ। প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ার কারণে বরফ ঘষা মাত্র মুখে রক্ত চলাচল খুব বেড়ে যায়, ফলে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।

♥চোখের ফোলাভাব কমায়: একটা কাপড়ে পরিমাণ মতো বরফের টুকরো নিয়ে নিন। এমনটা করলে চোখের ফোলা ভাব যেমন কমে যাবে, তেমনি ডার্ক সার্কেলের সমস্যাও দূর হবে।

♥পুড়ে যাওয়া ত্বককে স্বাভাবিক করে: বরফের প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ার কারণে এটি ত্বকে ঘষলে সে জায়গার তাপমাত্রা নিমেষে কমে যায়। তারপর ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ কমলালেবুর রস, কুসুম গরম পানি দিয়ে পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন।

♥হাঁটা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। শরীরের রক্তচাপের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

♥প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটা শরীরের ক্যালোরি ঝড়াতে সাহায্য করে। এতে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই হাঁটুন।

♥নিয়মিতা হাঁটা হাড় ও পেশির শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটা হাড়কে ভালো রাখে। বিশেষ করে পায়ের স্বাস্থ্য ভালো করে।

♥হাঁটা এনড্রফিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এনড্রোফিন মস্তিষ্কের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান। এটি মেজাজকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

আজকের রান্নার স্বাদ -২

গৃহিনীদের সারাদিনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটাতে হয় রান্নাঘরে। আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে আরও মজাদার করে তুলবে।

♠মাছ রান্না
মাছ রান্না করে হাতের কাছে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ দুইশত গুন বেড়ে যাবে। যদি তেলাপিয়া মাছে কোন গন্ধ থাকে তবে তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকেনা।

♠ডাল রান্না
ডালে বাগার দিতেই হবে, রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিতে হবে। ডালের মজা জ্বালে! অর্থাৎ যত বেশি সময় জ্বালানো হবে স্বাদ বেড়ে যাবে ততই।

♠সবজী রান্না
রং ঠিক রাখতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল না দেয়াই ভাল। আর কিছু সব্জী আছে যাদের সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।

♠ভাজি রান্না
কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।

♠রান্নায় সর্ষের স্বাদ
লাল সর্ষে তিতা বা ঝাজ বেশী হয়। হলুদ সর্ষে ব্যাবহার করলে তিতা হয়না। আরেকটি কথাঃ সর্ষে বাটার সময় লবন আর কাচামরিচ এক সাথে বাটলে তিতা হয়না।

♠লেবুর ভূমিকা রান্নায়
বর্ষাকালে লবণ গলে যায়। এক মুঠো পরিষ্কার চাল পুটলি করে বেঁধে লবণের পাত্রে রেখে দিলে লবণ গলবে না।

♠কাঁচের গ্লাস
কাঁচের গ্লাসে গরম কিছু নিতে গেলে অনেক সময় ফেটে যায়। গরম কিছু ঢালবার আগে গ্লাসে একটি ধাতু নির্মিত চামচ রেখে ঢাললে গ্লাস ফাটবে না।

♠রান্নায় আলু
আলু এবং আদা বালির মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে অনেক দিন টাটকা থাকে।

 

অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল “সুবোধ” কে!!

গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশেই থাকতেন পারভীন আক্তার নাম এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই। সোমবার রাতে তার প্রসব বেদনা ওঠে। পরিচিত একজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন তার গর্ভের সন্তানের অবস্থা ভালো নয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তির জন্য জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারকে লেখেন।

এরই মধ্যে একজন জানান, রোগীর সিজার করতে হবে। বেশ কিছু টাকা খরচপাতি লাগবে। কিন্তু হাতে টাকা নেই শোনার পর তিনি পারভীন আক্তারকে নিয়ে দ্রুত অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে তাকে নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে তার কাছে ১৫শ’ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেয়ায় সেখান থেকে পারভীন আক্তারকে অন্য কোথাও যেতে বলা হয়।

সকাল ৮টার দিকে পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেয়া হয়। সেখানে তার নামে কোনো কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। বারবার অনুরোধের পর তাকে দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান এক নারী চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হয়ে যেতেই আয়া শাহিদা সেখানে যান।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলেই শাহিদা তাকে টেনে দোতলা থেকে নিচে নামান। পারভীন তখন ব্যথায় ছটফট করছিলেন। অন্য একটি হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে আয়া তাকে বের করে দেন।

ম্যাটারনিটি হাসপাতাল থেকে বের হতেই প্রসব বেদনায় রাস্তার ওপর বসে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতক নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

… এবং সন্ধ্যার পর নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তবুও ভালো শিশুটার দাফনটা অন্তত করা গেছে। যাবেই তো।

মধ্যম আয়ের এই দেশ রাস্তায় নবজাতকের জন্ম দেবার দৃশ্য সহ্য করতে পারে – কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের গন্ধ সহ্য করতে পারে না যে।

কিছুই বলার নেই- শুধু একটা কথা ছাড়া।

শুনলাম গোয়েন্দারা নাকি সুবোধ সিরিজের সেই গ্রাফিতিগুলোর স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

গোয়েন্দাদের বলছি আজিমপুর গোরস্থানে যান – দেখবেন একজন সদ্যজাত শিশু গোরস্থানের দেওয়ালে বসে হাসতে হাসতে বলছে –

“আমিই সুবোধ – পালিয়ে এসেছি – মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে!”

shomoy marma
(সৌজন্যে: bdflow24.com)

 

দাম্পত্য -১০

বর্তমান সময়কার দম্পতির মাঝে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ থাকা খুব স্বাভাবিক। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট – শুনতে খুব ভারিক্কি মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত এর প্রয়োগ দেখা যায় একদম চাল চুলো, গম আলু তে। টিভির রিমোট কাড়ার মত ছোট বিষয় থেকে শুরু করে জীবনের প্রতি দর্শন – যে কোন কিছুই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের আওতায় পড়তে পারে।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কী? এটা কি কেবলই ভিন্নমত? না! বরং ভিন্নমতের/ভিন্ন পছন্দের দু’জন আলাপ আলোচনা করে অন্যের যুক্তিটাকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই যখন জানায়, এই অভ্যাসটা/দর্শনটা/প্রিয় বস্তুটা আমি ছাড়তে পারব না – তখন তাকে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট এর আওতায় ফেলা যায়।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হতে পারে খুব ছোট কোন বিষয় নিয়ে। হয়ত পার্সোনাল স্পেসের মাত্রাটা ভিন্ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুঁতখুঁতেপনা একজনের বেশি। আবার হতে পারে অনেক বড় – হয়তবা জীবনের সার্থকতার মাত্রাটাই। আপনার ইচ্ছে করে আয়েশ করে জীবন কাটাতে। আপনার জীবনসঙ্গীর ভীষণ ইচ্ছে পুরো বাংলাদেশটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখার।

মনে হচ্ছে এমন আর কী? থাকলোই নাহয় ভিন্নতা, অসুবিধা কী? অসুবিধা আছে। প্রতিদিনের কাজে বারবার করে খটিমটি বাঁধবে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে। আপনার জীবনসঙ্গী হয়ত যেভাবে ভুল সংশোধন করে সেটা আপনার পছন্দ না। শোধরাতে চাইবেন, দেখবেন তার ভেতরে গেড়ে আছে এই বোধ – ভুল শোধরাতে হলে শক্ত না হয়ে উপায় নেই। এর ফলাফল পড়বে সন্তানদের বড় করায়।

আপনার জীবনসঙ্গী বন্ধুদের জন্য খরচের ব্যাপারে বেশ উদারহস্ত। আর আপনি মনে করেন জীবনের জন্য এত খরচের প্রয়োজনটা কী? বিলাসিতা আপনার চক্ষুশূল। কী হবে? প্রতিবার এ ধরণের আয়োজনে আপনি গোমড়া হয়ে থাকবেন।

আরো উদাহরণ দিতে হবে? ঠিক আছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথাই বলি। দু’জনেই ধার্মিক। একজন উদারমনা ধার্মিক, একজন কট্টর ধার্মিক। একজন দান সদকা ও সামান্য আয়ে সাধারণ জীবনযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে আগ্রহী, অন্যজন জ্ঞানচর্চা, জীবিকায় উন্নতির শিখরে চড়ে মুসলিমদের এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ভাবছেন সমস্যাটা কী? ধরুন একটা ভালো চাকরির সুযোগ আছে, কিন্তু এতে করে পরিবারে সময় দেয়া কমে যাবে অনেকটাই। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে একজন উৎসাহ দেবেন, অপরজন আপত্তি জানাবেন।

এই বিষয়গুলোকে মতদ্বৈততা না বলে ইন্টারেস্টে কনফ্লিক্ট বলছি কেন? কারণ মতের এই ভিন্নতা তৈরি হয়েছে জীবনদর্শনের ভিন্নতা থেকে। আপনি মত বদলাতে পারবেন, জীবনদর্শন বদলাতে পারবেন না। ফলস্বরূপ আপনার উৎসাহে আপনার সঙ্গী সাময়িকভাবে কাজটাতে সম্মতি দিলেও আপনি যে পর্যায়ের আন্তরিকতা আশা করছেন, সেটা পাবেন না কখনোই।

তো কী করা যায়? আপনাদের প্রায়ই ঘুরেফিরে যে জিনিসগুলো নিয়ে খিটিমিটি লাগে, বোঝার চেষ্টা করুন সেটা চিন্তাধারা/জীবনাদর্শের ভিন্নতা থেকে হচ্ছে কি না। যদি তা হয়, তবে বৃথাই একই তর্কবৃত্তে ঘুরে ঘুরে না মরে, বৃত্তের বাইরে এসে দাঁড়ান। চিন্তা করে দেখুন নিজের বা তার এই দর্শনটা বদলানো সম্ভব কি না। যদি না হয়, মেনে নিন।

মেনে নেয়া বলতে কি বোঝায় যত খারাপই লাগুক, হাসিমুখে মেনে নেয়া? মোটেও না। সঙ্গীকে জানিয়ে দিন, তোমার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি সমর্থন করিনা। আমি নিজে এভাবে জীবন কাটাতে চাইনা। এমনকি সেটা যদি হয় স্বচ্ছলতা-কৃচ্ছ্রতার দ্বন্দ্ব, নিজের জীবনে আপনারটা মেনে চলুন, আর তাকেও তারটা মানতে দিন।

আগেই বলেছি, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলে প্যারেন্টিং ইস্যুতে এসে খুব সমস্যা হয়ে যায়। একজন হয়ত দামি দামি খেলনা, কাপড় কিনে দিচ্ছে, অন্যজন সহজ জীবনের কথা বলেই যাচ্ছেন – এতে করে ছেলেমেয়েরা বাবামায়ের অন্তর্দ্বন্দ্বটা বুঝতে পারে খুব সহজে, আর তারা জীবন সম্পর্কে নির্দেশনাটাও ঠিকমত পায়না।

সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে আগে থেকেই এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে জীবনসঙ্গীর সাথে কথা বলা। তাকে জানানো আমি এভাবে জীবনকে সাজাতে চাই, তুমি কী মনে কর? আমার সন্তানদের এভাবে বড় করতে চাই, তোমার আপত্তি থাকলে আগে থেকেই কথা বলে নেয়া ভালো। অন্তত সন্তানদের সামনে যেন দ্বন্দ্বটা প্রকট হয়ে না ওঠে। এমনকি চাইলে এটাও সম্ভব, সন্তানদের বোঝানো, ‘তোর বাবা/মা এমন মনে করে, কিন্তু আমি এমন মনে করি। দুইজনেই ঠিক, তুই তোর পথটা পছন্দ করে নিবি।’ অথবা, ‘তোর বাবা/মা জিনিসটাকে এভাবে দেখে। আমার মনে হয় এভাবে হলে ব্যাপারটা আরো ভালো হত।’ এভাবে প্রকাশ করলে সন্তানেরা ভিন্নমত সহ্য করেও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার একটা বাস্তব শিক্ষা পাবে।

পরমত-অসহনশীলতার যে মাত্রাতিরিক্ত প্রকাশ দেখা যাচ্ছে আজকাল – ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার থেকে রক্ষা করতে পরিবারের মধ্যে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টগুলো আগেই চিহ্নিত করে নেয়া ভালো।

পরিশেষে, রেহনুমা আপুর প্রিয় এক উক্তি শরৎচন্দ্রের রচনা থেকে –

অভিমানের যেখানে মূল্য নাই, সেখানে অভিমান প্রকাশের ন্যায় বিড়ম্বনা আর নাই।

প্রতিটা বিষয় মতে মিলতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আর না মিললেই অভিমান, দুঃখ নিয়ে জীবনটাকে ব্যর্থ মনে করতে হবে, এমনও কোন কথা নেই। কোন কোন পথ একলা চলেও উপভোগ করা যায়, যদি জানেন সমান্তরাল আরও একটি পথের শেষে আবারও তার সাথে দেখা হবে।

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

সন্তানকে “ভালবাসুন” ভালবাসা জাগ্রত করে

ভালবাসা জাগিয়ে সন্তানকে ভালবাসুন।
সন্তানদের ব্যক্তিত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
img20171022_233914
প্রথমত,
তার উপর মাত্রাতিরিক্ত অভিভাবকত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
দ্বিতীয়ত,
সন্তানদের রাজ্যে অনাধিকার প্রবেশ নয়, বরং নিজের অধিকার আদায় করার মত সুস্থ মানসিকতার তৈরির জন্য আজকে থেকেই কাজ শুরু করুন।
img20171021_025347
♥মিষ্টি নামে ডাকুন:

সন্তানকে একটি মিষ্টি ডাক নাম দিন। ছোট্ট বেলায় বাবা মা আদর করে যে নামে ডাকেন তা বাচ্চারা খুব পছন্দ করে।
img20171018_015058
♥ছোট্ট একটা কাগজ লিখুন:

প্রতিদিন টিফিনে না হলেও সপ্তাহে তাদের লাঞ্চবক্সে/lunchbox নোট রাখুন। মনে রাখবেন সেখানে আপনার অনুভূতি লুকিয়ে থাকবে। নোট, কার্ড, বা অক্ষর লিখুন।
img20171022_233654
♥ আই লাভ ইউ বলুন:

“আমি তোমাকে ভালোবাসি” শব্দগুল শক্তিশালী সুতরাং সন্তানদের নিয়মিত বলার অভ্যাসে পরিনত করুন।
img20171022_233836
♥আপনার পছন্দ প্রকাশ করুন:

আপনি চান আপনার সন্তান আপনাকে একবার হলেও হাসিমুখে অনুভূতি জানতে চান। আপনি কেন তাদের পছন্দ করেন তা তাদেরকে জানিয়ে দিন।
img20171021_025142
♥সন্তানের পজেটিভ দিক তুলে ধরুণ:

দেখুন ছোট্ট বেলা থেকে একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। সুতরাং বিশ্বব্যাপী সন্তানদের ইতিবাচক কাজগুলোকে দৃঢ়ভাবে বলুন। বাচ্চাদের বলুন, you’re proud of them ।
img20171022_233753
♥আন্তরিক শব্দ ব্যবহার করুন:

আন্তরিক,রোজই সন্তানদের জন্য সুন্দর কিছু আন্তরিক শব্দ জমা করুন। সেই শব্দ তাদেরকে বলুন।
sincere, heartfelt compliments.
img20171022_233720
♥ভুল আচরণকে না বলুন:

সংশোধনের পর আপনার ভালবাসাকে প্রকাশ করুন কিন্তু ভুল আচরণ মেনে নিবেন না। অন্যায় দেখলে না বলুন।

img20171022_233957
সন্তানের ভিতর ভালবাসার বীজ বপন করার মূলমন্ত্র হল
সন্তানকে বুঝতে দেওয়া,তাকে আপনি ভালবাসেন।

 

শিক্ষকের সাথে ফোনালাপ এবং ফেসবুকিং

অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমি আমার একজন শিক্ষককে মোবাইলে কল বা ফেসবুকে যোগাযোগ করার পূর্বে যে “১০টি বিষয়” মেনে চলি:

১/ অন্তত তিনবার চিন্তা করি যে কল করাটি আদৌ কতটুকু প্রয়োজনীয়। কল না করে অন্য কোন ব্যক্তি বা সহজলভ্য মাধ্যম কিংবা গুগলসার্চ করে দরকারি তথ্যটি পাওয়া কিংবা প্রয়োজন পূরণ কি সম্ভব? উত্তর যদি “হ্যা” হয়- তাহলে আর কল করিনা, বিকল্প মাধ্যমের সাহায্য নিই। উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে শিক্ষককে কল করার সিদ্ধান্ত নিই।

২/ চিন্তা করে দেখি এখন ঠিক কয়টা বাজে। রাত ১০ টা থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে হলে কল না করার সিদ্ধান্ত নিই। এই সময়ে সাধারণত একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত সময় কাটান, বিশ্রাম নেন, পরিবারকে সময় দেন, ডিনার সারেন, ঘুমের প্রস্তুতি নেন, ঘুমান, আর সকালে অফিসে বেরুনোর তাড়ায় থাকেন। কল করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মনে করি সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টার মধ্যে।

৩/ নিশ্চিত হয়ে নিই মোবাইল একাউন্টে কথা বলার মত পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা, মোবাইলে কথা বলার মতো যথেষ্ট চার্জ আছে কিনা। ব্যালেন্স বা চার্জের অভাবে অর্ধ- কথায় ডিজকানেক্টেড হয়ে যাওয়াটা অসুন্দর মনে করি

৪/ একবার কল দিয়ে শিক্ষক রিসিভ না করলে তৎক্ষণাৎ ২য় বার কল দিইনা। রিসিভ না করার একটাই অর্থ- হয় শিক্ষক এই সময়ে ব্যস্ত আছেন- কথা বলার অবস্থায় নাই অথবা তিনি মোবাইল থেকে দূরে আছেন অথবা এই মুহূর্তে তিনি কথা বলতে চাচ্ছেন না অথবা অপরিচিত নাম্বার শিক্ষক রিসিভ করছেন না।

৫/ সেক্ষেত্রে শিক্ষকের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠাই- পূর্ণ সালাম দিয়ে নিজের নাম, পরিচয়, যোগাযোগের উদ্দেশ্য লিখি এবং শিক্ষক কোন সময় কথা বলার জন্য ফ্রি থাকবেন সেটি জানতে চাই। ফেসবুকে/ইমেইলে মেসেজ পাঠাতে চাইলে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় কথাটি উপস্থাপন করি।

৬/ hi, hello, r u there? how r u? Busy Sir? Free Sir?, ki koren Sir?, kheyechen Sir? ইত্যাদি লিখে মেসেজ আরম্ভ করিনা। আর কল করলে শিক্ষককে ‘আপনি কে বলছেন?’, ‘স্যার আমাকে চিনছেন?’, ‘আমাকে ভুলে গেলেন?’ ইত্যাদি বাক্য দিয়ে কথোপকথন শুরু করিনা। শিক্ষকের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় থাকলেও, এমনকি শিক্ষকের মোবাইলে আমার মোবাইল নাম্বার সেইভড করা থাকলেও শুরুতেই সালাম দিই, নিজের পূর্ণ পরিচয় প্রদান করি, অত:পর জানতে চাই- ‘স্যার/ম্যাম, আপনি কি ফ্রি আছেন? কথা বলা যাবে?’।

৭/ শিক্ষকের এবং আমার দু’জনেরই ভিডিও কলিং এপস্ থাকলেও কখনোই শিক্ষককে ভিডিও কল প্রদান করিনা। পরিবারের সদস্য, স্বামী- স্ত্রী, প্রেমিক- প্রেমিকা, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া অন্য কাউকে পূর্বানুমতি ব্যতীত ভিডিও কলিং চরম অভদ্রতা বলে মনে করি।

৮/ শিক্ষকের সাথে ফেসবুকে যুক্ত থাকলে শিক্ষকের পরিবারের পূর্ব অপরিচিত সদস্যদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইনা, তাদের ইনবক্সে নক করিনা। শিক্ষকের সাথেই আমার সম্পর্ক, উনার ফ্যামিলির সাথে নয়- এটি মনে রাখি।

৯/ নিজের টাইমলাইনের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ছবিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে শিক্ষককে ট্যাগ বা মেনশন দেইনা।

১০/ শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ প্রত্যাশী হলে পূর্ব এপয়েনমেন্ট নিয়ে শিক্ষকের অফিসে বা শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে দেখা করি। শিক্ষক আর আমি একই বিল্ডিং এমনকি পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাস করলেও শিক্ষকের বাসায় বিনানুমতিতে যাইনা এবং বাসায় সাক্ষাৎ করার আগ্রহ বা অনুরোধ জ্ঞাপন করিনা।

এভাবে আমি ভালো থাকি, আশা করি আমার শিক্ষকগণও ভালো থাকেন।
লেখক: সাঈদ আহসান খালিদ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Courtesy:Taken from facebook wall of Mahadi Ul Morshed

 

“প্যারেন্টিং” আব্রাহাম লিংকনের সেই ঐতিহাসিক চিঠি (ছবিঘর)

img20171021_030936
সুখ
“মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে । সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি ।”
হ্যা এই উক্তিটি আব্রাহাম লিংকনের।

আব্রাহাম লিংকন ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ সালে তার জন্ম। তিনি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। বিশাল ভুমিকা রাখেন ১৮৬৩ সালে। সেই সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং মুক্তি ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন।
তার অন্যতম চমৎকার উক্তি হল,
img20171021_033231
বোকা
“তুমি সবসময় কিছু লোককে বোকা বানাতে পারো, কিছু সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারো, কিন্তু সব সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারবে না ”
তিনি ১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
রাজনীতি বিজ্ঞান এমনি গবেষকরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন আব্রাহাম লিংকনকে।
img20171021_024225
আব্রাহাম লিংকনের চিঠি
আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। আজও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে আছে আব্রাহাম লিংকনের সেই চিঠি।
img20171021_030137
জ্ঞান

মাননীয় মহোদয়,

আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা।
img20171021_025618
সত্যনিষ্ঠ
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়।
♦তাকে এ বিষয়টিও শেখাবেন;
img20171021_030545
নিঃস্বার্থ নেতা
প্রত্যেক খারাপের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিবিদের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকতে পারেন।
♦তাকে শেখাবেন,
img20171021_034930
মূল্যবান
পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান।
♦আরও বুঝাবেন,
img20171021_031019
উপভোগ
কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয় উল্লাস উপভোগ করতে হয়।
img20171021_024647
দূরে
হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন।
♦যদি পারেন,
img20171021_031217
সৌন্দর
নিরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন একথা বুঝতে শেখে, যারা অত্যাচারী তাদেরকে নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়।
img20171021_030319
রহস্য
বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে শেখাবেন।
♦আমার পুত্রকে শেখাবেন,
img20171021_030226
সম্মানজনক
বিদ্যালয়ে নকল করে পাস করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক।
img20171021_031108
পূর্ণ আস্থা
নিজের ওপর তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে, এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে।
♦তাকে শেখাবেন,
img20171021_035946
ভদ্র
ভালো মানুষের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে।
img20171021_030056
পথ
আমার পুত্র যেন হুজুগে মাতাল জনতার পথ অনুসরণ না করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।
img20171021_040034
সাফল্য
সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যটা ছেঁকে যেন শুধু ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।
img20171021_040109
হাসি
সে যেন শেখে দুখের মাঝেও কীভাবে হাসতে হয়।
img20171021_033305
কান্না
আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই, সে কথাও তাকে বুঝতে শেখাবেন।
img20171021_030010
ঘৃণা
যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃণা করতে শেখে।
img20171021_033340
আরাম-আয়েশ
আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
img20171021_030504
ইস্পাত
আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না, কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়।
img20171021_024722
ধৈর্য
আমার সন্তান যেন বিপদে ধৈর্যহারা না হয়, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য।
img20171021_025542
ভালবাসা
তাকে এ শিক্ষাও দেবেন, নিজের প্রতি তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।

ইতি
আপনার বিশ্বস্ত;
আব্রাহাম লিংকন।

 

শিশুদের জন্মগত হৃদ্‌রোগ

img20171019_190418
শিশুরাও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন যদি শিশুর হৃদ্‌যন্ত্রটি বিভিন্ন গঠনগত বা কার্যগত সমস্যা নিয়ে তৈরি হয়, তবে তাকে জন্মগত হৃদ্‌রোগ বলা হয়।

কিন্তু কীভাবে বুঝবেন শিশুর হার্টে কোনো সমস্যা আছে? সব শিশুরই তো জন্মের পর আর হার্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না।
img20171019_190659i
সাধারণত এ ধরনের শিশুদের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:

* মায়ের দুধ খাওয়ার সময় শিশু হাঁপিয়ে যায়, ক্লান্ত হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যায়

* ঘন ঘন ঠান্ডা-কাশি হয় বা নিউমোনিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়

* ঘুম কম হয়, যার কারণে মেজাজ খিটখিটে থাকে

* শিশুর স্বাভাবিক ওজন বাড়ে না

* হৃদ্‌স্পন্দন খুব দ্রুত হয়

* জন্মের সময় ভীষণ রকমের কালচে বা নীলাভাব তার ঠোঁটে বা ত্বকে লক্ষ্য করা যায়

* জন্মের সময় স্বাভাবিক রকমের গায়ের বর্ণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও দুই মাস থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে ধীরে ধীরে শিশুটির ঠোঁট বা চামড়ার রং গাড় নীল হতে থাকে এবং কান্নার সময় একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়

এই উপসর্গগুলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনে দু-তিনবারও হতে পারে। ওই মুহূর্তে তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে তার আরাম হয়। বড় বাচ্চারা হাঁটু গেড়ে বসলেও তাদের স্বস্তি আসে।

* একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুকে ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বাতজ্বর—এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
img20171019_190551
প্রধানত দুইভাবে চিকিৎসা করা হয়: বিনা অপারেশনে ও সার্জারির মাধ্যমে।

সঠিক ওষুধ, ডিভাইস বা বোতাম দিয়ে হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্র বন্ধ করা, চিকন ভাল্ব বেলুনের মাধ্যমে খুলে দেওয়া, জরুরি ভিত্তিতে হার্টের ওপরের চেম্বার দুটির মধ্যে ছিদ্র তৈরি করা ও সাময়িক বা স্থায়ী পেসমেকার প্রতিস্থাপন।

এ ছাড়া সঠিক সময়ে সঠিক সার্জারি শিশুকে সুস্থ করে তুলতে পারে সম্পূর্ণভাবে।
img20171019_190515
শিশুর জন্মগত ত্রুটি যাতে না হয়, সে জন্য প্রত্যেক মা গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস আগে এমএমআর টিকা নেবেন। এ ছাড়া মায়ের গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখিকা:ডা. তাহেরা নাজরিন
কনসালট্যান্ট, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা
Courtesy: Md Jahirul Islam, Registered Homeopath
E-mail:jahir63@hotmail.com

 

চাকরি ক্ষেত্রে বিষয় বৈষম্য কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অনেক বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোটেই যুগোপযোগী নয়। যে দেশে চাকরির বিজ্ঞাপন মানেই বিবিএ-এমবিএ চাওয়া, সে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাপর বিষয়গুলোর মূল্য কি? শেখার জন্য আমরা বা আমাদের সমাজের কয়জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই? সবাই যাই সার্টিফিকেট অর্জন করে ভাল চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে। আর চাকরি মানেই যেখানে বিবিএ-এমবিএ এবং নামে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় সেখানে আরবি, ফার্সি, উর্দু কিংবা ওরকম আরো বিষয়গুলিতে পড়ে কতটা কাজে আসবে তা আমাদের জানা নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই সব বিষয়ে ভাল রেজাল্ট করার পরও আমাদের ভাই-বোনেরা হতাশ হচ্ছে চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো দেখে।

আমরা কোনো বিষয়কেই ছোট চোখে দেখি না বা কাউকে কারো চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই না বলে যারা বড় বড় কথা বলে তারাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উঁচু স্তরে বসে বিজ্ঞাপন সাজায় বিশেষ কিছু বিষয় ছাড়া যেখানে অন্যরা আবেদনই করতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওই সব বিষয় পড়িয়ে লাভ কি? বন্ধ করে দেওয়াই কি যুক্তিযুক্ত নয়? চাকরি পাওয়ার প্রাথমিক শর্তই যদি হয় বিবিএ-এমবিএ—তাহলে গোড়া থেকেই কেন আমরা সেসব বিষয় নিয়ে পড়ছি না, পড়াচ্ছি না। যে সব বিষয়ের আপাত দৃষ্টিতে কর্মজীবনে না কোনো চাহিদা আছে, না কোনো মূল্য আছে, সেসব বিষয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতাশাই শুধু বাড়বে। আমরা মনে করি না যে, শুধু বিশেষ কিছু বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই ওই সব চাকরি পাওয়ার যোগ্য আর বাকিরা লবডঙ্কা। চাকরির বাজারে কে কার থেকে এগিয়ে সেটা বুঝতে হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সব বিষয়ধারীকে আবেদনের সুযোগ দিয়ে দেখুন। কে কার থেকে ভাল তা তখনই বুঝা যাবে। যোগ্যতার বিচার আপনারা যখন সার্টিফিকেট দিয়ে করেন তখন বাকি বিষয়ধারীদের আর কিইবা করার থাকে।

যারা ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করেছিল তারা এখন অন্যদের তুলনায় আরো ভীষণ রকম বিপদে আছে। সরকার নির্ধারণ করেছিল গ্রেড পয়েন্ট ৫-এর মধ্যে ৩ পেলেই প্রথম শ্রেণি ধরা হবে। সেই দিক বিবেচনা করেই সব চলছিল। ইদানীং দেখা যাচ্ছে- বিজ্ঞাপনগুলোতে গ্রেড পয়েন্ট ৫-এর মধ্যে ৪ থেকে ৪.৫ চাওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে বা তার আগে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের কতজন ওরকম গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে পাস করেছিল? তাদের বয়স শেষের পথে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই বেকার। যাওবা স্বপ্ন ছিল, এখন গ্রেড পয়েন্টের খড়গের নিচে তারা মরিমরি করছে।

চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোতে হাতে গোনা কয়েকটা বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করার সুযোগটুকুও পাচ্ছে না। এটা সম্ভবত বেকারত্বকে মাথায় পেতে নেওয়া অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া এ দেশের কারো চোখে পড়ে না, কারো মাথায় ঢোকে না। হাতে গোনা বিষয়গুলো ছাড়া বাকিরা যদি আবেদন করার সুযোগই না পাবে তবে বন্ধ করে দিন ওই সব বিষয় যার কোনো বাজার মূল্য নেই। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার একবার বলেছিলেন- এ দেশে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে দুটো বিষয়ে পড়তে সুযোগ দেওয়া উচিত। একটা হলো—বিবিএ-এমবিএ যা দিয়ে সে চাকরি করে খাবে, আরেকটা হলো—সে অন্তর থেকে যে বিষয়ে পড়তে ইচ্ছা করে সেটা।

বিসিএস এবং সরকারি কিছু কিছু চাকরি ছাড়া কর্ম জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। সেগুলো বাদেও পণ্য বাজারজাত করে এমন সব কোম্পানিতে মার্কেটিং-এর চাকরির ক্ষেত্রেও বাকি সব বিষয়কে মূল্যায়নও করা হয় না। গুঁড়ো দুধ বিক্রি করুন আর সয়াবিন তেল বিক্রি করুন- সব ক্ষেত্রেই হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকিরা যেন যোগ্যই নয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন জেনে শুনে ওসব বিষয়ে ভর্তি করিয়ে পড়ানো হচ্ছে? এটাকি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানে না? জানার পরও কেন ওসব বিষয় চালু রয়েছে?

হয় চাকরি ক্ষেত্রে এই সব বিষয় বৈষম্য দূর করুন নয়তো চাকরির বাজারে হাতে গোনা যে বিষয়গুলো সবাই মূল্যায়ন করছে সেগুলোর বাইরের সব বিষয় বন্ধ করে দিন। কথায় বলে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। যে বিষয়ে পড়ে কর্ম জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় সেই সব বিষয়ে পড়ার চেয়ে না পড়াই কি ভাল নয়?

ঢালাওভাবে এ প্লাসের বন্যা শুরু হওয়ার আগে যারা এইসএসসি পাস করেছিল তাদের কথা বিবেচনা করে সর্বক্ষেত্রে গ্রেড পয়েন্ট ৩ প্রাপ্তদের আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে। যে কোনো চাকরির ক্ষেত্রে (ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ক্ষেত্র বিশেষ বাদে) প্রাথমিক আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের বেড়াজাল রাখা চলবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশে ওগুলো এক একটা এনালগ সিস্টেম ছাড়া আর কিছু নয়। প্রাথমিক আবেদনের সুযোগ সবারই থাকা উচিত। তারপর ধাপে ধাপে কেউ মেধার বলে টিকে গেলে সে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। চাই সে আরবিতেই পড়ুক আর সংস্কৃতিতেই পড়ুক। আর না টিকলে সে বিবিএ-এমবিএ হলেও বাতিল বলে বিবেচিত হোক এটাই সবার কাম্য।

মূলত আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার বড়ই অভাব। কারিগরি শিক্ষাই বলি আর অন্যান্য বিষয় বলি- কোনোটাই মূলত এদেশের অধিকাংশ কাজের সঙ্গে খাপ খায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার পর এ দেশ যেদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে সেদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছা মতো যে কোনো বিষয় নিয়ে পড়লেও কোনো সমস্যা থাকবে না। কারণ তখন কর্মসংস্থানের কোনো অভাব থাকবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে নীতিনির্ধারকদের আরো কড়া হতে হবে। চাকরিদাতারা কেন অন্য সব বিষয়কে আবেদনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করছে তার জবাব চাইতে হবে। সেই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত গ্রেড পয়েন্ট তিনের বদলে কেন ৪ বা ৪.৫ চাওয়া হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। পাঁচটা বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে বাকি ত্রিশটা বিষয়কে পায়ে মাড়িয়ে গেলে দেশে একদিন বেকারত্ব এতো বেড়ে যাবে যে জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তখন বেকার হয়ে বসে থাকবে। এদেশের আকাশ সেদিন বেকারের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠবে। সে ভার সইবার মতো শক্তি তো আমাদের নেই।

জাজাফী
www.zazafee.com
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সংগৃহীত

 

আজকের রান্নার স্বাদ-১

বাড়ির অন্যতম প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো রান্নাঘর। গৃহিনীদের সারাদিনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটাতে হয় এখানে। আপনাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাদের রান্নাকে মজাদার করে তুলবে।
img20171019_184414
♦মাংসে পিঁয়াজ কুচি
মাংশ জাতীয় যে কোন খাবারর রান্না করারর সময় শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) দিয়ে দিন। স্বাদ বেড়ে যাবে।
img20171019_184438
♦ডিম সিদ্ধ
ডিম সিদ্ধ করতে পানিতে সামান্য লবন দিন। ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। গরমাবস্থায় ডিম ছিলবেন না, ঠান্ডা করে ছিলুন এতে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না। আর লেবুর রস দিতে ভুলবেন না, তাহলে খোসা ছিলতে সুবিধা হবে।
img20171019_183023
♦হাড়ির ঢাকনা
চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না। গরম থাকলে হাত পুড়ে যেতে পারে। ঢাকনা ধরার ব্যপারে অধিকাংশ সময় আমরা সাবধান থাকি না।
img20171019_183114
♦ভর্তা
মরিচটা ভাল করে গুড়ো করুন। তারপর ভর্তার উপকরণ দিয়ে চামুচ ব্যবহার করুন।কারণ ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না, হাত জ্বলে আপনি কষ্ট পেতে পারেন।
img20171019_183147
♦মাছ ভাজি
মাছ ভাঁজতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরে থাকুন। অথবা চুলা কমিয়ে দিন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে/চোখে তৈলের চিটকা পড়তে পারে। সাবধানে কাজ করবেন। দূর থেকে নাড়ুন।
img20171019_183225
♦শুকনো মরিচ ভাজা
শুকনা মরিচ ভাজলে বা পুড়লে বাতাসে একটা ঝাঁজ তৈরী হয় এতে হাচি, কাচি এসে নাস্তা নাবুদ হয়ে যেতে পারেন। ভাজার সময় রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন। প্রয়োজনে এডজাষ্টার ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিন। ছিমের পাতা মুড়িয়ে ভাজলে হাচি হয় না।
img20171019_183320
♦ভাজিতে অতিরিক্ত তেল
ভাজিতে তেল বেশী পড়ে গেলে ভাজি কড়াই, প্যানের এক দিকে সরিয়ে কড়াই/প্যান কাত করে রেখে দিবেন ১৫/২০ মিনিট। তারপর ঐ কাত করা অবস্থাতেই ভাজিগুলো বাটিতে নিয়ে নিবেন। আর ঐ বাড়তি তেল পরে অন্য ভাজিতে ব্যাবহার করতে পারবেন। মাংসের তরকারীতেও যদি তেল বেশী হয়, উপর থেকে চামচ দিয়ে তেল উঠিয়ে পরে ভাজিতে ব্যাবহার করলে ভালো লাগে।
img20171019_183354
♦রান্নার স্বাদ বাড়াতে এলাচ গুড়ো
এলাচ সম্পুর্ণ গুড়ো করে ব্যবহার করা ভাল। গোটা এলাচ কামড়ে পড়লে খাওয়ার মজাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার এলাচ ভালো করে না ফাটালে তো সুগন্ধই হবেনা।

 

দাম্পত্য -৯

আজকে দাম্পত্যের সবচাইতে স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে লিখব, যেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। যা নিয়ে অভিযোগ মনে আনাও পাপ, মুখে আনলে ত শেষ! এ বিষয়টা বাদ দিয়ে দাম্পত্য নিয়ে বুলি কপচানো রীতিমত হঠকারিতা, কারণ বিয়ের আগ পর্যন্ত এ নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ থাকে না।

অন্তরঙ্গতা। সোজা ভাষায় শারীরিক সান্নিধ্য। যা নিয়ে বিয়ের আগে মেয়েদের উদ্বেগ, শংকা, লজ্জা মেশানো আকাঙ্ক্ষা, আর ছেলেদের কল্পনা, পরিকল্পনা – কোন কিছুই বাধা মানতে চায়না – তা নিয়েও যে বিয়ের পরে দ্বন্দ্ব অভিযোগের অবকাশ থাকতে পারে, তা বিশ্বাস করা অবিবাহিতদের জন্য কঠিন বৈকি। বিবাহিতদের মধ্যেও অভিযোগগুলো দানা বাঁধলে তারা একরকম ধামা চাপা দিয়েই রাখতে চান। এর মূল কারণ, এসব বিষয়ে লজ্জার বাঁধ ভেঙে কথা বলা রীতিমত অসম্ভব, কারণ নিজের স্বামী/স্ত্রীর সম্পর্কে এতটা খোলামেলা আলোচনা করা তাঁকে অসম্মান করারই সামিল। তাছাড়া এমন মানুষ আশপাশে পাওয়াও বেশ কঠিন যে একই সাথে উদার মনের, সমাধান জানে, গোপনীয়তা বজায় রাখবে এবং যার সম্পর্কে বলা তাকে আগের মতই সম্মান করবে।

শারীরিক অন্তরঙ্গতা দম্পতির মাঝে এক নিগূঢ় যোগাযোগের মাধ্যম। এ যেন ছোটবেলার ‘কোড ওয়ার্ড’ দিয়ে কথা বলার মত। আশপাশে আরো অনেকে থাকলেও তাদের নিজস্ব হাসি, ঠাট্টা, ছেলেমানুষি আনন্দের ভাগ দিতে হবে না কাউকেই। শরীরি আনন্দের মূর্ছনাকে তুলনা করা যায় অনন্য সাধারণ সঙ্গীতের সাথে – যার বোদ্ধা সমঝদার পুরো পৃথিবীতে মাত্র দু’জন। শরীরের সান্নিধ্য তাই অনেক সময় মনকে আরো কাছাকাছি এনে দেয়।

কিন্তু, আর সব পার্থিব সৌন্দর্যের মতই এতেও কদাকার কুচ্ছিত বেসুরো তান ঢুকে যেতে পারে। বিয়ের আগে মিডিয়ার কল্যাণে ভালবাসার যে রূপটি আমাদের মধ্যে গাঁথা হয়ে যায়, তা ভীষণ রোমান্টিক, ভীষণ সুন্দর। সত্যিকারের জীবনে দৈহিক ভালবাসা সবসময় তেমনি করে নাও আসতে পারে। বইয়ের পাতায় বা রূপালি পর্দায় অন্তরঙ্গতা যেভাবে আসে ভালবাসার চিত্ররূপ হয়ে – বাস্তব সবসময় তেমন নাও হতে পারে। দৈহিক মিলন শুধুই কাছে আসার আকুতির প্রকাশ না, এটি একটি জৈবিক চাহিদাও। আর সব সাইকেল এর মত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই চাহিদাও পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা এখানে না। সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন স্বামী/স্ত্রী বিয়ের আগের ধরে রাখা এক মাইন্ডসেট নিয়ে আশা করে থাকেন প্রতিবারই ভালবাসা তার পূর্ণরূপ নিয়ে মহাকাব্য রচনা করবে। চাহিদা কিন্তু তার প্রয়োজন পূরণের দিকেই নিবদ্ধ থাকে, আর তার কারণে উপক্রমণিকার অংশটুকু খুব অল্প, বা অনুপস্থিত থাকতে পারে কখনও কখনও। যে মানুষটি স্বপ্নে এই সময়টুকু কে নিয়ে অনেক কাব্যগাঁথা রচনা করেছে, সে বাস্তবতার এই ধাক্কায় বিমূঢ় হয়ে যেতে পারে।

ফলাফল, ‘আমি কেবলই তার প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম, আমার প্রতি তার কোন আকর্ষণ নেই…’ এ ধরণের উপসংহার টানা। এমনকি, হীনম্মন্যতা, অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা, তুচ্ছ কারণে অভিযোগ – এধরণের ব্যাখ্যাতীত আচরণের অনেকটাও এ ধরণের অতৃপ্তি থেকে আসে।

এখানে উভয়পক্ষকেই বুঝতে হবে, শারীরিক সান্নিধ্যের উৎস দুইটি। ভালবাসা/ কাছে আসার আকুলতা, এবং পিওর বায়োলজিক্যাল নিড। সম্পর্ক যত পুরনো হয়, প্রতিটা আবেগ প্রকাশের পেছনে মূল কারণটা বোঝা সহজ হয়ে যায়। অনেক দম্পতিই করেন কি, শরীরের প্রয়োজনে কাছে আসার আহ্বান কে শ্রদ্ধা করেন না। ভেতরে জমে থাকা রাগের ঝাল মেটান অপরজনের প্রয়োজন কে উপেক্ষা করে। ক্লান্তি, ব্যস্ততার অজুহাত দেখান। এই প্রয়োজনটুকু পূরণ করতে যেহেতু অপরজনের সহযোগিতা অপরিহার্য, তাই উপেক্ষা অনুরোধকারীকে একই সাথে আহত ও অপমানিত করে।

আমাদের দম্পতিরা অনেক সময়ই জানেন না, সাড়া না দেয়াটা কি আদৌ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কিনা। একজন হয়ত ব্যাপারটাকে গুরূত্বই দিচ্ছেনা, আর অন্যজন আহত অহংবোধ নিয়ে মনে মনে দূরে সরে যাচ্ছে। আজকালকার দিনে অহর্নিশ মানুষকে ব্যস্ত রাখার অনেক উপকরণ আছে, তাই সঙ্গ না থাকলেও অনেক কিছুর মাঝে ডুবে থাকা যায়, সঙ্গী হয়ত টেরও পাবে না কবে সে অনেক দূরে চলে গেছে। তার মানে এই না যে, নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন দাম থাকবে না। উপেক্ষাকে একটু বদলে ‘সম্মান ও কারণ দর্শনপূর্বক অসম্মতি’ তে বদলে দিলেই দূরত্বের ভয়টা ঘুচে যাবে।

বিবাহিত মেয়েদের কমন অভিযোগ, ও আমার প্রতি আগের মত আকর্ষণ বোধ করেনা। ছেলেদের অভিযোগ ও গৃহিণী হতে গিয়ে প্রেমিকা হতে ভুলে গেছে। ভাল কাপড় পরে না, সুগন্ধি মাখে না… কিছু বললে ঘরকন্নার দশটা অজুহাত দেখায়।

এসব সমস্যার সমাধান বাইরের কারো কাছ থেকে আশা করা বোকামি। প্রতিটা দম্পতির যোগাযোগের ধরণ স্বতন্ত্র। তাই স্ত্রীকে নিজে নিজেই বুঝতে হবে, তার দাম্পত্যের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজন, পরিচ্ছন্ন ঘরদোর, না পরিচ্ছন্ন পোশাক আশাক। স্বামীর ও তেমনি বুঝতে হবে, একজন লেখক কেবল নিজের খেয়াল খুশিমত লিখে গেলেই পাঠকের কাছে গ্রহণীয় হয়না, পাঠকের চাহিদারও মূল্যায়ন করতে হয়। তাছাড়া সাহিত্যে ছোটগল্পের প্রয়োজন যেমন আছে, তেমনি উপন্যাসের ও আছে। একটি সার্থক উপন্যাস অনেক ছোটগল্পের প্লট তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

বাংলা মুভি- “ঢাকা অ্যাটাক”

অনেকগুল মুভি অক্টোবর মাস জুড়ে মুক্তি পাচ্ছে। প্রতিটি সিনেমাই গল্প, নির্মাণ বা স্টার কাস্ট আলাদা আলাদা। একঝাঁক সিনেমার মুক্তি কাছাকাছি সময়ে খুব কমই হয়।

মুক্তির হল ইতিমধ্যে দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’।

ঢাকায় একাধিক খুন ও বোমা বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অবস্থান চিত্রিত হয়েছে।

এই ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এবিএম সুমন এবং কাজী নওশাবা আহমেদ।

ঢাকা অ্যাটাক হল ২০১৭ সালের বাংলাদেশি রোমাঞ্চকর নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন দীপংকর দীপন এবং রচনা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানী সানোয়ার। ছবিটি প্রযোজনা করে থ্রি হুইলারস ফিল্মস, স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া ও কিউ-প্লেক্স কমিউনিকেশন এবং পরিবেশনা করে টাইগার মিডিয়া লিমিটেড।

৬ অক্টোবর মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ সপ্তাহের শেষে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দর্শকদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। ক্রমান্বয়ে দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন,

প্রথমটি হলো, ১৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর অন্যতম সিনেপ্লেক্স ব্লকবাস্টার সিনেমাস (যমুনা ফিউচার পার্ক)-এ ছবিটি প্রতিদিন পাঁচটি করে শো চলবে। যা গেল সপ্তাহে তিনটি ছিল। দীপন জানান, দর্শক চাহিদা ও চাপ সামলানোর কথা ভেবেই সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং এমন খবরে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ টিম বেজায় খুশি।
অন্যদিকে প্রথম সপ্তাহে ছবিটি সারা দেশের ১২২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও নতুন সপ্তাহে (১৩ অক্টোবর) সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০-এ। এটিও একটি সিনেমা আকাশছোঁয়া সফলতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সিঁড়ি বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

দু দিনে টিকিট সেল ৭ কোটি ৪ লাখ টাকার হয়েছে ।

৭ কোটি টাকার ওপর টিকিট বিক্রি অর্থাৎ ছবিটি দুই দিনে বেশ ভালোই আয় করেছে এবং সমান্তরালভাবে ভালো আয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
সুত্র: ইন্টারনেট।

 

সম্পর্কের অ্যালফাবেট -১

IMG_20171018_022332
এই লেখাটি psychiatrist এর লেখা যার নাম Abigail Brenner। তিনি ছুটি কাটাচ্ছিলেন এমন একটা সময়ে কয়েকজন , “বৃদ্ধ বয়স্ক” কাপেলদের তিনি ইন্টার্ভিউ নেন। যারা একসঙ্গে এত বছর দাম্পত্যজীবন কাটিয়েছেন ।তাদের দাম্পত্যজীবনের রহস্য খুঁজতে গিয়েই লিখে ফেলেন এই আর্টিকেলটি—-সর্ম্পকের অ্যালফাবেট (A to Z)।
img20171018_022917
A থেকে Z পর্যন্ত প্রতিটি অ্যালফাবেটককে খুঁজে পাওয়া যাবে এই আর্টিকেলে।

সম্পর্কের অ্যালফাবেট (A to Z):

IMG_20171018_021214
♦Adaptable
(সব পরিস্থিতিতে মানানসই)

‘নিজেকে সব রকম পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার যোগ্যতা। জীবনযাপনের জন্য এই বৈশিষ্ট্য খুব অপরিহার্য। কারণ সময়ের সাথে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে তা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। জীবনের ছোট বড় পরিবর্তন সহ্য করার জন্য প্রয়োজন শক্তি, দৃঢ়তা এবং মেনে নেওয়ার অদম্য ক্ষমতা।’
img20171018_015518
♦Benevolent
(শুভাকাঙ্ক্ষী বা সবার কল্যাণ প্রত্যাশা)

‘একজন আন্তরিক কল্যাণকামী মানুষই ভালবাসা শব্দটা বুঝেন সঠিকভাবে। সত্যিকার অর্থে মানুষের প্রতি মানুষের দরদমাখা ভালবাসার প্রকাশ, মানুষকে অনন্য করে তোলে। সব জীবনসঙ্গী চান তার পাশে থাকা মানুষটি প্রতিটি মুহুর্ত্বেই তার প্রতি আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল থাকুক।’
img20171018_015335
♦Conscientious
(কর্তব্যবোধ বা বিবেকবান)

‘সম্পর্কে হেটে নিয়ে যেতে হলে, অবিরত বা অপরিবর্তনশীল দুজনের মনোযোগ প্রয়োজন। কাজ বা দায়িত্ব, এবং কৃপনতা করা বন্ধনকে আকর্ষণীয় করার জন্য। কৃপনতা বলতে ‘আমি আমার সঙ্গীকে ভালবাসি, যা অন্য খাতে ব্যয় করার ব্যাপারে আমি ভীষণ কৃপণ।’ ভালবাসার অর্জন হল, তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এবং সবচেয়ে পছন্দসই উপায়ে হাটতে দেওয়া।’
img20171018_015207
♦Dedicated
(নিবেদিত বা উত্সর্গীকৃত বলতে উজাড় করে দেওয়া)

‘এই গুণটি আপনার নিজের এবং আপনার একান্ত নিজের, যা হয়ত জন্মের পর পর পাওয়া গুন। আপনার প্রতিশ্রুতি, সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকার এবং নিজেকে শেয়ার করা যেখানে থাকবে পুরো শক্তি, বাসনা, এবং প্রেম যা আপনি অনুভব করবেন পাশাপাশি অন্যরা। হ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর পিছনেই রয়েছে ভবিষ্যত।’

img20171018_015058
ভালো লাগার স্বীকৃতি দেয়াটা কঠিন হোক কিংবা সহজ, পরিস্থিতি অনুকূলে থাক কিংবা প্রতিকূলে, গোপন কিংবা প্রকাশ্য, স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট ভালোবাসা হোক না কেন? প্রতিটি সম্পর্ক হবে প্রাণবন্ত। সর্বাবস্থাতেই ভালোবাসা হবে কল্ল্যাণকামী। ভালোবাসার মতোই ভালোবাসার ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে রাগ, অভিমান, অধিকারের অস্তিত্বও বিদ্যমান থাকবে। সম্পর্কে একটু যত্ন নিলে প্রতিটি সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

(“সম্পর্কের অ্যালফাবেট -২” পরবর্তী পর্বের জন্য অপরাজিতার সাথেই থাকুন)
img20171018_015653
মুলে: Abigail Brenner
ফাতেমা শাহরিন

 

বউয়ের ভয়

বউ দোষারোপ করতেন, বউয়ের বিরক্তিকর খুঁতখুঁতে আচরণের জন্য দশ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন ৬২ বয়সের ব্রিটেনের বাসিন্দা ম্যালকম অ্যাপলগেট। বিয়ের পরে স্ত্রী বিভিন্ন উপায়ে তার জীবনকে একেবারে নাজেহাল করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিন বছর ধরে সেই খিটখিটে আর রগচটা নারীর সাথে আর কোন ভাবে থাকতে না পেরে, কোনো পথ খোলা না পেয়ে পালিয়ে যান বনে। বন বাসে জীবনকে উপভোগ করতে থাকেন তাই কাটিয়ে দেন পাক্কা ১০ বছর।

লন্ডনের ‘ইমাউস গ্রিনউইচ’ নামে একটি বাস্তুহীনদের আশ্রয়দাতা সংস্থাকে জানিয়েছেন সম্প্রতি তার জীবনের গল্পটি এভাবেই ষাটোর্ধ্ব এই বয়স্ক ভদ্রলোক।
img20171017_233906
তিনি তার বাড়ি থেকে হেটে হেটে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন কারণ তার সাইকেলটি চুরি হয়ে যায় পথে।
১০ বছর সুতরাং অ্যাপলগেটের পরিবারের সবাই ভেবেছেন তিনি মারা গেছেন। হঠাৎ ভাইয়ের কাছ থেকে এত বছর পর ফোন পেয়ে চমকে যান অ্যাপলগেটের ভাই।

অ্যাপলগেটের গল্পটি তার মুখের ভাষাতেই তুলে ধরা হয়েছে ‘ইমাউস গ্রিনউইচ’-এর ওয়েবসাইটে। সেখানে ডেইলি মেইল ​​রিপোর্টাদেরকে অ্যাপলগেট বলেন, ‘বিয়ের পর আমার জীবন দিন দিন বিশৃঙ্খল হতে থাকে। আমি যতই কাজ করতাম, আমার স্ত্রী ততই রেগে যেত। আমি বেশিক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকি, এটি সে পছন্দ করত না।’

‘তার এই কর্তৃত্বপরায়ণ ভাব দিন দিন মাত্রাধিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। আমার বউ চাচ্ছিলেন,আমি যেন কাজ কমিয়ে দেই। তিন বছর তার সঙ্গে এক ছাদের নিচে কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নিই,নিজের ভালোর জন্যই চলে যেতে হবে। এরপর কাউকে,এমনকি আমার পরিবারকেও না জানিয়ে,আমি সবকিছু গুছিয়ে বের হয়ে যাই… একেবারে ১০ বছরের জন্য হারিয়ে যাই।’

অ্যাপলগেট আরো বলেন, ‘পালানোর পর কিংসটনের কাছে একটি জঙ্গলে আস্তানা গাড়ি। এ সময় স্থানীয় বৃদ্ধদের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টারের বাগানে কাজ করেছি।’

‘ভালোই কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু পরে ইমাউস গ্রিনউইচের কথা শোনার পর ভেবে দেখি, সেটিই আমার জন্য উপযুক্ত স্থান। সেখানে গিয়ে আমি একটি সাক্ষাৎকার দিই এবং থাকা শুরু করি।’

কিন্তু পরিবার ছাড়া থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে বোনকে চিঠি দেন এবং তার পরিবার তাকে খুঁজে বের করেন।
img20171017_233720
বর্তমানে তার ভাষ্যমতে,
“We now have a great relationship again.”

সুত্র: Fox News.

 

দাম্পত্য -৮

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের কোন না কোন সময়ে একটা জটিলতা সামনে আসেই, তা হচ্ছে আর্থিক দ্বন্দ্ব। হয় স্বামী যথেষ্ট খোরপোস দেয়না, অথবা স্ত্রী প্রয়োজন ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য বোঝে না, অথবা বাবার বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে সমস্যা হয়, অথবা দেনমোহর এখনও কেন দেয়নি – তা নিয়ে অসন্তুষ্টি… টাকাপয়সাজনিত দ্বন্দ্বের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এই বিষয়টার সবচেয়ে কঠিন দিক হচ্ছে, আলোচনাটা খুব দ্রুত উত্তপ্ত রূপ নেয়, এবং এক পর্যায়ে স্বামী/স্ত্রী এমন কোন মন্তব্য করে বসে যে অপরজন প্রায় বাকি জীবন সে দগদগে ঘা বয়ে বেড়ায়। আমার এক বন্ধু খুব সুন্দর একটা কথা বলে, (যদিও আমি তার সাথে একমত না,) সম্পর্ক হচ্ছে একটা ভাস্কর্যের মত, প্রতিটা ঘটনা একটা একটা ছাপ রেখে দেয়, এবং তা ভাস্কর্যটাকে নতুন রূপ দেয়। ওর কথা মত ধরলে আমি বলব, টাকাপয়সাজনিত উত্তপ্ত এই মন্তব্যগুলো হচ্ছে হাতুড়ির এক ঘায়ে নাক মুখ খসিয়ে দেয়ার মত। একবার মেরে ফেললে পরে গড়ে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়।

এই সমস্যা নিয়ে লেখা খুব কঠিন ব্যাপার, কারণ এত ডালপালা ছড়ানো যে, কাকে দিয়ে কোথা থেকে শুরু করব, সেটা বোঝাই দায়। মোটা দাগে কয়েকটা দিক আলোচনা করি, বাকিগুলো আশা করি একই ছাঁচে ফেলা যাবে।

১. মাসিক খরচের সাথে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবধান: যে কোন কারণেই হোক, মাস শেষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব মেলেনা। এ অবস্থায় একজন অপরজনকে অতিরিক্ত খরুচেপনা বা অতিরিক্ত কিপ্টেমির জন্য দোষারোপ করতে পারে।

২. আয়ের উপর একচেটিয়া অধিকার: স্বামী স্ত্রী দু’জনেই চাকুরিজীবি হলে নিজের আয়ের উপর কতটুকু কর্তৃত্ব থাকবে – এটা নিয়েও চলতে পারে মনোমালিন্য। এমন দেখেছি, স্ত্রী এর চাকুরির বিশ ত্রিশ বছর পরেও বেতনের টাকাটা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়না, স্বামী প্রবর হিসেব মত ব্যাংক থেকে তুলে আনেন, এবং তাঁর বিচার বিবেচনায় খরচ করেন। আবার এমনও দেখেছি, একজনের ব্যাংক ব্যালেন্স অপরজন জানেন না, সংসারের খরচের কতভাগ কে দেবে তা নির্ধারিত হয় আয়ের উপর নির্ভর করে… এ ছাড়া কার টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে – এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার অধিকারটাও অপরজন রাখেন না।

৩. আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য বা দান খয়রাত করার ব্যাপারে উভয়পক্ষের সমর্থন না থাকা: হিংসা হোক, স্বার্থপরতাবশতঃ হোক, ক্ষোভ হোক, যথাযথ হোক – যে কোন কারণেই স্ত্রী বা স্বামী অপরপক্ষের আত্মীয় স্বজনের জন্য যে টুকু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না।

৪. অনেক আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে ধার নেয়া টাকা আর কখনও পরিশোধ করেন নি, বা বিয়ের দেনমোহর এখনও শোধ করেন নি, এবং এ অভিযোগগুলো উঠে আসছে জীবনের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে, কেবলই প্রতারণার অভিযোগ হয়ে।

বিষয়গুলো লেখার সময় আমি যেন চোখের সামনে অনেক উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু লেখার ভাষায় যখন প্রকাশ করছি, নিজের কাছেই ছোট লাগছে, মনে হচ্ছে, দাম্পত্যের মধ্যে এমন সংকীর্ণতা চিন্তা করাই পাপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্যি, সংসারের প্রথম দিকে না হলেও, কোন না কোন সময় এমন অনেক দুঃখজনক ঘটনাই ঘটে, যা কিনা হৃদয় কে স্তব্ধ করে দেয়, অপরজনের প্রতি সম্মান নামিয়ে দেয় শূন্যের কোঠায়, এর রেশ চলে বছরের পর বছর, প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, শ্লেষাত্মক কথায় বা নির্লিপ্ত উদাসীনতায়।

সমাধান? আমি আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলার যোগ্যতা তেমন রাখিনা। যখন সমাধান বলতে যাব তা হয়ত জটিলতার তুলনায় হাস্যকরই শোনাবে। তবু লিখছি, কারণ দাম্পত্য সিরিজের পুরোটুকুই নতুন দম্পতিদের জন্য, যারা এখনও এসব সমস্যার তুঙ্গে ওঠেন নি। তবে সচেতন না হলে একদিন যে উঠবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্তমান সময়ে চাহিদার সাথে সঙ্গতির সামঞ্জস্য রাখা প্রতিটা পরিবারের জন্যই খুব কঠিন। এ জন্য যেটা করা যেতে পারে, স্বামী স্ত্রী একটা সময় করে বসে নিজেদের মাসিক আয় কতটুকু সেটার সাথে সাথে কোন খাতে আয়ের কতটুকু খরচ করবেন এমন একটা বাজেট করতে পারেন। সেখানে মুদি খরচ, কাপড়, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা – এমন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর হিসেব করে, বাকি যে টাকাটা থাকে তার কত পার্সেন্ট উপহার, বিনোদন ইত্যাদিতে খরচ করবেন সেটা দু’জনে মিলে ঠিক করতে পারেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই, এসব বিভিন্ন খাতে দু’জনের চাওয়ার পার্থক্য থাকতে পারে। স্বামী হয়ত চাইছেন আধুনিকতম ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রটা কিনবেনই, যত টাকাই লাগুক। স্ত্রী হয়ত ভাবছেন, আর যাই হোক, ফেসিয়ালের খরচটা বাদ দেয়ার কোন উপায়ই নেই। সুতরাং, প্রথমবার বাজেট তৈরি করতে গেলে এরকম খুঁটিনাটি প্রায় সবকিছু নিয়েই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যটা স্পষ্ট হবে। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেনাকাটা বা খরচের ব্যাপারে বড়রাও ছেলেমানুষের মতই গোঁ ধরেন। ত, সেক্ষেত্রে উষ্ণ বাক্ বিতন্ডায় না জড়িয়ে অন্যজনকে তখন খুবই ঠান্ডামাথায় বোঝাতে হবে। কথোপকথনটা চাই কি এমনও হতে পারে –

‘বুঝলাম, এই মুহুর্তে একটা এস এল আর না থাকলেই নয়। কিন্তু তুমি চিন্তা কর, আমরা প্রতি মাসে সঞ্চয় করি আয়ের মাত্র বিশ শতাংশ। একটা এসএলআর প্রায় আমাদের পাঁচ মাসের সঞ্চয়ের সমান। আর সঞ্চয়ে তোমার খরচের জন্য বরাদ্দ আছে অর্ধেক, তার মানে, তুমি এখন একটা এস এল আর কিনলে আগামী দশ মাস আর কিছু কিনতে পারছ না। তুমি যদি মনে কর, এস এল আরটা দশ মাসের আর সব কিছুর ছাড়ের সমান, তাহলে কিনতে পার।

বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে কাজিনের বিয়ের দাওয়াত উপলক্ষে পার্লারে তিন হাজার টাকা খরচ করা যদি সত্যিই প্রয়োজনীয় মনে হয়, তিনি স্বচ্ছন্দে করতে পারেন, যদি তাঁর জন্য বরাদ্দ খরচের মধ্যেই থাকে। বরাদ্দের বাইরে গিয়ে করতে হলে কান্নাকাটি বা রাগারাগি নয়, যুক্তিপূর্ণভাবে আয়ের উৎসটা দেখিয়ে তারপরই করতে হবে।

শুধু বাজেট করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না, প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনে বসতে হবে হিসাব নিয়ে, এ মাসে লক্ষ্যের কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। যে খাতে পারিনি, সেখানে আর কী কী পরিবর্তন আনতে হবে। এ পর্যায়ে চলবে আরেক দফা দোষারোপ.. কিন্তু তার পরেও, শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্তটা নেয়া হবে, সেটা নিয়ে বাকি মাস আর কোন অভিযোগ থাকবে না। একই ভাবে, তিন চার মাস পর আবারো বিশদভাবে রিভিউ করা যেতে পারে, আদৌ আমাদের বাজেট টা বাস্তবসম্মত ছিল কি না। যদি না হয়, আনা যেতে পারে আরো বড় পরিবর্তন, চাই কি কোন মাসে সব রকমের বিনোদন কাট ছাঁট করে দিলেন, অন্য মাসগুলোর সাথে ব্যালেন্স করার জন্য। এরকম অনেক আইডিয়াই আসবে, যদি প্রতি মাসে নিয়ম করে স্বামী স্ত্রী খরচের বিষয়টা আলাপ করেন।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নিজের আয়ের উপর কতটুকু অধিকার থাকবে সেটাও অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে স্পষ্ট থাকে না। নতুন দম্পতিদের মধ্যে অনেকে এটাই বুঝে উঠতে পারেন না, জয়েন্ট একাউন্ট না রেখে আলাদা একাউন্ট করতে চাওয়াটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না। আবার ‘আমি রোজগার করি, আমি খরচ করি – এখানে তুমি বলার কে?’ এমন ভাবভঙ্গিও থাকে অনেকের। আমি বলছি না, এর কোনটাতেই কোন সমস্যা আছে। যদি স্বামী স্ত্রী উভয়েই কোন একটা নির্দিষ্ট সেটিং এ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাহলে এখানে বলার কিছু নেই। তবে আমার মনে হয়, সংসারের গোড়ার দিকেই এ বিষয়ে কার দৃষ্টিভঙ্গি কী – সেটা স্পষ্ট জেনে নেওয়া ভাল, তা না হলে অকারণে দুঃখ পেতে হবে।

শেষ যে ব্যাপারটায় জোর না দিলেই নয় – স্বামীর বা স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল অনেক আত্মীয় থাকতে পারেন, বিশেষ করে বাবা মা ভাই বোন – এদের জন্য খরচ করাটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই ন্যায়সঙ্গত কাজটাকেও রীতিমত জুলুমের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন অনেকে, যদি আগে থেকেই এখানে সীমারেখা টানা না হয়। কীভাবে এই ভাল কাজটি জুলুম হয়ে যেতে পারে? যদি আপনি এ কাজগুলোতে আপনার জীবনসঙ্গীকে অংশীদার না করেন, তবে একটা সময় তার মনে অভিমান হতে পারে, ‘আমি কি এতই খারাপ, যে আমাকে জানিয়ে করলে আমি বাধা দিতাম?’ তারপর এই অভিমান থেকেই শুরু হবে মুখ গোমড়া করা, অকারণে কঠোর বাক্য বিনিময় – ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাল কাজ মিলে মিশে করার মধ্যে খুব বড় রকমের আনন্দ আছে, এবং তা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তাই বলি, রোজগার আপনার নিজের হলেও, আত্মীয় আপনার রক্তের সম্পর্কের হলেও, জীবনসঙ্গীর অনুমতি চান, এতে করে সে সম্মানিত বোধ করবে। আর আপত্তি করলে, আপত্তির কারণ জেনে তা নিয়ে কথা বলতে পারেন, বা আপনার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে না হলে পাত্তা না দিতে পারেন, তবু যে আপনি অনুমতি চাইলেন, এটাই অনেক বড় প্রভাব রাখবে আশা করি।

সত্যি বলতে কী, দাম্পত্যের আনন্দগুলোর অনে…ক রকমের রং, রস, রূপ রয়েছে। কেন জানি আমরা অস্বচ্ছলতাকে অজুহাত বানিয়ে এরকম সব আনন্দের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে চাই। মানি, অর্থ না থাকলে অনেক স্বপ্নই পূরণ হয়না, অভিযোগের ঝুলিটাও ভারি হতে থাকে। কিন্তু সরবরাহ যেখানে সীমিত, ব্যবস্থাপনার ত সেখানেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সফল ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হচ্ছে ম্যাচিউর কমিউনিকেশন। আর্থিক ব্যাপারস্যাপারগুলো নিয়ে বসলেই এ জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়। তাই বলি, এধরণের আলোচনার প্রয়োজনীয়তাটা শুধু টাকাকড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, পরস্পরকে বুঝতেও অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

‘নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি’- অভিনয় ছেড়ে ইসলামের পথে হাটব

নূর বুখারী (৩৫) পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী এবং টিভি হোস্ট। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন।

মূলত তার হিজাব পড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি তার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেন।

কে এই নূর বুখারী:

নূর বুখারী (লাহোর, পাঞ্জাবী, উর্দু) একজন পাকিস্তানি অভিনেত্রী, পরিচালক এবং মডেল। তিনি উর্দু এবং পাঞ্জাবি লোলিউড চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন সম্প্রচারে কাজ করে আসছেন দীর্ঘ দিন। তিনি মুলত তার ছবি “ইসক পজেটিভ” মধ্যে “রাজ্য” চরিত্রের জন্য বিখ্যাত।

নূর বুখারী ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানী চলচ্চিত্রে একটি শিশু তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে তার অভিনয় কর্মজীবন শুরু করেন। ইদানীং তাকে ঘিরে সাংবাদিক মহলে গুন্জন শোনা যাচ্ছে। কারণ তিনি হিজাব পরিধান অবস্থায় কয়েকটি ছবি প্রকাশ করনে।

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলছেন যে, তিনি ভবিষ্যতে কোনো সিনেমা বা টিভি শো না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

চতুর্থ বারের মত, কয়েক সপ্তাহ আগে তার বর্তমান জীবনসঙ্গীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ভাবা হচ্ছে।

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’কে বলেন, ‘আমি এমন একটি সময় অতিক্রম করছি; যেটি আমাকে মানসিক আঘাত এবং অন্যান্য কষ্টের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে। এ সম্পর্কে আর ভাবতে চাই না আমি।’

সাক্ষাৎকারে তিনি তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। ইসলাম সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন। নূর বুখারী বলেছেন, ‘ইসলামের পথে আসতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ার বিষয়টি ব্যক্তি চাইলেই বাছাই কৃত হতে পারেন না, বরং আল্লাহই আপনাকে যদি পছন্দ করেন তবেই সম্ভব। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে পছন্দ করেন।’

পাকিস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ‘ললিউডে’ নূর বুখারী তার ক্যারিয়ারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি যে কোনো পেশার মাধ্যমেই খ্যাতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করা যায় এবং আমি আমার কঠোর পরিশ্রম ও সততার কারণেই ললিউডে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছি।’

তবে, দর্শক নন্দিত এই তারকা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে চলচ্চিত্রে সাফল্য উপভোগ সত্ত্বেও তিনি আর শোবিজ জীবনে ফিরছেন না।

তিনি বলেন, ‘আমি চলমান সকল প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি এবং এতে আর অংশ নিচ্ছি না।’

তিনি জানান, তিনি এখন নিয়মিত হিজাব পরছেন এবং হিজাব ছাড়া কখনো ঘর থেকে বাইরে বের হবেন না। এটায় তার সিদ্ধান্ত।

নূর বুখারী এখন থেকে কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমূহ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন পরিবর্তিত নারী। আমার দর্শনসমূহও পরিবর্তিত হয়েছে। আমার পরিশ্রম আমাকে আল্লাহ’র কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং আমি আমার এই রূপান্তর সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার পাশাপাশি, এই পথ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করবো। বিশেষত ইসলামিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে শিখব।’

সূত্র: উইকিপিডিয়া, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং
নিয়ো।

 

প্রতিটি সন্তানকে ভালবাসুন সমানভাবে….

শিশুর আগমনী বারতা অবশ্যই সবাইকে করে আনন্দে উদ্বেলিত। কিন্তু, যদি তা হয়,দ্বিতীয় /তৃতীয় সন্তান,তবে আনন্দের পাশাপাশি তা কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে আমাদের।প্রথম সন্তান দ্বিতীয় সন্তানকে কিভাবে নেবে,
তা নিয়ে বাবা মাদের চিন্তার শেষ নেই। এটা খুব কমন যে,

প্রথম সন্তান-
প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে,বলছে,ওকে রেখে আসো/ফেলে দিয়ে আসো /তোমরা আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
আবার,বাবামার অগোচরে,বড় সন্তান অনেক সময় ছোট সন্তানকে মার দিয়ে বসে।
কিছু ক্ষেত্রে,এমনও হয়,বড় সন্তানের (বয়স ৩-৬) খাওয়া,ঘুম,টয়লেট ট্রেনিং সব অভ্যাস এলোমেলো হয়ে যায়।
বাবা মায়েরা হয়ে পড়েন দিশেহারা।কি করবেন।একদিকে নতুন শিশুর জন্য মায়ের শরীরও থাকে ক্লান্ত।বাবাও দৌড়াদৌড়ি করে হয়ে থাকেন বিধ্বস্ত।
এসময়,বাবা মায়ের একটু চতুর সিদ্ধান্তই দুই সন্তান লালন পালনে করতে পারে বেশ সাহায্য।কিছু টিপস

ছোট সন্তানের আগমনী বারতা শুরু থেকেই আপনার বড় সন্তানকে দিন।হতে পারে গল্পের ছলে/রোল প্লেয়িং খেলার মাধ্যমে/পুতুল খেলার ছলে।ওকে তৈরি করুন,হুট করে যেন কিছু না হয়।

বড় সন্তান রেগে গেলে,তার রাগ প্রকাশ করতে চাইলে,তার কথা শুনুন।যেমন,সে যদি,বলে,আমার কোন ভাই বোন না থাকলেই ভালো হত।আপনি বলুন,আসলেই,আমারো ছোট বেলায়,এমন মনে হত।মাঝে মাঝে,বাবা মা শুধু আমারো একা পেতে ইচ্ছে করত। – আপনার এটুকু কথা,এটকু আশ্বাস আপনার সন্তানের মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

কখনওই বড় সন্তানকে জোড় করবেন না,ছোট সন্তানকে ভালোবাসার জন্য।ওকে নিজে বুঝতে দিন।একা থাকলে/কিছু না করার মত সময়ে,ওরা দুজন খেলার সংগি হবে, এটা উপলব্ধি করতে দিন।

প্রতিটা শিশুরই ইমোশনাল ব্যাগটা ভালোবাসায় পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এটা কঠিন,যে,একে তো নতুন শিশুর ঝক্কি,তার উপর,আরেকজনের রাগ জেদ সহ্য করা।কিন্তু,আমাদের বাবা মায়েদের নিজেদের সন্তানদের ভালোর জন্য আমাদের সহ্য শক্তি বাড়াতে হবে।প্রতিদিন বড় সন্তানকে আপনার একান্ত কমপক্ষে দশ মিনিট সময় দিন।শুধু আপনি আর সে। তাকে বলুন আপনি তাকে ভালোবাসেন।তাকে জড়িয়ে ধরুন।আদর করুন।তার কথা,গান,কবিতা শুনুন,ঠিক আগের মত করে।

দু’সন্তান এক সাথে কান্না জেদ করলে,আপনি নিজে আগে,বড় করে একটু শ্বাস নিন।তারপর, বড় সন্তানকে আদর করুন,এবং,তাকে বলুন,ছোট্ট বাবু কষ্ট পাচ্ছে,ওকেও আদর করতে হবে।দু জনকে এক সাথেই আদর করতে চেষ্টা করুন।

মূলত,ছোট শিশুটি বুঝবেনা/মনে রাখবে না,আপনি কাকে আগে কোলে নিয়েছেন, আদর দিয়েছেন। কিন্তু,আপনার বড় সন্তানটি মনে রাখবে।এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।আপনার প্রতি আস্থা বাড়বে।আর একবার,সে তার আস্থা ফিরে পেলে,ছোট ভাই/বোনটিকেও সে আপন করে নিবে।

ছোট সন্তানের কাজে বড় সন্তানকে নিয়োজিত করুন/হতে দিন।এবং তার প্রশংসা করুন এ জন্য।তাকে আরো উৎসাহ দিন।আর বড় সন্তান যদি,তার সব কাজে খুব বেশি আপনার সাহায্য চায়,নিজেকে অনবরত বলতে থাকুন,এ সময় খুব দ্রুতই পার হয়ে যাবে।আর সন্তানকে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন।

দুই সন্তানকে কাছাকাছি রাখতে চেষ্টা করুন।ধরুন, বড় জনকে,গল্পের বই/খেলনা দিয়ে ছোট জনের কাছেই রাখুন।আপনি দুজনকে দেখতে থাকুন।

বড় সন্তান,ছোট সন্তানকে চিমটি/খামচি দিতে চাইলে/মারতে চাইলে,আপনি নিজে দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে দৃঢ় স্বরে বলুন,তুমি ওকে মারবে না।পরে আদর করে,বুঝিয়ে বলবেন।
বড় সন্তানকে শাস্তি /মার দিয়ে কোন লাভ হয় না।এতে তার মনের ক্ষোভ বাড়বে।সে আরো অবাধ্য হয়ে উঠবে।

দুই সন্তানের মাঝে বন্ধুত্ব স্থাপনে আপনার ভূমিকাই প্রধান।বড় সন্তানটির একটিই ভয়,বাবা মা তাকে আর আগের মত ভালোবাসবে না।এর মূল মন্ত্র একটিই,ভালোবাসুন।আদর করুন। গুরুত্ব দিন।

পজেটিভ প্যারেন্টিং
ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

 

রূপের জন্য রূপচর্চা…

ত্বক
2017-10-14_14.41.22
♣♣♣সমপরিমান তুলসী পাতার রস ও লেবুর রস
একসঙ্গে মিশিয়ে দুই বেলা নিয়মিত দিতে পারেন।
দাগ কমে যাবে।
2017-10-14_14.44.26
♣♣♣অতিরক্ত শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে মধু,
দুধ ও বেসনের পেষ্ট মুখে লাগান নিয়মিত।
এতে ত্বকের বলিরেখা ও দূর হয়ে যাবে।
2017-10-14_14.47.56
♣♣♣টমেটোর রস ও দুধ একসঙ্গ মিশিয়ে মুখে লাগালে রোদে জ্বলা কমে যাবে।
img20171014_145457
♣♣♣মুখের ব্রণ আপনার সুন্দর্য নষ্ট করে। এক্ষেত্রে রসুনের কোয়া ঘষে নিন ব্রণের উপর। ব্রণ তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।

ঠোট
img20171014_145554
♣♣♣ঠোটেঁ কালো ছোপ পড়লে কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে ঠোটেঁ মুছবে এটি নিয়মিত করলে ঠোটেঁর কালো দাগ উঠে যাবে।

হাত
images(132)
♣♣♣হাড়িঁ-বাসন ধোয়ার পরে হাত খুব রুক্ষ হয়ে যায়। এজন্য বাসন মাজার পরে দুধে কয়েক ফোঁটা লেবু মিশিয়ে হাতে লাগান। এতে আপনার হাত মোলায়েম হবে।
2017-10-14_15.11.42
♣♣♣কনুইতে কালো ছোপ দূর করতে লেবুর খোসায় চিনি দিয়ে ভালো করে ঘষে নিন। এতে দাগ চলে গিয়ে কনুই নরম হবে।
images(137)
♣♣♣যাদের হাত খুব ঘামে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাউয়ের খোসা হাতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।

পা
img20171014_145437
♣♣♣পায়ের গোড়ালি ফাটলে পেঁয়াজ বেটে প্রলেপ দিন এ জায়গায়।
img20171014_145355
♣♣♣হাত পায়ের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে হাতে ও পায়ে আপেলের খোসা ঘষে নিন। এতে হাত ও পা অনেক বেশী সতেজ দেখাবে।

সাবিরা নাজনীন রুমী

 

Confidence বা আত্মবিশ্বাস -১

Confidence শব্দটা কিন্তু বেশ জটিল।
আসুন আগে জানি কত ধরণের অর্থ বহন করতে পারেন তিনি,
img20171012_185145

♦নিজেকে এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র সন্দেহ পোষণ না করে, নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করা

♦নিজের অস্তিত্ব বা অনুভূতিকে বিশ্বাস করা

♦খুব সুন্দর আস্থাবান সম্পর্ক গড়ে তোলা

♦Confidence হচ্ছে কোন ব্যক্তির মাঝে থাকা একটি সুপ্ত প্রতিভা যার বিনিময়ে অন্যান্যরা সেই ব্যক্তিকে ভালবাসে।
img20171014_022829
বর্তমান সমাজে Confident হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর এ কারণে Confidence এর উপর কয়েকটি পর্ব লিখার চিন্তা চলছে।
আসুন জানি
img20171012_185734What Is Confidence”
খুব সাধারণ একজন ব্যক্তির সফল হবার যোগ্যতার প্রতি নিজের প্রতি নিজের যে বিশ্বাস তাই হচ্ছে Confidence. Confidence কেউ কাওকে দিতে পারে না, নিজে নিজেই অর্জন করতে হয়। যেকোনো কাজে সফল হতে হলে Believe in Yourself হওয়া কোন বিকল্প নেই।

Believe in Yourself
আজকের পর্বটাতে নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
img20171014_023206
Confidence অর্জন করা কোন এক বা একাধিক আর্টিকেল এর ব্যাপার নয়। ব্যাপার হচ্ছে দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভ্যাস।

♦♦আপনি বিশ্বাস করুন, কাজটি আপনি সবচেয়ে সুন্দরভাবে করতে পারবেন
img20171014_022956
সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হচ্ছে Confidence। সুতরাং নিজেকে আগে বিশ্বাস করতে হবে। অনেকে আছেন যারা Confidence অন্যের মাঝেই দেখতে ভালবাসেন। নিজের ভিতরের অভাবকে না দেখে। নিজেই নিজেকে তুলে ধরতে পারেন হবে।

img20171010_080942
♦♦নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন

♦পোষাক,
পরিচ্ছন্নতা, হালকা সুগন্ধী আপনার স্মার্টনেস কেবল অন্যের চোখেই না আপনার নিজের চোখেও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

♦হাটা
মেরুদণ্ড সোজা ও মাথা উচু করে হাঁটুন। মাথা নিচু করে কুজো হয়ে হাঁটবেন না।

♦কথা বলুন চোখের দিকে তাকিয়ে
যখনই কারো সাথে কথা বলবেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলা।

মানুষজনের সাথে মিশুন ও নেটওয়ার্ক বাড়ান।
img20171014_022905

(Confidence এর সাথে প্রতিটি পর্ব পড়ুন।যে কোন একটা পর্ব আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতা” সাথে থাকুন)
রেফারেন্স:Psychology Today, Google, Wikipedia.

Fatema Shahrin
psychology

 

আধখানা বিষণ্ণ চাঁদ…

লাইটপোস্টের আলো সাদা হলে ভাল্লাগেনা…
সোডিয়ামের হলদে আলোয় যে আচ্ছন্নতা আছে এনার্জি সেভিং বালবগুলোর ঔজ্জল্যে সেটা নেই…

হুট করে মন কেমন হু হু করে ওঠে। মগ্ন হয়ে যেতে চায় অতলান্ত অসমাপ্ত ভাবনাগুলোর আরো গভীরে…

রাত-বিরাতে হঠাৎ চায়ের নেশা উঠল। অথচ ঘরে আজকেই চাপাতা থাকবেনা। এমনই হয় আরকি…

ফুটপাথে লাইটপোস্টের আলোতে দাঁড়িয়ে জিহবা পুড়িয়ে চা পান করছি আর চাঁদ দেখছি, তখন রাত দশটা।
আধখানা বিষন্ন চাঁদ…

মনের কোনো বিরাম নাই, এগারোটায় ফের মনে হল কুয়াশায় ভিজে হাটতে।

ছোটবোনটাকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বাসায় এই একজন মানুষ আছে যে আমাকে কখনো না বলেনা কিন্তু তথাপি আমি তার থেকে একধরণের দূরত্ব বজায় রেখে চলি। পিচ্চিটা আমার ভাল-খারাপ সমস্তটার অনুকরণ করে। খুবই বিব্রতকর ব্যাপার…

কলোনীর জনশূন্য রাস্তায় হাটছি। একহাতে জুতো আর অন্য হাতে একথোকা হাসনাহেনা। পা জমে যাচ্ছে অথচ মনে হচ্ছে সারারাত এভাবে কুয়াশায় ভিজতে ভিজতে হাটি।

যখন নিঝুম রাতে সবকিছু চুপ, নিস্প্রাণ নগরীতে ঝিঁঝিঁরা ঘুম… রাত জেগে শিশিরের শব্দ শুনি তখন…. নিয়মগুলো ভাঙ্গতে থাকি একেরপর এক…
img20171012_185416

সুমাইয়া তাসনিম
সাইকোলজি

 

দাম্পত্য – ৭

দাম্পত্য সিরিজটা আদৌ আর চালাব কি না তা নিয়ে সবসময়েই দোনোমনায় থাকি। কিন্তু পথ চলতে চলতে একেকটা বিষয় চোখে পড়ে, যা নিয়ে প্রায় প্রতি পরিবারেই কিছু না কিছু সমস্যা হয়, তখন মনে হয়, নাহ! লিখি। আর কিছু না হোক, বিষয়টা নিয়ে চিন্তা ত করা হবে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এত বেশি জড়ানো, একে অপরকে নিয়ে, আর তার মাঝে আবেগ ভালবাসার দাবি এত বেশি, যে কোন মূহুর্তে আবেগটুকু, চাওয়াটুকু বদলে যেতে পারে ঈর্ষায়। এরকম দম্পতি প্রচুর আছে, বোঝাপড়া খুব ভাল, একজন অপরজনকে ভালও বাসে অনেক, কিন্তু তাদেরই কোন এক বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বা সহকর্মীর সাথে হৃদ্যতাটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়। সব ঠিকঠাক, কেবল ঐ বন্ধুটির সাথে মিশলেই স্ফুলিঙ্গের মত ভেতরে জ্বলে ওঠে কী যেন। এই ঈর্ষা বুঝিয়ে বলাও যায়না। ব্যাখ্যা করা যায়না, ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিটি হয়ত ‘আমি তোমাকে খুব ভালবাসি’ এই যুক্তিতে সাফাই গাইতে চাইবে, কিন্তু অপরজন এটিকে দেখবে হীনমন্যতা, বিশ্বাসের অভাব – এভাবেই। এখানে অন্যান্যবারের মত উভয়পক্ষ নিজেকে খোলাখুলি ব্যক্ত করলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা। এবং অবধারিতভাবে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাচ্ছে।

আমি সবসময়েই কোন সমস্যা দেখলে তা সমাধান করার আগে উৎসটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয়েছে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে স্বামী আর স্ত্রীর সীমানাটা যদি ভিন্ন হয়, তখন এই সমস্যার সূত্রপাত হয়। ধরুন আপনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি/বুয়েটে পড়েছেন, সহপাঠীর সাথে এক রিকশায় ওঠা আপনার জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার। আপনার স্বামী/স্ত্রী হয়ত এ ব্যাপারটায় অভ্যস্ত না, তার কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে। মানসিক টানাপোড়েনে বন্ধুর সাথে কথা বললেন অবলম্বন চাইতে, বন্ধুর স্বামী/স্ত্রী হয়ত ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিল না। আপনার স্ত্রী সোশ্যালাইজ করতে পছন্দ করে, আপনি ভালবাসেন নিজের মত থাকতে, আপনার পছন্দকে সম্মান জানিয়ে স্ত্রী যদি একাই সোশ্যালাইজ করতে শুরু করে, কিছুদিনের মধ্যে একটু ঈর্ষা, একটু সন্দেহ মনে চলে আসতেই পারে।
এজন্য এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কথা বলা খুবই জরুরি, সমস্যা শুরুর আগেই। সবচেয়ে ভাল হয় বিয়ের আগেই না হলে সম্পর্কের শুরুর দিকেই কথা বলে নিলে। এমনি এমনি কোন প্রসঙ্গ ছাড়া আলোচনা করা ত কঠিন, আপনি চাইলে বানিয়ে বানিয়ে আপনার কোন বন্ধুর উদাহরণ দিতে পারেন, ‘ওদের এমন হচ্ছে, তুমি কি মনে কর?’ তখন এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আসবে, হয়ত অপরজন বলবে, ‘বিয়ের পরে এত মেলামেশা কী?’ অথবা, ‘বিশ্বাস থাকলে এগুলো আবার কোন সমস্যা নাকি?’ – এভাবে আপনি জানতে পারবেন নারী পুরুষের স্বাচ্ছন্দ্যের ঠিক কোথায় আপনার অবস্থান আর কোথায় আপনার সঙ্গীর।

দ্বিতীয় যে কারণটা আমার মনে হয়েছে গুরূত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে ইনসিকিউরিটি। আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীর সর্বাবস্থায় আপনিই একমাত্র অবলম্বন আর থাকছেন না – এই বোধটা খুব ভয়ের। আমি ছাড়া আরও কারো সান্নিধ্য তার ভাল লাগতে পারে – এ ব্যাপারটা মানতে যেন খুব কষ্ট হয়। এ ধরণের ঈর্ষা শুধু বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের মধ্যেই সীমিত থাকে না, টেলিভিশন, বই, পোষা প্রাণী, এমনকি নিজের সন্তানদের প্রতিও ঈর্ষা আসতে পারে। এই ঈর্ষাটা মূলতঃ ওখান থেকে আসে, যেখানে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন আপনার জন্য বরাদ্দকৃত সময়টুকু অন্য কেউ/ কিছু নিয়ে যাচ্ছে।

এ সমস্যা প্রতিরোধের উপায় কী? প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে ইনসিকিউরিটি বোধটা দূর করতে। ছোটখাট সারপ্রাইজ, উপহার, তার পছন্দের কোন কাজ (যা আপনি আগে কোনদিন করেন নি) – এসব তার কাছে এই মেসেজটা পৌছাবে যে আপনি তার ছোটখাট সব ভাললাগার দিকেই লক্ষ্য রাখেন। ঈর্ষার উৎস যদি হয় কোন অভ্যাস, বা কোন বন্ধু, সচেতনভাবে তার সামনে কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন যে প্রায়োরিটি লিস্টে ওসব কখনোই তার উপরে না। যেমন টিভি দেখার সময় সে কোন কথা বললে টিভিটা বন্ধ করে তার দিকে ঘুরে কথাটা শুনুন। বই পড়ার বেলায় বই বন্ধ করে মুখ তুলে তাকান। কয়েকবার এমন করলে সে মেসেজ পেয়ে যাবে, এর পর থেকে আপনি নরম সুরে বললেই হবে, আমি একটু পরে করি? সহজ! আর যদি ঈর্ষাটা কোন মানুষের বিরূদ্ধে হয়, চেষ্টা করুন এমন কোন ঘটনা এড়িয়ে চলতে যেখানে আপনার স্বামী/স্ত্রী বনাম বন্ধু – এদের মধ্যে কোন একজনের প্রোগ্রাম বেছে নিতে হয়। একই ট্রিকস বাচ্চাদের জন্যেও প্রযোজ্য। বাচ্চারা ঠিকই বুঝে ফেলে বাবা মা তাদের চেয়ে টেলিভিশন কে বা অন্য কিছুকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কিনা। প্রতিশ্রুতি করে সেটা ভাঙলে কিছুতেই আপনার উপর শ্রদ্ধা বাড়বে না, এটা নিশ্চিত।

ঈর্ষার প্রথম কারণটা আমি মনে করি সমাধান করা বেশি কঠিন। যে রক্ষণশীল তার যেমন নিজের পক্ষে অনেক ভাল ভাল যুক্তি আছে, যে উদার, তারও আছে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই ন্যায্য বলে ধরে নেয়, অপরজন তখন একই সাথে অপমানিত ও অসহায় বোধ করে। এই বোধ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থাকা খুবই বিপদজনক।কারণ তখন স্বাভাবিক আবেগ ভালবাসার পথ রূদ্ধ হয়ে যায়।

ত কী করতে হবে? যে রক্ষণশীল, তাকেই সহনশীল হতে হবে। কারণ জোর জবরদস্তি করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা বোকামি। সম্ভব হলে সরাসরি বলতে পারেন, ‘এই কাজগুলো আমি সহজভাবে নিতে পারিনা। আমার মধ্যে প্রচণ্ড ঈর্ষা তৈরি হয়, যা আমি নিয়ন্ত্রণ এ রাখতে পারিনা।’ তখন অপরপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারে, ‘এটা তোমার সমস্যা, আমি কেন তার জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করব?’ আপনি তখন বুঝিয়ে বলতে পারেন যে ‘একটা পরিবার খুব রক্ষণশীল থেকে খুব উদার – যে কোন অবস্থানে থেকেই চলতে পারে। এটা আমার বা তোমার সমস্যা নয়, এটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের সমস্যা। আমি চেষ্টা করব তোমার মত করে চিন্তা করতে, কিন্তু তুমিও চেষ্টা কর এমন কোন সমস্যা যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে।’ এর পাশাপাশি আপনি যাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হন, তাকে নিয়ে আরো বেশি বেশি চিন্তা করে দেখুন, সে মানুষটার সব কিছুই কি খারাপ? নাকি একটু দু’টো কাজ আপনার ভাল লাগেনা। তখন আপনার সঙ্গীকে আরো পরিষ্কার করে বলতে পারবেন, ঠিক এই বিষয়গুলো তে আমার আপত্তি। কেন আপত্তি সেটাও চিন্তা ভাবনা করে নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি যদি এতখানি পরিশ্রম করেন, আপনার সঙ্গী বুঝতে পারবে যে আপনি সত্যিই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। তখন তার তরফ থেকেও আন্তরিকতা বাড়বে।

পরিশেষে, একটা চমৎকার দু’আ করুন দু’জনে মিলে, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে ভুল পথে আছে তাকে তুমি শুধরে দাও, আর যে সঠিক পথে আছে তাকে ধৈর্য ধরার শক্তি দাও।

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

রুদ্রের ছবি ঘর…

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি “প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। 
কয়েকটি লাইনে তাকে দেখার চেষ্টা …..
img20171012_004438
কারো কারো স্বপ্নের সিন্দুকে থাকে আজীবন তালা,
আর কেউ ফলবান বৃক্ষের মতোন
হয়ে ওঠে বিপুল সমৃদ্ধ–
img20171012_004739
তবু শেষমেশ একটি নীলাভ প্রজাপতির জন্যও
যে যার স্মৃতির ফ্রেমে কষ্টকে বাঁধিয়ে রাখে।
img20171010_233630
দুঃখ আর স্মৃতিরা খুব বেশি দীর্ঘজীবী হয়
জীবনের অধিকাংশ অনুর্বর ভূমিতে।
img20171012_004631
যে রাত ‘পাশাপশি বসিবার বনলতা সেন’
সে রাত আমার নয়, সে রাত অন্য কারো।
img20171012_005449
প্রতিদিন কিছু কিছু ইচ্ছা মরে যায়
অনিচ্ছাকৃত মরে যেতে হয়
অযত্নে মরে যায়।
img20171012_004601
প্রতিদিনই কিছু কিছু ইচ্ছারা
নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়
নির্বাসিত হয়।
img20171012_004532
ব্যর্থ প্রেমের মতো কিছু কিছু ইচ্ছা
স্মৃতির অসুখে ভোগে দীর্ঘদিন,
img20171012_005857
কিছু কিছু ইচ্ছা স্বইচ্ছায় হত্যা করি
ইচ্ছার হননে বিবর্ন হই বারবার
তবু হত্যা করতেই হয়।

 

আগন্তুক…

একটা ট্রেন মিস হয়ে গেলেও চান্স থাকে পরের ট্রেনটা পাবো,কিন্তু জীবনে এমনও সুযোগ আসে যা একবার মিস হয়ে গেলে আর কোন দিন দ্বিতীয়বার সুযোগ আসবে কি আসবেনা সেটা কেউ জানেনা।ন্যু ক্যাম্প থেকে আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত লা নুয়েভা মার্কুয়েসা রেস্তোরায় একাকী একটা টেবিলে বসে আছি।স্পেন,ইতালী থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান খাবারও পাওয়া যায় এই হোটেলে।ওসব জিবে জল আনা খাবারের কোনটার প্রতিই আমার মন নেই।এমনকি মন নেই চোখ ধাধানো ডেকোরেশান আর নানা দেশ থেকে আগত পযর্টকদের দিকেও।দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত সুন্দরী এলসার দিকেও তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।সুদুর বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা মনটা পড়ে আছে আধা কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ন্যু ক্যাম্পে।যে মনটা একই সাথে ব্যাথিত না পাওয়ার যন্ত্রনায়।বার বার মনে হয় যদি মনের সাথে সাথে পুরো মানুষটিকেই ন্যু ক্যাম্পের কোন একটা চেয়ারে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেতাম তবে ভাল হত।কিন্তু সে কপাল নিয়ে হয়তো আসিনি আমি।

বিষয়টি খোলাশা করে বলা দরকার।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছি ফুটবলের স্বর্গরাজ্য বার্সেলোনায়।লা নুয়েভা মার্কুয়েসার দক্ষিনের দেয়াল ঘেসে বসে থাকা অস্ট্রেলিয় সুন্দরী তরুনী এলসাও একই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে। সাত দিনের জন্য এসেছি এখানে।বার্সেলোনায় এসে ন্যু ক্যাম্পে খেলা না দেখে যাওয়া মানে অমূল্য কোহিনুর হাতে পেয়ে অবহেলায় ছুয়ে না দেখার মত।সম্মেলন গত কালই শেষ হয়েছে, হাতে আছে আজ এবং আগামী কাল।বাংলাদেশের আকাশ অতিক্রমের আগেই খোঁজ নিয়ে জেনেছি সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেরদিনই ভাগ্য ক্রমে ন্যু ক্যাম্পেই এল ক্লাসিকো আছে।মনে মনে পণ করেছিলাম সম্মেলন শেষ করে হাতে যে দুদিন সময় থাকবে তার একদিন ন্যু ক্যাম্পে এল ক্লাসিকো দেখে কাটাবো।কিন্তু সবার স্বপ্ন সত্যি হয়না।

ঢাকার ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা হোটেলে আলমারির কাঁচের ফাক দিয়ে নানা রকম মিষ্টি দেখার পরও সেসব যেমন পথ শিশুদের ভাগ্যে জোটেনা বরং স্বপ্নই থেকে যায়, ঠিক একই ভাবে আমার স্বপ্নও নিরবে খুন হয়।ক্রিড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রর কাছ থেকে অনেক বার শুনেছি ন্যু ক্যাম্পের টিকেট পাওয়া আর হাতে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়া একই কথা।সে সব কথা মাথায় রেখে বার্সেলোনার মাটিতে পা রেখে সম্মেলনে যোগ দেবার আগেই ন্যু ক্যাম্পের একটা টিকেট হাতে পাওয়ার জন্য বার কয়েক ঢু মেরেছি।অনলাইনেও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

কোন টিকেট নেই জানার পর মনটা বিষিয়ে উঠেছে।আহ কী শান্তি ঢাকাতে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালিন সময়েও দু একটা টিকেট পাওয়া যায়।কিছু না হোক ব্লাকেও টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এখানে? ভেবেছিলাম উন্নত দেশ হলে কি হবে, হয়তো দু একটা টিকেট এখানেও ব্লাকে পাওয়া যাবে।নাহ পাওয়া যায়নি এমনটি বলতে চাইছিনা।পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সেই টিকেটের যে দাম তা দিয়ে হয়তো ঢাকা থেকে বার্সেলোনা দুবার যাওয়া আসার প্লেন ভাড়া হয়ে যাবে।বাড়িয়ে বলছি হয়তো কিন্তু নিদেন পক্ষে সে টাকা দিয়ে অন্তত একটা পালসার মটর সাইকেল কেনাই যাবে বলে মনে হয়েছে।ওই পরিমান অর্থ আমার নেই।ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া আসার ভাড়াই কখনো ছিল কিনা সন্দেহ আছে, সেখানে অতগুলো টাকা আমি কোথায় পাবো।বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে এসেছি সম্মেলনে অংশ নিতে।সাথে খরচ বাবদ যা বাজেট ছিল তা থেকে হয়তো একটু কৃপণতা করতে পারলে ন্যু ক্যাম্পে এল ক্ল্যাসিকোটা দেখাই যেত। কিন্তু টিকেটের দুর্ভিক্ষ আমার ভাগ্যকে সুপ্রন্ন হতে দেয়নি।

বিয়ের আসর থেকে বর পক্ষ উঠে চলে গেলে কনের বাবার যে অবস্থা হয় আমার অবস্থা হয়েছে সেরকম।ন্যু ক্যাম্পের এতো কাছে এসেও খেলা দেখা হচ্ছেনা ভেবে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।আসলে যেখানে এক মাস আগে থেকেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায় সেখানে আমি খেলার মাত্র চার পাঁচদিন আগে টিকেটের আশা করে বরং বোকামীই করেছি বলে মন্তব্য করলেন এক স্প্যানিশ ভদ্রলোক।ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার স্বপ্নটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে বাকি জীবন।এতো কাছে এসে যে স্বপ্নটা ধরা দেয়নি সেটা বাকি জীবনে ধরা দেবে বলে মনে হয়না।মনের অবস্থা তখন এমন হয়েছে যেন মনে হচ্ছে প্রিয়জন ছেড়ে গেছে আমাকে।ফুটবল পাগল এই আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় এসেও ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে না বসতে পারাটা নিশ্চই তার থেকে কোন অংশেই কম বেদনার নয়।তখন আমার কাছে ন্যু ক্যাম্পই আমার প্রেমিকা।যে কাছে থেকেও অনেক দূরে।যার ছোয়া পাওয়ার আশা বুকে নিয়ে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর দেশ আমার সোনার বাংলার আকাশ পাড়ি দিয়ে সাত সমুদ্র তের নদীর এপারের এই দেশটিতে এসেছিলাম সে আমাকে ছুতে দেয়নি।ন্যু ক্যাম্প আমাকে বঞ্চিত করেছে ভালবাসা থেকে।

লা নুয়েভা মার্কুয়েসায় বসে আমার মনের মধ্যে শুধু ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার ব্যাথা বার বার মনকে উতলা করে তুলছে।টেবিলে রাখা প্রন স্যুপ থেকে সুবাশিত ধোয়া ওঠা থেমে গেছে সেই কখন তা বুঝতেই পারিনি।আমি যখন চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আর প্রেমিকা হারা প্রেমিকের মত হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে বসে আছি লা নুয়েভা মার্কুয়েসার টেবিলে একাকী তখন সামনের চেয়ারটা টানতে টানতে বসার অনুমতি চাইলেন এক বৃদ্ধ লোক।তার কথাতে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকে বসার অনুমতি দিলাম।দেখে মনে হতে পারে যেন আমি মাস্টার মশাই আর আমার সামনে বসতে চাওয়া লোকটা আমার ছাত্র এবং সে বসার অনুমতি চাইছে।এই দেশটা বড়ই সুন্দর।এখানকার মানুষের আতিথেয়তার কথা নাইবা বললাম কিন্তু এদের ভদ্রতা সত্যিই মুগ্ধকর।হোটলের চেয়ারগুলো সবার জন্যই সমান অথচ সেখানে বসার জন্যও এরা কী সুন্দর ভদ্রতা করে অনুমতি চাইছে অপর প্রান্তে বসে থাকা সুদুর বাংলাদেশ থেকে আসা ন্যু ক্যাম্পে যেতে না পারার দুঃখে জর্জরিত এক তরুনের কাছে।

তার কথাতেই বুঝলাম তিনি স্প্যানিশ।আমার প্রনস্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তিনি ইংরেজীতেই বললেন স্যুপতো ঠান্ডা হয়ে গেছে খাওনি কেন? তোমাকে বিষন্ন লাগছে কেন?তার কথাতে মনে পড়লো স্যুপের অর্ডার দেওয়ার পর সেই কখন স্যুপ দিয়ে গেছে তা খেয়ালই করিনি।

আমি স্যুপের চামচ নিয়ে খেতে যাবো তখন ভদ্রলোক খেতে নিষেধ করলেন।ওয়েটারকে ডাকলেন।স্প্যানিশে ওয়েটারকে কামারেরো বলা হয়।ওয়েটার এসেই তাকে সালাম দিল।ওদের কায়দায় এবং তিনি তখন ওয়েটারকে বললেন আমার স্যুপটা পাল্টে গরম স্যুপ পরিবেশণ করতে।ওয়েটার তার কথা মত সত্যি সত্যি মুহুর্তেই আমার স্যুপটা বদলে গরম স্যুপ দিয়ে গেল।আমি খেতে খেতে বৃদ্ধকে দেখতে লাগলাম।তিনি সম্ভবত প্রভাবশালী কেউ নয়তো এই রেস্তোরার নিয়মিত কাষ্টমার। তা না হলে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অধিকাংশ ওয়েটারই তাকে সম্মান দেখাতো না।এসবের পরও আমার মনটা ঠিকই পড়ে ছিল ন্যু ক্যাম্পে।মাত্র ঘন্টা খানেক পরই খেলা শুরু হবে।ন্যু ক্যাম্পের আকাশের নিচেয় থেকেও সেখানে যাওয়া হচ্ছেনা আমার এর থেকে বড় ব্যথার আর কি থাকতে পারে।এসব ভাবছি আর আনমনে স্যুপের চামচে চুমুক দিচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তিনি সম্ভবত বেশ খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। চোখে চোখ পড়তেই সেটা সরিয়ে না নিয়ে জানতে চাইলেন আমি কি কোন বিষয়ে খুব চিন্তিত কিনা।

মনে মনে ভাবলাম ন্যু ক্যাম্পে খেলা দেখার স্বপ্ন মরে গেছে এটা তাকে জানাই আবার মনে হলো তাকে জানিয়ে লাভ কি? তাতে বরং দুঃখটা আরো বাড়বে বই কমবেনা।দুঃখের সময় কেউ যখন শান্তনা দেয় তখন বরং দুঃখ কমে না গিয়ে আরো বেড়ে যায়।আমি কিছু বলছিনা দেখে তিনি আবারও জানতে চাইলেন। পরে ভাবলাম এতো করে যখন বলছে তাকে বলাই যেতে পারে।আমি বিষয়টা জানালাম।তিনি তেমন কিছু বললেন না।আপন মনে ধোয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিলেন।মনে মনে রাগ হলো।এই দেশের মানুষ দেখছি বেশ কৃপন।

বিনা পয়সায় একটু সহানুভুতি দেখাবে,টিকেট পাইনি বলে যে কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য একটু শান্তনা দেবে তার কোন নাম গন্ধ নেই?আমাদের দেশ হলে কেউ কি এরকম করতো?চারদিকে যতজনকে দেখা যেত সবাই শান্তনা দিত।বলতো এবার পাওনি তো কি হয়েছে পরে নিশ্চই পাবা।সুযোগতো বলে কয়ে আসেনা। দেখবা হুটকরে একদিন সুযোগ চলে এসেছে।আর এই স্পেনের এই বুড়ো মানুষটা মুখে টু শব্দটিও করলো না?মনে মনে ভাবলাম লোকটার সাথে আর কোন কথাই বলবো না। আমি আপন মনে স্যুপ খেতে লাগলাম।একটিবার শুধু তার দিকে তাকালাম।সে আগেই কফি শেষ করেছে।কি কারণে যেন কফি শেষ হওয়ার পরও তিনি টেবিল ছেড়ে চলে না গিয়ে বসে থাকলেন।

আমি স্যুপ খাওয়া শেষ করে টেবিল ছেড়ে উঠলাম।আশ্চর্য আমার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটাও উঠলেন।আমি কাউন্টারে গিয়ে বিল পরিশোধের জন্য মানিব্যাগ বের করতেই কাউন্টার থেকে ইংরেজীতে জানানো হলো বিল দিতে হবেনা।কেন দিতে হবেনা জানতে চাইলে তিনি পাশের বৃদ্ধকে দেখিয়ে বললেন আপনি ওনার অতিথি তাই আপনার থেকে কোন বিল নেওয়া হবেনা।আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।একটু আগেই সমবেদনা কিংবা শান্তনা দেয়নি বলে মনে মনে যাকে আমি কৃপণ বলেছি সে আমার স্যুপের বিল দিয়ে দিচ্ছে।তখন তার প্রতি আমার মুগ্ধতার সীমা নেই।তিনি আমাকে নিয়ে লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে এলেন।

ঠিক তখন খেয়াল হলো আমাকে যেমন তিনি বিল দিতে দেন নি তেমন তিনি নিজেওতো কোন বিল দিলেন না।তিনিকি সেটা ভুলে গেছেন?আর ভুলে গেলেওতো রেস্তোরার ম্যানেজার ভুলে যাবার কথা নয়।তখন মনে পড়লো সব ওয়েটার তাকে যে সম্মান দেখাচ্ছিল তার রহস্য হতে পারে তিনিই লা নুয়েভা মার্কুয়েসার মালিক।বার্সেলোনার সব থেকে সুন্দর হোটেলের একটি হলো এটি আর সেটির মালিক নিজের অতিথি হিসেবে আমাকে স্যুপ খাইয়েছেন ভাবতেই আনন্দে প্রায় আত্মহারা হয়ে উঠলাম।

জানার লোভ সামলাতে না পেরে আমি বলেই ফেললাম যে আপনিতো রেস্তোরার বিল দিতে ভুলে গিয়েছেন।তিনি তখন বললেন না ভুলিনি আসলে ওরা খাতায় লিখে রাখবে। মাস শেষে বিল নিয়ে নেবে।আমি একটা আগ বাড়িয়ে বললাম যে আমার মনে হচ্ছিল আপনিই এই জনপ্রিয় রেস্তোরাটির মালিক। বৃদ্ধ তখন আমার অনুমানকে নাকোচ করে দিয়ে জানালেন যে তিনি ওই রেস্তোরার মালিক নন বরং নিয়মিত কাস্টমারদের একজন।তখন মনে হলো তার কথাটাই যুক্তিযুক্ত এবং যেহেতু নিয়মিত কাষ্টমার তাই সব ওয়েটারই তাকে চেনে এবং সম্মান করে।লা নুয়েভা মার্কুয়েসা থেকে বেরিয়ে আমি আমার হোটেল ক্যাটালোনিয়া অ্যাটিনাসে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই হোটেলেই আমি উঠেছি। যেহেতু ন্যু ক্যাম্পে যাওয়া হলোনা সেহেতু হোটেলে ফিরে যাওয়াই সমুচিত হবে বলে মনে করলাম।বৃদ্ধকে বিদায় জানিয়ে হোটেলে ফিরবো বলতেই তিনি বললেন তার সাথে যেতে,তাকে একটু সময় দিতে।

কেন তাকে সময় দিতে হবে কিংবা কোথায় সময় দিতে হবে তা জানার দরকার হলোনা।অপরিচিত একটা তরুণকে যিনি নিজের টাকায় স্যুপ খাওয়াতে পারেন এবং যিনি বয়সে বাবার সমান কিংবা তার চেয়ে বড় তাকে একটু সময় দিলে আমারতো কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া হোটেলে ফিরে গিয়েওতো অলস বসে থাকতে হবে। আবার মনে হলো এই বিদেশ বিভূইয়ে অপরিচিত লোকটাকে সময় দেওয়াকি ঠিক হবে?হোক সে যতই বৃদ্ধ কিংবা যতই সে আমাকে স্যুপ খাওয়াক।কি মনে করে তার গাড়িতে উঠে বসলাম।একটা বক্সস্টার এস ৭১৮ মডেলের পোর্শে কার দেখেই মনে হলো লোকটা বেশ টাকাওয়ালা।আমার মত এক শুটকো তরুনকে কিডন্যাপ করেও তার কোন লাভ নেই।সুতরাং বিনা দ্বিধায় গাড়িতে উঠে বসলাম।তিনিই ড্রাইভ করছেন আর আমি পাশে বসে আছি।এই ধরনের গাড়ি আমি শুধু হলিউডের সিনেমাতেই দেখেছি।ঢাকাতে এসব গাড়ি কল্পনাও করা যায়না।

দশমিনিটের ব্যবধানে গাড়িটা থেমে গেল।তিনি আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে নিজেও নামলেন।আমি গাড়ি থেকে নেমেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।গাড়ি থেমেছে ন্যু ক্যাম্পের সামনে।তিনিকি তবে আমার কাটা ঘায়ে আরো একটু নুনের ছিটা লাগানোর জন্য সোজা ন্যু ক্যাম্পেই নিয়ে আসলেন।পরক্ষণেই হোটেলের কথা মনে করে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে নিলাম।দেখিইনা বৃদ্ধ স্প্যানিশ কি করেন। গাড়িটা পার্ক করে আমাকে নিয়ে ন্যু ক্যাম্পের গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন।অন্যরা যখন লাইন ধরে এগোচ্ছিল ভদ্রলোক তখন লাইন ছাড়াই এগিয়ে গেলেন।গার্ড এবং সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ তার সাথে হ্যান্ডশেক করলো।আমি এই বৃদ্ধ কে এবং তার ক্ষমতা আসলে কতটুকু তা বুঝতে চেষ্টা করে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম।একবার মনে হলো তিনি সম্ভবত ন্যু ক্যাম্পের বড় কোন কর্মকর্তা আবার মনে হলো সম্ভবত স্পেনের সব থেকে ধনীদের একজন তিনি তাই সবাই তাকে ওরকম সমীহ করছেন।তিনি হাটতে হাটতে বললেন আমার কাছে দুটো টিকেট আছে আজকের এল ক্ল্যাসিকোর।সাথে আমার ওয়াইফ আসার কথা ছিল কিন্তু সে অন্য একটা কাজে আটকে পড়ায় আমি একাই আসলাম।হোটেলে যখন তোমার খেলা দেখার ইচ্ছের কথা জানতে পারলাম তখন ভাবলাম তোমাকেই সাথে নিই।আমি অবাক হয়ে বললাম আপনিতো চাইলে এই টিকেটটা পাঁচশো ইউরোতেও বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে আমাকে ফ্রি নিচ্ছেন কেন?

আমার কথা শুনে বৃদ্ধ একটু হাসলেন। তার পর বললেন তোমার ফুটবলের প্রতি যে ভালবাসা দেখেছি তাতে তোমাকে দেওয়াই শ্রেয় মনে হয়েছে। আর তা ছাড়া টিকেটতো আমার কেনা লাগেনি। ফ্রি পেয়েছি।তবে হ্যা সাধারণ ভাবে এই টিকেটের দাম কিন্তু ৫০০ ইউরো না! আমি জানতে চাইলাম তাহলে এটার দাম কত? তিনি আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে দিয়ে জানালেন এই টিকেটের দাম ৪ হাজার ডলার। আর ব্লাকে বিক্রি করলে এটা সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার ডলারে বিক্রি হবে।

সামান্য সময়ের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জন্য এতো ডলারের টিকেট ফ্রিতে দিতে পারে তা কল্পনায়ও সম্ভব না আর আমি বাস্তবে দেখছি। তবে মনে হলো তিনি যেহেতু ফ্রি পেয়েছেন তাই অন্য কাউকে সেটা দিয়ে দিতেও ওনার গায়ে লাগছেনা। তবে চিন্তা একটা থেকেই গেল। কে এই ভদ্রলোক যে তাকে এরকম দুটো ভিআইপি টিকেট ফ্রিতে দিয়েছে। আবারও মনে হলো তিনি নিশ্চই প্রভাবশালী কেউ নয়তো স্পেনের সেরা ধনীদের একজন। এর মাঝেই বেশ কয়েকজন এসে তার সাথে দেখা করে গেল। স্প্যানিশে কি সব বললো তার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি।

খেলা দেখলাম খুব আয়েশ করে। ন্যু ক্যাম্পের কথা উৎপল শুভ্রর মুখে যেরকম শুনেছি ঠিক তাই। অনেক উচুতে বসে যারা খেলা দেখছে আমি নিশ্চিত তারা কার পায়ে বল কিংবা কে কোথায় দৌড়াচ্ছে তা বুঝতে পারছেনা। অত উচু থেকে দেখতে পাওয়ার কথাও নয়। জায়ান্ট স্ক্রিন থাকায় কেউ কেউ সেটা দেখে খেলোয়াড় চিনছে নতুবা কেউ কেউ সাথে করে দুবীর্ন নিয়ে এসেছে। আমরা ভিআইপি টিকেটধারী হওয়ায় জায়ান্ট স্ক্রিন কিংবা দুবীর্ন কোনটারই দরকার পড়েনি। খেলার উত্তেজনায় আমি তখন কম্পমান। যেন মেসি রোনালদো নয় আমি নিজেই খেলছি। বৃদ্ধ লোকটাও মাঝে মাঝে উত্তেজিত হচ্ছেন এবং আশ্চর্য ভাবে তিনিও আমার মতই বার্সেলোনার সমর্থক। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় খেলা ড্র হলো। বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতেই বৃদ্ধ আমাকে থামালেন।তিনি বললেন আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে।বৃদ্ধর ছেলে আসবেন তার সাথে দেখা করে তার পর ন্যু ক্যাম্প ত্যাগ করবেন।আমি বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে নিলাম। যার কল্যাণে আমার আজীবনের অধরা স্বপ্ন সত্যি হলো এই ন্যু ক্যাম্পে বসে এল ক্ল্যাসিকো দেখলাম তার জন্য একটু কেন এক বছরও অপেক্ষা করা যায়।

কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধর ছেলে আসলেন। বৃদ্ধ পরিচয় করিয়ে দিলেন এটা আমার ছেলে। আমার মুখে তখন কোন কথা নেই। আকাশের ওপরে আকাশ তারও ওপরে আরেকটা আকাশ যেন আমার মাথার উপর এক সাথে ভেঙ্গে পড়েছে।বৃদ্ধ তার যে ছেলেকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাকে যে আমি আগে থেকেই চিনি। আমার সামনে দাড়ানো বৃদ্ধর সেই ছেলেটির নাম জর্ডি আলবা। বার্সেলোনা ফুটবল দলের বিখ্যাত খেলোয়াড় তিনি।
img20171011_183238

জাজাফী
ওয়েবসাইটঃ www.zazafee.com
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

 

বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

img20171011_101743
বিশ্ব প্রবীণ দিবস চলে গেল। বাংলা ট্রিবিউনে ওল্ডহোমের উপর একটি ফিচার পড়ে মনটা ব্যাথায় ভরে উঠলো।
পাঁচ সন্তানের পাঁচজনই আমেরিকা,
কানাডা,অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন টাকার অভাব নেই কিন্তু ঠাই হয়নি মায়ের। আশ্রয় নিয়েছেন ওল্ড হোমে। বাদ পড়েনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের জ্ঞানী অধ্যাপক। সমাজের উচ্চশ্রেনীর অনেকের বাবা মা আজ আশ্রয় নিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে ওল্ডহোম।

আক্ষেপ করে এক মা বললেন “প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করবে না”। ওরাও নিশ্চই একদিন এখানেই আসবে। এটা শুনে মনে পড়লো নচিকেতার গাওয়া বৃদ্ধাশ্রম গানটির কথা।যেখানে মা অপেক্ষায় আছেন আরো কটাদিন বেঁচে থাকার যেন তার সন্তানও বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিবেন সেই দৃশ্যটি তিনি দেখে যেতে পারেন।ওল্ডহোম বিষয়টি প্রতিটি সন্তানের জন্য কলংঙ্ক।

ছোটবেলায় আমরা যখন অসহায় ছিলাম তখন বাবা মাই ছিলেন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঠিক তেমনি বাবা মায়ের বয়স হলে ছেলে মেয়েরাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হওয়ার কথা কিন্তু আমরা অমানুষ হয়ে গেছি। বাবা মাকে বোঝা মনে করে ফেলে রেখে আসছি ওল্ড হোমে।

আমি তখন খুব ছোট। বাবা পুকুরে সাতার কেটে গোসল করতেন। আমি বলতাম বাবা আমিও পুকুরে নামবো। বাবা পুকুর থেকে উঠে এসে আমাকে তুলে ধরতেন তার পর ছুড়ে মারতেন পুকুরের পানিতে! আমি প্রায় ডুবেই যেতাম। অনেক পানি খেতাম। বাবা তখন আমাকে তুলে নিতেন। এভাবে অনেক বার বাবা আমাকে মাঝ পুকুরে ছুড়ে মেরেছেন। আমি অবিরাম পানি খেয়েছি আর ডুবতে ডুবতে বাবা আমাকে টেনে তুলেছেন। আমার মনে হত বাবা আমাকে ভালবাসলে নিশ্চই ওভাবে ছুড়ে ফেলতেন না।

ভাইয়ার একটা সাইকেল ছিল। আমি চাইতাম সেই সাইকেল চালানো শিখবো। বাবাকে অনেকবার বলার পর বাবা আমাকে সাইকেলে চড়তে দিলেন। নিজে পিছনে ধরে রাখলেন।আমি খুব বিশ্বাস করে সাইকেলে উঠে বসলাম। প্যাডেল করলাম আস্তে আস্তে। বাবা তখন হুট করে সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি কিছুদুর গিয়ে পড়ে গেলাম। হাটু ছুলে গেল। এভাবে বাবা আমাকে অনেক বার সাইকেলে চড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিশ্চই আমাকে ওভাবে সাইকেলে বসিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিতেন না।

আমি জুতার ফিতা বাঁধতে পারতাম না। বাবাকে বলার পরও বাবা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিত না। অথচ আমার অন্য বন্ধুদের বাবা তাদের জুতার ফিতা বেঁধে দিত। বাবা আমার পাশে বসে বার বার বলতেন এভাবে বাঁধো ওভাবে বাঁধো কিন্তু নিজে বেঁধে দিতেন না। আমি ভাবতাম বাবা যদি আমাকে ভালবাসতেন তবে নিশ্চই ছোট বেলা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দিতেন।

বাবার চা খাওয়ার খুব নেশা ছিল।নিজে একা একা চা বানিয়ে খেতেন।আমি যখন বলতাম বাবা আমাকেও এক কাপ দাওনা প্লিজ। বাবা কিচেন দেখিয়ে দিতেন। বলে দিতেন কি কি করতে হবে। নিজের বানানো এককাপ চা খাওয়ার পরও বলতেন আমার জন্যও এক কাপ বানাসতো। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিজে যখন চা বানিয়েছিল আমার জন্যও এক কাপ বানাতো।

বাবা খুব গাছে চড়তে পারতো।আমারও খুব লোভ হত। বাবাকে বলতেই বাবা আমাকে কাঁধে করে নারকেল গাছের বেশ উপরে নিয়ে যেত। তার পর বলতো গাছ জড়িয়ে ধরতে। আমি যখনি জড়িয়ে ধরতাম বাবা আমাকে ফেলে রেখে তরতর করে নিচে নেমে যেত। আমার কান্না পেতো। আমি তখন আস্তে আস্তে হেচড়েপেচড়ে নিচে নামতাম আর আমার বুকটা ছুলে যেত। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে ওরকমটি করতে পারতো না।

এক প্যারেন্টস ডেতে বাবাকে নিয়ে বলতে বলা হয়েছিল আমাকে। আমি তখন এসব কথা বলেছিলাম। এ গুলোই ছিল বাবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। পরদিন বাংলা মিস ক্লাসে এসে বললেন আজ আর আমি পড়াবোনা। তোমাদের সাথে গল্প করবো।তোমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করবো তোমরা যারা উত্তর জানো তারা হাত উচু করবা আর না জানলে চুপ থাকবা। তিনি প্রশ্ন করলেন তোমাদের মধ্যে কে কে সাতার কাটতে পারো? আমি সাথে সাথে হাত উচু করলাম। মিস আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আর কেউ হাত উচু করেনি।তার মানে তারা কেউ সাতার কাটতে পারেনা। এর পর মিস একে একে প্রশ্ন করলেন কে কে সাইকেল চালাতে পারো, কে কে গাছে চড়তে পারো, কে কে নিজে নিজে জুতার ফিতা বাঁধতে পারো ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখা গেল আমি ছাড়া আর কেউ হাত উচু করছেনা।

মিস আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে কাঁধে হাত রেখে বললেন তুমি কি বুঝতে পারছো কিছু? আমি বুঝতে পারলাম।আমার অগচরে বাবা আমাকে সব শিখিয়েছেন।আমার চোখেও তখন পানি চলে এসেছিল।সেদিন বাড়িতে গিয়ে দেখি আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কেঁদেছিলাম। বলেছিলাম বাবা তুমিই পৃথিবীর সেরা ।

হয়তো কারো কারো বাবা তাকে মাসে দু মাসে আগ্রার তাজমহল,মিশরের পিরামিড কিংবা নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে যায়।হয়তো কারো কারো বাবা তাকে আইফোন সিক্স থেকে শুরু করে অন্য সব না চাইতেই দেয়।আবার কারো কারো বাবা হয়তো সন্তানকে কিছুই দিতে পারেনা।এমনকি দুবেলা পেটভরে খাবারও দিতে পারেনা।কিন্তু বাবাদের ভালবাসার কোন কমতি নেই।যে বাবা সন্তানকে আলিশান বাড়ি দিচ্ছেন ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন প্যারিসে,ভেনিসে ট্রয় নগরিতে সেই বাবা তার সন্তানকে যেমন ভালবাসেন বাসতে চান ঠিক তেমনি ভাবে যে বাবা মা তার সন্তানের মুখে পেট পুরে খাওয়ার মত খাবারটুকুও তুলে দিতে পারছেন না তারাও তাদের সন্তানকে একই রকম ভালবাসেন।শুধু ভাগ্যের দরুন বাকিদের মত দেখাতে পারেন না।

বাবারা আসলে সন্তানের কাছে তেমন কিছু চায়না।যদিও সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল তারা যেমন আমাদের অসহায় কালে আমাদের আগলে রেখেছিলেন তেমনি তাদের অসহায় কালে আমরাও তাদের যেন আগলে রাখি।এবার একটা গল্প বলি শুনুন, এক বৃদ্ধ লোক একটা মোবাইল মেকানিকের কাছে তার মোবাইলটা দিয়ে বললেন দেখতো বাবা আমার মোবাইলটার কি সমস্যা।কল আসেনা। মোবাইল মেকানিক ভাল করে দেখে বললেন চাচা আপনার মোবাইলেরতো কোন সমস্যা নেই। বৃদ্ধা তখন মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে বললেন মোবাইল যদি ঠিকই থাকবে তবে এই মোবাইলে আমার ছেলে মেয়েদের ফোন আসে না কেন?বৃদ্ধর চোখে তখন অবিরাম অশ্রুধারা।

তার সন্তানেরা তাকে ছেড়ে গেছে ওল্ড হোমে। তাদের কারো কারো আছে আলিশান বাড়ি ঠিক যেমনটি আমরা এবারের প্রবীণ দিবসে বাংলাট্রিবিউনের করা ফিচারে দেখতে পেলাম। মায়ের একধার দুধের দাম শরীরের চামড়া কেটে জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হয়না বলে আমরা শুনেছি। অন্ধকারে ভয় পেয়ে যে মাকে জড়িয়ে ধরতাম সেই মাকে কি করে আমরা ওল্ডহোমে ফেলে যাই জানা নেই। একটিবারও কি কখনো আমরা ভেবে দেখেছি আমাদের সেই সব দিনের কথা।

যে বাবার গলাজড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসতো না।যে মা হাতে তুলে খাইয়ে না দিলে খাওয়া হত না।যে মায়ের আঁচলের তলে ছিল আমাদের সব থেকে নিরাপদ ভূবন সেই মা বাবাকে কি করে সন্তান হয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি তা ভাবতেই মনে হচ্ছে ধরণী দ্বিধা হও।নিজের স্ত্রী সন্তান যদি বাড়িতে থাকার যায়গা পায়,দু বেলা দু মুঠো ভাত পায় তবে জন্মদাতা পিতা মাতা কেন পাবেনা?

ইউরোপ আমেরিকার কথা বাদ দিতে চাই।আমাদের দেশে আইন করা উচিত কেউ যদি বাবা মাকে ওল্ডহোমে রেখে আসে তবে তাদের জেল জরিমানা করা হবে। এতো নীতি বাক্য বলে লিখে ভাষণ দিয়ে যখন ওই সব সন্তানদের মনে বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব বুঝানো যায়নি তখন আইন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।লোকে যেমন বলে সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠেনা অনেকটা সেরকম।অন্তত তার পরও বাবা মা নিজের সন্তান পরিবারের সাথে থাকুক আমি এমনটিই চাই।পৃথিবীতে কোন মা বাবাকে যেন উহ শব্দটিও করতে না হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। আজ থেকে পণ করি নিজে খেয়ে না খেয়ে হলেও বাবা মাকে দেখে রাখবো ভালবাসবো। পৃথিবীর সব দুঃখী বাবা মার কাছে সেই সব অপরাধী সন্তানের হয়ে ক্ষমা চাই।
img20171011_101840
———–
বাবা মায়ের দুঃখ গুলি

জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০
০১ অক্টোবর ২০১৭
দৈনিক ইত্তেফাকে ৩ অক্টোবর ২০১৭ প্রকাশিত

 

দাম্পত্য – ৬

পরিবারে একজন পুরুষের সবচেয়ে প্রিয় দুইটি নারী – মা আর স্ত্রীর মধ্যকার বিবাদের অনেকটাই চলে ভালবাসার দাবি তে। নতুন দম্পতিরা সত্যিই বুঝতে পারেন না, একে অপরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে তারা আর সবার থেকে কতটা আলাদা হয়ে গেছেন। একটা ফ্রেন্ড সার্কেলে দুজন জুটি বেঁধে গেলে অন্যদের কেমন হিংসে হয় এটা একটু কল্পনা করলে বুঝতে পারবেন
‘কাছের মানুষটা পর হয়ে গেছে’ – এই উপলব্ধি পরিবারের অন্যদের কতটা কষ্ট দেয়।
img20171010_233209
মানি, নতুন দম্পতির পরস্পরকে জানা ও চেনা প্রয়োজন। কিন্তু তা কি আর সব কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে তারপর?
img20171010_233519
দুটো গাছ একজন আরেকজনের উপর ভর করে বেড়ে উঠবে। তার জন্য কি শেকড়গুলি সব উপড়ে তবেই এক হতে হবে? লতাগুলো হয়ত পরস্পরের বাহুডোরে থেকে কিছুই টের পাবেনা। কিন্তু মাটির কান্না? মাটি সে শূন্যতা ভরবে কী দিয়ে?

তিল তিল করে বুক চিরে যে আদরের ফসল এত বড় হয়েছে, তার উপস্থিতি ছাড়া মাটির ত আর কিছুই নেই! সে বাঁচবে কী নিয়ে?
img20171010_232901
আমরা সহজে বলি, বাবা মায়েরা আমাদের যথেষ্ট ‘স্পেস’ দেয়না। সত্যি কথা কী, স্পেস দেয়ার জন্য মায়ার বাঁধন একটা একটা করে ছিঁড়ে রিক্ত শূন্য হয়ে, তবেই স্পেস তৈরি করা যায়। স্পেস মানে ত খালি জায়গা, তাই না? যে জায়গাটা বাবা মা মনোযোগ দিয়ে যত্ন দিয়ে ঘিরে রেখেছিল, স্পেস দেয়ার জন্য সেখান থেকে তাদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে, তাই ত?
img20171010_233238
গাছের উপমায় আবারো ফিরে আসি। শেকড় আর লতানো বাহু – দুটোর টানই তীব্র। দুটোর জন্যই তার আকর্ষণ অসীম। মমতাময়ী মা যেভাবে খাবার জন্য পীড়াপীড়ি করত, অসুখ হলে অস্থির হত – ওই আনন্দগুলি ত অন্যরকম! অমনি করে ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছে ত কোনদিন মরে না।
img20171010_233259
আর স্ত্রী? তার জন্য একটা পুরুষ জীবন দিতে পারে। তার যা আছে সবকিছু বিনিয়োগ করতে পারে।

ভুল হয়ে যায় তখনই, যখন ভালবাসায় অবুঝ হয়ে এই মানুষগুলো তাদের আপন আপন গন্ডি ছেড়ে আরও অনেকটা দখল করে নিতে চায়। তাই পুরুষটিকে হতে হবে খুবই সচেতন। মা যেন কখনও না ভাবে ছেলেটা বদলে গেছে। আগের মত করে সময় দিতে না পারলেও আদুরে গলায় ‘মা তোমার ঐ রান্নাটা অনেকদিন খাইনা’, বা ‘মা আমার মাথায় একটু হাত রাখ’ – এ ধরণের কথা বলে ছোট ছেলেটা হয়ে গেলে মায়ের অনেক দুঃখ দূর হয়ে যাবে।
img20171010_233147
মায়ের বয়স হয়েছে, তিনি চান বউ সংসারের দায়িত্ব নিক, কিন্তু এত যত্নে গড়ে তোলা সিস্টেম একটা আনাড়ি মেয়ের হাতে তুলে দেয়ার আগে তিনি চাইবেন মেয়েটাকে তার সিস্টেমে অভ্যস্ত করিয়ে নিতে। কিন্তু সুপারভাইজিং, ট্রেনিং বেশ কঠিন কাজ। অনেক ধৈর্য আর সহনশীলতা দরকার হয়। বিভিন্ন কারণে গুরুজনেরা এই বয়সে অনেক সময় বুঝতেও পারেন না কোন কথাটায় কতটুকু কষ্ট পেতে পারে ছেলেমেয়েরা।
img20171010_233107
এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সেনসিটিভিটি এর মাত্রা বদলায়। যুক্তি দিয়ে সরাসরি ভুল ধরাটা আমাদের প্রজন্মে কমন, উনারা হয়ত খুবই আহত হন। আবার স্বভাব চরিত্র নিয়ে একটু খোঁচা মেরে কথা বলাটা উনাদের কাছে হয়ত নিছক রসিকতা, আমরা ভীষণ অফেন্ডেড হই।

যাই হোক, নতুন বউয়ের এ ধরণের আচরণে কষ্ট লাগবে। স্বভাবতই সে সবার আগে স্বামীকে খুলে বলবে।
img20171010_233011
স্বামীর দায়িত্ব এখানে রিঅ্যাক্ট না করে পুরোটা শোনা, মা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে অকপটে স্বীকার করা, তারপর মায়ের দোষগুলোর পিছনে ওনার ভাল নিয়ত টুকু দেখানোর চেষ্টা করা, বা বুঝিয়ে বলা যে এটা জেনারেশন গ্যাপ ইত্যাদি। এতে দুটো সুবিধা আছে। স্ত্রী বুঝবে এটা একটা সমস্যা, আর তা সমাধান করার জন্য সে একা নয়, আরেকটি সহানুভূতিশীল মন তার পাশে আছে।

মায়ের দোষ ছেলে স্বীকার করলে স্ত্রী তখন ব্যাপারটাকে একটা সমস্যা হিসেবেই দেখবে, অন্যায় হিসেবে না। এতে করে সমস্যার সমাধান না হোক, সমস্যাটা আপনাদের মধ্যকার বন্ধন আরো দৃঢ় করতেই সাহায্য করবে।

আবার এদিকে মা খুবই কষ্ট পাবেন যদি ছেলে এসে তার দোষ ধরিয়ে দেয় বা বউয়ের দোহাই দেয়। আগে থেকে বাবা মা সমালোচনা গ্রহণ করতে অভ্যস্ত না হলে বিয়ের পরে সে চেষ্টা করতে যাবেন না। বরং এভাবে শুরু করতে পারেন, ‘কী মা, তোমার বউ নাকি এটা এটা করেছে!’
img20171010_233715
মায়ের প্রতি আপনার আবেগ যেন প্রকাশ পায়, বউয়ের নাম ধরে না বলে ‘তোমার বউ’ বলার মাধ্যমে তাদের দুজনের সম্পর্কের উপর জোর দিন (নিজেকে আড়াল করে), এটা করেছে – বলার মাধ্যমে হালকা একটা দোষারোপের ভঙ্গি করুন। এতে করে মায়ের মনে ‘ছেলে আমার কথা শুনবে না’ এই ধরণের ডিফেন্সিভ ভাবটা থাকবেনা। উনি মন খুলে কথা বলতে পারবেন। আপনি আন্তরিকভাবে শুনলেই উনার মনটা অনেক শান্ত হয়ে যাবে। সমস্যা যদি ঘরের কাজ সংক্রান্ত হয় তাহলে কাজটা আপনি শুরু করুন, স্ত্রীকে আগে থেকেই রাজি করিয়ে রাখবেন যাতে সেও জয়েন করে।
img20171010_233546
বউ শাশুড়ি ঘটিত সমস্যা ত আর হাদীস এ নেই, কিন্তু তার সূত্রপাত যেখানে, ভালবাসা জনিত ঈর্ষা, তার উদাহরণ কিন্তু ঠিকই আছে। আয়িশা (রা) এর ঘরে মেহমানদের জন্য রাসুলুল্লাহ (স) এর অপর স্ত্রী খাবার পাঠিয়েছিলেন। আয়িশা (রা) রাগে খাবার সহ বাটি মাটিতে ফেলে দেন। কী অস্বস্তিকর অবস্থা! রাসুলুল্লাহ (স) করলেন কী, ‘তোমাদের মা ঈর্ষায় পড়েছেন’ বলে নিজেই ভাঙা টুকরাগুলো মাটি থেকে তুলতে লাগলেন। মেহমানদের সামনে অপমান করা হয়েছে মনে করে রাগ করলেন না, শাস্তি দিলেন না, মেহমানদের কাছে বললেন ‘তোমাদের মা’; আবার অপর স্ত্রীর বাটি ভেঙে তার উপর অন্যায় করা হয়েছে, এ জন্য আয়িশা (রা) এর ঘর থেকে একটা বাটি নিয়ে উনাকে ফেরত দিলেন।
img20171010_232834
কে ঠিক আর কে বেঠিক সে বিচার করতে যাবেন না ভুলেও। দুজনেই অবুঝ, দুজনেই আপনাকে খুব ভালবাসে, দুজনেই চায় আপনার ঘরটাকে সুখ দিয়ে ভরিয়ে তুলতে। আপনার কাজ শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা করা। শেকড় থেকে জীবনীশক্তি আর সঙ্গী গাছের থেকে দৃঢ়তা পেলে একটি গাছ ফুলে ফলে ছায়ায় কত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে চিন্তা করে দেখেছেন?

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

(১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হল “পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতার পথ।”
img20171010_075948
১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছরের মত ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। । কিছু দেশে এই দিনকে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসাবে পালন করা হয় । সেই ১৯৯২ সময় ১৫০টি দেশের সমন্বয়ে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেল্থ- এর উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

গত সাত বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় কি কি ছিল?
আসুন এক নজরে দেখে আসি…
img20171010_070808
২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য:
‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়বে,এই সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের মূল উদ্দেশ্য।
img20171010_070451
২০১৬ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’

বর্তমান বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ,বংশগতি ও অন্যান্য শরীরবৃত্তিক ও মনোসামাজিক মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম দুটি কারণ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।
img20171010_070054
২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য:
‘মানসিক স্বাস্থ্য মর্যাদাবোধ’

মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও মানুষ। তাদের সমাজে অন্যান্য ব্যক্তির মতো সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
img20171010_065721
২০১৪ সালের প্রতিপাদ্য:
‘সিজোফ্রেনিয়ার সাথে বসবাস’

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পায় না। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তরা যাতে সবচেয়ে ভালো সেবা এবং এই রোগ থেকে উত্তরণের সুযোগ পায়, সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
img20171010_065458
২০১৩ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ”

মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়োজ্যেষ্ঠ বা বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্মিলিত বিষয়গুল নিয়ে খোলা বা উন্মুক্ত আলোচনায় উত্সাহিত করা। এবং প্রয়োজনে সহায়তা এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরদার।
img20171010_065101
২০১২ সালের প্রতিপাদ্য:
“বিষণ্নতা: একটি বিশ্বব্যাপী সঙ্কট”

পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার প্রায় দ্বিগুণ। বিষণ্নতার কারণে ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা ব্যাহত হয়।
img20171010_064845
২০১১ সালের প্রতিপাদ্য:
“মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ”

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যদি বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এবং কার্যকরী ও সম্মানজনক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, তবে জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরিত হবে। ফলে তা মানব ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণকর হবে।
img20171010_064238
২০১০ সালের প্রতিপাদ্য:
“নগরায়ণ: জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ”

ঐতিহাসিকভাবে,শহর হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি ইঞ্জিন,সংস্কৃতি কেন্দ্র। কিন্তু যখন মানব সম্ভাব্যতা অসীম হয়, তখন সম্পদ সীমিত। নগরায়ণ সমস্যার সৃষ্টি করে, কিন্তু সমাধান করতে হলে এখনই ভাবতে হবে।
img20171010_080942
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয় প্রতি বছর।
রেফারেন্স: Wiki, WHO.

ফাতেমা শাহরিন

 

দাম্পত্য -৫

দম্পতি মানে কী? আভিধানিক অর্থে জায়া আর পতি।
img20171009_155336
সুখী দম্পতি মানে তাহলে একজোড়া সুখী চড়াই চড়ানি – সমীকরণটা যদি এত সহজ হত, তাহলে চারপাশে শুধু সুখেরই বন্যা বইত।
img20171009_155508
বিয়ের সাথে সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে চলে আসে শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয় স্বজন। বিয়ে হলে একটা ছেলেকে বা একটা মেয়েকে একই সাথে অনেকগুলো বন্ধন তৈরি করতে হয়। এদের একেকটার ডাইমেনশন একেক রকম। যেমন শ্বশুর শাশুড়ির চাহিদার সাথে শ্যালক সম্বন্ধীয় আত্মীয়ের চাহিদার মিল নেই।
img20171009_155137
একটা নতুন বউ বা নতুন জামাই, বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন হাসি খুশি, লাজুক একটা ভাব নিয়ে সম্পর্কের বাঁধনে জড়ায়, নানা ধরণের আত্মীয়ের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তা থেকে একটু সরে আসলেই অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়।
img20171009_154613
আজকের লেখাটা শুধু ছেলেদের উদ্দেশ্য করে লিখব। আমি জানি, বিয়ের আগে ছেলেরা খুবই ভয় পেয়ে যায় তার সবচেয়ে প্রিয় দু’জন মানুষ, মা আর স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে তাই নিয়ে। অনেক ছেলেই এই অশান্তির ভয়ে বিয়ে করতেও চায়না।
img20171009_155101
তারা বুঝেও উঠতে পারেনা কী এমন হয়ে গেল সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে, যে ঘরে পা দিয়েই মায়ের ছলছল চোখ, স্ত্রীর অগ্নিবর্ষণ (অথবা উল্টোটা) দেখতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম হয়ত আপনি আসাতে পরিস্থিতি বদলাবে, কিন্তু মনটাকে বদলাবে কে? মায়ের কাছে বউয়ের নামে অসন্তোষ, বউয়ের কাছে মায়ের নামে গঞ্জনা – এসব শুনে শুনে ছেলেটার ত মানুষের উপর থেকে সম্মানটাই উঠে যাওয়ার কথা। প্রথম প্রথম ছেলেটার মন খারাপ থাকে, নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়, একটা সময় বুঝতে পারে, উপেক্ষা করাটাই সহজতম পন্থা। দুইজন কে আলাদা আলাদা তাল দিয়ে মন রক্ষা করলেই সুন্দর শান্তি থাকবে ঘরে। আর সব মেয়েলি ব্যাপার নিয়ে ছেলেদের মাথা ঘামাতে নেই। তাদের সমস্যা তারাই সমাধান করুক, এ সময়টা বরং আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।
img20171009_154819
আমি দাবি করছিনা আমি এই হাজার বছরের সমস্যার কোন ইনস্ট্যান্ট সমাধান নিয়ে এসেছি। আমি চাই আপনি আপনার ভূমিকাটাকে একটু যাচাই করুন। একজন সন্তান হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে, একটা পরিবারের প্রধান হিসেবে (শ্বশুরেরা সাধারণত মৌনী ঋষি হন – সময় মত খাবার, গরম পানি আর সংবাদপত্র পেলেই তাদের চলে তাই ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্ট এর হর্তাকর্তা হিসেবে) আপনার কি আরো কিছু করার ছিল? আমি জানি এটা এমন এক সমস্যা যা নিয়ে অফিসের কলিগের সাথে আলাপ করা যায়না। বন্ধুরাও হয়ত ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়েই দায় সারবে। কিন্তু আপনি কি আরো একটু বুদ্ধি খরচ করে আরো একটু বেশি ইফোর্ট দিয়ে পরিবেশটাকে বদলাতে পারতেন? নিদেনপক্ষে আপনার মা ও স্ত্রীর মধ্যে দূরত্বটা একটু ঘুচাতে পারতেন?
img20171009_155838
প্রথমেই বলি, ছেলেরা ভুল আশা করে যে তার স্ত্রী তার মাকে ঠিক তার মত করেই ভালবাসবে। যদি না পারে, তাহলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মেয়েরা এত সংকীর্ণমনা কেন? কিন্তু ব্যাপারটা যে অসম্ভব যে কোন মানুষের জন্যই! মায়ের সাথে সম্পর্কটা গড়ে ওঠে অনেক বছরের আদর ভালবাসার উপর ভিত্তি করে। সন্তানের দোষ মায়ের চোখে ধরা পড়ে না, তেমনি বাবা মায়েরও অনেক অন্যায় ছেলে মেয়েরা দেখেও না দেখার ভান করে।
img20171009_154106
অন্য মানুষের জন্য ত এটা করা যায়না। একটা ছেলে কি পারবে তার স্ত্রীর মাকে আপন মায়ের সমান ভালবাসতে? হ্যা, সার্ভিস হয়ত আপন মায়ের সমান দেয়া যায়, কিন্তু দোষ ক্ষমা করার বা উদারতার রেঞ্জটা কিন্তু এখানে কমই হবে, আর এটা খুবই ন্যাচারাল। মানতে কষ্ট হলে নিজেকে দিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন। শ্বশুরবাড়িতে এক মাসের জন্য থেকে আসুন। জামাই হিসেবে না, ছেলে হিসেবে। বাজার করে দিন, বিল দিন, শ্যালিকাকে পড়ান, সংসারের খরচপাতির ব্যবস্থা করুন, শাশুড়িকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান, তখনই বুঝতে পারবেন অন্য একটা পরিবারে গিয়ে ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে দিনের পর দিন সবাইকে খুশি রাখা কত কঠিন।
img20171009_162454
দ্বিতীয়ত, একজন ভাল মা মানেই একজন ভাল শাশুড়ি না। একজন চমৎকার মানুষ মানেই একজন ভাল বৌমা না। একজন ভাল লেখক যেমন ভাল প্রশাসক না – তেমনি একেকটা সম্পর্কের ডাইমেনশন একেকরকম, দায়িত্বগুলিও ভিন্ন। সেজন্য আপনার ফেরেশতাসম মা শাশুড়ি হিসেবে ব্যর্থ হলে বুক ভেঙে যাওয়ার কোন কারণ নেই। যে মেয়েটা ফুল দেখত, গান গাইত, চিঠি লিখত, বিয়ের পর ঘরে এসে চরম পলিটিক্স শুরু করলে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরকার নেই।
img20171009_163212
তৃতীয়ত, মা আর স্ত্রী – এদের মধ্যে যে বন্ধন তা আপনাকে কেন্দ্র করেই রচিত। এই সম্পর্ক কোন খাতে বইবে – সেটাও অনেকটা নির্ভর করছে আপনার সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন তার উপর। এটা একটা টাগ অব ওয়ারের মত, দুটো নারী তাদের সমস্ত কিছু দিয়ে একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, পুরস্কার আর কিছু না, আপনার অখন্ড মনোযোগ। বাস্তবিক, আমার মনে হয়, ছেলেটার একটা ক্লোন করে যদি দু’জনের হাতে দুটো ধরিয়ে দেয়া যেত – তাহলে বেশ হত।
img20171009_154519
চতুর্থ, এরকম সিলি বিষয় নিয়ে এরা এমন করে কেন – এরকম একটা উঁচুদরের চিন্তা করে গা বাঁচিয়ে চলার অবকাশ নেই। সিলি বিষয়গুলি মোটেও সিলি না, কারণ এর কারণে পরিবার নামক দেয়ালটায় বড়সড় ফাটল দেখা দিচ্ছে। আপনি কি শুধু এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখবেন, আর মাঝে মধ্যে দুই পক্ষেই হাত লাগাবেন? এর বেশি কি আপনার কিছু করার নেই?

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

বেঁচে থাকার আকুল আকুতি….(সুইসাইড নোট)

জীবন সুন্দর… আকাশ বাতাস পাহাড় সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেচে থাকা।
img20171008_140038
তবুও কেন যেন জীবনকে জীবন দিতে ইচ্ছে করে না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মানুষের আত্মকথা——
img20171008_133632
আমি প্রায়ই মৃত আইডিগুলোতে ঘুরে বেড়াই। বিশেষ করে যারা সুইসাইড করে তাদের।
প্রতিটি আইডি প্রায় একই রকম।
মাত্র ছয়মাসের স্টাটাস পড়লেই বোঝা যায়
কি প্রচন্ড “ডিপ্রেশন” তাকে গ্রাস করে রেখেছিল।
img20171008_133023
কি চেয়েছিল তারা-
♣প্রত্যেকই হয়ত একটু সহানুভূতির আশায়,
♣কাউন্সিলিং এর আশায়,
♣খড়কুটো আকড়ে ধরে হলেও বেঁচে
থাকার নেশায়,
♣বারবার লিখে গেছে,
কি লিখত তারা:
♣তার মন ভালো নেই।
♣কেউ কেউ সরাসরিই দিনের পর দিন
সংকেত দিয়ে গেছে,
♣এই পৃথিবীতে সে আর বেশিদিন নেই।
img20171008_140513
♣♣♣আমি অবাক হয়ে দেখেছি,
মৃত আইডি বিবাহিত হলে,
তার বেশিরভাগ বন্ধুই,
দাম্পত্যকলহ ভেবে এড়িয়ে গেছে।
অথচ সেই একই আইডির পোস্ট করা
ছবিতে লাইক,কমেন্ট উপচে পরেছে।
♣♣♣আর মৃত আইডি আনম্যারিড হলে,
সেখানেও একই।
যা কয়েকটা কমেন্ট আছে,সেগুলি এরকম-
♣দোস্ত কবে মরবি?
♣বুদ্ধি না পাইলে ফুনাইস।
♣চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে যান।
♣স্মাইলি ইমো
♣মিলাদের আইটেমে কিন্ত লাড্ডু চাই।
………..আরো ব্লা ব্লা ব্লা।
img20171008_132955
আর যখন সব শেষ,রিপ্লাইয়ের আশা নেই।
তখন তাদেরই কষ্টে ভরা কমেন্ট,
♣কিভাবে পারলি?
♣ক্যামনে ভুলব তোকে?
♣তুই এত বোকা?
♣একবার খুলে বলতি,
♣আমরা কি ছিলাম না?
আসলে কি ছিল কেউ? আমি বলছি না,এই হাহাকার মিথ্যে। আমরা হয়ত না বুঝেই ফানি কমেন্ট করি
বা ইগনোর করি।
কিন্তু আমার বন্ধুর মৃত্যুর জন্য,
আমি কি একটু হলেও দায়ী না?
img20171008_141251
প্রতিটি মানুষেরই দুঃখ কষ্ট থাকে। তবে একেকজনের দুঃখ কষ্ট গ্রহন করার ক্ষমতা একেকরকম।
♣কেউ হয়ত হাসিমুখে স্বামীর মারের দাগকে
বাথরুমে পরে যাওয়ার দাগে পাল্টে নেয়।
♣আবার কেউ হয়ত স্বামির চোখে,সামান্য
অবহেলার আভাস পেলেও ভেঙে পড়ে।
…….কারো কষ্টই কিন্ত কম না।
কষ্ট পাওয়ার ধরন আলাদা হতে পারে
কিন্ত বুকের পোড়াটা মনে হয় সবারই এক।
আজ পাবলিকলি বলছি,
গত কয়েকটা বছর ধরে আমি প্রচন্ড
ডিপ্রেশনে ভুগছি। একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমাকে গত চারটা মাস ধরে ডিপ্রেশনের ঔষধ খেতে হচ্ছে।
img20171008_133531
♣কতদিন যে রাতদিন মিলিয়ে আমি
চারঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারিনা!!!
♣আমার ক্লান্তি,
♣আমার অবসন্নতা,
♣আমার ভালো লাগেনা রোগ
♣আমাকে ধীরে ধীরে নিঃশ্বেষ করে দিচ্ছে।
♥♥ভাবছেন দাম্পত্য কলহে আছি?
কসমকেটে বলছি, না না না…
♣টুকটাক মান অভিমান সবার যেমন থাকে,
আমাদেরও আছে।
তাহলে কেন এই ডিপ্রেশন ??????
আমি জানিনা,সত্যিই জানিনা। হয়ত এর কারনঃ
★আব্বুর হঠাৎই চলে যাওয়া।
★খুব প্রিয় কিছু মানুষের অকাল মৃত্যু।
★অতীতের জালে আটকে থাকা।
★নিজের জন্য সময় বের করতে না পারা।
★প্রতিদিনকার একঘেয়ে রুটিন।
★অতিরিক্ত আবেগ।
★নিজের মা কে পরাধীনতার শেকলে বাধা
দেখতে দেখতে বড় হওয়া।
★বাবার বাড়ি বলতে কিছু না থাকা।
★ভাইবোন নেই, মনটা উজাড় করে কথা
বলার কেউ নেই।
★সারাটা বছর সুখে দুখে খুশিতে
img20171008_135019
মা কে জড়িয়ে থাকি।আর আমার কাছে ঈদ মানে এখন,এক আতংকের নাম।কারন তখন মাকে এখানে সেখানে রেখে আমি ঈদ করতে যাই।
★আমার কিছু চেয়ে নিতে,বলে বলে করে নিতে
♣একেবারেই ভালো লাগে না।
চাইলে,বললে তো রাস্তার মানুষও
এগিয়ে আসে।
♣যে আমার আপন,কাছের,
সে আমাকে বুঝে নিতে না পারলে,
আমি বুঝাই না।
শুধু অভিমান জমা করি।

★মনটা এখনও প্রচন্ড শিশু,ছটফট করে,
আল্লাদে গদগদ করে।
শরীরটা? এত্ত বড় বড় দায়িত্ব কর্তব্য করে।
★আমার বর,
প্রচন্ড বাস্তববাদী, ওয়েল প্লানার,
হঠাৎই ইচ্ছে হলো তাই!!!
আমার জীবনে নাই!!নাই!!!নাই!!!!
★ডিপ্রেশন যে একটা রোগ
তা আমার পরিবার একেবারেই বুঝেনা।
♣আমার মা মনে করে,
ঝাপিয়ে পরে সংসার সামলালেই আমি
হাবিজাবি চিন্তা করতে পারব না।
♣আমার বর মনে করে,
ফেসবুকই আমার মাথা নষ্ট করছে।
আগে তো এরকম ছিল না।
★আমার বরের কাছে,জীবন মানে,
দৌড়াও,ছুটে চল,দুই হাতে কামাও,চার হাতে জমাও।
এদিক সেদিক ভবিষ্যতে তাকানো যাবে।
♣আমার কাছে,জীবন মানে,
শুধু ছুটে চলা না।
শুধু দম নেয়া না।
আজই যদি না থাকল,কাল দিয়ে কি করব? জীবন মানে বেঁচে থাকা।
♥♥এটুকু পড়েই হাপিয়ে গেছেন?
ভাবছেন এগুলো ডিপ্রেশনের কারন!!
মানুষ কত বড় বড় দুঃখ বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়!!
ঐ যে আগেই বলেছি, একেকজনের কষ্টের ধরন একেকরকম।
♥♥কেউ কেউ একটি ঘাসফুল না দেখার কষ্টে, মরে যেতে চায়।
আমরা একজন আরেকজনের মনস্তত্ত্ব,
কতটুকুই বা বুঝি?????
img20171008_133313
আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি,আমাদের দেশে বোধসম্পন্ন মেয়েরা,একদম দেয়ালে পিঠ না ঠেকে গেলে
মুখ খোলে না।
♣বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায়,
♣দিশেহারার চূড়ান্ত পর্যায়ে,
♣লোকলজ্জার মাথা খেয়ে সংকেত পাঠায়।
কাল থেকে আমার মন এত্ত খারাপ,এত্ত খারাপ
যে, মনে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই।
♥♥তারপর একবুক আশা নিয়ে
অপেক্ষায় থাকে ঘুরে দাড়ানোর।
অজানা আকুতি,বুঝতে চায়,কেউ আছে।
শুনতে চায়,দূর বোকা,আমরা আছি না?
img20171008_133718
(আমাদের আসেপাশে অনেক ভাই বোন ডিপ্রেশনে ভুগছেন। সুতরাং তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের পাশে দাড়ানো এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।)

আসুন তাদের পাশে দাড়াই।

লিখেছেন: ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক(সাইকিয়াট্রি)
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
email: zubayer_miah@yahoo.com

 

সে বাংলাদেশেই ফিরে এসেছিল

পড়াশোনার জন্য এক বাঙ্গালী নারী গেলেন আমেরিকাতে। সেখানেই পড়াশোনার সময় পরিচয় হলো এক আমেরিকান ছেলের সাথে। তার সাথে তার বন্ধুত্ব হলো ভালবাসা হলো এবং বিয়েও হলো। সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটি। এদিকে বাংলাদেশে বাবা মা ভাই বোন কত করে বুঝালো কিন্তু সে শুনলো না। তার পর? মেয়েটির সাথে আমেরিকান ছেলেটির বিয়ে হলো।

img20171008_003707
স্থায়ী ভাবে ম্যানহাটনে বসবাস শুরু করলো এবং এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে এক ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম হলো। ছেলেটি ছিল রাজপুত্রের মত সুন্দর। তাকে যে দেখতো সেই কোলে নিয়ে আদর করতে চাইতো। ছোট্ট রাজপুত্রটিও সবার কোলে যেত।

একটু একটু করে রাজপুত্রটি বড় হতে লাগলো আর তার বন্ধু বাড়তে শুরু করলো। ক্লাসে সবাই তার বন্ধু,অন্য ক্লাসের সবাইও তার বন্ধু। এতো সুন্দর দেখতে আর এতো স্মার্ট যে তাকে দেখে ছেলে মেয়ে সবাই তার বন্ধু হতে চাইতো। সে কাউকে নিরাশ করতো না।

img20171008_003757
স্কুলের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে বিশ্বের ইতিহাস নিয়ে জানতে চেষ্টা করতো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।
এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেড সিক্সে ওঠার পর সে জানতে পারলো বাংলাদেশের কথা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা।

img20171008_004329
একটা জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তা ভেবে সে খুবই অবাক হলো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।

img20171008_005441
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।

img20171008_003850
বাবা জানতে চাইলেন সেই দেশটা সেই জাতির নাম কি? ছেলেটি বললো বাঙ্গালী আর বাংলাদেশ।

ছেলের কথা শুনে বাবা চুপ করে গেলেন।তাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটি বললো বাবা তুমি হঠাৎ চুপ করে গেলে কেন? তুমি কি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানো? আমার খুব ইচ্ছে ওই দেশটাতে একবার ঘুরতে যাবো। বাবার চোখেও তখন জল এসে গেল। বাবা বললেন ওই দেশটা তোমার রক্তে মিশে আছে। তোমার মম ওই দেশেই জন্মেছে!!
বাবার কথা শুনে ছেলেটি ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো। তার এগার বছরের জীবনে সে কোন দিন মমকে এসব কথা বলতে শোনেনি। মম দেখতে একটু অন্যরকম তা বলে মম কখনো মুখে একটা বাংলা কথাও উচ্চারণ করেনি। মমের উপর তখন তার ভীষণ রাগ হলো। অফিস থেকে ফিরে আসার পর সে আর মমের সাথে কথা বললো না। তার যে ভীষন অভিমান হয়েছে। মম জানতে চাইলেন আমার রাজপুত্রটার আজ মুড অফ কেন? আমার সাথে আড়ি দিছে কেন? সে তখন ভীষন রাগ দেখিয়ে বললো I hate you mom, I really hate you. ছেলের কথা শুনে ভীষন রকম চমকে উঠলেন মহিলাটি। তিনি ভাবতেই পারেননি তার ছেলে তাকে ঘৃণা করতে পারে। তিনি তখন জানতে চাইলেন কেন তুমি আমাকে ঘৃনা করো?

img20171008_004226
সে তখন বললো পৃথিবীর সব থেকে সেরা দেশে তুমি জন্মেছ সব থেকে সেরা জাতীর মানুষ তুমি অথচ কোন দিন সেটা আমাকে বলোনি। আমি ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি পড়তে গিয়ে সেই দেশ সেই জাতি সম্পর্কে জেনে আবেগে কেঁদেছি।

img20171008_004437
বাসায় ফিরে যখন জানলাম তুমি সেই দেশে সেই মাটিতে সেই আলো বাতাসে জন্মেছ অথচ কোন দিন সেই পরিচয় কাউকে দাওনি এমনকি আমাকেও দাওনি তখন তোমাকে আমার ঘৃণা করতেই ইচ্ছে হয়েছে। এমন সোনালী ইতিহাস যারা মনে রাখেনা যারা পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তারাতো ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্য।

ছেলেটির কথা শুনে মহিলার চোখে বহুকাল পর শ্রাবণ ধারা নেমে এলো। তার মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের কথা,নিজের বাবা মা ভাই বোনের কথা। সে তখন ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্যরি বললো। ক্ষমা চাইলো। ছেলেটি তখন বললো তোমাকে ক্ষমা করতে পারি যদি তুমি আমাকে সেই সোনার দেশে নিয়ে যাও। মা তাতে রাজি হলেন। বাবার তখন খুবই ব্যস্ততা আর ছেলেটির তখন সামার ভ্যাকেশান শুরু হচ্ছে সেই বিশাল

img20171008_004401
ছুটিতে সে মাকে সাথে করে পৃথিবীর সব থেকে সেরা জাতির দেশ তার মায়ের দেশ বাংলাদেশে চলে আসলো।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরলো অনেক বন্ধু হলো। এক মাসের ছুটি যখন প্রায় শেষ তখন মা বললেন এবার তো আমাদেরকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে হবে। ছেলেটি বললো যেতে হয় তুমি যাও আমি যাব না। এই দেশটা ছেড়ে আমি পৃথিবীর আর কোথাও যাবনা। আমি বাংলা শিখবো বাংলায় লিখবো বাংলায় পড়বো বাংলায় কথা বলবো। যে ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেই ভাষায় কথা বলতে না পারলে আমার জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। তার মা তাকে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারলেন না শেষে তিনি আমেরিকাতে ফোন করে ছেলেটির বাবাকেও বিষয়টা জানালেন তখন তিনি বললেন ঠিক আছে ও তাহলে বাংলাদেশেই থাকুক আমিও না হয় বাংলাদেশে চলে আসবো।

img20171008_003733
তার পরেরটুকু সব ইতিহাস। ছেলেটি বাংলাদেশে থেকে গেল, বাংলাদেশের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হলেও পাশাপাশি বাংলা শিখতে শুরু করলো। একদিন দুদিন করতে করতে সে বাংলা এতো ভাল ভাবে আয়ত্ব করলো যে কেউ বলতেই পারবে না জাজাফী নামের সেই ছেলেটি ক’দিন হলো বাংলা লিখতে শিখেছে।
—-
লেখকঃ জাজাফী
www.zazafee.com

 

অমনোযোগীতা বাচ্চাদের বৈশিষ্ট্য (প্যারেন্টিং)

বাচ্চাদের সমস্যাগুলো নিয়ে লেখালেখি করা দরকার। সেই চিন্তা ভেবে এই লেখার সুত্রপাত।
আপনি আপনার পর্যবেক্ষণ করুন। অল্পতেই উত্তেজিত হওয়া,ভাঙ্গচুর করা,ছোট ভাইকে পিটানো,অতিরিক্ত জিদ করা,বন্ধুদের সামান্য দুষ্টুমিকেও সহ্য করতে না পারা ইত্যাদির কারণে সে ঘরে ও ঘরের বাইরে সবাইকে সব সময় ব্যস্ত রাখছে কিনা।
কিছু পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হল,

img20171007_162252
স্কুলে বা স্কুলের বাইরে অন্যকাজে গভীর মনোযোগ দিতে না পারা। প্রায়ই ভুল করা বা বিস্তৃত বিষয় বুঝতে কষ্ট হওয়া।

img20171007_162656
কোন কাজে এমনকি খেলাধূলার ক্ষেত্রেও একটানা বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা। বার বার একটা থেকে আরেকটা কাজ করা।

img20171007_162532
যখন তাকে উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলা হয় তখন তার দিকে তাকালে মনে হয় সে সেসব কথা মনোযোগ দিয়ে কখনও শুনছে না।

img20171007_162423
অমনোযোগীতার কারণে নির্দেশমত স্কুলের পড়া ও লেখা এবং অন্যান্য কাজ ঠিকমত করতে না পারার কারণে কপ্লেইন করা।

img20171007_162927
যেসব কাজ করতে চিন্তাভাবনা ও শৃঙ্খলতা দরকার সেসব কাজ করতে অসুবিধাবোধ করা।

img20171007_165205
যেসব কাজে দীর্ঘক্ষণ মনোসংযোগ দরকার যেমন পরীক্ষার সময়, দীর্ঘ লেকচার শোনা, এক্সপেরিমেন্ট করা,হোম ওয়ার্ক করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনীহা,অপছন্দ বা ঠিকমত করতে না পারা।

img20171007_162953
লেখাপড়া কিংবা খেলার জন্য দরকারি জিনিস যেমন বই, খাতা, পেন, পেন্সিল, এডমিট কার্ড, খেলনা ইত্যাদি প্রায়ই হারিয়ে ফেলে।

img20171007_164413
খুব সহজেই মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরে যায়।যেমন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল, ঠিক ঐ সময় দরজার পাশ দিয়ে কেউ যাচ্ছে সাথে সাথেই তার মনোযোগ সেদিকে চলে যায়।

img20171007_164348
দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই কথা-বার্তা ভুলে যায়। এবং এর জন্য সে প্রায় ধমক খায়।

img20171007_162215
রেফারেন্স:DSM-5

Fatema Shahrin

 

দাম্পত্য -৪

আমার বিয়ের আগে একটা মাত্র উপদেশ পেয়েছিলাম আমার এক কাজিনের থেকে, সে বলেছিল, যত যাই হোক, তোদের একটা কমন পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট রাখবি। যাতে তোদের শখের জিনিসটা নিয়ে আলোচনা করতে পারিস, দেখবি অনেক ঝড়ের মধ্যেও ওটা তোদের কাছাকাছি রাখবে।

img20171007_122856
আমি এত ভাল বুঝি নাই। কমন পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট – আমাদের ত আনকমন ইন্টারেস্ট খুঁজে পাওয়াই কষ্ট বেশি। এক সাবজেক্টে পড়াশুনা করেছি, এখনও একই জায়গায় একসাথে পড়ি, কমন না কী? সবই ত কমন। যাই হোক, মূল্যবান উপদেশটার মাথা মুণ্ডু হদিস করতে না পেরে শিকেয় যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম। ল্যাব এ জয়েন করার পর আমার সুপারভাইজর কাপলটাকে দেখে খুউব ভাল লাগত। ভদ্রলোক বেশ আলাভোলা সাইন্টিস্ট, ভদ্রমহিলা খুব কেয়ারিং, অর্গানাইজড। আমরা বাসায় এসে বলাবলি করতাম, আমরা ওদের মত কাপল হব, হ্যা?

img20171007_123050
একই ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করাটা অনেকটা ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে করার মত। পারস্পরিক সমঝোতা তৈরি হওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। উল্টোটাও হতে পারে, ব্যক্তিত্বের সংঘাত আরো বেড়েও যেতে পারে, কারণ ভুলগুলো আরো বেশি চোখে পড়বে।
কিন্তু ভলান্টারি কাজ একসাথে করার মধ্যে যে আনন্দ তার কোন তুলনা হয়না। এতে ত কোন কিছু পার্থিব লাভ বা ক্ষতি নেই, তাই ভুলচুক হলেও অত গায়ে লাগেনা। আবার কাজটা না করলেও ত সে পারত – এরকম একটা মেন্টালিটি থাকে, তাই ছোট্ট কাজকেও খুব মহৎ লাগে। অন্যের জন্য স্বার্থ ছেড়ে কাজ করার একটা বাই ডিফল্ট ভাল অনুভূতি আছে, সেটা প্রিয় মানুষটার সাথে ভাগাভাগি হলে আনন্দটা বহুগুণ বেড়ে যায়। হয়ত কোনদিন ভাল করে চোখ মেলে দেখেন নি, যে তার ভেতর এত মহত্ত্ব আছে। আর কিছু না, ছোট্ট একটা চ্যারিটিও দুজন মিলে প্ল্যান করে করলে হঠাৎ একটা উপলব্ধি আসে, ‘কীসের জন্য তেল নুন চাল ডাল নিয়ে ঝগড়া করছি? আমরা একসাথে ত আছি অ-নে-ক উপরের লেভেলের কাজ করার জন্য।’ আমার সত্যিই মনে হয় আল্লাহ এরকম ইফোর্ট দেখলে এত খুশি হন যে নিজ উদ্যোগে তখন ঘরটা শান্তি দিয়ে ভরে দেন। আর ভাল কাজ একসাথে মিলে করলে খুব গর্বও হয়, আমার বউ/ স্বামী আর দশজনের মত না, সে অন্যদের কথা ভাবে, সে স্বার্থপর না।

Square_07102017_124236
অনেক দম্পতির নানা কারণে ঘরের বাইরে ভলান্টারি কাজ করার সুযোগ নেই। আসলে বাইরে যাওয়ার দরকারও নেই। সন্তান মানুষ করার কাজটাকে যদি কেউ জাস্ট আল্লাহ কে খুশি করার উদ্দেশ্যে পূর্ণ ইফোর্ট দিয়ে করে, তাহলে এর চেয়ে বড় চ্যারিটি আর হয়না। কিন্তু এই প্যারেন্টিং ইস্যু তে এসে দম্পতিরা সবচেয়ে বেশি ধরা খেয়ে যান। তারা এটাকে ঘাড়ের উপর চেপে বসা একটা বোঝা মনে করেন। যদি ভাবতেন একটা নতুন মানুষের জীবনের ট্র্যাক ঠিক করে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের দুজন কে এক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাহলেই হয়ে যেত। স্বামী স্ত্রী করেন কি, একজন আরেকজনের উপর রাগ উঠলে বাচ্চাদের সামনে বা বাচ্চাদেরই উপর প্রতিশোধ নেন। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বাচ্চারা শিখে ফেলবে এই ভয়ে রাগ টা কপ করে গিলে ফেলা, কারণ shaping up someone’s personality is a far more superior task than winning in this psychological tug of war.

img20171007_130734
নিদেনপক্ষে অন্য মানুষটার শখের বিষয়টাতে আন্তরিকভাবে উৎসাহ দিলেও হয়। এই যে বিখ্যাত লেখকরা প্রায় সময়ই অদৈহিক ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, বেশির ভাগ সময় এটার শুরু হয় তাদের যার যার সৃষ্টি নিয়ে উঁচুমানের মত বিনিময় থেকে।

জাগতিক বিষয়াদি হয়ত তার স্ত্রী সামলাচ্ছে, কিন্তু ভাবনার জগতে, সৃষ্টির জগতে সে একদম একা। অন্তত ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর বর্ণনা পড়ে আমার ওরকমই মনে হয়েছে। এক জনপ্রিয় সাহিত্যিক তার স্ত্রী সম্পর্কে লিখেছিল, ওর অনেকগুলো মুগ্ধ করা গুণের মধ্যে একটা হল আমি টুকরো টাকরা কাগজে যাই লিখি ও যত্ন করে একটা বাক্সে গুছিয়ে তুলে রাখে, যদি পরে কাজে লাগে! এক অভিনেত্রী তার স্বামী এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়ার পর দুঃখ করে বলছিলেন, আমার সম্পর্কে কাগজে যত রিপোর্ট আসত সব সে সংগ্রহ করে লেমিনেট করে রাখত।

img20171007_122556
লেখার শুরুতে যে বলেছিলাম, ম্যাজিক স্পেল বা তালিসমান – আমি নিশ্চিত এটাই সে জিনিস। আপনাদের মধ্যে যত সমস্যাই থাকুক, খুঁজে এমন একটা কাজ বের করুন, যেটা দুজনের কাছেই নিঃস্বার্থ ভাল কাজ মনে হয়। যদি সেটা হয় ধর্মচর্চা বা প্রচার, তাহলে ত কথাই নেই। একসাথে করে দেখুন, সঙ্গের মানুষটার জন্য নতুন করে ভালবাসায় বুকটা ভরে যাবে। মনে হবে, s(he) may not be the perfect person of the world, but s(he) is perfect in my world.

দাম্পত্য – ৩
http://oporajitabd.com/?p=8495
দাম্পত্য – ২
http://oporajitabd.com/?p=8468
দাম্পত্য – ১.
http://oporajitabd.com/?p=8455

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

জাপানের মা, জাপানের সন্তান (প্যারেন্টিং)

প্রথম আলো পত্রিকায় “জাপানের মা, জাপানের সন্তান (প্যারেন্টিং)” নামে চমৎকার একটা আর্টিকেল বের হয়। সেই আর্টিকেলটায় তুলে ধরা হল।

img20171006_132548
জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছি। এ সময় নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি জাপানি ভাষা বেশ ভালোভাবে শেখায় তাদের অনেক কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম।

img20171006_135829
অবাক হয়েছি সন্তানদের প্রতি জাপানি মায়েদের আদর-ভালোবাসা দেখে। সন্তান জন্মের আগে থেকেই সন্তানকে
♦কীভাবে লালন-পালন করতে হবে,
♦তাকে কী খাওয়াতে হবে,
♦কোন ঋতুতে কী ধরনের পোশাক পরাতে হবে,
♦ছোটখাটো সমস্যা হলে বাড়িতে বসেই কী করে তার সহজ সমাধান করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন।
জাপানে বেশির ভাগ লোক শিক্ষিত, তাই তাদের জন্য এটি করা সহজ।

img20171006_132519
মায়ের বুকের দুধ যে শিশুর জন্য একমাত্র উপযোগী খাবার- তা জাপানি মায়েরাও মেনে চলেন। কর্মজীবী মায়েরা বিরতির সময় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে আসেন। বেশি দূরে হলে বুকের দুধ প্যাকেট করে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে রেখে আসেন। আমি জাপানের চিকিৎসক মায়েদেরও এমনটি করতে দেখেছি।

img20171006_132329
বেশির ভাগ বাড়িতে দেখেছি দাদা-দাদি থাকেন। কোনো কোনো বাড়িতে দাদা বা দাদির একজন থাকছেন। পরিবারের সব সদস্য বয়স্কদের দিকে খেয়াল রাখেন। সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকতে না পারেন তার দেখাশোনা করার উপযোগী কর্মী রেখে দেন।

img20171006_132440
আরেকটি বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে। এক বছর বয়স হওয়ার আগেই শিশুরা জাপানে পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য হতে পারে। মা তার সন্তানের নামে প্রতি সপ্তাহে তিনটি বই ধার করতে পারেন। একটু বড় হওয়ার পর মা সন্তানকে নিয়মিত লাইব্রেরিতে নিয়ে আসেন। গল্প ও ছবির বই পড়ে শোনান। হাঁটিহাঁটি পা পা করছে এমন শিশুও দেখেছি সেলফ থেকে নিজের পছন্দমতো ছবি অথবা ছড়া গল্পের বই এনে মায়ের হাতে দিচ্ছে পড়ে দেওয়ার জন্য।
এভাবে বইয়ের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে যায়। ছুটির দিনে লাইব্রেরিতে ছোটদের রূপকথার গল্প বলার জন্য কর্মী থাকেন। শুধু তাই নয়, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে যেসব শিশু থাকে, তাদেরও বই পড়ে শোনানো হয়। তিন বছর বয়স হলে প্রতি মাসে বাধ্যতামূলক একটি করে বই কিনতে হয়। ছোটবেলা থেকে এই আগ্রহ জন্মায় বলেই হয়তো বাস বা ট্রেনের জন্য অযথা বসে না থেকে বই পড়তে দেখেছি ওদের।

img20171006_132200
স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে মায়েরা শিশুকে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে ওঠা-বসা, আচার-ব্যবহার, আদব-কায়দা (বড়দের সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে কথা বলা এবং ভক্তি করা জাপানি সমাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য) নিজ হাতে খাওয়া ও নিজে বাথরুমে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

img20171006_132252
জাপানে মনে করা হয় যে প্রতিটি ভালো ছাত্রের পেছনে একজন নিবেদিত মা থাকেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজে নিয়মিত সন্তানকে পার্কে, সাঁতারের ক্লাসে এবং পিয়ানো অথবা নৃত্যের ক্লাসে নিয়ে যান। মা রাতে সবার পরে বিছানায় যান কিন্তু ভোরে ওঠেন সবার আগে। কারণ প্রত্যেকের পছন্দমাফিক আলাদা টিফিনবাক্স প্রস্তুত করার জন্য তার বেশ সময় প্রয়োজন হয়।

তিনি খুব সতর্কতার সঙ্গে সন্তানের স্কুল এবং গ্রুপ কোচিং নির্বাচন করেন।

img20171006_132126
কাজ থেকে ফিরে বাড়ির কাজে সাহায্য করেন, ভালো বইয়ের খোঁজ রাখেন। প্রয়োজনে সন্তানের জন্য আরও বেশি কাজ করেন। যাতে সন্তানের পড়তে কষ্ট না হয়। সে জন্য জাপানি মাকে যথার্থই ‘কিউইকু মামা’ অর্থাৎ ‘অ্যাকাডেমিক মাদার’ বলা হয়ে থাকে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক প্রথম আলো & মহীয়সী

ডা. লুৎফুন নাহার
লেখক: চর্ম, অ্যালার্জি ও লেজার বিশেষজ্ঞ সেন্ট্রাল হাসপাতাল, গ্রিনরোড, ঢাকা

 

দাম্পত্য -৩

কমফোর্ট আর স্বস্তি একটা ঘরে সুখের ফোয়ারা বইয়ে দিতে পারে সত্যি, কিন্তু এর বাইরেও দাম্পত্য জীবনে অনেক কিছুই করার আছে।

..
স্বামী স্ত্রী উত্তম বন্ধু রূপে শুধু একে অপরকে নিরাপত্তাই দিয়ে যাবে জীবনভর, এর বাইরে আর কিছু নয় – ব্যাপারটা এমন নয়। আর চাহিদা অনুযায়ী পরিপূর্ণ আরাম না পেলেই যে সংসার উচ্ছন্নে যাবে – তাও না। পুরোপুরি স্বতন্ত্র দু’জন মানুষের আচরণ সব সময়ই পছন্দ মত হবে – এমন ভাবাটা ঠিক না। পদে পদে কমফোর্ট নষ্ট হবে, কমিউনিকেশন এর সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে, ক্ষুদ্রতা দেখে বুক ভেঙে যাবে – সম্মানের বদলে জায়গা করে নেবে করুণা – এমন অনেক কিছুই হতে পারে। তখন কি আল্লাহর প্রতিশ্রুত শান্তি সে ঘর থেকে হারিয়ে যাবে? বিয়ের উপর যে এত বার করে গুরূত্ব আরোপ করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স) যে বলেছেন, দ্বীন এর অর্ধেক হচ্ছে বিবাহ – তা কি দুটো ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যেই ভুল হয়ে যাবে? তা কী করে হয়?

..
আমার কাছে মনে হয় দাম্পত্যের দ্বিতীয় স্তরের পূর্ণতা আসে যখন স্বামী স্ত্রী সত্যি সত্যি একে অপরকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে। যখন একজন অপরজনের দোষত্রুটি গুলি চিহ্নিত করে সেগুলি বদলানোর জন্য কাজ করে। আমি ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাপার কিচ্ছু বুঝি না, আমার স্বামী ধৈর্যের সাথে অল্প অল্প করে একটু করে কাজ দিয়ে আমাকে মানুষ করার চেষ্টা করছে। অপর দিকে তার লেখা নিয়ে একটা ভীষণ রিপালশন কাজ করে। আমি চেষ্টা করছি প্রতি সপ্তাহে ছলে বলে কৌশলে যে করেই হোক একটা করে তার কাছ থেকে লেখা আদায় করতে। ও লেখায় সরগর না হলে কি আমার ঘর ভেঙে যাবে? আমার কী দায় পড়েছে ওকে দিয়ে লেখাতে? কিন্তু আমরা ত আগামী অনেকগুলো বছর ইনশাল্লাহ একসাথে থাকব, আল্লাহ ছয়শ কোটি মানুষের মধ্যে থেকে আমাদের দুজন কেই এক সাথে জীবন কাটানোর সুযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে কি আল্লাহর এতটুকু প্ল্যান ছিলনা, যে আমার উইকনেস ও দূর করবে, ওর টা আমি?

..
একই কথা স্পিরিচুয়ালিটির বেলায়ও। স্পিরিচুয়ালিটি আর স্বামী স্ত্রী নিয়ে ভাবতে গেলে আমার কেবল একটা উদাহরণই মনে আসে। লতানো গাছ দেখেছেন, ঐ যে ছোট ছোট আঁকশির মত বের হয়ে একটা কিছু ধরে বেয়ে ওঠে? এমন দুটো গাছ যেন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একজন আরেকজনের থেকে সাপোর্ট নিয়ে দ্রুত উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এই গাছ দুটোর একটা শক্ত দৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড়ানোও হতে পারে, আরেকটা তার উপর ভর দিয়ে উপরে উঠবে। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর একজন বেশি প্র্যাক্টিসিং, অপরজন কমও হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাপোর্ট দিয়ে দিয়ে টেনে তুলতে হবে। ভেবেই দেখুন না, কী একটা জুটল কপালে – এই ভেবে কপালকে দোষ না দিয়ে এভাবেও ত দেখা যায় – আল্লাহ আপনার স্ট্রেংথ জানেন, আল্লাহ পারফেক্ট কম্প্লিমেন্ট খুঁজে দিয়েছেন আপনার জন্য। এখনকার যে অশান্তি হচ্ছে, তা হচ্ছে এ কারণে যে আপনি আপনার করণীয় সবটুকু করছেন না। আপনার কথা ছিল অনেক বেশি নিজেকে উন্নত করার, আর উদাহরণের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে অপরজন কে শেখানোর। আপনি তা না করে আরো ভাল কিছু পেতে পারতেন এই আফসোস এ মাথা কুটে মরছেন।
এমনকি ভাল, আরো ভাল – এই মাপকাঠিটাও ত মানুষের জন্য অসম্পূর্ণ। সে হয়ত বিচার করার সময় একটা স্বভাবের দোষ ধরে ভাগ্যকে ধিক্কার দিচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে হয়ত তাদের মধ্যে এত সুন্দর সামঞ্জস্য – যেটা তার কাছে এতই ন্যাচারাল যে টেরও পাচ্ছেনা এর মূল্য কত।

...
আগের লেখায় একটা পাথরের কথা বলেছিলাম না? আপনি হয়ত আপনার সম্পর্কের এবড়ো খেবড়ো অংশটাই শুধু দেখছেন, একটু সময় নিয়ে উল্টে দেখুন, তার অনেক ভালো দিকও চোখে পড়বে।

..
রাসুলুল্লাহ (স) ত বলেছেন, স্ত্রীদের সাথে নরম আচরণ কর, কারণ তার এক আচরণ তোমার অসন্তুষ্টির কারণ হলেও, অন্য আচরণ তোমায় সন্তুষ্ট করবে। স্বামীদের জন্য এটা আরো বেশি সত্যি। কারণ আমরা স্ত্রীরা অভিযোগে মুখর হতে খুবই পারদর্শী।
আমি ঘরের কাজে অপটু, বাইরের কাজে অকর্মণ্য। ভাবনার জগতে ক্রীড়ণক, বাস্তব জীবনে জড়ভরত। আমার অতি প্র্যাক্টিকাল স্বামীর অভাবে আমি অর্ধেক না, এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকতাম বোধহয়। কিন্তু আমার যেটুকু অগুণ আছে তাই দিয়ে ঠেলেঠুলে এমন একটা জায়গা করে নিয়েছি যে জানি ওই জায়গার দখল পাকাপাকি ভাবে আমার হয়ে গেছে। গুণ যেখানে কম, অধ্যবসায়ের সেখানে পুরো ব্যবহার ত করতেই হবে, তাই না? তাই ওর অদক্ষতাগুলোতেই আমার যত জোর। আল্লাহকে ধন্যবাদ ও দেই, অন্তত একটা কিছু যোগ করার মত যোগ্যতা ত আমার আছে। যদি কমফোর্টই সুখের একমাত্র ইয়ে হত, তাহলে আমি ফেল করতাম নির্ঘাত।

১
এক রাতে প্রচণ্ড গরমে পুরো আড়াই ঘন্টা লোডশেডিং ছিল আমাদের এলাকায়। খুব দেশ দেশ লাগছিল সময়টাকে। আমরা অন্ধকার ঘরে মনের সুখে গপ্পো করেছি অনেকক্ষণ। লোডশেডিং হওয়াতে আমাদের মনে এতই ফুর্তি হয়েছিল, গল্পের ফাঁকে সে নিজে গান বানিয়ে সুর দিচ্ছিল। আমি তখন ওকে বললাম, আমি তখন ওকে বললাম, Thanks to Allah, He joined a composer with a singer, a speaker with a writer, a philanthropist with a pure mind.

(পরের পর্বের জন্য অপরাজিতার সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

ডিম কাহিনী

..

ডিম পেড়েছে শিয়াল মশাই
ডিম পেড়েছে হাতি
ডিম পেড়েছে পাশের বাড়ির
আবুল মিয়ার নাতি।

তাল মিলিয়ে ডিম পেড়েছে
দোয়েল-কোয়েল-টিয়ে
কে জিতে আর কে হারে
চিন্তা এটাই নিয়ে।

হঠাৎ করে উটপাখিটা
পাড়ল বিশাল ডিম
জয়ী হয়ে নাচছে যে তাই
টিম ডিমা টিম ডিম।

...

Sumaiya Barkatullah
Zoology

 

দাম্পত্য – ২

দাম্পত্য জীবনে হারমনি প্রতিষ্ঠা করা এমন না যে একটা তুড়ি বাজালাম আর হয়ে গেল। ইনফ্যাক্ট প্রতিদিনের কাজকর্মের মুখ্য উদ্দেশ্যই আমাদের হওয়া উচিৎ হারমনি আনা, যতক্ষণ এক সুরে সুর বাজে, মনে হয় এর বেশি আর কী চাওয়ার আছে জীবনে? কিন্তু মানুষ ত অনেক ভাবেই দুজনে মিলে সুখে থাকতে পারে, তাই না?
স্বার্থপরের মত, ভোগবিলাসীর মত, অন্যায়কারীর মত – এদের হারমনিও ত হারমনি। কিন্তু তাতে স্বর্গীয় সুখ কই? ফেরেশতাদের ডানা বিছানো ‘সুকুন’ কই? আল্লাহ যে বলেছেন অমন পরিবারে তিনি রহমত নাযিল করেন, ফেরেশতারা সে পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন?

আস্তে আস্তে মনে হল,
দাম্পত্য নিয়ে মানুষ তিন স্তরে সন্তুষ্ট থাকতে পারে।

..
এক, একজন আরেকজনের কমফোর্ট হবে। তা শুধু খাবার দাবার, আর অন্যান্য শারীরিক কমফোর্ট ই না। দু’জনের নিজস্ব জগতের অশান্তি শেয়ার করে হালকা হবে, বাইরে অনেক অপমান সহ্য করে ঘরে এসে নিশ্চিন্তে মাথা গুঁজতে পারবে। এমন নিরাপত্তা আর প্রশান্তি পেলে একটা সংসারে আসলে আর কিছু লাগেনা।

্্
রাসুলুল্লাহ (স) তাঁর পনের বছরের বড় (এ নিয়ে দ্বিমত চলছে আজকাল) স্ত্রীর কাছে এতটাই নিরাপত্তা, সম্মান আর ভালবাসা পেয়েছিলেন, খাদিজা (রা) মারা যাওয়ার অনেক বছর পরেও তাঁর কথা ভেবে রাসুলুল্লাহ (স) এর চোখে পানি চলে আসত। আসবেই ত। জিবরাইল (আ) কে প্রথমবার দেখে উনি ভয়ে এত উপর থেকে নেমে ঘরের মধ্যে এসে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে টুড়িয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন ‘আমাকে কি জ্বীন এ ধরেছে?’ উনার স্ত্রী কোত্থেকে জানবে উনার কী হয়েছে? উনি কি ফেরেশতা মারফত আগে খবর পেয়েছিলেন? উনি যা জানতেন তা হল, মুহম্মদ (স) কত অসাধারণ মানুষ। এরকম একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে উনি রেফারেন্স টানলেন রাসুলুল্লাহ (স) এতিমদের কত যত্ন করেন, কত সত্যবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কথা এখানে বলা কি খুব প্রাসঙ্গিক ছিল?
“খাদিজা (রা) যা করেছেন তা হল উনি রাসুলুল্লাহ (স) এর নিজের সম্পর্কে ভয়, শঙ্কা দূর করে দিয়েছেন তাঁর সম্পর্কে অনেক পজিটিভ কথা বলে।”

..
আমরা আমাদের পার্টনারের ভঙ্গুর সময়ে কতটুকু ভাল কথা বলি?
আর আউট অব কনটেক্সট প্রশংসা? অসম্ভব! আউট অব কনটেক্সট অভিযোগ করা যায়, কিন্তু প্রশংসা? কদ্যপি নহে!
আমার বাসায় হিটার ঠিক করতে এক ইলেক্ট্রিশিয়ান এসেছিল, ভদ্রলোক খুব কথা বলতে পছন্দ করেন, কথায় কথায় বলেছিলেন, তোমাদের মেয়েদের আমি হিংসা করি। you don’t know the power of your words. শুধু মুখের কথা দিয়ে you can bring a lion out of a mouse.
খাদিজা (রা) এর মত প্রজ্ঞা যদি সব ছেলেমেয়ের থাকত, শুধু কথা দিয়েই কত শান্তি তৈরি করতে পারত ঘরে।
একই ভাবে মন খারাপ হলে তার টেক কেয়ার করা,
বাইরে অপমান জনক একটা কিছু ঘটলে ঘরের মানুষটা আরো অনেক বেশি kindness দিয়ে তার মনের জোর ফিরিয়ে আনা – এ বিষয়গুলোতে অনেক বেশি যত্নশীল হওয়ার দরকার আছে।

..
ছেলেরা বোঝে না মেয়েদের কমফোর্ট কেবল ভাল শপিং করতে পারার স্বাধীনতার মধ্যেই না। এপ্রিসিয়েশন একটা ছেলের জন্য যতটা ইন্সপায়ারিং, একটা মেয়ের জন্য তার চেয়েও বেশি।
অনেক সময়ই মেয়েটার চিন্তাভাবনা বা বাইরের কাজে ম্যাচিউরিটি ছেলেটার মত হয়না, তখনও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেয়া মেয়েটার মানসিক শক্তি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়েটার বাইরে এক্সপ্লোর করার সুযোগ সমানভাবে হয়না। এর প্রভাব যদি তার চিন্তায়, আচরণে পড়ে, আর তার কারণে স্বামীর থেকে তিরস্কৃত হতে হয়, তাহলে মেয়েটার কী দায় পড়েছে সংসারের ঘানি টানতে?
সে ও ত স্মার্ট হওয়ার, আধুনিক হওয়ার জন্য সময় ব্যয় করতে পারে, ঘরে সময় না দিয়ে।

..

এই সব খুঁটিনাটি অনেক কিছুই দুই পক্ষে মনের মধ্যে জমা হয়।
তার কিছু কথা বলে, কিছু ক্ষমা করে, আর পুরোটা আল্লাহর থেকে রিটার্ণ পাওয়ার আশায় মন থেকে মুছে ফেলে কমফোর্ট বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
ও! কমফোর্ট এর কথা এতবার বলেছি, একটা কথা বলিনি,
“পুরোনো জামার awesome উদাহরণটা খুব সংক্ষেপে কুরআনে আছে। husband and wife are garments for each other. তাও রোজার নিয়মের দুইটা আয়াতের মাঝখানে দেয়া।”

..
নোমান আলি খান এর ব্যাখ্যা করেছেন খুব সুন্দর করে, রোজায় ইফতার, সেহরি, তারাবী, কুরআন পড়া – এসব রুটিনের মধ্যে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে যেন কভার করে যাতে দুজনই সমানভাবে স্পিরিচুয়ালি এগোতে পারে। লিংক টা এখানে পাবেন।
http://www.youtube.com/watch?v=t6Cd08mUjvU

(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

দাম্পত্য-১

আমার বিয়ের পর থেকে বিবাহ নামক সম্পর্কের বাঁধনটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। ধুম ধাম করে বড় করে মেহেদী, বিয়ে, রিসেপশন এর পরে কী হয়? জমকালো সাজে বউটা বেশ আনন্দের সাথে নতুন ঘরে পা রাখে। তারপর কী হয়? আনুষ্ঠানিকতার লৌকিকতা যত ফিকে হয়ে আসে, মেহেদীর নকশা যত মিলিয়ে যেতে থাকে, বউটাও কি তত মেয়ের মত হয়ে মিশে যায় এই পরিবারে?

..
অচেনা বা অর্ধচেনা মানুষটি কি তার বাকি সব বন্ধনের অভাব ভুলিয়ে দিতে পারে?
বিয়ের আগে আমার একমাত্র বিবাহিত বান্ধবীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম,
বিয়েটা আসলে কী বলত?
তুই তোর বরকে কি মাথায় করে রাখিস? কোন কিছু পছন্দ না হলে কী করিস?
বাবা মায়ের কথা যেমন আমরা পছন্দ না হলেও মেনে নেই, এখানেও কি তুই তাই করিস?
নাকি বন্ধুর মত মতে না মেলা পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে তর্ক করিস?
ওর কোন একটা কাজ অন্যায় দেখলে তুই কীভাবে সামলাস? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আচ্ছা পাঠক, বলুন ত, আপনাদের মধ্যে কি একজনও আছে যে বিয়ের আগে এসব ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে আসে?
একজনও কি আছে যে বলতে পারে, না, আমার মা আমাকে এগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? ছেলেদের অবস্থা ত আরো ভয়াবহ। ছেলেকে স্বামী হওয়ার জন্য প্রস্তুত করার দায়িত্ব বাবার, এইটাত বাবারা কল্পনাই করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এ যুগের বাবারা কি জীবিকা ছাড়াও জীবনে শেখার কিছু আছে এটা জানেন?

..
বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরই যেটা হয়, একগাদা অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে তারা সংসার শুরু করে। মেয়েটা মনে করে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ছেলেটার চিন্তা জুড়ে থাকবে শুধু সে। তার চাওয়া পাওয়ার দিকে শতভাগ মনোযোগ থাকবে। অপর দিকে ছেলেটা দেখে কল্পনার পরী জোছ্না রাতে গল্প করতে আসলেই বেশ লাগে। সিন্দাবাদের ভুতের মত ঘাড়ে চেপে থাকলে অসহ্য বোধ হয়। ফলাফল, মেয়েটার অভিযোগ, আর ছেলেটার উদাসীনতা। স্বপ্নের নীড় স্বপ্নের দেশেই পড়ে থাকে। এর সাথে যদি অভিভাবকদের অন্যায় ব্যবহার যোগ হয়, তখন এই স্বপ্নকাতর কপোত কপোতীর কী যে দশা হয় বলাই বাহুল্য। একটা সময় হয়ত মেয়েটার মন কঠোর হয়ে যায়, ছেলেটা নিজের মত করে ভাল থাকতে শিখে যায়, দুজনেই কষ্টগুলোকে একা একা সামাল দিতে শিখে যায়। দূর দেশে কেঁদে মরে অপূর্ণ স্বপ্নগুলো। তার কান্না ভুলতেই বোধ করি এত এত বাস্তবতায় নিজেকে বেঁধে ফেলতে হয়।
যাই হোক।

...
আমি কখনও চাইনি আমার বা আমার বন্ধুদের দাম্পত্য জীবন এমন হবে। তাই শুধু খুঁজতাম একটা তালিসমান, একটা ম্যাজিক স্পেল – যেটা ফলো করলে স-ব সমস্যা নিমিশেই ফিনিশ হয়ে যাবে।

...
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে একটা মনে গেঁথে থাকার মত মন্তব্য শুনেছিলাম ড: মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুখে, একটা অনুষ্ঠানে মনে আছে বলেছিলেন, “যে এই সম্পর্কটা একটা পুরনো জামার মত।” আমার এই তুলনাটা এত ভাল লেগেছিল! শুনেই মনে হয় কমফোর্ট আর কমফোর্ট। আমার বান্ধবীও বলল, প্রবলেম হলে মনে জমায় রাখবি না। কথা বলে সলভ করবি। বলে ফেললে দেখবি শান্তি।

..(1)
আমি প্রথম প্রথম তাই করতাম। কিন্তু ফলাফল দেখে বুঝলাম এ পদ্ধতি সবসময় সবার জন্য না।
কখনো কখনো একটু নিরবতা অনেক কথা বলে। দুজনের মতে না মিললে আমার মনে হাজার যুক্তি দাঁড়িয়ে যেত, তা বলার জন্যে আর ঠিকটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যেন আর তর সইত না। অঙ্ক কষে দুইয়ে দুইয়ে চার না মিললে হতবুদ্ধি হয়ে যেতাম। আমি ত ঠিক ই বলেছি। ঠিক বললেই ঠিক হয় না কেন? আবার দেখলাম আমি ভুল করলে প্রাণপনে মনটা চায় একটু যেন রেহাই দেয় ও, কিছু যেন না বলে। বুঝলাম, আমার ন্যায়ের ঝাণ্ডার চেয়ে ওর নিরব সহিষ্ণুতা অনেক বেশি শক্তিশালী।

♥
কিন্তু চুপচাপ থাকার পক্ষে কোন রেফারেন্স পাচ্ছি না ত! আর এটা কেমন কথা? দোষ দেখলে খালি চুপ করে থাকলে হবে? কত সময় কাজে ঝামেলা লেগে যায়, কথা পছন্দ হয়না, তখন শুধু চুপ থেকে চোখের পানি ফেলব নাকি? আর এভাবে আদৌ ত কোনদিন কেউ কাউকে উপরে তুলতে পারবনা, উল্টা মনে অনেক অভিমান জমা হবে। কী করি? উত্তরটা একদিন পেয়ে গেলাম কুরআনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে। তাফসিরে একটা কোণে ছোট্ট করে লেখা,
“spouses are to establish peace and harmony.”
এই হারমনি নিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম, করতেই থাকলাম।
হারমনি মানে কী?
হারমনি মানে এক সুরে গাঁথা,
ছন্দ মিলিয়ে চলা।
একসাথে মিলে সুন্দর একটা গান রচনা করা। একসাথে, একই ছন্দে তালে তাল মিলিয়ে একটা কিছু তৈরি করা – এমনভাবে যেন কোথাও কর্কশ সুর না বাজে। আমার এই বিজ্ঞ জজ সাহেবের ভূমিকা কি হারমনি তৈরি করছে? মোটেও না। তার মানে কি যেভাবে চলে চলুক বলে তালে তাল মিলিয়েই যাব? অবশ্যই না।
দুটো ভিন্ন স্কেলের কম্পোজিশন কে এক জায়গায় আনতে হলে কখনও তর্ক, কখনও ধৈর্য, কখনও একটু অভিমান – অনেক কিছুই ব্যবহার করতে হয়।
যা বুঝেছি,
“সায়েন্স এর জটিল বিষয়াদি বুঝতে যেটুকু বিদ্যা খরচ হয়, হিউম্যান সাইকোলজি বুঝতে তার চেয়ে অনেক বেশিই কসরত করতে হয়।” কিন্তু সবশেষে যে তানটা বাঁধা হবে তার চমৎকারিত্বে আশ্চর্য হয়ে যেতে হবে। এ যেন একটা ঝড়ো হাওয়ার মত, শক্তিকে শক্তি দিয়ে বাধা দিয়ে প্রলয় আরো বাড়াতেও পারেন, বাঁশির মধ্য দিয়ে বইয়ে অপূর্ব সুর ও তুলতে পারেন।

Waiting Waiting
(পরের পর্বের জন্য “অপরাজিতার” সাথেই থাকুন)

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

শিশুদের বয়সানুযায়ী কাজের তালিকা

...
অনেকক্ষেত্রে আমরা বাবা মায়েরা সন্তানের প্রতি ভালোবাসার দরুন, তাদের দিয়ে কোনো কাজ করাতে চাইনা,ভাবি বড় হলে তখন করবে।ভাবুন তো,কোনো কাজ না পারা ছেলে/মেয়েটি দেশে/বিদেশে হল লাইফে কিভাবে কি করবে?অথবা,আপনার স্বামী/স্ত্রীই যখন একেবারেই প্রচন্ড আদরে বড় হওয়া,কোনো কাজ না পারা মানুষ হোন, আপনার কেমন লেগেছে /লাগবে?
সন্তানকে নিয়ে একসাথে কাজ করলে বরং বাবামার সাথে সন্তানের বন্ধুত্ব বাড়ে।সম্পর্ক হয় গভীর। আমরা বয়স অনুযায়ী আমাদের সন্তানদের ঘরের কাজ ভাগ করে দিতে পারি।

...
২-৩ বছর

এ বয়সে শিশুরা সব কাজ করতে চায়,ঘর ঝাড়া থেকে রুটি বানানো সব।বাধা দেবেন না।করতে দিন,যদি সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে।এতে তার কাজে আগ্রহ বাড়বে।আর বিরক্ত হওয়া যাবে না।
মূলত এ বয়সে,শিশুদের কিছু নিয়ে আসতে বলুন,বা,নির্দিষ্ট কিছু রেখে আসতে বলতে পারেন।যেমন,শিশুর নিজের ডায়পার নিয়ে আসা,ও ফেলে আসা।
খেলনা গুছাতে বলা।
ময়লা কাপড় বালতিতে ধুতে দেয়া।
খাবার টেবিলে ম্যাট বিছাতে দেয়া।
কম ধূলাযুক্ত স্থান মুছতে দেয়া।

...
৪-৫ বছর

নিজের খেলনা একাই গুছানো
বিছানা গুছানো
নিজের রুম গোছানো
হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার বানানো, যেমন স্যান্ডউইচ বানানো
রান্না ঘর গুছাতে সাহায্য করা,যেমন হাড়ি,পাতিল, প্লেট জায়গা মত রাখা
ছোট,নিচু,আসবাবপত্র মুছতে দেয়া
গাছে পানি দেয়া

10-11
৬-৭ বছর

ময়লা ফেলা
চারকোণা কাপড় (টাওয়েল,রুমাল) ভাজ করা
জিনিষ মিলিয়ে রাখা,যেমন,মোজা মিলিয়ে রাখা
রান্নার কাজে সাহায্য করা – সবজি(মটরশুঁটি, আলু,পটল,গাজর) ছেলা
সন্তানকেও খাবার বানাতে দেয়া – সালাদ, কাস্টারড বানানো
বাগান করতে দেয়া
নিজের রুম নিজে ঝাড়ু দেয়া ও মোছা
মাকড়শার ঝুল ঝাড়া
বাথরুমে টয়লেট পেপার রাখা

...
৮-৯ বছর

বাল্ব /লাইট লাগানো বা বদলানো
কাপড় ধোয়া,ভাজ করা ও গুছিয়ে রাখা
বাজার করতে সাথে নিয়ে যাওয়া ও বাজার গুছিয়ে রাখা
খাবার টেবিল নিজে নিজে গুছানো
নিজের প্লেট,গ্লাস নিজে ধোয়া
আসবাবপত্র মোছা
রান্না ও বেক করা,যেমন,ডিমের জরদা বানানো, কেক/বিস্কুট বানানো
হ্যান্ডওয়াস রিফিল প্যাক ভরা

...
১০-১১বছর

নিজের বাথরুম ধোয়া
সিম্পল খাবার রান্না করা
রান্নাঘর নিজে গুছানো, হাড়ি,পাতিল ধোয়া
ছোট সেলাই করা – বোতাম লাগানো, হেম দেয়া
বাজার করা টুকটাক

...
১২বছর ও তার উপরে

কাপড় আয়রন করা
ছোট ভাইবোন কে দেখে রাখা
সবধরনের রান্না করতে দেয়া
পুরো বাসা ঝাড়ু দেয়া,মোছা
ইলেক্ট্রনিক কাজ করা
বাজারের লিস্ট করা ও নিজে বাজার করা
বাসা মেরামতের কাজে সাহায্য করা

কাজের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে ভাগ করা উচিৎ না।শিশুরা কাজ ভাগ করে না,আমরা ওদের এই ভুল ধারণা দেই,এটা মেয়ের কাজ আর এটা ছেলের….

পজেটিভ প্যারেন্টিং
ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

 

আসুন মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানি

অদৃশ্যমান অদৃশ্যমান
মৃত্যু (Death) মানে জীবের জীবনের সমাপ্তি। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে আমরা বলি মৃত।

মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়,
তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া।

মৃত্যু আসলে স্থায়ী জীবনে প্রবেশের দরজা। মৃত্যুর মাধ্যমেই আমরা পরকালের জিন্দেগীতে প্রবেশ করি।

...
মৃত্যুর ইসলামিক দৃষ্টিকোণঃ
মৃত্যু সম্পর্কে ক্বুরআনের কিছু আয়াত,

সূরা আলে ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“সমস্ত প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।”

সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে
“আল্লাহর আদেশ ছাড়া কারো মৃত্যু হয় না। এটা এমন এক পরিণতি যা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে।”

সূরা আলে সূরা সাবা ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“বলুন, তোমাদের জন্যে একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে যাকে তোমরা এক মহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না এবং ত্বরান্বিত ও করতে পারবে না।”

সূরা লুক্বমান ৩৪  নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই কিয়ামত (-এর ক্ষণ) সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে আছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী আছে। কোন প্রাণী জানে না সে আগামীকাল কী অর্জন করবে এবং কোন প্রাণী এটাও জানে না যে, কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত, সবকিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন।”

সূরা আলে সূরা জুমার ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”

সূরা আলে সূরা আশশুরা ৮১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন।”

সূরা আলে সূরা ওয়াকিআ ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।”

সূরা আলে সূরা কাহফ ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।”

সূরা আলে সূরা কাহফ ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমি জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।”

সূরা আলে সূরা হাজ্জ্ব ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আমিই জীবনদান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।”

সূরা আলে সূরা আল আ’রাফ ১২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“তারা বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের নিকট ফিরে যেতেই হবে।”

সূরা আলে সূরা আনকাবুত ৫৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।”

সূরা আলে সূরা আল ইমরান ১৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আর তোমরা মৃত্যুই বরণ কর অথবা নিহতই হও, অবশ্য আল্লাহ তা’আলার সামনেই সমবেত হবে।”

সূরা হাদীদ ২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।”

সূরা মুনাফিকুন ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।”

মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মৃত্যু বাক্যটি ১০৮টি আয়াতে ১১৮বার উচ্চারিত হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি আয়াত আপনাদের সামনে পেশ করা হল। প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে স্থায়ী নয় কেউ-ই।
রেফারেন্স:উইকিপিডিয়া,কোরআন।
অপেক্ষা অপেক্ষা

ফাতেমা শাহরিন
‘সাইকোলজি’

 

জোনাকির ঘুম

...

অপ্রস্ফুটিত অনূভুতি,
নিস্তব্ধতা কেটে
রাতের আধারকে ঘেঁষে বস।
চুপ…
জোনাকিরা ঘুম ঘুম ঘোরে
মৃদু আলো জ্বালিয়ে বলে
“ঘুমোও ত ভাই ”
এখনও প্রভাত ফোটেনি!!!

কামিনী গাছের মগডালের
পাখিটাও আড়মোড়া দেয়,
ওঠ…
ঝিম ধরে শব্দ খুঁজে মরি,
ঝিঁঝিপোকাদের ঠিক তখনই
বোবা ধরে….
নিস্তব্ধতা আবার,
বিরক্তিকর আলসেমি রাত
আকাশের চাঁদ তারারাও
মেঘেদের কোলে লুকিয়ে পড়ে। 

ক্লান্ত পথিক,
পা অবসাদে লুটে,
ঘুম, ঘুম, ঘুম
শক্ত লাঠিতে ঘুণ ধরেছে
কবে কে যানে…

নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ
কতকাল আর…
সুখ, অনুভূতি, ভুল শব্দরা
সেই ছাতা পরা ডায়েরির শেষ
পাতায়।

আজ
মায়াময় পৃথিবী
মৃদু ভালবাসা নেই বলে প্রতিধ্বনি তুলে…
কেন?
রাত,
নদীর সন্ধি 
পথিক বসে রয়
ঠিক মাঝ দরিয়াতে এখনও…
কেন?

হঠাৎ একদিন খেয়াল হল,
লেখকের দেহে প্রাণ নেই,
কই যেন যায়…
জেগে ওঠে মন
এখনই নামবে জোয়ার
আর সে যাচ্ছে ত যাচ্ছে
হারিয়ে যাচ্ছে ….
পানির অতল থেকে অতলে
না ফেরার দেশে
কেন?
হয়ত কলমের কালি শেষ।।

অজান্তেই অট্টহাসিতে 
ডুকরে ওঠে পানির ঢেউ আর বাতাসের
শো শো শো….

হুতুমপেঁচাটা ঐ দূরে ডাকছে
কেন?
বড় বিমর্ষতা করে….
কাঁপিয়ে তোল পৃথিবীকে।

অসমাপ্ত গল্পরা কেন?
মাঝ পথে থমকে দাড়ায়।

...

 

মজবুত “ভালবাসা” পারস্পারিক বন্ধনে

To love means to be actively concerned for the life and the growth of another.
[Irvin D. Yalom]
সাধারণত অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যারা অভিনয়ে পারদর্শী বা মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন(সাইকোলজিস্ট), তারা সর্বদা নিখুঁত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। হ্যা, অভিনেতা সুন্দর অভিনয়ের মাধ্যমে একটি চরিত্রকে দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন বৈকি। আর সাইকোলজিস্টরা তাত্ত্বিক জ্ঞান আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করেন। কিন্তু তারাও অন্যদের মতই মানুষ। তাদের জীবনেরও ভিন্ন ভিন্ন গল্প আছে। তারাও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করেন।

♥
♥Love is not a battlefield. Your head is.(ভালবাসা নয় কোন যুদ্ধ বরং মস্তিষ্কের যুক্তিবুদ্ধি)

সম্পর্ক জড়িয়ে থাকে ভালবাসা দিয়ে, ভালবাসা মানে যুদ্ধ নয়। যে সব সম্পর্কে অবনতি হয়, সেটাকে চিন্তা করলে, ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন ব্যক্তির এই ভালোবাসাটাকে যুদ্ধক্ষেত্র রূপে ধরা হয় না, বরং তাদেরকে যুক্তিবুদ্ধির সাথে চিন্তার দ্বন্দ্ব খোঁজা হয়। তাই সব মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ এই, আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, চিন্তা, নিউরনের খেলা, সংজ্ঞা, ট্রিগার, নিরাপত্তাহীনতা, স্বপ্ন এবং নিজেদের সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস সব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত হয় আমাদের ‘ভালবাসা’। “প্রস্ফুটিত ভালবাসা” খুব সুন্দর শব্দ। হ্যা, শেষ পর্যন্ত এটা আমাদের প্রশান্তি অনুভূতি দেয়।
আপনার চিন্তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
প্রশ্ন করুন,
What is love?

...
♥There is no such thing as perfect.(পারফেকশন হল একটি আপেক্ষিক শব্দ)

পারফেকশন এর ব্যাপারটা যেহেতু আপেক্ষিক সুতরাং আমার কাছে যা পারফেক্ট, আপনার কাছে তা পারফেক্ট নাও হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে বললে, পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুই পারফেক্ট নয়। তাই নিজেকে এবং নিজের সঙ্গীকে সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়ার নাম ভালবাসা।

...
♥Love is peeling an onion, not biting an apple.(ভালবাসা পেয়াজ কাটার এর মত, অ্যাপেল মত নয়)

পেয়াজ কাটতে গেলে চোখ দিয়ে পানি আসবে, অস্তিত্ব অনুভূতি থাকে। অনুভূতি প্রকাশিত হয়, যন্ত্রণা বুঝা যায়। অ্যাপেল কাটার মত নিস্প্রাণ নয় ভালবাসা।

...
♥If someone wants to be with you, you will know.(সত্যিকার অর্থে পাশে থাকা মানুষটির উপস্থিতি জানতে চেষ্টা করা)

যদি সত্যিকার অর্থে কেউ যদি আপনার পাশে থাকে, তাহলে আপনিও তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারবেন। সে অর্থে আপনার হাতটা কেউ ধরেছে বা ধরবে বলে কোন সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, আপনিও তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। বোঝার চেষ্টা করার মাঝেই ভালবাসা লুকায়িত থাকে। সেক্ষেত্রে বন্ধন মজবুত এবং স্থায়ী হয়।

*** ***
♥No one’s ever really “ready” for a relationship.(“প্রস্তুতি নিয়ে” কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে না)

রিলেশনশিপ এর মত ব্যাপারগুল আচমকা হয়, যেটার জন্য সাধারণত মানুষ তাৎক্ষণিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কোন সময় পায় না।
যেমন, বন্ধুত্ব।
আপনি শুধু অন্তর থেকে তা অনুভব করতে পারবেন।

...
♥Hold love. Don’t grab it.(ভালবাসাকে ধারন করতে হয়, দখল করা যায় না)

ধরুন যদি বলি,
পাখিকে, আলতো করে ধরতে হয়, বেশি শক্ত করে ধরলে কষ্ট/মরে যায়, মানে if I grab it, it’ll die.
ভালোবাসাও তেমনই। নিজের ভিতর অস্তিত্ব অনুভূত হয়, শক্ত করে অধীনে নিলেই উড়ে যায়।

...
♥Don’t stop believing.(বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখুন)

বিশাস করা থামিয়ে দিবেন না, তাহলে স্বপ্ন গুলো থেমে যাবে। অবিশ্বাসীদের মনে শুধু সন্দেহের জন্ম হয়।
তাই সর্বদা বিশ্বাস জাগ্রত রাখুন।

মুল:
জন কিম
অনুবাদ:
আফরিন তাসলিমা
সুমাইয়া তাসনিম
ফাতেমা শাহরিন

অপ্রত্যাশিত কিছু ভুল পারিবারিক বন্ধনে

...
পরিবার হচ্ছে একটি চমৎকার সংগঠন।
আমরা পরিবারকে কিছুটা রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী থাকেন, প্রেসিডেন্ট থাকেন, আর বাকী সবাই জনগণ।

একটা পরিবারের মুল চালিকাশক্তি হচ্ছে পারস্পারিক বন্ধন। দায়িত্ব, সম্মান আর ভালোবাসাযুক্ত থাকলে, পরস্পরকে চুম্বক আর ইস্পাতের মত দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে।
আর Barbara Greenberg ভদ্রলোক একজন সাইকোলজিস্ট তিনি অসংখ্য ক্লাইন্ট দেখেছেন, অতঃপর তার মনে হল আসলে সন্মানিত পরিবারগুলতে কেন যেন আস্তে আস্তে পারস্পারিক বন্ধনগুল নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ২৫ বছর ধরে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করছেন। অনেক বয়সের ব্যক্তিদের দেখেছেন।

তার মতে, বিভিন্ন ধরণের আবেগীয় কষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয় মুলত পরিবারের সদস্যদের কাজ থেকে।

এই পোস্টটি তিনি অনেকগুল জীবনের বাস্তব চিত্র দেখে তা থেকে তুলে এনেছেন Barbara Greenberg।

কিভাবে এই বিভ্রান্তিকর পারিবারিক ডায়নামিক্সের সেটটি সন্নিবেশিত হয়।
যা সত্যিকার অর্থে ভয়ঙ্করভাবে বিভ্রান্তিকর।

আসুন দেখা যাক সেই অপ্রত্যাশিত মূল্যবান কারণগুল,

মডেলিং মডেলিং
***মডেলিং(Modeling)

“””বাবা বাবা….বৃদ্ধ মা ঘর থেকে ডাকছেন ছেলেকে।
ছেলে ঘন্টা খানেক আগে অফিস থেকে এসে
ফ্রেশ হয়ে তার ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলছেন।
জি মা, এই মাত্র অফিস থেকে এসেছি,
ফ্রেশ হয়ে আসি।

♦পাঁচ বছরের আয়ান অবাক হয়ে বলে বসে,
“বাবা তুমি মিথ্যে বলছ”।””””

কিছু পরিবারের সদস্যরা কথা এবং কাজে যখন দ্বিমুখী পদক্ষেপ নেন।
ছেলে বৃদ্ধ মায়ের আবেগ অনুভব করেনি ছোট্ট ছেলেটিও বড় হয়ে তার বাবার আবেগ বুঝতে সমস্যায় পড়তে পারে। ইতিহাস রিপিট নেক্ট ইতিহাস।

সম্ভবত আপনি দেখছেন আপনার মা বাসার কাজের মেয়েটিকে মানুষ হিসেবে প্রাপ্ত সন্মান দিচ্ছেন, সন্তান হিসেবে এই দৃশ্যটির আপনি সাক্ষী। যখন আপনি ক্রমবর্ধমান ঐ পর্যায়ে যাবেন। আপনি তাই করবেন যা শিখছেন। সুতরাং বাড়িতে আমরা এই মডেলিং দেখে দেখে বন্ধন গড়া শিখি।

উচ্ছ্বাস উচ্ছ্বাস

***শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ(Power and Control)

ধরুণ,
ছোট্ট মেয়ে কণা এবার ছয় বছর।
এই দাদা এক গ্লাস পানি দাও ত।
প্রায় দাদাজান কণাকে এভাবেই বলে দাদাজান এক গ্লাস পানি দাও ত।
কণার বাবা শুনে চমকে উঠে।
তুমি বেয়াদব এর মত তোমার দাদার সাথে কথা বল ঠাস..ঠাস দিব কিন্তু
ভদ্রতা শিখছ না তুমি।
সরি বল, সরি বল দাদাজানকে।
এই যে আমরা দেখি কিছু বাচ্চা বুলিং(অন্য বাচ্চাদের খোটা দেয়, নানান ধরনের কটু কথা, নাম বিকৃতি বা পোশাক আশাক নিয়ে কষ্ট দেয়)
কেন করে তারা এই রূপ পাওয়ার আর অতিরিক্ত কন্ট্রোল পরিবেশে। অর্থাৎ প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের উচ্চ ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ উচ্চ মাত্রার প্রয়োগের ফলে বাচ্চাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ গড়ে উঠে।

ক্লান্তি ক্লান্তি

***ক্লান্তি(Exhaustion):

“”””হ্যালো
হ্যা শুনছ তুমি।

♦আসসালামু আলাইকুম, কি অবস্থা?

অবস্থা কি বলব? আম্মার কাছে বাবুকে দিয়ে একটু বাথরুমেও যেতে পারি না।
আজকে কি হয়েছে শোন…..

ছেলেটি খুব খুব বিরক্ত প্রথম প্রথম মায়ের নামে কথাগুল শুনলেও
এখন বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন দিন দিন।
বউ ফোন করলে হু হা বললেও ফোন পাশে রেখে দেন।
আগের টান কি কমছে।
নিজের সন্তানরা দাদা দাদী সম্পর্কে কি ভাবছেন???”””

মাঝে মাঝে কেউ কেউ কোন আত্মীয় বা আপনজনের কিছু আচরনে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন।
তারা এর আচরনের পরিবর্তন এর ব্যাপারে আশাহত হয়ে পড়েন, ভাবেন অনেক সহ্য করেছি আর না। ফলে তাকে অপ্রয়োজনীয়, বাতিল মানুষের তালিকায় ফেলে দেন অজান্তে কারন প্রত্যেকেরই কষ্ট সহ্য করার একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে।

নতুন জীবন নতুন জীবন

***নতুনভাবে জীবন শুরু:

“মেয়েটির একটা ছেলের সাথে খুব খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল,
বিয়ের আগে দীর্ঘ সময়ের পরিচিত জায়গা থেকে চলে যেতে হচ্ছে যাতে ছেলে পক্ষ এ বিষয়টি কোন ক্রমে টের না পায়।””

জীবনের কোন বেলায় যখন আমার পরিবার, আমার আশেপাশের মানুষজন, আমার ছোটবেলা এবং আমার অতীত সম্পর্কে অনেক কিছু জানে কিন্তু আমি চাইনা অতীতের কোন কিছুই সামনে আনতে তখন আমি কিভাবে আমার অতীতকে ভুলে জীবনের নতুন গল্প লিখব? একটা পথ হচ্ছে, এসব জানে যারা তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া।
আপনার পরিবার এবং অন্যান্য সম্পর্ক থেকে অনেক দূরে সরে যায়। সম্ভবত ভুল অতীত স্মরণ করিয়ে দিতে চান না কেউ।
এর একটি উপায় হল সেই সব সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া।
যাতে আপনার গল্প পুনর্লিখনে কেউ বাধা হয়ে না দাড়ায়।

বিশ্বস্ততা বিশ্বস্ততা
***বিশ্বস্ততা:
“বিয়ে ত করেছ?
♦জি।
কিছু বিষয় এখন তোমাকে মেনে চলতেই হবে।
♦জি।
তোমার বোনের বাচ্চাদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি আর লাফালাফি ছেড়ে দিতে হবে।
♦মানে, কেন?
কেন মানে যে কোন একটা পরিবার এখন বেছে নিতে হবে বুচ্ছো।
♦না।
হয় বাবার বাড়ি নয়ত শশুড় বাড়ি।”

ধরুন আপনি এমন একটা সিচুয়েশন এ পড়লেন যে আপনাকে পুর্বের সম্পর্কের বাচ্চা এবং নতুন সম্পর্কের পার্টনারের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেয়া কি সহজ,সাধারনত??
মোটেই না।
কিন্তু অনেকেই এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়।
তখন বন্ধন ভেঙ্গে পড়ে।

এর ফলে আত্মীয়তার বন্ধনে, অর্থাৎ বাবা-মার সাথে সন্তানদের, ভাই-বোনদের মাঝে এবং এরূপ অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের (ফুপু, মামা, খালা) একে অপরের সাথে দিন, মাস, বছর এবং এমনকি কখনো কখনো সারা জীবনের জন্য আর সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না।

বন্ধন বন্ধন
আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং পারিবারিক বৈষম্য নিয়মনীতির সংশোধন করা দরকার। তা না হলে ইতিহাস ঘেটে দেখা যাবে এর ক্ষতিকর দিক আছে। যে সম্পর্কের পুনর্বিবেচনা করার সামান্য ইচ্ছা এবং শক্তি রয়েছে।সেখানে সহযোগিতা করা দরকার।
আপনি আপনার পারিবারিক গতিবিদ্যার নির্দিষ্ট সেট বুঝার চেষ্টা করুন। তা প্রত্যেকের সৌভাগ্য বয়ে আনবে।

লেখক:
Barbara Greenberg,
Ph.D
clinical psychologist
অনুবাদ:
Amina Anzum Mishu
&
Fatema Shahrin

 

বাহারি কুশন

চেয়ারের এক কোণে পড়ে থাকার যুগ শেষ। শুধু কুশন দিয়েই এখন ঘরের চেহারায় আনা যায় নতুনত্ব। কুশন সাজিয়ে রাখার পরিবেশনাতেও যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ঢং। বড় সোফা হোক বা নিচু, ঘরে ডিভান-শতরঞ্জি, যা-ই রাখা হোক, কুশন থাকবেই।

বসার ঘর ছাড়াও শোয়ার ঘর আর শিশুর ঘরে কুশন রাখতে পারেন। থাকতে পারে ঘর বা বারান্দার এক কোণে রাখা দোলনাটাতেও। নানান স্থানে ব্যবহারের উপযোগী কুশন পাবেন অনায়াসেই। শুধু অন্দরসজ্জার বাকি দিকগুলো খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়, তাহলে ঘর সাজানোর সময় আর আলাদা করে ভাবতে হবে না। কোন ঘরে কোন স্থানে ব্যবহার করতে চাইছেন, এর ভিত্তিতে কুশনের আকার বেছে নিতে হবে। কুশন কভার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কতটা সময় বা সুযোগ পাচ্ছেন, এর ওপর নির্ভর করবে কোন উপকরণে তৈরি কভার আপনার জন্য ভালো।

একটি জায়গার জন্য ভিন্ন নকশায় তৈরি একই রঙের কুশন কভার বেছে নেওয়া যায়। ভিন্ন রঙের কাপড়ে একই নকশা থাকলে তা-ও সুন্দর দেখাবে। এমনকি রং বা নকশায় মিল না থাকলেও অন্তত একই কাপড়ে তৈরি কুশন ব্যবহার করা উচিত। একেবারেই মিল না রেখে নানান ধরনের কুশন বেছে নিলে তা ভালো দেখায় না।

ঘরভেদে কুশন কাভার ব্যবহারের নির্দেশনাবলি জানালেন অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী

 বসার ঘর
মাঝারি আকারের বসার ঘরে শুধু সোফা আর চেয়ার রাখার সুযোগ থাকে। এমন ঘরে শুধু সোফাতেই কুশন রাখতে পারবেন। সোফার আকার-নকশা অনুযায়ী কুশন ও এর কাভার বেছে নিন। বেত, কাঠ বা বাঁশের তৈরি সোফা থাকলে দেশজ নকশার কুশন কভার বেশ লাগে। গ্রামীণ চেক, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কাঁথা স্টিচ বা অ্যাপ্লিক বেছে নিতে পারেন। কুরশি কাঁটার কাজ করা থাকলেও ভালো দেখাবে। পর্দা ও অন্যান্য আসবাবের দিকেও খেয়াল রাখুন কুশন কাভার বেছে নেওয়ার সময়।

ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সোফা (গদিওয়ালা, বড় সোফা) থাকলে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি কাপড়ের কুশন কভার মানানসই। এ ছাড়া কাতান, সার্টিন, লেস, নেটের কুশন কভার বেছে নিতে পারেন। সোফার জন্য সাধারণত ১৪ বাই ১৪ থেকে ১৮ বাই ১৮ আকারের কুশন ব্যবহার করা হয়।

বসার ঘরটা বড় হলে সোফা ছাড়াও থাকতে পারে ডিভান বা শতরঞ্জি। ডিভান থাকলে নকশিকাঁথা বা নকশিকাঁথার চাদর বিছিয়ে কাঁথা স্টিচ বা নকশিকাঁথার কুশন কভার দিয়ে সাজানো যায়। রঙিন শতরঞ্জিতে বড় কুশন মানায়। ২০ বাই ২০ থেকে শুরু করে ২৮ বাই ২৮ আকারের কুশন ব্যবহার করতে পারেন।

শোয়ার ঘরে
শোয়ার ঘরে বালিশের সামনে কুশন রাখতে পারেন কিংবা বালিশ ছাড়াই শুধু কুশন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক দেশেই শোয়ার ঘরে বালিশের পরিবর্তে শুধু কুশন রাখার প্রচলন রয়েছে। বালিশ না রাখলে অবশ্যই ভালো মানের কুশন ও কাভার ব্যবহার করা উচিত। ভালো মানের দেশীয় সুতি কাপড় কিংবা চায়নিজ বা জাপানিজ কাপড়ের কুশন কিনতে পারেন। বালিশ থাকলে এর কভারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কুশনের আবরণ বেছে নিন। একটু হালকা রঙের কাপড়ই এই ঘরটার জন্য ভালো।

শিশুর ঘরে
শিশুর ঘরে কুশন কভার রাখলে ওর মানসিকতার দিকে লক্ষ রেখে সেটি বেছে নিন। প্রজাপতি, টেডি বিয়ার, সিনড্রেলা বা ফুটবলের নকশায় তৈরি কুশন কভার হতে পারে ওদের পছন্দসই। বিছানায় তো রাখতেই পারেন, শিশুর ঘরে ডিভান থাকলে সেখানেও এমন কুশন রাখা যায়। এই ঘরের জন্য একটু গাঢ় রঙের কাপড় বেছে নেওয়া ভালো, নইলে সহজেই নোংরা হয়ে যেতে পারে।

 অন্য যেথায় একটু আরাম
বাড়িতে আলাদা লিভিং রুম থাকলে সেখানে নানান আকৃতির কুশন রাখতে পারেন। চারকোনা বা কোলবালিশের আকৃতির কুশন জড়িয়ে একটু শান্তিতে বসতে পারেন। আড্ডা চলতে পারে বড় কুশনের ওপর বসেও।

 কেমন করে মেলাই
গুলসান নাসরীন চৌধুরী জানালেন, রং-বেরঙের কুশন কভার দেখতে ভালো লাগে। তবে কোনো এক দিক থেকে একটু মিল রেখেই রং বেছে নেওয়া উচিত। হয়তো একই কাপড়ের তৈরি কুশন বেছে নেওয়া হলো; কোনোটাতে লালের ওপর লাল গোলাপ, কোনোটাতে হলুদের ওপর হলুদ গোলাপ আবার কোনোটায় বেগুনির ওপর বেগুনির গোলাপের নকশা থাকল। আবার হয়তো ঘরের একটা দেয়াল সি গ্রিন; এই ঘরের চারটি সোফার কুশনের কভারগুলোর প্রতিটিই সি গ্রিন রঙের, তবে একটিতে হ্যান্ড পেইন্ট করা রয়েছে সাদা গোলাপ, একটিতে সাদা বেলি, একটিতে সাদা রজনীগন্ধা আর অন্যটিতে ফুটিয়ে তোলা সাদা দোলনচাঁপা; অসাধারণ দেখাবে।

 যত্নের কথাও ভাবুন
ব্যস্ত জীবনে যত্ন নিয়ে সুতি কাপড় পরিষ্কার করা, ধোয়ার পর শুকানো ও ইস্ত্রি করার সময় মেলা ভার। তাই কৃত্রিম তন্তুর কাপড় বেছে নিতে পারেন। চট করেই পরিষ্কার করা হয়ে যাবে, বাড়তি ঝামেলা নেই। তাই নিজে কেমন সময় পাবেন কুশন কভারের যত্ন নেওয়ার, সেটিও খেয়াল রাখুন কুশন কভার কেনার সময়।

 কোথায় পাবেন, কেমন দাম?
বাজার ঘুরে পাওয়া গেল বৈচিত্র্যময় সব কুশন কভারের খোঁজ। ফ্যাশন হাউস আড়ং, মায়াসির, নিপুণ, বিবিয়ানা, যাত্রায় পাবেন নানান নকশার কুশন আবরণ। ফুল বা পাতা; বাহারি নকশা—সবই পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলে। পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি কুশন-আবরণ পাবেন ফ্যাশন হাউস যাত্রায়। প্রিন্টের, এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক করা কুশন কভার রয়েছে আড়ংয়ে, মিলবে সুতি বা সিল্ক যেকোনো কাপড়ই। এর বাইরে অন্য ধাঁচের কুশন কভার পাবেন ক্ল্যাসিক্যাল হোম টেক্সে। মখমলের নকশা করা বা চুমকি বসানো কুশন কভার পাবেন এখানে। আধুনিকতার ছোঁয়া পাবেন এখানকার কুশন কভারে, জ্যামিতিক আকারের ব্যবহারে একটু অন্য নকশায়। এ ছাড়া নিউমার্কেট, চাঁদনি চক আর গাউছিয়া মার্কেটেও পাবেন বিভিন্ন ধরনের কুশন কভার। আকার, কাপড়ের ধরন ও নকশাভেদে প্রতিটির দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।

 

পুরনো কাপড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে কাঁথায়

যদি নির্দিষ্ট সময় ধরেই বলতে হয়, তবে বলা যায় ছয় মাস বা এক বছর অন্তর অন্তর প্রায় সব বাড়িতেই জমে যায় কিছু পুরনো কাপড়। পুরনো জিন্স, শার্ট, টি-শার্ট, ওড়না বা টাইগুলো একসঙ্গে জমিয়ে রাখা হয়। বলা ভালো, সাধারণ এসব বাজেয়াপ্ত কাপড় বর্জ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে তুলনামূলক কম। বর্জ্য কম উৎপাদন যেমন পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ, তেমনি প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত উপকরণগুলো পুনর্ব্যবহার করতে পারাও সবুজ জীবনযাপনের অংশবিশেষ। তাই পুরনো এসব কাপড় দিয়ে যদি ব্যবহার উপযোগী কাঁথা তৈরি করা যায়, তাহলে একই সঙ্গে পণ্য পুনর্ব্যবহার, বাজেয়াপ্ত থেকে রক্ষা করা ও কেনাকাটার খরচ কমানো— এ তিন ভূমিকায় আপনি থাকতে পারছেন।

পুরনো টি-শার্টের সামনে বা পেছনে যদি কোনো নকশা বা লেখনী থাকে, তাহলে সেগুলোকে নির্দিষ্ট মাপে কেটে সংরক্ষণ করুন। অর্থাত্ আপনার সংগ্রহে যদি পাঁচটি টি-শার্ট থাকে, তাহলে সবগুলোর নকশাকার অংশকে ৫ ইঞ্চি বাই ৫ ইঞ্চি এ মাপে বা এর থেকে বড় মাপে কেটে নিন। উপর-নিচ বা পাশাপাশি রেখে সেলাই করুন। শার্টের ক্ষেত্রে স্ট্রাইপ বা রঙের মিল করে নিতে পারেন। আপনার কাপড়ের ধরনের সামঞ্জস্যও রাখা যেতে পারে। সবগুলো টুকরো তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো একসঙ্গে সেলাই করে বানিয়ে ফেলতে পারেন নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বা আপনার পছন্দের আকারের কাঁথা। এভাবে পুরনো টাই এমনকি টি-শার্টের ট্যাগও কাজে লাগানো সম্ভব নান্দনিক কাজে।

 

বাতাস বিশুদ্ধ রাখবে শখের ঝাড়বাতি

আলো ঘর সাজানোর অনুষঙ্গের মধ্যে অন্যতম। শুধু ঘর আলোকিত করার জন্যই নয়, ঘরের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রেও আলোকসজ্জার জুড়ি মেলা ভার। বহুকাল আগে থেকে আলোর ব্যবহার হয়ে আসছে ঘর সাজানোর কাজে। তাই তো অভিজাত কিংবা শৌখিন কারো বাড়িতে দেখা মেলে আকর্ষণীয় ঝাড়বাতির। অনুষঙ্গটি দ্রুত ঘরের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।

পরিবেশবাদীরা হয়তো এতক্ষণে ভাবা শুরু করেছেন, এতে শক্তির তথা বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে ভীষণ। আবার সেসব ঘরের ভেতরের পরিবেশ গরম করে ফেলছে মুহূর্তেই। কিন্তু এমন যদি হয়, আপনার ঘরের সিলিংয়ে ঝোলানো ঝাড়বাতিটি ঘরের ভেতর বাতাস বিশুদ্ধ করার কাজটি করছে আপনাতেই। তাহলে অবাক লাগবে নিশ্চয়ই। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে যদি ঘরের ভেতরের বাতাস বিশুদ্ধ করা যায়, তাহলে তো সেটাই ভালো।

সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাড়বাতি আবার কাজ করবে বাতাস বিশুদ্ধকারক হিসেবেও। এমন কিছুই তৈরি করেছেন লন্ডনের এক নকশাকার ও প্রকৌশলী জুলিয়ান মেলসিওরি। তিনি তৈরি করেছেন এমন একটি ঝাড়বাতি, যা শুধু ঘরকে আলোকিতই করবে না, সঙ্গে চারপাশের বাতাসও বিশুদ্ধ করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া লন্ডন ডিজাইন উইকে এটি প্রদর্শিত হয়েছে। ঝাড়বাতিটিতে ব্যবহার করা কাচের টুকরো পরিপূর্ণ করা হয়েছে সবুজ শৈবালে, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন নির্গমন করে।

সবাই যখন ঘর সাজানোর প্রতিটি অনুষঙ্গে পেতে চান সবুজের ছোঁয়া, সেদিক থেকে বাদ যাবে কেন সিলিংয়ে ঝোলানো সুন্দর ঝাড়বাতিটি। সেদিক বিবেচনায় জুলিয়ানের তৈরি করা ঝাড়বাতিটি শুধু পরিবেশবান্ধব আলোর উত্সই নয়, সঙ্গে অনেকখানি সৌন্দর্য বিলাবে ঘরময়। ঝাড়বাতিটিতে ব্যবহার করা সবুজ শৈবাল নকশায় জুড়ে দিয়েছে অনন্যতা। মজার বিষয়, বিশেষ এ বাতি ব্যবহার করা যাবে ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে যেকোনো স্থানে, যেখানের বাতাস বিশুদ্ধ করার প্রয়োজন।

বাইরে থেকে হঠাত্ দেখলে ঝাড়বাতিটিকে বেশকিছু পাতা ছড়িয়ে বসে থাকা ঝুলন্ত গাছের মতোই মনে হবে। ঝুলে থাকা বাতিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি বেশকিছু নকল পাতা। যদিও সেসব পাতা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আসল যেকোনো পাতার মতোই।

জুলিয়ান শুধু একজন নকশা প্রকৌশলীই নন, সেসঙ্গে তিনি প্রথম সারির একজন জৈব রাসায়নিক প্রযুক্তি গবেষকও। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি ‘আর্টিফিশিয়াল লিফ’ নামে একটি পরিকল্পনা হাতে নেন। এর পেছনে বেশ সময় ব্যয় করেন। ধীরে ধীরে সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তৈরি করেন অভিনব এ ঝাড়বাতি। মাইক্রোবায়োলজিক্যাল লাইফ ফর্মের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করে, ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে জুলিয়ানের বায়োনিক লিফ প্রস্তুত করা হয়েছে। বলা চলে, এসব একত্র হয়েই সুন্দরের আধার ঝাড়বাতিটি প্রস্তুত হয়েছে।

সূত্র: ইনহ্যাবিট্যাট

সন্তানের উৎসাহ এবং উদ্দীপনা বাড়ানোর কিছু উপায়!

ধরুন আপনার সন্তান হঠাৎ কোনো অপরাধ করে ফেললো। অপরাধ করার ফলে তার মধ্যে শাস্তি পাওয়ার চেয়েও বেশি যে ভয়টি কাজ করে তা হলো, আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়। তাই তাকে জানতে দিন শত অপরাধ করার পরেও সে আপনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না।

...
“বাহ! তোমার ঘর তো খুব পরিষ্কার!” “বিছানা গুছিয়ে ফেলেছো? দারুণ!” “তোমার কাপড়গুলো কী চমৎকার ভাঁজ করেছো! সাবাশ!” – এইসব ছোট ছোট কথায় আপনার সন্তান তার প্রতি আপনার আস্থা আর সমর্থন টের পায়। এগুলোর মাধ্যমে সে বুঝতে পারে তার চেষ্টার কদর করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোনও ইতিবাচক কথায় বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। ফলে তাদের মাঝে ভালো কাজ গুলো বার বার করার স্পৃহা জন্মে।

...
আমরা মানুষ, আর মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। বাচ্চাদের কাছে ভুল স্বীকার করার এবং ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহস থাকা জরুরী। এতে তারা বুঝতে পারবে যে আমরা তাদের সম্মান করি ও গুরুত্ব দেই। এতে বাচ্চারা শেখে যে, কেউ ভুল করলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ, এবং একই ভুল বার বার করা উচিৎ নয়।

।।।
নেতিবাচক অনুভুতি চেপে রাখলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাজনিত মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের রাগ করার অধিকার আছে। বাচ্চারা ব্যথা পেলে বা হারানো খেলনার জন্য মন খারাপ করলে তাদের কাঁদতে দেয়া উচিৎ। নেতিবাচক অনুভূতি বা তার প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসলে শিশুর স্বকীয়তা এবং স্বতঃস্ফূর্ততার ওপরেই নিষেধাজ্ঞা।
পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বাচ্চাকে শেখানো কীভাবে কারো ক্ষতি না করেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়।

...
ভয় পাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার- এটা বাচ্চাকে বুঝতে দেয়া জরুরী। দুনিয়ার সবাই-ই কিছু না কিছু নিয়ে ভয় পায়, আর ভয়কে জয় করা ভা ভয় সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়াই সাহস। আপনার বাচ্চা যদি কিছু নিয়ে ভয় পায়, তাহলে তাকে আপনার নিজের ছোটবেলার গল্প বলুন, বলুন আপনি কী নিয়ে ভয় পেতেন, আর কিভাবে সেই ভয়কে সামলে নিয়েছিলেন।

...
শিশুর পছন্দকে প্রাধান্য দিন। এতে করে সে শিখবে কিভাবে নিজের মনের কথা শুনতে হয়, আর কিভাবে তার বিশ্বাস, ইচ্ছা বা আগ্রহের সাথে যায়না এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হয়। যেসব বাচ্চাকে সব কিছুই পছন্দ করে দেয়া হয়, তারা বড় হয়ে নিষ্ক্রিয়, নির্ভরশীল এবং সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
শিশুদের কাছে প্রশ্নহীন আনুগত্য চাওয়ার আগে ২০ বছর পরের কথা ভাবুন। আপনি কি তাকে এমন মানুষ বানাতে চান, যে নিজের মনের কথা না শুনে অন্যরা যাই বলে তাই শোনে?

---
বাচ্চাকে তার পূর্ববর্তী সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিন। এতে সে তার নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং আরও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

পজেটিভ প্যারেন্টিং ট্রেইনার গ্রুপ,
লাইফস্প্রিং(মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট),ঢাকা
https://www.facebook.com/lifespringinstitute/

তেষ্টা..

যদি আবার ভালবাসতে হবে বলিস,
তবে বলে দিই,
ও আমার আর হবেনা।
অমন উজাড় করে দেবার মন
আমার আর নেই এখন।
যা পারিনা,
তা পারবো বলে আর
বসতে চাইনা ভদ্রলোকদের আসরে।
আজকাল বড্ড উছন্নে গেছি জানিস!
মনে আর ভদ্রলোকদের জন্য মায়া হয় না…
আমার কেবল অভদ্রদের মায়া হয় ইদানিং।
যত ছোটলোক, নিচুজাত, অচ্ছুতদের মায়া হয়…
আমি কেবল ভালবেসে ফেলি পথকে।
ঘরকে আর পারিনা…
আমার কেবল যুগ যুগ ধরে
হেটে যেতে মন চায় পৃথিবীর পথে।
কেবল মনে হয়,
হাটতে থাকি,
হাটতে থাকি…..
হাটতে হাটতে একদিন লুটিয়ে পড়ি
পথের প্রশান্ত বুকে।
পথের ধূলায় ঢেকে যাবে
আমার মুখোশের গায়ে লেগে থাকা যুগান্তরের ক্লান্তি।
আমার আসল-নকল সবটা ঢেকে যাবে তাতে…।
আমার সমস্ত রেখে যাবো পথের কাছে।
সমস্ত অর্জন, প্রাপ্তি, আমিত্ব…
শেষ নিঃশ্বাসে পথের কোলে মাথা রেখে
মস্তিষ্কের স্নায়ু হাতড়ে খুঁজবো
তরল আবেগগুলো,
নিষ্কলঙ্ক ভালবাসাগুলো,
সে সময়গুলো;
যখন সবাইকে ভালবাসতাম খুব!
নিস্প্রাণ নেত্রজোড়ায়
দুধের সরের মত ভেসে থাকবে নিস্পাপ অনুভূতিরা।
আমৃত্যু এত অমৃত পান করেও
তেষ্টায় খুব ছটফট করবো হয়ত,
কিন্তু তাতে কি?
এক জীবনে কারইবা তেষ্টা মেটে!

...

সুমাইয়া তাসনিম
(সাইকোলজি)

ধোঁয়া মাখা সময়

....

ভালোবাসা?
কই গেল হাস্যমাখা সব মুখ
রাত্রির বাইরে জলন্ত গ্রাম
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

....

কান্না ঢাকা মেঘ বৃষ্টি
মানুষ, মানুষ এবং কোথায় মানুষ বল
ধোঁয়া মাখা বিকাল
ফোঁটা ফোঁটা লাল ঢেউ
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

রক্তের ঝড়
রক্তের ঝড়

বসন্ত এর প্রেমময় দুপুরের গান
স্বপ্ন পাগল মন
হারিয়ে গেলি কোথায় বল
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

বসন্তের ঢেউ
বসন্তের ঢেউ

ঘুম,
কিভাবে ঘুমাও তোমরা রোজ?
অজস্র শব্দ, চিৎকার, কান্না
অবুঝ আমার ভোর
চোখ বোঝ
ব্যর্থ চেষ্টা
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

জলন্ত আগুন
জলন্ত আগুন

সময় মরেছে কবে
রংবেরঙের পাখনা ডানার
স্বপ্নে আলিঙ্গন
অর্থহীন ধূসর আকাশ
শান্ত এবং শান্ত
মন…
ফিরে যা দূরে।

কবে আসবে ভোর
কবে আসবে ভোর

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে-শেষ পর্ব

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে এ জন্য নয় যে তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,
বরং এ জন্য যে আপনি শান্তিতে থাকার যোগ্য”
জীবনের তিক্ততা,শত্রতা, আক্রোশ,বিষাক্ততাকে ছেড়ে দিন,চলে যেতে দিন(let go)।
আমরা পৃথিবীতে যখন আসি তখন কষ্ট,যন্ত্রনা,প্রতারনা,বিশ্বাস- ঘাতকতা,আক্রোশ,শত্রুতা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না।

১। যারা আঘাত করে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করুন:
ক্ষোভ,ক্রোধ,আক্রোশ,অপমান বোধের কারনে এ রকম ভালোবাসা দেখানো কঠিন মনে হতে পারে।
তবে নিজের মনের শান্তির জন্যই আমাদেরকে তেমনটি করতে হবে।
মার্টিন লুথার কিং(জুনিয়র) বলেছেন” অন্ধকার দিয়ে অন্ধকার দূর করা যায় না।এক মাত্র আলোই তা করতে পারে।ঘৃনা দিয়ে ঘৃনা দূর করা যায় না।এক মাত্র ভালোবাসা দিয়েই তা করতে হয়।”
অন্যকে ক্ষতি করতে চেয়ে আমরা কিন্তু অবশেষে নিজেরই ক্ষতি করে বসি।
যখনই নেতিবাচক স্পন্দন (negative vibe)প্রকাশ করবেন,তখন আপনি নিজের স্পন্দনকেই নীচে নামিয়ে আনবেন।
আপনি যা আপনার কাছে তেমন কিছুই আকৃষ্ট হবে।
তাই প্রতিশোধ পরায়নতা আপনার নিজের কষ্ট পীড়নকে বাড়িয়ে তুলবে।
যার প্রতি এই ঘৃনা আক্রোশ, তার এতে কিছু যায় আসে না।
যে পর্যন্ত ঘৃনা,আ্ক্রোশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে,;ভালোবাসা, দয়া,করুনায় ফিরতে না পারবেন,ততক্ষন আপনি প্রকৃত ” মুক্তি” পাবেন না।
তাই যারা আপনাকে আহত করেছে, আঘাত করেছে,অপমান করেছে বা ছোট,হেয়,তুচ্ছ করেছে; যত কঠিনই হোক তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ভালোবাসতে হবে
(গত কালই এক বৃদ্ধা মহিলাকে চেম্বারে দেখলাম।তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ বড় ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছেন।তার স্বামী অনেক আগেই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে একই বাড়ীতে বসবাস করছেন।স্বামীর কাছ থেকে সারা জীবন আঘাত,অপমান আর অবহেলাই পেয়ে এসেছেন।
গত কয়েক মাস যাবৎ স্বামীর ২ য় স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর মনো মালিন্যের কারনে ২ য় স্ত্রী বাসা ছেড়ে চলে যান।ফলে স্বামীর খাওয়া দাওয়ার ভার তার উপর পড়ে।এই দায়িত্ব পালন করতে তার মন চাচ্ছে না।যে তাকে এত অবহেলা,নির্যাতন করেছে,নিজ হাতে রান্না করে তাকে খাওয়াতে কিছুতেই মন চাচ্ছে না।কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।কেননা তার আশ্রয়ে আছে এবং লোক লজ্জা।
সঙ্গে তার মেয়ে ছিল।আমি তাকে নিজের মনের শান্তির জন্যই পুরনো ঘৃনা,আক্রোশ মুছে ফেলে স্বামীকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখতে বললাম।তার মেয়েও আমার সঙ্গে একমত হলেন।কিন্ত্ ওনাকে নারাজ মনে হলো।
উল্লেখ্য উনার ডিপ্রেশন এতে আরো গভীর হয়েছে ও ঔষধ তেমন কাজ করছে না।)
তবে এই ক্ষমা করে দেওয়াটি রাতারাতি করতে হবে তেমন নয়।অল্প অল্প করে ভালোবাসতে চেষ্টা করে আপনি ক্রমাগত ভাবে দেখবেন ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন।
***
মূলত: আবেগগত যন্ত্রনার প্রতি আমাদের এক ধরনের “নেশা” তৈরী হয়ে যায়।আমরা এই নেশা আকড়ে ধরে থাকি।
কিন্তু যখনই কষ্ট পাওয়ার নেশা ছাড়তে পারবো আমরা প্রকৃত ভাবে স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্দি করতে পারবো।
2। নিজের সর্বোত্তম রুপটি অর্জনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন:(Focus on becoming best version of yourself)
মনে রাখবেন” আহত মানুষ অন্য মানুষকে আহত করে।নিরাময় প্রাপ্ত মানুষ অন্যকে নিরাময়ের চেষ্টা করে।”
পৃথিবীতে এত যন্ত্রনা,,কষ্ট চলমান রয়েছে,কেননা যারা আহত হয়েছেন,আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন,তারা সে যন্ত্রনাকে “জীবন্ত” করে রেখেছেন।এ ভাবে অন্য জনের মধ্যে তা সন্চালিত করে দিচ্ছেন।( গোত্রে গোত্র যুদ্ধ,ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ,এমনকি পরিবারে পরিবারেও ব্যক্তি ব্যক্তিতে যুদ্ধ একারনেই চলে আসছে)
মনের ও আত্মার স্বাচ্ছন্দ্য,সহজতা বিনষ্ট হওয়ার এই অসুখ এ ভাবে সন্চালন হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
*** অন্যকে ছিড়ে-ফুড়ে তছনছ করে দেওয়ার দিকে সব দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে,বরং নিজকে নির্মান করার দিকে আমাদের বেশী নজর দিতে হবে।
৩। মনে রাখবেন চূড়ান্ত নিখুত হওয়ার প্রত্যাশা, অবাস্তব অপ্রত্যাশিত:
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে মানুষ ভুল করে এবং এ রকম ভুল অহরহই হয়।
যদিও এ রকম ভুলের কিছু ক্ষেত্রে খারাপ পরিনতি হয়ে থাকে(যেমন ঐ মহিলার স্বামীর ভুল), কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সে সব দূর্ঘটনাবশত ঘটে থাকে,উদ্দেশ্যমূলক নয়।
আমরা প্রত্যেকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত
এবং আমাদের বেশীর ভাগই ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যের জন্য মন্দ কিছু করতে চাই না।
মনে রাখতে হবে আমরা একই সমুদ্রে সাতার কাটছি এবং একই স্রোতের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি।
আমরা সবাই চাচ্ছি এই ঢেউয়ের মাঝে কোন রকমে মাথা উপরে রেখে ভেসে থাকতে।
এরই মাঝে আমরা কিছু ভুল করে বসি।
মানষকে ভুল করতে এলাউ করুন এবং এ ভাবে ভুলের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন
এবং মনে রাখুন সম্ভবত আপনিও একই ভুল করেছিলেন( ঐ মহিলারও কি কোন ভুল ছিল না?)।
অন্যকে ক্ষমা করা সহজ হবে যদি মনে রাখেন আপনার মতন তারাও মানুষ এবং মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে।

*** ক্ষমা করার সময় বলুন
” আমি ক্ষমা করে দিচ্ছি ও নিজকে মুক্ত করছি।
আমি উজ্জলতর এক ভবিষত্যের দিকে আমার যাত্রাকে অগ্রসর করছি।

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com

 

এই সময়ে ঘর পরিষ্কার রাখবেন যেভাবে

বর্ষাকাল চলে গেলেও বৃষ্টির রাজত্ব এখনও ফুরায়নি। রোদ যেমন উঁকি দিচ্ছে ঠিক তেমনি মহাসমারোহে চলে আসছে বৃষ্টিও। ঝুম বৃষ্টিতে নাকাল হচ্ছেন অনেকেই। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালি আচরণের প্রভাব পড়ে আমাদের আবাস্থলেও। আমাদের শখের ঘর-দুয়ার, আসবাবপত্র সবকিছু যেন হয়ে ওঠে স্যাঁতস্যাঁতে। তাই এসময়ে ঘরের ভেতরকার পরিবেশ সতেজ রাখতে আপনাকে করতে হবে কিছু কাজ।

দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে কোনো আসবাবপত্র রাখবেন না। এতে আসবাবপত্র ড্যাম হয়ে যায়, যাতে বাসা বানায় ঘুনপোকা। তাই দেয়াল থেকে দূরত্ব বজায় রেখে আসবাবপত্র রাখুন। আরও সম্ভব হলে আসবাবপত্রের পেছনের অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।

আলমারিতে বা ওয়ারড্রবে কাপড় রাখলে তার সঙ্গে রাখতে পারেন নেপথোলিন। এর কারণে পোকামাকড় থাকবে আসবাবপত্র এবং কাপড় থেকে অনেক দূরে। এর সঙ্গে দামি আসবাবপত্রের নিচে টিনের বা কাচের পাত্রে এক টুকরা সালফার বা গন্ধক রাখতে পারেন। যা পোকামাকড় থেকে আসবাবপত্রকে মুক্ত রাখবে।

আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে কাঠের বদলে হার্ডবোর্ডের আসবাবপত্র ব্যবহার করা উচিত। কারণ বোডের ভেতরের অংশ ফাঁপা। এতে ঘুনে ধরার প্রবণতা যেমন থাকে না তেমনি এটি সহজে নষ্টও হয় না। সঙ্গে সঙ্গে যত্ন খুব সহজে নেয়া যায়। তাই আপনি ইচ্ছা করলে কাঠের বানানো আসবাবপত্রকে হার্ডবোর্ডের আবরণ দিতে পারেন।

ঘরের এক কোণে হিটার রাখতে পারেন, যা ঘরকে রাখবে শুষ্ক। এটি আপনি রাখতে পারেন লিভিং রুম, ড্রয়িংরুম এবং গেস্ট রুমে।
ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে ঘরে একের অধিক লাইট ব্যবহার করা উচিত। এতে ঘরের আর্দ্রতা যেমন বাড়বে তেমনি মনে হবে আপনি বাইরেই আছেন। এর সঙ্গে করতে পারেন সেলিং এ লাইট। যাতে পর্যাপ্ত আলো ঘরে থাকে। কর্নারেও এসব লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিকল্প নেই। তাই যতটা সম্ভব ঘরে আলোর ব্যবস্থা রাখুন এবং ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে আপনি যেমন থাকবেন সুস্থ তেমনি আশপাশে পরিবেশ হবে সুন্দরভাবে বসবাসের যোগ্য।

 

আলুর দম তৈরির রেসিপি

বিকেলের নাস্তায় কিংবা রাতের খাবারে লুচি কিংবা রুটি-পরোটার সঙ্গে আলুর দম খেতে বেশ। তবে অনেকেই আলুর দম তৈরির সঠিক রেসিপি জানেন না। রেসিপি জানা থাকলে ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন মজাদার এই আলুর দম। রইলো রেসিপি-

উপকরণ: আলু ১০টি, পিয়াজ বাটা -১ চামচ, আদা+রসুন বাটা -১ চামচ, টমেটো পেস্ট -২ চামচ, মরিচ+হলুদ গুরা-১/২ চামচ, গরম মসলা -১/২ টেবিল চামচ, ধনিয়া গুড়া-১/২ টেবিল চামচ, জিরা গুড়া-১/২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৪ টি, ধনেপাতা কুচি-৩ টে চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালি: প্রথমে আলু খোসা ছাড়িয়ে লবণ ও সামান্য হলুদ গুড়া দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার একটি কড়াইতে তেল দিয়ে সব মশলা দিয়ে কষাতে হবে। কষানো হলে আলুগুলো দিয়ে ঢেকে দিয়ে সামান্য পানি দিতে হবে। ১৫মিনিট পরে ঝোল শুকিয়ে এলে নামানোর আগে ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে পরোটা অথবা লুচির সাথে পরিবেশন করুন।

 

রঙ বাংলাদেশে শারদ উৎসবের পোশাক

বর্ষা থিতিয়ে এসেছে। চারপাশের উজ্জ্বল সবুজের মাঝে মাথা তুলেছে কাশের দল। রোদ আর ছায়ার লুকোচুরির মধ্যেই তরতরিয়ে বাড়ছে তারা। আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি সত্বেও প্রকৃতি প্রস্তুত শারদ উৎসবকে স্বাগত জানাতে। আর কদিন পরেই বাঙালি মেতে উঠবে উদযাপনে। প্রকৃতির মতো উচ্ছ্বল এখন সবাই উৎসবের রঙে রঙ মেলাতে।

শারদ উৎসবে ফ্যাশনের ছোয়া দিতে দেশের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন হাউজ ‘রঙ বাংলাদেশ’ নিয়ে এসেছে পোশাকের বিশেষ কালেকশন। কেবল বড়দের নয়, ছোটদের পোশাককে সমান গুরুত্ব দিয়ে আকর্ষণীয় করা হয়েছে।

রঙ বাংলাদেশ বরাবরই বিভিন্ন থিমে সংগ্রহ সাজিয়ে থাকে। এবারো সেই ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। শারদীয় আয়োজনকে সুন্দর করতে থিম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে পদ্ম, শিউলি, নানা ধরনের ক্যালিওগ্রাফি, দুর্গার অলংকার ও গনেশের অবয়।

লাল, সাদা, অফহোয়াইট, মেরুন আর গেরুয়াকে উপজীব্য করে সাজানো এবারের সংগ্রহে নকশাকে মনোগ্রাহী করতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে কমলা, ফিরোজা, ক্রিম, টিয়া, নীল, অ্যাশ, সোনালী হলুদ ও মেজেন্টা।

বড়দের জন্য রঙ বাংলাদেশ-এর শারদ সংগ্রহে রয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিস, লং স্কার্ট-টপস, সিঙ্গেল কামিজ, শর্ট ও লং পাঞ্জাবি, উত্তরীয়, ধুতি, শার্ট, টি-শার্ট ও ফতুয়া।

আর শিশু কিশোরদের সংগ্রহের এবারের থিম পদ্ম, শিউলি, ক্যালিওগ্রাফি আর দুর্গার শোলার অলংকার। মূল রঙ অফহোয়াইট, হলুদ আর বাসন্তীর সঙ্গে আরো ব্যবহার করা হয়েছে লাল, মেজেন্টা, সবুজ ও নীল। মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি এই পূজায় তৈরি করেছে ফ্রক, কামিজ আর থ্রিপিস।
এ সময়ের আবহাওয়া উষ্ণ আর আর্দ্র। তাই শারদসংগ্রহের বেশিরভাগ পোশাক সুতি কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কালেকশনকে উৎসবময় করতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে বলাকা সিল্ক, হাফ-সিল্ক, জয়সিল্ক, এন্ডি কটন এবং এন্ডি সিল্ক। ষষ্ঠী থেকে দশমী, কুমারী পূজা থেকে সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ থেকে প্রসাদ বিতরণ, প্রতিদিন সন্ধ্যা আর সকালের অঞ্জলি থেকে ভাসান- প্রতিটি উপলক্ষ্যকে বর্ণময় আর আনন্দময় করতে সেভাবেই দৃষ্টিনন্দন পোশাক তৈরি করা হয়েছে।

এবারের এই উৎসব সংগ্রহে নকশা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। নানা ধরনের প্রিন্টের ব্যবহার এই কালেকশনের মূল বৈশিষ্ট্য। নকশার চাহিদা অনুযায়ী কারচুপি, মেশিন ও হ্যান্ড এম্বয়ডারির পাশাপাশি তাই ব্যবহার করা হয়েছে ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্ট।

পূজা কালেকশনে রঙ বাংলাদেশ-এর শাড়ি কেনা যাবে: সুতি শাড়ি ৮৫০-৪,০০০ টাকা, হাফ সিল্ক ২,২৫০-৮,৫০০ টাকা, মসলিন ১০,৫০০-২০,০০০ টাকা।

সালোয়ার-কামিজ ২,০০০-৪৫০০ টাকা, সিঙ্গল কামিজ ৮৫০-৩,০০০ টাকা, স্কার্ট-টপস ১,২০০-২,৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮৫০-৪,০০০ টাকা, টি-শার্ট ৩৫০-৫০০ টাকা, পলো শার্ট ৬৫০-১,২০০ টাকা, শার্ট ৬৫০-১,৮০০ টাকা, ফতুয়া ৭৫০-১,২৫০ টাকা, উত্তরীয় ৩৫০-৫০০ টাকা, ধুতি ৬৫০-১,০৫০ টাকা, ব্লাউজ পিস ৩০০-৫০০ টাকা, আনস্টিচড ১,৫০০-৪,০০০ টাকা, অলংকার সামগ্রী ৫০-২,০০০ টাকায় পাওয়া যাবে।

শিশু কিশোরদের পোশাকের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি ৬০০-৮৫০ টাকা, ফ্রক ৬০০-১,০৫০ টাকা, শার্ট ৫০০-৭০০ টাকা, সিঙ্গল কামিজ ৬০০-১,০৫০ টাকা, শাড়ি ৯৫০-১,১৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। এছাড়া পাওয়া যাবে ঘর সাজানোর জন্য নানা সামগ্রী।

পূজার পোশাক, গয়না ও ঘর সাজানোর সামগ্রী রঙ বাংলাদেশ-এর সবগুলো শাখা ছাড়াও, ঘরে বসে অনলাইনেও (www.rang-bd.com) কেনার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে রয়েছে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধা। এছাড়া প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য রয়েছে গিফট ভাউচার, যার মাধ্যমে প্রিয়জন নিজের পছন্দ মতো কেনাটাকা করতে পারবে।

ঘুম ভাঙা প্রশ্ন

..... …..

মাঝেমাঝে সময় আসে,
যখন খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে।
অন্যকে নয়,নিজেকেই।
কিন্তু অনেক উত্তরের প্রচণ্ড উপস্থিতির কথা চিন্তা করে
প্রশ্নের ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করে না।
ঘুম ভাঙা প্রশ্নগুলো বড্ড বদমেজাজি হয়,
উত্তরের তোয়াক্কা করে না।
নিজের অস্তিত্বের অহংকার টিকিয়ে রাখতে
উত্তরের টুঁটি চেপে ধরে।
অনেক উত্তরের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতির মাঝে
নিজের রহস্যময়তার জাল বুনে যায়।
উত্তরসমুহের পিতৃত্ব স্বীকার করে না এমন প্রশ্নগুলো,
ক্রমাগত ভীড় করে রূপোপজীবি অবচেতন মনে।
অতঃপর সচেতন মনে জন্মের দোষ বয়ে বেড়ায়
জন্মেই পরিচয়হীন একগুচ্ছ ভিন্ন ভিন্ন উত্তর।

স্বপ্ন স্বপ্ন

Ivanhoe Mukit

ঘূর্ণিপাক মেঘ

ঘোলা মেঘের জল
এমন কার হৃদয় আছে বল
কার এমন মন খারাপ
মন হাসে,
কে বলেছে ঠিক হয়ে যাক সব
কবে কে দাড়িয়ে শুনতে চায়,
পথের ঐ হাক ডাক….
কিসের টানে সহজ হবে সব
কিসের টানে আসবে ছুটে।
মাঝ দরিয়া ক্লান্ত মাঝি
শোন,
মিথ্যা আশায় বসবে আর না কেউ
স্বপ্নের ঘোর…
ঠিক ঠিক কাটবে একদিন।
কি কারণে হারিয়ে গেলাম,
খোঁজ রাখে কে,
কবে কে কার বল।
সেদিনের বিকেলের ছায়ায়
কোন পাতাদের খোঁজে
কোন বাগিচার মায়ায়
অজস্র পাখি হারিয়ে যায় রোজ।
ধূর…
মেঘ করেছে,
বিষাদ মাখা আকাশ
হতাশারা সব পায়ের নিচে ঘুমায়।
ধর,
কড়া রোদে মেজাজ বড্ড বাজে
কই কেউ ত বুঝে নাই,
কেউ বুঝে নাই কখন রাত্রী জাগে।
অবুঝ পৃথিবী,
ডুব কারে কয় শোন….
কে শোনে কার কথা,
থাক না এসব,
হাজার গল্পে হোক,
এবার জীবন নিখোঁজ।

 

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৬: ক্রিটিকের সাথে পাল্লা দেয়ার উপায়

এই পর্বে ওভার জেনারালাইজেশন ও গ্লোবাল লেবেলিং এর বিরূদ্ধে কী করা যায় সে নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগের পর্ব তে বলা হয়েছিল এ দুটো ক্ষেত্রে একটা ব্যর্থতাকে টেনে টেনে পুরো জীবনের/ব্যক্তিত্বের উপর দাগ ফেলা হয়। এই যেমন, মিটিং এ দেরি করে আসলাম, আমার মত অলস, অকর্মণ্য পৃথিবীতে কেউ নেই। বাসায় সুন্দরভাবে মেহমানদারি করতে পারলাম না, আমি জীবনেও ঘরকন্না শিখব না।

ওভারজেনারালাইজেশন গন্তব্য
ওভারজেনারালাইজেশন গন্তব্য

ওভারজেনারালাইজেশন যখনই মনের মধ্যে হতে চাইবে, এ প্রশ্নগুলো করতে হবে,

১. আমার এই চিন্তার ভিত্তি কী? ২. আমার কাছে কি এই সিদ্ধান্তে পৌছানোর জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আছে? ৩. ঘটনাটা থেকে আমি যে উপসংহার টানছি, তার বদলে অন্যভাবে কি ভাবা যায়? ৪. গৎবাঁধা মন্তব্য না করে, পরিষ্কারভাবে বল, একদম পয়েন্ট আকারে। ৫. ভবিষ্যৎ দেখার দায়িত্ব তোমাকে কে দিল?

ধরা যাক, সূচি সবসময় মনে করে,

– আমাকে কেউ পছন্দ করেনা – বন্ধুরা কেউ আমাকে দাওয়াত দেয়না – সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে – আমি একটা গাধা স্টুডেন্ট – পুরো পৃথিবীতে আমার একটাও বন্ধু নেই – আমার সারা জীবনেও কোন বন্ধু হবে না

সূচির এক্ষেত্রে যা করা উচিৎ –

প্রথমেই মনটাকে একটা ধমক দেয়া উচিৎ, এইসব ফালতু চিন্তা মনে আসার জন্য। ধমক দিলে কিছুক্ষণের জন্য ক্রিটিকের বিরূদ্ধে লড়াই করার সাহস পাওয়া যায়। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ, এরকম সারাজীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার জন্য আমার হাতে কী প্রমাণ আছে? সারা পৃথিবীতে আমার একটাও বন্ধু নেই – আমি সারা পৃথিবীর সবার সাথে মিশি নি। আমি পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখিনি! আমাকে ‘কেউই’ পছন্দ করেনা কথাটা কি ঠিক? হ্যা, সঞ্চিতা আমাকে দেখতে পারেনা, মুহায়মিন ও না। কিন্তু রূপন্তি আমাকে ভীষণ ভালোবাসে! হ্যা, দুই দুইটা ক্লাশমেটের জন্মদিনে আমাকে দাওয়াত দেয়নি, কিন্তু সেদিন ও তো পিকনিকের প্ল্যান সবাই মিলে করলাম! তারপর আত্মীয়দের বাসায়, পাশের বাসার আপুর ঐখানে তো আমি প্রায়ই যাই! সুতরাং, আমাকে কেউ পছন্দ করেনা, কেউ দাওয়াত দেয়না – এগুলি ঠিক কথা না। আমার কোন বন্ধু নাই, এটাও ঠিক না! হয়ত যেমনটি চাই তেমন বন্ধু নেই, কিন্তু একেবারে নেই এটা মিথ্যা কথা! সুতরাং এইসব দুঃখবাদি চিন্তাভাবনা আমাকে বাদ দিতে হবে! আমি মোটেও এত একা নই, যতটা আমি ভাবি।

আর আমি গাধা স্টুডেন্ট না। আমি ছবি আঁকতে পারি খুব ভালো। আমার ক্রিয়েটিভিটি আছে। আমি এদের স্ট্যান্ডার্ডে ভালো করতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু আমার পছন্দের ফিল্ডে আমি খুব ভালো করি। ক্রিয়েটিভিটি মুখস্ত বিদ্যার চেয়েও অনেক বেশি দামি।

পাশাপাশি, সূচি যদি মনে করে সে মোটা, নাকটা বিচ্ছিরি, অসামাজিক, তখন মনে মনে নিজেকে ধমক দিতে হবে, বলতে হবে, আমি ছোট ব্যাপারকে বড়সর করে ফেলছি। মোটা বললে যদি মন খারাপ হয়, তখন বলতে পারে, টার্গেট ওজনে আসার জন্য আমাকে ষোল কেজি কমাতে হবে।

আমি এই, আমি সেই – এই চিন্তাটা দূর করতেই হবে। তাতে করে সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবেনা। কিন্তু বিষয়টাকে মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

আমার নিজের বেলায় যেমন, আমি বলতে ভালোবাসি আমি নিওফোবিক (নতুন যে কোন কিছুকেই আমি ভয় করি।) কথাটা সত্যি, পিএইচডি শেষ করে চাকুরি খুঁজতে ইন্টারভিউ দিতে হবে, আমি কখনও ইন্টারভিউ দেইনি, তাই ওটা ভাবতেই ভয় করে, মনে হয় আমাকে কেউ কখনও চাকরি দেবেনা। কনফারেন্সে প্রথমবার পোস্টার প্রেজেন্ট করতে কেমন দুরু দুরু বুক – অথচ ব্যাপারটা কিছুই না! প্রথমবার ক্লাশে লেকচার দিতে গিয়ে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা।

যাই হোক, সেল্ফ ক্রিটিক এর এই পর্যায়ে পেছন ফিরে দেখি, জীবনে নতুন কাজের সংখ্যা কম না। রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়েছি এমন একটা, ডিপার্টমেন্টে আর কেউ আগে করেনি। সোশ্যাল ওয়ার্ক এর নতুন কোন সুযোগ আসলে যেটুকুই হোক অংশ নেয়ার চেষ্টা করেছি। আর অত কিছু কেন, নতুন পরিবেশে, নতুন দেশে টিকে থাকতে পারে যে, তার আর কিছু নিয়ে ভয় করার দরকার আছে?

মোকাবেলা
মোকাবেলা

নতুন জিনিস দেখলে এখনো ভয় লাগে, কিন্তু আবার পুরনো সফলতা মনে করে মনকে সাহস দিলে, আর একটু একটু করে একধাপ করে এগোলে জিনিসটাকে মোকাবেলা করা যায়। এতদিন পর্যন্ত নতুন কাজের কথা কেউ বললেই পিছিয়ে যেতাম, মনকে বলতাম, আমি নিওফোবিক, আমার সময় লাগবে। তারপর ফেলে রাখতাম অনেকদিন। এখন মনে হচ্ছে, তার বদলে এভাবে ভাবতে হবে, আগে করিনি? জানিনা কেমন হবে? ঠিক আছে, আরো একটু জেনে বুঝে নেই। পুরনো কাজগুলিও তো একসময় নতুন ছিল। শুরু না করলে তো ওগুলো চিরকাল নতুনই থেকে যেত!

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

 

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৫: এস্টিম ধ্বংসকারী চিন্তাগুলো

গত কয়েক পর্ব মন দিয়ে পড়লে আশা করা যায় ক্রিটিক কে ভাল করে চেনা, ও তার সাথে ফাইট করার একটা মোটামুটি আন্দাজ হয়ে যাবে। ক্রিটিক কে চেনার ও বোঝার শেষ নেই। যতই চেনা যাবে, ততই মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে হবে, হায় আল্লাহ! আমি ত এগুলোর সবগুলোই করি! হ্যা, ক্রিটিক অমনই চতুর। কখনও লজিক, কখনও ইনটুইশন, কখনও পর্যবেক্ষণের ভেক ধরে মনের ভেতর হানা দেয়। বস্তুতঃ একটা বাস্তব ঘটনাকে অবাস্তব পন্থায় বিশ্লেষণ করার এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ক্রিটিক ভদ্রলোকের ছলচাতুরি ছাড়া আর কিছু না। এই পর্বে ক্রিটিকের কয়েকটা অতিপরিচিত কৌশল আলোচনা করা হবে।
ওভারজেনারালাইজেশন
ওভারজেনারালাইজেশন

১. ওভারজেনারালাইজেশন: একটা ঘটনা থেকে পুরো পৃথিবীর সমুদয় ঘটনার প্রতি জেনারেল ধারণা করা। একটা ইন্টারভিউ খারাপ হল, ধরে নেয়া, আমি জীবনেও ভাল ইন্টারভিউ দিতে পারব না। একবার প্রেজেন্টেশনে হাঁটু কাঁপল, ঘোষণা করে দেয়া, বক্তৃতা আমার জন্য না।

ক্রিটিক ওভারজেনারালাইজেশন টেকনিক ব্যবহার করছে কিনা তা বুঝতে পারবেন যদি সে ঘন ঘন ‘never’, ‘always’, ‘all’, ‘every’, ‘none’, ‘nobody’, ‘everyone’, ‘everybody’ – এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে থাকে।

 গ্লোবাল লেবেলিং
গ্লোবাল লেবেলিং

২. গ্লোবাল লেবেলিং: একটা ঘটনা থেকে পুরো ব্যক্তিত্বটার উপরে একটা জেনারেল ধারণা করা। যেমন, ভাইভা বোর্ডে ভাল উত্তর দিতে পারলাম না, ‘আমি একটা স্টুপিড, আনস্মার্ট গাধা।’ ওভারজেনারালাইজেশনের মতই, তবে এখানে ঘটনার বদলে মানুষটাকে বাজে বাজে বিশেষণ দেয়া হয়।

গ্লোবাল লেবেলিং হচ্ছে কিনা বুঝতে পারবেন, যদি আপনার ক্রিটিক আপনার চেহারা, পারফর্মেন্স, বুদ্ধিমত্তা, সোশ্যাল স্কিল নিয়ে কমন, আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকে। এই যেমন, ‘আমি একটা অকর্মণ্য কুঁড়ে অলস’, ‘আমি কিছুই পারিনা’, ‘আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা’, ‘আমি একটা স্পাইনলেস’, ‘আমার ফ্যামিলি একটা আজাব।’
চিন্তার ফিল্টারিং
চিন্তার ফিল্টারিং

৩. ফিল্টারিং: এই প্রক্রিয়ায় ক্রিটিক বাস্তব ঘটনার সবগুলো আলো শুষে নিয়ে কেবল অন্ধকারটাই দেখায়। আপনি কেবল বিশেষ কয়েকটা মন্তব্যই শুনতে পাবেন, বাকিগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশও করবে না। একটা ফাটাফাটি প্রেজেন্টেশন দিলেন, বস একফাঁকে বলল, তোমার বক্তব্যে coherence কম। ব্যাস! এত বছর ধরে প্রেজেন্টেশন দিয়েও যদি একটা গুছানো প্রেজেন্টেশন দিতে না পারি, তাহলে করছি টা কী? এই নিয়ে মন খারাপ, ছোট হয়ে থাকা, আপসেট থাকা, লেবেলিং করা… ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে বস যে এতগুলো তথ্যের উপস্থাপনকে প্রশংসা করলেন, প্ল্যানটা সুন্দর বললেন, এত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ দিলেন – এগুলো মনের কোথাও ঠাঁই পেলনা।

ফিল্টারিং হতে থাকলে প্রশংসাগুলো মনে হতে থাকে বানিয়ে বানিয়ে বলা, আর সমালোচনাগুলো অনেক মৃদু আকারে বলা। এক ফোঁটা সমালোচনা তখন বড় একটা কাজের ফলাফলকে ম্লান করে ঐ অতটুকুর মধ্যেই নিয়ে আসে।

পোলারাইজড থিংকিং
পোলারাইজড থিংকিং
৪. পোলারাইজড থিংকিং: পোলারাইজড চিন্তাভাবনায় পৃথিবীটা আপনার কাছে সম্পূর্ণ সাদা আর কালো। প্রতিটা ঘটনা, কাজ হয় মন্দ নাহয় ভালো। আপনি নিজেকে সাধু নয় চোর, সফল বা লুজার, হিরো বা ভিলেইন – এভাবে চিত্রিত করে ফেলেন।

মনের ভেতর ভাবনাগুলো যদি এমন হয়, ‘স্কলারশিপটা না পেলে আমার জীবন শেষ’, ‘বউ ভাল না বাসলে বেঁচে থেকে আর লাভটা কী’… তবে বুঝবেন আপনি পোলারাইজেশন জ্বরে আক্রান্ত।

 সেল্ফ ব্লেইম
সেল্ফ ব্লেইম

৫. সেল্ফ ব্লেইম: সব ঘটনার দোষ আপনার। সবকিছুর জন্য আপনি পরোক্ষভাবে হলেও দায়ী। নিদেনপক্ষে আপনার ভাগ্য দায়ী। রাস্তায় অভাবনীয় জ্যামের কারণে মিটিং এ দেরি হল, আপনার দোষ। আপনার স্বামী আপনার সাধের এক্সপেরিমেন্টের রান্নাটা পছন্দ করল না, আপনার দোষ।

সেল্ফ ব্লেইম আপনার ভাল দিকগুলোর ব্যাপারে আপনাকে পুরোপুরি অন্ধ করে দেয়। আপনার চালানো তিনটি প্রজেক্টের দুটি সফল আর একটি চরমভাবে ব্যর্থ হলে আপনি আজীবন তৃতীয়টির জন্য নিজেকে দায়ী করে গেলে, আর বাকি দুটোর জন্য সমভাবে গর্ববোধ না করলে আপনার মাঝে সেল্ফ ব্লেইম রোগ আছে।

পারসোনালাইজেশন
পারসোনালাইজেশন
৬. পারসোনালাইজেশন: পার্সোনালাইজড জগতে আপনি নিজেই আপনার জগত হয়ে বসে থাকেন। প্রতিটা ঘটনাই যেন আপনাকে ঘিরে আবর্তিত। কিন্তু আপনার হাতে কোন কন্ট্রোল নেই। আপনি হতভাগা, সবাই আপনাকে কষ্ট দেয়।

পারসোনালাইজেশনের মধ্যে একধরণের সেল্ফ অবসেশন বা নার্সিসিজম আছে। ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে ঢুকলেন, সাথে সাথে আর সবার সাথে তুলনা করা শুরু করে দিলেন, কে আমার চেয়ে বেশি স্মার্ট, কার চেহারা বেশি ভাল, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ বলল, ‘ভাল লাগছে না’, আপনি ধরে নিলেন আপনার সাথে তার বিরক্ত লাগছে।

মাইন্ড রিডিং
মাইন্ড রিডিং
৭. মাইন্ড রিডিং: আমি অন্যের ভাব বুঝতে পারি। সে কী ভাবছে আমি জানি। আমি থিসিস দেরি তে জমা দিলাম, সুপারভাইজরের থমথমে ভাব। পরিষ্কার বলে দেয়া যায় তিনি আমার উপর বিরক্ত। আমার শাশুড়ি জানতে চাইলেন এতক্ষণ কোথায় ছিলাম। তার মানে উনি হিসাব চাচ্ছেন আমি কোথায় কোথায় গিয়ে ঘরের কাজ ফাঁকি দিচ্ছি।

মনের মধ্যে যদি, ‘আমি জানি’, ‘আমি শিওর’, ‘আমার মনে হচ্ছে’, ‘আমি এগুলি ভাল বুঝি’ – ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা আসে, তাদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিন। এসব আপনার সাইকিক পাওয়ার না, ক্রিটিকের হাতিয়ার।

 ইমোশনাল রিজনিং
ইমোশনাল রিজনিং
৮. ইমোশনাল রিজনিং: প্রবল দুঃখের সময় আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কোন ঘটনায় ক্রিটিক হয়ত এসে কানে কানে বলল, ‘কুঁড়ে, অলস।’ আপনার হালকা একটা মন খারাপের ভাব হল। মন খারাপ ভাবটা বাড়তেই থাকল।

ক্রিটিক এইবার আবার এসে বলবে, ‘তুমি যা মনে কর, তুমি ত তাই। তোমার নিজেকে অলস মনে হচ্ছে, তুমি ত আসলেই অলস।’ এর মধ্যে আপনি হয়ত ভুলেই বসে আছেন, ‘অলস’ আপনি আপনাকে বলেন নি, ক্রিটিক বলেছে। এই পুরো চিন্তার শুরুটা ক্রিটিক কে দিয়ে। মাঝপথে মন খারাপকে পুঁজি করে ক্রিটিক আপনার সেল্ফ এস্টিমটাকে নাড়া দিয়ে গেল।

Ref: Self Esteem by McKay and Fanning
নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

সমকামিতা বর্তমান সমাজের বড় ফ্যাশন

ছোটবেলায় সন্ধি বিচ্ছেদে পড়েছিলাম দম্পতি = জায়া + পতি। ‘জায়া’ মানে স্ত্রী আর ‘পতি’ মানে স্বামী। তাহলে দুইটা ছেলে “বিয়ে” করলে তাদেরকে কি পতি পতি বলা উচিত? আর দুইটা মেয়ে করলে জায়া জায়া?
এ কেমন বিচার?

বর্তমানে অনেক মহল এসব হালকা কথায় হয়ত বড়ই বিরক্ত হয়ে উঠবেন।

বিয়ে বন্ধন বিয়ে বন্ধন

আপাতত ব্রিটেনে হয়ে যাওয়ায় প্রথম “মুসলিম গে বিয়ে” নিয়ে যার পর নাই সমকামিরা অনেকেই উচ্ছ্বাসিত। কোন আসল বিয়েতে কাচ্চি বিরিয়ানি খেলেও বোধ হয় তারা এতটা আনন্দ অনুভব করতেন না। আফটার অল, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি নিজেদের সম্মতিতে একসাথে যৌনকর্ম করার লাইসেন্স চায় তো করুক না। ওদের তো অধিকার দেয়াই উচিত। আপনার আমার ক্ষতি কী তাতে!

ভাবুন তো একবার, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোন,
বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলে যদি নিজেদের সম্মতিতে এ রকম যৌনকর্ম করার লাইসেন্স চায় তো তাদেরও তো করতে দেয়া উচিত? তাই নয় কি?
নাকি তাদেরকে করতে দিবেন না, আপনার এসব ভেবে বমি আসতেছে? আপনার বমি আসলে কি ঘটনাগুল থেমে থাকবে?
তাদের “অধিকার” তখন কিভাবে অর্জিত হবে?
‘মুসলিম গে বিয়ে’ কথাটায় মুসলিম শব্দটা শুনছেন?

তার মানে গে সাপোর্টাররা যদি হিপোক্রিট না হয়। অবশ্যই হিপোক্রিট। তাহলে তারা ভাই-বোন, বাবা-মেয়ে বা মা-ছেলের মধ্যে যৌনকর্ম সমর্থন করবে না আগামীকাল তার কি নিশ্চয়তা আছে?

এসব কি “আধুনিকতা” কই রাখবেন এই সমাজকে?

অনেক বুদ্ধিমান প্রগতিশীল আবার দাবি করে গে/লেসবিয়ান হওয়া নাকি “প্রাকৃতিক”, এতে কারো কোন হাত নেই সবই জেনেটিক অর্থাৎ জন্মগত।

চলুন দেখি বিজ্ঞান কী বলে?

কোন কিছু জেনেটিক কারণে হয় না পরিবেশগত কারণে হয় তা নির্নয় করার জন্য বিজ্ঞানের সবচেয়ে কার্যকরী মেথড হলো “মনোজাইগোটিক” যমজদের নিয়ে গবেষণা। কারণ তারা একই ভ্রূণ থেকে জন্ম হয় বলে তাদের জেনেটিক কোড একদম বা প্রায়একই রকম।

তো সমকামিতা হওয়া যদি জেনেটিকই হয়, তাহলে তো একজোড়া যমজের মধ্যে যদি একজন সমকামী হয় তাহলে তো আরেকজনও সমকামী হবে। আর একজন সমকামী না হলে আরেকজনও হবে না। যেহেতু দুজনের জেনেটিক কোড একদম একই, তাই ত?

১০০% ক্ষেত্রে না হলেও তার মধ্য থেকে ৮০-৯০% ক্ষেত্রে তো এমন হওয়ার কথা?

Can you guess what was the real percentage that researchers have found?

আমেরিকার বিখ্যাত Columbia University-এর গবেষক, Peter Bearman এবং Yale University-এর গবেষক, Hannah Brückner আবিষ্কার করলেন ছেলে যমজদের ক্ষেত্রে এই রেট মাত্র ৭% আর মেয়ে যমজদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫%! (American Journal of Sociology. Volume 107 (5): Page 1179–1205)। তাহলে এটা কি জেনেটিক্স কারণে। নিজেকে প্রশ্ন করুন?

তাহলে ৮০-৯০% হওয়ার কথা ছিল। আর সেখানে ৫-৭% দেখা যাচ্ছে! তার মানে বোঝা গেল, “সমকামিতা প্রাকৃতিক” এই দাবি পুরাটায় অযৌক্তিক।

এটা একটা সমস্যা।
সবচেয়ে বড় কথা মানসিক সমস্যা।
সমস্যাকে সমাধানের প্রথম ধাপ হলো সমস্যাকে সমস্যা বলে স্বীকার করে নেয়া। সমস্যাকে অস্বীকার করে কখনোই তা সমাধান করা সম্ভব নয়।

অবশ্য অনেকেই মানতে চাইবেন না সমকামিতা কোন “মানসিক সমস্যা”। যেহেতু বর্তমানে তা উঠানো হয়েছে।

Homosexuality Mental Disorder Homosexuality Mental Disorder

সমকামী এবং তাদের সাপোর্টকারী গোষ্ঠী মানতে চাইবেন, কি চাইবেন না কিন্তু American Psychological Association(APA) ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সমকামিতাকে “Mental Disorder” হিসেবে গণ্য করে এসেছে।
তাহলে ১৯৭৪ সালের দিকে এমন কী হলো? না কোন বৈজ্ঞানিক কারণে নয়। এটায় তারা বুঝেই Disorder রেখেছিল।

সমকামীদের আন্দোলন সমকামীদের আন্দোলন

১৯৭০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কোতে চলছিল APA এর অধিবেশন। গে সাপোর্টাররা সেই অধিবেশনে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে এবং সাইকিয়াট্রিস্টদের বিদ্রূপ-উপহাস করতে শুরু করে। তাদের নেতা Frank Kameny যে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট না হয়েও সাইকিয়াট্রিস্টদের অধিবেশনে ঢুকে মাইক ছিনিয়ে নেন।

তার মত ছিল,
“সাইকিয়াট্রি হলো আমাদের মূর্তিকার শত্রু। সাইকিয়াট্রি আমাদের উপর নিষ্ঠুর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাইকিয়াট্রির উপর যুদ্ধ ঘোষণা করছি।” ( Homosexuality and American Psychiatry: The Politics of Diagnosis (1981) by Ronald Bayer; Princeton University Press; page 105)

পরবর্তীতে তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে APA সমকামিতাকে Mental Disorder হিসেব থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়, তার স্বপক্ষে যথেষ্ট scientific evidence না থাকা সত্ত্বেও।

মানুষের মানসিক সমস্যা বা মনঃ বিকৃতি থাকতে পারে। তার মানে এই না যে সেই বিকৃতিকে আমরা হ্যা বলে দিব, আরো উৎসাহ দিতে থাকাটা স্বাভাবিক নয়। সেই বিকৃতি কিভাবে আরোগ্য করা যায় তার পথ খুঁজতে হবে। আর যদি আরোগ্য সম্ভব না হয় তাহলে ভবিষ্যতে কারো জানি এমন না হয় বা তার থেকে অন্য কারও যাতে না ছড়ায় সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর সেখানে যদি উল্টা একে সমর্থন করা হয়, এবং স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?
পারিবারিক বন্ধন হুমকির সম্মুখীন হবে। আর সমাজে তা ছড়িয়ে পরবে।

৭০ এর দশক থেকে যদি সমকামিতাকে ব্যাধি হিসেবে অস্বীকার করা শুরু না হতো তাহলে গত ৫০ বছরের বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মধ্যে এর প্রতিকার/প্রতিষেধক আবিস্কার হয়ে যেত। আজ সমকামীরা আরোগ্য লাভ করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত। সমাজে সমকামিতার ভয়ানক অধ্যায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দাম্পত্যকলহ আর বিবাহবিচ্ছেদ এর মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এই সমস্যার ব্যাপারে সচেতনা বৃদ্ধি করা দরকার
সমস্যাকে সমস্যা বলুন
সমস্যাকে সমস্যা বলুন

সচেতনায় সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

Zeesan Rahman Chowdhury
Psychology (DU)
Master of Business Information System
University of Canterbury